অর্থ ও পদমর্যাদা আমার জন্য কী করেছে?
আমি একটা ভেঙ্গে যাওয়া পরিবারে জন্মেছিলাম। আমার মা যখন আমায় নিয়ে গর্ভবতী ছিলেন, আমার বাবা অন্য এক মহিলার সাথে পালিয়ে যান। ছ’টা বাচ্চার দেখাশোনা করার জন্য আমার মা অনেক কষ্ট করেন, আর প্রায় প্রতিদিন রাতে আমি আমার মাকে কাঁদতে শুনতাম। ওনার ওই বুক ফাটা কান্না দেখে বিয়ে এবং সম্পর্কের বিষয়ে আমার মধ্যে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আমি নিজেকে বলতাম, “অন্য এক মানুষকে তোমার সমস্তটা দিয়ে ভরসা করা উচিৎ না। কখনও কাউকে বিশ্বাস করবে না। জীবনে যে একটা জিনিসের উপর তুমি বিশ্বাস করতে পারবে তা হল তোমার নিজের উপর এবং নিজের হাতে উপার্জন করা টাকার উপর।” সেই মুহূর্ত থেকে, আমি ভাবতে শুরু করি কিভাবে অর্থ উপার্জন করতে হবে। হাই স্কুলে পড়াকালীন, যখন সবাই তাদের ছুটি উপভোগ করত, আমার মা আর আমি রাস্তার ধারে একটা খাবারের দোকান দিতাম। কিন্তু সেই সময়ে, আমরা যে টাকা আয় করতাম তা আমাদের প্রাথমিক চাহিদা পূরণ করতেই খরচ হয়ে যেত। আমার হাই স্কুলের দ্বিতীয় বর্ষে, আমাকে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয় কারণ আমি পড়ার খরচ দিতে পারি নি। তারপর, আমি দোকানটা চালিয়ে যেতে থাকি। আমি প্রতিদিন ভোর চার বা পাঁচটার সময় ঘুম থেকে উঠে খাবার বানাতাম, আর ছয়টা নাগাদ দোকানে যেতাম। তিন বছর পর, আমি যথেষ্ট টাকা জমাই যা দিয়ে আমি বড় শহরে এসে কাজ করতে পারি। আমি ভোরে ঘুম থেকে উঠতাম আর প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করতাম, তবে খুব একটা বেশি টাকা আয় করতাম না, আর আমি সন্তুষ্টও ছিলাম না। তাই, আমার প্রেমিকের সাহায্য নিয়ে, আমার সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে আমি একটা ছোট দোকান খুলি। দুই বছর পর, আমরা কিছু টাকার মুখ দেখতে পাই আর আমাদের বাচ্চাও হয়। ঠিক যখন আমরা বিয়ে করতে যাব, আমার প্রেমিক আমাকে সব দিক দিয়ে প্রতারণা করে। সে সব টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় আর অন্য এক মহিলার সাথে সংসার পাতে। তাদের একটা সন্তানও ছিল। আমার সমস্ত কষ্টার্জিত অর্থ হারিয়ে আমি হতাশ আর দুর্বিষহ বোধ করতে থাকি। আমার মায়ের সাথে কী হয়েছিল তার অভিজ্ঞতা থেকে, আমার মনে হয়েছিল যে পুরুষ মাত্রই অবিশ্বাসের পাত্র, আর আমাকে আমার বাচ্চাদের মানুষ করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ উপার্জনের বিষয়ে মনোনিবেশ করতে হবে। তবে আমি অনেক চাপের মধ্যে ছিলাম, আমার দোকান চালানোর মত শক্তি ছিল না, আর আমি অসুস্থ ছিলাম। আমি আর ওই শহরে থাকতে চাইছিলাম না। পরে, যখন আমার প্রেমিকের বাবা জানতে পারেন, তিনি ইউকে-তে ভিজার আবেদন করার জন্য আমার হয়ে টাকা দেন। চার বছর পর, আমি আমার রেসিডেন্স পারমিট পেয়েছিলাম আর ইউনিভার্সিটিতে প্রবেশ করেছিলাম। আরও বেশি টাকা আয় করার জন্য, আমি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কোর্স বেছে নিয়েছিলাম। ২০১১ সালে, একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বার্সারি পেয়েছিলাম, আর আমি ওই টাকা দিয়ে আমি শহরে একটা আফ্রিকান খাবারের দোকান খুলেছিলাম।
শুরুতে, দোকান ছোট ছিল বলে, আমি মাত্র একজনকে কাজে রেখেছিলাম। আমি প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠতাম দোকানে কাজে যাওয়ার জন্য আর দোকান শেষ হলে স্কুলে যেতাম। ক্লাসের পর, আমি তাড়াহুড়ো করে দোকানে ফিরে আসতাম দোকান পরিষ্কার করা, খাবার ডেলিভার করা আর হিসেবনিকেশ মেলানোর জন্য। ব্যবসা করা, ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা, আর একই সঙ্গে বাচ্চা বড় করা নিশ্চয় আপনার জন্য খুব কঠিন ছিল। কিন্তু যখন শুনতাম সবাই আমার যোগ্যতা নিয়ে আমার প্রশংসা করছে, এবং তাদের প্রশংসনীয় এবং ঈর্ষান্বিত চোখ দেখতাম, আমার খুব সন্তুষ্ট বোধ হত। সেই সময়ে, দোকানে ব্যাবসা ভালোই চলছিল, আর আমার আশার থেকে বেশি টাকা উপার্জন হচ্ছিল, কিন্তু সেটাও যথেষ্ট বলে মনে হচ্ছিল না। আমার মনে হয়েছিল আমায় এতটা বড়লোক হতে হবে যাতে আমি ব্যাঙ্ক কিনে নিতে পারি, যাতে অন্যরা আমার প্রশংসা করবে আর আমায় হিংসে করবে। আসলে আমি ওটাই চাইছিলাম। আরও সম্মান আর প্রশংসা পাওয়ার জন্য, আর নিজেকে দৃঢ় প্রমাণ করতে, আর আমার সন্তানদের বড় করার জন্য আরও অর্থ উপার্জন করতে আর একটা বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে, আমি দোকানটা বড় করি। তিন বছর পর, আমার ছোট দোকান এখন বিশাল বড় যা বিভিন্ন আফ্রিকান দেশগুলি থেকে খাবার বিক্রি করে। ওই শহরে আমিই একমাত্র আফ্রিকান উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলাম। হাই স্কুল আর কলেজের শিক্ষকরা আমায় আমন্ত্রণ জানাতেন, ইউকে-তে যুব অভিবাসীদের উৎসাহিত করতে আমার লক্ষ্য আর আমার সাফল্যের বিষয়ে কথা বলার জন্য, আর তাঁরা আমায় একটা ট্রফি দিয়েছিলেন। আমি যখন ট্রফি নিয়ে বক্তৃতা দিতে যাই, সবাই আমায় চিনতে পারে। আমার মনে হয়েছিল আমার এত বছরের পরিশ্রম আর কষ্ট যেন সার্থক হয়েছে, আর আমার জীবনের সমস্ত লক্ষ্য যেন পূরণ হয়েছে। তবে আমি অর্থ উপার্জন করা বন্ধ করি নি, কারণ একবার সামাজিক মর্যাদা পেয়ে গেলে কোনও কাজ করা আর অর্থ উপার্জন করা অনেক সহজ হয়ে যায়, আর আমার খ্যাতির আকাঙ্ক্ষাও বেড়ে গেছিল। কিন্তু এই বার, আমার শরীরে ইতিমধ্যেই অস্বস্তি শুরু হয়েছিল। আমি বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম না, আমায় বসতে হত। ডাক্তার জানিয়েছিল আমার রিউম্যাটিজম, ফাইব্রোম্যালজিয়া আর সায়াটিকা আছে, যার অর্থ হল আমার গোটা শিরদাঁড়ায় ব্যথা। ডাক্তার জানিয়েছিলেন যে সুস্থ হওয়ার জন্য আমার সময় লাগবে, এবং আমি আর কাজ করতে পারব না। কিন্তু আমি আমার অসুখকে গুরুত্ব দিই নি। আমার মনে হয়েছিল কিছু ব্যায়াম করলেই আমি ঠিক হয়ে যাব। তাছাড়াও, তখন ব্যবসা এতোটাই ভালো চলছিল যে আমি সেটা বন্ধ করতে চাই নি, তাই আমি ব্যবসা চালিয়ে যাই।
২০১৪ সালের শুরুতে আমার অবস্থা খুব খারাপ হয়েছিল, আর আমার সারা শরীরে ব্যথা ছিল। আমার মনে হত যে আমার সারা শরীর জ্বলছে, যেন আমার শরীর আগুনে পুড়ছে। অধিকাংশ সময়েই আমার পা ফুলে থাকত, আমার মনে হত যেন আমার হিপ বোন ভেঙ্গে গেছে, আর আমার শিরদাঁড়া নরম হয়ে গেছিল। শিরদাঁড়া সোজা রাখার জন্য আমায় ব্রেস পরতে হত। যখন আমি ডাক্তারের কাছে চেকআপের জন্য গেলাম, তিনি জানালেন আমার আগেই রিউম্যাটিজম ছিল, আর যেহেতু আমি প্রায় কসাইখানার ফ্রিজারে যেতাম, সেই ঠাণ্ডার প্রকোপ আমার হাড়ে পড়েছে, আর তাই আমার যে কোনও সময়ে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল। আমি সেই সময়ে খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম, তবে ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছিল। পরে, সত্যি বলতে আমি নড়তে পারতাম না, আর তাই আমার কাছে দোকান বন্ধ করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। অবিশ্বাস্যভাবে, অন্য মানুষজন আমায় নকল করে শহরে তাঁদের নিজেদের দোকান খুলতে শুরু করে। আমার হিংসে হত, আর আমার নিজের অবস্থা দেখে দুঃখও হত। আমি কেন এতটা গুরুতর অসুস্থ হলাম? ব্যথা যেন নিরন্তর ছিল, চব্বিশ ঘণ্টা, আর একটা দিনও আমি শান্তিতে ঘুমোতে পারতাম না। যেন মনে হত আমার বুকে আগুন জ্বলছে, আর বিশেষত আমার শারীরিক এবং মানসিক যন্ত্রণা বেদনাদায়ক ছিল। আর এই সময়ে, আমি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খুব ভালোভাবে ভাবতে শুরু করি। আমি যে টাকা উপার্জন করেছিলাম সেটা আমার অসুখ সারাতে পারে নি, তাহলে এটা কী কাজে আসল? সেই সময়ে, আমি নিজেকে খুব দুর্বল আর অসহায় অনুভব করি। আমি আমার সন্তানদের জন্য চিন্তিত ছিলাম, কারণ তাদের পরিবার বলতে শুধু আমি। আমি আর টাকা বা খ্যাতি নিয়ে ভাবতে রাজি ছিলাম না। আমি শুধু চাইছিলাম এই ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে আর শান্তিতে আমার সন্তানদের বড় করতে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে, আমি বিছানায় শুয়ে থাকতাম, নিজেকে জিজ্ঞেস করতাম, “মানুষ এত কষ্ট কেন পায়? আমরা কেন অসুস্থ হই?” দুঃখ আর হতাশায়, আমি আমার ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রভুর কাছে আকুতি জানাতাম।
২০১৯ সালের মে মাসে, একদিন, দশ দিনের উপবাস আর প্রার্থনার পর, আমার স্তবগান শুনতে ইচ্ছে হয়। আমি অনলাইনে সার্চ করি আর সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার ওয়েবসাইটের সন্ধান পাই। বেশ কয়েকটা মুভি দেখার পর, হোয়্যার ইজ মাই হোম আমার উপর একটা গভীর প্রভাব ফেলেছিল। সেই ছোট্ট বালিকাটির জীবন যেন আমার ছোটবেলার প্রতিফলন, আর তার মা যেন আমার মায়ের মতই কষ্ট পাচ্ছিল। সারারাত আমার বুক ধুকপুক করল। আর পরের দিন আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জায় ফোন করি। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী পড়ে আমি নিশ্চিত হই যে তিনি ছিলেন প্রত্যাবর্তিত প্রভু যীশু। আমি খুশি মনে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজ গ্রহণ করি, আর অনলাইন জমায়েতে যোগ দিতে শুরু করি। একবার আমি একটা স্তবগান শুনি আর তা আমায় খুবই স্পর্শ করে। “ঈশ্বর যদি আমাকে উদ্ধার না করতেন, এখনো ভেসে বেড়াতাম এ পৃথিবীতে, পাপের মাঝে যন্ত্রনাময় সংগ্রামরত, আশার সকল আলোক নির্বাপিত। ঈশ্বর যদি আমাকে উদ্ধার না করতেন, এখনও পদদলিত করতো আমায় শয়তানের দল, পাপের তৃপ্তিতে নিমজ্জিত থাকতাম আমি, জীবনের প্রকৃত পথকে না চিনে। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমার প্রতি অপার করুণাময়; তাঁর বাক্যের ধ্বনি আমাকে ইশারায় কাছে ডাকে। ঈশ্বরের কন্ঠস্বর আমি শুনেছি, উন্নীত হয়েছি তাঁর সিংহাসনের সামনে। প্রতিদিন আমি ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পান করি, এবং উপলব্ধি করতে পেরেছি অনেক সত্য। আমি মানবজাতির ভ্রষ্টাচারের অতল গভীরতা দেখতে পাই। ঈশ্বরের পরিত্রাণ আমাদের প্রকৃতই প্রয়োজন। ঈশ্বরের সত্য আমাকে পরিশুদ্ধ ও ও উদ্ধার করে। বারংবার আমার বিচার ও পরিমার্জন হয়েছে, আর বদলে গেছে আমার জীবন চরিত্র। ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণতা ও পবিত্রতার স্বাদ গ্রহণ করার আগে পর্যন্ত তাঁর মাধুর্যকেও আমি জানতে পারিনি। আমার হৃদয় ঈশ্বরের প্রতি ভীত এবং মন্দকে পরিহার করে চলে, মানব জীবনের সামান্য আমি যাপন করি” (মেষশাবককে অনুসরণ করুন ও নতুন গীত গান, ঈশ্বর যদি আমাকে উদ্ধার না করতেন)। এই গানটা আমার জীবনকে খুব ভালোভাবে ব্যাখ্যা করে। এর আগে, আমি সবসময় চাইতাম নিজের হাতে একটা সুখী জীবন তৈরি করতে, আর আমি বিশ্বাস করতাম আমি আমার ছোটবেলার স্বপ্ন এবং সমস্ত ইচ্ছা নিজের শক্তিতে পূরণ করতে পারতাম, কিন্তু সব শেষে, আমি খুবই মর্মাহত ছিলাম, কেউ আমার পাশে ছিল না, আর আমার অবস্থা দুর্বিষহ ছিল। ঈশ্বরই আমাকে তাঁর সামনে নিয়ে এসেছিলেন, আমার ব্যথার উপশম করেছিলেন, আমাকে বিশ্বের অন্ধকার থেকে রক্ষা করেছিলেন, আমাকে তাঁর বাণী পড়ার অনুমতি দিয়েছিলেন, এবং আমাকে বিচার এবং শুদ্ধিকরণ গ্রহণ করার সুযোগ দিয়েছিলেন। ঈশ্বরকে তাঁর পরিত্রাণের জন্য ধন্যবাদ! সেই সময়ে, আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের আরও কিছু বাণী পড়ার জন্য অপেক্ষা করতে পারছিলাম না, কারণ আমি বুঝতে পারি যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণীতে হয়ত অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।
পরে, আমি ঈশ্বরের বাণীর একটা অংশ পড়ি। “জন্ম, মৃত্যু, অসুস্থতা এবং বার্ধকের জন্য মানুষ আজীবন যে কষ্টভোগ করে, তার উৎস কী? কী কারণে মানুষকে এসব কষ্টভোগ করতে হয়? মানুষকে প্রথম যখন সৃষ্টি করা হয়েছিল, তখন তাদের এই দুর্ভোগ ছিল না, ছিল কি? এই দুর্ভোগ তাহলে কোথা থেকে এল? শয়তানের দ্বারা মানুষ প্রলুব্ধ হওয়ার পর, এবং শয়তানের দ্বারা তারা ভ্রষ্ট হয়ে অধঃপতিত হওয়ার পরেই এই দুর্ভোগের উৎপত্তি হয়েছিল। মানুষের দেহের বেদনা, এর যন্ত্রণা এবং এর শূন্যতা, সেইসাথে মানব জগতের অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়গুলি, শয়তান মানবজাতিকে কলুষিত করার পরেই সৃষ্টি হয়েছিল। শয়তানের দ্বারা মানবজাতি কলুষিত হওয়ার পরে, সেটাই তাদের যাতনা দিতে শুরু করেছিল। ফলত, তারা আরো অধঃপতিত হতে থাকে। মানবজাতির মধ্যে নানান ব্যাধি আরো, আরো তীব্র আকার ধারণ করেছিল, এবং তাদের যন্ত্রণা আরো আরো বেশি গুরুতর হয়ে পড়েছিল। ক্রমবর্ধমানভাবে, মানুষ মানবজগতের শূন্যতা ও দুঃখ উপলব্ধি করলো, সেইসাথে অনুভব করলো সেখানে তাদের জীবনধারণ করে যাওয়ার অক্ষমতা, আর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার নিরাশাও ছিল ক্রমবর্ধমান। এইভাবে, এই যন্ত্রণা মানুষের মধ্যে নিয়ে এসেছিল শয়তান। এবং তা এসেছিল একমাত্র শয়তানের দ্বারা কলুষিত হওয়ার পর মানুষ অধঃপতিত হওয়ার পরে” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, ঈশ্বরের পার্থিব দুঃখকষ্ট আস্বাদনের তাৎপর্য)। ঈশ্বরের বাণী থেকে, আমি বুঝতে পারি যে ঈশ্বর রোগ, ব্যথা এবং মৃত্যু ছাড়াই বিশ্বের সৃষ্টি করেছিলেন। ঈশ্বরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে এবং ঈশ্বরের থেকে সরে আসার জন্য শয়তান মানুষকে প্রলুব্ধ করার পর, মানুষের অধঃপতন শুরু হয় এবং মানুষ দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে, এবং মানবজাতির উপর অসুস্থতা এবং মৃত্যুর অভিশাপ নেমে আসে। এরপর, জীবন আরও আরও দুর্বিষহ হয়ে যায়। এই ছয় বছরে, আমি রোগে ভুগেছি, এবং এমন কি আত্মহত্যাও করতে চেয়েছি। আমার জীবন ছিল অর্থহীন আর শুধুই ব্যথায় ভরা। কিন্তু এখন আমি আমার ব্যথার উৎসকে বুঝতে পারি: আমি শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট হয়েছিলাম এবং ঈশ্বরের থেকে দূরে সরে গেছিলাম, এবং শুধুমাত্র খ্যাতি এবং ধন সম্পদের জন্য বেঁচেছিলাম। শয়তানের আধিপত্যে বেঁচে থাকতে থাকতে, আমি আরও বেশি ব্যথা অনুভব করতে পারি, এবং আমার জীবন অর্থহীন হয়ে যাবে। আমি আরও বেশি করে ঈশ্বরের বাণী পড়তাম, আমার মন যত স্বচ্ছ হতে থাকে, এবং ঈশ্বরের বাণী আমার নিরস আত্মাকে পুষ্টি জুগিয়েছিল। আমি অনুভব করলাম আমি জেগে উঠেছি, ঠিক যেন কোনও দুঃস্বপ্ন থেকে জেগে উঠলাম।
পরে, আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের আরও কিছু বাণী পড়েছিলাম। “‘দুনিয়া টাকায় চলে’—এই হল শয়তানের একটি দর্শন। এটি সমগ্র মানবজাতির মধ্যে, প্রতিটি মানব সমাজে প্রচলিত; তুমি বলতে পার যে এটি হল একটি ধারা। কারণ প্রতিটি ব্যক্তির হৃদয়েই এটি বপন করা হয়েছে যারা প্রথমে কথাটি গ্রহণ করেনি, কিন্তু তারপরে বাস্তব জীবনের সংস্পর্শে এসে এটিকে অকথিত গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছে এবং অনুভব করতে শুরু করেছে যে এই কথাগুলি বাস্তবেই সত্য। এটা কি শয়তানের মানুষকে কলুষিত করার একটা প্রক্রিয়া নয়? মানুষ সম্ভবত কথাটি একই মাত্রায় উপলব্ধি করে না, তবে তাদের চারপাশে যা ঘটে চলেছে এবং তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রত্যেকেরই কথাটির ব্যাখ্যা এবং স্বীকৃতির ভিন্ন-ভিন্ন মাত্রা রয়েছে। ব্যাপারটা এমনই নয় কি? কথাটির বিষয়ে যেটুকু অভিজ্ঞতাই থাকুক না কেন, কারো হৃদয়ে এটি কী রকম নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে? তোমরা প্রত্যেকে সুদ্ধ এই পৃথিবীর সকল মানুষের মানবিক স্বভাবের মাধ্যমে কিছু না কিছু প্রকাশিত হয়। সেটা কী? তা হল টাকার আরাধনা। কারো হৃদয় থেকে একে মুছে ফেলা কি কঠিন কাজ? খুবই কঠিন! মনে হয় মানুষের মধ্যে শয়তানের দ্বারা প্রণোদিত কলুষতা সত্যিই গভীর! শয়তান মানুষকে প্রলুব্ধ করার জন্য অর্থ ব্যবহার করে এবং অর্থের উপাসনা ও পার্থিব স্থূলবস্তুর আরাধনা করতে তাদের কলুষিত করে। আর টাকার এই আরাধনা মানুষের মধ্যে কীভাবে প্রকাশ পায়? তোমরা কি মনে কর যে টাকা ছাড়া তোমরা এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারবে না, টাকা ছাড়া এমনকি একদিন বেঁচে থাকাও অসম্ভব? মানুষের মর্যাদা ও তাদের সম্ভ্রম উদ্রেগের ক্ষমতা তাদের কত টাকা আছে তার উপর নির্ভর করে। গরীবদের পিঠ লজ্জায় বেঁকে যায়, আর ধনীরা সেখানে তাদের উচ্চ মর্যাদা উপভোগ করে। তারা মাথা উঁচু করে গর্বিত ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, উচ্চগ্রামে কথা বলে এবং উদ্ধতভাবে জীবনযাপন করে। এই প্রবাদ এবং প্রবণতা মানুষের কাছে কী বয়ে আনে? অর্থ উপার্জনের তাড়নায় অনেকেই যে যা-খুশি বিসর্জন দিতে পারে এটা কি সত্য নয়? অনেক মানুষই কি আরও অর্থ উপার্জনের তাড়নায় তাদের মর্যাদা এবং চারিত্রিক সততা হারায় না? অর্থের লোভে অনেকেই কি তাদের দায়িত্ব পালনের এবং ঈশ্বরকে অনুসরণ করার সুযোগ হারায় না? সত্য অর্জনের এবং উদ্ধার হওয়ার সুযোগ হারানো কি মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতি নয়? এই পদ্ধতি এবং এই প্রবাদকে মানুষকে এতটা কলুষিত করার জন্য ব্যবহার করার দরুন শয়তান কি অনিষ্টকর নয়? এটি কি একটি বিদ্বেষপরায়ণ কৌশল নয়? তুমি যখন এই জনপ্রিয় উক্তিটির প্রতি আপত্তি জানানো থেকে অবশেষে এটিকে সত্য হিসাবে গ্রহণ করার দিকে অগ্রসর হও, তখন তোমার হৃদয় সম্পূর্ণরূপে শয়তানের দখলে চলে যায় এবং সেইজন্য তুমি অজান্তেই উক্তিটি মানতে শুরু করো। এই উক্তি তোমাকে কতটা প্রভাবিত করেছে? তুমি হয়ত প্রকৃত পথ জান, এবং তুমি হয়ত সত্যও জান, কিন্তু তুমি তা অনুসরণে অক্ষম। তুমি হয়তো স্পষ্টভাবে জান যে ঈশ্বরের বাক্যই সত্য, কিন্তু তুমি সত্য অর্জনের জন্য মূল্য চুকাতে বা কষ্ট করতে রাজি নও। তার পরিবর্তে, শেষ অবধি ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করার জন্য তুমি বরং তোমার নিজের ভবিষ্যৎ এবং ভাগ্যকে উৎসর্গ করবে। ঈশ্বর যা-ই বলুন না কেন, ঈশ্বর যা-ই করুন না কেন, তোমার প্রতি ঈশ্বরের ভালবাসা কতটা গভীর ও কতটা মহান তা তুমি উপলব্ধি কর বা না-কর, তুমি একগুঁয়েভাবে তোমার নিজের পথে চলার জেদ ধরবে এবং এই উক্তির মূল্য চুকাবে। অর্থাৎ, এই প্রবচনটি ইতিমধ্যেই তোমার চিন্তাভাবনাকে প্রতারিত এবং নিয়ন্ত্রণ করেছে, এটি ইতিমধ্যেই তোমার আচরণকে পরিচালিত করেছে, এবং সম্পদের সাধনাকে দূরে ঠেলে রাখার পরিবর্তে তুমি বরং নিজের ভাগ্যকে তার দ্বারা শাসিত হতে দেবে। মানুষ এইভাবে কাজ করতে পারে, তারা শয়তানের বাক্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং চালিত হতে পারে—এর অর্থ কি এই নয় যে তারা শয়তান দ্বারা প্রতারিত এবং কলুষিত হয়েছে? শয়তানের দর্শন ও মানসিকতা এবং শয়তানের স্বভাব কি তোমার হৃদয়ে গেঁথে যায়নি? সত্যের সন্ধান ত্যাগ করে তুমি যখন অন্ধভাবে সম্পদের পিছনে ছোটো, তখন শয়তান কি তোমায় বোকা বানানোর লক্ষ্য হাসিল করেনি? ঠিক সেটা-ই ঘটছে” (বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৫)। আমি কেবলমাত্র ঈশ্বরের বাণী পড়ার পরেই বুঝতে পারি বিভিন্ন জিনিস যেমন “টাকাই সব নয়, কিন্তু টাকা ছাড়া আপনি কিছু করতে পারবেন না” এবং “টাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ” এই যে আমি বরাবর শয়তানের দর্শনে বিশ্বাস করেছিলাম। তারা আমার মনের গভীরে বাসা বেঁধেছিল আর আমার মনের উপর নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছিল, যাতে আমি টাকা ছাড়া আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিনিস নিয়ে ভাবতে না পারি। আমি সেটাকেই আমার বাঁচার একমাত্র কারণ বলে ভেবে নিয়েছিলাম, আর আমি ভেবেছিলাম এটা আমাকে সুখ এবং সম্মান এনে দেবে, তাই আমি মরিয়া হয়ে টাকার পিছনে ছুটতাম। অর্থ লাভের আশায়, মানুষকে ঈর্ষান্বিত করতে এবং সম্মান লাভ করতে, এবং একটা ভালো জীবন কাটাতে, শরীরের কথা না ভেবে পরিশ্রম করে গেছি, যতক্ষন না প্রায় পঙ্গু হয়ে জীবন হারাচ্ছিলাম। শয়তানের দর্শন গ্রহণ করা এবং আমাকে তার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে দেওয়ার ফলাফল হল এই সব কিছু। যদিও আমি জানতাম ঈশ্বর আছেন, আমার তাঁকে অনুসরণ করার এবং জীবনে সত্যের পথে চলার মত শক্তি ছিল না কারণ শয়তানের বাণী এবং দর্শন আমাকে নিয়ন্ত্রণ করত। তারা আমার মনকে ঈশ্বরের থেকে অনেক দূরে নিয়ে গেছিল এবং আমাকে আমার শরীরকে সন্তুষ্ট করে বেঁচে থাকতে বাধ্য করেছিল। ঈশ্বরের বাণীর নির্দেশনাকে ধন্যবাদ, আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি ভুল পথে যাচ্ছি।
পরে, আমি ঈশ্বরের বাণীর আরেকটি অংশ পড়ি এবং আমার ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় খুঁজে পাই। ঈশ্বরের বাক্যে বলা হয়েছে, “ঈশ্বরের সমন্বয়-সাধন এবং সার্বভৌমত্বকে যেহেতু মানুষ স্বীকৃতি দেয় না, তাই তারা সর্বদাই প্রতিবাদী ও বিদ্রোহী মনোভাব নিয়ে ভাগ্যের মুখোমুখি হয়, এবং নিজেদের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভাগ্য পরিবর্তনের বৃথা আশায় নিয়তই ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও সার্বভৌমত্ব এবং ভাগ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন বিষয়গুলি বাতিল করতে চায়। কিন্তু তারা কখনই সফল হতে পারে না এবং প্রতিটি মোড়েই ব্যর্থ হয়। মানুষের আত্মার গভীরে সংঘটিত হয় এই দ্বন্দ্ব, তার অস্থি পর্যন্ত এই দ্বন্দ্বের গভীর যন্ত্রণায় এতোই আর্ত হয়ে ওঠে, যেন তার জীবন এখনই বিনষ্ট হয়ে যাবে। এই যন্ত্রণার কারণ কী? এর কারণ কি ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব, নাকি সেই ব্যক্তি মন্দ ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে? নিশ্চিত ভাবে কোনোটিই সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে সেই ব্যক্তি যে রাস্তা গ্রহণ করে, জীবনযাপনের জন্য যে পথ বেছে নেয়, তাই এর আসল কারণ। … এই অবস্থা থেকে নিজেকে মুক্ত করার একটি অত্যন্ত সহজ উপায় আছে, তা হল আগের জীবনযাপন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া; বিদায় জানানো জীবনের পূর্ববর্তী লক্ষ্যগুলিকে; কোনো ব্যক্তির পূর্ববর্তী জীবনধারা, জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি, সাধনা, আকাঙ্ক্ষা এবং আদর্শের সংক্ষিপ্তসার নেওয়া ও বিশ্লেষণ করা; এবং তারপর সেগুলিকে মানুষের জন্য ঈশ্বরের অভিপ্রায় ও চাহিদার সাথে তুলনা করা, এবং দেখা যে সেগুলির মধ্যে কোনগুলি ঈশ্বরের অভিপ্রায় ও চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তাদের মধ্যে কোনগুলি জীবনের সঠিক মূল্যবোধ প্রদান করে, মানুষকে সত্যের বৃহত্তর উপলব্ধির দিকে নিয়ে যায় এবং অনুমতি দেয় মানবতা ও মানুষের বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেঁচে থাকার। মানুষ জীবনে যে বিভিন্ন লক্ষ্য অনুসরণ করে, যে অসংখ্য উপায়ে তার জীবনযাপন করে, সেগুলিকে তুমি যদি বারংবার অনুসন্ধান করো ও সযত্নে ব্যবচ্ছেদ করে দেখো, তুমি দেখতে পাবে তাদের মধ্যে একটিও স্রষ্টার মূল উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, যে উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছিলেন। এগুলির প্রত্যেকটিই মানুষকে সৃষ্টিকর্তার সার্বভৌমত্ব এবং যত্ন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়; এগুলি সব ফাঁদ যা মানুষকে বঞ্চিত করে এবং যা তাদের নরকের দিকে নিয়ে যায়। এটি অনুভব করার পরে, তোমার কাজ হল জীবন সম্পর্কে নিজের পুরানো দৃষ্টিভঙ্গি পরিত্যাগ করা, বিভিন্ন ফাঁদ থেকে দূরে থাকা, ঈশ্বরকে তোমার জীবনের দায়িত্ব এবং তোমার জন্য ব্যবস্থা নিতে দেওয়া; তুমি শুধুমাত্র সচেষ্ট হবে ঈশ্বরের সমন্বয়-সাধন এবং নির্দেশনায় সমর্পিত হতে, ব্যক্তিগত পছন্দ বিহীন জীবনযাপনে এবং ঈশ্বর-উপাসনাকারী ব্যক্তি হতে” (বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৩)। ঈশ্বরের বাণী থেকে আমি বুঝতে পারি কীভাবে অর্থের নিয়ন্ত্রণ থেকে নিজেকে বের করে আনতে হবে, যা হল আমি এর আগে যে লক্ষ্যের পিছনে ছুটতাম সেখান থেকে ফিরে আসতে হবে, নিজে থেকে আর খ্যাতি এবং ধন সম্পদের পিছনে ছুটব না, এবং আমার জীবনের ভার ঈশ্বরের উপর ছেড়ে দেব। আমার নিজেকে উৎসর্গ করতে হত ঈশ্বরের সমন্বয়সাধন, চাহিদা পূরণের অনুশীলন করার জন্য, এবং এমন একজন মানুষ হয়ে উঠতে হত যে ঈশ্বরের উপাসনা করে। আমি ঈশ্বরের কাছে খুবই ঋণী ছিলাম। আমার জীবনে এই প্রথমবার আমি আমার জন্য ঈশ্বরের নির্দেশনা বুঝতে পারলাম। মনে হয়েছিল ঈশ্বর যেন সরাসরি আমার সাথে কথা বলছেন, তিনি আমাকে কল্যাণমূলক ইঙ্গিত দিচ্ছেন। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করার পর, আমি গির্জায় আমার দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেই সময়ে, আমি তখনও একটা অনলাইন শপ চালাতাম। আমি অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম কিন্তু লাভের মুখ দেখতে পাই নি। আমি আবারও সবকিছু হারিয়ে ফেলার ভয় পেয়েছিলাম, তাই সবসময় আমাকে অনলাইন শপের অর্ডারে নজর রাখতে হত, আর আমি সবসময় দিনের বেলার জমায়েতের সময় মেসেজ পেতাম, আর তাই আমি আমার মনকে একদম শান্ত করতে পারতাম না, এবং আমি তখনও ভাবতাম কীভাবে আরও বেশি বিনিয়োগ করা যায় এবং আরও বেশি টাকা আয় করা যায়। দিনের বেলা আমার অনলাইন স্টোর চালানো ক্লান্তিকর ছিল, তাই কখনও কখনও, বিকেলের জমায়েতে, আমার সারা শরীরে ব্যথা থাকার কারণে, আমি শুধু শুয়ে থাকতাম আর সামলানোর জন্য ওষুধ খেতাম, তবে ওষুধ খেলে ঘুম পেত, আর আমি জমায়েতের সময়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। আমি মন থেকে ঈশ্বরের সাধনা করতে চাইতাম। আমি আমার পুরনো জীবন যাপন করতে চাইতাম না। তাই, আমি অনলাইন শপটা বন্ধ করে দিই। পরে, আমার বন্ধু আমায় বলে যে সে একটা ইট-পাথরের দোকান খুলতে চায়, এবং যেহেতু আমি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পড়েছিলাম, আমি তাঁকে বিনা পারিশ্রমিকে একটা পরিকল্পনা তৈরি করতে সাহায্য করি। তাঁর ওটা খুব পছন্দ হয় এবং সে আমায় জানায় যে সে আমার সাথে কাজ করতে চায়। সে চাইছিল যে আমি প্যাকেজিং এর দিকটা দেখি আর সে তাহলে শিপিং এর দিকটা দেখবে, আর আমরা নিজেদের মধ্যে সমানভাবে টাকা ভাগ করে নেব। এই প্রস্তাব আমার মনে ধরে। আমি ভাবি এটা আরও বেশি টাকা রোজগার করার একটা ভালো সুযোগ। এবং সাথে সাথে আমার মাথায় কত বুদ্ধি খেলে যায়। সেই রাতে, যখন আমি ঈশ্বরের কাছে আমার অবস্থার দিকে নজর দেওয়ার জন্য প্রার্থনা করছিলাম, আমি বুঝতে পারি আমি আবারও টাকার প্রতি আমার লোভকে প্রকাশ করছি। আমি এর আগে আমার একাধিক যন্ত্রণাময় ঘটনার কথা মনে করি। আমি এটাও বুঝতে পারি যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করার পর, আমার আত্মার আর কোনও ব্যথা নেই। আমি শান্তি এবং স্থিরতা উপভোগ করেছি, এবং কোনও ওষুধ ছাড়াই আমার শরীরে ব্যথা কমে গেছিল। আমার মনে হয় ঈশ্বর এইভাবেই আমায় রক্ষা এবং পরিত্রাণ করেছেন। ঈশ্বরই আমাকে খ্যাতি এবং ধন সম্পদের মোহ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করেছেন, তবে এখন আমি অর্থ এবং খ্যাতির পিছনে ছুটতে চাই। আমি আবারও শয়তানের ফাঁদে পড়ে যাচ্ছি, তাই না? আমি জানতাম যে আমার বন্ধুর দেওয়া কাজের প্রস্তাব আমার ফিরিয়ে দেওয়া উচিৎ, কিন্তু আমি পুরোপুরি ভাবে ফিরিয়ে দিতে পারি নি। এরপর, আমি ঈশ্বরের বাণী পড়ি এবং সঠিক পথের সন্ধান পাই। ঈশ্বরের বাক্যে বলা হয়েছে, “অর্থ ও খ্যাতির পিছনে ধাওয়া করে মানুষ জীবন কাটায়; এই খড়কুটোগুলিকে আঁকড়ে ধরে, মনে করে তাদের সহায়তার একমাত্র মাধ্যম এইগুলিই, যেন এইগুলি পেলেই তারা বেঁচে থাকতে সক্ষম হবে, রেহাই পাবে মৃত্যু থেকে। কিন্তু যখন তারা মৃত্যুমুখে একমাত্র তখনই তারা বুঝতে পারে যে তাদের থেকে এই জিনিসগুলি কতটা দূরে, মৃত্যুর মুখে তারা কতটা দুর্বল, কত সহজে ভেঙ্গে পড়ে, তারা কত একাকী এবং অসহায়, কোথাও যাওয়ার ঠাঁই নেই। তারা উপলব্ধি করে যে অর্থ বা খ্যাতি দিয়ে জীবন কেনা যায় না, কোনো ব্যক্তি যতই ধনী বা তার অবস্থান যতই উচ্চ হোক না কেন, মৃত্যুর মুখে সবাই সমান দরিদ্র ও নগণ্য। তারা বুঝতে পারে যে অর্থ জীবন কিনতে পারে না, মৃত্যুকে মুছে ফেলতে পারে না খ্যাতি, অর্থ বা খ্যাতি কোনও ব্যক্তির জীবন এক মিনিট, এক সেকেন্ডও দীর্ঘায়িত করতে পারে না। মানুষ যত বেশি এইভাবে অনুভব করে, ততই তারা বেঁচে থাকতে চায়; মানুষ যত বেশি এইভাবে অনুভব করে, ততই তারা মৃত্যুর সম্মুখীন হতে ভয় পায়। শুধুমাত্র সেই মুহূর্তে তারা সত্যই উপলব্ধি করে যে তাদের জীবন তাদের নয়, তাকে নিয়ন্ত্রণ করতেও তারা অপারগ, জীবন ও মৃত্যু নিয়ে কারোরই কিছু বলবার নেই—এই সব কিছুই তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে” (বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৩)। আমি ঈশ্বরের বাণী থেকে বুঝতে পেরেছিলাম যে যেখানে মানুষ মনে করে যে টাকার পিছনে ছুটে তারা দীর্ঘ জীবন লাভ করবে এবং টাকা তাদের মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করবে, তারা একমাত্র মৃত্যুমুখে এসে বুঝতে পারে যে টাকা তাদের বাঁচাতে পারবে না, টাকা তাদের অমর করবে না, আর তা তাদের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতেও সাহায্য করবে না। মৃত্যুমুখে এসে এইসব কিছুর বোধ হলেও, তা অনেক দেরি হয়ে গেছে, তাই না? আমিও একই রকম ছিলাম, আমার নিজের শরীরের কথা না ভেবে অন্ধের মত টাকার পিছনে ছুটেছিলাম। ডাক্তার আমাকে বিশ্রাম নিতে এবং সেরে উঠতে বলেছিলেন, কিন্তু আমি বাড়িতে থাকলে রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে সেই কথাই আমার মাথায় ঘুরত, আমি আমি অসুস্থ হয়েও কাজ করতাম। আমি ভেবেছিলাম আমি আমার নিজের ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব, কিন্তু মৃত্যুশয্যায় এসে, আমি বুঝতে পারি আমার হাতে কিছুই নেই। এখন, ঈশ্বরের পরিত্রাণের জন্য ধন্যবাদ, আমার ভাগ্য ভালো যে আমি ঈশ্বরের বাণী শুনতে পেয়েছি। আমি বুঝতে পেরেছি যে মানুষের ভাগ্যের উপর ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব আছে, এবং ঈশ্বর আমার জন্য যা ব্যবস্থা করেছেন সেটাই আমার মেনে নেওয়া উচিৎ এবং আমার নিজের সাথে লড়াই করার কোনও দরকার নেই। আমি যদি আবার টাকা আয় করার কথা ভাবি, তাহলে আমার অবস্থা আবারও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। আমি টাকার পিছনে ছুটতে পারতাম, এবং শয়তান আমায় নিয়ন্ত্রণ করতে পারত এবং নির্যাতন করতে পারত। তখনই আমি শয়তানের আমায় প্রলোভন দেখানোর ব্যাপারে বুঝতে পারি। এক বন্ধু আমার কাছে একটা ব্যবসার প্রস্তাব নিয়ে আসে, সে নিজেই বিনিয়োগ করবে, এবং লাভের অংশটা সমান ভাগ করতে রাজি। এই প্রস্তাব বেশ প্রলুব্ধ করে। শয়তান আমায় আবার টাকা এবং খ্যাতির ফাঁদে ফেলার জন্য টোপ ফেলেছিল, আর আমি বোকার মত আমার পুরনো যন্ত্রণাময় এবং দুর্বিষহ জীবনে ফেরত যেতে চেয়েছিলাম। আমি আবার শয়তানের ফাঁদে পা দিচ্ছিলাম, তাই না? আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, বলি যে আমি আমি খ্যাতি এবং ধন সম্পদ চাই না, আমি আমার কর্তব্য পালন করতে চাই। প্রার্থনা করার পর, আমি খুব শান্ত বোধ করি। মনে হচ্ছিল যেন একটা বড় বোঝা ঘাড় থেকে নেমে গেল। পরের তিন দিন, নিজেকে খ্যাতি এবং ধন সম্পদের মোহ থেকে দূরে রাখতে, আমি প্রতিদিন আরও মন দিয়ে প্রার্থনা করতে থাকলাম। আমি আমার বন্ধুর সাথে কাজের প্রস্তাব নাকচ করার শক্তি সঞ্চয় করি, কিন্তু সে আমায় জোর দিতে থাকে, “এখন তুমি সরকারের সাহায্যে বেঁচে আছ। এটা তোমার জন্য যথেষ্ট নয়। আমি এই নিনাকে চিনি না।” আমি বলেছিলাম, “এটা সত্যি যে আমি আগে যে নিনা ছিলাম এখন তা নই। আমি অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের কাজ গ্রহণ করি এবং কিছু সত্য উপলব্ধি করি। ঈশ্বরই আমাকে আমার ব্যথা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এর আগে, হাসপাতাল থেকে জানিয়েছিল যে আমার অসুখটা দুরারোগ্য, এবং তাঁরা আমায় নিয়ে আশা করা ছেড়ে দিয়েছেন। এমনকি ঘুমের ওষুধও আমার ব্যথার উপশম করতে পারত না। কিন্তু আমি যখন ঈশ্বরের বাণী পড়তাম, অজান্তেই আমার ব্যথা কমে যেত। যদি ঈশ্বরের গৃহ ছেড়ে জাগতিক জীবনে ফিরে যাই, আবারও যন্ত্রণা বাড়বে। আমি ওইভাবে বেঁচে থাকতে চাই না।” আমি তাঁকে আরও বলি: “তুমি তোমার পার্টনার হিসেবে অন্য কাউকে পেয়ে যাবে। তোমার যদি সাহায্যের দরকার হয়, আমি তোমায় কিছু উপদেশ দিতে পারি।” পরে, সে একাধিকবার আমার কাছে এসেছিল, যতক্ষণ না সে বুঝতে পেরেছিল যে আমাকে রাজি করানো যাবে না।
এখন আমি গির্জায় আমার দায়িত্ব পালন করি, এবং আমি মুক্তি এবং শান্তি অনুভব করি। আমার শারীরিক যন্ত্রণা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমে গেছে, এবং আমি এখন হাঁটতে পারি, রান্না করতে পারি। তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমি গির্জায় আমার দায়িত্ব পালন করতে পারি। আমি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ আমায় অর্থের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য, এবং আমার জীবনের লক্ষ্য পরিবর্তন করার জন্য। আমি এখন বুঝতে পারি যে ঈশ্বরের প্রভুত্ব জানার পর, ঈশ্বরের উপাসনা করা, এবং ঈশ্বরের বাণীতে যা আছে এবং ঈশ্বরের চাহিদার অনুশীলন করাই হল জীবনের সবথেকে অর্থপূর্ণ এবং মুল্যবান জিনিস। যদিও আমার অসুস্থতার কারণে আমায় অনেক ব্যথা পেতে হয়েছে, তবে এটা আমার কাছে আশীর্বাদও। এটাই আমাকে ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসার এবং তাঁর পরিত্রাণ লাভের সুযোগ করে দিয়েছে, যা যত টাকাই দাও না কেন কেনা যায় না। ধন্যবাদ সর্বশক্তিমান ঈশ্বর!
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।