আমি কেন মনের কথা বলতে সাহস করিনি

04-09-2023

গত বছর মে মাসের মাঝামাঝি, আমাদের নেত্রী জেন আমাকে বলেন লরা-র বিষয়ে একটা মূল্যায়ন লিখতে। বলেন লরা অহংকারী এবং নিজের নৈতিকতার বিষয়ে উদ্ধত, সবসময় নেতা ও কর্মীদের সমালোচনা করে। ও ভালো মানুষ নয়। লরা সম্পর্কে নেত্রীর মূল্যায়ন আমার থেকে ভিন্ন ছিল। আগে যখন লরার সাথে আমার আলাপ-পরিচয় হয়েছিল, লরা এরকম ছিল না যেমনটা নেত্রী বলছিলেন। কিন্তু আমার চিন্তা হচ্ছিল যে যদি আমি সত্যি কথা বলি, তাহলে নেত্রী বলবেন আমার বিচক্ষণতার অভাব আছে, আমার সম্পর্কে তাঁর খারাপ ধারণা হবে। তাহলে হয়তো তিনি আমাকে ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দেবেন না। তাই আমি নেত্রীর ইচ্ছার কাছে নতিস্বীকার করি, তাঁর মূল্যায়ন সমর্থন করে বলি, লরা নির্বিচারে অন্যদের সমালোচনা করে। এর ঠিক পরেই লরাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে আমি জানতে পারি যে জেন ব্যবহারিক কাজ পরিচালনায় ব্যর্থ এবং একজন অনুপযুক্ত নেত্রী বলে লরা তার নামে রিপোর্ট করেছিল। তাই জেন তাকে এই অভিযোগ করে দমিয়ে দিয়েছিল ও শাস্তি দিয়েছিল যে সে নেতা ও কর্মীদের সমালোচনা করে মন্তব্য করেছে। এর পরে, একজন অনুপযুক্ত নেত্রী হিসেবে জেন অনাবৃত হয় এবং তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এ কথা শোনার পর, মূল্যায়ন লেখার সময় আমার আচরণের কথা মনে করে আমার অনুশোচনা হলো। ঈশ্বরের বাক্য পড়ে এবং আত্ম-অনুসন্ধান করে আমি বুঝতে পারলাম যে নেত্রীর কাছে নিজের ভাবমূর্তি ভালো করার জন্য আমি নিজের ইচ্ছাতেই লরাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছি। আমার মানবতার অভাব ছিল। যত ভাবছিলাম ততই নিজের প্রতি বিরক্তি ও বিতৃষ্ণা জাগছিল। আমি আমার ব্যর্থতার অভিজ্ঞতার উপর একটি প্রবন্ধ লেখার কথা ভাবলাম, যাতে আমি ভ্রাতা ও ভগিনীদের সতর্ক করতে পারি। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছিল। ভাবলাম, “যদি মূল্যায়নের পিছনে আমার অন্যায় উদ্দেশ্য আর ভ্রষ্ট আচরণের কথা লিখে রাখি, তাহলে ভ্রাতা-ভগিনীরা কী ভাববে? যদি তারা আমাকে অসম্মান করে, প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে আমার সুনাম নষ্ট হয়ে যাবে, তাদের সামনে আমি আর মুখ দেখাতে পারব না।” আরো ভাবলাম আমি লরার কত কাছের ছিলাম আর সে আমাকে কতটা বিশ্বাস করত। সে কি ভাববে যদি জানতে পারে আমি তার মূল্যায়ন করতে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছি? সে কি হতাশ হয়ে আমার সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করবে? ঊর্ধ্বতনরা যদি জানতে পারে, তারা বলবে না আমার চরিত্র খারাপ, আর আমার দায়িত্ব বদলে দেবে না? এসব ভেবে আমার খুব খারাপ লাগছিল। আমি সত্যিই একটি লজ্জাজনক কাজ করেছি যা সম্পর্কে কথা বলাও কঠিন। আমি যা করেছি তার মুখোমুখি না হয়ে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলাম। আমি এটা নিয়ে লিখতে চাইনি।

আমি বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করি। কেন আমি ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা সবাইকে বলতে চাইনি? কেন আমি নিজেকে প্রকাশ করতে রাজি নই? কোন ভ্রষ্ট স্বভাব আমাকে আটকাচ্ছে? একদিন, অভিজ্ঞতার সাক্ষ্যের একটি ভিডিও দেখার সময়, ঈশ্বরের বাক্যের একটি অংশ দেখলাম। “খ্রীষ্টবিরোধীরা প্রসঙ্গ নির্বিশেষে, যে দায়িত্বই সম্পাদন করুক না কেন, তারা এমন অনুভূতি প্রদানে সচেষ্ট থাকবে যেন তারা দুর্বল নয়, তারা সর্বদাই শক্তিশালী, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, কখনোই নেতিবাচক নয়। তাদের বাস্তবিক আত্মিক উচ্চতা বা ঈশ্বরের প্রতি বাস্তব মনোভাব তারা কখনোই প্রকাশ করে না। প্রকৃতপক্ষে, হৃদয়ের গভীরে তারা কি সত্যিই বিশ্বাস করে যে, তাদের পক্ষে করা সম্ভব নয় এমন কোনো কাজই নেই? তারা কি আসলেই বিশ্বাস করে যে তারা দুর্বলতা ও নেতিবাচকতাবিহীন, বা দুর্নীতির বহিঃপ্রকাশমুক্ত? একেবারেই তা নয়। তারা ছদ্ম-অভিনয়, বিষয়সকল গোপন করে রাখায়, বেশ পারদর্শী। তারা লোকজনকে নিজেদের শক্তিশালী ও সম্মানীয় দিকটাই দেখাতে ভালোবাসে; তাদের যে দিকটা দুর্বল ও আসল, সেই দিকটা তারা লোকেদের দেখাতে চায় না। তাদের উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার: তারা সাধারণভাবে নিজেদের মুখরক্ষা করতে চায়, মানুষের হৃদয়ে তাদের স্থান রয়েছে রক্ষা করতে চায়। তারা ভাবে যে, যদি অপরের সামনে তারা নিজস্ব নেতিবাচকতা এবং দুর্বলতার কথা খোলাখুলি প্রকাশ করে, যদি তারা নিজেদের অবাধ্য এবং ভ্রষ্ট দিকটা প্রকাশ করে ফেলে, তবে তা তাদের উচ্চতা এবং মর্যাদার পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর হবে—মূল্যের চেয়েও বেশি সমস্যা হবে। তাই তারা বরং তাদের দুর্বলতা, বিদ্রোহী মনোভাব, এবং নেতিবাচকতা নিজেদের মধ্যেই কঠোরভাবে আটকে রাখবে। এবং যদি এমন কোনো দিন আসে, যেদিন প্রত্যেকেই তাদের দুর্বল এবং অবাধ্য দিকটি প্রত্যক্ষ করে, যখন দেখে যে তারা দুর্নীতিগ্রস্ত, একেবারেই পরিবর্তন হয়নি তাদের, তখনও তারা অভিনয়টা চালিয়েই যেতে থাকবে। তারা ভাবে যে, যদি তারা স্বীকার করে যে তাদের স্বভাব দুর্নীতিগ্রস্ত, যে তারা সাধারণ মানুষ, এমন একজন যে ক্ষুদ্র এবং তুচ্ছ, তখন তারা লোকেদের হৃদয়ে নিজেদের স্থান হারিয়ে ফেলবে, প্রত্যেকের শ্রদ্ধা ও উপাসনা হারিয়ে ফেলবে, এবং এইভাবে, পূর্ণত ব্যর্থ হয়ে পড়বে। এবং সেহেতু, যা-ই হোক না কেন, তারা মানুষের কাছে সহজে উন্মুক্ত হবে না; যা-ই হোক না কেন, তারা অন্য কাউকে তাদের ক্ষমতা ও মর্যাদা প্রদান করবে না; পরিবর্তে, তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে, এবং কখনোই হাল ছেড়ে দেবে না(বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, নবম পরিচ্ছেদ: কেবলমাত্র নিজেদেরকে বিশিষ্ট ভাবে তুলে ধরতে এবং নিজেদের স্বার্থ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে পরিতুষ্ট করতেই তারা তাদের কর্তব্য করে; তারা কখনোই ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে না, এবং ব্যক্তিগত গৌরবের বিনিময়ে এমনকি সেই স্বার্থ বিক্রয় অবধি করে দেয় (দশম অংশ))। ঈশ্বরের বাক্য থেকে শিখলাম খ্রীষ্টবিরোধীরা ভান করতে পটু। তারা চায় না তাদের অন্ধকার দিক কেউ দেখুক, আর তাদের দুর্নীতি ও বিরোধিতার কথা তারা প্রকাশ্যে বলে না। তারা সবসময় তাদের ব্যর্থতা এবং ত্রুটির কথা বলা এড়িয়ে চলে। তারা সবসময় মানুষকে তাদের চরিত্রের ইতিবাচক, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং প্রভাবশালী দিকগুলো দেখায়, যাতে মানুষের সম্মান ও তাদের হৃদয়ে স্থান পায়। বুঝতে পেরেছিলাম আমার আচরণ একজন খ্রীষ্টবিরোধীর আচরণ থেকে আলাদা নয়। ভণ্ড নেতার সাথে মিলে লরাকে অপবাদ দেওয়ায় আমি আমার কলুষিত স্বভাব চিনেছিলাম, কিন্তু সবার সামনে তা প্রকাশে রাজি ছিলাম না, কারণ এটা ছিল ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা। তখন যদি আমি আমার উদ্দেশ্য এবং দুর্নীতি সবার সামনে প্রকাশ করতাম, সবাই আমার বিচক্ষণতার অভাব আর নীচু হওয়ার মনোভাব দেখতে পেত, কিভাবে একজনকে অহংকারী, উদ্ধত বলে অপবাদ দিয়েছি, যিনি আসলে একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি, নেতার ভণ্ডামি প্রকাশ করেছিলেন, কিভাবে তাকে খারাপ বলে উপস্থাপন করেছিলাম, ঠিক ও ভুলের পার্থক্য করতে পারিনি। ভয় পেয়েছিলাম সবাই আমাকে অপমান ও প্রত্যাখ্যান করবে। হয়তো আমার দায়িত্বও কেড়ে নেওয়া হবে। দেখেছিলাম কিভাবে আমি প্রতিপত্তি ও মর্যাদাকে সত্যের চর্চা এবং সৎ হওয়ার থেকে বড় করে দেখাছি। আমি স্রেফ সত্য বা ইতিবাচকতাকে ভালোবাসিনি। আমি খ্রীষ্টবিরোধীদের মতো প্রতিপত্তি ও ভান পছন্দ করতাম। আমি অবিশ্বস্ত ছিলাম।

পরে আমি ঈশ্বরের বাক্যে আরও দুটি অনুচ্ছেদ পাই: “সকলেই ভুল করে। সকলেরই দোষ-ত্রুটি আছে। এবং প্রকৃতপক্ষে সকলেরই একই ভ্রষ্ট স্বভাব রয়েছে। নিজেকে অন্যদের চেয়ে অধিক মহান, নিখুঁত, এবং সহৃদয় মনে কোরো না; তা একেবারেই অযৌক্তিক হবে। মানুষের ভ্রষ্ট স্বভাব ও সারমর্ম এবং মানুষের ভ্রষ্টতার প্রকৃত চেহারা একবার তোমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেলে তুমি আর নিজের ভুল ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করবে না, বা তুমি অন্যের ভুলকেও তাদের বিরুদ্ধে পোষণ করবে না—সঠিকভাবে উভয়েরই সম্মুখীন হতে পারবে। একমাত্র তবেই তুমি অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন হয়ে উঠবে এবং নির্বোধ কার্যকলাপ করবে না, যা তোমাকে একজন জ্ঞানী মানুষে পরিণত করবে। যারা জ্ঞানী নয় তারা সকলেই মূর্খ, এবং তারা তাদের সামান্য ভুলের মধ্যেই বাস করে আর আড়ালে গোপন কৌশলে ব্যাপৃত থাকে। তা অত্যন্ত বিতৃষ্ণার উদ্রেক করে(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, যে নীতিগুলি অনুসারে আচরণ করা উচিত)। “যখন মানুষ নিজেদের সর্বদা মুখোশের আড়ালে রাখে, সর্বদা নিজেদের পরিচ্ছন্নরূপে প্রকাশ করে, সর্বদা এমন ভান করে যাতে অন্যরা তাদের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করে ও তাদের দোষ বা ঘাটতি দেখতে না পায়, সর্বদা তাদের সেরা দিকটা মানুষের কাছে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে, এরকম স্বভাবকে কী বলে? এটা হল ঔদ্ধত্য, কপটতা, ভণ্ডামি, এটা শয়তানের স্বভাব, এটা এমন কিছু যা মন্দ। শয়তানোচিত শাসনব্যবস্থার সদস্যদের কথাই ধরো: তারা পর্দার আড়ালে যতই মারামারি, ঝগড়া বা হত্যা করুক, কাউকেই সেই বিষয়ে অভিযোগ করতে বা সেসব প্রকাশ করতে দেওয়া হয় না। তারা ভয় পায় যে মানুষ তাদের দানবিক চেহারা দেখে ফেলবে, এবং তা ঢাকা দেওয়ার জন্য জন্য তারা যথাসম্ভব চেষ্টা করে। প্রকাশ্যে তারা নিজেদের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি দেখানোর জন্য সমস্ত কিছু করে, বলে তারা মানুষদের কত ভালোবাসে, তারা কত মহান, গৌরবময় ও যথাযথ। এটাই শয়তানের প্রকৃতি। শয়তানের প্রকৃতির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল কৌশল ও প্রতারণা। আর এই কৌশল ও প্রতারণার লক্ষ্য কী? মানুষকে প্রতারিত করা, শয়তানের সারমর্ম ও তার প্রকৃত রূপ দেখা থেকে মানুষকে বিরত রাখা, এবং এভাবে তার শাসনকে দীর্ঘায়িত করার লক্ষ্য পূরণ করা। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ধরনের ক্ষমতা ও মর্যাদার অভাব থাকতে পারে, কিন্তু তারাও চায় যাতে অন্যরা তাদের সম্পর্কে ভালো অভিমত পোষণ করে, যাতে মানুষ তাদের বিষয়ে উচ্চ মূল্যায়ন করে, এবং হৃদয়ে তাদের উচ্চ মর্যাদা দেয়। ভ্রষ্ট স্বভাব হচ্ছে এটাই, আর মানুষ যদি সত্যকে উপলব্ধি করতে না পারে, তাহলে এই বিষয়টা তারা চিনে উঠতে পারবে না(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, যে নীতিগুলি অনুসারে আচরণ করা উচিত)। আমি ঈশ্বরের বাক্য থেকে শিখেছি কেউ নিখুঁত নয়, আমাদের সকলের ত্রুটি আছে, আমরা ভুল করতে পারি এবং দুর্নীতিগ্রস্ত আচরণ করতে পারি। যাদের মনুষ্যত্ব ও বিচারবুদ্ধি আছে তারা তাদের সমস্যাগুলো সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে পারে। ভুল-ভ্রান্তি ও দুর্নীতি দূর করার জন্য তারা সত্যের সন্ধান করতে পারে। যারা তাদের সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে না, নিজের ভুল স্বীকার করে না এবং নিজের দুর্নীতি দেখায় না এবং সবসময় তার চরিত্রের ভালো দিকগুলি দেখায়—তারাই বিশেষ করে প্রতারক এবং বিশ্বাসঘাতক হয়। আমি শয়তান দ্বারা কলুষিত ছিলাম এবং সব ধরনের দুর্নীতিগ্রস্ত স্বভাব আমার মধ্যে ছিল। কর্মক্ষেত্রে দিশেহারা হয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত আচরণ করা স্বাভাবিক। কিন্তু তা প্রকাশ না করলে সেই স্বভাব আমার মধ্যে লুকানো থেকে যাবে, তখনো কি আমি দুর্নীতিগ্রস্ত থাকব না? লরার মূল্যায়ন করতে গিয়ে, আমি ভণ্ড নেতার অনুসরণে তাকে অপবাদ দিয়েছি, যাতে নেত্রীর চোখে আমার ভাবমূর্তি বজায় রাখতে পারি। অস্বীকার করার উপায় নেই—আমার যদি মনুষ্যত্ব আর বিচারবুদ্ধি থাকতো, আমি এ সমস্যার মুখোমুখি হতাম, কীভাবে দুর্নীতি করেছি, কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা নিজেকে প্রকাশ ও বিচার অনুভব করেছি, এবং নিজের দুর্নীতিগ্রস্ত স্বভাবের কথা বুঝতে পেরেছি। আমি খোলাখুলি অন্যদের এটি বলব, যাতে সবাই আমার বাস্তবতা দেখতে পায়। কিন্তু আমি সব সময় দুর্নীতিকে আড়াল করে রেখেছিলাম। যাতে অন্যদের কাছে আমার সুনাম ও ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ থাকে। কী লজ্জাজনক জঘন্য ছিলাম আমি! আমি সবসময় ভাবতাম যদি আমার দুর্নীতিটা কোনো ছোট সমস্যা হয়, বেশিরভাগ লোকই যেমনটা করে, খুবই সাধারণ কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত স্বভাব, তখন আমি মুখ খুললেও হয়তো আমার সুনামের তেমন ক্ষতি হবে না। ফলে আমি নিজেকে প্রকাশ করতে পারতাম। কিন্তু এবার এক ভণ্ড নেতার সাথে মিলে একজনকে অপবাদ দিলাম। এটা একটা গুরুতর অপরাধ ছিল—সহজে প্রকাশ করার মতো না। এটা লোকেদের দেখাবে যে আমার চরিত্র খারাপ, আমার সম্মান নেই, আমার নাম একদম খারাপ হয়ে যেত। তাই এ নিয়ে মুখ খুলতে চাইনি আর সবসময় ভান করে আড়াল করার চেষ্টা করতাম। আমি সত্যিই অবিশ্বস্ত ছিলাম! তখনই বুঝলাম আমার দুর্নীতি প্রকাশ না করা শুধু আমার দম্ভ ও অহংকারই নয়, বরং এটা আমার ভেতরের বিশ্বাসঘাতক ও ভ্রষ্ট শয়তানী স্বভাবকেও দেখায়।

পরে, আমি এই সমস্যা নিয়ে চিন্তা করেছি এবং ঈশ্বরের বাক্যের এই অংশ পড়েছি: “যখন কিছু একটা ঘটে, কেউ হয়তো কিছু বলে না বা কোনো মতামত লঘুভাবে প্রকাশ করে না, বরং সবসময় নীরব থাকে। তার অর্থ এই নয় যে সেই ব্যক্তি বোধসম্পন্ন; বরং বিপরীতভাবে, এর থেকে বোঝা যায় যে সে উত্তম ছদ্মবেশধারী, কিছু কিছু জিনিস সে লুকিয়ে রেখেছে, তার চাতুর্য গভীর। তুমি যদি অন্য কারো কাছেই উন্মুক্ত না হও, তাহলে ঈশ্বরের সামনে কি তা হতে পারবে? আর তুমি যদি এমনকি ঈশ্বরের সাথেও অকৃত্রিম না হও, এবং তাঁর কাছেও উন্মুক্ত হতে না পারো, তাহলে তুমি কি নিজের হৃদয় তাঁকে অর্পণ করতে পারো? অবশ্যই না। তুমি ঈশ্বরের সাথে সমভাব হতে পারবে না, বরং নিজের হৃদয়কে তুমি তাঁর হৃদয় থেকে দূরে সরিয়ে রাখছো! অন্যদের সাথে আলোচনা করার সময় তোমার হৃদয়ে ঠিক কী রয়েছে, সে বিষয়ে তুমি কি খোলাখুলি কথা বলতে সক্ষম? হৃদয়ে সত্যিই যা রয়েছে কেউ যদি সবসময় তা-ই বলে, যদি কখনোই মিথ্যাচার বা অত্যুক্তি না করে, যদি সে আন্তরিক হয়, নিজের দায়িত্ব সম্পাদনের সময় তিলমাত্রও অযত্নবান বা অগভীর না হয়, যদি নিজের উপলব্ধি করা সত্য অনুশীলন করে, তাহলে সেই ব্যক্তির সত্যকে অর্জন করতে পারার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি কেউ সর্বদা নিজেকে আড়াল করে রাখে আর নিজের হৃদয়কে গোপন রাখে, যাতে কেউই তাকে পরিষ্কারভাবে দেখতে না পায়; যদি অন্যদের প্রতারণা করার জন্য নকল ভাবমূর্তি তৈরী করে, তাহলে সে ভীষণরকম বিপদে রয়েছে, খুবই বড় সমস্যার মধ্যে রয়েছে, তার পক্ষে সত্যকে অর্জন করা খুবই কঠিন হবে। কারো দৈনন্দিন জীবন ও তার কথাবার্তা এবং ক্রিয়াকলাপ থেকেই তুমি দেখতে পাবে তার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কতটা। যদি এই ব্যক্তি সর্বদাই ভান করে, সর্বদাই নিজেকে বড় করে দেখায়, তাহলে সে তেমন মানুষ নয় যে সত্যকে স্বীকার করে, এবং আজ না হোক কাল সে অনাবৃত হবে এবং বহিষ্কৃত হবে(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, ঈশ্বরকে হৃদয়দানের মাধ্যমে সত্য অর্জন সম্ভব)। ঈশ্বরের কথায় আমি গভীরভাবে প্রভাবিত হই। তিনি বলেছেন কীভাবে ভান করা মানুষেরা তাদের সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে না, ভুল করলেও প্রকাশ করে না, সবসময় অন্যদের ধোঁকা দিয়ে সেসব আড়াল করে রাখে। তাদের হৃদয় ঈশ্বরের কাছে গোপন থাকে, তিনি দেখেন না। এই ধরনের লোকেরা ভীষণ মন্দ—তারা পুরোদস্তুরবিশ্বাসঘাতক। ঈশ্বর সৎদের ভালবাসেন এবং অবিশ্বস্তদের ঘৃণা করেন। বিশ্বাসঘাতকদের মুখোশ খুলে বের করে দেওয়া হয়। আমি মনে করতাম লোকে ভান করে কেবলই খ্যাতি ও মর্যাদার লোভে, তার মানে সে পাপী বা খ্রীষ্টবিরোধী নয়, যে খারাপ কাজ করে এবং অন্যের ক্ষতি করে। ভাবিনি এর কারণে আমি পরিত্যাজ্য হবো। কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য পড়ে বুঝতে পারি যে এগুলি সবই আমার ধারণা ও কল্পনা এবং জিনিসগুলি সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি বিকৃত। আমি লরাকে অপবাদ দিতে আমার বিবেককে উপেক্ষা করেছি, একটি অপকর্মে প্ররোচনা দিয়েছি। ঈশ্বর আমার অপরাধ ভালো করেই জানেন, কিন্তু আমি এটা প্রকাশে ইচ্ছুক ছিলাম না, বরং অন্যদের দ্বারা প্রশংসিত হওয়ার ভান করার চেষ্টা করেছি। এতে প্রকাশ পায় যে আমি সত্যকে ভালোবাসিনি এবং প্রকৃত অনুতপ্ত হইনি। আমি সত্যের চর্চা করিনি, এমনকি প্রতারনাও করেছিলাম: কেন ঈশ্বর আমাকে ঘৃণা করবেন না? এমনটা করতে থাকলে, একদিন আমি ঠিকই পরিত্যাজ্য হতাম। চিন্তার মাধ্যমে, আমি শিখেছি কীভাবে সৎ হতে এবং প্রকাশ করতে ব্যর্থ হলে পরিণতি গুরুতর হতে পারে। আতঙ্কিত হয়ে আমি, স্বভাব পরিবর্তনের জন্য দ্রুত কাজ করেছি।

পরে, আমি ঈশ্বরের কিছু বাক্য পাই: “তোমাকে অবশ্যই আত্ম-অনুসন্ধান করতে ও নিজেকে জানতে সক্ষম হতে হবে। তোমার অবশ্যই সেই সাহস থাকতে হবে যাতে তুমি ব্রাদার-সিস্টারদের উপস্থিতিতে নিজেকে উন্মুক্ত ও অনাবৃত করতে পারো এবং নিজের প্রকৃত অবস্থার বিষয়ে আলোচনা করতে পারো। যদি নিজেকে অনাবৃত করার বা নিজের ভ্রষ্ট স্বভাবের ব্যবচ্ছেদ করার, অথবা নিজের ভুল স্বীকার করার সাহস তোমার না থাকে, তাহলে তুমি সত্যের অন্বেষণকারী নও, এমন কেউ তো মোটেই নও যে নিজেকে জানে(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, সৎ ব্যক্তি হওয়ার উদ্দেশ্যে মৌলিকতম অনুশীলন)। “মানুষ যে দায়িত্বই সম্পাদন করুক, বা যা-ই করুক না কেন, কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ—তাদের অহংকার ও দর্প, না ঈশ্বরের মহিমা? মানুষের কোনটিকে বেছে নেওয়া উচিত? (ঈশ্বরের মহিমা।) কোনগুলি বেশি গুরুত্বপূর্ণ—তোমার দায়িত্বসমূহ নাকি তোমার নিজস্ব স্বার্থসকল? তোমার দায়িত্ব পূরণ করাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, এবং সেগুলির প্রতি তুমি দায়বদ্ধ। … যখন তুমি সত্যের নীতি অনুসারে অনুশীলন করবে, তখন ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে, এবং তুমি ঈশ্বরের সাক্ষ্য বহন করবে, যা শয়তানকে অপমানিত করা ও ঈশ্বরের প্রতি সাক্ষ্য দেওয়ার একটি উপায়। ঈশ্বরের প্রতি সাক্ষ্য বহনের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার এবং শয়তানকে পরিত্যাগ ও প্রত্যাখ্যান করার উদ্দেশ্যে তোমার সংকল্প শয়তানকে প্রত্যক্ষ করানো: এ-ই হল শয়তানকে অপমানিত করা এবং ঈশ্বরের প্রতি সাক্ষ্য দেওয়া—এ হল এমন এক বিষয়, যা ইতিবাচক এবং ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ” (ঈশ্বরের সহভাগিতা)। ঈশ্বরের বাক্যের থেকে আমি অনুশীলনের পথ খুঁজে পাই। আমি যতই দুর্নীতি বা ভুল করি না কেন, আমাকে সাহস করে সেগুলো স্বীকার করতে হবে, এবং সেগুলো নিয়ে আলোচনা ও বিশ্লেষণ করতে হবে। এটাই শয়তানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার, তাকে লজ্জিত করার এবং ঈশ্বরের জন্য সাক্ষ্য দেওয়ার উপায়। এটাই সত্যিকারের অনুতাপ। খোলাখুলি বলার পর আমার গর্ব, অহংকার, প্রতিপত্তি এবং মর্যাদার যতই ক্ষতি হোক না কেন, আমাকে অহংকার ত্যাগ করে সত্যের অনুশীলন করতে হবে এবং ঈশ্বরের কাছে সাক্ষ্য দিতে হবে। লরার মূল্যায়নে আমি মিথ্যা তথ্য দিয়ে একজন ভণ্ড নেতার সাথে মিলে তাকে অপবাদ দিয়েছিলাম। এই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, আমি আমার কলুষিত স্বভাব সম্পর্কে কিছুটা বুঝতে পারি। আমি শিখেছি আমাকে অবশ্যই ভ্রাতা-ভগিনীদের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতে হবে এবং সাক্ষ্য দিতে হবে ঈশ্বরের বাক্য আমার উপর কী প্রভাব ফেলেছে। এটা আমার কর্তব্য। আমার গর্ব ও সুনাম রক্ষা করতে যদি আমি নিজেকে প্রকাশ করতে ব্যর্থ হই, তাহলে আমি শয়তানের চক্রান্তের শিকার হব এবং আমার সাক্ষ্য হারাবো। এছাড়াও, আগে আমার এই হাস্যকর অনুমান ছিল যে নিজের ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা করা লজ্জাজনক এবং এটি কোনো সাক্ষ্য নয়। পরে, আমি বুঝতে পেরেছি আমি যদি আমার দম্ভ ও অহংকার পিছনে ফেলতে পারি, দুর্নীতিগ্রস্ত স্বভাব থেকে মুক্ত হতে পারি, আমার ব্যর্থতার অভিজ্ঞতার খোলামেলা আলোচনা করতে এবং অনুতপ্ত হতে পারি, তাহলে সেটাই হবে সাক্ষ্য। এই সব জানতে পেরে আমার সব দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেল।

পরে, আমি আলোচনায় আমার অভিজ্ঞতার কথা সবাইকে খুলে বলেছিলাম এবং, আশ্চর্যজনকভাবে, ভ্রাতা ও ভগিনীরা বললেন: “আপনার অভিজ্ঞতা শুনে আমরা আপনার সম্পর্কে খারাপ ভাবিনি। আমরাও প্রায়শই এই একই কলুষিত স্বভাব দেখাই, কিন্তু আমরা তাতে কোনো মনোযোগ দিই না বরং উপেক্ষা করি। আপনি যে আপনার দুর্নীতি স্বীকার করেছেন এবং ঈশ্বরের বাক্যের বিচার ও প্রকাশের মাধ্যমে এর সারমর্মের উপলব্ধি অর্জন করেছেন, তা আমাদের জন্য খুবই শিক্ষণীয়।” পরে, ভ্রাতা ও ভগিনীরা ঈশ্বরের বাক্যের দুটি অনুচ্ছেদ আমার সাথে আলোচনা করে। তারা আমাকে সঠিক মূল্যায়ন না করার পরিণতি বুঝতে সাহায্য করে। এর অর্থ হল মিথ্যা অভিযোগ এনে কাউকে দূরে ঠেলা এবং দমন করা। আপনি যদি কাউকে নির্বিচারে দোষী সাব্যস্ত করেন যাতে তার ক্ষতি হয়, অথবা তার ভিত্তিতে কোনো ভণ্ড নেতা তাকে শাস্তি দেয়, ফলে সে তার দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম হয়, তাতে কেবল সেই ব্যক্তিরই ক্ষতি হয় না, বরং গির্জার কাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লোকেদের মূল্যায়ন করার সময় কোন নীতিগুলি অনুশীলন করা উচিত সে সম্পর্কেও আমি স্পষ্ট ধারণা অর্জন করি। পরে যখন লরা এই সব জানতে পারল, সেআমাকে খারাপ ভাবেনি। আমি প্রশ্ন নিয়ে তার কাছে গেলে, সে আগের মতই সততার সাথে উত্তর দিত, ফলে আমার চাকরির কোনো পরিবর্তন হয়নি বা আমাকে বরখাস্ত করা হয়নি। যেটা আমি যা ভেবেছিলাম তার সম্পূর্ণ উল্টো। আমি খুবই লজ্জা পেয়েছিলাম। ফলে আমি ঈশ্বরে বিশ্বস্ততার প্রতি আরও সচেতন হয়ে উঠি। ঈশ্বরের বাক্যের অনুশীলন করলে, পথ পাওয়া যাবেই। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

Leave a Reply

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন