স্বাচ্ছন্দ্যের লোভ আপনাকে কিছুই দিতে পারে না
গত জুলাইতে আমাকে ভিডিও-র কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। শুরুতে প্রায়ই আমি আমার ব্রাদার-সিস্টারদের কাজের নিয়মিত খোঁজখবর করতাম। কাজ করতে গিয়ে তাদের যে সমস্যা হতো আমি সেগুলোর সম্পর্কে জানলাম, আর তারপর আমাদের দলের প্রধানের সাথে মিলে সত্যের সন্ধান ও সমাধান খোঁজার জন্য কাজ করছিলাম। ঈশ্বরের পথনির্দেশনায়, কিছু সময় পর কাজের ফলাফলে স্পষ্টতই অগ্রগতি দেখা গেল। আমি ভাবলাম, “এখন কাজের নিয়মিত উন্নতি হচ্ছে, কোনো বড় ধরনের সমস্যা থাকার কথা নয়। এমনকি যদি কোন সমস্যা সৃষ্টি হয়ও, তা আমাদের কাজের ফলাফলের উপর প্রভাব ফেলবে না, এবং তার সমাধানের জন্য আমাদের হাতে সময় থাকবে। প্রত্যেকেই তাদের দায়িত্ব পালনে অতি মাত্রায় সক্রিয় এবং তারা মূল্যও দিতে পারে, তাই আমার খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। এই সময়টাতে, প্রত্যেকটা ব্যাপারে নজরদারি করতে গিয়ে প্রায়ই অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হত, এবং মাঝে মাঝে আমি এতই ব্যস্ত থাকতাম যে ঠিক সময়ে খেতেও পারতাম না। আমার শরীরও খুব একটা ভালো যাচ্ছে না, তাই কাজগুলোকে একটু সহজ করে নেওয়া উচিত।” এরপর থেকে আমি কাজের ব্যাপারে গা ছাড়া দিলাম, এবং নজর রাখার ব্যাপারেও যথেষ্ট মনোযোগ দিচ্ছিলাম না। মাঝে মাঝে আমি স্রেফ হালকাভাবে খোঁজখবর নিতাম, আমি খুব কমই ব্রাদার-সিস্টারদের কাজগুলো গভীরভাবে দেখতাম, আর আমাদের কাজের ফলাফল কীভাবে আরও ভাল করা যেতে পারে সে ব্যাপারেও আমি ভেবে দেখতাম না।
শিগগিরই, আমাদের বানানো বেশ কিছু ভিডিওতে সমস্যা দেখা গেল এবং সেগুলো আবার করে বানানোর দরকার পড়ল, যা সরাসরি প্রভাব ফেলল কাজের অগ্রগতিতে। এমন পরিস্থিতি দেখে আমি উদ্বিগ্ন হলাম। আমি এটাও বুঝলাম যে ব্যাপারটা দুর্ঘটনাবশতঃ ঘটেনি, আর এখান থেকে আমার কিছু শেখার আছে। তাই আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, তাঁর ইচ্ছা উপলব্ধি করার জন্য তাঁর পথনির্দেশ চাইলাম। প্রার্থনার পর আমি দলনেত্রীর কাছে জানতে চাইলাম কেন আমাদের এই সমস্যাগুলো হচ্ছে। তিনি বললেন, “কোনো কোনো ভাই-বোনেরা খুব তাড়াতাড়ি সাফল্য পেতে চায় আর নীতিহীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে। তারা শুধু কাজের অগ্রগতির দিকেই মনোযোগ দেয়, মানের দিকে নয়। আরেকটা কারণ হল আমি কাজের নিয়মিত খোঁজখবর করিনি, আর সময় মতো সমস্যাগুলো ধরতেও পারিনি।” এতে আমি রেগে গিয়ে ভাবলাম, “কতবার আমি আপনাকে এই সমস্যাগুলো নিয়ে বলেছি? কেন সেগুলো এখনও ঘটছে?” আমি দলনেত্রীকে তীব্রভাবে তিরস্কার করতে চাইলাম, কিন্তু তারপরই মনে হল, “ওঁর যে সমস্যাগুলো আছে ঠিক একই সমস্যা কি আমারও নেই? আমিও তো নজরদারি করিনি।” তাই আমি আমার কথা গিলে ফেললাম। তারপর, এই সময়ের মধ্যে যতগুলো ভিডিও সবাই তৈরি করেছে সেই সবগুলো আমি তাড়াতাড়ি দেখে ফেললাম। আমি দেখলাম যে অনেকের কাজের এখনও উন্নতি হয়নি, আর কারো কারো তো অবনতিও হয়েছে। সমস্যাগুলো স্পষ্ট কিন্তু আমি সেগুলো ধরতে পারিনি। আমি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারছিলাম যে আমি নিজে হাতেকলমে কাজ না করার ফলেই এমনটা হয়েছে। আমার অনুশোচনা হল, তাই আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম যাতে তিনি আমায় নিজেকে দেখার ও জানার পথ দেখান।
পরের দিনের প্রার্থনায় আমি ঈশ্বরের বাক্যের একটা পরিচ্ছেদ পড়লাম। “ঈশ্বরের বাক্য পাঠের সময় তুমি যদি একনিষ্ঠ না হও, এবং তুমি যদি সত্যকে উপলব্ধি না করো, তাহলে তুমি আত্ম-অনুসন্ধান করতে পারবে না; শুধুমাত্র সামান্য প্রচেষ্টা ব্যয় করে এবং সীমালঙ্ঘন না করেই তুমি সন্তুষ্ট থাকবে, এবং এটাকেই মূলধন হিসাবে ব্যবহার করবে। প্রত্যেকটা দিন তুমি বিভ্রান্তভাবে কাটিয়ে যাবে, বিহ্বল অবস্থার মধ্যে বাস করবে, সময়সূচি অনুসারে শুধু কাজগুলো সম্পাদন করে যাবে, নিজেকে প্রয়োগ করবে না, কখনোই নিজের মস্তিষ্ককে কাজে লাগাবে না, এবং সর্বদাই অগভীর ও হঠকারী থাকবে। এইভাবে, তুমি কখনোই তোমার দায়িত্ব সম্পাদনকে একটা গ্রহণযোগ্য মানে পৌঁছে দিতে পারবে না। কোনো কিছুতে নিজের সম্পূর্ণ প্রচেষ্টা নিয়োজিত করতে গেলে, তোমাকে প্রথমে তোমার সমস্ত হৃদয় তাতে ঢেলে দিতে হবে; শুধুমাত্র যখন তুমি প্রথমে কোনো কিছুতে তোমার সমগ্র হৃদয় ঢেলে দিতে পারবে, তখনই তুমি সমস্ত প্রচেষ্টা তাতে প্রয়োগ করতে পারবে, এবং নিজের সেরাটুকু দিতে পারবে। বর্তমানে, এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা নিজেদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে একনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে, তারা চিন্তা করতে শুরু করেছে যে ঈশ্বরের হৃদয়কে সন্তুষ্ট করার জন্য একজন সৃষ্ট সত্তার দায়িত্ব কীভাবে যথাযথভাবে সম্পাদন করা যায়। তারা নেতিবাচক বা অলস নয়, তারা ঊর্ধ্বতনের আদেশ জারি করার অপেক্ষা করে না, বরং নিজেরাই কিছু উদ্যোগ নেয়। তোমাদের দায়িত্ব পালনের বিচার করে বলা যায়, তোমরা আগের তুলনায় সামান্য অধিক কার্যকর হয়েছ, এবং যদিও তা এখনও গ্রহণযোগ্য মানের নিচেই রয়েছে, তবুও এখানে সামান্য বৃদ্ধি হয়েছে—যেটা ভালো ব্যাপার। কিন্তু তোমার এই স্থিতাবস্থায় সন্তুষ্ট হলে চলবে না, তোমাকে অবশ্যই অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে হবে, উন্নতিলাভ করতে হবে—শুধুমাত্র তবেই তুমি তোমার দায়িত্ব আরও ভালভাবে সম্পাদন করতে পারবে এবং একটা গ্রহণযোগ্য মানে পৌঁছতে পারবে। কিন্তু কিছু লোক নিজেদের দায়িত্ব পালনের সময় কখনোই সম্পূর্ণরূপে সচেষ্ট হয় না, তাদের সম্পূর্ণটুকু দেয় না, তারা তাদের প্রচেষ্টার ৫০-৬০% দেয়, এবং তারা যা করছে শুধু সেটুকু সম্পন্ন হওয়া পর্যন্তই কাজ করে। তারা কখনোই স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে পারে না: যখন তাদের দিকে নজর রাখার মতো বা তাদের সমর্থন করার মতো কেউ থাকে না, তখন তারা কাজে শিথিল হয়ে পড়ে এবং মনোযোগ হারায়; যখন সত্যের আলোচনা করার জন্য কেউ না কেউ উপস্থিত থাকে, তখন তারা উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে, কিন্তু কিছুক্ষণ তাদের কাছে সত্যের আলোচনা না করা হলেই তারা নির্লিপ্ত হয়ে যায়। তারা সবসময় এরকম দোদুল্যমান থাকলে কী অসুবিধা? সত্যকে অর্জন না করলে মানুষ এরকমই হয়, তারা সকলে আবেগ নিয়েই বেঁচে থাকে—এমন এক আবেগ যা বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন: তাদের ধর্মোপদেশ দেওয়ার জন্য ও তাদের সাথে সহকারিতা করার জন্য প্রতিদিন কোনো একজনকে তাদের অবশ্যই প্রয়োজন; একবার যদি তাদের জলদান করার ও সত্যের যোগান দেওয়ার জন্য কেউ না থাকে, সমর্থন দেওয়ার মতো কেউ না থাকে, তাহলেই তাদের হৃদয় আবার শীতল হয়ে যায়, তারা আরও একবার শিথিল হয়ে পড়ে। আর যখনই তাদের হৃদয় শিথিল হয়ে পড়ে, দায়িত্ব সম্পাদনে তাদের কার্যকারিতাও কমে যায়; যদি তারা বেশি সচেষ্ট হয়, তাহলে তাদের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়, তাদের কার্য সম্পাদন আরও ফলদায়ক হয়ে ওঠে, এবং তারা আরও বেশি অর্জন করে। তোমাদের অভিজ্ঞতা কি এটাই? তোমরা হয়ত বলতে পারো, ‘কেন আমরাই সবসময় আমাদের দায়িত্ব পালনে সমস্যার মুখে পড়ি? যখন এই সমস্যাগুলোর সমাধান হয়ে যায়, আমরা উৎসাহিত হই; আবার তা না হলে, আমরা উদাসীন হয়ে পড়ি। যখন আমাদের দায়িত্ব পালনের কিছু ফলাফল পাওয়া যায়, যখন ঈশ্বর আমাদের উন্নতির জন্য প্রশংসা করেন, তখন আমরা আনন্দিত হই, এবং অনুভব করি যে আমরা অবশেষে বড় হয়েছি, কিন্তু অল্প সময় পরেই, যখন কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হই, আমরা আবার নেতিবাচক হয়ে উঠি—আমাদের অবস্থা সর্বদা এরকম পরিবর্তনশীল কেন?’ প্রকৃতপক্ষে, এর মূল কারণগুলো হল, তোমরা খুব কম সত্য উপলব্ধি করো, তোমাদের অভিজ্ঞতা ও প্রবেশে গভীরতার অভাব রয়েছে, তোমরা এখনও অনেক সত্য উপলব্ধি করতে পারো না, তোমাদের ইচ্ছার অভাব রয়েছে, এবং দায়িত্ব পালনে সক্ষম হতে পারলেই তোমরা সন্তুষ্ট। তুমি যদি সত্যকে উপলব্ধি করতে না পারো, তাহলে যথাযথভাবে দায়িত্ব কীভাবে সম্পাদন করতে পারবে? আসলে, ঈশ্বর মানুষের কাছে যা চান, তার সবই মানুষের পক্ষে অর্জন করা সম্ভব; যতক্ষণ তুমি নিজের বিবেককে তার ভূমিকা পালন করতে দিচ্ছ, এবং নিজের দায়িত্ব পালনের সময় নিজের বিবেককে অনুসরণ করতে সক্ষম হচ্ছ, ততক্ষণ সত্যকে গ্রহণ করা সহজ হবে—আর যদি তুমি সত্য স্বীকার করতে পারো, তাহলেই নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে সম্পাদন করতে পারবে। তোমাদের অবশ্যই এইভাবে ভাবতে হবে, ‘এই বছরগুলোতে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পান করে, আমি অত্যধিক অর্জন করেছি, এবং ঈশ্বর আমার উপর প্রচুর অনুগ্রহ ও আশীর্বাদ বর্ষণ করেছেন। আমি ঈশ্বরের হাতে বাস করি, আমি ঈশ্বরের শক্তির অধীনে ও তাঁর আধিপত্যের অধীনেই বাঁচি, এবং তিনিই আমাকে এই প্রাণবায়ু প্রদান করেছেন, তাই আমার উচিত আমার মন নিবেদিত করে, সমস্ত ক্ষমতা দিয়ে দায়িত্ব সম্পাদনে সচেষ্ট হওয়া—এটাই মূল বিষয়।’ মানুষের মধ্যে ইচ্ছা থাকতে হবে, শুধুমাত্র যাদের ইচ্ছা রয়েছে, তারাই প্রকৃতপক্ষে সত্যের জন্য সচেষ্ট হতে পারে, এবং একবার এই সত্য তারা উপলব্ধি করতে পারলে তবেই নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে সম্পাদন করতে পারবে, ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে পারবে, এবং শয়তানকে অপমানিত করতে পারবে। যদি তোমার মধ্যে এই ধরনের আন্তরিকতা থাকে, আর যদি নিজের স্বার্থের জন্য পরিকল্পনা করার পরিবর্তে শুধুমাত্র সত্য অর্জনের জন্য এবং নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের জন্য পরিকল্পনা করো, তাহলে তোমার দায়িত্বের সম্পাদন স্বাভাবিক হবে, এবং তা সবসময় একই থাকবে; তুমি যে পরিস্থিতিরই সম্মুখীন হও না কেন, তুমি তোমার দায়িত্ব পালনে অব্যাহত থাকতে সক্ষম হবে। যে বা যা-ই তোমাকে বিভ্রান্ত বা বাধাপ্রাপ্ত করতে আসুক না কেন, তোমার মানসিক অবস্থা ভালো হোক বা খারাপ, তুমি তা সত্ত্বেও তোমার দায়িত্ব স্বাভাবিকভাবে সম্পাদনে সক্ষম হবে। এইভাবে, ঈশ্বর তোমার বিষয়ে তাঁর মনকে বিশ্রাম দিতে পারবেন, এবং পবিত্র আত্মা তোমাকে সত্যের নীতি উপলব্ধি করার জন্য আলোকিত করতে সক্ষম হবেন, এবং সত্যের বাস্তবিকতায় প্রবেশের জন্য তোমাকে পথনির্দেশ দিতে পারবেন, এবং ফলস্বরূপ, তোমার দায়িত্ব সম্পাদন অবশ্যই যথাযথ মান অর্জন করবে। যতক্ষণ তুমি আন্তরিকভাবে ঈশ্বরের জন্য নিজেকে ব্যয় করবে, বিনীতভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারবে, অবিশ্বস্তভাবে কাজ করবে না বা চালাকি করবে না, ততক্ষণ তুমি ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার মতো মানে পৌঁছতে পারবে। ঈশ্বর মানুষের মন, চিন্তা, এবং উদ্দেশ্য পর্যবেক্ষণ করেন। যদি তোমার হৃদয় সত্যের জন্য আকাঙ্ক্ষা করে এবং তুমি সত্যের অন্বেষণ করতে পারো তবে ঈশ্বর তোমাকে আলোকিত ও প্রদীপ্ত করবেন” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, ঈশ্বরবিশ্বাসে যা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তা হল তাঁর বাক্যের অনুশীলন ও অভিজ্ঞতা)। ঈশ্বরের বাক্যে মনোনিবেশ করার পর উপলব্ধি করলাম আমি সম্প্রতি আমার কাজের ক্ষেত্রে কিছু ভাল ফল পেয়েছি, তাই আমি আত্ম-তুষ্টি অনুভব করতে শুরু করলাম এবং নিজের দেহের স্বাচ্ছন্দ্যকে প্রাধান্য দিতে শুরু করলাম। দীর্ঘ দিনের প্রচণ্ড ব্যস্ততার পর আমি ক্লান্ত ছিলাম, তাই ভাবলাম আমাকে নিজের শরীরের আরও যত্ন নিতে হবে, তাই আমি আরাম করতে শুরু করলাম এবং কর্তব্যের ব্যাপারে শিথিলতা অবলম্বন করলাম। আমি একটা উদাসীন মনোভাব নিয়ে ফেললাম, আর কাজের খোঁজখবর নিচ্ছিলাম না বা অন্যরা তাদের কাজ কেমন করছে সেসব জানতেও পারছিলাম না। যদিও আমি জানতাম যে আমাদের কাজের মধ্যে তখনও কিছু সমস্যা থেকে গিয়েছিল যেগুলোর সমাধান করা দরকার, তবুও আমার কোনো তাড়া ছিল না। ভেবেছিলাম ততক্ষন সব ঠিক আছে যতক্ষণ না সেগুলো আমাদের এখনকার ফলাফলের উপর প্রভাব ফেলছে, এবং ভিডিওগুলোতে প্রচুর সমস্যা দেখা দিচ্ছে আর সেগুলো আবার করে তৈরি করতে হচ্ছে। তাছাড়া, সবারই একরকম দায়সারাভাবে কাজ করার আর কাজে শিথিল হওয়ার প্রবৃত্তি আছে, অথচ তারপরেও আমি নজরদারি করিনি, আমি অদক্ষতার সাথে আমার কাজ করেছি, এবং আমি ছিলাম অমনযোগী ও দায়িত্বজ্ঞানহীন। তাহলে আর কাজে সমস্যা দেখা দেবে না কেন? গির্জা আমার পদোন্নতি করে আমাকে সুপারভাইজারের পদে বসিয়েছে এবং অনুশীলনের সুযোগ দিয়েছে, এই আশায় যে আমি আমার কর্তব্য পালনে মনোযোগী, দায়িত্বশীল ও বিবেকবান হব। পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে চেষ্টার কোন ঘাটতি রাখা আমার উচিত নয়। উন্নতি করার এটাই একমাত্র পথ। কিন্তু আমি আমার কর্তব্যকে স্রেফ চাকরি হিসেবে দেখেছি, এবং আমি যেন অন্য কারোর জন্য কাজ করছিলাম। কম চাপ নেওয়া আর কম কাজ করার প্রতিটা সুযোগ আমি গ্রহণ করেছি। কাজের বিষয়ে কোনো উদ্বেগ, বা কোনো কাজ কতটা জরুরি, সেই বোধই আমার ছিল না। কীভাবে সবকিছু আরও ভাল করা যাবে বা সবচাইতে ভাল ফল অর্জন করা যাবে তা নিয়ে আমি কখনও ভাবিনি। আমি শুধু চিন্তা করেছি কীভাবে আমার শরীরকে একটু কম কষ্ট সহ্য করতে হবে আর পরিশ্রান্ত হতে হবে না। ঈশ্বরের ইচ্ছার বিষয়ে আমি একেবারেই বিবেচনা করিনি। তারপরেই আমি উপলব্ধি করলাম কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে আমার মনোভাব ঠিক ছিল না। আমি ঈশ্বরের কাছ থেকে আমার হৃদয়কে গোপন করছিলাম এবং নিকৃষ্ট চালাকির আশ্রয় নিচ্ছিলাম।
একটা বৈঠক চলাকালীন আমি ঈশ্বরের বাক্যের একটা অংশ দেখি যেখানে ভণ্ড নেতাদের মুখোশ উন্মোচন করা হয়েছে। সেটা আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। ঈশ্বরের বাক্যে বলা হয়েছে, “জাল নেতৃবৃন্দ কার্যের অগ্রগতির অবস্থা উপলব্ধি করে না বলে, তারা তার ভিতরে যে সমস্যাগুলির সৃষ্টি হয় সেগুলির সমাধান করা তো দূরের কথা, সেগুলি দ্রুত চিহ্নিত পর্যন্ত করতে পারে না, যার ফলে বারংবার বিলম্ব ঘটে থাকে। নির্দিষ্ট কয়েকটি কার্যে, নীতিগুলির বিষয়ে মানুষের কোনোরকম উপলব্ধি না থাকায়, এবং সেগুলির দায়িত্ব নেওয়ার মতো কেউ না থাকায়, যারা কার্য সম্পাদন করছে, তারা প্রায়শই নেতিবাচক, নিষ্ক্রিয়, ও অপেক্ষারত অবস্থায় থাকে, যা কার্যের অগ্রগতিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। নেতৃত্বপ্রদানকারীরা যদি তাদের কর্তব্য পূরণ করতো—যদি তারা কার্যের দায়িত্ব নিত, কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে চলত, মানুষজনকে নিজেদের সাথে করে এগিয়ে নিয়ে চলত, এবং সেই ক্ষেত্রটির সম্পর্কে সঠিক ধারণা আছে এমন কাউকে খুঁজে পেত যে কার্যক্রমটিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম, তাহলে কাজটির পথে বারবার বিলম্ব না ঘটে বরং সেটির আরও দ্রুত অগ্রগতি ঘটত। তাহলে, কার্যের প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও উপলব্ধি থাকা নেতৃবৃন্দের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই, কাজটি কীভাবে এগোচ্ছে সে বিষয়ে ধারণা ও উপলব্ধি থাকা নেতৃবৃন্দের জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয়, কারণ কোনো কাজের অগ্রগতি সেই কাজের দক্ষতা ও সেই কাজ কী ফলাফল অর্জন করবে বলে আশা করা হয় তার সাথে সম্পর্কিত। কাজটি কীভাবে এগোচ্ছে সে সম্পর্কে একজন নেতৃত্বদানকারীর যদি কোনো উপলব্ধি না থাকে, এবং সে যদি সেটি সম্পর্কে কোনো খোঁজ-খবর না রাখে বা সেটির তদারকি না করে, তাহলে যারা কোনো একটি দায়িত্ব পালন করছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষেরই মনোভাব হবে নেতিবাচক ও নিষ্ক্রিয়। তারা হয়ে উঠবে অত্যন্ত নিস্পৃহ, অসাবধান ও উদাসীন, তাদের কোনো দায়িত্ববোধ থাকবে না, এবং এইভাবে, কাজটির অগ্রগতিও হবে ধীর গতিতে। যদি দায়িত্বের ভার বহনের মতো এমন কেউ না থাকে যে কাজের বিষয়ে তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন, পথনির্দেশ ও তত্ত্বাবধান প্রদান করার জন্য—এবং মানুষকে অনুশাসন ও তাদের সাথে মোকাবিলা করার জন্য—তাহলে কাজের দক্ষতা ও কার্যকারিতা স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত কম হবে। যদি নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা এটি স্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষ করতেও না পারে, তাহলে তারা নির্বোধ ও অন্ধ। আর তাই, নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের শীঘ্রই বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি দেওয়া, সেটি অনুসরণ করা, এবং কাজটির অগ্রগতি সম্পর্কে নিজেদের অবগত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ পরিশ্রমবিমুখ, তাই যদি নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা পথনির্দেশ না দেয়, তাড়না না দেয়, ও তাদের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে খোঁজ-খবর না নেয়, তাহলে তারা শিথিল, অলস, ও উদাসীন হয়ে পড়বে। যদি নিজেদের কাজের প্রতিও তাদের এই মনোভাবই থাকে, তাহলে কাজের অগ্রগতি ও কার্যকারিতা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে। এমতাবস্থায়, যোগ্য নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের কার্যের প্রতিটি ক্রম সম্পর্কে জেনে রাখার জন্য তৎপর হতে হবে, এবং কর্মী ও কাজ সম্পর্কিত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত থাকতে হবে। তারা যেন অবশ্যই জাল নেতৃবৃন্দের মত না হয়। জাল নেতৃবৃন্দ তাদের কাজে অসতর্ক ও বেপরোয়া, তাদের কোনো দায়িত্ববোধ নেই, সমস্যা সৃষ্টি হলে তারা সেগুলির সমাধান করে না, এবং যে কাজই তারা সম্পাদন করুক, তারা শুধু সেটির উপরিভাগেই বিচরণ করে। তারা উদাসীন; তারা সুমধুর অথচ শূন্যগর্ভ কথা বলে, তারা মতবাদ উচ্চারণ করে, এবং শুধুই নিরুৎসাহভাবে কাজ করে চলে। সাধারণত, এইভাবেই জাল নেতৃবৃন্দ কাজ করে। যদিও খ্রীষ্টবিরোধীদের সঙ্গে তুলনায় জাল নেতৃবৃন্দ এমন কিছু করে না যা প্রকাশ্যভাবে মন্দ, এবং তারা ইচ্ছাকৃতভাবে মন্দ কর্ম করে না, কিন্তু তুমি যদি তাদের কাজের কার্যকারিতার প্রতি দৃষ্টিপাত করো, সেগুলিকে অযত্নবান ও উদাসীন হিসাবে সংজ্ঞায়িত করাই ন্যায্য, যেখানে কোনো কাজের ভার বহন করা নেই, দায়িত্ববোধ নেই, কিংবা নিজেদের কাজের প্রতি নেই কোনো নিষ্ঠাবোধ” (বাক্য, খণ্ড ৫, নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের দায়িত্বসমূহ)। ঈশ্বরের বাক্য পাঠের পর আমি অপরাধবোধে ভুগতে লাগলাম। আমার আচরণও একজন ভণ্ড নেতার মতন নয় কি? যেহেতু আমি অলস ছিলাম, আর শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্যকে প্রশ্রয় দিতাম, তাই কাজের নজরদারি বা তদারকি করিনি, যা আমাদের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ও ফলাফলের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। আমি কল্পনা করে নিতাম যে কাজগুলো ভালোভাবে করা হয়েছে আর সেখানে খুব বেশি সমস্যা নেই, কিন্তু আসলে তখনও সেখানে সমাধান করার মতো অনেক সমস্যা ছিল। যেহেতু আমি কোনো দায়ভার নিইনি এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন ছিলাম, তাই আমাদের সমস্ত সমস্যার দিক থেকে নিজের চোখ বন্ধ করে রেখেছিলাম। চিন্তা-ভাবনার মধ্যে দিয়ে আমি বুঝতে পারলাম যে আমার দৃষ্টিভঙ্গি ভুল ছিল। আমি যখন দেখলাম যে আমার ব্রাদার-সিস্টাররা খুবই সক্রিয় এবং তাদের কাজে উন্নতি করছে, তখন ভাবলাম সবাই তাদের কর্তব্যপালনে খুব অনুপ্রাণিত হয়ে আছে এবং তাদের উপর নজরদারি করার প্রয়োজন নেই। দীর্ঘ কাল আগেই ঈশ্বরের বাক্যে প্রকাশিত হয়েছে যে মানুষের মধ্যে রয়েছে নিষ্ক্রিয়তা এবং গভীরে প্রোথিত ভ্রষ্ট স্বভাব। সত্যকে অর্জন করার আগে, এবং স্বভাবের পরিবর্তন হওয়ার আগে, মানুষ সবসময়েই তাদের দেহকে প্রশ্রয় দেয় এবং স্বাচ্ছন্দ্যের লোভ করে, কর্তব্যে দায়সারা মনোভাব গ্রহণ করে এবং ধূর্ততা ও কৌশলের ব্যবহার করে, এবং নিজস্ব ধ্যান-ধারণা অনুসারে চলে আর নীতি অনুযায়ী অনুশীলন করে না। আমিও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না। ঈশ্বরের বিচার ও শাস্তি না থাকলে, এবং ব্রাদার-সিস্টারদের উপর নজরদারি ও তদারকির কাজ না থাকলে, আমি খুব সহজেই কাজে অবহেলা করতে পারি, এবং আমার কর্তব্যপালনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই, আমার উচিত কাজের খোঁজখবর নেওয়া ও তদারকি করা, ও সেইসাথে আমাদের কাজের সমস্ত সমস্ত সমস্যা আর বিচ্যুতিগুলোকে দ্রুত খুঁজে বার করে সেগুলোর সমাধান করা, যাতে মসৃণভাবে কাজ সম্পন্ন হয়। কিন্তু বিষয়গুলোর ব্যাপারে আমার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অযৌক্তিক। আমি মানুষের ভ্রষ্ট স্বভাবকে বুঝতে পারিনি, বা ঈশ্বরের বাক্যের আলোকে মানুষকে ও বিষয়গুলোকে দেখিনি। আমি শুধু আমার নিজের কল্পনার উপর নির্ভর করেছিলাম, কাজগুলো পরীক্ষা করিনি বা সেগুলোর উপর নজরদারি করিনি, সময় মতো সমস্যার সমাধান করিনি, অথচ ভালো ফল প্রত্যাশা করেছি। এটা একজন ভণ্ড নেতার ব্যবহারিক কাজ না করার বহিঃপ্রকাশ। যদিও আমি সুস্পষ্টভাবে মন্দ কিছু করিনি, কিন্তু আমার দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে কাজের কার্যকারিতা কমে যায়, এবং সেই ক্ষতি অপূরণীয়। পরে, আমি মুখ খুললাম এবং ব্রাদার-সিস্টারদের সাথে আমার অবস্থা নিয়ে আলোচনা করলাম। আমি সেদিকেও নির্দেশ করলাম যে কীভাবে প্রত্যেকেই তাদের কর্তব্যকে খুবই হালকাভাবে নিয়েছিল এবং তাদের কাজে উন্নতির চেষ্টা করতে ব্যর্থ হয়েছিল, এবং আমরা একসাথে সমাধানের সন্ধান করেছি। এরপর, আমার কর্তব্য পালনে আমি আরও একটু বেশি আন্তরিক হলাম। যখনই কোনো কাজ শেষ করতাম, আমি মনোযোগ দিয়ে ভাবতাম সেখানে আরও কিছু উন্নতির জায়গা আছে কি না। আমি প্রায়ই আমার ব্রাদার-সিস্টারদের কাজের খোঁজখবর নিতে শুরু করলাম, এবং আমাদের ফলাফলে কিছু উন্নতি দেখা গেল।
তারপর শিগগিরই, ভিডিও বানাতে গিয়ে আমরা একটা সমস্যার মুখোমুখি হলাম, এবং দলনেত্রী আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমার কাছে কোনো ভালো উপায় বা পরামর্শ আছে কি না। কী উত্তর দেবো বুঝতে পারলাম না, তাই বললাম, “আমি এখনও কোনো ভাল সমাধান বার করতে পারিনি, আরও একটু ভাবা দরকার।” তারপর আমি উপলব্ধি করলাম যে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে স্রেফ কিছু কথা দিয়েই কাজ হবে না। আমাকে তথ্য দেখতে হবে, রিসার্চ করতে হবে, আর সেগুলো বাস্তবায়িত করার একটা রাস্তা খুঁজে বার করতে হবে। এর জন্য অনেক সময় ও প্রচেষ্টা দরকার, এবং আমাকে প্রতিনয়ত বিভিন্নরকম চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে আর ফলাফলের মূল্যায়ন করতে হবে। শেষ পর্যন্ত আমি সফল হব কি না তা বলা কঠিন। এতে কাজ না হলে আমার সমস্ত প্রচেষ্টাই কি নষ্ট হবে না? যত ভাবছিলাম, ততই মনে হচ্ছিল এ একটা ক্লান্তিকর কাজ। আমি ভাবলাম, “বাদ দাও, সবকিছু যেমন আছে ভালোই আছে। আমাদের কাজের ফলাফল এ মুহূর্তে ভালোই আছে, অতএব এখনই এগুলো সমাধান করার জন্য তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই।” এবং তারপর আমি এই সমস্যাটাকে মাথা থেকে সরিয়ে দিলাম। সে সময় আমি সামান্য অস্বস্তি বোধ করেছিলাম। এমন নয় যে সমস্যাটা সমাধান করার কোনো উপায় আমার ছিল না। আমাকে শুধু আরেকটু বেশি কষ্ট করতে হতো। পরে নেত্রী আমাকে আবার বললেন, “ব্রাদার-সিস্টারদের সমস্যা হচ্ছে, আমাদের সেগুলো সমাধান করতে হবে।” তিনি একথা মনে করিয়ে দিলে আমি ভাবতে লাগলাম, “তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে, অসুবিধাগুলো সামলানো আর লোকের সমস্যার সমাধানের জন্য আমারই কি এগিয়ে আসা উচিত নয়? কিন্তু যখনই আমি সমস্যা দেখি তখনই তা এড়িয়ে যাই, আর আমার কোন দায়িত্বজ্ঞানও নেই।” আমার অপরাধবোধ হচ্ছিল, তাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, “ঈশ্বর, আমার কাজে যখন সমস্যার সম্মুখীন হই, আমি কখনোই কঠোর পরিশ্রম করতে চাই না আর সবসময় আমার দেহের স্বাচ্ছন্দ্যই বিবেচনা করি। আমি জানি এটা আপনার ঈচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। অনুগ্রহ করে আমাকে পথপ্রদর্শন করুন যাতে আমি নিজেকে বুঝতে পারি এবং আমার ভুল অবস্থানের পরিবর্তন ঘটাতে পারি।”
এই উপাসনার সময় আমি ভাবছিলাম, “কেন আমি সবসময় কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে আমার দেহকে গুরুত্ব দিই? কেন বাস্তবিক কাজের জন্য কষ্ট করতে পারি না?” একদিন, ঈশ্বরের বাক্যের দুটো পরিচ্ছেদ আমাকে সব বুঝিয়ে দিল। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “তাহলে শয়তানের বিষ কী? এটা কীভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে? উদাহরণস্বরূপ, যদি তুমি জিজ্ঞাসা করো, ‘মানুষের কীভাবে জীবনযাপন করা উচিত? কিসের জন্য তাদের বাঁচা উচিত?’ লোকেরা উত্তর দেবে, ‘প্রত্যেক মানুষই নিজের জন্য এবং শয়তান সবচেয়ে পিছনের জনকে দখল করে।’ এই একটা বাক্যই সমস্যার একেবারে মূল বিষয়টা ব্যক্ত করে। শয়তানের দর্শন এবং যুক্তিই মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে। মানুষ যা কিছুই অন্বেষণ করুক না কেন, তা তারা নিজেদের জন্যই করে—আর তাই, তারা শুধুমাত্র নিজেদের জন্যই বাঁচে। ‘প্রত্যেক মানুষই নিজের জন্য এবং শয়তান সবচেয়ে পিছনের জনকে দখল করে’—এটাই হল মানুষের জীবনের দর্শন, আর এটা মানুষের প্রকৃতিকেও উপস্থাপিত করে। এই বাক্যগুলো ইতিমধ্যেই হয়ে উঠেছে ভ্রষ্ট মানবজাতির প্রকৃতি, ভ্রষ্ট মানবজাতির শয়তানোচিত প্রকৃতির আসল প্রতিকৃতি, এবং এই শয়তানোচিত প্রকৃতি ইতিমধ্যেই হয়ে উঠেছে ভ্রষ্ট মানবজাতির অস্তিত্বের ভিত্তি; বহু সহস্র বছর ধরে, ভ্রষ্ট মানবজাতি শয়তানের এই বিষের মধ্যেই জীবনযাপন করেছে, একেবারে আজকের দিন পর্যন্ত” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, পিতরের পথে চলার উপায়)। “মানুষের দৈহিক ইচ্ছা ঠিক এই সর্পের মতোই: এর সারমর্ম হল, মানুষের জীবনে ক্ষতি করা এবং যখন এগুলি নিজের মতো চলতে থাকে, তখন তোমার জীবন বরবাদ হয়ে যায়। দেহের অধীশ্বর হলো শয়তান। এর মধ্যে রয়েছে অপরিমিত কামনা-বাসনা, সে শুধুই নিজের কথা ভাবে, এটি স্বাচ্ছন্দ্য উপভোগ করতে এব বিলাসিতায় থাকতে চায়, শিথিলতা এবং আলস্যে ডুবে থাকে, এবং একে সন্তুষ্ট করতে করতে একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে তুমি নিঃশেষ হয়ে যাবে। অর্থাৎ বলা যায়, তাকে এখন যদি তুমি সন্তুষ্ট করো তাহলে পরের বার সে আরও বেশি দাবি তুলবে। সর্বদাই এর বাসনা অপরিসীম এবং চাহিদা নিত্য নূতন, দৈহিক ইচ্ছাকে তুমি যত বেশি লালন করবে ততই তুমি তাতে আসক্ত হবে এবং আরামে অভ্যস্ত হয়ে যাবে এবং—যদি তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারো শেষ পর্যন্ত তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে। তুমি ঈশ্বর-সম্মুখে জীবন অর্জন করবে কি না এবং তোমার চূড়ান্ত পরিণতি কী হবে, তা নির্ভর করে তুমি কী ভাবে দৈহিক ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোমার বিদ্রোহকে চালনা করছ কর তার উপর। ঈশ্বর তোমাকে রক্ষা করেছেন এবং মনোনীত করেছেন এবং তুমি পূর্বনির্ধারিত, তবুও আজ যদি তুমি তাঁকে সন্তুষ্ট করতে স্বীকৃত না হও, সত্যকে যদি বাস্তবে প্রয়োগ করতে না চাও, তুমি যদি প্রকৃতপক্ষেই ঈশ্বরপ্রেমে পূর্ণ হৃদয় নিয়ে নিজের দৈহিক ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে ইচ্ছুক না হও, তাহলে তুমি শেষ অবধি নিজেকে নষ্ট করে ফেলবে, এবং এইভাবে, প্রবল যন্ত্রণা সহন করবে। তুমি যদি কেবলই দৈহিক ইচ্ছার সন্তুষ্টিতে মত্ত থাকো, ধীরে ধীরে শয়তান তোমাকে গ্রাস করবে, অন্তর্হিত হবে তোমার জীবন বা আত্মার স্পর্শ, যতক্ষণ না পর্যন্ত তোমার হৃদয় পূর্ণ তমসায় আচ্ছন্ন হয়। এই তমিস্রাময় জীবনে, তুমি শয়তানের হাতে বন্দি হবে, তোমার হৃদয়ে আর ঈশ্বর থাকবেন না, এবং সেই সময়ে তুমি ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করবে এবং তাঁকে পরিত্যাগ করবে” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরকে ভালোবাসাই প্রকৃত ঈশ্বর-বিশ্বাস)। ঈশ্বরের বাক্য পাঠের পর আমি দেখতে পেলাম আমার অবস্থা কতটা বিপজ্জনক! “সকলে শুধু নিজের জন্যই বাঁচো আর নিজের স্বার্থের কথাই চিন্তা করো, অন্যদের ছেড়ে দাও তাদের ভাগ্যের উপর”, শয়তানের এই দর্শন অনুসারে আমি জীবন যাপন করছিলাম। আমি অত্যন্ত স্বার্থপর ছিলাম, এবং যা-ই ঘটুক না কেন আমি সবসময় আমার দেহের স্বাচ্ছন্দ্যকেই গুরুত্ব দিয়েছি। আমার কর্তব্যপালনে যখন এমন কোনো সমস্যার সামনে পড়েছি যা সমাধান করা দরকার, আমি কখনও ভাবিনি কীভাবে গির্জার কাজের উপকার করা যায়। আমি সবসময় আমার দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়েই মনোযোগী ছিলাম, এবং সবসময় কম যন্ত্রণা ভোগ করতে ও কম মূল্য দিতে চেয়েছি। আসলে কিছু সমস্যার ক্ষেত্রে, কিছুটা কষ্ট করলে এবং পড়াশোনা করলে আর সমাধান খুঁজে বার করার জন্য সময় দিলেই আমি সেগুলোর সমাধান করতে পারতাম। কিন্তু যেহেতু আমি আমার দেহকেই গুরুত্ব দিয়েছি এবং আমি কষ্ট করতে অনিচ্ছুক ছিলাম, তাই গভীর রিসার্চের কাজ বড্ড বেশি মানসিক চাপ বলে মনে হয়েছিল। ফলে, কখনও সমস্যার সমাধান হয়নি এবং কাজেরও উন্নতি হয়নি। ঈশ্বরের বাক্য প্রকাশ করে যে মানুষের দেহ অপরিহার্যভাবে শয়তানের অধীন, এবং দেহের সবসময়ই অনেক আকঙ্ক্ষা ও চাহিদা থাকে। আমরা যতই দেহকে তৃপ্ত করি সে ততই আরও বেশি আকাঙ্ক্ষা করে, এবং যখন আমাদের দেহের স্বার্থ ও আমাদের কর্তব্যের মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় তখন যদি মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ব্যাকুল হয়, তাহলে তারা দেহকেই অনুসরণ করবে এবং গির্জার কাজ দূরে সরিয়ে দেবে। এতে দেহ তৃপ্ত হয় কিন্তু গির্জার কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং শেষ পর্যন্ত তা ঈশ্বরের স্বভাবকে ক্ষুব্ধ করে, আর তাই ঈশ্বর আমাদেরকে ঘৃণা করেন এবং পরিহার করেন। দেহকে প্রশ্রয় দেওয়া এবং আরামের জন্য ব্যাকুল হওয়ার পরিণতি গুরুতর। আমি দেহের সারমর্ম বুঝতে পারিনি, আর সবসময় আরামের জন্য ব্যাকুল হয়েছি। আমি অন্য সবকিছুর চেয়ে দৈহিক উপভোগকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি। আমার অন্বেষণ ও দৃষ্টিভঙ্গি কি অবিশ্বাসীদের মত নয়? অবিশ্বাসীরা প্রায়ই বলে, “নিজের প্রতি দয়াশীল হোন”। অর্থাৎ, তোমার শরীরকে কষ্ট পেতে দিও না, এবং শরীরের সকল আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদাকে তৃপ্ত করো। তারা কেবল শরীরের জন্য বাঁচে, তারা মানব জীবনের মূল্য ও অর্থ একেবারেই বোঝে না, এবং জীবনে তাদের সঠিক দিকনির্দেশ ও উদ্দেশ্য নেই। হৃদয়ে তারা কোনো স্বস্তি বোধ করে না, এবং শূন্যতার মধ্যে জীবন অতিবাহিত করে, সম্পূর্ণ বৃথা এক জীবন যাপন করে। গির্জার কিছু লোক সবসময় দৈহিক আনন্দ খোঁজে, সত্যের অন্বেষণ করে না, তাদের কর্তব্যে অবহেলা করে, কৌশল অবলম্বন করে, এবং কাজে শিথিল হয়, যার ফলে গির্জার কাজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং শেষ পর্যন্ত তাদের বরখাস্ত করা হয়। কেউ কেউ তাদের কর্তব্য পালনে ধারাবাহিকভাবে উদাসীন থাকতো, এবং কোন দায়িত্বই ভালোভাবে পালন করতে পারেনি, এবং শেষ পর্যন্ত তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টা ভাবতেও ভয় হয়! তারপর আমি নিজের সম্পর্কে ভাবলাম। আমি বহু বছর ধরে ঈশ্বরে বিশ্বাসী, কিন্তু আমার দৃষ্টিভঙ্গি একটুও বদলায়নি। সত্যের চাইতে দেহের স্বার্থকেই আমি বেশি মূল্য দিয়েছি। আমি স্রেফ আরাম খুঁজেছি, এবং কর্তব্যপালনের জন্য কেবল দায়সারাভাবে কাজ করে গেছি। এভাবে চলতে থাকলে আমিও কি ঈশ্বর কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত ও বহিষ্কৃত হতাম না? বিষয়টা উপলব্ধি করে আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। আমি কোনোভাবেই আর নিজের দেহের ব্যাপারে মনোযোগী হতে পারলাম না। বরং আন্তরিকভাবে আমার কর্তব্য সম্পাদন করতে এবং দায়িত্ব পালন করতে চাইলাম।
একদিন, আমি ঈশ্বরের বাক্য পাঠের একটা ভিডিও দেখলাম এবং অনুশীলনের একটা পথ খুঁজে পেলাম। ঈশ্বরের বাক্যে বলা হয়েছে, “যে সব লোক ঈশ্বরের বিশ্বাসী, তারা নিজেদের লাভ ও ক্ষতি গণনা না করেই, স্বেচ্ছায় নিজ দায়িত্ব পালন করে। তুমি সত্য অন্বেষণকারী ব্যক্তি হও বা না হও, তোমাকে নিজের দায়িত্ব পালনের সময় অবশ্যই নিজের বিবেক ও যুক্তিবোধের ওপর নির্ভর করতে হবে, এবং যথার্থভাবেই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। যথার্থভাবেই কঠোর পরিশ্রম করা বলতে কী বোঝায়? যদি তুমি সামান্য প্রচেষ্টা করেই এবং সামান্য শারীরিক কষ্ট ভোগ করেই সন্তুষ্ট থাকো, কিন্তু নিজের দায়িত্ব বিন্দুমাত্র গুরুত্ব সহকারে না নাও, বা সত্যের নীতি অনুসন্ধান না করো, তাহলে তা উদাসীন বা বেপরোয়া হওয়ার চেয়ে বেশি কিছু নয়—তা প্রকৃতপক্ষেই সচেষ্ট হওয়া নয়। প্রচেষ্টা করার মূল চাবিকাঠি হল তাতে নিজের হৃদয় নিবিষ্ট করা, অন্তর থেকে ঈশ্বরে ভীত হওয়া, ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি সচেতন হওয়া, ঈশ্বরকে অমান্য ও আহত করার বিষয়ে ত্রস্ত হওয়া, এবং নিজের দায়িত্ব ভালোভাবে পালনের জন্য আর ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য যেকোনো কষ্ট সহ্য করা: ঈশ্বরকে এহেন এক ঈশ্বরপ্রেমী হৃদয়ের অধিকারী হলে তবেই তুমি নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে সক্ষম হবে। যদি তোমার হৃদয়ে ঈশ্বরের প্রতি কোনো ভীতি না থাকে, নিজের দায়িত্ব সম্পাদনকালে যদি কোনো দায়ভার না থাকে, সেটির প্রতি কোনো আগ্রহ না থাকে, তবে, অনিবার্যভাবেই, তুমি উদাসীন ও বেপরোয়া হয়ে উঠবে এবং স্রোতে গা ভাসিয়ে দেবে, কোনো প্রভাব সৃষ্টি না করেই—যা দায়িত্বপালন নয়। যদি সত্যিই তোমার দায়ভারের বোধ থাকে এবং নিজের দায়িত্বপালনকে ব্যক্তিগত দায়িত্ব বলে অনুভব করো, অনুভব করো যে, তেমনটা না করলে তুমি বেঁচে থাকার অযোগ্য, যে, তেমনটা না করলে তুমি এক পশুমাত্র, যে, শুধুমাত্র যদি তুমি নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারো, তবেই তুমি মানুষ হিসাবে অভিহিত হওয়ার যোগ্য, তবেই তুমি তোমার নিজের বিবেকের সম্মুখীন হতে পারো—যদি তোমার দায়িত্ব সম্পাদনের সময় এহেন দায়ভারের বোধ থাকে—তাহলে তুমি সক্ষম হবে সব কিছুই বিবেক সহকারে করতে, সত্যের অন্বেষণ করতে, এবং নীতি অনুসারে বিষয়সকল সম্পাদন করতে, এবং সেহেতু, সক্ষম হবে নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে এবং ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে। ঈশ্বর তোমাকে যে উদ্দেশ্য অর্পণ করেছেন, তোমার জন্য ঈশ্বর যা কিছু ত্যাগ করেছেন, তিনি তোমার থেকে যে প্রত্যাশা করেন, তুমি যদি তার যোগ্য হও, তাহলে তা-ই হল প্রকৃতপক্ষেই কঠোরভাবে সচেষ্ট হওয়া” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, উত্তমরূপে দায়িত্ব পালন করতে হলে, ন্যূনতমভাবে যা প্রয়োজন তা হল বিবেক এবং যুক্তিবোধ)। “যখন তোমার মধ্যে স্বার্থপরতা এবং সুবিধাবাদের উদয় হয় এবং তুমি তা উপলব্ধি করতে পারো, তখন তোমার উচিত তা সমাধানের উদ্দেশ্যে সত্যের অনুসন্ধান করতে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা। প্রথম যে বিষয়টির প্রতি তোমায় সচেতন হতে হবে তা হল যে, সারমর্মগতভাবে, এই উপায়ে কাজ করা হল সত্যের নীতিগুলি লঙ্ঘন করা, যা গির্জার কাজের পক্ষে ক্ষতিকর, যা স্বার্থপর এবং ঘৃণ্য আচরণ, যা সাধারণ মানুষের করণীয় নয়। তোমার নিজস্ব স্বার্থ এবং স্বার্থপরতা সরিয়ে রেখে, গির্জার কাজের বিষয়ে ভাবা উচিত—ঈশ্বরের ইচ্ছা এমনই। প্রার্থনার মাধ্যমে আত্ম-প্রতিফলনের পর, যদি তুমি সত্যিই উপলব্ধি করো যে, এইভাবে কাজ করা আত্মসর্বস্ব ও ঘৃণ্য, সেক্ষেত্রে নিজের স্বার্থপরতা সরিয়ে রাখা সহজ হবে। যখন তুমি নিজের স্বার্থপরতা এবং সুবিধাবাদ সরিয়ে রাখবে, তখনই তুমি পায়ের তলায় মাটি পাবে, শান্তিতে, আনন্দে থাকবে, এবং অনুভব করবে যে, তুমি নিজেকে যেভাবে পরিচালনা করো, তাতে বিবেকবোধ এবং চেতনা থাকা উচিত, গির্জার কাজ সম্পর্কে চিন্তা করা উচিত, নিজের যে অভিপ্রায় এতই স্বার্থপর, ঘৃণ্য এবং বিবেকবোধ বা চেতনা বিরহিত, তা নিয়ে অনড় থাকা উচিত নয়। নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা, গির্জার কাজের কথা চিন্তা করা, এবং যা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে, তা করাই ধার্মিক এবং সম্মানজনক, এবং তা-ই তোমার অস্তিত্বকে মূল্যবাহী করবে। এইভাবে পৃথিবীতে বাস করলে বুঝবে, তুমি মুক্তমনা ও সৎ হচ্ছ, স্বাভাবিক মানবতা ও মানুষের প্রকৃত প্রতিমূর্তি যাপন করছ, তোমার যে শুধু স্বচ্ছ বিবেকবোধ রয়েছে, তা-ই নয়, বরং ঈশ্বর তোমার উপর যা কিছু প্রদান করেছেন, তুমি সেসকলের উপযুক্তও। তুমি যত বেশি এইভাবে জীবনযাপন করবে, ততই বেশি পায়ের তলায় মাটি পাবে, ততই বেশি শান্তিপূর্ণ ও আনন্দময় হয়ে উঠবে এবং ততই বেশি উজ্জ্বল অনুভব করবে। সেক্ষেত্রে, তুমি কি ঈশ্বরবিশ্বাসের সঠিক পথে পদার্পণ করোনি?” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, ঈশ্বরকে হৃদয়দানের মাধ্যমে সত্য অর্জন সম্ভব)। আমি বুঝতে পারলাম যে ভালোভাবে কর্তব্য পালন করতে হলে আমাকে ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমি আর শুধু বাহ্যিকভাবে কঠোর পরিশ্রম করতে এবং মূল্য দিতে পারছিলাম না। সবচেয়ে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল এই ভার আমার হৃদয়ে বহন করা, গির্জার কাজকে অন্য সবকিছুর উপরে স্থান দেওয়া, যথাসাধ্য চেষ্টা করা, যা আমার করা উচিত তা অর্জন করা। ঈশ্বর যে কষ্টসাধ্য প্রচেষ্টা আমার জন্য ব্যয় করেছেন, একমাত্র এই পথেই আমি তার যোগ্য হয়ে উঠতে পারি, এবং সত্যিকার অর্থে মানুষের মতো বাঁচতে পারি। ভালো ভালো ভিডিওর মাধ্যমে ঈশ্বরের সাক্ষ্য দেওয়ার কাজটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ! আমার উচিত ঈশ্বরের উপর নির্ভর করা এবং ভালোভাবে আমার কর্তব্য পালনের জন্য যথাসাধ্য করা। যদিও আমার কাজে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও অসুবিধা আছে, কিন্তু এই অসুবিধাগুলোর মধ্যে দিয়েই আমি স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি আমার লোভ এবং অগ্রগতির প্রতি অবজ্ঞার যে ভ্রষ্টতা তা স্পষ্টভাবে দেখতে পেলাম। আমি আমার সাধনার ভুল দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করলাম, আর তাই আমি প্রায়শ্চিত্ত করতে ও পরিবর্তিত হতে পারলাম। এগুলো ছিল সত্যকে লাভ করার এবং আমার ভ্রষ্ট স্বভাবকে পরিহার করার একটা সুযোগ। সেই সঙ্গে, এগুলো আমাকে আমার পেশাগত ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিতেও সাহায্য করেছে। কর্তব্যে উন্নতি করতে হলে আমাদের পেশাগত দক্ষতারও উন্নতি করতে হবে। ঈশ্বরের ইচ্ছা উপলব্ধি করার পর আমি অনুপ্রাণিত বোধ করলাম। পরে, আমি ঈশ্বরের কাছে আমাদের সমস্যা ও অসুবিধাগুলোর ব্যাপারে প্রার্থনা করলাম, ঈশ্বরের পথনির্দেশ চাইলাম, এবং সমাধানের বিষয়ে ব্রাদার-সিস্টারদের সাথে আলোচনা করলাম। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আমি আর অলস বা নিস্পৃহ থাকতে চাইনি, এবং পেশাগত দক্ষতা অর্জনের জন্যও আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমি যখন আটকে যেতাম এবং হাল ছেড়ে দিতে চাইতাম, তখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতাম, দৈহিক ইচ্ছা ত্যাগ করতাম এবং নিজেকে নিষ্ঠার সাথে কর্তব্যে নিয়োজিত করতাম। কিছুদিন পর, আমি অবশেষে একটা সাফল্য পেলাম, দ্রুতই সমস্যার সমাধান হল, আমাদের ফলাফলেও আগের তুলনায় কিছুটা উন্নতি হল। আমার কর্তব্য এইভাবে পালন করতে আমি আরও বেশি নিরাপদ বোধ করতে লাগলাম। আসলে সমস্যার সমাধান করা এবং ব্যবহারিক কাজ করা তেমন কঠিন কিছু নয়, এবং আমাকেও খুব বেশি কষ্ট পেতে হয়নি। ঈশ্বরের পথনির্দেশ ও আশীর্বাদ পেতে আমাকে কর্তব্যের ব্যাপারে আরও বিবেকবান হতে হয়েছিল মাত্র। আমার প্রবেশ এখনও খুবই সীমিত, তাই ভবিষ্যতে কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে আমার ভ্রষ্ট স্বভাব পরিবর্তন করার দিকে নজর দেব, এবং ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমার সমস্ত হৃদয় দিয়ে আমি কর্তব্য পালন করব!
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।