কর্তব্যপালনের মাধ্যমে আমার রূপান্তর

31-03-2023

গত বছর গ্রাফিক ডিজাইনের কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের নেতা নির্বাচিত হই আমি। প্রথমে, যেহেতু সবদিকের নীতি এবং বিবরণগুলি আমার পুরোপুরি আয়ত্তে ছিল না, আমি কঠোর অধ্যয়ন করতাম এবং যদি কিছু আমি না জানতাম, তা হলে ভ্রাতা ও ভগিনীদের সাহায্য চাইতাম। কয়েক দিন পর, কিছু নীতি আমার আয়ত্ত হয় এবং আমার কাজে কিছু ফলাফল অর্জন করি। আমি স্থিতাবস্থা চালিয়ে যেতে শুরু করি, এবং ভেবেছিলাম এইভাবে কাজ করাই গ্রহণযোগ্য। এর পরে, পেশাদার দক্ষতা উন্নত করার জন্যআমি খুব কমই সক্রিয়ভাবে অধ্যয়ন করেছি। সেই সময়ে, আরও ভালো ছবি তৈরি করার, গির্জার নেতারা পরামর্শ দিতেন যে আমরা যেন আরও শিখি এবং উদ্ভাবন করি। মৌখিকভাবে রাজি হলেও, মনে মনে ভাবতাম, “উদ্ভাবন ক্লান্তিকর এবং শ্রমসাধ্য, এবং আমরা এখন যে ছবিগুলি তৈরি করি তা ইতিমধ্যে কিছু ফলাফল অর্জন করেছে। তা হলে উদ্ভাবনের জন্য কেন আমাদের এত প্রচেষ্টা ব্যয় করতে হবে?” তার পরে, আমি এটিকে আর গুরুত্ব সহকারে নিইনি। একদিন, আমার সঙ্গী বলে যে সে ছবি তৈরির একটি নতুন উপায় আবিষ্কার করেছে যা আরও ভালো ফলাফল দিয়েছে, এবং সে সুপারিশ করে যে আমি এটি যেন শিখি। আমি ভাবলাম, “ফলাফল অবশ্যই ভাল, কিন্তু আমি এই কৌশলটি জানি না, এবং এমনকি যদি আমি এটি শিখি, তা হবে সময়সাপেক্ষ এবং কষ্টসাধ্য। যদি আমরা আমাদের বর্তমান কৌশলগুলি ব্যবহার করে কিছু করি, তাতে শুধু সময় এবং প্রচেষ্টা বাঁচে না, আমরা কিছু ফলাফলও অর্জন করছি, তা হলে নতুন কৌশল শেখার কষ্ট করা কেন? আমরা এখন যা করি তা যথেষ্ট ভালো।” তাই, আমি এখনও সেই পুরানো পদ্ধতি অনুসারে ধাপে ধাপে ছবিগুলি তৈরি করছি। দলগত কাজের ক্ষেত্রে, ঝামেলা বাঁচানোর উপায়ও আমি ভাবতে শুরু করলাম। শুরুতে, আমি একাই ছিলাম গ্রুপের দায়িত্বে, তাই আমাকে অনেক চাপ নিতে হত। পরে, ভগিনী এলার অংশীদারিত্বে আমি খুব খুশি হই। আমি ভেবেছিলাম, “এলার তাঁর দায়িত্বে খুব সুবিবেচক, এবং তিনি তাঁর মূল্য দিতে উৎসুক। তাই তাঁকে ভবিষ্যতে আরও কাজের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। এইভাবে, আমি কম চাপের মধ্যে থাকব, এবং এত উদ্বেগে থাকতে হবে না।” পরে, এলার অনেক কাজের কারণে, সে বলত যে সে অনেক চাপের মধ্যে রয়েছে এবং তার পর্যাপ্ত সময় নেই। আমি শুধু নিজেকেই গোপন করিনি, আমি এটি বলে অজুহাত দেখিয়েছিলাম যে এটি তার অনুশীলনের সুযোগ এবং তাকে অবিরত কাজ দিতে থাকি। সেই সময় নিজেকে একটু অপরাধী মনে হয়েছিল। আমি বুঝেছিলাম যে আমার ভগিনী খুব চাপের মধ্যে আছে, এবং আমি তাকে খুব বেশি কাজ দিয়েছি, যা আমার জন্য খুবই অমানবিক ছিল। কিন্তু ক্লান্ত হওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে আমি এটা করতেই থাকি।

এবং সে কারণে, আমি পড়াশোনা বা উদ্ভাবন করিনি এবং এলার কাছে কিছু কাজ ঠেলে দিই, এবং নিজের জন্য প্রচুর অবসর সময় রাখি। এই অবসর সময়ে, আমি যে জিনিসগুলি উপভোগ করি তা করেছি। সেই সময়কালে, আমার নান্দনিকতাবোধের উন্নতির নামে ধর্মের সাথে সংস্রবহীন শর্ট ফিল্ম দেখতাম। একটির পর একটি দেখেই যেতাম। এমনকি ঈশ্বরের বাক্য পড়ার সময় এবং সভায়, সেই ভিডিও ক্লিপগুলি প্রতিনিয়ত আমার মনে ভাসত, তাই আমি নিজেকে শান্ত করতে এবং ঈশ্বরের বাক্য চিন্তা করতে পারিনি। দিনে দিনে, আমি দৈহিক ভোগের দিকে মনোনিবেশ করতে শুরু করি, কীভাবে সুস্বাদু খাবার রান্না করা যায়, এবং আমি প্রায়ই অনলাইনে বিভিন্ন নিউজ ভিডিও দেখতাম। কখনও কখনও আমি এতগুলি দেখতাম যে ভয় হত যে অন্যরা বলবে আমি আমার দায়িত্ব অবহেলা করছি, তাই যখন কেউ আমার বসার জায়গার পাশ দিয়ে যেত, ভীত হয়ে আমি দ্রুত ভিডিও উইন্ডো বন্ধ করে দিতাম, এবং কাজের ইন্টারফেস খুলতাম, এবং কাজ করার ভান করতাম। এভাবে চলতে চলতে আমি আমার দায়িত্বের ভার ক্রমাগতই কমিয়েছি। যখন কাজের দেখাশোনা করতাম, শুধু অগভীরভাবেই দেখে নিতাম। ভ্রাতা ও ভগিনীরা যখন বলত যে কোনো অসুবিধা বা কোন সমস্যা নেই, সেটিই আমার কাছে ভালো ছিল, এবং কোনো সমস্যার সমাধান খুঁজতে আমি কঠোর পরিশ্রম করতে চাইনি। আমি ভাবতাম, “প্রত্যেকের নিজের নিজের কাজে যেসব সমস্যা আছে আমি যদি সেইসব সমাধানের জন্য চেষ্টা করি, তা হলে তাতে কত সময় এবং কঠোর পরিশ্রম লাগবে? আমি বরং ওদেরই সমাধান খুঁজে নিতে দেবো। আমি শুধু ওদের মনে করিয়ে দেবো, যেসব ভ্রাতা ভগিনীরা প্রযুক্তি বোঝে, আরো বেশি করে তাদের সাহায্য নিতে।” এবং তাই, আমি যে হারে কাজের খোঁজ-খবর করতাম, তা ধীরে ধীরে সপ্তাহে একবার জিজ্ঞাসা করা থেকে প্রতি অর্ধ মাসে একবারে নেমে এসেছিল। প্রকৃতপক্ষে প্রায়শই আমি এব্যাপারে অপরাধী বোধ করতাম। আমি জানতাম যে ঈশ্বর চান যে আমরা যেন সমস্ত হৃদয়, মন এবং শক্তি দিয়ে আমাদের দায়িত্ব পালন করি, কিন্তু সময় বাঁচাতে এবং নিজের পার্থিব কামনা চরিতার্থ করতে আমি সবসময় আমার দায়িত্ব এড়িয়ে যেতাম, যা ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। কিন্তু অন্য দৃষ্টিতে দেখলে, ছবি নির্মাণে আমি দেরি করিনি, আমাকে দেওয়া দায়িত্বে কোনো স্পষ্ট সমস্যা ছিল না, এবং সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছিল, তাই আমি মনে করিনি এটি কোন একটি বড় সমস্যা। ধীরে ধীরে, ঈশ্বরের উপস্থিতি আমি আর অনুভব করতে পারতাম না, উদ্বুদ্ধ হতাম না প্রার্থনায়, এবং ঈশ্বরের বাক্য পাঠ আমাকে আলোকিত করত না, এবং ছবি তৈরি করার কাজে কোনো অনুপ্রেরণা পেতাম না। আমার কাজের ফলাফল আরো খারাপ হতে থাকে। উপরন্তু, তাদের কাজ কেমন চলছে সে সম্পর্কে যেহেতু আমি গুরুত্ব সহকারে খোঁজখবর করিনি, এবং যখন তাদের সমস্যা হয়েছে, আমি যত্ন নিইনি বা সত্যের অন্বেষণ করিনি, তারা তাদের কর্তব্যে অলস হয়ে উঠছিল, অগ্রসর হতে চাইত না, স্থিতাবস্থায় সন্তুষ্ট হয়ে পড়ছিল, তাদের কর্তব্যে কোন অগ্রগতি হয় নি, এবং তাদের কাজে ভাল ফলাফল দেয় নি। আমি তখন শুধু এটুকু অনুভব করেছিলাম যে কিছু একটা ঠিক নেই, এবং আমি খানিক বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম। কেউ মনে করিয়ে দিলেও আমি কর্ণপাত করতাম না।

একদিন, গির্জার এক নেত্রী হঠাৎ আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন, এবং তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি অনেক দিন ধরে ছবি তৈরি করছ, তাহলে তোমার কাজ অনেক বেশি কার্যকর হওয়া উচিত ছিল কিন্তু এত কম কেন? তোমার কাজ যতটা খারাপ হয়ে গেছে তা অবিশ্বাস্য!” ব্যবহারিক কাজ না করার জন্য, একজন অকাজের “ক্যাডার” হওয়ার জন্য, এবং আমার ব্রাদার-সিস্টারদের তাদের কাজে অলস, অদক্ষ, ও গুনমানহীন করে তোলার জন্য তিনি আমাকে অনাবৃত করলেন। বললেন, এভাবে কাজ করা শুধু অদক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন, ঈশ্বরকে প্রতারিত করা, এবং গির্জার ক্ষতি করা। এবং আমি যদি বিষয়টা নিয়ে না গভীরভাবে ভাবি, আর অনুতপ্ত না হই, তবে আমাকে যখন কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে তখন সবকিছু ঠিক করার পক্ষে অনেক দেরি হয়ে যাবে। সে সময় নেত্রীর কথা বেদনাদায়ক ছিল, কিন্তু আমি মনে করিনি এটি এতটা গুরুতর ছিল, তাই আমি সত্যিই নিজেকে নিয়ে চিন্তা করি নি। এর পরে, আমি কেবল অনীহার সাথেই কাজের খোঁজ খবর করতাম এবং আমার দায়িত্বের সাথে সম্পর্কহীন ভিডিও দেখা থেকে নিজেকে বিরত রাখতাম।

মাস খানেক পর, আমার দীর্ঘদিনের বিশৃঙ্খলা, শিথিল হওয়া, এবং শুধুই সময় কাটানোর কারণে, আমাকে বরখাস্ত করা হয়, এবং অন্য দুই সিস্টারও সত্যিকারের কাজ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের দায়িত্ব হারায়। নেত্রী আমার স্বরূপ উন্মোচিত করেছিলেন দায়িত্বে অবহেলার কারণে, বিলম্ব, শৈথিল্য, এবং গোপন উদ্দেশ্য থাকায়, যা ঈশ্বরকে প্রতারণা করা, এবং বলেছিলেন যে আমি কাজের বিষয়ে দেখাশোনা করিনি বা ভ্রাতা ও ভগিনীদের সমস্যার সমাধান করিনি, অর্থাৎ সংক্ষেপে, আমি তাদের আচরণকে আড়াল করি এবং প্রশ্রয় দিই, যা গির্জার ক্ষতি করেছে। নেত্রীকে আমার আচরণ অনাবৃত করতে শুনে আমি অবাক হয়েছিলাম। এত খারাপভাবে আমি দায়িত্ব পালন করছিলাম যে অন্যরা তা দেখে সহ্য করতে পারেনি, কিন্তু আমি তা মোটেও বুঝতে পারিনি। আমার মনে হয়েছিল আমি কাজে কোনো বাধাই দিচ্ছি না। কীভাবে আমি এত বোধহীন ছিলাম? তখন বারবার ভাবতাম, “আমি এই কাজগুলো করেছি, এবং সম্পূর্ণ সচেতনতার সাথেই করেছি। আমি জানতাম কর্তব্যে অনুগত থাকা উচিত, কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন আমি অবহেলাভরে কাজ করতে পারলাম, এবং এরকম ধূর্ত আচরণ করতে পারলাম? আমি কেমন মানুষ?” বেদনা এবং বিভ্রান্তিতে, আমি প্রার্থনার জন্য ঈশ্বরের সামনে আসি এবং নিজেকে জানার জন্য ঈশ্বরকে পথপ্রদর্শনের অনুরোধ করি।

তারপর, এক দিন আমি ঈশ্বর-বাক্যের একটি অনুচ্ছেদ পড়ি। “নোহ কেবল কয়েকটি বার্তাই শুনেছিল, আর সেই সময়ে ঈশ্বর প্রভূত পরিমাণে বাক্য প্রকাশ করেন নি, এবং নিঃসন্দেহেই নোহের পক্ষে অনেক সত্য উপলব্ধি করা সম্ভব ছিল না। আধুনিক বিজ্ঞান বা আধুনিক জ্ঞানের বিষয়ে তার বোধগম্যতা ছিল না। সে ছিল এক অতিসাধারণ মানুষ, মানবজাতির একজন নগণ্য সদস্য। তবুও এক দিক থেকে সে ছিল সকলের থেকে আলাদা: সে ঈশ্বরের বাক্য শুনতে জানত, তাঁর বাক্য কীভাবে অনুসরণ ও মান্য করতে হয় তা জানত, মানুষের অবস্থানের বিষয়ে যে জ্ঞাত ছিল, এবং সে প্রকৃতপক্ষেই ঈশ্বরের বাক্য বিশ্বাস এবং মান্য করতে সক্ষম ছিল—এর থেকে বেশি কিছুই না। এই কয়েকটা সাধারণ বৈশিষ্ট্যই নোহের দ্বারা তার উপর ঈশ্বরের অর্পিত সমস্ত দায়িত্ব সম্পন্ন করার পক্ষে যথেষ্ট ছিল, আর সে কয়েক মাস বা কয়েক বছর বা দশক নয়, বরং শততাধিক বৎসরকাল-ব্যাপী এই উদ্যমে ব্রতী ছিল। এই সংখ্যা কি বিস্ময়কর নয়? নোহ ছাড়া আর কে এমনটা করতে পারত? (কেউই না।) এবং কেন নয়? কেউ কেউ বলে যে সত্যের উপলব্ধি না থাকাটাই হল কারণ—কিন্তু বাস্তবে ব্যাপারটা তেমন নয়। নোহ কত পরিমাণ সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছিল? নোহ এইসব বিষয়ে সক্ষম ছিল কেন? এখনকার বিশ্বাসীরা ঈশ্বরের অনেক বাক্য পড়েছে, তারা কিছুটা সত্য উপলব্ধি করেছে—তাহলে তারা এতে অক্ষম কেন? অন্যদের মতে মানুষের ভ্রষ্ট স্বভাবই হল এর কারণ—কিন্তু নোহের স্বভাবও কি ভ্রষ্ট ছিল না? নোহ যা অর্জন করতে পেরেছিল, বর্তমানের মানুষ তা করতে পারছে না কেন? (কারণ বর্তমানের মানুষ ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস করে না, তারা সেগুলিকে সত্য বলে গণ্য করে না বা মান্যও করে না।) এবং তারা ঈশ্বরের বাক্যকে সত্য বলে মানতে অক্ষম কেন? কেন তারা ঈশ্বরের বাক্য মেনে চলতে অক্ষম? (তাদের কোনো ঈশ্বরভীতি নেই বলে।) তাহলে মানুষ যখন সত্যকে বোঝে নি, অনেক সত্য শোনেনি, সেই অবস্থায় ঈশ্বরভীতি কেমন করে আসে? মানুষের মানবিকতার মধ্যে সর্বাধিক মূল্যবান দুটি বিষয় অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে: প্রথমটি হল বিবেক, এবং দ্বিতীয়টি হল স্বাভাবিক মানবিকতার বোধ। বিবেক এবং স্বাভাবিক মানবিকতাবোধই মানুষ হওয়ার ন্যূনতম মান; এটিই কাউকে পরিমাপ করার ন্যূনতম, মৌলিকতম মান। কিন্তু আজকের মানুষের মধ্যে তা অনুপস্থিত, এবং সেহেতু, তারা যতই সত্য শুনুক বা উপলব্ধি করুক, ঈশ্বরভীতি তাদের অনায়ত্ত। তাহলে আজকের মানুষের ও নোহের মধ্যে সারসত্যগত পার্থক্য কী? (তাদের মানবিকতা নেই।) এবং মানবিকতার এই অভাবের সারমর্মটি কী? (তা হল পশু এবং অপদেবতার সারমর্ম।) ‘পশু এবং অপদেবতা’ শুনতে খারাপ লাগলেও, এমনটাই বাস্তবিক; আরো মার্জিত ভাবে বলা যেতে পারে যে, তারা মানবিকতাশূন্য। মানবিকতা এবং চেতনাশূন্য লোকেরা মানুষ নয়, এমনকি তারা পশুরও অধম। নোহ ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়েছিল কারণ ঈশ্বরের বাক্য শোনার পরে সে সেগুলি স্মরণে রেখেছিল, ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্ব পালন ছিল তার আজীবনের উদ্যোগ, তার বিশ্বাস ছিল অটল, একশত বছরকাল ধরে তার ইচ্ছাশক্তি ছিল অটুট। কারণ তার অন্তরে ঈশ্বরভীতি ছিল, সে ছিল একজন বাস্তবিক মানুষ, এবং তার মধ্যে এই পরম চেতনা ছিল যে ঈশ্বর তার উপর জাহাজ নির্মাণের দায়িত্বটি অর্পণ করেছেন। নোহের সমতুল্য চেতনার অধিকারী মানুষ খুব বিরল, এমন আর একজনকেও খুঁজে বার করা কঠিন(বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, পরিশিষ্ট দুই: কীভাবে নোহ এবং অব্রাম ঈশ্বরের বাক্য শ্রবণ করল এবং তাঁকে মান্য করল (প্রথম অংশ))। ঈশ্বরের বাক্য পাঠ ছিল মর্মভেদী ও যন্ত্রণাদায়ক। কর্তব্যে অনুগত না থাকার কারণে ঈশ্বর যেন সরাসরি আমাকে তিরস্কার করছেন। আমি বুঝতে পারলাম যে কম মেধা বা সত্যের অগভীর উপলব্ধির কারণে যে আমার দায়িত্ব খারাপভাবে পালন করেছি তা নয়, এবং এই কারণেও নয় যে দায়িত্ব-পালন কীভাবে করতে হয় তা আমার অজানা, বরং কারণ হল আমার কোনো বিবেক, যুক্তি বা মানবতা ছিল না, এবং আমি ঈশ্বর-ভীত হৃদয়ে কর্তব্যের প্রতি আচরণ করিনি। যেমন নোহ, যদিও সে ঈশ্বরের বাক্য খুব কম শুনেছিল এবং সামান্য সত্য বুঝতে পেরেছিল, কিন্তু ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্ব সম্পাদন করার সময় সে আন্তরিক ও পরিশ্রমী ছিল। সে প্রতিটি বিবরণ মনে রাখত এবং ভালো ফলাফল অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা করত। নোহ ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি বিবেচক ছিল। ঈশ্বরের প্রতি তার সমর্পন ও আনুগত্যের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সে 120 বছর ধরে অধ্যবসায় করেছিল। আর আমি? ঈশ্বরের বাক্য আমি অনেক পড়েছি, অনেক সত্য ও রহস্য দেখেছি, এবং অতীতের মানুষদের তুলনায় অনেক বেশি অর্জন করেছি, কিন্তু তারপরও ধূর্ত হতে চেষ্টা করেছি এবং আমার দায়িত্বের সর্বত্র শৈথিল্য দেখিয়েছি। আমি জানতাম কীভাবে ভাল ফলাফল অর্জন করতে হয় এবং ঈশ্বর সাক্ষ্য আরও ভালভাবে দিতে হয়, কিন্তু এগুলিকে কষ্টকর মনে করে এড়িয়ে গেছি এবং আমার সঙ্গীর উপর আরও কাজের ভার চাপানোর সুবিধা নিয়েছি। ব্রাদার-সিস্টারদের সমস্যা হলেও আমি নিজের সুবিধাই দেখতাম, এবং সমাধান খুঁজতে কঠোর পরিশ্রম করতাম না। কাজের তদারকির সময়েও আমি খুবই উদাসীন থাকতাম। কর্তব্যের প্রতি আমার মন থাকত না। ফলে অন্যরাও গুরুত্ব বা মনোযোগ না দিয়েই তাদের কাজ করত। এমনকি কাজের প্রতি অবহেলা করে কাজের নামে ধর্মবিহীন ভিডিও দেখেছি। সন্ধান করেছি আরও ভালো খাবারের এবং দৈহিক ভোগের, এবং ধরা পড়ার ভয়ে, আমি অনেক কিছু গোপন করার চেষ্টা করেছি এবং প্রতারণা করেছি। আসলে, আমি যখন এইসব করছি, তখন যদিও আমার বিবেক আমাকে তিরস্কার করেছিল, এবং আমি বৌদ্ধিকভাবে জানতাম যে এগুলি করা ঈশ্বরের ইচ্ছা নয়, আমি জেদের বশে এ সব করার উপর জোর দিতাম। আমি দেখলাম আমার বিবেক ও বোধ কত দুর্বল। নোহের সাথে আমার তুলনা হতে পারে না কিংবা নিষ্ঠাবান কোনো ভ্রাতা ও ভগিনীর সাথে। এভাবে আমার কর্তব্য পালন করা আসলে ছিল ঈশ্বরকে বোকা বানানোর ও প্রতারণা করার চেষ্টা। আমার অপসারণ ছিল আমার উপর নেমে আসা ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণ স্বভাব। আমি সত্যিই মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছিলাম।

সেই সময়, আমি প্রায়ই এই সমস্যার কথা ভাবতাম। আমি ভাবতাম কেন আমি বিবেক ও যুক্তিহীন ছিলাম। তারপর একদিন, আমি ঈশ্বরের বাক্যর একটি স্তোত্র শুনি, “শয়তানের দ্বারা মানুষের কলুষিত হওয়ার পরবর্তীকালীন সত্য।

১. বহু বছর ধরে, মানুষ বেঁচে থাকার জন্য যে সমস্ত চিন্তাভাবনার উপর নির্ভর করেছে, সেগুলি তাদের অন্তরকে এমন অবস্থা পর্যন্ত ক্ষয় করেছে যে তারা বিশ্বাসঘাতক, কাপুরুষ ও ঘৃণ্য হয়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে যে ইচ্ছাশক্তি ও সঙ্কল্পের অভাব রয়েছে, তা-ই নয়, বরং তারা হয়ে উঠেছে লোভী, অহংকারী এবং স্বেচ্ছাচারী। তাদের মধ্যে এমন সংকল্পের খুবই অভাব যা তাদের নিজস্ব সত্তাকে অতিক্রম করতে পারে, এবং তদুপরি, তাদের এতটুকুও সাহস নেই এই অন্ধকার প্রভাবের বন্ধন ঝেড়ে ফেলার।

২. মানুষের চিন্তাভাবনা ও জীবনে এতটাই পচন ধরেছে যে ঈশ্বরে বিশ্বাসের বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এখনও অসহনীয় রকমের ঘৃণ্য, এবং মানুষ যখন ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসের বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলে, সেটাও শোনার পক্ষে একেবারেই অসহনীয়। সকল মানুষই কাপুরুষ, অযোগ্য, ঘৃণ্য, এবং ভঙ্গুর। তারা অন্ধকারের শক্তির প্রতি বিতৃষ্ণা অনুভব করে না, আলোক এবং সত্যের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করে না; পরিবর্তে, তারা সেগুলিকে বহিষ্কার করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে।

—মেষশাবককে অনুসরণ করুন ও নতুন গীত গান

ঈশ্বরের বাক্য চিন্তা করে আমি উপলব্ধি করলাম। আমি প্রায়শই শিথিল হয়ে পড়তাম এবং আমার কর্তব্য-পালনে ঈশ্বরকে বোকা বানানোর চেষ্টা করতাম কারণ শয়তানের দর্শনে আমি জীবন যাপন করতাম। যেমন “জীবন সংক্ষিপ্ত; যতক্ষণ পারো উপভোগ কর।” “আজকের সুরা আজকেই পান করো” এবং “প্রতিটা মুহূর্তে আনন্দে বাঁচো, কারণ জীবন সংক্ষিপ্ত” এই সকল নির্বোধ চিন্তা আমার মনকে কলুষিত ও বিকৃত করত। আ্মার মনে হত, ভারহীন এবং আরামদায়ক জীবনযাপন করাই হল বিবেচক সিদ্ধান্ত। জীবন এত ছোটো, তাহলে কেন নিজেকে এত কঠিন প্রয়াসে ঠেলে দেওয়া? পরিশ্রম হল মূর্খতা। মানুষের উচিত নিজেদের প্রতি সদয় হওয়া, ভালো ব্যবহার করা এবং যতটা সম্ভব উপভোগ করা। এই ধরনের চিন্তাভাবনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার ফলে আমি ধূর্ত হয়ে উঠলাম এবং সবকিছুতে সুযোগ নিতে শুরু করলাম। দিনে দিনে আমি আরও ধূর্ত হয়ে উঠলাম। আমার মনে আছে স্কুলে পড়ার সময় আমি আংশিক সময়ের একটি কাজ করতাম। কাজটি সহজ ছিল। সুপারভাইজার চলে গেলে আমি বিশ্রামের জন্য শোবার ঘরে ফিরে আসতাম, এবং কম কাজ করার উপায় এবং ধরা না পড়ার উপায় চিন্তা করতাম, একবার আমার রুমমেট ব্যাপারটি ধরে ফেলল, এবং সে বলল যে আমি খুবই অলস। সে মন্তব্য করেছিল যে ভবিষ্যতে প্রকৃত কোন কাজ পেলেও আমি নিশ্চিত কষ্ট না করারই চেষ্টা করব। কথাটি শুনে আমি লজ্জিত বোধ করি। কিন্তু তারপর আমি ভাবি, “ঠিক আছে, তোমার যা অভিরুচি তা তুমি বলতে পার। খুব বেশি পরিশ্রম করা কি মানুষের জন্য বোকামি নয়? কথায় আছে ‘প্রত্যেক মানুষ শুধুই নিজের জন্য এবং সে কারোর কথাই ভাবে না।’ কে না নিজের জন্য বাঁচতে চায়? নিজের জন্য চিন্তা না করা কি মূর্খতা নয়?” আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করার পর, আমি সত্যের অন্বেষণ এবং আমার দুর্নীতিগ্রস্ত স্বভাব সমাধানে নজর দিই নি। শয়তানের ভাবধারাতেই জীবন চালিত করেছি, এবং কেবলমাত্র কীভাবে দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্য এবং সুখ লাভ করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করেছি, তাই কর্তব্য পালনে, আমি শুধু কষ্ট বাঁচানোর জন্য যা করনীয় তাই করেছি এবং দৈহিক কষ্ট এড়াতে যা যা করা দরকার তা করেছি। শয়তানের এই ভাবধারাতেই জীবন যাপন করেছি, তাই দায়িত্ব পালনে সর্বদা পিছিয়ে থেকেছি, কখনোই আমার সর্বস্ব দিই নি এবং কখনোই আন্তরিকভাবে মূল্য পরিশোধ করিনি। আমি সর্বদা কৌশল, ধূর্তামি এবং প্রতারণা করেছি। এমনকি যখন নেত্রী আমাকে উন্মোচন করেছিলেন এবং সচেষ্ট হয়েছিলেন, তখনও আমি জেগে উঠিনি। আমি একধরণের বোধহীনতায় ছিলাম এবং সম্পূর্ণভাবে শয়তানের ভাবধারায় নিয়ন্ত্রিত হতাম। আমি নিজের কর্তব্য পালনের সময় অগ্রগতির কথা চিন্তা করিনি, অথবা সামগ্রিক কাজের খোঁজখবরও করিনি। যার ফলে আমার ভ্রাতা ও ভগিনীদেরও দায়িত্ব পালনে গোলমাল হয় এবং অগ্রগতি হয় নি, এবং আমার সাথে আরও দুই ভগিনীও বরখাস্ত হয়। আমি সত্যিই এইভাবে আমার দায়িত্ব পালন করে অন্যদের ক্ষতি করছিলাম। আমি দেখেছি যে আমি শয়তানী ভাবধারায় কলুষিত হয়েছি এবং একজন মানুষ হওয়ার ন্যুনতম যোগ্যতাও হারিয়ে ফেলেছি। আমি হয়ে উঠেছিলাম অলস, স্বার্থপর, ধূর্ত এবং প্রতারক এমন একজন। এক করুণ, লজ্জাজনক অবস্থায় আমি জীবন যাপন করছিলাম। এটি বুঝতে পেরে, আমি নীরবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি। আমি বলি, “ঈশ্বর! আমি সত্যিই আর এভাবে বাঁচতে চাই না। দয়া করে আমাকে আমার শয়তানোচিত স্বভাবের দাসত্ব থেকে উদ্ধার করুন।”

পরে, ঈশ্বরের বাক্য পড়ার মাধ্যমে, আমি অনুশীলনের একটি পথ খুঁজে পাই। ঈশ্বর বলেন, “ঈশ্বর মানুষকে যাকিছু করতে বলেন, এবং ঈশ্বরের গৃহের যাবতীয় নানান প্রকারের কাজ—এই সমস্তকিছুই মানুষের করণীয়, এগুলি সবই মানুষের কর্তব্য বলে বিবেচিত হয়। তারা যে কাজই করুক না কেন, এই দায়িত্ব তাদের পালন করা উচিত। কর্তব্যসমূহের পরিসর খুব বিস্তৃত, এবং তা নানাবিধ ক্ষেত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট—কিন্তু যে কর্তব্যই তুমি সম্পাদন করো না কেন, সহজ কথায় সেটি তোমার বাধ্যবাধকতা, সেটি এমন এক বিষয় যা তোমার করণীয়। যতক্ষণ তুমি এটি ভালোভাবে সম্পন্ন করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করবে, ততক্ষণ ঈশ্বর তোমার প্রশংসা করবেন, এবং তিনি তোমায় একজন প্রকৃত ঈশ্বর-বিশ্বাসী বলে স্বীকৃতি দেবেন। তুমি যে-ই হও না কেন, তুমি যদি সবসময় তোমার দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে বা তা থেকে আত্মগোপন করে থাকতে চেষ্টা করো, তাহলে একটা সমস্যা রয়েছে: খুব মৃদুভাবে বলা যয়, তুমি অত্যন্ত অলস, অত্যন্ত শঠ, তুমি কর্মবিমুখ, তুমি অবসর পছন্দ করো এবং শ্রম ঘৃণা করো; আরো গুরুতরভাবে বললে বলতে হয়, তুমি তোমার দায়িত্ব পালনে অনিচ্ছুক, তোমার কোনো অঙ্গীকার নেই, কোনো আনুগত্য নেই। এই গৌণ কাজেও তুমি যদি এমনকি প্রচেষ্টাটুকু প্রয়োগ করতে না পারো, তাহলে তুমি কী করতে পারো? যথাযথভাবে কোন কাজ করতে তুমি সক্ষম? একজন মানুষ যদি সত্যিই সমর্পিতচিত্ত হয়, এবং কর্তব্যের প্রতি তার যদি একটা দায়িত্ববোধ থাকে, তাহলে তাকে যে কাজ করতে বলা হবে, যতক্ষণ ঈশ্বর তা করার দাবি রাখছেন, এবং যতক্ষণ ঈশ্বরের গৃহের জন্য তা করা আবশ্যক, ততক্ষণ নির্বিকল্পভাবে সে তা-ই করবে। যা সে করতে সক্ষম ও যা তার করনীয় এমন যেকোনো কর্মভার গ্রহণ করে তা সম্পন্ন করাটা কি একজন মানুষের দায়িত্ব পালনের অন্যতম নীতি নয়? (হ্যাঁ।) কায়িক পরিশ্রম করে এমন কিছু মানুষ ভিন্নমত হয়ে বলে থাকে, ‘তোমরা সারাদিন রোদ-বাতাস থেকে সুরক্ষিত তোমাদের ঘরের মধ্যে থেকে তোমাদের কর্তব্য সম্পাদন করো। এতে আদৌ কোনো কষ্টভোগের ব্যাপার নেই, আমাদের থেকে তা অনেক বেশি আরামপ্রদ। নিজেদের একবার আমাদের পরিস্থিতির মধ্যে নামিয়ে আনো, দেখা যাক ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘরের বাইরে ঝড়বৃষ্টির মধ্যে কাজ করার পর তোমরা তা সহ্য করতে পারো কিনা।’ বস্তুত, সকল কর্তব্যের সঙ্গেই কিছু কষ্টভোগ সংশ্লিষ্ট থাকে। কায়িক পরিশ্রমের সঙ্গে জড়িত থাকে কায়িক কষ্টভোগ, এবং মানসিক পরিশ্রমের সঙ্গে জড়িত থাকে মানসিক কষ্টভোগ; উভয়েরই নিজস্ব সমস্যা রয়েছে। সবকিছুই বলার থেকে করে ওঠাটা কঠিন। মানুষ যখন সত্যিই কাজ করে, একদিক থেকে চিন্তা করলে, তোমাকে অবশ্যই তাদের চরিত্রের দিকটি লক্ষ্য করতে হবে, এবং অন্য দিক থেকে চিন্তা করলে, তোমাকে অবশ্যই দেখতে হবে তারা সত্যপ্রেমী কিনা। প্রথমে মানুষের চরিত্রের বিষয়ে আলোচনা করা যাক। একজন মানুষ যদি উন্নত চরিত্রের অধিকারী হয়, তাহলে তারা সবকিছুর ইতিবাচক দিকটি দেখে, এবং ইতিবাচক পরিপ্রেক্ষিত থেকে ও সত্যের উপর ভিত্তি করে তারা এই বিষয়গুলিকে গ্রহণ ও উপলব্ধি করতে সক্ষম; অর্থাৎ, তাদের হৃদয়, চরিত্র, এবং আত্মা ধার্মিক—এ-ই হল চরিত্রের পরিপ্রেক্ষিত থেকে আলোচনা। এবার আরেকটি দিক বিষয়ে আলোচনা করা যাক—কেউ সত্যপ্রেমী না সত্যপ্রেমী নয়। সত্যপ্রেম বিষয়টি সত্যকে গ্রহণ করার সামর্থ্যকে নির্দেশ করে, যার অর্থ, ঈশ্বরের বাক্যগুলিকে তুমি হৃদয়ঙ্গম করো বা না করো, এবং ঈশ্বরের ইচ্ছাকে তুমি উপলব্ধি করো বা না করো, কাজটির সম্পর্কে, যে দায়িত্ব তোমার পালন করার কথা সেটির সম্পর্কে, তোমার দৃষ্টিভঙ্গি, অভিমত, ও পরিপ্রেক্ষিত সত্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হোক বা না হোক, যদি এরপরেও তুমি তা ঈশ্বরের কাছ থেকে গ্রহণ করতে সক্ষম হও, এবং আজ্ঞাকারী ও আন্তরিক হও, তাহলে তা-ই যথেষ্ট, তা-ই তোমায় তোমার কর্তব্য সম্পাদনের উপযুক্ত গুণসম্পন্ন করে তোলে, এ-ই হল ন্যূনতম আবশ্যিক শর্ত। তুমি যদি অনুগত ও আন্তরিক হও, তাহলে কোনো কর্ম সম্পাদনের সময় তুমি অমনোযোগী হও না ও দায়সারা ভাবে কাজ করো না, এবং কাজে শিথিল হওয়ার উপায় সন্ধান করো না, বরং কাজটির মধ্যে তোমার সমস্ত মনপ্রাণ নিবেদন করো। অবস্থা ভ্রান্ত হলে নেতিবাচকতার সৃষ্টি হয়, যার ফলে মানুষ তাদের কর্মোদ্যম হারিয়ে ফেলে, আর তাই তারা অমনোযোগী ও যত্নহীন হয়ে পড়ে। তারা অন্তরে সম্যকরূপে অবগত যে, তাদের অবস্থা সঠিক নয়, কিন্তু তবু সত্যান্বেষণের দ্বারা তা সংশোধিত করার চেষ্টা করে না। এহেন মানুষের কোনো সত্যপ্রেম নেই, এবং তাদের কর্তব্য সম্পাদনের ব্যাপারে তারা কেবল যৎসামান্যই আগ্রহী; কোনো প্রচেষ্টা নিতে বা কোনো কষ্টভোগ সহ্য করতে তারা অনিচ্ছুক, এবং তারা সবসময় কাজে ঢিলে দেওয়ার উপায় খুঁজছে। বস্তুত, ঈশ্বর ইতিমধ্যেই এই সবকিছুই দেখেছেন—তাহলে এই লোকগুলির প্রতি তিনি কোনো মনোযোগ দেন না কেন? ঈশ্বর কেবল তাঁর মনোনীত মানুষদের জেগে ওঠার জন্য এবং তারা যথার্থই কী প্রকারের মানুষ তা চিহ্নিত করার জন্য অপেক্ষা করছেন, তারা অনাবৃত হওয়ার পর তাদের বহিষ্কৃত করার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু, এহেন মানুষজন এখনো মনে মনে ভাবে, ‘আমি কতটা চালাক দেখো। আমরা একই খাদ্য গ্রহণ করি, কিন্তু কাজ করার পর তুমি সম্পূর্ণ অবসন্ন হয়ে পড়েছ। আমি কিন্তু আদৌ পরিশ্রান্ত নই। আমি হলাম বুদ্ধিমান; আর যারা আসল কাজটা করে তারা মূর্খ।’ সৎ মানুষদের তাদের এই নজরে দেখাটা কি সমীচীন? সমীচীন নয়। বস্তুত, যে মানুষগুলি প্রকৃত কাজটি করে, তাদের দায়িত্ব নির্বাহের সময় তারা সত্যের অনুশীলন ও ঈশ্বরের পরিতোষ বিধান করছে, আর তাই তারা সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষ। কীসের দরুন তারা বুদ্ধিমান? তারা বলে থাকে, ‘ঈশ্বর যা আমাকে করতে বলেন না আমি তা করি না, এবং তিনি আমায় যা করতে বলেন আমি তার সবকিছুই আমি করি। তিনি যা-ই বলেন আমি তা-ই করি, আর তাতে আমি আমার মনপ্রাণ ঢেলে দিই, আমার সাধ্যের মধ্যে সবকিছু আমি তাতে নিয়োজিত করি, আমি কক্ষনো কোনো কূটকৌশল অবলম্বন করি না। এটা আমি আর কারো জন্য করছি না, করছি ঈশ্বরের জন্য। ঈশ্বর আমায় এত ভালোবাসেন, ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমার এটা করা উচিত।’ এটাই হল সঠিক মানসিক অবস্থা, এবং এর পরিণাম হল, যখন গির্জাকে পরিশোধন করার সময় আসবে, দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যারা কৌশলী, তাদের সকলকে বহিষ্কার করা হবে, আর যারা সৎ মানুষ এবং ঈশ্বরের সুবিবেচনাকে স্বীকার করে, তারা রয়ে যাবে। এই সৎ মানুষগুলির অবস্থার উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটে, এবং সকল বিপদ থেকে ঈশ্বর তাদের সুরক্ষিত রাখেন। এবং কীসের দরুন তারা এই সুরক্ষা অর্জন করে? কারণ তাদের অন্তরে, তারা সৎ। দায়িত্ব নির্বাহের সময় তারা কষ্টভোগ বা ক্লান্তিকে ভয় করে না, এবং তাদের উপর অর্পিত কোনো দায়িত্বের ব্যাপারে তারা কখনো খুঁৎখুঁৎ করে না; তারা কারণ জানতে চায় না, তাদের যেমন বলা হয় তারা শুধু সেটাই করে যায়, বিচার-বিশ্লেষণ না করে, বা অন্য কোনো বিষয়কে বিবেচনায় না এনে, তারা মান্য করে; তাদের কোনো অপ্রত্যক্ষ অভিপ্রায় থাকে না, কিন্তু সকল বিষয়ে তারা আজ্ঞাকারিতায় সক্ষম। তাদের অভ্যন্তরীন অবস্থা সবসময় খুবই স্বাভাবিক; বিপদের সম্মুখীন হলে, ঈশ্বর তাদের সুরক্ষা দেন; রোগ-ব্যাধির শিকার হলেও ঈশ্বর তাদের রক্ষা করেন—তারা সাতিশয় আশীর্বাদধন্য(বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, দশম পরিচ্ছেদ: তারা সত্যকে ঘৃণা করে, প্রকাশ্যে নীতির লঙ্ঘন করে, এবং ইশ্বরের গৃহের আয়োজনকে উপেক্ষা করে (চতুর্থ অংশ))। ঈশ্বরের বাক্য চিন্তা করার পরে, আমি বুঝতে পারি। আমাদের কর্তব্য সৎ চিত্তে এবং বাস্তবভাবে পালন করা উচিত, ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি নিয়ে ভাবা বা কৌশল অবলম্বন করা নয়, এবং সমস্যা দেখা দিলে আমাদের উচিত সেগুলির দ্রুত সমাধান করা এবং দায়িত্ব পালনে কোন প্রচেষ্টাই বাদ না রাখা। শুধুমাত্র এইভাবে আমরা ঈশ্বরের সামনে সৎ মানুষ হতে পারি এবং ঈশ্বরের সুরক্ষা ও আশীর্বাদ লাভ করতে পারি। আমি ভাবি, আমি কতটা স্বার্থপর, ঘৃণ্য, ভোগ-লিপ্সায় আসক্ত ছিলাম, দায়িত্ব-পালনের জন্য প্রচেষ্টা করতে চাইনি, এবং ছবি তৈরির কাজে কোন সুফল দিতে পারি নি, এবং নিজে খুব অপরাধী বোধ করছিলাম। পরে, তা সত্ত্বেও আমি অবসর সময়ে ছবি তৈরী করেছি, এবং সচেতনভাবে নিজেকে পরিবর্তিত করার চেষ্টা করেছি। আমি নতুন পদ্ধতি শিখতে শুরু করেছি, অন্যদের কাছে প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছি, এবং নতুন পদ্ধতিতে ছবি তৈরির চেষ্টা করেছি। সমস্যার সম্মুখীন হলে, আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতাম, এবং অন্যদের পরামর্শের ভিত্তিতে বারবার সংশোধন করেছি। যখনই আমি নতুন কোনো ছবির কথা ভাবতাম, সমস্ত দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করতাম, যাতে অন্য কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া যায় অভূতপূর্ব কিছু করার। এইভাবে, কিছুদিন আমার কাজের অভ্যাস করার পর, আমি ঈশ্বরের আশীর্বাদ প্রত্যক্ষ করলাম। আমার কম্পোজিশনের ধারণায় আর কাজের পদ্ধতিতে কিছু অভিনব সাফল্য পেলাম, এবং ভ্রাতা ও ভগিনীরা বলে যে আমি এখন যে ছবিগুলি তৈরি করেছি তা আগেরগুলির চেয়ে ভাল। আমি নিজের কাজ করার উৎসাহ খুঁজে পেলাম, এবং ব্রাদার-সিস্টারদেরও তাদের কাজে উৎসাহিত করতে পারলাম। প্রত্যেকেই এখন উদ্ভাবন করতে, সাফল্য অর্জন করতে এবং আরও ভালো করতে চায়।

যখন আমি প্রকৃতই নিজ দায়িত্বে কঠোর পরিশ্রম করেছি, যখন আমি এতে আমার হৃদয় দিয়েছি, আমি আমার কর্তব্য পালনে নিরাপদ বোধ করেছি। প্রার্থনা করার সময় ঈশ্বরের কাছে আমার অনেক কিছু বলার থাকত। কিছু সমস্যার উপলব্ধিও আমি অর্জন করেছি এবং আমার পেশায় কিছু উন্নতি করেছি। আর যখন কর্তব্যে আমি সমস্ত প্রচেষ্টা নিয়োগ করলাম, তখনও আর ক্লান্ত বোধ করতাম না। যদিও কখনও কখনও একটু অধিক চিন্তার প্রয়োজন হতো, কিন্তু আমি প্রশান্তি ও আনন্দ অনুভব করতাম। আমি দেখেছি যে ঈশ্বর কখনোই মানুষের কাছ থেকে অসম্ভব কিছু চান না, সামান্য প্রয়াসে সব কিছুই অর্জন করা যায়, এবং ঈশ্বরের প্রতি আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ বোধ করি। কিছু দিন পরে, ভ্রাতা ও ভগিনীদের সাথে আমার কাজে আমি আবার বদলি হয়ে যাই। সেই সময়, আমি খুব কৃতজ্ঞ ছিলাম, কিন্তু নিজেকে এটির অযোগ্যও বোধ করি, তাই আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি। আমি বলি, “ঈশ্বর! এই মনুষ্যত্বের অধিকারী হয়ে আমি কোনো কর্তব্য সম্পাদনের এবং এমন উন্নীত হওয়ার যোগ্য নই। আমি এই দায়িত্বে আমার শ্রেষ্ঠটি দিতে চাই, এবং যদি আমি এখনও আগের মতোই আচরণ করি, তাহলে আমি বলছি আপনি আমাকে দণ্ডদান করুন ও অনুশাসিত করুন। যাতে আমি সত্যিই অনুতপ্ত হতে পারি এবং আপনার ভালবাসা পরিশোধ করার জন্য অনুগত হয়ে আমার কর্তব্যপালন করতে পারি।”

এ সময় নেত্রী আমার ও আরও তিন ভ্রাতা-ভগিনীর একসাথে কিছু নতুন এফেক্ট তৈরি করার ব্যবস্থা করেন। উত্পাদন প্রক্রিয়ার জন্য অনেক সময় এবং প্রচেষ্টা প্রয়োজন, এবং সেই সময়ে ছবির জন্য উচ্চ চাহিদা ছিল, তাই আমার দায়িত্ব আসলে ক্লান্তিকর ছিল। বিশেষ করে যখন অনেক কাজ জমে যায় এবং সেগুলির নিষ্পত্তি করতে হয়, তখন মনে হত. আমার মাথা ফেটে যাবে। একবার, সময়মতো ছবিগুলি শেষ না করায়, আমার সঙ্গী আমাকে জিজ্ঞাসা করে কেন আমি এত ধীরে কাজ করছি। তখন, আমি ক্ষুব্ধ হলাম, আর ভাবলাম, “দেখো সবাই কেমন শুধু ছবি তৈরির দিকেই মনোযোগ দিচ্ছে, আমার মতো নয়, যাকে নতুন পদ্ধতি আর এফেক্ট শিখতে হচ্ছে। সে কারণে আমার বেশি সময় এবং প্রচেষ্টা লাগে। আর যদি আমি কম ছবি তৈরি করি, তাহলে আমার ভ্রাতা ও ভগিনীরা আমার সম্পর্কে কী ভাববে? আমার হয়তো নেত্রীর সাথে কথা বলা উচিত আর বলা উচিত যে আমি এইসব নতুন এফেক্ট ব্যবহার করতে পারছি না, তাই তাদের এই কাজের জন্য অন্য কাউকে খুঁজে নেওয়া উচিত।” যখন এরকম ভাবলাম, আমি জানতাম যে আমি আবার দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে মনোযোগী হচ্ছি, তাই আমি সচেতনভাবে ঈশ্বরের বাক্যের প্রাসঙ্গিক অংশগুলি ভোজন ও পান করলাম। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “ঈশ্বর সৎ মানুষদের পছন্দ করেন এবং অবিশ্বাসভাজন মানুষদের অপছন্দ করেন। প্রত্যেকেরই এটা স্পষ্টভাবে বোঝা উচিত, এবং বিভ্রান্ত হওয়া ও নির্বোধের মতো কাজ করা বন্ধ করা উচিত। ক্ষণিকের অজ্ঞানতা বুঝতে পারা যায়, কিন্তু সত্যকে আদৌ গ্রহণ করতে অস্বীকার করাটা নিছকই একগুঁয়েমি। সৎ মানুষ দায়িত্ব নিতে সমর্থ। তারা তাদের নিজেদের লাভ-ক্ষতির হিসাব করে না, শুধু ঈশ্বরের গৃহের কার্য ও স্বার্থকে সুরক্ষিত রাখে। তাদের হৃদয় দয়ালু ও সৎ, পরিষ্কার জলের পাত্রের মতো, যার দিকে এক নজর তাকালে তার তলদেশ পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যায়। তাদের কাজকর্মের মধ্যেও স্বচ্ছতা থাকে। একজন কপটাচারী মানুষ সবসময় কৌশলের আশ্রয় নেয়, সর্বদাই সমস্ত কিছু মুখোশের আড়ালে রাখে, ঢাকা দিতে চায়, এবং নিজেকে এত আঁটসাঁটভাবে ঢাকাঢুকি দিয়ে রাখে যে কেউই তাকে স্পষ্ট করে বুঝে উঠতে পারে না। মানুষ তোমার অন্তর্নিহিত চিন্তাগুলি আঁচ করতে পারে না, কিন্তু ঈশ্বর তোমার অন্তরের গভীরতম বিষয়গুলোও দেখতে পান। ঈশ্বর যদি দেখেন যে তুমি একজন সৎ মানুষ নও, তুমি চাতুরীর আশ্রয় গ্রহণ করো, সত্যকে কখনো তুমি স্বীকার করো না, সদাসর্বদাই তুমি তাঁকে প্রতারণা করার চেষ্টা করছো, এবং তোমার হৃদয়কে তুমি তাঁর কাছে সমর্পণ করো না, তাহলে ঈশ্বর তোমায় পছন্দ করবেন না, তিনি তোমাকে ঘৃণাসহকারে পরিত্যাগ করবেন। অবিশ্বাসীদের মধ্যে যারা সমৃদ্ধি লাভ করে, যারা বাকপটু ও উপস্থিতবুদ্ধিসম্পন্ন, তারা কেমন প্রকারের মানুষ? সেটা কি তোমাদের কাছে পরিষ্কার? তাদের সারসত্য কী? বলা যায় যে তারা সকলেই অত্যন্ত ধূর্ত, তারা সকলেই চরম শঠ ও অবিশ্বাসভাজন, তারা অকৃত্রিমরূপে সাক্ষাৎ শয়তান। ঈশ্বর কি এরকম কোনো মানুষকে উদ্ধার করতে পারেন? ঈশ্বর সবথেকে বেশি ঘৃণা করেন শয়তানদের—কপট ও অবিশ্বাসভাজন মানুষদের। ঈশ্বর কোনোক্রমেই এই জাতীয় মানুষদের উদ্ধার করবেন না, তাই তোমরা আর যা কিছুই করো, এধরনের মানুষ হয়ো না। যারা উপস্থিতবুদ্ধি ধরে এবং কথা বলার সময় সমস্ত দিক বিবেচনা করে কথা বলে, আচারে-ব্যবহারে যারা সুনিপুণ ও চৌকস, এবং বিষয়াদির মোকাবিলা করার সময় যারা হাওয়া কোন দিকে বইছে তার খেয়াল রাখে—আমি তোমাদের বলছি, এই মানুষগুলির প্রতিই ঈশ্বর সর্বাধিক বিতৃষ্ণা পোষণ করেন, এই ধরনের মানুষেরা উদ্ধারের অতীত। … তাদের ঈশ্বর-বিশ্বাসের সম্পূর্ণ সময়কাল জুড়ে মানুষ যদি সত্যের অন্বেষণ না করে, তাহলে কত বছর ধরে তারা ঈশ্বর-বিশ্বাসী তাতে কিছুই এসে যায় না; পরিশেষে তারা কিছুই অর্জন করবে না। যদি তারা ঈশ্বরকে লাভ করতে চায়, তাহলে অবশ্যই তাদের সত্যকে লাভ করতে হবে। যদি তারা সত্যকে উপলব্ধি করে, সত্যের অনুশীলন করে, এবং সত্যের বাস্তবতার মধ্যে প্রবেশ করে, একমাত্র তবেই তারা সত্যকে লাভ করবে এবং ঈশ্বরের উদ্ধার লাভ করবে; এবং শুধুমাত্র তখনই তারা ঈশ্বরের অনুমোদন ও আশীর্বাদ লাভ করবে; আর শুধুমাত্র এটাই হল ঈশ্বরকে লাভ(বাক্য, খণ্ড ৫, নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের দায়িত্বসমূহ)। ঈশ্বরের বাক্য পাঠের পর, আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি তখনও কিছু ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করছি। যারা ধূর্ত আমি আগে তাদের প্রশংসা করতাম। আমি ভাবতাম তারা শুধুমাত্র সেই কাজই করে যাতে তাদের ভালো দেখায়, এবং তারা সঠিক সংক্ষিপ্ত পথই বেছে নিয়েছে। আমি ভাবতাম এই ধরনের লোকেরা সপ্রতিভ ও বুদ্ধিমান, এবং আমি এমন একজন ব্যক্তি হওয়ার আশা করতাম। ঈশ্বরের বাক্য পাঠের পরেই বুঝলাম ঈশ্বরের কাছে এ হল ধূর্ততা, বুদ্ধিমত্তা নয়। তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য, তারা সমস্ত ধরণের ঘৃণ্য উপায় ব্যবহার করতে পারে। এই ধরনের মানুষ অস্বচ্ছ এবং শয়তানি স্বভাবের। সরল এবং সৎ লোকদের ঈশ্বর পছন্দ করেন, যাদের অন্তরে কোন ছলনা নেই, যাদের বিকৃত উদ্দেশ্য নেই যারা সেই দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে যা ঈশ্বর তাদের অর্পণ করেন, এবং নিজেদের সমস্ত হৃদয় দিয়ে এবং বাস্তব পদ্ধতিতে কাজ করে। ঈশ্বর আমাদের হৃদয় ও মন পরীক্ষা করেন এবং আমাদের সারমর্ম অনুসারে আমাদের সাথে ভিন্নভাবে আচরণ করেন। প্রতারকদের প্রতি ঈশ্বর যে মনোভাব পোষণ করেন তা হচ্ছে বিতৃষ্ণা। তিনি তাদের সত্যের উপলব্ধি দিয়ে আলোকিত করেন না, এবং পরিশেষে অপসারিত করেন, কিন্তু সৎ মানুষদের তিনি আলোকিত করেন এবং আশীর্বাদ প্রদান করেন। তারপর আমি নিজের কথা ভাবলাম। আমার দায়িত্ব পালনের সময় আমাকে মূল্য দিতে হয়েছিল এবং দৈহিক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল, আমি আমার দায়িত্ব এড়াতে চেয়েছিলাম যাতে আমি ক্লান্ত না হই। এটি ছিল স্বার্থপরতা এবং প্রতারণা, ধূর্ততার বহিঃপ্রকাশ। আমি যদি তা করতাম, তাহলে ঈশ্বর আমাকে ঘৃণা করতেন, এবং আমি পবিত্র আত্মার কাজ গ্রহণ করতে পারতাম না, এবং এরকম পরিস্থিতিতে আমি অবশ্যই কখনো সত্য অর্জন করতে পারতাম না। এই সময়ে আমি হঠাৎ উপলব্ধি করি এই কর্তব্য পালন আমার জন্য একটি পরীক্ষা ছিল যাতে দেখা যায় আমার অগ্রগতি হচ্ছে কি না এবং কর্তব্যের প্রতি আমি দায়বদ্ধ কি না, এবং আমি দায়িত্ব এবং দৈহিক আরামের মধ্যে সঠিকভাবে বেছে নিতে পারি কিনা। নিজের স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজনে আমি যদি দায়িত্ব এড়িয়ে যাই, তা হলে এই পরীক্ষায় আমি আমার সাক্ষ্য হারাব। সাম্প্রতিক অতীতে ফিরে আমি চিন্তা করি। যদিও সামান্য দৈহিক কষ্ট পেয়েছি, কিন্তু আমার হৃদয় পূর্ণ ছিল। দায়িত্ব-পালনে আমার গভীর উদ্বেগ এবং অসুবিধা ছিল, কিন্তু সত্য এবং নীতিগুলির আরও অনুসন্ধা্নের জন্য আমি ঈশ্বরের কাছাকাছি ছিলাম। আমার দায়িত্বের মধ্যে প্রতিদিন আমি কিছু অর্জন করেছি এবং এটি খুব অর্থবহ মনে হয়েছিল। আগে, আমি দৈহিক আরাম কামনা করতাম, এবং যদিও ক্লান্ত হতাম না, কিন্তু আমি কোন আনন্দ অনুভব করতাম না এবং পবিত্র আত্মা আমাকে পরিত্যাগ করেছিলেন। সেই যন্ত্রণা ছিল শারীরিক যন্ত্রণার চেয়েও অধিক। কৌশল এবং প্রতারণার উপর আমি আর নির্ভর করতে পারিনি। এর পরে, আমি আবার হাতে থাকা কাজের মূল্যায়ন করি, এবং বাস্তবিক কোন অসুবিধা হলে, আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত ভগিনীর সাহায্য চাইতাম, আমার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ব্যয় করি এবং আমার যথাসাধ্য সর্বোত্তমভাবে পালন করি। এইসব কাজ করার ফলে আমি খুবই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।

এটা ছিল ঈশ্বরের বাক্যর বিচার ও উদ্ঘাটন যা আমাকে শুদ্ধ ও পরিবর্তন করে, দৈহিক আরামের আকাঙ্ক্ষা এবং পশুর মতো জীবনযাপন থেকে মুক্ত করে, লজ্জিত হতে শেখায়, এবং বাস্তব সম্মতভাবে নিজ দায়িত্ব পালন করতে এবং মানুষের মত করে বেঁচে থাকতে সক্ষম করে তোলে। এটা সত্যিই আমার জন্য ঈশ্বরের পরিত্রাণ ছিল! ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

অবশেষে ভুল ধারণা থেকে মুক্ত হওয়া

কয়েক বছর আগে আমি গির্জার জন্য ভিডিও তৈরি করতাম। আগে নিজের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতাম না, আমার দুটো ভিডিওতে কিছু সমস্যা থাকায় বাতিল করা...

অন্যদের দেখার জন্য ঈশ্বরের বাক্যই আমাদের একমাত্র আতসকাঁচ

শীলা আমার অনেকদিনের চেনা, আর আমি ওকে ভালোভাবেই জানি। যখনই আমাদের দেখা হতো, ও সবসময় ওর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে গল্প করতো। ও বলতো যে অন্যদের...

উদাসীন হওয়ার ফলে যে ক্ষতি হয়

২০২১ সালের অক্টোবরে, আমি নবাগতদের সিঞ্চনের অনুশীলন শুরু করি। এক সপ্তাহের মধ্যেই আমি বুঝতে পারলাম যে আমাকে অনেক কিছু শিখতে হবে। আমাকে...

বিশ্বাস: শক্তির উৎস

গত গ্রীষ্মে। আমি অনলাইনে অনুসন্ধান করছিলাম এবং অন্যেরা আমার সঙ্গে অনেক সত্যের সহ ভাগীতা করেছিল, এই বিষয়গুলি নিয়ে কীভাবে ঈশ্বর...

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন