দায়িত্বের জন্য সত্য অপরিহার্য

31-03-2023

২০২১ সালের মে মাসে, আমি একটি নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করি, এবং বেশ কয়েকটি গির্জার কাজের দায়িত্ব নিই। আমি ভাবছিলাম যে আমাকে সত্যিই এর মূল্য দিতে হবে এবং আমার দায়িত্ব ভালভাবে পালন করতে হবে, নাহলে ঈশ্বর সমর্থন করবেন না। তাই আমি গির্জার কাজে নিজেকে প্রতিদিন ব্যস্ত রাখতাম, গির্জার নেতাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে প্রচুর সময় এবং শক্তি ব্যয় করতাম, কীভাবে তাদের সুসমাচারের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় এবং নবাগতদের সিঞ্চন করতে হয়, সেই নিয়ে আলোচনা করতাম, এবং আমার অবসর সময়ে আমি নতুন বিশ্বাসীদের দেখতে যেতাম। আমার সময়সূচী প্রতিদিন এতটাই পূর্ণ ছিল যে মাঝে মাঝে আমার খাওয়ার সময় হত না, এবং এটা এত খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে আমার উপাসনা করারও সময় হত না। আমি ভেবেছিলাম যে আমাকে শুধু আমার দায়িত্বের জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে এবং ফল পাওয়ার জন্য একটি মূল্য দিতে হবে, তাহলেই আমি ঈশ্বরের সমর্থন এবং আশীর্বাদ লাভ করব এবং একটি ভাল গন্তব্য পাব।

আমার দায়িত্ব ভালভাবে পালন করার জন্য, আমি আমার সবকিছু দিয়ে দিয়েছিলাম, এমনকি আমার মধ্যাহ্নভোজের বিরতিগুলি নতুন বিশ্বাসীদের কাছে পৌঁছানোর জন্য বা সমাবেশের পরিকল্পনা করার জন্য ব্যয় করতাম, কখনই চিন্তা করিনি যে আমি কতটা ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। পরে, গীর্জাগুলির জল দেওয়ার লোকের প্রয়োজন হয়েছিল, তাই আমি অবিলম্বে ভাল প্রার্থীদের সন্ধান করি এবং কাকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে তা ঠিক করি। নবাগতদের উৎসাহের অভাব দেখে, আমি ছুটে যেতাম ঈশ্বরের বাণী খুঁজতে তাদের সাথে ভাগ করে নেব বলে যাতে তারা তাদের দায়িত্বের অর্থ খুঁজে পায়। বেশ কিছুদিন কঠোর পরিশ্রমের পর, আমরা অবশেষে জল দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত লোক পেয়ে যাই। কিন্তু আমি সন্তুষ্ট ছিলাম না। আমার মনে হয় যে আমাকে আরও মূল্য দিতে হবে, আরও আসল কাজ করতে হবে, এবং ভ্রাতাদের ও ভগিনীদের নেতৃত্ব দিতে হবে আরও নতুন সদস্য আনার জন্য, যাতে আমি আরও অবদান রাখতে পারি এবং ঈশ্বরের সমর্থন পাই, এবং আমার একটি ভাল গন্তব্য হয়। কিন্তু যখনই আমি আমার দায়িত্ব পালনের পথে বাঁধার সম্মুখীন হতাম, তখনই আমি নেতিবাচক ও দুর্বল বোধ করতাম। উদাহরণ স্বরূপ, যখন আমি গির্জার নেতাদের তাদের কাজে বিভ্রান্ত দেখতাম বা নবাগতদের তাদের দায়িত্ব পালনে উৎসাহের অভাব দেখতাম, বা যখন জিনিসগুলি খুব ভালভাবে পরিকল্পনা করা হত না, আমার মনে হত আমি সেই দায়িত্বের যোগ্য নই। আমি যদি কিছুই অর্জন না করতে পারি, তাহলে আমার ভাল গন্তব্য হবে কীভাবে? সেই ভাবনাটা আমাকে সবসময় চাপে রাখত এবং আমি ক্লান্ত, বিষণ্ণ, এবং বেশ চিন্তিত বোধ করতাম। আমি আমার সমস্যা সম্পর্কে সচেতন ছিলাম না, এবং আমি শুধু তখনই ঈশ্বরের বাণী পড়তাম যখন আমি খারাপ অবস্থায় থাকতাম। বেশিরভাগ সময়ই আমি আমার দায়িত্ব নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। আমার মনে হয়েছিল ঈশ্বরের বাণী খাওয়া ও পান করা এবং সেগুলি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ এবং আমার দায়িত্বের জন্য আমি পর্যাপ্ত সময় পাব না, তাই আমি এটা বন্ধ করে দিই। মাঝে মাঝে আমি সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতাম, কিন্তু তারপর আমি সারাদিনের কাজের পরে ক্লান্ত হয়ে পড়তাম এবং আমার ঘুম পেয়ে যেত। তাই আমি এটা করতাম না।

আমি আমার জীবনে প্রবেশ নিয়ে কিছু করছিলাম না, কিন্তু শুধু উপর উপর দিয়ে চেষ্টা করছিলাম, এবং সেই অবস্থায় আমার দায়িত্ব পালনের ফলে আমি ক্লান্ত বোধ করতাম। একদিন আমি ভাবলাম যে আমার এইভাবে দায়িত্ব পালন করা ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে কি সঙ্গতিপূর্ণ, তিনি কি এটি সমর্থন করেন? আমার মনে হয়েছিল কিছু একটা গণ্ডগোল হচ্ছে, এবং আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে সমস্যাটা আমার মনোভাবের। আমি শুধু কাজেই ব্যস্ত ছিলাম এবং আমার জীবনে প্রবেশের বিষয়টিকে উপেক্ষা করছিলাম। আমি সত্যিই কখনও এটা ভাবিনি যে আমি ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে কীভাবে আমার দায়িত্ব পালন করব। আমি ঈশ্বরের সামনে এসে প্রার্থনা করলাম, “ঈশ্বর, আমি যদি ভুল পথে থাকি, দয়া করে আমাকে আলোকিত করুন এবং আমাকে দেখান আমি কোথায় ভুল করছি। হে ঈশ্বর, আমি চাই আপনি সন্তুষ্ট হউন, কিন্তু আমি জানি না আমি কী করব। আপনার পথপ্রদর্শন আমার দরকার।”

একদিন এক ভগিনী আমাকে বললেন যে তিনি জানতেন না কীভাবে সত্যের সন্ধান করতে হয় যখন তাঁর সমস্যা হয় এবং তিনি নিশ্চিত ছিলেন না কীভাবে তিনি তাঁর দায়িত্ব ভালভাবে পালন করবেন। তিনি তাঁর নিজের অবস্থা বুঝতে পারছিলেন না, তাই তিনি চেয়েছিলেন যে আমি যেন তাঁকে বলি কীভাবে আরও ভালভাবে এটা বোঝা যায় এবং যখন তিনি ভ্রষ্ট হবেন তখন তিনি কী করবেন। আমি তাঁকে বললাম যে আমাদের নিজেদের অবস্থা বুঝতে হলে, আমাদের নিজেদের চিন্তাভাবনাকে অনুধাবন করতে হবে, এবং দেখতে হবে আমাদের চিন্তাভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি, লক্ষ্যগুলি এবং আচরণগুলি ঈশ্বরের ইচ্ছা পূরণ করে কিনা। তারপর, তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন নিজেকে অনুধাবন করার জন্য এবং চেনার জন্য আমি কীভাবে নিজের চিন্তাভাবনাকে বুঝতে পেরেছি। আমি একদম স্তব্ধ হয়ে গেলাম। ওর প্রশ্নটা আমার কাছে গালে একটা চড়ের মত মনে হল। আমি নিজেই তো সেটা করিনি, তাহলে আমি কীভাবে ওঁকে সাহায্য করতে পারি? আমি অনেক কাজ করেছিলাম, কিন্তু আমি আমার দায়িত্বের মধ্যে সত্যকে সন্ধান করছিলাম না। আমি অনেক সমস্যার মধ্যে পড়েছিলাম এবং প্রচুর ভ্রষ্টাচার প্রকাশ করেছিলাম, যেমন নতুন বিশ্বাসীদের সমর্থন করার সময় ধৈর্য এবং ভালবাসার অভাব বোধ করছিলাম, এবং নেতাদের কাজ দেখে তাদের কর্মক্ষমতার সমালোচনা করছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল কিছুই আমার হিসেব অনুযায়ী হচ্ছিল না, কিন্তু আমি আমার নিজের সম্পর্কে ভাবিনি বা জানিনি। আমি ভেবেছিলাম যে আমাকে শুধু আমার দায়িত্ব পালন করতে হবে, এবং যদি আমি আরও বেশি কিছু করি, তাহলে ঈশ্বর তা সমর্থন করবেন এবং সেটাই যথেষ্ট ছিল। তাই আমি সম্পূর্ণভাবে জীবনের প্রবেশকে একপাশে সরিয়ে রেখেছিলাম এবং ঈশ্বরের বাণীর জন্যেও সময় ব্যয় করিনি। আপাতদৃষ্টিতে আমি সর্বদাই ব্যস্ত থাকতাম, কিন্তু আন্তরিকভাবে আমি ঈশ্বরের জন্য সময় ব্যয় করছিলাম না। আমি শুধু কাজ করে যাচ্ছিলাম, এবং সেগুলো শেষ করছিলাম। আমি যখন খারাপ অবস্থায় ছিলাম তখন আমি নিজেকে অনুধাবন করিনি বা সত্যের সন্ধান করিনি। আমি আমার জীবনের প্রবেশকে অবহেলা করছিলাম এবং ঈশ্বরের সাথে আমার সঠিক সম্পর্ক ছিল না। আমি আমার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলাম, নিজের মতো করে, যেভাবে চেয়েছি, সেভাবে। সেই সময়ে আমি আমার নিজের অবস্থা নিয়ে চিন্তিত বোধ করি। আমি ভাবলাম, ঈশ্বর আমাকে কীভাবে দেখছেন, এবং তিনি আমার সাধনা কে সমর্থন করছেন কি না।

আমার সমস্যা দেখে সেই ভগিনীকে আমি বললাম, “আমারও একই সমস্যা আছে। আমি নিজেকে শুধু কাজে ব্যস্ত রাখি, কিন্তু নিজের অবস্থা বুঝতে পারি না। অনেক সময় আমি দেখি যে আমি সঠিক অবস্থায় নেই, কিন্তু আমি সেটা উপেক্ষা করি। আমি নিজেকে অনুধাবন করি না বা জীবনে প্রবেশ করি না।” তারপর আমরা একসঙ্গে ঈশ্বরের বাণীর একটি অংশ পড়লাম। “তুমি যদি ঈশ্বরের সামনে সত্যিই তোমার হৃদয়কে প্রশান্ত রাখতে চাও, তাহলে তোমাকে অবশ্যই সচেতনভাবে সহযোগিতা করতে হবে। এর অর্থ হল তোমাদের প্রত্যেককে উপাসনার জন্য কোনও সময় রাখতে হবে, এমন একটি সময় যখন তোমরা মানুষজন, ঘটনাসমূহ, এবং জিনিসগুলি এক পাশে রেখে তাঁর প্রতি মন দেবে; তোমার হৃদয় স্থির করো এবং ঈশ্বরের সামনে নিজেকে শান্ত করো। প্রত্যেককে অবশ্যই স্বতন্ত্র উপাসনা-সম্বন্ধীয় নোট, ঈশ্বরের বাণী সম্পর্কে তাদের জ্ঞান এবং তাদের আত্মা কি ভাবে চালিত হয় তা লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে, সেগুলি গভীর জ্ঞানপূর্ণ বা ভাসা-ভাসা যাই হোক না কেন; প্রত্যেককে অবশ্যই সচেতনভাবে ঈশ্বরের সামনে তাদের হৃদয়কে শান্ত রাখতে হবে। যদি তুমি সত্যিকারের আধ্যাত্মিক জীবনের জন্য প্রতিদিন এক বা দুই ঘণ্টা একান্তভাবে নিয়োগ করতে পারো, তাহলে তোমার সেই দিনটির জীবন সমৃদ্ধ হবে আর তোমাদের হৃদয় উজ্জ্বল এবং পরিষ্কার অনুভব করবে। তোমরা যদি প্রতিদিন এই ধরনের আধ্যাত্মিক জীবনযাপন করলে, তাহলে তোমার হৃদয় আরও বেশী করে ঈশ্বরের অধিকারে ফিরে আসতে সক্ষম হবে, তোমার আত্মা দিনে দিনে আরও শক্তিশালী হবে, তোমাদের অবস্থা ক্রমাগত উন্নত হবে, পবিত্র আত্মার নির্দেশিত পথে চলতে তুমি আরও বেশি সক্ষম হবে, এবং ঈশ্বরের আশীর্বাদ তোমাদের উপরে আরও বেশি করে বর্ষিত হবে। তোমাদের আধ্যাত্মিক জীবনের উদ্দেশ্য সচেতনভাবে পবিত্র আত্মার উপস্থিতি অর্জন করা। এটা নিয়ম মান্য করা বা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করা নয়, কিন্তু সত্যি অর্থে ঈশ্বরের সাথে মিলিতভাবে কাজ করা, যথাযথভাবে নিজের শরীরকে নিয়মানুবর্তিত করা—এটাই মানুষকে করতে হবে, সেইজন্য তোমাদের সর্বাধিক প্রচেষ্টার সাথে এটি করতে হবে(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, একটি সাধারণ আধ্যাত্মিক জীবন মানুষকে সঠিক পথে নিয়ে যায়)। এটা আমাকে দেখতে সাহায্য করেছে যে আমি যতই ব্যস্ত থাকি না কেন আমার একটি সঠিক আধ্যাত্মিক জীবন এবং সময় দরকার ঈশ্বরের বাণীর জন্য, এবং আমার ধারণা ও কর্ম ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা তা অনুধাবন করার জন্য। কিন্তু আমি ঈশ্বরের বাণী পড়ার বা চিন্তা করার উপর মনোনিবেশ করছিলাম না। এমনকি আমি অনুভব করেছি যে আমার উপাসনাগুলি এমন সময় নষ্ট করছে যা আমি কাজের জন্য ব্যবহার করতে পারি। আমি আমার দায়িত্বের মধ্যে সত্য সন্ধান করছিলাম না বা ভাবছিলাম না ঈশ্বরের যা দরকার আমি তা করছি কি না। আমি যখন সমস্যায় পড়েছিলাম তখন আমি সত্যের সন্ধান করিনি, কেবলই কাজের উপর মনোনিবেশ করেছি, আমার নিজের বুদ্ধি এবং অভিজ্ঞতা দিয়ে জিনিসগুলি করার চেষ্টা করেছি। মাঝে মাঝে যখন আমি এমনিতেই খারাপ অবস্থায় ছিলাম এবং আমি আত্মার কাজ অনুভব করতে পারছিলাম না, আমি তখনও নিজেকে জোর করে চালিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। আমাকে দেখে বেশ ব্যস্ত লাগত, কিন্তু আমার হৃদয় খালি এবং অন্ধকার ছিল, এবং আমি কিছুই শিখছিলাম না। ঈশ্বরের বাণী পড়ার পর, আমি বুঝতে পারলাম এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তাঁর বাণী খাওয়া এবং পান করা, উপাসনা করা এবং নিজেকে অনুধাবন করা। আমরা যদি ঈশ্বরের বাণী না পড়ি, আমরা সেগুলোর নিরিখে আমাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনাগুলি এবং আচরণগুলি বিশ্লেষণ করতে পারব না, এবং আমরা জানব না যে আমরা কী ধরনের ভ্রষ্টাচার প্রদর্শন করব। তাহলে আমাদের ভ্রষ্ট স্বভাব কখনই পরিবর্তিত হবে না এবং আমরা কখনই ঈশ্বরের সমর্থন লাভ করব না। এই সবকিছুর উপলব্ধি আমাকে কিছুটা জাগিয়ে তুলল। আমি যে অবস্থাগুলোতে ছিলাম তা দেখে আমিই ভয় পেয়েছিলাম এবং আমি সেভাবে আর থাকতে চাইনি, বরং আমার দায়িত্ব পালন করার সময় আমার আধ্যাত্মিক জীবনের উপর মনোনিবেশ করতে চেয়েছিলাম, ঈশ্বরের বাণীতে প্রবেশ করতে চেয়েছিলাম এবং তার চর্চা করতে চেয়েছিলাম।

সেই সম্পর্কে আমরা ঈশ্বরের কিছু বাণী পড়েছিলাম। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “তুমি যদি ঈশ্বরের দ্বারা প্রশংসিত হতে চাও, তাহলে প্রথমে তোমাকে শয়তানের অন্ধকার প্রভাব থেকে সরে আসতে হবে, তোমার হৃদয়কে উন্মুক্ত করে ঈশ্বরের কাছে সম্পূর্ণরূপে নিবেদন করতে হবে। তুমি এখন যা করছ ঈশ্বর কি সেসবের প্রশংসা করবেন? তুমি কি তোমার হৃদয়কে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করেছো? যেসব কাজ তুমি করেছ সেগুলি কি ঈশ্বর তোমার থেকে চান? সেগুলি কি সত্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ? সব সময় নিজেকে পরীক্ষা করো এবং ঈশ্বরের বাক্যগুলি ভোজন এবং পানে মনোনিবেশ করো; তোমার হৃদয়কে তার কাছে নিবেদন করো, তাকে অন্তর থেকে ভালোবাসো, এবং ঈশ্বরের জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেকে ব্যয় করো। যারা এমন আচরণ করে তারা অবশ্যই ঈশ্বরের প্রশংসা লাভ করবে(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, অন্ধকারের প্রভাব থেকে সরে এসো, ঈশ্বর তোমাদের অর্জন করবেন)। “যদি মানুষ ঈশ্বরের বাক্যের মধ্যে বসবাস করে, তাহলে পবিত্র আত্মা তাদের সঙ্গে থাকবেন এবং তাদের উপর কার্য করবেন। যদি মানুষ ঈশ্বরের বাক্যের মধ্যে বসবাস না-করে, তাহলে তারা শয়তানের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। যদি মানুষ ভ্রষ্ট স্বভাবের হয়, তাহলে তাদের কাছে পবিত্র আত্মার উপস্থিতি অথবা কার্য থাকে না। যদি তুমি ঈশ্বরের বাক্যের সীমানার মধ্যে বাস করো, এবং যদি তুমি তেমন অবস্থায় থাকো যেমন ঈশ্বর চান, তাহলে তুমি তাঁরই একজন, এবং তাঁর কার্য তোমার উপর সঞ্চালিত হবে; যদি তুমি ঈশ্বরের প্রয়োজন অনুসারী গণ্ডির মধ্যে বাস না করো, বরং শয়তানের দাসত্বে বসবাস করো, তাহলে তুমি অবশ্যই শয়তানের কলুষের মধ্যে বাস করছো। কেবলমাত্র ঈশ্বরের বাক্যের মধ্যে বসবাস করে এবং তোমার হৃদয়কে তাঁর কাছে সমর্পণ করেই তুমি তাঁর চাহিদাগুলি পূরণ করতে পারবে; তোমাকে অবশ্যই ঈশ্বরের যা বলেন সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে, তাঁর কথনগুলিকে তোমার অস্তিত্ব এবং জীবনের বাস্তবতার ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, কেবল তখনই তুমি ঈশ্বরের আপন ব্যক্তি হয়ে উঠবে(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, অন্ধকারের প্রভাব থেকে সরে এসো, ঈশ্বর তোমাদের অর্জন করবেন)। আমি ঈশ্বরের বাণীর আলোকে নিজেকে অনুধাবন করলাম। আমি আমার দায়িত্ব পালনে উৎসাহী ছিলাম, কিন্তু আমি সবকিছুই করছিলাম আমার নিজের ধারণা অনুযায়ী। আমি ঈশ্বরের বাণী থেকে দূরে সরে ছিলাম, সত্যের সন্ধান করছিলাম না, এবং কেবলমাত্র আমার কাজের প্রতি মনোনিবেশ করেছিলাম। সেটা ঈশ্বরের ইচ্ছা ছিল না। আমি ভাবতাম যে যতক্ষণ আমি আমার দায়িত্ব পালনে আমার সমস্ত কিছু দিয়ে দিচ্ছি এবং বেশি মূল্য দিচ্ছি, ঈশ্বর সমর্থন করবেন, কিন্তু সেটা ঘটনা ছিল না। ঈশ্বর শুধু উপর উপর অবদান দেখেন না, বরং তিনি আমাদের হৃদয়কে দেখেন, এবং আশা করেন যে আমরা তাঁর কথা মান্য করতে পারব, আমাদের দায়িত্বের মধ্যে সত্যের সাধনা করব, তাঁর বাণীকে বাস্তবে প্রয়োগ করব এবং শয়তানের ভ্রষ্টাচারের বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারব। কিন্তু আমি শুধু কাজগুলো সম্পন্ন করতে চেয়েছিলাম। আমি সত্য সন্ধান করিনি, বা আমি যে ভ্রষ্টাচার প্রদর্শন করেছি তা নিয়ে ভাবিনি বা ঈশ্বরের বাণী নিয়ে চর্চা করিনি। তখনই আমি যে দেখলাম আমি ভুল পথে আছি, এবং সেই পথে থেকে যাওয়া বিপজ্জনক হবে-ঈশ্বর কখনই তা সমর্থন করবেন না।

পরে আমি ঈশ্বরের বাণীর একটি অনুচ্ছেদের কথা ভাবলাম যা পৌলকে প্রকাশ করে, যেটা আমাকে আমার নিজের সাধনায় সমস্যাগুলোকে বুঝতে সাহায্য করেছে। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “ইদানিং অধিকাংশ মানুষই এই ধরনের পরিস্থিতিতে থাকে: ‘আশীর্বাদ অর্জনের জন্য, আমাকে অবশ্যই নিজেকে ঈশ্বরের জন্য ব্যয় করতে হবে এবং তাঁর জন্য মূল্য দিতে হবে। আশীর্বাদ অর্জন করতে হলে আমাকে ঈশ্বরের জন্য অবশ্যই সমস্ত কিছু পরিত্যাগ করতে হবে; তাঁর অর্পিত দায়িত্বভার অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে, এবং নিজের কর্তব্য ভালোভাবে পালন করতে হবে।’ এখানে আশীর্বাদ লাভের অভিপ্রায়টাই মুখ্য, এ হল ঈশ্বরের কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে পুরস্কার এবং খেতাব লাভের উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের জন্য নিজেকে ব্যয় করার একটি উদাহরণমাত্র। এই ধরনের মানুষের অন্তরে সত্য থাকে না, আর তাদের উপলব্ধিও নিশ্চিতভাবে শুধুমাত্র কিছু মতবাদমূলক কথা দিয়েই পরিপূর্ণ, যেগুলো তারা সর্বত্র জাহির করে বেড়ায়। তাদের পথ হল পৌলের পথ। এই ধরনের লোকদের কাছে, বিশ্বাস হল অবিরামভাবে শ্রমসাধ্য কাজ, এবং মনের গভীরে তাদের এই ধারনা রয়েছে যে, তারা যত বেশি সেই কাজ করবে, ততই ঈশ্বরের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রমাণিত হবে; যেন সেই কাজে তারা যত বেশি পরিশ্রম করবে, তিনি ততই নিশ্চিতরূপে সন্তুষ্ট হবেন; এবং তারা যত বেশি করে সেই কাজ করবে, ততই বেশি করে ঈশ্বরের সামনে খেতাব লাভের যোগ্য হবে, এবং ততই বেশি করে আশীর্বাদ লাভ করবে। তারা ভাবে যে, তারা যদি যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে, প্রচার করতে পারে, এবং খ্রীষ্টের জন্য মৃত্যুবরণ করতে পারে, তারা যদি নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে পারে, এবং ঈশ্বরের অর্পিত সমস্ত দায়িত্ব সম্পন্ন করতে পারে, তাহলে তারাই ঈশ্বরের মহানতম আশীর্বাদ অর্জন করবে এবং নিশ্চিতভাবেই তাদের খেতাব দেওয়া হবে। এ হল অবিকল পৌলের কল্পনা ও চাহিদা; ঠিক এই পথেই সে হেঁটেছিল, এবং এই ধরনের চিন্তাভাবনার দ্বারা নির্দেশিত পথেই সে ঈশ্বরের সেবার কাজ করেছিল। এই প্রকার চিন্তাভাবনা এবং উদ্দেশ্য কি শয়তানোচিত স্বভাব থেকে উদ্ভূত নয়? এটা ঠিক পৃথিবীর মানুষের মতোই, যারা বিশ্বাস করে যে পৃথিবীতে থাকাকালীন তাদের অবশ্যই জ্ঞান অন্বেষণ করতে হবে, এবং তা অর্জন করলেই তারা সকলের থেকে আলাদা হতে পারবে, কর্মকর্তা হয়ে উঠবে ও মর্যাদা লাভ করবে; তারা মনে করে মর্যাদা লাভ করলেই তারা নিজেদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করতে পারবে এবং বাড়ি ও ব্যবসাক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় সমৃদ্ধি আনতে পারবে। সমস্ত অবিশ্বাসীরা কি এই পথেই হাঁটে না? বিশ্বাসের ক্ষেত্রে এই শয়তানোচিত প্রকৃতির আয়ত্তাধীন লোকেরা কেবল পৌলের মতোই হতে পারে। তারা মনে করে: ‘আমাকে অবশ্যই সবকিছু পরিহার করে ঈশ্বরের জন্য নিজেকে ব্যয় করতে হবে; তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হবে এবং পরিশেষে, আমি অসামান্য পুরস্কার এবং অনুপম কিরীট লাভ করতে পারব।’ এটা ঠিক পৃথিবীর মানুষ, যারা পার্থিব বস্তুরই কামনা করে, তাদের মতো মনোভাব; তাদের সাথে এদের বিন্দুমাত্র ফারাক নেই, আর তাদের প্রকৃতিও অভিন্ন। মানুষের মধ্যে এহেন শয়তানোচিত প্রকৃতি বিদ্যমান থাকলে, তারা জ্ঞানার্জনের অন্বেষণ, শিক্ষাগ্রহণ ও মর্যাদা লাভ করে সকলের থেকে আলাদা হয়ে উঠতে চাইবে; তারা যদি ঈশ্বরবিশ্বাসী হয়, তবে তারা পরম পুরস্কার পেতে ও সুমহান আশীর্বাদ লাভ করতে চাইবে। ঈশ্বরবিশ্বাসের সময়ে মানুষ যদি সত্যের অন্বেষণ না করে, তাহলে তারা এই নিশ্চিতভাবেই এই পথ অবলম্বন করবে; এ হল এক অপরিবর্তনীয় সত্য, এক প্রাকৃতিক নিয়ম(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, পিতরের পথে চলার উপায়)। আমি ভাবতাম আমার দায়িত্বে আমার লক্ষ্য ছিল ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা, কিন্তু ঈশ্বরের বাণী পড়ার পর দেখলাম যে আমি আসলে ভুল ছিলাম। আমাকে আমার দায়িত্ব সম্পর্কে উৎসাহী দেখালেও, আমি সত্য লাভ বা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করছিলাম না। আমি ঈশ্বরের আশীর্বাদ এবং একটি ভালো গন্তব্য চাইছিলাম। আমি ভেবেছিলাম যে যতক্ষণ আমি আমার কাজ করছি এবং মূল্য পরিশোধ করছি, কঠোর পরিশ্রম করছি এবং আরও কষ্ট সহ্য করছি, ঈশ্বর সমর্থন করবেন, এবং আমি একটি ভালো গন্তব্য পাব। ঈশ্বরের আশীর্বাদের জন্য, আমি আমার আহার স্থগিত করতে এবং কম ঘুমাতে পারি, এবং এমনকি সময় বাঁচানোর জন্য উপাসনা ও ঈশ্বরের বাণী পড়তেও কৃপণ হতে পারি। আমি আমার কাজের প্রচেষ্টার বিনিময় ভবিষ্যতে একটি সুন্দর গন্তব্য চেয়েছিলাম, ঠিক একজন বসের জন্য কাজ করা একজন কর্মচারীর মতো। এটা যেন একজন নিয়োগকর্তার কাছ থেকে বেতন পাওয়ার জন্য পরিশ্রম করার মত। আমি আমার দায়িত্বে ঈশ্বরের সাথে লেনদেন করছিলাম, ঈশ্বরকে প্রতারণা করছিলাম। ঈশ্বর চান যে আমরা আন্তরিকভাবে আমাদের দায়িত্ব পালন করি, লেনদেন বা দাবিদাওয়ার মাধ্যমে নয়, কিন্তু আমি ঈশ্বরের সাথে চুক্তি করার চেষ্টা করছিলাম, আমার প্রচেষ্টার বিনিময়ে স্বর্গের একটি টিকিট পাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। পৌলেরও সেটাই সাধনা ছিল। পৌল শুধুমাত্র কাজের প্রতি মনোযোগী ছিল, মুকুট পেতে চেয়েছিল, পুরস্কৃত হতে চেয়েছিল, কিন্তু তিনি সত্যের সাধনা করেননি বা ঈশ্বরের কথাকে মোটেও গুরুত্ব দেননি, এমনকি তিনি নিজেকেও পরিবর্তন করার চেষ্টা করেননি। তিনি একটি ঈশ্বর-বিরোধী পথে ছিলেন। আমিও তাই ছিলাম-আমি অনেক কাজ করেছি, এবং আশা করেছি ঈশ্বরের কাছ থেকে আরও আশীর্বাদ পাব যাতে আমি আরও ভাল একটা গন্তব্য পেতে পারি। আমি দেখেছিলাম যে আমি সত্যের সন্ধান করছিনা, বা ঈশ্বরকে আসলে ভালোবাসছিনা, তাহলে আমি কীভাবে ঈশ্বরের সমর্থন পেতে পারি? ঈশ্বরের বাণী না পড়ে, আমি আমার নিজের ভ্রষ্টাচারকে জানতাম না বা জানতাম না যে আমি ঈশ্বরের পথ থেকে আমার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম। পরে আমি নেতাদের ভুল পথে চলার পরিণতির কথা ভাবি এবং ঈশ্বরের বাণীর এই অনুচ্ছেদটি পাই। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “নেতা ও কর্মী শ্রেণীর মানুষের উত্থানের কারণ কী এবং তাদের উত্থান কীভাবে হল? বৃহৎ পরিসরে, তাদের ঈশ্বরের কাজের জন্য দরকার হয়, আর স্বল্প পরিসরে, তাদের গির্জার কাজের জন্য প্রয়োজন হয়, ঈশ্বরের মনোনীত লোকজনের কাছে এই মানুষেরা প্রয়োজনীয়। … নেতা ও কর্মী এবং ঈশ্বরের মনোনীত অন্যান্য লোকজনের মধ্যে পার্থক্যটা রয়েছে প্রথমোক্তদের দ্বারা সম্পাদিত কর্তব্যের সবিশেষ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে। এই সবিশেষ বৈশিষ্ট্যটি মূলত তাদের নেতৃত্বের ভূমিকার ক্ষেত্রেই দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, গির্জায় যত লোকই থাকুক না কেন, সেই নেতাই হল তাদের প্রধান। তাহলে সদস্যদের মধ্যে এই নেতা কী ভূমিকা পালন করে? তারা গির্জায় ঈশ্বরের মনোনীত সকলকে নেতৃত্ব দেয়। তাহলে পুরো গির্জা জুড়ে তাদের কী প্রভাব থাকে? যদি সেই নেতা ভুল পথ গ্রহণ করে, তাহলে গির্জায় যারা ঈশ্বরের মনোনীত, তারাও সেই নেতাকে অনুসরণ করে ভুল পথে চলবে, যার ফলে তাদের সকলের মধ্যে গুরুতর প্রভাব পড়বে। পৌলের উদাহরণ দেখো। সে তার প্রতিষ্ঠিত বহু গির্জা এবং ঈশ্বরের মনোনীত লোকজনদের নেতৃত্ব দিয়েছিল। তার বিপথগামী হওয়ার সাথে সাথে তাকে অনুসরণ করা গির্জা এবং ঈশ্বরের মনোনীত লোকজনও বিপথে গিয়েছিল। সুতরাং, নেতারা বিপথগামী হলে, শুধু যে তারাই এতে প্রভাবিত হয় তা নয়, বরং যে গির্জা এবং ঈশ্বরের মনোনীত লোকজন তাদের অনুসরণ করে, তারাও প্রভাবিত হয়(বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, প্রথম পরিচ্ছেদ: তারা মানুষকে স্বপক্ষে নিয়ে আসতে চায়)। ঈশ্বরের বাণী আমাকে বলে যে একজন নেতা হিসাবে আমি যে পথটি নিয়েছিলাম তা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সত্যের প্রতি আমার মনোভাব, আমি যে পথ নিয়েছি এবং যেভাবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি সে সবের সরাসরি প্রভাব ছিল অন্যদের প্রবেশের উপর। আমি যদি ভুল পথ নিতাম, তাহলে আমি আমার সাথে অন্যদেরও সেই পথই দেখাতাম। নেতা হিসেবে, আমার দায়িত্ব ছিল সত্যের সাধনায় ভ্রাতা ও ভগিনীদের পথ দেখানোর, কিন্তু আমি সত্যের সাধনার পরিবর্তে কাজের প্রতি মনোযোগী ছিলাম। আমি ঈশ্বরের বাণী পড়া এবং সত্যের সন্ধান করা কে একপাশে সরিয়ে রেখেছিলাম, এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলাম। আমি আমার নিজের জীবনের প্রবেশের দিকে মনোনিবেশ করিনি, তাহলে আমি কিভাবে ভ্রাতা-ভগিনীদের সত্যের সাধনা করার জন্য পরিচালিত করতে পারি? আমি তাদের পৌল-এর মতো একই পথে পরিচালিত করব, এবং তারা যদি সত্যের সাধনা না করার কারণে শেষ হয়ে যায়, তাহলে সেটা আমার তরফে অসততা হবে। এই ধরনের কাজ ভাল করবে না, বরং খারাপ করবে এবং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কাজ করবে! আমি এটাও বুঝতে পেরেছিলাম যে এটা কতটা বিপজ্জনক—শুধু অন্যদের নেতৃত্ব দেওয়া উপর উপর কাজ করার, কিন্তু নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রাখা ঈশ্বর এবং সত্য থেকে। ঈশ্বরের বাণী আমার ভ্রষ্টাচার প্রকাশ করেছে এবং আমাকে সাধনার সঠিক পথ এবং একজন নেতার দায়িত্ব দেখিয়েছে। আমি জানতাম যে আমাকে ঈশ্বরের বাণীগুলি পড়ার জন্য আরও মনোনিবেশ করতে হবে, সত্যের অনুসন্ধান এবং আমার ভ্রষ্টাচারের সমাধান করতে হবে। তাহলে আমি আর ভুল পথে যাব না।

আমি পরে আরো কয়েকটা অংশ পড়ি। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “পৌল এবং পিতরের গন্তব্যের পরিমাপ করা হয়েছিল তারা ঈশ্বরসৃষ্ট জীব হিসাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারত কিনা তা অনুসারে, তাদের অবদানের পরিমাণ অনুসারে নয়; তাদের গন্তব্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তারা শুরু থেকে যা অন্বেষণ করেছিল সেই অনুসারে, তারা কত পরিমাণে কাজ করেছিল, বা তাদের সম্পর্কে অপরের অনুমান অনুসারে নয়। এবং সেহেতু, ঈশ্বরের সৃষ্ট জীব হিসাবে নিজের কর্তব্য সক্রিয়ভাবে পালন করার সন্ধানই হল সাফল্যের পথ; প্রকৃত ঈশ্বরপ্রেমের পথের অন্বেষণই হল সঠিকতম পথ; পুরানো স্বভাব পরিবর্তনের সন্ধান করা, এবং বিশুদ্ধ ঈশ্বরপ্রেমের অন্বেষণই হল সাফল্যের পথ। সাফল্যের এরকম পথই হল ঈশ্বরের সৃষ্ট এক জীবের জন্য তার আসল কর্তব্য ও সেইসাথে তার মূল রূপের পুনরুদ্ধারের পথ। এই পথ হল পুনরুদ্ধারের, এবং তা আদি হতে অন্ত পর্যন্ত ঈশ্বরের সকল কার্যের অভীষ্ট লক্ষ্যও। মানুষের অন্বেষণ যদি ব্যক্তিগত অতিরিক্ত চাহিদা এবং অযৌক্তিক আকাঙ্ক্ষায় কলুষিত হয়, তবে তা থেকে অর্জিত প্রভাবে মানবস্বভাবের পরিবর্তনসাধন ঘটবে না। তা পুনরুদ্ধারের কাজের সাথে বিরোধপূর্ণ। তা নিঃসন্দেহে পবিত্র আত্মা দ্বারা সম্পন্ন কাজ নয়, এবং তাই তা থেকে প্রমাণিত হয় যে এই প্রকার অন্বেষণ ঈশ্বরের দ্বারা অনুমোদিত নয়। ঈশ্বরের দ্বারা অনুমোদিত নয় এমন কোনো অন্বেষণের কী-ই বা তাৎপর্য রয়েছে?(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সাফল্য অথবা ব্যর্থতা নির্ভর করছে মানুষ কোন পথে চলবে তার উপর)। “আমি, বয়স, জ্যেষ্ঠতা, দুর্ভোগের পরিমাণ, করে কারোর গন্তব্য নির্ধারণ করি না, এবং তারা কতমাত্রায় অনুকম্পা উদ্রেক করে সেই অনুসারে তো একেবারেই করি না, করি তারা সত্যের অধিকারী কি না, তা অনুসারে। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তোমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে, যারা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসরণ করে না, তাদেরও দণ্ড দেওয়া হবে। এ এক ধ্রুব সত্য। অতএব, যাদেরকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তারা সবাই ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণতা এবং তাদের অসংখ্য মন্দ কাজের প্রতিফল স্বরূপই সেই দণ্ডভোগ করে(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, তোমার নিয়তির জন্য যথাযথ সৎকার্যসমূহ প্রস্তুত করো)। এটা আমাকে বুঝতে সাহায্য করেছে যে ঈশ্বর আমাদের পরিণাম নির্ধারণ করেন না আমাদের অবদান আমাদের কাজ, বা কষ্টের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে। তিনি কখনই বলেননি যে আমরা কতটা কাজ করেছি তার উপর ভিত্তি করে তিনি আমাদের আশীর্বাদ করেন বা আমাদের পরিশ্রম আমাদের একটি ভাল গন্তব্য দিতে পারে। কিন্তু আমি ভাবতাম যতক্ষণ আমি কঠোর পরিশ্রম করছি, আমার দায়িত্ব পালন করছি এবং আরও বেশি অবদান রাখছি, আমি ঈশ্বরের সমর্থন আর একটা ভাল গন্তব্য পাব। তাই আমি গির্জার কাজে এবং অন্যদের সমস্যা সমাধানে খুবই উৎসাহী ছিলাম, এবং আমি আমার দায়িত্বের জন্য পুরোপুরি কষ্ট সহ্য করতে ইচ্ছুক ছিলাম। কিন্তু ঈশ্বরের বাণী পড়ে আমি বুঝতে পারি যে আমার দৃষ্টিভঙ্গি ভুল ছিল, যে ঈশ্বর আমাদের পরিণাম নির্ধারণ করেন আমরা সত্যের সাধনা করি কিনা এবং আমাদের মধ্যে ব্যক্তিগত পরিবর্তন হচ্ছে কি না, তার উপর ভিত্তি করে। ঠিক পৌল-এর মতো—তিনি অনেক পরিশ্রম করেছিলেন, অনেক কাজ করেছিলেন, অনেক কষ্ট সহ্য করেছিলেন, এবং বেশ কয়েকটি গীর্জা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। লোকে মনে করে যে তিনি বিশাল অবদান রেখেছেন, কিন্তু তার প্রেরণা ছিল পুরস্কৃত হওয়া, মুকুট লাভ করা, তাই তাঁর করা সমস্ত প্রচেষ্টার একটিও ঈশ্বরের সমর্থন লাভ করেনি। তিনি ঈশ্বরের দ্বারা নির্মূল হন কারণ তিনি তাঁর স্বভাব পরিবর্তন করেননি। কিন্তু যদিও পিতর খুব বেশি কাজ করেননি, তিনি ঈশ্বরের কথার উপর ভিত্তি করে সত্য-সন্ধান এবং নিজেকে অনুধাবন করার উপর মনোনিবেশ করেছিলেন। তিনি ঈশ্বরের বাণীগুলিকে বাস্তবে প্রয়োগ করেছিলেন এবং স্বভাবগত পরিবর্তন অর্জন করেছিলেন। তাঁর সাধনা ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। আমি কখনই মানুষের পরিণাম নির্ধারণের জন্য ঈশ্বরের মান বুঝতে পারিনি, কিন্তু বিশ্বাস নিয়ে আমার নিজস্ব ধারণা ছিল। আমি ভেবেছিলাম কঠোর পরিশ্রম আমাকে ঈশ্বরের রাজ্যে নিয়ে যাবে, এবং আমি আমার তুচ্ছ প্রচেষ্টার বিনিময়ে একটি সুন্দর গন্তব্য চেয়েছিলাম। সেই সাধনার সাথে ঈশ্বরের কোন যোগই ছিল না। ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য বিশুদ্ধ হৃদয়ে আমি সত্যের সাধনা করিনি, এবং এই ধরনের সাধনার কারণে আমার বিশ্বাস অর্থহীন হয়ে পড়ে। আমাকে দেখে যতই ব্যস্ত মনে হোক না কেন, আমি আমার ভ্রষ্ট স্বভাব পরিবর্তন করছিলাম না। আমি তখনও অহংকার, লোভ, দম্ভ, হিংসা এবং ধূর্ততায় পরিপূর্ণ ছিলাম। এত শয়তানী ভ্রষ্টাচারে পরিপূর্ণ আমার মতো একজন ভাল গন্তব্য কিভাবে পেতে পারে? এবং আমার দায়িত্বের মধ্যে, আমি নিজেকে অনুধাবন বা ঈশ্বরের ইচ্ছা সন্ধানের দিকে মনোনিবেশ করিনি। ঈশ্বর যা চান তা আমি করছিলাম না, তাহলে কীভাবে আমার কাজ ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে পারে? ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করার মাধ্যমে আমি আমার অন্বেষণের ভুল পদ্ধতি সম্বন্ধে কিছুটা উপলব্ধি করি। সেটা না হলে আমি অন্ধের মত শুধুই পরিশ্রম করে যেতাম, প্রতারণা এবং লেনদেনের মানসিকতায় পূর্ণ থাকতাম, এবং সেই সাধনা আমাকে কেবল ঈশ্বরের প্রতিরোধে পরিচালিত করত এবং শেষে আমাকে দণ্ডিত হতে হত। সত্যের সাধনার গুরুত্ব দেখার পর, আমি আমার অনুচিত সাধনা বদলাতে শুরু করলাম, কারন আমি আর শুধু শ্রম করতে চাইছিলাম না।

তারপর থেকে আমি যতই ব্যস্ত থাকি না কেন, ঈশ্বরের বাণী খাওয়ার এবং পান করার জন্য আমি প্রতিদিন সময় নিতাম এবং আমার দায়িত্বের মাধ্যমে ঈশ্বরের বাণী অনুভব করার চেষ্টা করতাম। আমি যখন সমস্যায় পড়তাম তখন আমি সত্যের নীতিগুলি সন্ধান করতাম, এবং অন্যদের সমস্যার সমাধানে সাহায্য করার জন্য আমি সত্যকে নিয়ে আলাপআলোচনা করতাম। ঈশ্বরের বাণী চর্চা করে, আমি কম বিভ্রান্ত হতাম এবং আমার দায়িত্ব পালনে সঠিক অভিমুখ পেতাম। এবং আগে যখন আমি ব্যস্ত ছিলাম, আমি উদ্বিগ্ন হতাম যে আমি দ্রুত কাজ করছি না, যে আমি যদি ভাল না করি তবে এটি আমার গন্তব্যে প্রভাব ফেলবে, কিন্তু এখন যখন আমার অনেক কাজ থাকে আমি এতটা উদ্বিগ্ন হই না। ঈশ্বর কী চান তা দেখার জন্য প্রথমে আমি সত্যের নীতিগুলি সন্ধান করি, এবং যখন আমি সেইভাবে অনুশীলন করি, তখন আমি তাঁর পথপ্রদর্শন দেখতে পাই, এবং আমি আরো ভালো ফলাফল পাচ্ছি। এবং এক সময়ে, আমি লক্ষ্ করি যে ভ্রাতারা ও ভগিনীরা তাদের দায়িত্ব নিয়ে প্রায় একরকম ভাবে নিষ্ক্রিয় এবং আমি বেশ হতাশ হয়ে পড়ি এবং রেগে যাই। আমি তাদের সাথে আলাপআলোচনা করে এত সময় কাটিয়েছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তাদের মধ্যে কয়েকজন তখনও বেশ নিষ্ক্রিয় ছিল এবং সেটি আমাদের অগ্রগতিকে রুখে দিয়েছিল। তাই আমি প্রার্থনা করে ঈশ্বরের সামনে হাজির হলাম যে আমি কেন রেগে যাচ্ছিলাম এবং আমি আসলে কীসের দ্বারা অনুপ্রাণিত হচ্ছিলাম সে সম্পর্কে জানার জন্যে। ঈশ্বরের বাণী পড়ে, আমি দেখলাম আমি সেরকম অনুভব করছিলাম কারণ আমি ভেবেছিলাম ভাল ফলাফল না হলে আমাকে খারাপ দেখাবে এবং আমি হয়ত আমার পদ হারাতে পারি। তখনই আমি বুঝলাম যে সেটা ছিল আমার ভ্রষ্টাচার। সত্যের জন্য আমাকে দেহাসক্তি ত্যাগ করতে হয়েছিল। আমার খ্যাতি ও মর্যাদা কিছুই ছিল না। অন্যরা আমাকে নিয়ে কি ভাবছে বা আমার নেতৃত্বের ভূমিকা আছে কিনা, আমার দায়িত্ব পালন করা দরকার ছিল। সেটাই আমার কাছে সব ছিল। তাই আমি তাদের নিষ্ক্রিয় হওয়ার পিছনে কারণ অনুসন্ধান করতে লাগলাম এবং দেখতে লাগলাম তাদের দায়িত্বের প্রতি তাদের কী মনোভাব। আমরা একসাথে ঈশ্বরের বাণী পড়ি, এবং আলাপআলোচনার মাধ্যমে, প্রত্যেকের অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি হয়, এবং তারা আরো বেশি অর্জন করতে থাকে।

এই অভিজ্ঞতা আমাকে দেখিয়েছে যে সত্যের সাধনাই হল সত্য বিশ্বাসের এবং ঈশ্বরকে অনুসরণ করার একমাত্র পথ। আমি শুধু কাজ করে সন্তুষ্ট হতে পারি না, বরং আমাকে ঈশ্বরের বাণী পড়তে হবে, তাঁর কাজ কে অনুভব করতে হবে এবং স্বভাবগত পরিবর্তনের চেষ্টা করতে হবে।

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

মায়ানমারবাসী এক খ্রীষ্টানের মৃত্যুর পর নরকের অভিজ্ঞতা

ছোটবেলাতেই খ্রীষ্টধর্ম সম্পর্কে আমার আগ্রহ জন্মায়, কিন্তু আমার পরিবার যেহেতু বৌদ্ধ ছিল, তাই আমি খ্রীষ্টান হয়ে যাইনি। তখন নরকের কথা আমি...

ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতার কঠিন পথ

আমি ২০২০-এর জুলাইতে গির্জার নেত্রী নির্বাচিত হই এবং সিস্টার চেন শির সাথে গির্জার কাজের দায়িত্ব পাই। যখন দায়িত্ব পালন শুরু করি, অনেক নীতিই...

খ্রীষ্টবিরোধী স্বভাব সম্পর্কে আমার সামান্য জ্ঞান

আমি ২০২১ সালে গির্জার নেতা নির্বাচিত হলাম। কিছুকাল যাবৎ সিঞ্চনের কাজে আমার সমস্যা হচ্ছিল। কিছু জলদানকারী নিয়মিত সমাবেশে আসছিল না, আর এলেও...

Leave a Reply

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন