নিজের দায়িত্বের প্রতি সঠিক মনোভাব
তার পর সত্যিই আমার মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আমি ঠিক মানতে পারিনি, বিশেষ করে যখন আমি আরও বেশি মানুষকে দেখি ইশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজকে গ্রহণ করতে, এবং জরুরিভাবে সিঞ্চনের প্রয়োজন বোধ করতে দেখি। আমার দায়িত্ব পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার ফলে আমি ভাবলাম আমাকে বহিষ্কার করা হল না কি। আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম যে অন্যরা আমার সম্পর্কে জানতে পারলে, তারা ভাববে আমার যোগ্যতার অভাব ছিল এবং আমি শুধুমাত্র কায়িক শ্রম এবং ছোটখাটো কাজের যোগ্য। আমি প্রথমে অন্য সবার সাথে নতুন বিশ্বাসীদের সিঞ্চন করছিলাম, কিন্তু এখন যখন আমি সাধারণ বিষয়গুলি পরিচালনা করছিলাম, যা আসলেই সামান্য কাজ, এই ধরনের দায়িত্বের কী প্রয়োজন ছিল? যতই ভালো করি না কেন, আমি শুধু একজন সেবাদাতা এবং শেষ পর্যন্ত বিতাড়িত হব। কিন্তু আমি সেই সময়ে ঈশ্বরের অভিপ্রায় জানতে চাইনি, এবং এটি নিয়ে আরও বেশি বিরক্ত হয়েছি। আমার দায়িত্ব আমি ভালোভাবে সম্পন্ন করতাম না, মনোযোগ না দিয়ে কেবল দায়িত্ব পালনের জন্য কাজ করছিলাম। মাঝে মাঝে সন্ধ্যায় অনেক কিছু করার থাকত, কিন্তু আমার অনেক আগেই ঘুম পেয়ে যেত। তারপর সিঞ্চনের দায়িত্বে থাকা এক ভগিনী আমাকে বার্তা পাঠালেন, আগের কিছু কাজের নথি একত্রিত করতে তিনি আমার সাহায্য চাচ্ছিলেন। এটি পড়ে আমি সত্যিই মনে মনে বিরো্ধিতা করেছিলাম। আমি আর নবাগতদের সিঞ্চনের কাজ করি না, তাই সেসবের দায়িত্ব ছিল না। তা হলে কেন তিনি এ সব কাজ আমাকে করতে বলবেন? আমি প্রত্যাখ্যান করতে পারিনি যদিও, তাই অনিচ্ছাসত্বেও সেটা করতে রাজি হলাম। কিন্তু পরদিনই আর এক সিঞ্চনকারী ভগিনী অন্য কাজে সাহায্য করতে বলেন, আমি ভাবলাম যে সাধারণ কাজগুলি নেহায়েতই ছোটখাটো কাজ এবং কী করতে হবে তা যে কেউই আমাকে বলতে পারে। এটি সত্যিই আমার এক্তিয়ারের কাজ নয়, তাহলে কেন তাঁকে আমি সাহায্য করব? আমি রাজি হতে চাইনি, কিন্তু আমার মনে শঙ্কা ছিল, আমি রাজি না হলে তিনি হয়ত ভাববেন যে আমি গির্জার কাজকে সমর্থন করছি না। বাধ্য হয়ে আমি তাকে বলি যে আমি তার কাজটি করব।
কিছুদিন ধরে আমি আসলেই নিজেকে বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমার দায়িত্বের পরিবর্তন যে ঈশ্বর করেছেন আমি তা মেনে নিতে পারছিলাম না এবং লিডারের বিরোধী হয়েছিলাম, মনে হচ্ছিলতিনি আমার কাজ কঠিন করে তুলবেন। সহকর্মী এক সিস্টারকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমি বলেছিলাম, “সিঞ্চনের সময় কোনো অবসর না পেলেও আমি আমার কাজ করে গেছি। কোনো সমস্যা দেখা দিলে লিডার আমাকে কখনও সাহায্য করেননি, যখন সমস্যা দেখা দিয়েছিল, বরং তিনি মূহূর্তের মধ্যে আমাকে বরখাস্ত করেন। যাই হোক। যেহেতু আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে তাই তার মধ্যেও শিক্ষণীয় নিশ্চয়ই কিছু আছে।” এটি শোনার পর, তারও মনে হয়েছিল যে লিডার আমার সাথে ন্যায্য কাজ করেন নি। কিন্তু সেই সময়, সাধারণ বিষয়গুলি পরিচালনা করা এবং অন্যদের কাছে সম্মান হানির চিন্তা আমাকে অত্যন্ত কষ্ট দেয়। কেন আমাকে সাধারণ কাজে নিযুক্ত করা হল? আমি কি শুধুই এই ছোটখাটো কাজের যোগ্য? আমি কি অনুশীলন করারও যোগ্য ছিলাম না? তখন থেকে আমার কেবলই মনে হতো যে আমি অকেজো হয়ে গিয়েছি, এবং এমনকি আমি শেষ পর্যন্ত আমার বিশ্বাস বজায় রাখলেও, আমাকে বহিষ্কার করা হবে। এই দুশ্চিন্তা আমার জীবন আরও দুঃসহ করে তোলে। আমি বুঝলাম আমার অবস্থা ঠিক নেই। তাই প্রার্থনার মাধ্যমে আমি ঈশ্বরের সান্নিধ্যে আসি। “প্রভু আমার কি হয়েছে? এটিও একটি দায়িত্ব, কিন্তু এই দৈনন্দিন কাজের দায়িত্বে আমি এত অসন্তুষ্ট কেন? ঈশ্বর, আমাকে আলোকিত করুন যাতে আমি নিজেকে বুঝতে পারি এবং ভ্রষ্টাচার থেকে বিরত থাকতে পারি।”
প্রার্থনার পরে আমি দায়িত্ব পরিবর্তনের প্রতি খ্রীষ্টবিরোধীদের মনোভাব সম্পর্কে ঈশ্বরের বাণী গুলি স্মরণ করি। ঈশ্বরের বাক্যে বলা হয়েছে, “তোমার জন্য কোন দায়িত্ব উপযুক্ত, তা তোমার নিজের ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা উচিত। গির্জা থেকে তোমার জন্য যে দায়িত্বের ব্যবস্থা করা হয়েছে কখনও যদি তুমি সেটাতে দক্ষ না হও বা তা করতে না চাও, তাহলে তুমি সমস্যাটা তুলে ধরে আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করতে পারো। কিন্তু তুমি যদি এই দায়িত্ব পালনে সক্ষম হও, এবং তা এমন কোনো দায়িত্ব হয় যা তোমার পালন করা উচিত, আর শুধু যন্ত্রণাভোগের ভয়ে তুমি যদি তা না করতে চাও, তাহলে বুঝতে হবে মানুষ হিসাবে তোমার মধ্যেই সমস্যাটা নিহিত রয়েছে। যদি তুমি মান্য করতে ইচ্ছুক থাকো, এবং দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করতে পারো, তাহলে তোমাকে যুক্তিবোধসম্পন্ন বলা যেতে পারে। তবে, যদি তুমি সর্বদাই গণনা করতে থাকো কোন দায়িত্বটা সম্মানজনক, এবং তুমি মনে করো কোনো বিশেষ দায়িত্ব পালন করলে তুমি লোকের চোখে হীন হয়ে পড়বে, তাহলে প্রমাণ হয় যে তোমার স্বভাব ভ্রষ্ট। দায়িত্ব সম্পর্কে তোমার ধারণা এত পক্ষপাতদুষ্ট কেন? তুমি নিজের ধারণার ভিত্তিতে দায়িত্ব বেছে নিলে তবেই ভালোভাবে দায়িত্ব সম্পাদন করতে পারবে, এমনটা কি হতে পারে? এটা সর্বদা সত্যি নয়। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তোমার ভ্রষ্ট স্বভাবের সমাধান করা, তা যদি তুমি না করো, তাহলে তুমি নিজের দায়িত্ব উপভোগ করলেও, তা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারবে না। কেউ কেউ নিজেদের দায়িত্ব পালনে কোনো নীতিই অনুসরণ করে না, এবং দায়িত্ব পালনে তাদের দক্ষতা সর্বদা তাদের নিজের পছন্দের উপর নির্ভরশীল, তাই তারা কখনোই কোনো অসুবিধার সমাধান করে উঠতে পারে না, তাদের প্রতিটা কর্তব্যই বিশৃঙ্খলভাবে সম্পাদন করে, এবং পরিশেষে তাদের বহিষ্কার করা হয়। এই ধরনের মানুষদের কি উদ্ধার করা সম্ভব? … মন্দ কর্মকারী ও খ্রীষ্টবিরোধীদের নিজ দায়িত্বের প্রতি কখনোই সঠিক আচরণ থাকে না। তাদের স্থানান্তরিত করে দিলে তারা কী ভাবে? ‘তুমি কি ভাবো আমি নিছক একজন সেবা-প্রদানকারী, যে তোমার আদেশে সেবাপ্রদান করবে, যাকে তুমি কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে নিছক বহিষ্কার করতে পারো? বেশ, কিন্তু আমি নিজের প্রতি এমন আচরণ বরদাস্ত করব না! আমি একজন নেতা বা কর্মী হতে চাই, কারণ এখানে সেটাই একমাত্র সম্মানজনক কাজ। তুমি যদি আমাকে নেতা বা কর্মী হতে না দাও অথচ তবুও আমার অবদান পেতে চাও, তাহলে তুমি তা ভুলে যেতে পারো!’ এটা কী ধরনের মনোভাব? এটা কী ধরনের আনুগত্য? কাজের দায়িত্ব পরিবর্তনের প্রতি তাদের এরকম মনোভাবকে কে চালনা করে? হঠকারিতা, তাদের নিজস্ব ধারণা, এবং দুর্নীতিগ্রস্ত স্বভাব, তাই না? আর এইভাবে এগিয়ে যাওয়ার পরিণতি কী? প্রথমত, তারা কি তাদের পরবর্তী দায়িত্বে নিষ্ঠাবান ও আন্তরিক হতে পারবে? না, পারবে না। তাদের কি ইতিবাচক মনোভাব থাকবে? তারা কীরকম অবস্থায় থাকবে? (হতাশার অবস্থায়।) হতাশার সারমর্ম কী? প্রতিরোধ। এবং প্রতিরোধপূর্ণ ও হতাশাগ্রস্ত মানসিক অবস্থার চূড়ান্ত ফলাফল কী? যার মানসিক অবস্থা এরকম সে কি তাদের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে পারে? (না।) কেউ যদি সবসময় নেতিবাচক ও প্রতিরোধপূর্ণ অবস্থায় থাকে, তারা কি দায়িত্ব পালনের উপযুক্ত? তারা যে দায়িত্বই পালন করুক না কেন, সেটা ভালোভাবে পালন করতে পারে না। এটা একটা দুষ্টচক্র, এবং এর সমাপ্তি শুভ নয়। এমনটা কেন? এই ধরনের লোকেরা ভালো পথে নেই; তারা সত্যের অন্বেষণ করে না, তারা অনুগত নয়, এবং তারা তাদের প্রতি ঈশ্বরের পরিবারের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি সঠিকভাবে বুঝতে পারে না। এটা একটা সমস্যা, তাই না? সঠিকভাবেই দায়িত্বের পরিবর্তন করা হয়েছিল, কিন্তু খ্রীষ্টবিরোধীরা বলে, এটা শুধু তাদের নিপীড়নের উদ্দেশ্যেই করা হচ্ছে, তাদের সাথে মানুষের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে না, ঈশ্বরের পরিবারে ভালবাসার অভাব রয়েছে, এবং তাদের সাথে যন্ত্রের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে, দরকার হলে তাদের ডাকা হচ্ছে, আবার দরকার না থাকলে লাথি মেরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা কি যুক্তিকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে দেখানো নয়? যে এই ধরনের কথা বলে তাদের কি বিবেক বা যুক্তিবোধ আছে? তাদের মানবিকতা বলে কিছু নেই! তারা সম্পূর্ণ যুক্তিসঙ্গত একটা বিষয়কে বিকৃত করে; সম্পূর্ণ যথাযথ একটা রীতিকে তারা নেতিবাচক দিকে ঘুরিয়ে দেয়—এটা কি খ্রীষ্টবিরোধীদের একটা খারাপ দিক নয়? এরকম মন্দ ব্যক্তি কি সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে? একেবারেই না। এটা খ্রীষ্টবিরোধীদের একটা সমস্যা; তাদের সাথে যা-ই ঘটুক, তারা সেসবের পেছনের যুক্তিকে বিকৃত করবে। কেন তারা এমন ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ভাবে? কারণ তারা স্বভাবগতভাবে অত্যন্ত মন্দ, তাদের সারসত্যও মন্দ। একজন খ্রীষ্টবিরোধীর প্রকৃতি ও সারমর্ম প্রাথমিকভাবেই মন্দ, তারপরে তাদের বিদ্বেষ যুক্ত হয়, এবং এইগুলোই তাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। খ্রীষ্টবিরোধীদের মন্দ প্রকৃতি তাদের সঠিকভাবে কিছু উপলব্ধি করতে বাধা দেয়, পরিবর্তে তারা সবকিছু বিকৃত করে এবং ভুল ব্যাখ্যা করে, তারা চরম পর্যায়ে চলে যায়, তুচ্ছ বিষয়কে বড়ো করে দেখায়, এবং কিছুই সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে না বা সত্যের সন্ধান করতে পারে না। এরপরে, তারা সক্রিয়ভাবে বিষয়গুলোকে প্রতিরোধ করে এবং প্রতিশোধ নিতে চায়, এমনকি কল্পিত ধারণার প্রচার করে ও নেতিবাচকতা ছড়ায়, গির্জার কাজ ব্যাহত করার জন্য অন্যদের প্ররোচিত ও উৎসাহিত করে। তারা গোপনে কিছু অভিযোগ ছড়িয়ে দেয়, ঈশ্বরের গৃহে মানুষের সাথে কীভাবে আচরণ করা হয়, সেখানকার প্রশাসনের নিয়ম, কিছু নেতারা কীভাবে কাজ করে সেগুলোর বিচার করে, এবং এই নেতাদের নিন্দা করে। এটা কী ধরনের স্বভাব? একেবারেই অমানবিক” (বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, দ্বাদশ পরিচ্ছেদ: আশীর্বাদ অর্জন করার আশা এবং সুযোগ না থাকলে তারা পশ্চাদপসরণ করতে চায়)। ঈশ্বরের বাণীথেকে আমি উপলব্ধি করি যে কোনো সমস্যায়, খ্রীষ্টবিরোধীরা ঈশ্বরের অভিপ্রায় ঠিক মত বঝতে পারে না এবং সর্বদাই সবকিছু ভুলভাবে গ্রহণ করে। দায়িত্ব পরিবর্তনের মত একটি সাধারণ ঘটনাকে বিকৃত পরিপ্রেক্ষিতে দেখে, মনে করে তাদের পদাবনতি হয়েছে এবং পুরো ঘটনাটিকেই তারা নিজেদের জন্য দুর্বিষহ করে তোলে। নেতিবাচক হয়ে গিয়ে তারা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে, এবং গির্জার কাজ উপেক্ষা করে যে কোনো সময় নিজেদের দায়িত্ব পরিত্যাগ করতে পারে। খ্রীষ্টবিরোধীরা এমনই মন্দ, দুষ্ট প্রকৃতির হয়! কিন্তু আমি দেখলাম আমি ঠিক একই আচরণ করছি। বরখাস্ত হওয়ার পরে আমার ভাবা উচিৎ ছিল আমি কীভাবে ব্যর্থ হয়েছি এবং নতুন দায়িত্বের এই সুযোগ কে সম্মান করা উচিৎ ছিল। কিন্তু আমি তার কিছুই করিনি। আমার মনে হচ্ছিল যে লিডার ই আমার উপর কঠোর হচ্ছেন, মনে হচ্ছিল, সাধারণ বিষয়গুলি পরিচালনা করা ছিল নিম্ন মর্যাদার এবং বিব্রতকর, আর আমি কেবলই ছোটখাটো কাজ করছিলাম, একজন সেবাকারী হিসেবে এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি এটি মেনে নিতে পারিনি, এবং নিজেকে একটি বড় অন্যায়ের শিকার বলে মনে করেছি, এবং এই দায়িত্বের অত্যন্ত বিরোধী ছিলাম। সর্বদাই আমি অনিচ্ছুক থাকতাম, শুধু দায়িত্ব পালনের জন্য কাজ করতাম, যেন এক রকম গতে বাঁধা জীবন। আমি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলাম এবং এই ধরনের নেতিবাচকতা ব্যবহার করে ঈশ্বরের বিরোধিতা করছিলাম। সিঞ্চনকারী সিস্টাররা যখন আমার সাহায্য চাইতেন আমি কখনওই সহযোগিতা করতে চাইতাম না, বরং অনেক বেশি অভিযোগ করতাম। আমার মনে হতো যে তারা আমাকে আদেশ দিচ্ছে, আমাকে পরিশ্রম করাচ্ছে এবং ছোটখাটো কাজ করাচ্ছে। আমি এতই অযৌক্তিক! এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমি আমার মনোভাব প্রকাশ করতে চাইতাম, তাই লিডারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আমার ক্ষোভ আমি প্রাক্তন সহকর্মীর কাছে প্রকাশ করতাম। তাতে তিনি প্রভাবিত হয়ে লিডারের বিরুদ্ধে বিরুপ হয়ে উঠতেন। দায়িত্বের সেই পরিবর্তন আমাকে সম্পূর্ণ প্রকাশ করেছিল। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিগত পছন্দের উপর ভিত্তি করে, চেয়েছি অন্যের কাছে ভালো সাজতে। এই নিম্ন মর্যাদায়, আমার মনে হত যে অন্যরা আমাকে সম্মান করবে না এবং আশীর্বাদ-প্রাপ্তির কোন আশাই আমার নেই, তাই আমি নেতিবাচক হয়ে নিজেকে টেনে নিয়ে যাই, ঈশ্বরের বিরোধিতা করি, এমনকি আমার কর্তব্যেও ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকি। নিজের ক্ষোভ এবং ধারণা আমি অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে আমার পক্ষে লড়াই করার জন্য অন্য একজনকে পাশে পাই। এই স্বভাব কোনও খ্রীষ্টবিরোধীর থেকে কিভাবে ভিন্ন হতে পারে? নিজের প্রতিবিম্বে আমি দেখি যে প্রকৃতপক্ষে আমার কোনও মানবিকতা বা যৌক্তিকতা নেই।
তারপর আমি ঈশ্বরের কতকগুলি বাণী পড়ি। “কিছু মানুষ নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে না, তারা সর্বদা অযত্নশীল ও অমনোযোগী, সমস্যা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে থাকে, এবং পরিশেষে তাদের প্রতিস্থাপন করে দেওয়া হয়। তবে, তাদের গির্জা থেকে বহিষ্কার করা হয় না, এটা তাদের অনুশোচনার একটা সুযোগ দেওয়া। প্রত্যেকেরই ভ্রষ্ট স্বভাব থাকে, আর সকলেরই এমন একটা সময় আসে যখন তারা বিভ্রান্ত ও বিহ্বল থাকে, আবার কিছু সময় তাদের আত্মিক উচ্চতা কম থাকে। তোমাকে একটা সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্য হচ্ছে যাতে তুমি এই সমস্ত বিষয় ঠিক করে নিতে পারো। আর তুমি তা কীভাবে ঠিক করবে? তোমাকে অবশ্যই নিজের বিগত ভুলত্রুটিগুলোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে ও সেগুলোকে জানতে হবে; কোনো অজুহাত দেবে না এবংসর্বত্র পূর্বধারণা প্রচার করবে না। যদি তুমি ঈশ্বরকে ভুল বোঝো এবং সেই ভুল ধারণা ভাবনাচিন্তা না করেই অন্যান্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দাও, যাতে তারাও তোমার সাথে ঈশ্বরকে ভুল ব্যাখ্যা করে, এবং যদি তোমার মধ্যে পূর্বধারণা থাকে ও তুমি তা তুমি ছড়াতে থাকো, যাতে সকলেরই তোমার মতো ধারণা তৈরি হয় এবং তারা তোমার সাথে ঈশ্বরের সঙ্গে বিতর্কে সচেষ্ট হয়, সেটা কি উশৃঙ্খলতা জাগিয়ে তোলাই হচ্ছে না? এটা কি ঈশ্বরের বিরোধিতা করা নয়? আর ঈশ্বরের বিরোধিতা করার ফলাফল কি কখনও ভালো হতে পারে? তোমাকে কি এখনও উদ্ধার করা সম্ভব? তোমরা আশা করো ঈশ্বর তোমাদের উদ্ধার করবেন, কিন্তু তুমি ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করো ও তাঁর বিরোধিতা করো; ঈশ্বর কি তারপরেও তোমাকে উদ্ধার করবেন? সে আশা ত্যাগ করো। যখন তুমি ভুল করেছিলে, ঈশ্বর তোমাকে দায়ী করেননি, আবার এই একটিমাত্র ত্রুটির কারণে তোমাকে পরিহারও করেননি। ঈশ্বরের গৃহ তোমাকে একটা সুযোগ দিয়েছিল, তোমাকে একটা দায়িত্ব সম্পাদন করে চলার অনুমতি দিয়েছিল এবং অনুশোচনার সুযোগ দিয়েছিল, এটাই সেই সুযোগ যা ঈশ্বর তোমাকে দিয়েছিলেন; তোমার যদি বিবেক ও বোধ থাকে, তাহলে এটাকে তোমার মূল্যবান বলে বিবেচনা করা উচিত। কিছু মানুষ নিজেদের দায়িত্বের প্রতি সর্বদা অমনোযোগী ও অযত্নশীল হয়, তাদের প্রতিস্থাপিত করা হয়, আবার কাউকে স্থানান্তরিত করা হয়। এর অর্থ কি এই যে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে? যদি ঈশ্বর তেমনটা না বলে থাকেন, তাহলে এখনও তোমার সুযোগ রয়েছে। তাহলে তোমার কী করা উচিত? তোমার উচিত নিজের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা ও নিজেকে জানা এবং প্রকৃত অনুশোচনা অর্জন করা, এটাই পথ। কিন্তু কিছু লোক তা করে না। তারা উল্টো লড়াই করে আর বলে বেড়ায়, ‘আমার এই দায়িত্ব পালনের অনুমতি ছিল না, কারণ আমি ভুল কথা বলেছিলাম এবং এতে কেউ ক্ষুব্ধ হয়েছে’। তারা নিজেদের মধ্যে সমস্যার সন্ধান করে না, তারা ভাবনাচিন্তা করে না, তারা সত্যের অন্বেষণ করে না, তারা ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়সাধন মান্য করে না, আর পূর্বধারণা প্রচারের মাধ্যমে তারা ঈশ্বরের বিরোধিতা করে। তারা কি শয়তানে পরিণত হয়নি? শয়তান যা করে তুমিও যখন সেই একই কাজ করো, তখন তুমি আর ঈশ্বরের অনুগামী থাকো না। তুমি ঈশ্বরের শত্রুতে পরিণত হয়েছ—ঈশ্বর কি নিজের শত্রুকে উদ্ধার করতে পারেন? না। ঈশ্বর কেবল ভ্রষ্ট স্বভাব যুক্ত লোকেদের উদ্ধার করেন, যারা বাস্তবিক মানুষ—শয়তানদের নয়, তাঁর শত্রুদেরও নয়। তুমি যখন ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যাও, ঈশ্বরের সম্পর্কে অভিযোগ করো, ঈশ্বরকে ভুল ব্যাখ্যা করো, ঈশ্বরের সম্পর্কে রায়দান করো, ঈশ্বরের বিষয়ে অনুমাননির্ভর ধারণা প্রচার করো, তখন তুমি সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের বিরোধী; তুমি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ সৃষ্টি করছ” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র সত্যের নীতি অনুসন্ধানের মাধ্যমেই যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব)। ঈশ্বরের বাণী পড়া আমার জন্য মর্মস্পর্শী ছিল। আমি সেই দায়িত্ব হারিয়েছি, কিন্তু আমার দায়িত্ব পালনের সুযোগ ঈশ্বর কেড়ে নেন নি। তিনি বলেননি যে আমি সত্যকে অনুসরণ করতে পারব না, করলে আমাকে বহিষ্কার করা হবে। আমার জন্য অন্য দায়িত্বের ব্যবস্থা করা হয়েছে, আমাকে নিজেকে নিয়ে ভাবার এবং নিজেকে বোঝার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঈশ্বরের অভিপ্রায় না বুঝে আমি মনে করেছিলাম যে এই পরিবর্তন আমার পদমর্যাদা এবং সম্মানহানি করবে। আমি নেতিবাচক এবং বিরোধী হয়ে উঠেছিলাম। আমি এতটাই বিদ্রোহী এবং অযৌক্তিক ছিলাম! আমি যখন নবীন বিশ্বাসীদের সিঞ্চন করছিলাম, যেহেতু আমার যোগ্যতা যথেষ্ট ছিল না, দর্শনের বিভিন্ন সত্যের উপর আমি স্পষ্টভাবে আলাপ-আলোচনা করতে পারিনি এবং তাদের প্রশ্নের সমাধান হয়নি। অন্যের চোখে যাতে আমি ছোট না হয়ে যাই সেই ভয়ে আমি অভিনয় চালিয়ে যেতাম নিজেকে উন্মুক্ত করিনি এবং নিজের সমস্যা মেটাতে কোন সাহায্যও চাইনি। সেই দায়িত্ব পালনের নীতি ও পদ্ধতির ব্যাপারে নেত্রী আমার সাথে আলাপ-আলোচনা করতেন, কিন্তু আমি সেগুলোর সম্পর্কে শুধু অবগত হয়েই সন্তুষ্ট ছিলাম, এবং পরে আমি কীভাবে সেগুলি অনুশীলন এবং প্রয়োগ করব তা নিয়ে ভাবিনি। তাই অনেক আলাপ আলোচনার পরেও অনেক নীতি আমি বুঝতে পারিনি এবং আমার সিঞ্চনের কাজ কোন সময়ই সুফল দেয়নি। আমার যে যোগ্যতা কম ছিল শুধু তাই নয়, আমি ছিলাম অত্যন্ত অহংকারী এবং সত্য অন্বেষণের এতটুকু ইচ্ছে ছিল না। আমি আমার দক্ষতার সত্যিই কোনও উন্নতিসাধন করিনি, এবং আমি যে কাজের দায়িত্ব আমার ছিল তাতে কোন অগ্রগতি হয়নি। তাই আমার বরখাস্ত হওয়ারই দরকার ছিল। কিন্তু আমি আমার দুর্নীতি ও দোষ স্বীকার করিনি। বরখাস্ত হওয়া নিয়ে আমি ক্ষুব্ধ ছিলাম এবং তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিলাম। এমনকি আমি ভুল বুঝেছিলাম যে ঈশ্বর আমাকে উন্মোচিত করে, অন্যের কাছে মন্দ প্রমাণ করে আমাকে বহিষ্কার করছেন। এটা একটা অদ্ভুত এবং সম্পূর্ণ অযৌক্তিক আচরণ ছিল আমার। নবীনদের সিঞ্চনের ক্ষেত্রে আমি ছিলাম অদক্ষ, সেইসঙ্গে কৃতিত্বের অভাব ছিল এবং, আমি সবসময় নিজেকে সীমাবদ্ধ এবং অপর্যাপ্ত বোধ করতাম এবং খুবই বিষণ্ণ থাকতাম। আমি যদি সেই দায়িত্ব পালন করে যেতাম, তা শুধু আমার নিজের জীবনের ক্ষতিই করত না, গির্জার কাজেও তা বাধার সৃষ্টি করত। আমার যোগ্যতা এবং ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে, নেত্রী আমাকে সেই কাজই দিয়েছিলেন যা আমি পালন করতে পারি, যা আমি শেষ পর্যন্ত করে যেতে পারি। তা ছিল নীতি অনুসরণ করা এবং আমার জীবনের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া। কিন্তু আমি জানতাম না আমার জন্য কী ভালো। আমি আত্ম-সমীক্ষা করিনি, বরং পাল্টা আক্রমণ করেছি, নেত্রীর পশ্চাতে তাঁর সমালোচনা করে নেতিবাচকতা ছড়িয়েছি। দেখে মনে হত আমি শুধু তাঁর ত্রুটিই খুঁজছি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমি ঈশ্বরের বিরোধিতা করছিলাম, তাঁর বিরুদ্ধে যাচ্ছিলাম। এইভাবে উন্মোচিত হয়ে, আমি বুঝি যে শুধু দক্ষতার অভাব নয়, আমার ভীষণ দুর্নীতিগ্রস্ত একটি স্বভাবও ছিল। যে ভাবে সমর্পিত হওয়া উচিত ছিল সেভাবে নাহলে এবং আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন না করলে, আমি উন্মোচিত এবং বহিষ্কৃত হব।
আমার আত্ম-সমীক্ষায়, আমি একটি ভুল দৃষ্টিভঙ্গিও আবিষ্কার করি যা আমি পোষণ করতাম। আমি ভেবেছিলাম দায়িত্বের বিভিন্ন পদমর্যাদা আছে, যার মধ্যে নিম্ন এবং উচ্চতর পদ রয়েছে, এবং শুধুমাত্র একজন নেতা বা সিঞ্চনকারী হওয়াই আসল দায়িত্ব, যেখানে সামান্য এবং সাধারণ বিষয়ের কাজ ধর্তব্যের মধ্যেই পড়ে না। আমি ভাবতাম যে সেটা নিম্নস্তরের কাজ, এবং সেখানে সর্বোত্তম পরিষেবা দিয়েও, আমি শেষ পর্যন্ত বিতাড়িত হব। তাই সাধারণ বিষয়গুলি পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হচ্ছে শুনে আমার মনে হয়েছিল আমাকে নীচু নজরে, যন্ত্রের মতো করে দেখা হচ্ছে। আমি সত্যিই এটির বিরোধী হয়ে উঠি, এমনকি, দায়িত্ব পালনে আমার কোন আগ্রহই ছিল না। কিন্তু ঈশ্বরের গৃহে সমস্ত দায়িত্বই মানবজাতিকে রক্ষার প্রয়োজনে ঈশ্বরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনা। নেতা, সিঞ্চনকারী বা সাধারণ বিষয় পরিচালনা যাই হোক না কেন, এগুলো সবই আমাদের দায়িত্ব, এবং আমাদের সহযোগিতা করা দরকার। এটি একটি যন্ত্রের মত, প্রতিটি অংশের নিজস্ব উদ্দেশ্য রয়েছে, তাই এখানে বৃহৎ বা ক্ষুদ্র, উচ্চ বা নীচ, মহৎ বা সাধারণ কোন ভেদ নেই, শুধুই বিভিন্ন রকম কাজ। যিনি যে দায়িত্বই পালন করুন না কেন, প্রত্যকেরই শিক্ষণীয় কিছু আছে, তাদের সত্যে প্রবেশের প্রয়োজন আছে। যতক্ষণ আমরা সত্যের অনুসরণ করব, ঈশ্বর আমাদের উদ্ধার করবেন। কিন্তু আমি সবসময় বিষয়গুলি নিয়ে ভুল চিন্তাভাবনা করেছি। আমার মনে হয়েছিল সাধারণ বিষয় পরিচালনা করা মানে কেবল কায়িক শ্রম, ছোটখাটো কাজ এবং সেবা দেওয়া। আমার দায়িত্ব পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমি সেই তির্যক, মন্দ দৃষ্টিভঙ্গিটিকেই প্রয়োগ করি এবং ঈশ্বরের অভিপ্রায়কে ভুল বুঝি। ঈশ্বরের কাছে এটি বিরক্তিকর এবং ঘৃণ্য!
বলতে বলতে ঈশ্বরের কতগুলো বাক্য মনে পড়ে যাচ্ছে। “ঈশ্বরের ইচ্ছা হল প্রত্যেক ব্যক্তি যেন নিখুঁত হয়ে ওঠে, শেষ পর্যন্ত তাঁর দ্বারা অর্জিত হয়, তাঁর দ্বারা সম্পূর্ণরূপে শুদ্ধ হয়, এবং তাঁর স্নেহের মানুষ হয়ে ওঠে। আমি তোমাদের অনগ্রসর বা স্বল্প ক্ষমতাসম্পন্ন বলি কিনা তাতে কিছু আসে যায় না—এই সবই সত্য। আমার এই কথাটি প্রমাণ করে না যে আমি তোমাদের পরিত্যাগ করতে চাই, যে আমি তোমাদের উপর আশা হারিয়ে ফেলেছি, এমন তো আরোই নয় যে আমি তোমাদেরকে উদ্ধার করতে চাই না। আজ আমি তোমাদের পরিত্রাণের কাজ করতে এসেছি, অর্থাৎ আমি যে কাজ করি, তা পরিত্রাণের কাজেরই ধারাবাহিকতা। প্রতিটি ব্যক্তির নিখুঁত হওয়ার সুযোগ রয়েছে: যদি তুমি ইচ্ছুক হও, যদি তুমি অন্বেষণ করো, তাহলে শেষ পর্যন্ত তুমি এই ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হবে, এবং তোমাদের একজনকেও পরিত্যাগ করা হবে না। তুমি যদি স্বল্প ক্ষমতাসম্পন্ন হও, তাহলে তোমার কাছে আমার চাহিদা তোমার স্বল্প ক্ষমতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে; তুমি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হলে, তোমার কাছে আমার চাহিদা তোমার উচ্চ ক্ষমতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে; তুমি যদি অজ্ঞ এবং নিরক্ষর হও, তবে তোমার কাছে আমার চাহিদা তোমার অশিক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে; তুমি যদি সাক্ষর হও, তবে তোমার কাছে আমার চাহিদা তুমি যে শিক্ষিত সেই তথ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে; যদি তুমি প্রবীণ হও, তবে তোমার কাছে আমার চাহিদা তোমার বয়সের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে; তুমি আতিথেয়তা প্রদান করতে সক্ষম হলে, তোমার কাছে আমার চাহিদা এই সামর্থ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে; যদি তুমি বলো যে তুমি আতিথেয়তা দিতে পারবে না, এবং শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট কর্ম সম্পাদন করতে পারবে, তা সুসমাচার প্রসার করা, বা গির্জার যত্ন নেওয়া, বা অন্যান্য সাধারণ বিষয়গুলিতে অংশ নেওয়াই হোক, তাহলে তুমি যে কাজ সম্পাদন করবে তার সাথে সঙ্গতি রেখেই আমি তোমাকে নিখুঁত করে তুলবো” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, মানুষের স্বাভাবিক জীবন পুনরুদ্ধার করা এবং তাকে এক বিস্ময়কর গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া)। আমি সত্যিই উদ্বুদ্ধ হয়েছিলাম, কিন্তু সেইসঙ্গে লজ্জিতও হয়েছিলাম। ঈশ্বরের অভিপ্রায় উপলব্ধি না করে আমি তাঁকে ভুল বুঝেছি এবং দোষারোপ করেছি। প্রকৃতপক্ষে, ঈশ্বর কখনও বলেননি যে তিনি কম যোগ্যতাবিশিষ্ট মানুষদের রক্ষা করবেন না, এবং তাদের যোগ্যতা বা তারা কী দায়িত্ব পালন করে, তা এটা নির্ধারণ করে দেয় না যে তিনি তাদের সাথে কীরূপ আচরণ করবেন। তিনি শুধু দেখেন যে তারা সত্যকে ভালোবাসে এবং অনুসরণ করে কিনা। তারা মুক্তি পাবে কি না তার মূল কথা এটিই। আগে গির্জার দ্বারা বহিষ্কৃত একজন অন্যায়কারীর কথা আমার মনে এল। মনে হত সে যোগ্যতা সম্পন্ন এবং তার কাজকর্ম প্রশংসিত হয়েছিল, কিন্তু সে সর্বদাই নিজের পদমর্যাদা সম্পর্কে সচেতন থাকত, অন্যদের পীড়ন করত এবং যারা ভিন্নমত পোষণ করত তাদের দূরে সরিয়ে রাখত। তাকে বারবার সতর্ক ও শাসন করা হয়েছিল, কিন্তু তার কোন অনুশোচনা ছিল না। তাকে শেষ পর্যন্ত বহিষ্কার করা হয়। এবং যে সব ভন্ড নেতা এবং খ্রীষ্টবিরোধীদের সাম্প্রতিককালে উন্মোচিত করা হয়েছে এবং বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের অধিকাংশেরই মেধা ও যোগ্যতা ছিল বলেই মনে হয়, কিন্তু তারা সত্য অনুসরণ করেনি। তারা সর্বদাই পদমর্যাদা ও খ্যাতির অনুসরণ করত এবং ঈশ্বর-বিরোধী পথে চলত। কারুর যোগ্যতা যতই মহান মনে হোক না কেন, তাদের পদমর্যাদা যতই উঁচু হোক, যদি তারা সত্যের অনুসরণ না করে, তা হলে ঈশ্বরের দ্বারা উন্মোচিত হওয়া এবং বিতাড়িত হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। সাধারণ যোগ্যতার কয়েকজন ভ্রাতা ও ভগিনীর কথাও আমি চিন্তা করলাম, যাদের দায়িত্ব বিশেষ উল্লেখযোগ্য নয়, কিন্তু তারা হৃদয় দিয়ে দায়িত্বপালন করে সৃষ্ট সত্তার স্থান গ্রহণ করেছে। যখন তারা দুর্নীতি প্রকাশ করে তখন তারা ঈশ্বরের সান্নিধ্যে আসে প্রার্থনা এবং অন্বেষণ করতে, আত্ম-সমীক্ষা করতে এবং ঈশ্বরের বাক্যর মাধ্যমে নিজেদের জানতে। সময়ের সাথে সাথে তাদের ভ্রষ্ট স্বভাবের পরিবর্তন ঘটতে পারে। যখন ভাবি যে ঈশ্বরের স্বভাব কতটা ধার্মিক তখন আমি তা উপলব্ধি করতে পারি। ঈশ্বর কারুর সাথেই অন্যায় আচরণ করেন না। তা আমাদের যোগ্যতা, গুণমান যাই হোক না কেন বা আমরা যে দায়িত্বই পালন করি না কেন, ঈশ্বর প্রত্যেককে সমানভাবে লালন-পালন ও সিঞ্চন করেন এবং পরিস্থিতি তৈরি করেন যাতে আমরা ঈশ্বরের বাক্য অনুভব এবং সত্যের বাস্তবতায় প্রবেশ করতে পারি। মানুষকে উদ্ধার করতে ঈশ্বরের কাজ কত বাস্তব! ঈশ্বরের ইচ্ছা বোঝার পরে, আমি আমার বর্তমান দায়িত্বের প্রতি আর এত বিরূপ রইলাম না, বরং নিজেকে সমর্পণ এবং তা পালন করতে চাইলাম।
ঈশ্বরের কতকগুলি বাক্য আমি পরে পাঠ করি। “আজ, ঈশ্বরের গৃহে যখন তোমরা কোনো দায়িত্ব পালন করো, তা বড় হোক বা ছোট, এতে শারীরিক পরিশ্রমের সাথে যুক্ত কোনো কাজই হোক বা তোমার মস্তিষ্ক ব্যবহারের, তা গির্জার ভিতরে বা বাইরে যেখানেই সম্পাদিত হোক, তোমার সম্পাদিত দায়িত্ব কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। এটা তোমার নির্বাচন কীভাবে হতে পারে? এটা ঈশ্বরের নির্দেশিত। শুধুমাত্র ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্বের কারণেই তুমি চালিত হয়েছ, লক্ষ্যের ও দায়িত্বের বোধ লাভ করেছ, এবং এই কর্তব্য পালন করতে পেরেছ। অবিশ্বাসীদের মধ্যে, অনেক আকর্ষণীয়, বুদ্ধিমান বা সক্ষম ব্যক্তি রয়েছে। কিন্তু ঈশ্বর কি তাদের প্রতি অনুগ্রহ দেখান? না, ঈশ্বর তাদের বেছে নেন নি, তিনি শুধুমাত্র তোমাদের, এই মানুষদের দলকে অনুগ্রহ করেন। তিনি তোমাদের দিয়ে সমস্ত ধরনের ভূমিকা গ্রহণ করান, তাঁর পরিচালনামূলক কার্যে তোমাদের সমস্ত রকমের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করান, আর যখন, পরিশেষে, ঈশ্বরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনার কাজ শেষের পথে আসবে এবং সুসম্পন্ন হবে, তা কতই না গৌরব ও সম্মানের বিষয় হবে! আর তাই, আজ যখন নিজেদের দায়িত্ব পালন করার সময় মানুষ সামান্য কষ্ট ভোগ করে, যখন তারা হাল ছেড়ে দেয় এবং নিজেদের ব্যয় করে, যখন মূল্য পরিশোধ করে, যখন পৃথিবীতে তাদের মর্যাদা, খ্যাতি ও সৌভাগ্য হারায়, যখন এগুলো আর তাদের অধিকারে থাকে না, তখন মনে হয় যেন ঈশ্বর তাদের কাছ থেকে এই সব জিনিস নিয়ে নিয়েছেন—কিন্তু তারা এর থেকেও মূল্যবান ও মহার্ঘ্য কিছু অর্জন করেছে। তারা ঈশ্বরের থেকে কী অর্জন করেছে? দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমেই মানুষ সত্য ও জীবন অর্জন করে। শুধুমাত্র যখন তুমি নিজের দায়িত্ব ভালভাবে পালন করেছ, যখন তোমার উপর ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্ব সম্পূর্ণ করেছ, যখন তুমি তোমার লক্ষ্য এবং তোমার উপর ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্বের জন্য জীবন কাটাও, যখন তোমার কাছে সুন্দর সাক্ষ্য থাকে এবং তুমি একটা সার্থক জীবন যাপন করো—শুধুমাত্র তবেই তুমি একজন প্রকৃত মানুষ! আর আমি কেন বলছি যে তুমি একজন প্রকৃত মানুষ? কারণ ঈশ্বর তোমাকে মনোনীত করেছেন, তিনি তোমাকে তাঁর ব্যবস্থাপনায় ঈশ্বরের জীবের দায়িত্ব পালনের অনুমতি দিয়েছেন, এবং তোমার জীবনের পক্ষে এর চেয়ে বড় মূল্য বা অর্থ আর কিছুই হতে পারে না” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। “ঈশ্বরের সম্মুখে থাকাকালীন তুমি কী বলো বা কী প্রতিশ্রুতি দাও, সে বিষয়ে ঈশ্বর নজর দেন না। তুমি কী করো তার প্রতিই ঈশ্বর লক্ষ্য করেন, কিন্তু তোমার কর্ম কত সুউচ্চ, রহস্যময় বা মহান, সেসব তাঁর বিবেচ্য নয়; এমনকি তুমি যদি ছোট কোনো কাজও করো, যদি তোমার কাজে ঈশ্বর আন্তরিকতা প্রত্যক্ষ করেন, তাহলে তিনি বলবেন, ‘এই ব্যক্তি আন্তরিকভাবেই আমাকে বিশ্বাস করে। এরা কখনোই অতিশয়োক্তি করেনি। এদের আচরণ এদের অবস্থানের সাথে সঙ্গত। এবং ঈশ্বরের গৃহের জন্য হয়তো এরা সুবিশাল কোনো অবদান রাখেনি, এবং এরা দুর্বল ক্ষমতা সম্পন্ন, কিন্তু এরা নিজেদের কর্মে অবিচল থাকে; এদের আন্তরিকতা আছে’। এই ‘আন্তরিকতা’-র মধ্যে কী রয়েছে? এর মধ্যে রয়েছে ঈশ্বরের প্রতি ভীতি ও আনুগত্য, সেইসাথে রয়েছে প্রকৃত বিশ্বাস ও ভালোবাসা; ঈশ্বর যা প্রত্যক্ষ করতে চান, তার সবকিছুই এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অন্যদের কাছে, এই ধরনের লোকেরা হয়তো খুবই সাধারণ, এমনও হতেই পারে যে সে হয়তো রান্না করার কাজ করে অথবা সাফাইয়ের কাজ করে, এমন কেউ যে সাধারণ কোনো একটা কাজ করে। এই ধরনের লোকেরা অন্যদের কাছে বিশেষত্বহীন, তারা বিশাল কিছু অর্জন করেনি, এবং শ্রদ্ধা, প্রশংসা, বা ঈর্ষা করার মতো কিছুই তাদের নেই—তারা শুধুমাত্র সাধারণ মানুষ। তবুও, ঈশ্বর যা চান সেই সবই তাদের মধ্যে বিদ্যমান, সেই সবই তারা নিজেদের জীবনে যাপন করে, এবং তারা সবটুকুই ঈশ্বরকে দেয়। তোমাদের কী মনে হয় ঈশ্বর এর থেকে বেশি আর কী চান? ঈশ্বর এতেই সন্তুষ্ট” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। ঈশ্বরের বাক্য আমাকে দেখিয়েছে আমি যে দায়িত্বই পাই না কেন, তা হল ঈশ্বরের শাসন ও ব্যবস্থাপনা। সমর্পিত হয়ে সর্বান্তঃকরণে তাতে আমার অগ্রসর হওয়া উচিৎ। আমার ক্ষমতা কতটা বা আমি কতটা করতে পারি সেগুলি বিচার্য নয়, আমার যা আছে, তার সবটুকুই আমি নিয়োজিত করব, নিজের সবটুকু উজাড় করে দেব। এটিই ঈশ্বরের ইচ্ছা, এবং একেই নিজের দায়িত্ব পালন বলে।
সাধারণ বিষয়গুলি কিছুদিন পরিচালনা করার পর, আমি বুঝি যে যেমন ভেবেছিলাম এই কাজগুলি সেরকম কোনও পরিশ্রমের নয়। সেই দায়িত্ব উপলব্ধি করার এবং তাতে প্রবেশের জন্য বহু নীতি রয়েছে, এবং এটি সম্পাদনের জন্য প্রকৃত, সত্য-সন্ধানী একটি হৃদয় প্রয়োজন। কিছুটা অনুশীলনের পরে সাধারণ বিষয়গুলি পরিচালনা করে আমি অনেক কিছু অর্জন করি। আমি কিছুটা দক্ষতা অর্জন করি এবং কিছু নীতি বুঝতে পারি, এবং আমি এটিও অনুভব করি যে মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের পরিত্রাণ কতটা বাস্তবসম্মত! দায়িত্বের প্রতি আমার যে ভুল দৃষ্টিভঙ্গি ছিল দায়িত্বের এই পরিবর্তন তার বদল ঘটায় এবং আমি ঈশ্বরের ব্যবস্থায় সমর্পণ স্বীকার এবং কর্তব্যে নিজের যথাসাধ্য দিতে ইচ্ছুক হই। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।