আমার পরিবারের দ্বারা নিপীড়িত হওয়া: এক শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা
আমি যখন বিশ্বাসে নতুন এসেছিলাম তখন আমার স্বামী আমার পথে বাধা সৃষ্টি করেনি, এবং আমিও তাকে সুসমাচার শুনিয়েছিলাম। কিন্তু সে অর্থ উপার্জনে খুব মনোযোগী ছিল, তাই সে বিশ্বাসে যোগ দিতে চায়নি। তারপর সে লক্ষ্ করল যে আমার সমস্ত আচরণ বদলে গিয়েছে এবং আমি অনেক বেশি শান্ত হয়ে গিয়েছিলাম, তাই সে সত্যিই এর সমর্থন করত। কিন্তু এক বছর পরে, সে আমার পথে বাধা সৃষ্টি করা শুরু করল। একদিন সে কাজ থেকে ফিরে বাড়িতে এসে জিজ্ঞেস করল, “তুমি পূর্বের বজ্রালোকে বিশ্বাস কর, তাই না? আমি আজ মাইককে বাড়িতে ছাড়তে গিয়েছিলাম, এবং ও আমাকে বলল যে তার গির্জার পাদ্রীরা সবাই বলে যে এটা প্রকৃত পথ নয়, এর ধর্মোপদেশগুলো গভীর এবং সেগুলোর দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া সহজ। মাইক আমাকে সতর্ক করে দিয়েছে যে তোমার এই ধর্মোপদেশগুলো শোনা উচিত নয়।” মাইক ছিল তার বস, এবং দীর্ঘকাল ধরে প্রভুতে বিশ্বাসী ছিলেন। সে সত্যিই প্রতিভাবান ছিল—আমার স্বামীর তার প্রতি অনেক শ্রদ্ধা ছিল। আমি দেখলাম যে আমার স্বামী মাইককে সঠিক মনে করছে, তাই আমি তাকে বললাম যে সে বিশ্বাসের বিষয়গুলো বোঝে না এবং অন্য লোকেরা যা বলে তা তোতাপাখির মতো আওড়াতে পারে না। সে এক মুহূর্তের জন্য ইতস্তত করল, তারপর আর কিছু বলল না।
তারপর আরেকবার, সে আমাকে গম্ভীরভাবে বলল, “আমি অনলাইনে কিছু গবেষণা করেছি, এবং তোমার সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট পার্টি দ্বারা কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও মানুষ সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সম্পর্কে অনেক কিছু বলছে, যে তিনি শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি, ঈশ্বর নন, এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জা অর্থের জন্য মানুষের সুযোগ নিচ্ছে। আমি তোমাকে আর গির্জার লোকদের সঙ্গে সমাবেশে যোগ দিতে দেব না। আমার আশঙ্কা তুমি প্রতারিত হবে।” এটা শুনে আমি খুব রেগে গেলাম এবং বললাম, “তুমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী পড়নি এবং তুমি গির্জাকে বুঝতে পার না। কিছু অনলাইন গুজবের উপর ভিত্তি করে তুমি কীভাবে নির্বিচারে এরকম মতামত দিতে পার? তুমি জান যে সমস্ত খ্রীষ্টান প্রভু যীশুতে বিশ্বাস করে এবং জানে যে তিনিই প্রকৃত ঈশ্বর। ২০০০ বছর আগে, প্রভু যীশু যখন কাজ করছিলেন, তখন তিনি অনেক মানুষের দ্বারা নিন্দিত ও অস্বীকৃত হয়েছিলেন। তারা বলেছিল তিনি একজন সাধারণ ব্যক্তি, একজন ছুতোরের ছেলে। প্রভু যীশু বাইরে থেকে একজন সাধারণ ব্যক্তির মত দেখতে ছিলেন, কিন্তু তাঁর একটা ঐশ্বরিক সারমর্ম ছিল, এবং তিনি সত্য প্রকাশ করতে এবং মানবজাতিকে মুক্তি দিতে পারতেন। তিনি ছিলেন দেহধারণকারী ঈশ্বরের আত্মা, মানবতার মুক্তিদাতা। আমরা যদি কমিউনিস্ট পার্টির কথা শুনি এবং বলি যে বাইরে থেকে কাউকে সাধারণ মানুষের মত দেখতে বলে সে ঈশ্বর নয়, সেটাও কি প্রভু যীশু খ্রীষ্ট কে অস্বীকার করা হবে না? প্রভু যীশুর মতই, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে দেখতে উল্লেখযোগ্য নয়, কিন্তু তিনি সত্য প্রকাশ করতে পারেন, ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর প্রকাশ করতে পারেন। আমি এতদিনে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অনেক বাণী পড়েছি। সেগুলো বাইবেল সম্পর্কে সমস্ত ধরণের রহস্য প্রকাশ করে, এবং আমাদের বলে কীভাবে শয়তান মানবজাতিকে ভ্রষ্ট করে, কীভাবে ঈশ্বর মানবজাতিকে উদ্ধার করেন, আমাদের বিশ্বের সমস্ত অন্ধকার এবং মন্দের মূল এবং মানব ভ্রষ্টাচার সম্পর্কিত সত্য। সেগুলো আমাদের পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার, ঈশ্বরের দ্বারা পরিত্রাণ পাওয়ার এবং স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করার পথও দেখায়। এই সত্যগুলো কেউই প্রকাশ করতে পারেনি, সে যতই বিখ্যাত বা মহৎ হোক না কেন। কোন মানুষ সত্য প্রকাশ করতে পারে? কে মুক্তি ও পরিত্রাণের কাজ করতে পারে? কেউ পারে না। এটাই প্রমাণ করে যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই হলেন মানবজাতির কাছে আসা প্রকৃত ঈশ্বরের অবতার।” আমি তাকে এটাও বললাম যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জা কখনোই দানের জন্য আবেদন করেনি। ঈশ্বরের বাণীর সমস্ত বই বিনামূল্যে দেওয়া হয়। চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টির দাবি যে গির্জা শুধু মানুষের টাকা চায় একটা সম্পূর্ণ অপবাদ। আমি তাকে বললাম যে সে ওই মিথ্যাগুলোর মোহে পড়তে পারে না। সে কোনও কথা না বলে চলে গেল।
তারপর একদিন যখন আমি সুসমাচার প্রচার করে ফিরে এলাম, সে আমাকে বেশ বিরক্ত হয়ে বলল, “আমি এইমাত্র অনলাইনে দেখলাম পার্টি বলছে তোমার গির্জার লোকেরা তাদের পরিবার পরিত্যাগ করছে। তুমি ইদানীং খুব বাইরে যাচ্ছ। তুমিও কি চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছ?” আমি বললাম, “আমি আমাদের বাড়ির খুব যত্ন নিই। তুমি এটা কীভাবে বলতে পারলে? আমি সুসমাচার প্রচার করতে বাইরে যাচ্ছি, যাতে মানুষ জানে যে ত্রাণকর্তা এসেছেন এবং তারা তাঁর পরিত্রাণ গ্রহণ করতে পারে। তুমি দেখেছ মানুষ কীভাবে প্রতিনিয়ত আরও ভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছে, খারাপ প্রবণতা অনুসরণ করছে এবং পাপের মধ্যে জীবনযাপন করছে। তোমার বন্ধুদের দেখ—তারা সবাই হয় জুয়া খেলে বা পতিতাদের কাছে যায়। ওদের মধ্যে একজনও কি নৈতিক? পৃথিবী কত খারাপ হয়ে গিয়েছে। সবাই ঈশ্বরকে অস্বীকার করে এবং প্রতিরোধ করে, এবং ভ্রষ্টাচার একেবারে চরমে পৌঁছেছে। বাইবেল অন্তিম সময়ে বড়ো বিপর্যয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করে যা সমস্ত ভ্রষ্ট মানবতাকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। দুর্যোগ এখন বাড়ছে। কেবলমাত্র যদি মানুষ সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বিচার ও শাস্তি গ্রহণ করে এবং পাপ ও ভ্রষ্টাচার বন্ধ করে দেয় তারা বিপর্যয়ের সময়ে ঈশ্বরের দ্বারা সুরক্ষিত হতে পারে এবং তাঁর রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাসীরা বোঝে ঈশ্বর কত জরুরিভাবে মানুষকে উদ্ধার করতে চান, এবং আমরা ইচ্ছুক দৈহিক আনন্দ ছেড়ে, ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচারের প্রচার করার এবং সাক্ষ্য দিতে চেষ্টা করার জন্য। এটা ন্যায়পরায়ণতা! কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি দেয় না মানুষকে বিশ্বাস করতে, সুসমাচার প্রচার করতে, বা ঈশ্বরের সাক্ষ্য দিতে, এবং সে উন্মত্ত হয়ে খ্রীষ্টানদের গ্রেফতার ও নিপীড়ন করছে। এটা বহু খ্রীষ্টানকে বাধ্য করেছে তাদের পরিবারকে ছেড়ে যেতে, এবং তারা ফিরে আসতে অক্ষম। এমনকি কেউ কেউ তো গ্রেফতার ও কারাবন্দি হচ্ছে বা নির্যাতিত হয়ে মৃত্যু গ্রহণ করছে। এ সবই কি খ্রীষ্টানদের ওপর কমিউনিস্ট পার্টির নিপীড়ন নয়? কিন্তু তারা ভুক্তভোগীদের দোষারোপ করছে, বলছে বিশ্বাসীরা তাদের পরিবার পরিত্যাগ করছে। এটা কি সত্যকে বিকৃত করে তা পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা নয়? বিশ্বাস রাখা সঠিক এবং যথাযথ। চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি হল মন্দ, সেটা মিথ্যে ছাড়া আর কিছুই বলে না। কিন্তু তুমি এটাকে ঘৃণা কর না—এমনকি তুমি এটার মিথ্যাগুলোকেও বিশ্বাস কর। তুমি কেবল এটাকে মান্যতা দিচ্ছ আর বলছ, যে আমরা আমাদের পরিবারকে ত্যাগ করছি। এটা ক্ষোভজনক এবং বিভ্রান্তিকর।” সে চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টির মিথ্যেগুলোকে মোহে পড়েছিলেন, তাই সে আর আমার কথা শুনতে চাইল না। সে রেগে বলল, “আমার কিচ্ছু যায়-আসে না। আর যাকে বিশ্বাস কর, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে নয়।” তাকে এই বিষয়ে এত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দেখে, আমি হঠাৎ একটু আতঙ্কিত হলাম। আমরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিবাহিত ছিলাম এবং আমরা একসঙ্গে অনেক কিছুর সম্মুখীন হয়েছি। আমরা সবসময় সবকিছু নিয়ে আলোচনা করতাম এবং একে অপরকে সমর্থন করতাম, কোনও বড়ো দ্বন্দ্ব ছাড়াই। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রতি আমার বিশ্বাসের কারণে তাকে আমার প্রতি এত ক্রুদ্ধ দেখা বেশ হতাশাজনক ছিল। আমি নীরবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তাঁর ইচ্ছা বোঝার জন্য আমাকে পথ দেখাতে বলি। আমার প্রার্থনার পরে ঈশ্বরের বাণী থেকে এই উদ্ধৃতিটি আমার মনে পড়েছিল: “ঈশ্বর মানুষের মধ্যে যে কাজ করেন, তার প্রতিটি ধাপে, বাহ্যিকভাবে মনে হয় তা হল মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ যেন তা মানুষের ব্যবস্থাপনা এবং মানুষের হস্তক্ষেপেই সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু অন্তরালে, কাজের প্রতিটি ধাপে, এবং যা কিছু ঘটছে সেই প্রতিটি ঘটনাই ঈশ্বরের প্রতি শয়তানের বাজি এবং এ জন্য প্রয়োজন ঈশ্বরের প্রতি নিজ সাক্ষ্যে মানুষের অটল থাকা” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরকে ভালোবাসাই প্রকৃত ঈশ্বর-বিশ্বাস)। এটা আমাকে বুঝতে সাহায্য করল যে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছিল আমার স্বামী আমার বিশ্বাসের পথে বাধা সৃষ্টি করছে, কিন্তু এর পেছনে আসলে শয়তানের হস্তক্ষেপ ছিল। শয়তান চিরকালের জন্য মানুষকে শাসন করতে এবং তার মালিক হতে চায়। এ চায়নি আমি ঈশ্বরের সামনে এসে তাঁর উপাসনা করি, তাই আমাকে বিরত করা জন্য সবরকম চেষ্টা করছিল, অনলাইনে মিথ্যা ও গুজব ব্যবহার করছিল আমার স্বামীকে বিভ্রান্ত করতে, আমার পথে বাধা সৃষ্টি করতে তাঁকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছিল, যাতে আমি প্রকৃত পথ পরিত্যাগ করি এবং তাঁর প্রতি আমার অনুভূতির কারণে ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করি। শয়তান কত অশুভ এবং দুষ্ট! এটা জানার পর, আমি প্রতিজ্ঞা করলাম যে শয়তান যা-ই করুক না কেন, আমি আমার বিশ্বাস রাখব এবং ঈশ্বরকে অনুসরণ করব, এবং কখনোই শয়তানের কাছে নতি স্বীকার করব না! তাই আমি তাকে বললাম, “আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি এবং তাঁকে অনুসরণ করি। এটা সঠিক পথ। এটা আমার নির্বাচন, এবং তোমার হস্তক্ষেপ করার কোনও অধিকার নেই!” সে কোনো কথা না বলে ক্ষিপ্ত হয়ে বেরিয়ে গেল।
একদিন সে দেখল আমি ঈশ্বরের বাণীর স্তব শুনছি। রেগে গিয়ে সে গম্ভীর মুখে বলল, “আমি তোমাকে বলেছিলাম, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস কোরো না। কেন তুমি কখনও কথা শোনো না? মাইক যুগ যুগ ধরে বিশ্বাসী, ও সত্যিই একজন নিষ্ঠাবান খ্রীষ্টান। ও আমাকে বলেছিল পূর্বের বজ্রালোক প্রকৃত পথ নয়, তাই যদি তুমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে চাও, মাইকের গির্জায় যাও। এটা বড়ো এবং সুপরিচিত। আমি প্রতি সপ্তাহে তোমার সঙ্গে উপাসনা করতে যাব, এবং মাইক তার যাজককে বলতে পারে তোমার সঙ্গে কথা বলতে।” আমি তাঁকে বললাম, “মাইক যা বলছে তুমি সেটা নিয়ে এত নিশ্চিত কেন? কেন যাজকদের সম্মান করব? তুমি শুধু দেখতে পাচ্ছ যে যাজকদের যোগ্যতা আছে এবং তারা সুপরিচিত, কিন্তু তারা আসলে কী প্রচার করে তা নিয়ে তুমি ভাব না। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে গ্রহণ না করে তারা সত্যের লালনপালন পাবে না। তারা শুধু বাইবেলের জ্ঞান সম্পর্কে কথা বলে, সেই একই পুরানো জিনিস। তাদের কিছুই বলার নেই প্রভুর বাণীকে কীভাবে বাস্তবে প্রয়োগ করা যায় সে সম্পর্কে বা মানুষের পাপের সমাধান কীভাবে কয়া যায় সে সম্পর্কে। ওই গির্জায় গিয়ে আমার কিছুই হবে না। আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার সমাবেশ উপভোগ করি; সেগুলো পুষ্টিকর। আমি কিছু সত্য বুঝতে পারি এবং আমি শিখি কীভাবে স্বাভাবিক মানবতা নিয়ে বাঁচতে হয়। তুমি নিজেই বলেছিলে আমি বিশ্বাস অর্জন করার পর থেকে তুমি আমার মধ্যে কিছু পরিবর্তন দেখেছ। তাহলে তুমি কেন এই ঘটনাগুলো বিচার করছ না, উল্টে জোর দিচ্ছ চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টির মিথ্যাকে বিশ্বাস করতে আর আমার পথে বাধা সৃষ্টি করছ?” সে এর বিরুদ্ধে তর্ক করতে পারল না, তাই সে আমাকে হুমকি দিল: “তুমি কিছুতেই আমার কথা শুনছ না। তুমি যদি এটার উপর জোর দিতে থাক, তাহলে তোমাকে তোমার সমস্ত টাকা এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আমার কাছে হস্তান্তর করতে হবে, এবং বাড়িও তোমাকে আমার নামে হস্তান্তর করতে হবে।” তার কথা শুনে মনে হল আমার হৃদয়ে যেন কেউ ছুরিকাঘাত করল। আমাদের বিবাহের এতগুলো বছর, আমি বেশ মিতব্যয়ী ছিলাম এবং অর্থ উপার্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। একটা বাড়ি কেনার জন্য আমানত টাকা জোগাড় করা সহজ ছিল না। এমনকি আমি নিজের জন্য একটাও নতুন পোশাক কিনিনি। আমি আমাদের বাড়ির জন্য কিছুই ছাড়িনি। আমি হতবাক হলাম যে সে আমাকে এমন নিষ্ঠুর কথা বলল। শুধুমাত্র আমার বিশ্বাসের কারণে এত বছর পরে কীভাবে আমাদের সম্পর্ক অচলাবস্থার সম্মুখীন হতে পারে? আমার যদি কোনো টাকা বা সম্পত্তি না থাকত, সে আমাকে বের করে দিলে আমি কী করতাম? মনে হল আমার হৃদয়ে একটা ছুরি পাকান হচ্ছে। আমি শোয়ার ঘরে গিয়ে কাঁদতে লাগলাম, আমার চোখে জল নিয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, “ঈশ্বর, আমি কষ্টে আছি এবং সত্যিই দুর্বল বোধ করছি। আমি জানি না এরকম একটা কিছুর মধ্যে দিয়ে কী করে যাব। আপনার ইচ্ছা বুঝতে আমাকে পথ দেখান।”
তারপর আমি ঈশ্বরের কিছু কথা চিন্তা করলাম, “অতীতে, সকল মানুষেরা তাদের সংকল্প তৈরির জন্য ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত হতো এবং বলত: ‘এমনকি আর কেউ ঈশ্বরকে ভালো না বাসলেও, আমি অবশ্যই তাঁকে ভালবাসবো’। কিন্তু এখন, তোমার ওপর পরিমার্জনা আরোপিত হয়েছে, এবং তা তোমার ধারণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায়, তুমি ঈশ্বরের ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছ। এ কি নিখাদ প্রেম? তুমি অনেকবারই ইয়োবের কীর্তিসমূহের বিষয়ে পড়েছ—তা কি তুমি বিস্মৃত হয়েছ? প্রকৃত ভালোবাসা শুধুমাত্র বিশ্বাসের মধ্যে থেকেই গঠিত হয়। তুমি তোমার সহন করা পরিমার্জনার মধ্যে দিয়ে ঈশ্বরের প্রতি প্রকৃত ভালবাসার বিকাশ ঘটাও, এবং তোমার বিশ্বাসের দ্বারাই তুমি ব্যবহারিক অভিজ্ঞতায় ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি মনোযোগী হতে সক্ষম হও, আর এই বিশ্বাসের দ্বারাই তুমি তোমার নিজস্ব দৈহিক ইচ্ছা ত্যাগ করে জীবনের অনুবর্তী হও; এমনটাই মানুষদের করা উচিত। এমন করতে পারলে, তুমি ঈশ্বরের কাজ প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হবে, কিন্তু যদি তোমার বিশ্বাসের অভাব থাকে, তাহলে তুমি ঈশ্বরের কাজ প্রত্যক্ষ করতে বা অনুভব করতে পারবে না” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, যাদের নিখুঁত করা হবে তাদের অবশ্যই পরিমার্জনা ভোগ করতে হবে)। ঈশ্বরের বাণী আমাকে কিছুটা শক্তি দিল। নিপীড়ন এবং কষ্টের মুখে, ঈশ্বর যা চান তা হল অকৃত্রিম বিশ্বাস এবং ভালোবাসা। আমরা যার মধ্য দিয়েই যাই বা যতই কষ্ট পাই না কেন, আমরা তাঁর কাছ থেকে বিচ্যুত হতে পারি না। আমি জানতাম অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শুনতে পাওয়ার জন্য আমি খুব ভাগ্যবান। প্রভুর প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানাতে সক্ষম হওয়া, ঈশ্বরের উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করা, এবং ঈশ্বরের দ্বারা প্রকাশিত সমস্ত সত্যের লালনপালন উপভোগ করা সম্পূর্ণরূপে আমার প্রতি তাঁর ভালবাসা ছিল। খ্রীষ্টকে অনুসরণ করার জন্য কষ্টভোগের মূল্য এবং অর্থ ছিল। এটা ন্যায়পরায়ণতার জন্য ছিল। আমি প্রভু যীশুর প্রেরিত ও অন্যান্য শিষ্যদের কথা ভাবলাম, যারা ঈশ্বরকে অনুসরণ করেছিল এবং তাঁর পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছিল। তারা রোমীয় সরকারের দ্বারা নির্মমভাবে নির্যাতিত হয়েছিল, এবং ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা নিন্দিত ও নিপীড়িত হয়েছিল। এমনকি কেউ কেউ নিজের জীবন দিয়েছিলেন এবং প্রভুর জন্য শহীদ হয়েছিলেন। যুগ যুগ ধরে সন্তরা যে কষ্ট ভোগ করেছেন তার তুলনায় আজ আমি যে সামান্য কষ্ট ভোগ করছিলাম তা কিছুই ছিল না। আমার নিজের জন্য দুঃখিত না হয়ে বরং, তাদের থেকে শেখা উচিত। আমাকে শেষ অবধি ঈশ্বরকে অনুসরণ করতে হত, যাই হোক না কেন। এটা চিন্তা করে চোখের জল শুকিয়ে শোয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম, এবং আমার স্বামীকে বললাম, “আমরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিবাহিত এবং আমি আমাদের বাড়ির জন্য অনেক কিছু করেছি। এখন তুমি আমার সমস্ত অর্থ এবং সম্পত্তি কেড়ে নিতে চাও, এবং আমাকে আর্থিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আমাকে প্রকৃত পথ ত্যাগ করাতে চাও। আমি তোমার কথা শুনছি না। আমি ঈশ্বরকে অনুসরণ করছি!” আমার কথা শুনে সে রেগে গেল। উন্মত্ত হয়ে, সে আমার থেকে আমার গান শোনার যন্ত্র ছিনিয়ে নিল এবং তারপর আমার সমস্ত ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ঘেঁটে। সে নিয়ে নিল আমার শনাক্তকরণ কাগজপত্র ও গয়না, এবং আমার ব্যাঙ্ক কার্ড এবং নগদ। তারপর সে আমার ফোনটা নিয়ে, বেশ জোরে মেঝেতে ফেলে দিল, তারপর একটা স্টুল দিয়ে ফোনটা টুকরো টুকরো করে ভেঙ্গে ফেলল। এই ভাবে সে বাইরের জগতের সঙ্গে আমার সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন করার চেষ্টা করছিল।
তারপর সে আমার বাবা-মা, ভগিনী এবং জামাইবাবুকে আমাদের বাড়িতে ডাকল, এবং তারা সবাই দল বেঁধে আমার উপর চড়াও হল। আমার ভগিনীরা অনলাইনে সব ধরনের অপবাদ দেখেছিল যা কমিউনিস্ট পার্টি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জা সম্পর্কে বলছিল, এবং আমাকে ঝাউয়ান মামলা সম্পর্কে সেসব কিছু দেখিয়েছিল যা চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি তৈরি করেছিল। আমি বললাম, “আমি সব জানি। ঝাউয়ান মামলাটি চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টির আদালতে বিচার করা হয়েছিল, এবং সেই সন্দেহভাজনরা বলেনি যে তারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার অংশ ছিল। তারা আদালতে স্পষ্ট বলেছিল যে তাদের কখনোই গির্জার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না, কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টির বিচারক তাদের দিয়ে জোর করে বলিয়েছিল যে তারা গির্জার সদস্য। এটা কি গির্জা কে ফাঁসিয়ে দেওয়া নয়? এটা কি স্পষ্টভাবে মিথ্যা মামলা তৈরি করা নয়? তোমরা জান যে কমিউনিস্ট পার্টি নাস্তিক, এবং এটা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর নির্যাতন চালিয়েছে। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার বিরুদ্ধে এটা যা বলে তা তুমি কীভাবে বিশ্বাস কর?” কিন্তু আমার দুই ভগিনী সেটার মিথ্যার মোহে পড়ে গিয়েছিল, এবং চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি যে গুজবগুলো ছড়িয়েছিল সেগুলো নিয়ে তারা কোনও বিশ্লেষণ করেনি। তারা বলল “সমস্ত প্রধান খবরের চ্যানেলগুলো এটাই বলছে। এটা কীভাবে মিথ্যা হতে পারে?” আমি তাদের বললাম, “সমস্ত চীনা গণমাধ্যম চ্যানেলগুলো কমিউনিস্ট পার্টি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, সেগুলো চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র। চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি তাদের যা বলতে বলবে সেগুলোকে তাই বলতে হবে এবং তারা সত্যের উপর প্রতিবেদন করার সাহস করে না। প্রচুর বিদেশী গণমাধ্যমও চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টির কেনা এবং তাই বলে যা বলা হয়। তোমরা কি দেখতে পাচ্ছ না কী হচ্ছে? আমি তোমাদের পরামর্শ দিচ্ছি তোমরা তোমাদের চোখ খোলো এবং অন্ধভাবে ওই গুজবগুলোতে কান দেওয়া বন্ধ করো।” এতে তাদের কিছুই বলার ছিল না। আমার মা রেগে গিয়ে বলল, “তুমি আমাদের কথা শুনবে না। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে ছেড়ে দেওয়া কি তোমার জন্য সত্যি এত কঠিন? তোমার বিশ্বাসের কারণে পুরো পরিবার তোমাকে নিয়ে চিন্তিত। তুমি কেন আমাদের পরামর্শ শুনতে অস্বীকার করছ?” তারপর সে কাঁদতে লাগল। আমার মাকে এত দুঃখিত দেখা আমার জন্য সত্যিই কঠিন ছিল। সে আমাদের তিনজনকে নিজেই বড় করেছিল এবং এটা তার পক্ষে সহজ ছিল না। এখন যেহেতু তার বয়স হয়েছে, আমি চাইছিলাম না সে আমার জন্য চিন্তা করুক। এই চিন্তা আমাকে প্রায় কাঁদিয়ে দিয়েছিল। তখন আমার ছোটো ভগিনী বলল, “শুধু দেখো তুমি আমাদের মায়ের সঙ্গে কী করছ। তুমি কি তাকে চাও, নাকি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে?” আমার আরেক ভগিনী ঠান্ডা গলায় বললেন, “তুমি যদি তোমার ধর্ম রাখতে চাও তবে তোমার সঙ্গে পরিবারের মত আচরণ না করার জন্য তুমি আমাদের দোষ দিতে পারবে না। আমরা তোমার নামে পুলিশের কাছে নালিশ করব, এই অপরাধে যে তুমি কাউকে প্রতারিত করেছ এবং তারা তোমাকে চীনের কাছে হস্তান্তর করবে। ভুলে যেও না, আমিই টাকা দিয়ে তোমাকে কানাডায় আসতে সাহায্য করেছিলাম।” তাদের এই সব কথা শুনে আমি ভীষণ রেগে গেলাম। আমি কখনোই কল্পনা করিনি যে তারা আমাকে আমার বিশ্বাস ত্যাগ করতে বাধ্য করানোর চেষ্টা করবে এবং এমনকি এই ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ, ঘৃণ্য কৌশলের দ্বারা আমাকে হুমকি দেবে। আমি এই ফাঁদে পা দিতে পারতাম না। আমি ইতিমধ্যেই একজন কানাডিয়ান নাগরিক হয়ে ছিলাম, তাই তারা নির্বিচারে আমার উপর যেকোনো অভিযোগ দিয়ে আমাকে নির্বাসিত করতে পারে না। আমি কখনো কল্পনাও করিনি যে আমার রক্তের ভগিনী আমাকে এরকম কিছু বলবে। আমার খুব খারাপ লাগছিল এবং আমি কান্না থামাতে পারছিলাম না।
তারপর আমি গির্জার স্তোত্রের একটা স্তবকের কথা ভাবি। “সারা পথ তুমি আমার সঙ্গেই আছ”: “তোমার কথা এবং কাজ আমাকে পথ দেখায়, এবং তোমার ভালবাসা আমাকে তোমাকে অনুসরণ করতে আকর্ষণ করে। আমি প্রতিদিন তোমার বাণী উপভোগ করি। তুমি আমার নিত্য সঙ্গী। যখন আমি নেতিবাচক এবং দুর্বল থাকি, তখন তোমার কথাই আমাকে লালনপালন করে এবং শক্তি যোগায়। যখন আমি বিপর্যয় এবং ব্যর্থতা ভোগ করি, তখন তোমার কথাই আমাকে সাহায্য করে। যখন আমি শয়তান দ্বারা অবরুদ্ধ হই, তোমার কথা আমাকে সাহস ও জ্ঞান দেয়। যখন আমি পরীক্ষা এবং পরিমার্জনার সম্মুখীন হই, তখন তোমার কথা আমাকে সাক্ষ্য দিতে সাহায্য করে। আপনার বাণী আমাকে সঙ্গ দেয় এবং পথ দেখায়, এবং আমার হৃদয় উষ্ণ এবং স্বাচ্ছন্দ্য। তোমার ভালবাসা এত সত্য, এবং আমার হৃদয় কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ণ” (মেষশাবককে অনুসরণ করুন ও নতুন গীত গান)। আমি জানতাম এমনকি অত্যাচারী পরিবারের সঙ্গেও যারা আমাকে বুঝতে পারেনি, ঈশ্বর সবসময় আমার পাশে ছিলেন। তাঁর কথার জ্ঞান ও নির্দেশনা দিয়ে, আমি শয়তানের কৌশলগুলো দেখতে পেতাম, এবং ঈশ্বর আমাকে সান্ত্বনা দিতেন, এবং তাঁর বাণীর মাধ্যমে আমাকে শক্তি ও বিশ্বাস দিতেন। আমি যখন এইভাবে চিন্তা করি তখন আমি এতটা দুঃখী বোধ করিনি। আমার মনে আছে আরেকটা অনুচ্ছেদ ছিল: “নিরুৎসাহিত হয়ো না, দুর্বল হয়ো না, আমি তোমার কাছে সবকিছু স্পষ্ট করে তুলব। রাজ্যের পথ মসৃণ নয়; কোনোকিছুই এত সহজ নয়! তোমরা চাও খুব সহজেই তোমাদের কাছে আশীর্বাদ আসুক, তাই নয় কি? আজ, সবাইকে তিক্ত পরীক্ষাসমূহের সম্মুখীন হতে হবে। এই পরীক্ষাসমূহ ব্যতীত, আমার জন্য তোমাদের প্রেমময় হৃদয় আরো শক্তিশালী হয়ে বিকশিত হবে না এবং আমার জন্য তোমাদের প্রকৃত ভালোবাসা থাকবে না। এমনকি, যদিও এই পরীক্ষাগুলি খুব সাধারণ ঘটনা সংক্রান্তও হয়ে থাকে তাহলেও, এগুলির মধ্যে দিয়েই সকলকে উত্তীর্ণ হতে হবে; তবে পরীক্ষাগুলি কতটা কঠিন হবে তা ব্যক্তিবিশেষের উপর নির্ভর করছে। … যারা আমার তিক্ততার ভাগীদার হবে, তারা অবশ্যই আমার মাধুর্যও লাভ করবে। তোমাদের কাছে এটাই আমার অঙ্গীকার এবং আশীর্বাদ” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সূচনাকালে খ্রীষ্টের বাক্য, অধ্যায় ৪১)। ভাবতে ভাবতেই বুঝতে পারলাম স্বর্গ-রাজ্যের পথটি এমন সমস্যায় পূর্ণ যা কেউ এড়াতে পারে না। আমার পরিবারের এই নিপীড়ন ও হামলা আমার জন্য সুযোগ ছিল শয়তানের সম্মুখে সাক্ষ্য দেওয়ার। চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টির ঈশ্বরের শত্রু হওয়ার মন্দ সারমর্ম সম্পর্কে বিচক্ষণতা আমি কখনই সুখকর পরিবেশ থেকে পাব না। সেই কষ্টের মূল্য ও অর্থ ছিল। এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে যে এটাই প্রকৃত পথ, এটাই ঈশ্বরের কাজ, আমি যতই নিপীড়ন ও কষ্টের সম্মুখীন হই না কেন, আমি ঈশ্বরকে অনুসরণ করতে প্রস্তুত ছিলাম।
আমি হার মানব না দেখে তার চোখ রাগে জ্বলে উঠল, এবং সে আক্রমণাত্মকভাবে বলল, “আমি জানি তোমার বন্ধুই তোমাকে ধর্মান্তরিত করেছিল। সে শুধু তোমার থেকে টাকা বার করতে চেয়েছিল। আমি তাকে ঘৃণা করি। বিশ্বাস করো বা না করো, আমি তাকে মেরে ফেলব, তাতে যদি আমাকে জেলেও যেতে হয়, যাব।” তার এই কথা শুনে আমি একটা বড় ধাক্কা পেলাম, এবং সেটা সত্যিই ভয়ানক ছিল। আমি কাঁপতে শুরু করলাম। আমি সত্যিই কল্পনা করিনি যে মানুষটার সঙ্গে আমি এত বছর ছিলাম সে হঠাৎ এত নৃশংস হয়ে উঠতে পারে। সে কেমন স্বামী ছিল? সে স্পষ্টতই একজন রাক্ষস ছিল যে ঈশ্বরকে এবং সত্যকে ঘৃণা করত! সে আমাকে আমার বিশ্বাস থেকে দূরে রাখার জন্য অত ভয়ঙ্কর একটা কথা বলল। আমি তখন তার হিংস্র দিকটা দেখলাম এবং আমি সত্যিই ভয় পেয়েছিলাম যে সে আমার বন্ধুকে হত্যা করবে। আমি ধাতস্ত হওয়ার আগেই আমার মা আমাকে বলল, “মনে হচ্ছে তোমাদের দুজনের মধ্যে লড়াই হবে। কিছু জামাকাপড় নিয়ে আমার কাছে এসে আমার বাড়িতে কয়েকদিন থাক। তুমি বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বা কাজে যেতে পারবে না, কিন্তু ঘরে থেকে তুমি ভাবতে পারো তুমি কী করেছ।” তার কথা আমার জন্য উদ্বেগজনক ছিল। আমার স্বামী উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল-কে জানে সে কী করবে। সে আমার ফোন ভেঙ্গে দিয়েছিল যাতে আমি আমার বন্ধুকে সতর্ক করতে না পারি। এখন তারা আমাকে কারুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেবে না, এমনকি কাজেও যেতে দেবে না। সেটা কি গৃহবন্দি হওয়া ছিল না? আমি জানতাম না কীভাবে আমি গির্জার সঙ্গে যোগাযোগ করব, এবং গির্জার জীবন যাপন করব। আমি অবিলম্বে আমার হৃদয়ে ঈশ্বরকে ডাকলাম, তাঁকে আমাকে পথ দেখাতে বললাম। তারপর আমার মনে পড়ল, পশ্চিমি দেশগুলোতে ধর্মীয় অধিকার সুরক্ষিত থাকে, মানুষের বিশ্বাসের স্বাধীনতা থাকে। আমার ভগিনীরা চেয়েছিল আমার নামে পুলিশে নালিশ করতে, আমাকে অপবাদ দিতে, তাই আমিও পুলিশে নালিশ করতে পারি। একদিকে, এটা আমার বন্ধুর সুরক্ষার জন্য হবে, এবং আরেকদিকে, পুলিশ জড়িত হওয়ায়, তারা উল্টোপাল্টা কিছু করার সাহস পাবেন না। তাই আমি আমার মাকে বললাম, “আমি তোমার বাড়িতে যেতে চাই না, আমি পুলিশের কাছে গিয়ে নালিশ জানাতে চাই।” এতে তারা হতবাক হয়ে গেল এবং কিছু বলল না। আমি তখনই থানায় যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম। যখন আমি সেখানে পৌঁছলাম, আমি তাদের সংক্ষেপে বললাম যে আমার পরিবার আমার বিশ্বাসের জন্য আমাকে নিপীড়ন করছে। তারা প্রায় বিশ্বাসই করতে পারল না যে একটা পশ্চিমি দেশে এমন কিছু ঘটতে পারে। তারা সত্যিই সহানুভূতিশীল ছিলেন, এবং আমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তারা আমার স্বামী এবং পরিবারকে সতর্ক করল, “আমাদের এই দেশে ধর্মের স্বাধীনতা আছে। আপনারা তাঁর বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করতে বা তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করতে পারেন না। তিনি যদি কাজে যেতে চান, আপনারা তাঁর পথে বাঁধা সৃষ্টি পারেন না। উপরন্তু, শনাক্তকরণ নথি ব্যক্তিগত সম্পত্তি। সেগুলো তাঁকে ফিরিয়ে দিন।” পুলিশের থেকে এই কথা শুনে তারা আর আমাকে জোর করার চেষ্টা করেননি। আমি ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ ছিলাম, এবং আমার জন্য একটা পথ খুলে দেওয়ার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানালাম।
আইন আমার স্বামীর হাত-পা বেঁধে দিয়েছিল, তাই সে আমার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস করল না, কিন্তু সে হাল ছাড়ল না এবং আমাকে আমার বিশ্বাস পরিত্যাগ করতে বাধ্য করার জন্য নানা উপায় ভাবতে থাকল। দুইদিন পর সে আমাকে চাপ দিতে শুরু করল বাড়িটা তার নামে হস্তান্তর করার জন্য। সে এই কথা বললে আমি চিন্তিত হয়ে পড়লাম। মাত্র দুই দিন আগে, সে আমার সমস্ত নগদ টাকা এবং গয়না কেড়ে নিয়েছিল, এবং এখন সে চাইছিল আমি বাড়িটি তাঁর নামে হস্তান্তর করি। যদি সে আমাকে বার করে দেয়, আমার কিছুই থাকবে না। তাছাড়া আমার বাবা-মা ও ভগিনীরাও আমাকে তাদের সঙ্গে থাকতে দেবে না। এই সব ভেবে আবার আমার মন খারাপ হতে লাগল, কিন্তু ঠিক তখনই আমার মনে পড়ল ঈশ্বরের বাণী: “ঈশ্বর যখন তাঁর কর্ম সম্পাদন করেন, কোনো ব্যক্তির প্রতি যত্নবান হন, এবং সেই ব্যক্তির দিকে মুখ তুলে তাকান, এবং যখন সেই ব্যক্তির প্রতি অনুগ্রহ এবং অনুমোদন প্রদান করেন, শয়তান নিকটে থেকেই অনুসরণ করে, সেই ব্যক্তিকে ঠকানোর এবং তার ক্ষতিসাধনের জন্য সচেষ্ট থাকে। ঈশ্বর যদি সেই ব্যক্তিকে অর্জন করতে চান, তাহলে শয়তানও তখন তার সমস্ত শক্তি দিয়ে ঈশ্বরের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, ঈশ্বরের কর্মকে প্রলুব্ধ, বিঘ্নিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত করতে শয়তানি চক্রান্তের আশ্রয় নেবে, তার গোপন অভিপ্রায় সার্থক করার উদ্দেশ্যে। কী এই অভিপ্রায়? সে চায় না যে ঈশ্বর কাউকে অর্জন করুন; ঈশ্বর যাদের অর্জন করতে আকাঙ্ক্ষা করেন, সে তাদের ছিনিয়ে নিজের অধিকারে আনতে চায়, সে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাদের নেতৃত্ব দিতে চায় যাতে তারা তারই উপাসনা করে, যাতে মন্দ কর্ম সংঘটনে এবং ঈশ্বরের বিরোধিতায় তারা তার সাথে যুক্ত হয়। এ কি শয়তানের অশুভ অভিপ্রায় নয়?” (বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৪)। “যদি মানুষ পরিত্রাণ পেতে চায়, এবং ঈশ্বরের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে অর্জিত হতে চায়, তবে যারা ঈশ্বরকে অনুসরণ করে তাদের অবশ্যই শয়তানের কাছ থেকে ছোট ও বড় উভয় ধরনের প্রলোভন ও আক্রমণেরই সম্মুখীন হতে হবে। যারা এই প্রলোভন ও আক্রমণের মধ্যে থেকে উদ্ভূত হয় এবং শয়তানকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করতে সক্ষম হয় তারাই হল সেই মানুষ যারা ঈশ্বরের কাছে পরিত্রাণ পেয়েছে। এর অর্থ হল, যারা ঈশ্বরের কাছে পরিত্রাণ পেয়েছে তারা হল সেইসব মানুষ যারা ঈশ্বরের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে এবং যারা শয়তানের দ্বারা বহুবার প্রলুব্ধ ও আক্রান্ত হয়েছে। যারা ঈশ্বরের কাছে পরিত্রাণ পেয়েছে তারা ঈশ্বরের ইচ্ছা এবং প্রয়োজনীয়তাগুলি বোঝে, এবং ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব ও আয়োজনের অনুবর্তী হতে সক্ষম, এবং তারা শয়তানের প্রলোভনের মাঝে পড়ে ঈশ্বরে ভীতি ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগের পথ থেকে সরে যায় না। যারা ঈশ্বরের কাছে পরিত্রাণ পায় তারা সততার অধিকারী, তারা দয়ালু, তারা প্রেম এবং ঘৃণার মধ্যে পার্থক্য করে, তাদের ন্যায়বিচারের বোধ রয়েছে ও তারা যুক্তিবাদী, এবং তারা ঈশ্বরের যত্ন করতে এবং ঈশ্বরের সমস্ত কিছুকে সম্পদের মতো সঞ্চয় করে রাখতে সক্ষম। এই ধরনের মানুষ শয়তানের দ্বারা আবদ্ধ নয়, তারা শয়তানের গুপ্তচরবৃত্তি, অভিযোগ বা অপব্যবহারের শিকার হয় না; তারা সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন, তারা সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত। জোব ঠিক এমনই একজন স্বাধীন মানুষ ছিলেন, এবং ঈশ্বর কেন তাকে শয়তানের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তার সুনির্দিষ্ট তাৎপর্য ঠিক এটিই” (বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, ঈশ্বরের কর্ম, ঈশ্বরের স্বভাব এবং স্বয়ং ঈশ্বর ২)। ইয়োব শয়তানের অভিযোগ এবং প্রলোভন থেকে পালাতে পেরেছিলেন কারণ ঈশ্বরের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম বিশ্বাস, আনুগত্য এবং শ্রদ্ধা ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন ঈশ্বরের পূর্ণ শাসনে এবং তাঁর যা কিছু ছিল সেসবই ঈশ্বরের তাঁকে দেওয়া, তাই তিনি তা গ্রহণ এবং সমর্পণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন, ঈশ্বর কিছু দিন বা নিয়ে নিন। ইয়োব যখন তাঁর সম্পত্তি, তার সন্তানদের হারিয়ে ফেললেন, এমনকি তাঁর সারা শরীরে ফোঁড়া হয়ে গেল, তিনি তখনও ঈশ্বরকে দোষারোপ করেননি, বরং তাঁর নামে প্রশংসা করেছেন। তাঁর স্ত্রী তাঁকে বলেছিলেন, “এখনও তুমি তোমার বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে আছ? ঈশ্বরকে ধিক্কার দিয়ে মৃত্যুবরণ কর” (ইয়োবে ২:৯)। এবং তিনি তাঁকে ধমক দিয়ে বলেছিলেন, “তুমি মূর্খের মত কথা বলছ। ঈশ্বরের হাত থেকে আমরা কি শুধু মঙ্গলই গ্রহণ করব? অমঙ্গল কিছুই গ্রহণ করব না?” (ইয়োবে ২:১০)। ইয়োবের সাক্ষ্য সত্যিই আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। আমি তাঁর মত হতে চেয়েছিলাম। আমার স্বামী আমাকে যতই নিপীড়ন করুক, বা যতই আমার সম্পত্তি কেড়ে নিক, এমনকি যদি সে আমাকে বারও করে দেয় এবং আমি নিঃস্ব হয়ে যাই, আমি তখনও বিশ্বাসের মাধ্যমে ঈশ্বরকে অনুসরণ করব, সাক্ষী থাকব এবং শয়তানকে অপমান করব।
পরের দিন, যখন আমরা ঋণ হস্তান্তর করতে ব্যাঙ্কে গেলাম, ব্যাঙ্কের কর্মচারী আমাদের বলল যে এটা একটা নতুন ঋণ, তাই যদি আমরা একটা নতুন ঋণ পেতে চাই, সেটা একটা খুব জটিল প্রক্রিয়া হবে এবং তার সঙ্গে জড়িত ক্ষতিও হবে যথেষ্ট। সে পরামর্শ দিল যে যদি সম্ভব হয়, আমরা যেন পাঁচ বছর পর এটা পরিবর্তন করি। আমার স্বামীর হাত বাঁধা ছিল, তাই সে হাল ছেড়ে দিল। তারপর আমি আবার ভ্রাতা ও ভগিনীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। যখন আমার স্বামী জানতে পারল, সে জিজ্ঞাসা করল আমি সমাবেশে যাওয়া চালিয়ে যাব কিনা। প্রত্যুত্তরে আমি জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি কি আবার আমার পথে বাধা সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করছ? যদি তাই হয়, আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে অন্য কোথাও থাকতে পারি। তোমার চিন্তা হচ্ছে না যে গির্জা আমাকে প্রতারিত করবে এবং আমি পরিবারকে পরিত্যাগ করব? গির্জার সঙ্গে এত বছর ধরে আমি আছি, তারা কি কোনও টাকা নিয়ে আমাকে প্রতারিত করেছে? এই গুজবগুলো কি সত্যি যে আমরা বিশ্বাসীরা আমাদের পরিবার পরিত্যাগ করছি?” সে হতবাক হয়ে গেল, এবং কিছুক্ষণ পর বলল, “তুমি ঠিক বলেছ। আমি গির্জাকে দেখিনি কোনো টাকা নিয়ে তোমাকে প্রতারিত করতে, এবং তুমি আমাদের পরিত্যাগ করছ না। আমি খুবই নির্বোধের মত এই গুজবগুলোকে বিশ্বাস করেছিলাম। আমি তোমাকে প্রতারিত হওয়া থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম। তুমি যা খুশি বিশ্বাস করতে পার।” আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। তিনি আমার পথে বাধা সৃষ্টি শুরু করার পর থেকে আমি স্বাভাবিকভাবে সমাবেশে যোগ দিতে পারিনি, এবং আমি জানতাম আমাকে আর আটকে রাখা যাবে না। পরে, তার মনে হতে লাগল যে আমাদের অর্থ পরিচালনা করা বেশ একটা ঝামেলার বিষয় এবং তার কাছে বেশ জটিল বিষয়, তাই সে সবকিছু আমাকে হস্তান্তর করল পরিচালনার জন্য। সে আর কখনও নিজের নামে ঋণ নেওয়ার কথা বলেনি।
আমার পরিবারের আমাকে নিপীড়ন করার এই অভিজ্ঞতা আমাকে দেখিয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি কত মন্দ। এটা কেবল চীনেই উন্মত্ত হয়ে খ্রীষ্টানদের নিপীড়ন এবং গ্রেপ্তার করছে না, বরং এটা অনলাইনেও মিথ্যা প্রচার করছে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জাকে অপবাদ দিচ্ছে, গোটা বিশ্বকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে গির্জার বিরুদ্ধে যেতে, এটার সঙ্গে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাতে সবাই মিলে নরকে গিয়ে দণ্ডিত হয়। কমিউনিস্ট পার্টি হল একটা মন্দ দানব যেটা ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করে, মানুষকে বিভ্রান্ত করে এবং তাদের সম্পূর্ণ গ্রাস করে। শয়তান খুবই খারাপ, কিন্তু ঈশ্বরের জ্ঞান শয়তানের পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে ব্যবহার করা হয়। শয়তান সেই নিপীড়নটি ব্যবহার করতে চেয়েছিল আমাকে ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করাতে, আমার পরিত্রাণের সুযোগ হারিয়ে ফেলাতে, কিন্তু তা কখনও কল্পনাও করেনি যে এটা আমাকে বিচক্ষণতা বিকাশ করতে এবং এর কদর্যতা দেখতে দিয়েছিল। আমি এটাকে অভিশাপ দিয়েছি এবং অন্তর থেকে প্রত্যাখ্যান করেছি, এবং ঈশ্বরের প্রতি আমার বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়েছে। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।