আমার পরিবারের বন্দি দশা থেকে মুক্তি
আমি ২০০৫ সালে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ স্বীকার করি। সেই সময়, সমাবেশে গিয়ে, ঈশ্বরের বাক্যপড়ে, আমি অনেক সত্য এবং রহস্য সম্পর্কে জানতে পেরেছিলাম যা এর আগে কখনও শুনিনি। জানতে পেরেছি কীভাবে ঈশ্বর মানবজাতিকে পরিচালনা এবং রক্ষা করেন, মানব জীবনের উদ্দেশ্য, এর মূল্য এবং এর অর্থ জেনেছি, সেই সাথে জেনেছি মানুষের পরিণতি এবং গন্তব্য কী? ঈশ্বরের বাক্য পাঠের মাধ্যমে, জীবনের অনেক সমস্যা এবং জটিলতার সমাধান করতে পেরেছি। ঈশ্বরে বিশ্বাস এক অসাধারণ অনুভুতি। কিন্তু আমার স্বামী এটা জানতে পেরে আমার বিশ্বাসের বিরোধিতা করে। প্রভুর প্রতি বিশ্বাসের কারণে একবার আমার এক কাকাকে সিসিপি গ্রেফতার করেছিল। আমার স্বামী জানত সিসিপি ঈশ্বরের প্রতি সব ধরনের বিশ্বাসকে নিষিদ্ধ করেছে, তার ভয় ছিল আমার গ্রেপ্তারি নিয়ে, চিন্তা ছিল পুরো পরিবারকে নিয়ে। তাই সে আমার বিশ্বাসের চরম বিরোধী ছিল। এছাড়াও, আমি তখন একজন বিকল্প শিক্ষিকা ছিলাম স্কুল জানতে পারলে আমাকে তাড়িয়ে দেবে বলেও তার চিন্তা ছিল, তাই সে আমাকে চাপে রাখত আর কাজে বাধা দিত।
সে আমাকে ঈশ্বরের বাক্য পড়তে বা স্তোস্ত্র শুনতে দিত না, আর কর্তব্য পালন ও সমাবেশে যোগ দেওয়া তো দূরের কথা। মনে আছে, একবার সে আমাকে ঈশ্বরের বাক্য পড়তে দেখে প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিল। বলেছিল: “সরকারের নিষেধ সত্ত্বেও তুমি এখনো বিশ্বাস করো! শিক্ষা কমিটির কোনো সদস্য যদি ধরে ফেলে, তাহলে চাকরি তো যাবেই, সেইসঙ্গে জেলেও যেতে হবে। জামিন করানোর মতো টাকা আমার নেই, তাই সময় থাকতেই শুধুরে যাও!” তারপরেও আমাকে বিশ্বাসে অটল থাকতে দেখে সে আমাকে ধমকালোঃ “আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন বিশ্বাস অনুশীলনের কথা স্বপ্নেও ভাববে না!” এ কথা শুনে আমার সংকল্পদুর্বল হয়ে গেল। ভাবলাম: “আমার স্বামীর এই আচরণের পরেও আমি নিজের বিশ্বাসে অটল রয়েছি তাহলে সে আমার সাথে এবার কী করবে?” তখনই, ঈশ্বর-বাক্যের একটি অনুচ্ছেদের কথা ভাবি: “নিজের ভেতরে তোমাকে আমার সাহসের অধিকারী হতে হবে, এবং যে আত্মীয়পরিজনেরা বিশ্বাসী নয় তাদের মুখোমুখি হওয়ার সময় তোমাকে নীতিসমূহ মেনে চলতে হবে। তবে যাইহোক, আমার জন্যই, অন্ধকারের কোনো শক্তির কাছে তোমার নতিস্বীকার করলে একেবারেই চলবে না। নিখুঁত পথে চলার জন্য আমার প্রজ্ঞার উপর নির্ভর করো; শয়তানের কোনো চক্রান্তকে নিয়ন্ত্রণ নিতে দিয়ো না। আমার সম্মুখে হৃদয় নিবেদনের জন্য তোমার সকল প্রচেষ্টা উজাড় করে দাও, এবং আমি তোমায় স্বাচ্ছন্দ্য দেব এবং তোমায় সুখ ও শান্তি এনে দেব” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সূচনাকালে খ্রীষ্টের বাক্য, অধ্যায় ১০)। ঈশ্বরের বাক্য আমাকে খুব অনুপ্রেরণা দেয়। ভাবলাম, কীভাবে আমার স্বামী সিসিপি-র দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে আমাকে বিশ্বাস ত্যাগ করতে বাধ্য করার জন্য হুমকি দিয়েছিল। বাইরে থেকে দেখে মনে হচ্ছিল আমার স্বামী আমার ঈশ্বর অনুসরণের পথে বাধা দিচ্ছিল, কিন্তু বাস্তবে, তার মাধ্যমে শয়তান আমাকে ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে বাধ্য করছিল যাতে আমি তাঁর পরিত্রাণ হারাই। আমি শয়তানের চক্রান্তে পড়ে তার সঙ্গে আপস করতে পারি না। আমার বিশ্বাস যে, ঈশ্বরের উপর নির্ভর ও তাঁর বাক্য অনুযায়ী কাজ করলে, তিনি আমাকে জুলুম থেকে বেরিয়ে আসার পথ দেখাবেন। আমার ঈশ্বরের বাক্যের বইটি লুকিয়ে রেখেছিলাম যখন সে বাইরে থাকত শুধু তখনই পড়তাম, সমাবেশে যেতাম বা সুসমাচার প্রচার করতাম। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে এসে আমার স্বামী যখন জানতে পারল যে আমি এখনও বিশ্বাস অনুশীলন এবং কর্তব্য পালন করছি, সে আমার ওপর ক্ষোভে ফেটে পড়ল। সে পুরো বাড়ি তন্ন তন্ন করে আমার ঈশ্বরবাক্যের বই ও স্তোত্র শোনার এম পি ফাইভ প্লেয়ার-টা খুঁজল। প্লেয়ারটাকে সে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলল। আমাকে আটকানোর জন্য নিজের মোটা মাইনের চাকরি থেকে কিছু দিনের ছুটি নিল যাতে সারাদিন বাড়িতে আমাকে নজরে রাখতে পারে। সমাবেশ যোগ দিতে না পেরে খুব কষ্ট পেলাম, কোনো সুযোগ পেলেইভ্রাতা ও ভগিনীদের সঙ্গে দেখা করতে বেরিয়ে পড়তাম। কিন্তু অবাক কান্ড! সে আমাদের নামে রিপোর্ট করতে পুলিশ ডেকে ফেলল। ভাগ্যক্রমে পুলিশ ঈশ্বরেরবাক্যের বই বা অন্য কোনো প্রমাণ খুঁজে পায়নি তাই তারা আমাদের গ্রেফতার করেনি। পরে সে যখন দেখল যে পাশের ভগিনীর বাড়িতেই আমরা সমাবেশ করি, সে সভার ছবি তুলে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করার হুমকি দিল। ফলে, সেখানে সমাবেশ বন্ধ হয়ে গেল। যখনই সে আমাকে ভ্রাতা-ভগিনীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেখত, আমাকে হয় গালিগালাজ নয় মারধোর করত। অসংখ্যবার সে আমাকে মেরেছে, এবং আমার একটা কানে ঝিন ঝিন শব্দ হতে শুরু করে। সেটা ঠিক হতে কয়েক মাস লেগেছিল।
ওই সময় আমি এই স্তবটি গুনগুন করে গাইতাম: “ঈশ্বর চরণে দেব আমার প্রেমাঞ্জলি, তাঁর মহিমা কীর্তনেই আমার সকল কর্মের সাধন’ ঈশ্বরের সাক্ষ্য দিতে আমি দৃঢ়সংকল্প, শয়তানের কাছে কখনই নতি স্বীকার করব না। প্রাণ গেলেও ঈশ্বরের লোক হিসাবে নিজের সম্মান বজায় রাখব। ঈশ্বরের উপদেশ অন্তরে রেখে শয়তানকে লজ্জা দেব। যন্ত্রণা ও দুঃখকষ্ট ঈশ্বরের পূর্বনির্ধারিত। মৃত্যু অবধি তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকব ও তাঁকে মান্য করব। আমি কখনো ঈশ্বরের চোখের জল বা চিন্তার কারণ হব না” (মেষশাবককে অনুসরণ করুন ও নতুন গীত গান, আমি ঈশ্বরের গৌরবের দিন দেখতে চাই)। আমি ভেবেছিলাম কীভাবে ঈশ্বরের অপরিমেয় ভালোবাসায় এক সৃষ্ট জীব হিসাবে, তাঁকে অনুসরণ ও তাঁর দ্বারা উদ্ধার পাওয়ার আমার সৌভাগ্য হয়েছে। মরে যাব কিন্তু শয়তানের কাছে নতি স্বীকার করে ঈশ্বরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করব না। স্বামীর কাছ থেকে যতই চাপ আসুক না কেন আমি ঈশ্বরকে অনুসরণ করব, দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে শয়তানকে অপমান করব। স্বামী আমাকে মারতেই থাকবে এই ভেবে পরে গির্জা কর্তৃপক্ষের খুব চিন্তা হল আমি সমাবেশে যোগ দিলে আমার কর্তব্য পালন করলে, এবং সে অন্যান্য ভ্রাতা ও ভগিনীদের নামে রিপোর্ট করে দেবে, তাই তারা আমার সমাবেশে যোগদান বন্ধ করে দিল এবং শুধু বাড়িতেই ঈশ্বর-বাক্য পাঠ করতে বলল।
পরবর্তী তিন বছরে, শুধুমাত্র আমার স্বামী বাইরে থাকলেই আমি গোপনে ঈশ্বরের বাক্য পড়তে পেরেছি, মাঝে মাঝে পাশের বাড়ির ভগিনীর সঙ্গে আলোচনা করতাম, চেনাশোনাদের মধ্যে সুসমাচার প্রচার করতাম। আমি ছিলাম খাঁচায় বন্দি একটা পাখির মত। অন্যান্য ভ্রাতা ও ভগিনীদের সাথে যে সময় কাটিয়েছিলাম সেগুলো মনে পড়ত, সত্য নিয়ে আলোচনা করতাম, ঈশ্বরের স্তুতি করে স্তব গাইতাম, দিনগুলো কত আনন্দের, কত চমৎকার ছিল! আমি আরও ভেবেছিলাম যে অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের কার্য অতি দুর্লভ ঘটনা, এবং এই সুযোগ মুহূর্তের মধ্যে চলে যাবে, আমি একে হাতছাড়া করতে চাইনা। আমি একটা স্বাভাবিক গির্জা-জীবন চেয়েছিলাম, যাতে সুসমাচার প্রচার এবং এবং অন্যদের সাথে ঈশ্বরের সাক্ষ্য দিতে পারি, কিন্তু এগুলো সবই বৃথা আশায় পরিণত হয়েছিল। আমার খুব বিষন্ন লাগত, কষ্ট হত। লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতাম। চিৎকার করে বলতে চেয়েছিলাম: “ঈশ্বরে বিশ্বাসই হল সঠিক পথ। আমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কেন আমি এটা করতে পারছি না?” তখন আমি ঈশ্বরবাক্যের একটি অনুচ্ছেদের কথা ভাবলাম। “হাজার হাজার বছর ধরে এটি কলুষিত স্থান হয়ে রয়েছে। এই স্থান অসহনীয়ভাবে দূষিত, প্রভূত দুর্দশাগ্রস্ত, প্রেতাত্মারা উন্মত্তের মতো সর্বত্র বিচরণ করে, ছলচাতুরী ও শঠতা করে, ভিত্তিহীন অভিযোগ করে, নির্মম ও দুশ্চরিত্র আচরণ করে, এই প্রেতাত্মার শহরকে পদদলিত করে আর মৃতদেহ দিয়ে তাকে ভরিয়ে দেয়; পচনের দুর্গন্ধ এই ভূমিকে ঢেকে রাখে আর বাতাসকে অধিগ্রহণ করে, আর এই ভূমি ভীষণভাবে সুরক্ষিত। আকাশের ওপারের জগৎকে কে দেখতে পায়? শয়তান মানুষের সমস্ত শরীরকে দৃঢ় বন্ধনে বেঁধে ফেলে, তার দুচোখ আবৃত করে রাখে, এবং তার দু-ঠোঁট বলিষ্ঠভাবে বন্ধ করে রাখে। শয়তানদের রাজা বহুবছর ধরে উন্মত্ত আচরণ করেছে, আজ পর্যন্ত তা-ই করে চলেছে, এখনও সে প্রেতাত্মাদের শহরে প্রতিনিয়ত নজর রাখে, যেন এটি শয়তানদের এক দুর্ভেদ্য প্রাসাদ; এদিকে, এই প্রহরীর দল জ্বলন্ত দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে, এই গভীর আতঙ্কে যে ঈশ্বর অজান্তেই তাদের ধরে ফেলবেন আর সবাইকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবেন, তাদের কোনো সুখের বা শান্তির জায়গা রাখবেন না। এমন এক প্রেতাত্মাদের শহরের লোকেরা কী করে ঈশ্বরকে কখনো দেখে থাকতে পারে? তারা কি কখনো ঈশ্বরের বন্ধুত্বপূর্ণতা ও মাধুর্য উপভোগ করেছে? মনুষ্যজগতের বিষয়ে তাদের উপলব্ধি কতটুকু? তাদের মধ্যে কে ঈশ্বরের সাগ্রহ ইচ্ছা উপলব্ধি করতে সক্ষম? তাহলে আশ্চর্যের কিছু নেই যে ঈশ্বরের অবতার সম্পূর্ণ প্রচ্ছন্ন থাকেন: এইরকম একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজে, যেখানে শয়তানেরা নির্দয় ও অমানবিক, সেখানে শয়তানদের রাজা, যে মানুষকে নির্দ্বিধায় হত্যা করে, সে কীভাবে এমন একজন ঈশ্বরের অস্তিত্ব সহ্য করবে যিনি প্রেমময়, দয়ালু, এবং সেইসাথে পবিত্র? সে কী করে ঈশ্বরের আগমনকে সাধুবাদ জানাবে ও উল্লসিত হবে? এইসব পদলেহনকারী দাস! তারা দয়ার প্রতিদান দেয় ঘৃণার মধ্যে দিয়ে, তারা বহু আগেই ঈশ্বরের সাথে শত্রুর মতো আচরণ করতে আরম্ভ করেছে, তারা ঈশ্বরের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, তারা চূড়ান্ত অসভ্য, ঈশ্বরের প্রতি তাদের ন্যূনতম সম্মান নেই, তারা হরণ ও লুণ্ঠন চালায়, তারা সমস্ত বিবেকবোধ হারিয়েছে, সমস্ত বিবেকবোধের বিপরীতে চলে, এবং সরলদের বোধশক্তিহীন হতে প্রলুব্ধ করে। প্রাচীন পূর্বপুরুষেরা? প্রিয় নেতৃবৃন্দ? তারা সকলে ঈশ্বরের বিরোধিতা করে! তাদের হস্তক্ষেপ স্বর্গের নিচের সমস্তকিছুকে এক অন্ধকার ও বিশৃঙ্খলাময় অবস্থায় নিয়ে এসেছে! ধর্মীয় স্বাধীনতা? নাগরিকদের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ? এগুলো সবই পাপকে ঢাকা দেওয়ার কৌশল!” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, কাজ এবং প্রবেশ (৮))। ঈশ্বরের বাক্য উদ্ঘাটনের মাধ্যমে, আমি সিসিপি দানবদের ঈশ্বর-প্রতিরোধের সত্যতা জেনেছি। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সিসিপি নাস্তিকতার প্রচার করে বলছে, “সমস্ত জিনিস প্রাকৃতিকভাবে বিকশিত হয়েছে,” “মানুষ বানর থেকে বিবর্তিত হয়েছে,” “কখনো কোনো পরিত্রাতা ছিলেন না” ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা এইসব অযৌক্তিক তত্ত্ব ব্যবহার করে মানুষকে ধোঁকা দেয়, যাতে মানুষ ঈশ্বরকে অস্বীকার ও তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তাঁর বিরোধিতা করে, যাতে ঈশ্বর তাদের ধ্বংস করে দেন। অন্তিম সময়ে, ঈশ্বর মানবজাতিকে উদ্ধার করতে এখন দেহ ধারণ করেছেন, সিসিপি উন্মত্তের মতো খ্রিষ্টকে খুঁজে বেড়াচ্ছে এবং খ্রীষ্টানদের যথেচ্ছভাবে গ্রেফতার ও নিপীড়ন করছে যাতে অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের কাজকে দমন করে চীনে নাস্তিক শাসন প্রতিষ্ঠা করা যায়। সিসিপি হল একটি দানবীয় বাহিনী যারা ঈশ্বরকে নিজেদের শত্রু বলে মনে করে। এরা হলো খুনি, ঈশ্বর-প্রতিরোধী শয়তানের অবতার। আমার স্বামী আমার বিশ্বাসে বাধা দিয়েছিল, কারণ, সিসিপির নাস্তিকতাবাদী দর্শন দ্বারা তার মগজ ধোলাই করে দিয়েছিল। সে ছিল অবিশ্বাসী, এবং তার ভয় ছিল যে যদি আমি সিসিপির হাতে গ্রেফতার হই, তাহলে সে ফেঁসে যাবে। তাই সে আমার ঈশ্বর বিশ্বাসের তীব্র বিরোধিতা করেছিল। আমার সমস্ত যন্ত্রণার জন্য দায়ী ছিল সিসিপি-র শয়তানরাজ। আমি মনপ্রাণ দিনে দিয়ে এই দানবকে ঘৃণা করি। ঈশ্বরে বিশ্বাস স্থাপনের পর থেকেই আমার স্বামী সিসিপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমার উপর অত্যাচার করেছে, আমাকে ঈশ্বরের বাক্য পাঠ, সমাবেশে যোগদান বা কর্তব্য পালন করতে দেয়নি, আমাকে অসংখ্যবার মেরেছে এমনকি আমার ও আমার ভ্রাতা ও ভগিনীদের নামে পুলিশে রিপোর্ট করেছে। যখন বুঝলাম যে আমার স্বামীর প্রকৃতি ও সারসত্য সত্য-বিদ্বেষী এবং ঈশ্বর-বিদ্বেষী, বাড়িতে বিশ্বাস অনুশীলন করলেই আমার উপর অত্যাচার হবে ভেবে, বহুবার বিবাহবিচ্ছেদের কথা ভেবেছি এবং বাড়ি ছেড়ে বিশ্বাস অনুশীলন এবং কর্তব্য পালন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ছেলের কথা ভেবে খুব চিন্তা হয়েছে। সে নেহাতই কিশোর—এ বয়সে মাকে ছেড়ে থাকা তার পক্ষে কঠিন হবে! বাড়িতে আমি তাকে বাইবেলের গল্প শোনাতে পারি, ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে আলোচনা করতে পারি, তাকে ঈশ্বরের সামনে নিয়ে আসতে পারি। আমি না থাকলে তাকে এই পথে কে দেখাবে? এসব কথা ভেবেই আমি দুর্বল হয়ে পড়ি, বিবাহবিচ্ছেদে আর মন সায় দেয় না, এবং বন্দি জীবনের যন্ত্রণা মুখ বুজে সহ্য করে যাই। যখন কষ্টে জর্জরিত হতাম, তখন প্রার্থনা করতাম এবং নীরবে ঈশ্বরের বাক্য পড়তাম। শুধু তখনই কিছুটা শান্তি পেতাম।
২০১১ সালের অক্টোবরে, কয়েকটি সমাবেশে যোগ দেবার জন্য গোপনে বেরিয়ে পড়ি। আমার স্বামী ভ্রাতা ও ভগিনীদের হুমকি দিয়েছিল যে আমাকে সমাবেশে আমন্ত্রণ করা হলে সে আর পরেরবার ভদ্র আচরণ করবে না। সে আমাকেও হুমকি দেয়: “এখানে থাকলে, ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখা যাবে না! তুমি বিশ্বাস রাখতে চাইলে এই বাড়ি ছাড়তে হবে!” তার এই কথা শুনে একদম ভেঙে পড়লাম। শুধু মাত্র ঈশ্বর বিশ্বাসের কারণে সে আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবে! আমাদের এত বছরের সম্পর্কের কোনো দাম নেই! সেই সময়, আমি ঈশ্বরের বাক্যের একটি অনুচ্ছেদের কথা ভাবলাম: “কেন একজন স্বামী তার স্ত্রীকে ভালোবাসে? কেন একজন স্ত্রী তার স্বামীকে ভালোবাসে? কেন সন্তানেরা তাদের পিতামাতার প্রতি কর্তব্যপরায়ণ হয়? কেন পিতামাতা তাদের সন্তানদের অন্ধভাবে ভালোবাসে? মানুষ আসলে কি ধরনের অভিপ্রায় পোষণ করে? তাদের অভিপ্রায় কি তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা এবং স্বার্থপর ইচ্ছাসমূহকে চরিতার্থ করা নয়?” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বর এবং মানুষ একসাথে বিশ্রামে প্রবেশ করবে)। ঈশ্বরের বাক্য মানুষের জীবনে খুবই প্রাসঙ্গিক। মানুষের ভেতর সত্যিকারের ভালোবাসা নেই। স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসাও পারস্পরিক স্বার্থনির্ভর। ঈশ্বরে আমার বিশ্বাসের আগে আমার স্বামীর ব্যবহার এমনটা ছিল না। কিন্তু তার যখন ভয় হল যে ঈশ্বরে বিশ্বাসের কারণে আমি গ্রেফতার হলে সেও ফেঁসে যাবে, তখন সে আমাদের এত বছরের বিবাহিত জীবনের কথা ভুলে গিয়ে, আমাকে মারধোর করল, এমনকি আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দিল। তার এই নিষ্ঠুরতা কি শুধু নিজের স্বার্থরক্ষার জন্য নয়? এটা বুঝতে পেরে, আমি মনে মনে ভাবলাম: “যেহেতু সে আমাকে তাড়িয়ে দিতে চায়, তাহলে আমিও নিজের বিশ্বাসের জন্য ওকে ছেড়ে স্বাধীন হয়ে কর্তব্য পালন করতে পারি”। পরে, যখন আমার ছেলে যখন তার মাসির কাছে পড়তে গিয়েছিল, তখন আমি ৫০ মাইল দূরের একটা গির্জার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হলাম। এবং শেষ পর্যন্ত আমি গির্জা জীবনের সাথে যুক্ত হয়ে কর্তব্য পালন করতে পারলাম। কিন্তু ওই সময়েও আমার ছেলের জন্য চিন্তা ছিল। অবসর বা ছুটির সময়ে স্কুল ছুটির পর বাচ্চাদের বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে দেখে, ভাবতাম আমার ছেলে বাড়ি ফিরে আমাকে না পেয়ে কতই না মন খারাপ করছে, আর তাকে দেখার জন্য বাড়ি ফিরে যেতে ইচ্ছে করতো। কিন্তু স্বামীর মারধর ও গালাগালির ভয়ে ফিরে যাওয়ার সাহস হত না। আমি শুধু চুপচাপ চোখের জল ফেলতাম।
এরপর, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের একদিন। রাস্তায় আমার দেওর আমার ওপর চড়াও হলো এবং আমাকে জোর করে বাড়ি নিয়ে এল। বাড়ি ফিরে আসার পর, আমার স্বামী পরিবারের সবাইকে ডাকল। সে তার ছোট এবং বড় সব ভাইদের, এবং আমার সৎ বাবা এবং আমার বোন, ভগ্নিপতিকে ডেকে পাঠাল আমাকে বোঝানোর জন্য। আমার দেওর হুমকি দিয়ে বলল যে: “তুমি আমার বৌদি না হলে, এক্ষুনি তোমাকে পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরোতে পাঠিয়ে দিতাম।” আমার সৎ বাবাও আমার উপর নির্যাতন চালানোর জন্য স্বামীকে আরো উসকে দিল। এই পরিস্থিতি দেখে, আমি খুবই উদ্বিগ্ন হলাম যে সবাই আমার ঈশ্বর বিশ্বাসের বিপক্ষে, আমার স্বামী এবার তো আরো বেশি অত্যাচার করবে, তাই আমি বুদ্ধি খাটিয়ে বললাম যে আমি বাড়িতে এসেছি শুধু নিজের জীবন যাপন করতে। এরপরেই আমার আত্মীয় স্বজনরা থামলেন। বাড়ি ফেরার তৃতীয় দিনের পর, পাশের বাড়ির ভগিনীর বাড়িতে গির্জার এক নেতাকে আসতে দেখলাম, আমি খুব উত্তেজনা নিয়ে তাঁকে সমাবেশের কথা জিজ্ঞেস করলাম, দেখি আমার স্বামী পিছু পিছু এসে চিৎকার করে আমাকে বাড়ি ফিরে যেতে বলছে। ভগিনীকে সমস্যায় ফেলতে চাইনি, তাই বাড়ি ফিরে আসি। গির্জার নেতা যখন ভগিনীর বাড়ি থেকে বের হলেন, আমার স্বামী একটা বেলচা নিয়ে তাঁকে হুমকি দিয়ে বলল: “পরের বার কিন্তু আপনাকে ছাড়ব না!” তারপর, সে রান্নাঘর থেকে একটা ছুরি নিয়ে আমার ভগিনীর ঘরে ঢুকে তাকে মারতে গেল, আমি আর ভগ্নিপতি মিলে মিলে তাকে আটকালাম। এরপর থেকে আমি আমার ভ্রাতা আর ভগিনীদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ বন্ধ করে দিলাম। তাদের ক্ষতি হতে পারে এই ভয়ে।
সেই সময়ে, আমি অনেক মানসিক যন্ত্রণা পেয়েছি প্রায়ই আমি লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতাম। একবার, আমার স্বামী বাইরে গেলে আমি লুকিয়ে এক ভগিনীর সঙ্গে দেখা করতে বেরোই, বাড়ি ফেরার সময় আমার স্বামী গাড়ি থেকে আমাকে দেখতে পেয়ে গেল। আমাকে দেখেই খেঁকিয়ে বলল: “এই গাড়ি চাপা দিয়ে তোমাকে মেরে ফেলব”। এ কথা শুনে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলে। সে আমাকে গাড়ি চাপা দিতে চায় কারণ আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম যে আমার স্বামী একজন ঈশ্বর—বিদ্বেষী দানব সে কখনোই তার অত্যাচার থামাবে না। আমি সেই বাড়িতে কখনই বিশ্বাসের অনুশীলন করতে পারব না। তাই আমাকে এই বাড়ি ছাড়তেই হবে। বাড়ি ছাড়ার কথা ভাবলেই ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায়। মাত্র ক’দিন হলো ছেলের কাছে এসেছি, আবার চলে গেলে ও আর সহ্য করতে পারবে না! আমি চলে গেলে কে ঈশ্বর বিশ্বাস ও সঠিক পথে চলার শিক্ষা দেবে? এটা ভেবে ছেলেকে ছেড়ে যেতে মন চাইছিল না। আমি নিরন্তর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে যাই: “হে ঈশ্বর! আমার স্বামী আমাকে অত্যাচার করেই যাচ্ছে, আমি এখান থেকে যেতে চাই, কিন্তু ছেলেকে ছেড়ে যেতে পারছি না। হে ঈশ্বর! আমি কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারছিনা, অনুগ্রহ করে আমাকে আলোকিত করুন ও পথনির্দেশ দিন”। এর পর, আমি ঈশ্বরের বাক্যের একটি প্রশস্তি পাঠ করলাম: “এই সামান্য ক্ষণের জন্য মানুষ কি তাদের দৈহিক ইচ্ছাকে একপাশে সরিয়ে রাখতে অক্ষম? কোন বস্তু মানুষ ও ঈশ্বরের মধ্যে ভালোবাসাকে বিদীর্ণ করতে পারে? মানুষ ও ঈশ্বরের মধ্যে প্রেমকে বিখণ্ডিত করার ক্ষমতা কার আছে? পিতামাতা, স্বামী, ভগিনী, স্ত্রী, নাকি বেদনাদায়ক পরিমার্জন—সে ক্ষমতা কার আছে? বিবেকবোধের অনুভূতিগুলি কি মানুষের অভ্যন্তর থেকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিকে মুছে ফেলতে পারে? মানুষের পারস্পরিক ঋণবদ্ধতা ও ক্রিয়াকলাপ কি তাদের নিজেদের নির্ধারিত কর্মফল? মানুষ কি এগুলির প্রতিকার করতে পারে? কে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম? মানুষ কি নিজেদের সংস্থান জোগাড় করে নিতে সক্ষম? জীবনে শক্তিমান কারা? আমায় পরিত্যাগ করে কে নিজে নিজে জীবনধারণে সক্ষম? কেন বারংবার ঈশ্বর সকল মানুষকে আত্ম-নিরীক্ষণের কাজ সম্পন্ন করতে বলেন? কেন ঈশ্বর বলেন, ‘কার-ই বা কষ্টভোগ তার স্বহস্তে আয়োজিত হয়েছে?’” (মেষশাবককে অনুসরণ করুন ও নতুন গীত গান, মানুষ কি এই স্বল্প সময়ের জন্য তাদের মাংস একপাশে রাখতে পারে না?)। ঈশ্বরের বাণীর একটি গভীর প্রভাব আমার ওপর পড়েছিল এবং নিজের বেশ অপরাধ বোধ হয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম, মানবজাতিকে উদ্ধার করতেই ঈশ্বর দেহধারণ করেছেন, এবং সত্য প্রকাশ করেছিলেন এবং অসীম সহনশীলতা নিয়ে মানুষের মধ্যে তিনি তাঁর কাজ সম্পাদন করেছিলেন। গভীর অপমান সহ্য করেছিলেন, এবং সেই মানবজাতির প্রতি তাঁর সমস্ত ভালোবাসা উৎসর্গ করেছিলেন, যারা তাঁর পরিত্রাণের লক্ষ্যবস্তু। মানুষকে উদ্ধারের জন্য যে কষ্ট ঈশ্বর সহ্য করেছেন, তাতেই বোঝা যায় তাঁর প্রেম কতটা বাস্তব। ঈশ্বর আশা করেন আমরাও তাঁর ইচ্ছার প্রতি মনোযোগী হব। সবকিছু ত্যাগ করে সুসমাচার প্রচার এবং তাঁর প্রতি সাক্ষ্য দান করব। আমাদের প্রতি এটাই ঈশ্বরের প্রেম। কিন্তু আমি ছিলাম স্বার্থপর, শুধু ভেবেছি যে আমি না থাকলে কে আমার ছেলের দেখাশোনা করবে। কিন্তু ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি মনোযোগ দিইনি। দুর্বল, অপদার্থ, বিবেকহীন এবং ঈশ্বরকে অনুসরণের জন্য, সবকিছু ত্যাগ করতে পারিনি বলে নিজের উপর ঘৃণা হয়েছিল। কারণ আমি আমার ছেলেকে ছেড়ে যেতে পারিনি। সেইজন্যই বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে স্বামীর হাতে মার খেয়ে আর খাঁচার ভেতরে ছটফট করে গেছি। একজন সৃষ্ট সত্তা হিসেবে ঈশ্বরের বাক্য পড়ার বা কর্তব্য পালনের কোনো সুযোগ ছিল না। সত্য অনুসরণ এবং ঈশ্বরকে ভালবাসার বিন্দুমাত্র সংকল্প ছিলনা আমার। ঈশ্বরের কাছে নৈবেদ্য হিসাবে আব্রাহাম তার একমাত্র পুত্রকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিলেন, তাহলে সৃষ্ট সত্তা হিসাবে নিজের কর্তব্য পালন ও সত্য অনুসরণ, আর ঈশ্বরের উদ্ধার পাওয়ার জন্য, ছেলের সঙ্গে বিচ্ছেদ কেন মেনে নিতে পারলাম না? ছেলের কারণে আমি আর নিজের কর্তব্যকে উপেক্ষা করতে পারি না। আমি জানতাম যে ঈশ্বরের পরিত্রাণ সমাপ্ত হতে চলেছে এবং শীঘ্রই বড় বড় বিপর্যয় নেমে আসবে। আমি বাড়িতে ঈশ্বর-বাক্য পাঠ করতে পারি না, কোনো সমাবেশে যেতে পারি না; এভাবে চলতে থাকলে আমি সত্য অর্জন করে কোনো ভালো কাজ প্রস্তুত করতে পারবো না। আসন্ন কোনো বিপর্যয়ে আমি নিজেই ধ্বংস হয়ে যাব। তাহলে আমার ছেলেকে কীভাবে সঠিক পথে আনব? আমার ছেলের ভাগ্যও কি ঈশ্বরের হাতে ন্যস্ত নয়? তার কতটা কষ্ট হবে বা সে সঠিক পথে আসবে কিনা সেটাতে আমার হাতে নেই। এটা বুঝতে পেরে, আমার দুশ্চিন্তা কিছুটা কমে গেল।
এর পরে, আমি ঈশ্বরের আরও কিছু বাক্য পড়লাম, এবং সত্য জানার পর ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর হলো। আমি এই অনুচ্ছেদটি পড়লাম। “জন্ম এবং সন্তান লালন-পালন ব্যতীত, সন্তানদের জীবনে পিতামাতার দায়িত্ব কেবল তাদের বেড়ে ওঠার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক পরিবেশ প্রদান করা, কারণ স্রষ্টার পূর্বনির্ধারণ ছাড়া আর কোনো কিছুই কোনো ব্যক্তির ভাগ্যের উপর প্রভাব ফেলে না। কোনো ব্যক্তির ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা কেউই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না; বহু পূর্বেই এটি নির্ধারিত, এমন কি কারো পিতা-মাতাও তার ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে না। ভাগ্যের বিষয়ে, প্রত্যেকে স্বাধীন, এবং প্রত্যেকের নিজস্ব ভাগ্য আছে। তাই, কারোর পিতামাতাই তার ভাগ্য খণ্ডাতে পারে না বা জীবনে সে যে ভূমিকা পালন করে তার উপর সামান্যতম প্রভাবও ফেলতে পারে না। একথা বলা যেতে পারে, যে পূর্বনির্ধারণ অনুসারেই কোনো এক নির্দিষ্ট পরিবারে কেউ জন্ম নেয় এবং নির্দিষ্ট এক পরিবেশে সে বেড়ে ওঠে, জীবনের লক্ষ্য পূরণের পূর্বশর্ত ব্যতীত তা আর কিছুই নয়। তারা কোনভাবেই কোনো ব্যক্তির ভাগ্য, বা কোন ধরনের ভাগ্যের মধ্যে সে তার অভীষ্ট পূরণ করবে, তা নির্ধারণ করে না। এবং তাই, কারোর পিতামাতাই তার জীবনের লক্ষ্যপুরণে সহায়তা করতে পারে না, এবং একইভাবে, কোনো আত্মীয়স্বজনও কাউকে তার জীবনে পালনীয় ভূমিকা গ্রহণ করতে সহায়তা করতে পারে না। কীভাবে কোনো মানুষ তার অভীষ্ট সিদ্ধ করবে এবং কী রকম পরিবেশে সে তার ভূমিকা পালন করবে তা সম্পূর্ণরূপে তার ভাগ্য দ্বারা নির্ধারিত হয়। অন্য কথায় বলা যায়, অপর কোনো বস্তুগত অবস্থা কোনো মানুষের অভীষ্টকে প্রভাবিত করতে পারে না, যা স্রষ্টার দ্বারা পূর্বনির্ধারিত। সব মানুষ যে বিশেষ পরিবেশে বেড়ে ওঠে সেখানেই পরিণত হয়; তারপর ধীরে ধীরে, ধাপে ধাপে, তারা তাদের জীবনের নিজস্ব পথ তৈরি করে এবং স্রষ্টার দ্বারা তাদের জন্য পরিকল্পিত নিয়তি পূরণ করে। স্বভাবতই, অনিচ্ছাকৃতভাবে, তারা মানবতার বিশাল সমুদ্রে প্রবেশ করে এবং জীবনে তাদের নিজস্ব স্থান গ্রহণ করে, যেখানে তারা সৃষ্ট প্রাণী হিসাবে সৃষ্টিকর্তার পূর্বনির্ধারিত এবং তাঁর সার্বভৌমত্বের নির্দেশিত দায়িত্ব পালন করতে শুরু করে” (বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৩)। ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করে উপলব্ধি করলাম যে সন্তানদের ভাগ্য তাদের বাবা মাদের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং তা ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব দ্বারা নির্ধারিত। আমার সন্তানের ভাগ্য ঈশ্বরের হাতে ন্যস্ত। আমার সন্তান কোন পথে যাবে তার উপর আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই—এ সব কিছুই ঈশ্বরের নির্দেশনা ও ব্যবস্থাপনার অধীন। জোসেফের কথা মনে পড়ে গেল: তাঁকে শিশু বয়সে দাস হিসেবে মিশরে বিক্রি করা হয়েছিল এবং পিতা-মাতার ভালোবাসা, যত্ন তিনি পাননি। কিন্তু যিহোবা ঈশ্বর তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ফারাও-এর সেনাপতির স্ত্রীর শত প্রলোভন সত্ত্বেও তিনি ছলনায় ভোলেননি। এছাড়াও মিশরে জোসেফ অনেক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু এসব তাঁর সংকল্পকে আরও দৃঢ় করেছিল এবং তাঁকে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করতে শিখিয়েছিল। যেসব ভ্রাতা-ভগিনীরা কর্তব্যপালনের জন্য বাড়ি ছেড়ে যায়নি-নিজেদের সন্তানদের সঠিক পথে চলার উৎসাহ দিয়েছে, সেই ছেলেমেয়েদের কেউ কেউ বিশ্বাসের অনুশীলন করে সঠিক পথে ঈশ্বরের অনুসরণ করে, আবার কেউ কেউ জাগতিক মন্দ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়ে অধঃপাতে যায়। আমি দেখেছি যে একটি শিশু সঠিক পথে চলবে কিনা তা তার বাবা-মায়ের সাথে থাকার ওপর নির্ভর করেনা। বরং এটা তাদের প্রকৃতি এবং ঈশ্বর তাদের জন্য যা পূর্বনির্ধারণ করেছেন তার উপর নির্ভর করে। আমার ছেলের যদি মনুষ্যত্ব থাকে এবং ঈশ্বরের পরিত্রাণের বস্তু হয়ে থাকে, তাহলে আমি তার পাশে না থাকলেও সে সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে এবং ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে উঠবে। এ সব কিছুই ঈশ্বরের হাতে—এটা নিয়ে আমার উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। ঈশ্বর বিশ্বাসের বছরগুলিতে আমি ঈশ্বর বাক্যের সিঞ্চন ও রসদ লাভ করেছি, কিন্তু ছেলের প্রতি টানের কারণে একজন সৃষ্ট সত্তা হিসেবে নিজের কর্তব্য পালন করতে পারিনি। কতটা স্বার্থপর! সাক্ষ্য দিয়ে, সুসমাচার প্রচার করে, লোকেদের ঈশ্বরের গৃহে এনে, আমাকে ঈশ্বরের প্রেমের প্রতিদান দিতে হত। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে, আমি পরিবার ছেড়ে দূরের এক শহরের গির্জায় চলে গেলাম।
ট্রেনটি যখন আমার ছেলের স্কুলের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল, যে ভবনে ছেলের ক্লাশ হয় তার দিয়ে তাকিয়ে রইলাম এবং মনে মনে ভাবলাম: “কে জানে তার সাথে আমার আবার কবে দেখা হবে।” আমি চোখের জল আটকে রাখতে পারলাম না। স্বৈরাচারী শাসনের প্রতি আরও বেশি ঘৃণা হল আমার। এটা আমাকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে এবং আমাকে অবাধে বিশ্বাস অনুশীলন এবং আমার কর্তব্য পালনে বাধা দিয়ে দিয়েছে। আগামী দিনে খ্রিস্টের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা হলে যে আনন্দ ও মুক্তি আসবে তার স্বাদ পেতে ব্যাকুল হয়ে উঠলাম, এবং এটি সত্যকে অনুসরণ ও আলোর অন্বেষণে আমাকে প্রেরণা দিয়েছিল। আমি মনে মনে ঈশ্বরের বাক্যে একটি স্তোস্ত্র গাইলাম: “তুমি হলে এক সৃষ্ট সত্তা—তোমার অবশ্যই ঈশ্বরের উপাসনাএবং একটি অর্থপূর্ণ জীবনের অন্বেষণ করা উচিত। যেহেতু তুমি একজন মানুষ, তাই তোমার উচিত ঈশ্বরের জন্য নিজেকে ব্যয় করা এবং সমস্ত দুঃখকষ্ট সহ্য করা! আজ তুমি যে সামান্য কষ্টের শিকার হয়েছ তা তোমার সানন্দে এবং নিশ্চিতভাবে গ্রহণ করা এবং ইয়োব ও পিতরের মতো একটি অর্থপূর্ণ জীবনযাপন করা উচিত। তোমরা হলে এমন মানুষ যারা সঠিক পথ অনুসরণ করে, যারা উন্নতি করতে চায়। তোমরা হলে এমন মানুষ যারা অতিকায় লাল ড্রাগনের দেশে উত্থিত হয়েছ, যাদেরকে ঈশ্বর ধার্মিক হিসাবে অভিহিত করেন। এ-ই কি সর্বাধিক অর্থবহ জীবন নয়?” (মেষশাবককে অনুসরণ করুন ও নতুন গীত গান, সবচেয়ে অর্থপূর্ণ জীবন)। ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে চিন্তা করে, আমি বুঝতে পেরেছি যে—আমি তাঁকে অনুসরণ করব এটা ঈশ্বর আগে থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছিলেন, আর এই পথেই ঈশ্বর আমাকে পথনির্দেশ দিয়েছেন। একজন সৃষ্ট সত্তা হিসেবে, আমি ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনায় নিজেকে সমর্পণ করতে, তাঁকে তৃপ্ত করতে এবং শয়তানকে অপমান করার জন্য কর্তব্য পালনে প্রস্তুত ছিলাম। এটি উপলব্ধি করে, অনেক শান্তি আর স্বস্তি পেয়েছিলাম। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, তিনিই স্বামীর কয়েদখানা থেকে আমাকে মুক্ত করে, একজন সৃষ্ট সত্তা হিসেবে আমাকে কর্তব্য পালন করতে দিয়েছেন।
তারপরে, আমি বাড়ি থেকে দূরে একটি গির্জায় আমার কর্তব্য পালন করতে থাকি। এই বছরগুলিতে, আমি ঈশ্বরের বাক্য এবং কাজ অনুভব করেছি, কিছু সত্য বুঝতে পেরেছি, এবং মনে হয় আমি বেশ কিছুটা অর্জন করতে পেরেছি। নির্দেশনার জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।