অসুস্থতার মাধ্যমে লব্ধ ফল
২০০৭ সালটা ছিল আমার জীবনের এক বিরাট সন্ধিক্ষণ। গাড়ি দুর্ঘটনায় আমার স্বামী শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। দুই সন্তানই তখনো ছোট পরিবারের জন্য সেটা ছিল কঠিন এক সময়। আমার জন্যও খুব কঠিন ছিল, জানতাম না কীভাবে বের হয়ে আসব। তারপর সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ গ্রহণ করি। ঈশ্বরের বাক্য পড়ে শিখি আমরা জীবনের জন্য ঈশ্বরের কাছে ঋণী, আমাদের ভাগ্য তাঁরই হাতে, সৌভাগ্যের জন্য তাঁকে বিশ্বাস ও উপাসনা করতে হবে। ভরসার মতো কিছু পেলাম। নিয়মিত সমাবেশে যেতে থাকি, উপাসনায় সন্তানদেরও নিয়ে যেতাম আগে থেকেই গির্জায় দায়িত্ব পালন করতাম।
পরে, আমি গির্জার নেতা নির্বাচিত হই আর ঈশ্বরের অনুগ্রহের জন্য ধন্যবাদ জানাই। ভাবি, “নতুন বিশ্বাসী হয়েও, আমি গির্জার নেতা নির্বাচিত হয়েছি। ভালো করে সত্যের অন্বেষণে করতে হবে। যে কোনো মূল্যে ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে, তাহলে অবশ্যই উদ্ধার পাব।” এই চিন্তা সত্যিই দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করে। বেশিরভাগ সময় সুসমাচার প্রচারে ও দায়িত্ব পালনে ব্যয় করি। বন্ধুস্বজনরা আমার বিশ্বাসের বিরোধী ছিল, পড়শিরাও কুৎসা আর ঠাট্টা করত। তখন একটু দুর্বল হতে শুরু করি কিন্তু দায়িত্ব পালনে বিরত হইনি। পরে, আমার স্বামীও ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ গ্রহণ করে দায়িত্ব পালন শুরু করে। এতে খুব খুশি হই। ভাবি, “যতক্ষণ আমরা দায়িত্ব পালন এবং ঈশ্বরের জন্য ত্যাগ করব, তাঁর আশীর্বাদ পাব।” বিশেষ করে যখন ব্রাদার-সিস্টারদের বলতে শুনি কষ্ট করেছি, মূল্য দিয়েছি, ঈশ্বর অবশ্যই আমায় উদ্ধার করবেন, আমি খুব খুশি ছিলাম, ঈশ্বরের আরো সেবা করতে উন্মুখ ছিলাম।
২০১২-এর একদিন দেখি স্তনে একটা শক্ত পিণ্ড, ব্যথাও করে। গুরুতর কিছু হতে পারে ভেবে চিন্তিত হলাম। তারপর ভাবলাম, “হতেই পারে না। আমি প্রতিদিন গির্জায় দায়িত্ব পালন করি। তাঁর জন্য ত্যাগ স্বীকার করা কারো সাথে ঈশ্বর এমন করবেন না। ঈশ্বরের সুরক্ষায়, আমার বড় কিছু হবে না।” এই ভেবে, আমার দুশ্চিন্তা দূর হয় আর আগের মতোই দায়িত্ব পালন করতে থাকি। ২০১৩ সালে, বিশ্বাসীদের উপর সিসিপির নিপীড়ন আরো বাড়ে। আমি ও আমার স্বামী সুসমাচার প্রচারে বেশ পরিচিত ছিলাম তাই সব সময়েই গ্রেফতারের হুমকিতে ছিলাম। আমরা বাড়ি ছেড়ে দূরে চলে যাই, যাতে দায়িত্ব পালন করতে পারি। পরে দেখি আমার স্তনের পিণ্ডটা বড় হচ্ছে চিন্তা হলো এটা বোধহয় কোনো অসুখ। কিন্তু ভাবলাম এত বছরেও তো খারাপ কিছু ঘটেনি আর ঈশ্বর নিশ্চয়ই আমায় রক্ষা করছেন। যতক্ষণ ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করব ও ত্যাগ স্বীকার করব, ঈশ্বর আমায় করুণা করবেন, কোনো কঠিন অসুখ হবে না।
২০১৮-তে, অসুস্থ বোধ শুরু হয় স্বামী আমাকে পরীক্ষা করাতে নিয়ে যায়। ডাক্তার বলে, স্তনের পিণ্ডটা হাঁসের ডিমের মতো বড় হয়ে গেছে বিষয়টি উদ্বেগজনক। বলে তখনই অপারেশন করাটা ঝুঁকিপূর্ণ হবে, আগে কেমো নিয়ে পিণ্ডটা ছোট করে তারপর অপারেশন করা যাবে। “বিষয়টি উদ্বেগজনক”, “কেমোথেরাপি” শব্দগুলো শুনে ভয় পেয়ে যাই। ভাবি, “কেমোথেরাপি শুধু ক্যান্সার রোগীরাই নেয়। আমারও কি ক্যান্সার? এত কম বয়সেই মারা যাব?” বিশ্বাসই হচ্ছিল না। হাসপাতালের করিডোরে একটা বেঞ্চে পড়ে যাই অঝোরে কাঁদতে থাকি।
স্বামী আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “এটা প্রাথমিক পরীক্ষা, ভুল হতেই পারে। আগামীকাল আরেকটি হাসপাতালে তোমার পরীক্ষা করাব।”
পরদিন আরেকটা বায়োপসি করাই। ডাক্তার স্বামীকে বলে আমার অবস্থা ভালো নয়, হতে পারে এটা ক্যান্সার। বলেন আর দেরি করা যাবে না, দুই দিনের মধ্যে অপারেশন করতে হবে।
শুনে আমি পুরো নেতিয়ে গেলাম হৃদয় বরফের মতো জমে গেল। ভাবি, “এটা সত্যিই ক্যান্সার? ক্যান্সারে মানুষ মারা যায়! এটা আমার সাথে কীভাবে হলো?” তারপর ভাবি, “অসম্ভব। বিশ্বাসী হয়ে আমি সবসময় কর্তব্য করেছি, ত্যাগ স্বীকার করেছি, কষ্ট সয়েছি এবং মূল্য দিয়েছি। অন্যের কটূক্তি এবং অপবাদ সয়েছি, সিসিপির দ্বারা নির্যাতিত হয়েছি। কিছুতেই দায়িত্ব পালনে বিরত হইনি। আমার কীভাবে ক্যান্সার হয়? তার মানে আমার উদ্ধার পেয়ে স্বর্গরাজ্যে যাওয়ার কোন আশা নেই? এত বছরের সমস্ত ত্যাগ কি অর্থহীন?” খুব দুঃখ হলো।
সারারাত এপাশ-ওপাশ করলাম, ঘুম হলোই না। কিছুই বুঝছিলাম না। নিজেকে এতখানি ব্যয় করেও, এত অসুস্থ হলাম কীভাবে? ঈশ্বর কেন রক্ষা করলেন না? তারপর অপারেশনের কথা ভাবলাম, দুদিনের মধ্যে করাতে হবে। তা সফল হবে কি না কে জানি … ভীষণ দ্বন্দ্ব অনুভব করে নীরবে ঈশ্বরের প্রার্থনা করলাম: “হে ঈশ্বর, আমি খুব কষ্টে আছি। জানি না কীভাবে এই অবস্থা পার হবো। আলোকিত করুন, পথ দেখান …” তারপর মানুষের প্রতি ঈশ্বরের শেষ এগারোটা প্রয়োজনীয়তায় পড়ি: “৫. তুমি যদি আমার প্রতি অত্যন্ত ভালবাসা সহ সর্বদা খুব অনুগত থেকে থাক, তা সত্ত্বেও তুমি যদি অসুস্থতা, দারিদ্র্য এবং তোমার বন্ধু এবং আত্মীয়দের ছেড়ে যাওয়ার যন্ত্রণা ভোগ কর, অথবা যদি জীবনে অন্য কোন দুর্ভাগ্য সহ্য করে থাক তাহলেও কি আমার প্রতি তোমার আনুগত্য এবং ভালবাসা অব্যাহত থাকবে? ৬. তোমার হৃদয়ে কল্পনা করা কোনকিছুর সঙ্গে যদি আমার করা কোনকিছুই না মেলে, তাহলে তুমি তোমার ভবিষ্যতের পথে কীভাবে চলবে? ৭. তুমি যে জিনিসগুলি পাওয়ার আশা করেছিলে তার কোনওটি যদি তুমি না পাও তাহলেও কি তুমি আমার অনুগামী হয়ে থাকতে পারবে?” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, অত্যন্ত গুরুতর এক সমস্যা: বিশ্বাসঘাতকতা (২))। প্রয়োজনীয়তাগুলো বিবেচনা করে বুঝি এই রোগ দিয়ে ঈশ্বর পরীক্ষা করছেন তাঁর প্রতি আমার প্রকৃত আনুগত্য ও প্রেম রয়েছে কি না। ইয়োবের এমন পরীক্ষার কথা ভাবি। সে সম্পদ ও সন্তানদের হারায়, সারা শরীরে ফোঁড়া হয়। ঈশ্বরের ইচ্ছা বুঝতে না পারলেও, সে ঈশ্বরকে দোষ না দিয়ে নিজেকেই অভিশাপ দেয়, আর যিহোবা ঈশ্বরের প্রশংসা করে। ইয়োব ঈশ্বরে বিশ্বাসী ও অনুগত থেকে শয়তানের সামনে ঈশ্বরের সাক্ষ্য দেয়। আর আমি এত বছর ঈশ্বরে বিশ্বাস ও তাঁর কথার পুষ্টি উপভোগ করেও, ঈশ্বরের কাজ কিছুই বুঝতে পারিনি। যখন আমার ক্যান্সার ধরা পড়ে, ভাবি উদ্ধার পাব না বা স্বর্গরাজ্যের আশীর্বাদ ভোগ করতে পারব না। ভুল বুঝে ঈশ্বরকে দোষারোপ করি। এত বছর ধরে ঈশ্বরে বিশ্বাস করায়, এত ত্যাগ স্বীকার করায়, ভেবেছিলাম ঈশ্বরের উচিত আমাকে অসুস্থ হতে না দেয়া। ঈশ্বর আমায় অনাবৃত করলে তখন বুঝি আমি এসব ত্যাগ তাঁর ইচ্ছা অনুসারে বা সত্যের পালন করে তাঁকে সন্তুষ্ট করতে করিনি। করেছি আশীর্বাদ পেতে, স্বর্গরাজ্যে যেতে—যেন ঈশ্বরের সাথে চুক্তি করছি। ঈশ্বরের প্রতি তথাকথিত আনুগত্য ও প্রেম ছিল কাল্পনিক। কপটতার চূড়ান্ত। ঈশ্বরকে আহত ও হতাশ করেছি।
তারপর ঈশ্বরের বাক্য পড়ি: “সমগ্র মনুষ্যজাতির মধ্যে কে সর্বশক্তিমানের কৃপাদৃষ্টির তত্ত্বাবধান লাভ করে না? কে সর্বশক্তিমানের পূর্বনির্ধারণের মাঝে বাস করে না? মানুষের জীবন ও মৃত্যু কি তার নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী ঘটে? মানুষ কি তার নিজের অদৃষ্টকে নিয়ন্ত্রণ করে? অনেকেই মৃত্যু কামনা করে ক্রন্দন করে, অথচ মৃত্যু তাদের কাছ থেকে অনেক দূরে থাকে; অনেক মানুষই জীবনে শক্তিশালী হতে চায় আর মৃত্যুকে ভয় করে, তবু তাদের অজান্তেই, তাদের মৃত্যুর দিন ঘনিয়ে আসে, অচিরেই তাদের মৃত্যুর অতল গহ্বরে নিমজ্জিত করে; অনেকেই আকাশের দিকে চেয়ে গভীর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে; অনেকেই প্রবল কান্নাকাটি করে, হাহাকার করে, ফুঁপিয়ে কাঁদে; অনেকেই পরীক্ষার মুখোমুখি হয়; আর অনেকেই প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে। মানুষকে আমায় সুস্পষ্টরূপে দেখার সুযোগ দিতে যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে আবির্ভূত হই না, তবু অনেকেই আমার মুখ দর্শনে ভীত, আমি তাদের আঘাত করব, তাদের নস্যাৎ করব ভেবে গভীরভাবে শঙ্কিত হয়। মানুষ কি সত্যিই আমাকে জানে, নাকি জানে না?” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতি ঈশ্বরের বাক্য, অধ্যায় ১১)। ঈশ্বরের বাক্য আমাকে দেখায় ঈশ্বর মানুষের দেহ ও আত্মার উৎস। জীবন-মৃত্যু ঈশ্বরের হাতে, আমাদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। সৃষ্ট সত্ত্বারূপে, আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরের আয়োজনে সমর্পণ করতে হবে। এটা বুঝে, মৃত্যুভয় অনেকটাই কমে গেল। মনে মনে সঙ্কল্প করি: “অপারেশন যেমনই হোক, বাঁচি বা মরি, ঈশ্বরের হাতে জীবন উৎসর্গ করে তাঁর নিয়মে সমর্পণ করব।”
সমর্পণের পর, হৃদয়ে শান্তির ঢেউ বয়ে গেল। অপারেশন রুমে যাওয়ার সময় অনবরত প্রার্থনা করতে থাকি। পরে ডাক্তার বলে অপারেশন খুব ভালো হয়েছে, কিন্তু যাই হোক না কেন, বের করা পিণ্ডটা পরীক্ষা করে জানতে হবে সামনে কী হতে পারে। ভাবি, “অপারেশন ভালো হয়েছে কারণ ঈশ্বর আমায় রক্ষা করেছেন।” অন্য রোগীদের দেখেছি অপারেশনের পর দুর্বল ও দিশেহারা বোধ করতে আর আমি দারুণ বোধ করছিলাম। ওয়ার্ডের অন্যরা বলছিল দেখে মনেই হচ্ছে না আমার অপারেশন হয়েছে। মনে মনে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে থাকি। আরও ভাবি “ছয় বছর আগে স্তনে পিণ্ডটা দেখেছিলাম। ক্যান্সার হলে অনেক আগেই অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। কিন্তু কখনোই কোনো খারাপ অনুভব করিনি। হয়তো এটা ক্যান্সার নয়। আর যদি হয়ও, বিশ্বাস করি ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, তিনি ঠিক করে দেবেন।” কিছু ব্রাদার-সিস্টারের কথা শুনেছিলাম যারা অসুস্থ হয়ে ঈশ্বরে ভরসা করে তাঁর অলৌকিক কাজের সাক্ষী হয়েছিল। আমি সর্বদা ঈশ্বরের জন্য ত্যাগ করেছি, তিনি অবশ্যই আমায় রক্ষা করবেন।
তিন দিন পর, পরীক্ষার ফল জানতে গেলে, সব আশা হতাশায় বদলে নেয়। আমার ক্যান্সার ছিল।
হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম, রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে রইলাম, বারবার করে পড়লাম অঝোরে কাঁদলাম। অনেক্ষণ লাগল নিজেকে সামলে নিতে। নিজেই ভাবলাম, “এই রোগ দিয়ে কি ঈশ্বর আমায় প্রকাশ ও অপসারণ করছেন? আমি কি আর তাঁর সেবা করারও যোগ্য নই? বহু বছর ধরে ঈশ্বরে বিশ্বাস করছি, ত্যাগ স্বীকার করেছি, ঝড়-বৃষ্টিতেও সুসমাচার প্রচার করেছি। ঈশ্বর কি এসব মনে রাখেন না? এ-ই কি আমার ঈশ্বর-বিশ্বাসের পরিণাম?” দুঃখ ক্রমেই বাড়ছিল, যেন সব শক্তি শুষে নিচ্ছিল।
পরে আর কিছুই খেতে বা কথা বলতেও ইচ্ছা করত না। ডাক্তার বলে পুষ্টিকর খাবার খেতে, আরও ব্যায়াম করতে। ভাবি, “আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, পুষ্টিকর খাবার আর ব্যায়ামে কি হবে? আগে বা পরে তো মরবই।” ভীষণ হতাশ হয়ে পরি, কেবলই ভাবতাম, “অনেক ব্রাদার-সিস্টার আগে অসুস্থ ছিল, কিন্তু বিশ্বাস করার পরে সুস্থ হয়ে ওঠে। আর আমি বিশ্বাস করার পর থেকে প্রতিদিন কর্তব্য করেছি। আমার কীভাবে ক্যান্সারে হয়? ভাবতাম, ত্যাগ করলেই পরিত্রাণ পাওয়া যায়। আর এখন, উদ্ধার তো পাবই না, ক্যান্সারে মারা যাব।” ঈশ্বরকে ভুল বুঝে অসংযত ভাবে তাঁকে দোষারোপ করি। হতাশায়, কাঁদতে কাঁদতে ঈশ্বরকে বলি, “হে ঈশ্বর, আমি কষ্ট পাচ্ছি। আমি অসুস্থ, আপনার ইচ্ছা বুঝতে পারছি না। আলোকিত করে আপনার ইচ্ছা বুঝতে পথ দেখান।”
তারপর ঈশ্বরের এই বাক্য পড়ি: “সকল মানুষের জন্যই পরিমার্জনা যন্ত্রণাদায়ক এবং এটা গ্রহণ করা খুবই কঠিন—তবুও এই পরিমার্জনার সময়েই ঈশ্বর তাঁর ন্যায়পরায়ণ স্বভাব মানুষের কাছে সরল করে তুলে ধরেন, মানুষের প্রতি তাঁর প্রয়োজনীয়তাগুলি জনসমক্ষে প্রকাশ করেন, এবং আরও আলোকত করেন, আরও বাস্তবিকভাবে অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন এবং মোকাবিলা করেন; তথ্য ও সত্যের মধ্যে তুলনা করে তিনি মানুষকে নিজের বিষয়ে এবং সত্য সম্বন্ধে আরও বেশি জ্ঞান দান করেন, মানুষকে ঈশ্বরের ইচ্ছা বিষয়ে আরও বেশি উপলব্ধি দান করেন, এইভাবে মানুষকে আরও সত্য এবং বিশুদ্ধ ঈশ্বর-প্রীতির অধিকারী হওয়ার সুযোগ দেন। পরিমার্জনার কার্য নির্বাহের ক্ষেত্রে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যগুলি এমনই। ঈশ্বর মানুষের মধ্যে যত কাজ করেন, তার প্রত্যেকটির নিজস্ব উদ্দেশ্য এবং তাৎপর্য রয়েছে; ঈশ্বর অর্থহীন কাজ এবং মানুষের পক্ষে উপকারী নয় এমন কাজ করেন না। পরিমার্জনার অর্থ ঈশ্বরের সামনে থেকে মানুষজনকে সরিয়ে ফেলা নয়, এমনকি তাদের নরকে ধ্বংস করা-ও নয়। বরং, এর অর্থ পরিমার্জনার কালে মানুষের স্বভাব, তার অভিপ্রায়, পুরনো ধ্যানধারণা, ঈশ্বর-প্রীতি এবং সমগ্র জীবনের পরিবর্তন। পরিমার্জনা মানুষের একটি বাস্তব পরীক্ষা এবং এক প্রকারের বাস্তব প্রশিক্ষণ, এবং একমাত্র পরিমার্জনার সময়েই তার ভালোবাসা তার সহজাত ক্রিয়া সম্পাদন করতে পারে” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, একমাত্র পরিমার্জনার অভিজ্ঞতা লাভ করেই মানুষ প্রকৃত ভালোবাসার অধিকারী হতে পারে)। এগুলোর মাধ্যমে তাঁর ইচ্ছা বুঝতে পারি। তিনি অসুস্থতার সাহায্যে আমার ভেতরের দুর্নীতি, বিদ্রোহ ও দূষিত উদ্দেশ্য প্রকাশ করেন যাতে আমি নিজেকে জেনে, দুর্নীতি স্বভাব ছেড়ে ঈশ্বরের পরিত্রাণ পাই। আর আমি ভাবতাম ঈশ্বর আমাকে বিনাশ করতে চাইছেন, তাই ভুল বুঝে ঈশ্বরকে দোষারোপ করি, আদ্যন্ত হাল ছেড়ে হতাশ হয়ে পড়ি। ত্যাগের মূল্য বেঁধে সেসবের কৃতিত্ব নিয়ে, ঈশ্বরের সাথে তর্ক করার চেষ্টা করি। এমনকি নিজের মৃত্যুকে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করি। বিবেক হারিয়ে ফেলি! ভাবি ঈশ্বরের কাছে আমার এত ঋণ, তাঁর কাছে প্রার্থনা করে জানতে চাই অসুস্থ হয়ে তাঁর কাছে সমর্পণ না করে কেন ভুল বুঝে দোষারোপ করেছি।
তারপর ঈশ্বরের কিছু বাক্য পড়ি। “এত মানুষ আমার প্রতি শুধু এই বিশ্বাস রাখে যে আমি তাদের সুস্থ করতে পারি। কত মানুষ আমার প্রতি শুধু এই বিশ্বাস রাখে যে আমি তাদের দেহ থেকে কলুষিত আত্মাকে বিতাড়িত করতে পারি এবং কত মানুষ বিশ্বাস করে যে তারা আমার থেকে শুধু শান্তি ও আনন্দ পেতে পারে। কত মানুষ আমার প্রতি বিশ্বাস রাখে শুধুমাত্র অধিকতর বস্তুগত সম্পদের আশায়। কত মানুষ আমার প্রতি বিশ্বাস রাখে শুধুমাত্র এই জীবন শান্তিতে অতিবাহিত করার আশায় এবং ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে সুরক্ষিত থাকার আশায়। কত মানুষ আমার প্রতি শুধু নরকের যন্ত্রণা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এবং স্বর্গের আশীর্বাদ লাভের জন্য বিশ্বাস রাখে। কত মানুষ শুধুমাত্র সাময়িক আরামের জন্য আমাকে বিশ্বাস করে, কিন্তু পরলোকের জন্য কিছুই অর্জন করতে চায় না। যখন আমি মানুষের উপর আমার ক্রোধ বর্ষণ করেছিলাম ও তাদের অধিকৃত সব আনন্দ ও শান্তি কেড়ে নিয়েছিলাম, মানুষ তখন সন্দিহান হয়ে পড়েছিল। আমি যখন তাদের নরকের যন্ত্রণা দিয়েছিলাম এবং স্বর্গের আশীর্বাদ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম তখন মানুষের লজ্জা ক্রোধে পরিণত হয়েছিল। মানুষ যখন আমাকে নিরাময় করতে বলেছিল, আমি তাতে কোনো মনোযোগ দিইনি এবং তার প্রতি আমার ঘৃণার উদ্রেক হয়েছিল; মানুষ আমাকে ত্যাগ করে তার বদলে জাদু ও ক্ষতিকর ওষুধের পথ গ্রহণ করেছিল। যখন মানুষ আমার কাছে যা যা দাবি করেছিল সেই সব আমি কেড়ে নিয়েছিলাম, প্রত্যেকে চিহ্নমাত্র না রেখে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। তাই আমি বলি, মানুষ আমাকে বিশ্বাস করে কারণ আমি খুব বেশি অনুগ্রহ করি এবং আমার থেকে তাদের অনেক কিছু পাওয়ার আছে” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, তুমি বিশ্বাস সম্পর্কে কী জানো?)। “এই ধরনের মানুষের ঈশ্বরকে অনুসরণ করার একটাই সহজ লক্ষ্য থাকে, আর সেই লক্ষ্য হল আশীর্বাদ লাভ করা। যা সরাসরি তাদের এই লক্ষ্যপূরণ করে না সেই রকম অন্য কিছুতে মনোযোগ দেওয়ার প্রতি এই ধরনের মানুষ ভ্রুক্ষেপও করে না। তাদের কাছে, আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য ঈশ্বরে বিশ্বাস করার চেয়ে বৈধ আর কোনো লক্ষ্য নেই—এটিই তাদের বিশ্বাসের একমাত্র মূল্য। এই লক্ষ্যপূরণের পথে যা কিছু অপ্রয়োজনীয়, সেগুলি সম্পর্কে তারা একেবারে উদাসীন থাকে। আজকের দিনে যারা ঈশ্বর-বিশ্বাসী তাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই এই কথা প্রযোজ্য। তাদের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য বৈধ বলে মনে হয়, কারণ তারা যেমন ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, তেমনি তারা ঈশ্বরের জন্য নিজেকে ব্যয়ও করে, ঈশ্বরের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করে এবং তাদের কর্তব্য পালন করে। তারা তাদের যৌবন বিসর্জন দেয়, ত্যাগ করে পরিবার এবং কর্মজীবন, এমনকি বছরের পর বছর বাড়ি থেকে দূরে কাটায় নিজেদের ব্যস্ত রেখে। তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য, তারা নিজের স্বার্থ, জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি এবং এমনকি তারা যে অভিমুখ সন্ধান করে তা পর্যন্ত পরিবর্তন করে; কিন্তু নিজেদের ঈশ্বরে বিশ্বাসের লক্ষ্য পরিবর্তন করতে পারে না। নিজস্ব আদর্শ পরিচালনার জন্য তারা নিয়তই ধাবমান হয়; পথ যতই দীর্ঘ হোক না কেন, যতই কষ্ট ও বাধা আসুক না কেন সে পথে, তারা অবিচল থাকে এবং মৃত্যুকে ভয় পায় না। কোন শক্তি তাদের এভাবে নিজেকে উৎসর্গ করতে বাধ্য করে? এই কি তাদের বিবেক? এই কি তাদের মহান ও মহৎ চরিত্র? এই কি মন্দ শক্তিকে শেষ পর্যন্ত পরাভূত করার সংকল্প? এই কি তাদের বিশ্বাস, যা কোনো পুরস্কারের প্রত্যাশা না করে শুধু ঈশ্বরের কার্যে সাক্ষ্য দেয়? এই কি তাদের আনুগত্য, যার জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা অর্জন করার উদ্দেশ্যে তারা সর্বস্ব ত্যাগ করতে ইচ্ছুক হয়? নাকি এ তাদের সর্বদা অসংযত ব্যক্তিগত চাহিদা পরিহার করা ভক্তির মনোভাব? ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার কাজ কখনোই বুঝতে না পেরেও কোনো একজনের এতখানি ত্যাগ সত্যিই এক আশ্চর্য ঘটনা। এই মানুষরা কতখানি ত্যাগ করেছে আপাতত সে আলোচনা আমরা করব না। তবে তাদের আচরণ আমাদের বিশ্লেষণের খুবই যোগ্য। বিভিন্ন সুবিধা তাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত থাকার প্রসঙ্গ বাদ রাখলে, এমনকি আর কোনো কারণ থাকতে পারে যে, যারা কখনই ঈশ্বরকে বুঝতে পারে নি তারাও তাঁর জন্য এত কিছু ত্যাগ করেছে? এখানে আমরা পূর্বের অচেনা একটি সমস্যা আবিষ্কার করি: ঈশ্বরের সাথে মানুষের সম্পর্ক নিছক এক নগ্ন স্বার্থের। এটি আশীর্বাদ গ্রহীতা ও দাতার মধ্যে একটি সম্পর্ক। স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, এটি কর্মচারী এবং নিয়োগকর্তার সম্পর্কের অনুরূপ। কর্মচারী শুধুমাত্র নিয়োগকর্তা প্রদত্ত পুরস্কার পাওয়ার জন্যই কাজ করে। এমন সম্পর্কের মধ্যে কোনো স্নেহ নেই, আছে শুধু লেনদেন। কোনো ভালবাসার আদানপ্রদান নেই, শুধুমাত্র দাক্ষিণ্য এবং করুণা। কোন বোঝাপড়া নেই, আছে শুধু চাপা অসন্তোষ এবং প্রতারণা। কোন অন্তরঙ্গতা নেই, আছে শুধুমাত্র অলঙ্ঘনীয় এক দূরত্ব। এখন যখন বিষয়গুলি এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, কে এই ধারাকে বিপরীতমুখী করতে পারে? আর, এই সম্পর্ক যে কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে সে কথা সত্যকার অর্থে বোঝার ক্ষমতা কতজনের আছে? আমি বিশ্বাস করি যে মানুষ যখন আশীর্বাদ পাওয়ার আনন্দে নিজেকে নিমজ্জিত করে, তখন কেউ কল্পনাও করতে পরে না যে ঈশ্বরের সাথে এই ধরনের সম্পর্ক কতটা বিব্রতকর এবং কুৎসিত” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, পরিশিষ্ট ৩: মানুষ একমাত্র ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার মধ্যেই উদ্ধার পেতে পারে)। ঈশ্বরের শানিত বাক্য হৃদয়ে বিধল, খুব লজ্জা পেলাম। আশীর্বাদ পাওয়াই কি আমার বিশ্বাসের লক্ষ্য ছিল না, যেমন ঈশ্বর বলেছেন? আমি যেভাবেই ত্যাগ স্বীকার করতে যাই না কেন, স্রেফ ঈশ্বরের সাথে চুক্তি করছিলাম, আশীর্বাদ পেতে। ঈশ্বরের আনুগত্য বা সৃষ্ট সত্তার কর্তব্য করছিলাম না। যখন নতুন বিশ্বাসী ছিলাম, ভাবতাম আমার উপর কখনো বিপর্যয় আসবে না, ঈশ্বরের আশীর্বাদ পেয়ে তাঁর রাজ্যে প্রবেশ করব। তাই আমার সবটা দিয়ে, সব বাধা এড়িয়ে কর্তব্য করতাম। এমনিক বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসারও সময় পেতাম না। অন্যদের উপহাস ও অপবাদ শোনা, সিসিপির দ্বারা নির্যাতিত হওয়া—কোনোকিছুই বাধা হতে পারেনি। এসব কারণে ভাবতাম আমি ঈশ্বরের প্রতি অনুগত তিনি অবশ্যই আমায় প্রশংসা ও আশীর্বাদ করবেন। যখন জানলাম আমার ক্যান্সার, মনে হয়েছিল এটাই শেষ, রাজ্যে প্রবেশের সব স্বপ্ন ধুলোয় মিশে গেল। ভুল বুঝে ঈশ্বরকে দোষ দিচ্ছিলাম, তর্ক করছিলাম, নিজের মৃত্যুকেও তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চাইছিলাম। তথ্যপ্রমাণ পেয়ে বুঝলাম, দায়িত্ব পালন, কষ্টভোগ ও নিজেকে ব্যয় করি বিনিময়ে ভালো গন্তব্য পেতে। ঈশ্বরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল “কর্মচারী ও নিয়োগকর্তার অনুরূপ।” প্রতিটি মূল্যের জন্য আমি পুরস্কার চাইতাম। প্রকৃত ঈশ্বরপ্রেম ছিল না। তাঁকে ব্যবহার করার, ঠকানোর চেষ্টা করছিলাম। বিশ্বাসের অমন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে, ঈশ্বর আমাকে কেবল ঘৃণাই করতে পারেন। ঈশ্বর সেই অসুস্থতা দিয়ে না জাগালে, আমি বিশ্বাসের ভুল ধারণা আঁকড়ে থাকতাম এবং শেষ পর্যন্ত ঈশ্বর আমায় পরিত্যাগ করতেন। উপলব্ধি করে আমার প্রচণ্ড অনুশোচনা হয়। নতজানু হয়ে ঈশ্বরে প্রার্থনা করি। বলি, “হে ঈশ্বর, এই অসুস্থতা দিয়ে যদি আমাকে প্রকাশ না করতেন, বিশ্বাস সম্পর্কে আমার ভুল ধারণা কখনোই বুঝতে পারতাম না। আপনার বাক্যের বিচার ও উদ্ঘাটন আমার আত্মাকে জাগ্রত করেছে। নিজের ভুল উদ্দেশ্য শুধরে আশীর্বাদের প্রত্যাশা ত্যাগ করতে চাই। সুস্থ হই বা না হই, বাঁচি বা মরি, আপনাতে সমর্পিত হতে চাই।” প্রার্থনার পরে খুব শান্তি অনুভব করলাম, অনেক ভালো অবস্থায় ছিলাম। পরের দিনগুলিতে, নিয়মিত ব্যায়াম করি, পুষ্টিকর খাবার খাই। স্বাস্থ্যের দ্রুত উন্নতি হয়। কিছুদিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাই।
বাড়ি ফিরে, দেখতাম আমার স্বামী সন্তানরা সুসমাচার প্রচার ও দায়িত্ব পালন করছে, কিন্তু আমি পারতাম না, বিছানায় পরে থাকতাম। আমার খারাপ লাগতে শুরু করে। জানতাম না কবে পুরো সুস্থ হব বা আদৌ কোনোদিন কর্তব্যে ফিরতে পারব কিনা। কর্তব্য করতে না পারলে, বেঁচে থেকে কি লাভ? আর উদ্ধারই বা পাব কীভাবে? বুঝতে পারি আশীর্বাদের আকাঙ্ক্ষা আবার মাথা চাড়া দিয়েছে। দ্রুত ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে তাঁর এই বাক্য পড়ি: “সমস্ত দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ নিজেদের জন্য বাঁচে। প্রত্যেক মানুষই নিজের জন্য এবং শয়তান সবচেয়ে পিছনের জনকে দখল করে—এটাই হল মানবপ্রকৃতির সারাংশ। মানুষ তাদের নিজেদের স্বার্থে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে; তারা যখন সমস্ত কিছু পরিত্যাগ করে এবং ঈশ্বরের জন্য নিজেদের ব্যয় করে, তখন তা আশীর্বাদ পাওয়ার জন্যই; এবং তারা যখন তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকে, তখন তা পুরস্কৃত হওয়ার জন্য। সংক্ষেপে, এই সমস্ত কিছুই আশীর্বাদ পাওয়া, পুরস্কৃত হওয়া এবং স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করার উদ্দেশ্যেই করা হয়। সমাজে মানুষ তার নিজের সুবিধার জন্যই কাজ করে, এবং ঈশ্বরের গৃহে তারা আশীর্বাদ লাভের জন্য কর্তব্য সম্পাদন করে। আশীর্বাদ অর্জনের স্বার্থে মানুষ সমস্ত কিছু পরিত্যাগ করে এবং প্রচণ্ড যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে: মানুষের শয়তানোচিত স্বভাবের এর থেকে ভালো প্রমাণ আর হয় না” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। ঈশ্বরের বাক্যের সাহায্যে বুঝি বিশ্বাস নিয়ে ঈশ্বরের সাথে দর কষাকষি করেছিলাম আর মনমতো ফল না পাওয়ায় ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও প্রতিবাদ করেছিলাম কারণ শয়তানের বিষ আমার আত্মাকে নিয়ন্ত্রণ করছিল। “প্রত্যেক মানুষই নিজের জন্য এবং শয়তান সবচেয়ে পিছনের জনকে দখল করে” এবং “লাভ না হলে আঙুলও তুলব না”—এসব শয়তানসুলভ দর্শন। যা কিছু করেছি, নিজের জন্য, নিজের সুবিধার জন্য। কী স্বার্থপর আর খারাপ ছিলাম। এমনকি বিশ্বাসেও, কেবল আশীর্বাদ ও পুরস্কার পাওয়ার জন্যই সংগ্রাম করেছি। সত্য অন্বেষণে বা স্বভাবগত পরিবর্তনে মনই দিইনি। যখন আকাঙ্ক্ষিত আশীর্বাদ পাইনি, শয়তানসুলভ প্রকৃতি বেরিয়ে আসে, ঈশ্বরকে ভুল বুঝে দোষারোপ করি, ঈশ্বরের জন্য যা করেছি তার জন্য অনুশোচনা হয়। পৌল প্রভুর জন্য কাজ করে অনেক কষ্ট করে, কিন্তু সত্যপ্রেমী ছিল না, ঈশ্বরকে জানার বা স্বভাব পরিবর্তনের চেষ্টা করেনি। কেবল কষ্ট ও ত্যাগের বিনিময়ে ন্যায়পরায়ণতার কিরীট চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত, তার শয়তানোচিত স্বভাব বদলায়নি, তাই তার অহংকার সব কিছুকে ছাড়িয়ে যায়, সাক্ষ্য দেয় যে সে-ই স্বয়ং খ্রীষ্ট লোকদের তার সামনে আনে। তা ঈশ্বরের স্বভাবকে ক্ষুব্ধ করে, সীমাহীন শাস্তি পায় সে। জানতাম শয়তানের বিষে জীবন যাপন করলে, আমারও পৌলের পরিণতি হবে। বিরোধিতার জন্য ঈশ্বর শাস্তি দেবেন। বুঝলাম সত্যান্বেষণ না করে আশীর্বাদ চাওয়া কতটা বিপজ্জনক। ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ ছিলাম। তাঁকে ধন্যবাদ দিলাম নিজের বিশ্বাস অনুসরণের ভুল প্রেক্ষিত বোঝাতে এই অসুস্থতার মাধ্যমে আত্মসমীক্ষার সুযোগ দেওয়ার জন্য, বুঝলাম যে ঈশ্বর বিরোধিতার ভুল পথে হাঁটছিলাম।
তারপর ঈশ্বরের বাক্য পড়লাম: “ঈশ্বর চিরকালই সর্বশ্রেষ্ঠ, চিরকালই শ্রদ্ধেয়, আর মানুষ চিরকালই নিকৃষ্ট, চিরকালই গুণহীন। এর কারণ, ঈশ্বর চিরকালই আত্মত্যাগ করেন, মানবজাতির জন্য নিজেকে নিবেদন করেন। অথচ মানুষ সবসময় নিজের কথাই ভাবে, নিজের জন্যই তার সব প্রয়াস। ঈশ্বর সর্বদা সর্ব প্রকার কষ্ট সহ্য করেও চেষ্টা করেন মানবজাতির অস্তিত্বরক্ষার জন্য, তথাপি মানুষ আলোর অথবা ন্যায়পরায়ণতার জন্য কোনো অবদানই রাখে না। যদি কখনও একবারের জন্যে কোনো চেষ্টা করেও, সে চেষ্টা একটা আঘাতও সহ্য করতে পারে না, কারণ তার সব প্রচেষ্টাই সবসময় নিজের জন্য, অপরের জন্য নয়। মানুষ সর্বদা স্বার্থপর, আর ঈশ্বর চিরকালই নিঃস্বার্থ। যা-কিছু ন্যায়, মঙ্গলজনক এবং সুন্দর, ঈশ্বর তার উৎস। অপরপক্ষে, মানুষের সাফল্য শুধুমাত্র সমস্ত অসুন্দর আর অশুভর প্রকাশে। ঈশ্বর কখনও তাঁর ন্যায়পরায়ণতা ও সুন্দরের সারসত্যকে পরিবর্তন করবেন না, কিন্তু মানুষ যে-কোনও সময়, যে-কোনও পরিস্থিতিতে ন্যায়পরায়ণতার পথ পরিত্যাগ করতে, ঈশ্বরের থেকে অনেক দূরে সরে যেতে পুরোপুরি সক্ষম” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরের স্বভাব বোঝা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়)। বাক্যগুলো ভেবে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। মানবজাতিকে বাঁচাতে ঈশ্বর কি বিপুল মূল্য দিয়েছেন যা শয়তান কত গভীরভাবে ভ্রষ্ট করেছে। দুই হাজার বছর আগে, মানবজাতির মুক্তির জন্য ঈশ্বর যিহুদীয়ায় প্রথম দেহধারণ করেন। ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের কটূক্তি, অপমান ও নিপীড়ন সহ্য করেন। শেষে, তাকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়, যার মাধ্যমে মুক্তির কাজ শেষ হয়। আজ, ঈশ্বর চীনে দ্বিতীয়বারের মতো দেহধারণ করেছেন মানবজাতিকে চূড়ান্ত পরিশুদ্ধ ও পরিত্রাণ করতে। সিসিপি তাঁর পিছু ধাওয়া নিয়েছে, নিপীড়ন করছে, তাঁর মাথা রাখার ঠাঁই নেই, বিশ্রামের জায়গা নেই, আর বিশ্বাসীদের ভুল বোঝা, দোষারোপ, অবাধ্যতা ও বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছেন। তবুও ঈশ্বর মানবজাতিকে উদ্ধারের চেষ্টা থামাননি পরিবর্তে নীরবে যথাসাধ্য করে যাচ্ছেন, বিনিময়ে কিছুই চাইছেন না। আর, আমি কর্তব্য পালনে ত্যাগ স্বীকারের বিনিময়ে আশীর্বাদ ও গন্তব্য কামনা করেছি। বিবেক-বিরুদ্ধ ভাবে ঈশ্বরের সাথে দরকষাকষি করেছি। কত স্বার্থপর আর ঘৃণ্য ছিলাম! আমি প্রকৃত বিশ্বাসী ছিলাম না। বুঝতে পেরে, অনুতাপ করব বলে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি।
একদিন নিষ্ঠাপালনে, ঈশ্বরের এই বাক্য পড়ি: “ঈশ্বরের ওপর প্রকৃত বিশ্বাসের অর্থ নিম্নরূপ: সব কিছুর উপর ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব রয়েছে এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে, কেউ তাঁর বাক্য ও তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করে, তার ভ্রষ্ট স্বভাবকে শুদ্ধ করে, ঈশ্বরের ইচ্ছা পূরণ করে এবং ঈশ্বরকে জানতে পারে। শুধুমাত্র এই ধরনের একটি যাত্রাকেই ‘ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস’ বলা যেতে পারে” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ভূমিকা)। “ঈশ্বর বিশ্বাসের উদ্দেশ্য হল তাঁকে সন্তুষ্ট করা এবং তিনি যে স্বভাব চান তা যাপন করা, যাতে তাঁর কর্ম ও মহিমা এই অযোগ্য মানুষদের দলের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই হল ঈশ্বর-বিশ্বাসের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি, এবং এই লক্ষ্যটিই তোমাদের অনুসন্ধান করা উচিত। ঈশ্বর-বিশ্বাস সম্পর্কে তোমার সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত এবং ঈশ্বরের বাক্য অর্জনের চেষ্টা করা উচিত। তোমাকে ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পান করতে হবে এবং অবশ্যই সত্য যাপনে সক্ষম হতে হবে, এবং বিশেষত, অবশ্যই তাঁর ব্যবহারিক কার্য সমগ্র বিশ্বময় তাঁর বিস্ময়কর কীর্তি, এবং সেইসাথে, দেহরূপে তাঁর দ্বারা কৃত বাস্তবিক কর্ম চাক্ষুষ করতে সক্ষম হতে হবে। মানুষ, তাদের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, উপলব্ধি করতে পারে, যে, ঈশ্বর কীভাবে তাদের উপর তাঁর কাজ করেন এবং তাদের প্রতি তাঁর কী ইচ্ছা রয়েছে। এই সমস্তকিছুর উদ্দেশ্য হল মানুষদের শয়তানোচিত ভ্রষ্ট স্বভাব নির্মূল করা। তোমার মধ্যেকার সকল মলিনতা এবং ন্যায়বিহীনতাকে পরিহারের পরে, মন্দ অভিপ্রায় অপসারণের পরে, ঈশ্বরে প্রকৃত বিশ্বাস বিকশিত হওয়ার পরে—কেবলমাত্র প্রকৃত বিশ্বাসের দ্বারাই তুমি ঈশ্বরকে যথার্থরূপে ভালবাসতে পারবে” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, যাদের নিখুঁত করা হবে তাদের অবশ্যই পরিমার্জনা ভোগ করতে হবে)। ঈশ্বরের বাক্য দেখায় বিশ্বাসে কোন লক্ষ্য অনুসরণ করা উচিত। নিজেদের অভিজ্ঞতায় যতই অনুশাসনবদ্ধ হই না কেন, ঈশ্বর আমাদের পরিশুদ্ধ ও পরিবর্তিত করার সব ব্যবস্থা করেন। জানতাম এসব আনুগত্যের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে, ভ্রষ্ট স্বভাবকে নিরাময় করতে সত্যের সন্ধান করতে হবে, ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে ও তাঁর প্রেমের প্রতিদান দিতে হবে। এ-ই একমাত্র সঠিক অন্বেষণ। আশীর্বাদের জন্য ঈশ্বরের সাথে আর দরকষাকষি করতে চাইনি। অসুস্থতা যেদিকেই এগোক, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ঈশ্বরের উপাসনা করব। যদি ঈশ্বর আবার কর্তব্য পালনের সুযোগ দেন, আশীর্বাদের জন্য দরকষাকষি করব না। কেবল দায়িত্বে সত্যের অন্বেষণ করব, নিজের স্বভাবে বদলাতে চাইব।
দ্রুতই, ঈশ্বর আমায় পরীক্ষায় ফেলেন।
একদিন, আমার মেয়ে গির্জার সমাবেশ থেকে ফিরে বলে পুলিশ বিশ্বাসীদের জলদানকারী সিস্টার ওয়াং-এর পিছু নিয়েছে তার জায়গা নেওয়ার মতো কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। সে জিজ্ঞাসা করে, গির্জায় কে সেই কাজ করতে পারবে। এই কাজ আগে করেছি, ভালোভাবেই জানতাম, তাই ভাবি, আমিই ভালো পারব। আবার মনে হয়, কুড়ি দিন আগেই আমার অপারেশন হয়েছে। ক্ষত তখনও পুরোপুরি সারেনি, আবহাওয়াও গরম হয়ে উঠছিল। বাড়িতে, দিনে কয়েকবার ক্ষত পরিষ্কার করতে হতো। যদি দায়িত্বটা নিই আর ব্যস্ততায় ক্ষত পরিষ্কার রাখতে না পারি, তা ফুলে যেতে পারে। হাতে দিয়ে সব করতেও পারতাম না, রোজ স্কুটারে ঝাঁকুনি খেতে খেতে ছোটাছুটি করলে ক্ষত আর সারবে না, অসুস্থ হয়ে পড়ব। এই অবস্থায়, দায়িত্বটা নেওয়া আমার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে। তারপর ভাবি, “এখন পর্যন্ত এর যোগ্য কাউকে পাওয়া যায়নি। আমি দায়ভার না নিলে, ঈশ্বরের ঘরের কাজ কি পিছিয়ে যাবে না? কী করা উচিত?” তখন ঈশ্বরের বাক্যের একটি অনুচ্ছেদ মনে আসে: “ঈশ্বরের প্রতি তোমার বিশ্বাসে এবং সত্যের সাধনায় তুমি যদি একথা বলতে পারো, ‘ঈশ্বর আমার সাথে যে কোনোরকম অসুস্থতা বা অপ্রীতিকর ঘটনাই ঘটতে দিন না কেন—ঈশ্বর যাই করুন না কেন—আমি অবশ্যই তাঁকে মান্য করব এবং একজন সৃষ্ট সত্তা হিসাবে নিজের অবস্থানেই থাকবো। সমস্তকিছুর আগে, আমাকে সত্যের এই দিক, অর্থাৎ আনুগত্য, অনুশীলন করতে হবে, তা বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে, এবং ঈশ্বরের আনুগত্যের বাস্তবিকতায় জীবনযাপন করতে হবে। উপরন্তু, ঈশ্বর আমার উপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন এবং আমার যে দায়িত্ব পালন করা উচিত, সেগুলো আমি কিছুতেই পরিহার করবো না। এমনকি আমার শেষ নিঃশ্বাসেও আমাকে অবশ্যই আমার দায়িত্ব পালন করতে হবে,’—একথা বলতে পারাই কি সাক্ষ্য দেওয়া নয়?” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র ঈশ্বরের বাক্যের বারংবার পাঠ ও সত্যের ধ্যানের মধ্যেই রয়েছে অগ্রগতির পথ)। ঈশ্বরের বাক্য আমায় অনুশীলনের পথ দেখায়। যদিও তখনো ক্ষতটা পুরোপুরি সারেনি, কিন্তু আমি ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থ না ভেবে নিজেকে নিয়ে ভাবতে পারি না। বহু বছর আশীর্বাদের জন্য ঈশ্বরের সাথে দরকষাকষি করেছি। কখনই ঈশ্বরের ইচ্ছার কথা ভাবিনি বা তাঁকে সন্তুষ্ট করিনি। ঈশ্বরের কাছে ঋণী ছিলাম! সেই কাজ আশু-প্রয়োজনীয়, আমি তা করতে চাইলাম। স্বাস্থ্যের পরোয়া না করে, চাইছিলাম কেবল ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে। ঈশ্বরের বাক্য পথ দেখাল, রোগ আর বাধা হতে পারল না স্বেচ্ছায় সেই কাজের দায়িত্ব নিলাম।
কর্তব্যে যথাসর্বস্ব দিয়ে ঈশ্বরের অলৌকিক সুরক্ষার সাক্ষী হলাম। এক সপ্তাহ পরে, আমার ক্ষত খারাপ তো হলোই না, বরং পুরোপুরি সেরে গেল। ডাক্তার বলে, “এসব অপারেশনের পরে হাতে লিম্ফেডেমা হয়েই থাকে। মাসখানেক পরেও রোগীকে কেমোথেরাপি নিতে হয়।” কিন্তু দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে, ক্ষতের যন্ত্রণা বন্ধ হয়ে যায়, হাতে কোনো লিম্ফেডেমা ছিল না, কেমোথেরাপি নিতেও যাইনি। এখন অপারেশনের এক বছরেরও বেশি হয়ে গেছে, আমি পুরোপুরি ভালো আছি। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ তাঁর অলৌকিক কাজের জন্য। আমি ব্যক্তিগতভাবে তার এই বাক্য চাক্ষুষ করেছি: “ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারেই জীবিত বা মৃত যে কোনো জিনিস ও সমস্ত কিছু স্থানান্তরিত হবে, পরিবর্তিত হবে, পুনর্নবীকৃত হবে, আর বিলীন হয়ে যাবে। ঈশ্বর এভাবেই সমস্ত বস্তুর উপরে আধিপত্য করেন” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বর হলেন মানুষের জীবনের উৎস)। ঈশ্বরের সাথে দরকষাকষি করা বন্ধ করেছি, সত্যিই ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও নিয়ম দেখেছি তাঁর অলৌকিক কীর্তির সাক্ষী হয়েছি!
অসুস্থতার এই অগ্নিপরীক্ষা বাইরে থেকে দুর্যোগ মনে হলেও, তাতে ঈশ্বরপ্রেম প্রচ্ছন্ন ছিল। ঈশ্বরের বাক্যের আলোয় আর নির্দেশনায় নিজের আশীর্বাদের আকাঙ্ক্ষা আর অশুদ্ধতা কিছুটা বুঝতে পারি। আমার মধ্যে ঈশ্বরের আনুগত্য জন্মায়। সত্যিই শিখলাম অসুস্থতার অভিজ্ঞতা ছিল আমাকে পরিশুদ্ধ ও পরিবর্তিত করতে ঈশ্বরের আশীর্বাদ। পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।