এঞ্জেলের কাহিনী

02-08-2023

২০২০ সালের আগস্টে ফেসবুকে সিস্টার ইয়ে জিয়াং-এর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। সে আমাকে বলে, প্রভু যীশু ফিরে এসেছেন, তিনি অনেক সত্য প্রকাশ করছেন, এবং অন্তিম সময়ের বিচারের কাজ করছেন। এই বিচারের কাজের জন্য তাঁর ফিরে আসার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণীগুলোও সে আমাকে বলেছিল: “বিচারের কাল সমাগত, ঈশ্বরের আপনজনদের দিয়েই তা হবে শুরু(১ পিতর ৪:১৭)। “কেউ যদি আমার কথা শোনে, এবং অবিশ্বাস করে, আমি তার বিচার করি না: কারণ আমি এই জগৎকে বিচার করতে আসি নি, এসেছি জগতের উদ্ধার করতে। যে আমার বাক্য গ্রহণ না করে আমাকে প্রত্যাখ্যান করে, তারও বিচারকারী রয়েছে: শেষের দিনে আমার মুখনিঃসৃত সেই বাণীই হবে তার বিচারক(যোহন ১২:৪৭-৪৮)। “তোমাদের আরও অনেক বিষয়ে আমার বলার আছে কিন্তু এখন তোমাদের পক্ষে তা বহনে অপারগ। সেই সত্যের আত্মা যখন আসবেন তিনি তোমাদের সকল সত্যের পথে পরিচালিত করবেন(যোহন ১৬:১২-১৩)। একথা পড়ে আর ইয়ে জিয়াংয়ের আলোচনা শুনে, আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে প্রভু যীশু যা করেছিলেন তার সমস্তটাই হল মুক্তির কাজ। যদিও বিশ্বাসীদের পাপ ক্ষমা করা হয়েছে, কিন্তু আমাদের পাপী প্রকৃতি অমীমাংসিত রয়ে গিয়েছে। যদিও আমরা গির্জায় যাই, প্রার্থনা করি, পাপ স্বীকার করি, তবুও আমরা মিথ্যাচার ও পাপকাজ চালিয়ে যাচ্ছি, পাপের বন্ধন এড়াতে পারছি না। বিচারকার্য ও পরিশোধনের কাজ সম্পাদন করার জন্য আমাদের ঈশ্বরকে প্রয়োজন, যাতে আমরা সত্যিই এই বন্ধনগুলো ভেঙ্গে মুক্ত হতে পারি এবং ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশের যোগ্য হতে পারি। ইয়ে জিয়াং-এর আলাপ-আলোচনা ছিল খুবই আলোকিত করার মতো, সে আমাকে এমন কিছু কথা বলেছিল যা আমি গির্জায় কখনো শুনিনি। আমি অনুসন্ধান ও অন্বেষণ করতে উৎসুক হয়ে উঠলাম।

দুজন ব্রাদার সুসমাচার প্রচার করতে আমাদের গ্রামে এসেছিল, এবং তারা আমার আতিথ্য গ্রহণ করে। একবার, কুড়ি জনেরও বেশি গ্রামবাসী তাদের প্রচার শুনতে আমার বাড়িতে এল। তাদের মনে হল সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য সত্যিই মহান, তারা এর মধ্যে প্রচুর সংস্থানের সন্ধান পেল, এবং অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে চাইল। পরের দিন, যাজক ও প্রবীণরা সেই ব্রাদারদের আর তাদের সুসমাচার প্রচারের সম্পর্কে শুনতে পেয়ে আমাকে থামাতে এল। দরজা দিয়ে ঢুকেই সঙ্গে সঙ্গে যাজক তিয়ান আমাকে জিজ্ঞাসা করল: “আপনার বাড়িতে কে এসেছে প্রচার করতে?” তাদের কঠোর ভাবভঙ্গি দেখে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লাম। আমি চিন্তিত হলাম যে যাজকরা যদি জানতে পারে যে ওই দুই ব্রাদার সুসমাচার প্রচার করতে এসেছে, তাহলে ওদের সমস্যায় পড়তে হবে। তাই আমি বললাম: “ওরা আমার অনলাইনে পরিচিত বন্ধু।” যাজক চেন তখন বলল: “আমরা শুনেছি যে ওরা ওদের সুসমাচার প্রচার করতে এসেছে। আপনি কিছুতেই আর ওদের নিজের আতিথ্যে রাখবেন না! যদি জানতে পারি ওদের রেখেছেন, আমি আপনার স্বামীকে বলব আপনি এখানে পুরুষদের আতিথ্য দিচ্ছেন!” সেই শুনে আমি খুব রেগে গেলাম। ওরা যখন গ্রামবাসীদের কাছে সুসমাচার প্রচার করতে আসতো, আমি তো শুধু ওদের আতিথ্যটুকুই দিয়েছিলাম। আমি লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু করিনি, কিন্তু সেই যাজক চাইছিল মিথ্যা বলে আমাকে ভয় দেখাতে। যাজক তিয়ান তখন বলল: “ওদের সুসমাচার বিশ্বাস করবেন না, প্রভু যীশু স্পষ্টভাবে বলেছেন: ‘কেউ যদি তখন তোমাদের বলে যে খ্রীষ্ট এখানে রয়েছেন কিম্বা ওখানে আছেন সে কথা বিশ্বাস করো না। কারণ অনেক নকল খ্রিষ্ট ও ভুয়ো নবীর আবির্ভাব ঘটবে। তারা এমন সব চমকপ্রদ নিদর্শন ও অলৌকিক কাণ্ড দেখাবে যার ফলে মনোনীতরাও প্রতারিত হতে পারে(মথি ২৪:২৩-২৪)। অন্তিম সময়ে অনেক ভণ্ড খ্রীষ্টের আবির্ভাব হবে। যারা বলে প্রভু ফিরে এসেছেন তারা সবাই ভণ্ড। তাদের বিশ্বাস করবেন না! আমি আপনাদের রক্ষা করার জন্যই একথা বলছি। আমার আশঙ্কা আপনারা প্রতারিত হবেন।” সেই সময়ে, যাজকদের কথাগুলো আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না, আমি ভাবলাম, ওরা এত দিন ধরে বিশ্বাস করছে, এত কিছু বোঝে, আর যা বলল তা তো বাইবেল অনুসারেই বলল। যদি ওরাই সঠিক হয়, যদি সত্যিই আমাকে ভুল পথে পরিচালিত করা হয়ে থাকে, তাহলে কী করবো আমি? তাই আমি ওদেরকেই বিশ্বাস করলাম। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার সদস্যরা আমাকে সমাবেশের জন্য খুঁজত, কিন্তু আমি প্রত্যাখ্যান করার জন্য অজুহাত তৈরি করতাম, এমনকি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টও বদলে ফেলেছিলাম। আর ওদের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন করেছিলাম।

আমি প্রায় দু-সপ্তাহ সমাবেশে যাইনি। আমার দিনগুলো কাটতো বাড়িতে বন্ধুদের সঙ্গে অনলাইনে চ্যাট করে আর ভিডিও দেখে। আমি খুব বিরক্ত হয়ে পড়ছিলাম। প্রায়ই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের সঙ্গে সমাবেশের দিনগুলোর কথা ভাবতাম, তখন আমার হৃদয় পরিপূর্ণ ছিল, খুশি ছিল, কিন্তু এখন আমার অস্বস্তি ক্রমেই বেড়ে চলেছিল। আমি ভাবলাম: “যদি সর্বশক্তিমান ঈশ্বর সত্যিই প্রত্যাবর্তিত প্রভু যীশু হন, তাঁকে গ্রহণ না করলে কি আমি তাঁর পরিত্রাণ হারাবো? কিন্তু যাজকরা বলেছিল অন্তিম সময়ে মানুষকে প্রতারিত করতে ভণ্ড খ্রীষ্টদের আবির্ভাব হবে, এবং যারা প্রভুর প্রত্যাবর্তনের প্রচার করে তারা সকলেই ভণ্ড। যদি সত্যি আমাকে প্রতারিত করা হয়ে থাকে?” আমার মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিল, আমি বিভ্রান্ত বোধ করলাম, তাই প্রভুর কাছে প্রার্থনা করলাম, বললাম: “হে প্রভু যীশু, আমার বিচারবুদ্ধি নেই, আমি জানি না কার কথা শুনব। দয়া করে আমাকে আলোকিত করো যাতে আমি তোমার ইচ্ছাকে উপলব্ধি করতে পারি আর তোমার পরিত্রাণ না হারাই।” প্রার্থনা করার পরে, বুঝতে পারলাম যে সন্ধান না করে আমি শুধু পালিয়ে যেতে পারতাম না, এই বিষয়গুলো পরিষ্কার করার জন্য আমাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার ব্রাদার-সিস্টারদের খুঁজে বার করতে হলো। কিন্তু অদ্ভুতভাবে, মাত্র দুটো সমাবেশের পরেই যাজকরা জানতে পেরে গেল। তারা যাজক তিয়ানের বাড়িতে একটা বৈঠকের জন্য আমাদের ডাকল। আমি বেশ নার্ভাস ছিলাম। আমার কোনো ধারণা ছিল না যাজকেরা কী করতে চলেছে। সেই সন্ধ্যায়, আমরা যাজক তিয়ানের বাড়িতে গেলাম। আরও কয়েকজন যাজক এবং প্রবীণরাও সেখানে ছিল। যাজক তিয়ান বলল: “শুনতে পাচ্ছি আপনি সম্প্রতি অনলাইন ধর্মোপদেশে যোগ দিচ্ছেন। আপনি আমাদের পরিবর্তে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার ধর্মোপদেশে যোগদান করছেন কেন? যতক্ষণ আপনি গির্জায় আসছেন, আমাদের উপদেশ শুনছেন, এবং প্রভুর কাছে প্রার্থনা ও পাপ স্বীকার করছেন, ঈশ্বর এটা মনে রাখবেন না, আর প্রভু যখন ফিরে আসবেন, তিনি আমাদের স্বর্গে নিয়ে যাবেন।” আমি ভাবলাম: “যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে তাদের উচিত ঈশ্বরের কথা শোনা। এদিকে যাজক আর প্রবীণরা আমাদের সর্বদা বাধ্য করছে ওদের নিজেদের কথা শুনতে—ওরা কি মানুষকে ঈশ্বরের সম্মুখে নিয়ে আসার পরিবর্তে নিজেদের সামনে নিয়ে আসছে না?” যাজক যা বলল তার সঙ্গে আমি একমত ছিলাম না, কিন্তু আমি তাকে ভুল প্রমাণ করার সাহস পাইনি। যাজক তিয়ান তখন আমাদের একটা নোটবুক দিয়ে চিৎকার করে বলল: “আপনি কি অন্য ঈশ্বরেই বিশ্বাস করতে থাকবেন? এখনই বেছে নিন! এখানে আপনাদের নাম লেখা আছে, এক্ষনি সই করে দিন। যদি বিশ্বাস করা বন্ধ করবেন ঠিক করেন, তাহলে একটা টিক চিহ্ন দিন, নইলে একটা ক্রস চিহ্ন দিন। যদি অন্য ঈশ্বরেই বিশ্বাস করতে থাকেন তাহলে কিন্তু খুবই সমস্যায় পড়তে চলেছেন! আমরা কোনো ব্যাপারেই আর আপনার পরিবারকে সাহায্য করবো না, বিবাহ, মৃত্যু, সন্তানের জন্ম, বা আপনার বাড়ি তৈরী, যা-ই হোক।” আমি যেখানে থাকি, সেখানে আমরা এই প্রথাগুলোকে সত্যিই মূল্য দিই, আর যাজকদের সমর্থন না থাকলে গ্রামবাসীরাও আমাদের সাহায্য করবে না। তখন আমি একটু দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। ভাবলাম: “আমাদের একটা বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা চলছে। গ্রামের রীতি অনুসারে, সেখানে অবশ্যই যাজক এবং প্রবীণদের সভাপতিত্ব করতে হবে। তারা যদি অনুমতি না দেয়, কেউ সাহায্য করতে আসবে না। আমি যদি অনলাইন সমাবেশে যোগ দিতে থাকি, বাড়িতে কিছু ঘটলে তখন সমস্যা হয়ে যাবে। কিন্তু আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য পড়েছিলাম এবং সেগুলো প্রভুর কণ্ঠস্বরের মতোই মনে হয়েছিল, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই হয়ত প্রত্যাবর্তিত প্রভু যীশু। আমি যদি যাজকদের কথা শুনি আর সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করি, তা কি প্রভুকে প্রতিরোধ করাই হবে না?” এই ভেবে, আমি নোটবুকে একটা ক্রস চিহ্ন দিয়ে দিলাম। বাকিরাও এক এক করে ক্রস চিহ্ন দিল। শুধু একজন টিক দিল। যাজক অত্যন্ত রেগে গিয়ে বলল: “ভবিষ্যতে যখন আপনাদের সমস্যা হবে, তখন গ্রামবাসীরা আপনাদের সাহায্য করতে আসবে না। আমরাও আপনাদের জন্য প্রার্থনা করব না। আমাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ!”

আমি রেগে গিয়েছিলাম, আবার সেইসাথে বিভ্রান্তও হয়ে পড়েছিলাম। যাজকরা যে ভণ্ড খ্রীষ্টের কথা বলেছিল সেই ব্যাপারটার কী হলো? আমার সমাবেশের সঙ্গী দুজন সিস্টারকে জিজ্ঞাসা করলাম। তাদের একজন আমাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্যের কিছু অংশ পড়ে শোনাল। “ঈশ্বরের অবতাররূপকেই খ্রীষ্ট বলা হয়, এবং তাই যে খ্রীষ্ট মানুষকে সত্যের সন্ধান দেন তাঁকেই ঈশ্বর বলা হয়। এটি অতিশয়োক্তি নয়, কারণ তিনিই ঈশ্বরের সারসত্যের অধিকারী এবং তাঁর মধ্যেই রয়েছে ঈশ্বরের স্বভাব এবং প্রজ্ঞা, যা মানুষের পক্ষে অর্জন করা অসাধ্য। যারা নিজেদেরকে খ্রীষ্ট বলে দাবি করে, কিন্তু ঈশ্বরের কাজে অপারগ, তারা আসলে প্রতারক। খ্রীষ্ট নিছক পৃথিবীতে ঈশ্বরের প্রকাশ নন, বরং ঈশ্বরের অবতাররূপ, যা ধারণপূর্বক তিনি মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের কর্ম সম্পাদন করেন এবং তা সম্পূর্ণ করেন। এই অবতাররূপ যেকোনো মানুষ দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা অসম্ভব, বরং তিনি হলেন এক অবতাররূপ, যিনি যথাযথভাবে পৃথিবীতে ঈশ্বরের কর্ম সম্পাদন করতে পারেন, ঈশ্বরের স্বভাব প্রকাশ করতে পারেন, যথাযথ ভাবে ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন এবং মানুষকে জীবন দান করতে পারেন। একদিন না একদিন, খ্রীষ্টের ছদ্মরূপ ধারণকারী প্রত্যেকের পতন অনিবার্য, কারণ তারা নিজেদের খ্রীষ্ট বলে দাবি করলেও, তাদের মধ্যে খ্রীষ্টের সারসত্যের ছিটেফোঁটাও নেই। আর তাই আমি বলি খ্রীষ্টের সত্যতা মানুষ সংজ্ঞায়িত করতে পারে না, বরং তার সত্যতা বিচার এবং সংজ্ঞা নির্ধারণ স্বয়ং ঈশ্বরের দ্বারাই করা সম্ভব(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, শুধুমাত্র অন্তিম সময়ের খ্রীষ্ট মানুষকে অনন্ত জীবনের পথ দেখাতে পারেন)। এর পরে, সে আলোচনা করল: “কীভাবে আমরা প্রকৃত খ্রীষ্টকে ভণ্ড খ্রীষ্টদের থেকে আলাদা করে চিনতে পারি? খ্রীষ্ট হলেন দেহে আবির্ভূত ঈশ্বরের আত্মা, মানুষ রূপে পৃথিবীতে এসেছেন। তিনি সত্যের মূর্ত প্রতীক, ত্রাণকর্তার আগমনস্বরূপ। খ্রীষ্ট সত্য প্রকাশ করতে পারেন এবং রহস্য উন্মোচন করতে পারেন। তিনি মানুষকে পরিশুদ্ধ ও উদ্ধার করতে পারেন এবং স্বয়ং ঈশ্বরের কাজ সম্পাদন করতে পারেন। সারমর্মের দিক থেকে ভণ্ড খ্রীষ্টরা হল প্রেতাত্মা। তারা যতই নিজেদের ঈশ্বর বলে দাবি করুক না কেন, তারা সত্য প্রকাশ করতে পারে না এবং ঈশ্বরের মানবজাতিকে উদ্ধারের কাজও সম্পাদন করতে পারে না। তারা কেবল বাইবেলের কিছু বাক্য প্রচার করতে পারে অথবা মানুষকে প্রতারিত করার জন্য কিছু অলৌকিক কাজ করতে পারে।” তারপর সে একটা উপমা দিয়ে ব্যাখ্যা করল। যদি দশ জন সাদা কোট পরা লোক স্টেথোস্কোপ নিয়ে থাকে, সবাই নিজেকে ডাক্তার বলে দাবি করে, কিন্তু একজনই প্রকৃত ডাক্তার থাকে, আমরা কীভাবে আসলকে নকল থেকে আলাদা করতে পারি? শুধু তাদের পোশাক বা আচরণ দেখলে হবে না, মূল যে বিষয়টা দেখতে হবে তা হল তারা অসুস্থতার চিকিৎসা করতে পারে কি না। যদি পারে, তাহলে তারা ডাক্তার। খ্রীষ্টকে চিহ্নিত করার সময়েও আমরা শুধু চেহারার দিকেই নজর দিতে পারি না। আমাদের সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাঁর কাজ, বাক্য, এবং তিনি যে স্বভাব প্রকাশ করেন তার উপর ভিত্তি করে। তিনি যদি সত্য প্রকাশ করতে পারেন এবং মানবজাতিকে উদ্ধারের কাজ করতে পারেন, তবে তিনি খ্রীষ্ট। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করার সময় আমরা সকলেই দেখতে পাই যে তাঁর বাক্যই সত্য, তাঁর বাক্যের রয়েছে ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব। তিনি প্রকাশ করেছেন ঈশ্বরের ছয় হাজার বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনার রহস্য, তাঁর কাজের তিনটে পর্যায়, তাঁর অবতাররূপ গ্রহণ, এবং তাঁর সকল নাম, আর বাইবেলের নেপথ্যের কাহিনী। এছাড়াও তিনি প্রকাশ করেছেন শয়তানের দ্বারা মানুষের কলুষিত হওয়ার সত্য ও সারমর্ম, এবং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে মানুষের বিদ্রোহ ও প্রতিরোধের উৎস, যা মানুষকে তাদের কলুষিত স্বভাবকে জানতে সাহায্য করে। তিনি আমাদের বলেন যে তিনি কোন ধরনের মানুষ পছন্দ করেন, কাদের ঘৃণা করেন, কোন ধরনের মানুষ ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে, এবং কোন ধরনের মানুষ শাস্তি পাবে। তিনি আমাদের কাছে তাঁর ধার্মিক, অপ্রতিরোধ্য স্বভাবও প্রকাশ করেন। কলুষিত মানবজাতির উদ্ধার লাভ করার জন্য যা প্রয়োজন সেই সমগ্র সত্যই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর প্রকাশ করেছেন, এবং তিনি অন্তিম সময়ের বিচারকার্য করছেন। এ থেকে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই হলেন ঈশ্বরের অবতার এবং অন্তিম সময়ের খ্রীষ্ট। ভণ্ড খ্রীষ্টরা সত্য প্রকাশ করতে পারে না বা ঈশ্বরের মানবজাতিকে উদ্ধারের কাজ সম্পাদন করতে পারে না, মানুষের কলুষিত স্বভাবের সমাধান করতে তো পারেই না। তারা নিজেদেরকে যতই ভগবান বলুক না কেন, তারা ভণ্ড ও তারা অশুভ আত্মা, এবং তাদের পতন হবে।

সিস্টারের আলোচনার পর আমার হৃদয় অনেকটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। আমি বুঝতে পারলাম যে প্রকৃত খ্রীষ্টকে উপলব্ধি করার জন্য আমি যাজকদের বা প্রবীণদের কথায় বিশ্বাস করতে পারতাম না, তিনি সত্য প্রকাশ করতে পারেন কি না এবং মানবজাতিকে উদ্ধারের কাজ সম্পাদন করতে পারেন কি না তা দেখাই মূল বিষয়। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর অনেক সত্য প্রকাশ করেছেন, বাইবেলের অনেক রহস্য প্রকাশ করেছেন, মানুষের বিচার ও তাকে পরিশুদ্ধ করার কাজ করেছেন। এগুলো এমন কাজ যা কোনও মানুষ করতে পারতো না। আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই প্রত্যাবর্তিত প্রভু যীশু। এরপর আমি প্রায়ই আমার গ্রামে ব্রাদার-সিস্টারদের সঙ্গে একত্রিত হতাম।

২০২১ সালের এপ্রিল মাসে, আমার স্বামীর পুরোনো অসুস্থতা ফিরে আসে এবং দুর্ভাগ্যবশত চিকিৎসা চলতে চলতেই সে মারা যায়। আমার আত্মীয়রা চেয়েছিল যাজকরা আসুক এবং প্রার্থনা করতে ও অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে সাহায্য করুক, কিন্তু যাজক ও প্রবীণরা আমাকে উপহাস করল, আর আমাকে আমার বিশ্বাস ত্যাগ করতে বাধ্য করার জন্য সেই সুযোগটা ব্যবহার করল। গ্রামের প্রধানও ওদেরই সমর্থন করল, ওদের কথা শুনিনি বলে আমাকে তিরস্কার করল, আর গ্রামবাসীদের নিষেধ করল যেন আমাকে সাহায্য না করে। তারপর বলল: “আপনি যদি সবার কাছে দোষ স্বীকার করেন, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে ত্যাগ করার প্রতিশ্রুতি দেন, আর গির্জার সমাবেশে যোগ দেন, তাহলে আপনার স্বামীকে কবর দেওয়ায় আমরা আপনাকে সাহায্য করব।” আমি কখনো কল্পনাও করিনি যে ওরা আমাকে আমার বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করার জন্য আমার স্বামীর কবর দেওয়াকে ব্যবহার করবে। এটা একটা জঘন্য, ঘৃণ্য কাজ। ওদের কাছে দোষ স্বীকার করার কোনো কারণ আমার ছিল না। আমি শুধু আমার পাঁচ মাসের বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলাম। যখন আমি উত্তর দিলাম না, ওরা এমনকি আমার পরিবারকে ব্যবহার করে আমাকে ভয় দেখাল আমি যে ভুল তা স্বীকার করতে। আমার হয়ে কথা বলার মতো কেউই সেখানে ছিল না। আমার হতাশ, নিঃসঙ্গ লাগছিল, সারা শরীর কাঁপছিল। আমি ভাবলাম: “যদি আমি না বলি যে আমি ভুল ছিলাম, তাহলে আমার স্বামীকে কবর দিতে কেউ আমায় সাহায্য করবে না, কিন্তু যদি আমি সেকাজ করি, তা ঈশ্বরকে অস্বীকার করা ও তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। আমার কী করা উচিত?” এই যন্ত্রণার মধ্যে আমি ঈশ্বরকে ডাকলাম: “সর্বশক্তিমান ঈশ্বর! আমি বিশ্বাস করি যে তুমিই স্বয়ং ঈশ্বর, সকলের অনন্য স্রষ্টা, তুমিই সকল স্বর্গদূতের বাহিনীর সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, এবং সবই তোমার হাতে। আমি তোমার আয়োজনের কাছে সমর্পণ করতে চাই।” প্রার্থনার পর, আমার পড়া ঈশ্বরের বাক্যের একটা অংশ আমার মনে পড়ল। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “ঈশ্বর মানুষের মধ্যে যে কাজ করেন, তার প্রতিটি ধাপে, বাহ্যিকভাবে মনে হয় তা হল মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ যেন তা মানুষের আয়োজন এবং মানুষের হস্তক্ষেপেই হচ্ছে। কিন্তু অন্তরালে, কাজের প্রতিটি ধাপে, এবং যা কিছু ঘটছে সেই প্রতিটি ঘটনাই ঈশ্বরের প্রতি শয়তানের বাজি এবং এ জন্য প্রয়োজন ঈশ্বরের প্রতি নিজ সাক্ষ্যে মানুষের অটল থাকা। উদাহরণ হিসাবে ধরা যায়, ইয়োবের যখন বিচার চলছিলো: নেপথ্যে শয়তান বাজি ধরেছিলো ঈশ্বরের সঙ্গে এবং ইয়োবের যে পরিণতি তা হয়েছিলো মানুষের কাজে এবং হস্তক্ষেপে। ঈশ্বর তোমাদের ভিতরে যে কাজ করেন তার নেপথ্যের প্রতিটি ধাপেই চলে শয়তানের সঙ্গে ঈশ্বরের লড়াই—সব কিছুর অন্তরালেই চলে এই যুদ্ধ। … আধ্যাত্মিক জগতে যখন শয়তান এবং ঈশ্বরের দ্বন্দ্ব চলে, তখন কী ভাবে তুমি ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করবে এবং তাঁর প্রতি সাক্ষ্যে অবিচল থাকবে? তোমার জানা উচিত, যা কিছুই ঘটে তার প্রতিটিই এক মহান বিচার এবং প্রতিটি সময়েই ঈশ্বরের প্রয়োজন তোমার সাক্ষ্যের(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরকে ভালোবাসাই প্রকৃত ঈশ্বর-বিশ্বাস)। আমি বুঝলাম যে যদিও মনে হচ্ছিল যাজকেরা আর গ্রামের নেতাই আমাকে অত্যাচার করছে, বাধা দিচ্ছে, কিন্তু আসলে এগুলো সবই ছিল শয়তানের ধূর্ততা আর বাধা। যদিও ওরা বলেছে এটা আমারই ভালোর জন্য, কিন্তু আসলে ওরা বিভিন্ন গ্রামীণ প্রথা, যেমন মৃত্যুর পর সমাধি দেওয়া, বিবাহ, সন্তানের জন্ম, বাড়ি তৈরী, এগুলোকে ব্যবহার করছিল গ্রামবাসীদের দিয়ে আমাকে পরিত্যাগ করানোর জন্য, আর ঈশ্বরকে অস্বীকার করতে ও তাঁর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করতে আমাকে বাধ্য করার জন্য। ওরা আমাকে ওদের ধর্মে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল, যাতে আমি ওদের অনুসরণ করি ও মান্য করে চলি। ঈশ্বর অনেক আগেই অন্তিম সময়ের বিচারকার্য সম্পাদন করার জন্য অনুগ্রহের যুগের গির্জাগুলোকে ত্যাগ করেছেন। আমি যদি যাজকদের আর গ্রামের নেতার কথা শুনে তাদের সঙ্গে গির্জায় ফিরে যেতাম, তাহলে ঈশ্বরের কাছে উদ্ধার লাভের সুযোগ হারাতাম, এবং আমাকেও ওদের সঙ্গে নরকে পাঠানো হত আর দণ্ড দেওয়া হত। এটা ছিল শয়তানের অশুভ উদ্দেশ্য। ওরা যেভাবেই আমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াক না কেন, আমি ওদের কথা মেনে নিতে পারতাম না। আমাকে প্রার্থনা করতে হতো, ঈশ্বরের উপর নির্ভর করতে হতো, আমার সাক্ষ্যে দৃঢ় থাকতে হতো, আর শয়তানকে অপমানিত করতে হতো। কিন্তু আমার স্বামীকে সমাধিস্থ করার জন্য তখনও আমার সাহায্যের দরকার ছিল, এটা একটা বাস্তব সমস্যা। গ্রামবাসী, আত্মীয়, বন্ধু সবাই গ্রামের নেতা আর যাজকদের কথাই মেনে চলছিল, কোনো সাহায্যই ওরা করবে না, তাহলে আমার আর কী-ই বা করার