মিথ্যা বলার যন্ত্রণা

01-04-2023

২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে, আমি অন্তিম সময়ে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজ মেনে নিই। সমাবেশগুলিতে আমি দেখেছি যে ব্রাদার ও সিস্টাররা তাদের অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধির ওপর আলোচনা করতে পারতেন। তাঁরা তাদের সমস্ত দুর্নীতি এবং ত্রুটিগুলি সম্পর্কে কোনও আশঙ্কা ছাড়াই প্রকাশ করতে পারতেন, এবং আমি খুবই ঈর্ষান্বিত ছিলাম। আমিও একজন সৎ ব্যক্তি হতে চেয়েছিলাম এবং তাদের মতো সরল ও খোলামেলা হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু যখন বাস্তব পরিস্থিতি আসে, আমি আর সত্য বলতে পারি না। একবার, আমার ব্রাদার এবং সিস্টারেরা আমায় জিজ্ঞেস করেছিলেন, “তোমার বয়স কম, তুমি কি এখনো ছাত্র?” সত্যটা হল আমি বেশ অনেকদিন যাবৎ ছাত্র ছিলাম না, এবং আমি একটি রেস্তোরাঁয় রান্না ও পরিষ্কার করার কাজ করতাম, কিন্তু আমি ভয় পেয়েছিলাম যে অন্যরা এটা জানলে আমাকে অবজ্ঞা করবে, তাই আমি তাদের বলেছিলাম আমি এখনও একজন ছাত্র। একবার এটা বলার পরে এটা নিয়ে বেশি কিছু ভাবিনি এবং আমি আমার মত চলতে থাকলাম। একদিন, আমি একটি সাক্ষ্য ভিডিওতে ঈশ্বরের বাক্যের একটি অনুচ্ছেদ দেখলাম যা আমাকে নিজের সম্পর্কে চিন্তা করতে বাধ্য করে। “তোমাদের জানা উচিৎ যে যারা সৎ তাদের ঈশ্বর পছন্দ করেন। সারসত্য হলো, ঈশ্বর নিষ্ঠাবান, এবং তাই তাঁর বাক্যে সবসময় আস্থা রাখা যায়। উপরন্তু, তাঁর কার্য ত্রুটিহীন এবং প্রশ্নাতীত। সেই কারণে, ঈশ্বর তাদের পছন্দ করেন যারা তাঁর সাথে সম্পূর্ণভাবে সৎ থাকে। সততার অর্থ ঈশ্বরকে তোমার হৃদয় দেওয়া, সকল বিষয়ে ঈশ্বরের প্রতি আন্তরিক থাকা, সকল বিষয়ে তাঁর প্রতি উন্মুক্ত থাকা, কখনো তথ্য গোপন না করা, তোমার থেকে উপরে অথবা নীচে যারা রয়েছে তাদের ঠকানোর চেষ্টা না করা, এবং, শুধুমাত্র ঈশ্বরের পক্ষপাতিত্ব লাভের উদ্দেশ্য নিয়ে কোন কাজ না করা। সংক্ষেপে বললে, সৎ থাকা মানে তোমার কাজে এবং কথায় বিশুদ্ধ থাকা, এবং, ঈশ্বরের ও মানুষের সাথে প্রবঞ্চনা না করা(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, তিনটি সাবধানবাণী)। ঈশ্বরের বাক্য পড়ে বুঝতে পারলাম ঈশ্বর সৎ লোকদের পছন্দ করেন, সৎ লোকেরা সহজেই ঈশ্বরের কাছে উন্মুক্ত হতে পারে, তারা যা করে এবং বলে তাতে তারা দ্ব্যর্থহীন, এবং তারা ঈশ্বর বা অন্য লোকেদের প্রতারণা করার চেষ্টা করে না। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে, যখন অন্যরা আমাকে জিজ্ঞেস করেন “তুমি কি এখনও ছাত্র?” আমি এমনকি সত্যি কথাটাও বলতে পারিনা আমাকে খাটো করে দেখবে এই ভয়ে, ঈশ্বরের সামনে একজন সৎ ব্যক্তি হওয়া তো দূরের কথা। আমি মোটেও সৎ মানুষ ছিলাম না। তাই আমি অন্যদের কাছে স্বচ্ছ হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি ভয় পেয়েছিলাম যে তারা আমাকে উপহাস করবে, কিন্তু একই সাথে, তা বলে উঠতে না পেরে আমি গভীরভাবে অস্বস্তি বোধ করতে থাকলাম। তাই আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম, তিনি যেন আমাকে সত্য বলার অনুশীলন করতে এবং একজন সৎ ব্যক্তি হতে সাহায্য করেন। পরে এক সমাবেশে আমি আমার দুর্নীতির কথা খুলে বললাম এবং সেই সাথে আমার মিথ্যা এবং প্রতারণা প্রকাশ করে দিলাম। অন্যরা শুধু আমাকে তো অবজ্ঞা করেনই নি, এমনকি তাঁরা আমাকে এই বলে বার্তাও দিয়েছিলেন যে আমার অভিজ্ঞতা ভালো ছিল। আর এতে আমি সৎ ব্যক্তি হতে আরও আত্মবিশ্বাসী হলাম। একজন সৎ ব্যক্তি হওয়ার এবং এই উপলক্ষে সত্য বলার অভ্যাস থাকা সত্ত্বেও শয়তানী স্বভাব সম্পর্কে তখনও আমার কোন সচেতনতা ছিল না, এবং যখন আমার খ্যাতি আর স্বার্থ জড়িত কোনো বিষয় আসত তখন নিজেকে গোপন করার জন্য আমি প্রতারণা না করে থাকতে পারতাম না।

পরবর্তীকালে আমাকে একজন ধর্ম প্রচারক হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল এবং আমি তিনটি গির্জার কাজের দায়িত্ব পেয়েছিলাম। একটি সহকর্মী সমাবেশের সময়, একজন নেতা প্রতিটি গির্জায় কীভাবে নবাগতদের সিঞ্চন করা হচ্ছে তার সুনির্দিষ্ট বিবরণ, এবং কেন কিছু নবাগতদের সঠিকভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছেনা তা জানতে চেয়েছিলেন। আমি একটু ঘাবড়ে যেতে লাগলাম, কারণ আমি কেবল একটি গির্জায় কাজগুলি কীভাবে চলছে সে ব্যাপারে জানতাম কিন্তু অন্য দুটি গির্জার খবর জানতাম না তাহলে আমার কি বলার ছিল? আমি যদি সত্য কথা বলতাম তাহলে সবাই কী ভাবতো? তাঁরা এটা ভেবে কি অবাক হবেন না যে আমি কাজটি না জানা সত্ত্বেও একজন ধর্ম প্রচারক হয়েছি? নাকি তারা বলবে যে আমি সত্যিকারের কাজ করিনি এবং আমি এই দায়িত্ব পালনে অক্ষম? আমাকে বদলি বা বরখাস্ত করা হলে ব্যাপারটা আমার জন্য খুবই বিব্রতকর হবে। আমি পালাতে চেয়েছিলাম, আমি যদি আগেই প্রস্থান করি, তাহলে সবাই বুঝে যাবে আমি যে সত্যিই কাজ করিনি সেটা ধরা পড়ার ভয়ে আমি ভীত। সুতরাং ওখানে না থেকে এবং তাদের কথা না শুনে আমার কোনো উপায় ছিল না। যেমন অন্যান্য ধর্ম প্রচারকরা যে কাজের দায়িত্বেআছেন তাঁরা সেই কাজের বিষয়ে কথা বলছেন। আর আমার অবস্থা হলো উত্তপ্ত টিনের ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা বিড়ালের মত এবং জানিনা কি করতে হবে। নেতা যখন আমার নাম ধরে ডাকলেন, তখন আমি খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, এবং ভান করেছিলাম যে আমি তাঁর ডাক শুনতে পাইনি, “আপনি কি বলেছিলেন?” নেতা বললেন, “আমরা শুধু নবাগতদের সিঞ্চন করার কথা বলছিলাম, আপনি কি আপনার নবাগতদের বিষয়ে আমাদের কিছু বলবেন?” মনে হচ্ছিল আমার বুক থেকে হৃদপিন্ড ফেটে বের হয়ে যাচ্ছে। আমি যে একটি গির্জা সম্পর্কে জানতাম সে শুধু সে সম্পর্কে কথা বলা ছাড়া আমার কোন উপায় ছিল না, কিন্তু আমি অন্য দুটি সম্পর্কে কথা বলতে চেয়েছিলাম না। যাইহোক, আমি ভয় পেয়েছিলাম যে সবাই জানবে যে আমি তদন্তের কাজ করিনি, তাই আমি দাঁতে দাঁত চেপে মিথ্যে বলেছিলাম, “দ্বিতীয় গির্জার অনেক নবাগতদের সঠিকভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে না, এবং মহামারীর কারণে আমরা তাদের কাছে পৌঁছতে পারিনা। তৃতীয় গির্জার পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি খুব বেশি নিশ্চিত নই কারণ এই পুরো সময় ধরে আমি অন্য দুটি গির্জার কাজ অনুসরণ করছি।” এই কথাটা বলে আমার খুব অস্বস্তি লাগছিল, এবং আমি ভয় পাচ্ছি যে আমার মিথ্যাগুলো সবার নজরে পড়বে। যা আরও অপমানজনক হতে পারতো। সমাবেশের পুরো সময় ধরে আমি অস্থির ছিলাম, এবং এটা শেষ হওয়ার পরে কেবল স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে, নেতা তখন আমাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, “ওইসব নবাগতদের সম্পর্কে যারা মহামারীর কারণে সঠিকভাবে সহযোগিতা পায়নি, পরিস্থিতি খতিয়ে আপনি কি সিঞ্চনকারী কর্মীদের বলেছেন তাদের কাছে ফোন করতে?” নেতার প্রশ্নে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আমি পরিস্থিতির সুনির্দিষ্ট অবস্থা জানতাম না। আমি যদি সত্য বলি তাহলে নেতা কি বুঝবেন না আমি মিথ্যা বলেছি? আমি যে জানিনা তা আমি বলতে পারিনি। সুতরাং আমি মিথ্যা কথা বলতেই থাকলাম, “আমি তাদের সাথে এই বিষয়ে কথা বলেছি, কিন্তু নবাগতদের কেউ কেউ আমার ফোন ধরেনি তাদের ফোনের উত্তর দিচ্ছে না।” নেতা তখন জিজ্ঞেস করলেন, “কোন কোন নবাগত?” আমি একটু ভাবলাম, “নেতা আমার মিথ্যা কথা ধরতে পেরেই কি একের একের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছেন?” আমি তাড়াহুড়ো করে উত্তর দিলাম, “আমার মনে হয় যারা এই মাত্র ঈশ্বরের কাজকে মেনে নিয়েছে তাদের ভেতর কয়েকজন।” আমি স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে পারিনি দেখে নেতা বললেন, “ঠিক আছে, আপনি যখন খুঁজে পাবেন, আমাকে জানাবেন।” যখন আমি ফোন রাখলঅম, তখন আমি গভীর অপরাধবোধ অনুভব করলাম। আমি আবারও মিথ্যা বললাম এবং প্রতারণা করলাম। সমাবেশের কথা ভেবে, একজন ধর্ম প্রচারক বলেছিলেন যে তিনি তিনটি গির্জার দায়িত্বে ছিলেন, এবং একটি গির্জা ছিল যা তিনি তদন্ত করেননি। তিনি সত্য বলতে পারতেন, তো আমি কেন একটি সত্য কথাও বললাম না? মিথ্যা বলা, প্রতারণা করা এবং এইরকম মিথ্যা চেহারা তুলে ধরা সত্যকে ঢেকে রাখতে পারে না। ঈশ্বর সবকিছু খুঁটিয়ে দেখেন, এবং আজ হোক কাল হোক আমার সবকিছু উন্মোচিত এবং প্রকাশিত হবে, সুতরাং আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, “ঈশ্বর, আজকের সমাবেশে নেতা যখন কাজ সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন, আমি সত্য বলিনি, বরং মিথ্যা বলেছি। আমি ভয় করতাম যে সবাই আমাকে অবজ্ঞা করবে যদি তারা জানে যে আমি সত্যিকারের কাজ করিনি। ঈশ্বর, অনুগ্রহ করে আমাকে নিজেকে জানতে এবং আমার কলুষিত স্বভাব ত্যাগ করার জন্য পথ প্রদর্শন করুন।”

পরে আমি ঈশ্বরের বাক্যের একটি অনুচ্ছেদ পাঠ করেছিলাম। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “তাদের প্রাত্যহিক জীবনে, মানুষ অনেক কিছু বলে যা অর্থহীন, অসত্য, অজ্ঞতাপ্রসূত, নির্বোধসুলভ, এবং অজুহাত হিসাবে কথিত। মূলগতভাবে, এগুলি তারা বলে তাদের আত্মাহঙ্কারের খাতিরে, তাদের আত্মশ্লাঘার সন্তুষ্টিবিধানের উদ্দেশ্যে। তাদের এই অনৃতভাষণগুলি তাদের ভ্রষ্ট স্বভাবের অবাধ বহিঃপ্রকাশ। এই ভ্রষ্ট আচরণের সমাধা করলে তোমার হৃদয়ের পরিশোধন ঘটবে, এবং এইভাবে, তোমায় পূর্বাপেক্ষা অধিকতর শুদ্ধ এবং অধিকতর সততাপরায়ণ করে তুলবে। বস্তুত, তারা কেন মিথ্যা কথা বলে তা সকল মানুষই জানে: তারা তা বলে তাদের স্বার্থ, মুখরক্ষা, আত্মশ্লাঘা, ও মর্যাদার খাতিরে। এবং অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করতে গিয়ে, তারা তাদের প্রকৃত ক্ষমতার থেকে অনেক বেশি অতিরঞ্জিত করে নিজেদের উপস্থাপন করে। যার ফলে, তাদের মিথ্যাগুলি অনাবৃত হয়ে যায় ও অন্যেরা তা ধরে ফেলে, ফলস্বরূপ উল্টে তাদের বেইজ্জত হতে হয়, এবং তাদের চরিত্রহানি ও মর্যাদাহানি ঘটে। অত্যধিক মিথ্যার এটাই পরিণতি। যখন তুমি প্রচুর মিথ্যা কথা বলো, তখন তোমার দ্বারা উচ্চারিত প্রতিটি কথা কলুষিত। তার সবটাই অসত্য, এবং তার কিছুই যথার্থ বা বস্তুনিষ্ঠ হতে পারে না। যদিও মিথ্যাভাষণকালে হয়তো তোমার মাথা হেঁট না-ও হতে পারে, কিন্তু তোমার মনের মধ্যে ইতিমধ্যেই তুমি অসম্মানিত বোধ করো। তোমার বিবেকের দ্বারা নিজেকে তুমি অভিযুক্ত বলে অনুভব করবে, এবং নিজেকে তুমি ঘৃণা করবে ও অবজ্ঞার চোখে দেখবে। ‘কেন আমি এত অনুকম্পনীয়ভাবে জীবনযাপন করি? একটা সৎ কথা বলা কি সত্যিই এত কঠিন কাজ? নিছক মুখরক্ষার জন্য এই মিথ্যাগুলি কি আমার না বললেই নয়? এই ভাবে জীবনধারণ করা এত ক্লান্তিকর কেন?’ ক্লান্তিকর নয়, এমন এক উপায়ে তুমি জীবনধারণ করতে পারো। তুমি যদি একজন সৎ মানুষ হওয়ার অনুশীলন করো, তাহলে তুমি উদ্বেগশূন্যভাবে ও স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে পারো, কিন্তু তোমার সম্মান ও অহমিকাকে সুরক্ষিত রাখার উদ্দেশ্যে যখন তুমি অনৃতভাষণের পথ বেছে নাও, তখন তোমার জীবন ক্লান্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক, এর অর্থ এ হল এক স্ব-আরোপিত যাতনা। মিথ্যা বলার মাধ্যমে কোন সম্মান তুমি লাভ করো? তা হল এক এমনকিছু যা শূন্যগর্ভ, সম্পূর্ণ মূল্যহীন। যখন তুমি মিথ্যা কথা বলো, তখন তুমি তোমার নিজের নৈতিক চরিত্র ও মর্যাদার প্রতি প্রবঞ্চনা করছো। এই মিথ্যাগুলির কারণে মানুষ তাদের মর্যাদা হারিয়ে ফেলে, তাদের চরিত্র খোয়াতে বাধ্য হয়, এবং ঈশ্বর তাদের অপ্রীতিকর ও ঘৃণাময় বলে মনে করেন। এই মিথ্যাগুলি কি এতই মূল্যবান? না, তা নয়। এই পথ কি সঠিক? না, তা-ও নয়। যারা প্রায়সই মিথ্যা বলে, তারা তাদের শয়তানোচিত স্বভাবের ফাঁদে আবদ্ধ এবং শয়তানের আধিপত্যের অধীন হয়ে জীবনযাপন করে, আলোর মাঝে বা ঈশ্বরের সম্মুখে নয়। অনেকসময়, কীভাবে কোনো মিথ্যা কথা বলবে তা নিয়ে তোমায় চিন্তাভাবনা করতে হয়, এবং মিথ্যাটি বলার পর, তোমাকে চিন্তা করতে হয় কীভাবে তুমি তা ধামাচাপা দেবে, এবং তুমি যদি তা যথেষ্ট সুচারুভাবে গোপন না করো, তাহলে মিথ্যা প্রকাশ্যে এসে যাবে, তাই মিথ্যা গোপন করার জন্য তোমার রীতিমতো মাথা খাটানোর প্রয়োজন হয়। এইভাবে বেঁচে থাকা কি ক্লান্তিকর নয়? তা অতীব ক্লান্তিকর। এমন ক্লান্তির কি কোনো অর্থ আছে? আদৌ কোনো অর্থ নেই। শুধুমাত্র আত্মশ্লাঘা ও মর্যাদার খাতিরে মিথ্যা বলা ও তা গোপন করার জন্য মাথা ঘামিয়ে লাভ কী? পরিশেষে, এই ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করে তুমি নিজের মনেই বলবে, ‘কেন নিজেকে আমি এমনতর জটিলতার ভিতর ঠেলে দিচ্ছি? মিথ্যা বলা ও তা ধামাচাপা দেওয়ার বিষয়টা খুবই ক্লান্তিকর। একজন সৎ মানুষ হওয়া এর থেকে বরং সহজতর।’ তুমি একজন সৎ লোক হতে চাও, কিন্তু তোমার মর্যাদা, দাম্ভিকতা ও স্বার্থকে তুমি ত্যাগ করতে পারো না। তুমি কেবল মিথ্যা কথা বলতে এবং মিথ্যার সাহায্য নিয়ে এই বিষয়গুলোকে রক্ষা করতে পারো। … তুমি হয়তো ভেবে থাকতে পারো যে মিথ্যার প্রয়োগ তোমার কাঙ্ক্ষিত সুখ্যাতি, মর্যাদা, এবং অহমিকাকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম, কিন্তু এটি বড়োমাপের এক ভুল ধারণা। মিথ্যা কেবল যে তোমার অহমিকা ও ব্যক্তিগত সম্ভ্রমবোধকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যর্থ হয় তা-ই নয়, যা আরো মারাত্মক তা হল, মিথ্যা তোমার কাছ থেকে সত্যানুশীলন ও একজন সৎ মানুষ হওয়ার সুযোগ কেড়ে নেয়। এমনকি সেই মুহূর্তে যদি তুমি তোমার সুনাম ও অহংবোধকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষমও হও, কিন্তু তুমি সত্যকে হারিয়ে ফেলো, এবং তুমি ঈশ্বরের বিশ্বাসভঙ্গ করো, যার অর্থ তুমি ঈশ্বরের দ্বারা উদ্ধার লাভের ও নিখুঁত হওয়ার সুযোগ সম্পূর্ণরূপে খুইয়ে বসো। এটিই হল সবচেয়ে বড়ো ক্ষতি এবং এক চিরকালীন আক্ষেপের বিষয়। শঠ মানুষরা কখনোই তা স্পষ্টভাবে বুঝে উঠতে পারে না(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র সৎ হওয়ার মাধ্যমেই প্রকৃত মানুষ হিসাবে জীবনযাপন করা যায়)। ঈশ্বরের বাক্য আমার অবস্থা প্রকাশ করেছে। নেতা প্রতিটি গির্জার সিঞ্চন পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন, যা স্পষ্টতই একটি সহজ বিষয় ছিল, এবং এক্ষেত্রে সত্য কথা বললে খুব ভালো হত, কিন্তু আমার জন্য এর চেয়ে কঠিন আর কিছু হতে পারতো না। আমি দ্বিধায় পরিপূর্ণ ছিলাম, এবং ভয় পেয়েছিলাম যে নেতা এবং অন্যান্য ধর্ম প্রচারকরা সত্যটি জানার পরে, তারা আমাকে অবজ্ঞা করবেন, তারা বলবেন যে আমি আসল কাজটি করিনি, এবং এই সামান্য কাজটুকুও আমি বুঝতে পারিনি। এবং আমাকে যদি বরখাস্ত করা হয়, সেটা খুবই অবমাননাকর হবে। আমার খ্যাতি, মর্যাদা এবং আমার সম্পর্কে অন্যদের ভালো ধারণা রক্ষা করার জন্য, আমি দুটি গির্জা দেখাশোনার বিষয়ে মিথ্যা বলেছিলাম, যখন আমার শুধুমাত্র একটি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা ছিল। এমনকি আমি দ্বিতীয় গির্জা সম্পর্কেও বিস্তারিত বলেছিলাম, এটা বলেছিলাম যে নবাগতরা মহামারীর কারণে সহযোগিতা পায়নি। এটা কি একটা ডাহা মিথ্যা কথা ছিল না? যখন নেতা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে আমি সিঞ্চনকারী কর্মকর্তাদের নবাগতদের ফোন করতে বলেছি কিনা, আমি ভয় পেয়েছিলাম যে এইমাত্র যে মিথ্যা কথা বলেছি তা নেতা ধরে ফেলবেন কিনা, তাই আমি প্রথম মিথ্যা ঢাকার জন্য আরেকটি মিথ্যার অবতারণা করলাম। আমি আমার সুনাম এবং মর্যাদা রক্ষা করার জন্য একটি মিথ্যা ঢাকতে আরেকটি মিথ্যা ব্যবহার করেছি। আমি আসলেই একজন প্রতারক ছিলাম! আমি বাইবেলে লিপিবদ্ধ ঈশ্বর এবং শয়তানের মধ্যে একটি কথোপকথনের কথা ভেবেছিলাম। ঈশ্বর শয়তানকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে এটি কোথা থেকে এসেছে, আর শয়তান যে উত্তরটি দিয়েছিল, “আমি পৃথিবীর চর্তুদিক পরিভ্রমণ করে এলাম” (ইয়োবে ১:৭)। শয়তান ছিল খুবই ধুর্ত। সে ঈশ্বরের প্রশ্নের উত্তর সরাসরি দেয়নি এবং ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলেছিল। শয়তান কোথা থেকে এসেছে তা বলা অসম্ভব। এর মুখ শুধু মিথ্যায় ভরা, সে কখনো সত্য কথা বলে না, এবং সে সবসময়ই দ্ব্যার্থবোধক এবং অস্পষ্ট কথা বলে। মিথ্যা কথা বলে এবং প্রতারণা করে আমি কি দানব শয়তানের মত হয়ে যাইনি? নেতা যে কাজের কথা জানতে চেয়েছে তার উত্তরে আমি যা বলেছিলাম সবই মিথ্যা ও প্রতারণা। আমার উত্তর শুনে, আমি যে গির্জায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সেই গির্জার সিঞ্চনের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে নেতা স্পষ্ট কোনো ধারণা পায়নি, এবং সে বুঝে উঠতে পারেনি আমি সঠিকভাবে খোঁজখবর নিয়েছি কি না। আসলে, আমার এইরকম মিথ্যাচার এবং প্রতারণা শুধুমাত্র সাময়িকভাবে আমার খ্যাতি এবং মর্যাদা রক্ষা করেছিল, কিন্তু আমি সত্যিই যা হারিয়েছি তা হল আমার চরিত্র, মর্যাদা এবং অন্যদের বিশ্বাস। আমি যদি এভাবেই চলতে থাকি, আজ হোক কাল হোক, সবাই দেখবে যে আমি সৎ মানুষ ছিলাম না এবং অবিশ্বস্ত ছিলাম। কেউ আমাকে বিশ্বাস করবে না, তাছাড়া ঈশ্বরও আমাকে বিশ্বাস করবেন না। আর এরকম হলে কি আমি চরিত্র ও মর্যাদা থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত হব না? এটা কি আমার বোকামি হবে না?

পরে, আমি ঈশ্বরের বাক্যের একটি অনুচ্ছেদ পড়েছিলাম: “ঈশ্বর যে মানুষকে সৎ হতে বলেন এতেই প্রমাণ হয় যে কপট মানুষদের তিনি প্রকৃতই ঘৃণা ও অপছন্দ করেন। শঠ মানুষদের প্রতি ঈশ্বরের যে বিরাগ, তা হল তাদের কাজ করার রীতির প্রতি বিরাগ, তাদের স্বভাবের প্রতি বিরাগ, তাদের অভিপ্রায় ও তাদের কৌশলের প্রতি এক বিতৃষ্ণাবোধ; এই সমস্ত বিষয়গুলিকেই ঈশ্বর অপছন্দ করেন। কপট মানুষ যদি সত্যকে স্বীকার করতে সক্ষম হয়, তাদের প্রতারণাপূর্ণ স্বভাবকে চিনতে পারে, এবং ঈশ্বরের পরিত্রাণ স্বীকার করতে ইচ্ছুক হয়, তাহলে তাদেরও উদ্ধার লাভ করার একটা আশা আছে, কারণ ঈশ্বর সকল মানুষের প্রতি সমান আচরণ করেন, এবং সত্যও তাই-ই করে। আর তাই, আমরা যদি ঈশ্বরের সন্তোষবিধানকারী মানুষ হতে চাই, তাহলে প্রথম যে কাজটা আমাদের করতে হবে তা হল আমাদের আচার-ব্যবহারের নীতির পরিবর্তন: আমরা আর শয়তানোচিত দর্শন অনুসারে জীবনযাপন করতে পারবো না, আর আমরা মিথ্যা ও কৌশলের সাহায্যে কার্যসিদ্ধি করতে পারবো না, আমাদের অবশ্যই নিজেদের যাবতীয় মিথ্যাকে বর্জন করে সৎ মানুষ হয়ে উঠবো, তবেই আমাদের প্রতি ঈশ্বরের মনোভাব বদলাবে। পূর্বে, অন্যদের মাঝে বসবাস করার সময় কালে মানুষ সর্বদা মিথ্যা, ভণ্ডামি, ও চাতুরীর উপর নির্ভর করতো, এবং তাদের অস্তিত্ব, তাদের জীবন, এবং মানবীয় আচরণরীতির বুনিয়াদের ভিত্তিভূমি হিসাবে শয়তানোচিত দর্শনকে ব্যবহার করতো। ঈশ্বর এটিকে ঘৃণার চক্ষে দেখতেন। অবিশ্বাসীদের মাঝে, তুমি যদি অকপটভাবে কথা বলো, সত্যি কথা বলো, এবং একজন সৎ মানুষ হও, তাহলে তোমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা হবে, তোমার বিচার করা হবে, এবং তুমি পরিত্যক্ত হবে। তাই তুমি জাগতিক প্রবণতাকে অনুসরণ করো, শয়তানোচিত দর্শন অনুসারে জীবনযাপন করো, মিথ্যাভাষণে উত্তরোত্তর নিপুণ, এবং ক্রমাগত আরো ছলনাপরায়ণ হয়ে ওঠো। একই সঙ্গে তোমার লক্ষ্য অর্জন করতে ও নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে তুমি কুচক্রী উপায়ের ব্যবহারও আয়ত্ত করে ফেলো। শয়তানের জগতে উত্তরোত্তর তুমি আরো সমৃদ্ধিশালী হয়ে ওঠো, এবং ফলস্বরূপ, তুমি পাপের গভীর থেকে আরো গভীরে নিমজ্জিত হতে থাকো, যতক্ষণ না এমন এক অবস্থায় গিয়ে পৌঁছও যে তা থেকে তুমি আর বেরিয়ে আসতে পারছো না। বিষয়গুলো ঈশ্বরের গৃহে ঠিক এর বিপরীত। যত বেশি তুমি মিথ্যা কথা বলবে ও প্রতারণাপূর্ণ আচরণ করবে, ঈশ্বরের মনোনীত লোকেরা তোমার প্রতি তত বেশি বিতৃষ্ণ হয়ে উঠবে ও তোমাকে পরিত্যাগ করবে। তুমি যদি অনুতাপ করতে অস্বীকার করো এবং শয়তানোচিত দর্শন ও যুক্তিকে এখনো আঁকড়ে ধরে থাকো, নিজেকে গোপন করতে ও নিজের মনোভাবকে প্রচ্ছন্ন রাখতে যদি তুমি কূটকৌশল ও বিস্তারিত অভিসন্ধির প্রয়োগ করো, তাহলে তোমার উন্মোচিত হয়ে পড়ার ও পরিত্যক্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কারণ ঈশ্বর কপটাচারী মানুষদের ঘৃণা করেন। ঈশ্বরের গৃহে কেবল সৎ মানুষেরাই সমৃদ্ধি লাভ করতে পারে, এবং কপট মানুষেরা কালক্রমে পরিত্যক্ত ও বহিষ্কৃত হবে। এই সবই ঈশ্বরের দ্বারা পূর্বনির্ধারিত। কেবলমাত্র সৎ লোকেরাই স্বর্গরাজ্যের অংশভাগ পেতে পারে। তুমি যদি একজন সৎ মানুষ হওয়ার চেষ্টা না করো, যদি সত্যান্বেষণের অভিমুখে তুমি অভিজ্ঞতালাভ ও অনুশীলন না করো, নিজের কদর্যতাকে অনাবৃত করে তোমার প্রকৃত স্বরূপ যদি তুমি প্রদর্শন না করো, তাহলে কখনোই তুমি পবিত্র আত্মার কার্য লাভ করতে পারবে না এবং ঈশ্বরের অনুমোদন অর্জন করতে সক্ষম হবে না(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, সৎ ব্যক্তি হওয়ার উদ্দেশ্যে মৌলিকতম অনুশীলন)। ঈশ্বরের বাক্যের কথা চিন্তা করে আমি উপলব্ধি করলাম ঈশ্বর প্রতারক লোকদের পছন্দ করেন না এবং তিনি তাদের উদ্ধার করেন না। কারণ তারা শয়তানের অধিকৃত। প্রতারক লোকেরা তাদের সমস্ত কাজে বিশ্বাসঘাতকতা এবং কৌশল ব্যবহার করে এবং তারা সততা ছাড়াই কথা বলে আর এ সবই করে তাদের খ্যাতি, মর্যাদা এবং স্বার্থ রক্ষা করতে। এই লোকদের যে সব উদ্দেশ্য থাকে এবং যে সব পদ্ধতি তারা ব্যবহার করে তা ঈশ্বরের কাছে জঘন্য এবং ঘৃণ্য। যদিও আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, আমি কোনো সত্য অর্জন করিনি এবং এখনও শয়তানী দর্শনের দ্বারা বেঁচে আছি যেমন, “প্রত্যেক মানুষ নিজের জন্য,” এবং “যেমন একটি গাছ তার বাকলের জন্য বাঁচে, একজন মানুষ তার মুখরক্ষার জন্য বাঁচে।” এই শয়তানোচিত দর্শনগুলি ইতিমধ্যেই আমার হৃদয়ে প্রোথিত ছিল, আমাকে বিভ্রান্ত ও কলুষিত করছে, এবং আমাকে খ্যাতি এবং মর্যাদা অনুসরণ করার পথে হাঁটতে বাধ্য করে। আমি ভেবেছিলাম যে মানুষের নিজের জন্য বেঁচে থাকা উচিত, অন্যদের মধ্যে আলাদা হওয়া উচিত এবং খ্যাতি এবং লাভ অর্জন করা উচিত, এবং শুধুমাত্র তখনই একজন ব্যক্তিকে অবজ্ঞা করা হবে না। আমি ভাবতাম যে একজন ব্যক্তি যদি সবসময় সত্য বলে এবং কখনো মিথ্যা না বলে, তাহলে সেই লোকটি অবশ্যই বোকা এবং অপদার্থ। এই কারণে, আমি সবসময় প্রতারণা করতাম এবং নিজের স্বার্থের জন্য মিথ্যার জাল বুনতাম, আরও বেশি প্রতারক, জোচ্চোর এবং স্বাভাবিক মানব সদৃশতা হারিয়ে ফেলছিলাম। আমি খ্যাতি এবং মর্যাদাকে সত্যের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখতাম, এবং আমার খ্যাতি এবং মর্যাদা রক্ষা করার জন্য আমি মিথ্যা বলতে এবং সত্যের বিরুদ্ধে যেতে ইচ্ছুক ছিলাম। শয়তান ছিল একজন মিথ্যুক, এবং যখন আমি এইভাবে মিথ্যা বলি এবং প্রতারণা করি, তখন আমি কি শয়তানের মতই নই? এই মন্দ জগতে, একজন সৎ, খোলামেলা ব্যক্তি হওয়াটা নিরর্থক। কিন্তু ঈশ্বরের ঘরে বিষয়টি পুরো বিপরীত। ঈশ্বরের ঘরে, ন্যায়নিষ্ঠতা এবং সত্যের রাজত্ব সর্বোচ্চ, এবং একজন ব্যক্তি যত বেশি প্রতারণা করে, তার পতনের সম্ভাবনা তত বেশি, এবং অবশেষে, ঈশ্বর সমস্ত প্রতারককে অনাবৃত করে দেন এবং বহিষ্কৃত করেন। ঈশ্বর বলেন, “মানুষ যদি উদ্ধার পেতে চায়, তাহলে অবশ্যই তাদের সৎ হওয়ার মাধ্যমে শুরু করতে হবে(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, জীবনের উন্নতির ছয়টি সূচক)। “কেবলমাত্র সৎ লোকেরাই স্বর্গরাজ্যের অংশভাগ পেতে পারে(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, সৎ ব্যক্তি হওয়ার উদ্দেশ্যে মৌলিকতম অনুশীলন)। ঈশ্বর পবিত্র, এবং নোংরা লোকদের স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। যখন আমি এটা উপলব্ধি করলাম, আমি অনুভব করেছি যে ঈশ্বরের পবিত্র এবং ন্যায়নিষ্ঠ স্বভাব অপরাধ সহ্য করে না, এবং আমি সত্যিই আমার ব্রাদার ও সিস্টারদের কাছে মিথ্যা বলার জন্য অনুতপ্ত। আমি সত্যিই নিজেকে ঘৃণা করি এবং আমি আর কখনও মিথ্যা বা প্রতারণা করতে চাইনি। আমি সত্যের অনুশীলন করতে চেয়েছিলাম, একজন সৎ ব্যক্তি হতে এবং সবার সাথে সৎভাবে কথা বলতে চেয়েছিলাম। আমি আমার মুখ থেকে মিথ্যা এবং আমার হৃদয় থেকে ছলনা বিতাড়িত করতে চেয়েছিলাম, এবং এভাবে ঈশ্বরের অনুমোদন লাভের এবং স্বর্গরাজ্যে প্রবেশের যোগ্য হতে চেয়েছিলাম।

আমার ডিভোশানালস-এর সময়, আমি ঈশ্বরের বাক্যের একটি অনুচ্ছেদ পড়েছিলাম: “সততার অনুশীলনে অনেকগুলো দিক অন্তর্ভুক্ত। অন্য কথায়, সৎ থাকার নির্দিষ্ট মান শুধুমাত্র একটা দিকের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব নয়; সৎ হতে গেলে তার আগে তোমাকে অনেক দিক থেকে তার নির্দিষ্ট মান পূর্ণ করতে হবে। কেউ কেউ সর্বদা ভাবে যে সৎ হওয়ার জন্য তাদের শুধুমাত্র মিথ্যাচার এড়িয়ে চলতে পারলেই হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গি কি সঠিক? সৎ হওয়া কি শুধু মিথ্যাচার না করার সাথেই যুক্ত? না—এর সাথে অন্যান্য অনেক দিকও সম্পর্কিত। প্রথমত, তুমি যা কিছুরই সম্মুখীন হও না কেন, এমনকিছু যা তুমি নিজের চোখে দেখেছ বা এমনকিছু যা অন্য কেউ তোমাকে বলেছে, তা মানুষের সাথে আলাপচারিতা হোক বা কোনো সমস্যার সমাধান করা হোক, তা তোমার নিজের পালনীয় দায়িত্ব হোক বা তোমার উপর ঈশ্বরের অর্পিত কর্তব্যই হোক—তোমাকে সর্বদা অবশ্যই সৎ হৃদয়ে সেটার প্রতি অগ্রসর হতে হবে। সৎ হৃদয়ে কোনোকিছুর প্রতি অগ্রসর হওয়া কীভাবে অনুশীলন করা উচিত? তুমি যা ভাবো সেটাই বলো, আর সৎ ভাবে বলো; অন্তঃসারশূন্য কথাবার্তা বোলো না, জটিল আনুষ্ঠানিক পরিভাষা বা মনভোলানো কথা বোলো না, চাটুকারিতাপূর্ণ বা কপট মিথ্যাকথা বোলো না, বরং নিজের হৃদয়ে যা আছে সেই কথা বলো। এটাই সৎ হয়ে ওঠা। নিজের হৃদয়ে থাকা প্রকৃত চিন্তাভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ—এটাই সৎ ব্যক্তিদের করা উচিত। তুমি যদি কখনোই নিজের মনের কথা না বলো এবং তোমার হৃদয়ে সেই কথাগুলো উদ্বেলিত হয়, এবং তুমি যা বলো তা যদি সবসময়েই তোমার চিন্তার বিপরীত কথা হয়, একজন সৎ ব্যক্তি কখনোই এরকম কাজ করে না(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র সৎ হওয়ার মাধ্যমেই প্রকৃত মানুষ হিসাবে জীবনযাপন করা যায়)। ঈশ্বরের বাক্য আমাকে অনুশীলনের একটি পথ দেখিয়েছিল। সেটা অন্যদের সাথে মিথস্ক্রিয়া করা হোক অথবা আমার দায়িত্ব পরিচালনা করাই হোক, আমার পন্থায় অবশ্যই সৎ হৃদয় থাকতে হবে। যেহেতু আমি খোঁজখবর নিই নি, তাই আমার এ বিষয়ে আমার সৎ হওয়া উচিত। আমার সুনাম ক্ষুন্ন হবে কিনা তা নিয়ে আমার চিন্তা করা উচিত নয়। একজন সৎ ব্যক্তি হওয়ার অভ্যাস করাটাই আসল ব্যাপার।

পরবর্তী সহকর্মী সমাবেশে, আমি আমার দুর্নীতি প্রকাশ করার একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম সবাই আমাকে কী ভাববে। আমি উপলব্ধি করলাম আমি আবারও আমার খ্যাতি এবং মর্যাদার নিরাপত্তা চাইছি, এবং তাই আমি মনে মনে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, তাঁকে বললাম আমাকে পথপ্রদর্শন করতে এবং শক্তি দান করতে, এবং আমাকে আমার দুর্নীতি প্রকাশ করার সাহস দিতে। আমি ঈশ্বরের বাক্যের একটি অনুচ্ছেদ মনে রেখেছিলাম যা আমি আগে পড়েছিলাম: “তুমি যদি ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে অনুশীলন না করো, তোমার ভিতরের ইতিবাচক বিষয় ও তোমার প্রতিবন্ধকতাগুলোকে যদি পরীক্ষা করে না দেখো, অন্যদের সাথে আলাপ-আলোচনার সময় কখনো নিজেকে উন্মুক্ত না করো, যদি তোমার কলুষতা ও মারাত্মক ত্রুটিগুলো নিয়ে আলোচনা না করো বা সেগুলোর বিশ্লেষণ না করো বা সেগুলোকে প্রকাশিত না করো, তাহলে তোমাকে উদ্ধার করা যাবে না(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, সৎ ব্যক্তি হওয়ার উদ্দেশ্যে মৌলিকতম অনুশীলন)। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি যদি একজন সৎ মানুষ না হতাম, আমার দুর্নীতি ও ত্রুটিগুলো গোপন করেই চলতাম, নিজেকে প্রকাশ না করলে, উন্মোচিত না করলে বা খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ না করলে, আমি কখনোই আমার দূর্নীতিগ্রস্ত স্বভাব ত্যাগ করতে পারতাম না, আমি কখনোই উদ্ধার পেতাম না। আমি ঈশ্বরের কাছে আরেকটি প্রার্থনা করলাম, “ঈশ্বর! অনুগ্রহ করে আমাকে শক্তি দান করুন যাতে আমি খোলামেলা হতে পারি এবং একজন সৎ ব্যক্তি হতে পারি।” আমার প্রার্থনার পরে, আমি অন্যদের কাছে স্বচ্ছ হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলাম: “সর্বশেষ সমাবেশে নেতা যখন নবাগতদের সিঞ্চন করার কথা জিজ্ঞেস করছিলো তখন আমি মিথ্যা বলেছিলাম, সত্য হল যে আমি শুধুমাত্র একটি গির্জা সম্পর্কে জানতাম, অন্য দুটি সম্পর্কে নয়। আমি ভয় পেয়েছিলাম যে আমি যদি সত্য বলি তবে তোমরাআমাকে অবজ্ঞা করবেন, এবং তাই আমি মিথ্যা বলেছিলাম এবং বলেছিলাম যে আমি দুটি গির্জা সম্পর্কে জানি। আমি তোমাদের সবার সাথে প্রতারণা করেছি।” এই কথা বলার পর, অন্যরা আমাকে নিন্দা বা অবজ্ঞা কোনোটাই করলো না। বরং তাঁরা বলেছিলেন যে আমি সহজভাবে খোলামেলা এবং একজন সৎ ব্যক্তি হতে পেরেছি এটা ভালো। এইভাবে অনুশীলন করার পরে, আমি অনেক বেশি স্থির এবং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছিলাম। যদি আমি নিজেকে লুকিয়ে রাখতাম, তবে আমি এই উপলব্ধি এবং এই অর্জনটি লাভ করতে পারতাম না।

খুব বেশিদিন পরে নয়, একজন উচ্চ নেতা আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, “আপনার কি গির্জার নেতাদের সম্পর্কে বর্তমানে কোনো ধারণা আছে?” এই প্রশ্নে আমি কিছুটা অস্বস্তি বোধ করলাম, কারণ আমি শুধুমাত্র একজন গির্জার নেতার অবস্থা সম্পর্কে অবগত ছিলাম, কিন্তু অন্য দুটি সম্পর্কে জানতাম না। মনে মনে ভাবলাম, “যদি সত্যি কথা বলি, তাহলে কি নেতা বলবে আমি সত্যিকারের কাজ করিনি?” আর তাই আমি বলতে চেয়েছিলাম আমার ধারণা আছে। তখন বুঝলাম আমি আবার মিথ্যা বলতে চাইছি, তাই আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম এবং সত্য বলেছিলাম, “আমি শুধুমাত্র একজন গির্জার নেতার অবস্থা সম্পর্কে জানি, কিন্তু অন্য দুটি সম্পর্কে জানিনা।” এতে, নেতা আমার সমালোচনা করলো না, বরং আমাকে কিছু পরামর্শ দিলো, বললো যে গির্জার নেতাদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে আমার আরও নিয়মিত ফোন করা উচিত, এবং অবিলম্বে তাদের অসুবিধা সমাধান করতে সাহায্য করা উচিত, এবং সে আমাকে অনুসরণ করার জন্য কিছু পথও বাতলে দিলো। আমি শিখেছিলাম যে আমি যত বেশি সত্য কথা বলবো, যত বেশি সৎ হবো এবং আমার দুর্নীতি এবং ত্রুটিগুলি যত বেশি প্রকাশ করার সাহস পাব, তত বেশি আমি আমার ভ্রাতা এবং ভগিনীদের সাহায্য করতে সক্ষম হবো এবং লাভবান হবো। এর আগে, আমি আমার খ্যাতি এবং মর্যাদা রক্ষা করার জন্য মিথ্যা বলেছি এবং প্রতারণা করেছি, কিন্তু প্রতিটি মিথ্যা বলার পরে, আমার হৃদয় ভারাক্রান্ত হতো এবং বিবেকে দংশন হতো, এবং সবচেয়ে বড় কথা, আমি আমার চরিত্র এবং আমার মর্যাদা হারিয়েছি। এই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমি বুঝতে পেরেছি যে সৎ মানুষ ঈশ্বর এবং মানুষ উভয়ই পছন্দ করে, এবং তুমি যত বেশি সৎ হবে, অন্যদের সাথে তোমার সম্পর্ক তত বেশি সমন্বয়পূর্ণ হবে, এবং তুমি আরও শান্ত এবং শান্তিতে থাকবে। তোমাকে তো অবজ্ঞা করবেই না, বরং ব্রাদার ও সিস্টাররা তোমাকে সহযোগিতা করবে। একজন সৎ মানুষ হওয়া সত্যিই মহান।

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

খ্রীষ্টবিরোধী স্বভাব সম্পর্কে আমার সামান্য জ্ঞান

আমি ২০২১ সালে গির্জার নেতা নির্বাচিত হলাম। কিছুকাল যাবৎ সিঞ্চনের কাজে আমার সমস্যা হচ্ছিল। কিছু জলদানকারী নিয়মিত সমাবেশে আসছিল না, আর এলেও...

প্রতিযোগিতা কষ্টের জন্ম দেয়

২০২১-এর এপ্রিলে, গির্জা আমার আর চেন শি-র একসঙ্গে সিঞ্চনের কাজ করার ব্যবস্থা করে। খবরটা শুনে আমি কেমন যেন বিব্রত লাগে। চেন শি সক্ষম ছিল,...

আমি এত উন্নাসিক কেন?

আমি গির্জার ভিডিওর কাজ দেখার দায়িত্বে ছিলাম। তখন কিছুদিন অনুশীলনের পরে কয়েকটা নীতি আয়ত্ত করে, আমার দক্ষতা বাড়াচ্ছিলাম। সাধারণত আমাদের কাজে...

আমি কেন দায়িত্ব নিতে চাই না?

দু’হাজার একুশের অক্টোবর মাসে, আমি ভিডিওর কাজ পরিচালনার প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলাম। আমাকে ব্রাদার লিও আর সিস্টার ক্লেয়ারের পার্টনার করা হয়েছিল।...

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন