একজন অর্থের দাসের জাগরণ
আমি যখন ছোটো ছিলাম, আমার পরিবার ছিল দরিদ্র, এবং আমার বাবা-মা আমার পড়াশোনার খরচ বহন করতে পারেননি। তাই আমি স্কুলের খরচ যোগাতে বেড়া তৈরি করেছি এবং বিক্রি করেছি। একবার, আমি খামারের কাজ করতে করতে আমার আঙুল কেটে ফেলেছিলাম। চিকিৎসার জন্য কোন অর্থ ছিল না, তাই এটা কখনই পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। আমি এখনও আমার আঙুল সম্পূর্ণভাবে প্রসারিত করতে পারি না। আমি বিয়ে করার পরেও, আমার স্বামী এবং আমি দরিদ্র ছিলাম। আমাদের বন্ধুবান্ধব এবং পরিবার আমাদেরকে অবজ্ঞা করত এবং এড়িয়ে চলত। আমি যখন দেখলাম ধনীরা সম্মান-পায়, খাওয়া পরা নিয়ে তাদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই, তখন আমি তাদের ঈর্ষা করতাম। লোকজন সবসময় বলে, “দুনিয়া টাকায় চলে,” “টাকাই সব কিছু নয়, কিন্তু এটা ছাড়া আপনি কিছুই করতে পারবেন না” এবং “যার টাকা আছে সে মাথা উঁচু করে থাকে, আর যার নাই সে লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকে।” ওই সময়, আমি এই কথাগুলোকে সত্য বলে মনে করতাম। টাকা থাকলে তোমার খাওয়া-পরার চিন্তা নেই, এবং আপনি সম্মান আর প্রশংসা দুটোই পাবেন। আমি ভেবেছিলাম টাকাই সব। আমি কঠোর পরিশ্রম করে টাকা রোজগারের প্রতিজ্ঞা করলাম। আমি দারিদ্র থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলাম।
পরে, আমি এবং আমার স্বামী একটি স্কুল ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনার কাজ পেয়েছিলাম। প্রতিদিন শত শত মানুষ সেখানে খেত। টাকা সাশ্রয়ের জন্য, আমরা কেবল একজন কর্মীকে নিয়োগ করেছিলাম। আমি আর আমার স্বামী প্রতিদিন ভোর চারটা থেকে মধ্য রাতেরও বেশি সময় ধরে কাজ করতাম। এমনকি আমার সর্দিজ্বর আসলেও আমি কাজ করে যেতাম। আরও অর্থ উপার্জনের জন্য, আমরা খামারে প্রচুর কাজ নিতাম। ব্যস্ত মরশুমে, ফসল রোপন এবং কাটার জন্য আমরা রাতে অতিরিক্ত সময় ধরে কাজ করতাম। যেহেতু আমরা দিনরাত কাজ করতাম, আমার প্রায়ই মাথা ঘুরত। কখনও কখনও, সবজি কাটার সময় ঘুমের ঘোরে আমি আমার হাত কেটে ফেলতাম। কাটা জায়গায় নুন আর জল দিতাম, ভীষণ ব্যাথা করত … এমন কী ভীষণ ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও, যখন দেখতাম আমার রোজগার বেশি হচ্ছে, আমি খুব আনন্দ পেতাম। আমি অনুভব করতাম আমি আমার পরিশ্রমের মূল্য পাচ্ছি। এবং যখন দেখতাম ওই সব ধনী লোকেরা দামী পোশাক পরছে, ভালো খাচ্ছে আর সুখে হাসি তামাশা করছে, তখন আমি নিজেকে বলতাম, “আমাকে অবশ্যই আরো বেশি রোজগার করতে হবে!” আমি ভেবেছিলাম যে আমি যত কঠোর পরিশ্রম করব আজ হোক আর কাল হোক আমি ধনীদের কাতারে যুক্ত হতে পারব।
প্রতিদিন ঠান্ডা জল ব্যবহার করার কারণে, আমি গুরুতর গাঁট-ফোলানো বাতে আক্রান্ত হলাম। আমার গিঁট বিকৃত হতে শুরু করে। এবং বহু বছরের ক্লান্তিকর কাজের কারণে, আমার মেরুদন্ডের একটি ডিস্ক বেরিয়ে আসে, ফলে হাড়ের হাইপারপ্লাসিয়া এবং সায়াটিকা রোগে আক্রান্ত হলাম। ডাক্তার অস্ত্রোপচারের এবং তিন মাস হাসপাতালে থাকার নির্দেশ দিলেন, কিন্তু আমি টাকা রোজগার বন্ধ রাখতে চাইনি, সুতরাং আমি হাসপাতালে যাইনি। এমনকি তিনটা দিনও অনেক লম্বা হয়ে যেত। তাই, আমি রাতদিন কাজ চালিয়ে যেতে থাকলাম। অবশেষে, যেহেতু আমি সঠিক সময়ে কখনই খেতে পারিনি এবং পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারিনি, আমার গ্যাসট্রোপটোসিস আর অন্ত্রে প্রদাহ হয়ে গেল। তার অল্প কিছুদিন পরেই, আমি জরায়ু মায়োমাস, ওভারিয়ান প্রোল্যাপস, হৃদরোগ, মায়োকার্ডাইটিস, এবং গুরতর রক্ত স্বল্পতায় ভুগতে লাগলাম। একটার পর আরেকটা অসুখ হতে শুরু করল। অসহ্য যন্ত্রণা, আর আমি রাতে ঘুমোতে পারতাম না। শুয়ে শুয়ে শুধু চোখের জল ফেলতাম। আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। আমি ভাবলাম: “বেঁচে থেকে লাভটা কী? জীবন কি শুধুই অর্থ উপার্জনের সংগ্রামের জন্য?” আমার কাছে কোনো উত্তর ছিল না। আমি শুধু অনুভব করেছি যে সমাজে কিছু অর্জন করতে হলে আমার অর্থ থাকতে হবে। তাই, আমি নিজেকে বলেছিলাম: “যতক্ষণ তুমি সোজা আছো, ততক্ষণ কাজ চালিয়ে যেতে পারবে।” এবং আমি ঠিক তাই করলাম, আমি অর্থের পিছনে আবারও ছুটতে শুরু করলাম। কিন্তু একদিন আমি হাসপাতালে গেলাম, এবং আমার দুই ধরনের ক্যান্সার ধরা পড়ল—প্রাথমিক পর্যায়ে ফুসফুসের ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সার। যখন তারা আমাকে এই কথা বলল, অতর্কিতে আমি দুর্বল বোধ করলাম। আমি আমার বিছানায় শুয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কাঁদলাম। আমি চিকিৎসার জন্য সব ধরনের হাসপাতালে গিয়েছি এবং আমাদের প্রায় সব সঞ্চয় খরচ করে ফেলেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি, এবং আমি যে ওষুধটি খেয়েছিলাম তাতে আমার সারা শরীর ফুলে গিয়েছিল। প্রতি রাতে, যখন সবকিছু শান্ত হয়ে পড়ত, আমি আমার বিছানায় শুয়ে হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকতাম। আমি টাকা রোজগার করে জীবন কাটিয়েছি, এবং ধনী তো হতেই পারিনি, আমার স্বাস্থ্য নষ্ট হয়েছিল, এবং আমার জীবন হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ। বেঁচে থেকে কী লাভ হত? আমি আর অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করে নিজেকে মেরে ফেলতে চাইনি। কিন্তু আমার স্বামী টাকা পছন্দ করত। সে বলেছিল: “যতদিন তুমি বেঁচে আছ, কাজ চালিয়ে যাও!” তার উদাসীনতা আমাকে বিচলিত এবং হতাশ করতে, কিন্তু কী আর করা, আমরা অসহায় ছিলাম। আমার বয়স তখন কেবল ৪০ এর কোঠায়। আমার জীবন কখনোই সুখের ছিল না। আমার ছেলের বিয়ে দিতে পারিনি। আমি এভাবে মরতে প্রস্তুত ছিলাম না। আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম। কিন্তু টাকা ছাড়া চিকিৎসা পাব কীভাবে আর বাঁচবই বা কেমন করে? একটাই উপায় আছে সেটা হলো টাকা রোজগার করতে থাকা। সুতরাং, আমি চিকিৎসা চলাকালীন সময়েও কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলাম।
এক বছর পরে, আমার স্বামী আমাদের অবশিষ্ট সঞ্চয় দিয়ে একটি কয়লার ব্রিকেট প্ল্যান্ট খোলেন। পরের বছর, তিনি একটি তেল নিষ্কাশন প্ল্যান্ট খোলেন। অসুস্থতা সত্ত্বেও আমি প্রতিদিন দুটি প্ল্যান্টে গিয়ে এটা-ওটা কাজ করতাম। বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রমের পর, আমরা অবশেষে কিছু অর্থ উপার্জন করেছিলাম। আমরা শহরে একটি বাড়ি, একটি গাড়ি কিনেছিলাম এবং আমরা একটি ভালো বস্তুসুখময় জীবন উপভোগ করছিলাম। আমাদের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনরা আমাদের প্রতি মুগ্ধ হল এবং আমাদের প্রশংসা করল। আমাদের সামাজিক অবস্থান বদলে গেল। আমাদের একটা নতুন পরিচয় হল। আমরা নিজেদের নিয়ে খুব সন্তুষ্ট ছিলাম। সেই সমস্ত বছরের সকল কষ্ট অবশেষে সার্থক বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু ভালো সময় বেশি দিন থাকেনা। বহু বছরের পরিশ্রমের পর আমার শরীর ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। ডাক্তার আমাকে বলেছেন: “আপনার অসুখ খুব জটিল। আপনার কোন অঙ্গই ঠিকমতো কাজ করছে না। আমাদের করার কিছু নেই।” মৃত্যুদণ্ডের আদেশের মতো তার কথাগুলো শোনাচ্ছিল। এই সংবাদটা আমি মেনে নিতে পারলাম না। তখন কি আমার বাড়িতে গিয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করার কথা ছিল? আমার টাকা ছিল এবং আমি বস্তুসুখময় জীবন উপভোগ করছিলাম। কিন্তু তাতে কী লাভ ছিল? এখন যত টাকাই থাকুক কোনো টাকাই আমাকে বাঁচাতে পারবে না। রোগের যন্ত্রণায় আমার মরে যেতে ইচ্ছে করত। এছাড়া আমি আর কীই বা করতে পারি? এরকম সত্ত্বেও, আমি উপরের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বললাম: “ঈশ্বর! আমাকে বাঁচাও!”
আমার সবচেয়ে অস্থির মুহূর্তে, আমার বন্ধু আমাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের সুসমাচার শোনাল। সে বলেছিল যে ঈশ্বর মানবজাতিকে পরিত্রাণের জন্য অন্তিম সময়ে দেহধারণ করেছেন, সত্য প্রকাশ করবেন, এবং জীবনের রহস্য উন্মোচন করবেন। তিনি জগতের মন্দ ও অন্ধকারের উৎস প্রকাশ করেন, কেন আমাদের জীবন এত অন্তঃসারশূন্য এবং এত কষ্টে ভরা, অসুস্থতা কোথা থেকে আসে, কার হাতে আমাদের ভাগ্য সমর্পিত, কী আমাদের জীবনকে সত্যিই অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারে, এবং আরো অনেক কিছু। আরও কী, সে বলেছিল তাঁর বাক্যগুলি পড়ে, এবং সত্য বোঝার মাধ্যমে, আমরা এই জিনিসগুলো দেখতে পারি, তখন আমাদের কষ্ট লাঘব হবে। আমার বন্ধু আমাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্যের একটি অনুচ্ছেদ পড়ে শোনাল। “জন্ম, মৃত্যু, অসুস্থতা এবং বার্ধকের জন্য মানুষ আজীবন যে কষ্টভোগ করে, তার উৎস কী? কী কারণে মানুষকে এসব কষ্টভোগ করতে হয়? মানুষকে প্রথম যখন সৃষ্টি করা হয়েছিল, তখন তাদের এই দুর্ভোগ ছিল না, ছিল কি? এই দুর্ভোগ তাহলে কোথা থেকে এল? শয়তানের দ্বারা মানুষ প্রলুব্ধ হওয়ার পর, এবং শয়তানের দ্বারা তারা ভ্রষ্ট হয়ে অধঃপতিত হওয়ার পরেই এই দুর্ভোগের উৎপত্তি হয়েছিল। মানুষের দেহের বেদনা, এর যন্ত্রণা এবং এর শূন্যতা, সেইসাথে মানব জগতের অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়গুলি, শয়তান মানবজাতিকে কলুষিত করার পরেই সৃষ্টি হয়েছিল। শয়তানের দ্বারা মানবজাতি কলুষিত হওয়ার পরে, সেটাই তাদের যাতনা দিতে শুরু করেছিল। ফলত, তারা আরো অধঃপতিত হতে থাকে। মানবজাতির মধ্যে নানান ব্যাধি আরো, আরো তীব্র আকার ধারণ করেছিল, এবং তাদের যন্ত্রণা আরো আরো বেশি গুরুতর হয়ে পড়েছিল। ক্রমবর্ধমানভাবে, মানুষ মানবজগতের শূন্যতা ও দুঃখ উপলব্ধি করলো, সেইসাথে অনুভব করলো সেখানে তাদের জীবনধারণ করে যাওয়ার অক্ষমতা, আর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার নিরাশাও ছিল ক্রমবর্ধমান। এইভাবে, এই যন্ত্রণা মানুষের মধ্যে নিয়ে এসেছিল শয়তান” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, ঈশ্বরের পার্থিব দুঃখকষ্ট আস্বাদনের তাৎপর্য)।
এরপর আমার বন্ধু আলোচনায় বলল: “ঈশ্বর যখন আমাদের তৈরি করেছিলেন, তখন আমরা সবাই তাঁর সুরক্ষার অধীনে বাস করতাম, এদনের উদ্যানে স্বাধীনভাবে বসবাস করতাম, মৃত্যু, রোগ বা উদ্বেগ ছাড়াই। কিন্তু শয়তান যখন মানুষকে প্রলুব্ধ ও কলুষিত করেছিল, তখন আমরা ঈশ্বরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি এবং তাঁর যত্ন এবং সুরক্ষা হারিয়েছি। আমরা শয়তানের নীতি অনুসারে, শয়তানের রাজত্বে বাস করি। আমরা একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করি, খ্যাতি, সম্পদ এবং মর্যাদার জন্য আমরা মিথ্যা বলি, প্রতারণা এবং যুদ্ধ করি। আমাদের আত্মায় অসুস্থতা, বেদনা এবং দুঃখ এখান থেকেই আসে। আর এই কষ্ট, এই দুশ্চিন্তার কারণে প্রত্যেকে অনুভব করে যে জীবন খুব বেদনাদায়ক, খুব ক্লান্তিকর বা খুব কঠিন। শয়তান আমাদের কলুষিত করেছে বলেই এসব হয়েছে। শয়তান আমাদের এই যন্ত্রণা দিচ্ছে। কিন্তু ঈশ্বর আমাদের উদ্ধার করার জন্য দেহধারণ করে পৃথিবীতে এসেছেন। তিনি সমস্ত সত্য প্রকাশ করেন যা আমাদের পরিত্রাণ পেতে এবং শুদ্ধ হতে সক্ষম করে। আমরা যদি ঈশ্বরের বাক্য পড়ি এবং সেগুলি অনুসরণ করি, আমরা তাঁর সুরক্ষা এবং নির্দেশনা পেতে পারি, নিজেদেরকে কলুষ থেকে মুক্ত করে ঈশ্বরের পরিত্রাণ লাভ করতে পারি এবং তাঁর নেতৃত্বে আমরা আমাদের চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছতে পারি।” ওর কথা শুনে আমার মনে এক ধরনের আশা জাগে। আমি অনুভব করলাম যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাকে কষ্ট থেকে রক্ষা করতে পারেন তাই আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজ দেখতে রাজি হলাম। আমার বন্ধু আমাকে বাক্য দেহে আবির্ভূত হল এর একটি কপি দিয়েছিল। এরপর ঈশ্বরের বাক্যের নিত্য পাঠ এবং ভ্রাতা-ভগিনীদের সঙ্গে সমাবেশ করতাম।
প্রার্থনা চলাকালীন একদিন, আমি ঈশ্বরের বাক্য পাঠের একটি ভিডিও দেখেছিলাম। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “তোমার পটভূমি যেমনই হোক, এবং তোমার সামনে যেমনই যাত্রাপথ থাকুক, কেউই স্বর্গলোকের সমন্বয়সাধন আর ব্যবস্থাপনা এড়িয়ে যেতে পারে না, আর কেউই তার নিজের নিয়তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, কারণ যিনি সমস্ত কিছুর নিয়ন্তা কেবল তিনিই এটা করতে সক্ষম। যেদিন থেকে মানুষের সৃষ্টি হয়েছে, ঈশ্বর এভাবেই কাজ করে চলেছেন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড পরিচালনা করছেন, সবকিছু পরিবর্তনের নিয়ম ও তাদের গতিপথের দিশা নির্দেশ করে চলেছেন। সবকিছুর মতোই, মানুষও নিঃশব্দে এবং নিজের অজান্তে ঈশ্বরপ্রদত্ত মিষ্টতা, বৃষ্টি এবং শিশির দ্বারা প্রতিপালিত হয়; আর সবকিছুর মতোই, মানুষও নিজের অজান্তেই ঈশ্বরের হাতের সমন্বয়সাধনেই বেঁচে আছে। মানুষের হৃদয় ও আত্মা ঈশ্বরের হাতেই ধৃত, তার জীবনের সবকিছুই ঈশ্বরের দৃষ্টির অন্তর্গত। তুমি বিশ্বাস করো বা না করো, ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারেই জীবিত বা মৃত যে কোনো জিনিস ও সমস্ত কিছু স্থানান্তরিত হবে, পরিবর্তিত হবে, পুনর্নবীকৃত হবে, আর বিলীন হয়ে যাবে। ঈশ্বর এভাবেই সমস্ত বস্তুর উপরে আধিপত্য করেন” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বর হলেন মানুষের জীবনের উৎস)। যখন আমি এই ভিডিওটি দেখেছিলাম, আমি দেখলাম ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি সবকিছুর উপর শাসন করেন। ঈশ্বর মানবজাতিকে সবকিছু সরবরাহ করেন এবং পুষ্ট করেন। আমাদের ভাগ্য, আমাদের জীবন এবং মৃত্যু এবং আমাদের সুখ তাঁর হাতের তালুতে। আমরা কেবল কর্মব্যস্ত হয়ে এবং তাড়াহুড়ো করে সেগুলোর পরিবর্তন ঘটাতে পারি না। কিন্তু আমি ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব বুঝতে পারিনি। আমি আমার ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য নিজের শক্তির উপর নির্ভর করার চেষ্টা করেছিলাম, ধনী হওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু যদিও আমি কিছুটা অর্থ উপার্জন করেছি, আমি কখনোই সুখী বোধ করিনি। আমার আত্মা বেদনাক্রান্ত ছিল, এবং আমার স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তখনই আমি বুঝতে পারলাম: মানুষ যদি ঈশ্বরকে বিশ্বাস না করে এবং উপাসনা না করে এবং যদি তারা তাঁর সার্বভৌমত্বকে না মানে, এবং যদি তারা আকাঙ্ক্ষা থেকে তাদের ভাগ্যকে প্রতিরোধ করে, তারা কেবল বৃথাই কষ্ট পাবে, এবং তারা মৃত্যুর পর নরকে গমন করবে। আমি তখন জানতাম যে ঈশ্বরই আমার একমাত্র প্রকৃত অবলম্বন, এবং আমি তাঁর কাছে প্রার্থনা করেছিলাম আর তাঁর কাছে আমার স্বাস্থ্য অর্পণ করেছিলাম। আমি বেঁচে থাকি বা মারা যাই, আমি ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করব।
এর পরে আমি প্রায়ই গির্জায় যেতাম। আমি দেখেছি কিভাবে আমার ভ্রাতা ও ভগ্নীরা ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করেন এবং সত্যের অন্বেষণ করেন, তাদের দায়িত্ব পালন করতে এবং ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে, এবং সত্যিই আমি তাদের প্রশংসা করতাম। আমি আমার পুরানো জীবন থেকে মুক্ত হয়ে নতুন করে বাঁচতে চেয়েছিলাম। তাই আমি প্রায়ই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতাম, এই বলে যে আমি সমাবেশে যোগদান করতে এবং আমার দায়িত্ব পালনে আরও বেশি সময় ব্যয় করব। পরবর্তীতে, আমাদের তেল নিষ্কাশন প্ল্যান্টটিকে একটি নতুন রাস্তা নির্মাণের জন্য বরাত দেওয়া হয়। আমার আর আগের মত দুটো প্ল্যান্টে যাওয়া আসার দরকার হল না। সমাবেশে অংশ নেওয়ার আর ঈশ্বরের বাক্য আলোচনার জন্য বেশি সময় পেলাম, ঈশ্বরের বাক্য গভীরভাবে চিন্তা করে, এবং ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করে, আমি প্রতিদিন নিজেকে সমৃদ্ধ অনুভব করেছি। এর কিছুদিন পর থেকে, আমার স্বাস্থ্য অনেক ভালো হতে শুরু করল। আমি উদ্দীপিত অনুভব করতাম, এবং আমার শরীরে আরো বল পেলাম। আমি অনেক বেশি স্বস্তি অনুভব করলাম। আমি ঈশ্বরের প্রতি ভীষণ কৃতজ্ঞ বোধ করলাম।
পরে, আমি ঈশ্বরের বাক্য পাঠের আরেকটি ভিডিও দেখেছি। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “‘দুনিয়া টাকায় চলে’—এই হল শয়তানের একটি দর্শন। এটি সমগ্র মানবজাতির মধ্যে, প্রতিটি মানব সমাজে প্রচলিত; তুমি বলতে পার যে এটি হল একটি ধারা। কারণ প্রতিটি ব্যক্তির হৃদয়েই এটি বপন করা হয়েছে যারা প্রথমে কথাটি গ্রহণ করেনি, কিন্তু তারপরে বাস্তব জীবনের সংস্পর্শে এসে এটিকে অকথিত গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছে এবং অনুভব করতে শুরু করেছে যে এই কথাগুলি বাস্তবেই সত্য। এটা কি শয়তানের মানুষকে কলুষিত করার একটা প্রক্রিয়া নয়? … শয়তান মানুষকে প্রলুব্ধ করার জন্য অর্থ ব্যবহার করে এবং অর্থের উপাসনা ও পার্থিব স্থূলবস্তুর আরাধনা করতে তাদের কলুষিত করে। আর টাকার এই আরাধনা মানুষের মধ্যে কীভাবে প্রকাশ পায়? তোমরা কি মনে কর যে টাকা ছাড়া তোমরা এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারবে না, টাকা ছাড়া এমনকি একদিন বেঁচে থাকাও অসম্ভব? মানুষের মর্যাদা ও তাদের সম্ভ্রম উদ্রেগের ক্ষমতা তাদের কত টাকা আছে তার উপর নির্ভর করে। গরীবদের পিঠ লজ্জায় বেঁকে যায়, আর ধনীরা সেখানে তাদের উচ্চ মর্যাদা উপভোগ করে। তারা মাথা উঁচু করে গর্বিত ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, উচ্চগ্রামে কথা বলে এবং উদ্ধতভাবে জীবনযাপন করে। এই প্রবাদ এবং প্রবণতা মানুষের কাছে কী বয়ে আনে? অর্থ উপার্জনের তাড়নায় অনেকেই যে যা-খুশি বিসর্জন দিতে পারে এটা কি সত্য নয়? অনেক মানুষই কি আরও অর্থ উপার্জনের তাড়নায় তাদের মর্যাদা এবং চারিত্রিক সততা হারায় না? অর্থের লোভে অনেকেই কি তাদের দায়িত্ব পালনের এবং ঈশ্বরকে অনুসরণ করার সুযোগ হারায় না? সত্য অর্জনের এবং উদ্ধার হওয়ার সুযোগ হারানো কি মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতি নয়? এই পদ্ধতি এবং এই প্রবাদকে মানুষকে এতটা কলুষিত করার জন্য ব্যবহার করার দরুন শয়তান কি অনিষ্টকর নয়? এটি কি একটি বিদ্বেষপরায়ণ কৌশল নয়?” (বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৫)। এটা দেখার পর, আমি বুঝতে পারলাম এই কয়েক দশক আমি ব্যথা এবং ক্লান্তিতে কাটিয়েছি এর কারণ হলো শয়তানের দূর্নীতি আর সামাজিক প্রভাব আমাকে জাগতিক প্রবণতা অনুসরণ করতে এবং অর্থের পূজা করতে পরিচালিত করেছিল। আমার শৈশবকালে, দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করার সময়, মানুষ আমাকে এড়িয়ে চলত এবং খাটো করে দেখত। যখন আমি ধনী ব্যক্তিদের দেখতাম, যারা স্বচ্ছলভাবে জীবন যাপন করত, এবং সম্মান পেত, আমি নিশ্চিত অনুভব করেছিলাম যে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য আপনার অর্থের প্রয়োজন। “টাকাই সব কিছু নয়, কিন্তু এটা ছাড়া আপনি কিছুই করতে পারবেন না,” “দুনিয়া টাকায় চলে,” “যার টাকা আছে সে মাথা উঁচু করে থাকে, আর যার নাই সে লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকে,” “সবার আগে টাকা,” এবং “মানুষ ধনী হওয়ার জন্য যে কোনো কিছু করবে।” এই শয়তানোচিত বিভ্রান্তিগুলি আমার হৃদয়ে শিকড় গেড়েছিল এবং আমার চিন্তাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল। আমি ভাবতাম টাকাই সব, টাকা হলে প্রশংসা, সম্মান এবং সুখ সবই পাবো। টাকার পেছনে ছোটাই আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য করেছিলাম, এবং শুধুমাত্র আরো উপার্জন নিয়েই ভাবতাম। আমার যদি মাথা ঘোরে, বা ক্লান্ত হয়ে পড়ি, বা অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং আমার শরীর তা নিতে না পারে সেসব নিয়ে আর কে ভাবে? যখন আমি ধনী হওয়ার কথা ভেবেছিলাম, এবং একজন ধনী ব্যক্তির জীবনযাপন করার কথা ভেবেছিলাম, তখন দাঁতে দাঁত চেপে আমার কাজ চালিয়ে গেলাম। এমনকি ক্যান্সার হওয়ার পরেও আমার মনোভাব বদলালো না। সত্যি কথা বলতে কি, ক্যান্সার টাকাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলল। কারণ আমার চিকিৎসার জন্য এবং বেঁচে থাকার জন্য টাকার দরকার ছিল। এমনকি তখনও, আমি টাকা রোজগার বন্ধ করার চেষ্টা করিনি। শয়তান আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছিল, এবং অর্থের দাস ছাড়া আমি কিছুই ছিলাম না। যদিও আমার একটি গাড়ি, একটি বাড়ি এবং কিছু টাকা ছিল, এবং মানুষ আমাকে সম্মান করত এবং আমার প্রশংসা করত তারপরেও আমি মোটেও সুখ অনুভব করিনি। আমার অনেক অসুখ ছিল, এবং ক্যান্সারও ছিল। আমার টাকা আমার ব্যথা উপশম করতে পারেনা, এবং এটা আমার জীবনও বাঁচাতে পারে না। আমি প্রচণ্ড যন্ত্রণা এবং হতাশা অনুভব করেছি। অধিকতর অর্থ তার উপশম করতে পারত না। আগে, আমি জীবন দিয়ে টাকা কিনেছি। এখন আমি টাকা দিয়ে জীবন কিনছি। টাকা কামানোর জন্যই বেঁচে ছিলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার হাত শুন্য। আমি তখন পরিষ্কার দেখতে পেলাম, যে বেঁচে থাকার জন্য টাকার পেছনে ছোটা একটা ভুল উপায়। টাকা হলো একটা কৌশল যেটা শয়তান আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত এবং কলুষিত করতে ব্যবহার করে। এটা হলো একটা জোয়াল যা শয়তান আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। যদি ঈশ্বরের বাক্য না থাকত, তাহলে আমি এমনকি এখনও দেখতে পেতাম না আমাদের বেঁধে রাখতে, নিয়ন্ত্রণ করতে, এবং আমাদের ক্ষতি করতে শয়তান কীভাবে টাকা ব্যবহার করে, এবং শয়তান এখনও আমাকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে, আমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে এবং আমাকে নিয়ে খেলছে। আমি দেখেছি যে মানুষ সত্য বোঝে না, তাই তারা বাঁচতে জানে না। তারা শুধু জনতাকে অনুসরণ করেছে, টাকাকে অগ্রাধিকার দিয়ে। খুবই লজ্জার কথা। আমি খুবই ভাগ্যবতী ছিলাম যে ঈশ্বরের সামনে যেতে এবং শয়তানের অপব্যবহার থেকে বাঁচতে আমি ঈশ্বরের কন্ঠস্বর শুনতে পেয়েছিলাম। এটা ছিল ঈশ্বরের পরিত্রাণ এবং আমার হৃদয় তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ ছিল।
পরে, আমার স্বামী যখন প্রয়োজনীয় জিনিস আনার জন্য বাইরে যান, তখন আমাকে প্ল্যান্টে কাজ করতে হতো। কখনও কখনও আমাদের সাক্ষাতের সময় এরকমটা হতো। যদিও আমি অংশগ্রহণ করেছি, আমি ক্ষুব্ধ বোধ করেছি। আমি অন্তরে অপরাধ বোধে ভুগেছি। আমি ভাবতাম টাকা রোজগারের কারণে আমি কীভাবে নিজেকে অসুস্থ করে ফেলেছি। ডাক্তার আমাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। ঈশ্বরই আমাকে রক্ষা করেছিলেন যখন আমি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে ছিলাম। কিন্তু আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে পারিনি এবং তাঁর ভালোবাসার প্রতিদান দিতে পারিনি। আমি অনুভব করেছি যে আমি ঈশ্বরের কাছে ঋণী। প্রভু যীশু কী বলেছেন আমি তা নিয়ে ভেবেছিলাম: “কেউ যদি সমগ্র জগতের অধিকার লাভ করেও প্রাণ হারায় তবে তার কি লাভ? এমন কী জিনিস আছে যার বিনিময়ে মানুষ তার প্রাণ ফিরে পেতে পারে?” (মথি ১৬:২৬)। এবং ১ তিমোথির ৬:৮ এ বলা আছে: “যদি আমাদের অন্নবস্ত্রের সংস্থান থাকে তাহলে তাই-ই যথেষ্ট।” বেশি টাকা রোজগার করে লাভ কী, যদি রোজগার করতে গিয়ে আপনি আপনার জীবন হারান? আমি কয়লা প্ল্যান্ট ভাড়া দেওয়ার কথা ভাবলাম। আমি কম টাকা উপার্জন করব, কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য তা যথেষ্ট, এবং আমি তখন ঈশ্বরের উপাসনা করতে পারব এবং আমার দায়িত্ব পালন করতে পারব। কিন্তু আবার এটাও ভাবছিলাম যে কয়লা প্ল্যান্ট তো খুব ভাল কাজ করছে, আর ব্যবসা শুরু করা তো অনেক কঠিন ছিল। তাই এটা ছেড়ে দিতে মন সায় দিচ্ছিল না। আমি ইতস্ততঃ করছিলাম। কী করব বুঝতে পারছিলাম না, তাই আমি ঈশ্বরের সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করলাম।
একদিন, আমি ঈশ্বরের বাক্যে এটি পড়লাম: “কিন্তু এই অবস্থা থেকে নিজেকে মুক্ত করার একটি অত্যন্ত সহজ উপায় আছে, তা হল আগের জীবনযাপন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া; বিদায় জানানো জীবনের পূর্ববর্তী লক্ষ্যগুলিকে; কোনো ব্যক্তির পূর্ববর্তী জীবনধারা, জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি, সাধনা, আকাঙ্ক্ষা এবং আদর্শের সংক্ষিপ্তসার নেওয়া ও বিশ্লেষণ করা; এবং তারপর সেগুলিকে মানুষের জন্য ঈশ্বরের অভিপ্রায় ও চাহিদার সাথে তুলনা করা, এবং দেখা যে সেগুলির মধ্যে কোনগুলি ঈশ্বরের অভিপ্রায় ও চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তাদের মধ্যে কোনগুলি জীবনের সঠিক মূল্যবোধ প্রদান করে, মানুষকে সত্যের বৃহত্তর উপলব্ধির দিকে নিয়ে যায় এবং অনুমতি দেয় মানবতা ও মানুষের বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেঁচে থাকার। মানুষ জীবনে যে বিভিন্ন লক্ষ্য অনুসরণ করে, যে অসংখ্য উপায়ে তার জীবনযাপন করে, সেগুলিকে তুমি যদি বারংবার অনুসন্ধান করো ও সযত্নে ব্যবচ্ছেদ করে দেখো, তুমি দেখতে পাবে তাদের মধ্যে একটিও স্রষ্টার মূল উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, যে উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছিলেন। এগুলির প্রত্যেকটিই মানুষকে সৃষ্টিকর্তার সার্বভৌমত্ব এবং যত্ন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়; এগুলি সব ফাঁদ যা মানুষকে বঞ্চিত করে এবং যা তাদের নরকের দিকে নিয়ে যায়। এটি অনুভব করার পরে, তোমার কাজ হল জীবন সম্পর্কে নিজের পুরানো দৃষ্টিভঙ্গি পরিত্যাগ করা, বিভিন্ন ফাঁদ থেকে দূরে থাকা, ঈশ্বরকে তোমার জীবনের দায়িত্ব এবং তোমার জন্য ব্যবস্থা নিতে দেওয়া; তুমি শুধুমাত্র সচেষ্ট হবে ঈশ্বরের সমন্বয়-সাধন এবং নির্দেশনায় সমর্পিত হতে, ব্যক্তিগত পছন্দ বিহীন জীবনযাপনে এবং ঈশ্বর-উপাসনাকারী ব্যক্তি হতে” (বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৩)। ঈশ্বরের বাক্য পড়ে, আমি জীবনের সেই শয়তানী নিয়মগুলোর কথা ভাবলাম যেগুলোতে নির্ভর করে আমি ধনী হওয়ার কথা ভেবেছিলাম। আমি বিশ্বাস করতাম যে “দুনিয়া টাকায় চলে” এবং “টাকাই সব কিছু নয়, কিন্তু এটা ছাড়া আপনি কিছুই করতে পারবেন না।” ধনী হতে এবং মানুষের সম্মান অর্জনের জন্য, আমাকে অর্থের জন্য সংগ্রাম করতে হবে। সেই দিনগুলো ছিল বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। টাকা কি অতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল? এটা আসলে আমাকে কী দিতে পারত? এটা দিয়ে একটা বাড়ি, একটা গাড়ি কেনা যেত, একটা বস্তুসুখময় জীবন যাপনে এটা সাহায্য করত, এবং আমাকে সম্মান এনে দিত, এবং এটা আমাকে অস্থায়ী দৈহিক সুখ উপভোগে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু এটা আমার হৃদয়ের শূন্যতা পূরণ করতে পারেনি, বা আমার যন্ত্রণা থামাতে পারেনি, এটা আমাকে শান্তি বা আনন্দ দিতে পারেনি, এটা আমার রোগের কষ্টকে শেষ করতে পারেনি, এবং এটা আমার জীবন বাঁচাতে পারেনি। আমি আমার স্থানীয় স্কুলের অধ্যক্ষের কথা ভেবেছিলাম। তাঁর অর্থ এবং মর্যাদা ছিল কিন্তু তিনি ক্যান্সারে মারা গিয়েছিলেন। অর্থ ও পদমর্যাদা তাঁকে কষ্ট ও মৃত্যু থেকে বাঁচতে সাহায্য করতে পারেনি। আমি ধনী ব্যক্তিদের কথা শুনেছি যারা বেদনা এবং শূন্যতার জীবনযাপন করত, এবং এর থেকে মুক্তি পেতে তারা আত্মহত্যা করেছে সেই সাথে যারা মিথ্যা বলেছে, প্রতারণা করেছে, যুদ্ধ করেছে এবং অন্যদের ঠকিয়েছে, তারা সমস্ত মানবতা এবং বিবেক হারিয়েছে, শুধুমাত্র অর্থের জন্য। এই সব গল্প, এবং আমার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি দেখতে পাই যে আর্থিক লাভের পিছনে ছোটাছুটিই মানুষকে আরও দুর্নীতিগ্রস্ত করে তোলে এবং আরও অধঃপতিত করে। এটা তাদের ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং পাপের দিকে নিয়ে যায়। আমি কাজের কথা ভেবেছিলাম, যে কাজ অর্থ বা বস্তুগত আরামের খোঁজ করে না। যে কাজ ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের কাছে সমর্পিত, এবং সমস্ত কিছুর মধ্যে ঈশ্বরের কাজগুলি জানতে চায়, এবং, শেষ পর্যন্ত, ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করে। আমি ভাবলাম সেই কথা, যীশু যখন তাঁকে ডাকলেন, তখন পিতর কীভাবে ঈশ্বরকে অনুসরণ করার জন্য অন্য সব কিছু বাদ দিয়েছিলেন। তিনি ঈশ্বরকে জানতে চেয়েছিলেন, এবং ঈশ্বরকে ভালোবাসতে চেয়েছিলেন, এবং ঈশ্বর তাকে নিখুঁত করেছেন, এবং তিনি একটি অর্থপূর্ণ জীবন যাপন করেছেন। এ থেকে আমি উপলব্ধি করলাম যে ঈশ্বরকে জানা, তাঁর উপাসনা করা, তাঁর বাক্য অনুসারে জীবনযাপন করা এবং তাঁর প্রশংসা অর্জন করা, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। আমার জন্য বিশ্বাস খুঁজে পাওয়া এবং সঠিক পথ খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল। আমি জানতাম যদি আমি সম্পদ এবং পার্থিব আনন্দের পিছনে ছুটতাম, এবং সত্য ও পরিত্রাণের পথ অন্বেষণ করা ছেড়ে দিতাম, তাহলে কতই না বোকামি হতো। এই কথা ভাবতেই আমার হৃদয় সন্দেহমুক্ত হল। আমি আর টাকার দাস হতে চাইনি। আমি সত্য অনুসরণ করার জন্য আরও সময় এবং শক্তি চেয়েছিলাম। এর পরে, আমার স্বামী এবং আমি প্ল্যান্টটি ভাড়া দিয়েছিলাম। আমি নিয়মিত সমাবেশে যোগ দিতে পেরেছি এবং আমার দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি।
দুই বছর পর, আমার স্বামী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মারা যান। তার মৃত্যু আমার জন্য সহ্য করা কঠিন ছিল এবং আমাকে দেখিয়েছিল যে জীবন কতটা নাজুক। আমার স্বামী তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন ছুটোছুটিতে আর অর্থ উপার্জনের চেষ্টায়। তাঁর রক্তচাপ ২০০ এর উপরে ছিল, কিন্তু তারপরেও তিনি কাজ চালিয়ে যেতেন। যখন তাঁর নিতম্বের হাড় ভেঙে গিয়েছিল তিনি পুরোপুরি সুস্থ্ হওয়ার আগেই কাজে ফিরে গিয়েছিলেন। এবং আমি তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও তিনি বিশ্রাম নিতেন না। তিনিও টাকার দাস ছিলেন। তিনি সারা জীবন শয়তান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং ক্ষতিগ্রস্থ ছিলেন। মৃত্যুর মুখেও তিনি হাল ছাড়েননি। তিনি অর্থ উপার্জন করতে এবং ভালো জীবনযাপন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তাঁর জীবন হারিয়েছিলেন। খ্যাতি এবং সম্পদ তাঁকে বাঁচাতে পারেনি বা তাঁর কষ্ট কমাতে পারেনি বা মৃত্যুকে ফাঁকি দিতে তাঁকে সাহায্য করতে পারেনি। ঈশ্বর যেমনটা বলেছেন: “অর্থ ও খ্যাতির পিছনে ধাওয়া করে মানুষ জীবন কাটায়; এই খড়কুটোগুলিকে আঁকড়ে ধরে, মনে করে তাদের সহায়তার একমাত্র মাধ্যম এইগুলিই, যেন এইগুলি পেলেই তারা বেঁচে থাকতে সক্ষম হবে, রেহাই পাবে মৃত্যু থেকে। কিন্তু যখন তারা মৃত্যুমুখে একমাত্র তখনই তারা বুঝতে পারে যে তাদের থেকে এই জিনিসগুলি কতটা দূরে, মৃত্যুর মুখে তারা কতটা দুর্বল, কত সহজে ভেঙ্গে পড়ে, তারা কত একাকী এবং অসহায়, কোথাও যাওয়ার ঠাঁই নেই। তারা উপলব্ধি করে যে অর্থ বা খ্যাতি দিয়ে জীবন কেনা যায় না, কোনো ব্যক্তি যতই ধনী বা তার অবস্থান যতই উচ্চ হোক না কেন, মৃত্যুর মুখে সবাই সমান দরিদ্র ও নগণ্য। তারা বুঝতে পারে যে অর্থ জীবন কিনতে পারে না, মৃত্যুকে মুছে ফেলতে পারে না খ্যাতি, অর্থ বা খ্যাতি কোনও ব্যক্তির জীবন এক মিনিট, এক সেকেন্ডও দীর্ঘায়িত করতে পারে না” (বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৩)। যখন পিছনে ফিরে তাকাই যে কীভাবে আমি আমার জীবনের বেশিরভাগ সময় ছুটে বেড়িয়েছি, অর্থ উপার্জন করার চেষ্টা করেছি, আমি সম্মান এবং প্রশংসা পেয়েছি, কিন্তু আমি শয়তান দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু ঈশ্বর আমাকে উদ্ধার করেছেন। তিনি আমাকে অর্থের ঝড় থেকে বাঁচিয়েছেন এবং আমার জীবনের দিক পরিবর্তন করেছেন। এখন, যেহেতু আমি আমার সমস্ত শক্তি সত্যের অনুসরণে এবং আমার কর্তব্য পালনে নিয়োজিত করি, তাই আমি মুক্ত এবং শান্ত অনুভব করি। এটা এমন কিছু যা টাকা দিয়ে কেনা যায় না। আমাকে উদ্ধার করার জন্য আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ!
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।