ছিল? আমি ঈশ্বরকে ডাকতে থাকি: “সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, আমার স্বামীকে কবর দিতে কেউ আমাকে সাহায্য করতে আসবে কি না তা সম্পূর্ণ তোমার হাতে। এই বিষয়গুলো আমি তোমার উপরেই ছেড়ে দিলাম। যাই হোক না কেন, আমি তোমার কাছেই সমর্পণ করব আর কখনও তোমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করব না।” প্রার্থনার পর আমি একটু শান্ত হলাম, আর আমার যন্ত্রণাও প্রশমিত হলো। ঠিক তখনই, শুনতে পেলাম আমার কাকু বাইরে থেকে বলছে: “আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, দয়া করে সাহায্য করুন, ওর হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি।” গ্রামের নেতা বলল: “ওকে নিজেকেই ক্ষমা চাইতে হবে।” আমি ভাবলাম: “আমাকে ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করানোর জন্য ওরা সবকিছু করতে পারে, কিন্তু ওরা যত বেশি চেষ্টা করবে, ততই শয়তানকে লজ্জা দেওয়ার জন্য আমাকে আমার সাক্ষ্যে দৃঢ় থাকতে হবে।” প্রায় দশ মিনিট পর আমি আমার মায়ের কাছ থেকে হঠাৎ একটা অপ্রত্যাশিত ফোন পেলাম। মা বলল: “নিরাশ হয়ো না, তোমার স্বামীর সেনাবাহিনীর কিছু বন্ধু ওকে কবর দিতে তোমায় সাহায্য করবে, ওরা ইতিমধ্যেই রওনা দিয়ে দিয়েছে।” সেই সময় আমি আপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। আমি যখন সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় ছিলাম তখন ঈশ্বর আমাকে সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্য লোক পাঠিয়েছিলেন। ঈশ্বরের বাক্যের একটা অংশ আমার মনে পড়ল: “তুমি জানো যে পরিবেশের যে সবকিছু তোমায় ঘিরে রয়েছে, তা আসলে আমার অনুমতির কারণেই রয়েছে, সবকিছুই আমার পরিকল্পনামাফিক। স্পষ্টভাবে দেখো আর সেই পরিবেশে আমার হৃদয়কে সন্তুষ্ট করো যা আমি তোমায় দিয়েছি। ভয় পেয়ো না, স্বর্গদূতবাহিনীর সর্বশক্তিমান ঈশ্বর নিশ্চিতভাবে তোমার সাথে থাকবেন; তিনি তোমাদের পিছনেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন, এবং তিনিই তোমাদের রক্ষাকবচ(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সূচনাকালে খ্রীষ্টের বাক্য, অধ্যায় ২৬)। দেখতে পেলাম যে সবই ঈশ্বরের হাতে। যতক্ষণ আমরা সত্যিই ঈশ্বরের উপর নির্ভর করবো, তিনি আমাদের জন্য একটা পথ খুলে দেবেন। যদিও তখনও পর্যন্ত আমার উপর নির্যাতন করা হচ্ছিল, তবুও আমি ঈশ্বরের পথনির্দেশ দেখতে পেলাম, আমার হৃদয় মজবুত হয়ে উঠেছিল, আমি আর নেতিবাচক বা দুর্বল বোধ করছিলাম না।

আমার স্বামীর শেষকৃত্যের ব্যবস্থা হয়ে যাওয়ার পর, ওর মা প্রায়ই আমাকে বকাঝকা করতেন, বলতেন যে গ্রামবাসীরা আমাদের এড়িয়ে যাচ্ছে কারণ আমি প্রভু যীশুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি আর ভুল ঈশ্বরে বিশ্বাস করেছি। আমার আত্মীয়রাও সেই অভিযোগে আমাকে আঘাত করতে থাকে। এমনকি আমার মায়ের পরিবারও আমার কাছে আসতে সাহস করেনি। শুধু আমার মা আমাকে দেখতে আসত, যদিও সে আমাকে জোর করতে থাকে: “কেন তুমি যাজক, গ্রামের নেতা বা গ্রামের প্রধানের কথা শুনছ না? দেখো, তোমার স্বামী তো আর নেই, তুমি যদি এদের উপর বা তোমার শ্বশুরবাড়ির লোকদের উপর নির্ভর না করো তবে তুমি কার কাছে যাবে? তোমার বাচ্চা এখনো খুবই ছোট। তোমার উচিত অপরাধ স্বীকার করা এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করা বন্ধ করে দেওয়া!” আমি যেখানেই যেতাম গ্রামবাসীরা আমার পিছনে আমার সম্পর্কে কথা বলত, আমার বিষয়গুলো মুখরোচক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল। আমি ভাবতাম, আগে আমাদের মধ্যে কেমন সুসম্পর্ক ছিল অথচ এখন ওরা শুধুমাত্র আমার বিশ্বাসের কারণে আমাকে নির্যাতন করছে আর সমাজচ্যুত করে দিয়েছে। আমি এতে সত্যিই আঘাত পেয়েছিলাম আর বিষন্ন হয়ে পড়েছিলাম। সে সময় মায়ানমারে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাই আমি অনলাইনে সমাবেশে যোগ দিতে বা উপদেশ শুনতে পারিনি, আর অন্য সদস্যরাও ঈশ্বরের বাক্য আলোচনা করে আমাকে সাহায্য করতে আমার বাড়িতে আসার সাহস করেনি। মনে হচ্ছিল আমি অন্ধকারে পড়ে গেছি, আলো দেখতে পাচ্ছি না। প্রতিদিন ঈশ্বরে কাছে প্রার্থনা করা, আর সেই অন্ধকার দিনগুলো থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমাকে পথ দেখাতে বলা ছাড়া আমার করার কিছু ছিল না। একদিন, আমি একটা টেক্সট মেসেজে ঈশ্বরের বাক্যের একটা অংশ পেলাম। “নিরুৎসাহিত হয়ো না, দুর্বল হয়ো না, আমি তোমার কাছে সবকিছু স্পষ্ট করে তুলব। রাজ্যের পথ অতটাও মসৃণ নয়, কোন কিছুই এত সহজ নয়! তোমরা চাও খুব সহজেই তোমাদের কাছে আশীর্বাদ আসুক, তাই নয় কি? আজ, সবাইকে তিক্ত পরীক্ষাসমূহের সম্মুখীন হতে হবে। এই পরীক্ষাসমূহ ব্যতীত, আমার জন্য তোমাদের প্রেমময় হৃদয় আরো শক্তিশালী হয়ে বিকশিত হবে না এবং আমার জন্য তোমাদের প্রকৃত ভালোবাসা থাকবে না। এমনকি, যদিও এই পরীক্ষাগুলি খুব সাধারণ ঘটনা সংক্রান্তও হয়ে থাকে তাহলেও, এগুলির মধ্যে দিয়েই সকলকে উত্তীর্ণ হতে হবে; তবে পরীক্ষাগুলি কতটা কঠিন হবে তা ব্যক্তিবিশেষের উপর নির্ভর করছে। পরীক্ষাগুলি আমাকৃত আশীর্বাদ, এবং তোমাদের মধ্যে কতজন আমার সম্মুক্ষে এসে নতজানু হয়ে আমার আশীর্বাদ ভিক্ষা করেছ? বোকা সন্তানের দল! তোমরা সবসময় মনে করো কয়েকটি শুভ বাক্যই আমার আশীর্বাদ। কিন্তু এটা স্বীকার করো না যে তিক্ততাও আমারই এক আশীর্বাদ(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সূচনাকালে খ্রীষ্টের বাক্য, অধ্যায় ৪১)। এটা পড়ে আমি আপ্লুত হয়ে পড়লাম। মনে হলো যেন গভীর অসুস্থ অবস্থায় হঠাৎ একটা জীবনীশক্তিদায়ী ওষুধ খেয়েছি, এবং আমি বিশ্বাস ও শক্তিতে পূর্ণ হয়ে উঠলাম। ঈশ্বরের বাক্যগুলো চিন্তা করে বুঝলাম, ঈশ্বরকে অনুসরণ করা সহজ নয়, সবাইকেই কষ্ট ও ক্লেশ সহ্য করতে হয়। যদিও আমার শরীর কষ্ট পাচ্ছিল, কিন্তু ঘনঘন প্রার্থনা করতে আর ঈশ্বরের উপর নির্ভর করতে সেটাই আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। এবং আমি যত বেশি কষ্ট পেয়েছি, ততই সত্য অনুসন্ধানের জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছি। নিজের অজান্তেই আমি ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে কিছু জ্ঞান অর্জন করেছিলাম, ঈশ্বরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল, এবং আমি তাঁকে অনুসরণ করার জন্য আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলাম। ছোটবেলা থেকেই প্রভুর উপর আমার বিশ্বাস ছিল, কিন্তু আমি শুধু জানতাম তিনি যে অনুগ্রহ, আশীর্বাদ, শান্তি, আর সুখ আমাকে দিয়েছেন তা কীভাবে উপভোগ করতে হয়। আমি কখনও কোনো কষ্ট বা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাইনি। আমি প্রভু সম্পর্কে কিছুই জানতাম না, মানুষকে চেনার সম্পর্কেও নয়। কিন্তু সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাসী হিসাবে, এই নিপীড়ন এবং যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে, আমি একটু কষ্ট পেয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু আমি মানুষকে বুঝতে শিখেছিলাম, আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম যাজক ও প্রবীণদের কুৎসিত, প্রতারক, ঈশ্বর-প্রতিরোধী মুখ। আগে, যেহেতু আমি দেখেছিলাম যে যাজকরা বাইবেল ব্যাখ্যা করতে পারে, আমাদের জন্য প্রার্থনা করতে পারে, তাই আমি ভাবতাম ওরা আমাদের যত্ন নেয়, বাইবেল বোঝে, ঈশ্বরকে জানে। কিন্তু ওরা যখন শুনল প্রভু যীশু ফিরে এসেছেন, ওদের অনুসন্ধান বা তদন্ত করার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। বরং ওরা বিশ্বাসীদেরও বাধা দিল ঈশ্বরের কাজের অনুসন্ধান করতে, এবং গ্রামের রীতিনীতি আর গ্রামবাসীদের ব্যবহার করল আমায় আক্রমণ করতে আর জবরদস্তি করল সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করতে। আমি দেখতে পেলাম যে ওরা ভণ্ড ফরিশী এবং আমি ওদের সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করলাম। সেই যন্ত্রণা আর হতাশার দিনগুলোর কথা ভাবলে মনে হয়, ঈশ্বরের বাক্যের পথনির্দেশ না থাকলে আমি হয়তো ওই প্রেতাত্মাগুলোর পাল্লায় পড়ে পাগলই হয়ে যেতাম। ঈশ্বরের বাক্যের সাহায্যেই আমি এই সমস্ত সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম। আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে সত্যিই কৃতজ্ঞ! কিছু সময় পর মায়ানমারে আবার ইন্টারনেট চালু হল। আমি আরও কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সঙ্গে জড়ো হলাম। কিন্তু যাজকদের আর গ্রামের নেতার অত্যাচার আরও বেড়ে উঠল।

২০২২ সালের জানুয়ারীতে, একদিন ওরা একটা গ্রামের সভা ডাকল। সেখানে প্রায় তিনশোর বেশি মানুষ উপস্থিত হল। তারা আমাদের চোদ্দজন বিশ্বাসীকে বাইরে প্রখর রোদে বসিয়ে রাখল। গ্রামের নেতা বলল: “এই গ্রামে দুটো ধর্ম থাকতে পারে না। আমি এই সভা ডেকেছি যাতে আপনারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অনুগামীরা কোনো একটাকে বেছে নিতে পারেন। সারা গ্রামের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের জিজ্ঞাসা করছি, আপনারা কি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস চালিয়ে যাবেন, নাকি গির্জায় ফিরে আসবেন?” ওরা আমাদের আত্মীয়দের ডাকল এক এক করে আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করতে। ব্রাদার আই ওয়াং এর বাবা ছিল গ্রামের একজন প্রধান, এবং সে তাকে হাঁটু মুড়ে বসে দোষ স্বীকার করার জন্য চাপ দিল। আই ওয়াং বলল যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করার মধ্যে কোনো ভুল নেই, এবং সে নতজানু হতে অস্বীকার করল। তার বাবা রেগে বলল, “তোমার বাবা-মা যা বিশ্বাস করে তোমার সেটাই বিশ্বাস করা উচিত। আমাদের কথা না শুনে আর সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করে তুমি কি আমাদের পরিত্যাগ করছ না?” আই ওয়াং উত্তর দিল: “আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, আমি কখন বললাম আমি তোমাদের পরিত্যাগ করছি? আমি আমার বাবা-মাকে ভালোবাসি, কিন্তু আমি আমাদের সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরকে আরও বেশি ভালোবাসি।” ওর বাবা আরও রেগে চিৎকার করে বলল: “তুমি আমার ছেলে! তোমার সমস্তকিছু আমার হাতের মুঠোয়! আমি তোমাকে আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলতে দেব না!” এই দেখে আমার কাছে এই লোকগুলোর ঔদ্ধত্য আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল। যদিও ওরা প্রভুতে বিশ্বাস করতো, কিন্তু তাঁকে শ্রদ্ধা করেনি বা তাঁকে মহিমান্বিত করেনি। তখন একজন সরকারি কর্মকর্তা বলল, “চীন মানুষকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করার অনুমতি দেয় না, এবং যারা তা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আমরা এখানে আমাদের নিজেদের মতো করে তদন্ত করার পরিকল্পনা করছি। কে আপনাদের এই বিশ্বাসের দিকে নিয়ে এসেছে? আপনাদের নেতা কে?” আমরা সবাই বললাম যে আমাদের কোনো নেতা নেই। অন্য একজন কর্মকর্তা তখন আমাদের উত্তরের জন্য চাপ দিল, কিন্তু আমরা তাকেও বলতে থাকলাম যে আমাদের কোনো নেতা নেই। একজন জেলা সরকারী কর্মকর্তা তখন আমাদের জিজ্ঞাসা করল: “‘সর্বশক্তিমান ঈশ্বর’ বলতে কী বোঝেন আপনারা?” আমি উত্তর দিলাম: “আপনি জানেন না? সর্বশক্তিমান ঈশ্বর হলেন সৃষ্টির প্রভু, ঠিক সেই প্রভু যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন।” এই কথা শুনে তিনি বিরক্ত হলেন এবং আমাদের বললেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে। যারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখাকে বেছে নেবে তাদের বলতে হবে “চালিয়ে যাব” আর যারা বিশ্বাস করা বন্ধ করবে তাদের বলতে হবে “ছেড়ে দিচ্ছি”। আমরা যদি “চালিয়ে যাওয়া” বেছে নিই, তাহলে উপরমহলের ব্যক্তিদের কাছে আমাদের বিষয়ে রিপোর্ট করা হবে। গ্রামের নেতা আরও বলল, যারা “চালিয়ে যেতে” চায় তাদের গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে, কিন্তু যারা “ছেড়ে দেওয়া” বেছে নেবে, তারা থাকতে পারে এবং গির্জায় ফিরে আসতে পারে। তারা তখন একের পর এক আমাদের সিদ্ধান্ত জানাতে বাধ্য করল। আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজন সিস্টার অত্যাচারের ভয়ে “ছেড়ে দেওয়া” বেছে নিল। যখন আমার পালা এলো, আমার মা, আমার সন্তানকে তার পিঠে নিয়ে, আমাকে চিৎকার করে বলল “ছেড়ে দাও”, বিশ্বাস করা বন্ধ করো। তখন আমার মা আর সন্তানের দিকে তাকিয়ে আমার খুবই কষ্ট হচ্ছিল। আমি ভয় পেয়ে গেলাম যে যদি আমাকে গ্রেপ্তার করা হয় তাহলে কি হবে, আমার মায়ের পক্ষে আমার সন্তানের যত্ন নেওয়া খুবই কঠিন হবে। তাই আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম যেন তিনি আমাকে বিশ্বাস প্রদান করেন। প্রভু যীশুর বাক্য মনে পড়ল আমার। “যে তার পিতা বা মাতাকে আমার চেয়ে বেশী ভালোবাসে সে আমার শিষ্য হওয়ার যোগ্য নয়: যে নিজের পুত্রকন্যাকে আমার চেয়ে বেশী ভালবাসে সেও আমার যোগ্য নয়। যে নিজের ক্রুশ বহন করে না, এবং আমায় অনুসরণ করে না, সে আমার যোগ্য নয়(মথি ১০:৩৭-৩৮)। “ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য নিপীড়িত যারা, তারাই ধন্য, ঐশ রাজ্য তাদেরই(মথি ৫:১০)। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “ঈশ্বর বলেছেন, ‘ঈশ্বর হলেন মানুষের জীবনের উৎস’। এই বাক্যের অর্থ কী? সকল মানুষদের এই বিষয় সম্পর্কে অবগত করতে এই বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে: আমাদের জীবন ও আত্মা ঈশ্বরের থেকে আগত; সেগুলো ঈশ্বরেরই সৃষ্ট। এগুলো আমাদের পিতামাতাদের থেকে আগত নয়, প্রকৃতির থেকে তো নয়ই। আমাদের ঈশ্বরই এগুলো প্রদান করেছেন। শুধুমাত্র আমাদের দেহেরই জন্ম ঘটেছে পিতামাতার থেকে, কিন্তু তা-ও হয়েছে ঈশ্বরেরই আয়োজনে। যেহেতু মানবজাতি এবং মানুষের পূর্বপুরুষ উভয়েই ঈশ্বর সৃষ্ট, সেহেতু আমাদের পিতামাতারাও যে ঈশ্বরেরই সৃষ্ট, তারা যে প্রকৃতির থেকে আগত নয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই। মানুষের গন্তব্য রয়েছে ঈশ্বরের করতলে। আমরা যে ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস করি, আমাদের সেই সুযোগটুকুও তাঁরই দেওয়া, তা-ও তাঁরই দ্বারাই নির্ধারিত এবং তাঁর অনুগ্রহও বটে। অতএব, অন্য কোনো ব্যক্তির প্রতি দায়বদ্ধ থাকার জন্য বা তার দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য তোমার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই; তোমার একমাত্র বাধ্যবাধকতা হল সৃষ্ট সত্তার পালনীয় কর্তব্য পালন করা। এ-ই হল মানুষের সবচেয়ে করণীয় বিষয়, এবং জীবনের সমস্ত বৃহৎ বিষয়বস্তুগুলোর মধ্যে এটাকেই সবচেয়ে জরুরিভাবে সম্পন্না করা উচিত সবার—এটাই হল জীবনের প্রধান বিষয়(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র নিজের ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে পরিচিত হলে তবেই প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব হয়)। আমি উপলব্ধি করলাম যে আমাদের ভাগ্য ঈশ্বরের হাতে। আমরা কোথায় জন্মগ্রহণ করি, আমাদের পিতামাতা কে, আমরা কী সমস্যার সম্মুখীন হই—এই সবকিছু অনেক আগে থেকেই ঈশ্বর নির্ধারিত করে রেখেছেন। যদিও আমি আমার সন্তানের জন্ম দিয়েছি, কিন্তু তার জন্য আমি যা করতে পারি তা হল শুধুই মা হিসেবে আমার কর্তব্য, অর্থাৎ তাকে জন্ম দেওয়া এবং তার দেখাশোনা করা। কিন্তু তার ভাগ্য বা তার সাথে যা হবে তা আমি বদলাতে পারবো না। কিছু শিশু অল্প বয়সেই অনাথ হয়, কিন্তু তারা একইভাবে বড় হয়ে ওঠে। ঠিক যেমন আমার ছোটবেলাতেই আমার বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল, অন্য বাচ্চাদের মতো আমার যত্ন নেওয়ার জন্য আমার বাবা ছিল না, কিন্তু আমি তবুও একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হয়ে উঠেছি। আমার সন্তানের ভবিষ্যত ঈশ্বরের দ্বারা নির্ধারিত। আমার মায়ের বয়স তখনও কম। আমি না থাকলেও সে আমার সন্তানের দেখাশোনা করতে পারবে। ঈশ্বরের হাতে তাদের দায়িত্ব অর্পণ করে তাঁর আয়োজনের কাছে সমর্পণ করা ছাড়া আমার উপায় ছিল না। আমি আরও বেশি করে অনুভব করলাম যে ঈশ্বরের প্রতি আমার সাক্ষ্যে দৃঢ় থাকার জন্য এবং শয়তানকে অপমানিত করার জন্য আমার উচিত ঈশ্বরে বিশ্বাস ও তাঁর অনুসরণকেই বেছে নেওয়া। তাই আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, “আমি চালিয়ে যাব!” গ্রামের নেতা বলল: “যারা চালিয়ে যেতে চাইছেন তারা কিন্তু ভুল করছেন।” আমি উত্তর দিলাম: “আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি এবং তাঁকে অনুসরণ করি। আমি শুধু তাঁর বাক্যই মেনে চলি। এটা কোন ভুল নয়!” কর্মকর্তা প্রচণ্ড রেগে গিয়ে আমাকে তিরস্কার করল, বলল আমি একজন ধর্মত্যাগী এবং প্রভুর প্রতি বিশ্বাসঘাতক। কিন্তু অন্তর থেকে আমি জানতাম সর্বশক্তিমান ঈশ্বর অনেক সত্য প্রকাশ করেছেন এবং অন্তিম সময়ের বিচারকার্য সম্পাদন করেছেন, এবং তিনিই প্রত্যাবর্তিত প্রভু যীশু। আমি ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শুনেছি এবং প্রভুর পরিত্রাণ গ্রহণ করেছি। আমি মেষশাবকের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছিলাম, তা কীভাবে প্রভুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হতে পারে? আমি প্রচণ্ডভাবে চাইছিলাম ওদের কথার খণ্ডন করি, কিন্তু ওদের সবার চিৎকারে আমি সে সুযোগ পাইনি। প্রবীণ লি অকৃতজ্ঞ দুরাত্মা বলে অভিশাপ দিয়ে আমাকে আঘাত করার জন্য একটা লাঠি তুলে নিল। আমি ভীষণ ভয় পেয়ে নীরবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে, আমার শাশুড়ি হঠাৎ তাকে থামানোর জন্য এগিয়ে এলেন। ঈশ্বরের সুরক্ষা লাভ করতে পেরে আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানালাম। আরও পাঁচজন সদস্য তারপর “চালিয়ে যাওয়া” বেছে নিল। আমরা আপস করছি না দেখে ওরা আমাদের ক্রমাগত প্রশ্ন করতে থাকল আমাদের নেতা কে। কেউ কোনো সাড়া দিল না। অনেকক্ষন ধরে আমাদের রোদের মধ্যে মাটিতে বসিয়ে রাখা হয়েছিল, সকাল সাড়ে ন’টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত, একটানা সাত ঘণ্টারও বেশি, কোনো খাবার বা জল ছাড়াই। এই কারণে, এক দুর্বল ব্রাদার, যার নিম্ন রক্তচাপ ছিল, সে অজ্ঞান হয়ে পড়ল। তার পরিবার তাকে সাহায্য করতে এল, কিন্তু গ্রামের নেতা তাদের সাহায্য করতে দিলো না। বলল: “তোমাদের ঈশ্বরই যদি প্রকৃত ঈশ্বর হয়, তাহলে ও কেন অজ্ঞান হয়ে গেল?” এরপর, গ্রামের সেই নেতা আমাদের বলল পরিবার, গবাদিপশু, আর সমস্ত সম্পত্তি নিয়ে সেই সন্ধ্যাতেই গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে। একথাও বলল যে আমরা চলে যাওয়ার পর ওরা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেবে। জেলা সরকারি কর্মকর্তা বলল, “সময় নষ্ট করবেন না, এদের নেতা কে সেকথা বলার চেয়ে এরা বরং মরে যাওয়া বেছে নেবে। আগে এদের বাড়িতে পাঠান। এদের রিপোর্ট আমি কালকেই উপরমহলের সিদ্ধান্তের জন্য সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেবো। এতেই ওদের যথেষ্ট ভয় দেখানো যাবে।” কিন্তু আমি তেমন ভয় পাইনি। আমি জানতাম যে সবই ঈশ্বরের হাতে এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আসবেন কি না বা আমাদের গ্রেপ্তার করবেন কি না, সেগুলো সবই ঈশ্বরের হাতে এবং তিনিই সব আয়োজন করেছেন।

তৃতীয় দিনের সকালে, সরকার একটা গ্রাম সভা ডাকে। সেখানে চারশোরও বেশি লোক জমা হয়। আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছিল যে ওরা আমাদের বাধ্য করবে ঈশ্বরনিন্দা করতে, আর ধর্মত্যাগের অঙ্গীকারে সই করতে। তাই আমি প্রার্থনা করলাম, ঈশ্বরকে বললাম আমাদের রক্ষা করতে, যাতে আমরা আমাদের সাক্ষ্যে দৃঢ় থাকতে পারি। সেই সভায়, জেলা সরকারের প্রধান আমাদের বলল, “তোমরা সবাই তরুণ, আর তোমরা কিছুই বোঝো না। আজ আমি তোমাদের দোষী সাব্যস্ত করতে আসিনি, কিন্তু এখন থেকে, তোমরা অবশ্যই বাবা-মায়ের কথা শুনবে, পরিশ্রম করবে, আর সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য শোনা ও তার সুসমাচার প্রচার করা বন্ধ করবে, নইলে গ্রামের প্রধান তোমাদের গ্রেপ্তার করে সরকারের হাতে তুলে দেবে।” প্রশাসনিক কাউন্সিলের একজন কর্মকর্তা সবাইকে বলল: “আমরা চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টির মতো করেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অনুসারীদের মোকাবিলা করব। চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি এইসব বিশ্বাসীদের খুঁজে খুঁজে গ্রেপ্তার করে, আর তাদের পিটিয়ে মেরে ফেললেও ওদের কোনো শাস্তি হয় না। এই ওয়া প্রদেশেও আমরা তাই করব। এই বিশ্বাসীরা সকলে গ্রেপ্তার হবে, তারা কোনো অপরাধ করুক বা না করুক, আর তারপর তাদের পিটিয়ে মেরে ফেললেও কারো কোনো শাস্তি হবে না। একজনও এরকম কথা বলতে পারবে না যে ‘ওই বিশ্বাসীরা কোনো অপরাধ করেনি।’ এটাই সরকারের আদেশ। প্রতিরোধ কোরো না, কোনো সর্বশাক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাসীকে দেখলেই রিপোর্ট করো।” তারপর আমাদের বিশ্বাসীদের দিকে নির্দেশ করে সবাইকে বলল: “এদের মুখগুলো ভালো করে দেখে নিন, এদের চিনে রাখতে হবে। এরা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করে। যদি দেখেন এরা সমাবেশ বা ধর্মপ্রচার করছে, রিপোর্ট করুন!” তারপর সে একজন জেলাঅফিসের কেরানিকে দিয়ে ঈশ্বরনিন্দা করে লেখা কিছু কাগজপত্র সবার সামনে পড়িয়ে শোনালো। সরকারের কথায় মানুষ প্রতারিত হলো, আর অনেকেই আমাদের দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ওদের কথায় আমি ভীষণ রেগে গেলাম। জানতাম সরকার আমাদের বিশ্বাসীদের অত্যাচার করছিল যাতে আমরা আমাদের বিশ্বাস ছেড়ে দিই আর মানুষ যাতে ভয় পায়, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজের অনুসন্ধান না করে, ফলে ঈশ্বরের পরিত্রাণ হারায়। এটা সেই শয়তানদের প্রতি আমার ঘৃণা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল। তারপর সরকার আমাদের বাড়ি যেতে দিল। বাড়িতে ফিরে এসে, আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্যের একটা অনুচ্ছেদ পড়লাম। “শয়তান যতোই ‘শক্তিধর’ হোক না কেন, যতোই সে দুর্বিনীত ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী হোক, তার ক্ষতিসাধনের ক্ষমতা যত বিপুলই হোক, মানুষকে ভ্রষ্ট ও প্রলুব্ধ করার লক্ষ্যে সে যত বিচিত্র কৌশলই প্রয়োগ করুক, মানুষকে ভীতিপ্রদর্শন করতে তার কৌশল ও অভিসন্ধি যত চাতুর্যপূর্ণই হোক, যে রূপে সে অধিষ্ঠান করে সে যত পরিবর্তনশীলই হোক, কোনোদিন সে একটিমাত্র জীবন্ত বস্তু সৃষ্টি করতেও সক্ষম হয়নি, কোনোদিন সে সকলকিছুর অস্তিত্বের নিমিত্ত বিধান বা নিয়মাবলী প্রণয়ন করতে সমর্থ হয়নি, এবং কোনোদিন জীবিত বা নির্জীব কোনো বস্তুকেই শাসন ও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়নি। মহাকাশ ও নভোমণ্ডলের মধ্যে, এমন একজন মানুষ বা এমন একটি বস্তুও নেই যা শয়তানের থেকে উদ্ভূত হয়েছিল বা তার দরুন বিদ্যমান; এমন একজন মানুষ বা এমন একটি বস্তুও নেই যা শয়তানের দ্বারা শাসিত বা নিয়ন্ত্রিত। উল্টে, তাকে যে শুধু ঈশ্বরের আধিপত্যের অধীনে বসবাস করতে হয় তা-ই নয়, তদুপরি ঈশ্বরের সকল নির্দেশ ও আদেশ মেনে চলতে সে বাধ্য। ঈশ্বরের অনুমতি ব্যতীত, ভূভাগের এক বিন্দু জল বা একটি বালুকণাকে স্পর্শ করাও শয়তানের পক্ষে দুরূহ; ঈশ্বরের অনুমোদন ব্যতিরেকে, ঈশ্বর-সৃষ্ট মানবজাতি দূরে থাক, ভূমির উপর এমনকি পিঁপড়েদের নড়ানোর স্বাধীনতাও শয়তানের নেই। ঈশ্বরের দৃষ্টিতে, পর্বতের লিলিফুল, বাতাসে উড়ন্ত পাখি, সমুদ্রের মাছ, পৃথিবীপৃষ্ঠের লার্ভাকীট অপেক্ষাও শয়তান নিকৃষ্ট। সকল বস্তুর মধ্যে শয়তানের ভূমিকা হল যাবতীয় কিছুর সেবা করা, এবং মানবজাতির জন্য কাজ করা, এবং ঈশ্বরের কার্য ও তাঁর ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনার সেবা করা। তার প্রকৃতি যতোই বিদ্বেষপরায়ণ হোক, এবং তার সারসত্য যতোই মন্দ হোক না কেন, একমাত্র যে কাজটি সে করতে পারে তা হল কর্তব্যপরায়ণ ভাবে নিজের কাজটির প্রতি বিশ্বস্ত থাকা: ঈশ্বরের সেবায় ব্যবহৃত হওয়া, এবং ঈশ্বরের প্রতিতুলনায় এক বিষম সত্তা হিসাবে নিজেকে উপস্থাপিত করা। এই হল শয়তানের উপাদান ও অবস্থান। শয়তানের সারসত্যের সাথে জীবনের কোনো সম্পর্ক নেই, ক্ষমতার সাথে তা সম্পর্করহিত, কর্তৃত্বের সাথেও তা সম্পর্কবিযুক্ত; শয়তান ঈশ্বরের হাতে নিছকই এক ক্রীড়নক, ঈশ্বরের সেবায় নিয়োজিত এক যন্ত্র মাত্র!(বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ১)। ঈশ্বরের বাক্যের পাঠ আমাকে বিশ্বাস এনে দিল। যাজক এবং প্রবীণরা আমাদের চাপ দিতে পারত, সরকার আমাদের গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করতে পারত, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করতে বাধ্য করার চেষ্টায় আমাদের পরিবারকেও ব্যবহার করতে পারত, কিন্তু ওরা যাই বলুক বা করুক না কেন, ঈশ্বরের অনুমতি ছাড়া ওরা আমাদের কিছুই করতে পারত না। যেমন প্রবীণ লি আমাকে লাঠি দিয়ে মারতে চেষ্টা করেছিল, আমার শাশুড়ি, যিনি আমাকে ঘৃণা করতেন, হঠাৎ আমার পক্ষে দাঁড়ালেন এবং তাকে থামালেন। এই সব ঈশ্বরের হাতেই ছিল। আমি সমস্ত কিছুর উপর ঈশ্বরের ক্ষমতা এবং সার্বভৌমত্ব অনুভব করলাম এবং অনুভব করলাম যে তিনি আমার উপর নজর রাখছিলেন। আমি জানতাম যে ঈশ্বর আমার আত্মিক উচ্চতার উপর ভিত্তি করেই পরিস্থিতির আয়োজন করেন এবং তিনি আমাকে খুব ভারী কোনো দায়িত্ব দিচ্ছিলেন না। এসব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে ঈশ্বরের প্রতি আমার বিশ্বাস বেড়ে উঠেছিল এবং আমি অনুভব করেছিলাম যে ঈশ্বর যা করেন তা সবই মঙ্গলময়। আমি ঈশ্বরের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ! এছাড়াও এই অভিজ্ঞতা আমাকে সক্ষম করে তুলেছে যাজক এবং প্রবীণদের ঈশ্বরের প্রতি ঘৃণা ও প্রতিরোধের স্বভাব স্পষ্টভাবে দেখতে। ঈশ্বরের বাক্যে বলা আছে, “অনেকেই আছে যারা বিরাট গির্জাগুলিতে বাইবেল পড়ে এবং সারাদিন ধরে সেটি আবৃত্তি করে, তবুও তাদের কেউই ঈশ্বরের কাজের উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে পারে না। তাদের মধ্যে কেউই ঈশ্বরকে জানতে সক্ষম নয়, আর তাদের মধ্যে কারোর ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা তো আরোই কম। তারা সকলে অপদার্থ, জঘন্য মানুষ, প্রত্যেকেই ঈশ্বরকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য উচ্চে দণ্ডায়মান। ঈশ্বরের ধ্বজা বহন করাকালীনও তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঈশ্বরের বিরোধিতা করে। ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস দাবি করেও তারা মানুষের মাংস ভক্ষণ ও রক্ত পান করে। এই ধরনের মানুষেরা হল মানুষের আত্মা-গ্রাসকারী শয়তান, সঠিক পথে পা-রাখতে চাওয়া মানুষদের ইচ্ছাকৃত ভাবে বাধাদানকারী প্রধান অপদেবতা, এবং তারা হল ঈশ্বর-অন্বেষণকারীদের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বাধাস্বরূপ। তাদের দেখে ‘ভালো অবস্থার’ মনে হতে পারে, কিন্তু তাদের অনুগামীরা কীভাবে জানবে যে তারা মানুষদের ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচারী করে তোলা খ্রীষ্টবিরোধী ছাড়া আর কেউ নয়? তাদের অনুগামীরা কীভাবে জানবে যে তারা জীবন্ত শয়তান যারা মানুষের আত্মা গ্রাস করার জন্যই নিবেদিত?(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, যারা ঈশ্বরকে জানে না তারা সকলেই ঈশ্বরবিরোধী)। যাজক আর প্রবীণরা বাইবেল একেবারেই বুঝতে পারেনি। তারা শুধু বাইবেলের বাক্য আর মতবাদ শেখাত, এবং তারা প্রভুকে মোটেও স্বাগত জানায়নি, সত্যের অনুসন্ধান করা তো অনেক দূরের বিষয়। ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজের সম্মুখীন হয়ে, তারা অনুসন্ধান বা অন্বেষণ করেনি, তারা প্রভুর বাক্যের ভুল ব্যাখ্যা করেছে, আর বিশ্বাসীদের বিভ্রান্ত করার জন্য ভুল ধারণা ছড়িয়েছে। যারা প্রভুর প্রত্যাবর্তন প্রচার করে তাদের সবাইকে ভণ্ড বলার মাধ্যমে তারা বিশ্বাসীদেরকে ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শোনা এবং প্রভুকে স্বাগত জানানো থেকে বিরত রেখেছিল। এমনকি একথাও বলেছিল যে এইসব শুধু বিশ্বাসীদের রক্ষা করার জন্য, কিন্তু আসলে তারা ভীত ছিল যে সবাই যদি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে অনুসরণ করে তাহলে তাদের কথা কেউ শুনবে না, এবং তাদের মর্যাদা আর জীবিকা বিপদের সম্মুখীন হবে। এই কারণেই তারা ঈশ্বরকে ত্যাগ করার জন্য আমাদের বাধ্য করার চেষ্টা করেছিল। বিবাহ, জন্ম, মৃত্যু, গৃহনির্মাণের মতো প্রথাগুলো ব্যবহার করতেও তারা পিছপা হয়নি, যাতে আমাকে ভয় দেখানো যায়, আর আমাকে একটা ধর্মদ্রোহী অঙ্গীকারপত্রে সই করার জন্য চাপ দেওয়া যায়। এমনকি আমাকে দিয়ে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে ত্যাগ করানোর জন্য ওরা আমার স্বামীকে সমাধিস্থ করার প্রথাটাকে ব্যবহার করতেও ছাড়েনি। যখন আমি ওদের কথা শুনলাম না, ওরা সরকারের সাথে এক হয়ে আমাদের উপর অত্যাচার করার জন্য গ্রামসভা ডাকল, এবং ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য আমাকে প্রলুব্ধ করতে আমার পরিবারকে ব্যবহার করল। এমনকি ওরা আমাদের গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিতে চেয়েছিল, আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিল, আর উপরমহলের কর্মকর্তাদের হাতে আমাদের তুলে দিতে চেয়েছিল। আমাদের অত্যাচার করার থেকে কোনোকিছুই তাদের থামাতে পারেনি, যাতে আমরা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করি, এবং আমাদের উদ্ধার লাভ করার আর ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করার সুযোগ হারাই। ওই যাজকরা সত্যিই অশুভ আর বর্বর! ফরিশীরা প্রভু যীশুর যেভাবে নিন্দা করেছিল আমার সেকথা মনে পড়ল। প্রভু যীশু বলেছেন, “ভণ্ড শাস্ত্রী ও ফরিশীর দল, ধিক তোমাদের! তোমরা লোকের সামনে স্বর্গরাজ্যের দরজা বন্ধ করে দাও। নিজেরা তো প্রবেশ করই না, যারা চায় তাদেরও ঢুকতে দাও না। … ভণ্ড শাস্ত্রবিদ ও ফরিশীর দল। ধিক তোমাদের! একটি লোককে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টায় তোমরা জলে স্থলে ঘুরে বেড়াও, আর কাউকে যখন তা করতে পার তখন তাকে নিজেদের চেয়েও বড় নরকের সন্তান করে তোল(মথি ২৩:১৩, ১৫)। গোষ্ঠীর মানুষদের রক্ষা করার ভেক ধারণ করে এই যাজক আর প্রবীণরা ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজকে গ্রহণ করা থেকে মানুষকে প্রতিহত করেছে। ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করার ভুল পথে তারা মানুষকে দিয়ে তাদের অনুসরণ করিয়েছে আর শেষ পর্যন্ত তাদের নরকে নিয়ে যাবে। তারা জীবন্ত শয়তান যারা মানুষকে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। তারা প্রেতাত্মা, খ্রীষ্টবিরোধী, যারা ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করে আর মানুষের ক্ষতি করে। আমি স্পষ্টভাবে তাদের সারমর্ম দেখতে পেলাম যা সত্যকে এবং ঈশ্বরকে ঘৃণা করে, এবং ঈশ্বরকে অনুসরণ করার জন্য আমার বিশ্বাসে আরও দৃঢ় হয়ে উঠলাম। তারা যেভাবেই আমাকে বিপথগামী করার বা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করুক, আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করব না। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম যে আমি আমার দায়িত্ব ভালভাবে পালন করব এবং যারা তাঁর আবির্ভাবের জন্য আকুল তাদের আরও বেশি সংখ্যায় তাঁর সম্মুখে নিয়ে আসবো তাঁর পরিত্রাণ গ্রহণ করার জন্য। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে আমাদের বিশ্বাস করা এবং অনলাইনে জড়ো হওয়া বন্ধ করতে, গ্রামের নেতা প্রতি তিন দিন অন্তর আমাদের ফোন চেক করার জন্য কর্মকর্তা নিযুক্ত করেছিল, এবং তারা আমাদের ফোনে ফেসবুক দেখতে পেলেই সাথেসাথে তা ডিলিট করে দিত। তাদের এবং সরকারের নজর এড়াতে, আমরা আমাদের চাষের সরঞ্জামগুলো পাহাড়ে নিয়ে যেতাম আর কাজ করার ভান করতাম, যাতে আমরা গোপনে জড়ো হতে পারি। আমরা সাধারণত গ্রামে আমাদের বিশ্বাস নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে সাহস পেতাম না। কিন্তু ওরা যেভাবেই আমাদের অত্যাচার করুক না কেন আমরা তবুও ঈশ্বরের উপর নির্ভর করি এবং অন্যান্য গ্রামে সুসমাচার প্রচার করতে থাকি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, আরও মানুষ সুসমাচার গ্রহণ করতে আসে। কিন্তু গ্রামের প্রধান জেনে যায় আমি সুসমাচার প্রচার করছি আর চাপ দিতে থাকে যাতে আমি অন্যদের নাম ফাঁস করে দিই, আর কাদের কাছে প্রচার করেছি সেকথা স্বীকার করি। আমি যখন কিছুই স্বীকার করলাম না, সে আমাকে হুমকি দিতে শুরু করল, যাতে আমি আমার বিশ্বাস ত্যাগ করে তাদের গির্জার দলে ফেরত যাই, নাহলে সে আমাকে গ্রেপ্তার করিয়ে দেবে। স্বাভাবিকভাবে সমাবেশ করতে ও সুসমাচার প্রচার করতে, আর গ্রেপ্তার ও অত্যাচার এড়াতে, আমি মায়ানমার ছেড়ে অন্য দেশে পালিয়ে আসি। আমি এখন অন্য কিছু ব্রাদার-সিস্টারদের সাথে থাকি। আমরা আলাপ-আলোচনা করি, সুসমাচার প্রচার করি, আর ঈশ্বরের বাক্যের সাক্ষ্য দিই। আমি আমার জীবনকে ভীষণ উপভোগ করছি। এই সমগ্র যাত্রাপথে আমি কষ্ট পেয়েছি, নির্যাতিত হয়েছি, যাজক ও প্রবীণদের অনেকটাই চিনতে পেরেছি, সরকারের মন্দত্ব আরো পরিষ্কারভাবে দেখতে পেরেছি, এবং আমি আর তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নই। আমি ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব সম্পর্কেও কিছু জ্ঞান অর্জন করেছি এবং তাঁর প্রতি আমার বিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে। এগুলো এমন জিনিস যা আমি আরামদায়ক একটা পরিবেশে থাকলে অর্জন করতে পারতাম না।

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

Leave a Reply

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন