সম্পূর্ণরূপে উন্মুক্ত হওয়ার পশ্চাতে কোন ভয় থাকে?
২০২০ সালের মার্চ মাসে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ কাজ আমি স্বীকার করি, এবং শীঘ্রই, আমি একটি দায়িত্ব প্রাপ্ত হই। তার অনতিবিলম্বেই আমি সুসমাচার যাজক নির্বাচিত হই। খুবই উল্লসিত হই আমি, এবং ভাবি, “আমি এমন ভ্রাতা ও ভগিনীদের মধ্যে নির্বাচিত হয়েছিলাম যাঁরা আমার থেকে দীর্ঘ সময় ধরে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেছেন। আমার ভ্রাতা ও ভগিনীদের তাতে মনে হয়, আমি এক উত্তম মেধাসম্পন্ন ব্যক্তি যিনি সত্যকে অনুসরণ করেন। আমাকে আমার দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে হবে যাতে তাঁরা দেখতে পারেন যে তাঁরা ভুল ব্যক্তিকে বেছে নেন নি।” তারপর আমি সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করি। যখন আমি তাদের খারাপ অবস্থায় দেখলাম, আমি অবিলম্বে সহযোগিতা দেওয়ার জন্য ঈশ্বর বাক্যের শরণ নিলাম, এবং যেহেতু সুসমাচারের অভিজ্ঞতা আমার ভাল ছিল, আমি দ্রুত তা তাদের সাথে শেয়ার করলাম। কিছু দিন পর, যে সব ভ্রাতা ও ভগিনীরা তাদের দায়িত্ব পালনে নিষ্ক্রিয় ছিল তারা আরও সক্রিয় হয়ে উঠতে লাগলো, এবং আমি ভাবলাম, “এ কাজে আমার নিশ্চয়ই কিছু দক্ষতার পরিচয় দেওয়া যাচ্ছে। আমার নেতৃবৃন্দ যদি জানতে পারেন তা হলে তাঁরা নিশ্চয়ই ভাববেন যে এই কাজে আমি খুবই দক্ষ এবং আমাকে আরও সু্যোগ দেবেন।” এটা মাথায় রেখে আমি আমার দায়িত্ব পালনে আরও বেশি তৎপর ও অনুপ্রাণিত হলাম। পরে যখন সুসমাচার কার্যের উপযোগিতা প্রমাণ হল, আমি গ্রুপে সে খবর পাঠালাম, এই আশায় যে সব ভ্রাতা ও ভগিনীরা যাতে দেখেন আমার কাজের সুফল। সব ভ্রাতা ও ভগিনীদের কাছেও আমি নিজেকে মাঝে-মধ্যে জাহির করতে লাগলাম। তাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়ার সময়, আমি প্রথমে তাদের জিজ্ঞাসা করতাম যে তাঁদের কোন সমস্যা বা অসুবিধা আছে কিনা, এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বলতাম, “আপনাদের সমস্যা ও অসুবিধার সমাধান করা ছাড়া, আমাকে আরও অন্যান্য কাজের দেখা-শোনা করতে হয়। প্রতটি দিনই খুব ব্যস্ততার মধ্যে কাটে এবং ঘুমোতেও খুব দেরি হয়।” আমাকে এই কথা বলতে শুনে কয়েকজন ভ্রাতা-ভগিনী বলেছিলেন, “সম্প্রতি আমাদের আর কোন সমস্যা নেই। ভগিনী, আপনি এতই কঠিন পরিশ্রম করেন।” তাদের এই কথা শুনে আমি খুব খুশি হই। আমি ভেবেছিলাম যে তাঁরা অবশ্যই মনে করবেন যে আমি যথাযথ মূল্য দিয়েই আমার দায়িত্বের গুরুভার বহন করছি, যেহেতু আমি একজন দায়িত্বশীল মানুষ।
একদিন এক ভ্রাতা তাঁর অবস্থা খোলাখুলি আলোচনা করে আ্মাকে তাঁর সহভাগী করতে চাইলেন। তিনি বললেন, “আমি সর্বদাই চেষ্টা করি, আমার দায়িত্ব-পালন যাতে মানুষ তাকিয়ে দেখে। যখনই কোনো কাজ আমি করি, দলনেতার জায়গা থেকে আমি কথা বলি এবং নিজেকে জাহির করি…।” এই কথা শুনে আমার মন কেঁপে উঠল। আমিও কি ঠিক এইরকম নই? কোন কাজের দেখাশোনা যখন আমি করি, আমি সবসময় সবাইকে জানাতে চাই যে আমি কোনো এক সাধারণ বিশ্বাসী নই, একজন সুসমাচার যাজক। কখনও কখনও, আমি ইচ্ছাকৃতভাবে উল্লেখ করেছি যে অনেক কাজের দায়িত্ব আমার এবং আমি এতই ব্যস্ত যে ঘুমাতেও দেরি হয়। আমি চাইতাম অন্য সকলেই যেন আমার দায়িত্বের গুরুভার এবং কর্তব্যবোধ তাকিয়ে দেখে। এইভাবে নিজেকে জাহির করতাম যাতে সকলে তাকিয়ে দেখে। ভ্রাতাদের সাথে খোলামেলা আলোচনা এবং সহ্কারিতা চাইতাম যাতে এই অবস্থার সমাধান করা যায়। কিন্তু তারপর ভাবতাম, “এখন আমি একজন সুসমাচার ধর্মযাজক, আমি যদি আমার ভ্রষ্টাচারের কথা খুলে বলি, তা হলে এই ভ্রাতা কি ভাববেন না যে আমি খুবই ভ্রষ্টাচারী এবং আমার উচ্চপদকে কি আর সম্মান দেবে? তিনি কি আমার সম্পর্কে খারাপ ধারনা পোষণ করবেন না? তাহলে যে মহান ভাবমূর্তি আমি গড়ে তুলেছি তা নষ্ট হয়ে যাবে।” এই কথা মাথায় রেখে, আমি মুখ না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তাই তাঁকে আমি আশ্বস্ত করি, “ঠিক আছে, আমারও ভ্রষ্টাচার আছে।” তারপর সহযোগী হিসাবে তাঁর সঙ্গে কিছু কথা বললাম, এই পর্যন্তই।
আর এক দিন, আমার দায়িত্বে থাকা একটি দলের নেতা নির্বাচন হল, এবং আমি ভাবলাম, “যেহেতু কাজের দায়িত্বে একজন দলনেতা আছেন, আমার দেখাশোনার আর প্রয়োজন নেই।” পরে, ঐ দল যখন তাদের কাজের কথা আলোচনা করছিল, আমি মন দিয়ে শুনি নি। এমনকি তাদের সভাতেও, যেতে হয় বলেই যেতাম। এইভাবে, কেটে গেলো এক মাস, এবং সেই দলের কার্যকারিতা হ্রাস পেল উল্লেখযোগ্যভাবে। এক সভায়, ভ্রাতা ও ভগিনীরা সকলেই ঈশ্বরের বাক্য অনুযায়ী কর্তব্যের প্রতি তাদের মনোভাব যেমন প্রকাশ করছিলেন, তেমনি আলোচনা করছিলেন নিজেদের ভ্রষ্টাচার নিয়ে। আমি জানতাম যে আমি দায়িত্ব পালন করিনি এবং কাজকর্মের দেখাশোনা করেছি অনীহা নিয়েই, যে কারণেই তাদের কাজ কম কার্যকর হয়েছে, কিন্তু সে কথা বলার সাহস ছিলো না আমার, কারণ তাদের হৃদয়ে আমার ভাবমূর্তি এমন একজনের যে কর্তব্যপালনে পরিশ্রমী এবং দায়িত্বশীল, এবং সবাই আমার সম্পর্কে ভাল ধারণা পোষণ করতেন। আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম যে আমি যদি খুলে বলি, আমার ভ্রাতা ও ভগিনীরা হয় তো আমার সম্পর্কে অন্য ধারণা করবে। তারা আমাকে কর্তব্যপালনে অদক্ষ এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবতে পারে। আমার নেতৃবৃন্দ যদি জানতে পারেন তা হলে আমার সম্পর্কে তাঁদের মূল্যায়ন খারাপ হতে পারে এবং আমাকে হয় তো বরখাস্তও করা হতে পারে, সে এক অবিশ্বাস্যরকম বিব্রতকর অবস্থা হবে। এই সময়ে এক নেতা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি সহকারিতা চাই কি না, এবং আমি খুব দ্বন্দের মধ্যে পড়লাম। আমি সহকারিতা চেয়েছিলাম, কিন্তু ভীতও ছিলাম যে সব কথা বললে আমার পদ এবং ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তবুও যদি আমি কথা না বলি, তাহলে নিজেকে গোপণ রাখা হয় এবং চাতুর্য অবলম্বন করা হয়। তখন আমি কী করতাম? খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। অবশেষে ভাবলাম, “যাই হোক, এখন আমি সহকারিতা নেব না। এই সময়টুকুকে অন্তত পার করে দেব।” সাক্ষাতের পরে, আমি খুবই বিষণ্ণ এবং অপরাধী বোধ করেছি, যেন প্রচন্ড এক ভার আমাকে নিচের দিকে টেনে নিয়ে চলেছে। তাই, আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম। কেন আমি আমার ভ্রষ্টাচার নিয়ে মুখ খুলতে ভয় পেলাম? কেন আমি সবসময় নিজেকে গোপণ রাখব এবং সর্বদা আমার উচ্চপদ ও ভাবমূর্তিকে প্রাধান্য দেব?
পরে, আমি ঈশ্বরের বাক্যর দুটি অংশ পড়ি এবং নিজের সম্পর্কে কিছুটা উপলব্ধি করি। ঈশ্বরের বাক্যে বলা হয়েছে, “যখন মানুষ নিজেদের সর্বদা মুখোশের আড়ালে রাখে, সর্বদা নিজেদের পরিচ্ছন্নরূপে প্রকাশ করে, সর্বদা এমন ভান করে যাতে অন্যরা তাদের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করে ও তাদের দোষ বা ঘাটতি দেখতে না পায়, সর্বদা তাদের সেরা দিকটা মানুষের কাছে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে, এরকম স্বভাবকে কী বলে? এটা হল ঔদ্ধত্য, কপটতা, ভণ্ডামি, এটা শয়তানের স্বভাব, এটা এমন কিছু যা মন্দ। শয়তানোচিত শাসনব্যবস্থার সদস্যদের কথাই ধরো: তারা পর্দার আড়ালে যতই মারামারি, ঝগড়া বা হত্যা করুক, কাউকেই সেই বিষয়ে অভিযোগ করতে বা সেসব প্রকাশ করতে দেওয়া হয় না। তারা ভয় পায় যে মানুষ তাদের শয়তানোচিত চেহারা দেখে ফেলবে, এবং তা ঢাকা দেওয়ার জন্য জন্য তারা যথাসম্ভব চেষ্টা করে। প্রকাশ্যে তারা নিজেদের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি দেখানোর জন্য সমস্ত কিছু করে, বলে তারা মানুষদের কত ভালোবাসে, তারা কত মহান, গৌরবময় ও যথাযথ। এটাই শয়তানের প্রকৃতি। শয়তানের প্রকৃতির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল কৌশল ও প্রতারণা। আর এই কৌশল ও প্রতারণার লক্ষ্য কী? মানুষকে প্রতারিত করা, শয়তানের সারমর্ম ও তার প্রকৃত রূপ দেখা থেকে মানুষকে বিরত রাখা, এবং এভাবে তার শাসনকে দীর্ঘায়িত করার লক্ষ্য পূরণ করা। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ধরনের ক্ষমতা ও মর্যাদার অভাব থাকতে পারে, কিন্তু তারাও চায় যাতে অন্যরা তাদের সম্পর্কে ভালো অভিমত পোষণ করে, যাতে মানুষ তাদের বিষয়ে উচ্চ মূল্যায়ন করে, এবং হৃদয়ে তাদের উচ্চ মর্যাদা দেয়। ভ্রষ্ট স্বভাব হচ্ছে এটাই” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, যে নীতিগুলি অনুসারে আচরণ করা উচিত)। “একজন সৎ ব্যক্তি হতে গেলে, তোমাকে প্রথমে অবশ্যই নিজের হৃদয় উন্মুক্ত করতে হবে যাতে সকলে তা ভালোভাবে দেখতে পারে, তুমি কী ভাবছ তা প্রত্যক্ষ করতে পারে, এবং তোমার প্রকৃত রূপ সঠিকভাবে দেখতে পারে; নিজেকে আড়াল করার বা আচ্ছাদিত করার চেষ্টা তুমি একেবারেই করবে না। শুধুমাত্র তাহলেই অন্যরা তোমাকে বিশ্বাস করবে এবং তোমাকে একজন সৎ মানুষ হিসাবে বিবেচনা করবে। এটাই সবচেয়ে মৌলিক অনুশীলন, এবং সৎ ব্যক্তি হওয়ার পূর্বশর্ত। যদি তুমি সর্বদাই ভান করো, সর্বদা পবিত্রতা, আভিজাত্য, মহত্ত্ব ও উন্নত চরিত্রের মানুষ হওয়ার ভান করো, যদি মানুষকে তোমার দুর্নীতি ও ত্রুটি প্রত্যক্ষ করতে না দাও, যদি মানুষের সামনে একটা নকল প্রতিমূর্তি উপস্থাপন করো যাতে তারা বিশ্বাস করে তোমার মধ্যে সততা রয়েছে, তুমি খুবই মহান, আত্ম-ত্যাগী, ন্যায়বান এবং নিঃস্বার্থ—এটা কি প্রতারণা ও মিথ্যাচার নয়? কিছুকাল অতিবাহিত হওয়ার পরে মানুষ কি তোমাকে স্পষ্ট করে দেখতে পাবে না? অতএব, কোনো ছদ্মরূপ ধারণ কোরো না, নিজেকে আবৃত করে রেখো না; পরিবর্তে, নিজেকে ও নিজের হৃদয়কে উন্মুক্ত রাখো যাতে অন্যরা তা দেখতে পারে। যদি তুমি অন্যদের দেখার জন্য নিজের হৃদয় উন্মুক্ত রাখো, যদি তোমার সমস্ত চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনাই উন্মুক্ত রাখতে পারো—ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয়ই—সেটাই কি সততা নয়? যদি তুমি অন্যদের দেখার জন্য নিজেকে উন্মুক্ত রাখো, তাহলে ঈশ্বরও তোমাকে দেখবেন ও বলবেন, ‘যদি তুমি অন্যদের দেখার জন্য নিজের হৃদয় উন্মুক্ত রেখেছ, তাহলে আমার সামনে তুমি নিশ্চিতরূপেই সৎ।’ তুমি যদি শুধু তখনই ঈশ্বরের সামনে নিজেকে উন্মুক্ত করো যখন অন্যরা তোমাকে দেখতে পাচ্ছে না, এবং অন্যদের সাথে থাকলে সর্বদাই মহান ও উন্নত বা নিঃস্বার্থ হওয়ার ভান করো, তাহলে ঈশ্বর তোমার বিষয়ে কী ভাববেন, তিনি কী বলবেন? তিনি বলবেন, ‘তুমি একেবারেই একজন প্রতারণাপূর্ণ মানুষ; তুমি সম্পূর্ণরূপে কপট ও ঘৃণ্য; এবং তুমি একজন সৎ মানুষ নও।’ এইভাবে ঈশ্বর তোমার নিন্দা করবেন” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, সৎ ব্যক্তি হওয়ার উদ্দেশ্যে মৌলিকতম অনুশীলন)। ঈশ্বরের বাক্য পড়ার পর, আমি বিষণ্ণ বোধ করতে থাকি। ঈশ্বরের বাক্য়ে হুবহু আমার অবস্থা প্রকাশ। যেহেতু আমি একজন নির্বাচিত সুসমাচার যাজক, আমি মনে করতাম, আমার ভ্রাতা ও ভগিনীদের তুলনায় আমি উচ্চ মেধার মানুষ, তাই আমি সবসময় চাইতাম সবাই আমার ভালো দিকটা দেখুক। আমি আমার ভ্রষ্টাচার এবং ত্রুটিগুলি ঢেকে রেখেছিলাম যাতে অন্যরা সেগুলি জানতে না পারে। দায়িত্বে থাকার সময় আমি নিজেকে জাহির করতাম। আমার যে কোনও সুখবরই গ্রুপে পাঠাতে দেরি করতাম না কারণ আমি চাইতাম সব ভ্রাতা ও ভগিনী, নেতৃবৃন্দ এবং অন্যান্য সহকর্মী সকলেই যেন তা জানে। ইচ্ছাকৃতভাবেই অন্যদেরও আমি বলতাম যে আমি অনেক কাজের দেখাশোনা করি এবং খুব ব্যস্ত যাতে তারা বোঝে যে আমার কর্তব্যের প্রতি আমি দায়বদ্ধ। নিজের প্রকৃত স্বরূপ গোপন করে এক ছদ্মপরিচয়ের আড়ালে ছিলাম আমি যাতে নিজের ইতিবাচক, দায়িত্বশীল এবং সত্যসন্ধানী ভাবমূর্তি বজায় থাকে। আমার উদ্দেশ্য ছিল যাতে আমার ভ্রাতা ও ভগিনীরা আমাকে তাকিয়ে দেখে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমি সে রকম ছিলাম না। যথেষ্টই ভ্রষ্টাচারী ছিলাম, যেমন আমি জাহির করতাম আমার কর্তব্য পালন, যদিও যথেষ্ট অদক্ষ ছিলাম এবং হাতে-কলমে কাজ কখনই করি নি। কিন্তু আমি কখনই নিজেকে প্রকাশ করিনি এবং নিজের ভ্রষ্টাচার ও ত্রুটি কাউকেই জানাইনি কারণ আমার ভয় ছিল যে আমার ভ্রাতা ও ভগিনীরা তাতে জেনে যাবে উচ্চপদের জন্য আমার লোভ ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, তা হলে আমার যে ভাবমূর্তি তাদের মনে আছে তা ভেঙে যাবে। এই ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তা করতেই আমার বিরক্ত লাগছিলো। মিথ্যা ভান এবং ছদ্ম পরিচয়েই আমি অন্যদের সাথে মেলামেশা করেছি যাতে তাদের প্রশংসা পাই। এটি ছিল অহংকারী, প্রতারণামূলক এবং শয়তানী স্বভাব যা ঈশ্বর ঘৃণা করেন। আমি চিন্তা করলাম সুসমাচার যাজক হিসাবে কাজ শুরু আগে কী ভাবে সভা-সমাবেশে প্রায়ই ভ্রাতা ও ভগিনীদের বলতে শুনেছি, “প্রত্যেকেরই কলুষিত শয়তানী স্বভাব রয়েছে এবং প্রত্যেকেই মর্যাদা উপভোগ করে। আমরা সবাই মর্যাদা অর্জন এবং বজায় রাখার জন্য সব কিছু করতে পারি।” তখন আমি ভাবতাম, “যদি মর্যাদা পাই, তবে তা বজায় রাখার জন্য অবশ্যই বিশেষ কিছু করব না।” কিন্তু ঘটনা এবং ঈশ্বরের বাক্য আমাকে উদ্ঘাটিত করেছে। আমি বুঝেছিলাম যে নিজের ভাবমূর্তি এবং মর্যাদা রক্ষা করতে, আমি নিজের স্বরূপ আড়াল করে ছদ্ম-পরিচয় নিয়েছি, এবং আমি বিশেষভাবে অহংকারী এবং প্রতারক। ততক্ষণই আমি এই ধারণায় ছিলাম যে মর্যাদা রক্ষার জন্য আমি কিছুই করি না যতক্ষণ আমার স্বরূপ উদ্ঘাটিত হয় নি। আমিও শয়তান দ্বারা কলুষিত এক ব্যক্তি যে শয়তানী স্বভাবে পূর্ণ। তারপর আমি স্মরণ করি যে ঈশ্বর সৎ লোকেদের পছন্দ করেন, যারা সত্য অনুশীলন করে এবং নিজেদের প্রকাশ করতে পারে। যখন বুঝলাম যে আমি ছদ্ম-পরিচয়ে থাকি এবং সত্যের অনুশীলন করি না, অস্বস্তিতে ভোগা ছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিলো না। আমি ভাবলাম, “আমার একজন সৎ মানুষ হওয়া উচিত এবং নিজের ভ্রষ্টাচারের কথা সকলকে জানানো দরকার।”
কয়েকদিন পর সহকর্মী সভায়, আমি চেয়াছিলাম নিজেকে উন্মুক্ত করতে এবং অন্যদের জানাতে নিজের ছদ্ম-পরিচয়, প্রতারণা ও হাতে-কলমে কাজ না করা এবং সৎ এবং মুক্তমনা মানুষ হতে। কিন্তু সহকারিতার সময় আবার দ্বিধায় পড়ি। “যদি নিজেকে বিশ্লেষণ এবং প্রকাশ করি, তা হলে ভ্রাতা ও ভগিনীরা আমার সম্পর্কে কী ভাববে? এতদিনের কঠিন পরিশ্রমে গড়ে তোলা ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাবে না তো? ভ্রাতা ও ভগিনীরা যদি এই কারণে আমাকে অবজ্ঞা করএন, তাহলে তা হবে খুবই বিব্রতকর। তার চেয়ে ভালো আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করা এবং ভ্রাতা ও ভগিনীরা প্রথমে সহকারিতা করুক।” কিন্তু এই কথা ভেবে আমার খুব স্বস্তি হয়নি। আমার ভ্রষ্টাচারের কথা আমি খুলে বলতে চাইনি, তা হলে এখনও কি আমি ভাণ করছি এবং মর্যাদা রক্ষার চেষ্টায় আছি? মনের মধ্যে শুরু হয়ে গেল লড়াই। যদি আমি সব কথা বলি তাহলে অন্যরা হয়তো আমাকে অবজ্ঞা করবে। আবার, না বললে নিজের কাছে অপরাধী হয়ে থাকছি। সত্য অনুশীলনের জন্য আমি ঈশ্বরের নির্দেশনা প্রার্থনা করলাম। ঠিক এই সময়ে ঈশ্বর বাক্যর একটি অংশ আমি দেখলাম। “তোমরা কি জানো ফরিশী আসলে কারা? তোমাদের আশেপাশে কি কোনো ফরিশী রয়েছে? এদের ‘ফরিশী’ বলা হয় কেন? এই ফরিশীদের কীভাবে বর্ণনা করা হয়? এরা হল সেই সব মানুষ, যারা কপট, সম্পূর্ণ নকল, এবং তাদের সমস্ত কাজে থাকে কৃত্রিমতা। তারা কী ধরণের কৃত্রিমতার ছদ্মবেশ ধারণ করে? তারা ভালো, দয়ালু, এবং ইতিবাচক হওয়ার ভান করে। তারা কি আসলে এমনই? একেবারেই না। যেহেতু তারা ভণ্ড, তাই তাদের মধ্যে যা কিছুই প্রকাশিত ও অভিব্যক্ত হয় সেসবই জাল; একটা ভান মাত্র—এটা তাদের প্রকৃত রূপ নয়। তাদের প্রকৃত রূপ কোথায় লুকানো থাকে? তা লুকানো থাকে তাদের হৃদয়ের গভীরে, যাতে অন্যরা কখনো তা দেখতে না পায়। তাদের বাইরের সমস্তকিছুই ছদ্মবেশ, সবই নকল, কিন্তু তারা শুধুমাত্র মানুষকেই বোকা বানাতে পারে, ঈশ্বরকে নয়। মানুষ যদি সত্য অন্বেষণ না করে, যদি ঈশ্বরের বাক্যের অনুশীলন ও অভিজ্ঞতালাভ না করে, তাহলে তারা প্রকৃতপক্ষে সত্য উপলব্ধি করতে পারে না, আর তাই তাদের কথাবার্তা যতই শ্রুতিমধুর হোক, সেইসব কথা সত্যের বাস্তবতা নয়, বরং তত্ত্বের কথা। কিছু কিছু মানুষ শুধুমাত্র যান্ত্রিকভাবে তত্ত্বের কথা আওড়ানোতেই মনোযোগ দেয়, যারা সর্বোত্তম ধর্মোপদেশ প্রচার করে তারা তাদের অনুকরণ করে, যার ফলস্বরূপ মাত্র কয়েক বছরেই তাদের তত্ত্বগত আলোচনা আরো সুউচ্চ হয়ে ওঠে, বহু মানুষের দ্বারা প্রশংসিত ও সম্মানিত হয়, যার পরে তারা নিজেদের ছদ্ম আবরণ ধারণ করতে শুরু করে, এবং তারা যা কিছু বলে বা করে তার প্রতি বিশেষ মনোযোগী হয়, নিজেদের বিশেষভাবে ধার্মিক ও আধ্যাত্মিক হিসাবে তুলে ধরে। তারা ছদ্মবেশ ধারণ করার জন্য এইসব তথাকথিত আধ্যাত্মিক তত্ত্ব ব্যবহার করে। তারা যেখানেই যায় এইসব বিষয়েই কথা বলে, যেসব আপাত-সত্যি কথা মানুষের ধারণার সাথে মিলে যায় ঠিকই, কিন্তু যার মধ্যে সত্যের কোনো বাস্তবিকতা থাকে না। আর এই সমস্ত বিষয়—যে বিষয়গুলো মানুষের ধারণা ও পছন্দের সাথে মেলে—সেগুলো প্রচার করার মাধ্যমে তারা বহু মানুষকে প্রতারিত করে। অন্যদের মনে হয় এই ধরনের লোকেরা খুবই ভক্তিপূর্ণ ও নম্র, কিন্তু আসলে তা নকল; তাদের সহিষ্ণু, সহনশীল, ও প্রেমপূর্ণ মনে হলেও সেগুলো আসলে ভান; তারা বলে যে তারা ঈশ্বরকে ভালোবাসে, কিন্তু সেটা আসলে একটা অভিনয়। অন্যরা মনে করে এই ধরনের মানুষেরা পবিত্র, কিন্তু আসলে তারা নকল। একজন প্রকৃত পবিত্র মানুষকে কোথায় খুঁজে পাওয়া যায়? মানুষের পবিত্রতা সম্পূর্ণই নকল। এটার পুরোটাই অভিনয়, একটা ভান মাত্র। বাইরে থেকে দেখলে তাদের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত বলে মনে হয়, কিন্তু তারা শুধু মানুষকে দেখানোর জন্যই এমন অভিনয় করে। যখন কেউ লক্ষ্য করছে না তখন তারা সামান্যতমও বিশ্বস্ত থাকে না, এবং তারা যা কিছু করে তা করে অবজ্ঞার সাথে। বাহ্যিকভাবে, তারা ঈশ্বরের জন্য নিজেদের ব্যয় করে, এবং তাদের পরিবার ও কর্মজীবনও ত্যাগ করেছে। কিন্তু গোপনে তারা কী করছে? তারা তাদের নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনা করছে এবং গির্জায় তাদের নিজস্ব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, গির্জা থেকে মুনাফা লুটছে এবং ঈশ্বরের জন্য কাজ করার ভণিতায় গোপনে ঈশ্বরের উৎসর্গ চুরি করছে…। এই লোকেরা আধুনিক ভণ্ড ফরিশী। এই ফরিশীরা—এই সব লোকেরা কোথা থেকে আসে? তারা কি অবিশ্বাসীদের থেকেই উদ্ভূত? না, তারা সকলেই বিশ্বাসীদের মধ্যে থেকেই উদ্ভূত। এরা ফরিশী হয়ে ওঠে কেন? কেউ কি তাদের এমন বানিয়ে দিয়েছে? অবশ্যই নয়। তাহলে এর কারণ কী? কারণ তাদের প্রকৃতি ও নির্যাসই এরকম, আর সেটার কারণ হচ্ছে তাদের বেছে নেওয়া পথ। তারা প্রচার করার জন্য এবং গির্জা থেকে মুনাফা লোটার জন্য ঈশ্বরের বাক্যকে শুধু একটা সরঞ্জাম হিসাবেই ব্যবহার করে। তারা তাদের মস্তিষ্ক ও মুখকে ঈশ্বরের বাক্যের অস্ত্রে সজ্জিত করে, তারা নকল আধ্যাত্মিক তত্ত্ব প্রচার করে, এবং নিজেদেরকে পবিত্র হিসাবে উপস্থাপন করে, আর তারপর সেটাকে গির্জা থেকে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে মূলধন হিসাবে ব্যবহার করে। তারা শুধু তত্ত্বকথাই প্রচার করে, অথচ কখনোই সত্যের অনুশীলন করে না। যারা কখনোই ঈশ্বরের পথ অনুসরণ না করলেও ক্রমাগত ঈশ্বরের বাক্য এবং তত্ত্বকথা প্রচার করে, তারা কী ধরনের মানুষ? তারা হল ভণ্ড ফরিশী। তাদের মধ্যে আপাত যে সদাচরণ ও সদ্ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়, তারা যে সামান্য ত্যাগ ও ব্যয় করেছে, সেগুলো সম্পূর্ণ আরোপিত; এগুলো সমস্তই হল নিছক ছদ্মবেশ যা তারা ধারণ করে। সেগুলো পুরোপুরি মেকী, সেই সমস্ত কাজই তাদের ভান। সেই সব লোকেদের হৃদয়ে ঈশ্বরের জন্য সামান্যতমও সম্মান নেই, অথবা ঈশ্বরের ওপর তাদের প্রকৃত কোনো বিশ্বাসও নেই। সর্বোপরি, তারা হল অবিশ্বাসী। মানুষ যদি সত্য অন্বেষণ না করে, তাহলে তারা এই ধরনের পথেই চলবে, এবং তারা ফরিশীতে পরিণত হবে। এটা কি ভীতিপ্রদ নয়? যে আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে ফরিশীরা একত্রিত হয়, তা একটা বাজারে পরিণত হয়। ঈশ্বরের দৃষ্টিতে, এটা হল ধর্ম; এটা ঈশ্বরের গির্জা নয়, আবার এটা এমন স্থানও নয় যেখানে তাঁর উপাসনা করা হয়। সুতরাং, মানুষ যদি সত্যের অন্বেষণ না করে, তাহলে তারা নিজেদের যত বেশি আক্ষরিক শব্দ ও ঈশ্বরের কথন সংক্রান্ত অগভীর মতবাদ দিয়েই সজ্জিত করুক না কেন, সেগুলো কোনও কাজেই লাগবে না” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, জীবনের উন্নতির ছয়টি সূচক)। ঈশ্বরের বাক্য পড়ার পর, আমি খুব ভীত হয়ে পড়ি এবং আমি ভিতরে ভিতরে কাঁপতে থাকি। অন্যরা যাতে আমার সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করে সে কারণে আমি সব কিছুতেই ছদ্মপরিচয় ধারণ করেছি, যাতে সবাই আমার ভালো দিকটি দেখতে পায়। কখনই আমার ত্রুটিগুলি উল্লেখ করিনি বা সেগুলি সম্পর্কে মুখ খুলিনি। আমি সবসময় লোকেদের মিথ্যা ধারণা দিতাম এবং আমার ভ্রাতা ও ভগিনীদের বিভ্রান্ত করতাম। তা হলে আমিও কি ফরিশীদের মতো নই? উপাসনালয়ে ফরিশীরা প্রতিদিন লোকেদের কাছে ধর্মগ্রন্থের ব্যাখ্যা করত এবং পথের মোড়ে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করত। প্রত্যেকেই ভাবত যে তারা ঈশ্বরপ্রেমী এবং ধার্মিক এবং তাদের শ্রদ্ধার চোখে দেখত এবং উপাসনা করত। কিন্তু তারা আদপেই ঈশ্বরভীত ছিল না, ঈশ্বরকে সর্বোচ্চ স্থানে রাখে নি, পালন করেনি ঈশ্বরের আদেশ। বিশেষ করে প্রভু যীশু যখন আবির্ভূত হয়ে কাজ করেছিলেন, তারা জানত প্রভু যীশুর কথার কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা আছে, কিন্তু তাদের পদমর্যাদা ও আয় বজায় রাখতে, তারা উন্মত্তভাবে ঈশ্বরের অবমাননা, প্রতিরোধ এবং তাঁর কাজের নিন্দা করেছিল। তাদের বাহ্যিক সৎ কাজগুলি ছিল ভুয়া, যা তারা ব্যবহার করত নিজেদের আড়াল করতে এবং গোপন রাখতে, এবং যদিও তাদের চেহারা স্বর্গীয়, কিন্তু আদতে তারা ছিল কপট এবং ঘৃণা করত সত্যকে। আমার মনে পড়ল প্রভু যীশু কীভাবে ফড়ীশীদের অভিসম্পাত দিয়েছিলেন। “ভণ্ড শাস্ত্রী ও ফরিশীর দল! তোমরা চুণকাম করা কবরের মত। বাইরের দিকটা দেখতে সুন্দর, কিন্তু ভেতরটা মড়ার হাড় ও সব রকম আর্বজনায় পূর্ণ হয়ে আছে। ঠিক সেইভাবে বাইরে লোকের চোখে তোমরা ধার্মিক, কিন্তু তোমাদের অন্তর ভণ্ডামি ও উচ্ছৃঙ্খলতায় পরিপূর্ণ” (মথি ২৩:২৭-২৮)। তখন আমি নিজের কথা ভাবলাম। আমিও কি একই রকম নই? যেহেতু আমি সুসমাচার যাজক, তাই বাহ্যিকভাবে আমি খুব ভোরে উঠি, দীর্ঘ সময় জেগে থাকি এবং কর্তব্যপালনে সক্রিয়, কিন্তু এ সবই ছলনামাত্র, অন্যদের দেখানোর জন্য করা। কর্তব্যপালনে আমার সক্রিয় থাকার কারণ হল যাতে অন্যরা বোঝে যে তারা সঠিক মানুষ নির্বাচন করেছে। ভ্রাতা ও ভগিনীদের সমস্যা যখন আমি সক্রিয়ভাবে সমাধান করতাম, অবিলম্বে গ্রুপে তা মেসেজ করতাম অথবা তাদের জানাতাম, কারণ আমি চাইতাম যাতে আমার নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্যরা বোঝে আমার দক্ষতা এবং কর্তব্যের প্রতি দায়বদ্ধতা। আমি বুঝলাম যে নিজের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যপূরণের জন্যই আমি কর্তব্য পালন করি। আমি শুধু চেয়েছিলাম যাতে অন্যরা আমার সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষন করে। খুব স্পষ্টভাবেই জানতাম যে আমি হাতে-কলমে কাজ করি নি, প্রায়শই নিজেকে জাহির করেছি এবং বাঁচিয়ে চলেছি মর্যাদা, কিন্তু কোনো সময়েই উল্লেখ করি নি বা বলি নি আমার ভ্রষ্টাচারের কথা। নিজেকে উন্মুক্ত করার এবং অন্যদের বলার বহু সুযোগ ঈশ্বর আমাকে দিয়েছিলেন, এবং বারম্বার, কিন্তু আমি সত্য অনুশীলন করি নি, বরঞ্চ নিজের পথ হিসাবে বেছে নিয়েছিলাম প্রতারণা, ছদ্ম-পরিচয় এবং গোপনীয়তা যাতে ভ্রাতা ও ভগিনীরা বিভ্রান্ত হয়ে আমার প্রশংসা করে এমন এক মানুষ হিসাবে যে সত্যানুসারী এবং নিজ কর্তব্যে দায়িত্বশীল। আমি দেখলাম যে ঠিক ভণ্ড ফরিশীদের মতই আমি মানুষকে আমার কাছে নিয়ে এসেছি। এটি ছিল প্রতারণা করে তাদের জয় করা এবং ঈশ্বর-বিরোধিতার পথে আমি চলেছিলাম। ঈশ্বর ফড়ীশীদের অভিশাপ দিয়েছিলেন। যদি আমি অনুতপ্ত না হই, তবে আমিও ঈশ্বরের দ্বারা ঘৃণিত এবং নির্মূল হব।
পরে, আমি ঈশ্বরের বাক্যর আরেকটি অনুচ্ছেদ পড়লাম, “যেকোনো সমস্যাই আসুক না কেন, তোমাকে তা সমাধানের জন্য সত্যের অন্বেষণ করতে হবে, সে সমস্যা যেমনই হোক, অপরের কাছে ছদ্মবেশ ধারণ করবে না বা নিজের আসল রূপ গোপন করবে না। তোমার বিচ্যুতি, ঘাটতি, ত্রুটি, ভ্রষ্ট স্বভাব—সেই সবকিছুর বিষয়ে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত হও, এবং সেই সমস্ত বিষয়েই আলোচনা করো। সেগুলো ভিতরে রেখে দিও না। জীবনে প্রবেশ করার প্রথম পদক্ষেপ হল কীভাবে নিজেকে উন্মুক্ত করা যায় সেটা শেখা, এবং এটাই প্রথম বাধা যেটাকে অতিক্রম করা সবচেয়ে কঠিন। একবার তুমি এটাকে অতিক্রম করে নিলে, সত্যে প্রবেশ করা সহজ। এই পদক্ষেপ গ্রহণের তাৎপর্য কী? এর অর্থ হল, তুমি নিজের হৃদয় উন্মুক্ত করে তোমার যা আছে সেই সমস্ত কিছু দেখাচ্ছ, ভালো বা মন্দ, ইতিবাচক বা নেতিবাচক; অন্যদের এবং ঈশ্বরের দেখার জন্য নিজেকে অনাবৃত করে দিচ্ছ; ঈশ্বরের কাছ থেকে কিছুই গোপন করছ না, কিছুই আড়াল রাখছ না, কোনো ছদ্মরূপ গ্রহণ করছ না, প্রতারণা ও ছলনা মুক্ত রয়েছ, এবং অন্যদের সাথেও একইভাবে উন্মুক্ত ও সৎ রয়েছ। এইভাবেই, তুমি আলোতে বাস করবে, এবং শুধুমাত্র ঈশ্বরই যে তোমায় পরীক্ষা করবেন তা নয়, বরং অন্যরাও দেখতে পাবে যে তুমি নীতি ও স্বচ্ছতার সাথে কাজ করো। তোমার সুনাম, ভাবমূর্তি এবং মর্যাদা রক্ষার জন্য তোমার কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই, আবার তেমনই তোমার ভুল ঢাকা দেওয়ার বা তা গোপন করারও কোনো প্রয়োজন নেই। তোমার এই সমস্ত অর্থহীন প্রচেষ্টায় যুক্ত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তুমি যদি এইসব বিষয় ছেড়ে দিতে পারো, তাহলে তুমি খুবই স্বস্তি পাবে, কোনো শৃঙ্খল বা যন্ত্রণা ছাড়াই বাঁচতে পারবে, এবং তুমি সম্পূর্ণভাবে আলোতেই জীবনযাপন করতে পারবে। আলোচনার সময় তুমি কীভাবে উন্মুক্ত হতে পারো, সেটা শেখাই হল জীবনে প্রবেশ করার প্রথম পদক্ষেপ। এর পরে, তোমায় নিজের চিন্তাভাবনা ও ক্রিয়াকলাপ বিশ্লেষণ করা শিখতে হবে, যাতে উপলব্ধি করতে পারো কোন জিনিসগুলো ভুল, কোনগুলো ঈশ্বর পছন্দ করেন না, এবং তোমাকে অবিলম্বেই সেগুলো পালটাতে হবে ও ঠিক করে নিতে হবে। সেগুলো ঠিক করে নেওয়ার উদ্দেশ্য কী? এর উদ্দেশ্য হল সত্যকে স্বীকার করা ও তা প্রয়োগ করা, একইসাথে যে জিনিসগুলো শয়তানের থেকে আগত সেগুলো প্রত্যাখ্যান করা এবং সত্যের দ্বারা সেগুলো প্রতিস্থাপিত করা। এর আগে, তুমি তোমার ধূর্ত স্বভাব, যেটা কিনা মিথ্যাচারী ও প্রবঞ্চক, সেই স্বভাব অনুযায়ী সবকিছু করেছ; অনুভব করেছ যে মিথ্যাচার ছাড়া তুমি কিছুই লাভ করতে পারবে না। এখন যেহেতু তুমি সত্যকে উপলব্ধি করেছ এবং কাজ করার ক্ষেত্রে শয়তানের পদ্ধতি অবজ্ঞা করেছ, তাই আর তুমি সেভাবে কাজ করো না, তুমি সততা, শুদ্ধতা, ও আনুগত্যের মানসিকতা নিয়ে কাজ করো। যদি তুমি কিছুই ধরে না রাখো, যদি একটা মিথ্যা চেহারা, ভান, ও কৃত্রিমতার আশ্রয় না নাও, যদি তুমি নিজেকে ভাই ও বোনেদের সামনে উন্মুক্ত করো, নিজের অন্তঃস্থলের ধারণা ও ভাবনা লুকিয়ে না রেখে অন্যদের তোমার সৎ মনোভাব প্রত্যক্ষ করতে দাও, তাহলে ধীরে ধীরে সত্য তোমার মধ্যে মূল স্থাপিত করবে, পরিস্ফুট ও ফলপ্রসূ হবে, একটু একটু করে তা থেকে ফলাফল অর্জিত হবে। যদি তোমার হৃদয় ক্রমে সৎ হয়ে ওঠে, এবং ঈশ্বরের প্রতি নিবদ্ধ হয়, এবং দায়িত্ব পালনের সময় যদি তুমি ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থ রক্ষা করতে জানো, এবং সেই স্বার্থ রক্ষা করতে না পারলে যদি তোমার বিবেকে বাধে, তবে তা প্রমাণ করে যে সত্য তোমার মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছে এবং তোমার জীবন হয়ে উঠেছে” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। আমি ঈশ্বরের বাক্য থেকে বুঝতে পারলাম, ছদ্মপরিচয় ধারণ না করে বা মিথ্যা ধারণা না দিয়ে, নিজের ভ্রষ্টাচার এবং ত্রুটিগুলি প্রকাশ করতে সক্ষম হলে, ভ্রাতা এবং ভগিনীদের কাছে নিজের প্রকৃত সত্তা এবং অন্তরের অন্তস্থল দেখাতে পারাই হল কোনো সৎ মানুষের পরিচয়। এখন আমি ভাবি কীভাবে সবসময় ছদ্মপরিচয় ধারণ করেছি এবং নিজেকে লুকিয়ে রেখেছি যাতে অন্যরা আমার সম্পর্কে উচ্চ ধারণা করে, এবং কীভাবে মিটিংয়ে নিজের ভ্রষ্টাচারের বিষয়ে মুখ খুলতে সাহস পাইনি। আমি ছিলাম এক প্রতারক, এমন একজন যে ঈশ্বরের ঘৃণ্য এবং বিরক্তিকর, এবং এইভাবে জীবনযাপন ক্লান্তিকর এবং বেদনাদায়ক ছিল। এটি উপলব্ধির পর, আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, “ঈশ্বর! আমি সব কিছুতেই ছদ্মপরিচয় ধারণ করেছি যাতে লোকে প্রশংসার সাথে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি জানি এটি আপনার বিরক্তি উৎপাদন করে। এখন আমি নিজের প্রতিই বিরক্ত। ঈশ্বর, আমি সত্য অনুশীলন করে সৎ মানুষ হতে চাই। করুণা করে আমাকে পরিচালিত করুন।” প্রার্থনার পরে আমি সকলকে জানালাম, কীভাবে আমি প্রকৃত কাজ করি নি এবং প্রকাশ করলাম ছদ্ম-পরিচয় এবং প্রতারণার আড়ালে কীভাবে নিজেকে গোপণ রেখেছিলাম। এই সহকারিতার পরে আমার হৃদয়ের গুরুভার লাঘব হল এবং আমি স্বস্তি পেলাম। আমার ভ্রাতা ও ভগিনীরা আমার প্রতি অবজ্ঞা দেখান নি, এবং আমার নেতৃবৃন্দ কোনো ভর্তসনা করেন নি বা কোনো ব্যবস্থাও নেন নি; বরঞ্চ, ধৈর্যের সাথে সহকারিতা করেন এবং কীভাবে আমাকে ব্যবহারিক কাজ করতে হবে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেন। আমি উপলব্ধি করলাম, সত্য অনুশীলন করে এক সৎ মানুষ হয়ে আমি অনেক বেশি শান্তি পাচ্ছি এবং নিরাপদ বোধ করছি। যদিও আমার সমস্যা এবং ত্রুটিগুলি প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু আমার ভ্রাতা ও ভগিনীদের সহকারিতায় এবং সাহায্যে আমি যথা সময়ে আমার পথ বদলাতে এবং আমার দায়িত্ব আরও ভালোভাবে পালন করতে পেরেছি যা আমার উপকারে লেগেছিল।
এর পরে, আমি সচেতনভাবেই উন্মুক্ত হতাম এবং আমার ভ্রাতা ও ভগিনীদের সাথে সহকারিতা করতাম, যাতে আমার কলুষিত স্বভাব প্রকাশিত হয় এবং বন্ধ করি নিজের ছদ্মপরিচয় ধারণ। একবার এক ভ্রাতা আমাকে মেসেজ পাঠালেন যে, “আপনি একজন সুসমাচার যাজক। আমরা যখন সুসমাচার প্রচার করি তখন আপনি কেন আসেন না এবং সুসমাচারের লক্ষ্যগুলির সাথে সহভাগিতা করেন না? মনে হয় আপনার আসা উচিত।” মেসেজটি দেখে আমার খুব রাগ হলো। আমি ভাবলাম, “আপনি শুধু একজন দলনেতা। আমাকে আদেশ দেওয়ার অধিকার কীভাবে আপনার হয়? মনে হচ্ছে আপনি আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। আমি ব্যস্ত আছি বা আমার সময় আছে কিনা তাও আপনি জিজ্ঞাসা করলেন না।” জবাবে লিখলাম, “সুসমাচার প্রচারের কাজ আমার একার উপর নির্ভর করতে পারে না। এটি করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।” পরে, আমি সামান্য অপরাধী বোধ করেছি, কারণ আমার মনে হয়েছিল, আমার অহংকারী স্বভাব প্রকাশ করছি। আমাদের কাজ বিবেচনা করেই ভ্রাতা সত্য কথাই লিখেছিলেন। আমার তা মেনে নেওয়া উচিত। আমি শুধু প্রত্যাখ্যানই করিনি, ক্রুদ্ধ হয়ে তার জবাবও দিয়েছিলাম। এটি কি নেহাতই অযৌক্তিক ছিল না? যা করেছি তাতে সে আঘাত পাবে এবং বাধ্য বোধ করবে। আমি তার কাছে খোলাখুলি আমার সমস্যাগুলি স্বীকার করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার ভাবমূর্তি ছাড়তে পারি নি। আমার সম্পর্কে আগে এই ভ্রাতার ভালো ধারণা ছিলো। তাই তার কাছে মুখ খুলুলে তিনি কি আমাকে অবজ্ঞা করবেন না? এই ভেবে, আমার মনে হল যে, নিজের মর্যাদা এবং ভাবমূর্তি বজায় রাখতে আবার ছদ্মপরিচয় ধারণ করতে হবে। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, তাঁকে অনুরোধ করলাম যে তিনি যেন আমাকে সত্যের অনুশীলনে পরিচালিত করেন এবং আমাকে ক্ষমা করেন। পরে এই ভ্রাতার কাছে নিজের ভ্রষ্টাচারের কথা খুলে বলি। তিনি বলেন যে তাঁর স্বভাবও অহংকারী এবং কথা বলার সময় তিনিও আমার অনুভূতি বিবেচনা করেন নি, এবং তিনিও পরিবর্তিত হতে চান। ঈশ্বর-বাক্যর নির্দেশনায়, আমরা নিজেদের প্রকাশ করি, এবং একজন সৎ ব্যক্তি হওয়ার অনুশীলন আমাকে বিশেষভাবে স্বস্তি দেয়।
এই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, আমি উপলব্ধি করি অন্তিম সময়ে প্রকাশিত ঈশ্বর বাক্য নিশ্চিতভাবে মানুষকে পরিশুদ্ধ ও রক্ষা করবে। ঈশ্বর-বাক্যের বিচার ছাড়া আমি সবসময়েই ছদ্মপরিচয় এবং গোপনীয়তার আড়ালে থাকতাম, এবং নিজের ভ্রষ্টাচার ও ত্রুটি সম্পর্কে প্রকৃত উপলব্ধি অসম্ভব হত, এবং আমি নিজেকে বদলাতে পারতাম না। ঈশ্বরের নির্দেশনা এবং পরিত্রাণের জন্য আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ, একজন সৎ ব্যক্তি হয়ে সত্যের অনুশীলনে শান্তি এবং মুক্তির উপলব্ধি আমাকে দেওয়ার জন্য।
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।