আনুগত্যের মাধ্যমে প্রাপ্ত শিক্ষা

04-09-2023

গত বছর সেপ্টেম্বরের একদিন, নেতা আমাকে নতুন একটা গির্জার তদারকি করার দায়িত্ব দেন, আর আমার গির্জার তদারকির ভার দেন ব্রাদার এরিককে। যখন তিনি এটা বলেন, আমার দায়িত্বটা নেওয়ার মোটেও ইচ্ছা ছিল না। ভেবেছিলাম: নতুন গির্জাটায় সব ধরনের সমস্যা আছে আর এর প্রকল্পগুলোর অবস্থাও খারাপ, নেতা-কর্মীদের সংখ্যাও প্রয়োজনের চেয়ে কম। তারা পারে না এমন কাজও অনেক, হয় শেখাতে হবে নয় আমাকেই করতে হবে। ভেবেছিলাম গির্জাটার তদারকি করা হবে খুবই ঝামেলার। শুধু যে অনেক কষ্ট আর ত্যাগ স্বীকার করতে হত তা-ই নয়, সাফল্যেরও নিশ্চয়তা ছিল না। নতুন গির্জাটা আমি এখন যেটার তত্ত্বাবধান করছি সেটার মতো একেবারেই নয়, এখনকারটা সুসমাচারের কাজে ভালো ফল পাচ্ছে নতুন সদস্য স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে, আর আমার কিছু কিছু ভার ভাগ করে নিতে পারছে, তাই আমায় বেশি ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে না। যতই ভাবছিলাম, ততই নতুন গির্জায় যেতে চাইছিলাম না। তাই নেতাকে বললাম: “এরিক সদ্য কাজ শুরু করেছে, এখনো একা এই দায়িত্ব নিতে তৈরি নয়। আমি চলে গেলে, সে হয়তো এখানে সব কাজ সামলাতে পারবে না, তাতে গির্জার কাজ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। সেহেতু, আমি কি এখানেই থাকতে পারি?” নেতা বললেন, এরিক কাজে খুবই পোক্ত, তার উন্নতিরও সুযোগ আছে। নেতা খতিয়ে চিন্তা করে সিদ্ধান্তে আসেন যে আমার যাওয়াই বেশি ভালো হবে। শুনে বুঝলাম নেতা মনস্থির করে ফেলেছেন, আমাকে মেনে নিতেই হবে। কিন্তু পরে, যখনই নতুন গির্জার কথা ভাবছিলাম, আমার দুশ্চিন্তা এবং উদ্বেগ হচ্ছিল। জানতাম আমি খারাপ অবস্থায় আছি, নিজের দায়িত্বে অবহেলা করছি, তাই ঈশ্বরে প্রার্থনা করি, যাতে আমায় তিনি নিজেকে সঁপে দিয়ে পরিস্থিতি অনুভব করার পথ দেখাতে।

পরে, ঈশ্বরের বাক্যের এই অনুচ্ছেদটা পড়ি: “দায়িত্ব পালনের সময় মানুষ সবসময়েই হালকা কাজকেই বেছে নেয়, যা তাদের পরিশ্রান্ত করবে না, যা দুর্যোগের মধ্যে বাইরে যাওয়ার সাথে যুক্ত নয়। একে বলে কঠিন কাজগুলো এড়িয়ে গিয়ে সহজগুলোকে বেছে নেওয়া, এবং এ হল দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্যের লোভের বহিঃপ্রকাশ। আর কী? (দায়িত্ব যদি একটু কঠিন হয়, সামান্য পরিশ্রমসাধ্য হয়, তার জন্য মূল্যপ্রদান করতে হয়, তাহলে সবসময় অভিযোগ করা।) (অন্নবস্ত্রের চিন্তায় আবিষ্ট থাকা, দৈহিক ইচ্ছাকে প্রশ্রয় দেওয়া।) এগুলো সবই দেহের স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি লোভের বহিঃপ্রকাশ। এরকম কোনো মানুষ যখন দেখে যে কোনো একটা কাজ বেশ পরিশ্রমসাধ্য বা বিপজ্জনক, তখন সে অন্যের উপর সেটা ঠেলে দেয়; সে নিজে শুধু ব্যস্ততাহীনভাবে করা যায় এমন কাজকর্মই করে, আর কেন সে সেই কাজটা করতে পারবে না, তা নিয়ে অজুহাত তৈরী করে, বলে যে তার যোগ্যতা কম, সেই কাজটা করার উপযুক্ত দক্ষতা তার নেই, সেটা তার সাধ্যের চেয়ে বেশি—অথচ আসল কারণ হল, সে দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্যের লোভে লোভী। … আবার এমনও হয় যখন মানুষ তাদের দায়িত্ব পালনের সময় সর্বদা শুধু অভিযোগ করে, তাতে উদ্যম প্রয়োগ করতে চায় না, সামান্য বিরতি পেলেই বিশ্রাম নেয়, অলসভাবে গল্পগুজব করে, অবসরযাপন ও বিনোদনে অংশগ্রহণ করে। এবং যখন কাজ গতি লাভ করে আর তাদের জীবনের ছন্দ ভেঙে দেয়, তারা অখুশি ও অসন্তুষ্ট হয়। তারা নালিশ করে আর অভিযোগ জানায়, এবং দায়িত্ব পালনে অযত্নবান ও দায়সারা হয়ে পড়ে। এটা দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্যেরই লোভ, তাই নয় কি? … গির্জার কাজ যতই অবকাশবিহীন হোক বা তাদের দায়িত্ব যতই কর্মব্যস্ত হোক, তাদের জীবনযাপনের বাঁধা গৎ আর স্বাভাবিক পরিস্থিতি কখনো ব্যাহত হয় না। তারা তাদের দেহগত জীবনের তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়েও কখনোই উদাসীন নয়, সেগুলোকে নিখুঁতভাবে নির্বাহ করে, বেশ কঠোরভাবে ও গুরুত্বের সাথে। কিন্তু ঈশ্বরের গৃহের কাজ সম্পাদনের সময়, তা যত বড় বিষয়ই হোক, এমনকি তা যদি ব্রাদার-সিস্টারদের নিরাপত্তার সাথেও জড়িত হয়, সেই কাজ তারা অযত্নের সাথে পরিচালনা করে। এমনকি ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্ব বা তাদের পালনীয় কর্তব্যের সাথে জড়িত বিষয়গুলোতেও তারা যত্ন নেয় না। তারা কোনো দায়িত্বই নেয় না। এটা দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্যের লোভ, তাই নয় কি? যারা দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্যের লোভ করে তারা কি কোনো দায়িত্ব পালন করার যোগ্য? তাদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে কথা বলো, মূল্যপ্রদান ও কষ্টভোগের সম্পর্কে কথা বলো, অমনি তারা মাথা নাড়াতে থাকে: তাদের অনেক অনেক সমস্যা থাকবে, তারা অভিযোগে পরিপূর্ণ, সবকিছুর বিষয়েই তারা নেতিবাচক। এরকম মানুষেরা একেবারেই অকাজের, তারা তাদের দায়িত্ব পালনের যোগ্য নয়, তাদের বহিষ্কার করা উচিত(বাক্য, খণ্ড ৫, নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের দায়িত্বসমূহ)। অনুচ্ছেদটা দেখায় যারা অবসর আকাঙ্ক্ষা করে তারা কীভাবে কর্তব্যে উদাসীন হয়। তারা সর্বদা হালকা কাজ বেছে নেয় আর অভিযোগ করতে থাকে। সবসময় সহজ কর্তব্য ঘাড়ে নেয় যাতে বেশি দায়িত্ব থাকে না, আর যে সব কর্তব্যে কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, সেগুলো প্রত্যাখ্যান করার জন্য যথেষ্ট অজুহাত থাকে তাদের। ঈশ্বর বলেন, এ ধরনের লোকেরা দায়িত্ব পালনের যোগ্য নয়, তাদের তিনি ঘৃণা করেন। ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে ভেবে খুব অপরাধবোধ হলো। ঈশ্বর ঠিক আমার অবস্থাটাই অনাবৃত করেছেন। নেতা আমাকে নতুন গির্জার তদারকির দায়িত্ব দিলে, আমার একদমই ইচ্ছা ছিল না, যখন জানলাম গির্জাটার কাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে, ফলাফল ভালো নয়, আর নেতা-কর্মীরও অভাব রয়েছে। কাজটি ভালোভাবে করতে চাইলে অনেক কষ্ট ও প্রচেষ্টা করতে হবে। আর আমার আগের গির্জায়, কেবল সুসমাচার প্রচারে ভালো ফলই পাচ্ছিলাম না, আমাদের প্রয়োজনীয় নেতা-কর্মীও ছিল, তাই কাজ বণ্টন করাও সহজ ছিল। দুটো গির্জার তুলনা করলে, নতুনটার দায়িত্ব নেওয়ার বদলে আগেরটাতেই থাকতে চেয়েছিলাম। যখন নেতা আমার সাথে আলোচনা করেন, দায়িত্ব এড়াতে এমনকি একটা অজুহাতও বানিয়েছিলাম, বলি যে এরিক মাঝারি ক্ষমতার, তক্ষুনি একা কাজ সামলাতে পারবে না। তাই আমি চলে গেলে গির্জার কাজে ক্ষতি হবে। বাইরে থেকে, মনে হচ্ছিল যেন আমি গুরুদায়িত্ব বহন করছি, আর গির্জার ভালোর জন্যই এসব কথা বলেছিলাম। কিন্তু আসলে, আমি নতুন গির্জার তদারকির কাজ এড়াতে অজুহাত খাড়া করছিলাম। দৈহিক আরাম চাইছিলাম, কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করতে চাইনি। কেবল নিজের দৈহিক ইচ্ছার কথা ভেবে সবচেয়ে সহজ ও আয়েশি কাজ বেছে নিয়েছিলাম। নিজের দায়িত্ব নিয়ে বাছবিচার করছিলাম, ঈশ্বরের বিরুদ্ধে ফন্দিবাজ ও চতুর হচ্ছিলাম, দায়ভার গ্রহণে অনিচ্ছুক ছিলাম, অবিশ্বাসীর মতোই প্রতারণা আর ছলচাতুরি করছিলাম। গির্জা বছরের পর বছর আমাকে প্রস্তুত করেছে, কিন্তু যখন নতুন একটি গির্জায় সমস্যা হল, সাহায্যের প্রয়োজন হল, তখনও যদি দৈহিক সুখ মেটাতাম আর দরকারি কাজটা না করতাম, গির্জার কাজ প্রভাবিত হত, নতুন সদস্যদের প্রস্তুত করা হত না, সুসমাচারের কাজেও দেরি হতেই থাকতো। যোগ্যতায় ও কাজের ফলাফলে হয়তো এরিক শ্রেষ্ঠ নয়, আর তখনই হয়তো সে সব কাজ একা একা সামলাতে পারতে না, কিন্তু আমার পুরনো গির্জাটা আরো স্থিতিশীল ছিল আর এরিকও সেটাকে ভালোই চিনত। আমি প্রয়োজনের সময় সমর্থন করলে, গির্জার কাজে অতটাও প্রভাব পরত না। সব মিলিয়ে, নেতা আমায় নতুন গির্জার দায়িত্ব দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন। অনবরত দৈহিক সুখ মিটিয়ে, গির্জার কাজ রক্ষা না করে, ঈশ্বরকে বিরক্ত করি, আমি তাঁর আস্থার যোগ্য ছিলাম না। এটা বুঝতে পেরে, নীরবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি: “হে ঈশ্বর, আমি এই পরিবেশে আত্মসমর্পণে প্রস্তুত। নেতা আমাকে নতুন গির্জার তদারকির দায়িত্ব দিয়েছেন সর্বস্ব দিয়ে আমি এই দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত। এমন স্বার্থপর আর ঘৃণ্য অবস্থায় আমি আর থাকতে পারব না।”

এর পরে, ঈশ্বরের বাক্যের আরেকটি অনুচ্ছেদ পড়ি। “ঈশ্বর মানুষকে যা কিছু করতে বলেন, এবং ঈশ্বরের গৃহের যাবতীয় নানান প্রকারের কাজ—এই সমস্তকিছুই মানুষের করণীয়, এগুলি সবই মানুষের কর্তব্য বলে বিবেচিত হয়। তারা যে কাজই করুক না কেন, এই দায়িত্বটিই তাদের পালন করা উচিত। কর্তব্যসমূহের পরিসর খুব বিস্তৃত, এবং তা নানাবিধ ক্ষেত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট—কিন্তু যে কর্তব্যই তুমি সম্পাদন করো না কেন, সহজ কথায় সেটি তোমার বাধ্যবাধকতা, সেটি এমন এক বিষয় যা তোমার করণীয়। যতক্ষণ তুমি এটি ভালোভাবে সম্পন্ন করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করবে, ততক্ষণ ঈশ্বর তোমার প্রশংসা করবেন, এবং তিনি তোমায় একজন প্রকৃত ঈশ্বর-বিশ্বাসী বলে স্বীকৃতি দেবেন। তুমি যে-ই হও না কেন, তুমি যদি সবসময় তোমার দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে বা তা থেকে আত্মগোপন করে থাকতে চেষ্টা করো, তাহলে একটা সমস্যা রয়েছে: খুব মৃদুভাবে বলা যায়, তুমি অত্যন্ত অলস, অত্যন্ত শঠ, তুমি কর্মবিমুখ, তুমি অবসর পছন্দ করো এবং শ্রম ঘৃণা করো; আরো গুরুতরভাবে বললে বলতে হয়, তুমি তোমার দায়িত্ব পালনে অনিচ্ছুক, তোমার কোনো অঙ্গীকার নেই, কোনো আনুগত্য নেই। এই গৌণ কাজেও তুমি যদি এমনকি প্রচেষ্টাটুকু প্রয়োগ করতে না পারো, তাহলে তুমি কী করতে পারো? যথাযথভাবে কোন কাজ করতে তুমি সক্ষম? একজন মানুষ যদি সত্যিই সমর্পিতচিত্ত হয়, এবং কর্তব্যের প্রতি তার যদি একটা দায়িত্ববোধ থাকে, তাহলে তাকে যে কাজ করতে বলা হবে, যতক্ষণ ঈশ্বর তা করার দাবি রাখছেন, এবং যতক্ষণ ঈশ্বরের গৃহের জন্য তা করা আবশ্যক, ততক্ষণ নির্বিকল্পভাবে সে তা-ই করবে। যা সে করতে সক্ষম ও যা তার করনীয় এমন যেকোনো কর্মভার গ্রহণ করে তা সম্পন্ন করাটা কি একজন মানুষের দায়িত্ব পালনের অন্যতম নীতি নয়? (হ্যাঁ।)” (বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, দশম পরিচ্ছেদ: তারা সত্যকে ঘৃণা করে, প্রকাশ্যে নীতির লঙ্ঘন করে, এবং ইশ্বরের গৃহের আয়োজনকে উপেক্ষা করে (চতুর্থ অংশ))। ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে আমি বুঝতে পারি গির্জা আমাকে যে দায়িত্বই দিক, সহজ হোক বা কঠিন, সেটা আমার দায়িত্ব, তা আমাকে পালন করতে হবে। ফল পেতে নিজের সেরাটা দিতে আর কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমার এই বিবেকবোধ ও চেতনাই থাকা উচিত। নেতা আমাকে নতুন গির্জা তদারকির দায়িত্ব দিয়েছিলেন, সেখানকার কাজে কিছু সমস্যা থাকলেও, আমি সর্বদা দৈহিক সুখের কথা ভেবে বাছবিচার করতে পারি না। কাজ সম্পন্ন করতে আমায় ঈশ্বরের উপর নির্ভর করতে হতো, গির্জার কাজে গতি আনতে এবং নিজের দায়িত্ব পালন করতে হতো। এটাই আমার করণীয় ছিল। এর পরে, শুরু করি গির্জার কর্মীদের আর কাজের পরিস্থিতির খোঁজ নেওয়া, নীতির উপর আলোচনা ও তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। পরে, বুঝতে পারি সুসমাচার প্রচারে সমস্যার কারণ সিঞ্চনকারীদের তদারকিতে ঢিলেমি। তারা আলোচনা করে ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজের অনুসন্ধানকারীদের ধর্মীয় পূর্বধারণাগুলো শুধরে দিত না, কাজ এগিয়ে নিয়ে যেত না। তাই তাদের ভুল ও অনবধানের উপর আমি সংক্ষেপে আলোচনা করি, প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের সাহায্য, ছাঁটাই ও মোকাবিলা করি যতক্ষণ না সব সমস্যার সমাধান হয়। ধীরে ধীরে, ব্রাদার-সিস্টাররা তাদের কর্তব্যে উন্নতি করতে থাকে, এবং গির্জার কাজও গতি পেতে শুরু করে। এভাবে কাজ করে আমি সত্যিই আত্মবিশ্বাস ও স্বস্তি বোধ করি। ভেবেছিলাম এত কিছুর ভেতর দিয়ে গিয়ে, আমার মধ্যে কিছু পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু তার পরেই, এমন কিছু ঘটে যা আমাকে আবার অনাবৃত করল।

সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে, নেতা বলেন তিনি আমাকে আরেকটি নতুন গির্জার তদারকির দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। শুনে ভীষণ রেগে গেলাম: “ওই গির্জার তদারকি করা এখনকারটার চেয়েও কঠিন হবে। সেখানে নেতা-কর্মীরই অভাব তো রয়েছেই, যারা আছে তারাও সবাই দায়িত্বে নতুন। গির্জাটার কাজ উন্নত করতে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে প্রচুর কষ্ট করতে হবে।” আমি আসলেই কাজটা নিতে চাইনি। না পেরে নেতাকে বলেই ফেলি, “কেন আমাকে সবসময় নতুন গির্জার তত্ত্বাবধান করতে হয়? আমি যে গির্জার তত্ত্বাবধান করছি তা সবে উন্নতি করতে শুরু করেছে। আপনি কি অন্য কোনো ব্রাদার বা সিস্টারকে নতুন গির্জায় পাঠাতে পারেন না?” বলার সাথে সাথেই, বুঝতে পারলাম আমি আবার দায়িত্ব এড়াবার চেষ্টা করছি। আমি তখনও চাইছি দৈহিক সুখ পেতে, ত্যাগ স্বীকার করতে নয়। নিজেকে বলি: “ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই আমার এই অবস্থা, তাই উপলব্ধি যদি না-ও করি, আগে সমর্পিত হতে হবে।” ফোন কেটে দেয়ার পর খুব খারাপ লাগছিল। কেন প্রতিবার নতুন দায়িত্ব পেলে, ঈশ্বরের ইচ্ছায় মনোযোগ না দিয়ে, তাঁর সমন্বয়সাধন ও আয়োজনের কাছে নতিস্বীকার না করে, আমি শুধুই আয়েশি জীবন যাপনের কথা ভাবি? যত ভাবছিলাম তত খারাপ লাগছিল। তাই, ঈশ্বরকে প্রার্থনায় বলি আলোকিত করে পথ দেখাতে, যাতে আত্মচিন্তন করে নিজেকে জানতে পারি।

পরে, আমি ঈশ্বরের বাক্যের দুটি অনুচ্ছেদ পড়ি যা আমার উপর গভীর প্রভাব ফেলে। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “যতক্ষণ মানুষ ঈশ্বরের কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করছে না এবং সত্যকে উপলব্ধি করছে না, ততক্ষণ শয়তানের প্রকৃতিই তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে এবং ভিতর থেকে তাদের উপর আধিপত্য করে। এই প্রকৃতি সঙ্গে করে সুনির্দিষ্টভাবে কী নিয়ে আসে? যেমন ধরো, তুমি স্বার্থপর কেন? তুমি কেন নিজের অবস্থানকে সুরক্ষিত করো? এত জোরালো আবেগ কেন রয়েছে তোমার? ঐসব অধার্মিক বিষয় তুমি উপভোগ করো কেন? সেই মন্দত্বগুলোকে তুমি পছন্দ করো কেন? এই ধরনের জিনিসগুলোর প্রতি তোমার অনুরাগের ভিত্তি কী? এগুলো কোথা থেকে আসে? এসব গ্রহণ করে তুমি এত আনন্দ পাও কেন? এতক্ষণে তোমরা সকলেই এই উপলব্ধিতে এসে পৌঁছেছ যে এই সবকিছুর নেপথ্যে মূল কারণ হিসাবে রয়েছে মানুষের অভ্যন্তরে থাকা শয়তানের বিষ। তাহলে শয়তানের বিষ কী? এটা কীভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে? উদাহরণস্বরূপ, যদি তুমি জিজ্ঞাসা করো, ‘মানুষের কীভাবে জীবনযাপন করা উচিত? কিসের জন্য তাদের বাঁচা উচিত?’ লোকেরা উত্তর দেবে, ‘প্রত্যেক মানুষই নিজের জন্য এবং শয়তান সবচেয়ে পিছনের জনকে দখল করে।’ এই একটা বাক্যই সমস্যার একেবারে মূল বিষয়টা ব্যক্ত করে। শয়তানের দর্শন এবং যুক্তিই মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে। মানুষ যা কিছুই অন্বেষণ করুক না কেন, তা তারা নিজেদের জন্যই করে—আর তাই, তারা শুধুমাত্র নিজেদের জন্যই বাঁচে। ‘প্রত্যেক মানুষই নিজের জন্য এবং শয়তান সবচেয়ে পিছনের জনকে দখল করে’—এটাই হল মানুষের জীবনের দর্শন, আর এটা মানুষের প্রকৃতিকেও উপস্থাপিত করে। এই বাক্যগুলো ইতিমধ্যেই হয়ে উঠেছে ভ্রষ্ট মানবজাতির প্রকৃতি, ভ্রষ্ট মানবজাতির শয়তানোচিত প্রকৃতির আসল প্রতিকৃতি, এবং এই শয়তানোচিত প্রকৃতি ইতিমধ্যেই হয়ে উঠেছে ভ্রষ্ট মানবজাতির অস্তিত্বের ভিত্তি; বহু সহস্র বছর ধরে, ভ্রষ্ট মানবজাতি শয়তানের এই বিষের মধ্যেই জীবনযাপন করেছে, একেবারে আজকের দিন পর্যন্ত(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, পিতরের পথে চলার উপায়)। “তাদের আদর্শবাক্য হল হল, ‘জীবন শুধু খাদ্যগ্রহণ আর বেশভূষা-সজ্জিত হওয়ার জন্য’, ‘প্রতিটা মুহূর্তকে উপভোগ করুন, কারণ জীবন সংক্ষিপ্ত’, এবং ‘আজকের সুখ আজই ভোগ করে নিন, আগামীকালের জন্য দুশ্চিন্তা আগামীকাল করবেন’। প্রতিটা দিনকে তারা সেইদিনটার মতো করে উপভোগ করে, যত বেশি সম্ভব আনন্দ উপভোগ করে, ভবিষ্যতের কোনো চিন্তা করে না, একথা তো বিবেচনাই করে না যে একজন নেতার কী দায়িত্ব পূর্ণ করা উচিত আর কী কাজ সম্পাদন করা উচিত। সমগ্র কাজের একটা বিষয় হিসাবে তারা আক্ষরিক মতবাদের কিছু শব্দ ও বাক্যাংশ তোতাপাখির মতো আউড়ে চলে, আর দেখানোর জন্য সামান্যকিছু কাজ করে, কিন্তু প্রকৃত কোনো কাজ তারা করে না। গির্জার কোনো সমস্যাকে সম্পূর্ণভাবে সমাধান করার জন্য তারা সেটার গভীরে প্রবেশ করতে চায় না। এরকম অগভীরভাবে কাজ করার অর্থ কী? এ কি প্রতারণা নয়? এই ধরনের নকল নেতাদের উপরে কি কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করা যায়? এরা কি ঈশ্বরের গৃহের নেতা ও কর্মী নির্বাচনের নীতি ও শর্তের সাথে সঙ্গত? (না।) এই মানুষদের কোনো বিবেক বা চেতনা নেই, এরা সম্পূর্ণভাবে দায়িত্ববোধবর্জিত, অথচ তবুও এরা গির্জার নেতা হিসাবে স্বীকৃত আধিকারিকের পদে থেকে কাজ করতে চায়—এরা এত নির্লজ্জ কেন? দায়িত্ববোধ আছে এমন কিছু কিছু মানুষ নিম্ন যোগ্যতাসম্পন্ন, তারা নেতা হতে পারে না—আর যাদের দায়িত্ববোধ নেই সেই মনুষ্যরূপ আবর্জনাদের কথা তো বলারই অযোগ্য; নেতা হওয়ার যোগ্যতা তাদের এমনকি আরোই কম(বাক্য, খণ্ড ৫, নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের দায়িত্বসমূহ)। ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে ভাবনাচিন্তা করে বুঝলাম প্রতিবার আমাকে নতুন দায়িত্ব দিলেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছিলাম, আর কোনো কষ্ট করতে ও ভার বহন করতে চাচ্ছিলাম না, কারণ আমি খুবই অলস ছিলাম, আয়েশের লোভ করতাম। ছোটবেলা থেকেই, আমি শয়তানের দ্বারা প্রভাবিত হই, তার ছাঁচে বেড়ে উঠি, “প্রত্যেক মানুষই নিজের জন্য এবং শয়তান সবচেয়ে পিছনের জনকে দখল করে” “আজকের দিনটাকে উপভোগ করো, আগামীকালের চিন্তা আগামীতে করো” এসব শয়তানসুলভ দর্শন মেনে জীবনযাপন করি। জীবনদর্শন ও মূল্যবোধ বিকৃত ও বিপথগামী হয়ে গেছিল। ভাবতাম যতক্ষণ বেঁচে আছি উপভোগ করে নেওয়া উচিত, নিজেকে ক্লান্ত করে তোলার দরকার নেই। উচিত নিজেদের যত্ন নেওয়া, নিজেদের সাথে ভালো আচরণ করা। বিশ্বাসী হওয়ার আগে, আমি শুধু গতানুগতিকভাবে কাজ সম্পন্ন করেই সন্তুষ্ট থাকতাম, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কিছুই করতাম না। মাঝে মাঝে যখন অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হতো, সেটাকে ভীষণ চাপের আর ক্লান্তিকর মনে করতাম, ছুটি চেয়ে বসতাম। বিশ্বাসী হওয়ার পরেও, আমি সেই একই জিনিস চাইতাম। কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার এড়ানোর চেষ্টা করতাম, নিরুদ্বেগের ব্যস্ততাহীন দায়িত্ব চাইতাম যেটাতে কোনো সমস্যা নেই। তাই যখন নেতা আমাকে এই দুই গির্জা তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেন, যেখানে অনেক সমস্যা ছিল, অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করতে হতো, আমি তা করতে চাইনি, অন্য কাউকে দিয়ে দিতে চেয়েছি। কিন্তু, আসলে জানতাম, অভিজ্ঞতা থাকার দরুন সমস্যাপূর্ণ গির্জার তদারকি আমারই করা উচিত ছিল। আমি একেবারেই চাইনি দৈহিক ইচ্ছা ত্যাগ করতে এবং গুরুভার বহন করতে। ঈশ্বরের কৃপায় গির্জার তত্ত্বাবধানের সুযোগ পেয়েছিলাম, আমার উচিত ছিল দায়িত্ব পালন করে ঈশ্বরের প্রেমের প্রতিদান দেওয়া। কিন্তু নিজের দায়িত্বের সুষ্ঠু পালন না করে সবসময় চাইতাম ঢিলে দিতে, আয়েশ করতে। এসব শয়তানোচিত ধারণায় জীবনযাপন করছিলাম, স্বার্থপর ও ঘৃণ্য ছিলাম, একটুও চারিত্র বা সততা ছিল না। এটা উপলব্ধি করে, মনে হল এভাবে চলতে থাকাটা বিপজ্জনক হবে। তাই ঈশ্বরকে প্রার্থনা করি, দায়িত্বের প্রতি মনোভাব পরিবর্তনে ইচ্ছুক হই।

পরে, এই অনুচ্ছেদটা পড়ি। “বস্তুত, সকল কর্তব্যের সঙ্গেই কিছু কষ্টভোগ সংশ্লিষ্ট থাকে। কায়িক পরিশ্রমের সঙ্গে জড়িত থাকে কায়িক কষ্টভোগ, এবং মানসিক পরিশ্রমের সঙ্গে জড়িত থাকে মানসিক কষ্টভোগ; উভয়েরই নিজস্ব সমস্যা রয়েছে। সবকিছুই বলার থেকে করে ওঠাটা কঠিন। মানুষ যখন সত্যিই কাজ করে, একদিক থেকে চিন্তা করলে, তোমাকে অবশ্যই তাদের চরিত্রের দিকটি লক্ষ্য করতে হবে, এবং অন্য দিক থেকে চিন্তা করলে, তোমাকে অবশ্যই দেখতে হবে তারা সত্যপ্রেমী কিনা। প্রথমে মানুষের চরিত্রের বিষয়ে আলোচনা করা যাক। একজন মানুষ যদি উন্নত চরিত্রের অধিকারী হয়, তাহলে তারা সবকিছুর ইতিবাচক দিকটি দেখে, এবং ইতিবাচক পরিপ্রেক্ষিত থেকে ও সত্যের উপর ভিত্তি করে তারা এই বিষয়গুলিকে গ্রহণ ও উপলব্ধি করতে সক্ষম; অর্থাৎ, তাদের হৃদয়, চরিত্র, এবং আত্মা ধার্মিক—এ-ই হল চরিত্রের পরিপ্রেক্ষিত থেকে আলোচনা। এবার আরেকটি দিক বিষয়ে আলোচনা করা যাক—কেউ সত্যপ্রেমী না সত্যপ্রেমী নয়। সত্যপ্রেম বিষয়টি সত্যকে গ্রহণ করার সামর্থ্যকে নির্দেশ করে, যার অর্থ, ঈশ্বরের বাক্যগুলিকে তুমি হৃদয়ঙ্গম করো বা না করো, এবং ঈশ্বরের ইচ্ছাকে তুমি উপলব্ধি করো বা না করো, কাজটির সম্পর্কে, যে দায়িত্ব তোমার পালন করার কথা সেটির সম্পর্কে, তোমার দৃষ্টিভঙ্গি, অভিমত, ও পরিপ্রেক্ষিত সত্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হোক বা না হোক, যদি এরপরেও তুমি তা ঈশ্বরের কাছ থেকে গ্রহণ করতে সক্ষম হও, এবং আজ্ঞাকারী ও আন্তরিক হও, তাহলে তা-ই যথেষ্ট, তা-ই তোমায় তোমার কর্তব্য সম্পাদনের উপযুক্ত গুণসম্পন্ন করে তোলে, এ-ই হল ন্যূনতম আবশ্যিক শর্ত। তুমি যদি অনুগত ও আন্তরিক হও, তাহলে কোনো কর্ম সম্পাদনের সময় তুমি অমনোযোগী হও না ও দায়সারা ভাবে কাজ করো না, এবং কাজে শিথিল হওয়ার উপায় সন্ধান করো না, বরং কাজটির মধ্যে তোমার সমস্ত মনপ্রাণ নিবেদন করো। অবস্থা ভ্রান্ত হলে নেতিবাচকতার সৃষ্টি হয়, যার ফলে মানুষ তাদের কর্মোদ্যম হারিয়ে ফেলে, আর তাই তারা অমনোযোগী ও যত্নহীন হয়ে পড়ে। তারা অন্তরে সম্যকরূপে অবগত যে, তাদের অবস্থা সঠিক নয়, কিন্তু তবু সত্যান্বেষণের দ্বারা তা সংশোধিত করার চেষ্টা করে না। এহেন মানুষের কোনো সত্যপ্রেম নেই, এবং তাদের কর্তব্য সম্পাদনের ব্যাপারে তারা কেবল যৎসামান্যই আগ্রহী; কোনো প্রচেষ্টা নিতে বা কোনো কষ্টভোগ সহ্য করতে তারা অনিচ্ছুক, এবং তারা সবসময় কাজে ঢিলে দেওয়ার উপায় খুঁজছে। বস্তুত, ঈশ্বর ইতিমধ্যেই এই সবকিছুই দেখেছেন—তাহলে এই লোকগুলির প্রতি তিনি কোনো মনোযোগ দেন না কেন? ঈশ্বর কেবল তাঁর মনোনীত মানুষদের জেগে ওঠার জন্য এবং তারা যথার্থই কী প্রকারের মানুষ তা চিহ্নিত করার জন্য অপেক্ষা করছেন, তারা অনাবৃত হওয়ার পর তাদের বহিষ্কৃত করার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু, এহেন মানুষজন এখনো মনে মনে ভাবে, ‘আমি কতটা চালাক দেখো। আমরা একই খাদ্য গ্রহণ করি, কিন্তু কাজ করার পর তুমি সম্পূর্ণ অবসন্ন হয়ে পড়েছ। আমি কিন্তু আদৌ পরিশ্রান্ত নই। আমি হলাম বুদ্ধিমান; আর যারা আসল কাজটা করে তারা মূর্খ।’ সৎ মানুষদের তাদের এই নজরে দেখাটা কি সমীচীন? সমীচীন নয়। বস্তুত, যে মানুষগুলি প্রকৃত কাজটি করে, তাদের দায়িত্ব নির্বাহের সময় তারা সত্যের অনুশীলন ও ঈশ্বরের পরিতোষ বিধান করছে, আর তাই তারা সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষ। কীসের দরুন তারা বুদ্ধিমান? তারা বলে থাকে, ‘ঈশ্বর যা আমাকে করতে বলেন না আমি তা করি না, এবং তিনি আমায় যা করতে বলেন তার সবকিছুই আমি করি। তিনি যা-ই বলেন আমি তা-ই করি, আর তাতে আমি আমার মনপ্রাণ ঢেলে দিই, আমার সাধ্যের মধ্যে সবকিছু আমি তাতে নিয়োজিত করি, আমি কক্ষনো কোনো কূটকৌশল অবলম্বন করি না। এটা আমি আর কারো জন্য করছি না, করছি ঈশ্বরের জন্য। ঈশ্বর আমায় এত ভালোবাসেন, ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমার এটা করা উচিত।’ এটাই হল সঠিক মানসিক অবস্থা, এবং এর পরিণাম হল, যখন গির্জাকে পরিশোধন করার সময় আসবে, দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যারা কৌশলী, তাদের সকলকে বহিষ্কার করা হবে, আর যারা সৎ মানুষ এবং ঈশ্বরের সুবিবেচনাকে স্বীকার করে, তারা রয়ে যাবে। এই সৎ মানুষগুলির অবস্থার উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটে, এবং সকল বিপদ থেকে ঈশ্বর তাদের সুরক্ষিত রাখেন। এবং কীসের দরুন তারা এই সুরক্ষা অর্জন করে? কারণ তাদের অন্তরে, তারা সৎ। দায়িত্ব নির্বাহের সময় তারা কষ্টভোগ বা ক্লান্তিকে ভয় করে না, এবং তাদের উপর অর্পিত কোনো দায়িত্বের ব্যাপারে তারা কখনো খুঁৎখুঁৎ করে না; তারা কারণ জানতে চায় না, তাদের যেমন বলা হয় তারা শুধু সেটাই করে যায়, বিচার-বিশ্লেষণ না করে, বা অন্য কোনো বিষয়কে বিবেচনায় না এনে, তারা মান্য করে; তাদের কোনো অপ্রত্যক্ষ অভিপ্রায় থাকে না, কিন্তু সকল বিষয়ে তারা আজ্ঞাকারিতায় সক্ষম। তাদের অভ্যন্তরীন অবস্থা সবসময় খুবই স্বাভাবিক; বিপদের সম্মুখীন হলে, ঈশ্বর তাদের সুরক্ষা দেন; রোগ-ব্যাধির শিকার হলেও ঈশ্বর তাদের রক্ষা করেন—তারা সাতিশয় আশীর্বাদধন্য(বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, দশম পরিচ্ছেদ: তারা সত্যকে ঘৃণা করে, প্রকাশ্যে নীতির লঙ্ঘন করে, এবং ইশ্বরের গৃহের আয়োজনকে উপেক্ষা করে (চতুর্থ অংশ))। ঈশ্বরের বাক্য থেকে দেখি বিবেকসম্পন্ন ও উত্তম চরিত্রের ব্যক্তিরা তাদের কর্তব্যের প্রতি নিষ্ঠাবান হয়। কাজে সমস্যা দেখা দিলে তারা কষ্টভোগ ও ত্যাগস্বীকারের মাধ্যমে উন্নতিসাধনে সচেষ্ট হয়, কাজে ভালো ফলাফলের জন্য যথাসাধ্য করে। এই ধরনের লোকেরা কর্তব্যে ঈশ্বরের আলোকদান ও নির্দেশনা লাভ করে, এদের অবস্থার উত্তরোত্তর উন্নতি হতে থাকে। কিন্তু যাদের বিবেক ও চেতনা নেই, কাজে সমস্যা এলেই যারা কান্নাকাটি শুরু করে দেয়, শুধু নিজেদের স্বার্থের কথা ভাবে, মন থেকে সহযোগিতা করে না, এমনকি এসব করে নিজেদের চালাক মনে করে। ঈশ্বর এসব লোকেদের খুব ঘৃণা করেন এবং শেষ পর্যন্ত তাদের অনাবৃত ও বহিষ্কৃত করেন। আমি কি তেমনই ছিলাম না, নিজেকে ভাবতাম বুদ্ধিমান? হয়তো নেতাকে বোকা বানাতে পারতাম—নতুন গির্জার তদারকির সাথে জড়িত কষ্টগুলো এড়াতে পারতাম, নেতা আমি কী ভাবছি জানতেন না আর আমার বিরুদ্ধে কিছু বলতেও পারতেন না। কিন্তু ঈশ্বর আমাদের প্রতিটি চিন্তা পরীক্ষা করেন। গির্জার কাজকে একেবারেই রক্ষা না করে দায়িত্বে ঢিলে দিচ্ছি, অবকাশ কামনা করছি, এমনটা দেখলে তিনি আমায় ঘৃণা করতেন। অনুতাপ না করলে, ঈশ্বর আমাকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ ও পরিহার করতেন। আমি তাদের কথা ভাবি যাদের আগে বহিষ্কার করা হয়েছিল—তারা সবসময় ঢিলে দিত, মন না দিয়ে কাজ করত, আর দায়িত্ব ও পদ থেকে অপসারিত হয়েছিল, নিজেদের চালাকিতে নিজেরাই জব্দ হয়েছিল। এসব কথা ভেবে, একটু ভয় পেয়ে যাই, আর তাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, কর্তব্যের প্রতি মনোভাব শোধরাতে, দায়িত্ব নিয়ে সঠিকভাবে কর্তব্য পালন করতে।

পরে আমি, ঈশ্বরের বাক্যের একটি অনুচ্ছেদ পড়ি যা অনুশীলনের পথ দেখায়। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্ব স্বীকার করার পর, বিলম্ব করার চিন্তামাত্র না করে নোহ এমন উদ্দীপনার সাথে ঈশ্বর কথিত জাহাজ নির্মাণের কাজ নির্বাহ করতে শুরু করল যেন তা তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দিন পার হতে থাকল, বছর চলে গেল, দিনের পর দিন, বছরের পর বছর অতিক্রান্ত হল। ঈশ্বর কখনো নোহের উপর কোনো চাপ দেননি, কিন্তু এই সমস্ত সময় জুড়ে, নোহ তার উপর ঈশ্বরের অর্পিত এই জরুরি কাজে অধ্যাবসায়ের সাথে লেগে ছিল। ঈশ্বরের উচ্চারিত প্রতিটা বাক্য ও বাক্যাংশ নোহের হৃদয়ে এমনভাবে উৎকীর্ণ ছিল যেন পাথরের ফলকের উপর খোদাই করা বাক্য। বাইরের জগতের পরিবর্তন, আশেপাশের লোকজনের উপহাস, কাজের সাথে জড়িত কষ্টভোগ, অথবা সম্মুখীন হওয়া সমস্যার প্রতি মনোযোগ না দিয়ে, ঈশ্বর তাকে যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন সেটার প্রতি সে বরাবর অধ্যবসায়ী ছিল, কখনো হতাশ হয়নি বা হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবেনি। নোহের হৃদয়ে ঈশ্বরের বাক্যগুলো উৎকীর্ণ ছিল, সেগুলো তার দৈনন্দিনের বাস্তবিকতা হয়ে উঠেছিল। নোহ জাহাজ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিটা উপাদান প্রস্তুত করল, এবং ঈশ্বরের আদেশ অনুযায়ী জাহাজের আকৃতি ও বিবরণ নোহের ছেনি-হাতুড়ির প্রতিটা সযত্ন আঘাতের সাথে সাথে ধীরে ধীরে মূর্ত হয়ে উঠল। ঝড়ঝঞ্ঝা ও বৃষ্টিপাতের সময় জুড়ে, এবং মানুষের উপহাস ও অপবাদ উপেক্ষা করে, নোহের জীবন এইভাবেই এগিয়ে চলল, বছরের পর বছর। ঈশ্বর গোপনে নোহের প্রতিটা কার্যকলাপ লক্ষ্য করছিলেন, কখনো তার প্রতি আর একটা বাক্যও উচ্চারণ করেননি, এবং নোহ তাঁর হৃদয় স্পর্শ করেছিল। তবে নোহ সেকথা জানতো না বা অনুভব করতেও পারেনি; ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি অটুট ভক্তিতে, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সে শুধু জাহাজটা তৈরী করেছিল, আর প্রত্যেক ধরনের জীবন্ত প্রাণীকে সংগ্রহ করেছিল। নোহের অন্তরে, এর থেকে বড় কোনো নির্দেশ ছিল না যা তাকে অনুসরণ ও নির্বাহ করতে হবে: ঈশ্বরের বাক্যই ছিল তারা সারাজীবনের পথনির্দেশ ও লক্ষ্য। তাই, ঈশ্বর তাকে যে কথাই বলুন, তাকে যা-ই করতে বলে থাকুন, যে কাজের জন্যই আদেশ করে থাকুন, নোহ সম্পূর্ণভাবে তা স্বীকার করেছিল ও তার স্মৃতিতে প্রোথিত করেছিল, এবং তা পূর্ণ করাকে তার জীবনের সংকল্পবদ্ধ প্রচেষ্টা হিসাবে গ্রহণ করেছিল। শুধু এই নয় যে সে সেগুলো ভুলে যায়নি, শুধু এই নয় যে সে নিজের মনে সেগুলো প্রোথিত করেছিল, বরং সেইসাথে এটাকে তার জীবনের বাস্তবতায় পরিণত করেছিল, তার জীবনকে ব্যবহার করেছিল ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্ব গ্রহণ করতে, তা নির্বাহ করতে। আর এইভাবে, একটার পর একটা পাটাতন জুড়ে, সেই জাহাজ নির্মিত হল। নোহের প্রতিটা গতিবিধি, প্রতিটা দিন, ঈশ্বরের বাক্য ও আদেশের প্রতি সমর্পিত ছিল। হয়ত এমন না-ও মনে হতে পারে যে নোহ বিশাল গুরুত্বপূর্ণ কোনো দায়িত্ব পালন করছিল, কিন্তু নোহ যা-ই করেছিল, এমনকি কিছু অর্জনের উদ্দেশ্যে গৃহীত তার প্রতিটা পদক্ষেপ, নিজের হাতে সম্পাদিত প্রতিটা শ্রম—ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সেগুলো সবই ছিল মূল্যবান, সম্মানের সাথে স্মরণ করার যোগ্য, এবং এই মানবজাতির অনুকরণের উপযুক্ত। ঈশ্বর তাকে যে দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন, নোহ তাতে অবিচল ছিল। সে তার এই বিশ্বাসে অটল ছিল যে ঈশ্বরের উচ্চারিত প্রতিটা বাক্যই সত্যি; এ বিষয়ে তার কোনো সন্দেহ ছিল না। এবং এর ফলে, সেই জাহাজ নির্মাণ সম্পূর্ণ হল, আর প্রত্যেক ধরনের জীবিত প্রাণী সেটার উপরে জীবনধারণ করতে সক্ষম হল(বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, পরিশিষ্ট দুই: কীভাবে নোহ এবং অব্রাম ঈশ্বরের বাক্য শ্রবণ করল এবং তাঁকে মান্য করল (প্রথম অংশ))। নোহের গল্পটি আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল। ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্ব পাওয়ার পর, নোহ কখনই নিজের স্বার্থের কথা ভাবেননি, কেবলই ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্ব পালনের কথা ভেবেছিলেন। জীবনের সবকিছু একপাশে সরিয়ে রেখে, জাহাজ নির্মাণ কঠিন আর সমস্যাসংকুল কাজ হওয়া সত্ত্বেও, নোহ তা করে গেছেন, ধীরে ধীরে, ১২০ বছর ধরে রোদে বৃষ্টিতে ভিজে। কখনো অভিযোগ করেননি শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্ব পালন করে তিনি তাঁর অনুমোদন লাভ করেন। ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্বের প্রতি নোহের মনোভাবের সাথে নিজের তুলনা করে খারাপ লাগল। আমি নোহের কষ্টের দশ হাজার ভাগের এক ভাগও কষ্ট করিনি, আর সামান্য অসুবিধা বা চাপে পরতেই, অভিযোগ করে কাজ হস্তান্তরের চেষ্টা করেছি। আমি বিশ্বস্ত ছিলাম না, সত্য অনুশীলনের কোনো সাক্ষ্যও আমার ছিল না। ঈশ্বরের কাছে অপরিসীম ঋণ ও অনুতাপ বোধ করি। ঈশ্বরে প্রার্থনা করে অনুতাপ করি, চাই আয়েশের করা বন্ধ করতে, নোহের অনুকরণে দায়িত্বের সুষ্ঠু পালন করতে। দায়িত্ব পালনে সমস্যা ও অসুবিধা এলেও, নিজের কাজ করে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমাকে ত্যাগ স্বীকার ও কষ্ট সহ্য করতে হবে। তারপর, নেতাকে বলি, “আমি নতুন গির্জাটার দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। এখন থেকে যেখানেই পাঠাবেন, গির্জার আয়োজনে নিজেকে সমর্পণ করব।” এটা বলে বেশ স্বস্তি পেলাম। অবশ্য, ততদিনে নেতা আমার বদলে সেই গির্জার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব সিস্টার সাশাকে দিয়ে দিয়েছেন।

কিন্তু শীঘ্রই, শুনলাম সিস্টার সাশা গির্জায় তার কাজ সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, তদারকির কাজ চালিয়ে যেতে পারছে না। মানে নেতা শেষ পর্যন্ত আমাকে পাঠাতে চাইতে পারেন। সেই গির্জার সব সমস্যার কথা ভাবামাত্র উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। তারপরই বুঝতে পারি আমি আবারও দৈহিক সুখের কথা ভাবছি, কষ্ট করতে চাইছি না, তাই ঈশ্বরকে প্রার্থনা করি: “প্রিয় ঈশ্বর, কিছু হলেই আমি সবসময় নিজের স্বার্থ নিয়ে ভাবতে চাই না। পথ দেখান যেন নিজেকে সমর্পণ করতে পারি।” তখনই, ঈশ্বরের বাক্য মনে পড়ল: “একজন মানুষ যদি সত্যিই সমর্পিতচিত্ত হয়, এবং কর্তব্যের প্রতি তার যদি একটা দায়িত্ববোধ থাকে, তাহলে তাকে যে কাজ করতে বলা হবে, যতক্ষণ ঈশ্বর তা করার দাবি রাখছেন, এবং যতক্ষণ ঈশ্বরের গৃহের জন্য তা করা আবশ্যক, ততক্ষণ নির্বিকল্পভাবে সে তা-ই করবে। যা সে করতে সক্ষম ও যা তার করনীয় এমন যেকোনো কর্মভার গ্রহণ করে তা সম্পন্ন করাটা কি একজন মানুষের দায়িত্ব পালনের অন্যতম নীতি নয়? (হ্যাঁ।)” (বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, দশম পরিচ্ছেদ: তারা সত্যকে ঘৃণা করে, প্রকাশ্যে নীতির লঙ্ঘন করে, এবং ইশ্বরের গৃহের আয়োজনকে উপেক্ষা করে (চতুর্থ অংশ))। ঈশ্বরের বাক্য থেকে বুঝলাম, ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত লোকেদেরকে যে দায়িত্বই দেওয়া হোক না কেন, তারা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে। এমন ব্যক্তিই গির্জার কাজকে তুলে ধরে। আমি আবার নিজেকে এই পরিস্থিতিতে পেয়েছি কারণ গির্জার কাজে আমার সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। আমি কেবলই নিজের স্বার্থের কথা বিবেচনা আর আয়েশের জন্য লোভ করে যেতে পারি না। আমাকে তত্ত্বাবধায়ক করা হোক বা না হোক, নিজেকে সঁপে দিতে ইচ্ছুক হলাম। পরে, নেতা আমাকে সেই গির্জার দায়িত্ব দেন আর সঙ্গে সঙ্গে, আমিও তা প্রশান্তচিত্তে গ্রহণ করি। গির্জার দায়িত্ব নেওয়ার পর, আমি একটু একটু করে সেই বিষয়ে কাজ করে গেলাম, ভালোমতো পরীক্ষা আর তদারকি করে, কিছু সমস্যা খুঁজে বের করে সমাধান করতে সক্ষম হলাম।

বাইরে থেকে, মনে হচ্ছিল কাজের রদবদল আমাকে ক্লান্ত করে তুলছিল, কিন্তু আসলে, এটা আমাকে রক্ষা করেছে, অনুপ্রাণিত করেছে। আগে যে গির্জার দায়িত্বে ছিলাম তা বেশ সংগঠিত ছিল, ভালো ফলাফলও পেত, তাই অজান্তেই আত্মতুষ্টিতে ভুগছিলাম, গতানুগতিকতায় অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছিলাম। উত্তরোত্তর অলস আর নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলাম। নতুন গির্জাটায় অনেক সমস্যা ছিল, যা আমাকে প্রেরণা দেয় দুঃসময়ে ঈশ্বরকে প্রার্থনা ও ভরসা করতে, সমস্যা সমাধানে সত্যের সন্ধান করতে। নিজেকে ঈশ্বরের আরো কাছাকাছি মনে হল, অনেক কিছু শিখলাম। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন