ঈশ্বর নির্ভরতাই পরম জ্ঞা
২০১১ সালের শরতকালে, ফাং মিং নামে একজন গ্রামবাসীর সাথে দেখা হল। সে মানবিক আর খুব দয়ালু, ২০বছরেরও বেশি সময় ধরে তার প্রভুতে বিশ্বাস, সে নিয়মিত সমাবেশে যোগ দিত আর বাইবেল পড়ত, প্রকৃত বিশ্বাসী ছিল, তাই তার কাছে অন্তিম সময়ের সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সুসমাচার প্রচার করতে চেয়েছিলাম। ঐ সময়, সেই কিছুদিন হল আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেছিলাম আর সত্য খুব কম বুঝতাম, তাই ভগিনী সং জিয়ায়িংকে, ফাং মিংয়ের কাছে অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের কাজের সাক্ষ্য দিতে বললাম। ফাং মিং তখনই অন্তিম সময়ে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজের অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিল। তখন খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকদিন পর, যখন ফাং মিংয়ের সাথে দেখা করতে গেলাম, তখন সে বলল, সে অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে চায় না। ফাং মিং বলল, “সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী পড়ে খুব ভাল লেগেছিল, তাই মাকে ডেকে প্রভুর ফেরার সুসংবাদ জানালাম। মা বলল তুমি যা বিশ্বাস করছো তা পূর্বের বজ্রালোকে, এতে তোমার বিশ্বাস করা উচিত নয়। আমাদের প্রচারকরা প্রায়ই বলে, ঈশ্বরের বাণী আর কাজ সবই বাইবেলে আছে, বাইবেলের বাইরে ঈশ্বরের কোনও বাণী আর কাজ নেই, পূর্বের বজ্রালোকের প্রচার বাইবেল বহির্ভূত আর তা প্রভুর প্রত্যাবর্তন হতেই পারে না।” বুঝলাম যে ফাং মিং তার মায়ের পাল্লায় পড়ে প্রতারিত হয়েছে, তাই উদ্বিগ্ন স্বরে বললাম, “যদি আমরা বিশ্বাস করি যে ঈশ্বরের বাণী আর কাজ বাইবেলে আছে, বাইবেলের বাইরে থাকতে পারে না, এটা কি, ঈশ্বরকে শাস্ত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে না? এমন কি হতে পারে যে ঈশ্বর বাইবেলের বাইরে নতুন কাজ করতে পারেন না, বা কোনো নতুন বাণী বলতে পারেন না? ঈশ্বরই সৃষ্টিকর্তা, জীবনের উৎস। তিনি সর্বশক্তিমান, জ্ঞানী আর বৈচিত্র্যময়। শুধু বাইবেলেই কি ঈশ্বরের সবকিছু সমাহিত থাকতে পারে? বাইবেলে যা লিপিবদ্ধ কেবল তাই ঈশ্বরের বাক্য আর কাজ তা কী করে হয়? ঈশ্বরের কাজ সব সময়ই নতুন, কখনও পুরনো নয়। তাঁর কাজের প্রত্যেক পর্যায় আগের কাজের ভিত্তিতেই হয়, আর তিনি প্রত্যেক পর্যায়ে নতুন আর উচ্চতর কাজ করেন। বিধানের যুগে, ঈশ্বর মানুষকে পৃথিবীতে বাঁচার বিধান জারি করেছিলেন। অনুগ্রহের যুগে, ঈশ্বর বিধানের যুগের কাজের পুনরাবৃত্তি করেননি। তার বদলে, বিধানের যুগের কাজের ভিত্তিতে তিনি মুক্তির কাজ করেছিলেন। এই নতুন কাজ কি ওল্ড পুরাতন নিয়ম-এ আছে? না। পুরাতন নিয়ম-কেই যারা সবকিছু ভাবত তারা প্রভু যীশুর নতুন কাজ গ্রহণ করেনি বলে ঈশ্বর তাদের ত্যাগ ও বহিষ্কার করেছিলেন। অন্তিম সময়ের কাজের এই পর্যায়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। পরিত্রাণের কাজের জন্য ঈশ্বরের পরিকল্পনার ভিত্তিতে, তিনি মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী বিচারকার্য করেন, মানুষের পাপকে সম্পূর্ণরূপে দূর করতে, যাতে তারা পরিশুদ্ধ হয়। শুধুমাত্র মেষশাবকের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আর ঈশ্বরের নতুন কাজ গ্রহণ করে আমরা ঈশ্বরের পরিত্রাণ লাভ করে তাঁর রাজ্যে প্রবেশ করতে পারি। তোমার মা ঈশ্বরের নতুন বাণী দেখেনি, তাই তোমাকে এইসব কথা বলেছে। অন্ধভাবে সিদ্ধান্ত না নিয়ে আগে অনুসন্ধান করেই দেখো না। প্রভুর প্রত্যাবর্তন হাতছাড়া করলে ঈশ্বরের হাতে উদ্ধার পাওয়ার সুযোগ আর পাবে না।” কিন্তু যাই বলি না কেন, সে কিছুতেই শুনল না। আরেক ভগিনীকে আলোচনা করতে পাঠাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ফাং মিং আমার সাথে ছাড়া কারও সাথে দেখা করতে রাজি ছিল না। সে আরও বলল যে কয়েক দিনের মধ্যেই সে নিজের শহরে ফিরছে, এমনকি ট্রেনের টিকিটও কেটে ফেলেছে। সে বিরক্ত আর দোটানায় ছিল। সে নিজের শহরে ফিরে গেলে, সেখানেও যাজক আর প্রচারকরা কি তাকে আরও বিরক্ত করবে না? আমিও চিন্তিত ছিলাম, কিন্তু ফাং মিং ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল, আর আমার কিছু করার ছিল না। জানতাম সে সময় যাই বলি না কেন সে শুনবে না, তাই আমাকে চলে যেতে হয়েছিল।
বাড়ি ফেরার পর, ফাং মিং নিজের শহরে গেলে প্রচারের আশা ছিল না ভেবে, আমার ভরসা কমে গেল, মনে হল সুসমাচার প্রচার করা খুব কঠিন। যতই ভাবতাম ততই খারাপ লাগত। ঠিক যখন নেতিবাচক বোধ করতে শুরু করেছিলাম, তখনই ঈশ্বরের বাণী মনে পড়ল, “অনুগ্রহের যুগে, মানুষের জন্য যীশুর ছিল করুণা ও অনুগ্রহ। একশোটা মেষের মধ্যে কোনো একটা মেষ হারিয়ে গেলে, তিনি সেই একটার সন্ধানে নিরানব্বইটা মেষকে ত্যাগ করতেন। এই কথাগুলো কোনো যান্ত্রিক কাজ বা কোনো নিয়মকে উপস্থাপিত করে না; বরং, এর মধ্যে মানুষের পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের জরুরি অভিপ্রায়, ও সেইসাথে মানুষের প্রতি তাঁর গভীর প্রেমই দেখতে পাওয়া যায়। এটা শুধু কার্য সম্পাদনের একটা উপায়মাত্র নয়; এ হল এক প্রকার স্বভাব, এক ধরনের মানসিকতা” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। ঈশ্বরের এই বাণী আমায় নাড়া দিল। একশর মধ্যে একটাও ভেড়া যদি হারিয়ে যায়, তাহলে ঈশ্বর সেই হারানো ভেড়া খুঁজে পেতে নিরানব্বইটা ছেড়ে দেবেন। বুঝলাম যে ঈশ্বরের মানুষকে উদ্ধারের ইচ্ছা কতটা আন্তরিক। তাঁকে প্রকৃত বিশ্বাস করে এমন কাউকে ঈশ্বর হারাতে চান না, মানুষের জন্য ঈশ্বরের ভালবাসা এতটাই মহৎ। ঈশ্বরের বাণীর কথা ভেবে লজ্জিত হলাম। দুর্নীতিগ্রস্ত মানবজাতিকে উদ্ধার করতে, ঈশ্বর পৃথিবীতে অবতাররূপে এসে বিরাট মূল্য দিয়েছেন, এই আশায় যে ঈশ্বরের প্রতি আন্তরিক বিশ্বাসীরা ঈশ্বরের শরণাপন্ন হয়ে তাঁর পরিত্রাণ গ্রহণ করবে। তবুও যখন প্রচার করতে আমার অসুবিধা হয়েছিল, তখন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম। ঈশ্বরের ইচ্ছা বিবেচনােই করিনি। যদিও ফাং মিং প্রতারিত আর বিরক্ত হয়েছিল, তার কিছু ধর্মীয় ধ্যানধারণাও ছিল, তবুও সে ছিল প্রকৃত ঈশ্বরবিশ্বাসী। তাই আমাকে যথাসাধ্য চেষ্টা করতেই হত যাতে সে সত্য বুঝতে পারে, তার পূর্বধারণা দূর হয় আর ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসে। এটাই আমার কর্তব্য। ঈশ্বরের বাণীর আরেকটা অনুচ্ছেদ মনে পড়ল, “মানুষের হৃদয় ও আত্মা ঈশ্বরের হাতেই ধৃত, তার জীবনের সবকিছুই ঈশ্বরের দৃষ্টির অন্তর্গত। তুমি বিশ্বাস করো বা না করো, ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারেই জীবিত বা মৃত যে কোনো জিনিস ও সমস্ত কিছু স্থানান্তরিত হবে, পরিবর্তিত হবে, পুনর্নবীকৃত হবে, আর বিলীন হয়ে যাবে। ঈশ্বর এভাবেই সমস্ত বস্তুর উপরে আধিপত্য করেন” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বর হলেন মানুষের জীবনের উৎস)। ঈশ্বরের বাণী আমাকে আত্মবিশ্বাস আর শক্তি দেয়। সব কিছুই ঈশ্বরের হাতে, মানুষের চিন্তাভাবনা আর ধ্যানধারণাও। মানুষের চোখে ফাং মিং এখন বিরক্ত, সে তার শহরে ফিরে যাচ্ছিল আর তার কাছে সুসমাচার প্রচারের আশা ক্ষীণ, কিন্তু ঈশ্বর সব কিছুর উপর সার্বভৌম। যদি সে ঈশ্বরের মেষ হয়, তবে ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর বুঝতে পারবে। আমার তরফে যেন আলোচনা করার যথাসাধ্য চেষ্টা করি, শেষ না দেখে যেন হাল না ছাড়ি। এটা বোঝামাত্র ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, “ঈশ্বর! ফাং মিং বিরক্ত, আর এখন সত্য পথ অনুসন্ধান করার সাহস করছে না, তাকে আপনার হাতে অর্পণ করছি। যদি সে আপনার মেষ হয়, তবে তার কাছে সুসমাচার প্রচার করার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে চাই।” এরপর জানতে পারলাম যে ফাং মিং ভেবেছিল যে তার ট্রেন ছিল রাত ৯:১0 টায়, কিন্তু সেটা আসলে সকাল ৯:১0 টায় ছিল, তাই সে যেতে পারেনি। বুঝলাম যে মানুষের মনপ্রাণ সবই ঈশ্বরের হাতে, সবই ঈশ্বরের মহিমা, তিনিই সব কিছুর ব্যবস্থা করেন। মনে মনে বারবার ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানালাম, আর ফাং মিংয়ের কাছে সুসমাচার প্রচার করার বিষয়ে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠলাম।
এরপর, ফাং মিংয়ের সাথে দেখা করতে গেলাম, সে তখনও তার ধ্যানধারণাগুলো আঁকড়ে আছে দেখে তাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণীর একটা অনুচ্ছেদ পড়ে শোনালাম। “যেহেতু আমরা ঈশ্বরের পদাঙ্ক অনুসন্ধান করছি, সেহেতু আমাদের উচিত ঈশ্বরের ইচ্ছার, তাঁর বাক্যের, তাঁর উচ্চারণের অন্বেষণ করা—কারণ যেখানেই ঈশ্বর-কথিত নতুন বাক্য রয়েছে, সেখানেই ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর রয়েছে, এবং যেখানেই ঈশ্বরের পদাঙ্ক রয়েছে, সেখানেই ঈশ্বরের দ্বারা সংঘটিত কর্মসমূহ বিদ্যমান। যেখানেই ঈশ্বরের অভিব্যক্তিসমূহের প্রকাশ ঘটে, সেখানেই ঈশ্বর আবির্ভূত হন, আর যেখানেই ঈশ্বর আবির্ভূত হন, সেখানেই সত্য, পথ, এবং জীবনের অস্তিত্ব বিদ্যমান হয়। ঈশ্বরের পদাঙ্ক অন্বেষণে, তোমরা এই বাক্যগুলিকে অগ্রাহ্য করেছ ‘ঈশ্বরই সত্য, পথ, এবং জীবন’। এবং তাই, বহু মানুষ, সত্য গ্রহণ করা সত্ত্বেও, বিশ্বাস করে না যে তারা ঈশ্বরের পদাঙ্ক খুঁজে পেয়েছে, এবং তারা ঈশ্বরের আবির্ভাবকে আরোই কম স্বীকার করে। কি বিরাট এই ভুল! ঈশ্বরের আবির্ভাব মানুষের ধারণা দিয়ে অনুধাবন করা সম্ভব নয়, এবং ঈশ্বর যে মানুষের ইচ্ছা অনুসারে আবির্ভূত হবেন, এমন সম্ভাবনা তো আরোই নেই। ঈশ্বর তাঁর কাজ করার সময় নিজেই নিজের পছন্দ ও পরিকল্পনা নির্ধারণ করেন; এছাড়া, তাঁর নিজস্ব কিছু উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি রয়েছে। তিনি যে কর্মই করুন, তা নিয়ে তাঁর কোনো মানুষের সাথে আলোচনা করার বা পরামর্শ চাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, এবং তাঁর কার্যের বিষয়ে সবাইকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার প্রয়োজন তো আরোই নেই। এই হল ঈশ্বরের স্বভাব, যা, উপরন্তু, সকলকেই স্বীকার করতে হবে। তোমরা যদি ঈশ্বরের আবির্ভাব প্রত্যক্ষ করার, ঈশ্বরের পদাঙ্ক অনুসরণ করার আকাঙ্ক্ষা রাখ, তাহলে তোমাদের অবশ্যই সর্বাগ্রে নিজেদের পূর্বধারণাগুলি ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হবে। তুমি অবশ্যই ঈশ্বরের কাছে এটা-ওটা করার দাবি রাখতে পার না, তাঁকে নিজের পূর্বধারণাগত গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ করে তো আরোই রাখবে না। বরং, তোমাদের কীভাবে ঈশ্বরের পদাঙ্ক অনুসন্ধান করা উচিত, কীভাবে ঈশ্বরের আবির্ভাব মেনে নেওয়া উচিত, এবং কীভাবে ঈশ্বরের নতুন কর্মের প্রতি নিজেদের সমর্পণ করা উচিত, তা জানার জন্য নিজেদের অন্তরে নিজেদেরই কাছে দাবি রাখবে: মানুষের এমনই করা উচিত” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, পরিশিষ্ট ১: ঈশ্বরের আবির্ভাব এক নতুন যুগের সূচনা করেছে)। ঈশ্বরের বাণী পড়ার পর, তার সাথে আলোচনা করলাম, “যদি আমরা প্রভুর প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানাতে চাই, তবে আমাদের অবশ্যই নিজস্ব ধ্যানধারণা ছাড়তে হবে, তুমি তো জানো, ঈশ্বরের চিন্তাধারা মানুষের চিন্তাভাবনার বাইরে। ঈশ্বর মানুষের ধারণা আর কল্পনা অনুসারে কাজ করেন না। তুমি মনে করো ঈশ্বরের সমস্ত কথা আর কাজ বাইবেলে রয়েছে, বাইবেলের বাইরে কিছু থাকতে পারে না, কিন্তু ঈশ্বরের বাণীতে কি এর কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়? না। তাহলে কি সেটা মানুষের ধ্যানধারণাভিত্তিক কষ্টকল্পনা নয়? যখন প্রভু যীশু কাজ করতে আসেন, তখন প্রভু যীশু কত সত্য প্রকাশ করেছেন তা ফরিশীরা দেখেনি। তার পরিবর্তে তারা পুরাতন নিয়ম-কে আঁকড়ে ধরেছিল, এই ভেবে যে প্রভু যীশুর বাণী আর ঐসব কাজ বাইবেলে নেই, তারা এটাকে প্রভু যীশুর নিন্দা করার অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করেছিল, আর অবশেষে প্রভুকে ক্রুশে ক্রুশবিদ্ধ করার জঘন্য পাপ করেছিল। ফরিশীদের ব্যর্থতা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে! ঈশ্বরের বাণী আর কাজ কখনই কোনো ব্যক্তি বা জিনিসে সীমাবদ্ধ নয়, বাইবেল তো দূরের কথা। ঈশ্বর সব সময় তাঁর পরিচালনামূলক পরিকল্পনা অনুযায়ী আর মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য আরও বাক্য শোনান আর নতুন কাজ করেন। সুতরাং, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর প্রত্যাবর্তিত প্রভু যীশু কিনা তা নির্ধারণ করতে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী আর কাজ বাইবেলের বাইরে যায় কিনা তা আমাদের দেখলে চলবে না। আমাদের দেখতে হবে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী সত্য কিনা আর সর্বশক্তিমান ঈশ্বর মানবজাতিকে উদ্ধার করার কাজ করতে পারেন কিনা, কারণ একমাত্র ঈশ্বরই সত্য পথ আর সত্যময় জীবন, আর একমাত্র ঈশ্বরই মানবজাতিকে উদ্ধার করতে পারেন। তুমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী পড়েছ, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণীর কর্তৃত্ব আর ক্ষমতাও স্বীকার করো। তাছাড়া, তাঁর বাণী থেকে ঈশ্বরের ছয় হাজার বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনা, বাইবেলের রহস্য, কারা স্বর্গ রাজ্যে প্রবেশ করতে পারে আর মানবজাতির ভবিষ্যত গন্তব্য কী সেসব জানতে পারি। সত্যের এই রহস্যগুলো কেউ জানে না, শুধু ঈশ্বরই তা প্রকাশ করতে পারেন…।” কিন্তু আমার আলোচনা শেষ করার আগেই, ফাং মিং আমাকে বাধা দিয়ে আর কিছু বলতে দেয়নি। ভাবলাম, “সত্য খুব কম বুঝি আর আমার আলোচনার ভাষা পরিষ্কার নয় বলেই কি?” তাই চেয়েছিলাম জিয়ায়িং এরপর ফাং মিংকে আরও বোঝাক, কিন্তু ফাং মিং সেটা হতেই দিল না। তাই বেশ চিন্তিত ছিলাম। অল্পদিন ধরে ঈশ্বরবিশ্বাসী হয়েছিলাম আর সত্য সামান্যই বুঝতাম, কিন্তু ফাং মিং ২০ বছরেরও বেশি প্রভুতে বিশ্বাস রেখেছিল আর আমি তার সমস্যার সমাধান করতে পারিনি। এই অসুবিধার মুখে সরে আসতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, “যদি সত্যিই তার কাছে প্রচার করতে না পারি, তাহলে বন্ধ করে দেব। ব্যাপারটা খুবই কঠিন।” যতই ভাবছিলাম, ততই নেতিবাচক মনে হচ্ছিল, বাড়ি ফেরার পথে, কোনো অনুপ্রেরণাই পাচ্ছিলাম না।
পরে, এক সমাবেশে, ভ্রাতা-ভগিনীরা আমার অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারে, আমাকে ঈশ্বরের বাণীর একটা অনুচ্ছেদ পড়ে শোনাল। “‘বিশ্বাস’ এই শব্দটি বলতে কী বোঝায়? বিশ্বাস হল প্রকৃত আস্থা এবং আন্তরিক হৃদয় যা মানুষের থাকা উচিত যখন তারা কিছু দেখতে বা স্পর্শ করতে পারে না, যখন ঈশ্বরের কাজ মানুষের ধারণার সাথে সঙ্গত হয় না, যখন তা মানুষের নাগালের বাইরে থাকে। আমি এই বিশ্বাসের কথাই বলি। মানুষের কষ্ট ও পরিমার্জনার সময়ে বিশ্বাসের প্রয়োজন হয় এবং পরিমার্জনার পরেই বিশ্বাসের আগমন ঘটে; পরিমার্জনা এবং বিশ্বাসকে আলাদা করা যায় না। ঈশ্বর যেভাবেই কাজ করুন না কেন এবং তোমার পরিবেশ যেমনই হোক না কেন, তুমি জীবনের অনুসরণ, সত্যের সন্ধান, ঈশ্বরের কাজের জ্ঞান অন্বেষণ এবং তাঁর কর্ম সম্পর্কে উপলব্ধি করতে সক্ষম হও, এবং তুমি সত্য অনুযায়ী কাজ করতে পারো। সত্যিকারের বিশ্বাস থাকার অর্থই হল তা করা, এবং তেমন করার মাধ্যমেই প্রতীয়মান হয় যে তুমি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস হারাও নি। শুধুমাত্র যদি তুমি পরিমার্জনার মাধ্যমে সত্যের অনুসরণে অটল থাকতে সক্ষম হও, যদি সত্যই ঈশ্বরকে ভালোবাসতে সক্ষম হও এবং তাঁর সম্পর্কে নিঃসন্দেহ থাকো, যদি তুমি তাঁর কাজ নির্বিশেষে এখনও তাঁকে সন্তুষ্ট করার জন্য সত্য অনুশীলন করো, এবং যদি তাঁর ইচ্ছার গভীরে অনুসন্ধান করতে পারো এবং তাঁর ইচ্ছার প্রতি সচেতন হও, তাহলেই তুমি ঈশ্বরের প্রতি সত্যিকারের বিশ্বাস রাখতে পারবে” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, যাদের নিখুঁত করা হবে তাদের অবশ্যই পরিমার্জনা ভোগ করতে হবে)। ঈশ্বরের বাণী পড়ার পর, একজন ভগিনী বোঝাল, “সুসমাচার প্রচারে আমাদের কোনো অসুবিধা হলেই যদি আমরা নিজেদের গুঁটিয়ে নিই, তার মানে আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছাই বুঝতে পারিনি। আসলে, ঈশ্বর আমাদের এইসব অসুবিধায় ফেলেন যাতে আমাদের বিশ্বাস পরিপূর্ণ হতে পারে আর আমরা ঈশ্বরের উপর ভরসা করতে শিখতে পারি, আর সেই সঙ্গে, এইসব অসুবিধার মধ্য দিয়ে, যাতে আমরা সত্যের সন্ধান পেয়ে ঈশ্বরের কাজের সাক্ষ্য দিতে শিখতে পারি।” তার ঈশ্বরের বাণী নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বুঝলাম যে সুসমাচার প্রচার করতে গিয়ে যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম তার মধ্যেও ঈশ্বরের ভাল উদ্দেশ্য ছিল। ঈশ্বর আমার বিশ্বাস নিখুঁত করতে আর আমাকে আরও সত্য বুঝতে সাহায্য করতেই এটা করেছিলেন। কিন্তু যখন আমার অসুবিধা হয়েছিল, ফাং মিংয়ের ধ্যানধারণা মেটাতে ঈশ্বরের উপর ভরসা রেখে সত্য অনুসন্ধান করার পরিবর্তে, তাকে ঈশ্বরের শরণে না এনে, আমার অসুবিধাকেই বড় করে দেখেছিলাম, নিজেকে গুঁটিয়ে এনে হাল ছেড়ে দিতে চাইছিলাম। বেশি পরিশ্রম করতে চাইনি বা বেশি মূল্যও দিতে চাইনি, আর ঈশ্বরের ইচ্ছার আদৌ পরোয়া করিনি। এসব ঘটনার মাধ্যমে আমার সত্য প্রকাশ করার পর, অবশেষে বুঝলাম যে ঈশ্বরে আমার কোনো আস্থা ছিল না, আর আমার আত্মিক উচ্চতা খুবই ছোট ছিল। ঈশ্বরের এই বাণী মনে পড়ল, “এবং মানুষ যত বেশি সহযোগিতা করে, তারা যত বেশি ঈশ্বরের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে গুণমান অর্জন করার উপায় অন্বেষণ করে, পবিত্র আত্মার কাজও ততই মহত্তর হয়ে ওঠে” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, বাস্তবকে কী ভাবে জানবে)। ঠিক, মানুষ যত বেশি সহযোগিতা করবে, তত বেশি পবিত্র আত্মার কাজ করতে পারবে। যদিও ফাং মিং ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রভুতে বিশ্বাস রেখেছিল, তার বাইবেলের জ্ঞান ছিল, তবে আমার কাছে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী ছিল। ঈশ্বরের বাণীই সত্য আর মানুষের সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে পারে। যতক্ষণ আমি সত্যিই ঈশ্বরের উপর ভরসা করে ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত রয়েছি, ততক্ষণ ঈশ্বর তাকে আলোকিত করবেন।
তারপর, তাদের খোঁজ করি যারা ফাং মিংয়ের ধ্যানধারণাগুলোর আসল কারণ বুঝতে পেরেছিল, ভ্রাতা-ভগিনীরাও আমাকে ঈশ্বরের বাণীর সঙ্গে সম্পর্কিত অনুচ্ছেদগুলো খুঁজে পেতে সাহায্য করেছিল। এরপর, আবার ফাং মিংয়ের বাড়িতে যাই, তাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণীর দুটি অনুচ্ছেদ পড়ে শোনাই। “মতবাদ কি ঈশ্বরের কাজেও প্রয়োগ করা প্রয়োজন? এবং ঈশ্বরকে কি ভাববাদীদের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারেই কাজ করতে হবে? সর্বোপরি, কে বড়: ঈশ্বর না বাইবেল? কেন ঈশ্বরকে বাইবেল অনুসারে কাজ করতেই হবে? এ কি হতে পারে যে ঈশ্বরের বাইবেলকে অতিক্রম করার অধিকার নেই? ঈশ্বর কি বাইবেল থেকে সরে গিয়ে অন্য কাজ করতে পারেন না? কেন যীশু এবং তাঁর শিষ্যরা সাব্বাথ পালন করেননি? তাঁকে যদি সাব্বাথের আলোকে এবং পুরাতন নিয়মের আদেশ অনুসারে অনুশীলন করতে হতো, তাহলে যীশু কেন আগমনের পরে সাব্বাথ পালন করেননি, বরং পা ধুয়েছেন, মাথা ঢেকেছেন, রুটি টুকরো করেছেন, এবং মদিরা পান করেছেন? পুরাতন নিয়মের আদেশগুলির মধ্যে কি এই সব অনুপস্থিত নয়? যীশু যদি পুরাতন নিয়মকে সম্মান করতেন, তবে কেন তিনি এই মতবাদগুলি অগ্রাহ্য করেছেন? তোমার জানা উচিত কোনটি প্রথমে এসেছে, ঈশ্বর নাকি বাইবেল! সাব্বাথের প্রভু হওয়ার কারণে, তিনি কি বাইবেলের প্রভুও হতে পারেন না?” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, বাইবেল সম্পর্কিত (১))। “তুমি যদি বিধানের যুগে সম্পাদিত কাজ দেখতে চাও, এবং দেখতে চাও ইসরায়েলীরা কীভাবে যিহোবার পথ অনুসরণ করেছিল, তাহলে তোমাকে অবশ্যই পুরাতন নিয়ম পড়তে হবে; তুমি যদি অনুগ্রহের যুগের কাজ বুঝতে চাও, তাহলে তোমাকে অবশ্যই নূতন নিয়ম পড়তে হবে। কিন্তু অন্তিম সময়ের কাজকে তুমি কীভাবে দেখবে? তোমাকে অবশ্যই আজকের ঈশ্বরের নেতৃত্ব স্বীকার করতে হবে, এবং আজকের কাজে প্রবেশ করতে হবে, কারণ এটি নতুন কাজ, এবং কেউতা আগে থেকে বাইবেলে লিপিবদ্ধ করেনি। বর্তমানে, ঈশ্বর দেহে আবির্ভূত হয়েছেন এবং চীনে অন্যান্য মনোনীত ব্যক্তিদের বেছে নিয়েছেন। ঈশ্বর এই লোকেদের মধ্যে কাজ করেন, তিনি পৃথিবীতে তাঁর কাজ অব্যাহত রাখেন এবং অনুগ্রহের যুগের কাজ থেকে পুনরারম্ভ করেন। বর্তমানের কাজটি এমন একটি পথ যে পথে মানুষ কখনও হাঁটেনি এবং এমন একটি পথ যা কেউ কখনও দেখেনি। এটি এমন একটি কাজ যা আগে কখনও করা হয়নি—এটি পৃথিবীতে ঈশ্বরের সাম্প্রতিকতম কাজ। সুতরাং, যে কাজ আগে কখনও করা হয়নি তা ইতিহাস নয়, কারণ এখন হলো বর্তমান এবং এখনও তা অতীতে পরিণত হয় নি। মানুষ জানে না যে ঈশ্বর পৃথিবীতে, ইসরায়েলের বাইরে, এক বৃহত্তর, নতুনতর কাজ করেছেন, যে এটি ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের সীমা অতিক্রম করেছে, নবীদের ভবিষ্যদ্বাণীকে ছাপিয়ে গেছে, যে এটি ভবিষ্যদ্বাণীর বাইরে নতুন এবং বিস্ময়কর কাজ, ইসরায়েল অতিক্রম করে সংঘটিত নতুনতর কাজ, এবং এমন কাজ যা জনগণ বুঝতে বা কল্পনাও করতে পারে না। কীভাবে বাইবেলে এই ধরনের কাজের সুস্পষ্ট লিপি থাকতে পারে? কে বর্তমানের কাজের প্রতিটি খুঁটিনাটি, বাদ না দিয়ে, আগাম লিপিবদ্ধ করতে পারতো? কে এই শক্তিশালী, প্রজ্ঞাপূর্ণ, প্রচলিত প্রথা অস্বীকার করা কাজকে সেই জীর্ণ পুরনো বইতে লিপিবদ্ধ করতে পারতো? আজকের কাজটি ইতিহাস নয়, এবং তুমি যদি আজকের নতুন পথে হাঁটতে চাও, তবে তোমাকে অবশ্যই বাইবেল থেকে বিদায় নিতে হবে, তোমাকে অবশ্যই বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী বা ইতিহাসের বইগুলি অতিক্রম করতে হবে। তবেই তুমি সঠিকভাবে নতুন পথে চলতে সক্ষম হবে এবং তবেই নতুন রাজ্যে এবং নতুন কাজে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, বাইবেল সম্পর্কিত (১))। ঈশ্বরের বাণী পড়ার পর, তার সাথে আলোচনা করলাম, “তুমি বিশ্বাস করো যেহেতু সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের এই বাণী আর কাজ বাইবেলে নেই, তাই তিনি প্রত্যাবর্তিত প্রভু নন। এভাবে ঈশ্বরকে বাইবেলে সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে, এভাবে ঈশ্বরকেই সীমিত ভাবা হচ্ছে। ঈশ্বর প্রথমে এসেছেন নাকি বাইবেল? ঈশ্বর যখন প্রথম আকাশ ও পৃথিবী এবং সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছিলেন তখন কি বাইবেলের অস্তিত্ব ছিল? আব্রাহাম-এর কাছে বাইবেল ছিল না। সে বাইবেল অনুযায়ী ঈশ্বরে বিশ্বাস করত না। তাহলে আমরা কি বলতে পারি যে আব্রাহাম ঈশ্বরে বিশ্বাস করেনি? আমাদের বুঝতে হবে যে বাইবেল শুধুমাত্র ঈশ্বরের কাজের ঐতিহাসিক নথি। সেটা ঈশ্বর তাঁর কাজ শেষ করার পরে নানা লেখকের সংকলন আর সম্পাদনার ফসল। প্রভু যীশু যখন কাজ করতে আসেন, তখন নতুন নিয়ম ছিল না। মানুষ শুধু ওল্ড টেস্টামেন্ট পড়েছিল। প্রভু যীশুর কাজ করার কয়েক শতক পরে ওল্ড আর নতুন নিয়ম আসে। এটা প্রমাণ করে যে ঈশ্বরের বাণী আর কাজ প্রথমে এসেছে, তারপর বাইবেল লেখা হয়েছে। এটাই বাস্তব। ঈশ্বর আবির্ভূত হন আর অন্তিম সময়ে কাজ করেন, তাহলে কীভাবে তাঁর বাণী আর কাজ বাইবেলে আগে থেকেই লিপিবদ্ধ করা যেতে পারে? আমরা যদি প্রভুকে স্বাগত জানাতে চাই তবে আমাদের অবশ্যই বাইবেলের বাইরে যেতে হবে, ঈশ্বরের বর্তমান বাণী আর কাজ, অন্বেষণ আর অনুসন্ধান করতে হবে। ঈশ্বরের পদাঙ্ক অনুসরণ করার এটাই একমাত্র উপায়!” ফাং মিংয়ের কাছে এইসব বিষয়ে আলোচনা করার পরে, সে অন্তত কিছুটা বুঝতে পেরেছিল বলে মনে হল, কিন্তু তখনও বিভ্রান্ত ছিল আর বলল, “সর্বশক্তিমান ঈশ্বর ঠিকই বলেছেন, ঈশ্বরের কাজ প্রথমে হয়েছে আর বাইবেল পরে এসেছে, বুঝতে পারছি যে ঈশ্বর বাইবেলের চেয়ে বড়। কিন্তু কয়েক দশক ধরে বাইবেল পড়ছি, এটাকে ছেড়ে দিতে পারি না। এখনও আমার বাইবেল পড়া দরকার।” তারপর, ফাং মিং আমাকে বেশ কিছু নতুন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করল। এসব শুনে প্রথমে একটু বিভ্রান্ত লেগেছিল। জানতাম না সত্যের কোন দিকগুলো নিয়ে তার প্রশ্নের উত্তর দেব। বাড়ি ফেরার পর, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, তিনি যেন আমায় আলোকিত করেন আর পথ দেখান। তারপর আবার ফাং মিংয়ের সাথে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। একদিন, ফাং মিংয়ের বাড়িতে গিয়ে, জানালায় একটা খোলা বাইবেল আর সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণীর একটা বই দেখলাম। বুঝতে পারলাম যে যদিও ফাং মিং বলেছিল যে সে এটা গ্রহণ করেনি, কিন্তু আসলে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজ অনুসন্ধান করতে চেয়েছিল, বুঝলাম তার বোঝার তখনও আশা আছে।
পরে, ফাং মিং অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তার যত্ন নিতে আর তাকে ঈশ্বরের বাণী পড়ে শোনাতে আমি ছুটি নিয়েছিলাম। বস দেখল যে প্রায়ই আমি ছুটি চাই, তাই সে ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে বকাঝকার অজুহাত খুঁজত। প্রথমে সহ্য করছিলাম। ভেবেছিলাম কিছুটা কষ্ট নাহয় হল, শুধু ফাং মিং সত্য পথ গ্রহণ করলেই কার্যসিদ্ধি হবে। কিন্তু ফাং মিংয়ের কাছে ঈশ্বরের বাণী বেশ কয়েকবার পড়ার পরেও সে অনুসন্ধান করতে রাজি হয়নি। তখন একটু নিরুৎসাহিত হলাম। মনে হল যে এত ত্যাগ স্বীকারের পরেও সে আমাকে প্রত্যাখ্যান করছে। আর কতদিন প্রচার করলে সে বুঝবে? যত বেশি চিন্তা করতাম, ততই হতাশ হতাম আর ততই সহযোগিতা করতে অনীহা হত। এরপর, ঈশ্বরের বাণী পড়লাম, “তুমি কি তোমার কাঁধের ভার, তোমার উপর অর্পিত কাজ, ও তোমার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন? ঐতিহাসিক লক্ষ্য সম্পর্কে তোমার উপলব্ধি কোথায়? পরবর্তী যুগে কীভাবে তুমি মালিক হিসাবে ভালোভাবে কাজ করবে? মালিক হওয়া কী, সে সম্পর্কে কি তোমার প্রগাঢ় অনুভূতি রয়েছে? সকল বিষয়ের মালিককে কীভাবে ব্যাখ্যা করবে তুমি? তা কি সত্যিই জগতের সকল জীব, সমস্ত জাগতিক বস্তুর মালিক? কাজের পরবর্তী পর্যায়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কী পরিকল্পনা আছে তোমার? কতজন মানুষ তোমাকে তাদের পালক রূপে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে? তোমার কাজের ভার কি বেশি? ওরা গরিব, অভাগা, অন্ধ, বিভ্রান্ত, অন্ধকারে বিলাপ করছে—পথ কোথায়? আকুল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তারা অপেক্ষা করছে আলোর জন্য, যেন এক উল্কার মতো তা সহসা নেমে এসে দূর করে দেবে অন্ধকারের শক্তিকে যা এত বছর ধরে মানুষের ওপর অত্যাচার করে এসেছে! কে-ই বা সম্পূর্ণরূপে জানতে পারে কতটা উদ্বিগ্নভাবে তারা আশা করছে, এবং কীভাবে আকুল হয়ে দিনরাত এর জন্য অপেক্ষা করছে? এমনকি যেদিন সেই আলো চকিতে ছুটে যায়, সেদিনও গভীর যন্ত্রণাক্লিষ্ট এই মানুষগুলো মুক্তি পাওয়ার আশা হারিয়ে বন্দি হয়ে থেকে যায় অন্ধকার কারাকুঠুরিতে। কখন চোখের জল আর ফেলতে হবে না তাদের? এই দুর্বল আত্মাদের দুর্ভাগ্য অপরিসীম যাদের কখনো বিশ্রাম নিতে দেওয়া হয়নি, সুদীর্ঘকাল ধরে তারা এই অবস্থাতেই আবদ্ধ হয়ে রয়েছে নিষ্ঠুর বন্ধন ও হিমায়িত ইতিহাসের দ্বারা। কে-ই বা শুনেছে তাদের বিলাপের শব্দ? কে প্রত্যক্ষ করেছে তাদের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা? কখনও কি তোমার মনে হয়েছে ঈশ্বরের হৃদয় কতটা দুঃখিত, কতটা উদ্বিগ্ন? যে নিষ্পাপ মানবজাতিকে তিনি নিজের হাতে সৃষ্টি করেছেন তাদের এত কষ্ট ভোগ করতে দেখে তিনি কীভাবে সহ্য করবেন? সর্বোপরি, মানুষ হল সেই শিকার যাদের বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে। এবং যদিও মানুষ আজ পর্যন্ত অস্তিত্বরক্ষা করতে পেরেছে, কিন্তু কে জানতে পারতো যে মানবজাতি দীর্ঘদিন ধরে সেই মন্দ একজনের বিষপ্রয়োগের শিকার হয়ে চলেছে? তুমি কি ভুলে গেছ যে তুমিও সেই শিকারদের মধ্যে একজন? যারা বেঁচে থাকতে পেরেছে, ঈশ্বরের প্রতি তোমার ভালোবাসা থেকে তুমি কি তাদের উদ্ধারের জন্য গভীর প্রচেষ্টা করতে চাও না? মানবজাতিকে যিনি আপন রক্ত-মাংসের মতো ভালোবাসেন, সেই ঈশ্বরকে তা পরিশোধ করার জন্য তুমি কি নিজের সমস্ত শক্তি সমর্পন করতে ইচ্ছুক নও?” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের প্রতি তোমার কীভাবে অগ্রসর হওয়া উচিত?)। আমরা ঈশ্বরের বাণী থেকে তাঁর সুগভীর আকাঙ্ক্ষা বুঝতে পারি। যারা শয়তানের আধিপত্যের অধীনে বাস করে এবং ঈশ্বরের সম্মুখে আসেনি, তাদের জন্য তাদের জন্য ঈশ্বর চিন্তিত আর উদ্বিগ্ন, ঈশ্বরের আশা, মানুষ অন্তিম সময়ে পরিত্রাণগ্রহণ করতে পারবে। অন্তিম সময়ের ঈশ্বরের কাজ গ্রহণ করার ফলে, আমি জানতাম, যারা ঈশ্বরের সামনে আসেনি, তাদের ঈশ্বরের পরিত্রান স্বীকার করার জন্য ঈশ্বরের গৃহে নিয়ে আসতে হবে। সেই দায়িত্ব আমারই। অনুগ্রহের যুগে, সুসমাচার প্রচার করতে গিয়ে অনেকে বলিদান দিয়েছিল, আর শেষ পর্যন্ত, সুসমাচার বিশ্বের প্রত্যেক কোণে ছড়িয়ে পড়ে আর সবার কাছে পরিচিতি লাভ করে। নোহ-এর কথাও ভাবলাম, সে ঈশ্বরের দায়িত্ব পূরণ করার জন্য জাহাজ গড়েছিল। একটানা ১২০ বছর ধরে, সেই সময় সব অসুবিধা, উপহাস আর অপবাদের সম্মুখীন হলেও, সে হাল ছেড়ে দেয়নি। শেষ পর্যন্ত, সে ঈশ্বরের কাজ সম্পূর্ণ করে তাঁর অনুমোদন লাভ করেছিল। নোহ-এর ঈশ্বরের প্রতি এতটাই বিশ্বাস ছিল। যদিও সুসমাচার প্রচারে আমারও কিছু অসুবিধা হয়েছিল, একটু কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল, তবে সেসব যুগে যুগে সাধুদের দেওয়া মূল্য থেকে অনেক নগণ্য। আমার ভ্রাতা-ভগিনীরা যখন আমাকে সুসমাচার শোনাচ্ছিল, তখনকার কথা মনে পড়ল। আমিও বারবার তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিলাম, গ্রহণ করার আগে তাদের অনেকবার আমাকে বোঝাতে হয়েছিল। এবার, ফাং মিংকে কেন তাদের মতোই ভালবেসে বোঝাতে পারিনি? সে তখনও সত্য বুঝতে পারেননি, আর ধর্মীয় ধ্যানধারণার বাঁধনে আবদ্ধ ছিল, তাই তার প্রতিরোধী হওয়াই স্বাভাবিক, তাই না? কাজটা সামান্য কঠিন হলেও তার উপর আশা ছাড়া যায় না। এটা বুঝে গভীর অনুতাপ হল আর তারপরে ঈশ্বরের কাছে শপথ করলাম: সুসমাচার প্রচার করার সময় যতই অসুবিধার সম্মুখীন হই না কেন, সহযোগিতা করে সুসমাচার প্রচারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব। এটাই আমার দায়িত্ব আর কর্তব্য।
তারপর, ফাং মিংয়ের যত্ন নেওয়া আর তার কাছে ঈশ্বরের বাণী পড়া চালিয়ে গেলাম। একদিন সে আমাকে বলল, “এতদিন আমাকে ঈশ্বরের বাণী পড়ে শুনিয়েছ, তার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছি বাইবেলে যা আছে ঈশ্বরকে তাতে সীমাবদ্ধ করা উচিত নয়। ঈশ্বরের কাজ সব সময় নতুন, কখনো পুরনো হয় না, আর বাইবেলে যা আছে তা ঈশ্বরের অতীতের কাজ। যদি ঈশ্বর ফিরে আসেন আর বাইবেলে লিপিবদ্ধ জিনিসগুলো করেন, তাহলে ঈশ্বর তাঁর কাজের পুনরাবৃত্তি করবেন। সেটা অর্থহীন হয়ে যাবে। ঈশ্বর বাইবেলের বাইরে নতুন কাজ করলে, প্রভু যীশুর মুক্তির কাজ গ্রহণ করার ভিত্তিতে লোকেদের বিচার করে পরিশুদ্ধ করলে তবেই তারা উদ্ধার পাবে। এখনও ঈশ্বরের অতীতের কাজ আঁকড়ে থাকলে, আমি সারাজীবন বাইবেল পড়লেও সত্যময় জীবন লাভ করতে পারব না। আমাকে ঈশ্বরের পদাঙ্ক অনুসরণ করে অন্তিম সময়ে তাঁর পরিত্রাণ গ্রহণ করতে হবে।” যখন দেখলাম যে ফাং মিং অবশেষে সঠিক পথে এসেছে, তখন খুব খুশি হয়েছিলাম। এও বুঝলাম যে ঈশ্বরের মেষ-রা ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শোনে। শয়তান তাদের যতই বিভ্রান্ত করুক বা যতই তাদের ধ্যানধারণা থাকুক না কেন, শেষ পর্যন্ত, তারা সত্য পথ গ্রহণ করে ঈশ্বরের শরণে আসবেই। এরপর, ফাং মিং সক্রিয়ভাবে ঈশ্বরের বাণী পড়তে আর সমাবেশে যোগ দিতে শুরু করে, সে ধীরে ধীরে সুস্থ হতে শুরু করে। জিয়ায়িং ফাং মিংয়ের অসুবিধা আর ধ্যানধারণা নিয়ে ঈশ্বরের বাণীর মাধ্যমে প্রচুর আলোচনা করে, আর ফাং মিং অন্তিম সময়ে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজ সম্পর্কে অচিরেই নিশ্চিত হয়ে যায়। একদিন সে আমায় বলল, “আগে যখন তুমি আমাকে ঈশ্বরের বাণী পড়ে শোনাতে, তখন যদিও আপাতভাবে তোমায় উপেক্ষা করতাম, আসলে সেসব কিছু কিছু শুনেছিলাম, আর মনে হয়েছিল সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণীতে সত্যতা আছে, কিন্তু ভয় পেতাম যে হয়তো ভুল হচ্ছে, তাই এটা গ্রহণ করার সাহস দেখাইনি। এখন বুঝতে পেরেছি আর গ্রহণ করতে চাই।” ফাং মিংকে ঈশ্বরের কাজ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে দেখে খুব খুশি হয়েছিলাম, ঘটনাটা মর্মস্পর্শী ছিল। কে কখন ঈশ্বরের ঘরে ফিরবে তিনিই সেই মুহূর্ত নির্ধারণ করেন, যতক্ষণ আমরা ঈশ্বরের উপর ভরসা রাখি, ততক্ষণ আমরা ঈশ্বরের কাজ দেখতে পাই। পরে, ফাং মিং তার বন্ধু আর পরিচিতদের কাছে সুসমাচার প্রচারের প্রস্তাব দেয়। বেশ কিছু সময় একসাথে কাজ করে, চোদ্দজন অন্তিম সময়ের সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজ গ্রহণ করে।
সুসমাচার প্রচারের এই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, সত্যিকার অর্থে ঈশ্বরের কাজ দেখেছি। এই সময়, যদিও অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছি, আর কখনও কখনও দুর্বলও ছিলাম, নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম, তবে বুঝতে পেরেছি কীভাবে ঈশ্বর আমার বিশ্বাস আর ভালবাসাকে নিখুঁত করতে এমন করেছিলেন, এভাবে তিনি আমাকে সত্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। আর বুঝলাম যে ঈশ্বরের উপর ভরসা করা, ঈশ্বরের উপর সবকিছু ছেড়ে দেওয়ায় সর্বশ্রেষ্ পন্থা। এখন আমি সুসমাচার প্রচার করতে আর ঈশ্বরকে সাক্ষ্য দিতে আরও বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।