মোকাবিলা প্রত্যাখ্যানের উপর ভাবনাচিন্তা
২০২১ সালে, আমাকে লি জিয়াও-এর সঙ্গে নবাগতদের সিঞ্চনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রথমে, আমি কাজটার সঙ্গে পরিচিত ছিলাম না, তাই লি জিয়াও ধৈর্য সহকারে আমাকে সাহায্য করত, আমাকে কর্তব্যের নীতি ও তা পালনের জন্য কী করা দরকার সেগুলি বলে দিত। কিছুদিন পরে, আমি ধীরে ধীরে বিষয়টা বুঝে নিলাম, তাই যখন সে আমাকে কোনো বিষয় মনে করিয়ে দিত, আমি ভাবতাম আমি তা জানি, এবং শুনতাম না। এটা পরে আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। লি জিয়াও জানতে পেরে, সরাসরি সেগুলো ধরিয়ে দিল এবং আমাকে পরিশ্রমী হতে বলল। প্রথমে, আমি মেনে নিয়েছিলাম যে আমার মধ্যে সত্যিই অধ্যবসায়ের অভাব ছিল এবং তার তিরস্কার আমার পক্ষে ভালোই হয়েছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, আমার কাজের মধ্যে কিছু স্পষ্ট সমস্যা থেকে গেল: আমি আমার বরাদ্দ কাজগুলো করতে পারছিলাম না, তাতে কাজের অগ্রগতি ব্যাহত উউ হচ্ছিল। যখন সে দেখল এই ভুলগুলো বারবার হচ্ছে, সে আরো কঠোর স্বরে সমালোচনা করল এবং আমাকে তিরস্কারও করল: “তোমার মনে থাকে না কেন? নিজের কাজগুলো কেন করোনি?” আমি জানতাম সে শুধু চেয়েছিল আমি যেন নিজের ভুলত্রুটিগুলো শুধরে নিই। এবং আমার কাজে আরও ভালো ফল পাই, কিন্তু তার সেই কঠোর স্বর শুনে আমি একটু মনঃক্ষুণ্ণ হলাম। আমি ভাবলাম: “সে এমন করছে যেন আমি আমার কাজে খুব অমনোযোগী এবং এতদিন এখানে থাকার পরও কিছুই ঠিক মতো করতে পারছি না। অন্যরা যদি এটা শোনে, তাহলে তারা কী ভাববে? সমস্যা থাকলেও, আমরা কি শান্তভাবে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারি না? এমন তো নয় যে আমি উন্নতি করতে চাই না। বাদ দাও-এখন থেকে আমি শুধু তাকে এড়িয়ে যাব, তাহলে আর ও আমাকে তিরস্কার করবে না।” তারপর থেকে আমি আর সঙ্গে বিশেষ কথাবার্তা বলতাম না, নিজের অসন্তোষ তাকে জানানোর জন্য তার দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকাতাম। মাঝে মাঝে তার সঙ্গে আমার কাজ নিয়ে আলোচনা করতে হত, কিন্তু চিন্তা হত যে যদি তার কাছে পরামর্শ নিতে যাই এবং সে যদি আমার কাজে কিছু সমস্যা বের করে, তাহলে সে হয়ত আমাকে তিরস্কার এবং মোকাবিলা করবে। সেটা কি আমাকে আরো মন্দ প্রতিপন্ন করবে না? পরে যখন তার সঙ্গে আমার কিছু আলোচনা করার থাকত, আমি একেবারে শেষ মুহূর্ত অবধি অপেক্ষা করতাম আর ভাবতাম কথাটা বলার জন্য সেই আমাকে খুঁজে নিক। যত সময় গেল লি জিয়াও আমার কাছে অপ্রতিভ হয়ে পড়ল। একবার তাকে বলতে শুনলাম, সে অন্যদের নির্দ্বিধায় পরামর্শ দিতে পারলেও, আমার কাছে সে অপ্রতিভ বোধ করে। মাঝে মাঝে, সে আমার কাজে কোনো সমস্যা এবং বিচ্যুতি লক্ষ্য করলেও, সে বুঝে পায় না আমাকে কী বলবে। এবং সে ভয় যে আমি কঠোর গলায় কথায় কথা বললে আমি হয়ত রেগে যাব। এটা শুনে নিজেকে একটু অপরাধী মনে হল। কিন্তু তারপর আমি ভাবলাম: “তুমি মৃদুভাবে বললে আমি ব্যবহার করতাম না। তুমি খুব অহংকারী।” এই ভেবে, আমি আর নিজের সম্পর্কে ভাবিনি।
পরে, আমার তত্ত্বাবধায়ক জানতে পারে, এবং আমার সঙ্গে কয়েকবার আলাপ-আলোচনা করে, এবং বলে যে অন্যের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার আগে প্রথমে নিজের সম্পর্কে ভাবতে। ওপর ওপর তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে আত্ম-সমীক্ষা নিয়ে আলোচনা করলেও, মনে মনে জানতাম আমার সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে এবং সমস্যাটা লি-জিয়াও-এর। তাই, যতবারই আমি আমার অবস্থা সম্পর্কে কথা বলতাম, ততবারই একটা বিষয়ের উপরই জোর দিতাম যে লি-জিয়াও আমার সঙ্গে কঠোর গলায় কথা বলে। তত্ত্বাবধায়ককে দেখাতাম যে লি-জিয়াও-এর ঔদ্ধত্যের কারণেই আমার এই ভ্রষ্ট আচরণ। আমি আশা করেছিলাম যে তত্ত্বাবধায়ক তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাকে হয়তো নরম হওয়ার কথা বলবে। সেই সময়ে, অন্য একজন তত্ত্বাবধায়ক দেখেছিল যে আমি আমার সমস্যাগুলো বুঝতে পারিনি এবং তার নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছিল। সে ঈশ্বরের বাক্যের এই অনুচ্ছেদটিও পড়েছিল: “গির্জায় কিছু মানুষ আছে যাদের মধ্যের অপ্রয়োজনীয় অংশ ছেঁটে ফেলা হয় ও তাদের সাথে মোকাবিলা করা হয় কারণ তারা তাদের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করেনি, এবং তাদের যা বলা হয়, তার মধ্যে তিরস্কার, এমনকি নিন্দার সুরও নিহিত থাকে। সেগুলো যাদের উদ্দেশ্যে বলা, তারা এতে অবশ্যই খুশী হয় না এবং তাদের যা বলা হয়েছে সেটা খণ্ডন করতে চায়। তারা বলে, ‘মোকাবিলা করার সময় আমাকে যে কথাগুলো বলা হয়েছে, সেগুলো হয়ত ঠিক, কিন্তু তার মধ্যে কয়েকটা কথা খুবই কঠোর—এগুলো অপমানজনক ও হতাশাজনক। আমি অনেক বছর ধরে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে আসছি, এবং আমার যদি বড় কোনো অবদান না-ও থাকে, আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমার সাথে এমন আচরণ কীভাবে করা যায়? অন্য কারো সাথে মোকাবিলা করা হচ্ছে না কেন? এ আমি মেনে নেব না। আমি এটা নিচ্ছি না!’ এটা কি একরকমের ভ্রষ্ট স্বভাব? (হ্যাঁ।) এই ভ্রষ্ট স্বভাব শুধুমাত্র অভিযোগ, অবাধ্যতা ও প্রতিরোধের আকারে প্রকাশ পায়; তা এখনও শীর্ষে পৌঁছয়নি বা তার চরম অবস্থায় পৌঁছয়নি ঠিকই, কিন্তু তার লক্ষণ রয়েছে এবং সঙ্কটাবস্থা অদূরেই। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তারা কী মনোভাব গ্রহণ করে? তারা সমর্পণ করতে পারবে না, বিপর্যস্ত ও প্রতিবাদী বোধ করবে, ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করবে। তারা যুক্তি দেখাবে এবং আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলবে: ‘কারোর সাথে মোকাবিলা করার সময় নেতা আর কর্মীরা সবসময় সবকিছুতেই সঠিক হয় এমন নয়। তোমরা বাকিরা হয়ত এটা মেনে নিতে পারো, কিন্তু আমি মানি না। শুধুমাত্র তোমরা বোকা এবং কাপুরুষ বলেই মেনে নাও। আমি মানবো না! তোমাদের আমার কথা বিশ্বাস না হলে, চলো এই বিষয়ে তর্ক করা যাক—আমরা দেখব কে সঠিক।’ অন্যরা তাদের সাথে আলোচনা করে, বলে, ‘যেই ঠিক হোক না কেন, তোমাকে আগে সমর্পণ করতে হবে। তুমি যে দায়িত্ব পালন করেছ, সেটা কি সম্পূর্ণভাবে বিশুদ্ধ হতে পারে? তুমি যা করো তা সবই কি সঠিক? আর তা যদি হয়েও থাকে, তাহলেও মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়া তোমার পক্ষে সহায়কই হবে! আমরা তোমার কাছে নীতির বিষয়ে অনেকবার আলোচনা করেছি এবং তুমি তাতে কান দাওনি; তুমি নিছক অন্ধের মতো আর ইচ্ছামতো কাজ করে গেছ, গির্জার কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছ যার ফলে গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। তাহলে কেন তোমার অনৈতিক বৈশিষ্ট্যগুলো ছেঁটে ফেলা হবে না বা তোমার সাথে মোকাবিলা করা হবে না? তোমাকে যা বলা হয়েছে সেগুলো সামান্য রূঢ় বা কঠোর হলেও, তেমনটা হওয়াই কি স্বাভাবিক নয়? তোমার কী অজুহাত রয়েছে? তুমি কিছু খারাপ কাজ করলে কি অন্যদের তোমার সাথে মোকাবিলা করতে দিতে দাওনা?’ এগুলো যার উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে সে কি এসব শুনলেই মেনে নেয়? না, তারা অজুহাত দিতে থাকে, প্রতিরোধ করতে থাকে। তাহলে তারা কোন স্বভাব প্রকাশ করছে? শয়তানোচিত, দূষিত স্বভাব। আর সেগুলোর কী অর্থ? ‘আমাকে কেউ বোকা বানাতে পারবে না, আর কেউ আমাকে স্পর্শও করতে পারবে না। আমি তোমাকে বুঝিয়ে দেবো যে আমার সাথে ঝামেলা করা অত সহজ নয়। ভবিষ্যতে আমার সাথে মোকাবিলা করার আগে তুমি দুবার ভাববে, আর সেটাই হবে আমার জয়, তাই নয় কি?’ তাহলে, তাদের স্বভাব নগ্নভাবে উন্মুক্ত হলো, তাই না? এটা একটা দূষিত স্বভাব। দূষিত স্বভাবের লোকেরা যে শুধু সত্যের প্রতি বীতশ্রদ্ধ তাই নয়, তারা সত্যকে ঘৃণাও করে! তাদের মধ্যে থেকে অনৈতিক অংশের ছাঁটাই, অথবা তাদের সাথে হওয়া মোকাবিলার সম্মুখীন হলে তারা হয় কৌশলে এড়িয়ে যায় অথবা উপেক্ষা করে। সত্যের প্রতি তাদের ঘৃণা অনেক গভীর, কয়েকটা যুক্তির কোথায় যা বোঝা যায় তার চেয়ে অবশ্যই আরও গভীর। তারা ঠিক এমনটা অনুভব করে না। তারা বিরুদ্ধাচরণকারী এবং প্রতিরোধকারী, তারা তোমাকে ডাইনির মতো চ্যালেঞ্জ করবে, মনে করবে, ‘তুমি আমাকে অপমান করছ, ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে নিশানা করছ। এখানে কি ঘটছে তা আমি দেখতে পাচ্ছি। আমি সরাসরি তোমার বিরোধিতা করব না ঠিকই, কিন্তু প্রতিশোধ নেওয়ার একটা সুযোগ ঠিকই খুঁজে নেবো! তুমি আমার মোকাবিলা করছ, আমাকে ধমক দিচ্ছ, তাই না? আমি সবাইকে নিজের পক্ষে নিয়ে আসব আর তোমাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখব—কারোর নিশানা হতে কেমন লাগে, সেটার স্বাদ আমি তোমাকে বোঝাবো!’ এগুলোই তাদের হৃদয়ের কথা, এবং তাদের দূষিত স্বভাব অবশেষে প্রকাশিত হয়েছে। নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য, ক্ষোভ প্রকাশ করার জন্য, তারা যুক্তি ও অজুহাত দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করে, যাতে সবাইকে নিজের পক্ষে আনা যায়। তারপর তারা খুশি হয় এবং তাদের ভারসাম্য ফিরে পায়। এ কি বিদ্বেষ নয়? স্বভাবগতভাবে দূষিত হওয়া একেই বলে” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, ছয় প্রকারের ভ্রষ্ট স্বভাবের বিষয়ে জ্ঞাত হওয়াই প্রকৃত আত্মজ্ঞান)। ঈশ্বরের বাক্য আমার সঠিক অবস্থা উন্মোচন করল। আমি আমার কর্তব্যে অনিচ্ছুক এবং উদাসীন ছিলাম, এবং লি জিয়াও আমাকে যে কাজগুলো বারবার করতে বলেছিল তা করতে ব্যর্থ হয়েছিলাম, যার জন্য কাজে দেরি হয়েছিল। এটাই আমার ভুল। আমার সমস্যাটি তুলে ধরে সে সঠিক কাজই করেছে। সে কড়া গলা কথা বলত বটে, কিন্তু সেটা আমার নিজের এবং গির্জার কাজের মঙ্গলের জন্য। কিন্তু আমি তখন আত্ম-সমীক্ষা করিনি—আমি এটাও ভেবেছিলাম যে সে আমাকে সম্মান করে না এবং আমাকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলছে। সে আমার সমস্যাগুলো তুলে ধরলে আমি সবার কাছে অপদস্থ হব ভেবে তাকে ঘৃণার চোখে দেখতাম। আমি তাকে অপ্রতিভ বোধ করাতাম। আমি বুঝলাম যে আমি কতটা অযৌক্তিক ছিলাম। যখন ছাঁটাই এবং আমাকে মোকাবিলা করা হয়েছিল, তখন আমি আত্ম-সমীক্ষা না করে, উল্টে তাকেই দোষারোপ করে অহংকারী বলেছিলাম। এমনকি আমি নিজেকে জেনেও তার সম্পর্কে অভিযোগ করেছিলাম, আশা করেছিলাম যে তত্ত্বাবধায়ক তার মোকাবিলা করবে। আমার সত্যিই একটা পাপী স্বভাব ছিল। এইকথা বুঝতে পেরে আমি একটু লজ্জিত হলাম।
পরে, আমি ঈশ্বরের বাক্যের এই অনুচ্ছেদ খুঁজে পেলাম: “যখন বেশিরভাগ মানুষের মোকাবিলা এবং অপ্রয়োজনীয় অংশের ছাঁটাই করা হয়, তার কারণ হতে পারে যে তারা ভ্রষ্ট স্বভাব প্রকাশ করেছে। তা এই জন্যেও করা হতে পারে যে তারা অজ্ঞতাবশতঃ কিছু ভুল করেছে এবং ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এমনও হতে পারে যে তাদের দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা ঈশ্বরের গৃহের কাজের ক্ষতি করেছে। সবচেয়ে গুরুতর কারণ হল, মানুষের নিরঙ্কুশ ও নির্লজ্জভাবে ইচ্ছামতো কাজ করা, নীতি লঙ্ঘন করা, এবং ঈশ্বরের গৃহের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা ও তাকে ব্যাহত করা। প্রাথমিকভাবে এইসব কারণের জন্যই মানুষের অপ্রয়োজনীয় অংশের ছাঁটাই করা হয় এবং মানুষের সাথে মোকাবিলা করা হয়। যে পরিস্থিতিতে কাউকে মোকাবিলা করা হয়, বা তাদের অপ্রয়োজনীয় অংশের ছাঁটাই করা হয়, তা নির্বিশেষে, এর প্রতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনোভাব কী হওয়া উচিত? প্রথমত, তোমাকে অবশ্যই এটা স্বীকার করে নিতে হবে যে তোমার সাথে কে, কোন কারণে মোকাবিলা করছে, তা কঠোর কি না, বা এতে কেমন কণ্ঠস্বর ও কেমন শব্দ ব্যবহৃত হচ্ছে, সেসব নির্বিশেষেই এটা স্বীকার করতে হবে। তারপরে, তোমাকে সনাক্ত করতে হবে তুমি কী ভুল করেছ, কোন ভ্রষ্ট স্বভাব প্রকাশ করেছ, এবং সত্যের নীতি অনুসারে কাজ করেছ কি না। যখন তোমার অপ্রয়োজনীয় অংশের ছাঁটাই করা হয় এবং তোমার সাথে মোকাবিলা করা হয়, তখন সর্বপ্রথমে তোমার মধ্যে এই মনোভাবই থাকা উচিত” (বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, নবম পরিচ্ছেদ: কেবলমাত্র নিজেদেরকে বিশিষ্ট ভাবে তুলে ধরতে এবং নিজেদের স্বার্থ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে পরিতুষ্ট করতেই তারা তাদের কর্তব্য করে; তারা কখনোই ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে না, এবং ব্যক্তিগত গৌরবের বিনিময়ে এমনকি সেই স্বার্থ বিক্রয় অবধি করে দেয় (অষ্টম অংশ))। ঈশ্বরের বাক্যর মাধ্যমে, আমি জেনেছি যে আমাদের মোকাবিলা করার একটা কারণ রয়েছে: বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এর কারণ হল আমরা আমাদের কর্তব্যের ক্ষেত্রে নীতির অন্বেষণ করি না এবং কেবল নিজেদের ভ্রষ্ট স্বভাব অনুযায়ী চলি। আমরা গির্জার কাজের ক্ষতি করছি বলেই আমাদের মোকাবিলা করা হয়। কাজের প্রতি দায়িত্ববোধের ধারণা থেকেই এই মোকাবিলা করা হয়, এবং গির্জার স্বার্থ রক্ষা করতে—এটা একটা ইতিবাচক বিষয়। মোকাবিলার পর, আমরা নিজেদের সমস্যা বুঝতে পারি বা নাই পারি, আমাদের উচিত তা গ্রহণ করা, আত্মসমীক্ষা করা এবং কর্মের নীতির সন্ধান করা। একেই বলে সত্যকে গ্রহণ করা—মোকালিলার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় এই মনোভাবই থাকা উচিত। লি জিয়াওর সঙ্গে যখন কাজ করেছি তা নিয়ে যখন ভাবি, যখন আমি কাজের সঙ্গে অপরিচিত ছিলাম, সে আমাকে ধৈর্য ধরে ধাপে ধাপে শিখিয়েছিল, কিন্তু আমি প্রায়ই কাজে গন্ডগোল পাকিয়ে ফেলতাম—আমি মনোযোগী ছিলাম না এবং নিজের বরাদ্দ কাজ করতাম না। তার ফলে, আমাদের অগ্রগতি ক্রমাগত ব্যাহত হচ্ছিল। শুধুমাত্র তখনই সে আমাকে মোকাবিলা এবং তিরস্কার করেছিল। আমি যাতে আত্ম-সমীক্ষা করে নিজেকে শুধরে নিই সেই চেষ্টাই সে করেছিল, সে নীতি না মেনে আমাকে আঘাত করেনি। কিন্তু আমি সত্যটা গ্রহণ করিনি, এবং যখন সে আমাকে তিরস্কার করেছিল এবং পরামর্শ দিয়েছিল তখন তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করিনি। পরিবর্তে, আমি তার এবং তার কাজকর্মের কথাই শুধু ভেবেছি। যখন সে আমার সঙ্গে কিছুটা কঠোর গলায় কথা বলেছিল তখন আমি ভেবে নিয়েছি সে আমার ত্রুটিগুলিকে তুলে ধরছে। এবং আমাকে বিব্রত করছে আর আমার পরিস্থিতি আরো কঠিন করে তুলছে। আমি নিজেই যে প্রতিরোধী ছিলাম সেটা মেনে নিতে পারিনি। ফলে, শিক্ষালাভের অনেক সুযোগ আমি হারিয়েছিলাম, আমার জীবনে প্রবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল এবং গির্জার কাজ বিলম্বিত হয়েছিল। আমি এত অযৌক্তিক ছিলাম! আমি তখন ভাবলাম কেন, তার সমালোচনা স্পষ্টতই আমার পক্ষে সহায়ক এবং গির্জার কাজের জন্য উপকারী হওয়া সত্ত্বেও, আমি তা যথাযথভাবে গ্রহণ করিনি, এমনকি তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক ধারণা গড়ে তুলেছিলাম। অনুসন্ধান করতে করতে গিয়ে, আমি ঈশ্বরের এই বাক্যগুলো খুঁজে পেলাম: “খ্রীষ্টবিরোধীদের যখনই মোকাবিলার সম্মুখীন হতে হয় এবং তাদের অপ্রয়োজনীয় অংশ ছাঁটাইয়ের ব্যাপার আসে, তারা সেটা মেনে নিতে পারে না। এবং তারা যে মেনে নিতে পারে না, সেটারও কারণ আছে। প্রধান কারণ হল, যখন তাদের মোকাবিলা ও অপ্রয়োজনীয় অংশের ছাঁটাই করা হয়, তারা মনে করে তাদের সম্মানহানি হয়েছে, তারা তাদের অবস্থান ও মর্যাদা হারিয়েছে, দলের মধ্যে তারা মাথা তুলতে পারছে না। তাদের হৃদয়ে এই জিনিসগুলোর প্রভাব পড়ে: তাদের উপর অপ্রয়োজনীয় অংশের ছাঁটাই ও মোকাবিলা হওয়াকে তারা স্বীকার করে নিতে ঘৃণা করে, তাদের মনে হয় যে বা যারা তাদের মোকাবিলা করছে, অপ্রয়োজনীয় অংশের ছাঁটাই করছে, তারা তাদের হয়রান করার জন্যই এমনটা করছে এবং তারা তাদের শত্রু। যখন খ্রীষ্টবিরোধীদের মোকাবিলা করা হয় বা তাদের অপ্রয়োজনীয় অংশের ছাঁটাই করা হয়, তাদের মধ্যে এই মনোভাবই দেখা যায়। এই বিষয়ে তুমি নিশ্চিত হতে পারো। এই মোকাবিলা এবং অপ্রয়োজনীয় অংশের ছাঁটাই প্রক্রিয়াতেই সবচেয়ে বেশি করে প্রকাশিত হয় কেউ সত্যকে গ্রহণ করতে পারে কি না এবং সে সত্যিই অনুগত কি না। এই খ্রীষ্টবিরোধীরা মোকাবিলা এবং অপ্রয়োজনীয় অংশের ছাঁটাই প্রক্রিয়ার এতোই প্রতিরোধী যে তা এটা দেখানোর জন্য যথেষ্ট যে তারা সত্যের প্রতি বীতশ্রদ্ধ এবং তাকে সামান্যতমও স্বীকার করে না। তাহলে, এটাই হল সমস্যার মূল। তাদের গর্ব এই বিষয়ের কেন্দ্রবিন্দু নয়, সত্যকে গ্রহণ না করাই এই সমস্যার সারমর্ম। খ্রীষ্টবিরোধীদের যখন মোকাবিলা করা হয় ও তাদের অপ্রয়োজনীয় অংশের ছাঁটাই করা হয়, তারা দাবি করে যে সেটা নরম সুর ও আচরণের মাধ্যমে করতে হবে। যদি প্রক্রিয়া সম্পাদনকারীর স্বর গম্ভীর হয় ও আচরণ কঠোর হয়, তাহলে খ্রীষ্টবিরোধীরা প্রতিরোধ করবে, প্রতিবাদ করবে, এবং ক্রুদ্ধ হয়ে উঠবে। তাদের মধ্যে থেকে যা অনাবৃত হয়েছে সেগুলো উচিত কি না বা সত্যি কি না, তা নিয়ে তারা চিন্তা করে না, এবং তারা এ বিষয়েও চিন্তা করে না যে তারা কোথায় ভুল করেছে বা তাদের সত্যকে স্বীকার করে নেওয়া উচিত কি না। তারা শুধু এটাই চিন্তা করে যে তাদের অহংকার এবং গর্বে আঘাত করা হয়েছে কি না। অপ্রয়োজনীয় অংশের ছাঁটাই হওয়া এবং মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়া যে মানুষের জন্য সহায়ক, প্রেমময়, এবং উদ্ধারলাভে সহায়ক, তা যে মানুষের জন্য উপকারী, তা খ্রীষ্টবিরোধীরা একেবারেই বুঝতে পারে না। এমনকি তারা এটা দেখতেও পায় না। এটা কি তাদের পক্ষে বিচারশক্তিহীন ও অযৌক্তিক নয়? সুতরাং, মোকাবিলা এবং অপ্রয়োজনীয় অংশের ছাঁটাইয়ের সম্মুখীন হলে, খ্রীষ্টবিরোধীদের মধ্যে কী স্বভাবের প্রকাশ দেখা যায়? নিঃসন্দেহে, এই স্বভাব হল সত্যের প্রতি বীতশ্রদ্ধ মনোভাব, ঔদ্ধত্য, এবং আপোষবিমুখতা। এটাই প্রকাশ করে যে খ্রীষ্টবিরোধীদের প্রকৃতি ও সারমর্ম হল সত্যের প্রতি বীতশ্রদ্ধ ও ঘৃণার মনোভাব” (বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, নবম পরিচ্ছেদ: কেবলমাত্র নিজেদেরকে বিশিষ্ট ভাবে তুলে ধরতে এবং নিজেদের স্বার্থ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে পরিতুষ্ট করতেই তারা তাদের কর্তব্য করে; তারা কখনোই ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে না, এবং ব্যক্তিগত গৌরবের বিনিময়ে এমনকি সেই স্বার্থ বিক্রয় অবধি করে দেয় (অষ্টম অংশ))। ঈশ্বরের বাক্য থেকে, আমি জানলাম যে খ্রীষ্টবিরোধীরা নিজেদের স্বভাবের বশেই সত্যকে ঘৃণা এবং মর্যাদা কামনা করে। যখন মোকাবিলা এবং ছাঁটাই করা হয়, তারা জানে যে সমালোচনাটা সঠিক, কিন্তু যেহেতু এতে তাদের মাথা হেঁট হয়ে যায় সেজন্য তারা তাদের প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ করে ফেলে, এবং তারা তা গ্রহণ করতে চায় না। এমনকি যে ব্যক্তি তাদের মোকাবিলা করে, তাকে তারা শত্রু হিসাবে প্রত্যাখ্যান করবে। একজন খ্রীষ্টবিরোধী হিসাবে আমারও একই স্বভাব ছিল। যখন লি জিয়াও আমার সমস্যাগুলো তুলে ধরেছিল, আমি জানতাম সে যা বলেছিল তা সত্য, কিন্তু আমি সত্যের সন্ধান করিনি বা নিজের সম্পর্কে ভাবিনি। আমি তার কথাগুলো মেনে নিইনি কারণ সে সরাসরি আমার ঘাটতিগুলি প্রকাশ করেছিল, এবং তার জন্য আমার মাথা হেঁট হয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম সে আমার পরিস্থিতি আরো কঠিন করে দিতে চাইছে। নিজের সুনাম রক্ষা করতে, ঘৃণাত চোখে দেখে তাকে শুধু অপ্রতিভই করিনি, আমার তত্ত্বাবধায়কের কাছে তার সম্পর্কে অভিযোগও করেছি যাতে তত্ত্বাবধায়ক তার মোকাবেলা করতে পারে এবং আমার সমালোচনা না করার জন্য তাকে নির্দেশ দিতে পারে। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমারও খ্রীষ্টবিরোধীদের মতো সত্যকে ঘৃণা করার স্বভাব ছিল। যে সত্যকে গ্রহণ করতে সক্ষম সে এমন কোনো সঙ্গী চায় যে তার দোষত্রুটিগুলিকে তুলে ধরবে—এইভাবে, তারা তাদের ভ্রষ্ট স্বভাব অনুযায়ী দায়িত্ব পালন এবং গির্জার কাজে ব্যাঘাত এড়াতে পারে। এতে তাদের এবং গির্জার কাজ উভয়েরই উপকার হয়। যেমন, তারা অন্যের ছাঁটাই এবং সমালোচনা গ্রহণ করতে সক্ষম। কিন্তু স্পষ্টতই আমি ছিলাম ভ্রষ্ট ও আমার অনেক ঘাটতি ছিল, আর আমার কাজে অনেক সমস্যাও ছিল, কিন্তু আমি চাইনি কেউ সেগুলো তুলে ধরুক। যখন তারা সেগুলো তুলে ধরেছিল, আমি দাবি করেছিলাম তারা তা এমন কৌশলে করুক যাতে আমার মাথা হেঁট না হয়। যখন তাদের কথা আমার মর্যাদা এবং সুনামকে বিপন্ন করেছিল, আমি তাদের সঙ্গে শত্রুর মতো আচরণ করেছিলাম এবং তাদের উপেক্ষা করার উপায় খুঁজেছিলাম গির্জার কাজ বা তাদের অনুভূতি সম্পর্কে না ভেবেই, ঈশ্বরের প্রতি কোনো শ্রদ্ধা না রেখেই। আমি একজন খ্রীষ্টবিরোধীর পথে হাঁটছিলাম, এবং আমি অনুতাপ না করলে, ঈশ্বর আমাকে ঘৃণা এবং পরিত্যাগ করতেন।
পরে, আমি ঈশ্বর বাক্যের একটি অনুচ্ছেদ পেলাম: “গঠনমূলক বক্তৃতা কেমনভাবে প্রকাশ করা হয়? তা প্রধানত উৎসাহব্যঞ্জক, বিষয়াভিমুখী, পথনির্দেশক, উপদেশমূলক, উপলব্ধিমূলক, এবং স্বস্তিদায়ক। এছাড়াও, কয়েকটা বিশেষ দৃষ্টান্তে, অন্যদের ত্রুটি সরাসরি প্রকাশ করার, তাদের মোকাবিলা করার, এবং তাদের অপ্রয়োজনীয় অংশ কর্তনের দরকার পড়ে, যাতে তারা সত্যের জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং অনুশোচনায় ইচ্ছুক হয়। শুধু তবেই কাঙ্ক্ষিত প্রভাব অর্জিত হয়। এইরূপ অনুশীলনের পন্থা মানুষের পক্ষে খুবই উপকারী। এটা মানুষের পক্ষে খুবই উপকারী। এটা তাদের পক্ষে প্রকৃত সহায়ক এবং গঠনমূলক হয়, তাই নয় কি? এই যেমন ধরো, তুমি সবিশেষভাবে স্বেচ্ছাচারী ও উদ্ধত। তুমি হয়ত এই বিষয়ে কখনোই সচেতন নও, কিন্তু তোমায় ভালোভাবে জানে এমন কেউ এসে তোমার সমস্যাগুলি তোমার সামনে তুলে ধরে। তুমি নিজের মনে ভাবলে, ‘আমি কি স্বেচ্ছাচারী? আমি কি উদ্ধত? আমাকে কেউ একথা বলার সাহস করে নি, কিন্তু সে আমায় বোঝে। সে যখন এসব বলছে, তার মানে এটা সত্যিই ঠিক। আমাকে এই বিষয়গুলি নিয়ে সময় ধরে ভাবনাচিন্তা করতে হবে’। তারপরে তুমি সেই ব্যক্তিকে বললে, ‘অন্যান্য লোকেরা আমাকে খালি ভালো ভালো কথাই বলে, তারা আমার গুণগান গায়, কেউ কখনো আমার সাথে স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত হৃদয়ে আলাপচারিতা করে না, আমার মধ্যেকার এই দোষ-ত্রুটিগুলোকে কেউ কখনো তুলে ধরে নি। শুধু তুমিই তা বলতে পারলে, আমার সাথে আন্তরিক হতে পারলে। এটা কতই না ভালো হল, আমার কত বড় উপকারই না হল’। এটাই হল স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত হৃদয়ে আলাপচারিতা, তাই নয় কি? একটু একটু করে, সেই অন্য ব্যক্তিটি তোমার কাছে প্রকাশ করে তার মনে যা রয়েছিল তা, তোমার বিষয়ে তার মনোভাব, এবং এই বিষয়ে নিজের ধারণা, কল্পনা, নেতিবাচকতা এবং দুর্বলতাগুলির অভিজ্ঞতা সে কীভাবে লাভ করেছে, এবং সত্য অন্বেষণের মাধ্যমে কীভাবে সেগুলি এড়াতে সে সক্ষম হয়েছে, সেইসব নিয়ে সে আলাপচারিতা করে। এ-ই হল স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত হৃদয়ে আলাপচারিতা, এ-ই হল আন্তরিকভাবে যোগাযোগ স্থাপন” (বাক্য, খণ্ড ৬, সত্যের অন্বেষণের বিষয়ে, সত্যের অন্বেষণ কী? (৩))। ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে আমি জানলাম যে যে কথা মানুষকে উৎসাহ ও সান্ত্বনা দেয়, সেগুলি ছাড়াও যে সমস্ত কথা মানুষের সমস্যা এবং তাদের ঘাটতিগুলিকে তুলে ধরে সেগুলিও প্রকৃত অর্থেই সহায়ক। মাঝে মাঝে আমরা ভ্রষ্ট স্বভাবের দ্বারা পরিচালিত হয়ে আমাদের নিজেদের সমস্যাগুলো দেখি না, এবং যে সমস্ত কথা আমাদের সমস্যাবিষয়ক এবং এই সমস্যাগুলিকে উন্মোচন করে সেগুই আরও বেশি উপকারী হতে পারে। সেই মুহূর্তে, আমরা হয়ত একটু অপমানিত হব, কিন্তু এই সমালোচনা এবং সাহায্য সত্যানুসন্ধান ও আত্মসমীক্ষার জন্য আমাদের ঈশ্বরের সামনে নিয়ে যেতে পারে। এটা আমাদের জীবনে প্রবেশের জন্য খুবই উপযোগী। আমি জীবন প্রবেশের উপর গুরুত্ব দিইনি এবং সক্রিয়ভাবে নিজেকে নিয়ে ভাবিনি। লি জিয়াওর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল, তাই আমার কাজের মধ্যে কী সমস্যা রয়েছে সে সম্পর্কে তার খুব স্পষ্ট ধারণা ছিল। সে ন্যায়পরায়ণ ছিল, দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করত, এবং সরাসরি আমার সমস্যা এবং ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো তুলে ধরতে পারত। সে হয়তো কৌশলী ছিল না, হয়ত একটু কঠোর ছিল, কিন্তু সে আমাকে সত্যিই সাহায্য করার চেষ্টা করছিল। এমনকি যখন সে আমার ভ্রষ্ট স্বভাবের জন্য অপ্রতিভ বোধ করেছিল, তখনও সে আমার বিরুদ্ধে যায়নি। এবং আমার সঙ্গে একইভাবে কাজ করে গিয়েছিল। লি জিয়াও আমার মোকাবিলা এবং আমাকে প্রকাশ করার পরেই আমি ক্ষুদ্ধ হয়েছিলাম এবং জানতাম আমার সমস্যা সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা করতে গেলে ঈশ্বরের সামনে যেতে হবে। ধীরে ধীরে, কর্তব্যের প্রতি নিজের মনোভাব শুধরে নিতে শুরু করি। লি জিয়াও আমাকে তিরস্কার ও মোকাবিলা করেছিল বলেই এই উন্নতি সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু আমি জানতাম না আমার জন্য কোনটা উঅ ভালো—তার কঠোর স্বর শুনে আমি ভেবেছিলাম সে আমার সঙ্গে শত্রুতা করছে এবং আমার ত্রুটিগুলো তুলে ধরছে। তাই আমি তাকে এড়িয়ে যাই, তার বিরোধিতা ও তার কথাগুলোকে প্রত্যাখ্যান করি, প, এবং আত্ম-সমীক্ষার কথা ভাবিনি। শেষ পর্যন্ত, আমার কোনো পরিবর্তন হয়নি আর আমি সত্য অর্জনের সুযোগ হারিয়েছি। আমি কত বোকা ছিলাম! আমাকে যদি এমন কোনো চাটুকারের সঙ্গে কাজ করতে দেওয়া হত যে আমার কোনো ত্রুটির কথা বলবে না, তাহলে হয়তো বাহ্যিকভাবে আমার মুখরক্ষ হত, কিন্তু আদতে, এটা আমাকে সত্যিকারের সাহায্য করত না, এবং আমার জীবনে প্রবেশ বা গির্জার কাজের ক্ষেত্রেও কোনো লাভ হত না। এই উপলব্ধিগুলোর মাধ্যমে, আমি অনুশীলনের একটা পথ অর্জন করেছিলাম। আমি জানতাম যে এরপর আমাকে ছাঁটাই এবং মোকাবিলা করা হলে, আমি শুধুই তোষামোদমূলক কথা ও স্তুতি শুনতে চাইব না, বা শুধুমাত্র নিজের সুনাম এবং মর্যাদার কথা বিবেচনা করব না। আমার উচিত মোকাবিলার পর তা গ্রহণ করা, এবং মানুষের সমালোচনা নিয়ে সত্যের সন্ধান, আত্ম-সমীক্ষা, এবং দ্রুত অনুতপ্ত হয়ে নিজের কাজকে শুধরে নেওয়া। এইভাবে অন্যদের সঙ্গে কাজ করলে আমি নিজের দায়িত্ব এবং কর্তব্য ভালোভাবে পালন করতে পারব।
পরে, আমি লি জিয়াওর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে যা জেনেছি তা প্রকাশ্যে বলেছি। পরে, আমরা দুজনেই গভীর মুক্তি অনুভব করেছি এবং অবশেষে আমি তার সঙ্গে আবার স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পেরেছিলাম। একবার, একজন নবাগত কিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তাই আমি আমার উপলব্ধির ভিত্তিতে তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করলাম, কিন্তু লি জিয়াও আমার কথা শুনে আমাকে স্পষ্ট করে বলল যে আমার আলাপ-আলোচনা নবাগতকে শুধু একটু উৎসাহ দিয়েছিল মাত্র কিন্তু তাতে তার সমস্যার সমাধান হবে না। তার কথায় আমি একটু বিব্রত বোধ করলাম। বাইরে থেকে, আমি তার সমালোচনা মেনে নেওয়ার ভান করলেও, ভিতরে ভিতরে আমি তার উপর কিছুটা অসন্তুষ্ট হলাম। কিন্তু তারপর আমি বুঝলাম ভুলটা আমারই, তাই আমি শীঘ্রই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে নিজেকে নিবেদন করলাম। ঈশ্বরের বাক্য সম্পর্কে ভাবলাম: “বর্তমানে তোমাদের দায়িত্ব পালনে সক্ষম হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে তোমরা সমর্পণ করতে শিখবে, তোমরা সত্যের প্রতি সমর্পণ করতে শিখবে এবং ঈশ্বরের থেকে আগত সমস্ত কিছুর প্রতিও সমর্পণ করতে শিখবে। এইভাবে, তোমরা ঈশ্বরকে অনুসরণের মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করতে পারবে, এবং ধীরে ধীরে সত্যের বাস্তবিকতায় প্রবেশ করতে পারবে” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, সত্য অর্জন করতে হলে, নিকটবর্তী মানুষ, ঘটনাবলি এবং বস্তুসমূহ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে)। প্রকৃতপক্ষে, সমস্যার সম্মুখীন হলে, আমাদের আমাদের এমন কথাই মেনে নিতে হবে যা সত্যের অনুসারী এবং আমাদের কর্তব্যের ক্ষেত্রে উপযোগী। এটা ঈশ্বরের দাবি, এবং এটাই আমাদের করতে হবে। যেহেতু লি জিয়াও আমার সমস্যাটি তুলে ধরেছে, তাই আমার উচিত তার সমালোচনা গ্রহণ করে অনুসন্ধান এবং ভাবনাচিন্তা করা। প্রার্থনা এবং ধ্যানের মাধ্যমে, বুঝলাম যে নবাগতর সমস্যাটি আমি সত্যিই বুঝিনি এবং বিষয়টির মূল নিয়ে আলাপ-আলোচনা করিনি। ঈশ্বরের বাক্য পড়ার মাধ্যমে, আমি আমার ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং ঘাটতিগুলো কিছুটা বুঝতে পারলাম এবং সত্যের এই দিক সম্পর্কে আরো অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করলাম। আমি সত্যিই দেখলাম কীভাবে আমার পাশে ঐ রকম একজন সঙ্গী থাকায় জীবনে প্রবেশ এবং কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে কী অবিশ্বাস্য রকমের উপকার হয়েছিল। অন্যের সমালোচনা গ্রহণ করার সুবিধাও আমি অনুভব করলাম। এখন থেকে, আমি আমার ভ্রাতা ও ভগিনীদের সমালোচনা গ্রহণ করব এবং আমার কর্তব্য ভালোভাবে পালন করব।
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।