কীভাবে আমি আমার অহংকারপূর্ণ পথ পরিবর্তন করলাম

31-03-2023

আগে আমি নিজেকে খুব বুদ্ধিমান বলে মনে করতাম। আমার মনে হত আমি অন্যের সাহায্য ছাড়াই সবকিছু করতে পারব। স্কুল ও বাড়ি দুই জায়গাতেই কেউ যেকোনো প্রশ্নই করুক না কেন, আমার বড়ো দাদারা তার উত্তর দিতে না পারলেও, আমি পারতাম, আর এইজন্য আমি ওদের অবজ্ঞা করতাম। আমার বড়ো দাদারা বলত যে আমি অহংকারী, আর আমাকে নিজেকে বদলাতে হবে এবং অন্যদের অনুভূতির কথা চিন্তা করতে হবে, কিন্তু আমি ভাবলাম ওরা এইসব বলছে কারণ ওরা আমাকে হিংসা করে, তাই আমি ওদের অভিযোগকে পাত্তা দিলাম না।

২০১৯ সালে আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ গ্রহণ করি। খুব তাড়াতাড়িই আমি সেইসব নবাগতদের জলদান শুরু করি যারা সদ্য ঈশ্বরের কাজ শুরু করেছে। সেই সময় যে তিনজন ভগিনী আমার সঙ্গে কাজ করত, তাদের মধ্যে দুজন মাত্র কয়েক মাস আগে ঈশ্বরের কাজ গ্রহণ করেছিল। আরেকজন ছিল ভগিনী জোনা, যে আমার কাজে সাহায্য করত। সেই সময় আমি দলনেতা মনোনীত হই, ফলে আমার মনে হল যে আমিই দলের সেরা। আমরা যখন একসাথে কাজ করতাম, তারা কোনো একটা কাজ করার জন্য অন্য কোনো উপায়ের কথা বললে, আমি প্রায়ই তাতে রাজি হতাম না, বলতাম যে আমার নির্দেশ মতোই কাজ হতে হবে। যেমন, প্রতিবার নবাগতদের সমাবেশের পরে ভগিনী জোনা বলত, “আমরা কি নবাগতদের জিজ্ঞাসা করব যে তারা সবকিছু বুঝেছে কি না?” আমি বলতাম, “কোনো প্রয়োজন নেই। সমাবেশের সময়েই আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছি, তারা বুঝেছে, তাই আমাদের আবার জিজ্ঞাসা করার দরকার নেই।” যখন ভগিনী জোনা বলল, “আপনি যখন ঈশ্বরের কাজের সত্যতার ব্যাপারে আলোচনা করেন, আপনার আরো সবিস্তারে বলা উচিত। তাহলে যাদের সুসমাচার গ্রহণ করার সম্ভাবনা আছে, তাদের তাড়াতাড়ি এটা বুঝতে সুবিধা হবে যে ঈশ্বরের কাজ সত্য।” আমি না ভেবেই বললাম, “আমি ইতিমধ্যেই সব বলেছি। আবার বলার কোনো প্রয়োজন নেই।” মাঝে মাঝে ভগিনী জোনা আমাকে বলত নবাগতদের অবস্থা জেনে আসতে, কিন্তু আমি যেতে চাইতাম না, আমি ভাবলাম, ও কী করবে এটা দলনেতা হিসাবে আমার ঠিক করা উচিত, আমাকে কী করতে হবে সেটা ওর বলার কথা নয়। মাঝে মাঝে ভগিনী জোনা জিজ্ঞাসা করত যে সমাবেশের আলোচনা নবাগতরা বুঝতে পারছে কি না। ওকে সবসময় আমার কাজে হস্তক্ষেপ করতে দেখে আমি রেগে গেলাম। ও দলনেতা ছিল না। আমাকে এটা-ওটা করার কথা বলার কোনো অধিকার ওর ছিল না। সেই সময়, আমি খুব অহংকারী ছিলাম। আমি ভগিনী জোনা অথবা আমার অন্য দুজন ভগিনীকে সহযোগিতা করতাম না। সাধারণত, আমি নিজেই নবাগতদের সাহায্য করতাম, আর ওদের কোনো কাজ দিতাম না আমি ভাবতাম ওরা সবেমাত্রই ঈশ্বরের কাজ গ্রহণ করেছে, এবং দর্শনের অনেক সত্যই ওরা বোঝে না, তাই ওরা এই কাজ হয়তো ভালোভাবে করতে পারবে না। ওদের নিয়ে সমাবেশ পরিচালনা করার সময়, আমি সবসময়ই খুব বেশি কথা বলতাম আর ওদের আলোচনা করার সময় দিতাম না। আমার চিন্তা ছিল যে ওরা ভালোভাবে আলোচনা করতে পারবে না এবং নবাগতরা বুঝতে পারবে না। আসলে, নবাগতরা আমার দুই ভগিনীর আলোচনা বুঝতে পারত। শুধু আমিই ওদের অবজ্ঞা করেছি, তাই ওদের আলোচনা করতে দিতে চাইনি। একবার, নবাগতদের যত দ্রুত সম্ভব প্রকৃত পথের একটা প্রাথমিক ধারণা দিতে, আমি সত্যের আরো অনেক দিক নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার ভগিনীরা বলল, “আপনি এটা করতে পারেন না। আমাদের সমাবেশ মাত্র দেড় ঘন্টার। আপনি যদি খুব বেশি আলোচনা করেন, তাহলে যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে না, আর নবাগতরা বুঝতে পারবে না। আমরা আলোচনাটা একাধিক সমাবেশে ভাগ করে নিতে পারি।” কিন্তু আমার তখন ওদের মতামত মেনে নেওয়ার কোনো ইচ্ছাই ছিল না, তখন আমি প্রচুর চেষ্টা করলাম ওদের আমার কথায় রাজি করাতে আর আমার কথা শোনাতে। শেষপর্যন্ত ওদের রাজি হতেই হল। পরে আমরা কুড়ি জনেরও বেশি নবাগতদের জলদান করি। প্রথম সমাবেশে প্রায় সব নবাগতই উপস্থিত ছিল, কিন্তু পরের কয়েকটি সমাবেশে আমি দেখলাম নবাগতদের অনুপস্থিতির সংখ্যা বাড়তেই লাগলো। শেষের দিকে, প্রথমদিকের কুড়ির বেশি নবাগতদের মধ্যে মাত্র তিনজন সমাবেশে নিয়মিত আসত। আমি নবাগতদের সিঞ্চনের কাজ শুরু করার পর থেকে এরকম ঘটনা কখনো দেখিনি। তখনআমি খুবই বিভ্রান্ত আর নেতিবাচক হয়ে পড়েছিলাম। তারপর, একদিন আমাদের নেতা আমাকে আমার অবস্থার কথা জিজ্ঞাসা করলেন, এবংআমি বললাম, “ভালো নয়। এই সময়টাতে আমি আমার দায়িত্ব খুব খারাপভাবে পালন করেছি। আমি প্রতিবার নবাগতদের সঙ্গে ঠিকমত আলোচনা করি, তাদের জিজ্ঞাসা করি তারা বুঝেছে কিনা, আর ওরা সবসময়েই বলে হ্যাঁ, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না তারা সমাবেশে কেন আসছে না।” নেতা আমাকে বললেন, “তোমার নিজেকে নিয়ে ভাবা উচিত। তুমি কি এমন অনুচিত কিছু করেছ যার জন্য নবাগতরা আসতে চাইছে না?” নেতা বলতে থাকেন, “তুমি কি তোমার তিন সহকর্মী ভগিনীকে জিজ্ঞাসা করেছ যে তারা তোমার সিঞ্চনের বিষয় বা পদ্ধতিতে কোনো সমস্যা দেখেছে কিনা?” আমি বললাম, “না, আমার মনে হয় না তারা কোনো ভালো পরামর্শ দিতে পারবে।” নেতা বললেন, “এটাই সমস্যা। সবসময় নিজের উপর আস্থা রাখার বদলে তোমার উচিত তাদের মতামত নেওয়া।” নেতার কথা আমার ঠিক বলে মনে হল। আমার সহযোগী ভগিনীদের জিজ্ঞাসা করার কথা আমার কখনো মনে হয়নি। সবসময় ভাবতাম আমি ওদের থেকে ভালো কাজ করি, তাই ওদের চিন্তাধারা আমার অনর্থক মনে হত।

তখন নেতা আমাকে ঈশ্বরের বাক্যের একটা অনুচ্ছেদ পাঠালেন। “তোমরা নিজেদের দায়িত্ব পালনের সময় যখন অন্যান্যদের সাথে সহযোগিতা করো, তখন মতপার্থক্যের প্রতি কি তোমরা উদারমনস্ক? তোমরা কি অন্যান্যদের কথা বলার সুযোগ দাও? (হ্যাঁ অল্প সুযোগ দিই। আগে, অনেকবারই আমি ভাই-বোনেদের পরামর্শে কর্ণপাত করতাম না। এবং আমার নিজের মতো করে কাজ করার উপর জোর দিয়েছি। কেবল পরবর্তীকালে, যখন বাস্তব ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে যে আমিই ভুল ছিলাম, তখনই আমার উপলব্ধি হয়েছিল যে, তাদের দেওয়া বেশিরভাগ পরামর্শই ছিল সঠিক, সে ফলাফলের কথা সবাই বলছিল তা সত্যিই অর্জন করা যেত, এবং আমার নিজস্বই দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ভুল ও অপর্যাপ্ত। এই অভিজ্ঞতা লাভ করার পরেই আমি উপলব্ধি করেছিলাম সুসমন্বিত সহযোগিতা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ।) আর এটা থেকে আমরা কী দেখতে পাই? এই অভিজ্ঞতা লাভের পরে তোমরা কি কিছু উপকার পেয়েছ? সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছ? তোমরা কি ভাবো যে, যেকোনো লোকই নিখুঁত? মানুষ যতই শক্তিশালী হোক বা যতই ক্ষমতাবান ও প্রতিভাবান হোক না কেন, তবুও তারা নিখুঁত নয়। মানুষকে অবশ্যই এটা বুঝতে হবে, এটাই সত্য। এছাড়াও নিজেদের প্রতিভা ও শক্তি বা ত্রুটির ক্ষেত্রেও মানুষের এই ধরনের মনোভাবই পোষণ করা উচিত; মানুষের এই যৌক্তিকতাই অধিকারী হতে হবে। এই যৌক্তিকতার সাহায্যে, তুমি নিজের সাথে সাথে অন্যান্যদের শক্তি ও দুর্বলতারও যথাযথ মোকাবিলা করতে পারবে, এবং এটাই তোমাকে অন্যান্যদের সাথে সুসমন্বিতভাবে কাজ করতে সক্ষম করবে। তুমি যদি সত্যের এই দিকটা উপলব্ধি করে থাকো, সত্যের বাস্তবিকতার এই বিষয়টায় প্রবেশ করতে পারো, তাহলে তুমি তোমার ভাই-বোনেদের সাথে সুসমন্বিতভাবে কাজ করতে পারবে, একে অপরের শক্তিশালী বিষয়গুলো দিয়ে তোমাদের মধ্যে থাকা যেকোনো খামতি পূরণ করবে। এইভাবে, তুমি যে দায়িত্বই পালন করো বা যে কাজই করো না কেন, সর্বদাই তাতে আরও ভালো হয়ে উঠবে, এবং ঈশ্বরের আশীর্বাদও লাভ করবে। যদি তুমি সর্বদাই ভাবো যে তুমিই বেশ ভালো এবং তোমার তুলনায় অন্যান্যরা নিকৃষ্ট, এবং যদি তুমি সর্বদাই শেষ সিদ্ধান্ত নিতে চাও, তাহলে ব্যাপারটা সমস্যাদায়ক হবে। এ হল এক স্বভাবগত সমস্যা। এই ধরনের লোকেরা কি অহংকারী ও দাম্ভিক নয়?(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। ঈশ্বরের বাণী আমার সমস্যার কথা তুলে ধরেছিল। ঈশ্বর বলেন, “তোমরা নিজেদের দায়িত্ব পালনের সময় যখন অন্যান্যদের সাথে সহযোগিতা করো, তখন মতপার্থক্যের প্রতি কি তোমরা উদারমনস্ক? তোমরা কি অন্যান্যদের কথা বলার সুযোগ দাও?” আমি ঈশ্বরের প্রশ্নগুলি দেখে, বিগত সময়ে আমার তিন ভগিনীর সঙ্গে আমার সহযোগিতার কথা ভাবলাম। আমি তাদের সব পরামর্শই অগ্রাহ্য করেছি। তাদের পরামর্শ ভালো বা সঠিক হলেও, আমি একমত হইনি কারণ আমি চাইনি যে তারা ভাবুক আমি তাদের মত ভালো নই। আমি ভাবতাম আমিইসেরা, তাই একমাত্র আমিই ভালো উপদেশ দিতে পারি। দলের নেতা ছিলাম আমি, তাই তারা আমারকথা শুনবে, আমার আদেশ মানবে, আমি তাদের কথা শুনবো না। ঈশ্বরের বাক্য বলে সকলেরই ত্রুটি আছে আর অন্যের থেকে তাদের সাহায্য দরকার, কিন্তু আমি ভাবতাম আমিই সবার সেরা, আর সকলের থেকে উচ্চতর। এটা কি ঔদ্ধত্য নয়? ঈশ্বরের বাক্যে আমি দেখেছি যে ঈশ্বর এইরকম মানুষদের ঘৃণা করেন।

পরে আমি ঈশ্বরের বাণীর আর একটি অনুচ্ছেদ পড়ি। “মানুষ যখন দায়িত্ব পালন করে, তখন যদি সর্বদাই কাজটাকে আবারও করার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে তাদের মধ্যে বিশেষায়িত জ্ঞানের অভাব বা অভিজ্ঞতার অভাবটা কিন্তু সবচেয়ে বড়ো সমস্যা নয়, বরং সমস্যাটা হলো তারা অত্যন্তমাত্রায় নিজেদের নৈতিকতার বিষয়ে উদ্ধত এবং অহংকারী, তারা সুসমন্বিতভাবে কাজ করতে চায় না, বরং একাকী সিদ্ধান্ত নেয় ও কাজ করে—যার ফলস্বরূপ তারা কাজে গণ্ডগোল পাকিয়ে ফেলে, কোনো কিছুই অর্জিত হয়না, আর পুরো সময় ও প্রচেষ্টা বিফলে যায়। এবং এর মধ্যে সবচেয়ে শোচনীয় সমস্যাটা হল মানুষের ভ্রষ্ট স্বভাব। যখন মানুষের ভ্রষ্ট স্বভাব চূড়ান্ত শোচনীয় হয়, তখন তারা আর ভালো মানুষ থাকে না, বরং দুষ্ট মানুষে পরিণত হয়। দুষ্ট মানুষদের স্বভাব সাধারণ ভ্রষ্ট স্বভাবের চেয়ে অনেক গুরুতর। দুষ্ট লোকেরা দুষ্ট কাজই করতে পারে, তারা গির্জার কাজে কেবল হস্তক্ষেপ এবং ব্যাঘাতই সৃষ্টি করতে পারে। দুষ্ট লোকেরা শুধু দায়িত্বপালনের সময় সেটা খারাপভাবে পালন করে সব তালগোল পাকিয়ে দিতেই পারে; তাদের সেবায় উপকারের চেয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয় বেশি। কিছু কিছু মানুষ দুষ্ট হয় না, কিন্তু তারা নিজেদের ভ্রষ্ট স্বভাব অনুসারেই তাদের দায়িত্বপালন করে—এবং তারাও, একইভাবে, যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনে অক্ষম। সব মিলিয়ে, ভ্রষ্ট স্বভাব মানুষের যথাযথভাবে দায়িত্বপালনের সময় অত্যন্ত বাধা সৃষ্টি করে। তোমাদের মতে, মানুষের ভ্রষ্ট স্বভাবের কোন দিকটা দায়িত্বপালনের কার্যকারিতায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে? (অহংকার এবংনিজের নৈতিকতার বিষয়ে ঔদ্ধত্য।) আর অহংকার ও নিজের নৈতিকতার বিষয়ে ঔদ্ধত্যের প্রধান বহিঃপ্রকাশগুলি কী? নিজে-নিজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নিজের পথে চলা, অন্যান্য লোকেদের পরামর্শ না নেওয়া, অন্যান্যদের সাথে আলোচনা না করা, সুসমন্বিতভাবে সহযোগিতা না করা, এবং সর্বদাই বিষয়গুলোতে নিজের সিদ্ধান্ত বহাল রাখার চেষ্টা করা। এমনকি বেশ কিছু ভাই-বোন কোনও নির্দিষ্ট দায়িত্বপালনে সহযোগিতা করলেও, প্রত্যেকেই নিজ নিজ কাজে লিপ্ত থাকলেও, কিছু কিছু দলীয় নেতা বা তত্ত্বাবধায়ক সর্বদাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করতে চায়; তারা নিজেরা যা-ই করুক না কেন, তারা কখনোই অন্যান্যদের সাথে সুসমন্বিতভাবে সহযোগিতা করে না, আলাপ-আলোচনায় যোগদান করে না এবং সকলের সম্মতির তোয়াক্কা না করেই বেপরোয়া ভাবে কাজ করে। তারা সবাইকে শুধু তাদের কথাই শুনতে বাধ্য করে, এবং এখানেই রয়েছে সমস্যা(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজন সমন্বয়পূর্ণ সহযোগিতার)। ঈশ্বরের এই বাণীসমূহ আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করল। আমি বুঝতে পারিনি আগে আমি কেন আমার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারিনি। ঈশ্বরের বাণী পড়ার পরেই আমি বুঝতে পারলাম যে আমার অতিরিক্ত উদ্ধত স্বভাবের জন্য আমি অন্যদেরসঙ্গে সহযোগিতা করতে পারিনি। সেইসময়, যখন আমি তিন ভগিনীর সঙ্গে কাজকরতামকরছিলাম, আমার কথাই ছিল চূড়ান্ত থাকতো। প্রতিবারসমাবেশের আলোচ্য বিষয় নিয়ে আলোচনারকরার সময়, সমাবেশ কার্যকর করতে সকলেরই উচিত তাদের অভিমত এবং মতামত দেওয়া, এবং তারপর ঠিক করা যে সমাবেশের বিষয়বস্তু কি হবে, কিন্তু তাদের মতামত না জানতে চেয়ে আমি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতাম কারণ আমি মনে করতাম আমার মতামতই ভালো আর অন্য কারো কথা শোনার কোনো প্রয়োজন আমার নেই। কেউ কোনো আপত্তি তুললেই আমি তা প্রত্যাখ্যানের জন্য নানারকমের কারণ দেখাতাম। কারণ অন্যের পরামর্শ শোনার ব্যাপারে আমি খুবই উদ্ধত ছিলাম। আমি ঈশ্বরের দিকনির্দেশনা বা আশীর্বাদ লাভ করিনি আর নিজের দায়িত্বেও কার্যকর ছিলাম না। এবার আমার ব্যর্থতা আমার আসল রূপ প্রকাশ করল।

পরে নেতা আমাকে ঈশ্বরের বাণীর দুটি অনুচ্ছেদ পাঠায়। ঈশ্বর বলেন, “যদি নিজের অন্তরে তুমি প্রকৃতই সত্য উপলব্ধি করে থাকো, তবে কীভাবে সত্য অনুশীলন করতে হয় এবং ঈশ্বরকে মান্য করতে হয়, তা তুমি জানবে এবং স্বাভাবিকভাবেই সত্য অন্বেষণের পথে পদার্পণ করবে। তুমি যে পথে চলো সেটা যদি সঠিক হয়, ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়, তাহলে পবিত্র আত্মার কাজ তোমাকে ত্যাগ করবে না—সেক্ষেত্রে ঈশ্বরের প্রতি তোমার বিশ্বাসঘাতকতা করার সম্ভাবনা খুবই কমে যাবে। সত্যের অনুপস্থিতিতে মন্দ কর্ম করা সহজ এবং তোমার ইচ্ছা না থাকলেও তা করে ফেলবে। যেমন ধরো, তোমার স্বভাব যদি উদ্ধত ও দাম্ভিক হয়, তাহলে ঈশ্বরের বিরোধিতা করতে তোমাকে নিষেধ করলেও কোনো লাভই হবে না, তা থেকে তুমি নিজেকে আটকাতে পারবে না, এটা তোমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তুমি স্বেচ্ছায় তা করবে না; বরং তোমার উদ্ধত ও দাম্ভিক প্রকৃতিই তোমাকে দিয়ে তা করাবে। তোমার ঔদ্ধত্য ও দাম্ভিকতার ফলে তুমি ঈশ্বরকে হীন চোখে দেখবে এবং তাঁকে তোমার মূল্যহীন মনে হবে; এই স্বভাবের জন্য তুমি নিজেই নিজেকে উচ্চে স্থাপন করবে, ক্রমাগত নিজের প্রদর্শন করবে; এগুলো তোমাকে দিয়ে অন্যদের অবজ্ঞা করাবে, তোমার হৃদয়ে তোমাকে ছাড়া আর কাউকে থাকতে দেবে না; এগুলো তোমার হৃদয় থেকে ঈশ্বরের স্থান কেড়ে নেবে এবং শেষ পর্যন্ত তোমাকে দিয়েই ঈশ্বরের স্থানে বসিয়ে দাবি করাবে যাতে মানুষ তোমার প্রতি সমর্পণ করে, এবং তোমাকে তোমার নিজস্ব চিন্তা, আদর্শ ও পূর্বধারণাগুলোকেই সত্য মনে করিয়ে সেগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলবে। ঔদ্ধত্য ও দাম্ভিক প্রকৃতির আধিপত্যে মানুষ এতটাই মন্দ কাজ করে! মন্দ কর্ম সংঘটনজনিত সমস্যার সমাধান করতে হলে, তাদের সবার আগে নিজেদের প্রকৃতির পরিবর্তন করতে হবে। স্বভাবের পরিবর্তন না হলে, এই সমস্যাটাকে মৌলিক সমাধান করা সম্ভব নয়(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র সত্যের অন্বেষণের মাধ্যমেই স্বভাবের পরিবর্তন অর্জন করা যায়)। “তোমাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে: নিজের দায়িত্ব পালনের বিষয়টা তোমার নিজের প্রচেষ্টা বা নিজস্ব ব্যবস্থাপনার বিষয় নয়। এটা তোমার ব্যক্তিগত কাজ নয়, এটা গির্জার কাজ, এবং তোমায় শুধুমাত্র তোমার শক্তিটুকুই নিয়োজিত করতে হবে। ঈশ্বরের পরিচালনামূলক কার্যে তোমার কাজ হল মানুষের সহযোগিতার একটা ক্ষুদ্র অংশমাত্র। তোমার ভূমিকা হল কোনো এক কোণায় সামান্যকিছু, গৌণ কোনো দায়িত্বই বহন করো তুমি। তোমার হৃদয়ে এই বোধই থাকা উচিত। আর তাই, কোনো একটা কাজে যতজন লোকই বহাল থাকুক না কেন, অসুবিধার সম্মুখীন হলে, সবার আগে এগুলোই করা উচিত—ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, একসাথে আলাপ-আলোচনা, সত্যের অনুসন্ধান, এবং তারপর অনুশীলনের নীতি নির্ধারণ করা। এমনটা করলে, তাদের কাছে অনুশীলনের একটা পথ থাকবে। কিছু কিছু লোক সবসময়েই নিজেদের জাহির করার চেষ্টা করে, এবং কোনো কাজের দায়িত্ব তাদের দেওয়া হলে, তারা সর্বদাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদানে ইচ্ছুক হয়। এটা কী ধরনের আচরণ? এ যেন নিয়মকানুন উপেক্ষা করে যা ভালো মনে হয় তাই করা। তারা কী করবে সেটা নিজেরাই পরিকল্পনা করে নেয়, কাউকে কিছু জানায় না, তাদের মতামত নিয়ে কারোর সাথে আলোচনাও করে না; তারা সেগুলো যেমন কারোর সাথে ভাগ করে নেয় না, তেমনই খোলাখুলি জানায়ও না, বরং নিজেদের হৃদয়ে গোপন করে রাখে। যখন কাজ করার সময় আসে, তারা তাদের অনবদ্য কৃতিত্বের দ্বারা সকলকেই স্তম্ভিত করে দিতে চায়, প্রচণ্ডভাবে চমকে দিতে চায়, যাতে অন্যরা তাদের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করে। এ-ই কি তাদের দায়িত্বপালন? তারা নিজেদের জাহির করার চেষ্টা করে, এবং মর্যাদা ও খ্যাতি অর্জন করা হয়ে গেলে, তারা তাদের নিজস্ব কার্যকলাপ শুরু করে দেবে। এই ধরনের মানুষ কি অলীক উচ্চাকাঙ্ক্ষার অধিকারী নয়? তুমি কী করছ, তা কেন কাউকে জানাবে না? এই কাজটা তোমার একার নয়, তাহলে তুমি কারোর সাথে আলোচনা না করে কেন কাজ করবে? নিজেই সিদ্ধান্ত কেন নেবে? কেন তুমি গোপনীয়ভাবে, যবনিকার অন্তরালে প্রচ্ছন্ন থেকে কাজ করে যাবে, যাতে কেউ এই বিষয়ে কিছুই জানতে না পারে? লোকে যাতে শুধুই তোমার কথা শোনে, সর্বদা এমন চেষ্টা কেন করবে? স্পষ্টতই তুমি এই কাজটাকে নিজের ব্যক্তিগত কাজ হিসাবেই দেখো। তুমি হলে নেতা আর বাকি সবাই কর্মী—তারা সবাই তোমার জন্য কাজ করে। যখন তোমার মানসিকতা প্রতিনিয়ত এমনই, সেটা কি সমস্যা নয়? এই ধরনের মানুষ কি ঠিক শয়তানের স্বভাবই প্রকাশ করে না? যখন এই ধরনের মানুষ কোনো দায়িত্ব পালন করে, তখন আগে হোক বা পরে, তারা ঠিকই বহিষ্কৃত হবে(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজন সমন্বয়পূর্ণ সহযোগিতার)। ঈশ্বরের বাণী পড়ার পর আমি বুঝতে পারলাম যে ঔদ্ধত্য আমার স্বভাবে পরিণত হয়েছে এবং আমি স্বাভাবিকভাবেই সেটা প্রকাশ করছি। যখন গির্জায় আমার পদমর্যাদা ছিল, আমি তখন সেই সুযোগটা ব্যাবহার করে দেখাতে চাইতাম যে আমি অন্যদের থেকে ভালো আর নেতা হিসাবে আমিই শ্রেষ্ঠ। আমি আমার সহযোগীদের এও বোঝাতে চাইতাম যে আমি তাদের থেকে ভালো আর আমার তাদের উপদেশ বা সাহায্যের দরকার নেই। আমার ঔদ্ধত্যের জন্য, আমি সবসময় ভাবতাম আমি সব জানি আর তাই অন্যের কথা শোনার দরকার নেই। নিজের ভাবনাকেই আমি সত্য বলে মনে করতাম, আর অন্যদের নিজের ইচ্ছামত কাজ করাতাম, আর সত্যের সন্ধান করতাম না কিংবা দায়িত্ব পালনে ঈশ্বরের প্রতি আস্থাশীল ছিলাম না। বরং, নবাগতদের জলদানে আমি নিজের অভিজ্ঞতা আর মানসিক ক্ষমতার উপরেই নির্ভর করতাম আর অন্যদের আমার কথা শুনতে এবং আমার আদেশ পালন করতে বাধ্য করতাম। এটা কি প্রধান দেবদূতের মতোই নয়? এই প্রধান ছিল উদ্ধত এবং ঈশ্বরের উপাসনা করত না। সে চাইত তার স্থান ঈশ্বরের সমকক্ষ হোক, আর পরিশেষে, সে ঈশ্বর সহ বহু দেবদূতের সঙ্গেই প্রতারণা করে। আমি আমার উদ্ধত স্বভাবের জালে আটকা পড়ে ছিলাম, সত্যকে স্বীকার করিনি, আর অন্যদের আমার কথা শুনতে বাধ্য করেছি। প্রধান দেবদূতের মতোই আমিও ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করেছি এবং তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। আমার মনে পড়ে যে, ঈশ্বরকে বিশ্বাস করার আগে, আমি খুব উদ্ধত ছিলাম। যারা আমার থেকে কম ক্ষমতার, তাদেরকে আমি অবজ্ঞা করতাম, এমনকি আমার ভাইদেরও। আমি যখন ছোট ছিলাম, পরীক্ষায় সব থেকে বেশি নম্বর না পেলে, আমার বাবা আমাকে উচ্চস্বরে বকতেন, “তোমাকে পরীক্ষায় প্রথম হতেই হবে, সকলের থেকে বেশি নম্বর পেতে হবে!” আমার ঠাকুমাও আমাকে বলতেন, “তোমাকে সবার সেরা হওয়ার চেষ্টা করতেই হবে, যাতে সবাই তোমাকে সম্মান করে।” তাদের এই কথা বলতে শুনে, আমি সবসময় সকলের থেকে এগিয়ে থাকার চেষ্টা করতাম আর নিজেকে প্রথম স্থানে রাখতাম যাতে নিজেকে অন্যদের থেকে শক্তিশালী প্রমাণ করতে পারি। আমি ভাবতাম অন্যের কথা শোনা আমার জন্য খারাপ তাই আমি অন্যদের উপদেশ নিতে চাইতাম না। ঈশ্বরের বাক্য থেকেই আমি বুঝতে পারি যে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আমি সবসময় নিজেকে সকলের থেকে উপরে রাখতাম আর কারো কাছে নিজেকে সমর্পণ করতাম না। এটা শয়তানোচিত স্বভাব। এটা না বদলালে, আমি যে শুধু আমার দায়িত্ব পালনে ভাল ফল অর্জন করতে ব্যর্থ হব তাই নয়, আমি পাপ করব আর ঈশ্বরের বিরোধিতা করব, আর শেষপর্যন্ত আমি নিক্ষিপ্ত হব এবং ঈশ্বরের দ্বারা শাস্তিপ্রাপ্ত হব। ঈশ্বরের বাণী পড়ে বুঝতে পারি আমার দায়িত্ব আমার ব্যক্তিগত কর্মজীবন নয়, বরং গির্জার কাজই আমার আসল দায়িত্ব। সমস্যার সম্মুখীন হলে আমাকে তার সমাধানের জন্য অন্যদের সঙ্গে কাজ করতেই হবে, আর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, সহকর্মীদের পরামর্শ নেওয়া আমার জন্য দরকার। আমি যদি অন্যদের মতামত না নিয়ে সিদ্ধান্ত নিই এবং গির্জার কাজে দেরি করি, তাহলে এটাকে বলা হবে অসততা। এটা বুঝতে পেরে, আমি আমার দায়িত্ব পালনের পদ্ধতি বদলাতে এবং সুসংহতভাবে সকলের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চাই।

পরে, নিষ্ঠাপালনকালে, আমি ঈশ্বরের বাক্যের আরেকটি অনুচ্ছেদ দেখি। “অন্যান্যদের সাথে সহযোগিতা করা কি খুব কঠিন, তোমাদের কী অভিমত? আসলে তা নয়। তুমি বলতেই পারো যে এটা সহজ। কিন্তু এখনও লোকেদের এটা কঠিন বলে মনে হয় কেন? এর কারণ হল যে, তাদের ভ্রষ্ট স্বভাব রয়েছে। যারা মানবিকতার অধিকারী, যাদের বিবেকবোধ ও চেতনা রয়েছে, তাদের পক্ষে অন্যের সাথে সহযোগিতা করা অপেক্ষাকৃতভাবে সহজ, এবং খুব সম্ভবত এই বিষয়টিকে আনন্দময় কোনোকিছু বলেই অনুভব হবে তাদের। যেহেতু কারো পক্ষেই সবকিছু নিজেনিজে সম্পন্ন করা সহজ নয়, তাই তারা যে ক্ষেত্রের সাথেই যুক্ত থাকুক বা যে কাজই করুক, যদি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর দিকে ইঙ্গিত করার ও তাদের সাহায্য করার জন্য কেউ থাকে, তাহলে সেই কাজ তাদের নিজেনিজে করার চেয়ে অনেক সহজে সম্পন্ন করা যায়। এছাড়াও, মানুষের ক্ষমতা কতদূর কার্যকর, অথবা তারা কী অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে, তারও সীমা রয়েছে। কেউই সব কাজে দক্ষ হতে পারে না, কোনো একজনের পক্ষে সবকিছু জানা, সবকিছু শেখা, সবকিছু সম্পন্ন করা সম্ভব নয়—এটা অসম্ভব, এবং প্রত্যেকেরই সেই বোধ থাকা উচিত। আর তাই, তুমি যা-ই করো না কেন, তা গুরুত্বপূর্ণ হোক বা না হোক, তোমাকে সহায়তা করতে, পরামর্শ দিতে, উপদেশ দিতে, অথবা তোমার সাথে সহযোগিতায় কিছু করতে সর্বদাই কোনো একজনের থাকা উচিত। একমাত্র এইভাবেই নিশ্চিত করা যায় যে তুমি আরও সঠিক ভাবে কাজ করবে, কম ভুল করবে এবং তোমার বিপথে যাওয়ার সম্ভাবনা কম হবে—যেটা একটা ভালো ব্যাপার(বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, অষ্টম পরিচ্ছেদ: তারা অপরের থেকে কেবল নিজেদের প্রতিই আনুগত্য আদায় করে, সত্য অথবা ঈশ্বরের প্রতি নয় (প্রথম অংশ))। ঈশ্বরের বাণী সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে, আমি বুঝলাম যে, কেবল অন্যের সঙ্গে সহযোগিতা করেই আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন এবং স্বাভাবিক মানবতা যাপন করতে পারি, আমি ভাবতাম আমার সহকর্মীদের মধ্যে কয়েকজন খুব কম সময় আগে ঈশ্বরের কাজ গ্রহণ করেছে আর সিঞ্চনের কাজও সদ্য আরম্ভ করেছে, তাই তারা অনেক কিছুই বুঝত না, সেখানে আমি তিন বছর ধরে ঈশ্বরে বিশ্বাসী আর তাদের থেকে আমার অভিজ্ঞতাও বেশি, তাই আমি তাদের পরামর্শ বা মতামত কখনোই গ্রহণ করতাম না। এইবারই আমি দেখলাম যে এই ধারণা ভূল। যদিও আমি অনেক বেশিদিন ধরে ঈশ্বরে বিশ্বাসী এবং তাদের থেকে আমার অভিজ্ঞতা বেশি, তার মানে এই নয় যে আমি সব দিক থেকেই তাদের থেকে ভালো আমার ভ্রাতা ও ভগিনীদের সহযোগিতা ছাড়া আমার পক্ষে ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করা অসম্ভব। মাঝেমাঝে সমাবেশের সময়, আমি কিছু সত্য ভাসা-ভাসা ভাবে বুঝতাম আর ভালোভাবে আলোচনা করতে পারতাম, তাই আরো স্পষ্টভাবে আলোচনা করার জন্য আমার একজন সহযোগীর দরকার ছিল। মাঝেমাঝে নবাগতরা অসুস্থতার জন্য সমাবেশে আসতে পারত না, অথবা কাজের জন্য নিয়মিত যোগ দিতে পারত না, আর আমি তাদের পরিস্থিতির উপযোগী ঈশ্বরের বাণী খুঁজে পেতাম না, তাই আমার সহযোগীদের প্রয়োজন ছিল। আসলে, প্রত্যেকেই ঈশ্বরের দ্বারা আলোকপ্রাপ্ত হওয়ার সুযোগ আছে। ঈশ্বর কেবল আমাকেই আলোকপ্রাপ্ত করেননি অথবা ক্ষমতা প্রদান করেন নি। আমি নিজেকে খুব বড় ভাবতাম, আর অন্যদের ভাবতাম মূর্খ। এটা ছিল ভুল এবং আমার বোকামি। ঈশ্বরের আলোকপ্রদান এবং পথনির্দেশ আমাদের কতটা কাজের অভিজ্ঞতা আছে তার উপর নির্ভর করে না, তা নির্ভর করে আমি সত্যের সন্ধান করতে এবং তাকে গ্রহণ করতে পারি কিনা। আর প্রত্যেকেরই নিজস্ব শক্তি আছে, ঠিক সিস্টার জোনার মতো, যে তার দায়িত্ব পালনে ভার বহন করত এবং প্রায়ই ভালো পরামর্শ দিত। আমার উচিত ছিল আমার ভগিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করা এবং আমার দুর্বলতাকে পরিপূর্ণ করতে তার শক্তি থেকে শেখা।

পরে, আমি আমার দায়িত্ব পালনে আমার ভ্রাতা ও ভগিনীদের মতামত শোনার চেষ্টা করতাম। প্রত্যেক সমাবেশের শেষে, যখন আমার ভগিনী আমাকে বলত, প্রত্যেক নবাগতকে জিজ্ঞাসা করতে যে যা বলা হয়েছে তা তারা বুঝতে পেরেছে কিনা, আমি তার পরামর্শ মতই কাজ করতাম আর তাতে আগের মত আপত্তিও জানাতাম না। সেইসঙ্গে, সে যখন আমাকে সমাবেশের নবাগতদের সঙ্গে আরো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে এবং নবাগতদের সমস্যার সমাধান করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করতে বলত, আমি তা-ও করতাম। মাঝে মাঝে, সে আমাকে নবাগতদের সিঞ্চন করার জন্য কিছু ভালো উপায় বলত, আমি তা মেনেও চলতাম। পরে আমি দেখলাম আরো নবাগতরা সমাবেশে যোগ দিচ্ছে, আর এতে আমি খুবই আনন্দিত হই। আমি ঈশ্বরের বাণীর কথা ভাবলাম, “পবিত্র আত্মা যে শুধুমাত্র ঈশ্বরের দ্বারা ব্যবহৃত নির্দিষ্ট কিছু মানুষের মধ্যেই কাজ করেন এমন নয়, বরং তাছাড়াও, তিনি গির্জাতেও কাজ করেন। তিনি যেকোনও মানুষের মধ্যেই কাজ করতে পারেন। তিনি বর্তমানে তোমার মধ্যেও কাজ করতে পারেন এবং তুমি সেই কাজ অনুভব করবে। পরবর্তী সময়কালে, তিনি অন্য কারোর মধ্যে কাজ করতে পারেন, যেক্ষেত্রে তোমায় ত্বরায় অনুসরণ করতেই হবে; যত কাছ থেকে তুমি বর্তমান আলো অনুসরণ করো, তোমার জীবন তত বেশি বিকাশ লাভ করতে পারে। একজন যেমন ধরনের মানুষই হোক না কেন, যদি পবিত্র আত্মা তার মধ্যে কাজ করেন, তাহলে তোমাকে অবশ্যই তা অনুসরণ করতে হবে। সে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করছে তা আপনজ্ঞানে গ্রহণ করো, এবং তুমি মহত্তর বস্তুসমূহ লাভ করতে পারবে। এই ভাবে তুমি আরও দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবে। এটিই মানুষের নিখুঁত হওয়ার পথ এবং জীবনে বিকাশ লাভের উপায়(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, যারা অকৃত্রিম অন্তঃকরণে ঈশ্বরকে মান্য করে, তারা নিশ্চয়ইঈশ্বরের দ্বারা অর্জিত হবে)। ঈশ্বরের বাণী আমাকে আরো স্পষ্টভাবে বোঝালো, যে আমার উদ্ধত হওয়া এবং নিজের পদ্ধতিতে দায়িত্ব পালন করা চলবে না, এবং আমাকে সকলের সঙ্গে সহযোগিতা করতেই হবে। এর কারণ পবিত্র আত্মা সকলকে আলোকিত ও প্রদীপ্ত করেন। একজন মানুষ যতদিন ধরেই ঈশ্বরে বিশ্বাস করুক অথবা তার যাই পদমর্যাদা থকুক না কেন, তারা যা বলছে তা যদি সত্যের সাথে সুসঙ্গত হয়, তাহলে আমাদের উচিত তা গ্রহণ ও মান্য করা। আমরা যদি তা শুনতে অস্বীকার করি, তাহলে আমাদের দায়িত্ব পালনে আমরা ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করব না। এই অভিজ্ঞতা আমাকে দায়িত্ব পালনে সুসংহত সহযোগিতার গুরুত্বের কথা বোঝায়।

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

আমার নির্বাচন

২০১২ সালের মার্চ মাসে, আমার মা আমাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের সুসমাচার শোনালেন। আমি প্রতিদিন ঈশ্বরের বাণী পড়তে শুরু করলাম এবং...

Leave a Reply

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন