আলোচনা উন্মুক্ত হৃদয়ে হওয়া আবশ্যক
২০২১ সালের শুরুতে, আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ গ্রহণ করি। আমি সক্রিয়ভাবে মিটিং-এ যোগ দিতাম ও ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করতাম, আর মাসদুয়েক পর, আমি সিঞ্চনকার্যের ডীকন হিসাবে আমার দায়িত্বপালন শুরু করি। সেই সময়, আমরা প্রতি সপ্তাহের শেষে একটা করে ডীকন মিটিং করতাম, আমাদের দায়িত্ব পালনে আমরা কী কী সমস্যা আর অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছি আর কী অর্জন করতে পেরেছি, কোন ভ্রষ্টাচার প্রকাশ করেছি, কীভাবে ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে চিন্তাভাবনা করে সেগুলো উপলব্ধি করতে পেরেছি, এইসব নিয়ে আলোচনা হতো। প্রতি মিটিং-এর আগে আমি খুব নার্ভাস থাকতাম আর অনেকক্ষণ ধরে চিন্তা করতাম, বুঝতে পারতাম না ওদের কী বলব। নিজের দুর্নীতি আর ত্রুটি সম্পর্কে কথা বলতে গেলে চিন্তা হত, কারণ আমি ভয় পেতাম যে অন্যরা আমার সম্পর্কে খারাপ ভাববে। যেমন: আমি তখন সবে নতুনদের সিঞ্চন করতে শুরু করেছিলাম। অনেক কিছুই জানতাম না, আর অভিজ্ঞতারও অভাব ছিল। আমার চিন্তা হতো যে নতুনরা আমাকে পছন্দ করবে না, মনে করবে আমি তাদের ভালোভাবে সিঞ্চন করতে পারছি না, তাই আমি আর এই দায়িত্ব নিতে চাইছিলাম না। কিন্তু আমি ডীকন মিটিং-এ নিজের এই অবস্থা নিয়ে মুখ খুলতে চাইনি, কারণ আমার চিন্তা হতো যে একথা বললে ওরা ভাববে আমি অন্যদের সাথে সহকারিতা করতে পারি না। এছাড়াও, আমি কয়েকজন নবাগতদের বিষয়ে অধৈর্য হয়ে পড়েছিলাম, আর সেকথা বলতে চাইনি, কারণ আমার চিন্তা হত যে এসব ওদের বললে ওরা ভাববে আমি যথেষ্ট মানবিক নই। কিন্তু আমি নিজেও উদ্বিগ্ন ছিলাম, কারণ আমি মিটিং-এ কিছু না বললে, ওরা নিশ্চয়ই ভাববে আমি অন্যদের মতো দক্ষ নই। আমি অস্বস্তিতে পড়তে চাইনি বা ওদের চোখে ছোট হতে চাইনি। চিন্তাভাবনা করে অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম যে শুধু এমন কিছু বলব যা অপ্রাসঙ্গিক আর খুব একটা অস্বস্তিজনক নয়, যেমন আমি অলস, যা বেশিরভাগ লোকেরই সমস্যা। এতে আমাকে অন্যদের থেকে নিকৃষ্ট দেখাবে না।
তাই, একদিন মিটিং-এ, আমাদের নেত্রী আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমার অভিজ্ঞতা কেমন, আর নিজের ভ্রষ্ট স্বভাব সম্পর্কে আমি কী জ্ঞান অর্জন করেছি। আমি আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী আলোচনা করলাম। শেষ করার পরে আমি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম, তবে অস্বস্তিও বোধ করছিলাম, আর আমার বিবেক আমাকে তিরস্কার করছিল। জানতাম সত্যি বলিনি, আর আমি যা করেছি তা ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। আমি প্রভু যীশুর বাণী ভাবলাম, “তোমাদের বক্তব্য সম্মতিসূচক হলে বল, ‘হ্যাঁ’, আর অসম্মতিসূচক হলে বল, ‘না’। এর অতিরিক্ত সব কথাই শয়তানের প্ররোচনা” (মথি ৫:৩৭)। “আমি তোমাদের সত্যই বলছি, যদি পরিবর্তিত না হও, এবং ছোট্ট শিশুর মতো হয়ে উঠতে না পারো, তাহলে তোমরা স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না” (মথি ১৮:৩)। এই বাক্যগুলোর কথা মনে করে খুব অপরাধবোধ হল। মিথ্যা শয়তানের থেকেই আসে, এবং তা মন্দ। ঈশ্বর সৎ মানুষদের ভালবাসেন, আর শুধুমাত্র সৎ মানুষরাই স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারে। মিথ্যাবাদী আর ভণ্ডরা ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারে না। এই ধরনের মানুষদের ঈশ্বর ঘৃণা করেন, আর শেষ পর্যন্ত তাদের ঈশ্বর অবশ্যই নির্মূল করবেন। যখন আমি এটা বুঝতে পারলাম, আমি বেশ বিষন্ন হয়ে পড়লাম, আর ভয় পেলাম যে ঈশ্বর আমায় প্রত্যাখ্যান করবেন। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম ও তাঁকে বললাম একজন সৎ মানুষ হওয়ার জন্য আমাকে পথ দেখাতে। সিদ্ধান্ত নিলাম পরের মিটিং-এ সত্যি বলব, আমার দুর্নীতির কথা খুলে বলব। কিন্তু যখন সেই সময় এল, তখনও বলার সাহস পেলাম না। আমার চিন্তা হচ্ছিল যে আমার দুর্নীতি আর ত্রুটির কথা যদি বলি, ভাইবোনেরা ভাববে যে আমি তাদের চেয়েও বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত। মনে হল সত্যি কথা বলা খুবই কঠিন। এই ভেবে, আমি ডিকন মিটিংগুলোতে যেতে চাইতাম না। তবে চিন্তা হতো যে ভাইবোনেরা জিজ্ঞাসা করবে কেন আমি আসিনি, তখন কী বলব ঠিক করতে পারবো না। যতই ভাবতাম, ততই মানসিক দ্বন্দ্ব আর দুঃখ বোধ করতাম। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। এক মিটিং-এ, ভাইবোনেরা যথারীতি তাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের বিষয়ে আলোচনা করছিল, এদিকে আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না, তাই চুপ করে শুনছিলাম। আমি নিজেকে নিয়ে খুবই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম, সবসময়ই আমি নিজেকে ছদ্মবেশের আড়ালে রাখছিলাম, আর বারবার সত্যের অনুশীলনে ব্যর্থ হচ্ছিলাম। এমনকি সততার একটা শব্দও আমি বলতে পারতাম না। অসহায় বোধ করছিলাম, তাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, তাঁকে বললাম এই অবস্থা থেকে বেরোনোর পথনির্দেশ দিতে।
পরে ঈশ্বরের বাক্যের এই অনুচ্ছেদ পড়লাম, “যেকোনো সমস্যাই আসুক না কেন, তোমাকে তা সমাধানের জন্য সত্যের অন্বেষণ করতে হবে, সে সমস্যা যেমনই হোক, অপরের কাছে ছদ্মবেশ ধারণ করবে না বা নিজের আসল রূপ গোপন করবে না। তোমার বিচ্যুতি, ঘাটতি, ত্রুটি, ভ্রষ্ট স্বভাব—সেই সবকিছুর বিষয়ে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত হও, এবং সেই সমস্ত বিষয়েই আলোচনা করো। সেগুলো ভিতরে রেখে দিও না। জীবনে প্রবেশ করার প্রথম পদক্ষেপ হল কীভাবে নিজেকে উন্মুক্ত করা যায় সেটা শেখা, এবং এটাই প্রথম বাধা যেটাকে অতিক্রম করা সবচেয়ে কঠিন। একবার তুমি এটাকে অতিক্রম করে নিলে, সত্যে প্রবেশ করা সহজ। এই পদক্ষেপ গ্রহণের তাৎপর্য কী? এর অর্থ হল, তুমি নিজের হৃদয় উন্মুক্ত করে তোমার যা আছে সেই সমস্ত কিছু দেখাচ্ছ, ভালো বা মন্দ, ইতিবাচক বা নেতিবাচক; অন্যদের এবং ঈশ্বরের দেখার জন্য নিজেকে অনাবৃত করে দিচ্ছ; ঈশ্বরের কাছ থেকে কিছুই গোপন করছ না, কিছুই আড়াল রাখছ না, কোনো ছদ্মরূপ গ্রহণ করছ না, প্রতারণা ও ছলনা মুক্ত রয়েছ, এবং অন্যদের সাথেও একইভাবে উন্মুক্ত ও সৎ রয়েছ। এইভাবেই, তুমি আলোতে বাস করবে, এবং শুধুমাত্র ঈশ্বরই যে তোমায় পরীক্ষা করবেন তা নয়, বরং অন্যরাও দেখতে পাবে যে তুমি নীতি ও স্বচ্ছতার সাথে কাজ করো। তোমার সুনাম, ভাবমূর্তি এবং মর্যাদা রক্ষার জন্য তোমার কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই, আবার তেমনই তোমার ভুল ঢাকা দেওয়ার বা তা গোপন করারও কোনো প্রয়োজন নেই। তোমার এই সমস্ত অর্থহীন প্রচেষ্টায় যুক্ত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তুমি যদি এইসব বিষয় ছেড়ে দিতে পারো, তাহলে তুমি খুবই স্বস্তি পাবে, কোনো শৃঙ্খল বা যন্ত্রণা ছাড়াই বাঁচতে পারবে, এবং তুমি সম্পূর্ণভাবে আলোতেই জীবনযাপন করতে পারবে” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করে বুঝতে পারলাম যে আমাদের কখনোই নিজের দুর্নীতিগ্রস্ত অবস্থার কথা গোপন করা উচিত নয়। আমাদের উচিত সেগুলো ঈশ্বরের সামনে নিয়ে এসে প্রার্থনা করা, চিন্তাভাবনা করা, আর বোঝার চেষ্টা করা, সেইসাথে সত্যানুসন্ধানের জন্য আমাদের ভাইবোনদের কাছে নিজেদের দুর্নীতি প্রকাশ করতে নিজের হৃদয় উন্মুক্ত করা। তা আমাদের সাহায্য করবে নিজেদের আরও ভালো করে বুঝতে আর আমাদের ভ্রষ্টাচারী স্বভাব দূর করতে। কিন্তু আমার সম্মান আর মর্যাদা বজায় রাখার জন্য নিজের দুর্নীতি আর অসুবিধাগুলোর সম্পর্কে মুখ খুলতে চাইছিলাম না, এমনকি আমার ভাইবোনদের সাথে মিলে সত্যের সন্ধান করতেও চাইনি। সব সময় নিজের অন্তর অর্গলবদ্ধ রাখতাম যাতে কেউ আমার ভিতরটা দেখতে না পারে, কিন্তু এভাবে অন্ধকারে জীবনযাপন থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বুঝতে পারছিলাম যে আমি আর এভাবে চলতে পারব না, এবং আমার উচিত ঈশ্বরের বাক্য অনুযায়ী অনুশীলন করা, ভাইবোনদের কাছে আমার অবস্থার কথা খুলে বলা আর তাদের সাহায্য চাওয়া। মিটিং শেষ হওয়ার পরেই, এক সিস্টার তার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার কথা বলার জন্য আমার কাছে এলো। ভাবলাম এই সুযোগ ওর কাছে নিজের কথা খুলে বলার, কিন্তু তখনও একটু বিব্রত লাগছিল, কারণ জানতাম না ও আমার সম্পর্কে কী ভাববে। আমার চিন্তা হচ্ছিল, ও বলবে আমি একজন খুবই অসৎ মানুষ। তাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, “ঈশ্বর, আমি আর নিজেকে গোপন করে রাখতে চাই না। আর আমার আসল চিন্তাভাবনা লুকাতে চাই না। আমি বড় ক্লান্ত। ঈশ্বর, আমি একজন সৎ মানুষ হয়ে উঠতে চাই, দয়া করে আমাকে পথ দেখান।” প্রার্থনা করার পর, সিস্টারকে সেই সব কথা বললাম যা আমি মিটিং-এ বলার সাহস করিনি। কথাগুলো শেষ করার পর খুব স্বস্তি পেলাম। সিস্টার তার নিজের চিন্তাভাবনা আমাকে জানালো, আর ঈশ্বরের বাক্যের একটা অনুচ্ছেদ আমাকে পাঠালো। “কোনো প্রতারকের মুখ্য বৈশিষ্ট হল যে, সে কারো সাথে আলাপ-আলোচনার সময় কখনোই মন খুলে কথা বলে না, এমনকি নিজের প্রিয়তম বন্ধুর কাছেও সে মনের কথা বলে না। তারা অত্যন্ত দুর্জ্ঞেয় হয়। এইরকম মানুষকে যে বয়স্ক হতেই হবে—এমনটা নয়, পার্থিব বিষয়ের সাথে তার গভীরভাবে কোনো যোগ না-ও থাকতে পারে, এবং তার অভিজ্ঞতাও হয়ত খুবই কম, অথচ, সে দুর্জ্ঞেয়। তারা যতটা না মানবিক, তার চেয়েও বেশি মাত্রায় দানবিক। এহেন ব্যক্তিই কি প্রকৃতিগতভাবে প্রতারক নয়? এরা নিজেদের এত গভীরভাবে লুকিয়ে রাখে যে কেউ তাদের ভিতরটা দেখতে পায় না। তারা যত কথাই বলুক না কেন, সেগুলির কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা, তা বলা কঠিন, এবং কখন যে তারা সত্য বলছে আর কখনই বা মিথ্যা বলছে তা কেউ জানে না। উপরন্তু, এরা ছদ্মবেশ ধারণ এবং কুতর্কে বিশেষভাবে দক্ষ। তারা প্রায়শই মানুষকে মিথ্যা ধারণা দিয়ে সত্যকে আড়াল করে, যাতে সকলে তাদের মিথ্যা চেহারাটাই শুধু দেখতে পায়। তারা কোনো মহৎ, ভালো, সদাচারী এবং সরল মানুষের বা এমন কারো ছদ্মবেশ ধারণ করে, যাকে সকলে পছন্দ এবং অনুমোদন করে, এবং যাতে শেষ পর্যন্ত সবাই তাদের প্রশংসা করে এবং তাদের উঁচু নজরে দেখে। তুমি এই ধরনের কোনো একজন মানুষের সাথে যতই সময় কাটাও না কেন, তুমি কখনোই জানতে পারো না, যে, সে কী ভাবছে। সকল প্রকার মানুষ, ঘটনাবলী এবং বস্তুসমূহের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং মনোভাব তাদের অন্তরেই প্রচ্ছন্ন থাকে। তারা সেসব কথা কখনো কাউকে বলে না। এমনকি তাদের ঘনিষ্ঠতম আস্থাভাজনদের কাছেও তারা কখনোই এই বিষয়ে কোনোরকম আলাপ-আলোচনা করে না। তারা যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে, তখনও হয়তা তারা তাদের অন্তরের কথা ও তারা সত্যি কী ভাবে, সেসব প্রকাশ করে না। শুধু তা-ই নয়, তারা এমন একজন মানুষ হওয়ার ভান করে যার মানবিকতা রয়েছে, যে খুবই আধ্যাত্মিক, এবং সত্যের সন্ধানে সমর্পিত। তাদের স্বভাব কেমন, এবং তারা আদপে কেমন মানুষ, তা কেউ-ই দেখতে পায় না। এগুলিই হল একজন প্রতারক মানুষের মূর্ত প্রকাশ” (বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ: তারা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, এবং তারা খ্রীষ্টের সারসত্যকে অস্বীকার করে (প্রথম অংশ))। ঈশ্বরের বাক্য থেকে আমি বুঝতে পারলাম, যারা প্রতারক তারা অন্যের সাথে মন থেকে কথা বলে না, অন্যদের কাছে তাদের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কেও মুখ খোলে না। বরং এরা প্রায়ই নিজেদের লুকিয়ে রাখে আর ছদ্মবেশ ধারণ করে। আমি দেখলাম যে ঈশ্বর যেমন প্রকাশ করেছেন আমি ঠিক তেমনই। সিঞ্চনকার্যের ডীকন হওয়ার পর থেকে, আমি দেখেছিলাম যে আমার অনেক ঘাটতি রয়েছে, তাছাড়া অনেক দুর্নীতিগ্রস্ত স্বভাবও দেখিয়েছি, আর নতুনদের জন্য আমার কোনো ভালবাসা বা ধৈর্য ছিল না। আমাকে মন খুলে আমার ভাইবোনদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজতে হতো। কিন্তু আমার চিন্তা হচ্ছিল যে সত্যি কথা বললে তারা আমাকে নিচু চোখে দেখবে আর নিকৃষ্ট মনে করবে, তাই আমি তাদের আমার প্রকৃত অবস্থা বলতে চাইনি। আমি গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো এড়িয়ে তাদের এমন সব কথা বলেছিলাম যেগুলো তেমন কোনো ব্যাপার নয়, বা এমন সমস্যার কথা যা আমার মতে অনেক লোকেরই ছিল। নিজের অন্ধকার দিক আর সবচেয়ে অন্তর্নিহিত চিন্তাভাবনাগুলো লুকানোর জন্যই এটা করেছিলাম। যাতে আমার সম্পর্কে অন্যদের ভালো ধারণা তৈরী হয়, সেজন্য আমি ছদ্মবেশের আড়ালে থাকতাম আর একটা মিথ্যা ভাবমূর্তি তৈরী করেছিলাম। আমার ভাইবোনদের প্রতারণা করছিলাম। আমি এতটাই ধূর্ত আর ভণ্ড ছিলাম!
পরে, সিস্টার আমাকে ঈশ্বরের বাক্যের আরেকটা অনুচ্ছেদ পাঠালো, “বস্তুত, তারা কেন মিথ্যা কথা বলে তা সকল মানুষই জানে: তারা তা বলে তাদের স্বার্থ, মুখরক্ষা, আত্মশ্লাঘা, ও মর্যাদার খাতিরে। এবং অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করতে গিয়ে, তারা তাদের প্রকৃত ক্ষমতার থেকে অনেক বেশি অতিরঞ্জিত করে নিজেদের উপস্থাপন করে। যার ফলে, তাদের মিথ্যাগুলি অনাবৃত হয়ে যায় ও অন্যেরা তা ধরে ফেলে, ফলস্বরূপ উল্টে তাদের বেইজ্জত হতে হয়, এবং তাদের চরিত্রহানি ও মর্যাদাহানি ঘটে। অত্যধিক মিথ্যার এটাই পরিণতি। যখন তুমি প্রচুর মিথ্যা কথা বলো, তখন তোমার দ্বারা উচ্চারিত প্রতিটি কথা কলুষিত। তার সবটাই অসত্য, এবং তার কিছুই সত্য বা বস্তুনিষ্ঠ হতে পারে না। যদিও মিথ্যাভাষণকালে হয়তো তোমার মাথা হেঁট না-ও হতে পারে, কিন্তু তোমার মনের মধ্যে ইতিমধ্যেই তুমি অসম্মানিত বোধ করো। তোমার বিবেকের দ্বারা নিজেকে তুমি অভিযুক্ত বলে অনুভব করবে, এবং নিজেকে তুমি ঘৃণা করবে ও অবজ্ঞার চোখে দেখবে। ‘কেন আমি এত অনুকম্পনীয়ভাবে জীবনযাপন করি? একটা সৎ কথা বলা কি সত্যিই এত কঠিন কাজ? নিছক মুখরক্ষার জন্য এই মিথ্যাগুলি কি আমার না বললেই নয়? এই ভাবে জীবনধারণ করা এত ক্লান্তিকর কেন?’ ক্লান্তিকর নয়, এমন এক উপায়ে তুমি জীবনধারণ করতে পারো। তুমি যদি একজন সৎ মানুষ হওয়ার অনুশীলন করো, তাহলে তুমি উদ্বেগশূন্যভাবে ও স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে পারো, কিন্তু তোমার সম্মান ও অহমিকাকে সুরক্ষিত রাখার উদ্দেশ্যে যখন তুমি অনৃতভাষণের পথ বেছে নাও, তখন তোমার জীবন ক্লান্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক, এর অর্থ এ হল এক স্ব-আরোপিত যাতনা। মিথ্যা বলার মাধ্যমে কোন সম্মান তুমি লাভ করো? তা হল এক এমনকিছু যা শূন্যগর্ভ, সম্পূর্ণ মূল্যহীন। যখন তুমি মিথ্যা কথা বলো, তখন তুমি তোমার নিজের নৈতিক চরিত্র ও মর্যাদার প্রতি প্রবঞ্চনা করছো। এই মিথ্যাগুলির কারণে মানুষ তাদের মর্যাদা হারিয়ে ফেলে, তাদের চরিত্র খোয়াতে বাধ্য হয়, এবং ঈশ্বর তাদের অপ্রীতিকর ও ঘৃণাময় বলে মনে করেন। এই মিথ্যাগুলি কি এতই মূল্যবান? না, তা নয়। … তুমি যদি এমন একজন মানুষ হও যে সত্যকে ভালোবাসে, তাহলে সত্য অনুশীলন করার জন্য তুমি সমস্ত রকমের কষ্ট সহ্য করতে পারবে, এমনকি যদি তুমি সুনাম ও মর্যাদা হারিয়ে ফেলো, বা অন্যান্যদের দ্বারা অপমানিত হও বা বিদ্রূপের শিকার হও, তাহলেও তুমি সেগুলোকে গুরুত্ব দেবে না। এবং তুমি সত্য অনুশীলন ও ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার চেয়ে বেশি আর কোনো কিছুতেই তৃপ্ত হবে না। যারা সত্যকে ভালোবাসে, তারা সত্য অনুশীলনকেই বেছে নেয়, সৎ মানুষ হওয়াকেই বেছে নেয়। এটাই সঠিক পথ এবং তা ঈশ্বরের আশীর্বাদপ্রাপ্ত। যে সব লোকেরা সত্যকে ভালোবাসে না, তারা কী বেছে নেয়? তারা নিজেদের সুনাম, মর্যাদা, সম্মান এবং চরিত্র রক্ষা করার জন্য মিথ্যাকে ব্যবহার করে। এই ধরনের লোকেরা বরং শঠ মানুষই হয় এবং ঈশ্বরের দ্বারা ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যাত হয়। তারা সত্য বা ঈশ্বরকে চায় না। তারা নিজেদের সুনাম ও মর্যাদাকেই বেছে নেয়। তারা বেছে নেয় শঠ হওয়া, এবং তা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে কি না বা ঈশ্বর তাদের উদ্ধার করবেন কি না সে বিষয়ে গুরুত্ব দেয় না, তাহলে এই ধরনের লোকেরা কি তা সত্ত্বেও ঈশ্বরের দ্বারা উদ্ধার পেতে পারে? অবশ্যই না, কারণ তারা ভুল পথ বেছে নিয়েছে। তারা শুধুমাত্র মিথ্যাচার এবং প্রতারণা করেই জীবনযাপন করতে পারে, এবং শুধুমাত্র মিথ্যাচার করা ও সেই মিথ্যাকে ঢাকা দেওয়া, এবং প্রতিদিন নিজেদের রক্ষা করার জন্য মাথা খাটানোর এক যন্ত্রণাময় জীবন যাপন করতে পারে। তুমি হয়তো ভেবে থাকতে পারো যে মিথ্যার প্রয়োগ তোমার কাঙ্ক্ষিত সুখ্যাতি, মর্যাদা, এবং অহমিকাকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম, কিন্তু এটি বড়োমাপের এক ভুল ধারণা। মিথ্যা কেবল যে তোমার অহমিকা ও ব্যক্তিগত সম্ভ্রমবোধকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যর্থ হয় তা-ই নয়, যা আরো মারাত্মক তা হল, মিথ্যা তোমার কাছ থেকে সত্যানুশীলন ও একজন সৎ মানুষ হওয়ার সুযোগ কেড়ে নেয়। এমনকি সেই মুহূর্তে যদি তুমি তোমার সুনাম ও অহংবোধকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষমও হও, কিন্তু তুমি সত্যকে হারিয়ে ফেলো, এবং তুমি ঈশ্বরের বিশ্বাসভঙ্গ করো, যার অর্থ তুমি ঈশ্বরের দ্বারা উদ্ধার লাভের ও নিখুঁত হওয়ার সুযোগ সম্পূর্ণরূপে খুইয়ে বসো। এটিই হল সবচেয়ে বড়ো ক্ষতি এবং এক চিরকালীন আক্ষেপের বিষয়। শঠ মানুষরা কখনোই তা স্পষ্টভাবে বুঝে উঠতে পারে না” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র সৎ হওয়ার মাধ্যমেই প্রকৃত মানুষ হিসাবে জীবনযাপন করা যায়)। ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করার পর, আমি নিজেকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করলাম। আমার সম্মান আর মর্যাদা বজায় রাখতে, আর অন্যরা যাতে নিচু চোখে না দেখে, তার জন্য প্রতিটা মিটিং-এর আগে গভীর চিন্তাভাবনা করতাম মিটিং-এর সময় কীভাবে আলাপ-আলোচনা করবো। যদি আমার বাস্তব অবস্থার কথা খুলে বলি, তাহলে আমার ভয় ছিল যে ভাইবোনেদের আমার সম্পর্কে খারাপ ধারণা তৈরী হবে। কিন্তু আমি কিছুই না বললে আমার ভাইবোনেরা আমাকে খারাপ ভাববে, হীনদৃষ্টিতে দেখবে, এই চিন্তাও ছিল। আমি মরিয়া হয়ে এই পরিস্থিতি থেকে পালাতে চাইছিলাম। আমি দেখলাম যে আমার সম্মান আর মর্যাদা বজায় রাখতে, হাজার রকম চিন্তা করে নিজেকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলছি, তবুও নিজেকে উন্মুক্ত করতে চাইনি, সৎ হতে চাইনি, ভাইবোনদের আমার বাস্তব অবস্থা আর অসুবিধার কথা জানাতে চাইনি। আমি এতটাই প্রতারণাপূর্ণ ছিলাম! যদিও আমি কিছু সময়ের জন্য মানুষের হৃদয়ে আমার ভাবমূর্তি বজায় রেখেছিলাম, তবে আমার মর্যাদা হারিয়েছিলাম, সৎ ব্যক্তি হওয়ার, আর সত্যের সন্ধান করার সুযোগও হারিয়েছিলাম। প্রত্যেক মিটিং-এ আমি খুব ক্লান্ত বোধ করতাম, আর আমার মুক্তির কোনো বোধ ছিল না। আমি সম্পূর্ণভাবে আমার ভ্রষ্ট স্বভাবের বন্ধনে আবদ্ধ ছিলাম। মিটিংগুলোতে ভাইবোনদের ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পান করার কথা, এবং ঈশ্বরের বাক্য সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের বিষয়ে আলোচনা করার কথা। আমাদের সমস্যা বা অসুবিধা থাকলে, আমরা একে অপরকে সাহায্য করতে পারি আর একে অপরের দক্ষতাগুলো থেকে শিখতে পারি। এইভাবে, পবিত্র আত্মার কাজ অর্জন করা আর সত্যকে বোঝা সহজ হয়। কিন্তু মিটিং-এ আমি সব সময় চিন্তা করতাম কীভাবে এমনভাবে আলাপ-আলোচনা করা যায় যাতে কেউ আমাকে নিচু নজরে দেখবে না, যাতে আমার সম্পর্কে অন্যদের একটা ভাল ধারণা তৈরি হয়। আমার সমস্ত চিন্তা এতেই সমর্পিত ছিল। এভাবে বেঁচে থাকা খুব কঠিন আর ক্লান্তিকর হয়ে উঠেছিল।
পরে, আমি ইশ্বরের বাক্যের আরেকটা অনুচ্ছেদ পড়লাম, “অন্যদের সাথে আলোচনা করার সময় তোমার হৃদয়ে ঠিক কী রয়েছে, সে বিষয়ে তুমি কি খোলাখুলি কথা বলতে সক্ষম? হৃদয়ে সত্যিই যা রয়েছে কেউ যদি সবসময় তা-ই বলে, যদি কখনোই মিথ্যাচার বা অত্যুক্তি না করে, যদি সে আন্তরিক হয়, নিজের দায়িত্ব সম্পাদনের সময় তিলমাত্রও অযত্নবান বা অগভীর না হয়, যদি নিজের উপলব্ধি করা সত্য অনুশীলন করে, তাহলে সেই ব্যক্তির সত্যকে অর্জন করতে পারার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি কেউ সর্বদা নিজেকে আড়াল করে রাখে আর নিজের হৃদয়কে গোপন রাখে, যাতে কেউই তাকে পরিষ্কারভাবে দেখতে না পায়; যদি অন্যদের প্রতারণা করার জন্য নকল ভাবমূর্তি তৈরী করে, তাহলে সে ভীষণরকম বিপদে রয়েছে, খুবই বড় সমস্যার মধ্যে রয়েছে, তার পক্ষে সত্যকে অর্জন করা খুবই কঠিন হবে। কারো দৈনন্দিন জীবন ও তার কথাবার্তা এবং ক্রিয়াকলাপ থেকেই তুমি দেখতে পাবে তার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কতটা। যদি এই ব্যক্তি সর্বদাই ভান করে, সর্বদাই নিজেকে বড় করে দেখায়, তাহলে সে তেমন মানুষ নয় যে সত্যকে স্বীকার করে, এবং আজ না হোক কাল সে অনাবৃত হবে এবং বহিষ্কৃত হবে। … যে সব লোকেরা কখনো নিজেদের উন্মুক্ত করে না, যারা সবসময় কিছু গোপন করে, যারা ন্যায়পরায়ণ হওয়ার ভান করে, যারা সর্বদা মানুষের মনে নিজেদের উচ্চ অবস্থানে রাখার জন্য সচেষ্ট থাকে, যারা অপরকে তাদের সম্পর্কে পূর্ণ উপলব্ধি করতে দেয় না এবং অন্যদের দিয়ে নিজেদের প্রশংসা করায়—তারা কি নির্বোধ নয়? এই ধরনের লোকেরা অত্যন্ত নির্বোধ! কারণ আগে হোক বা পরে, কোনো ব্যক্তির সত্য ঠিকই প্রকাশিত হবে। নিজদের আচরণে তারা কোন পথ গ্রহণ করে? ফরীশীদের পথ। ভণ্ড লোকেরা কি বিপদের মধ্যে আছে না নেই? এরাই সেই লোক, যাদেরকে ঈশ্বর সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করেন, তাহলে তুমি কি ভাবছ তারা বিপদে নেই? সেই সব লোক যারা ফরীশী, তারা সবাই চিরন্তন শাস্তিলাভের পথেই চলছে!” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, ঈশ্বরকে হৃদয়দানের মাধ্যমে সত্য অর্জন সম্ভব)। আমি ঈশ্বরের বাক্য থেকে বুঝতে পারলাম যে ঈশ্বর চান আমরা যেন সৎ মানুষ হই, সরলভাবে আর খোলা মনে কথা বলি, মিথ্যা না বলি, প্রতারণা না করি, এমনকি আমরা ভ্রষ্টাচার করলেও যেন নিজেকে উন্মুক্ত করে সে সম্পর্কে আলোচনা করতে পারি, যাতে অন্যরা আমাদের প্রকৃত চিন্তাভাবনা দেখতে পারে। এইভাবে সত্য অনুশীলন করলে, আমরা ক্লান্ত বোধ করব না, আর পরিত্রাণের পথে হাঁটতে পারব। কিন্তু যারা সবসময় নিজেদের ছদ্মবেশের আড়ালে রাখে, লুকিয়ে রাখে, প্রচ্ছন্ন করে রাখে, আর তাদের অবস্থা অন্যদের দেখতে দেয় না, তারা ভুল পথে হাঁটে, আরও বেশি ভণ্ড মানুষে পরিণত হয়, আর তাই তাদের ভ্রষ্ট স্বভাব কখনো দূর করতে পারে না। এটা নরকবাসের রাস্তা। আমার দু-হাজার বছর আগের ফরিশীদের কথা মনে পড়ল। তারা বাহ্যিকভাবে ধার্মিক ছিল, আর সিনাগগে অন্যদের শাস্ত্রের ব্যাখ্যা দিয়ে দিন কাটাত। তাছাড়াও তারা ইচ্ছা করে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করত যাতে লোকে মনে করে যে তারা ঈশ্বরকে ভালবাসে। কিন্তু তাদের একেবারেই ঈশ্বর-ভীতি ছিল না, তারা ঈশ্বরকে সবার উপরে রাখেনি, বা ঈশ্বরের আদেশ পালনও করেনি। প্রভু যীশু যখন আবির্ভূত হয়ে তাঁর কাজ করছিলেন, তারা স্পষ্টতই জানত যে তাঁর বাক্যে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা রয়েছে, আর তা ঈশ্বরের কাছ থেকেই এসেছে, কিন্তু তাদের পদমর্যাদা আর আয় বজায় রাখতে, তারা উন্মত্তভাবে ঈশ্বরের কাজে বাধা দিয়েছিল ও সেই কাজের নিন্দা করেছিল আর অবশেষে প্রভু যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে। আমি দেখলাম যে ফরিশীদের বাহ্যিকভাবে ধার্মিক মনে হতো, কিন্তু সারমর্মের দিক থেকে তারা ছিল কপট আর ধূর্ত। তারা মুখোশের আড়ালে থাকতে আর প্রতারণা করতে পারদর্শী ছিল। তারা যা করেছে সবই শুধু মানুষকে প্রতারণা ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, তাদের ঠকিয়ে তাদের কাছ থেকে সম্মান আর উপাসনা পাওয়ার জন্য। তারা যে পথে চলেছিল তা ছিল ঈশ্বরকে প্রতিরোধের পথ। পরিশেষে তারা ঈশ্বরের স্বভাবকে ক্ষুব্ধ করে এবং ঈশ্বরের দ্বারা অভিশপ্ত ও দণ্ডিত হয়। আমি নিজের ভেতরে তাকিয়ে দেখলাম। অন্যের হৃদয়ে সুন্দর ভাবমূর্তি লাভ করতে, এবং আমার ভাবমূর্তি ও পদমর্যাদা বজায় রাখতে, আমি নিজের দুর্নীতি গোপন করেছি, এবং শুধু সেই আচরণগুলো নিয়েই কথা বলেছি যেগুলো অন্যরাও সচরাচর আলোচনা করে। এতে শুধু আমার ভাবমূর্তিই রক্ষা হয়নি, বরং মানুষ মনে করেছে যে আমি খোলা মনে আলোচনা করছি। আমিও কি ঠিক ফরিশীদের মতই প্রতারণাপূর্ণ ছিলাম না? একথা উপলব্ধি করে আমি আতঙ্কিত হলাম। আমি আর এই কাজ চালিয়ে যেতে পারছিলাম না। ঈশ্বরের চাহিদা অনুযায়ী আমাকে একজন সৎ মানুষ হয়ে উঠতে হতো।
এরপর, সিস্টার আমাকে ঈশ্বরের বাক্যের আরেকটা অনুচ্ছেদ পাঠালো। “এখন এমন অনেকেই রয়েছে যারা সত্য অন্বেষণের দিকেই মনোযোগী, এবং তাদের সাথে কোনো ঘটনা সংঘটিত হলে সেখানে সত্যের সন্ধান করতে সক্ষম। যদি তুমি নিজের অন্তঃস্থ অন্যায় উদ্দেশ্য এবং অস্বাভাবিক অবস্থার সমাধান করতে চাও, তাহলে তোমাকে অবশ্যই তার জন্য সত্যের অন্বেষণ করতে হবে। একদম প্রথমে, তোমাকে ঈশ্বরের বাক্যের উপর আলোচনার সময় নিজেকে উন্মুক্ত করা শিখতে হবে। অবশ্যই উন্মুক্ত আলোচনার জন্য তোমাকে সঠিক গ্রহীতাকে বেছে নিতে হবে—অন্ততপক্ষে, তোমার এমন একজনকে বেছে নিতে হবে যে সত্যকে ভালোবাসে এবং সত্য স্বীকার করে, যার মানবতা অধিকাংশের থেকে ভালো, যে তুলনামূলকভাবে সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ। অবশ্যই আরো ভালো হবে যদি তুমি এমন একজনকে বেছে নাও যে সত্য উপলব্ধি করে, যার আলোচনা থেকে তুমি সাহায্য লাভ করতে পারো। যার সাথে আলোচনায় তুমি নিজেকে উন্মুক্ত করতে পারো এবং নিজের সমস্যার সমাধান করতে পারো, তেমন একজন মানুষকে খুঁজে পাওয়াটা ফলদায়ী হবে। যদি তুমি ভুল ব্যক্তিকে বেছে নাও, এমন একজন যে সত্যকে ভালোবাসে না, বরং শুধু প্রতিভা বা বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী, তবে তারা তোমাকে উপহাস করবে, অবমাননা করবে এবং তোমাকে অবনমিত করবে। এতে তোমার কোনো উপকার হবে না। এক দিক থেকে, ঈশ্বরের সম্মুখে আসার ও তাঁর কাছে প্রার্থনা করার সময় নিজেকে উন্মুক্ত ও অনাবৃত করার পথই অবলম্বন করা উচিত; এভাবেই অন্যদের সাথে সত্যের বিষয়ে আলোচনা করা উচিৎ। এই ভেবে বিষয়গুলোকে আবদ্ধ করে রেখো না যে ‘আমার কিছু উদ্দেশ্য আছে, কিছু সমস্যা আছে। আমার ভেতরের অবস্থা ভালো নেই—নেতিবাচক হয়ে আছে। আমি কাউকে বলবো না। আমি এগুলো ভিতরেই রেখে দেবো’। যদি তুমি বিষয়গুলোর সমাধান না করে সবসময় সেগুলো ভিতরেই জমিয়ে রাখো, তাহলে তুমি ক্রমে আরোই নেতিবাচক হয়ে উঠবে, এবং তোমার অবস্থাও আরো সঙ্কটজনক হয়ে যাবে। তুমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে চাইবে না। এই ব্যাপারটাকে আবার আগের অবস্থায় ফেরানো কঠিন। আর তাই, তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন, তুমি নেতিবাচকই হও বা সমস্যার মধ্যে থাকো, তোমার ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনা নির্বিশেষে, পরীক্ষার মাধ্যমে তুমি কী জানতে পেরেছ বা উপলব্ধি করেছ তা নির্বিশেষে, তোমাকে অবশ্যই নিজেকে উন্মুক্ত করে আলোচনা করা শিখতে হবে, এবং তোমার আলোচনা করার সাথে সাথে পবিত্র আত্মাও কাজ করবেন। আর পবিত্র আত্মা কীভাবে কাজ করেন? তিনি তোমাকে আলোকিত ও প্রদীপ্ত করেন এবং তোমাকে সমস্যার তীব্রতা প্রত্যক্ষ করতে দেন, সমস্যার মূল ও সারমর্ম সম্পর্কে অবগত করেন, তারপর ধীরে ধীরে তোমাকে সত্য ও তাঁর ইচ্ছা উপলব্ধি করান, এবং তোমাকে অনুশীলনের পথ দেখতে দেন ও সত্যের বাস্তবতায় প্রবেশ করান। যখন কেউ উন্মুক্তভাবে আলোচনা করতে পারে, তবে তার অর্থ হল সত্যের প্রতি তার সৎ মনোভাব রয়েছে। কোনো ব্যক্তি সৎ কি না, তা সত্যের প্রতি তার মনোভাবের দ্বারাই পরিমাপ করা হয়” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। আমার ঈশ্বরের বাক্য পাঠ শেষ হলে সিস্টার আমার সাথে আলোচনা করলো: “যদি আমরা আমাদের এই অসমীচীন অবস্থার সমাধান করতে চাই, তাহলে আমাদের সৎ মানুষ হয়ে উঠতে হবে এবং অন্যদের সাথে আলোচনায় আমাদের অন্তর উন্মুক্ত করতে হবে। আমরা যদি সবসময় গোপন করি, আড়াল করে রাখি, আর নিজেদের হৃদয় উন্মুক্ত করতে অস্বীকার করি, তাহলে আমরা সবসময় আমাদের এই অসমীচীন অবস্থাতেই আটকে থাকব, ঈশ্বরের পথনির্দেশ হারাব, আর আমাদের পতন হবে অন্ধকারে। যেমন ধরো, যদি কেউ অসুস্থ হয়, তবে তারা ডাক্তারের খোঁজ করবে বা অভিজ্ঞ কাউকে জিজ্ঞাসা করবে। এইভাবে, তারা নিজেদের অবস্থা বুঝতে পারবে, সঠিক ওষুধ পাবে, আর সময়মতো রোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে। অথচ কেউ কেউ আছে যারা নিজেরা অসুস্থ জেনেও মনে করে এটা কোনো ব্যাপার না, তাদের অসুস্থতা নিয়ে আলোচনা করতেই চায় না। অবশেষে সময়মতো চিকিৎসার অভাবে অবস্থা আরও খারাপ হয়, এমনকি প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। আমরা যদি আমাদের অসমীচীন অবস্থার এবং অসুবিধাগুলোর সমাধান করতে চাই, তাহলে আমাদের উন্মুক্তভাবে আলাপ-আলোচনা করতে হবে এবং সৎ মানুষ হয়ে উঠতে হবে। এটাই অনুশীলনের সঠিক উপায়।” ঈশ্বরের বাক্যের বিষয়ে সিস্টারের আলোচনার মাধ্যমে আমি বুঝতে পারলাম, একজন সৎ মানুষ হওয়া আর নিজেকে উন্মুক্ত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘকাল হয়নি আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেছি আর আমি সত্যকে বুঝতে পারিনি। এমনকি যদিও আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি দুর্নীতিপূর্ণ স্বভাব প্রকাশ করেছি, কিন্তু তবুও তার সমাধান করতে পারিনি। আমার উচিত ছিল একজন সৎ মানুষ হয়ে ওঠার অনুশীলন করা, আমার অবস্থা সম্পর্কে মন খুলে কথা বলা, আর সত্যের সন্ধান করা। শুধু এইভাবেই ঈশ্বরের পথনির্দেশ লাভ করতে পারতাম, এবং তা আমার ভ্রষ্ট স্বভাব দূর করতেও সাহায্য করতে পারতো। আমি তখন সবে নবাগতদের সিঞ্চন করতে শুরু করেছি, তাই এটা স্বাভাবিক যে আমি তখন অনেক কিছুই বুঝতে পারতাম না। যখন বুঝতে পারতাম না, তখন আমার উচিত ছিল ভাইবোনদের সাথে মিলে সন্ধান করার জন্য নিজেকে উন্মুক্ত করা। এইভাবে, আমি আমার দায়িত্বের নীতিগুলো একটু একটু করে আয়ত্ত করতে পারতাম আর আমার দায়িত্ব ভালভাবে পালনও করতে পারতাম। এরপর, আমি মন খুলে সিস্টারকে আমার সেই সময়কার অবস্থা সম্পর্কে জানালাম, আর আমার দায়িত্ব পালনে যে অসুবিধাগুলো হচ্ছিল সেগুলোর কথাও বললাম। ও যে শুধু আমাকে হীনদৃষ্টিতে দেখলো না তাই নয়, বরং আমাকে ঈশ্বরের বাক্য পাঠালো, আর আমাকে সাহায্য করার জন্য ওর নিজের অভিজ্ঞতার কথা আলোচনা করলো। ওর সাহায্যে, আমি নিজের অবস্থা সম্পর্কে আর যে দুর্নীতি আমি প্রকাশ করেছি সে সম্পর্কে কিছু ধারণা পেলাম, তখন আমি সুবিশাল আনন্দ আর মুক্তির চেতনা অনুভব করলাম। এরপর আমি সচেতনভাবে একজন সৎ মানুষ হওয়ার আর নিজের অবস্থা সম্পর্কে মন খুলে কথা বলার অভ্যাস করলাম।
এক রাতে, আমি একটা গ্রুপ মিটিং-এর আয়োজন করলাম। আমার সাথে মিটিং সঞ্চালনা করার জন্য আমাদের নেত্রী একজন গ্রুপ লীডারের ব্যবস্থা করলো। এই সিস্টারের সত্য সম্পর্কে উপলব্ধি আমার চেয়ে উন্নত ছিল। মিটিং-এর সময় সে খুব দক্ষতার সাথে আলোচনা করলো আর অন্যদের সমস্যার সমাধান করে দিল, আমার একটু ঈর্ষা হচ্ছিল। আমার চিন্তা হচ্ছিল যে অন্যরা আমার সম্পর্কে কী ভাববে। তারা কি ভাববে আমি ওর চেয়ে নিকৃষ্ট? মিটিং-এর পর আমাদের নেত্রী জানতে চাইলেন আমি আমার কোনো চিন্তাভাবনার কথা বলতে চাই কি না। আমি জানতাম যে আমার উচিত সৎ থাকা, ওই সিস্টারের কাছে আমার দুর্নীতির কথা খুলে বলা, আর সমাধানের সন্ধান করা। তাই, আমার মনে যাকিছু অনাবৃত হয়েছে সবই আমি সিস্টারকে বললাম। ও আমাকে ঈশ্বরের বাক্য পাঠালো আর ওর নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলল। আমি উপলব্ধি করলাম যে আমি সিস্টারের প্রতি ঈর্ষা করছিলাম, কারণ আমি পদমর্যাদাকে মূল্যবান ভাবতাম, আমার স্বভাব ছিল উদ্ধত, আর আমি চেয়েছিলাম সবাই আমাকে উঁচু নজরে দেখুক। এও বুঝতে পেরেছিলাম যে ঈর্ষা ত্যাগ করার জন্য আমাকে ঈশ্বরের কাছে আরও প্রার্থনা করতে হবে, গির্জার কাজ ও আমার কর্তব্যের কথা বিবেচনা করতে হবে, এবং গির্জার স্বার্থকে সর্বপ্রথমে স্থান দিতে হবে। এটাই ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। একইসাথে, আমাকে নিজের ত্রুটি ও ঘাটতিগুলোর সাথে সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে, এবং নিজের অভাবগুলো পূরণ করার জন্য অন্যদের দক্ষতা থেকে আরও শিক্ষা নিতে হবে। এইভাবে, আমি সত্যের আরও কিছুটা বুঝে উঠতে পারলাম। এটা উপলব্ধি করতে পেরে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। সত্যিই অনুভব করলাম যে যখন আমি ভাইবোনদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলি, তখন আমাকে নিচু চোখে না দেখে তারা সবাই বরং অনেক সাহায্য করে।
এই অভিজ্ঞতা লাভ করার পর আমি অনুভব করলাম একজন সৎ মানুষ হওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। শুধু একজন সৎ মানুষ হয়ে আর মন খুলে কথা বলার মাধ্যমেই আমরা পবিত্র আত্মার কাজ লাভ করতে পারি এবং সত্যকে উপলব্ধি করে উঠতে পারি। এও দেখতে পেলাম যে একজন সৎ মানুষ হয়ে ওঠা আমাদের মুক্তি ও স্বাধীনতা দিতে পারে, এবং আমাদের মানুষের মতো জীবনযাপন করতে দিতে পারে। ধন্যবাদ ঈশ্বর!
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।