স্বেচ্ছাচারিতা অন্যদের এবং নিজেকেও আঘাত করে

04-09-2023

২০২০-র এপ্রিলে সিঞ্চনের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য গির্জার নেত্রীনির্বাচিত হলাম। লক্ষ্য করলাম যে কিছু নতুন বিশ্বাসী সম্প্রতি সমাবেশে নিয়মিত যোগ দিচ্ছিল না, তারা দেরি করে আসত আর তাড়াতাড়ি চলে যেত। কেউ কেউ স্কুল বা কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিল আর বলত যে সময় পেলে তবেই তারা আসবে। কয়েকজন আসেনি কারণ তারা চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি আর ধর্মীয় জগতের মিথ্যাচারে প্রতারিত হয়েছিল। আমরা তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু কেউ কেউ ফোনের উত্তর দিত না—তারা কার্যত অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। তখন ভাবলাম যে আমরা তো তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম, যেহেতু তারা আসতে চায়নি, তাই আমরা এর জন্য দায়ী নই। তাই তাদের বহিষ্কার করাই সমীচীন। তাছাড়া ঈশ্বরও বেশি করে লোক চান না, সেরা লোকই চান। তিনি তাদের রক্ষা করেন যারা সত্যিই ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, যারা সত্যকে ভালবাসে। তাদের সত্যিকারের বিশ্বাস না থাকলে আমাদের তরফে যতই চেষ্টা করি না কেন তা যথেষ্ট হবে না। তাই প্রার্থনা বা অন্বেষণ না করে অথবা আমার নেত্রীর সাথে আলোচনা না করেই, সেইসব নবাগতদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিলাম। তাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তারা সমাবেশে যোগ দিতে চায়নি, তাই আরও বেশি নিশ্চিত হলাম যে তাদের নিয়ে যা ভেবেছিলাম তাই সঠিক। এক ভগিনী লক্ষ্য করল যে অনেক নতুন বিশ্বাসীকে পরপর দুই মাস বহিষ্কার করা হয়েছে। আমাকে জিজ্ঞাসা করল যে সেটা করা সঠিক হয়েছে কিনা। সে বলল, আমাদের নেত্রীর সাথে আলোচনা করে সঠিক নীতিটা শেখা দরকার ছিল। তখন ভাবলাম যে অতীতে আমরা এই পরিস্থিতিতে এই রকম ব্যবস্থাই তো নিয়েছি। তাদের সাথে আমরা কথা বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু তাদের সাথে যোগাযোগটুকুও করতে পারিনি, কয়েকজন তো আবার বিশ্বাসী হওয়ার আগ্রহটাও হারিয়ে ফেলেছিল। তাই এখানে কোনো নীতি খোঁজার দরকার ছিল না। তাই, তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলাম। তবে ঘটনার পর একটু অস্বচ্ছন্দ বোধ করছিলাম, ভাবছিলাম কাজটা কি সত্যিই ঠিক হল? কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলাম কাজটা ভুল হতেই পারে না কারণ আমরা তাদের সাহায্যের প্রস্তাবই দিয়েছিলাম। তারাই সমাবেশে আসতে চায়নি, আর সেটা আমাদের কোনো দোষ নয়। আমার মনে হয়েছিল, তারা সত্যিকারের বিশ্বাসী নয়। যদিও আমি খুব অস্থির বোধ করছিলাম, তবুও প্রার্থনা করিনি বা অন্বেষণ করতে চাইনি, আর প্রতি মাসেই কিছু নবাগতকে বহিষ্কার করতাম।

পরে আমার নেত্রী জানতে পারলেনযে আমি নীতি অনুসরণ করছিলাম না তিনি আমার বেশ কড়া সমালোচনা করে বললেনব, আমি কোনও নীতি জানিতামনা না আর জানতেও চাইনি ওনি, শুধু অন্ধভাবে যা ইচ্ছা তাই করেছি। তিনি আরও বললেন যে তাদের প্রত্যেকের পক্ষে ঈশ্বরের সামনে দাঁড়ানো বেশ কঠিন হয়ে গিয়েছিল, আমাদের অন্যান্য গির্জার ভ্রাতাও ভগিনীরা তাদের সাহায্য করার জন্য সব রকম চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আমি শুধু নির্বিকারভাবে তাদের দূরে সরিয়েরাখছিলাম। মমতা দিয়ে না বুঝিয়ে তাদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছিলাম, আর এটা সত্যিই দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়। তারপর তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন তারা সমাবেশে যোগ দিচ্ছিল নাকেন, তাদের কী ধরণের ধারণা আর সমস্যা ছিল, আলোচনার মাধ্যমে সেসব সমাধানের চেষ্টা করেছিলাম কিনা, আর তাদের সাহায্য করার অন্য কোনো উপায়ের কথা ভাবার চেষ্টা করেছিলাম কিনা। তাঁর একটা প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারিনি, তবে নতুন বিশ্বাসীদের বহিষ্কারের একটার পর একটা ঘটনা আমার মনে চলচ্চিত্রের দৃশ্যপটের মত ভাসতে লাগল। অবশেষে বুঝতে পারলাম যে তাদের প্রতিদায়িত্বশীল ছিলাম না, তাদের ভালবেসে সাহায্য আর সমর্থন করিনি। তাদের কোন কোন ধারণা নিয়ে সমস্যা ছিল বা কেন তারা সমাবেশে যোগ দিচ্ছিল মা না সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাইনি। তারা বেশ কিছু সময় ধরে সমাবেশে যোগ দেয়নি বলে বলে ভেবেছিলামতারা আগ্রহ হারিয়েছে, আর তাদের নিয়ে বেশি কিছু ভাবিনি। ভেবে দেখলাম, নতুন বিশ্বাসীদের জীবনে আমার দায়িত্ব পালনে সত্যিই ব্যর্থ হয়েছি আর নিয়মের বিপরীতে গিয়ে, তাদের নির্বিকারে প্রত্যাখ্যান করছিলাম। নিজের মধ্যে মানবিকতার অভাব ছিল। তাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, আমাকে যেন তাঁর ইচ্ছা আর নিজের আচরণ বোঝার সঙ্গেসঙ্গে নিজের সম্পর্কে জানার মত জ্ঞান দেন।

এর পরে, ঈশ্বরের বাণীর এই অনুচ্ছেদ পড়লাম। “যে সকল মানুষ প্রকৃত পথের অনুসন্ধান করছে, তাদের প্রতি আচরণে অবশ্যই যত্নশীল ও বিচক্ষণ হতে হবে এবং ভালোবাসার উপর নির্ভর করতে হবে। কারণ যারা প্রকৃত পথের অনুসন্ধান করছে তারা সকলেই অবিশ্বাসী—এমনকি তাদের মধ্যে যারা ধর্মবিশ্বাসী, তারাও কমবেশি অবিশ্বাসী—এবং তারা সকলেই দুর্বল: তাদের পূর্বধারণার সাথে কোনোকিছু সঙ্গতিপূর্ণ না হলেই তারা বিরোধিতা করবে, এবং তাদের ইচ্ছার সাথে কোনো একটা কথা অসঙ্গত হলেই তারা বিতর্কে জড়িয়ে পড়বে। সুতরাং, তাদের কাছে সুসমাচার প্রচারের জন্য আমাদের সহিষ্ণুতার প্রয়োজন। আমাদের দিক থেকে প্রভূত ভালোবাসা থাকতে হবে, এবং কিছু পদ্ধতি ও উপায়ও অবলম্বন করতে হবে। তবে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তাদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করা, মানুষকে উদ্ধার করার জন্য ঈশ্বর যেসমস্ত সত্য প্রকাশ করেছেন সেগুলো তাদের জানানো, এবং তাদের ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর ও সৃষ্টিকর্তার বাক্য শুনতে দেওয়া। এইভাবেই তারা উপকৃত হতে পারবে(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, সুসমাচারের প্রচার এমন এক কর্তব্য যার প্রতি সকল বিশ্বাসী মর্যাদাবদ্ধ)। “কিছু মানুষ আছে, যারা নেতিবাচক হওয়া সত্ত্বেও ঈশ্বরে সত্যিই বিশ্বাস করে। বিষয়টা শুধু এটুকুই, যেহেতু তাদের আত্মিক উচ্চতা ক্ষুদ্র, ঈশ্বর-বিশ্বাস সংক্রান্ত বিবিধ সত্য সম্পর্কে তাদের উপলব্ধির অভাব রয়েছে, এবং সেই কারণে তাদের বিশ্বাস যে তারা দুর্বল ক্ষমতাসম্পন্ন, তাল মিলিয়ে চলতে অক্ষম, অত্যন্ত সমস্যাজনক—যা নেতিবাচকতার জন্ম দেয়, এমনকি তাদের পরাজয় স্বীকারে বাধ্য করে: তাই তারা হাল ছেড়ে দেওয়ার ও অন্বেষণ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা নিজেদেরই বহিষ্কার করে। তারা মনে করে, ‘যা-ই হোক না কেন, ঈশ্বর তাঁর প্রতি বিশ্বাসের জন্য আমার প্রশংসা করেননি। ঈশ্বর আমাকে পছন্দও করেন না। এবং সমাবেশে যাওয়ার মতো অত সময় আমার নেই। আমার পরিবার দরিদ্র, আমাকে অর্থ রোজগার করতে হবে,’ ইত্যাদি। এগুলো সবই তাদের সমাবেশে না আসার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কী ঘটছে তা যদি তুমি দ্রুত খুঁজে বার করতে না পারো, তুমি খুব সম্ভবত তাদের অন্যায্যভাবে এই বলে শ্রেণীবদ্ধ করে দেবে যে তারা সত্যকে ভালোবাসে না, তারা এমন মানুষ নয় যারা ঈশ্বরে প্রকৃতই বিশ্বাস করে, অথবা এই বলে শ্রেণীবদ্ধ করবে যে তারা দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য লালায়িত, জাগতিক বস্তুর অন্বেষণে লিপ্ত আর সেগুলো ত্যাগ করতে পারে না—এবং এই কারণে তুমি তাদের পরিত্যাগ করবে। এটা কি নীতির সাথে সঙ্গত? এইসব কারণ কি সত্যিই সেই ব্যক্তির প্রকৃতি ও সারমর্মকে উপস্থাপিত করে? আসলে, তার অসুবিধাগুলোর জন্যেই সে নেতিবাচক হয়ে উঠেছে; তুমি যদি এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারো, তাহলে সে অতটা নেতিবাচক হবে না এবং ঈশ্বরকে অনুসরণ করতে সমর্থ হবে। যখন সে দুর্বল ও নেতিবাচক অবস্থায় থাকে, তখন তার প্রয়োজন মানুষের সমর্থন। তুমি যদি তাকে সাহায্য করো, সে আবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। কিন্তু যদি তাকে উপেক্ষা করো, তাহলে তার পক্ষে নেতিবাচক হয়ে পড়া ও হাল ছেড়ে দেওয়া সহজ হবে। যে লোকজন গির্জার কাজ করে তাদের ভালোবাসা আছে কি না, তারা এই দায়িত্বভার বহন করতে পারে কি না, তার উপরেই এটা নির্ভর করে। কিছু মানুষের ঘনঘন সমাবেশে না আসার অর্থ এই নয় যে তারা ঈশ্বরে প্রকৃত বিশ্বাস করে না, এটা সত্যের প্রতি বিরাগের সমতুল্য নয়, এর অর্থ এই নয় যে তারা দৈহিক আনন্দের জন্য লোভী, এবং নিজেদের পরিবার ও কাজকে সরিয়ে রাখতে পারে না—অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হিসাবে অথবা অর্থলিপ্সু হিসাবে তাদের বিচার করা তো আরোই উচিত নয়। ব্যাপারটা শুধু এটুকুই যে এইসব বিষয়ে মানুষের আত্মিক উচ্চতা ও আকাঙ্ক্ষা ভিন্ন। কিছু মানুষ সত্যকে ভালোবাসে, এবং সত্যের অন্বেষণ করতে সক্ষম; তারা কষ্টভোগ করতে ইচ্ছুক, এবং এইসব বস্তু ত্যাগ করতে পারে। কিছু মানুষের বিশ্বাস সামান্য, এবং সত্যিকারের অসুবিধার সম্মুখে তারা শক্তিহীন, ও সেগুলো অতিক্রম করতে পারে না। কেউ যদি তাদের সাহায্য বা সমর্থন না করে, তাহলে তারা পরাজয় স্বীকার করবে, ব্যর্থ হয়ে থেমে যাবে; এরকম সময়ে তাদের প্রয়োজন মানুষের সমর্থন, যত্ন, ও সহায়তা। এ কথা তখনই সত্যি, যদি না সে অবিশ্বাসী হয়, সত্যের প্রতি ভালোবাসা বর্জিত হয়, এবং একজন মন্দ ব্যক্তি হয়—সেক্ষেত্রে তাকে উপেক্ষা করা যেতে পারে। যদি সে সত্যিই ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, এবং কিছু সত্যিকারের অসুবিধার জন্যেই ঘনঘন সমাবেশে আসতে না পারে, তাহলে অবশ্যই তাকে পরিত্যাগ করা উচিত নয়, বরং প্রেমপূর্ণ সহায়তা ও সমর্থন দেওয়া উচিত। যদি সে একজন ভালো মানুষ হয়, উপলব্ধি করতে সমর্থ হয়, যথেষ্ট ভালো যোগ্যতাসম্পন্ন হয়, তাহলে সে সহায়তা ও সমর্থনের আরও বেশি যোগ্য(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)

এর মানে বুঝতে পেরে সত্যিই লজ্জিত হলাম। ঈশ্বর অন্তিম সময়ে দেহ ধারণ করেছেন আর আমাদের পরিত্রাণের জন্যই আমাদের মধ্যে কথা বলতে আর কাজ করতে এসেছেন। তিনি জানেন শয়তান আমাদের কতটা গভীরভাবে কলুষিত করেছে, আমরা সব সময় বিদ্রোহ আর প্রতিরোধ করে যাই। প্রত্যেক মানুষকে উদ্ধারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা তিনি করেন। কারো মধ্যে সামান্যতম আশা থাকলেও ইশ্বর তাকে প্রত্যাখ্যান করেন না। মানুষের জন্য ঈশ্বর করুণাসাগর আর দয়াসাগর—আমাদের প্রতি তাঁর ভালবাসা অসীম। সেই নতুন বিশ্বাসীরা ছিল সদ্যোজাত শিশুর মত। তারা সত্য বোঝেনি, তাদের মধ্যে তখনও সত্যের ভিত গড়ে ওঠেনি, তাদের জীবনের ভিত শক্ত হয়নি। ঈশ্বর তাদের সাথে স্নেহশীল আর সহনশীল হতে বলেন। যতদিন তাদের সত্যিকারের ধর্মবিশ্বাস আর মানবিকতা থাকবে, ততদিন তারা দুর্বল হলে, ধর্মীয় পূর্বধারণা রাখলে আর সমাবেশে যোগ দেওয়ার সময় না পেলেও, আমরা তাদের হঠাৎ করে বাতিলের দলে ফেলতে পারি না। সামান্য একটা কারণে তাদের আমরা সরিয়ে দিতে পারি না। তারা সমাবেশে যোগ দিচ্ছিল না না বলেই তারা সত্যিকারের ধর্মবিশ্বাসী নয়, এমন ভেবে তাদের পুরোপুরি উপেক্ষা করা উচিত নয়। সেটা হবে তাদের আঘাত করারই সমতুল। যখন আমার বিশ্বাস সবে গড়ে উঠছিল, তখন ঘরসংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম বলে সমাবেশে ঠিকমত যেতাম না, কিন্তু ভ্রাতা আর ভগিনীরা তা বুঝতে পেরে, আমার সময়মত, সমাবেশের সময় পরিবর্তন করত, আর আমার সাথে অক্লান্তভাবে আলোচনা করত। তাদের সাহায্য আর সমর্থন আমাকে সত্য অনুসরণের গুরুত্ব বুঝতে শিখিয়েছে, আমার জন্য ঈশ্বরের ভালোবাসা আর সহনশীলতা অনুভব করতে পারতাম। এরপর থেকে স্বাভাবিকভাবেই সমাবেশে যোগ দিতে আর দায়িত্ব পালন করতে পারতাম। সেই সময় যদি ভ্রাতা আর ভগিনীরা আমাকে হেয় করত, তারা যদি এটা ভাবত যে আমি সত্যকে ভালবাসি না আর আমি অবিশ্বাসী, তাহলে তারা আমাকে নিয়ে অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিত, তাহলে আজ আমি এখানে কখনই পৌঁছাতে পারতাম না! ভেবে দেখলাম আমি আদৌ ঈশ্বরের ইচ্ছার পরোয়া করছিলাম না অথবা নবাগতদের অসুবিধাও বুঝছিলাম না। তাদের পছন্দ করতাম না, তাদের উপর অসন্তুষ্টও ছিলাম, ভাবতাম যে তারা শুধু এটা-সেটা নিয়ে ব্যস্ত ছিল, নানান ধারণায় আবদ্ধ ছিল, তাই তাদের দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম, তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম, তাদের সাহায্য করতে আর বেশি মূল্য দিতে চাইনি। আমার মানবিকতাবোধ এতটাই কম ছিল, আর নতুন বিশ্বাসীদের জীবনের কোনো দায়িত্বও নিতে চাইনি। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, “ঈশ্বর, আপনার কাছে অনুতাপ করতে চাই, আমায় পথ দেখান যাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার ভুলগুলো সংশোধন করতে পারি, আর এই মানুষগুলোকে স্নেহের সাথে সাহায্য আর সমর্থন করতে পারি।”

এরপর এইসব নবাগতদের সাহায্য করার জন্য অন্যান্য গির্জার সদস্যদের সাথে যেতে শুরু করি। আমরা তাদের জীবনসংগ্রাম সম্পর্কে শুনতাম, ধৈর্য ধরে তাদের সাথে আলোচনা করতাম, আর তাদের মধ্যে কয়েকজন সমাবেশে ফিরেও এসেছিল। তাদের একজন কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত ছিল যে তার পক্ষে সমাবেশে আসা কঠিন ছিল, সে বলল, “যতদিন অন্তর থেকে বিশ্বাস করি, ততদিন ঈশ্বর আমাকে কখনই তাড়িয়ে দেবেন না।” আগে ভাবতাম অর্থ উপার্জনের দিকেই তার মন পড়ে আছে আর তার সত্যিকারের বিশ্বাস ছিল না, কিন্তু তার দিকটা বোঝার পর দেখলাম যে সে সমাবেশে আসছিল না কারণ আমরা তাদের যে সময়ে আসতে বলতাম সেটা তার কাজে ব্যাঘাত ঘটাত। আমরা তার জন্য আমাদের দেখা-সাক্ষাতের সময় বদলে দিলাম আর তার সাথে আলোচনাকরলাম, তাই সে বুঝতে পেরেছিল যে অন্তিম সময়ে, ঈশ্বর সত্যকে কাজে লাগিয়ে মানবজাতিকে পরিশুদ্ধ ও উদ্ধার করেন সত্যিকারের ধর্মবিশ্বাসীদের একত্রিত হয়ে ঈশ্বরের বাণী নিয়ে আলোচনা করা দরকার। সত্যকে অনুসরণ করা আর সত্যলাভ করা, কলুষিত স্বভাব ত্যাগ করা আর তাদের জীবনে পরিবর্তন আনা দরকার, আর সেটাই ঈশ্বরের মাধ্যমে উদ্ধার পাওয়ার পাশাপাশি তাঁর অনুমোদন লাভের একমাত্র উপায়। সমাবেশে যোগ না দিয়ে বিশ্বাস রাখা, শুধুনিজের অন্তরে ধর্মবিশ্বাস রেখে ঈশ্বরকে স্বীকার করা, অথবা এটাকে শখ হিসাবে দেখার মানে ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আপনি অবিশ্বাসীর মতই। এমনকি শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস রাখলেওকখনই ঈশ্বরের অনুমোদন পাবেন না। আলোচনার মাধ্যমেসে বুঝতে পেরেছিল যে তার দৃষ্টিভঙ্গি ভুল আর আবার সমাবেশে যোগ দিতে চেয়েছিল। এই ভেবে ভীষণ খারাপ লাগছিল আর যখন দেখলাম যে এই সমস্ত নতুন বিশ্বাসীরা একের পর এক সমাবেশে যোগ দিতে ফিরে আসছে তখন ভীষণ অনুতাপ হচ্ছিল। আর আমি নির্বিচারে এদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম। তাদের পরিত্রাণের সম্ভাবনা প্রায় নষ্ট করে দিয়েছিলাম, সেটা হলে কত বড় খারাপ কাজ হত।

একদিন, নেত্রী আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “সিঞ্চনের কাজ হাতে নেওয়ার পর থেকে, দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে কতজন নবাগতকে বহিষ্কার করেছ? যখন তাদের বহিষ্কার করেছিলে, তখন কি সত্যনীতির বিষয়ে জানতে চেয়েছিলে?” তাঁকে কী বলব ভেবে পাইনি। তারপর তিনি আমাকে ঈশ্বরের বাণীর একটা অনুচ্ছেদ পাঠালেন: “অনেকেই আছে যারা যে কাজই করুক না কেন তাদের নিজেদের ধারণাকেই অনুসরণ করে, এবং বিষয়গুলোকে অত্যন্ত সহজসরলভাবে বিবেচনা করে, আর সত্যের সন্ধানও করে না। সেখানে নীতি একেবারেই অনুপস্থিত, এবং তাদের অন্তরে তারা একেবারেই চিন্তা করে না যে ঈশ্বর যেভাবে বলেন কী করে সেই অনুযায়ী কাজ করা যায়, অথবা সেইভাবে কাজ করা যায় যা ঈশ্বরকে পরিতুষ্ট করে, তারা শুধু জানে জেদীর মতো নিজেদের ইচ্ছাকে অনুসরণ করতে। এরকম মানুষের হৃদয়ে ঈশ্বরের কোনো স্থান নেই। কেউ কেউ বলে, ‘আমি শুধু তখনই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যখন অসুবিধার সম্মুখীন হই, কিন্তু তবুও অনুভব করি না যে এর কোনো প্রভাব আছে—তাই আজকাল যখন আমার সাথে কিছু ঘটে, আমি সাধারণত ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি না, কারণ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা ক’রে কোনো লাভ হয় না।’ এই ধরনের মানুষের হৃদয়ে ঈশ্বর একেবারেই অনুপস্থিত। তারা যা-ই করুক তাতে সত্যের সন্ধান করে না; শুধু নিজেদের ধারণাগুলোকেই অনুসরণ করে। তাহলে তাদের কাজকর্মে কি কোথাও নীতি রয়েছে? অবশ্যই না। তারা সবকিছুকেই সহজভাবে দেখে। এমনকি যখন তাদের কাছে কেউ সত্যের নীতির আলোচনা করে, তখন তারা সেগুলো গ্রহণ করতে পারে না, কারণ তাদের কোনো কাজে কখনোই কোনো নীতি ছিল না, তাদের হৃদয়ে ঈশ্বরের কোনো স্থান নেই, এবং তাদের অন্তরে তারা নিজেরা ছাড়া অন্য কেউই নেই। তারা ভাবে যে তাদের অভিপ্রায় ভালো, তারা কোনো মন্দকাজ করছে না, তারা সত্যের লঙ্ঘন করছে বলেও বিবেচনা করা যাবে না, তারা মনে করে যে তাদের নিজেদের অভিপ্রায় অনুযায়ী কাজ করলেই সত্যের অনুশীলন হওয়া উচিত, এভাবে আচরণ করাই ঈশ্বরকে মান্য করা। বস্তুত, তারা এই বিষয়ে প্রকৃতপক্ষে সন্ধান করছে না বা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছে না, বরং নিজেদের উৎসাহপূর্ণ অভিপ্রায় অনুযায়ী আবেগতাড়িত হয়ে কাজ করছে, ঈশ্বর যেভাবে চান সেভাবে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছে না, ঈশ্বরের প্রতি অনুগত এক হৃদয় তাদের নেই, সেই ইচ্ছাও তাদের নেই। মানুষের অনুশীলনে এটাই সবচেয়ে বড় ভুল। তুমি যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস করো অথচ তোমার হৃদয়ে তিনি না থাকেন, তাহলে কি তুমি ঈশ্বরকে প্রতারণা করার চেষ্টা করছো না? এবং এরকম ঈশ্বর-বিশ্বাসের প্রভাব কী হতে পারে? ঠিক কী-ই বা তুমি অর্জন করতে পারো? আর এরকম ঈশ্বর-বিশ্বাসের অর্থই বা কী?(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। ঈশ্বরের বাণী আমার সঠিক অবস্থা আর আচরণ প্রকাশ করল। যখন সেইসব নতুন বিশ্বাসীদের বহিষ্কার করেছিলাম, তখন প্রার্থনা করিনি বা সত্যের সন্ধান করিনি, এমনকি আমার নেত্রীর সাথে এই নিয়ে আলোচনাও করিনি। অন্ধভাবে নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই ভেবে কাজ করেছি যে আগেও নবাগতদের সিঞ্চন করেছি, তখন যদি তারা কয়েক মাস ধরে সমাবেশ এড়িয়ে যেত, তাহলে আমরা তাদের বহিষ্কার করতাম, তাই এরাও ফিরে না এলে আমার কি একই কাজ করা উচিত নয়? ভেবেছিলাম কারা সত্যসন্ধানী নয় বা অবিশ্বাসী সে সম্পর্কে আমার স্পষ্ট ধারণা ছিল, তাই বেশি কিছু না ভেবেই তাদের বাতিল করেছিলাম ও, মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম। এই বিষয়ে অস্বস্তি বোধ করলেও প্রার্থনা করিনি বা অন্বেষণ, আমার সঙ্গী যখন এই কথা বলেছিল তখনও ভেবে দেখিনি, শুধুইস্বেচ্ছাচারিতা করেছিলাম। আমার ধ্যানধারণা আর কল্পনাকে সত্যনীতির মত বিবেচনা করেছিলাম, ভাবতাম আমি ভুল করতেই পারি না। অন্যদের তুচ্ছ মনে করতাম, আর হৃদয়ে ঈশ্বরকে স্থান দিইনি। বড্ড স্বেচ্ছাচারী ছিলাম! নতুন বিশ্বাসীরা সমাবেশে যোগ দিয়েছে কিনা শুধু সেই ভিত্তিতে বিচার করতাম যে তাদের প্রকৃত বিশ্বাস রয়েছে কিনা। ভাবতাম যদি কিছু সময় ধরে তাদের দেখা না মেলে এবং যদি তারা ফিরে না আসে তবে আমরা তাদের বহিষ্কার করতে পারি। যদিও তারা সমাবেশে যোগ দিচ্ছিল না, তবুও আমার পার্থক্য করা উচিত ছিল যে কারা সত্যিকারের বিশ্বাসী আর কারা অবিশ্বাসী। যাদের আমি বহিষ্কার করেছিলাম তাদের মধ্যে এমন কয়েকজনও ছিল যারা অনিচ্ছা সত্বেও পরিবারের সদস্যদের সাথে আসত কারণ তাদের পরিবার আশা করেছিল এরা বিশ্বাসী হবে, কিন্তু এসবে তাদের মন ছিল না, তারা ঈশ্বরের বাণী পড়তে বা সমাবেশে যোগ দিতে পছন্দ করত না, তাদের মধ্যে কেউ কেউ খ্যাতি, যশের পেছনে ছুটতে, আর খারাপ প্রবণতা অনুসরণ করতে থাকে। তারা মোটেই ঈশ্বরকে অনুসরণ করতে আগ্রহী ছিল না, ঈশ্বরের বাণীর ওপর যে কোনো ধরনের আলোচনাকে ঘৃণা আর প্রতিরোধ করত। তারা স্বভাবগতভাবেই সত্যকে ঘৃণা করত, তাই তারা সহজাত অবিশ্বাসী। এই ধরনের লোকেরা সমাবেশে যোগ না দিলেআমরা তাদের বহিষ্কার করতে পারি। কিছু নবাগত ছিল মানবিক, আর প্রকৃত অর্থেই ঈশ্বরে বিশ্বাস করত, কিন্তু সত্যকে বা সমাবেশের তাৎপর্য বুঝতে পারেনি কারণ তারা সবে শুরু করেছিল। তারা ভাবত শুধু মনে মনে ঈশ্বরে বিশ্বাস করাটাইজরুরি, সমাবেশগুলো কোনও ব্যাপার নয়, তাই তারা এ নিয়ে তেমন মাথা ঘামাত না, যখন পারত আসত, না পারলে আসত না। কারো কারো সত্যিকারের সমস্যা ছিল, যেমন কাজ আর সমাবেশ একই সময়ে পড়ে যেত, তখন তারা আসতে চাইত না। আমাদের যা করা দরকার তা হচ্ছে স্নেহের সাথে তাদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে তাদেরসাহায্য করা তাদের পূর্বধারণাগুলির মীমাংসা করার জন্য ঈশ্বরের বাক্যগুলিকে ব্যবহার করা এবং মানুষকে উদ্ধার করার জন্য ঈশ্বররের ইচ্ছা সন্বন্ধে তাদের বোঝানো, সেই সাথে তাদের কাজের সময়সূচী অনুযায়ী সমাবেশগুলি আয়োজন করা। তাদের প্রকৃত অবস্থা আর আমার দায়িত্বপালনের নীতির মধ্যে কোনো পার্থক্য করছিলাম না। সত্য না বুঝেইএকগুঁয়ের মতো স্বেচ্ছাচার করতাম, দায়সারাভাবে নবাগতদের বহিষ্কার করতাম।

ঈশ্বর প্রত্যেক নতুন বিশ্বাসীর জন্য বিরাট মূল্য দিয়েছেন যে অন্তিম সময়ের ঈশ্বরের কাজকে গ্রহণ করেছে। যেসব ভ্রাতা আর ভগিনী ধৈর্য ধরে, স্নেহভরে সত্যের সন্ধান না করেই তাদের সঙ্গে একাধিকবার সুসমাচার প্রচার করত, ইশ্বরতাদের ঈশ্বর উদ্ধার করবেন না ভেবে তাদের আমিদূরে ঠেলে দিয়েছিলাম। সত্যিইঅহেতুকভাবে অহংকারী ছিলাম আমি। তাদের সমাবেশে না আসাটা তাদের কাছে কোনও সমস্যা ছিল না, কিন্তু তাদের কী পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে সেটা আমি জানতাম না, যেভাবে তাদের সাহায্য আর সমর্থন করা উচিত ছিল সেভাবে করিনিআর আর সেটাই ছিল আসল সমস্যা। আমি এও বলতাম যে ঈশ্বর বেশি করে লোক চান না, সেরা লোক চান, কথাটা ছিল নবাগতদের বহিষ্কার করার অজুহাত মাত্র। কিন্তু কথাটার আসল মানে ছিল, ঈশ্বরের রাজ্যে এমন লোক দরকার, যাদের প্রকৃত বিশ্বাস রয়েছে এবং যারা সত্যকে ভালবাসে, এবং ঈশ্বর অবিশ্বাসী, অন্যায়কারী আর খ্রীষ্টবিরোধীদের রক্ষা করেন না। তবে আমার বিচারে মনে হয়েছিল যে নতুন বিশ্বাসীদের মধ্যে যারা সব সমাবেশে আসে না তাদের ঈশ্বর রক্ষা করবেন না। ঈশ্বরের বাণীর ভুল ব্যাখ্যা করেছিলাম। তাদের সাথে কোন ব্যবহারিক আলোচনা বা সাহায্য করিনি, অথবা কোনো মূল্যও দিইনি আর যা করা উচিত ছিল তাও করিনি। এও বুঝতে পারিনি যে তারা আদৌই সত্যের পরোয়া করে কি না, কিংবা তারা সত্যিকারের অবিশ্বাসী কিনা, শুধু অন্ধের মতো একতরফাভাবে তাদের প্রত্যাখ্যান করেছি। নেত্রী যদি আমার ছাঁটাই ও মোকাবিলা না করতেন, তাহলে বুঝতেই পারতাম না যে সেই সমস্ত মানুষের পরিত্রাণের সুযোগ আমি নষ্ট করছিলাম। তখন বুঝতে পারলাম আমার আচরণ কতটা ঘৃণ্য ছিল। নীতির বিষয়ে জানতাম না বা জানতে চাইনি, শুধু নিজের শয়তানোচিতস্বভাব অনুযায়ী কাজ করেছি। এগুলো ছিল অধর্ম! জানতাম আমাকে অনুতাপ করতে হবে আর নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে, নাহলে ঈশ্বর নিশ্চয়ই আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন।

গির্জার নেত্রী হিসাবে, ঈশ্বরের ইচ্ছা, আমি যেন নবাগতবিশ্বাসী ভ্রাতা আর ভগিনীদের সিঞ্চনও প্রতিপালন করি। যেন তাদের পূর্বধারণার মীমাংসা আর সমস্যার সমাধানে সাহায্য করি, যাতে তারা ঈশ্বরের কাজ সম্পর্কে জানতে পারে আর সত্য পথে নামতে পারে। কিন্তু আমি যা খুশি তাই করছিলাম। নিজের ইচ্ছে মতো পথে চলছিলাম, নিজে অন্ধ হয়ে অন্ধদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলাম, অন্যদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছিলাম, তাই ভ্রাতা আর ভগিনীরাও নির্বিচারে নতুন বিশ্বাসীদের প্রত্যাখ্যান করেতাদের পরিত্রাণের সুযোগ নষ্ট করেছিল। আমি খারাপ কাজ করছিলাম। যখন দেখলাম নিজের ইচ্ছামত কাজ করার পরিণতি কতটা গুরুতর হতে পারে তখন খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। নিজের প্রতি ঘৃণাও হয়েছিল। সেই সময়ে কেন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করিনি বা সত্যনীতি সন্ধান করিনি? কেন আমার নেত্রীর কাছে যাইনি? এত স্পর্ধা নিয়ে কাজ করছিলাম কেন? তখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, তারপর ঈশ্বরের বাণীর একটা অনুচ্ছেদ পড়লাম। “যদি নিজের অন্তরে তুমি প্রকৃতই সত্য উপলব্ধি করে থাকো, তবে কীভাবে সত্য অনুশীলন করতে হয় এবং ঈশ্বরকে মান্য করতে হয়, তা তুমি জানবে এবং স্বাভাবিকভাবেই সত্য অন্বেষণের পথে পদার্পণ করবে। তুমি যে পথে চলো সেটা যদি সঠিক হয়, ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়, তাহলে পবিত্র আত্মার কাজ তোমাকে ত্যাগ করবে না—সেক্ষেত্রে ঈশ্বরের প্রতি তোমার বিশ্বাসঘাতকতা করার সম্ভাবনা খুবই কমে যাবে। সত্যের অনুপস্থিতিতে মন্দ কর্ম করা সহজ এবং তোমার ইচ্ছা না থাকলেও তা করে ফেলবে। যেমন ধরো, তোমার স্বভাব যদি উদ্ধত ও দাম্ভিক হয়, তাহলে ঈশ্বরের বিরোধিতা করতে তোমাকে নিষেধ করলেও কোনো লাভই হবে না, তা থেকে তুমি নিজেকে আটকাতে পারবে না, এটা তোমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তুমি স্বেচ্ছায় তা করবে না; বরং তোমার উদ্ধত ও দাম্ভিক প্রকৃতিই তোমাকে দিয়ে তা করাবে। তোমার ঔদ্ধত্য ও দাম্ভিকতার ফলে তুমি ঈশ্বরকে হীন চোখে দেখবে এবং তাঁকে তোমার মূল্যহীন মনে হবে; এই স্বভাবের জন্য তুমি নিজেই নিজেকে উচ্চে স্থাপন করবে, ক্রমাগত নিজের প্রদর্শন করবে; এগুলো তোমাকে দিয়ে অন্যদের অবজ্ঞা করাবে, তোমার হৃদয়ে তোমাকে ছাড়া আর কাউকে থাকতে দেবে না; এগুলো তোমার হৃদয় থেকে ঈশ্বরের স্থান কেড়ে নেবে এবং শেষ পর্যন্ত তোমাকে দিয়েই ঈশ্বরের স্থানে বসিয়ে দাবি করাবে যাতে মানুষ তোমার প্রতি সমর্পণ করে, এবং তোমাকে তোমার নিজস্ব চিন্তা, আদর্শ ও পূর্বধারণাগুলোকেই সত্য মনে করিয়ে সেগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলবে। ঔদ্ধত্য ও দাম্ভিক প্রকৃতির আধিপত্যে মানুষ এতটাই মন্দ কাজ করে!(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র সত্যের অন্বেষণের মাধ্যমেই স্বভাবের পরিবর্তন অর্জন করা যায়)। এটা অনেকবার পড়েছি, কিন্তু এই অভিজ্ঞতার সময় এটা আমার হৃদয় স্পর্শ করল। গির্জার নেত্রী হিসাবে দীর্ঘদিন কাজ করিনি আর সত্যের বাস্তবতার কোনো ধারণা ছিল না। সত্যের অনেক নীতিই বুঝতাম না, কিন্তু নিজের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করতাম, যেন সবকিছু বুঝি। নতুন বিশ্বাসীদের ক্ষেত্রে, তারা কী করছে শুধু তাই দেখে তাদের বিচার করতাম, তাদের অন্তর দেখে নয়। তাছাড়া নিজেকে কেউকেটা ভাবতাম বলে প্রার্থনা করিনি বা অন্বেষণ করিনি বা আমার নেত্রীর সাথে আলোচনাও করিনি, এমনকি আমার সঙ্গীর সঙ্গে পরামর্শও শুনিনি। ভীষণরকমের অহংকারী ছিলাম। নতুন বিশ্বাসীদের সাথে কীভাবে আচরণ করা যায় সে সম্পর্কে প্রচুর নীতি আছে, যেমন মানুষকে স্নেহের সাথে সাহায্য করার নীতি, মানুষের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করার নীতি। তাদের পূর্বধারণার সমাধান করার সত্যনীতি আরও অনেক নীতি। যদি ঈশ্বরের প্রতি আমার সামান্যতম শ্রদ্ধা থাকত আর নিজে এতটা আত্মবিশ্বাসী না হয়ে, এই নীতিগুলির উপর মনোযোগ দিতাম, তাহলে কখনই আমাদের কাজ নিয়ে এত মাথামোটার মত আচরণ করতাম না আর সেই কাজে ব্যাঘাত ঘটাতাম না। বুঝতে পারলাম যে আমার অহংকারী স্বভাব নিয়ে থাকার ফলে শুধু মন্দ কাজ করতে আর ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করতে বাধ্য হচ্ছিলাম। সেই সময় নিজেকে আরও বেশি করে ঘৃণা করতাম আর মনে হত, আমার সত্যিই ঈশ্বরের অভিশাপ প্রাপ্য। তখন শপথ নিলাম যেআমার অহংকারী স্বভাব দূর করতে সত্যের সন্ধান করবই।

এরপর কয়েকটা অনুচ্ছেদ পড়লাম। “গির্জার নেতা ও কর্মীদের নিজেদের কাজে দুটো নীতির প্রতি অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে: একটা হল কাজের আয়োজনের দ্বারা নির্ধারিত নীতিগুলো অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করে তাদের কাজ করা, কখনো সেইসব নীতি লঙ্ঘন না করা এবং নিজেদের কল্পনা বা নিজস্ব ধারণার উপর নির্ভর করে কাজ না করা। তারা যা করে তার সমস্তকিছুতেই গির্জার কাজের প্রতি তাদের উদ্বেগ প্রদর্শন উচিত, এবং সর্বদা ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থকে সর্বপ্রথমে স্থান দেওয়া উচিত। আরেকটা বিষয় হল—আর এটাই সবচেয়ে গুরুতর—সমস্তকিছুতে তাদের অবশ্যই পবিত্র আত্মার পথনির্দেশ অনুসরণের প্রতি মনোযোগী হতে হবে এবং সকল কাজ কঠোরভাবে ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে নির্বাহ করতে হবে। যদি তারা তখনও পবিত্র আত্মার পথনির্দেশের বিরুদ্ধে যেতে সক্ষম হয়, অথবা যদি তারা জেদীর মতো তাদের নিজেদের ধারণাগুলোকেই অনুসরণ করে আর নিজেদের কল্পনা অনুসারেই কাজ করে, তাহলে তাদের কার্যকলাপ ঈশ্বরের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর প্রতিরোধ গড়ে তুলবে(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। “তুমি যখন এমন কিছু করেছো যা সত্যের নীতি লঙ্ঘন করে এবং যা ঈশ্বরের কাছে অসন্তোষজনক, তখন তোমার কীভাবে আত্ম-অনুসন্ধান করা উচিত ও নিজেকে জানার চেষ্টা করা উচিত? যখন তুমি তা করতে যাচ্ছিল, তখন কি তাঁর কাছে প্রার্থনা করেছিলে? তুমি কি কখনো বিবেচনা করেছো, ‘এইভাবে কিছু করা কি সত্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ? এই বিষয়টা যদি ঈশ্বরের সামনে উপস্থাপিত করা হয় তাহলে তিনি এটাকে কোন দৃষ্টিতে দেখবেন? তিনি যদি এটার বিষয়ে জানতেন তাহলে খুশি হতেন, না বিরক্ত হতেন? তিনি কি এটাকে ঘৃণা করতেন, নাকি এর জন্য বিতৃষ্ণা বোধ করতেন?’ তুমি এসবের সন্ধান করোনি, করেছিলে কি? এমনকি অন্যরা যদি তোমায় স্মরণ করিয়েও থাকে, তুমি তবুও মনে করেছো যে এটা তেমন কোনো বড় ব্যাপার নয়, এটা কোনো নীতির বিরুদ্ধে যাওয়া নয় বা কোনো পাপ নয়। পরিণাম হিসাবে, তুমি ঈশ্বরের স্বভাবকে ক্ষুব্ধ করেছো এবং তাঁকে ক্রোধে প্রবৃত্ত করেছো, এমনকি এতদূর পর্যন্ত যতক্ষণ না তিনি তোমাকে ঘৃণা করছেন। মানুষেদর বিদ্রোহী মনোভাব থেকেই এর উৎপত্তি। তাই, সমস্তকিছুর মধ্যেই তোমার সত্যের সন্ধান করা উচিত। এটা তোমার অবশ্যই অনুসরণ করা উচিত। তুমি যদি আগে থেকেই প্রার্থনা করার জন্য আন্তরিকভাবে ঈশ্বরের সম্মুখে আসতে পারো, এবং তারপর ঈশ্বরের বাক্য অনুযায়ী সত্যের সন্ধান করতে পারো, তাহলে তোমার ভুল হবে না। সত্যের অনুশীলনে হয়ত তোমার কিছু বিচ্যুতি থাকতে পারে, কিন্তু তা এড়িয়ে যাওয়া কঠিন, এবং কিছুটা অভিজ্ঞতা লাভের পরেই তুমি সঠিকভাবে অনুশীলন করতে পারবে। তবে, তুমি যদি জানো কী করে সত্যের সাথে সঙ্গতভাবে কাজ করতে হয়, তবুও তা অনুশীলন না করো, তাহলে সমস্যাটা হল সত্যের প্রতি তোমার বিরাগ। যারা সত্যকে ভালোবাসে না তারা কখনো সত্যের সন্ধানও করবে না, তাদের সাথে যা-ই হয়ে যাক না কেন। যারা সত্যকে ভালোবাসে শুধু তাদেরই এমন হৃদয় আছে যা ঈশ্বরে ভীত, এবং যখন এমন কিছু ঘটে যা তাদের বোধগম্য হয় না, তখন তারা সত্যের সন্ধান করতে সক্ষম হয়। যদি তুমি ঈশ্বরের ইচ্ছা উপলব্ধি করতে না পারো, এবং না জানো যে কীভাবে অনুশীলন করতে হয়, তাহলে তোমার উচিত এমন মানুষদের সাথে আলোচনা করা যাদের সত্যের উপলব্ধি আছে। যদি তাদের খুঁজে না পাও যারা সত্যকে বোঝে, তাহলে তোমার উচিত এমন কিছু মানুষকে খুঁজে বার করা যাদের ঈশ্বরের সাথে সমভাব হয়ে প্রার্থনা করার মতো বিশুদ্ধ উপলব্ধি আছে, তোমার উচিত ঈশ্বরের থেকে সন্ধান করা, ঈশ্বরের সময়ের জন্য অপেক্ষা করা, এবং তোমার জন্য ঈশ্বরের একটা রাস্তা খুলে দেওয়ার প্রতীক্ষা করা। যতক্ষণ তুমি সত্যের জন্য আকুল হচ্ছো, সত্যের সন্ধান করছো, এবং একত্রে সত্যের আলাপ-আলোচনা করছো, ততক্ষণ এরকম সময় আসার সম্ভাবনা আছে যে তোমাদের মধ্যে কেউ একটা ভালো সমাধান উপস্থিত করবে। যদি তোমাদের সকলের মনে হয় যে সেই সমাধান উপযুক্ত এবং তা একটা ভালো উপায়, তবে তা হয়ত পবিত্র আত্মার কাছ থেকে আলোকপ্রাপ্তি ও প্রদীপ্তিলাভের জন্য হয়েছে। তারপর যদি তোমরা অনুশীলনের আরও নির্ভুল পথের সন্ধানে আলোচনা চালিয়ে যাও, তাহলে নিশ্চিতভাবেই তা সত্যের নীতির সাথে সঙ্গত হবে। নিজের অনুশীলনে যদি আবিষ্কার করো যে তোমার অনুশীলনের পথ এখনও কিছুটা অনুপযুক্ত, তাহলে তোমার উচিত শীঘ্রই সেটার সংশোধন করা। তুমি যদি সামান্য ভুল করো, ঈশ্বর তোমার নিন্দা করবেন না, কারণ তুমি যা করো তার অভিপ্রায় সঠিক, এবং তুমি সত্য অনুযায়ী অনুশীলন করছো। তুমি শুধুই নীতির বিষয়ে কিছুটা বিভ্রান্ত এবং নিজের অনুশীলনে একটা ভুল করে ফেলেছো, যা ক্ষমার যোগ্য। কিন্তু যখন অধিকাংশ মানুষ কিছু করে, তারা তাদের কল্পনার ভিত্তিতে যেমনভাবে সেটা করতে হবে বলে মনে হয় তেমনভাবে করে। কীভাবে সত্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে অনুশীলন করতে হবে বা কীভাবে ঈশ্বরের অনুমোদন অর্জন করা যাবে, সেই চিন্তার ভিত্তি হিসাবে তারা ঈশ্বরের বাক্যকে ব্যবহার করে না। পরিবর্তে, তারা শুধু চিন্তা করে কীভাবে নিজেদের উপকার করা যায়, কীভাবে অন্যদের নজরে উচ্চস্থান লাভ করা যায়, আর কীভাবে অন্যদের তারিফ আদায় করা যায়। সম্পূর্ণভাবে তাদের নিজেদের ধারণার উপর ভিত্তি করে ও শুধু নিজেদের সন্তুষ্ট করার জন্যই তারা কোনোকিছু করে, যা সমস্যাসঙ্কুল। এমন মানুষেরা কখনোই সত্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে কিছু করবে না, এবং ঈশ্বর সর্বদা তাদের ঘৃণা করবেন। তুমি যদি সত্যিই বিবেক ও চেতনাসম্পন্ন কেউ হও, তাহলে যা-ই ঘটুক না কেন, তোমার উচিত প্রার্থনা ও সন্ধানের উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের সম্মুখে আসতে সক্ষম হওয়া, নিজের কার্যকলাপের উদ্দেশ্য ও অশুদ্ধতাকে গুরুতরভাবে পরীক্ষা করতে সমর্থ হওয়া, ঈশ্বরের বাক্য ও তাঁর চাহিদা অনুযায়ী কী করা সঠিক তা নির্ধারণ করতে পারা, বারংবার পরিমাপ ও চিন্তা করা যে কোন কাজ ঈশ্বরের সন্তোষবিধান করে, কোন কাজ তাঁর বিতৃষ্ণা উদ্রেক করে, এবং কোন কাজ তাঁর অনুমোদন অর্জন করে। তোমাকে অবশ্যই এই বিষয়গুলো বারবার করে নিজের মনে সযত্নে চিন্তা করতে হবে যতক্ষণ না তুমি স্পষ্টভাবে এগুলো বুঝতে পারছো। তুমি যদি জানতে পারো যে কোনোকিছু করার পিছনে তোমার নিজস্ব উদ্দেশ্য রয়েছে, তাহলে তোমাকে অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে যে তোমার উদ্দেশ্যগুলো কী, তা কি তোমার নিজেকে সন্তুষ্ট করার জন্য, নাকি ঈশ্বরের সন্তোষবিধানের জন্য, তা তোমার উপকারের জন্য, নাকি ঈশ্বরের নির্বাচিত লোকজনের উপকারের জন্য, এবং এর পরিণাম কী হবে…। তুমি যদি তোমার প্রার্থনায় এইভাবে আরও বেশি সন্ধান করো এবং নিবিষ্ট হও, আর সত্যের সন্ধান করার জন্য নিজেকে আরও বেশি প্রশ্ন করো, তাহলে তোমার কাজের বিচ্যুতি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে উঠবে। শুধুমাত্র যারা এই উপায়ে সত্যের সন্ধান করতে পারে, তারাই ঈশ্বরের ইচ্ছার বিষয়ে বিবেচক এবং তারাই ঈশ্বরে ভীত, কারণ তুমি ঈশ্বরের বাক্যের চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে এবং এক অনুগত হৃদয়ের সাথে সন্ধান করছো, এবং এই উপায়ে অনুসন্ধানের ফলে তুমি যে সিদ্ধান্তে উপনীত হবে তা সত্যের নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)

তাঁর এই বাণী আমাকে চলার পথ দেখিয়েছে। নেতানেত্রী আর কর্মীদের কাজের ব্যবস্থা আর সত্যনীতি কঠোরভাবে মেনে কাজ করতে হবে, আর সব সময় পবিত্র আত্মার পথনির্দেশ মানতে হবে। তাছাড়া আমাদের প্রার্থনা করতে হবে, কর্তব্যের মধ্যে অন্বেষণ করতে হবে আর নিজেদের মনকে ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাখতে হবে, আমাদের নিজস্ব ভাবনা, পূর্বধারণা বা অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করা চলবে না, যা ইচ্ছা তাই করলে চলবে না। নিজেদের উপর অন্ধ বিশ্বাস না রেখে সত্যনীতি অন্বেষণ করতে হবে, আর যখন আমরা কোনো বিষয় বুঝতে পারব না, তখন আমাদের অন্বেষণ ও অন্যদের সাথে আলোচনা করা উচিত যাতে আমরা কাজ করার আগে তার নেপথ্যের নীতিটা বুঝতে পারি। এটাই ঈশ্বরের ইচ্ছা। এই অভিজ্ঞতা থেকে খুব ভালো শিক্ষা পেয়েছি। ঈশ্বর যদি ঘটনাগুলোকে না সাজিয়ে আমার সমালোচনা করার জন্য নেত্রীকে না পাঠাতেন, তাহলে এখনও বুঝতে পারতাম না যে আমার কাজের পরিণতি কতটা ভয়ংকর হত। তখন নিজেকে বললাম যে এবার থেলে আমি সত্যের অন্বেষণ ন করব আর নীতির ভিত্তিতে আমার কর্তব্য পালন করব। পরে, কয়েকজন নতুন সদস্য সমাবেশে আসা বন্ধ করে দেয়, তখন কিন্তু অনুমানের পথে হাঁটিনি, আর দাম্ভিকের মতো তাদের বহিষ্কারের ধৃষ্টতা করিনি। তাদের মধ্যে একজনের দিকে আমরা অনেকবার সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলাম, আর আমাদের নেত্রীর সাথে তার পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেছিলাম। যখন এ ব্যাপারে নিশ্চিত হলাম যে সে অবিশ্বাসী তখন তাকে বহিষ্কার করলাম। অন্যজন ছিল এক ভগিনী, সে দু’ বছরেরও কম সময় ধরে ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিল, তার ঈশ্বরের বাণী পড়তে ভাল লাগত আর নিজের কর্তব্য যথাসাধ্য পালন করত, আর যখন সে ঈশ্বরের বাণী পাঠ করে মানুষের দুর্নীতির বিচার আর তা প্রকাশ করত, তখন সে নিজের সাথে তাদের তুলনা করত, তার মনে হত, সে একেবারেই ভ্রষ্ট। আর সে হাল ছেড়ে দিচ্ছিল। আমরা একসঙ্গে ঈশ্বরের বাণী নিয়ে তার সাথে আলোচনা করেছিলাম যাতে সে দেখতে পায় যে আমাদের মধ্যে যারা শয়তানের মাধ্যমেকলুষিত হয়েছে, ঈশ্বরের পরিত্রাণ তাদের জন্যই, ঈশ্বর আমাদের সমস্যা আর দুর্বলতাগুলো মায়ের মতই বোঝেন, আর যতক্ষণ আমরা সত্যের অন্বেষণ ত্যাগ না করি, ততক্ষণ ঈশ্বরও আমাদের ত্যাগ করেন না, কারণ ঈশ্বর যতদূর সম্ভব মানুষকে উদ্ধার করেন। আমরা যখন কথাটা বললাম তখন ওর সারা মুখে চোখের জলে ভিজে গেছে, সে ঈশ্বরের ভালবাসা অনুভব করতে পেরেছিল। তাকে আমরা কয়েকবার সাহায্য করেছিলামআর এখন সে আবার স্বাভাবিকভাবেই সমাবেশে যোগ দিচ্ছে।

এই অভিজ্ঞতা ভ্রষ্ট মানবজাতিকে উদ্ধার করতে ঈশ্বরের আন্তরিক অভিপ্রায় আর অবিশ্বাস্য ভালোবাসার পরিচয় আমাকে দিয়েছে। আর ঈশ্বরের বাণীর বাস্তব প্রতিফলন দেখে, আমার অহংকারী স্বভাব সম্পর্কে কিছুটা বুঝতে পেরেছি, সেই সঙ্গে নিজের মতো করে দায়িত্ব পালনের বিপদ আর পরিণতিও দেখেছি। অবশেষে ঈশ্বরের জন্য কিছুটা নিষ্ঠা জেগেছে। এখন ঈশ্বরের পথনির্দেশে মেনে এই নীতি অনুসারে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারি। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

Leave a Reply

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন