বন্ধুপরায়ণতা কি ভালো মানবিকতার উপযুক্ত মানদণ্ড?

04-09-2023

যখন ছোট ছিলাম, লোকজন সবসময় বলত আমি বিচক্ষণ ও ভদ্র; এক কথায়, ভালো মেয়ে। খুবই কম কারো উপর রাগ করতাম, কখনোই ঝামেলা করতাম না। বিশ্বাস গ্রহণের পরে, অন্য ব্রাদার-সিস্টারদের সাথেও বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করতাম। ছিলাম সহিষ্ণু, ধৈর্য্যশীল ও স্নেহময়। মনে আছে একবার কিছু বয়স্ক সদস্যদের শেখাচ্ছিলাম কীভাবে কম্পিউটার চালাতে হয়, ধৈর্য্য ধরে বার বার তাদের শেখাচ্ছিলাম। যদিও-বা কখনো তাদের শেখার ধীর গতি দেখে একটু রেগেই যাচ্ছিলাম, খুব চেষ্টা করছিলাম যাতে অধৈর্য প্রকাশ না পায়, পাছে অন্যরা বলে আমার মধ্যে স্নেহ-ভালোবাসার অভাব আছে, সেই ভয়ে। ফলে, ব্রাদার-সিস্টাররা প্রায়ই বলত আমার মানবিকতা বেশ ভালো, আর নেতা আমাকে নতুনদের জলদানে নিয়োগ করে, বলে কেবল যাদের দয়া ও ধৈর্য্য আছে তারাই এই কাজ ভালো পারবে। একথা শুনে আমার ভীষণ আত্মতৃপ্তি হয়, আর আরো নিশ্চিত হই যে বন্ধুপরায়ণতা আর দয়ামায়া ভালো মানবিকতার লক্ষণ।

পরে, সিস্টার লি মিং আর আমি গির্জার দায়িত্ব ভাগ করে নিই। বেশ কিছুদিন একসাথে কাজ করার পর, খেয়াল করলাম লি মিং নিজের মতো করে কাজ করতে চায়, আর তার রাগও একটু বেশি। কোনো কিছু তার মনমতো না হলে, সে প্রায়ই রেগে যেত। আর, সে তার কাজেও স্বচ্ছ ছিল না, প্রায়ই প্রতারণা করত। সে নীতি অনুযায়ী কাজ করত না আর গির্জার কাজকেও রক্ষা করত না। বেশ কিছুদিন, সে নিজের মোবাইল থেকে ব্রাদার-সিস্টারদের সাথে যোগাযোগ করে। আমি জানতাম এতে পুলিশ তাদের উপর নজর রাখতে আর গির্জাকে বিপদে ফেলতে পারবে, অনেকবারই ভেবেছিলাম তাকে থামাবো, কিন্তু যখনই সে কথা বলতে গেছি, থেমে গেছি। মনে হয়েছে যদি সরাসরি তার সমস্যার কথা বলি, সে মনে করতে পারে বাইরে বাইরে ভালো মানুষের মতো আচরণ করলেও, কথায় ও কাজে আমি খুবই নিষ্ঠুর, তাই একসাথে পথচলা কঠিন। আবার ভাবার পরে, আপোস করার সিন্ধান্ত নিই, শুধু জিজ্ঞাসা করি সে নিজের মোবাইল ব্যবহার করছে কি না। সে যখন তা অস্বীকার করে, সে মিথ্যা বলছে জেনেও তাকে অনাবৃত করে থামাইনি, আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হবে আর সে আমাকে খারাপ ভাববে, এই ভয়ে। পরে, খেয়াল করলাম লি মিংয়ের সমস্যাগুলো দিন-কে-দিন গুরুতর উঠছে। একবার, কিছু ব্রাদার-সিস্টার আমাকে বলল তার স্বামী সমাবেশে সবসময় লোক দেখানোর জন্য মতবাদ নিয়ে কথা বলে, ব্যবহারিক সমস্যার সমাধান করে না, আর সবাইকে বলে নিজের দায়িত্বে সে কত কষ্ট সহ্য ও ত্যাগ স্বীকার করেছে নিছকই সবার প্রশংসা পেতে। তদন্তের পর নির্ধারিত হয় যে সে নেতা হওয়ার অযোগ্য, তার বরখাস্ত হওয়া উচিত। সে কথা যখন লি মিংকে বলি, সে খুব রেগে যায়, বলে ব্রাদার-সিস্টাররা ভুল মূল্যায়ন করেছে, তার স্বামীর প্রতি অন্যায় করেছে। এমনকি প্রশ্ন তোলে কেন যারা এই বিষয়টা তুলেছে তাদের ব্যাপারে তদন্ত না করে আমরা কেবল তার স্বামীরই তদন্ত করেছি। হতভম্ব হয়ে যাই—কখনো ভাবতেও পারিনি লি মিং এমন আচরণ করতে পারে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে, তাকে বলি: “মনকে শান্ত করে এই ঘটনায় ঈশ্বরের ইচ্ছার সন্ধান করো। চেষ্টা করো যাতে আবেগের বশবর্তী হয়ে না যাও।” কিন্তু সে আমার কথা শুনলই না, শান্তও হল না, লি মিংয়ের ইচ্ছাকৃত বাধার করণে, তার স্বামীর সমস্যা অমীমাংসিতই রয়ে যায়। এর পরে, লি মিং এক সমাবেশে সেই ব্রাদার-সিস্টারদের তিরস্কার করে, এমনকি এক সিস্টার কেঁদেই ফেলে। লি মিংয়ের সমস্যা বেড়েই চলছিল। অন্যরা তার স্বামীর বস্তুনিষ্ঠ ও ন্যায্য মূল্যায়ন করেছিল, নিতান্তই তথ্য তুলে ধরেছিল, কিন্তু তার স্বার্থ বিপর্যস্ত হওয়ায় সে রেগে গিয়ে তাদের সমালোচনা করে। সে ছিল মন্দ মানবিকতার! আমি তার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন নেতার কাছে রিপোর্ট করতে চাই, কিন্তু পরে ভাবি: “এটা কি তার গোপন কথা ফাঁস করে পিছন থেকে ছুরি মারা নয়? তাছাড়া, আমি রিপোর্ট করলে নেতা নিশ্চয়ই তাকে আলোচনার জন্য ডাকবেন—সে যদি জানতে পারে আমি তার নামে রিপোর্ট করেছি, আমাকে নিয়ে সে কী ভাববে? বলবে না আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তার সম্মানহানি করেছি, আমার মানবিকতা খারাপ?” এটা ভেবে, আমি তার নামে রিপোর্ট করিনি, কিন্তু আমার একটু খারাপই লেগেছিল, যেন কেউ আমাকে নিপীড়ন করেছে।

পরে, অন্যরাও তার নামে রিপোর্ট করলে, লি মিং শেষে বরখাস্ত হয়। পরিণতিতে, ঊর্ধ্বতন নেতা আমাকে অনাবৃত করে বলেন: “তুমি সবার সাথে ভালো ব্যবহার করছ বলে বাইরে থেকে মনে হলেও, ঈশ্বরের প্রতি তোমার সত্যিকারের আনুগত্য নেই। লি মিংয়ের সমস্যা দেখার পরেও তুমি কেন তাকে অনাবৃত করে থামাওনি? এত বড় বিষয় তুমি কেন রিপোর্ট করোনি? তুমি কি গির্জার কাজ রক্ষা করতে চাও না?” নেতার মোকাবিলার পরই আমি বিষয়টি নিয়ে সজাগ হয়ে উঠে ঈশ্বরের প্রতি প্রার্থনা ও আত্মচিন্তন শুরু করি। ঈশ্বরের বাক্যের একটা অনুচ্ছেদ পড়ি, যেটা বলে: “সু-মানবিকতা থাকার একটা মানদণ্ড থাকতে হবে। মিতাচারী না হওয়া, নীতিতে অবিচল না থাকা, কাউকে ক্ষুব্ধ না করতে চেষ্টা করা, সমস্ত জায়গায় চাটুকারিতা, সকলের সাথে মসৃণভাবে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, এবং সকলকে দিয়ে তোমার সম্পর্কে ভালো কথা বলানো, এগুলো কোনোটাই সেই মানদণ্ডের সাথে যুক্ত নয়। এটা মানদণ্ড নয়। তাহলে, মানদণ্ড কোনটা? তা হল ঈশ্বর এবং সত্যের প্রতি সমর্পিত হতে সক্ষম হওয়া। তা হল কারো নিজের কর্তব্যের প্রতি এবং সমস্তরকম মানুষ, ঘটনা, ও বস্তুর প্রতি নীতি ও দায়িত্ববোধ সমেত অগ্রসর হওয়া। এটা সবাই স্পষ্ট করে দেখতে পারে; সকলেই নিজের হৃদয়ে এ বিষয়ে পরিষ্কার। উপরন্তু, ঈশ্বর প্রত্যেকটা মানুষের হৃদয় অনুসন্ধান করেন ও তাদের পরিস্থিতি জানেন; ঈশ্বরকে কেউ ফাঁকি দিতে পারে না, সে যে-ই হোক না কেন। কেউ কেউ সবসময় দম্ভ করে যে তারা সু-মানবিকতার অধিকারী, তারা কখনও অন্যের সম্পর্কে কুকথা বলে না, কখনও অন্যের স্বার্থহানি করে না, এবং দাবি করে যে তারা কখনও অন্যের সম্পত্তিতে লোভ করেনি। স্বার্থের সংঘাত হলে তারা অন্যের অন্যায় সুবিধা নেওয়ার চেয়ে বরং ক্ষতি স্বীকার করাকে বেছে নেয়, আর প্রত্যেকে মনে করে এরা ভালো মানুষ। তবে, ঈশ্বরের গৃহে নিজেদের দায়িত্বপালনের সময় এরা ধূর্ত ও অনির্ভরযোগ্য, সবসময় নিজেদের স্বার্থে ছক কষে চলেছে। এরা কখনোই ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থের বিষয়ে চিন্তা করে না, ঈশ্বর যে বিষয়গুলোকে জরুরি বলে বিবেচনা করেন, এরা কখনোই সেগুলোকে জরুরি মনে করে না, বা ঈশ্বর যেভাবে ভাবেন সেভাবে ভাবে না, আর নিজেদের দায়িত্ব সম্পাদন করার জন্য এরা কখনোই নিজেদের স্বার্থকে একপাশে সরিয়ে রাখতে পারে না। কখনোই স্বার্থত্যাগ করতে পারে না। এমনকি যখন এরা দুষ্কর্মকারীকে মন্দকাজ করতে দেখে, তাদের অনাবৃত করে না; এদের একেবারে কোনো নীতিবোধ নেই। এ কোন ধরনের মানবিকতা? এ মোটেই সু-মানবিকতা নয়। এরকম মানুষেরা কী বলে, সেদিকে মনোযোগ দিও না, তোমাকে দেখতে হবে তারা জীবনে কী যাপন করে, কী প্রকাশ করে, আর যখন নিজেদের দায়িত্ব পালন করে তখন তাদের মনোভাব কেমন হয়, সেইসাথে দেখতে হবে তাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা কেমন ও তারা কী ভালোবাসে। যদি তাদের নিজেদের খ্যাতি ও লাভের প্রতি ভালোবাসা ঈশ্বরের প্রতি তাদের আনুগত্যকে ছাপিয়ে যায়, যদি তাদের নিজেদের খ্যাতি ও লাভের প্রতি ভালোবাসা ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থকে অতিক্রম করে, অথবা যদি তাদের নিজেদের খ্যাতি ও লাভের প্রতি ভালোবাসা ঈশ্বরের প্রতি তারা যে বিবেচনা প্রদর্শন করে তার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে এরকম মানুষদের কি আদৌ মানবিকতা আছে? তারা মানবিকতাপূর্ণ মানুষ নয়(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, ঈশ্বরকে হৃদয়দানের মাধ্যমে সত্য অর্জন সম্ভব)। ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে, বুঝতে পারি কোনো ব্যক্তির বাহ্যিক বৈশিষ্ট, যেমন তার মেজাজ মৃদু কি না, আড়ালে সে অন্যের সমালোচনা করে কি না, বা সবার সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারে কি না, সেসবের ভিত্তিতে তার মানবিকতার বিচার করা যায় না, বরং তা বিচারের ভিত্তি হল ঈশ্বর ও সত্যের প্রতি তার মনোভাব, সে তার কর্তব্যের প্রতি দায়িত্বশীল কি না, ঈশ্বরের সাক্ষ্য দেয় কি না, এবং সমস্যার মুখে সত্য ও নীতি মেনে কাজ করে কি না। অতীতে, ভাবতাম আমার মানবিকতা ভালো। বাইরে বাইরে দয়ালু ছিলাম, ব্যক্তিত্ব ছিল ভালো, কিন্তু যখন দেখলাম লি মিং ব্রাদার-সিস্টারদের সাথে নিজের মোবাইলে যোগাযোগ করছে, যেটা গির্জার নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক ছিল, ভয় পেয়েছিলাম সেটা তাকে সরাসরি বললে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হবে, তাই তাকে কৌশলে আর মৃদুভাবে কথাটা মনে করিয়ে দেই কেবল। যখন সে নিজের ভুল স্বীকার করেনি, আমি তাকে অনাবৃত করে থামাইনি। মনে মনে ভেবেছি: “যদি খারাপ কিছু হয়, সে বলতে পারবে না যে আমি মনে করিয়ে দিইনি।” এভাবে কাজ করায় আমার ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হয়নি, আর খারাপ কিছু হলে তার দায় থেকেও মুক্তি পেয়েছি। গির্জার কাজ বা ব্রাদার-সিস্টারদের নিরাপত্তার কথা না ভেবে, আমি কেবল নিজের স্বার্থ, মর্যাদা ও ভাবমূর্তির কথাই ভাবতাম। কী স্বার্থপর আর প্রতারক ছিলাম! যখন দেখলাম ওর স্বামীর ঘটনায় লি মিং আবেগের বশবর্তী হয়ে কীভাবে সবার উপর ক্রোধ উদ্গীরণ করল, আমার উচিত ছিল সেটা সোজা নেতার কাছে রিপোর্ট করা, কিন্তু সে যদি ভাবে তাকে পিছন থেকে ছুরি মারছি, সেই ভয়ে চুপ ছিলাম। গির্জার কাজে এটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল, আর ব্রাদার-সিস্টারদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। আমার মানবিকতা কোথায় ছিল? ঈশ্বরের বাক্যের বিচার ও অনাবৃতকরণের আলোকে নিজের কাজের বিবেচনা করে, আমার অপরাধবোধ হল। সবসময় ভাবতাম আমার মানবিকতা ভালো, কিন্তু ঈশ্বরের বাক্যের উদ্ঘাটন ও তথ্যের মাধ্যমে অনাবৃতকরণের ফলে আমার আত্মোপলব্ধি একদম বদলে যায়। বাহ্যিকভাবে দয়ালু হলেও, সেটার আড়ালে ছিল ঘৃণ্য প্রবণতা। কেবল ব্যক্তিগত স্বার্থেরই পরোয়া করতাম, গির্জার কাজ একেবারেই রক্ষা করতাম না। মেকি দয়া দিয়ে সবাইকে খুশি রাখতে চাইতাম। আমি ছিলাম বকধার্মিক, শঠ এক ব্যক্তি। তারপরে, নিজেকে আর ভালো মানবিকতা-সম্পন্ন হিসেবে দেখানোর স্পর্ধা রাখিনি।

পরে, আমি ঈশ্বরের বাক্যের আরেকটা অনুচ্ছেদ পড়ি। “বন্ধুত্বপূর্ণ এবং অমায়িক হওয়ার মতো ‘উত্তম’ আচরণের অন্তরালে যে নির্যাস থাকে, সেটাকে একটা শব্দ দিয়েই বর্ণনা করা যায়: ভান। এই ধরনের ‘উত্তম’ আচরণ ঈশ্বরের বাক্যের থেকে উদ্ভূত হয় না, আবার সত্য অনুশীলন বা নীতি অনুসারে কাজ করার ফলেও উৎপন্ন হয় না। তাহলে কী থেকে তা উৎপন্ন হয়? তা লোকেদের উদ্দেশ্য ও কূটকৌশল থেকে উৎপন্ন হয়, হয় তাদের ভান ও ছদ্ম-অভিনয় করা এবং প্রতারক হয়ে ওঠা থেকে। লোকেদের এই ‘উত্তম’ আচরণ আঁকড়ে রাখার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হল নিজেদের আকাঙ্ক্ষিত বস্তু লাভ করা; তা না হলে, তারা কখনোই নিজেদের এইভাবে বেদনার্ত করতো না, এবং নিজস্ব আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে জীবনযাপন করত না। নিজস্ব আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে জীবনযাপন করা বলতে কী বোঝায়? তা বোঝায় যে, মানুষ যতটা কল্পনা করে, তাদের আসল প্রকৃতি ততটাও সদাচারী, নির্দোষ, নম্র, দয়ালু এবং গুণী নয়। তারা বিবেক ও চেতনার দ্বারা জীবনযাপন করে না; পরিবর্তে, তারা নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা চাহিদা অর্জনের জন্যই জীবনযাপন করে। মানুষের আসল প্রকৃতি কী? তা হল ছন্নমতি ও অজ্ঞ। ঈশ্বরপ্রদত্ত বিধান ও আদেশ না থাকলে, পাপ কী সে সম্পর্কে মানুষ কোনো ধারণাই লাভ করতে পারত না। মানবজাতি কি এইরকমই ছিল না? শুধুমাত্র যখন ঈশ্বর বিধান ও আদেশ জারী করেছিলেন, তখনই মানুষ পাপ সংক্রান্ত কিছু ধারণা লাভ করেছিল। কিন্তু তখনও ঠিক এবং ভুল, অথবা ইতিবাচক এবং নেতিবাচক বস্তুর বিষয়ে, মানুষের কোনো ধারণা ছিল না। পরিস্থিতি যখন তেমনটাই ছিল, তখন কীভাবে-ই বা আর তারা কথা বলা ও কাজ করার সঠিক নীতির বিষয়ে সচেতন হতে পারত? কাজ করার কোন উপায়, কোন উত্তম আচরণ স্বাভাবিক মানবতার মধ্যে থাকতেই হবে, তা কি তারা জানতে পারত? তারা কি জানতে পারত যে, কী থেকে প্রকৃতপক্ষেই উত্তম আচরণ সৃষ্টি হয়, মানবসদৃশ জীবনযাপনের জন্য তাদের কোন ধরনের পথ অনুসরণ করা উচিত? তারা তা জানতে পারত না। মানুষের শয়তানোচিত প্রকৃতি ও সহজাত প্রবৃত্তির কারণে, তারা নিছকই ভালোভাবে আর মর্যাদাপূর্ণভাবে জীবনযাপন করার ভান আর ভনিতাই করতে পারে—যা জন্ম দেয় বিভিন্ন প্রতারণার, যেমন, পরিমার্জিত ও বিচক্ষণ ভাব, মৃদু-স্বভাবী হওয়া, শিষ্ট আচরণ, প্রবীণদের শ্রদ্ধাকারী ও নবীনদের যত্নকারী হওয়া, এবং অমায়িক ও মিশুক হওয়া; এইভাবে প্রতারণার বিভিন্ন কূটকৌশলের উদ্ভব ঘটে। সেগুলির উদ্ভব ঘটার পর, লোকজন এইসব প্রতারণার মধ্যে থেকে বেছে বেছে দুয়েকটাকেই আঁকড়ে ধরে। কেউ কেউ বন্ধুভাবাপন্ন ও অমায়িক হওয়াকে বেছে নেয়, কেউ আবার পরিমার্জিত, বোধসম্পন্ন ও মৃদু স্বভাবী হওয়াকে বেছে নেয়, কেউ শিষ্ট হওয়া, প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও নবীনদের প্রতি যত্নশীল হওয়াকে বেছে নেয়, কেউ আবার এগুলোর সবকিছু হওয়াকেই বেছে নেয়। এবং তা সত্ত্বেও আমি এই ধরনের ‘উত্তম’ আচরণসম্পন্ন ব্যক্তিদের একটা শব্দের মাধ্যমেই সংজ্ঞায়িত করি। সেই শব্দটা কী? ‘মসৃণ প্রস্তর।’ এই মসৃণ প্রস্তর কী? তা হল নদীর ধারে পড়ে থাকা সেই সব পাথরের টুকরো, যেগুলো বছরের পর বছর ধরে জলের স্রোতে ঘষেমেজে ভোঁতা হয়ে গেছে। যদিও সেগুলোর ওপরে উঠলে কোনো আঘাত লাগে না, কিন্তু অসাবধান থাকলে লোকেরা সেগুলোয় পিছলে পড়ে যেতে পারে। আকৃতি ও বাহ্যিক চেহারায় এই প্রস্তরগুলো খুবই সুন্দর হলেও, বাড়ি নিয়ে গেলে সেগুলো কোনো কাজেই লাগে না। সেগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিতেও তোমার মন চায় না, আবার সেগুলো রেখে দেওয়াও নিরর্থক—এ-ই হল ‘মসৃণ প্রস্তরখণ্ড’। এই সমস্ত আপাত উত্তম আচরণসম্পন্ন লোকজনকে আমার নিরুৎসাহী বলে মনে হয়। বাইরে থেকে তারা ভালো হওয়ার ভান করে, কিন্তু সত্যকে বিন্দুমাত্র স্বীকার করে না, তারা শ্রুতি-মধুর কথা বললেও, বাস্তবিক কোনো কিছু করে না। তারা মসৃণ প্রস্তরখণ্ড ছাড়া আর কিছুই না। তুমি যদি তাদের সাথে সত্য ও নীতির বিষয়ে আলোচনা করো, তারা তোমার সাথে মৃদু ও মার্জিত স্বভাবের হওয়ার ব্যাপারে কথা বলবে। তুমি যদি তাদের বলো খ্রীষ্টবিরোধীদের সনাক্ত করার বিষয়ে, তারা তোমায় বলবে বৃদ্ধদের সম্মান ও তরুণদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার ব্যাপারে, এবং পরিমার্জিত ও বিচক্ষণ হওয়ার সম্পর্কে। তুমি যদি তাদের বলো যে কারো আচরণ অবশ্যই হতে হবে নীতিসঙ্গত, নিজের কর্তব্যে নীতির সন্ধান করতে হবে, ইচ্ছামতো কাজ করলে চলবে না, তাহলে তাদের মনোভাব কী হবে? তারা বলবে, ‘সত্যের নীতির সাথে সঙ্গতভাবে কাজ করা একটা আলাদা বিষয়। আমি শুধু পরিমার্জিত ও বিচক্ষণ হতে চাই, আর আমার কাজকর্মে অন্যদের অনুমোদন পেতে চাই। যতক্ষণ আমি বয়স্কদের সম্মান করছি আর তরুণদের যত্ন নিচ্ছি, এবং অন্যদের অনুমোদন পাচ্ছি, সেটাই যথেষ্ট।’ তারা শুধু ভালো আচরণের প্রতিই যত্নশীল, সত্যের প্রতি মনোযোগ দেয় না(বাক্য, খণ্ড ৬, সত্যের অন্বেষণের বিষয়ে, সত্যের অন্বেষণ কী? (৩))। ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে, বুঝতে পারি প্রথাগত সংস্কৃতি বন্ধুত্বপূর্ণ ও মিশুক হওয়াকে ভালো আচরণ বললেও, আসলে এগুলো ভণ্ডামি। যারা এগুলো করে তারা আসলে ভান করে মানুষের তারিফ পেতে, ছলনার মাধ্যমে তাদের থেকে শ্রদ্ধা ও প্রশংসা আদায় করতে। এগুলো আসলে ষড়যন্ত্র আর প্রতারণা, এসব করে ভণ্ডরা। আমি আরো বুঝলাম এত বছর ধরে ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করেও, এত স্বার্থপর আর প্রতারক ছিলাম কারণ, এসবের নেপথ্যে আমার মন্দ উদ্দেশ্য ছিল। মানুষের কাছে আমার ভালো ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে চাইতাম যাতে সবাই আমায় শ্রদ্ধা ও প্রশংসা করে। ছোটবেলা থেকে প্রথাগত সংস্কৃতির প্রভাব ও শিক্ষা আমাকে ভালো ব্যবহার করতে শিখিয়েছিল। ভেবেছিলাম ভালো ব্যবহার করে চারপাশের মানুষের তারিফ আদায় করব। বিশ্বাসে প্রবেশের পর, আমি বন্ধুত্বপূর্ণ ও মিশুক হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গেলাম আর ব্রাদার-সিস্টারদের কাছে একটা ভালো ভাবমূর্তি ও মর্যাদা রক্ষা করলাম, বিশেষ করে লি মিংয়ের সঙ্গে জুটি বাঁধার সময়ে। অনেকবার খেয়াল করি সে মোবাইল ব্যবহার করে, নীতি ভেঙেছে, ব্রাদার-সিস্টারদের বিপদে ফেলেছে, গির্জার স্বার্থ উপেক্ষা করেছে, উচিত ছিল অনাবৃত করে তাকে থামানো, কিন্তু সে আমার সম্পর্কে খারাপ ভাববে এই ভয়ে বিষয়টা উপেক্ষা করি। আমি পরিস্কার দেখি লি মিং তার স্বামীকে বাঁচাচ্ছে, এমনকি ব্রাদার-সিস্টারদের দমন করছে, এবং সেটা কোনো সাধারণ দুর্নীতির ঘটনা ছিলা না। তার মানবিকতা মন্দ ছিল, সে নেতৃত্বের অযোগ্য ছিল, তাকে সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট করা দরকার ছিল। তারপরও নিজের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি রক্ষার্থে আমি চুপ থাকার সিদ্ধান্ত নিই। নিজের ভাবমূর্তি বাঁচাতে আসল উপকারীরই অপকার করছিলাম। গির্জার স্বার্থ একেবারেই রক্ষা করিনি। ভালোভাবে সচেতন হয়ে গেলাম কীভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ ও মিশুক হওয়ার চেষ্টা আমার কলুষিত স্বভাব পরিবর্তনে সাহায্য তো করেইনি বরং আমাকে আরো বেশি শঠ করে তুলেছিল। সত্য অনুশীলনের বদলে ভালো ব্যবহার করাই লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল, নিজের ঘৃণ্য প্রবণতা লুকিয়ে একটা মিথ্যা ভাবমূর্তি দাঁড় করাই যাতে সবাই ভাবে আমার মধ্যে সত্যের বাস্তবসমূহ আছে, আমি প্রীতিপূর্ণ ও উদার, বোকা বানিয়ে সবার আস্থাভাজন হই, সবার শ্রদ্ধা ও অনুমোদন আদায় করি। আমি বকধার্মিক ফরিশীদের পথে ছিলাম, ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করছিলাম। এভাবে চললে আমি ঈশ্বর কর্তৃক নিন্দিত ও বহিষ্কৃত হতাম।

পরে, ঈশ্বরের বাক্যের আরো দুটো অনুচ্ছেদ পড়ি। “আর তার পরিণাম কী হয়, যখন মানুষ সর্বদা নিজেদের স্বার্থের বিষয়ে ভাবে, যখন তারা সর্বদা নিজেদের অহঙ্কার ও অহমিকাকে সুরক্ষিত করার চেষ্টা করে, যখন তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে একটা ভ্রষ্ট স্বভাবের প্রকাশ করে ফেলে, তবুও তা সংশোধনের জন্য সত্যের সন্ধান করে না? তার পরিণাম হল এই যে তাদের জীবনে প্রবেশ থাকে না, তাদের প্রকৃত অভিজ্ঞতা ও সাক্ষ্যের অভাব থেকে যায়। এবং তা বিপজ্জনক, তাই নয় কি? যদি তুমি কখনোই সত্যের অনুশীলন না করো, যদি তোমার কোনো অভিজ্ঞতা ও সাক্ষ্যের অভাব থেকে যায়, তাহলে যথাসময়ে তুমি অনাবৃত ও বহিষ্কৃত হবে। অভিজ্ঞতা ও সাক্ষ্যবিহীন মানুষের ঈশ্বরের গৃহে কী প্রয়োজন আছে? তারা যেকোনো দায়িত্বই নিকৃষ্টভাবে পালন করতে বাধ্য; তারা কিছুই সঠিকভাবে করতে পারে না। তারা কি শুধুই আবর্জনা নয়? বহু বছরের ঈশ্বরবিশ্বাসের পরেও মানুষ যদি সত্যের অনুশীলন না করে, তাহলে তারা অবিশ্বাসীই, তারা দুষ্ট। যদি তুমি কখনোই সত্যের অনুশীলন না করো, যদি তোমার অধর্ম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়, তাহলে তোমার পরিণাম নির্ধারিত রয়েছে। স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে যে তোমার সমস্ত অধর্ম, যে ভ্রান্ত পথে তুমি চলো, এবং অনুতপ্ত হওয়াকে তোমার প্রত্যাখ্যান—এই সমস্তকিছু মিলিত হয়ে অজস্র মন্দ কর্মে পরিণত হয়েছে; তাই তোমার পরিণাম হল যে তুমি নরকে যাবে, তোমাকে দণ্ড দেওয়া হবে। তোমরা কি এটাকে একটা তুচ্ছ ব্যাপার বলে মনে করো? যদি তুমি দণ্ড ভোগ না করে থাকো, তোমার কোনো বোধ থাকবে না যে তা কী ভয়ঙ্কর। যখন সেই দিন আসবে আর তুমি সত্যিই বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে, মৃত্যুর মুখোমুখি হবে, তখন অনুতাপের পক্ষে খুব দেরি হয়ে যাবে। যদি ঈশ্বরের প্রতি তোমার বিশ্বাসে তুমি সত্যকে গ্রহণ না করো, যদি বহু বছর ধরে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে থাকলেও তোমার কোনো মধ্যে পরিবর্তন না এসে থাকে, তাহলে এর চূড়ান্ত পরিণতি হল যে তোমাকে বহিষ্কার করা হবে, পরিত্যাগ করা হবে(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। “কেবলমাত্র যখন মানুষ ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে কাজ করে, আচরণ করে, তখনই তাদের প্রকৃত ভিত্তি থাকে। যদি তারা ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে আচরণ না করে, কেবলমাত্র সদাচরণের ছলনা করার প্রতি মনোনিবেশ করে, তাহলে ফলাফল হিসাবে তারা কি ভালো মানুষ হয়ে উঠতে পারে? একেবারেই পারে না। সদাচরণ মানুষের সারমর্মকে বদলাতে পারে না। কেবলমাত্র সত্য এবং ঈশ্বরের বাক্যই মানুষের স্বভাব, চিন্তাভাবনা, মতামত পরিবর্তনে সক্ষম এবং তাদের জীবন হয়ে উঠতে সক্ষম। … মানুষের কথাবার্তা ও কাজের ভিত্তি কী হওয়া উচিত? ঈশ্বরের বাক্য। তাহলে, মানুষের কথাবার্তা ও কাজকর্মের ব্যাপারে ঈশ্বরের প্রয়োজন ও নির্ধারিত মান কী কী? (সেগুলো যেন মানুষের জন্য গঠনমূলক হয়।) ঠিক। সবচাইতে মৌলিকভাবে, তোমাকে অবশ্যই সত্যি বলতে হবে, সৎভাবে কথা বলতে হবে, এবং অন্যের উপকার করতে হবে। অন্ততপক্ষে, তোমার কথাবার্তা যেন মানুষকে উন্নত করে, তার মধ্যে যেন কোনো কৌশল না থাকে, তাদের বিপথগামী করা, তাদের প্রতি উপহাস, ব্যঙ্গ, অপমান, বিদ্রূপ যেন না থাকে, তাদের সঙ্কুচিত করা, তাদের দুর্বলতাকে অনাবৃত করা, বা তাদের আহত করাও যেন না থাকে। এটাই স্বাভাবিক মানবতার অভিব্যক্তি। এটাই হল মানবতার সদগুণ। … এছাড়াও, কয়েকটা বিশেষ দৃষ্টান্তে, অন্যদের ত্রুটি সরাসরি প্রকাশ করার, তাদের মোকাবিলা করার, এবং তাদের অপ্রয়োজনীয় অংশ কর্তনের দরকার পড়ে, যাতে তারা সত্যের জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং অনুশোচনায় ইচ্ছুক হয়। শুধু তবেই কাঙ্ক্ষিত প্রভাব অর্জিত হয়। এইরূপ অনুশীলনের পন্থা মানুষের পক্ষে খুবই উপকারী। এটা মানুষের পক্ষে খুবই উপকারী। এটা তাদের পক্ষে প্রকৃত সহায়ক এবং গঠনমূলক হয়, তাই নয় কি?(বাক্য, খণ্ড ৬, সত্যের অন্বেষণের বিষয়ে, সত্যের অন্বেষণ কী? (৩))। ঈশ্বরের বাক্য আমায় সতর্ক করে। কেউ যদি ঘটনার পর ঘটনায় নিজের স্বার্থ রক্ষা করাকেই বেছে নেয় কখনোই সত্যের অনুশীলন না করে, সে কেবল অধর্মই জড়ো করতে থাকে, এবং শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের দ্বারা পুরোপুরি অনাবৃত ও বহিষ্কৃত হয়। এমনকি যখন আমি ব্রাদার-সিস্টারদের নিরাপত্তা বিপর্যস্ত হতে ও গির্জার কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখি, নীতির চর্চা করে গির্জার কাজ রক্ষা করিনি, বদলে সবসময় তথাকথিত ভালো মানুষ হতে চেয়েছি। এমনকি সবার শ্রদ্ধা ও অনুমোদন লাভ করলেও, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আমি মন্দকর্মকারী এবং শেষ পর্যন্ত তার দ্বারা ঘৃণিত হব ও শাস্তি পাব। এসব পরিণতি বুঝতে পেরে খুব ভয় পেয়ে যাই আর নিজের দিশাহারা অন্বেষণ সংশোধনে প্রস্তুত হই। ঈশ্বরের বাক্য আমাকে অনুশীলনের সঠিক পথও দেখিয়েছিল। কেবল ঈশ্বরের বাক্য অনুযায়ী কথা ও কাজের মাধ্যমেই আমরা অন্যদের উপকার ও উন্নতি করতে পারি। কীভাবে কথা বলছি তা জরুরি নয়, রুক্ষ বা নরম যেমন কণ্ঠেই কথা বলি, শব্দচয়নে যতই সচেতন হই, আসল ব্যাপার হল কথার মাধ্যমে ব্রাদার-সিস্টারদের উন্নতিসাধন করতে পারছি কি না। কেউ যতক্ষণ পর্যন্ত সঠিক, সত্য গ্রহণে সক্ষম, সপ্রেম তার সহায় হওয়া উচিত। যদি সে সত্য বুঝতে না পারে, কাজের ক্ষতি করে, আলোচনার মাধ্যমে তাকে সাহায্য করতে আর পথ দেখাতে হবে। যদি আলোচনার পরেও প্রকৃত উন্নতি একটুও না হয়, তাহলে তার মোকাবিলা ও অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তনের তার সমস্যার সারমর্ম অনাবৃত করতে হবে। এমনকি তা শুনতে কঠোর বা মানুষের অনুভূতিকে উপেক্ষা করে এমন মনে হলেও, এভাবেই তার সত্যিকারের উপকার ও সমর্থন করা সম্ভব। যদি সে খ্রীষ্টবিরোধী বা মন্দকর্মকারী হয় যে গির্জার কাজ বাধাগ্রস্থ করছে, তাকে অনাবৃত করে থামিয়ে বা ঊর্ধ্বতনের কাছে তার নামে রিপোর্ট করে গির্জার কাজকে তুলে ধরা উচিত আমাদের উচিত বিরক্ত ও প্রতারিত হওয়া থেকে ব্রাদার-সিস্টারদের রক্ষা করা। কেবল এভাবেই আমরা প্রকৃত সত্যের অনুশীলন এবং প্রকৃত মানবতা ও দয়া প্রদর্শন করতে পারি। আমি একটা বিভ্রান্তিকর দৃষ্টিভঙ্গিও সংশোধন করেছি। ভাবতাম কারো নীতি লঙ্ঘনের ঘটনা রিপোর্ট করা হল পিছন থেকে ছুরি মারা, বিশ্বাসঘাতকতা। এটা ছিল একটা ভুল দৃষ্টিভঙ্গি। এমনটা করা আসলে গির্জার কাজ রক্ষা করে, এটা সৎকর্ম। বাস্তবে, যখন দেখি লি মিংয়ের গুরুতর সমস্যা আছে যা ব্রাদার-সিস্টারদের বাধাগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তা ছিল গির্জার কাজের সাথে জড়িত এক নীতিগত ব্যাপার আমার উচিত ছিল সোজা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে তা জানানো বা রিপোর্ট করা। সেটা পিঠে ছুরি মারা হতো না; গির্জার কাজকে সুরক্ষিত করা হতো। এটা বোঝার পরে, আমার অনেক উদ্বেগ দূর হয়ে যায়, বেশ স্বস্তি বোধ করি।

পরে, কেউ একজন রিপোর্ট করল এক ব্রাদার বরাবরই ঢিলেমি করছে আর পরিশ্রম থেকে দূরে থাকছে, অনেকেই সেটা তাকে বলেছে, অনেকবার মোকাবিলাও হয়েছে, তবু সে তা একেবারেই মানছে না। নীতি অনুসারে, আমরা ঠিক করি তাকে বরখাস্ত করা দরকার, আর তাকে বিষয়টা খুলে বলা দরকার যাতে সে আত্মচিন্তন করতে পারে। তখন, আমি ভাবি: “কাউকে তার সমস্যার কথা খুলে বলা আপত্তিকর হতে পারে। তার চেয়ে হয়তো আমার সঙ্গীকে তার সঙ্গে আলোচনা করতে বলে নিজে এর বাইরে থাকি। নইলে সে আমাকে খারাপ ভাবতে পারে।” তারপরেই, আমি উপলব্ধি করি আবারও নিজের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি রক্ষার চেষ্টা করছি। ঈশ্বরের বাক্য স্মরণ করি, যা বলে: “যারারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করে, তাদের সত্যের উপলব্ধি যতই গভীর বা অগভীর হোক না কেন, তাদের সত্যের বাস্তবিকতায় প্রবেশ করার জন্য অনুশীলনের সরলতম উপায় হল, সকলকিছুর মধ্যেই ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থের কথা চিন্তা করা, এবং স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষা, ব্যক্তিগত অভিপ্রায়, উদ্দেশ্য, অহংকার ও মর্যাদা পরিত্যাগ করা। ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থই সর্বপ্রথম—তেমনটাই মানুষের ন্যূনতম করণীয়(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র ভ্রষ্ট স্বভাব পরিহার করলে তবেই স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জন করা যেতে পারে)। ঈশ্বরের বাক্য আমায় অনুশীলনের পথ দেখায়। সমস্যার সম্মুখীনে হলে, আমাদের আকাঙ্ক্ষা ও নামযশ পাশে সরিয়ে রাখতে হবে, গির্জার স্বার্থ ও ঈশ্বরের ইচ্ছায় মনোযোগ দিতে হবে। এটাই কাজ করার একমাত্র সোজা পথ যা ঈশ্বরের দ্বারা প্রশংসিত হবে। ঈশ্বরের চাহিদা বুঝতে পেরে, আমি অনুপ্রাণিত হই, আর ঈশ্বরের বাক্য অনুযায়ী সেই ব্রাদারকে তার আচরণ সম্পর্কে খুলে বলি। এভাবে অনুশীলন করে আমি ভীষণ স্বস্তি অনুভব করি। বুঝতে পারি কেবল সত্যের অনুশীলন করেই প্রকৃত শান্তি ও সুখ অর্জন সম্ভব।

এই অভিজ্ঞতার পর, ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতায় মন ভরে যায়। ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমেই আমি দেখেছিলাম প্রথাগত সংস্কৃতি অনুযায়ী বন্ধুত্বপূর্ণ ও মিশুক হওয়া কতটা অযৌক্তিক আর মানুষকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। আর আরও পেয়েছিলাম প্রথাগত সংস্কৃতির বেড়ি ভেঙে মুক্ত ও স্বাধীন হওয়ার অভিজ্ঞতা। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ তাঁর পরিত্রাণের জন্য।

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

আমার বন্দিদশার দিনগুলি

২০০৬ সালের জুলাই মাসে, আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ গ্রহণ করেছিলাম। আমার স্বামীর সমর্থন ছিল, আর যেসব ভ্রাতা ও ভগিনী আমাদের...

অবশেষে ভুল ধারণা থেকে মুক্ত হওয়া

কয়েক বছর আগে আমি গির্জার জন্য ভিডিও তৈরি করতাম। আগে নিজের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতাম না, আমার দুটো ভিডিওতে কিছু সমস্যা থাকায় বাতিল করা...

Leave a Reply

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন