আমার বাবা-মায়ের আসল রূপ দেখতে পাওয়া
ছোট থেকেই আমি সবসময় আমার বাবা-মাকে ঈশ্বরকে অনুসরণ করার আদর্শ হিসেবে দেখেছি। তাদের দেখে মনে হত যে তারা তাদের বিশ্বাসে উদ্দীপ্ত এবং বলিদান করতে ইচ্ছুক। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে গ্রহণ করার পরপরই, আমার মা পূর্ণ সময় দায়িত্ব পালন করার জন্য একটা খুব ভালো চাকরি ছেড়ে দিল। তার দক্ষতা এবং জ্ঞান ছিল এবং সে মূল্য দিতে ইচ্ছুক ছিল, তাই গির্জায় তার সবসময় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকত। আমাদের পরিবারকে পরে এক বিশ্বাসঘাতক ধরিয়ে দিয়েছিল, তাই কমিউনিস্ট পার্টির গ্রেপ্তার এড়াতে আমার বাবা-মা আমাকে নিয়ে আত্মগোপন করেছিল। তারপরও তারা তাদের দায়িত্ব পালন করতে থাকে। এবং তাদের সরল জীবনযাত্রা ও তাদের ধার্মিক ও আধ্যাত্মিক আচরণ দেখে, আমি প্রায়ই গির্জার সদস্যদের বলতে শুনতাম আমার বাবা-মায়ের ভালো মানবতা ছিল, তারা সত্য বিশ্বাসী ছিল এবং সত্যের অনুসরণ করত। পার্টির নিপীড়নের কারণে আমার ১০ বছর বয়সে আমাকে আমার বাবা-মায়ের থেকে আলাদা হতে হয়েছিল এবং আমরা একে অপরকে আর দেখতে পাইনি, কিন্তু আমি সবসময় তাদের এই মহান ভাবমূর্তিকে মান্য করতাম। আমি সত্যিই তাদের শ্রদ্ধা করতাম এবং মনে হত যেন ঈশ্বরের প্রতি তাদের অগাধ বিশ্বাস ছিল, যে তাদের সমস্ত ত্যাগ এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণের সাথে, তাদের অবশ্যই সত্যের অন্বেষণ করতে এবং ভালো মানবতার অধিকারী হতে হবে, এবং ঈশ্বরকে তাদের অবশ্যই অনুমোদন করতে হবে। এমনকি আমার তাদেরকে উদ্ধার পাওয়ার মতো মানুষ বলেও মনে হত। এমন বাবা-মা পেয়ে আমি সত্যিই গর্বিত ছিলাম।
পরে পার্টির অত্যাচারে আমরা সবাই বিদেশে পালিয়ে যাই। তারপর যখন তাদের সাথে আমার যোগাযোগ হয়, আমি দেখেছিলাম যে তারা তখনও বিদেশে দায়িত্ব পালন করছে। বিশেষ করে যখন আমি জানতে পারলাম কর্মকর্তা হিসেবে আমার মায়ের বেশ কয়েকটি ভূমিকা ছিল, আমি তাকে আরো শ্রদ্ধা করতাম। আমার বাবা-মা সেই সমস্ত বছর ধরে বিশ্বাসী ছিল এবং অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছিল, এছাড়াও তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিল। আমি ভেবেছিলাম তাদের সত্যের সন্ধানী হতে হবে, আত্মিক উচ্চতা থাকতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আমি সাহায্যের জন্য তাদের কাছে যেতে পারি যখনই আমার কোনো অসুবিধা হত। এটা অত্যন্ত ভালো ছিল। তারপর আমরা মাঝে মাঝে আমাদের নিজেদের সাম্প্রতিক অবস্থার কথা বলতাম।
একবার আমার বাবা বলেছিল সে এমন একটা কাজ করছিল যেটার জন্য তার চোখে কোনো বিশেষ প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রয়োজন ছিল না, এবং সবসময় একটা ভিন্ন কাজ করতে চাইত। সেই সময় আমারও ঠিক একই অভিজ্ঞতা হচ্ছিল, তাই ঈশ্বরের কিছু বাক্য নিয়ে আমরা একে অপরের সাথে আলাপআলোচনা করলাম। একটু সময় নিয়ে, ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পান করার এবং সত্য অনুসন্ধানের মাধ্যমে, আমি দেখলাম আমি আমার দায়িত্ব সম্পর্কে খুঁতখুঁতে হচ্ছি। আমি এমন কোনো দায়িত্ব চেয়েছিলাম যাতে আমাকে ভালো দেখাবে কিন্তু আমি তাতে অপটু ছিলাম। এটা সত্যিই স্বার্থপর ছিল এবং প্রকৃত বিশ্বাসের লক্ষণ নয়। আমি নিজেকে ঘৃণা করতে থাকি এবং সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হই। কিন্তু আমার বাবা আটকে গিয়েছিল, এবং তার দায়িত্ব পালনের জন্য অনুপ্রাণিত হতে পারছিল না। আমি বিভ্রান্ত ছিলাম। যেহেতু সে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বাসী ছিল, তাই তার কিছুটা আত্মিক উচ্চতা থাকা উচিত। কেন সে তার দায়িত্ব বাছাই এবং নির্বাচনের সেই সমস্যার সমাধান করতে পারেনি? আমি এটাও বুঝতে পেরেছিলাম যে যখন আমি আমার বাবা-মায়ের সাথে আমার সমস্যার কথা বলতাম, তারা আমাকে ঈশ্বরের কিছু বাক্য পাঠাত এবং বিষয়গুলো সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি জানাত, কিন্তু তাদের মতামত আমাকে সাহায্য করত না। আমার একটা অস্পষ্ট বোধ তৈরি হতে লাগল যে তারা ততটা সত্য বুঝত না যতটা আমি কল্পনা করেছিলাম। পরে, ভ্রাতা ও ভগিনীরা স্বাক্ষ্যমূলক রচনা লেখার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে। আমি ভেবেছিলাম যে দীর্ঘদিনের বিশ্বাসী হিসাবে, আমার বাবা-মায়ের অবশ্যই প্রচুর অভিজ্ঞতা রয়েছে, বিশেষ করে আমার মায়ের। সে একজন খ্রীষ্টবিরোধী দ্বারা নিপীড়িত হয়েছিল এবং অন্যায়ভাবে গির্জা থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিল, কিন্তু সে সুসমাচার প্রচার করে গিয়েছিল। গির্জায় তাকে ফিরিয়ে নেওয়ার পর, যা তার দায়িত্ব ছিল তাতে সে তার সবটুকু দিত, এবং তার দায়িত্ব বেশ কয়েকবার পরিবর্তিত হয়েছিল, তাই তার অবশ্যই প্রচুর অভিজ্ঞতা থাকবে। আমি ভেবেছিলাম ঈশ্বরকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তার সেগুলোর সম্পর্কে লেখা উচিত। আমি মাঝে মাঝে আমার মাকে প্রবন্ধ লেখার জন্য অনুরোধ করতে লাগলাম, কিন্তু সে তা এড়িয়ে যেতে থাকল, এই বলে যে সে লিখতে চায়, কিন্তু সে তার দায়িত্বে খুব ব্যস্ত থাকত এবং একটুও সময় পেত না। আমি তাকে চাপ দিতে থাকলাম, কিন্তু সে কখনোই কিছু লিখল না। একবার, সে আমাকে বলেছিল সে যখন লেখার চেষ্টা করেছিল, সে তার চিন্তাগুলোকে সংগঠিত করতে পারেনি এবং জানত না কোথা থেকে শুরু করবে, তাই আমার সাথে এটা আলোচনা করতে চেয়েছিল। আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। আমি সত্যিই তার অত বছরের সমস্ত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে শুনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি সত্যিই অবাক হয়েছিলাম যখন সে বলল কী ঘটেছিল এবং সে কী দুর্নীতি প্রকাশ করেছিল, সে কোনো প্রকৃত জ্ঞানের কথা বলল না, বরং নিজেকে সীমাবদ্ধ করে অনেক নেতিবাচক কথা বলল। তার অতীত অভিজ্ঞতার কথা বলা সত্যিই বেদনাদায়ক বলে মনে হয়েছিল, যেন সে কোনো উপায় না পেয়ে সমর্পণ করেছিল। সেটার থেকে সে কী অর্জন করেছে, সে সম্পর্কে আমি তাকে কিছু বলতে শুনলাম না। আমাদের কথা বলার পর আমি সত্যিই হতাশ বোধ করলাম। আমি ভাবছিলাম যে সে যদি সত্যিই কিছু অর্জন করত, সেই সময় সেটা যতই বেদনাদায়ক হোক না কেন, ঈশ্বরের বাক্য পড়া, সত্য সন্ধান করা এবং তাঁর ইচ্ছা জানা নিজের এবং ঈশ্বরের সম্পর্কে তাকে প্রকৃত জ্ঞান দেবে, এবং শেষ পর্যন্ত সেটা প্রকৃত আনন্দ নিয়ে আসবে। কিন্তু সে যেভাবে তার অতীত অভিজ্ঞতার কথা বলেছিল তা সত্যিই বেদনাদায়ক শোনাল, এবং নিজের সম্পর্কে তার একটা উপলব্ধিমূলক, অব্যবহারিক জ্ঞান ছিল। তার মানে কি তার বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাব ছিল? আমার মনে হল—এই কারণেই সে ঈশ্বরের জন্য একটা স্বাক্ষ্যপত্র লিখতে এত অনিচ্ছুক ছিল। তার কাছে সময়ের অভাব একটা অজুহাত ছিল। আসলে সে সত্য অর্জন করেনি বা তার কোনো প্রকৃত লাভ হয়নি, তাই সে কোনো স্বাক্ষ্যপত্র লিখতে পারেনি। আমার বাবা কিছু লেখার চেষ্টা করতে ইচ্ছুক ছিলেন কিন্তু তার প্রবন্ধ ছিল তুচ্ছ বিষয়ে পরিপূর্ণ, এবং তার আত্ম-জ্ঞান বা সে কী অর্জন করেছে সে সম্পর্কে খুব বেশি কিছু ছিল না। এটার আর তার বহু বছরের বিশ্বাসের মধ্যে কোনো মিল ছিল না। আমার মনে পড়ে ঈশ্বরের বলেছেন, “তুমি পরিত্রাণ লাভ করতে পারবে কিনা তা তুমি কতটা বয়োজ্যেষ্ঠ কিংবা তুমি কত বছর যাবৎ কাজ করে আসছ তার উপর নির্ভর করে না, তুমি কতগুলি শংসাপত্র সংগ্রহ করেছ তার উপর তো তা আরোই নির্ভর করে না। বরং, এটা নির্ভর করে তোমার অন্বেষণ ফল দিয়েছে কিনা তার উপর। তোমার জানা উচিত যে যারা পরিত্রাণ পায় তারা হল সেইসব ‘গাছ’ যাতে ফল ধরে, সেইসব গাছ নয় যাতে সবুজ পল্লবদাম এবং প্রচুর ফুল থাকা সত্ত্বেও কোনো ফল ধরে না। তুমি যদি বহু বছর পথ-পথে ঘুরে বেড়িয়ে অতিবাহিত করে থাকো, তাতে কীই বা আসে যায়? তোমার সাক্ষ্য কোথায়?” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, অনুশীলন (৭))। সেটা আমার জন্য একটা সতর্কবার্তা ছিল। এটা সত্যি। যতই কেউ প্রবীণ হোক, সে যতই কাজ করুক বা অভিজ্ঞতা অর্জন করুক, তাদের যাত্রার মাধ্যমে যদি তারা কোনো প্রকৃত কিছু অর্জন না করে, সত্য অর্জন বা সাক্ষ্য বহন না করে, এর অর্থ হল তাদের জীবনের অভাব রয়েছে। এমন ব্যক্তিকে কখনো উদ্ধার করা যায় না। যখন এটা আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল, তখন আমি যে অনুভূতি পেলাম তা বর্ণনা করতে পারব না। আমার বাবা-মায়ের সত্য বোঝার এবং আত্মিক উচ্চতাসম্পন্ন হওয়ার ছবিটা প্রথমবারের জন্য নষ্ট হয়ে গেল। আমি বুঝতে পারলাম না। অত বছরের বিশ্বাস এবং অত ত্যাগের পর, কেন তারা সত্য অর্জন করেনি? আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি, এবং গোপনে কেঁদেছিলাম। তারপর থেকে আমি আর তাদের তেমন শ্রদ্ধা করিনি, কিন্তু আমি তখনও ভেবেছিলাম যে যাই হোক না কেন, এত বছর ধরে এত কিছু দেওয়ার পরে, অন্তত তাদের মানবতা উপযুক্ত ছিল এবং তারা প্রকৃত বিশ্বাসী ছিল। তারা যদি ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারত এবং সত্যের অন্বেষণ করা শুরু করত, তাদের তখনও উদ্ধার করা যেত। কিন্তু তারপরে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছিল যা তাদের সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছিল।
এক দিন, আমি জানতে পারলাম আমার বাবাকে তার দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়েছিল কারণ সে সবসময় অসতর্ক এবং অলস ছিল, এবং ভালোভাবে কাজ করছিল না। এর পরেই, আমি জানতে পারলাম আমার মাকেও বরখাস্ত করা হয়েছে নিকৃষ্ট মানবতা থাকার জন্য, গির্জার স্বার্থ রক্ষা না করার জন্য, এবং খুব অহংকারী হওয়ার জন্য, এবং তার দায়িত্বে বিঘ্নকারী হওয়ার জন্য। আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম এবং প্রায় বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। এটা কীভাবে ঘটতে পারে? একটা দায়িত্ব পালন করতে না পারার অর্থ কি মূলত নির্মূল হওয়া নয়? তাদের মানবতা কি মন্দ ছিল? যারা আগে আমার বাবা-মাকে চিনত তারা সবাই বলত তাদের মহৎ মানবতা আছে, নইলে তারা এত কিছু কীভাবে ত্যাগ করতে পারত? আমি সত্যিই অশান্তিতে ছিলাম, এবং সমস্ত রকমের উদ্বেগ মনের মধ্যে তৈরি হচ্ছিল। আমি ভাবতাম তারা কেমন আছে, তারা কষ্টে আছে কি না। আমি সব সময় হতাশ এবং আরও বিষণ্ণ বোধ করছিলাম, এবং আমি জানতাম যে এটা অবশ্যই সত্যের নীতির উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে, এটা সঠিক ছিল, কিন্তু এটা মেনে নিতে আমার কষ্ট হচ্ছিল। আমার বাবা-মা অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে গিয়েছে, সর্বদা কমিউনিস্ট পার্টি থেকে পালিয়ে বেড়িয়েছে, এবং সেই সমস্ত বছরগুলোতে আমরা অনেকটা সময় আলাদা হয়ে কাটিয়েছি। আমি খুব আশা করেছিলাম যে ঈশ্বর তাঁর কাজ শেষ করার পরে আমরা রাজ্যে আবার একত্রিত হব। যাহোক, এত চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পর এবং এত কাজ করার পর, কীভাবে তারা এত সহজে বরখাস্ত হয়ে যেতে পেরেছিল? আমি এটা নিয়ে আরও বেশি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলাম, এবং কান্নায় ভেঙে পড়ছিলাম। কয়েকদিন ধরে, আমি ক্রমাগত কান্নাকাটি করছিলাম এবং আমার দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো বল পাচ্ছিলাম না। যখনই এটা নিয়ে ভাবতাম, আমি খুব বিব্রত হতাম এবং ভিতর থেকে দুর্বল হয়ে পড়তাম। আমি হঠাৎ করে অন্বেষণ করার সমস্ত প্রেরণা হারিয়ে ফেললাম। আমি জানতাম আমি ভালো অবস্থায় ছিলাম না এবং আমি নিজেকে বলতে যেতাম, “মা এবং বাবাকে সঠিক কারণে বরখাস্ত করা হয়েছিল। ঈশ্বর ধার্মিক।” কিন্তু আমি এটা মেনে নিতে পারছিলাম না এবং ঈশ্বরের সাথে তর্ক করার চেষ্টা করছিলাম। এমন অনেক ভ্রাতা ও ভগিনী ছিল যারা গির্জায় কোনো প্রকৃত অবদান রাখেনি বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেনি যারা তাদের কাজ রাখতে পেরেছিল, তাহলে আমার মা বাবা কেন তাদের কাজ রাখতে পারল না? তাদের যাই সমস্যা হোক না কেন, এমনকি যদি তারা এত বছর কোনো অবদান না-ও রাখত, তারা কঠোর চেষ্টা করেছিল, তাহলে তারা কি আরেকটা সুযোগ পেতে পারেনা, তাদের সব কষ্ট এবং তাদের করা সমস্ত কাজের পরিপ্রেক্ষিতে? আমি জানতাম আমি ভালো অবস্থায় ছিলাম না, আমি অনমনীয় হচ্ছিলাম এবং সত্য খোঁজার কোনো প্রেরণা আমার ছিল না। আমি ঈশ্বরের কাছে এসে প্রার্থনা করলাম, “ঈশ্বর, এটা আমার জন্য সত্যিই কঠিন। দয়া করে আমার পথপ্রদর্শন করুন এবং আপনার ইচ্ছা জানতে সাহায্য করুন।”
পরে আমি এক ভগিনীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমার অবস্থার সঙ্গে কেমন আচরণ করা যায়, এবং আমি তাকে সব ব্যাখ্যা করতে করতে কেঁদে ফেলেছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, “আপনার বাবা-মায়ের দায়িত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তাদের বহিষ্কার করা হয়নি। আপনি এত বিষন্ন কেন? আপনার দেখা উচিত যে এর মধ্যে ঈশ্বরের প্রেম রয়েছে। ঈশ্বর তাদের অনুতাপ করার সুযোগ দিচ্ছেন।” তার কথা শুনে আমার চোখ খুলে গেল। এটা সত্যি ছিল। ঈশ্বর কখনো বলেননি যে, দায়িত্ব কেড়ে নেওয়ার অর্থ কাউকে নির্মূল করা। এবং কয়েকজন ভ্রাতা ও ভগিনী তখনই আত্ম-প্রতিফলন করা শুরু করে, দুঃখিত হয়, তারপর প্রকৃতভাবে পরিবর্তিত হয়ে অনুতাপ করে যখন তাদের বরখাস্ত করা হয়। তারপর তারা আবার দায়িত্ব নেয়। যাইহোক, একটা দায়িত্ব থাকার অর্থ এই নয় যে আপনি সম্পূর্ণরূপে উদ্ধার হবেন। আপনি যদি সত্যের অনুসরণ না করেন তবে আপনি এখনও ঈশ্বরের দ্বারা উন্মোচিত এবং নির্মূল হতে পারেন। আসলে বরখাস্ত হওয়ার অর্থ ছিল ঈশ্বর আমার বাবা-মাকে অনুতাপ করার সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু আমি ভেবেছিলাম এটা নির্মূল হওয়ার মতই ছিল। এটা সত্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এইভাবে চিন্তা করে আমার একটু ভালো লাগলো, কিন্তু পরে যখনই আমি এটা নিয়ে ভাবতাম, তখনই আমি এটা নিয়ে বিরক্ত হয়ে যেতাম। আমার সবসময় মনে হত তাদের সঙ্গে গির্জা খুব কঠোর আচরণ করেছিল।
পরে আমি ঈশ্বরের বাক্যর এই অংশটা পড়েছিলাম: “কোনো একটা বিষয়ে তোমার যতই উপলব্ধির অভাব থাকবে, ততই তোমার প্রয়োজন এক ঈশ্বর-ভীত ও ধর্মনিষ্ঠ হৃদয়ের, এবং তোমার উচিত ঈশ্বরের ইচ্ছার ও সত্যের সন্ধানে প্রায়শই ঈশ্বরের সম্মুখে আসা। যখন তুমি কোনোকিছু বুঝতে পারো না, তোমার তখন প্রয়োজন ঈশ্বরের আলোকপ্রদান ও পথনির্দেশ। যখন তুমি এমনকিছুর সম্মুখীন হও যা তুমি বোঝো না, তখন তোমার প্রয়োজন তোমার উপর ঈশ্বরের আরও বেশি পরিমাণ কাজ, এবং এটাই হল ঈশ্বরের শুভ অভিপ্রায়। যত বেশি তুমি ঈশ্বরের সম্মুখে আসো, তত তোমার হৃদয় ঈশ্বরের ঘনিষ্ঠ হয়। আর এ কি সত্যি নয় যে তোমার হৃদয় ঈশ্বরের যত বেশি ঘনিষ্ঠ, ততই ঈশ্বর তাতে বাস করেন? ঈশ্বর মানুষের হৃদয়ে যত বেশি থাকেন, ততই তাদের অন্বেষণ, তাদের চলার পথ, ও তাদের হৃদয়ের অবস্থা উন্নত হয়ে ওঠে” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, ঈশ্বরবিশ্বাসের ভিত্তিতে রয়েছে ঈশ্বরের বাক্য মহার্ঘরূপে সঞ্চিত করা)। ঈশ্বরের বাক্য পড়ার পর আমি কিছুটা শান্ত বোধ করলাম। ঈশ্বর বলেন আপনি কোনো বিষয় যত কম বোঝেন, তত বেশি আপনার ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধার সাথে সত্যের সন্ধান করা উচিত যাতে আপনার অবস্থার উন্নতি হতে পারে। আর আমার বাবা-মাকে বরখাস্ত করার ক্ষেত্রে, আমি জানতাম গির্জা এই কাজ কররে থাকলে তা করা উপযুক্ত বলেই করেছে, এবং আমার অভিযোগ করা উচিত নয়। আমি এটা নিয়ে না ভাবার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু আমি আমার ভুল বোঝাবুঝি বা ঈশ্বরের সঙ্গে আমার দূরত্বের সমাধান করতে পারলাম না। যখনই আমি এটা নিয়ে ভাবতাম, তখনই আমার কষ্ট হত। তারপর আমি বুঝতে পারলাম যে যখন আমরা কোনো বিষয়ে বিভ্রান্ত থাকি, আমাদের, নিয়ম অনুসরণ করে নিজেদের উপর লাগাম না টেনে সত্যের সন্ধান করতে হবে, এবং বিষয়গুলোকে এমনি ছেড়ে না দিয়ে—এভাবে সমস্যার সমাধান হয় না। আমি আসলে আমার বাবা-মাকে ভালোভাবে চিনতামই না। আমি শুধু জানতাম যে তাদের দেখে মনে হত তারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে এবং অন্যরা তাদের সম্পর্কে ভালো কথা বলেছে, কিন্তু সেটা সত্যিই একতরফা এবং সংকীর্ণ। আমি দেখতে চেয়েছিলাম যে তারা যেসব ভ্রাতা ও ভগিনীদেরর সাথে যোগাযোগ করেছে তাদের কী বলার ছিল এই সম্পর্কে, শুধু আমার নিজের অনুভূতি দ্বারা পরিচালিত হতে চাইনি। দায়িত্ব পালনের সময়ে আমি আমার বাবা-মায়ের আচরণের খুঁটিনাটি দিকগুলো দেখতে শুরু করলাম। যখন আমি তাদের সম্পর্কে অন্যদের মূল্যায়ন পড়লাম, আমি দেখলাম আমার বাবা সবসময় অসতর্ক থাকত এবং কঠিন বিষয়গুলো এড়িয়ে যেত, এবং সে এমন কিছুই করতে ইচ্ছুক ছিল না যার অর্থ মূল্য পরিশোধ করা। তার দক্ষতা ছিল, কিন্তু সে সবসময় তার দায়িত্ব পালনে নিষ্ক্রিয় ছিল এবং বিশেষ কিছু অর্জন করতে পারেনি। তার দায়িত্ব বেশ কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়েছিল, কিন্তু সে সেগুলোর কোনোটাই ভালোভাবে পালন করতে পারেনি। সুসমাচারের দায়িত্বে, সে তখনও অসতর্ক ছিল এবং কঠোর পরিশ্রম এড়িয়ে যেত। কর্মকর্তার তদারকি ছাড়া সে কোনো কাজ করত না। যখন ভ্রাতা ও ভগিনীরা তার দায়িত্ব পালনে সমস্যা তুলে ধরেছিল, সে আত্মপ্রতিফলন করেনি, বরং অজুহাত দিয়েছিল, বলেছিল যে সে বৃদ্ধ হচ্ছিল এবং তার স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল, এবং সেই দায়িত্ব তার ক্ষমতাকে হার মানিয়েছিল, তাই এটা স্বাভাবিক যে সমস্যা ছিল, এবং অন্যরা খুব বেশি আশা করেছিল। তাকে বরখাস্ত করা হল যখন সে কখনই দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে ভালো ফল দিতে পারল না। এবং আমার মাকে মনে হয়েছিল সত্যিই উদ্যমী এবং মূল্য দিতে পারে, কিন্তু সেটা ছিল উপর-উপর, সে শুধু বিশৃঙ্খল ভাবেই চলত। সে ব্যবহারিক কাজ করেনি, যা গির্জার কাজের অগ্রগতিকে বিলম্বিত করেছিল। সে অনেক কাজ করেছিল, কিন্তু তাতে অনেক সমস্যা এবং অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি ছিল। এতে গির্জার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। এবং সে সবসময় তার নিজের পিঠ বাঁচিয়ে চলত, গির্জার কাজের পরিবর্তে তার নিজের স্বার্থ রক্ষা করত। কখনও কখনও যখন কোনো জরুরি সমস্যা মোকাবিলা করা তার পক্ষে ভালো ছিল, কাউকে আঘাত করার ভয়ে সে অন্য কাউকে পাঠানোর জন্য জোর দিত। তাতে গির্জার কাজ আটকে যেত। ভ্রাতা ও ভগিনীরা আরও বলেছিল যে সে সত্যিই অহংকারী এবং জেদি ছিল এবং তার অভিজ্ঞতাকে একটা যষ্টি হিসাবে ব্যবহার করত, অন্যদের সাথে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা না করে সে যা ইচ্ছে তাই করত। সে অন্যদের পরামর্শ নিতে চাইত না, তার নিজের কাজ নিয়ে অধিকারবোধ ছিল, এবং তার স্বচ্ছতার অভাব ছিল। ভ্রাতা ও ভগিনীরা কিছু বিষয়ের খুঁটিনাটি সম্পর্কে নিশ্চিত ছিল না। এবং যেই মুহূর্তে কেউ এমন কিছু করেছে যা সে পছন্দ করত না, তার মেজাজ জ্বলে উঠত এবং সে রেগে গিয়ে লোকেদের তিরস্কার করত। অন্যরা তার দ্বারা সীমাবদ্ধ অনুভব করত, এবং এটা এক ভ্রাতার জন্য এত খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে সে তাকে বলেছিল, “ভগিনী, আমার দক্ষতার অভাব আছে। আমার সাথে কাজ করা আপনার জন্য নিশ্চয়ই একটা বোঝা বওয়ার সমান, আমি দুঃখিত।” এবং আরও কয়েকজন বলেছিল যে যদি তাদের দায়িত্ব পালনের প্রশ্ন না থাকত, তাহলে তারা কখনই এমন কারও সাথে কথা বলতে চাইত না। তার সমস্যাগুলো এতটাই খারাপ ছিল, কিন্তু অন্যরা যখন সেগুলো তুলে ধরত তখন সে তা মোটেও গ্রহণ করত না। সে সত্যিই পক্ষপাতদুষ্ট এবং সেই ভগিনীর প্রতি প্রতিরোধী ছিল যে তার কাজের তত্ত্বাবধান করত। সে ভাবত যে সবসময় অন্য লোকেরাই মেলামেশা করার পক্ষে কঠিন এবং পক্ষপাতদুষ্ট।
ওটা একটা বেশ বড় ধাক্কা ছিল। আমি বিশ্বাস করতে চাইছিলাম না যে আমার বাবা-মা অমন ছিল। তারপর আমি ঈশ্বরের বাক্যের কয়েকটা অংশ পড়েছিলাম। “বিবেক এবং যুক্তিবোধ, উভয়ই একজন ব্যক্তির মানবিকতার উপাদান হওয়া উচিত। উভয়ই খুব মৌলিক এবং খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে ব্যক্তির বিবেকের অভাব রয়েছে এবং স্বাভাবিক মানবিকতা নেই, সে কেমন? সাধারণভাবে বলতে গেলে, সে এমন একজন ব্যক্তি যার মধ্যে মানবিকতার অভাব রয়েছে, যে অত্যন্ত হীন মানবতার একজন। আরও বিশদে বললে, এই ব্যক্তি হারিয়ে যাওয়া মানবিকতার কোন ধরনের প্রকাশকে প্রদর্শন করে? এই ধরনের ব্যক্তিদের মধ্যে কী কী বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় এবং তারা কোন নির্দিষ্ট বিষয়গুলো প্রকাশ করে তা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করে দেখো। (তারা স্বার্থপর এবং নিকৃষ্ট।) স্বার্থপর এবং নিকৃষ্ট লোকেরা তাদের ক্রিয়াকলাপে বেপরোয়া এবং যা তাদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে জড়িত নয়, এমন যে কোনো কিছুর থেকেই দূরে থাকে। তারা ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থ বিবেচনা করে না, অথবা তারা ঈশ্বরের ইচ্ছার বিবেচনাও করে না। তারা তাদের কর্তব্য সম্পাদনের বা ঈশ্বরের সাক্ষ্যপ্রদানের কোনো দায়িত্ব গ্রহণ করে না, এবং তাদের কোন দায়িত্ববোধ নেই” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, ঈশ্বরকে হৃদয়দানের মাধ্যমে সত্য অর্জন সম্ভব)। “একজন মানুষের যখন সু-মানবিকতা থাকে, প্রকৃত এক হৃদয় থাকে, বিবেক থাকে, চেতনা থাকে, সেগুলো ধরাছোঁয়ার অতীত শূন্যগর্ভ বা অস্পষ্ট কিছু নয়, বরং সেগুলো হল এমন বিষয় যা দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রেই আবিষ্কার করা যায়; এগুলো সবই বাস্তব। ধরা যাক, একজন মানুষ মহৎ ও নিখুঁত: এটা কি এমন কিছু যা তুমি দেখতে পাও? তুমি দেখতে, স্পর্শ করতে, এমনকি কল্পনাও করতে পারো না যে নিখুঁত বা মহৎ হওয়া ব্যাপারটা কী। কিন্তু তুমি যখন কাউকে স্বার্থপর বলো, তুমি কি সেই ব্যক্তির কার্যকলাপ দেখতে পাও—আর সে কি সেই বর্ণনার সাথে মিলে যায়? যখন কারো সম্পর্কে বলা হয় যে সে প্রকৃত হৃদয়ের অধিকারী এক সৎ মানুষ, তুমি কি সেই আচরণ দেখতে পাও? যখন কাউকে প্রতারণাপূর্ণ, কুটিল, এবং নীচ বলা হয়, তুমি কি সেই বিষয়গুলো দেখতে পাও? কোনো ব্যক্তির মানবিকতা স্বাভাবিক না ঘৃণ্য, তা সে কী বলে আর কেমন আচরণ করে তার ভিত্তিতে তুমি এমনকি চোখ বন্ধ রেখেও উপলব্ধি করতে পারো। সুতরাং, ‘ভালো অথবা মন্দ মানবিকতা’ কোনো শূন্যগর্ভ কথা নয়। যেমন, স্বার্থপরতা ও নীচতা, কুটিলতা ও প্রতারণা, অহঙ্কার ও নিজের নৈতিকতার বিষয়ে ঔদ্ধত্য, এগুলো সবই এমন বিষয় যা তুমি একজন মানুষের সংস্পর্শে এলেই জীবনে উপলব্ধি করতে পারো; এগুলো মানবিকতার নেতিবাচক উপাদান। এইভাবে, মানবিকতার যে ইতিবাচক উপাদানগুলো মানুষের থাকা উচিত—যেমন সততা ও সত্যের প্রতি ভালোবাসা—সেগুলোও কি দৈনন্দিন জীবনে উপলব্ধি করা যেতে পারে? কারো পবিত্র আত্মার আলোকপ্রাপ্তি ঘটেছে কি না; সে ঈশ্বরের পথনির্দেশ পেতে পারে কি না; সে পবিত্র আত্মার কাজ লাভ করেছে কি না—এইসব বিষয়গুলো কি তুমি দেখতে পাও? তুমি কি সেই সবকিছু চিনতে পারো? পবিত্র আত্মার আলোকপ্রাপ্তি লাভ করতে গেলে, ঈশ্বরের পথনির্দেশ পেতে গেলে, এবং সমস্ত বিষয়ে সত্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে কাজ করতে গেলে, মানুষকে কোন অবস্থাগুলোর অধিকারী হতে হবে? তার একটা সৎ হৃদয় থাকতে হবে, সত্যকে ভালোবাসতে হবে, সমস্ত বিষয়ে সত্যের সন্ধান করতে হবে, এবং একবার সত্যের উপলব্ধি লাভ করার পর তাকে সত্যের অনুশীলন করতে হবে। এই অবস্থাগুলো থাকার অর্থ হল পবিত্র আত্মার আলোকপ্রাপ্তি থাকা, ঈশ্বরের বাক্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হওয়া, এবং সহজেই সত্যের অনুশীলনে সক্ষম হওয়া। যদি কেউ একজন সৎ ব্যক্তি না হয় এবং অন্তর থেকে সত্যকে ভালো না বাসে, তাহলে পবিত্র আত্মার কাজ লাভ করতে তাকে কষ্ট করতে হবে, এবং এমনকি তার সাথে তুমি সত্যের আলোচনা করলেও, তাতে কোনো ফল হবে না। কেউ একজন সৎ কি না, তা তুমি কীভাবে বুঝবে? তোমার শুধু এইটুকু দেখলেই চলবে না যে সে মিথ্যাচার বা প্রতারণা করে কি না, বরং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এটা দেখা যে সে সত্যকে গ্রহণ ও অনুশীলন করতে পারে কি না। এটাই সবচেয়ে প্রধান বিষয়। ঈশ্বরের গৃহ সবসময়েই মানুষকে বহিষ্কার করে এসেছে, এখন অবধি অনেকেই বহিষ্কৃত হয়েছে। তারা সৎ মানুষ ছিল না, সকলেই ছিল প্রতারণাপূর্ণ। তারা অধার্মিক বিষয়গুলোকে ভালোবাসতো, সত্যকে একেবারেই ভালোবাসেনি। তারা যত বছর ধরেই ঈশ্বরে বিশ্বাস করুক, তারা সত্যকে উপলব্ধি করতে পারেনি বা তার বাস্তবতায় প্রবেশ করতে পারেনি। এমনকি এই ধরনের মানুষেরা প্রকৃত পরিবর্তনেও সক্ষম ছিল না। সুতরাং তাদের বহিষ্কৃত হওয়া ছিল অনিবার্য। কোনো একজনের সংস্পর্শে এলে তুমি প্রথমেই কী লক্ষ্য করো? দেখো যে সে তার কথায় ও কাজে সৎ কি না, সে সত্যকে ভালোবাসে কি না এবং সত্যকে গ্রহণ করতে পারে কি না। এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ তুমি নির্ধারণ করতে পারছ যে কোনো একজন সৎ কি না, সে সত্যকে গ্রহণ ও অনুশীলন করতে পারে কি না, ততক্ষণ তুমি মূলত তার সারমর্ম বুঝতে পারো। কেউ যদি মুখে সবসময় মিষ্টি কথা বলে কিন্তু আসল কিছুই না করে—যখন আসল কিছু করার সময় আসে, সে শুধু নিজের কথাই ভাবে, কখনো অন্যদের কথা চিন্তা না করে—তবে তা কেমন মানবিকতা? (স্বার্থপরতা আর নীচতা। তার কোনো মানবিকতাই নেই।) মানবিকতাবিহীন কোনো মানুষের পক্ষে সত্য লাভ করা কি সহজ? তা তার পক্ষে কঠিন। … এরকম মানুষেরা কী বলে, সেদিকে মনোযোগ দিও না, তোমাকে দেখতে হবে তারা জীবনে কী যাপন করে, কী প্রকাশ করে, আর যখন নিজেদের দায়িত্ব পালন করে তখন তাদের মনোভাব কেমন হয়, সেইসাথে দেখতে হবে তাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা কেমন ও তারা কী ভালোবাসে। যদি তাদের নিজেদের খ্যাতি ও লাভের প্রতি ভালোবাসা ঈশ্বরের প্রতি তাদের আনুগত্যকে ছাপিয়ে যায়, যদি তাদের নিজেদের খ্যাতি ও লাভের প্রতি ভালোবাসা ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থকে অতিক্রম করে, অথবা যদি তাদের নিজেদের খ্যাতি ও লাভের প্রতি ভালোবাসা ঈশ্বরের প্রতি তারা যে বিবেচনা প্রদর্শন করে তার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে এরকম মানুষদের কি আদৌ মানবিকতা আছে? তারা মানবিকতাপূর্ণ মানুষ নয়। তাদের আচরণ ঈশ্বর এবং অন্যরা দেখতে পায়। এই ধরনের মানুষদের পক্ষে সত্যকে অর্জন করা খুবই কঠিন” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, ঈশ্বরকে হৃদয়দানের মাধ্যমে সত্য অর্জন সম্ভব)। ঈশ্বরের বাক্য থেকে আমি দেখলাম যে কারো মানবতাকে মূল্যায়ন করতে হলে, আমাদের দেখতে হবে ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্বের এবং ত্যের প্রতি তাদের মনোভাব। যাদের মানবতা ভালো তারা সত্যকে ভালোবাসে এবং তাদের দায়িত্ব পালনের মধ্যে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে বিবেচনা করে। তারা ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্ব কর্তব্যপরায়ণভাবে পালন করে, তারা বিশ্বস্ত, এবং গির্জার স্বার্থ রক্ষা করে। যাদের মানবতা নিকৃষ্ট, তারা সত্যিই স্বার্থপর এবং জঘন্য, শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ চিন্তা করে। তারা তাদের দায়িত্ব পালনে দায়সারা হয়, তারা ধূর্ত হয়, এবং বাস্তব কাজ না করে শুধুই বড় বড় কথা বলে। এমনকি তারা হয়ত অবহেলাও করতে পারে গির্জার স্বার্থ এবং তাদের নিজস্ব লাভের জন্য তা বিক্রি করে দিতে পারে। ঈশ্বরের বাক্যর আলোয় আমার বাবা-মায়ের আচরণ দেখে, আমি দেখলাম যে আমার ভাবনা অনুযায়ী তারা সত্যিই ভাল মানুষ ছিল না। ঠিক যেমন আমার বাবা—সে অতি সাধারণ ত্যাগ স্বীকার করেছিল, কিন্তু তার দায়িত্বে সে কোনো ভার বহন করেনি, তার পরিবর্তে সে অসতর্ক এবং কঠোর পরিশ্রমকে এড়িয়ে গিয়েছে। যখন কোনো মূল্য দিতে হত, তখন সে তার দৈহিক স্বার্থের যত্ন নেওয়ার জন্য অনেক অজুহাত দিত, গির্জার চাহিদা বিবেচনা না করে। তার দায়িত্বে ক্রমাগত তদারকি এবং তাগিদ প্রয়োজন ছিল। সে সত্যিই নিষ্ক্রিয় ছিল। আর আমার মায়ের কথা বললে, যদিও সে প্রতিনিয়ত ব্যস্ত থাকত, তার দায়িত্ব পালনের জন্য কষ্ট পেতে পারত, এবং মনে হত সে কিছু কাজ করেছিল, তার দায়িত্ব পালন থেকে কোনো বাস্তব ফলাফল আসেনি, এবং সে শুধুমাত্র সেগুলো দেখানোর জন্য করেছে। তাকে দেখে খুবই ব্যস্ত মনে হত, কিন্তু সে শুধু দ্রুত লাভের খোঁজ করছিল এবং তার নিজের নাম ও মর্যাদার জন্য কাজ করছিল। সে যখন কর্মস্থলে থাকত, তখন তার ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব ছিল এবং এর ফলে গির্জার কাজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। গির্জার স্বার্থ জড়িত বিষয়গুলোতে, সে জানত যে সে ওই কাজের জন্য সেরা ব্যক্তি কিন্তু তাও অন্য কাউকে দিয়ে ওটা পরিচালনা করার জন্য সে জোর দিত। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সে গির্জার স্বার্থ রক্ষা করেনি, এবং ঈশ্বরের সঙ্গে সমভাব ছিল না। আমি শুধু দেখেছিলাম সে অনেক কাজ সম্পন্ন করত এবং বড় মূল্য পরিশোধ করত, কিন্তু আমি তার উদ্দেশ্য বা সে সত্যিই কিছু অর্জন করেছিল কি না তা দেখছিলাম না, সে সত্যিই কোনো অবদান রাখছিল কি না, নাকি ভালোর চেয়ে আরও বেশি ক্ষতি করেছিল। আমি বুঝতে পারলাম যে কারো মানবিকতার মূল্যায়ন উপর-উপর করা ত্যাগ বা প্রচেষ্টা নয়, বরং তাদের উদ্দেশ্য সঠিক কিনা সেটা, তারা সত্যিই গির্জার কাজের কথা চিন্তা করে কি না নাকি তাদের নিজের নাম এবং মর্যাদার জন্য কাজ করে। ভালো মানবতার মানুষ হয়ত সত্য বুঝতে পারে না, কিন্তু তাদের হৃদয় সঠিক জায়গায় আছে এবং তারা তাদের বিবেকের অনুসরণ করে। তারা ঈশ্বরের গৃহের সাথে দাঁড়ায় এবং তার স্বার্থ বিবেচনা করে, যে কারণে তারা সত্যিই অনেককিছু অর্জন করতে পারে। কিন্তু যাদের ত্রুটিপূর্ণ মানবতা, তারা যতই কষ্ট ও পরিশ্রম করুক, বা যতই ভালো কথা বলুক, তারা যা কিছু করে সে সবেতেই তারা বেপরোয়া, শুধু নিজেদের লাভের বিবেচনা এবং পরিকল্পনা করে সত্যিই গির্জার কাজের কথা না ভেবে। এই কারণেই তাদের কাজে প্রচুর অনবধানজনিত ত্রুটি থাকে এবং তারা সত্যিই কিছু অর্জন করতে পারে না। বা হয়ত তারা তাদের প্রতিভা বা অভিজ্ঞতা থাকার জন্য কিছু কাজ করতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে, লোকসান লাভের চেয়ে বেশি হয়ে যায় কারণ তাদের মানবতা ও চরিত্র ত্রুটিপূর্ণ। তারা অবিশ্বস্ত এবং প্রকৃত কাজ করে না। আপনি জানতেই পারবেন না তারা কখন গির্জার কাজের ক্ষতি করতে পারে। আমি যখন এটা বুঝেছিলাম, তখন আমি সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম যে আমার বাবা-মায়ের ভালো মানবতার অভাব ছিল।
আমি সবসময় ভাবতাম তারা কত ত্যাগ স্বীকার করেছে, একটা খুব আরামদায়ক জীবন সহ, প্রায় দুই দশকের উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে, তাই তারা সত্যের অনুসরণ না করলেও, অন্তত তারা প্রকৃত বিশ্বাসী ছিল, ভালো মানুষ। কিন্তু এমন অনেক মানুষ আছে যারা কষ্ট সহ্য করে দেখাতে পারে, কিন্তু প্রেরণা এবং সারমর্ম পরিবর্তিত হতে পারে। আমি দেখিনি তাদের এত কঠোর পরিশ্রম করার কারণ অথবা তারা সত্যিই কিছু অর্জন করেছে কিনা। আমি শুধু তাদের উপর-উপর প্রচেষ্টা করতেই দেখেছি এবং ভেবেছিলাম তারা প্রকৃত বিশ্বাসী যাদের মানবতা ভালো ছিল। আমি আমার দৃষ্টিকোণ নিয়ে সত্যিই অগভীর এবং বোকা ছিলাম। এই সমস্ত বছর বিশ্বাসী হিসাবে, আমরা সহ্য করেছি কমিউনিস্ট পার্টির অত্যাচার এবং আমাদের পরিবারগুলোকে ছিন্ন করার বেদনা, কিন্তু আমরা ঈশ্বরের অনেক অনুগ্রহ উপভোগ করেছি। ঈশ্বর শুধু আমাদের অনেক সত্যই দেন না, বরং আমাদের জীবনে যা প্রয়োজন তার জন্য তিনি প্রচুর পরিমাণে খাদ্য প্রদান করেন। যার বিবেক এবং বুদ্ধি আছে তাদের সবকিছু দিয়ে দায়িত্ব পালন করে ঈশ্বরের স্নেহ পরিশোধ করা উচিত। কিন্তু অত বছরের বিশ্বাস এবং অত মতবাদ শেখার পর, আমার বাবা-মায়ের তখনও তাদের কাজের প্রতি সবচেয়ে মৌলিক দায়িত্বটুকুও ছিল না। এমনকি তারা গির্জার স্বার্থও রক্ষা করতে পারেনি। তারা কীভাবে কাজ করেছে তার উপর ভিত্তি করে, তাদের দায়িত্ব সরিয়ে দেওয়া ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণতা ছিল। এটা শুধুমাত্র গির্জার কাজের জন্যই ভালো ছিল না, বরং এটা তাদের জন্যও ভালো ছিল। যদি সেইভাবে ব্যর্থ হওয়া এবং হোঁচট খাওয়া তাদের নিজেদের সম্পর্কে চিন্তা করতে এবং ঈশ্বরের কাছে ফিরে যেতে সাহায্য করে, তাদের দায়িত্বের প্রতি তাদের মনোভাব পরিবর্তন করে, এটা তাদের জন্য পরিত্রাণ এবং তাদের বিশ্বাসের পথে একটা সন্ধিক্ষণ হবে। যদি তারা এইভাবে কাজ করতে থাকত, কোনো আত্ম-প্রতিফলন, অনুতাপ বা পরিবর্তন ছাড়া, তারা সত্যিই অনাবৃত এবং নির্মূল হতে পারত। আমি ভাবলাম ঈশ্বর বলেছিলেন: “কোনও ব্যক্তিকে আবশ্যিকভাবে যে পরিমাণ কষ্ট সহ্য করতে হয় বা যতটা পথ পেরোতে হয়, তা ঈশ্বরের নির্দেশেই হয়, এবং কেউই কাউকে প্রকৃতপক্ষে সাহায্য করতে পারে না” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, পথ … (৬))। আমি যা করতে পারি তা হল আমার দেখা সমস্যাগুলো তুলে ধরতে পারি এবং তাদের সাহায্য করার জন্য আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে পারি, কিন্তু তারা কোন পথ বেছে নেবে, সেটা নিয়ে আমার চিন্তা করা উচিত নয়। এটা বোঝার পর আমি মনে মনে সন্তুষ্ট হয়েছিলাম। আমি তাদের জন্য বিরক্তি অনুভব এবং কান্নাকাটি করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম, এবং সঠিকভাবে এটা বুঝতে পেরেছিলাম।
আমি এই দুটো অংশ পড়েছিলাম পরে: “আমার দ্বারা কাঙ্ক্ষিত মানুষেরা কী ধরনের হয় তা তোমাদের জানতেই হবে; যারা অপবিত্র তাদের এই রাজত্বে প্রবেশাধিকার নেই, যারা অপবিত্র তাদের অধিকার নেই এই পবিত্রভূমিকে কলুষিত করার। হয়তো তুমি অনেক কিছু করেছ, হয়তো অনেক বছর ধরে কাজ করেছ, কিন্তু তবুও, শেষ অবধি যদি শোচনীয়ভাবে অপবিত্র থেকে যাও, তাহলে আমার রাজ্যে প্রবেশের জন্য তোমার ইচ্ছা স্বর্গের আইন অনুসারে গ্রাহ্য করা হবে না! বিশ্বের ভিত্তিপত্তন থেকে আজ অবধি, আমি কখনোই তাদের সহজে আমার রাজ্যে প্রবেশাধিকার দিইনি যারা হীনভাবে আমার কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। এই বিধান স্বর্গীয়, এবং কেউ তা খণ্ডন করতে পারে না!” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সাফল্য অথবা ব্যর্থতা নির্ভর করছে মানুষ কোন পথে চলবে তার উপর)। “আমি, বয়স, জ্যেষ্ঠতা, দুর্ভোগের পরিমাণ, করে কারোর গন্তব্য নির্ধারণ করি না, এবং তারা কতমাত্রায় অনুকম্পা উদ্রেক করে সেই অনুসারে তো একেবারেই করি না, করি তারা সত্যের অধিকারী কি না, তা অনুসারে। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তোমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে, যারা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসরণ করে না, তাদেরও দণ্ড দেওয়া হবে। এ এক ধ্রুব সত্য” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, তোমার নিয়তির জন্য যথাযথ সৎকার্যসমূহ প্রস্তুত করো)। এই অংশগুলো আমাকে সত্যি নাড়িয়ে দিয়েছিল। মানুষকে রক্ষা করা যাবে কি না, তা বিচারের জন্য ঈশ্বরের একমাত্র মানদণ্ড হল তারা সত্যের অধিকারী কি না এবং তাদের স্বভাব পরিবর্তন করেছে কি না। ঈশ্বর এত বছর ধরে কাজ করেছেন এবং বহু সত্য প্রকাশ করেছেন, আমাদের এমন নির্দিষ্ট এবং বিস্তারিত আলাপ আলোচনা প্রদান করেছেন সত্যে প্রবেশ এবং পরিত্রাণ অর্জনের পথে। যতক্ষণ কেউ সত্যকে ভালবাসতে এবং গ্রহণ করতে পারে, ঈশ্বরের পরিত্রাণ অর্জনের জন্য আশা আছে। কিন্তু, কেউ যদি বছরের পর বছর বিশ্বাসের পরেও কেবলমাত্র অতিসাধারণ ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, সত্য অনুশীলন না করে বা তাদের স্বভাব পরিবর্তন না করে, তারা সত্যকে গ্রহণ করে না, বরং তারা সত্যকে ঘৃণা করে। এরকম কারো জন্য, তারা যতই ত্যাগ স্বীকার করুক বা যত বছরই কাজ করুক না কেন, বা তাদের দায়িত্ব যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক, যদি তারা সত্য অর্জন না করে বা শেষ পর্যন্ত তাদের স্বভাবগত পরিবর্তন না হয়, বরং তবুও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং গির্জার কাজকে ব্যাহত করে, তাদের উদ্ধার করা যাবে না। যারা অনেক খারাপ কাজ করে তারা ঈশ্বরের দ্বারা দণ্ডিত হবে, এবং সেটা ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণতার দ্বারা নির্ধারিত হয়। এটা দেখে, আমার কাছে এটা স্পষ্ট হল আমার বাবা-মা কীভাবে সেই জায়গাতে পৌঁছেছিলো। তারা তাদের বাড়ি এবং চাকরি ছেড়ে দিয়েছিল এবং কঠোর পরিশ্রম করেছিল, কিন্তু তারা সত্যকে ভালোবাসেনি। তারা তাদের দায়িত্বে ছিল বেপরোয়া এবং স্বেচ্ছাচারী, এবং ঈশ্বরের বাক্যের উপর ভিত্তি করে নিজেদের উপর প্রতিফলন করেনি। ভ্রাতা ও ভগিনীরা যখন তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরত, তারা শুধু অজুহাত দিত, সবসময় ভাবত যে এটা অন্য ব্যক্তির সমস্যা ছিল, যে তারা খুব বেশি আশা করেছিল। এটা আমাকে দেখিয়েছিল যে তারা সত্যকে ঘৃণা করত এবং তা গ্রহণ করত না, যেই কারণে এত বছর বিশ্বাসের পরও তাদের স্বভাব বদলায়নি। পরিবর্তে, বিশ্বাসী হিসাবে তাদের সময় এবং কাজের প্রমাণ যত সঞ্চিত হয়েছিল, তারা আরও বেশি অহংকারী হয়ে উঠেছিল। তারা যেভাবে সত্য পরিচালনা করেছিল তা থেকে আমি দেখতে পাচ্ছিলাম যে তাদের সমস্ত ত্যাগ সত্য ও জীবন অর্জনের জন্য ছিল না, বরং সেগুলো অনিচ্ছায় স্বীকার করা হয়েছিল, আশীর্বাদের জন্য। ঠিক পৌলের মত, তিনি যা করেছিলেন তা সবই ছিল ঈশ্বরের সাথে একটা চুক্তি। তিনি প্রকৃত বিশ্বাসী ছিলেন না যিনি সত্যিই নিজেকে ঈশ্বরের জন্য ব্যয় করেছিলেন। এটা আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে কেউ সত্য অনুসরণ করে কি না, তার মানবতা ভালো কি না, এবং তাকে রক্ষা করা যেতে পারে তা বিচার্য সত্যের প্রতি তাদের মনোভাবের দ্বারা। তাদের অতিসাধারণ অবদান, তারা কতটা কাজ করেছে, তারা কী দায়িত্ব পালন করেছে সে সবই অমূলক। কয়েকজন ভ্রাতা ও ভগিনী গির্জার জন্য মহান অবদান রাখতে পারে না, এবং তাদের দায়িত্ব তুচ্ছ মনে হয়, কিন্তু তারা অটল এবং মন দিয়ে কাজ করে। যার মনোযোগ দায়িত্ব পালনে, সে সত্যের সন্ধান করছে, তাদের দুর্নীতির উপর প্রতিফলন করছে, তার ব্যক্তিগত অনুশোচনা রয়েছে এবং সত্যের অনুশীলন করছে, এবং তাদের দুর্নীতিগ্রস্ত স্বভাব পরিবর্তন করছে সেই এমন ব্যক্তি যে ঈশ্বরের গৃহে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। আমি যত এটা সম্পর্কে ভাবি, ততই আমি ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণতা দেখতে পাই। মানুষের মূল্যায়নের জন্য ঈশ্বরের মান কখনই পরিবর্তিত হয়নি। আমি শুধু পরিত্রাণকে ভাগ্যের ব্যাপার হিসাবে দেখছিলাম। আমি ভেবেছিলাম ঈশ্বর তাদের পরিত্যাগ করবেন না যারা মহান ত্যাগ স্বীকার করেছে এবং কঠোর পরিশ্রম করেছে যদিও তাদের কোনো মহান অবদান না থাকে। কিন্তু আমার বাবা-মায়ের ক্ষেত্রে আমি সত্যিই ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণতা দেখেছি। ঈশ্বর মানুষের আবেগ বা ধারণার উপর ভিত্তি করে মানুষকে বিচার করেন না, বরং তিনি সত্যের মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রতিটি ব্যক্তিকে পরিমাপ করেন এবং দেখেন। এমনকি যারা গির্জায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তারাও এর ব্যতিক্রম নয়।
আমি পরে আরো কিছু অংশ পড়েছিলাম যা আমার জন্য খুব আলোকিতকর এবং স্বস্তিদায়ক ছিল। ঈশ্বর বলেন, “একদিন, যখন তুমি কিছু সত্য বুঝতে পারবে, তুমি আর মনে করবে না যে তোমার মা-ই শ্রেষ্ঠ মানুষ, বা তোমার বাবা-মা-ই সবচেয়ে ভালো মানুষ। তুমি উপলব্ধি করবে যে তারাও এই কলুষিত মানবজাতিরই সদস্য, এবং তাদের কলুষিত স্বভাবও সকলেরই মতো। একমাত্র যা তাদের পৃথক করে তা হল তোমার সাথে তাদের রক্তের সম্পর্ক। যদি তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস না করে তাহলে অবিশ্বাসীদের সাথে তাদের কোনো পার্থক্য নেই। তুমি তাদের দিকে আর একজন পারিবারিক সদস্যের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখবে না, বা তোমার রক্ত-সম্পর্কের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখবে না, বরং সত্যের পরিপ্রেক্ষিত থেকে দেখবে। কোন কোন মূল বিষয়গুলোর দিকে তোমার দৃষ্টিপাত করা উচিত? তোমার দেখা উচিত ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, জগৎ সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, বিভিন্ন বিষয় পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, ঈশ্বরের প্রতি তাদের মনোভাব। এই দিকগুলো যদি তুমি নির্ভুলভাবে দেখতে পারো, তাহলে তুমি স্পষ্টভাবে দেখতে সক্ষম হবে যে তারা ভালো মানুষ না খারাপ। যদি একদিন তুমি দেখতে পাও যে তারাও তোমার মতোই, তাদের ভ্রষ্ট স্বভাব রয়েছে, আর তার চেয়েও বেশি, তুমি তাদের যেমন সহৃদয় মানুষ বলে কল্পনা করে নিয়েছিলে, যাদের তোমার প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা রয়েছে, তারা তেমন নয়, অথবা তারা একেবারেই সত্যের দিকে অথবা জীবনে সঠিক পথের দিকে তোমাকে পরিচালিত করতে পারে না, এবং যদি তুমি পরিষ্কারভাবে দেখতে পাও যে তারা তোমার জন্য যা করেছে তা তোমার পক্ষে বিরাট উপকারী কিছু নয়, জীবনে সঠিক পথ গ্রহণ করার বিষয়ে সেটার কোনো তাৎপর্যই নেই, তুমি যদি জানতে পারো যে তাদের অনেক অভ্যাস ও মতামতই সত্যের বিপরীত, তারা দেহসর্বস্ব, এবং তার ফলে তুমি তাদের ঘৃণা করো, তাদের প্রতি বিরাগ ও বিতৃষ্ণা অনুভব করো, তাহলে এই বিষয়গুলোর আলোকে তুমি তোমার অন্তরে তাদের সঠিকভাবে বিবেচনা করতে সমর্থ হবে, এবং তুমি আর তাদের অনুপস্থিতি অনুভব করবে না, তাদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হবে না, বা তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে অসমর্থ হবে না। তারা বাবা-মা হিসাবে তাদের লক্ষ্য পূর্ণ করেছে, এবং তুমি তাদেরকে আর তোমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মানুষ হিসাবে মনে করবে না বা আদর্শজ্ঞান করবে না। পরিবর্তে, তুমি তাদের সাথে সাধারণ মানুষের মতোই আচরণ করবে, আর তখন, তুমি সম্পূর্ণভাবে আবেগের বন্ধন থেকে অব্যাহতি পাবে, এবং নিজের আবেগ ও পারিবারিক স্নেহ থেকে যথার্থই তোমার উত্থান ঘটবে” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র ভ্রষ্ট স্বভাবের সংশোধনই প্রকৃত পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে)। “প্রচুর মানুষ প্রভূত অর্থহীন আবেগজনিত কষ্ট ভোগ করে। এগুলো সবই অপ্রয়োজনীয় ও নিরর্থক কষ্টভোগ। আমি কেন এমন বলছি? কারণ মানুষ সর্বদাই তাদের আবেগের দ্বারা সীমাবদ্ধ, তাই তারা সত্যের অনুশীলন করতে বা ঈশ্বরকে মান্য করতে পারে না। আবেগের দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকা কারো কর্তব্য পালনের ও ঈশ্বরকে অনুসরণ করার পক্ষে খুবই ক্ষতিকর, এবং তাছাড়াও তা জীবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে এক সুবিশাল বাধাস্বরূপ। তাই, আবেগজনিত সীমাবদ্ধতার কারণে কষ্টভোগ করার কোনো অর্থ নেই, এবং ঈশ্বর তা সসম্মানে স্মরণ করেন না। তাহলে এই অর্থহীন কষ্টভোগ থেকে তুমি কীভাবে মুক্তি পাবে? তোমার অবশ্যই সত্যকে উপলব্ধি করতে হবে। একবার যখন তুমি এই রক্তমাংসের সম্পর্কগুলোর সারমর্ম দেখতে ও বুঝতে পারবে, তখন সহজেই দেহের সীমাবদ্ধতা থেকে অব্যাহতি পেতে পারবে। … মানুষকে আবদ্ধ করার জন্য শয়তান পারিবারিক স্নেহকে ব্যবহার করে। মানুষ যদি সত্যকে উপলব্ধি করতে না পারে, তাহলে সহজেই তারা প্রতারিত হবে। মানুষ প্রায়ই মূল্য প্রদান করে ও কষ্টভোগ করে, কাঁদে, এবং তাদের বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজনের জন্য যন্ত্রণা সহ্য করে। এটা অজ্ঞতা এবং মূর্খতা। তোমার চাওয়া এই কৃচ্ছ্রসাধন সম্পূর্ণ স্ব-আরোপিত, মূল্যহীন, ও নিরর্থক; ঈশ্বর একেবারেই তা সসম্মানে স্মরণ করেন না, এবং বলা যেতে পারে যে তা বিশুদ্ধ কষ্টভোগ ছাড়া আর কিছুই নয়! যেদিন তুমি সত্যকে উপলব্ধি করবে, সেদিন তুমি মুক্ত হবে, আর অনুভব করবে যে ঐসব কষ্টগুলো ভোগ করার সময়ে তুমি কত অজ্ঞ ও মূর্খ ছিলে, এবং তা ছিল তোমার অন্ধত্ব, অজ্ঞতা, সত্য বিষয়ক উপলব্ধির অভাব, আর দৃষ্টিভঙ্গিতে স্বচ্ছতার অভাব, তা অন্য কারোরই দোষ ছিল না” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র ভ্রষ্ট স্বভাবের সংশোধনই প্রকৃত পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে)। এটা পড়া আমার জন্য খুব আবেগপূর্ণ ছিল। ঈশ্বর আমাদের কত ভালো বোঝেন! আমার সমস্ত অশ্রু এবং আমার অপ্রয়োজনীয় কষ্টের কারণ ছিল আমি খুব আবেগপ্রবণ ছিলাম এবং কিছু বুঝতে পারিনি। আগে, আমি সত্য বুঝিনি বা আমার বাবা-মায়ের সম্পর্কে ধারণা ছিল না, বরং আমি শুধু ভাবতাম তারা মহান, খুবই প্রশংসনীয়, যে তারা আমার পথিকৃৎ এবং আমার তাদের মত হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। আমি এমনকি এও ভেবেছিলাম যে তারা এমন লোক যাদের উদ্ধার করা যেতে পারে, কিন্তু যখন আমি তাদের সত্য ঈশ্বরের বাক্যের আলোয় দেখেছিলাম, আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমি কতটা ভুল ছিলাম এবং অবশেষে তারা আসলে কী ধরণের মানুষ ছিল তা নিয়ে একটা ধারণা হয়েছিল। আমি তাদের মধ্যে এমন অনেক কিছু দেখেছিলাম যা আমি কেবল অপছন্দই করতাম না, বরং ঘৃণাও করতাম। আমি তাদের প্রশংসা ও শ্রদ্ধা করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম, এবং আমি আর তাদের জন্য কষ্ট পাচ্ছিলাম না বা কান্নাকাটি করছিলাম না। আমি তাদের সঠিকভাবে এবং নিরপেক্ষভাবে দেখতে সক্ষম হয়েছিলাম।
এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমি দেখেছিলাম যে আমি আমার অনুভূতি নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলাম, এবং যখন আমি পার্থিব স্নেহের মধ্যে বাস করতাম, আমি শুধু ভাবছিলাম আমার বাবা-মা কতটা কষ্ট পাচ্ছে, এবং মানতে পারছিলাম না গির্জার বিষয়গুলো পরিচালনা করার পদ্ধতি। আমি প্রতিরোধী ছিলাম, এবং এমনকি ভেবেও ছিলাম যে ঈশ্বর ধার্মিক নন। তারপর আমি বুঝলাম কেন ঈশ্বর মানব স্নেহ ঘৃণা করেন। কারণ এটার দ্বারা বেঁচে থাকা আমাদের ঠিক-ভুল, ভালো-মন্দের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে, এবং ঈশ্বরের থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে দেয়। আমি আগে নিজেকে চিনতাম না। যখন ভ্রাতা ও ভগিনীরা তাদের আত্মীয়দের বরখাস্ত বা বহিষ্কৃত হতে দেখেছিল, এবং তারা কয়েক দিন কান্নাকাটি করেছিল, আমি তাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম যে আমার সাথে যদি এমন হয়, আমি এত দুর্বল হব না। কিন্তু যখন আমি সত্যি একই জিনিসের সম্মুখীন হচ্ছিলাম, আমি অন্য কারো তুলনায় অনেক দুর্বল ছিলাম, এবং আমি প্রায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমি শুধু কয়েকবার কাঁদিনি, বরং আমি বিষণ্ণ ছিলাম এবং এটা আমার দায়িত্বকে প্রভাবিত করেছিল। আমি দেখেছিলাম আমি নির্বোধ এবং বোকা, একেবারেই যুক্তিহীন ছিলাম। এই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, আমি সেই ভ্রাতা ও ভগিনীদের জন্য কিছু জ্ঞান অর্জন করেছিলাম যারা সংগ্রাম করেছিল তাদের পার্থিব স্নেহ থেকে মুক্ত হওয়ার, এবং আমি আমার অতীতের অজ্ঞতা এবং গর্ব করার জন্য কিছুটা লজ্জা পেয়েছিলাম। আমি এও শিখেছিলাম যা কিছু ঘটে সেই সবের মধ্যেই সন্ধানের জন্য সত্য রয়েছে। সবসময় একটা শিক্ষা নেওয়ার এবং বিচক্ষণতা বিকাশের সুযোগ রয়েছে। আমাদের এমন আচরণ করতে হবে চারপাশের প্রত্যেকের সাথে, এমনকি আমাদের নিজের বাবা-মায়ের সাথেও, যা হবে ঈশ্বরের বাক্য এবং সত্য অনুসারে। তখন আমরা আমাদের স্নেহ এবং কল্পনার মাধ্যমে তাদের দেখব না, এবং ঈশ্বরের বিরোধিতা করার জন্য কিছু করব না। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।