আমি আর আমার দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছি না
গত বছর আগস্ট মাসের মাঝামাঝি, একজন নেত্রী আমাকে জানান যে তিনি চান আমি গির্জার বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব নিই এবং আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে আমি চেষ্টা করতে ইচ্ছুক কিনা। আমি যখন এটা শুনি, ঘাবড়ে যাই। গির্জার কাজের দায়িত্ব নেওয়া মানে শুধু ব্রাদার এবং সিস্টারদের জীবনে প্রবেশের বিভিন্ন সমস্যা এবং অসুবিধার সমাধান করাই নয় এর সাথে তাঁদের কাজে সাহায্য করা। এটা বড় একটা দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব যদি ভুলভাবে পালন করা হয় এবং কাজে প্রভাব পড়ে, অথবা গির্জার কাজে এটা বাধা সৃষ্টি করে বা সত্যি ক্ষতি করে, তাহলে আমার বিরুদ্ধে কেবল পদক্ষেপই নেওয়া হবে না, আমায় বহিষ্কার বা অপসারণ করা হতে পারে। তাহলে আমার কোনো ভালো গন্তব্য এবং লব্ধ ফল থাকবে না। আমি ভাবছিলাম ওই পদে থাকা দুই ব্যক্তি কীভাবে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। আমি কাজের ব্যাপারে কিছু জানতাম না এবং আমার যোগ্যতার সাথে তাদের কোনো মিল ছিল না, তাই আমার মনে হয়েছিল আমি যদি কাজের দায়িত্ব নিই তাহলে অনেক সমস্যা দেখা দেবে। আমি বরং তার থেকে কেবলমাত্র একটা দায়িত্ব পালন করব যাতে নিজের কাঁধে এত বড় দায়িত্বের বোঝা না নিতে হয়। আমি দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করতে চাইছিলাম, তবে আমার মনে হচ্ছিল যে এটা ঈশ্বরের ইচ্ছা এবং আমার এটা মান্য করা উচিত, তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমি রাজি হই। সেই রাতে আমি বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করলাম, ঘুমোতে পারি নি। আমি ভীষণ চাপের মধ্যে ছিলাম। আমি বারংবার ভাবছিলাম যে গির্জার কাজের দায়িত্বে থাকলে, আমায় আরো সহায়তা এবং সাহায্য পেতে হবে, সত্য সম্পর্কে আরো জানতে হবে, এবং জীবনে আরো তাড়াতাড়ি প্রবেশ করতে হবে। কিন্তু সেই কর্তব্য পালন অনেক বড় দায়িত্বের। যদি ঠিকভাবে এই দায়িত্ব পালন না করি তাহলে আমি বহিষ্কৃত এবং অপসারিতও হতে পারি। আমার মনে হয় দায়িত্ব না নেওয়াই নিরাপদ হবে। তাই আমি মনস্থির করি, এবং পরের দিন সেই নেত্রীকে এটা জানাতে ফোন করি, “আমার উচ্চতা ছোটো, তাই আমি এই কাজে উপযুক্ত নই। আমার আশঙ্কা কাজে প্রভাব পড়বে, তাই আমার মনে হয় আপনার অন্য কাউকে খোঁজা উচিত।” সেই নেত্রী আমায় বলেন যে আমার আরও সচেষ্ট হওয়া উচিত এবং যে কারণে আমি এই দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছি সেই বিষয়ে ভালোভাবে ভাবনাচিন্তা করা উচিত। ফোন রাখার পর, আমি হাঁটু গেড়ে বসি আর প্রার্থনা করি, “ঈশ্বর, আমি গির্জার অনেক কাজের দায়িত্ব নিতে ভয় পাচ্ছি। আমার আশঙ্কা আমি যদি এই দায়িত্ব ভালোভাবে পালন না করতে পারি তাহলে আমি বহিষ্কৃত হব, তাই আমি ত্রস্ত এবং দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় আছি। ঈশ্বর, আমাকে আপনার ইচ্ছা বুঝতে সাহায্য করুন।” তারপর আমি ঈশ্বরের কিছু বাণী পড়ি। “দায়িত্ব সম্পাদনকালে, কেউ কেউ নেতিবাচক বা নিষ্ক্রিয় অবস্থা, অথবা প্রতিরোধ এবং ভুল বোঝাবুঝির অবস্থার সম্মুখীন হয়। তারা সর্বদা সন্ত্রস্ত থাকে, এই বুঝি তাদের স্বরূপ অনাবৃত হয়ে পড়বে ও তাদের পরিহার করা হবে, আর তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ ও গন্তব্যের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে থাকে। এটা কি ছেলেমানুষি স্বভাবের অভিব্যক্তি নয়? (হ্যাঁ।) অনেকে বলে যে, তারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারবে কি না এই নিয়ে ভীত থাকে, আর কোনোরকম বিশদ বিশ্লেষণ না করেই কেউ কেউ তাদের বেশ বিশ্বস্ত বলে ভেবে নিতে পারে। নিজেদের অন্তরে তারা আসলে কীসের বিষয়ে চিন্তিত থাকে? তারা দুশ্চিন্তায় থাকে যে, নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করলে, তাদের পরিহার করা হবে, তাদের কোনো চূড়ান্ত গন্তব্য থাকবে না। কেউ কেউ বলে, তারা সেবা-প্রদানকারী হওয়ার বিষয়টায় ভয় পায়। যখন অন্যান্যরা এমন শোনে, তখন তারা ভাবে যে, এই মানুষেরা সেবা-প্রদানকারী হতে চায় না, বরং নিছক ঈশ্বরের লোক হিসাবেই নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে চায়। লোকজন ভাবে, এই রকম মানুষেরই সঙ্কল্প রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, সেবা-প্রদানকারী হওয়ার বিষয়ে ভীত ব্যক্তিরা নিজেদের অন্তরে ভাবতে থাকে, ‘আমি সেবা-প্রদানকারীতে পরিণত হলে, পরিশেষে আমার নিধন হবে, আমার কোনো চূড়ান্ত গন্তব্যও থাকবে না, স্বর্গ-রাজ্যে আমার কোনো ঠাঁই হবে না।’ এটাই হল তাদের কথার নিহিত অর্থ; তারা এখনও নিজেদের পরিণতি ও চূড়ান্ত গন্তব্য নিয়ে চিন্তিত। ঈশ্বর যদি তাদের সেবা-প্রদানকারীর আখ্যা দেন, তাহলে তারা নিজেদের দায়িত্ব পালনে কিছুটা হলেও কম সচেষ্ট থাকে। আবার ঈশ্বর যদি তাদের নিজের লোক বলে ডাকেন এবং তাদের প্রশংসা করেন, তখন তারা দায়িত্ব পালনে বেশি সচেষ্ট হয়। এখানে সমস্যা কোথায়? সমস্যাটা হল, ঈশ্বরের গৃহে দায়িত্ব পালনের সময় তারা সত্যের নীতি অনুসারে কাজ করে না। তারা সর্বদা নিজেদের সম্ভাবনা এবং ভাগ্যের কথাই বিবেচনা করে, আর ‘সেবা-প্রদানকারীর’ পদমর্যাদার ক্ষেত্রে বিরূপ মনোভাব পোষণ করে। ফলস্বরূপ, তারা নিজেদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারে না, আর সত্যের অনুশীলন করার শক্তিও তাদের মধ্যে থাকে না” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র সত্যের অনুশীলন এবং ঈশ্বরকে মান্য করার মাধ্যমেই স্বভাব পরিবর্তন অর্জন করা যায়)। “সমস্ত দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ নিজেদের জন্য বাঁচে। প্রত্যেক মানুষই নিজের জন্য এবং শয়তান সবচেয়ে পিছনের জনকে দখল করে—এটাই হল মানবপ্রকৃতির সারাংশ। মানুষ তাদের নিজেদের স্বার্থে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে; তারা যখন সমস্ত কিছু পরিত্যাগ করে এবং ঈশ্বরের জন্য নিজেদের ব্যয় করে, তখন তা আশীর্বাদ পাওয়ার জন্যই; এবং তারা যখন তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকে, তখন তা পুরস্কৃত হওয়ার জন্য। সংক্ষেপে, এই সমস্ত কিছুই আশীর্বাদ পাওয়া, পুরস্কৃত হওয়া এবং স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করার উদ্দেশ্যেই করা হয়। সমাজে মানুষ তার নিজের সুবিধার জন্যই কাজ করে, এবং ঈশ্বরের গৃহে তারা আশীর্বাদ লাভের জন্য কর্তব্য সম্পাদন করে। আশীর্বাদ অর্জনের স্বার্থে মানুষ সমস্ত কিছু পরিত্যাগ করে এবং প্রচণ্ড যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে: মানুষের শয়তানোচিত স্বভাবের এর থেকে ভালো প্রমাণ আর হয় না” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। ঈশ্বরের বাক্য সঠিকভাবে আমার অবস্থা প্রকাশ করেছিল। একটা কর্তব্যের সম্মুখীন হয়ে, আমি বলেছিলাম যে আমার উচ্চতা ছোটো এবং আমি সুষ্ঠুভাবে কাজ না করতে পারার এবং কাজ আটকে থাকার ভয় পাচ্ছিলাম, কিন্তু আমি আসলে আমার ব্যক্তিগত স্বার্থের ব্যাপারে ভাবছিলাম। এই কাজ করে অন্যদের বহিষ্কৃত এবং অপসারিত হতে দেখে, আমার মনে হয়েছিল যে এই দায়িত্ব নেওয়ায় বড় ঝুঁকি আছে। আমি যদি ভুল কাজ করে প্রক্রিয়াগুলি ব্যাহত করি এবং গির্জার কাজে দেরি করি, তাহলে সেটা শুধু সীমা-লঙ্ঘনই হবে না এবং আমি শুধু বহিষ্কৃতই হবনা, যদি সেটা গুরুতর হয় আমি বর্জিত হব। তাই, আমি দায়িত্ব গ্রহণ করতে অস্বীকার করার একটা বাহানা খুঁজে পাই যাতে আমি আমার ভবিষ্যৎ এবং গন্তব্য রক্ষা করতে পারি, দৃঢ় কণ্ঠে কথাটা বলে আমি ভয় পাচ্ছিলাম যে আমি গির্জার কাজে বিঘ্ন ঘটাচ্ছি। আমি কম দায়িত্বের কাজ নিতে চাইছিলাম যাতে আমি শুধু একটা কর্তব্য পালনের সুযোগই পাব না, শেষে একটা ভালো গন্তব্যও থাকবে। আমি পুরোপুরি শয়তানের কুপ্রভাবের অধীনে ছিলাম “প্রত্যেক মানুষই নিজের জন্য এবং শয়তান সবচেয়ে পিছনের জনকে দখল করে” এবং সেই অবস্থায় “সফল হওয়ার নয়, ভুল না করার প্রার্থনা করো”। সবকিছুতেই আমার আদ্যস্থল ছিল আমার স্বার্থ, আমি নিজে। আমি এমন কর্তব্য পালন করব যার থেকে আমি লাভবান হব, এমন কোনো কর্তব্য নয় যার থেকে লাভ হবে না, সামান্য দাম দিয়ে তার বিনিময়ে আমি ঈশ্বরের আশীর্বাদ পেতে চাইছিলাম। এইভাবে আমি ঈশ্বরের সাথে লেনদেন করতে চাইছিলাম, যা খুবই স্বার্থপর এবং ঘৃণ্য কাজ।
এরপরে আমি ঈশ্বরের আরও বাণী পড়ি। “যারা অন্যদের প্রতি সন্দেহপ্রবণ নয় আমি তাদের নিয়ে তৃপ্ত হই, এবং যারা সহজে সত্যকে গ্রহণ করতে পারে আমি তাদের পছন্দ করি; এই দুই ধরণের মানুষের প্রতি আমি অত্যন্ত যত্নশীল, কারণ আমার চোখে তারা সৎ মানুষ। তুমি যদি প্রতারক হও, তাহলে তুমি সব মানুষ এবং বিষয়ের প্রতি সতর্ক এবং সন্দিগ্ধ হবে এবং এইভাবে আমার প্রতি তোমাদের বিশ্বাস সন্দেহের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হবে। আমি কখনোই এই ধরণের বিশ্বাস স্বীকার করতে পারি নি। প্রকৃত বিশ্বাসের অভাবে তোমরা আরও বেশি করে প্রকৃত ভালোবাসাশূণ্য। তুমি যদি ঈশ্বরের প্রতি সন্দেহপ্রবণ হও এবং ইচ্ছেমতো তাঁর সম্পর্কে অনুমান করতে প্রবৃত্ত হও, তাহলে সব মানুষের মধ্যে প্রশ্নাতীতভাবে তুমিই সর্বাধিক প্রতারক। তুমি অনুমান কর ঈশ্বর কখনও মানুষের মতো হতে পারেন কিনা: ক্ষমার অযোগ্য পাপী, ক্ষুদ্রমনা, ন্যায় ও যুক্তি বর্জিত, ন্যায়বিচারের বোধের অভাবযুক্ত, বিদ্বেষপূর্ণ কৌশলযুক্ত, বিশ্বাসঘাতক ও ধূর্ত, মন্দ ও অন্ধকার দ্বারা তৃপ্ত, ইত্যাদি। ঈশ্বর সম্পর্কে মানুষের ন্যূনতম জ্ঞানের অভাবের কারণেই তাদের এমন চিন্তাধারা নয় তো? এই ধরণের বিশ্বাস পাপের থেকে কোনো অংশে কম নয়! এমনও কিছু মানুষ আছে যারা বিশ্বাস করে যে মূলত তারাই আমাকে তৃপ্ত করে, যারা আমার তোষামোদ এবং পদলেহন করে, এবং যাদের এই ধরণের দক্ষতার অভাব রয়েছে তারা ঈশ্বরের গৃহে অবাঞ্ছিত হবে এবং সেইখানে নিজের স্থান হারাবে। এত বছর পরেও এটাই কি তোমাদের একমাত্র লব্ধ জ্ঞান? এটাই কি তোমরা অর্জন করেছো? এবং আমার সম্পর্কে তোমাদের জ্ঞান শুধু এই ভুল বোঝাবুঝিতে থেমে থাকে না; ততোধিক খারাপ বিষয় হল ঈশ্বরের আত্মার বিরুদ্ধে তোমাদের নিন্দা এবং স্বর্গের বিষয়ে কুৎসা প্রচার। সেই কারণেই আমি বলি যে তোমাদের এইরূপ বিশ্বাস তোমাদেরকে আমার কাছ থেকে কেবল আরও বিপথে চালিত করবে এবং তোমরা আমার আরও বিরোধী হয়ে উঠবে” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, পৃথিবীতে ঈশ্বরকে কীভাবে জানা যাবে)। ঈশ্বরের কথা বিবেচনা করে এবং নিজের বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করে, আমি দেখলাম আমি আসলে ধূর্ত প্রকৃতির। আমি ভেবেছিলাম যে প্রচুর দায়িত্বসম্বলিত একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের ঝুঁকি অনেক বেশি, তাই আমি যদি ভুল করি সহজেই ধরা পড়ে যাব, এবং এমনকি বহিষ্কৃতও হতে পারি। আমি ঈশ্বরের গৃহকে পৃথিবীর মতো, এবং ঈশ্বরকে কোনো পার্থ রাজার মতো ভাবছিলাম। আমার মনে হয়েছিল কর্তব্য পালন করা হল খানিকটা বরফের পাতলা স্তরে হাঁটার মত, সামান্য গাফিলতি হলেই আমি পড়ে যেতে পারি। যেন ঈশ্বর মানুষের সাথে খেলা খেলেন, নাকাল করেন, এবং আমায় একটা গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্যের ভার দিয়ে আমাকে ধরিয়ে দিচ্ছেন এবং পরিত্যাগ করছেন, আমাকে আগুনের গহ্বরে ঠেলে দেওয়াই যেন উদ্দেশ্য। আমি ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণতায় বিশ্বাস করি নি, বরং তাঁর থেকে সতর্ক থাকছিলাম এবং তাঁকে ভুল বুঝছিলাম। এটা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অধার্মিক কাজ! প্রকৃতপক্ষে, ঈশ্বরের গৃহ মানুষের সাথে নীতিসঙ্গত ব্যবহার করে। আমি গির্জার এক নেত্রীকে জানতাম। যে বহু বছর ধরে একজন বিশ্বাসী ছিল, এবং যদিও তার কর্মশক্তির একটু অভাব ছিল, সে তার কর্তব্যের প্রতি দায়িত্বশীল ছিল। যখন তাকে ছাটাই করা হয়েছিল এবং তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, সে এটা গ্রহণ করতে এবং মান্য করতে এবং পরিবর্তনে সক্ষম ছিল। গির্জা তাকে গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্বভার দেয়। একসময়, সে কাউকে দলনেতা হিসেবে পদোন্নতি দিয়েছিল, তারপর জানা যায় যে সেই লোকটি সত্যি ধূর্ত এবং ব্যবহারিক কাজ করে-নি, এবং এটা গির্জার কাজে সত্যি বিঘ্ন ঘটিয়েছিল। এটা জানার পর, তার নেত্রী তার সাথে গুরুতর মোকাবিলা করেন সেই ব্যক্তিকে কোনো রকম নীতি ছাড়া এবং তার কাজের তত্ত্বাবধান না করেই তাকে নিয়োগ করার জন্য। একজন ভণ্ড নেতা এমন কাজ করে। তবে সেই নেত্রী তাকে এই কাজের জন্য বহিষ্কার করেন নি। পরিবর্তে, তিনি ধৈর্য সহকারে সত্যের প্রাসঙ্গিক নীতির ব্যবহার করে তার সাথে আলাপচারিতা করেছিলেন এবং তাকে তার ভুল এবং ত্রুটিগুলি দেখতে সাহায্য করেছিলেন। এবং সেখানে একজন নব নির্বাচিত নেত্রী ছিল। যার খুব একটা বেশি অভিজ্ঞতা ছিল না, তবে ভালো দক্ষতা এবং বোঝাপড়ার ক্ষমতা ছিল, এবং নিজের দায়িত্বে কিছু কাজ সম্পাদন করতে পারত। তবে সে নীতি সম্পর্কে জানত না এবং সে নেত্রী থাকাকালীন অন্যদের ঠিক বুঝতে পারত না, তাই সে এমন একজনকে খ্রিস্টবিরোধী মনে করে বহিষ্কার করে দিতে যাচ্ছিল যে আসলে ছিল দাম্ভিক। যখন তার নেতা এটা জানতে পারেন, তিনি তাকে বহিষ্কার করে-নি, তবে সকলের কাছে তার ভুলের ব্যাপারে জানান এবং তার সাথে আলোচনা করেন এবং তাকে এই সমস্যার গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝান, সত্যের প্রাসঙ্গিক নীতি আলোচনা করেন এবং তাকে বিচক্ষণতা শিখতে সাহায্য করেন। আমি দেখেছিলাম গির্জার নেতাদের বহিষ্কৃত বা অপসারিত না হতে দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার কথা প্রকাশ পাওয়ার বা তাদের কাজে ভুল করার পরেও। পরিবর্তে, তাদের সাহায্য করা হয় এবং সাহচর্য দেওয়া হয়, বা আলোচনা করা হয়, যাতে তারা সত্যটা বুঝতে পারে এবং নীতি উপলব্ধি করতে পারে। যতক্ষণ তারা ক্ষমতার অধিকারী থাকে, সত্যকে গ্রহণ করতে পারে, এবং তাদের কর্তব্যের বোঝা আছে, এমনকি যদি সেখানে ব্যর্থতা বা সীমালঙ্ঘনও হয়, গির্জা তাদের অনুশোচনার একটা সুযোগ দেয়, এবং শুধুমাত্র একটা জিনিসের জন্য তাদের বহিষ্কার করে না। তারা অনুশীলন লাভ করতে থাকে যাতে তারা তাদের কর্তব্যে প্রশিক্ষণ লাভ করতে পারে। কিছু মানুষ কোনো একটি কাজের জন্য যোগ্য নয় কারণ তাদের যথেষ্ট দক্ষতা নেই, কিন্তু গির্জা তাদের বহিষ্কার করে না। তাদের যোগ্যতা এবং উচ্চতা অনুযায়ী কোনো যোগ্য দায়িত্ব তাদের দেওয়া হয়। কিন্তু যারা তাদের কর্তব্যে শঠ, যারা সত্যের অনুসরণ করে না, এমনকি যদি তাদের কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নাও থাকে, তাদের স্বরূপ প্রকাশ করা এবং অপসারণ করা হবে। এবং কিছু কিছু মানুষ বহিষ্কৃত হয়েও এক বিন্দু অনুশোচনা করে না, বরং তারা অভিযোগ করে আর সমালোচনা করে, ভ্রান্ত ধারণা ছড়ায় এবং গির্জাকে বিপর্যস্ত করে। এই জাতীয় মানুষদের সরানো হয় এবং বহিষ্কার করা হয়। আমি দেখতে পেয়েছিলাম যে ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণ এবং ঈশ্বরের গৃহ মানুষের সঙ্গে তাঁর আচরণের ব্যাপারে নীতিসঙ্গত। সব কিছুর মধ্যে ঈশ্বরের ভালবাসা এবং পরিত্রাণ আছে। আমি তাঁকে না জেনেই ঈশ্বরে বিশ্বাস করেছিলাম, এবং তাঁর সম্পর্কে জল্পনা করছিলাম। আমি ভেবেছিলাম আমায় তত্ত্বাবধায়ক করার উদ্দেশ্য সকলের সামনে স্বরূপ উন্মোচন করা এবং আমায় অপসারণ করা। আমার ধারণা অত্যন্ত অযৌক্তিক ছিল, এবং এটা সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছার বিকৃতিছিল। এটা ঈশ্বর সম্পর্কে ভুল ধারণা, এবং এটা তাঁর ন্যায়পরায়ণতাকে অগ্রাহ্য করে। ঈশ্বরের বাণীর রায় ছাড়া, আমি দেখতে পেতাম না যে এটা কতটা বড়ো একটা সমস্যা, উল্টে আমি ঈশ্বরের বিরোধিতা করে জীবন কাটাতাম।
এরপর একদিন, আমি ঈশ্বরের বাণীর আরেকটি অংশ পড়ি। “মানুষের কর্তব্য ও সে আশীর্বাদধন্য না অভিশপ্ত—এই দুইয়ের মধ্যে কোনো পারস্পরিক সম্পর্ক নেই। মানুষের যা পালন করা উচিত, তা-ই হল কর্তব্য; এ হল তার স্বর্গ-প্রেরিত বৃত্তি, এবং এই বিষয়ে প্রতিদান, শর্তসমূহ, অথবা যুক্তির উপর নির্ভরশীল হওয়া এর উচিত নয়। কেবল তাহলেই বলা যায় যে সে তার কর্তব্য করছে। আশীর্বাদধন্য হওয়ার অর্থ হল বিচারের অভিজ্ঞতার অন্তে নিখুঁত হওয়া ও ঈশ্বরের শুভাশিস উপভোগ করা। অভিশপ্ত হওয়ার অর্থ হল বিচার ও শাস্তির অভিজ্ঞতার পরেও স্বভাবের পরিবর্তন না ঘটা; তা হল যখন কেউ নিখুঁত হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা অর্জন না করে কেবলমাত্র শাস্তিপ্রাপ্তই হয়। কিন্তু আশীর্বাদধন্য বা অভিশপ্ত যা-ই হোক না কেন, সৃজিত সত্তার যা করণীয় ও যা তাদের সাধ্যায়ত্ত তা সম্পাদন করে তাদের কর্তব্য পালন করা উচিৎ; একজন মানুষের, একজন ঈশ্বর-সন্ধানী মানুষের, ন্যূনতম এটুকু করাই উচিৎ। নিছক আশীর্বাদধন্য হওয়ার উদ্দেশ্যে কর্তব্য সম্পাদন করা তোমার অনুচিৎ, আবার অভিশপ্ত হওয়ার ভয়ে কাজ করতে অস্বীকার করাও উচিৎ নয়। তোমাদের এই একটা কথা বলা যাক: মানুষের কর্তব্য সম্পাদন হল তার করণীয় কাজ করা, আর যদি সে তার কর্তব্য পালনে অসমর্থ হয়, তবে সেটা তার বিদ্রোহীসুলভ আচরণ” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরের অবতারের সেবাব্রত ও মানুষের কর্তব্যের মধ্যে পার্থক্য)। আমি ঈশ্বরের বাণী নিয়ে চিন্তা করে জেনেছি যে কোনো মানুষ আশীর্বাদ লাভ করবে না দুর্ভোগ পোহাবে তার সাথে সে কী কর্তব্য পালন করেছে তার কোনো যোগ নেই। কর্তব্য হল ঈশ্বরের আজ্ঞা, এবং মানুষের তা পালন করা সঠিক এবং স্বাভাবিক। যখন কেউ বহিষ্কৃত এবং অপসারিত হয়, তার কারণ হল তারা তাদের বিশ্বাসের সত্যতাকে অনুসরণ করে-নি বা ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করে-নি, উপরন্তু তাদের কর্তব্য পালনে অবাধ্য হয়েছে, খারাপ কাজ করেছে এবং ঈশ্বরের বিরোধিতা করেছে। দায়িত্বে থাকা দুইজন মানুষ যাদের এর আগে বহিষ্কার করা হয়েছিল তারা ঠিক এই রকম। তাদের মধ্যে একজন বহিষ্কার হয়েছিল তার প্রধান কারণ মানবিকতার অভাব এবং সত্যকে বিন্দুমাত্র স্বীকার না করা। সে দ্বন্দ্ব তৈরি করেছিল, দলাদলি করেছিল, এবং অন্যদের সমস্যার মধ্যে ফেলেছিল, যার ফলে গির্জার কাজে গুরুতর ক্ষতি হয়েছিল। গির্জার তরফ থেকে বিষয়টা তার চরিত্র এবং সত্ত্বা, এবং তার দুষ্কর্মের ভিত্তিতে বিচার করা হয়েছিল। অন্যজন অত্যধিক অহংকারী স্বভাবের ছিল এবং নিজেকে সবসময় উঁচু দেখাত এবং জাহির করত। সে প্রতিপত্তির সুবিধা ভোগ করত এবং কোনো ব্যবহারিক কাজ করত না। এর কারণে গির্জার কাজে গুরুতর বিলম্ব হত, তাই সে বহিষ্কৃত হয়। যে কথাটা বলছিলাম তাদের কর্তব্য তাদের কোনো ক্ষতি করে-নি। এটা সম্পূর্ণভাবে হয়েছিল কারণ তারা ব্যবহারিক কাজ করে-নি এবং ভুল পথে ছিল। আমি তাদের বহিষ্কারের কারণ এবং এর নেপথ্যে কী ঘটনা আছে বা আসল ঘটনাটা কী তা দেখি-নি। আমি শুধু ভেবেছিলাম তারা ধরা পড়েছিল এবং বহিষ্কৃত হয়েছিল কারণ তাদের খুব কঠিন দায়িত্ব ছিল, এবং এমনকি এটাও ভেবেছিলাম যে যেহেতু আমার কর্মশক্তি তাদের মত নয়, আমি যদি ওই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিই তাহলে নিশ্চয়ই আরো দ্রুত বহিষ্কৃত হব। কী অযৌক্তিক ভাবনা!
এরপর, আমি ঈশ্বরের আরো বাণী পড়ি। “তোমাদের প্রত্যেকের, উন্মুক্ত এবং সৎ হৃদয়ের সাথে, নিজের ক্ষমতার সর্বোত্তম প্রয়োগের দ্বারা দায়িত্ব পালন করা উচিত, এবং প্রয়োজনীয় মূল্য যাই হোক না কেন, তা প্রদানে প্রস্তুত থাকা উচিত। তোমরা যেমন বলেছ, যখন সেই দিন আসবে, ঈশ্বর এমন কাউকে অবহেলা করবেন না যে তাঁর জন্য কষ্ট করেছে বা তাঁর জন্য মূল্য পরিশোধ করেছে। এই ধরনের দৃঢ় প্রত্যয়ে স্থির থাকা আবশ্যক, এবং তোমাদের যথার্থভাবেই তা কখনও ভুলে যাওয়া উচিত নয়। শুধুমাত্র এই ভাবে তোমাদের জন্য আমি আমার মনকে শান্ত রাখতে সক্ষম হই। অন্যথায়, তোমরা চিরকালের জন্য সেই ধরনের মানুষ হয়ে উঠবে যাদের জন্য আমি আমার মনকে শান্ত রাখতে পারবো না, এবং চিরকালের জন্য আমার অরুচির বস্তু হয়ে উঠবে। যদি তোমরা সকলে নিজেদের বিবেককে অনুসরণ করো, এবং আমার কর্মের জন্য কোনও প্রচেষ্টা এড়িয়ে না গিয়ে, এবং আমার সুসমাচারের কর্মে সারাজীবনের শক্তি উৎসর্গ করে, আমার জন্য নিজেদের সমস্ত কিছু অর্পণ করতে পারো, সেক্ষেত্রে আমার হৃদয় কি তোমাদের জন্য প্রায়শই আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠবে না? এইভাবে, আমি আমার মনকে তোমাদের বিষয়ে সম্পূর্ণরূপে শান্ত রাখতে সক্ষম হব, তাই নয় কি? এটা লজ্জাজনক যে, তোমরা যা করতে পারো তা আমার প্রত্যাশার একটি শোচনীয় রকমের ক্ষুদ্র অংশ। এই অবস্থায়, তোমরা কী করে নিজেদের আশা অনুযায়ী কিছু আমার কাছে চাইবার সাহস করতে পারো?” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, বিষয় গন্তব্য)। আমি ঈশ্বরের বাণী থেকে জেনেছি যে তিনি মানুষকে দায়িত্বের মাধ্যমে নিখুঁত করেন, এবং সেটা গুরুত্বপূর্ণ হোক বা না হোক, তার জন্য দায়িত্ব গ্রহণ এবং ঝুঁকি নেওয়া প্রয়োজন হোক বা না হোক, আমাদের তা মান্য করতে হবে এবং আমাদের সমস্তটা দিয়ে সেটা পালন করতে হবে। একটা কর্তব্য পালনের মাধ্যমে যত বেশি সমস্যার কথা প্রকাশ পাবে, তত ভালোভাবে আমরা আত্মমন্থন করতে পারব এবং আমাদের দুর্নীতি এবং দোষ সম্পর্কে জানতে পারব। তারপর সত্য অনুসন্ধান করতে, নীতি শিখতে, এবং সত্যের বাস্তবতায় প্রবেশ করতে এর ব্যবহার করতে পারব। এই সব কিছুই একটা কর্তব্য পালনের মাধ্যমে অর্জন করা হয়। আমরা যদি কর্তব্য পালন না করি বা কোনো দায়িত্ব গ্রহণ করতে অস্বীকার করি, ভয় পাই, আমাদের অসাধু স্বভাব এবং দোষগুলো প্রকাশ্যে আসবে না। আমাদের পক্ষে আমাদের ভুল দৃষ্টিভঙ্গি এবং শয়তানোচিত স্বভাব সম্পর্কে খুব বেশি উপলব্ধি করা সম্ভব নয়, সত্য অনুসন্ধানের মাধ্যমে তার সমাধান করার সম্ভাবনা তো আরো কম। তারপর আমরা শেষ পর্যন্ত হয়ত বিশ্বাস করতে পারি, তবে সত্যকে জয় করতে এবং স্বভাবগত পরিবর্তন লাভ করতে পারব না, এবং বিশেষ করে আমরা রক্ষা পাব না এবং ত্রুটিমুক্ত হব না। বিভিন্ন গির্জার কাজের দায়িত্বে থাকার মত গুরুত্বপূর্ণ কাজের মাধ্যমে আমায় প্রশিক্ষণ লাভের একটা সুযোগ দেওয়া হচ্ছিল। আমি আমার কর্তব্য পালনে ভুল করলে বা আমায় বহিষ্কার করা হলে এবং আমার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, আমার নিজেকে জানার এবং সত্যের বাস্তবতায় প্রবেশ করার এটা একটা দারুণ সুযোগ। এইসব কিছু উপলব্ধি করে আমি স্বস্তি পাই, তাই আমি নেত্রীকে বলি যে আমি দায়িত্ব গ্রহণে ইচ্ছুক। তারপর আমার কর্তব্য পালনের সময়, আমার নেত্রী অনেকবার আমার কাজের তত্ত্বাবধান করেছেন, এবং তাঁর নির্দেশ এবং সাহায্যে, আমি ধীরে ধীরে কিছু নীতি এবং সত্য সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করি এবং আমার নিজের ত্রুটিবিচ্যুতি সম্পর্কে আমার ধারণা আরও স্পষ্ট হয়। একবার যখন আমি একটা কাজ পরিচালনা করছিলাম, আমি সঠিকভাবে আলাপচারিতা বা তত্ত্বাবধান করি নি, এর ফলে ওই কাজে কিছু সমস্যা হয় যার ফলে কিছু ক্ষতি হয়। আমি ভয় পেয়েছিলাম যে আমার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে অথবা আমি যদি নেত্রীকে বলি তাহলে তিনি আমায় এর জন্য দোষী সাব্যস্ত করবেন, কিন্তু আমি এটা স্পষ্ট জানতাম যে আমি এই ঘটনাকে লুকোতে পারব না। আমায় সততার সাথে যথাযথভাবে এই সমস্যার কথা জানাতে হত, এবং গির্জা আমার জন্য যে সিদ্ধান্ত নেবে তা গ্রহণ করতে হত। যখন নেত্রী আমার কথা শুনলেন, তিনি আমার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেন-নি, তবে তিনি আমার সাথে কিছু নীতি এবং সত্যের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করেন যাতে আমি বুঝতে পারি আমি কোথায় ভুল করেছি এবং কিছু নীতি শিক্ষা পাই এবং কীভাবে ভালোভাবে কর্তব্য পালন করতে হয় সেই বিষয়ে শিক্ষা লাভ করতে পারি। যদিও এর পরেও আমার কাজে কিছু ভুল এবং সমস্যা ছিল এবং কিছু সময় আমায় সত্যি সত্যি সরানো এবং কর্তৃপক্ষের দ্বারা আমার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, আমি যা ভেবেছিলাম, সেই অনুযায়ী ভুল করার জন্য আমায় বহিষ্কার এবং অপসারণ করা হয়-নি। আমি সত্যি উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম যে সেই কর্তব্য পালনের মাধ্যমে আমার ভুল শোধরাতে সাহায্য পেয়েছি, এবং সেটা ঈশ্বরের ভালোবাসা!
অনতিবিলম্বেই আমি একটা নতুন পরীক্ষার সম্মুখীন হই। একদিন, নেত্রী আমায় একটা কাজের দায়িত্ব দেন গির্জার টাকা কীভাবে খরচ হচ্ছে তা দেখা আমি সত্যি খুব চাপে পড়ে যাই যখন আমি এটা সম্পর্কে শুনি এবং আমি ভাবি যে কিছু ভুল হয়ে গেলে, তাতে গির্জার টাকার বিপুল লোকসান হবে। এ হল এক ধাক্কায় নরকের দরজা খুলে প্রবেশ করা এবং আমি বরবাদ হয়ে যাব! না, আমার মনে হয় আমার নেত্রীকে বলা উচিত যে আমি দায়িত্ব নিতে পারব না। কিন্তু এই কাজের জন্য আমিই সবথেকে যোগ্য ব্যক্তি, তাই আমি যদি দায়িত্ব এড়িয়ে যাই তাহলে তা গির্জার কাজে প্রভাব ফেলবে। আমি জানতাম না আমার কী করা উচিত। আমি সত্যি দ্বন্দে ছিলাম। আমি এটা না করার জন্য অজুহাত খুঁজছিলাম, কিন্তু আমার খানিকটা অপরাধ বোধ হচ্ছিল। বুঝতে পারি আমি আবারও নিজের ভবিষ্যৎ ও ভাগ্য বিবেচনা শুরু করছি, তাই আমি প্রার্থনার জন্য ছুটে যাই: “ঈশ্বর, আমি আবার দায়িত্ব গ্রহণ করতে ভয় পাচ্ছি এবং আমি এই কর্তব্য এড়িয়ে যেতে চাই। হে ঈশ্বর, আমি এতটা স্বার্থপর হতে পারি না এবং কেবল নিজের স্বার্থের কথা ভাবতে পারি না। আমায় সমর্পণ করার পথ দেখাও।” এরপর আমি ঈশ্বরের বাণীর একটা অংশ পড়ি। “আজ, তোমাদের যা অর্জন করতে হবে তা অতিরিক্ত চাহিদা নয়, বরং, তা মানুষের কর্তব্য, এবং যা সকল মানুষের করণীয়। তোমরা যদি তোমাদের দায়িত্ব পালনে, বা তা উত্তমরূপে পালনে অক্ষম হও, তাহলে তোমরা কি নিজেরাই নিজেদের সমস্যাকীর্ণ করছ না? তোমরা কি মৃত্যুকে প্রশ্রয় দিচ্ছ না? কীভাবে তোমরা এখনও নিজেদের কোনো ভবিষ্যত সম্ভাবনার বিষয়ে প্রত্যাশা করতে পার? ঈশ্বরের কার্য মানবজাতির উদ্দেশ্যে কৃত, এবং মানুষের সহযোগিতা ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যেই প্রদত্ত। ঈশ্বর তাঁর করণীয় কার্যসকল সমাধা করার পর, মানুষকে তার অনুশীলনে অকুণ্ঠ হতে হবে, এবং ঈশ্বরের সাথে সহযোগিতা করতে হবে। ঈশ্বরের কার্যে, মানুষের কোনও চেষ্টারই ত্রুটি রাখা উচিত নয়, তার বিশ্বস্ততা নিবেদন করা উচিত, এবং অসংখ্য পূর্বধারণায় লিপ্ত হওয়া উচিত নয়, বা নিষ্ক্রিয়ভাবে মৃত্যুর অপেক্ষায় বসে থাকা উচিত নয়। ঈশ্বর মানুষের উদ্দেশ্যে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারেন, তাহলে মানুষ কেন ঈশ্বরের প্রতি তার আনুগত্য নিবেদন করতে পারে না? ঈশ্বর মানুষের প্রতি সমভাব হতে পারেন, তাহলে মানুষ কেন বিন্দুমাত্র সহযোগিতা করতে পারে না? ঈশ্বর মানুষের উদ্দেশ্যে কাজ করেন, তাহলে মানুষ কেন ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার নিমিত্ত নিজের কিছু কর্তব্য পালন করতে পারে না? ঈশ্বরের কাজ এতদূর ব্যপ্ত হয়েছে, তবুও তোমরা কেবল দেখে যাও, কিন্তু কোনো কাজ করো না, শুনতে পাও, কিন্তু পদক্ষেপ নিতে পারো না। এমন মানুষ কি নরকবাসের পাত্র নয়? ঈশ্বর ইতিমধ্যেই মানুষের জন্য তাঁর সকলকিছু উৎসর্গ করেছেন, তাহলে আজ মানুষ কেন নিজ দায়িত্ব আন্তরিকভাবে পালনে অক্ষম? ঈশ্বরের তরফ থেকে, তাঁর কার্যেই তাঁর প্রাথমিক অগ্রাধিকার, এবং তাঁর ব্যবস্থাপনা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের তরফ থেকে, ঈশ্বরের বাক্যগুলির অনুশীলনে এবং ঈশ্বরের চাহিদা পূর্ণ করাতেই রয়েছে তার প্রাথমিক অগ্রাধিকার। তোমাদের সকলকে এইসব উপলব্ধি করতে হবে” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরের কার্য এবং মানুষের অনুশীলন)। এটা পড়ার পর আমি বুঝতে পারি যে এই কর্তব্যটা আমার থেকে ঈশ্বরের চাহিদা এবং একটা দায়িত্ব যা আমার পূরণ করা উচিত। এটা সম্পন্ন করা আমার অবশ্যপালনীয় কর্তব্য ছিল। আমি যদি আমার ভবিষ্যৎ এবং গন্তব্য সুরক্ষিত করতে এই কর্তব্য এড়িয়ে যাই এবং পালন করতে অস্বীকার করি, তাহলে সৃষ্ট সত্তা হিসেবে আমার জন্ম সার্থক হবে না এবং এই ধরণের বিশ্বাস ঈশ্বরের অনুমোদন পেতে পারে না। আমরা গির্জায় আমাদের কর্তব্য পালন করতে পারি, যা ঈশ্বরের উন্নতিসাধন, কিন্তু আমি ঈশ্বরের ইচ্ছাকে আদৌ বিবেচনা করি নি, এবং আমার বিবেকের বিরুদ্ধে গিয়ে, কর্তব্য পালন করতে অস্বীকার করতে চেয়েছিলাম। এটা বিবেকবর্জিত কাজ, এবং আমি ঈশ্বরের সামনে জীবন যাপন করার উপযুক্ত ছিলাম না। আমি যখন এইভাবে ভেবেছিলাম তখন আমার খুব অপরাধবোধ হয়েছিল এবং নিজের স্বার্থের কথা ভুলে গিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত মনে হয়। আমি যখন এর ওপর কাজ শুরু করি তখন সেটা বেশ কঠিন ছিল। কেউ ভালো কোনো পদ্ধতি খুঁজে পায় নি, এবং কোনো অগ্রগতি ছাড়াই কাজটা কোনোমতে চলছিল। আমার কাছেও কোনো সুষ্ঠু সমাধান ছিল না, এবং আমার বেশ দুশ্চিন্তা হচ্ছিল, তাই আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম, এবং ব্রাদার এবং সিস্টারদের সাথে অংশীদার হয়েছিলাম এবং অন্বেষণ করেছিলাম। সকলের সঙ্ঘবদ্ধ সহযোগিতায় এবং ঈশ্বরের নির্দেশে, আমরা জলদি একটা পথের সন্ধান পাই, এবং কাজে কিছুটা এগিয়ে যাই। এটা দেখে, আমি বারংবার ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই।
এই অভিজ্ঞতা আমার ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসকে আরও পোক্ত করে এবং আমি দেখেছিলাম যে আমি যে কর্তব্যই পালন করি না কেন, এটা একটা দায়িত্ব এবং কর্তব্য যা আমার পালন করা উচিত। জবাবদিহির ভয়ে আমার এটা প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয়। এটা প্রকৃত অর্থেই মনুষ্যত্বের অভাব। আমি এও উপ্লব্ধি করেছি যে, ঈশ্বরের অনুগ্রহেই আমরা আমাদের কর্তব্য পালন করতে পেরেছি। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের উদ্দেশ্য সৎ, আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করছি, এবং আমরা সত্যের অনুসন্ধানে এবং নীতি মেনে চলার ব্যাপারে মনোনিবেশ করছি, আমরা পবিত্র আত্মার কাজ অধিকতর অর্জন করব এবং আমাদের কর্তব্য ভালো এবং আরও ভালোভাবে পালন করব।
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।