একজন ডাক্তারের পছন্দ
যখন ছোট ছিলাম, আমার পরিবার খুব গরিব ছিল। আমার মা পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী ছিল, সারা বছর ওষুধ খেত, বাবা বহু বছর ধরে গ্রামের বাইরে কাজ করত। গ্রামের মানুষ আমাদেরনিচু চোখে দেখত, আমার ভাই-বোনদের প্রায়ই দুর্বৃত্তদের পীড়নের শিকার হতে হতো। আমার বয়স যখন সাত বছর, তখন এক দুর্বৃত্ত আমাকে একবার তাড়া ও মারধর করে। এত ভয় পেয়েছিলাম যে আমার হৃদরোগ হয়ে যায়। আমাদের কাছে চিকিৎসার টাকা না থাকায় সমস্যা রয়েই যায়। তাই সেই মুহুর্তে আমি সিদ্ধান্তনিই যে বড় হয়ে ডাক্তার হব, আমার মায়ের আর নিজের চিকিৎসা করব, প্রচুর টাকা উপার্জন করব যাতে আমার পরিবার ভালো জীবনযাপন করে আর সম্মান পায়।
মেডিকেল স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পর, উপনগরেরএকটাক্লিনিকে কাজশুরু করি। ছোট ক্লিনিকে কাজ করে সন্তুষ্ট ছিলাম না, তাই শহরের হাসপাতালে বদলি হওয়ার জন্য নিজের পেশাদারী দক্ষতা বাড়াবার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে থাকি। এটা নিশ্চিত করতে একটা বড় হাসপাতালে আরো পড়াশুনা ও প্র্যাকটিস করি। ক্লিনিকে ফিরে পদোন্নতি পেতে কঠোর পরিশ্রম করি। দিনরাত কাজ করতাম আর প্রতিদিন এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়তাম যে পিঠে ব্যথা হয়ে যেত। বাড়ি ফিরে ঘুমানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারতাম না। অবশেষে আমাকে শহরের একটা বিশেষজ্ঞ হাসপাতালে বদলি করা হল। তিন বছর পর পদোন্নতি পেয়ে ডাক্তার হলাম। যেহেতু আন্তরিকভাবে আর দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছি, আর সুদক্ষও ছিলাম, তাই হাসপাতালে খুব জনপ্রিয় ছিলাম, আর বহু মানুষ আমাকে দেখাতে আসত। ধীরে ধীরে আরো টাকা উপার্জন করে ভাইয়ের ব্যবসায় বিনিয়োগ করলাম। শ্বশুর-শাশুড়ি প্রায়ই অন্যদের সামনে আমার প্রশংসা করত আর স্বামীও আমাকে খুব ভালোবাসত। এসবই আমার আত্মমর্যাদা তৃপ্ত করত, আর ভাবতাম কী দারুণ জীবনযাপন করছি।
কিন্তু এসবের জন্য মূল্য দিতে হয়েছিল। দীর্ঘদিনের কাজের চাপ আর অনিয়মিত সময়সূচির কারণে অনিদ্রায় ভুগতে থাকি। অবস্থাআরো খারাপ হতে থাকে, যত ওষুধই খাই কোনো কাজ হচ্ছিল না। তারপরে আমার পেটের সমস্যা আর লাম্বার স্পন্ডিলোসিস হয়, তার ওপর, হৃদরোগ তো ছিলই। বাচ্চার কান্না শুনলেই, আমার মাথা ব্যথা হত, বুক ধড়ফড় করত আর হাত কাঁপত। স্থানীয় চিকিৎসকরাবলেছিল আমার ভেন্ট্রিকুলার ফাইব্রিলেশন হৃদরোগহয়েছে, মানে, আমি সামান্যতম উত্তেজনাও সহ্য করতে পারতাম না, এবং এর আরোগ্যের কোনো নথিবদ্ধ প্রমাণ ছিল না। কেবল কার্ডিওভাস্কুলার যত্নের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যেত। তাদের কথা শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। হতাশ হয়ে পড়লাম। ভাবলাম, এত অল্প বয়সে এমনদুরারোগ্য রোগ হল। টাকা আর খ্যাতি এখনকী কাজে লাগবে? সেসব আমার ব্যথা আদৌ কমায়নি। তারপর ভাবলাম প্রতিদিন অন্যের রোগের চিকিৎসা করছি, কিন্তু নিজের রোগ সারাতে পারছি না। ব্যথা আর হতাশায় ডুবে গেলাম। যখন রাতে ঘুমাতে পারতাম না, ছাদের দিকে তাকিয়ে শুধু নীরবে চোখের জল ফেলতাম। এভাবে বেঁচে থাকা খুব কঠিন মনে হত। খুব অসহায় বোধ করতাম। ভাবতাম, আমার জীবন শুরু হতে না হতেই এমন রোগে আক্রান্ত হলাম, জানতাম না ভবিষ্যতে কীভাবে বাঁচব। এভাবে বেঁচে থেকেকী লাভ?
যখন ব্যথায় অসহায় হয়ে পড়েছিলাম তখনই প্রভু যীশুর পরিত্রাণ পেলাম। প্রভুর উপর বিশ্বাস রাখার পর, আমার এত বছরের পুরনো হৃদরোগ আর অনিদ্রা অলৌকিকভাবে সেরে গেল। আমার প্রতি প্রভুর অগাধ অনুগ্রহের জন্য আমি কৃতজ্ঞ। প্রভুর ভালোবাসার প্রতিদান দিতে সক্রিয়ভাবে সমাবেশে যোগ দিতাম আর সুসমাচার প্রচার করতাম। ২০০৬ সালের জুলাইয়ে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ গ্রহণ করে প্রভুর প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানালাম। খুব উত্তেজিত ছিলাম। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরেরবাক্য ভোজন ও পান করে, বুঝেছিলাম তাঁর কাজের তিন পর্যায়ের রহস্য আর পরিচালনামূলক পরিকল্পনার, উদ্দেশ্য আরো বুঝি তিনি অন্তিম সময়ে বিচারকার্য করেন, পাপ আর শয়তানের কুপ্রভাব থেকে মুক্ত করে আমাদের ঈশ্বরের সুরক্ষা দিতে, সর্বোপরি আমাদের ঈশ্বরের রাজ্যে নিতে। ঈশ্বরেরবাক্যে, আমি উদ্ধার পাওয়ার ও স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করার আশা পেয়েছিলাম, আমার ক্ষুধার্ত আত্মার কাছে এটা ছিল খাবারের মতো। একদিন সর্বশক্তিমান ঈশ্বরেরবাক্যের এই অনুচ্ছেদ পড়লাম, “তুমি কি তোমার কাঁধের ভার, তোমার উপর অর্পিত কাজ, ও তোমার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন? ঐতিহাসিক লক্ষ্য সম্পর্কে তোমার উপলব্ধি কোথায়? পরবর্তী যুগে কীভাবে তুমি মালিক হিসাবে ভালোভাবে কাজ করবে? মালিক হওয়া কী, সে সম্পর্কে কি তোমার প্রগাঢ় অনুভূতি রয়েছে? সকল বিষয়ের মালিককে কীভাবে ব্যাখ্যা করবে তুমি? তা কি সত্যিই জগতের সকল জীব, সমস্ত জাগতিক বস্তুর মালিক? কাজের পরবর্তী পর্যায়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কী পরিকল্পনা আছে তোমার? কতজন মানুষ তোমাকে তাদের পালক রূপে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে? তোমার কাজের ভার কি বেশি? ওরা গরিব, অভাগা, অন্ধ, বিভ্রান্ত, অন্ধকারে বিলাপ করছে—পথ কোথায়? আকুল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তারা অপেক্ষা করছে আলোর জন্য, যেন এক উল্কার মতো তা সহসা নেমে এসে দূর করে দেবে অন্ধকারের শক্তিকে যা এত বছর ধরে মানুষের ওপর অত্যাচার করে এসেছে! কে-ই বা সম্পূর্ণরূপে জানতে পারে কতটা উদ্বিগ্নভাবে তারা আশা করছে, এবং কীভাবে আকুল হয়ে দিনরাত এর জন্য অপেক্ষা করছে? এমনকি যেদিন সেই আলো চকিতে ছুটে যায়, সেদিনও গভীর যন্ত্রণাক্লিষ্ট এই মানুষগুলো মুক্তি পাওয়ার আশা হারিয়ে বন্দি হয়ে থেকে যায় অন্ধকার কারাকুঠুরিতে। কখন চোখের জল আর ফেলতে হবে না তাদের? এই দুর্বল আত্মাদের দুর্ভাগ্য অপরিসীম যাদের কখনো বিশ্রাম নিতে দেওয়া হয়নি, সুদীর্ঘকাল ধরে তারা এই অবস্থাতেই আবদ্ধ হয়ে রয়েছে নিষ্ঠুর বন্ধন ও হিমায়িত ইতিহাসের দ্বারা। কে-ই বা শুনেছে তাদের বিলাপের শব্দ? কে প্রত্যক্ষ করেছে তাদের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা? কখনও কি তোমার মনে হয়েছে ঈশ্বরের হৃদয় কতটা দুঃখিত, কতটা উদ্বিগ্ন? যে নিষ্পাপ মানবজাতিকে তিনি নিজের হাতে সৃষ্টি করেছেন তাদের এত কষ্ট ভোগ করতে দেখে তিনি কীভাবে সহ্য করবেন? সর্বোপরি, মানুষ হল সেই শিকার যাদের বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে। এবং যদিও মানুষ আজ পর্যন্ত অস্তিত্বরক্ষা করতে পেরেছে, কিন্তু কে জানতে পারতো যে মানবজাতি দীর্ঘদিন ধরে সেই মন্দ একজনের বিষপ্রয়োগের শিকার হয়ে চলেছে? তুমি কি ভুলে গেছ যে তুমিও সেই শিকারদের মধ্যে একজন? যারা বেঁচে থাকতে পেরেছে, ঈশ্বরের প্রতি তোমার ভালোবাসা থেকে তুমি কি তাদের উদ্ধারের জন্য গভীর প্রচেষ্টা করতে চাও না? মানবজাতিকে যিনি আপন রক্ত-মাংসের মতো ভালোবাসেন, সেই ঈশ্বরকে তা পরিশোধ করার জন্য তুমি কি নিজের সমস্ত শক্তি সমর্পন করতে ইচ্ছুক নও?” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের প্রতি তোমার কীভাবে অগ্রসর হওয়া উচিত?)। ঈশ্বরেরবাক্যে অনুপ্রাণিত হই। তিনি আশা করেন আমরা ঈশ্বরের সুসমাচার প্রচারকরব, তাদের কাছে যারা এখনোঈশ্বরের আবির্ভূত হওয়ারকথা জানে না, যাতে তারা ঈশ্বরের পরিত্রাণ গ্রহণ করতে পারে, শয়তানের দ্বারা আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের ভালোবাসা এতই মহান! যখন ভেবেছিলাম আমি কত ভাগ্যবান যে প্রভুর কণ্ঠস্বর শুনেছি তাঁকে স্বাগত জানাতে পেরেছি, তখন নিজের গির্জায়, ঈশ্বর ফিরে এসেছেন তা জানাতে সুসমাচার প্রচার করতে চেয়েছিলাম। তাই কাজের সময় সুসমাচার প্রচার করেছিলাম। তখন, পবিত্র আত্মার মহান কাজের কারণে, আমার নিজের ধর্মীয় বর্গের পাঁচটা গির্জা থেকে কিছু নেতা, সহকর্মী আর বিশ্বাসীরা ঈশ্বরের নতুন কাজ গ্রহণ করে একটা নতুন গির্জা প্রতিষ্ঠা করে। আমাকেযাজককরে গির্জার কাজের ভার দেওয়াহয়। ঈশ্বরের আশীর্বাদ আর নির্দেশনা বোঝার পর, ভাবলাম, “গির্জার কাজে মানুষকে ঈশ্বরের ঘরে ফিরিয়ে আনার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।”
২০০৭ সালের মার্চে, একদিন সুপারভাইজার বলল আমাকে গির্জার নেতা হিসেবে প্রশিক্ষণ দিতে চায়। একটু ইতস্তত করলাম। এটা ভাল, তবে গির্জার নেতা হওয়া মানে পুরো গির্জার কাজের জন্য দায়ী থাকা, ফলে কাজে যাওয়ার সময় নাও পেতে পারি, এমনকি কাজটাই ছাড়তে হতে পারে। তাতে আমার এত বছরের পরিশ্রম বৃথা হয়ে যাবে না? তাছাড়া আমার স্বামী নির্ঘাত ঝামেলা করবে। এই ভেবে তখন সেই দায়িত্ব নিইনি। কিন্তু পরে খুবঅপরাধ বোধ হল। যেন ঈশ্বরেরকাছে ঋণী রয়ে গেলাম। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে আমাকে পথ দেখাতে বললাম। প্রার্থনার পর ঈশ্বরেরবাক্যের এই অনুচ্ছেদ পড়লাম, “আমি যদি এখনই তোমাদের সামনে কিছু অর্থ রাখতাম এবং তোমাদের স্বাধীন ভাবে বেছে নিতে বলতাম—এবং যদি আমি সেই নির্বাচনের জন্য তোমাদের নিন্দা না করতাম—তাহলে তোমাদের মধ্যে বেশিরভাগই অর্থ বেছে নেবে আর সত্যকে পরিত্যাগ করবে। তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তিরা অর্থ পরিত্যাগ করে অনিচ্ছা সহকারে সত্যকে নির্বাচন করবে, আবার এর মাঝামাঝি ব্যক্তিরা এক দিকে অর্থকে এবং অন্য দিকে সত্যকে বেছে নেবে। তোমাদের আসল রূপ কি এইভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠবে না? সত্য এবং তোমরা যার প্রতি অনুগত এমন কিছুর মধ্যে নির্বাচনের ক্ষেত্রে তোমরা সকলেই এটাই বেছে নেবে, আর তোমাদের মনোভাব একই থাকবে। তাই নয় কি? তোমাদের মধ্যে কি এমন অনেকেই নেই যারা ন্যায় ও অন্যায়ের দোলাচলে ভুগেছে? ইতিবাচক এবং নেতিবাচক, কালো এবং সাদার দ্বন্দ্বে, তোমরা পরিবার এবং ঈশ্বর, সন্তান এবং ঈশ্বর, শান্তি এবং বিচ্ছিন্নতা, ধনসম্পদ এবং দারিদ্র্য, মর্যাদা এবং সাধারণত্ব, সমর্থন পাওয়া এবং অবহেলিত হওয়ার মধ্যে করা নির্বাচনের বিষয়ে তোমরা অবশ্যই সচেতন। … বহু বছরের আত্মোৎসর্গ এবং প্রচেষ্টার পরিবর্তে তোমাদের দ্বারা পরিত্যক্ত হওয়া এবং হতাশা ছাড়া আমি আর কিছুই পাইনি, তবে তোমাদের প্রতি আমার আশা প্রতিদিন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ আমার সেই দিবস সকলের সম্মুখে সম্পূর্ণরূপে প্রতীয়মান। তবুও তোমরা অন্ধকার এবং মন্দ জিনিসের সন্ধানে অবিরত নিয়োজিত রয়েছ এবং সেগুলি পরিত্যাগ করতে অস্বীকার করছ। তাহলে, তোমাদের পরিণাম কী হবে? তোমরা কখনও কি এই বিষয়ে বিচক্ষণতার সঙ্গে ভাবনা-চিন্তা করেছ? যদি তোমাদের আবার নির্বাচন করতে বলা হয়, তাহলে তোমাদের অবস্থান কী হবে?” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, তুমি কার প্রতি অনুগত?)। ঈশ্বরের বাক্যের কথা চিন্তা করে খুব লজ্জাপেলাম। যেন ঈশ্বরআমাকে সামনাসামনি বিচার করছেন। ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার দাবি করলেও, সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ডাক্তার হিসাবে আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ ধরে রাখতে, নিজের দায়িত্ব প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। বুঝলাম যে ঈশ্বর নয়, সুনাম আর মর্যাদা আমার সবচেয়ে প্রিয় ছিল। শয়তানকে অনুসরণ করছিলাম, তার অনুগত থেকে, ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছিলাম। এটা ভেবে ভীষণ অপরাধ বোধ হল। আমি কিন্তু অন্য বিকল্প বেছে নিতে চেয়েছিলাম, কাজ ছেড়ে ঈশ্বরের জন্য নিজেকে ব্যয় করতে চেয়েছিলাম। জানতাম যে চাকরি ছাড়ায় আমার পরিবার মত দেবে না। চাকরিটা তখন ছাড়তে পারিনি। তখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম তিনি যেন আমাকে পথ দেখান। প্রার্থনার পর ঈশ্বরেরবাক্যের এই স্তোত্র মনে পড়ল, “সবচেয়ে সার্থক জীবন।” “তুমি হলে এক সৃষ্ট সত্তা—তোমার অবশ্যই ঈশ্বরের উপাসনাএবং একটি অর্থপূর্ণ জীবনের অন্বেষণ করা উচিত। যেহেতু তুমি একজন মানুষ, তাই তোমার উচিত ঈশ্বরের জন্য নিজেকে ব্যয় করা এবং সমস্ত দুঃখকষ্ট সহ্য করা! আজ তুমি যে সামান্য কষ্টের শিকার হয়েছ তা তোমার সানন্দে এবং নিশ্চিতভাবে গ্রহণ করা এবং ইয়োব ও পিতরের মতো একটি অর্থপূর্ণ জীবনযাপন করা উচিত। তোমরা হলে এমন মানুষ যারা সঠিক পথ অনুসরণ করে, যারা উন্নতি করতে চায়। তোমরা হলে এমন মানুষ যারা অতিকায় লাল ড্রাগনের দেশে উত্থিত হয়েছ, যাদেরকে ঈশ্বর ধার্মিক হিসাবে অভিহিত করেন। এ-ই কি সর্বাধিক অর্থবহ জীবন নয়?” (মেষশাবককে অনুসরণ করুন ও নতুন গীত গান)। এই স্তোত্র গেয়ে নিজেকে অপরাধী মনে হল। সৃষ্ট সত্ত্বা হিসাবে আমার সবকিছুই ঈশ্বরের থেকে এসেছে, ঈশ্বরের অসীম অনুগ্রহ উপভোগ করেছি, ঈশ্বরের থেকে জীবনের অনেক বাণী পেয়েছি, অথচ তাঁর ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চাইনি। আসলে আমার চাকরি আর ভবিষ্যতের স্বার্থেই নিজের দায়িত্ব প্রত্যাখ্যান করেছি। এরপরেও নিজেকে বিবেকবান বলি কীভাবে? জোবের কথা ভেবে দেখলাম। সে প্রাচ্যে বিখ্যাত ছিল, তার প্রচুর টাকাও ছিল, কিন্তু সে খ্যাতি আর টাকার কথা ভাবেনি। সর্বস্ব হারানোর পরেও সে ঈশ্বরের আয়োজন মানতে পেরেছিল, সে সাক্ষ্যে অবিচল থেকে শয়তানকে নত করেছিল। আরপিতর, প্রভু যীশুর আহ্বান শুনে সে সবকিছু ছেড়ে প্রভুকে অনুসরণ করেছিল। সে সর্বত্র প্রভু যীশুর সুসমাচার প্রচার করেছিল, সে ঈশ্বরপ্রেমের অন্বেষণ করে, পরিশেষে ঈশ্বর তাকে নিখুঁত করে তোলেন। ভাবলাম, “তাদের অনুসরণ করতে হবে, কর্তব্য পালন করতে হবে নিজের স্বার্থ এবং নিজের ভবিষ্যতের কথা না ভেবে।” এই কথা ভেবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, তিনি যেন আমাকে আত্মবিশ্বাস আর শক্তি দেন, আমাকে পথ দেখান। পরে, আবাসিক রোগীদের অনবরত কোলাহলের কারণে আমার হার্ট অ্যাটাক হয়। এই সুযোগে হাসপাতাল থেকে ছয় মাসের অসুস্থতাকালিন ছুটি চাইলাম, আরপূর্ণকালীন দায়িত্ব পালনশুরু করলাম।
ছয় মাসের ছুটি দেখতে দেখতে ফুরিয়ে গেল, হাসপাতালের প্রধান আমাকে কাজেফিরতে বলল। তখন গির্জায় সুসমাচারের কাজ খুব ব্যস্ততার সাথে চলছে, তাই স্বামীর সাথে আলাপ করলাম যে আগামী বছর কাজে ফিরব। কিন্তু দুই মাস পরে হাসপাতাল থেকে বারবারবলল কাজে ফিরতে, নইলে চাকরিযেতেপারে। স্বামীও আমাকে কাজেফিরতে তাড়া দিতে লাগল। তখন একটু, চিন্তিত হয়ে পড়লাম, “কী করা উচিত? কাজে না গেলে, বছরশেষে আমার চাকরিটা যাবে। সেটা হলে, আমার এত বছরের পরিশ্রম বৃথা হয়ে যাবে না? কিন্তু কাজে গেলে দায়িত্ব পালনের জন্য খুব বেশি সময় পাব না। মন দিয়ে কাজ করতে না পারলে, গির্জার কাজ প্রভাবিত হবে।” এসব ভেবে আর ফিরে যেতে রাজি হইনি। যখন স্বামী আমাকে আর বোঝাতে পারল না, তখন আমাকে বোঝাতে, আমার ভাই আর ভায়ের স্ত্রীকে আনল। আমার ভাই বলল, “ওকে বাড়িতে রাখো, বাইরে যেতে দিও না। বাগে না আনতে পারলে পা ভেঙে দেবে। সে বিকলাঙ্গ হলেও যতদিন বাড়িতে থাকবে ততদিন চাকরিও থাকবে। কিন্তু চাকরি না থাকলে আমরা সব কিছু হারাব।” এই কথা শুনে ভেঙে পড়লাম। ভাবছিলাম, “ঈশ্বরে বিশ্বাস রেখে সঠিক পথে চলেছি বলে তোমরা আমার সাথে এমন করছ। অতীতে, যখন আমি সফল ছিলাম, তখন আমার সাফল্যে তোমরা খুশি হতে, আমার প্রশংসা করতে। কিন্তু এখন আমার ঈশ্বরে বিশ্বাস ও দায়িত্ব পালনে তোমাদের লাভ হবে না দেখে একসাথে আমাকে আটকাতে চাইছ, পাষাণের মত কথা বলছ।” যতভাবছিলাম, ততইহতাশ হচ্ছিলাম। মানুষের ভালোবাসা কতটা নিস্পৃহ, তা বুঝতে পারলাম। তারপর ভাবলাম, “হাসপাতাল যদি সত্যিই আমাকে বরখাস্ত করে?” নিঃশব্দে ঈশ্বরের প্রার্থনা করলাম, তখন তাঁরবাক্যের একটা অনুচ্ছেদ মনে পড়ল। “আমার অভিপ্রায়সমূহ তোমার কাছে প্রকাশিত হয়েছে এবং তুমি তা উপেক্ষা করতে পারো না। বরং তাতেই তোমাদের যাবতীয় মনোযোগ একাগ্র করবে, এবং, অন্যান্য সবকিছু পরিহার করে, তা-ই কায়মনোবাক্যে অনুসরণ করবে। আমি সর্বদাই তোমাকে আমার করপুটে রাখবো। সবসময় গোবেচারা হয়ে থেকো না, এবং স্বামী কিংবা স্ত্রীর নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে থেকো না; তোমায় আমার অভিপ্রায়কে ফলপ্রসূ হওয়ার সুযোগ দিতেই হবে” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সূচনাকালে খ্রীষ্টের বাক্য, অধ্যায় ৯)। ঈশ্বরেরবাক্য আমাকে আত্মবিশ্বাস আর সাহসদিল। ঈশ্বর স্রষ্টা, সবকিছুর উপর তাঁরই কর্তৃত্ব। আমার বরখাস্ত হওয়া ঈশ্বরের সার্বভৌম ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে। বিশ্বাসকরলামঈশ্বর আমা কেপথ করে দে বেন। স্বামী আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। পরিবার আমাকে যতইনিপীড়ন করুক, ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে বদ্ধপরিকর ছিলাম। ঈশ্বরের ভালোবাসা আর নিঃস্বার্থ স্বভাবের কথা ভেবে আরো অনুপ্রাণিত হলাম। ঈশ্বর বলেন, “ঈশ্বর সর্বদা সর্ব প্রকার কষ্ট সহ্য করেও চেষ্টা করেন মানবজাতির অস্তিত্বরক্ষার জন্য, তথাপি মানুষ আলোর অথবা ন্যায়পরায়ণতার জন্য কোনো অবদানই রাখে না। যদি কখনও একবারের জন্যে কোনো চেষ্টা করেও, সে চেষ্টা একটা আঘাতও সহ্য করতে পারে না, কারণ তার সব প্রচেষ্টাই সবসময় নিজের জন্য, অপরের জন্য নয়। মানুষ সর্বদা স্বার্থপর, আর ঈশ্বর চিরকালই নিঃস্বার্থ” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরের স্বভাব বোঝা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়)। ভ্রষ্ট মানুষ স্বার্থপর, কিন্তু ঈশ্বর নিঃস্বার্থ। ঈশ্বর যেভাবেই করেন না কেন, তিনি যাই করেন, মানুষের স্বার্থেই করেন, যাতে আমরা সত্য বুঝতে পেরে জীবনে সঠিক পথে এগিয়ে যাই আর যাতে তিনি আমাদের উদ্ধার করতে পারেন। ঈশ্বর মানুষের জন্য যতই করুন, আমাদের কাছে কিন্তু কিছুই চান না। তিনি আড়াল থেকে আমাদের জন্য সব কিছু করেন। কিন্তু আমি নিজের জন্য, নিজের স্বার্থের জন্যই সব কিছু করেছি। দায়িত্ব পালন করা আর গির্জার কাজ তদারকি করা আমার দায়িত্ব আর কাজ হলেও, ভয় পেয়েছিলাম যদি আমার চাকরি চলে যায়, তাহলে খ্যাতি, টাকা আর পারিবারিক সম্প্রীতি হারাবো, তাইকর্তব্যে বিমুখহয়েছি। আমি ছিলাম স্বার্থপর, নীচ, আর অমানবিক! এছাড়াও, আমার পরিবারের নিপীড়নের মধ্য দিয়ে, মানুষের আবেগের দিকটাও কিছুটা বুঝতে পেরেছি। আগে আমার ভাল চাকরি ছিল বলে পরিবার আমার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করত। তাদের সাহায্য করতে পারতাম বলে, তারা আমাকে হাসিমুখে স্বাগত জানাত। এখন শুধু সুসমাচার প্রচার করি আর চাকরি হারা তে পারি বলে, তারা আমাকে নিপীড়ন করে আর বাধা দেয়। তাহলে আর ভালোবাসার সম্পর্ক কোথায়? সম্পর্কটা শুধু দেওয়া-নেওয়ার। পরিবারের ভালোবাসাও স্বার্থ-নির্ভর। তারা আমাকে শুধু টাকা, খ্যাতি আর দৈহিক সুখের পিছনে ছুটতে বাধ্য করেছিল। আমার জন্য ভালোবাসা ছিল না। আমাকে আঘাত আর ক্ষতি করছিল। এটা বোঝার পর আর শয়তানের সেবা করতে চাইনি। শুধু আপন কর্তব্য করে ঈশ্বরের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চেয়েছিলাম।
হঠাৎ করে, স্বামী আমাকে ঘর থেকে বের হতে বাধা দেয়। এমনকিহুমকি দেয়, “কাজে যেতে রাজি না হলে, তোমাকে ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখতে দেব না আর ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের ঘরে ঢুকতেও দেব না।” আরো বলে আমি চাকরি হারালে সে কঠোর হলে তাকে দোষারোপ করা যাবে না। তার কথা শুনে ভাবলাম, “তার দাবি না মানলে সে আমাকে ঘরে আটকে রাখবে। গির্জার জীবনযাপন করতে বা নিজের কর্তব্য পালন করতে পারব না।” তাই আমাকে প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছিল যে কাজে ফিরব। কিন্তু আমার হাসপাতালের প্রধান ভয় পেয়েছিল যে রোগীদের জোরেকথাবার্তায় আমার আবার হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তাই তারা আমাকেবহির্বিভাগে বদলি করেছিল। কোনো কাজ না থাকলেও অফিসে বসে থাকতে হতো। এভাবে আমার দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। প্রতিদিন অফিসে একা বসে খুব অস্থির বোধ করতাম। ভাবতাম, গির্জায়কত কাজ পড়ে আছে, অথচ আমি এখানে আটকে আছি। জানতাম যে গির্জার কাজে দেরি হচ্ছে বলে ভ্রাতা-ভগিনীদেরও কষ্ট হবে, তাই অপরাধবোধ হচ্ছিল। ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য যথাসাধ্য করার দাবি করলেও, স্বামীর নিপীড়ন আর বাধা পাওয়া মাত্র হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। তাহলে ঈশ্বরের প্রতি কী সত্যিই বিশ্বস্ত আর বাধ্য ছিলাম? এটা সম্পর্কে যতই ভাবি, ততই মন খারাপ হয় আর চোখে জল আসে। তখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, “ঈশ্বর, দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আপনার জন্য নিজেকে ব্যয় করতে চাই, কিন্তু স্বামীর আর পরিস্থিতির চাপে পড়ে গেছি। আমাকে আত্মবিশ্বাস আর সাহস দিন।” প্রার্থনার পর ঈশ্বরের এই বাক্য পড়লাম, “যখন ঈশ্বরের স্বভাব সম্পর্কে মানুষের প্রকৃত উপলব্ধি থাকে, যখন তারা প্রত্যক্ষ করে যে ঈশ্বরের স্বভাব বাস্তবিক, তা প্রকৃতই পবিত্র, প্রকৃতই ধার্মিক, এবং যখন তারা অন্তর থেকে ঈশ্বরের পবিত্রতা ও ন্যায়পরায়ণতার প্রশংসা করতে পারে, তখনই তারা ঈশ্বরকে প্রকৃতপক্ষেই জানতে পারবে এবং সত্য অর্জন করতে পারবে। যখন মানুষ ঈশ্বরকে জানতে পারে, শুধুমাত্র তখনই আলোয় বসবাস করতে সক্ষম হয়। এবং ঈশ্বরকে প্রকৃতপক্ষে জানার প্রত্যক্ষ প্রভাব হল ঈশ্বরকে প্রকৃতপক্ষেই ভালোবাসতে এবং প্রকৃতপক্ষেই মান্য করতে সক্ষম হওয়া। যে সব লোকেরা প্রকৃতপক্ষেই ঈশ্বরকে জানে, সত্য উপলব্ধি করে, সত্য অর্জন করে, তাদের বিশ্বদর্শন ও জীবনদর্শনেও প্রকৃত পরিবর্তন আসে, যার পর তাদের জীবন চরিত্রেও প্রকৃত পরিবর্তন আসে। যখন মানুষের জীবনে সঠিক জীবনের লক্ষ্য থাকে, যখন তারা সত্য অন্বেষণে এবং সত্য অনুযায়ী উপযুক্ত আচরণে সক্ষম হয়, যখন তারা সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের প্রতি সমর্পিত হয় এবং তাঁর বাক্য অনুসারে জীবনযাপন করে, যখন নিজেদের অন্তরাত্মার গহীনে প্রশান্তি ও প্রদীপ্তি অনুভব করে, যখন তাদের হৃদয় অন্ধকারমুক্ত হয়, এবং যখন তারা ঈশ্বরের উপস্থিতিতে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও অবাধ ভাবে বিচরণ করে, শুধুমাত্র তখনই তারা যথার্থ মানবজীবন যাপন করে, হয়ে ওঠে সত্য ও মানবিকতার অধিকারী মানুষ। অতিরিক্তভাবে, তুমি যে সত্য উপলব্ধি ও অর্জন করেছ, তার সমস্তটাই ঈশ্বরের বাক্য এবং স্বয়ং ঈশ্বরের থেকে আগত। শুধুমাত্র যখন তুমি পরম ঈশ্বরের, অর্থাৎ সৃষ্টির প্রভুর, অনুমোদন অর্জন করো, এবং তিনি বলেন যে তুমি একজন যোগ্যতাসম্পন্ন সৃষ্ট সত্তা, যে মানবসদৃশ জীবনযাপন করে, তখনই তোমার জীবন সর্বাধিক অর্থবহ হয়ে উঠবে। ঈশ্বরের অনুমোদনের অর্থ হল তুমি সত্য অর্জন করে ফেলেছ, এবং তুমি হলে এমন একজন ব্যক্তি, যে সত্য ও মানবতার অধিকারী” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, মানব-প্রকৃতি জানার উপায়)। ঈশ্বরেরবাক্য নিয়ে চিন্তা করার পর বুঝলাম যে আমাদের জীবনে শুধুমাত্র সত্যের অনুসরণ, আর ঈশ্বরের অনুমোদন লাভই গৌরবের বলে মনে করা উচিত। এটাই প্রকৃত জীবন, আর সেটাই আমার বাছা উচিত। আমি মরিয়া হয়ে পার্থিব খ্যাতি আর টাকার জন্য মেডিসিন নিয়ে পড়েছি। সাফল্য পাওয়ার পর, সহকর্মীরা আমার প্রশংসা করত, আত্মীয়-স্বজনরা সম্মান করত, কিন্তু এসব পেয়ে কী লাভ হল? যতই খ্যাতি বা টাকা থাকুক, তা আমার অন্তরের শূন্যতা পূরণ করতে পারেনি। আমাকে অসুস্থ করে তুলেছিল, জীবন নিরর্থক আর অন্তঃসারশূন্য ছিল, শান্তি বা আনন্দ কিছুই পাইনি। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ গ্রহণ করার পরে, ঈশ্বরেরবাক্য ভোজন ও পান, গির্জার জীবনযাপনআর নিজের কর্তব্য পালন করে, অজান্তেই সত্য বুঝতে শুরু করলাম। জানলাম কীভাবে আচরণ করতে হয়, কীভাবে ঈশ্বরের আরাধনা করতে হয়, কীভাবে নিজেকে ভ্রষ্ট স্বভাব থেকে মুক্ত করে সাধারণ জীবনযাপন করা যায়। এসব ভেবে আরো স্বস্তি আর স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলাম। বুঝলাম যে মানুষ সৃষ্ট সত্তা হিসেবে একমাত্র ঈশ্বরের সান্নিধ্যে সত্য আঁকড়ে শান্তি লাভ করতে পারে। অন্যথায়, তারা যেভাবেই জীবনযাপন করুক, সর্বদা শূন্যতা আর দুর্ভোগ থাকবে। তখন আমি বুঝলাম যে ঈশ্বর পরিবারের এই নিপীড়ন হতে দিয়েছিলেন। এই পরিস্থিতিআমাকে ঈশ্বরে ভরসা রেখেসত্যেরসন্ধানেতাঁর মুখোমুখি হতেবাধ্যকরেছিল, এটা আমায় দেখিয়েছে শয়তানের প্রভাবে বেঁচে থাকার যন্ত্রণা কী, এবং সত্যের পথে চলতেশিখিয়েছে। ঈশ্বরের মহৎ উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে আমার মন আলোকিত হল, পারিবারিক বন্ধন থেকে মুক্ত হলাম, হাসপাতাল ছাড়লাম, আর গির্জায় আমার দায়িত্ব পালন করতে লাগলাম।
২০০৭ সালের ডিসেম্বরের একদিন যখন আমার কাজ সেরে বাড়ি ফিরলাম, তখন স্বামী খুব রেগে গেল। বলল, “হাসপাতাল থেকে ফোন এসেছিল, বলেছে কাজে না গেলে চাকরি থেকে বরখাস্ত করবে। তোমার এখনই কাজে ফিরে যাওয়া উচিত। চাকরি চলে গেলে পেনশন আর অন্যান্য সব সুবিধা হারাবে!” কথাটা শুনে একটু চিন্তিত হলাম। ভাবলাম, “সত্যিই তো। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম ভালো ডাক্তার হব, নাম করব। অনেক পরিশ্রমের পর খ্যাতি আর টাকা দুটোই পেয়েছি। এখন ছেড়ে দিলে আমার আর কিছুই থাকবে না।” সেই চিন্তা আমায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে তুলল। মনে মনে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, “ঈশ্বর, ভেবেছিলাম সুনাম, সৌভাগ্য আর মর্যাদা ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু এখন চাকরি ছাড়তে গিয়ে, আমার খারাপই লাগছে। প্রভু, আমাকে সত্য বোঝার পথ দেখান, এসব যেন আমাকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে।” প্রার্থনার পর ঈশ্বরেরবাক্যের একটা অনুচ্ছেদ পড়লাম। “শয়তান মানুষের চিন্তাভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে খ্যাতি ও লাভের প্রয়োগ করে, যতক্ষণ না সকল মানুষ শুধু খ্যাতি এবং লাভের বিষয়ে ছাড়া অন্যকিছু চিন্তা করতে না পারে। খ্যাতি ও লাভের উদ্দেশ্যে তারা সংগ্রাম করে, খ্যাতি ও লাভের উদ্দেশ্যে কষ্ট সহ্য করে, খ্যাতি ও লাভের উদ্দেশ্যে অপমান সহ্য করে, খ্যাতি ও লাভের উদ্দেশ্যে তাদের সর্বস্ব ত্যাগ করে এবং খ্যাতি ও লাভের উদ্দেশ্যে তারা যে কোনও রায় দান বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এইভাবে, শয়তান মানুষকে অদৃশ্য শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে, এবং তা থেকে নিজেকে মুক্ত করার শক্তি বা সাহস তাদের নেই। তারা অজ্ঞাতসারেই সেই শৃঙ্খলভার বহন করে, এবং বহু কষ্টে অগ্রসর হতে থাকে। এই খ্যাতি ও লাভের উদ্দেশ্যে, মানবজাতি ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করে, তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, এবং ক্রমশ খল হয়ে ওঠে। এই ভাবেই, শয়তানের খ্যাতি ও লাভের মধ্যে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ধ্বংস হয়ে চলেছে। শয়তানের ক্রিয়াকলাপগুলির প্রতি এখন দৃষ্টিপাত করলে, তার অশুভ অভীষ্টগুলি কি আদ্যোপান্তই ঘৃণার্হ নয়? তোমরা হয়তো আজও শয়তানের অশুভ উদ্দেশ্যগুলি দেখতে পাচ্ছ না, কারণ তোমরা মনে করো যে খ্যাতি ও লাভ ছাড়া কেউ বেঁচে থাকতে পারে না। তোমরা মনে করো যে মানুষ যদি খ্যাতি ও লাভ পরিহার করে, তাহলে তারা আর সামনের পথটিকে দেখতে পাবে না, তারা আর তাদের লক্ষ্যগুলিকে দেখতে পাবে না, তাদের ভবিষ্যত অন্ধকার, ম্লান এবং তমসাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে। কিন্তু ধীরে ধীরে একদিন তোমরা সকলেই বুঝবে, খ্যাতি এবং লাভ হল সেই ভয়ঙ্কর শৃঙ্খল যা শয়তান মানুষকে আবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। যখন সেই দিনটি আসবে, তুমি শয়তানের নিয়ন্ত্রণকে, এবং শয়তান যে শৃঙ্খলগুলি ব্যবহার করে তোমাদের আবদ্ধ করে রাখে সেগুলিকে, পুরোপুরিভাবে প্রতিহত করবে। যখন এমন সময় আসবে যে শয়তান তোমার মধ্যে যা যা প্রবিষ্ট করেছে সেগুলি সকলই তুমি ছুঁড়ে ফেলে দিতে চাইবে, তখনই তুমি শয়তানের থেকে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিযুক্ত করবে, এবং শয়তান তোমায় যা যা এনে দিয়েছে সেই সকল কিছুকে প্রকৃতরূপে ঘৃণা করবে। কেবলমাত্র তখনই মানবজাতি ঈশ্বরের প্রতি প্রকৃত প্রেম ও আকাঙ্ক্ষা লাভ করবে” (বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৬)। ঈশ্বরের বাক্য পড়ে বুঝলাম শয়তান আমার কতটা ক্ষতি করেছে। খ্যাতি আর মুনাফাই আমার জীবন হয়ে উঠেছিল, সত্য পালনে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ছোটবেলা থেকেই মা বাবা শিখিয়েছে “সবার সেরা হতে হবে”, “পূর্বপুরুষদের নাম রাখতে হবে”, আর আমিও ভেবেছিলাম খ্যাতি আর মুনাফা মানেই আমার জীবন সার্থক। মুনাফা, খ্যাতি আর মর্যাদাকে ইতিবাচক ভেবেছিলাম, ভেবেছিলামএটাই জীবনেরএকমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত, তাই শুধু খ্যাতি, মুনাফা আর আনন্দ পাওয়ারই চেষ্টা করেছিলাম। শেষে এসবের পিছনে ছুটতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। খ্যাতি আর মর্যাদা আর কিছুই নয়, শয়তানের মানুষকে ধ্বংস করার কৌশল। আমার এক সহকর্মীর কথা মনে হয়েছিল যে খ্যাতি আর টাকার পিছনে ছুটতে গিয়ে বেঘোরে মারা পরেছিল। সেবহির্বিভাগেরপরিচালক ছিল, কঠোর পরিশ্রম করত। সবসময় দেরি করে ফিরত। যাতে বেশি রোগী দেখে বেশি টাকা রোজগার করতে পারে। সে খ্যাতি আর টাকা পেল ঠিকই, কিন্তুএকদিন রাতে সে খুব দেরিতে কাজ শেষ করল, আর খুব ক্লান্ত অবস্থায় রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় গাড়ির ধাক্কায় মারা গেল। আমার আরেক সহকর্মী অল্প বয়সে হেড নার্স হয়েছিল। লোকে ভেবেছিল তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, কিন্তু সে কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকত। বাড়ির ফেরার পথেও তার সহকর্মীদের সাথে শুধু কাজ নিয়ে কথা বলত, একদিন অন্যমনস্ক হয়ে রেললাইন পার হওয়ার সময়, দ্রুতগামী ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেল। আমার সহকর্মীদের কথা ভেবে ভয়ে কাঁপতে লাগলাম। হাসপাতালে এরাও খুব সম্মানীয় আর গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তুঈশ্বরের তত্ত্বাবধান আর নিরাপত্তা না পেলে খ্যাতি আর সৌভাগ্যের মূল্য কী? খ্যাতি আর মর্যাদা, শয়তানের মানুষকে ভ্রষ্ট করে ক্ষতি করার হাতিয়ার। এগুলো হলো শয়তানের ফাঁদ যাতে মানুষ সারা জীবন খ্যাতি আর টাকার পিছনেছোটে, তাই তারা বিচ্যুত হয় ঈশ্বরের থেকে, সৃষ্টিকর্তার পরিত্রাণ থেকে। আমি খ্যাতি আর মর্যাদার শিকলে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম, তাই আমার চাকরি আর কর্তব্যের মধ্যে সঠিকটা বাছতে পারিনি। কি লজ্জা! অন্তিম সময়েমানুষকে উদ্ধারেঈশ্বরেরকাজে অংশগ্রহণের সুযোগ জীবনে একবারই আসে, ঈশ্বরের কৃপায় সত্য পথ গ্রহণ করলেও, আমি সত্য লাভের সুযোগ কাজে লাগাইনি। এই সুযোগ যেতে দিলে আফসোস হবে না? সেটা কি বোকামি হবে না?
ঈশ্বরেরবাক্যের এই অনুচ্ছেদমনে পড়ল। “এমন একজন হিসাবে যে স্বাভাবিক, এবং ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসার অন্বেষী, রাজ্যে প্রবেশ করে ঈশ্বরের লোক হয়ে ওঠাই তোমার প্রকৃত ভবিষ্যৎ, এবং সেই জীবনই পরম মূল্যবান এবং তাৎপর্যপূর্ণ; তোমাদের চেয়ে বেশি আশীর্বাদধন্য আর কেউ নয়। কেন একথা বলছি? কারণ, যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না তারা শুধু দৈহিক ইচ্ছা তৃপ্ত করার জন্যই বেঁচে থাকে এবং তারা শয়তানের জন্য বাঁচে, কিন্তু এখন তোমরা ঈশ্বরের জন্যই বেঁচে রয়েছ এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার উদ্দেশ্যেই জীবনধারণ করছ। সেই কারণেই আমি বলি, তোমাদের জীবন পরম তাৎপর্যপূর্ণ” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরের নবতম কর্মকে জানো এবং তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করো)। ঈশ্বরেরবাক্য আমাকে অনুশীলনের পথ দেখিয়েছে। আজ, গির্জায় সৃষ্ট সত্তার দায়িত্ব পালন করাই হল জীবনের সঠিক পথ বেছে নেয়া, আর এটাই সবচেয়ে অর্থবহ জীবন। আগে শয়তানের মাধ্যমে ভ্রষ্ট আর প্রতারিত হয়েছিলাম, তারদর্শনেই জীবনযাপন করতাম। খ্যাতি আর টাকার পিছনেই ছুটতাম, সঙ্গে শয়তানের ছলনাতো ছিলই। ঈশ্বরেরবাক্য আমাকে খ্যাতি, টাকা আর মর্যাদার পিছনে দৌড়ানোর পরিণতি দেখিয়েছে, আমাকে বুঝিয়েছে যে এটা শয়তানের মানুষকে দুর্নীতিগ্রস্ত করার হাতিয়ার। এখন অন্তিম সময়ের ঈশ্বরের কাজ শেষের দিকে, ঈশ্বরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনা শেষ হতে চলেছে, ইতিমধ্যে মহাবিপর্যয় শুরু হয়েছে। সত্য অনুসরণ করলে তবেই আমরা এই বিপর্যয় কাটাতে পারি। সত্য অনুসরণ না করলে, খ্যাতি আর টাকার পিছনে দৌড়ে এই মূল্যবান সীমিত সময় ব্যয় করলে, ঈশ্বরের দেয়াসত্যময় জীবনকখনই পাব না, আর ঈশ্বরও আমাকে রক্ষা করবেন না। তাহলে ঈশ্বরের প্রতি আমার বিশ্বাস বৃথা যাবে আর সারা জীবন এর জন্য অনুতাপ করতে হবে। যেমনটা প্রভু যীশু বলেছেন, “কেউ যদি সমগ্র জগতের অধিকার লাভ করেও প্রাণ হারায় তবে তার কি লাভ? এমন কী জিনিস আছে যার বিনিময়ে মানুষ তার প্রাণ ফিরে পেতে পারে?” (মথি ১৬:২৬)। জানতাম আমাকে এই সুযোগ নিতেই হবে। দৈহিক সুখেরকথা ভেবে তাড়াহুড়ো করলে চলবে না। ঈশ্বরের মানুষকে উদ্ধার করার এই সন্ধিক্ষণে আমি সত্য পথে চলার এই সুযোগ হারাতে চাই না। জীবনযাপনের এটাই সবচেয়ে মূল্যবান আর অর্থবহ উপায়। একথা ভেবে, চাকরি ছেড়ে পূর্ণকালিন দায়িত্ব পালনের সিদ্ধান্ত নিলাম। যখন স্বামীকে আমার সিদ্ধান্ত জানালাম, সে অসহায়ভাবে বলল, “কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করেছি যাতে তুমি কাজটা করো আর চাকরি না ছাড়ো। চেয়েছি তুমি আরো টাকা আয় করো, যাতে আমরা ভালোভাবে বাঁচতে পারি। কিন্তু তোমার ধ্যানজ্ঞান শুধুই ঈশ্বর। আমি নই, এখন থেকে তোমার সব তুমিই ঠিক করবে।” এরপর আমি হাসপাতালেগেলাম পদত্যাগ করতে। হাসপাতালের প্রধান বারবার আমাকে থামানোর চেষ্টা করল, বলল, “ডাক্তারের চাকরি নিশ্চিন্তের আর হাসপাতাল কখনই বন্ধ হবে না। এখন হাসপাতালের চাকরি পাওয়া খুব কঠিন। তাছাড়া তুমি এখানকারগুরুত্বপূর্ণ কর্মী, তোমার ভবিষ্যৎও উজ্জ্বল। এখন মজুরিও বাড়ছে, অনেক নতুন সুবিধাও পাওয়া যাবে। ভালো করে ভেবে দেখো!” জানতাম এটা শয়তানের প্রলোভন, শয়তান আমার সাথে ছলনা করতে হাসপাতালের প্রধানকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল, তার ফাঁদে পড়িনি। তাই হাসপাতালের প্রধানকে আমার দৃষ্টিভঙ্গি জানালাম, তিনিও বাধ্য হয়েআমার পদত্যা গের প্রক্রিয়া শুরু করলেন। চাকরি ছাড়ার পর আবার যখন দায়িত্বপালন শুরু করলাম তখন খুব স্বস্তি পেলাম। আর আমার কাজের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিলাম না, ঈশ্বরেরবাক্য ভোজন ও পান এবং দায়িত্ব পালনের জন্য আরো সময় পেতাম। ঈশ্বরের বাক্য আমাকে খ্যাতি আর মর্যাদার শিক লের বন্ধন থেকে মুক্ত করে জীবনের সঠিক দিশা দেখিয়েছে।
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।