নবাগতদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় আমি অনাবৃত হই
সুসমাচার ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে, ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজের দিকে আরও বেশি মানুষ নজর দিতে আরম্ভ করে, ফলে আরও বেশি মানুষের সুসমাচার প্রচার এবং নবাগতদের সিঞ্চন করা উচিৎ। উচ্চমেধার নবাগতদের প্রশিক্ষিত করা জরুরি যাতে তারা সকলেই কোন দায়িত্ব পালন করতে পারে। কিছুদিন পর আমি বুঝি নবাগতদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যত সহজ ভেবেছিলাম সেটি তত সহজ নয়। তারা ছিল নবজাতকের মত, কিছুই জানে না। তাদের হাত ধরা দরকার ছিল। তাদের সমাবেশের বিষয়বস্তু নিয়ে আমাকে আলোচনা করতে হত এবং শেখাতে হত কীভাবে সমাবেশ সঞ্চালন করতে হয়। তারা যখন সমাবেশের সঞ্চালনা করত, তখন আমাকে বিভিন্ন বিষয়ে নজর রাখতে হত। তারা খুব দ্রুত কথা বললে, আমাকে তাদের মনে করিয়ে দিতে হত ধীরগতিতে কথা বলা, যাতে সবাই বুঝতে পারে। অতি ধীরে কথা বললে আমি বলতাম একটু দ্রুত কথা বলতে। তার পরেও, আমি তাদের এটাও শেখাতাম কী ভাবে সম্মুখীন হওয়া সমস্যার সমাধান করতে হয়, যাতে তারা গির্জায় যাদের সিঞ্চন করে তারা একত্রিত হয়ে, স্বাভাবিকভাবে ঈশ্বরের বাক্য পড়তে পারে এবং সত্য পথে ভিত্তি স্থাপন করতে পারে। নবাগতদের কোনও সমস্যা হলে আমাকে তাদের অবস্থার খোঁজখবর রাখতে হত এবং কীভাবে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় সে সম্পর্কে তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করতে হত, যাতে তাদের অবস্থা প্রভাবিত না হয় এবং তারা স্বাভাবিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে।
কিছুদিন পর আমি উপলব্ধি করলাম যে নবাগতদের প্রশিক্ষণ দেওয়া বেশ ক্লান্তিকর। দলের নেতা হওয়ার ফলে আমি দায়বদ্ধ ছিলাম এই দলের কাজ এবং অন্যদের সিঞ্চনের ব্যাপারে। এই ধরনের কাজে বহু সময় এবং প্রচেষ্টা লাগে। কিন্তু আমি আমার অধিকাংশ সময় এবং শক্তি ব্যয় করতাম নবাগতদের প্রশিক্ষণে, এবং কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর যাদের আমি সিঞ্চন করেছিলাম তাদের মধ্যে কেউ কেউ সমাবেশে আসত না আমাকে একাই তাদের খোঁজ করতে হত। এতে আমি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি, এবং অভিযোগ জানাই যে নবাগতদের প্রশিক্ষণে খুব বেশি সময় লাগায় আমার সিঞ্চনের কাজ প্রভাবিত হচ্ছে। মাসখানেক পরে, আমার দলে আমিই সবচেয়ে খারাপ ছিলাম। এটি বিব্রতকর ছিল। একবার এক সভায়, আমার নেতা আমাকে বললেন যে আমার সিঞ্চনের কাজ ফলপ্রসূ নয়। আমি এতই বিব্রত হয়েছিলাম যে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। দলের নেতা হিসাবে, যদি আমার সিঞ্চন কার্যকর না হয়, অন্যরা আমার সম্পর্কে কী ভাববে? আমি এটি মেনে নিতে পারিনি, এবং বিষ্ণণ্ণ হয়ে পড়েছিলাম। নবাগতদের অনুশীলন করিয়ে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমি ভাবলাম যদি আমার কর্মশক্তি ব্যয় করতাম আমারই সিঞ্চন করা ভ্রাতা ও ভগিনীদের উপর তা হলে হয় তো আমি দলের মধ্যে সবচেয়য়ে খারাপ করতাম না। নবাগতদের অনুশীলন করানোর ফলাফল আমরা তৎক্ষণাৎ দেখতে পাইনি, এবং আমি যে মূল্য দিয়েছিলাম গির্জার অন্যরা তা দেখেননি। এই কথাটি ভাবতেই আমার দম বন্ধ হয়ে এল, এবং আমার সমস্ত অনুপ্রেরণা রুদ্ধ হয়ে গেল। আমি অনুভব করলাম নতুনদের প্রশিক্ষণ দেওয়া একটি বোঝা। সেই সময়ে আমারই প্রশিক্ষিত কিছু নবাগত অন্যদের সিঞ্চন করতে পারত। যারা সবেমাত্র ঈশ্বরের কাজ গ্রহণ করেছে এমন কাউকে যদি তারা সিঞ্চনের দায়িত্ব দিত, সেক্ষেত্রে তাদের কাজ দেখা-শোনার বাইরেও সিঞ্চনের বিষয়ে আমাকে তাদের সাহায্য করতে হত। আমাকে আরও কাজ করতে হত, এবং সে কাজের ফলাফলের কোনও কৃতিত্ব আমি পেতাম না। আমি ভাবতে লাগলাম, “আমি তাদের অন্যদের সিঞ্চন করতে দেব না, তারা আমার দায়িত্বে থাকা তাদের সিঞ্চনের কাজে অংশীদার হবে। এতে আমার কাজের উন্নতি হবে এবং আমি আরও প্রমাণিত হব।” আমি শুধু আমার খ্যাতির কথা ভেবেছি এবং বুঝতে পারিনি এটি ভুল ছিল। ঈশ্বরের বাক্যর অংশগুলি পাঠের পরেই আমার অবস্থা সম্পর্কে আমি অবগত হই। ঈশ্বরের বাক্যে বলা হয়েছে, “কারো কাজ ভালো না মন্দ কিনা, তা কোন মানদণ্ডের দ্বারা বিচার করা হয়? তা নির্ভর করে তাদের চিন্তাভাবনা, অভিব্যক্তি এবং কাজ সত্য পালনের এবং সত্যের বাস্তবিকতা যাপনের সাক্ষ্য বহন করে কিনা, তার উপর। যদি তোমার এই বাস্তবিকতা না থাকে বা তা যাপন না করো, তাহলে নিঃসন্দেহেই তুমি একজন মন্দ কর্ম সংঘটনকারী। ঈশ্বর এই মন্দ কর্ম সংঘটনকারীদের কীভাবে দেখেন? তোমার চিন্তাভাবনা এবং বাহ্যিক কাজকর্ম ঈশ্বরের সাক্ষ্য বহন করে না, আবার শয়তানকে অপমানিত বা পরাজিতও করে না; পরিবর্তে সেগুলি ঈশ্বরকে লজ্জিত করে, এবং সেগুলি ঈশ্বরকে লজ্জিত করে এমন কলঙ্কচিহ্নে খচিত হয়ে পড়ে। তুমি ঈশ্বরের সপক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছ না, ঈশ্বরের জন্য নিজেকে ব্যয় করছ না, আবার ঈশ্বরের প্রতি নিজের দায়িত্ব এবং বাধ্যবাধকতাগুলিও পূরণ করছ না; পরিবর্তে, তুমি তোমার নিজস্ব স্বার্থেই কাজ করে চলেছ। ‘নিজস্ব স্বার্থে’ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে? সঠিকভাবে বলতে গেলে, তা হল শয়তানের স্বার্থ। সুতরাং পরিশেষে, ঈশ্বর বলবেন, ‘অধর্মচারীর দল। আমার কাছ থেকে দূর হও’। ঈশ্বরের চোখে তুমি কোনো সৎকর্ম করোনি, বরং তোমার মনোভাব মন্দে পরিণত হয়েছে। তা যে ঈশ্বরের অনুমোদন অর্জনে ব্যর্থ হবে শুধু তা-ই নয়, তা নিন্দিতও হবে। ঈশ্বরের প্রতি যার বিশ্বাস এহেন, সে কী অর্জনের আকাঙ্ক্ষা করে? এই ধরনের বিশ্বাস কি পরিশেষে নিষ্ফল হবে না?” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র ভ্রষ্ট স্বভাব পরিহার করলে তবেই স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জন করা যেতে পারে)। “যারারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করে, তাদের সত্যের উপলব্ধি যতই গভীর বা অগভীর হোক না কেন, তাদের সত্যের বাস্তবিকতায় প্রবেশ করার জন্য অনুশীলনের সরলতম উপায় হল, সকলকিছুর মধ্যেই ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থের কথা চিন্তা করা, এবং স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষা, ব্যক্তিগত অভিপ্রায়, উদ্দেশ্য, অহংকার ও মর্যাদা পরিত্যাগ করা। ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থই সর্বপ্রথম—তেমনটাই মানুষের ন্যূনতম করণীয়” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র ভ্রষ্ট স্বভাব পরিহার করলে তবেই স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জন করা যেতে পারে)। এটি পড়ে দেখলাম যে ঈশ্বর এই ভিত্তিতে মানুষের মূল্যায়ন করেন না যে কে কতটা কষ্ট পাবে, বা নিজের দায়িত্ব পালনে সক্রিয় কি না। মানুষ তার কর্তব্যে সত্যের অনুশীলন করে কি না ঈশ্বর তা দেখেন, তাদের লক্ষ্য এবং সূচনা-বিন্দু গির্জার স্বার্থ রক্ষা করছে কিনা, এবং তারা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করে কি না। আপনার উদ্দেশ্য যদি হয় নিজেকে ভাল প্রমাণিত এবং লক্ষণীয় করে তোলা, ঈশ্বর কখনই তাতে সম্মতি দেবেন না, এবং তিনি অন্যায়কারী হিসাবে আপনার নিন্দা করবেন। আমি জানতাম নবাগতদের অনুশীলন করা গুরুত্বপূর্ণ। সেটা সিঞ্চনকারী কর্মীদের অভাবের সমস্যার সমাধান করতে পারত, এবং নবাগতরাও তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারত, সত্য এবং ঈশ্বরের কাজ অনুভব করতে শিখতে পারত। যার ফলে তারা দ্রুত পরিণত হত। কিন্তু আমি ঈশ্বরের অভিপ্রায় বা নবাগতদের জীবন বিবেচনা করিনি। আমি শুধু ভেবেছি নিজের কাজের, নিজের ভাবমূর্তির এবং মর্যাদার কথা, নবাগতদের প্রশিক্ষণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে চাইনি। আমি ঘৃণ্য ছিলাম। আমি আমার দায়িত্ব পালন করছিলাম না। আমি শুধু নাম আর মর্যাদা অনুসরণ করে, মন্দ কাজ করছিলাম।
পরে, ঈশ্বরের বাক্যর আরেকটি অংশ আমি পড়ি, “খ্রীষ্টবিরোধীরা সত্যের নীতি, ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্ব এবং ঈশ্বরের গৃহের কাজের ক্ষেত্রে কেমন আচরণ করতে হবে অথবা সম্মুখীন হওয়া বিষয়গুলির কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে—সেসব বিষয়ের প্রতি গুরুতর মনোযোগ দেয়। ঈশ্বরের ইচ্ছা কীভাবে পূরণ করা যায়, ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ করা থেকে কীভাবে বিরত থাকা যায়, কীভাবে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা যায়, বা ভাই ও বোনেদের কীভাবে উপকার করা যায়—এসব বিষয় তারা বিবেচনা করে না। তাহলে, খ্রীষ্টবিরোধীরা কী বিবেচনা করে? তাদের নিজেদের মর্যাদা ও সুনাম প্রভাবিত হবে কিনা, এবং সম্মানহানি হবে কিনা। যদি, সত্যের নীতি অনুসারে কাজ করলে, তা গির্জার কাজ ও ভাই-বোনেদের উপকারে লাগলেও, তা থেকে তাদের নিজেদের সুনাম হ্রাস পেতে পারে, এবং অনেকের চোখে তাদের প্রকৃত উচ্চতা এবং তাদের প্রকৃতির নির্যাস কেমন, তা উন্মোচিত হয়ে পড়তের পারে, তাহলে তারা অনিবার্যভাবেই সত্যের নীতি অনুসারে কাজ করবে না। যদি ব্যবহারিক কাজের ফলে আরও বেশি সংখ্যায় মানুষ তাদের বিষয়ে উচ্চ ধারণা পোষণ করে, তাদের সুনজরে দেখে, এবং তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়, অথবা তাদের কথাবার্তায় কর্তৃত্ব প্রকাশ পায় ও আরও বেশি করে লোকজন তাদের প্রতি সমর্পিত হয়, তাহলেই তারা সেইভাবে কাজ করাকে বেছে নেবে; নতুবা তারা কখনোই ঈশ্বরের গৃহ বা ভাই-বোনেদের কথা ভেবে নিজেদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হতে দেবে না। এ-ই হল খ্রীষ্টবিরোধীদের প্রকৃতির নির্যাস। তা কি স্বার্থপর এবং নীচ মনোবৃত্তি নয়?” (বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, নবম পরিচ্ছেদ: কেবলমাত্র নিজেদেরকে বিশিষ্ট ভাবে তুলে ধরতে এবং নিজেদের স্বার্থ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে পরিতুষ্ট করতেই তারা তাদের কর্তব্য করে; তারা কখনোই ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে না, এবং ব্যক্তিগত গৌরবের বিনিময়ে এমনকি সেই স্বার্থ বিক্রয় অবধি করে দেয় (তৃতীয় অংশ))। খ্রীষ্টবিরোধীদের স্বার্থপর উপায় এতে প্রকাশিত হয়। তারা সবার আগে নিজেদের রাখে গির্জার কাজ বা অন্যদের জীবনের বিবেচনা না করে। তারা শুধু নিজেদের কথা ভাবে। আমি উপলব্ধি করলাম যে আমি একজন খ্রীষ্টবিরোধীর মত। আমি জানতাম যে নবাগতদের অনুশীলন করা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আমি যখন দেখলাম নবাগতদের প্রশিক্ষণ সময় সাপেক্ষ, তখন আমি শুধু নিজের স্বার্থের কথাই ভেবেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল নবাগতদের প্রশিক্ষণে অত্যধিক সময় লাগে, অন্য কাজে বিলম্ব ঘটে এবং আমার কার্যকারিতা কমে, যা আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করেছিল। আমার মনে হয়েছিল এটি অন্যায়, নবাগতদের অনুশীলনের বিষয়ে আমি সরব হই, এবং এমন কি আমি নবাগতদেরও সাহায্য নিয়েছিলাম আমার কাজের ফলাফল উন্নত এবং আমাকে ভাল প্রমাণিত করতে। ঈশ্বরের বাক্যের প্রকাশের মাধ্যমে আমি দেখেছিলাম যে আমি স্বার্থপর। আমি নবাগতদের অনুশীলন করেছিলাম গির্জার কাজকে সমর্থন করতে নয়, নিজের অবস্থান ধরে রাখতে। এটি ছিল ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করা। আমাকে এটি বুঝতে সাহায্য করেছিল ঈশ্বরের বাক্য। পরে, আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা এবং অনুতাপ করেছি, এই বলে যে নবাগতদের প্রশিক্ষণ দিতে আমি ইচ্ছুক। পরে, আমি কয়েকজন নবাগতকে বলেছিলাম নিজেরাই সিঞ্চন শুরু করতে। তারা ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ ছিল। তারা বলেছিল, তারা জা্নত এই দায়িত্ব পালনে অসুবিধা আছে, কিন্তু তাদের দায়িত্ব পালনে তারা ঈশ্বরের উপর নির্ভর করত, এবং তাদের সমস্যায় তিনি সহায় হতেন। নতুনদের সক্রিয় মনোভাব দেখে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম, এবং তাদের আরও শেখাতে চেয়েছিলাম। আমি তাদের সিঞ্চনের কাজ উন্নত করার জন্য সহায়তা করতে চেয়েছিলাম। সিঞ্চনের কতকগুলি ভাল ধারণা লিখে আমি সেগুলি তাদের বলি যারা সবেমাত্র ঈশ্বরের কাজ স্বীকার করেছে তাদের কীভাবে সিঞ্চন করতে হয় তা দেখানোর জন্য। প্রতিটি সমাবেশের পর, আমি আলাপ-আলোচনা করে আমার লক্ষ্য করা সমস্যাগুলির সংক্ষিপ্তসার জানাই। কখনও কখনও, সিঞ্চনের কাজে তাদের অসুবিধা হলে, আমিও তাদের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করেছি। নবাগতদের অনুশীলনে আমি আর বিরোধিতা করিনি, এবং সেটাকে বোঝা বলে মনে করিনি। পরিবর্তে, আমার মনে হয়েছে যে এটি আমার দায়িত্ব।
কিন্তু, এই নবাগতদের মধ্যে আন্না নামে এক ভগিনী ছিলেন যিনি কখনোই কর্তব্যে ভার বহন করতেন না। তিনি তাঁর দায়িত্বের প্রয়োজনীয় মূল্য দেননি। কয়েক সপ্তাহ কেটে গেলেও, তাঁর নবাগতরা সাধারণ মৌলিক সত্য বুঝতে পারেনি যেমন ঈশ্বরের অবতাররূপ এবং কাজের তিনটি পর্যায়, এবং কেউ কেউ সমাবেশেও যেত না, তাই আমি তাঁকে অনুরোধ করি তাদের সমর্থন করতে। কিন্তু মাঝে মাঝে আমি তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে পারতাম না, এবং আমাকেই সব কাজ করতে হত। আন্নার প্রতি আমি ক্রুদ্ধ হয়ে উঠতাম। আমি মনে করতাম যে তিনি প্রকৃত কাজ করছেন না এবং আমাকে বাধা দিচ্ছেন। সে সময় আমি ব্যস্ত থাকলেও আমাকে তার সমস্যার সমাধান করতে হত। এটি ছিল দুটি দায়িত্ব পালন করার মত। তা ছিল আরও উদ্বেগের ও পরিশ্রমসাধ্য। আমি তাঁকে প্রশিক্ষণ না দিলেই বোধ হয় ভালো হত। উদ্বেগ থেকে অন্তত রক্ষা পেতাম। আন্না ভগিনীকে পরিত্যাগের কথা যখন ভাবছিলাম, ঈশ্বরের বাক্যের একটি অংশ আমার মনে পড়ল, “যখন তোমার মধ্যে স্বার্থপরতা এবং সুবিধাবাদের উদয় হয় এবং তুমি তা উপলব্ধি করতে পারো, তখন তোমার উচিত তা সমাধানের উদ্দেশ্যে সত্যের অনুসন্ধান করতে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা। প্রথম যে বিষয়টির প্রতি তোমায় সচেতন হতে হবে তা হল যে, সারমর্মগতভাবে, এই উপায়ে কাজ করা হল সত্যের নীতিগুলি লঙ্ঘন করা, যা গির্জার কাজের পক্ষে ক্ষতিকর, যা স্বার্থপর এবং ঘৃণ্য আচরণ, যা সাধারণ মানুষের করণীয় নয়। তোমার নিজস্ব স্বার্থ এবং স্বার্থপরতা সরিয়ে রেখে, গির্জার কাজের বিষয়ে ভাবা উচিত—ঈশ্বরের ইচ্ছা এমনই। প্রার্থনার মাধ্যমে আত্ম-প্রতিফলনের পর, যদি তুমি সত্যিই উপলব্ধি করো যে, এইভাবে কাজ করা আত্মসর্বস্ব ও ঘৃণ্য, সেক্ষেত্রে নিজের স্বার্থপরতা সরিয়ে রাখা সহজ হবে। যখন তুমি নিজের স্বার্থপরতা এবং সুবিধাবাদ সরিয়ে রাখবে, তখনই তুমি পায়ের তলায় মাটি পাবে, শান্তিতে, আনন্দে থাকবে, এবং অনুভব করবে যে, তুমি নিজেকে যেভাবে পরিচালনা করো, তাতে বিবেকবোধ এবং চেতনা থাকা উচিত, গির্জার কাজ সম্পর্কে চিন্তা করা উচিত, নিজের যে অভিপ্রায় এতই স্বার্থপর, ঘৃণ্য এবং বিবেকবোধ বা চেতনা বিরহিত, তা নিয়ে অনড় থাকা উচিত নয়। নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা, গির্জার কাজের কথা চিন্তা করা, এবং যা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে, তা করাই ধার্মিক এবং সম্মানজনক, এবং তা-ই তোমার অস্তিত্বকে মূল্যবাহী করবে। এইভাবে পৃথিবীতে বাস করলে বুঝবে, তুমি মুক্তমনা ও সৎ হচ্ছ, স্বাভাবিক মানবতা ও মানুষের প্রকৃত প্রতিমূর্তি যাপন করছ, তোমার যে শুধু স্বচ্ছ বিবেকবোধ রয়েছে, তা-ই নয়, বরং ঈশ্বর তোমার উপর যা কিছু প্রদান করেছেন, তুমি সেসকলের উপযুক্তও। তুমি যত বেশি এইভাবে জীবনযাপন করবে, ততই বেশি পায়ের তলায় মাটি পাবে, ততই বেশি শান্তিপূর্ণ ও আনন্দময় হয়ে উঠবে এবং ততই বেশি উজ্জ্বল অনুভব করবে। সেক্ষেত্রে, তুমি কি ঈশ্বরবিশ্বাসের সঠিক পথে পদার্পণ করোনি?” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, ঈশ্বরকে হৃদয়দানের মাধ্যমে সত্য অর্জন সম্ভব)। ঈশ্বরের বাক্য একটি সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ করেছে। আমাদের অবশ্যই গির্জার স্বার্থ রক্ষা করতে হবে, এবং কাজ করতে হবে নিজেদের বিবেক অনুযায়ী। ভগিনী আন্না সবেমাত্র ঈশ্বরের কাজ গ্রহণ করেছিলেন, তিনি সত্য উপলব্ধি করতে পারেননি, পারেননি দায়িত্বের ভার বুঝতে, তাই ভালোবাসা থেকেই আমার তাঁর সাথে আরও আলাপ-আলোচনা করা উচিৎ ছিল। এটা আমার দায়িত্ব ছিল। কিন্তু যখন তাঁর ত্রুটিগুলি আমার চোখে পড়ে, তাঁকে বিরক্তিকর মনে করে আমি তাঁকে পরিত্যাগ করতে চেয়েছি। আমার কোনও মানবিকতা ছিল না। পরে, তাঁর সাথে আলোচনার জন্য আমি ঈশ্বরের বাক্যের সহায়তা নিই। তিনি যখন এই বিষয়ে পরে লেখেন তখন আমি অনুপ্রাণিত মুগ্ধ হই। তিনি বললেন, “দায়িত্বভার না নিয়েই অতীতে আমি দায়িত্ব পালন করেছি। যারা সবেমাত্র ঈশ্বরের নতুন কাজকে গ্রহণ করেছে, বন্ধু হিসাবেই আমার তাদের দেখাশোনা করতে হবে, তাদের কাছে স্পষ্ট এবং সদয়ভাবে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করতে হবে, যাতে তারা জানতে পারে ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজই শুধুমাত্র আমাদের রক্ষা করতে পারে। আমাকে তাদের জায়গায় রেখে তাদের সমস্যাগুলোকে বুঝতে হবে। আমি যে দায়িত্ব পালন করি তা আমাকে অবশ্যই ভালবাসতে হবে।” পরে তিনি তাঁর দায়িত্বে আরও ভার বহন করেছিলেন। এক রাতে, মধ্য রাতের পর, আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করি তিনি কেন ঘুমোননি, এবং তিনি বললেন যে তিনি দেখছিলেন কারা সমাবেশে আসেনি যাতে তিনি পরে তাদের সাথে কথা বলতে পারেন। তিনি অন্যদের অবস্থার কথা আমাকে বলেন। কথা বলার সময় তাঁকে কাশতে দেখে আমি জিজ্ঞাসা করি, তাঁর ঠান্ডা লেগেছে কি না। তিনি বলেন যে তিনি এবং তাঁর পরিবার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি সুস্থ বোধ না করলেও, তিনি তাঁর দায়িত্ব সরিয়ে রাখেননি। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বললেন, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য না থাকলে, তিনি ভেঙ্গে পড়তেন। এই দায়িত্ব যদি তাঁকে অনুপ্রাণিত না করত, তাহলে হয়ত তাঁর মনোকষ্টেই মৃত্যু হত। ঈশ্বর তাঁকে রক্ষা করেছেন। আমি তাঁর আলাপ-আলোচনা শুনে কেঁদে ফেলি, এবং খুবই আলোড়িত হই। আমি বুঝি যে নবাগতদের বিকশিত অনুশীলন করা অর্থবহ। যদিও ভগিনী আন্না খুব অসুস্থ ছিলেন, তিনি হার মানেননি। ঈশ্বরের উপর নির্ভর করার ক্ষেত্রে তাঁর আত্মবিশ্বাস ছিল আরও গভীর। আমি জানতাম, এটি ছিল ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা অর্জিত ফলাফল। সপ্তাহ খনেক পরে তিনি সুস্থ হন। এই কথা শুনে আমি ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ বোধ করি। কিন্তু, একইসাথে নিজের স্বার্থপরতার জন্য লজ্জিত হই। আমার স্বার্থপরতার কারণে, ভগিনী আন্না তাঁর দায়িত্ব পালনের সুযোগ প্রায় হারাতে চলেছিলেন।
শীঘ্রই গির্জা আমাকে দুই নবাগতের প্রশিক্ষণে নিয়োগ করে। প্রথমে, আমি তাদের মনোযোগ সহকারে সাহায্য করি, কিন্তু অনতিবিলম্বেই দেখলাম আমার কাজে উন্নতি করতে সক্ষম হই নি। আমিও ভাবলাম যে এই দুই নবাগতকে ভালভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হলে অনেক বেশি কাজ, সময় এবং প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এবং আমি না ভেবে পারলাম না, “আমি কয়েকজন নবাগতকে প্রশিক্ষিত করেছি। সুতরাং, এদের নেতৃত্ব দিতে হলে আমাকে সিঞ্চনের কাজে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমার কাজ যদি ফলপ্রসূ না হয়, অন্যরা আমার সম্পর্কে কী ভাববে?” তাই, আমি এই দুই নবাগতকে প্রশিক্ষণের জন্য অন্যদের হাতে তুলে দিলাম। নির্দিষ্ট কিছু কারণে, তিন দিনেরও কম সময় পরে, তারা তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারল না। আরও দুঃখজনক হল, আমার প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ভগিনী জেনি, যিনি নিজেই সিঞ্চনের কাজ করতে পারতেন, দল ছেড়ে দেন এবং আমাকে ব্লক করে দেন। আমি জানতে পারি যে পারিবারিক সমস্যার কারণে তিনি দল ছেড়েছিলেন। তার ছেলে অসুস্থ থাকায় ডাক্তারের প্রয়োজন ছিল। সেই সময়ে, তিনি দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু আমি তাঁর সমস্যা জানতাম না বা তাঁকে সাহায্য করিনি। এমনকি যখন তিনি আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন, ব্যস্ততার অজুহাতে তখন আমি তাঁকে উপেক্ষা করেছিলাম। তার সমস্যাগুলি্র সমাধান না হওয়ায় তিনি নিষ্ক্রিয় হয়ে যান এবং নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। এসব ঘটনার সম্মুখীন হয়ে, আমার মন শূন্য হয়ে পড়ে এবং হৃদয় ব্যথিত হয়ে ওঠে। আমি নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করি এবং ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন তাঁর অভিপ্রায় বোঝার জন্য আমাকে পরিচালিত করেন।
পরে, আমার নেতা ঈশ্বরের বাক্যের একটি অংশ আমাকে পাঠান। “যদি কেউ বলে যে সত্যকে ভালোবাসে, যে সে সত্যের অন্বেষণ করে, কিন্তু নির্যাসগতভাবে, তার অন্বেষণের লক্ষ্য যদি হয় নিজেদেরকে গণ্যমান্য করে তোলা, আস্ফালন করা, লোকজনকে তার সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণে প্ররোচিত করা, নিজের স্বার্থ সিদ্ধ করা, এবং নিজ-নিজ দায়িত্বপালনের উদ্দেশ্য ঈশ্বরকে মান্য বা তুষ্ট করার বদলে যদি নিজেদের সম্মান ও মর্যাদালাভই হয়, তাহলে তাদের অন্বেষণ অবৈধ। এমনটা হয়ে থাকলে, গির্জার কাজের ক্ষেত্রে তাদের কাজকর্ম কি বাধা সৃষ্টি করে, না কাজের অগ্রগতিতে সাহায্য করে? তারা স্পষ্টতই বাধা সৃষ্টি করে; তারা কাজ এগিয়ে নিয়ে যায় না। কেউ কেউ গির্জার কর্ম করছে সম্পাদনের ধ্বজা উড়িয়েও নিজেদের মর্যাদা ও সম্মানেরই অন্বেষণ করে, নিজস্ব কার্যকলাপ চালিয়ে যায়, নিজেদের ক্ষুদ্র গোষ্ঠী, নিজস্ব ক্ষুদ্র রাজ্য গড়ে তোলে—এই ধরনের লোকেরা কি তাদের দায়িত্বপালন করছে? তাদের করা সমস্ত কাজই অপরিহার্যভাবে গির্জার কাজ ব্যাহত, বিশৃঙ্খল ও ক্ষতিগ্রস্ত করে। কী হয় তাদের এই সম্মান ও মর্যাদা অন্বেষণের পরিণতি? প্রথমত, ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিরা যেভাবে ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পান করে, সত্য উপলব্ধি করে—তা এই অন্বেষণে প্রভাবিত হয়, তা জীবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধা দেয়, তাদের ঈশ্বরবিশ্বাসের তাদের সঠিক পথে প্রবেশে বিরত করে, এবং বিপথে চালিত করে—যার ফলে মনোনীত ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সর্বনাশের মুখে পড়ে। এবং এতে গির্জার কাজের ক্ষেত্রে অবশেষে কী হয়? তা হল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, ক্ষতিসাধন এবং ভাঙন। মানুষের খ্যাতি ও মর্যাদার অন্বেষণ এই পরিণতিই বহন করে আনে। তারা যখন এইভাবে নিজেদের কার্য সম্পাদন করে, সেটাকে কি খ্রীষ্টবিরোধীদের পথে চলা হিসাবে অভিহিত করা যায় না? যখন ঈশ্বর মানুষকে সম্মান ও মর্যাদা একপাশে সরিয়ে রাখার নির্দেশ দেন, তা কিন্তু মানুষের বেছে নেওয়ার অধিকার বঞ্চিত করার জন্য নয়; বরং, এমন নির্দেশের কারণ হল—সম্মান ও মর্যাদার অন্বেষণ করতে গিয়ে মানুষ গির্জার কাজ ও মনোনীত ব্যক্তিদের জীবনে প্রবেশ ব্যাহত ও বিশৃঙ্খলাগ্রস্ত করে, তা এমনকি অন্যান্য লোকেদের ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পানে, সত্য উপলব্ধিতে, এবং এইভাবে, ঈশ্বরের পরিত্রাণ অর্জনকেও প্রভাবিত করতে পারে। এ এক অবিসংবাদিত সত্য। যখন মানুষ নিজেদের সম্মান ও মর্যাদার অন্বেষণ করে, তখন তারা যে সত্যের অন্বেষণ করবে না, নিজেদের দায়িত্ব বিশ্বস্তভাবে পালন করবে না, তা সুনিশ্চিত। তখন তারা শুধুমাত্র সম্মান ও মর্যাদা লাভের জন্যই কথাবার্তা বলবে, কাজ করবে, এবং, ন্যূনতম ব্যতিক্রম ছাড়াই, তাদের করা সমস্ত কার্যকলাপ এই সব জিনিসের স্বার্থেই সম্পাদিত হবে। এইভাবে আচরণ করা ও কাজকর্ম করাটা প্রশ্নাতীত ভাবেই খ্রীষ্ট-বিরোধীদের পথে চলা; ঈশ্বরের কাজে ব্যাঘাত ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা, এবং এমন কাজের বিভিন্ন ফলাফল হল স্বর্গ রাজ্যের সুসমাচার প্রচারের পথে এবং গির্জায় ঈশ্বরের ইচ্ছার উন্মুক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। সুতরাং, যেকেউ নিশ্চিতভাবেই বলতে পারে যে, সম্মান ও মর্যাদার অন্বেষণকারী লোকেরা যে পথে চলে, তা ঈশ্বরকে প্রতিরোধের পথ। এটা হল ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁকে প্রতিরোধ করা, তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা—এটা হল ঈশ্বরের প্রতিরোধ এবং বিরুদ্ধাচরণে শয়তানের সহযোগিতা করা। সম্মান ও মর্যাদা অন্বেষণকারী লোকেদের প্রকৃতি এমনই। যেসমস্ত লোকেরা নিজেদের স্বার্থ অন্বেষণ করে, তাদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা হল যে, তারা যে লক্ষ্যগুলি অন্বেষণ করে, সেগুলি শয়তানেরই লক্ষ্য—দুষ্ট ও অন্যায্য লক্ষ্য” (বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, নবম পরিচ্ছেদ: কেবলমাত্র নিজেদেরকে বিশিষ্ট ভাবে তুলে ধরতে এবং নিজেদের স্বার্থ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে পরিতুষ্ট করতেই তারা তাদের কর্তব্য করে; তারা কখনোই ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে না, এবং ব্যক্তিগত গৌরবের বিনিময়ে এমনকি সেই স্বার্থ বিক্রয় অবধি করে দেয় (প্রথম অংশ))। আমরা যদি নাম এবং মর্যাদা খুঁজি, আমাদের উদ্দেশ্য এবং সূচনা-বিন্দু হবে ঈশ্বরবিরোধী এবং এটি আসবে শয়তানের থেকে এবং আমরা গির্জার কাজে বাধা এবং বিঘ্ন সৃষ্টি করব। এটি হল মন্দ। আমি বুঝলাম যে নবাগতদের প্রশিক্ষণ কর্ষণে আমি কৌশল ব্যবহার করেছি, অনেকবার। যখনই ব্যাপারগুলো সময় এবং প্রয়াসসাধ্য হয়েছে, তখনই আমি এমন কাজ বেছে নিয়েছি যাতে আমি লক্ষনীয় হয়ে উঠতে পারি, এবং এমন কি নবাগতদের বোঝা মনে করে অন্যদের হাতে তুলে দিই। আমি জানতাম এতে অসুবিধা আছে। তাদের হস্তান্তর করার অর্থ অন্য প্রশিক্ষককে তাদের এবং তাদের অবস্থা জানতে হবে, এবং যদি তাদের প্রশিক্ষক নতুন হয়, তারা পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম নাও হতে পারে। কিন্তু আমি তাদের বাস্তব পরিস্থিতি বা তাদের অনুভূতি বিবেচনা করিনি। আমার কাজের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য সময় বাঁচাতে আমি নবাগতদের দূরে সরিয়ে রাখতাম। আমার হৃদয় ছিল শীতল। বিশেষ করে ভগিনী জেনির ব্যাপারে, যখন তিনি সমস্যায় পড়ে সাহায্য চেয়েছিলেন, আমি তাঁকে উপেক্ষা করেছি। আমার আচরণ তাঁর কাছে হৃদয়বিদারক ছিল। যতই এ বিষয়ে ভাবতাম ততই নিজেকে ঘৃণা করতাম। তথ্যের মাধ্যমে, আমি দেখেছি যে আমি সর্বত্র নাম এবং মর্যাদা অনুসরণ করেছি। আমি নবাগতদের প্রশিক্ষণের কাজ বিলম্বিত করেছি, এক নবাগতকে প্রত্যাহার করতে এবং তার রক্ষা পাওয়ার সুযোগ নষ্ট করে দেওয়ার কারণ হয়েছি। আমি মন্দ কাজ করছিলাম। এ ছিল সীমালঙ্ঘন! আমি অপরাধী বোধ করতে থাকি। কয়েকদিন ধরে, আমি সেই নবাগতকে অনেকবার ফোন করি এবং বার্তা পাঠাই। আমি চেয়েছিলাম তাকে খুঁজে পেতে এবং তার কাছে ক্ষমা চাইতে, কিন্তু যে ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে। আমি অনুশোচনা অনুভব করেছি, এবং দেখেছি যে আমার প্রয়াস ন্যক্কারজনক।
আমার কলুষিত স্বভাবের নিষ্পত্তি করতে, আমি ঈশ্বরের প্রাসঙ্গিক বাক্য অন্বেষণ করি। ঈশ্বরের বাক্য বলে, “যদিও বেশিরভাগ মানুষই বলে যে তারা সানন্দে সত্য অন্বেষণে ইচ্ছুক, কিন্তু যখন তা অনুশীলন করার বা তার মূল্য পরিশোধের কথা আসে, তখন কিছু লোক হাল ছেড়ে দেয়। সারমর্মগতভাবে, এ হল বিশ্বাসঘাতকতা। কোনো মুহূর্ত যত বেশি গুরুত্বপূর্ণ, ততই তোমার প্রয়োজন দৈহিক স্বার্থ পরিত্যাগ করে অন্তঃসারশূন্যতা ও অহংকার পরিহার করা; যদি তুমি তা করতে না পারো, তাহলে সত্য অর্জন করতে পারবে না। এবং, তা দর্শায় যে, তুমি ঈশ্বরের প্রতি অনুগত নও। মুহূর্ত যত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়, মানুষও যদি ততই সক্ষম হয় সমর্পণে, নিজেদের স্বার্থ, অহংকার ও দর্প পরিত্যাগে, এবং নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে সম্পাদনে, শুধুমাত্র তখনই তারা ঈশ্বরের স্মরণে থাকবে। এগুলি সকলই সৎকর্ম! মানুষ যে দায়িত্বই সম্পাদন করুক, বা যা-ই করুক না কেন, কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ—তাদের অহংকার ও দর্প, না ঈশ্বরের মহিমা? মানুষের কোনটিকে বেছে নেওয়া উচিত? (ঈশ্বরের মহিমা।) কোনগুলি বেশি গুরুত্বপূর্ণ—তোমার দায়িত্বসমূহ নাকি তোমার নিজস্ব স্বার্থসকল? তোমার দায়িত্ব পূরণ করাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, এবং সেগুলির প্রতি তুমি দায়বদ্ধ। … যখন তুমি সত্যের নীতি অনুসারে অনুশীলন করবে, তখন ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে, এবং তুমি ঈশ্বরের সাক্ষ্য বহন করবে, যা শয়তানকে অপমানিত করা ও ঈশ্বরের প্রতি সাক্ষ্য দেওয়ার একটি উপায়। ঈশ্বরের প্রতি সাক্ষ্য বহনের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার এবং শয়তানকে পরিত্যাগ ও প্রত্যাখ্যান করার উদ্দেশ্যে তোমার সংকল্প শয়তানকে প্রত্যক্ষ করানো: এ-ই হল শয়তানকে অপমানিত করা এবং ঈশ্বরের প্রতি সাক্ষ্য দেওয়া—এ হল এমন এক বিষয়, যা ইতিবাচক এবং ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। “যখন কেউ সত্যের অন্বেষণ করে, সে ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারে, ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্বের বিষয়ে মনযোগী হতে পারে। নিজেদের দায়িত্ব পালনের সময় সে প্রতিটি ক্ষেত্রেই গির্জার কাজ তুলে ধরতে পারে। তারা ঈশ্বরকে মহিমান্বিত করতে পারে ও তাঁর কাছে সাক্ষ্য দিতে পারে, তারা ভাই ও বোনেদের উপকার করে, তাদের সমর্থন করে, সংস্থানের যোগান দেয়, এবং ঈশ্বর গৌরব ও সাক্ষ্য অর্জন করেন, যাতে শয়তান লজ্জিত হয়। তাদের এই অন্বেষণের ফলস্বরূপ, ঈশ্বর এমন এক সত্তাকে অর্জন করেন যে প্রকৃতপক্ষেই ঈশ্বরে ভীত ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগে সক্ষম, অর্থাৎ ঈশ্বরকে উপাসনা করতে সক্ষম। তাদের এই অন্বেষণের ফলে ঈশ্বরের ইচ্ছাও সম্পাদিত হয় এবং তাঁর কর্মের অগ্রগতি ঘটে। ঈশ্বরের দৃষ্টিতে এই ধরনের অন্বেষণ ইতিবাচক, ন্যায়সঙ্গত। এই অন্বেষণ ঈশ্বরের মনোনীত লোকেদের পক্ষে যেমন অত্যন্ত উপকারী, তেমনই গির্জার কাজের পক্ষেও সম্পূর্ণভাবে উপকারী, এই অন্বেষণে গির্জার কাজকর্মে অগ্রগতি ঘটে, এবং তা ঈশ্বরের দ্বারাও প্রশংসিত” (বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, নবম পরিচ্ছেদ: কেবলমাত্র নিজেদেরকে বিশিষ্ট ভাবে তুলে ধরতে এবং নিজেদের স্বার্থ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে পরিতুষ্ট করতেই তারা তাদের কর্তব্য করে; তারা কখনোই ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে না, এবং ব্যক্তিগত গৌরবের বিনিময়ে এমনকি সেই স্বার্থ বিক্রয় অবধি করে দেয় (প্রথম অংশ))। ঈশ্বরের বাক্যে আমার হৃদয় আলোড়িত হয়। সম্মান এবং মর্যাদা অনুসরণ না করে আমার নিজের দায়িত্ব পালন করা উচিত। মুহূর্ত যত গুরুত্বপূর্ণ হবে, তত নিজের স্বার্থ এবং দম্ভ ছেড়ে দিয়ে নিজের দায়িত্ব ভালভাবে পালন করা উচিত। এটি একটি ভালো কাজ। এখন সুসমাচার ছড়িয়ে পড়ছে, এবং ঈশ্বর আশা করেন যে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ এটি প্রচার করবে এবং সাক্ষ্য দেবে, যাতে অন্ধকারে যারা বাস করে তারা ঈশ্বরের কন্ঠস্বর শুনতে পায়, ঈশ্বরের সান্নিধ্যে আসে এবং পরিত্রাণ গ্রহণ করে। তিনি আরও আশা করেন যে নবাগতরা যেন সুসমাচার প্রচার করার সময় নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারে। নবাগতদের বিকশিত করা করা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এত স্বার্থপর হয়ে আমি আর বাঁচতে পারিনি। আমাকে আমার লক্ষ্য পরিবর্তন করতে হল এবং একটি সৎ হৃদয় নিয়ে ঈশ্বরের সান্নিধ্যে জীবন যাপন। আমাকে নিয়ে যে যাই ভাবুক না কেন, আমি শুধু নবাগতদের প্রশিক্ষণ দিতে এবং আমার দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে চাই।
পরে, আমি ভ্রাতা ও ভগিনীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করেছি, নবাগতদের অনুশীলনের ক্ষেত্রে আমার ভুল দৃষ্টিভঙ্গির বিশ্লেষণ করেছি, এবং নবাগতদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছি। তাদের মধ্যে, এক ভ্রাতা কাজে ব্যস্ততার কারণে প্রতিটি সমাবেশের সঞ্চালনা করতে পারেননি। আমি বুঝছিলাম যে তাঁকে অনুশীলন করতে আরও সময় লাগবে, কিন্তু আমি প্রতিরোধ করিনি। এখন, নবাগতদের অনুশীলনের ক্ষেত্রে আমি আরও ধৈর্যশীল হয়েছি। তাদের যে কোনও সমস্যায়, আমি সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। শীঘ্রই, তাদের সিঞ্চনের ফলাফল আমার চেয়ে ভাল হয়, এবং আমি খুশি হই। এটি দেখে আমি নিরাপদ ও স্বস্তি অনুভব করি। আমি দেখেছি যে আমার কাজে আমি কতটুকু অর্জন করেছি তা ঈশ্বরের চাওয়া নয়। তিনি আশা করেন আমি যেন তাঁর অভিপ্রায়ের প্রতি বিবেচনা করে আমার দায়িত্ব পালন করি, আমার ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য পরিকল্পনা করে নয়, এবং নবাগতদের প্রশিক্ষণ দিই যাতে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে। যদিও সেই মাসে আমার সিঞ্চনের ফলাফল সেরা ছিল না, আমি খুব হতাশ হইনি, আমি আর তত মর্যাদা এবং সম্মান চাইনি, এবং নবাগতদের অনুশীলনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমি জানতাম যে এটি ঈশ্বরের কাজের ফল। ধন্যবাদ ঈশ্বর!
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।