সুসমাচার প্রচারের সঠিক মানসিকতা

01-04-2023

একবার এক ভ্রাতা আমাকে বলল যে তার ছোট বোন লি পিং ছোটবেলা থেকেই ঈশ্বরে বিশ্বাসী, আর কয়েক বছর ধরে প্রভুর হয়ে উৎসাহের সাথে কাজ করেছে, তার বিশ্বাস অকৃত্রিম। সে চায় আমি তার বোনকে সুসমাচার শোনাই। খুব খুশি হয়ে রাজি হই। কিন্তু যখন লি পিংয়ের সাথে কথা বলি, তখন সে উঠে দাঁড়িয়ে ঘাবড়ে গিয়ে বলে, “আমাদের যাজক বলেছে যে ভণ্ড খ্রীষ্টরা অন্তিম সময়ে আবির্ভূত হয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে আর প্রভুর প্রত্যাবর্তনের সব খবর মিথ্যা। তুমি পূর্বের বজ্রালোকের জন্য প্রচার করছ। আমি শুনব না। আমরা অন্যান্য বিষয়ে কথা বলতে পারি, কিন্তু বিশ্বাসের বিষয়ে আমার সাথে কথা বলবে না।” সে যাজকের গুজব আর মিথ্যাচারে গভীরভাবে বিভ্রান্ত হয়েছে দেখে, ওকে বলার চেষ্টা করলাম, “বোন, তুমি কি জানো ‘পূর্বের বজ্রালোক’ বলতে কী বোঝায়? প্রভু যীশু স্পষ্টভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করছিলেন, ‘বিদ্যুতের ঝলক যেমন হঠাৎ পূর্বদিক থেকে পশ্চিমদিক পর্যন্ত সমগ্র আকাশকে আলোকিত করে, ঠিক সেইভাবে মানবপুত্রের আগমন হবে(মথি ২৪:২৭)। ‘পূর্বের বজ্রালোক’ বলতে ঈশ্বরের কাজ আর বাক্য। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রকাশিত সমস্ত সত্য পুবপানে আবির্ভূত এক মহান আলোর মতো, তাই এর নাম ‘পূর্বের বজ্রালোক’। সত্যের এই আলো ইতিমধ্যেই পূর্ব থেকে পশ্চিমে ভাস্বর হয়ে উঠেছে। প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী পুরোপুরি পূর্ণ হয়েছে। পূর্বের বজ্রালোক প্রভুর আবির্ভাব আর কাজ কিনা একবার দেখে নেওয়া যাক।” সে শুনবেই না, বলল, “আমাদের যাজক বলেছে যদি কেউ আমাদের থেকে আলাদা প্রচার করে তবে আমরা তা শুনব না, সেসব যতই ভালো শোনাক না কেন। এমনকি আমরা আমাদের মা-বাবা বা ভাইবোনদের কাছ থেকেও শুনতে পারব না, আর কোনো অপরিচিতকে একেবারেই স্থান দেব না।” এটা প্রভুর ইচ্ছা নয়। বাইবেল বলে, “অপরিচিতের সেবা করতে কখনও ভুলে যেও না। কারণ এইভাবেই কেউ কেউ অজান্তেই স্বর্গদূতদের আপ্যায়িত করেছে” (হিব্রু ১৩:১-২)। ধৈর্য ধরে উত্তর দিলাম, “বোন, বাইবেল বলে, ‘শোনার মত কান যার আছে সে শুনুক, পবিত্র আত্মা সকল মণ্ডলীকে কী বলছেন(প্রকাশিত বাক্য ২:৭)। ‘মাঝরাতে সাড়া পড়ে গেল, “বর আসছে, বর আসছে, তাকে বরণ করতে এগিয়ে যাও”(মথি ২৫:৬)। এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো আমাদের বলে যে প্রভুকে স্বাগত জানাতে, আমাদের তাঁর কণ্ঠস্বর শুনতে হবে। যদি কেউ সাক্ষ্য দেয় যে প্রভু ফিরে এসেছেন, তবে আমাদের তাঁর সাথে দেখা করার জন্য বেরিয়ে পড়া উচিত। একমাত্র এভাবেই আমরা প্রভুকে স্বাগত জানানোর সুযোগ পাব। যদি কেউ সাক্ষ্য দেয় যে প্রভু ফিরে এসেছেন, তবুও আমরা যদি না শুনি বা খতিয়ে না দেখি তাহলে, তাঁকে স্বাগত জানানোর সুযোগ হাতছাড়া করব!” কিন্তু সে শুনতে অস্বীকার করে আর চলে যাওয়ার একটা অজুহাত বানায়। লি পিংয়ের মনোভাব আমাকে বেশ কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে। সে যদি শুনতেই না চায়, তাহলে কীভাবে তার কাছে সুসমাচার প্রচার করতে পারি? কিন্তু জানতাম যে এটা সঠিক মনোভাব নয়। এমনকি প্রভুর প্রত্যাবর্তনের সাক্ষ্য তখনও দিইনি, তাহলে এত সহজে হাল কেন ছেড়ে দেব? যতক্ষণ সে প্রকৃত বিশ্বাসী, ততক্ষণ তার কাছে সুসমাচার প্রচারের জন্য জন্য আমার যথাসাধ্য করতে হবে।

আমরা পরে লি পিংয়ের বাড়িতে গিয়েছিলাম তার কাছে সুসমাচার জানাতে, কিন্তু সে আমাদের দেখে দরজা বন্ধ করে দেয় আর আমরা যাই বলি না কেন, খুলতেই চায়নি। আমাদের কিছুই করার ছিল না, তাই চলে এলাম। আরও কয়েকবার আমরা গিয়েছিলাম কিন্তু সে দরজা খোলেনি, বলে, “আমাদের যাজক বলেছে, তোমরা ভেড়া চুরি করতে চাও, আর আমাদের পূর্বের বজ্রালোক থেকে আসা সবাইকে পিটিয়ে মেরে লাশ নদীতে ফেলে দিতে হবে, অথবা তাদের বিষয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাতে হবে। এখান থেকে চলে যাও, দেখো, আমাদের যাজক যেন তোমাদের দেখতে না পায়।” তার কথা শুনে আমার সত্যিই অস্বস্তি হয়েছিল আর হাল ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই সময় নিশ্চিত ছিলাম না যে হাল ছেড়ে দেওয়া ঈশ্বরের ইচ্ছানুরূপ কি না, তাই নীরবে প্রার্থনা করলাম। তখন ঈশ্বরের বাণীর একটা অনুচ্ছেদ মনে পড়ল: “সুসমাচার প্রচারের ক্ষেত্রে, তোমাকে তোমার দায়িত্ব পালন করতেই হবে, এবং যাদের কাছে তুমি তা প্রচার করছো তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে আন্তরিকভাবে মেলামেশা করতে হবে। ঈশ্বর মানুষকে যত দূর সম্ভব উদ্ধার করেন, এবং তোমাকে ঈশ্বরের ইচ্ছার বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে, প্রকৃত পথের অন্বেষণ ও বিবেচনা করছে এমন কাউকে কোনোক্রমেই তুমি দায়সারাভাবে উপেক্ষা করবে না। … যতক্ষণ তারা প্রকৃত পথ বিবেচনা করতে ইচ্ছুক এবং সত্যের অনুসন্ধান করতে সক্ষম, তোমার উচিত তাদের আরও ঈশ্বরের বাক্য পড়ানো এবং তাদের সত্যের সহকারিতা করানোর জন্য যথাসাধ্য করা, তাদের ধারণার ও প্রশ্নগুলির সমাধানে ঈশ্বরের কাজের সাক্ষ্য প্রদানের জন্য করণীয় সমস্ত কিছু করা উচিত, যাতে তুমি তাদের অর্জন করতে পারো এবং ঈশ্বরের সম্মুখে আনতে পারো। এটাই সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার নীতির সাথে সঙ্গত(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, সুসমাচারের প্রচার এমন এক কর্তব্য যার প্রতি সকল বিশ্বাসী মর্যাদাবদ্ধ)। ঈশ্বরের বাণীর কথা ভেবে লজ্জিত হয়েছিলাম। ঈশ্বর মানুষকে যতটা সম্ভব রক্ষা করেন। যতক্ষণ বিন্দুমাত্র আশার আলো ততক্ষণ ঈশ্বর কাউকে নিয়ে হাল ছেড়ে দেন না। সুসমাচার প্রচারক হিসাবে আমার সব চেষ্টা করা উচিত। যতক্ষণ কেউ সুসমাচার প্রচারের নীতির সাথে সঙ্গত, ততক্ষণ আমার উচিত তাদের কাছে ধৈর্য ধরে, ভালবেসে প্রচার করা, আর নিজের দায়িত্ব পালন করা। এটাই আমার কর্তব্য। কিন্তু সামান্যতম অসুবিধার সম্মুখীন হয়েই পিছু হটে হাল ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। দায়িত্বের প্রতি আদৌ নিষ্ঠাবান ছিলাম না। এটা বুঝতে পেরে সত্যিই অপরাধবোধে ভুগেছিলাম। প্রার্থনা করে এমটা দৃঢ়সংকল্প নিয়েছিলাম। যে লি পিং আমার সাথে যেমন আচরণই করুক না কেন, যেহেতু সে ভালো মানুষ আর সত্যিকারের বিশ্বাসী, তাই হাল ছাড়ব না, তাকে ঈশ্বরের বাণী আর তাঁর কাজের বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়ে ঈশ্বরের শরণে আনব। যখন প্রথম অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের কাজের অনুসন্ধান করেছিলাম, তখন ভ্রাতা আর ভগিনীরা ধৈর্য ধরে সত্য নিয়ে আলোচনা না করলে এবং আমার পূর্বধারণাগুলোর মীমাংসা না করলে হয়তো সেই ধর্মেই থাকতাম। সুসমাচার প্রচার করার জন্য অবিশ্বাস্যরকমের ভালোবাসা আর ধৈর্যের প্রয়োজন, প্রয়োজন দায়িত্বপালনে আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করার। এটাই ঈশ্বরের ইচ্ছা।

আশ্চর্যজনকভাবে, পরের বার যখন আমরা লি পিংয়ের বাড়িতে গেলাম, তখন সে আমাদের জন্য দরজা খুলে দিল। কিন্তু কথা না বলে নির্লিপ্ত হয়ে রইল। ভেবেছিলাম যতদিন সে দরজা খুলবে ততদিন আমরা আলোচনা করার সুযোগ পাবো, একটু করে শুনতে শুনতে সে ধীরে ধীরে বুঝতে পারবে। আমরা এই সুযোগে তার সাথে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। বলেছিলাম, “বোন, প্রভুর আগমনকে স্বাগত জানানো একটা বড় ব্যাপার। আমরা প্রকৃত পথ অনুসন্ধান করার সময় প্রভুর বাণী অনুসরণ না করে মানুষের কথা অন্ধভাবে শুনলে, ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যাব সেটাই স্বাভাবিক। যখন প্রভু যীশু আবির্ভূত হয়ে কাজ করেছিলেন, তখন বিশ্বাসী ইহুদিরা তাদের ধর্মীয় নেতাদের কথা শুনে, তাদের সাথে মিলে প্রভুকে নিন্দা আর প্রত্যাখ্যান করেছিল। তারা শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের শাস্তি পেয়েছিল। আজকের ধর্মীয় নেতা আর যাজকরা অন্তিম সময়ের ঈশ্বরের কাজের অন্বেষণ বা অনুসন্ধান না, এমনকি তাদের গির্জা বন্ধ করতে এবং বিশ্বাসীদের বিভ্রান্ত করার জন্য মিথ্যা ছড়াতে সবকিছু করতে পারে। তারা বলে যে প্রভুর আগমনের সব খবর মিথ্যা, এমনকি যদি আমাদের নিজের ভাইবোনরা আমাদের তা বলে, তবুও আমাদের তাদের কথা না শুনে পুলিশকে জানানো উচিত। এমন বলা আর করা কি প্রভুর শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ? যে এমন কথা বলে তাকে কি বিশ্বাসী বলে গণ্য করা যায়?” যখন সে দেখল যে আমরা যা বলছি সেসব সত্য তখন তার মনোভাব অনেক নরম হল আর আমাদের সাথে কথা বলতে রাজি হল। এও বলল যে কোন বিষয়টা তাকে বিভ্রান্ত করছে: “প্রভু যীশু আমাদের সতর্ক করেছিলেন, ‘কেউ যদি তখন তোমাদের বলে যে খ্রীষ্ট এখানে রয়েছেন কিম্বা ওখানে আছেন সে কথা বিশ্বাস করো না। কারণ অনেক নকল খ্রিষ্ট ও ভুয়ো নবীর আবির্ভাব ঘটবে। তারা এমন সব চমকপ্রদ নিদর্শন ও অলৌকিক কাণ্ড দেখাবে যার ফলে মনোনীতরাও প্রতারিত হতে পারে(মথি ২৪:২৩-২৪)। অন্তিম সময়ে যখন প্রভু প্রত্যাবর্তন করবেন, তখন ভণ্ড খ্রীষ্ট আর ভণ্ড ধর্মপ্রবক্তারা মানুষকে বিপথে চালিত করবে। আমাদের যাজক বলেছিল যে প্রভুর প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে যে কোনও প্রচার মানেই ভণ্ড খ্রীষ্ট মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আমরা বাইবেল ভালোভাবে জানি না, তাই সে আমাদের সতর্ক থাকতে বলেছে, নাহলে আমাদের এতদিনের বিশ্বাস ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। ভুল জিনিসে বিশ্বাস করে বসলে কী হবে আমি সেই নিয়েই চিন্তিত।” আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, “বোন, তোমার বিপথগামী হওয়ার ভয় আমরা বুঝি। কিন্তু আমাদের প্রভুর ইচ্ছা বুঝতে হবে। তিনি একথা এইজন্য বলেছেন যাতে আমরা ভণ্ড খ্রীস্টদের সম্পর্কে সচেতন থাকি এবং তাদের দ্বারা প্রতারিত না হই, এইজন্য নয় যে আমরা অন্ধভাবে তাদের বিরোধিতা করবো আর প্রভুকে স্বাগত জানাতে ব্যর্থ হবো। তিনি স্পষ্টভাবে ভণ্ড খ্রীষ্টের বহিঃপ্রকাশগুলি ব্যাখ্যা করেছেন। তারা মানুষকে বিপথে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা বিভিন্ন সংকেত আর ভেলকি দেখানোর উপর নির্ভর করে। আমরা ভণ্ড খ্রীষ্টের বৈশিষ্ট্যগুলো জানি, তাই যতক্ষণ আমরা এগুলোর দিকে নজর রাখব ততক্ষণ বিভ্রান্ত হব না। আমরা যদি প্রভুর বাক্যকে তার পরিপ্রেক্ষিতের বাইরে থেকে বিচার করে মনে করি প্রভুর প্রত্যাবর্তনের যেকোনো সাক্ষ্যই মিথ্যা, কখনো অন্বেষণ বা অনুসন্ধান না করি, তাহলে কি আমরা স্বয়ং প্রভু যীশুর প্রত্যাবর্তনকেই অস্বীকার করছি না? তাহলে প্রভুকে স্বাগত জানাব কীভাবে? তাই এটাই প্রভু যীশুর প্রত্যাবর্তন কিনা তা নিয়ে নিশ্চিত হতে চাইলে, প্রভুর কণ্ঠস্বর শোনা আর প্রকৃত খ্রীষ্টকে ভণ্ড খ্রীষ্টের থেকে আলাদা করাই আমাদের চাবিকাঠি। সব সময় সতর্ক থেকে সবকিছু প্রত্যাখ্যান করা কোনো সমস্যার সমাধান নয়। প্রভুকে স্বাগত জানানোর চাবিকাঠি হল তাঁর কণ্ঠস্বর শোনা। প্রভু যীশু বলেছেন, ‘দেখ, আমি দুয়ারে দাঁড়িয়ে করাঘাত করছি। যে আমার ডাক শুনে দুয়ার খুলে দেয়, আমি ভেতরে তার কাছে যাব, তার সঙ্গে পানাহার করব, সেও আমার সঙ্গে পানাহার করবে(প্রকাশিত বাক্য ৩:২০)।”

তারপর, ভণ্ড খ্রীষ্টদের থেকে প্রকৃত খ্রীষ্টকে কীভাবে আলাদা করতে হয় সে সম্পর্কে ঈশ্বরের বাণীর কয়েকটা অনুচ্ছেদ পড়লাম। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “যদি বর্তমানকালে এমন কেউ আবির্ভূত হয় যে সংকেত ও আশ্চর্যজনক বিষয় প্রদর্শন করতে পারে, অপদেবতা বিতাড়নে ও পীড়িতদেরদের নিরাময়ে সক্ষম হয় এবং বিবিধ অলৌকিক ঘটনা ঘটাতে পারে, আর যদি সেই ব্যক্তি দাবি করে যে সে-ই হল আবির্ভূত যীশু, তাহলে সে হল মন্দ আত্মাদের সৃষ্ট যীশুর অনুকরণকারী এক নকল সত্তা। একথা মনে রেখো! ঈশ্বর একই কাজের পুনরাবৃত্তি করেন না। যীশুর কাজের পর্যায় ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ হয়ে গেছে, এবং ঈশ্বর কখনোই সেই কাজের পর্যায়ের আর দায়িত্ব নেবেন না। ঈশ্বরের কাজ মানুষের ধারণার সাথে মেলে না; উদাহরণস্বরূপ, পুরাতন নিয়মে একজন মশীহের আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল এবং এই ভবিষ্যদ্বাণীর ফলাফল ছিল যীশুর আগমন। এটি ইতিমধ্যেই ঘটে গিয়েছে, অন্য মশীহের পুনরায় আগমন ঘটলে তা ভুল হবে। যীশু ইতিমধ্যেই একবার এসেছেন, আবারও যদি যীশু আসেন, তবে তা ভুল হবে। প্রতিটি যুগেরই এক-একটি নাম রয়েছে এবং প্রতিটি নামের মধ্যে সেই যুগের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মানুষের ধারণায়, ঈশ্বর অবশ্যই সর্বদা সংকেত এবং বিস্ময়কর ঘটনা প্রদর্শন করবেন, সর্বদা পীড়িতদের নিরাময় করবেন, অপদেবতা বিতাড়ন করবেন এবং সর্বদাই হুবহু যীশুর মতো হবেন। তবুও এইবার ঈশ্বর একদমই সেরকম নন। অন্তিম সময়ে এসেও, ঈশ্বর যদি এখনও সংকেত ও আশ্চর্যজনক ঘটনা প্রদর্শন করেন, অপদেবতা বিতাড়ন করেন এবং পীড়িতদের নিরাময় করেন—যদি তিনি যীশুর মতো ঠিক একই কাজ করেন—তাহলে ঈশ্বর একই কাজের পুনরাবৃত্তি করবেন এবং তাহলে যীশুর কাজের কোনো তাৎপর্য বা মূল্যই থাকবে না। এইভাবে, ঈশ্বর প্রতিটি যুগে কাজের এক-একটি পর্যায় নির্বাহ করেন। একবার তাঁর কাজের একটি পর্যায় শেষ হয়ে গেলে, শীঘ্রই মন্দ আত্মারা তা অনুকরণ করে, এবং শয়তান ঈশ্বরের পথে হাঁটা শুরু করলে ঈশ্বর তাঁর পদ্ধতি পরিবর্তন করেন। ঈশ্বরের কাজের একটি পর্যায় সম্পূর্ণ হয়ে গেলে, মন্দ আত্মারা তা অনুকরণ করতে শুরু করে। তোমাদের অবশ্যই এই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরের বর্তমানের কার্যকে জানা)। “যিনি ঈশ্বরের অবতার তিনি ঈশ্বরের সারসত্যের অধিকারী হবেন, এবং যিনি ঈশ্বরের অবতার তিনি ঈশ্বরের অভিব্যক্তির অধিকারী হবেন। যেহেতু ঈশ্বর দেহরূপ ধারণ করেছেন, সেহেতু তিনি সেই কাজ নিয়ে আসবেন যা তিনি করতে চান, এবং যেহেতু তিনি দেহরূপে এসেছেন, তিনি যা তা তিনি স্বরূপ প্রকাশ করবেন এবং সেই সত্যটি মানুষের সামনে নিয়ে আসতে সমর্থ হবেন, তাকে জীবন দান করবেন এবং তার জন্য পথ চিহ্নিত করবেন। যে দেহরূপে ঈশ্বরের সারসত্য নেই তাকে ঈশ্বরের অবতার বলে গণ্য করা হয় না; এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কেউ ঈশ্বরের দেহরূপী অবতার কিনা তা যদি মানুষ অনুসন্ধান করতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই যে স্বভাব তিনি প্রকাশ করেন এবং যে সকল বাক্য তিনি বলেন, তার থেকেই তা জানতে হবে। অর্থাৎ, কেউ ঈশ্বরের দেহরূপী অবতার কিনা, এবং এটিই প্রকৃত পথ কিনা, তা সুনিশ্চিত করতে অবশ্যই তাঁর সারসত্যের ভিত্তিতে বিচার করতে হবে। এবং তাই, কেউ ঈশ্বরের দেহরূপী অবতার কি না, তা নির্ণয় করার মূল বিষয়টি তাঁর বাহ্যিক চেহারার পরিবর্তে তাঁর সারসত্য (তাঁর কাজ, তাঁর কথন, তাঁর স্বভাব এবং অন্যান্য অনেক বিষয়ের), উপর নির্ভরশীল। মানুষ যদি শুধু তাঁর বাইরের চেহারাটাই খুঁটিয়ে দেখে, এবং এর ফলে তাঁর সারসত্যকে উপেক্ষা করে, তাহলে এটাই প্রমাণিত হয় যে সেই মানুষটি অজ্ঞানতিমিরে আচ্ছন্ন এবং অজ্ঞ(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ভূমিকা)। ঈশ্বরের বাণী পড়ার পর বললাম, “ঈশ্বরের বাণী খুবই স্পষ্ট। ভণ্ড খ্রীষ্টদের থেকে প্রকৃত খ্রীষ্টকে আলাদা করে চেনা উচিত ঈশ্বরের কাজ, তাঁর বাক্য, ও তাঁর প্রকাশিত বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে। কারণ খ্রীষ্টের সারমর্মই হল পথ, আর সত্য এবং জীবন। তিনি মানবজাতিকে সত্য দান করেন আর ঈশ্বরের স্বভাব প্রদর্শন করেন। তিনি মুক্তি আর পরিত্রাণের কাজ করেন। প্রভু যীশু যখন কাজ করছিলেন, তখন তিনি মানবজাতিকে অনুতাপের পথ দিয়েছিলেন। আমাদেরকে ত্রুটি স্বীকার করতে, অনুতপ্ত হতে, অন্যদেরও নিজের মতো ভালবাসতে, সহনশীল আর ধৈর্যশীল হতে শিখিয়েছিলেন। তিনি অনেক সংকেত আর অলৌকিক কাজও দেখিয়েছিলেন, অসুস্থদের সুস্থ করা, দানবদের তাড়ানো, মৃতদের জীবিত করা, পঙ্গুদের নিজেদের পায়ে দাঁড় করানো। তিনি মানুষকে অনুগ্রহ দান করেছেন, আমাদেরকে ঈশ্বরের করুণা আর ভালবাসার স্বাদ গ্রহণ করার পাশাপাশি তাঁর ক্ষমতা আর কর্তৃত্ব দেখার সুযোগও দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত, প্রভু যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল, এভাবে মুক্তির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছিল। প্রভুর বাণী আর কাজ থেকে, আর তিনি যে স্বভাব প্রকাশ করছিলেন, তা থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে তাঁর ঐশ্বরিক সারমর্ম ছিল, তিনি ছিলেন ঈশ্বরের অবতার। এখন তিনি সর্বশক্তিমান ঈশ্বর হিসাবে অন্তিম সময়ে ফিরে এসেছেন। তিনি সত্য প্রকাশ করছেন, মানবজাতির বিচার করছেন ও তাদের পরিশুদ্ধ করছেন। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী সমৃদ্ধ আর প্রচুর, অনেক রহস্য আর সত্য প্রকাশ করে, যেমন আমরা কীভাবে পাপের বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারি, কীভাবে স্বভাবগত পরিবর্তন এনে পুরোপুরি উদ্ধার পেতে পারি, সেই সঙ্গে মানুষের পরিণতি আর গন্তব্য, কীভাবে আমরা পরিত্রাণ পাব আর ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশের পথ খুঁজে পাব। শয়তান কীভাবে মানবজাতিকে কলুষিত করেছেন ঈশ্বর তার বিচার এবং সেই সত্য প্রকাশ করেন মানুষের শয়তানসুলভ মনোভাব প্রকাশ করেন যা ঈশ্বরবিরুদ্ধ, যেমন অহংকার, ধূর্ততা, আর শঠতা। তিনি তাঁর ন্যায়পরায়ণ স্বভাবও দেখান যা কোন অপরাধ সহ্য করে না। তাঁর বাক্য আমাদের অনুশীলন আর প্রবেশের পথ দেখায়, যেমন কীভাবে সৎ মানুষ হতে হয়, কীভাবে আপন কর্তব্যে নিজেদের সঁপে দিতে হয়, কীভাবে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করতে হয়। ঈশ্বরের বাণী ভোজন ও পান করে, পাশাপাশি ঈশ্বরের বিচার আর শাস্তির সম্মুখীন হয়ে, তাঁর নির্বাচিত লোকেদের স্বভাব পরিবর্তন হয়, তারা অনেক অভিজ্ঞতা আর সাক্ষ্য লাভ করে। আমরা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজ আর বাণী থেকে বুঝতে পারি যে তিনিই অন্তিম সময়ের খ্রীষ্ট, তিনি স্বয়ং ঈশ্বর। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর প্রভুরই প্রত্যাবর্তন। কিন্তু ভণ্ড খ্রীষ্টরা মূলতঃ মন্দ আত্মা। তারা সত্যের অধিকারী নয়, মানুষকে উদ্ধার বা পরিশুদ্ধ করতেও পারে না। তারা শুধু সংকেত আর ভেলকি দেখিয়ে মানুষকে বিপথে নিয়ে যায়। আমরা বুঝতে পারি যে ভণ্ড খ্রীষ্টদের মধ্যে খ্রীষ্টের সারমর্ম নেই আর তারা তাঁর কাজ করতে পারে না। তারা সবাই নিজেদের ঈশ্বর বললেও আসলে ভণ্ড আর মানুষকে শুধু সাময়িকভাবে বোকা বানাতে পারে।”

সে বলেছিল, “তুমি যা পড়লে সেটা শুনে খুব ভালো লাগল—আকর্ষক। আশ্চর্যের কিছু নেই যে আমার যাজক বলেছিল যে তোমাদের প্রচারিত কথা শোনামাত্র আমরা আকৃষ্ট হব। যা শোনালে তা সত্যিই মনে ধরেছে, তবে একটু ভাবতে দাও।” বললাম, “বোন, এত বছর ধরে, বিশ্বাসী হিসাবে আমরা কি প্রভুর প্রত্যাবর্তনের জন্য আকুল হয়ে উঠিনি? আশা করি তুমি সতর্ক থেকেই এ বিষয়ে ভাববে। ঈশ্বরের পরিত্রাণের এই সুযোগ হাতছাড়া করলে তোমার আজীবন আফসোস হবে।” এরপর, আমরা যেভাবেই আলোচনা করতাম না কেন, সে কোনো প্রতিক্রিয়া দিত না বা একটা কথাও বলত না। আমি মুষড়ে পড়ে ধৈর্য হারালাম। ভাবলাম যেহেতু সে আমাদের থেকে এত কিছু শুনেও এপথ গ্রহণ করল না, তাই আমাদের আর কিছুই করার নেই। কিন্তু এটা ভাবামাত্র অস্বস্তিতে পড়লাম। ঈশ্বরের এই বাণী মনে পড়ল: “তুমি কি তোমার কাঁধের ভার, তোমার উপর অর্পিত কাজ, ও তোমার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন? ঐতিহাসিক লক্ষ্য সম্পর্কে তোমার বোধ কোথায়? পরবর্তী যুগে কীভাবে তুমি মালিক হিসাবে ভালোভাবে কাজ করবে? মালিক হওয়া কী, সে সম্পর্কে কি তোমার প্রগাঢ় ধারণা আছে? সকল বিষয়ের মালিককে কীভাবে ব্যাখ্যা করবে তুমি? তা কি সত্যিই জগতের সকল জীব, সমস্ত জাগতিক বস্তুর মালিক? কাজের পরবর্তী পর্যায়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কী পরিকল্পনা আছে তোমার? কতজন মানুষ তোমাকে তাদের পালক রূপে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে? তোমার কাজের ভার কি বেশি? ওরা গরিব, অভাগা, অন্ধ, বিভ্রান্ত, অন্ধকারে বিলাপ করছে—পথ কোথায়? আকুল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তারা অপেক্ষা করছে আলোর জন্য, যেন এক উল্কার মতো তা সহসা নেমে এসে দূর করে দেবে অন্ধকারের শক্তিকে যা এত বছর ধরে মানুষের ওপর অত্যাচার করে এসেছে! কে-ই বা সম্পূর্ণরূপে জানতে পারে কতটা উদ্বিগ্নভাবে তারা আশা করছে, এবং কীভাবে আকুল হয়ে দিনরাত এর জন্য অপেক্ষা করছে? এমনকি যেদিন সেই আলো চকিতে ছুটে যায়, সেদিনও গভীর যন্ত্রণাক্লিষ্ট এই মানুষগুলো মুক্তি পাওয়ার আশা হারিয়ে বন্দি হয়ে থেকে যায় অন্ধকার কারাকুঠুরিতে। কখন চোখের জল আর ফেলতে হবে না তাদের? এই দুর্বল আত্মাদের দুর্ভাগ্য অপরিসীম যাদের কখনো বিশ্রাম নিতে দেওয়া হয়নি, সুদীর্ঘকাল ধরে তারা এই অবস্থাতেই আবদ্ধ হয়ে রয়েছে নিষ্ঠুর বন্ধন ও হিমায়িত ইতিহাসের দ্বারা। কে-ই বা শুনেছে তাদের বিলাপের শব্দ? কে প্রত্যক্ষ করেছে তাদের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা? কখনও কি তোমার মনে হয়েছে ঈশ্বরের হৃদয় কতটা দুঃখিত, কতটা উদ্বিগ্ন? যে নিষ্পাপ মানবজাতিকে তিনি নিজের হাতে সৃষ্টি করেছেন তাদের এত কষ্ট ভোগ করতে দেখে তিনি কীভাবে সহ্য করবেন? সর্বোপরি, মানুষ হল সেই শিকার যাদের বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে। এবং যদিও মানুষ আজ পর্যন্ত অস্তিত্বরক্ষা করতে পেরেছে, কিন্তু কে জানতে পারতো যে মানবজাতি দীর্ঘদিন ধরে সেই মন্দ একজনের বিষপ্রয়োগের শিকার হয়ে চলেছে? তুমি কি ভুলে গেছ যে তুমিও সেই শিকারদের মধ্যে একজন? যারা বেঁচে থাকতে পেরেছে, ঈশ্বরের প্রতি তোমার ভালোবাসা থেকে তুমি কি তাদের উদ্ধারের জন্য গভীর প্রচেষ্টা করতে চাও না? মানবজাতিকে যিনি আপন রক্ত-মাংসের মতো ভালোবাসেন, সেই ঈশ্বরকে তা পরিশোধ করার জন্য তুমি কি নিজের সমস্ত শক্তি সমর্পন করতে ইচ্ছুক নও? সবকিছু বিবেচনা করার পর, তোমার অসাধারণ জীবন যাপনের জন্য ঈশ্বর তোমাকে ব্যবহার করছেন, এই ব্যাপারটা তুমি কীভাবে ব্যাখ্যা করবে? একজন ধর্মনিষ্ঠ, ঈশ্বর-সেবক মানুষের অর্থপূর্ণ জীবন যাপনের সংকল্প আর আত্মবিশ্বাস কি সত্যিই আছে তোমার?(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের প্রতি তোমার কীভাবে অগ্রসর হওয়া উচিত?)। ঈশ্বরের বাণী আমাদের দেখায় যে তিনি কতটা শোকাহত আর উদ্বিগ্ন, তিনি আশা করেন যে প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে সত্যিকারের সমস্ত বিশ্বাসী, যারা অন্ধকারে থেকে প্রভুর প্রত্যাবর্তনের জন্য ব্যাকুল, তারা অচিরেই ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শুনে তাঁর ঘরে ফিরে আসবে। কিন্তু যখন দেখলাম একজন সম্ভাব্য সুসমাচার প্রাপককে তার যাজক বিভ্রান্ত করে ধর্মের পূর্বধারণায় আবদ্ধ রাখছে, তখন ধৈর্য ধরে তার সাথে সত্য নিয়ে আলোচনা করে তাকে পথ দেখানোর বদলে, দায়সারা ভাবে তাকে নিয়ে হাল ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। কোথায় ছিল আমার ভালবাসা আর দায়িত্ববোধ? মনে পড়ল কীভাবে প্রভুর প্রত্যাবর্তনের আশায় দিন গুনতাম। ভণ্ড খ্রীষ্টের দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়ার ভয় পেতাম, তাই যখন কাউকে সাক্ষ্য দিতে শুনলাম যে প্রভু ফিরে এসেছেন, তখন নিজে তা খতিয়ে দেখার সাহস করিনি। পথটা বন্ধুর ছিল। লি পিংয়ের আগেই অন্তিম সময়ের ঈশ্বরের কাজ গ্রহণ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল, তাই তার কাছে সুসমাচার প্রচার করা আমারই দায়িত্ব আর কর্তব্য। তাছাড়া আমি নিজেও তো নিমেষের মধ্যে এই কাজ গ্রহণ করিনি। প্রথমে আমারও অনেক পূর্বধারণা ছিল। ভ্রাতা-ভগিনীরা ধৈর্য ধরে আমার সাথে বারবার আলোচনা করেছে, তারপর ঈশ্বরের শরণে আসার মতো সৌভাগ্যবান হয়েছিলাম। কিন্তু নিজেকে তার জায়গায় রাখিনি, তার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টাওকরিনি। আমার মধ্যে ভালোবাসা আর ধৈর্যের অভাব ছিল, নিজের দায়িত্ব পালন করছিলাম না। যতক্ষণ আশার সামান্য আলোও আছে আর সে অনুসন্ধান করতে, খতিয়ে দেখতে চায়, ততক্ষণ তার সাথে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার যে কোনও উপায় আমাকে খুঁজে বের করতেই হত। তবেই নিজের দায়িত্ব ভালো করে পালন করতে পারতাম। এটা ভেবে তার প্রতি সহানুভূতিশীল হলাম। প্রভুকে স্বাগত জানানো খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ তার উপর আমাদের চূড়ান্ত পরিণতি নির্ভর করে। সে যে সতর্ক হয়ে এগোচ্ছিল সেটা খুবই স্বাভাবিক ছিল। শুধু আরো কয়েকবার গিয়ে, তার অনেক পূর্বধারণা দেখে, তাকে নিয়ে হাল ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। খুব অহংকারী আর অযৌক্তিক ছিলাম। এই ভেবে নিজেকে খুব খারাপ ও অপরাধী মনে হল। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে শপথ নিলাম যে তাকে সুসমাচার শোনাতে থাকব আর ঈশ্বরের পথে আনতে আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।

কয়েকদিন পর ভগিনী চেং আইজেনের সাথে লি পিংয়ের বাড়িতে আবার যাই। সে আমাদের দেখামাত্র উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে বলল, “তোমরা খেয়েছ? না হলে কিছু করে আনব। আজ যা ঠাণ্ডা—স্বচ্ছন্দে বোসো।” এত তাড়াতাড়ি তার মনোভাব বদলে গেল? আইজেন আর আমিও অবাক হয়ে গেলাম। সে আমাদের গ্রহণ করবে কিনা তাই নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। তার মনোভাব যে 180-ডিগ্রী ঘুরে যাবে সেটা অপ্রত্যাশিত ছিল। আমরা বসার পর, লি পিং তার মনের কথা আমাদের জানায়: “গত কয়েকদিন ধরে ভাবছি। তোমরা বারবার আমার কাছে সুসমাচার প্রচার করতে এসেছ। সত্য পথে তোমার বিশ্বাস যদি না থাকত, যদি তা পবিত্র আত্মা থেকে না আসত, তাহলে এই রকম ভালোবাসা আর ধৈর্য থাকতে পারে কীভাবে? এও ভেবেছি যে যতবার তোমরা এসেছ, ততবার তোমাদের কথা শুনিনি বা আপ্যায়নও করিনি, শুধু আমার যাজকের কথা শুনে, ভণ্ড খ্রীষ্টের মাধ্যমে বিভ্রান্ত হওয়ার ভয়ে, ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শুনছিলাম না। তোমাদের সাক্ষ্য ভেবে দেখিনি যে প্রভু ফিরে এসেছেন, কেবল তোমাদের দেখে লুকিয়ে পড়তাম। এভাবে প্রভুকে স্বাগত জানাব কী করে? খুব বোকা আর অজ্ঞ ছিলাম!” তার কথা শুনে আবেগে ভেসে গিয়ে মনে মনে বারবার ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম। ঈশ্বরের একটা বাক্যের কথা মনে পড়ল, “মানুষের হৃদয় ও আত্মা ঈশ্বরের হাতেই ধৃত, তার জীবনের সবকিছুই ঈশ্বরের দৃষ্টির অন্তর্গত। তুমি বিশ্বাস করো বা না করো, ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারেই জীবিত বা মৃত যে কোনো জিনিস ও সমস্ত কিছু স্থানান্তরিত হবে, পরিবর্তিত হবে, পুনর্নবীকৃত হবে, আর বিলীন হয়ে যাবে। ঈশ্বর এভাবেই সমস্ত বস্তুর উপরে আধিপত্য করেন(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বর হলেন মানুষের জীবনের উৎস)। সেদিন আমাদের কথা হয়েছিল যে ঈশ্বরের বিচার গ্রহণ না করে, শুধুমাত্র পাপমুক্ত হয়ে আমরা ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারি না। বলেছিলাম, “প্রভুতে বিশ্বাস করা, পাপ স্বীকার করে অনুতাপ করার অর্থই প্রভু আমাদের উদ্ধার করেন, আমাদের পাপী হিসাবে দেখেন না, তার মানে এই নয় যে আমরা পাপ থেকে মুক্ত। আমরা এখনও পাপ ও পাপ স্বীকারের চক্রেই জীবনযাপন করছি। আমাদের কলুষিত স্বভাবের সংশোধন না হলে, আমরা পাপ করতে আর ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করতেই থাকব, তাই তাঁর রাজ্যে প্রবেশ করতে পারব না। বাইবেল বলে, ‘পবিত্রতা ছাড়া কোন মানুষ প্রভুকে দেখতে পাবে না(হিব্রু ১২:১৪)। ‘অতএব তোমরা পবিত্র হও, কারণ আমি পবিত্র(লেবীয় পুস্তক ১১:৪৫)। ‘তোমাদের আমি সত্যই বলছি, পাপ যে করবে সে-ই পাপের ক্রীতদাস। পরিবারে ক্রীতদাসের স্থান চিরস্থায়ী নয় কিন্তু পুত্রের স্থান চিরকালের(যোহন ৮:৩৪-৩৫)। ঈশ্বর পবিত্র আর তিনি কলুষিত মানুষকে পবিত্র ভূমি কলঙ্কিত করতে দেবেন না, কিন্তু আমরা প্রতিমুহূর্তে পাপ করা থেকে নিজেদের বিরত করতে পারি না। দুর্নীতিগ্রস্ত আর পাপী হয়েও আমরা কীভাবে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারি? একমাত্র ঈশ্বরই পারেন আমাদের উদ্ধার করতে। অন্তিম সময়ে, ঈশ্বর আবির্ভূত হয়ে তাঁর কার্যসাধন করেন, সত্য প্রকাশ করেন আর বিচারকার্য করেন মানবজাতির দুর্নীতি দূর করতে, মানুষকে পাপের শৃঙ্খল থেকে পুরোপুরি মুক্ত করতে, দুর্নীতিমুক্ত করে আমাদের পরিশুদ্ধ করেন যাতে শেষ পর্যন্ত আমরা ঈশ্বরের পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ করতে পারি।” লি পিং আবেগজড়িত কণ্ঠে বলল, “তার মানে আমরা যদি পরিশুদ্ধ হতে চাই, তাহলে আমাদের অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের বিচার পেতে হবে, নাহলে আমাদের কলুষিত মন কখনই বদলাবে না।” যে সে এটা বুঝতে পেরেছিল দেখে খুব খুশি হয়েছিলাম।

এরপর আমরা কীভাবে ধর্মীয় যাজক, ফরিশীদের ঠিকমত চিনতে হয়, সেই বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম। আমরা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণীর কয়েকটা অনুচ্ছেদ পড়লাম। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নেতাদের দিকে তাকাও—তারা সকলেই অহংকারী ও নিজ নৈতিকতার বিষয়ে উদ্ধত, এবং তাদের বাইবেলের ব্যাখ্যায় প্রেক্ষাপটের অভাব রয়েছে এবং তা তাদের নিজস্ব পূর্বধারণা ও কল্পনা দ্বারা পরিচালিত। তারা সবাই তাদের কাজ করার জন্য প্রতিভা ও পাণ্ডিত্যের ওপর নির্ভর করে। তারা যদি একেবারেই প্রচারে অক্ষম হতো, তাহলে মানুষ কি তাদের অনুসরণ করত? তাদের যাই হোক, কিছুটা হলেও জ্ঞান রয়েছে, এবং তারা কিছু কিছু মতবাদের বিষয়ে ধর্মোপদেশ দিতে পারে, অথবা তারা জানে কী করে সফলভাবে অন্যকে জয় করা যায় এবং কিছু কিছু চাতুর্যের ব্যবহার করতে হয়। তারা এগুলির মাধ্যমে মানুষের সাথে প্রতারণা করে এবং তাদের নিজেদের কাছে নিয়ে আসে। এরা শুধু নামেই ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, কিন্তু বাস্তবে, নিজেদের নেতাদের অনুগামী। যখন তারা কাউকে প্রকৃত পথের প্রচার করতে দেখে, তখন তাদের কেউ কেউ বলে, ‘আমাদের নেতাদের সাথে আমাদের বিশ্বাসের বিষয়ে আলোচনা করতে হবে’। তাহলে দেখো, ঈশ্বরে বিশ্বাস এবং প্রকৃত পথ স্বীকার করার পরেও মানুষের এখনো কেমন অন্যদের সম্মতি ও অনুমোদনের প্রয়োজন হয়—এটা কি সমস্যা নয়? সেই নেতারা তাহলে কিসে পরিণত হয়েছে? তারা কি ফরিশী, নকল মেষপালক, খ্রীষ্টবিরোধী, এবং মানুষের প্রকৃত পথ গ্রহণের সামনে প্রতিবন্ধকতায় পরিণত হয়নি?(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। “অনেকেই আছে যারা বিরাট গির্জাগুলিতে বাইবেল পড়ে এবং সারাদিন ধরে সেটি আবৃত্তি করে, তবুও তাদের কেউই ঈশ্বরের কাজের উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে পারে না। তাদের মধ্যে কেউই ঈশ্বরকে জানতে সক্ষম নয়, আর তাদের মধ্যে কারোর ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা তো আরোই কম। তারা সকলে অপদার্থ, জঘন্য মানুষ, প্রত্যেকেই ঈশ্বরকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য উচ্চে দণ্ডায়মান। ঈশ্বরের ধ্বজা বহন করাকালীনও তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঈশ্বরের বিরোধিতা করে। ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস দাবি করেও তারা মানুষের মাংস ভক্ষণ ও রক্ত পান করে। এই ধরনের মানুষেরা হল মানুষের আত্মা-গ্রাসকারী শয়তান, সঠিক পথে পা-রাখতে চাওয়া মানুষদের ইচ্ছাকৃত ভাবে বাধাদানকারী প্রধান অপদেবতা, এবং তারা হল ঈশ্বর-অন্বেষণকারীদের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বাধাস্বরূপ। তাদের দেখে ‘ভালো অবস্থার’ মনে হতে পারে, কিন্তু তাদের অনুগামীরা কীভাবে জানবে যে তারা মানুষদের ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচারী করে তোলা খ্রীষ্টবিরোধী ছাড়া আর কেউ নয়? তাদের অনুগামীরা কীভাবে জানবে যে তারা জীবন্ত শয়তান যারা মানুষের আত্মা গ্রাস করার জন্যই নিবেদিত?(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, যারা ঈশ্বরকে জানে না তারা সকলেই ঈশ্বরবিরোধী)। আলোচনায় বললাম, “সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী সুস্পষ্টভাবে ধর্মীয় নেতাদের ঈশ্বরবিরুদ্ধ প্রকৃতি আর সারমর্ম প্রকাশ করে। অতীতে, যাজকদের নিয়ে আমরা বিচক্ষণ ছিলাম না, ভাবতাম তারা বাইবেল ভালোই জানে, তাদের আত্মিক উচ্চতা আছে আর সত্য বোঝে, তাই অন্ধভাবে তাদের কথা শুনতাম। তারা যা ব্যবস্থা করত তাতেই মত দিতাম। আমাদের যাজকদের কথাকে প্রভুর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখতাম, আর প্রভুকে স্বাগত জানানোর মতো বড় বিষয়ে তাদের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকতাম। অনুমোদন না পেলে আমরা প্রভুর কণ্ঠস্বর শুনলেও তা খতিয়ে দেখার বা গ্রহণ করার সাহস করতাম না। তাদের খুব উচ্চস্তরের ভাবতাম। আমরা বিশ্বাসী বা অনুগামী ছিলাম না। এখন আসল ঘটনা জানতে পারলাম যে ধর্মজগতের নেতারা প্রভু যীশুর প্রত্যাবর্তনের সাক্ষ্য শুনে, বিশ্বাসীদের তা খতিয়ে দেখার জন্য পথনির্দেশ না দিয়ে, উল্টে তাদের নানা রকম মিথ্যা বলে বিভ্রান্ত করে আর সত্য পথের অনুসন্ধান থেকে দূরে রাখে। তাদের শুধুমাত্র একটাই লক্ষ্য: ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের পরিত্রাণ লাভে বিশ্বাসীদের বাধা দেওয়া, তাদের প্রবল নিয়ন্ত্রণে রাখা, আর নিজেদের সাথে তাদের নরকে নিয়ে যাওয়া। তাদের এই আচরণ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে তাদের সারমর্ম ঈশ্বরবিরুদ্ধ, তারা সেই দানব যারা মানুষের আত্মা গ্রাস করে। ঠিক যেমন প্রভু যীশু বলেছেন, ‘ভণ্ড শাস্ত্রী ও ফরিশীর দল, ধিক তোমাদের। তোমরা লোকের সামনে স্বর্গরাজ্যের দরজা বন্ধ করে দাও। নিজেরা তো প্রবেশ করই না, যারা চায় তাদেরও ঢুকতে দাও না(মথি ২৩:১৩)।” লি পিং প্রত্যুত্তরে বলল, “ঈশ্বরের অন্তিম সময়ে অবতাররূপ গ্রহণ, আবির্ভূত হয়ে কার্যসাধন ও সত্য প্রকাশ না করলে, বা ধর্মীয় নেতাদের ভণ্ডামি উন্মোচন না করলে, আমরা কখনই তাদের আসল চেহারা, তাদের ভণ্ডামি আর বিদ্বেষ দেখতে পেতাম না, তাদের দ্বারাই অধিগৃহীত হতে থাকতাম। কী বোকামি!” যাজকের আসল চরিত্র সে ঈশ্বরের কল্যাণে বুঝতে পেরেছিল। এরপর লি পিং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রচুর বাণী পড়ে আর আমরা ঈশ্বরের কাজের তিনটে পর্যায় একসঙ্গে আলোচনা করি, কেন ঈশ্বর অন্তিম সময়ে কাজ করার জন্য অবতাররূপ গ্রহণ করেছেন, পরিশুদ্ধ হওয়া এবং সত্যের অন্যান্য দিকের সন্ধান পাওয়ার জন্য কীভাবে ঈশ্বরের বিচারের সম্মুখীন হতে হয় এইসব।

কিছুদিন অনুসন্ধানের পর পর, সে নিশ্চিত হয় যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই প্রত্যাবর্তিত প্রভু যীশু। কিন্তু আমরা আশা করিনি যে সে ঈশ্বরের কাজ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরেই তার যাজক সেকথা জানতে পারবে।

এক সন্ধ্যায় বসার কিছুক্ষণ পরই, আমরা দরজায় সজোরে ধাক্কার শব্দ শুনতে পেলাম। লি পিং দরজার নিচের ফাটল দিয়ে অনেকগুলো পা দেখে আতঙ্কিত হয়ে বলল, “এইরে, ওরা বলেছিল নাগাল পেলে তোমাদের পিটিয়ে আধমরা করবে, আর পুলিশের হাতে তুলে দেবে। ওরা যেন তোমাদের দেখতে না পায়।” সে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের লুকিয়ে ফেলল, তার পরেই 7 বা 8 জন লোক ঢুকে পড়ল। রাগে গজগজ করতে করতে সবাই একসঙ্গে কথা বলছিল, “ওই লোকগুলোর কী হল? আমরা দু’জনকে তোমার বাড়িতে আসতে দেখেছি আর তারা চলে যায়নি। নিশ্চয়ই এখানেই আছে। একবার পেলেই হাত-পা ভেঙে দেব।” একটা ছোট ফাটল দিয়ে তাদের পৈশাচিক চোখগুলো দেখতে পাচ্ছিলাম, ঠিক নেকড়েদের মত। তারা সব জায়গায় দেখতে লাগল, উঠানে, খাটের নিচে, শূয়রের খোঁয়াড়ে, প্রত্যেক কোণায়। আমরা যেখানে লুকিয়ে ছিলাম সেখানে পৌঁছে তারা ফ্ল্যাশলাইট জ্বালাচ্ছিল, আর যখন প্রায় আমাদের সামনে চলে এসেছিল তখন আমার বুক ভয়ে কাঁপছিল। যদি তারা আমাদের খুঁজে পায়, যদি পিটিয়ে মেরে নাও ফেলে তাহলেও আমাদের পঙ্গু করে ছাড়বে। তখনই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, যেন এক মুহূর্তের জন্যও তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন না হই। জানতাম যে ঈশ্বরই আমার আশাভরসা, আর সেদিন তারা আমার সাথে যাই করুক সবকিছুই তাঁর হাতের মধ্যে ছিল। ঈশ্বর না চাইলে তারা আমার কিছুই করতে পারবে না। এই ভেবে ততটা ভয় পাইনি। তারা অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও আমাদের খুঁজে পায়নি। সেটাই তো ঈশ্বরের সুরক্ষা! তারপর শুনলাম কেউ একজন রেগে আগুন হয়ে বলল, “খুব অদ্ভুত। দু’জন লোক নিশ্চয়ই তোমার বাড়িতে এসেছিল আর কখনও বের হয়নি। তাহলে আমরা তাদের খুঁজে পাচ্ছি না কেন?” লি পিং তাদের ক্রুদ্ধ স্বরে বলল, “তোমাদের আচরণে দেখতে পাচ্ছি যে তোমরা কিছুতেই বিশ্বাসী হতে পারো না। তারা সুসমাচার প্রচারে এসেছিল, কিন্তু মনে হচ্ছে যেন তারা নেকড়ের বাসায় অভিশাপ কুড়োতে বা মার খেতে এসেছে। প্রভু যীশু সবাইকেই আমাদের নিজেদের মতো ভালোবাসতে শিখিয়েছেন। তোমাদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে তোমরা অবিশ্বাসীদেরও অধম। তোমরা যে আসলে কী সেটা ভালই দেখেছি। তোমরা কি আদৌ খ্রীস্টান? তোমরা ফরিশী।” তার কথা শুনে তারা ব্যাজার মুখে চলে গেল। আইজেন আর আমি তার কাছ থেকে একথা শুনে সত্যিই উত্তেজিত হয়েছিলাম। অবশেষে সে ঐ ধর্মীয় নেতাদের আসল চেহারা দেখতে পেয়েছিল, আর তাদের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়নি, আর বিরক্তও হয়নি। বির। তারা চলে যাওয়ার পর লি পিং আবেগতাড়িত হয়ে বলল, “আজ তাদের কাছ থেছে বাধা পাওয়ার পরে, তাদের আসল স্বরূপ বুঝেছি। তারা খ্রীষ্টবিরোধী, ঈশ্বরের শত্রু। তারা আমার যতই হয়রানি করুক না কেন, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকেই অনুসরণ করব।” তার কথা শুনে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম, আর বারবার ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়েছিলাম।

সেই অভিজ্ঞতা, ঈশ্বরকে প্রতিরোধের জন্য ধর্মীয় নেতাদের শয়তানসুলভ মনোভাব আমার কাছে স্পষ্ট করে দেয়। তারা ঈশ্বরের কাজের অন্বেষণ বা অনুসন্ধান করে না, কিন্তু যখন শুনতে পায় যে কেউ প্রভুর প্রত্যাবর্তনের সাক্ষ্য দিচ্ছে, তখনই বেজায় চটে যায়, আর তাকে মেরে ফেলার তোড়জোড় শুরু করে। তারা বিশ্বাসী নয়। তারা খ্রীস্টবিরোধী, ফরিশী, সত্য শুনে তারা বিরক্ত হয়, সত্যেই তাদের ঘৃণা। ঈশ্বরের বিস্ময়কর কাজগুলোও দেখেছিলাম আর তা আমার বিশ্বাসকে জোরালো করেছিল। সুসমাচার প্রচার করতে আমার যতই অসুবিধা হোক না কেন, যতক্ষণ পর্যন্ত একজনও সম্ভাব্য সুসমাচার প্রাপক আছে, ততক্ষণ আমার ভালবাসা আর ধৈর্য দিয়ে ঈশ্বরের কাজ আর বাণীর সাক্ষ্য দিয়ে যাব, যাতে তারা ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শুনে তাঁর অন্তিম সময়ের পরিত্রাণ গ্রহণ করতে পারে। এটাই আমার দায়িত্ব আর কর্তব্য পালনের একমাত্র উপায়।

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

আশীর্বাদের জন্য সাধনা কি ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ?

২০১৮-তে, আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজকে মেনে নেওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছি। আমি প্রভুর প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানানোর সুযোগ পেয়েছি...

Leave a Reply

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন