অবশেষে ভুল ধারণা থেকে মুক্ত হওয়া

04-09-2023

কয়েক বছর আগে আমি গির্জার জন্য ভিডিও তৈরি করতাম। আগে নিজের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতাম না, আমার দুটো ভিডিওতে কিছু সমস্যা থাকায় বাতিল করা হয়েছিল। তখন খুব দুঃখ পেয়েছিলাম কারণ মনে হয়েছিল, ব্রাদার-সিস্টারেরা আমায় অবজ্ঞা করবে। নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে, কঠোর পরিশ্রম করে একটা নতুন ভিডিওর পরিকল্পনা করলাম, কিন্তু পরিকল্পনাটা পড়ে নেতা বলল, ধারণাটা পুরনো আর অস্পষ্ট। আলোচনার পর সবার মনে হয়েছিল যে এই পরিকল্পনা অনুসরণ করার মতো নয়, তাই সেটা খারিজ করা হয়। নিজেকে ব্যর্থ মনে হয়েছিল, নেতিবাচক অবস্থায় ছিলাম, দায়িত্ব পালনের শক্তি ছিল না। কয়েকদিন পরে গির্জা একজন ভিডিও প্রোডাকশন সুপারভাইজারকে বেছে নিতে যাচ্ছিল, ঘটনাক্রমে জানতে পারলাম যে কিছু ব্রাদার-সিস্টার বলেছে যে আমার মন বিভ্রান্ত আর অস্পষ্ট। সঙ্গে সঙ্গে হতোদ্যম হয়ে পড়লাম আর মনটাও অস্থির হয়ে উঠল। “নেতা বলেছিল যে আমার চিন্তাভাবনা স্পষ্ট নয়, আর ব্রাদার-সিস্টারেরাও বলছে যে আমার মন বিভ্রান্ত। তার মানে কি আমি সত্যিই বিভ্রান্ত? বিভ্রান্ত মানুষ কি সত্য উপলব্ধি করে ঈশ্বরের দ্বারা উদ্ধার পেতে পারে? আমাকে কি বহিষ্কার করা হবে?” এই ভেবে নেতিবাচক হয়ে উঠি আর কষ্ট পেতে থাকি, এই অবস্থা থেকে পালিয়ে যেতে চাই।

পরের দিন আমি কাঁদতে কাঁদতে নেতাকে বললাম, “আমার যোগ্যতা খুবই অল্প, আর এই দায়িত্বটাও খুব কঠিন। আমাকে অন্য কোন দায়িত্ব পালন করতে দাও।” নেতা আমার সাথে আলোচনা করে বলল, “আমাদের সবারই ঘাটতি আছে, আর কাজ করতে গিয়ে কিছু বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হতেই হয়। কোন সমস্যা হলে সেসব পর্যালোচনা করে, সমাধান করার জন্য সত্যের সন্ধান করতে হবে। এই দায়িত্ব পালন করা তোমার জন্য অসম্ভব নাও হতে পারে।” কিন্তু তখন তার কথা বুঝতে পারিনি, স্রেফ দায়িত্ব ছাড়তে চেয়েছিলাম। তাই, বিদায় নিলাম ঈশ্বরের বিষয়ে ভুল ধারণা আর ব্রাদার-সিস্টারদের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে। পরে, আমি সুসমাচার প্রচার করতে গেলাম। কিছু সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম করে, দিনে দিনে নিজের দায়িত্বে আরও বেশি কার্যকর হয়ে উঠলাম, দলের ব্রাদার-সিস্টারেরা প্রায়ই তাদের প্রশ্ন নিয়ে আমার কাছে আসত। মনে হচ্ছিল আমার আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। প্রতিদিন খোশমেজাজে থাকতাম, দায়িত্ব পালনে অফুরন্ত প্রাণশক্তি পেতাম।

কিন্তু হঠাৎ এক বছর পর, কাজের চাহিদা দেখে নেতা আমাকে আবার ভিডিও বানাতে বলল। শুরুতে কার্যকর ভাবেই দায়িত্ব পালন করছিলাম, কোনো কিছুতেই সীমাবদ্ধ হইনি। কিন্তু পরে যখন ভিডিও তৈরিতে নতুনত্ব আনার প্রয়োজন হল, তখন সময়োপযোগী চিন্তাভাবনা করতে না পারার জন্য আমার পরিকল্পনাগুলো কেবলই খারিজ হয়ে যেত, তাই আবার নেতিবাচক অবস্থায় পড়ে গেলাম। নিজেকে স্বল্প যোগ্যতা সম্পন্ন, বিভ্রান্ত আর দায়িত্ব পালনে অক্ষম বলে মনে হতে লাগল। দলনেতা দেখল যে আমি আমার দায়িত্বে অনেকটাই নিষ্ক্রিয়, দায়ভার বহন করি না, তাই সে সত্যের ভিত্তিতে আলোচনা করে আমায় সাহায্য করে, অবশেষে সে আমাকে বলে, “তুমি আর ব্রাদার ফ্রান্সিস প্রায় একই সময় থেকে ভিডিও তৈরি করছ, সে খুব আন্তরিক, অধ্যয়ন আর পর্যালোচনাতে পারদর্শী, আর দায়িত্বেও ভালো অগ্রগতি করেছে, তুমি তেমন ভালো করতে পারছ না, তোমায় কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।” কিন্তু কথাটা শুনে খুব অস্বস্তি হল। ভাবতে লাগলাম, “আমার দায়িত্বে সমস্যা দেখিয়ে দিয়েছ, আমি ঠিক করব। কিন্তু ব্রাদার ফ্রান্সিসের সাথে আমার তুলনা করছ কেন? তার ক্ষমতা ভালো আর চিন্তাভাবনাও স্বচ্ছ, তাকে সবসময়েই প্রস্তুত করে তোলা হচ্ছে। আমার চিন্তাভাবনা অগোছালো। তার সমান স্তরের নই আমি, তাই কোনো তুলনাই চলে না।” আমি দলনেতার পরামর্শ মানতে চাইনি, আর আত্মচিন্তনও করিনি। সপ্তাহ খানেক পর, দলনেতা জানতে পারল যে সিস্টার জুলি আর আমি একসাথে ভালো করে কাজ করিনি, তাই সে এটা নিয়ে আলোচনা করল, “সিস্টার জুলি পরিস্থিতি অনুযায়ী চিন্তা করতে পারে আর তোমার প্রযুক্তিগত দক্ষতা বেশি ভালো, তোমরা একে অপরের পরিপূরক। তার সাথে তোমার আরও বেশি আলোচনা করা উচিত, তার মতামতগুলো শোনা আর তার ইতিবাচক দিকগুলো থেকে শেখা উচিত। এভাবেই তুমি উন্নতি করবে। তোমার কাজের ফলাফল ইদানীং ভাল হচ্ছে না, আর তোমার ভিডিও নিয়ে আইডিয়াগুলোও খুব সেকেলে। তোমার কি মনে হয় না যে এটা নিয়ে তোমার আত্মচিন্তন করা দরকার?” দলনেতা এভাবে আমার সমস্যা প্রকাশ করায় খারাপ লাগল। মনে হল সে আমাকে ছোটো আর তুচ্ছ করে দেখছে। কয়েকদিন আগেই সে আমার সমস্যার কথা বলেছিল, আর এখন, সেসব কাটিয়ে ওঠার আগেই, আমাকে অনাবৃত করছে। এটা নিয়ে যতই ভাবলাম, ততই কষ্ট পেলাম। আমি এমন কিছু বলে ফেললাম যা নিয়ে আজও আমার আফসোস হয়। বললাম, “মনে হচ্ছে দলে আমি অকেজো, কোনো কাজে আসি না, তবুও আমাকে রেখে দিয়েছ।” একথা শুনে দলনেতা হতবাক হয়ে গেল। সে বলল, “এ কথা বলতে পারলে কী করে? তোমাকে কেউ এই চোখে দেখে না! আমাদের দায়িত্বপালনে সমস্যা সমাধানের জন্য সত্যের অন্বেষণ করতে হবে। নেতিবাচক হয়ে প্রতিরোধ করলে হবে না।” দলনেতা যেভাবেই আলোচনা করুক না কেন, আমি শুনিনি। ভেবেছিলাম আমি বিভ্রান্ত, ঈশ্বর আমার উপর অসন্তুষ্ট, ব্রাদার-সিস্টারেরা আমায় পছন্দ করে না, দলের আমি একঘরে প্রান্তিক একজন সদস্য। যত ভাবলাম, ততই মনে হতে লাগল আমার সাথে অন্যায় হয়েছে, ভুল ধারণা নিয়ে নেতিবাচক অবস্থায় থাকলাম। ঈশ্বরের থেকে আরো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিলাম, আমার আত্মবিশ্বাস কমে আসছিল। “আমার ক্ষমতা কম” এটাই আমার মন্ত্র হয়ে উঠল।

পরে, সহকর্মীর সাথে ভিডিও বানানোর সময়, যখনই আলোচনার সময় তার দৃষ্টিভঙ্গি আমার চেয়ে আলাদা হত, তখনই মেনে নিয়ে বলতাম, “আমার ক্ষমতা কম আর আমার আইডিয়াগুলোও ভালো নয়। তুমি সমস্যাটা সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছ, সেই অনুযায়ী কাজ করো।” তারপর নিজের পরামর্শ মুছে দিতাম। আমার সহকর্মী যখন দেখল সে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল, “কেন মুছলে? আমার অনেক ঘাটতি আছে, সমস্যাগুলোও সবসময় ঠিকমত বুঝি না।” তারপর সে তার অবস্থা সম্পর্কে আমার সাথে কথা বলতে এল। বলল, আমার সঙ্গে কাজ করার সময় তার স্বভাব ছিল অহংকারী, আমাকে খানিকটা হেয় করত, এ বিষয়ে আত্মচিন্তন করতে হয়েছিল। এই কথা শুনে আমি উপরে-উপরে শান্ত থাকলেও, ভেতরে ভীষণ কষ্ট পেলাম, তার সাথে মন খুলে কথা বলতে চাইনি, তাই জোর করে বললাম, “অহংকারী হওয়ার জন্য তোমাকে ক্ষমা করা যেতে পারে। আমার মতো অল্প যোগ্যতা সম্পন্ন কারও সাথে কাজ করতে হলে এমন কে না করবে? তোমার জায়গায় থাকলে আমিও তা-ই করতাম।” সেই সময়, সে বিভ্রান্ত হয়ে গেল, আমায় আর কী বলবে বুঝতে পারছিল না, আর, আমি একটা নেতিবাচক অবস্থার মধ্যে থেকে গেলাম। মনঃকষ্টে ভুগছিলাম, নিজের দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে উঠেছিল, বিশেষ করে একটা ভিডিও শেষ করার পর, যখন তার পিছনের আইডিয়াটা ব্যাখ্যা করে প্রত্যেকের মন্তব্য চাওয়া হতো, আমি কিছুই বলতাম না, আলোচনায় অংশ নেওয়ার সাহসই পেতাম না, সেইসব সময়ে সহকর্মীর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতাম। সেই দিনগুলোতে, আমার অবস্থা সত্যিই খারাপ ছিল। রাতে ঘুম না এলে, ভাবতাম, “কেন আমি দায়িত্ব পালনে সবসময়ই কুণ্ঠিত হয়ে থাকি আর আত্মবিশ্বাস পাই না? কেন লোকে হেয় করে দেখবে ভেবে ভয় পাই? আমার জীবন এত যন্ত্রণাময় কেন?” আমি আর অবসাদে দিন কাটাতে চাইনি। চেয়েছিলাম অন্যদের মতো ইতিবাচক ভাবে জীবনযাপন করতে, স্বাভাবিকভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে। কিন্তু এই নেতিবাচকতা থেকে মুক্ত হতে পারছিলাম না। আমি শুধু এই দুর্দশা থেকে আমায় উদ্ধার করার জন্য ঈশ্বরের সামনে কাঁদতে আর প্রার্থনা করতেই পারতাম।

অল্প কিছুদিন পরে, এক সমাবেশে, নেতাকে ঈশ্বরের বাক্যের একটা অনুচ্ছেদ পড়তে শুনলাম, যেটা আমাকে নিজের সমস্যা বোঝাল ও নিজের অবস্থার পরিবর্তন করলাম। ঈশ্বর বলেন, “মানুষ যখন পথভ্রষ্ট হয়ে ঈশ্বরের থেকে বহু দূরে চলে যায়, যখন তারা এমন অবস্থায় জীবন কাটায় যেখানে তারা ঈশ্বরের ভুল ব্যাখ্যা করে, বা ঈশ্বরের প্রতিরোধ ও বিরোধিতা করে, এবং ঈশ্বরের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়, তখন তারা ঈশ্বরের যত্ন ও সুরক্ষা সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করেছে, তারা সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের উপস্থিতির আলোক থেকে প্রস্থান করেছে। যখন মানুষ এরকম একটা অবস্থায় বাস করে, তখন তারা তাদের নিজেদের অনুভূতি অনুযায়ী জীবনযাপন না ক’রে পারে না। কিছু তুচ্ছ চিন্তা তোমাকে এতদূর বিরক্ত করতে পারে যে তুমি আহার-নিদ্রায় অক্ষম হবে, কারো অসতর্ক মন্তব্য তোমাকে সন্দেহ ও বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত করতে পারে, এমনকি একটামাত্র দুঃস্বপ্নও তোমায় নেতিবাচক ক’রে তুলতে পারে আর তোমায় দিয়ে ঈশ্বরের ভুল ব্যাখ্যা করাতে পারে। এই দুষ্টচক্র একবার আকার ধারণ করলে মানুষ মনে করে তাদের সমাপ্তি এসে গেছে, তাদের আর কোনো আশা নেই, ঈশ্বর তাদের ভালোবাসেন না, তারা ঈশ্বরের দ্বারা পরিত্যক্ত, ঈশ্বর তাদের উদ্ধার করবেন না। তারা যত বেশি এইভাবে চিন্তা করে, যত বেশি এরকম অনুভূতিতে আক্রান্ত হয়, তত বেশি ক’রে নেতিবাচকতায় নিমজ্জিত হয়। মানুষের এইরকম অনুভূতি থাকার আসল কারণ হল যে তারা সত্যের সন্ধান করে না বা সত্যের নীতি অনুযায়ী অনুশীলন করে না। এবং যেহেতু, যখন তাদের সঙ্গে কিছু ঘটে, তারা সত্যের সন্ধান করে না, সত্যের অনুশীলন করে না, কারণ তারা সর্বদাই নিজেদের পথে চলে, এবং নিজেদের ক্ষুদ্র অভিসন্ধির মাঝে বাস করে, প্রতিটা দিন অতিবাহিত করে অন্যের সাথে নিজেদের তুলনা ক’রে ও প্রতিযোগিতা ক’রে, তাদের চেয়ে উত্তম যারা তাদের ঈর্ষা ও ঘৃণা ক’রে, আর যাদের তারা নিজেদের চেয়ে অধম মনে করে তাদের বিদ্রূপ ও উপহাস ক’রে, শয়তানের স্বভাবের মধ্যে জীবনযাপন ক’রে, এবং সত্যের নীতির সাথে সঙ্গতভাবে কাজ না ক’রে, তাই এর শেষ হয় সমস্ত রকমের বিভ্রম, জল্পনা, ও বিচারের দিকে পরিচালিত হয়ে, এবং তারা নিজেদের নিরন্তরভাবে উদ্বিগ্ন ক’রে তোলে, আর কারো উপদেশই গ্রহণ করে না। এ কি তাদের নিজেদেরই দোষ নয়? একমাত্র মানুষই নিজেদের এরকম তিক্ত ফলের দ্বারা ভারাক্রান্ত করতে পারে—এবং তারা সত্যিই এর যোগ্য। এসব কী কারণে ঘটে? মানুষ সত্যের সন্ধান করে না, তারা নিজেদের প্রবণতা অনুসারেই কাজ করে, সবসময় নিজেদের জাহির করে আর অন্যের সাথে নিজেদের তুলনা করে, তারা ঈশ্বরের কাছে অযৌক্তিক দাবি করে, নিজেদের ব্যতিক্রমী হিসাবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করে, এরকম আরো অনেক কিছু—এই সব কিছুই মানুষকে বারংবার পথভ্রষ্ট ক’রে ঈশ্বরের থেকে দূরে নিয়ে যায়, বারংবার ঈশ্বরের বিরোধিতা করায় এবং সত্যকে অস্বীকার করায়। শেষ পর্যন্ত তারা অন্ধকার আর নেতিবাচকতায় নিজেদের নিমজ্জিত করে। এবং সেই রকম সময়ে, তাদের সঙ্গে যা ঘটে সে সম্পর্কে বিশুদ্ধ উপলব্ধি থাকা মানুষের পক্ষে অসম্ভব, সেগুলোর প্রতি সঠিক মনোভাব থাকাও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়; পরিবর্তে, তারা ঈশ্বরের বিষয়ে অভিযোগ করে, ঈশ্বরকে ভুল বোঝে, তাঁর সম্পর্কে অনুমান করার চেষ্টা করে। যখন এমন ঘটে, মানুষ তখন উপলব্ধি করে যে তারা সমস্যার মধ্যে রয়েছে, তাই সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা ঈশ্বরের বিরোধিতা করছে, এবং নেতিবাচকতায় নিমজ্জিত হওয়া থেকে নিজেকে আটকাতে পারে না, নিজেদের সেখান থেকে বার করে আনতে পারে না। তারা বিশ্বাস করে, ‘ঈশ্বর আমায় চান না, ঈশ্বর আমায় ভালোবাসেন না, আমি খুবই বিদ্রোহী মনোভাবাপন্ন, আমি নিজেই নিজের সাথে এরকম করেছি, ঈশ্বর আমাকে আর উদ্ধার করবেন না।’ তারা তাদের অন্তরের সন্দেহকেই সত্যি বলে সিদ্ধান্ত নেয়, এবং তাদের সাথে যে-ই আলোচনা করুক আর ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করুক, তা কোনো কাজে আসে না। তারা যা বিশ্বাস করে তা হল, ‘এগুলো সবই ঘটনা, এগুলো সবই সত্যি, ঈশ্বর আমাকে আশীর্বাদ করবেন না, তিনি আমাকে উদ্ধার করবেন না, তাহলে ঈশ্বরে বিশ্বাস করার অর্থ কী?’ তাদের ঈশ্বর-বিশ্বাসের পথ যখন এই পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তখনও কি মানুষের বিশ্বাস করার সামর্থ্য থাকে? না। কেন তারা আর এগিয়ে যেতে পারে না? এখানে একটা সত্যিঘটনা আছে। মানুষের নেতিবাচকতা যখন একটা নির্দিষ্ট অবস্থায় পৌঁছয়, যখন তাদের হৃদয় বিরোধিতা আর অভিযোগে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে, এবং তারা ঈশ্বরের সাথে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চায়, তখন আর বিষয়টা শুধু ঈশ্বরে ভীত না হওয়া, তাঁকে মান্য না করা, সত্যকে ভালো না বাসা, ও সত্যকে গ্রহণ না করার মতো সহজসরল থাকে না। পরিবর্তে কী ঘটে চলেছে? তাদের অন্তরে তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস ত্যাগ করার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। তারা মনে করে যে বহিষ্কৃত হওয়ার জন্য নিষ্ক্রিয়ভাবে অপেক্ষা করা লজ্জাজনক, বরং নিজে থেকে ছেড়ে দেওয়াকে বেছে নেওয়াই মর্যাদাপূর্ণ, তাই নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে সমস্তকিছু ছিন্ন করে। তারা ঈশ্বর-বিশ্বাসকে খারাপ ব’লে নিন্দা করে, সত্যের নিন্দা করে এই ব’লে যে তা মানুষকে পরিবর্তিত করতে পারে না, এবং ঈশ্বরকে অধার্মিক ব’লে নিন্দা করে, ক্ষুব্ধ হয়ে প্রশ্ন করে কেন ঈশ্বর তাদের উদ্ধার করেননি: ‘আমি প্রচুর আত্মত্যাগ করেছি, আমি এত আন্তরিক ছিলাম, এত পরিশ্রম করেছি, অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি কষ্টভোগ করেছি, সবার চেয়ে বেশি কঠোর প্রচেষ্টা করেছি, কিন্তু তবুও ঈশ্বর আমাকে আশীর্বাদ করেননি। এখন আমি দেখতে পাচ্ছি যে ঈশ্বর আমাকে পছন্দ করেন না, তিনি নিরপেক্ষ নন।’ ঈশ্বর সম্পর্কে নিজেদের সন্দেহকে ঈশ্বরকে দোষারোপ আর ঈশ্বর-নিন্দায় পরিণত করার দুঃসাহস তাদের রয়েছে। এইরকম বিষয়গুলো যখন আকার ধারণ করে, তখন তারা কি আর ঈশ্বর-বিশ্বাসের পথে চলা বজায় রাখতে পারে? যেহেতু তারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ও তাঁর বিরোধিতা করে, এবং সত্যকে গ্রহণ করে না আর একেবারেই আত্মানুসন্ধান করে না, সেইজন্য তাদের মাশুল দিতে হয়েছে(বাক্য, খণ্ড ৫, নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের দায়িত্বসমূহ)। মনে হল যেন ঈশ্বরের প্রতিটা বাক্য আমাকে কিছু স্মরণ করিয়ে দেওয়ার, একটা বিশ্লেষণ করার, বা সতর্ক করে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই কথিত। বিশেষ করে যখন ঈশ্বর বলেন, “মানুষের এইরকম অনুভূতি থাকার আসল কারণ হল যে তারা সত্যের সন্ধান করে না বা সত্যের নীতি অনুযায়ী অনুশীলন করে না।” এই বাক্যগুলো নিয়ে ভাবলাম, আত্মচিন্তন আরম্ভ করলাম, আর এত বছর পরে অবশেষে বুঝতে পারলাম যে এইসব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে আমি কখনোই সত্যের সন্ধান করিনি, সত্যের নীতি অনুশীলন তো আরোই করিনি। পুরোপুরি নিজের কল্পনার জগতে বাস করছিলাম। মনে পড়ল যখন আমি বারবার ভিডিও বানাতে ব্যর্থ হচ্ছিলাম, আর আমার ব্রাদার-সিস্টারদের বলতে শুনেছিলাম যে আমি বিভ্রান্ত, তখন নিজের সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে ভাবিনি; উলটে, আমি পালিয়ে গিয়ে নেতিবাচকতায় আর ভুল ধারণায় জীবনযাপনকে বেছে নিই। যখন আমি আবার ভিডিও তৈরি করা শুরু করলাম, তখনও নিজের অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিইনি। বরং, নিষ্ক্রিয় আর রক্ষণাত্মক মানসিকতা নিয়ে দায়িত্বপালন করে গেছি। যখন শুনলাম দলনেতা অন্যদের প্রশংসা করছে আর আমার সমস্যা তুলে ধরছে তখন আরও নেতিবাচক হয়ে উঠেছিলাম। মনে হয়েছিল আমার ক্ষমতা কম আর আমি বিভ্রান্ত। সন্দেহ হয়েছিল যে ব্রাদার-সিস্টাররা আমায় অবজ্ঞা করে, ঈশ্বরকে আরও ভুল বুঝেছিলাম, ফলে মনে খুব ব্যথা পাই, নিজের দায়িত্বের ব্যাপারে অকেজো হয়ে পড়ি। প্রতিটা বিষয়ে নিজেকে আটকে রাখতাম। তখনই আমি স্পষ্ট বুঝলাম যে আমার চারপাশের মানুষ ও বস্তুসমূহের মধ্যে কোন সমস্যা ছিল না, আসলে আমিই সত্য খুঁজছিলাম না মোকাবিলা ও অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন প্রতিহত করতাম, তা থেকে দূরে থাকতাম। ঈশ্বরের প্রতি আমার অবাধ্যতার কোনো সীমা ছিল না, যে কারণে ঈশ্বরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করা কি আমারই দোষ নয়? অবশেষে বুঝলাম “নিজেকে আটকে রাখা” কাকে বলে। আরেকটা বিষয় স্পষ্ট বুঝলাম, তা হল, আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করলেও, ত্যাগস্বীকার ও মূল্য পরিশোধ করে থাকলেও, সত্যকে প্রকৃতপক্ষে গ্রহণ করিনি, বা স্বীকার করিনি যে ঈশ্বরের প্রকাশিত সত্য মানুষকে উদ্ধার করতে পারে। যখন আমি ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়েছি, তখন প্রতিরোধ করেছি, নিজের ক্ষমতা নিকৃষ্ট ভেবেছি। এমনকি ভেবেছি যে ঈশ্বর আমার মত মানুষকে উদ্ধার করেন না। প্রায়ই অসন্তুষ্ট থাকতাম, ভাবতাম, আমি তো নিজের কর্তব্যে কষ্ট আর ত্যাগ করতে পারি; অন্যদের চেয়ে কম কষ্ট পাইনি। তাহলে আমাকে সবসময়ে কাজে এত খারাপ হিসেবে অনাবৃত করা হচ্ছিল কেন? কেন ঈশ্বর আমার প্রতি সদয় হলেন না? আমি কি ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণতাকে অস্বীকার করছিলাম না? এটাই ঈশ্বর-নিন্দা! যতই আত্মচিন্তন করলাম, ততই ভয় পেলাম। মনে হল যে আমার অবস্থা খুবই বিপজ্জনক। যদি আমি নিজেকে পরিবর্তন না করি, প্রকৃত অনুতাপ না করি, তাহলে ঈশ্বর আমাকে বহিষ্কার করবেন! ঈশ্বরের বিশ্লেষণ করা সব অবস্থার কথাই আমার মন ছুঁয়ে গেল। আমার সমস্যা কতটা গুরুতর বুঝে কান্নায় ভেঙে পড়লাম। সত্যের অনুসরণ আর ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ না করার এবং নিজের ক্ষতি করার জন্য নিজেরই প্রতি ঘৃণা হল। অনুশোচনা হল, তাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম। বললাম, “ঈশ্বর, আমি আর এত জেদি হয়ে থাকতে চাই না, তোমাকে ভুল বুঝে থাকতে চাই না, আবার করে তোমার হৃদয়ভঙ্গ করতে চাই না, অনুতাপ করতে চাই!”

তখন নেতা আর দলনেতা আমার সঙ্গে আলোচনা করতে এল। আমার নেতিবাচক প্রবণতা অনাবৃত করে ঈশ্বরের বাক্য পড়ে শোনাল। তা আমার মন ছুঁয়ে গেল। “প্রতিটা পর্যায়ে—তা ঈশ্বর তোমাকে যখন অনুশাসিত করছেন বা শাস্তিপ্রদান করছেন তখনই হোক, বা যখন তিনি তোমায় স্মরণ করাচ্ছেন বা উৎসাহিত করছেন তখনই হোক—যতক্ষণ তোমার ও ঈশ্বরের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব রয়েছে, অথচ তা সত্ত্বেও তুমি নিজের আমূল পরিবর্তন করছো না, নিজের ধারণা, দৃষ্টিভঙ্গি আর আচরণকেই আঁকড়ে রেখে চলেছো, সেক্ষেত্রে যদি এমনকি তোমার পদক্ষেপ সম্মুখবর্তীও হয়, তাহলেও তোমার ও ঈশ্বরের মধ্যে দ্বন্দ্ব, তাঁর সম্পর্কে তোমার ভুল-ধারণা ও তাঁর বিরুদ্ধে তোমার অভিযোগ, এবং তোমার বিদ্রোহী মনোভাব সংশোধন হবে না, আর যদি তুমি আমূল পরিবর্তিত না হও, তাহলে ঈশ্বর তাঁর দিক থেকে তোমায় বহিষ্কার করবেন। যদিও তুমি তোমার হাতে থাকা কাজ ছেড়ে দাওনি, এখনও নিজের দায়িত্বে বজায় আছো, এবং ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্বের প্রতি তোমার সামান্য আনুগত্য রয়েছে, আর মানুষ এটাকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করে, কিন্তু তোমার ও ঈশ্বরের মধ্যে বিবাদ এক চিরস্থায়ী গ্রন্থিবন্ধন সৃষ্টি করেছে। এই বিবাদের সমাধান এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্পর্কে এক প্রকৃত উপলব্ধি অর্জনের জন্য তুমি সত্যের ব্যবহার করোনি। যার ফল হিসাবে, ঈশ্বরের সম্পর্কে তোমার ভুল-ধারণা গভীরতর হয়েছে। তুমি সবসময়েই মনে করো যে ঈশ্বর ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন এবং তোমার সাথে অন্যায্য আচরণ করা হচ্ছে, যার অর্থ, তুমি আমূল পরিবর্তিত হওনি। তোমার বিদ্রোহ, তোমার পূর্বধারণা, এবং ঈশ্বর সম্পর্কে তোমার ভুল-ধারণা এখনও বর্তমান, যা তোমাকে চালিত করে আনুগত্যহীন মানসিকতার প্রতি, সর্বদা বিদ্রোহী মনোভাবাপন্ন থাকার প্রতি, এবং ঈশ্বরের বিরোধ করার প্রতি। এই ধরনের মানুষই কি তেমন একজন নয় যে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করে, এবং অনুতাপ করতে অনমনীয়ভাবে অস্বীকার করে? মানুষের নিজেকে আমূল পরিবর্তিত করার প্রতি ঈশ্বর এত গুরুত্ব আরোপ করেন কেন? একজন সৃষ্ট সত্তার কী মনোভাব নিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে বিবেচনা করা উচিত? এমন এক মনোভাব যা স্বীকার করে যে সৃষ্টিকর্তাই সঠিক, তা তিনি যা-ই করুন না কেন। তুমি যদি তা স্বীকার না করো, তাহলে সৃষ্টিকর্তাই যে সত্য, পথ, ও জীবন, এটা তোমার কাছে একটা শূন্যগর্ভ বাক্য ছাড়া আর কিছুই হবে না। তা-ই যদি হয়, তা সত্ত্বেও কি তুমি পরিত্রাণ অর্জন করতে পারো? অবশ্যই না। তুমি হবে অনুপযুক্ত; ঈশ্বর তোমার মতো মানুষদের উদ্ধার করেন না। … তোমার অবশ্যই নিজেকে আমূল পরিবর্তিত করতে হবে এবং নিজের ধারণা আর উদ্দেশ্যগুলোকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। তোমার যদি সেই অভিপ্রায় থাকে, তাহলে তোমার মনোভাবও স্বাভাবিকভাবেই হবে সমর্পণের। যাইহোক, আরও একটু নিখুঁতভাবে বললে, ঈশ্বরের, অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার প্রতি মনোভাবে মানুষের আমূল পরিবর্তিত হওয়ার দিকেই এটা নির্দেশ করে; এটা এই তথ্যের একটা স্বীকৃতি ও নিশ্চয়তাপ্রদান যে সৃষ্টিকর্তাই সত্য, তিনিই পথ, এবং তিনিই জীবন। তুমি যদি নিজেকে আমূল পরিবর্তিত করতে পারো, তবে তা প্রদর্শন করে যে তুমি যে বিষয়গুলোকে ঠিক বলে মনে করো, অথবা ভ্রষ্ট মানবজাতি সম্মিলিতভাবে যে বিষয়গুলোকে ঠিক বলে মনে করে, সেগুলোকে তুমি দূরে সরিয়ে রাখতে সক্ষম; এবং পরিবর্তে, তুমি স্বীকার করছো যে ঈশ্বরের বাক্যই সত্য, এবং তা ইতিবাচক বিষয়। তুমি যদি এই মনোভাব অর্জন করতে পারো, তবে তা সৃষ্টিকর্তার পরিচয় ও তাঁর সারমর্মের প্রতি তোমার স্বীকৃতিকেই প্রমাণ করে। ঈশ্বর এইভাবেই বিষয়টাকে দেখেন, এবং সেই কারণেই তিনি মানুষের আমূল পরিবর্তনকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করেন(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র পূর্বধারণার সমাধানের মাধ্যমেই ঈশ্বর-বিশ্বাসের সঠিক পথে প্রবৃত্ত হওয়া যায় (৩))। ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে গভীরভাবে ভাবার পর বুঝতে পারলাম কেন ঈশ্বর মানুষের নিজেকে পরিবর্তন করার উপর এত গুরুত্ব দেন। ঈশ্বরের মানুষকে উদ্ধার করার কাজে, কেউ কতটা কাজ বা কষ্ট সহ্য করতে পারে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, ঈশ্বর মানুষের অন্তর দেখেন। তিনি দেখেন মানুষ বিশ্বাস করে কি না যে ঈশ্বর যা-ই করেন তা সঠিক ঈশ্বরই যে সত্য, পথ ও জীবন, তা তারা বিশ্বাস করে কি না, আর তারা ঈশ্বরের অনুগত কিনা। যদি কোনো ব্যক্তির মধ্যে প্রচুর কলুষ প্রকাশ পায় আর সে সত্যের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করে, নিজের সমস্যার নিয়ে আত্মচিন্তন করে না, সত্য স্বীকার করে না, আর ঈশ্বরকে সর্বক্ষণ ভুল বোঝে, তাহলে বাইরে থেকে সে কষ্ট সহ্য আর ত্যাগ স্বীকার করতে পারলেও, ঈশ্বরের কাছে সে বিশ্বাসঘাতক। শেষমেশ, এমন লোকজনকে বহিষ্কার করা হবে, তারা উদ্ধার পাবে না। লক্ষ্য করে দেখলাম যে এতদিন সবসময় ঈশ্বরকে ভুল বুঝতাম, তাঁর বিষয়ে দ্বিধা ছিল, কিন্তু কখনো এসব সমস্যার সমাধান করিনি। নিছকই কাজ নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলাম। যখন নিজের দায়িত্ব পালনে সমস্যা অনাবৃত হয়, আমার অনেক ঘাটতি প্রকাশিত হয়, আর আমার অহং বোধে আঘাত লাগে, তখন নেতিবাচক শব্দ দিয়ে নিজেকে চিহ্নিত করেছিলাম, এমনকি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অভিযোগও করেলাম। সময়ের সাথে সাথে আমার মনে ক্ষোভ বাড়তে লাগল, ঈশ্বরের কাছ থেকে আরো দূরে সরে গেলাম, আমার অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হতে থাকল। নিজেকে জিজ্ঞাসা না করে পারলাম না, “আমি প্রতিদিন নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখি, বড়োসড়ো কোনো মন্দ কাজ করিনি, তাও আমার হৃদয় ঈশ্বরের থেকে বহু দূরে রয়েছে, তাঁকে প্রতিহত করি, ভুল বুঝি। তাহলে আমাকে কীভাবে বিশ্বাসী বলা যায়? ঈশ্বর কি এমন বিশ্বাস অনুমোদন করবেন? আমি প্রায়ই নেতিবাচক হয়ে থাকতাম, স্বস্তি পেতাম না। নিজের দায়িত্ব পালন কর যাওয়ার সময়েও পবিত্র আত্মার কাজ গ্রহণ করা দুষ্কর হয়েছিল। শুধু অতীত অভিজ্ঞতার জোরে কোনও রকমে দিন কাটাচ্ছিলাম। এভাবে উন্নতি করব কীভাবে? এভাবে বিশ্বাস করে কী লাভ করব?” তখনই স্পষ্ট বুঝতে পারলাম, ঈশ্বর সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ! তিন বছর আগে, ব্রাদার-সিস্টারেরা আমাকে নিয়ে যা বলেছিল সেসব ভুলতেই পারিনি, তারা বলেছিল যে আমার চিন্তাভাবনা স্বচ্ছ না। আমি কখনোই এই বিষয়ে ঈশ্বরের বাক্যের আলোয় সতের অন্বেষণ বা আত্মপ্রতিফলন করিনি। কিন্তু এখন জানি যে এই সমস্যা সমাধানের জন্য সত্য অন্বেষণের প্রয়োজন ছিল।

তাই, আমি ঈশ্বরের বাক্যের এমন একটা অনুচ্ছেদ খুঁজে পেলাম যা এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক। ঈশ্বরের বাক্যে বলা হয়েছে, “ঈশ্বর যখন তোমাকে মূর্খ বলে অভিহিত করেন, তখন তিনি তোমাকে কোনো বিবৃতি, বা বাক্য, অথবা সংজ্ঞা স্বীকার করে নিতে বলছেন না—তিনি চাইছেন যে তুমি এর মধ্যে সত্যকে উপলব্ধি করো। তাহলে ঈশ্বর যখন কাউকে মূর্খ বলে অভিহিত করেন, তার ভিতরে কী সত্য নিহিত থাকে? ‘মূর্খ’ শব্দটার উপরিগত অর্থ সকলেই জানে। কিন্তু একজন মূর্খের বহিঃপ্রকাশ ও স্বভাবের ক্ষেত্রে, মানুষ যে কাজগুলো করে তার কোনগুলো মূর্খতা আর কোনগুলো নয়, ঈশ্বর কেন মানুষকে এইভাবে অনাবৃত করেন, মূর্খরা ঈশ্বরের সম্মুখে আসতে পারে কি না, তারা নীতি অনুযায়ী কাজ করতে সক্ষম কি না, কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল তা বোঝার সামর্থ তাদের আছে কি না, ঈশ্বর কী ভালোবাসেন আর কী ঘৃণা করেন তা উপলব্ধি করার ক্ষমতা তাদের আছে কি না—অধিকাংশ সময়েই মানুষ এইসব বিষয়ে স্পষ্ট নয়; তাদের কাছে এগুলো অস্পষ্ট ও ভুলভাবে সংজ্ঞায়িত, পূর্ণত অপ্রতীয়মান। উদাহরণস্বরূপ, বেশিরভাগ সময় মানুষ জানে না, তাদের কাছে পরিষ্কার নয়, যে নির্দিষ্ট কোনো এক উপায়ে কিছু করার অর্থ কি নিছক নিয়ম অনুসরণ করে চলা, নাকি সত্যের অনুশীলন করা। কোনো একটা কিছু ঈশ্বর ভালোবাসেন, নাকি ঘৃণা করেন, তারা তা জানে না, তাদের কাছে তা স্পষ্টও নয়। তারা জানে না যে নির্দিষ্ট কোনো একটা উপায়ে অনুশীলন করার অর্থ মানুষের উপরে কোনো কঠোর নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া, নাকি স্বাভাবিকভাবে মানুষের সাথে সত্যের আলোচনা করা ও তাকে সাহায্য করা। তারা জানে না যে যেভাবে তারা মানুষের সাথে আচরণ করে তার পিছনে নিহিত নীতিগুলো সঠিক কি না, সেগুলোর উদ্দেশ্য মৈত্রীস্থাপনের চেষ্টা না কি মানুষকে সাহায্য করা। তারা জানে না যে কোনো এক নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে কাজ করার অর্থ কি নীতি মেনে চলা এবং নিজেদের অবস্থানে দৃঢ় থাকা, নাকি আড়ম্বর প্রদর্শন করা। যখন অন্য কিছু করার থাকে না, তখন কেউ কেউ আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালোবাসে; তারা জানে না যে এটা আত্মমুগ্ধতা আর আত্মগর্ব, নাকি স্বাভাবিক। কেউ কেউ একটু মেজাজি, কিছুটা অদ্ভুত; তারা কি বলতে পারে এগুলো তাদের মন্দ স্বভাব থাকার সাথে সম্পর্কিত কি না? মানুষ এমনকি এরকম বিষয়গুলোর মধ্যেও পার্থক্য করতে পারে না যেগুলো প্রায়ই দেখা যায়, প্রায়ই যেগুলোর সম্মুখীন হতে হয়, তবুও তারা বলে যে ঈশ্বর-বিশ্বাস থেকে তারা বহুকিছু লাভ করেছে। এ কি মূর্খতা নয়? তাহলে তোমাদের মূর্খ বলে অভিহিত করা তোমরা মেনে নিতে পারছ? (হ্যাঁ।) … আর সারা জীবন কি তোমরা মূর্খ হয়েই থাকতে চাও? (না।) কেউই মূর্খ হতে চায় না। আসলে এইভাবে আলোচনা এবং বিশ্লেষণ করার উদ্দেশ্য এই নয় যে তুমি নিজেকে মূর্খ হিসাবে শ্রেণীভুক্ত করার চেষ্টা করো; ঈশ্বর যেভাবেই তোমায় সংজ্ঞায়িত করুন, তোমার সম্পর্কে তিনি যা-ই প্রকাশ করুন, যেভাবেই তোমার বিচার ও শাস্তিবিধান করুন, বা তোমার মোকাবিলা ও অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন করুন, চূড়ান্ত লক্ষ্য হল তোমাকে সেইসব অবস্থা থেকে অব্যাহতি পেতে দেওয়া, সত্যকে উপলব্ধি করতে দেওয়া, সত্য অর্জন করতে দেওয়া, এবং মূর্খ না হওয়ার চেষ্টা করতে দেওয়া। সুতরাং, যদি মূর্খ হতে না চাও তাহলে তোমার কী করা উচিত? তোমার উচিত সত্যের অন্বেষণ করা। সর্বপ্রথমে, তোমাকে অবশ্যই জানতে হবে কোন কোন বিষয়ে তুমি মূর্খ, কোন কোন বিষয়ে তুমি সবসময় মতবাদ প্রচার করে চলো, নিয়ত মতবাদের তত্ত্ব আর অক্ষরের বক্রপথে চলতে থাকো, বাস্তব তথ্যের সম্মুখীন হয়ে তোমার চোখ ভাবলেশহীন হয়ে পড়ে। যখন তুমি এই সমস্যাগুলোর সমাধান করে ফেলবে এবং সত্যের প্রতিটা আঙ্গিকের বিষয়ে স্পষ্ট হবে, তখন তোমার মূর্খ হয়ে থাকার সময়কাল কমে যাবে। যখন প্রতিটা সত্যের সম্পর্কে তোমার একটা স্পষ্ট উপলব্ধি থাকবে, তুমি যা যা করো তার সমস্তটার মধ্যে যখন তুমি হাত-পা বাঁধা হয়ে পড়ে থাকবে না, যখন তুমি লাগাম-বাঁধা বা সীমাবদ্ধ রইবে না—যখন, তোমার সাথে কোনোকিছু ঘটলে, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার পর, সত্য অন্বেষণের পর, বা আলোচনা করার জন্য কাউকে খুঁজে নেওয়ার পর তুমি অনুশীলনের জন্য সঠিক নীতি খুঁজে নিতে এবং যথার্থভাবেই নীতি অনুযায়ী কাজ করতে পারবে, তখন তুমি আর মূর্খ থাকবে না। যদি কোনো বিষয় তোমার কাছে পরিষ্কার হয়, আর তুমি সঠিকভাবে সত্যের অনুশীলন করতে পারো, তাহলে সেই বিষয়টাতে তুমি মূর্খ থাকবে না। নিজেদের হৃদয়কে স্বাভাবিকভাবে আলোকপ্রাপ্ত করার জন্য সত্যকে উপলব্ধি করা ছাড়া মানুষের কোনো বিকল্প নেই(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, জীবনের উন্নতির ছয়টি সূচক)। ঈশ্বর বিভ্রান্ত মানুষের আচরণ ব্যাখ্যা স্পষ্টভাবে করেছেন। বিভ্রান্ত লোকেরা সব বিষয়েই দিশেহারা আর অস্পষ্ট। তাদের কোনও অবস্থান বা নীতি থাকে না, তারা জানে না ঈশ্বর কী পছন্দ আর কী ঘৃণা করেন, মানুষ আর পরিস্থিতি সম্বন্ধে বিচক্ষণতার অভাব রয়েছে তাদের মধ্যে। তারা নিজেদের প্রকাশিত ঘাটতি বা কলুষ স্পষ্টভাবে দেখতে পায় না। কিছু ঘটলে তারা ঠিক-ভুলের তফাৎ ধরতে পারে না, তাদের কোনো নীতি বা অনুশীলনের পথ নেই। যখন ঈশ্বরের বাক্যের নিরিখে নিজেকে দেখলাম, নিজের কাজ সংক্রান্ত অতীতের অনেক দৃশ্যই মনে এল। আমি শুধু কঠোর পরিশ্রমের উপর মন দিতাম, ঈশ্বরের বাক্য পড়া বা সত্যের নীতিগুলো খোঁজার দিকে নয়। যখন ব্রাদার-সিস্টাররা আমাকে ভিডিও সম্পাদনা করার ব্যাপারে পরামর্শ দিত, তখন তাতে বিশেষ মনোযোগ দিতাম না। অনেক সময় তারা কী বলছে তা বুঝতেই পারতাম না, নেহাত অন্ধভাবেই কাজ করতাম। ভাবতাম কষ্ট সহ্য করাই হল ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ততা। নিজের দায়িত্ব পালনে অনেক কলুষ আর ঘাটতি প্রকাশ করেছি, কিন্তু ঈশ্বরের সামনে এসে সত্যের সন্ধান করিনি। তার বদলে, মুখ বন্ধ করে বছরের পর বছর ধরে নেতিবাচক অবস্থায় থেকেছি। দেখতে পাইনি যে আমার সমস্যাটা কত গুরুতর আর এভাবে চলতে থাকা কতটা বিপজ্জনক। আমি বিভ্রান্ত ছিলাম, প্রতিদিন দায়সারা ভাবে চলতাম। এসব কি কোনো বিভ্রান্ত মানুষেরই লক্ষণ নয়? তখন বুঝলাম যে ব্রাদার-সিস্টারেরা আমার সম্পর্কে যা বলেছিল তা সত্যি। কিন্তু তা মানতে চাইনি। সন্দেহ হয়েছিল সবাই আমাকে নিচু চোখে দেখে, তাই তাদের প্রতি বিদ্বেষ আর তাদের সাথে দূরত্ব বোধ করেছিলাম। আমার সত্যিই এটা করা উচিত হয়নি! এত বছর, ব্রাদার-সিস্টারেরা প্রায়ই আমাকে সাহায্য করত, কখনো আমাকে হেয় করেনি। আমি নিজেই যুক্তিহীন হয়ে থেকেছি, সত্য অস্বীকার করে গেছি। এসব ভেবে, অবশেষে অতীতকে পিছনে ফেলতে পারলাম। এত বিভ্রান্ত হওয়ার জন্য আর সত্যের সন্ধান না করার জন্য নিজের প্রতি প্রবল ঘৃণা হল। এত অযৌক্তিক হওয়ার কারণে আত্ম-বিতৃষ্ণাও হল।

যখন বুঝলাম যে আমি বিভ্রান্ত ছিলাম, তখন মনে পড়ল যে প্রায়ই নিজের ক্ষমতা অল্প বলে ভাবতাম। সেটা ছিল আরেকটা সমস্যা যেটাকেও সমাধান করার জন্য আমার উচিত ছিল সত্যের অন্বেষণ করা। পরে ঈশ্বরের বাক্যের একটা অনুচ্ছেদ পড়লাম। “ঈশ্বর যদি তোমায় নির্বোধ বানিয়ে থাকেন, তাহলে তোমার নির্বুদ্ধিতার অর্থ আছে; তিনি যদি তোমায় বুদ্ধিদীপ্ত বানিয়ে থাকেন, তাহলে তোমার বুদ্ধিদীপ্ততার অর্থ আছে। ঈশ্বর তোমাকে যে দক্ষতাই দিয়ে থাকুন, তোমার যা যা শক্তিই থাকুক, তোমার আই-কিউ যতই উচ্চ হোক, ঈশ্বরের কাছে এই সকলকিছুরই একটা উদ্দেশ্যে আছে। এই সমস্ত বিষয়গুলি ঈশ্বরের দ্বারা পূর্বনির্ধারিত। তোমার জীবনে যে ভূমিকা তুমি পালন করো এবং যে দায়িত্ব তুমি পূরণ করো ঈশ্বর তা অনেক আগেই নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। কিছু মানুষ লক্ষ্য করে যে অন্যদের এমন কিছু দক্ষতা রয়েছে যা তাদের নেই, এবং এতে তারা অসন্তুষ্ট হয়। আরো পড়াশুনা করে, আরো দেখাশোনার মাধ্যমে, এবং আরো পরিশ্রম করে তারা অবস্থার পরিবর্তন করতে চায়। কিন্তু তাদের পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তারা যা অর্জন করতে পারে তার একটা সীমা আছে, এবং প্রতিভা ও দক্ষতাসম্পন্ন মানুষদের তারা ছাড়িয়ে যেতে পারে না। তুমি যতোই সংগ্রাম করো না কেন, তা নিষ্ফল। তুমি কী হবে তা ঈশ্বর নির্ধারণ করে রেখেছেন, এবং কেউ কোনো উপায়েই তা পরিবর্তন করতে পারে না। যে বিষয়ে তুমি দক্ষ, সেই বিষয়েই তোমার প্রচেষ্টা চালানো উচিত। যে দায়িত্বের তুমি উপযুক্ত তোমার সেই দায়িত্বই পালন করা উচিত। তোমার দক্ষতাপরিধির বাইরের এলাকায় জোর করে ঢোকার চেষ্টা কোরো না এবং অন্যদের ঈর্ষা কোরো না। প্রত্যেকেরই নিজস্ব কার্যকারিতা রয়েছে। ভেবো না যে সব কাজেই তুমি ভীষণ ভালো, অথবা তুমি অন্যদের চেয়ে নিখুঁত বা শ্রেষ্ঠ, সবসময় অন্যদের প্রতিস্থাপন করে নিজেকে দেখাতে চাইছো। এ হল এক ভ্রষ্ট স্বভাব। এমন মানুষও আছে যারা মনে করে যে, তারা কোনোকিছুই ঠিকমতো করে উঠতে পারে না, মনে করে যে তাদের আদৌ কোনো দক্ষতাই নেই। তা-ই যদি হয়, তাহলে তোমার শুধু এমন একজন মানুষ হওয়া উচিত যে নিরহঙ্কারভাবে শ্রবণ ও মান্য করে। যে কাজটা তুমি করতে সমর্থ সেটাই করো এবং ভালোভাবে করো, তোমার সর্বশক্তি দিয়ে করো। তা-ই যথেষ্ট। তাতেই ঈশ্বর সন্তুষ্ট হবেন। তুমি সকলকে ছাপিয়ে যাবে, অন্যান্যদের থেকে সবকিছু বেশি ভালোভাবে করবে এবং প্রতিটি উপায়ে সকলের থেকে অনবদ্য হয়ে থাকবে, সর্বদা এমনটা ভেবো না। এটা কী ধরনের স্বভাব? (উদ্ধত স্বভাব।) মানুষ সর্বদাই উদ্ধত স্বভাবের অধিকারী, এমনকি তারা যদি সত্যের জন্য সচেষ্ট হতে চায়, ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে চায়, তাহলেও ব্যর্থ হয়। তারা নিয়ন্ত্রিত উদ্ধত স্বভাবের দ্বারা, যে স্বভাব তাদের সহজেই বিপথগামী করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, এমন অনেক মানুষ আছে যারা সর্বদা ঈশ্বরের চাহিদার পরিবর্তে নিজেদের সদিচ্ছা অভিব্যক্ত করে নিজেদের জাহির করতে চায়। ঈশ্বর কি এই ধরনের সদিচ্ছার অভিব্যক্তির প্রশংসা করবেন? ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি মনযোগী হতে গেলে, তোমাকে অবশ্যই ঈশ্বরের চাহিদার অনুসরণ করতে হবে, এবং নিজ দায়িত্ব পালন করতে হলে তোমাকে অবশ্যই ঈশ্বরের আয়োজনসমূহে সমর্পিত হতে হবে। যে সব লোকেরা সদিচ্ছা প্রকাশ করে, তারা ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি মনযোগী হয় না, বরং তারা সর্বদা নতুন কৌশল প্রয়োগ করার এবং আড়ম্বরপূর্ণ কথাবার্তা বলার প্রতি সচেষ্ট হয়। ঈশ্বর তোমাকে এইভাবে মনযোগী হতে বলেন না। কেউ কেউ বলে যে, এইভাবে তারা প্রতিযোগিতা করছে। এবং এই প্রতিযোগিতামূলক বিষয়টি হল নিজের থেকেই এক নেতিবাচক বিষয়। এ হল শয়তানের অহংকারী স্বভাবের এক উদ্ঘাটন—এক বহিঃপ্রকাশ। যখন তোমার এমন স্বভাব থাকে, তুমি সর্বদাই অপরকে অবদমিত করার চেষ্টা করো, সর্বদা তাদের থেকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো, সর্বদা ঠকাও, সর্বদা মানুষের কাছ থেকে হরণ করার চেষ্টা করো। তুমি অত্যন্ত ঈর্ষাপরায়ণ, তুমি কাউকে মান্য করো না, সর্বদাই নিজেকে আলাদা করে তোলার চেষ্টা করো। এটা সমস্যাদায়ক; শয়তান এভাবেই কাজ করে। তুমি যদি সত্যিই ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য জীব হতে চাও, তাহলে নিজের স্বপ্ন অনুসরণ কোরো না। নিজের লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে উচ্চতর ও সক্ষমতর হওয়ার চেষ্টা করা—এ হল খারাপ বিষয়; ঈশ্বরের সমন্বয়সাধন ও আয়োজনসমূহের প্রতি তোমার অনুগত থাকা উচিত, এবং নিজের পদের ওপরে ওঠা উচিত নয়; শুধুমাত্র এমনটিই যুক্তিযুক্ত(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, যে নীতিগুলি অনুসারে আচরণ করা উচিত)। ঈশ্বরের বাক্য কত স্পষ্ট! কেন আমি বলতাম যে আমার ক্ষমতা অল্প? কারণ, আসলে আমার প্রকৃতি খুবই অহংকারী ছিল। সবসময় অন্যদের চেয়ে উঁচু হতে চেয়েছিলাম। তা না হওয়ায় নেতিবাচক আর ন্যক্কারজনক হয়ে উঠি, নিজেকে এভাবে চিহ্নিত করি। সুনাম আর মর্যাদার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল আমার। যে কোনও দলে অবজ্ঞার শিকার হওয়ার ভয় পেতাম, চাইতাম মানুষ আমার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকুক। কিন্তু বাস্তবে আমার অনেক সমস্যা আর খামতি দেখা যাচ্ছিল। মোকাবিলা, অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন, বাধাবিপত্তি আর ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়ে মনে হচ্ছিল আমার ভাবমূর্তি আর নামযশ বুঝি নষ্ট হচ্ছে। সেটার সঠিকভাবে মুখোমুখি হতে পারতাম না, ভাবতাম যে আমার যোগ্যতা অল্প আর আমি খুব বিভ্রান্ত। তাছাড়া প্রায়ই নিজেকে অন্যদের সাথে তুলনা করতাম। যখন দেখলাম যে দলের অন্যদের ক্ষমতা আছে, তারা আমার থেকে বেশি যোগ্য, তখন মনে হয়েছিল যে আমার কোনো প্রতিভা নেই, আমি তুচ্ছ। এই বাস্তব মেনে নিতে পারিনি, তাই হতাশ আর নিকৃষ্ট বোধ করতাম। তখন বুঝতে পারলাম যে আমি প্রতিপত্তি আর মর্যাদা চাইছিলাম, তাই নিজের যোগ্যতা আর প্রতিভাকে অন্যদের সাথে তুলনা করছিলাম। আমার অত্যন্ত গুরুতর রকমের শয়তানোচিত স্বভাব ছিল। কেউ তার দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করে কি না সেটা প্রতিভা বা যোগ্যতা দিয়ে নির্ধারণ করা যায় না। অন্যদের চোখে সম্মানীয় আর উপাস্য হলেই পরিত্রাণ যে নিশ্চিত, তা-ও নয়। ঈশ্বর কখনো এমন কিছু বলেননি। ঈশ্বর চান আমরা যেন মানবিক আর যুক্তিসম্পন্ন হই, যাতে বিনম্রভাবে সত্যের সন্ধান আর নিজেদের কলুষিত স্বভাবের মীমাংসা করি, মানব সদৃশ জীবন যাপন করি। ঈশ্বর মানুষের কাছে এটাই চান। ঈশ্বরের এই বাক্য মনে পড়ল, “আমি তোমাদের অনগ্রসর বা স্বল্প ক্ষমতাসম্পন্ন বলি কিনা তাতে কিছু আসে যায় না—এই সবই সত্য। আমার এই কথাটি প্রমাণ করে না যে আমি তোমাদের পরিত্যাগ করতে চাই, যে আমি তোমাদের উপর আশা হারিয়ে ফেলেছি, এমন তো আরোই নয় যে আমি তোমাদেরকে উদ্ধার করতে চাই না। আজ আমি তোমাদের পরিত্রাণের কাজ করতে এসেছি, অর্থাৎ আমি যে কাজ করি, তা পরিত্রাণের কাজেরই ধারাবাহিকতা। প্রতিটি ব্যক্তির নিখুঁত হওয়ার সুযোগ রয়েছে: যদি তুমি ইচ্ছুক হও, যদি তুমি অন্বেষণ করো, তাহলে শেষ পর্যন্ত তুমি এই ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হবে, এবং তোমাদের একজনকেও পরিত্যাগ করা হবে না(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, মানুষের স্বাভাবিক জীবন পুনরুদ্ধার করা এবং তাকে এক বিস্ময়কর গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া)। ঈশ্বরের বাক্য খুবই স্পষ্ট। যদিও ঈশ্বর বলেছেন যে মানুষের ক্ষমতা নিকৃষ্ট আর সে বিভ্রান্তও, তবে এটা শুধু তাদের নিজেদের সমস্যাগুলো জানানোর আর ঘাটতিগুলো দেখানোর জন্য। যাতে তারা সুষ্ঠুভাবে সত্যের অন্বেষণ, নিজেদের পরিবর্তন, আর জীবনে উন্নতি করতে পারে। আমাদের ক্ষমতা অল্প হলেও, আমরা যদি সত্যপ্রেমী ও সত্যান্বেষী হই, ঈশ্বরের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করি, তাহলে ঈশ্বর আমাদের আলোকিত ও পথপ্রদর্শন করবেন। কিন্তু ভালো যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যদি আমরা সত্যের অন্বেষণ না করি, তবে তিনি আমাদের অনাবৃত ও বহিষ্কার করবেন। এটা ঠিক যে আমার ক্ষমতা কম ছিল আর প্রায়শই বিভ্রান্ত হতাম। কিন্তু ঈশ্বর কখনো বলেননি যে তিনি আমাকে উদ্ধার করবেন না বা বহিষ্কার করবেন। তিনি আমাকে নিজের দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়া অব্যাহত রেখেছিলেন, আমায় সত্যের অন্বেষণ করে যেতে হবে, সক্রিয়ভাবে এগিয়ে যেতে হবে, নিজের ঘাটতি পূরণ করতে আর ক্ষমতা বাড়াতে হবে।

এরপর, কিছু ঘটলে, সত্যের অন্বেষণে মন দিতাম আর পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, মোকাবিলা করা হোক বা কর্তন, বিপত্তি আসুক বা ব্যর্থতা, আনুগত্য বজায় রেখে সত্যের নীতি অন্বেষণ করতে পারতাম। যখন এইভাবে অভিজ্ঞতা লাভ করলাম, তখন নিজের অজান্তেই ঈশ্বরের উপস্থিতি অনুভব করলাম, আর টের পেলাম যে মনটা আরো স্বচ্ছ হয়ে উঠেছে। যখন ব্রাদার-সিস্টারেরা ভিডিও-সংক্রান্ত আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করত, তখন আর চুপ করে থাকতাম না। মাঝেমধ্যে আমি যে মত প্রকাশ করতাম তা ভুল হত, বা ব্রাদার-সিস্টারেরা আমায় কিছু পরামর্শ দিত, তবে ঠিকঠাক করে সেসবের মুখোমুখি হতে পারতাম, সে বিষয়ে অনেক বেশি শান্ত থাকতাম। সেই সময়ে আমি ঈশ্বরের অত্যন্ত নিকটবর্তী অনুভব করি। মনে হয় ঈশ্বর আমার পাশেই আছেন, আমাকে আত্মবিশ্বাস আর শক্তি দিচ্ছেন। যদিও আমার দায়িত্বে অনেক সমস্যা ছিল, কিন্তু প্রার্থনার মাধ্যমে ঈশ্বরের ইচ্ছার অন্বেষণ করে, তাঁর উপর ভরসা করে, আর ব্রাদার-সিস্টারদের সাথে সহযোগিতা করে, অবশেষে কিছু সমস্যার সমাধান হল, কাজের প্রভাবও বাড়তে থাকল। আমাকে উদ্ধার করার জন্য ঈশ্বরকে আমি আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই।

আজ যখন আমার ঈশ্বরকে ভুল বুঝে দূরে সরে যাওয়ার কথা মনে পড়ে, তখন গভীরভাবে অনুতপ্ত বোধ করি। পরে, ঈশ্বরের বাক্যের আরেকটা অনুচ্ছেদ পড়লাম। “আমি চাই না যে কেউ মনে করুক ঈশ্বর তাদের নিদারুণভাবে বর্জন করেছেন, ঈশ্বর তাদের পরিত্যাগ করেছেন অথবা তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আমি শুধু এটাই দেখতে চাই যে সকল প্রকারের আশঙ্কা ও ভার থেকে মুক্ত হয়ে তারা সকলে সংকল্পে অবিচল থেক সত্য অন্বেষণের পথে, বীরদর্পে ও দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে। তুমি যতই অন্যায় করে থাকো না কেন, তুমি যতই দূরে পথভ্রষ্ট হও না কেন, তোমার অধর্ম যতই গুরুতর হোক না কেন, ঈশ্বর-উপলব্ধির পথে এগুলি যেন তোমার গুরুভার অথবা অতিরিক্ত বোঝা না হয়ে ওঠে। দৃপ্ত পদক্ষেপে সম্মুখে এগিয়ে চলো। ঈশ্বর সর্বদা মানুষের পরিত্রাণকে নিজের হৃদয়ে ধারণ করেন; এর কখনও পরিবর্তন হয় না। এটাই ঈশ্বরের সারসত্যের সবচেয়ে মূল্যবান অংশ(বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৬)। নিজের এত বছরের ঈশ্বর-বিশ্বাসে, আমি বলে গেছি যে ঈশ্বর মানবপ্রেমী, কিন্তু ঈশ্বরের ভালোবাসা নিয়ে আমার কোনো প্রকৃত জ্ঞান ছিল না। এই অভিজ্ঞতা আমায় ঈশ্বরের ভালোবাসার বিষয়ে কিছু প্রকৃত উপলব্ধি আর অনুভূতি দিলো। যদিও আমার মন কঠিন আর বিদ্রোহী ছিল, তবুও ঈশ্বর আমার অভিজ্ঞতার জন্য পরিবেশের আয়োজন করেছিলেন। তিনি আমার পরিবর্তন ঘটার অপেক্ষায় ছিলেন, তিনি আমার তাঁর বাক্য দিয়ে জাগিয়েছিলেন, নেতিবাচকতা আর ভুল ধারণার অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পথ দেখিয়েছিলেন। ঈশ্বরের মানুষকে উদ্ধার করার আকাঙ্ক্ষা কত আন্তরিক ও সুন্দর! আমি ঈশ্বরের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ, সত্যান্বেষণ করা, দায়িত্বের সুষ্ঠু পালন করা, আর ঈশ্বরের ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়া ছাড়া আর কিছুই চাই না আমি।

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

একজন “ভালো নেতার” প্রতিফলন

ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা সকলের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ, সহজগম্য এবং সহানুভূতিশীল থাকতে শিখিয়েছে। আশেপাশের মানুষের যদি সমস্যা বা ত্রুটি থাকত,...

বিশ্বাস: শক্তির উৎস

গত গ্রীষ্মে। আমি অনলাইনে অনুসন্ধান করছিলাম এবং অন্যেরা আমার সঙ্গে অনেক সত্যের সহ ভাগীতা করেছিল, এই বিষয়গুলি নিয়ে কীভাবে ঈশ্বর...

Leave a Reply

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন