আমার বন্দিদশার দিনগুলি
২০০৬ সালের জুলাই মাসে, আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ গ্রহণ করেছিলাম। আমার স্বামীর সমর্থন ছিল, আর যেসব ভ্রাতা ও ভগিনী আমাদের বাড়িতে আসত তাদের সে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাত। কিন্তু পরে যখন সে শুনল যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাসীরা গ্রেফতারের মুখোমুখি হতে পারে, তখন সে আমার এক আত্মীয়কে এই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল, সে প্রসিকিউটরের অফিসে কাজ করত, এরপর বাড়িতে এসে আমাকে বলল, “তোমার আত্মীয় বলল যে সরকার ধর্মের উপর কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে, বিশেষ করে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের উপর। তাছাড়া, বাড়িতে একজন ধর্মবিশ্বাসী থাকলে তাদের পুরো পরিবার জড়িয়ে পড়বে। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে আর অনুসরণ করবে না—কেবল থ্রী-সেল্ফ গির্জায় যাবে।” আমার স্বামী বিশ্বাসের বিষয়টা বুঝতে পারছে না দেখে, আমি তাকে বললাম, “থ্রী-সেল্ফ গির্জা প্রতিষ্ঠা করেছিল কমিউনিস্ট পার্টি। তারা প্রথমে দেশপ্রেম, তারপর ঈশ্বরকে রেখেছিল। তারা পার্টিকে ঈশ্বরের চেয়েও বড় বলে মনে করে, আর সেটাকে ধর্মবিশ্বাস বলা যায় না। আমি থ্রী-সেল্ফে যাচ্ছি না।” সে অসহায়ভাবে বলল, “আমি জানি, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করা ভালো, তবে পরিস্থিতিটাও তো পরিষ্কার করে দেখতে হবে। এটা এখন কমিউনিস্ট পার্টির জগত, তাই তোমার বিশ্বাস অটুট রাখলে আমাদের চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে না। তুমি কি হাসপাতালের চাকরিটা ছেড়ে দিতে চাও? এছাড়াও আমাদের একটা বন্ধক আছে, আর আমাদের মেয়েকে বড় করার জন্যও টাকা দরকার। টাকা ছাড়া আমাদের চলবে কীভাবে? যদি তোমাকে কারাবাসের সাজা দেওয়া হয়, তবে লোকেরা আমাকে হেয় করবে আর আমাদের মেয়েকে তার সহপাঠীরা উপহাস করবে। আমাদের কথাটাও ভেবে দেখো! তোমার ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে দাও।” আমি জানতাম যে অবিশ্বাসী হিসেবে আমার স্বামীর চিন্তা হতই, তাই আমি তাকে বললাম, “কমিউনিস্ট পার্টি নাস্তিক আর সবসময় ধর্মবিশ্বাসীদের নির্যাতন করে আসছে। সেই অত্যাচারের জন্য ঈশ্বরের প্রতি আমার বিশ্বাস ছেড়ে দেব না। তুমি কি জানো না কাপুরুষরা স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারে না? এখন যতদিন যাচ্ছে ততই আরো বড় বিপত্তি হচ্ছে, ত্রাতা সর্বশক্তিমান ঈশ্বর সত্য প্রকাশ করেছেন আর অন্তিম সময়ের বিচারকার্য করছেন। এটা মানবজাতিকে একেবারে পরিশুদ্ধ করে বাঁচানোর জন্য, যাতে আমরা বিপত্তি কাটিয়ে উঠতে পারি আর ঈশ্বরের স্বর্গরাজ্যে যেতে পারি। এমন সুযোগ তো জীবনে একবারই আসে! বিশ্বাস থাকা মানে সাময়িক কষ্ট আর বিপদের সম্মুখীন হওয়া, কিন্তু আমরা সত্য লাভ করতে পারি আর একেবারে পরিত্রাণ পেতে পারি। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।” সে বলল, “ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা তো অনেক দূরের কথা। সবচেয়ে বাস্তবিক কথা হল ভালো জীবনযাপন করা। ভবিষ্যতে কী হতে পারে তা নিয়ে চিন্তা করি না, ঐ নিয়ে ভাবিও না।” এরপরেও সমাবেশে থাকতাম আর নিজের দায়িত্ব পালন করতাম তা দেখে সে আমার সাথে অনেকবার ঝগড়া শুরু করে দিত, আর বলত, “সবসময় ভয়ে ভয়ে বেঁচে থাকার কোনো মানে নেই। তোমার ধর্ম পালন করতে থাকলে আমাদের পরিবার ভেঙে যাবে।” আমি ভাবছিলাম যে যদি আমার ধর্মবিশ্বাস পালন করতে থাকি, তাহলে হয়তো আমাদের সংসার ভেঙে যাবে। আমার মেয়ের বয়স তখন মাত্র নয় বছর, আর সম্পূর্ণ পরিবার পাশে না থাকলে ওর কত কষ্ট হবে! সেই সময় সত্যিই আমার পরিবারকে হারাতে চাইনি, কিন্তু আমার স্বামী বারবার আমার ধর্মবিশ্বাসের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালে আমার দায়িত্ব পালন করব কীভাবে? আমার মেয়ে, আমার পরিবার আর ঈশ্বর—আমি কাউকেই ছাড়তে তৈরি ছিলাম না। ঠিক যখন আমার মনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল, তখন আমার প্রভু যীশুর একটা বাক্য মনে পড়ল: “যে তার পিতা বা মাতাকে আমার চেয়ে বেশী ভালোবাসে সে আমার শিষ্য হওয়ার যোগ্য নয়: যে নিজের পুত্রকন্যাকে আমার চেয়ে বেশী ভালবাসে সেও আমার যোগ্য নয়। যে নিজের ক্রুশ বহন করে না, এবং আমায় অনুসরণ করে না, সে আমার যোগ্য নয়” (মথি ১০:৩৭-৩৮)। আমি তো যুগ যুগ ধরে সেই সমস্ত সাধুদের কথা ভেবেছিলাম যারা সুসমাচার প্রচারের জন্য আর ঈশ্বরের দায়িত্ব পালন করার জন্য সমস্ত কিছু ত্যাগ করেছিল। যেহেতু আমি সত্য থেকে এত লাভবান হয়েছি, তাই আমাকে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে বিবেচনা করতেই হত। আমি শুধু নিজের পরিবারকে ধরে রাখার জন্য আমার বিশ্বাস আর কর্তব্য ত্যাগ করতে পারি না। শয়তানের দল থেকে আমাদের পুরোপুরি রক্ষা করতে ঈশ্বর এই জগতে অবতীর্ণ হয়েছেন, অতিকায় লাল ড্রাগনের অনেক অপচেষ্টা, গুজব আর নিন্দা সহ্য করছেন, সেইসাথে ধর্মীয় বিশ্বের প্রত্যাখ্যান আর অপবাদ সহ্য করছেন, আর চুপিসারে সত্য প্রকাশ করছেন যাতে আমাদের জীবন সার্থক হয়। মানবজাতিকে ঈশ্বর এতটাই ভালবাসেন! আমি ঈশ্বরের কাছ থেকে অনেক কিছু উপভোগ করেছি, এতদিন আমার পরিবার আর মেয়েকে প্রাধান্য দেওয়ার সময়, কীভাবে ঈশ্বরের ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়া যায় তা নিয়ে ভাবিনি। আমার বিবেক কি মরে গিয়েছিল? এই কথা ভেবে ভগবানের কাছে খুব ঋণী বোধ করলাম আর স্থির করলাম আমার স্বামী যতই আমার পথে দাঁড়াক না কেন, আমি ঈশ্বরকে অনুসরণ করে যাব আর ঈশ্বরের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সুসমাচার প্রচার করব।
এরপরে, গির্জার উপর সি সি পি-এর অত্যাচার আরও জোরালো হল, আর আমার স্বামীর বিরোধিতাও তীব্র হল। ২০০৭ সালের শেষের দিকে, অলিম্পিকের জন্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখার আড়ালে সি সি পি ধর্মের উপর কঠোর আঘাত করল আর গির্জাকে দমন করতে লাগল। বেশ কয়েকজন ভ্রাতা ও ভগিনীকে গ্রেপ্তার করা হল। সেপ্টেম্বরে, একবার সকালে যখন আমি সুসমাচার প্রচার করতে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখন স্বামী আমার পথ আটকে দাঁড়ালেন, আমাকে যেতে দিচ্ছিলেন না, আমার বড় ভাইকে ডেকে বলল, “কিছুদিন আগে তোমার আত্মীয় বলল যে কমিউনিস্ট পার্টি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের গণগ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে চারদিকে সজাগ থাকছে। গ্রেপ্তার হলেই তাদের সাজা হয়। তোমার বিশ্বাস ছাড়তেই হবে।” আর আমার ভাইও আমাকে অনেক করে বলল, “জানি যে ধর্মবিশ্বাস রাখা ভাল, কিন্তু পার্টি এটা অনুমোদন করে না। জলে থেকে কুমীরের সাথে লড়াই করা যায় না, তাই তোমার একান্ত প্রয়োজন হলে, শুধু বাড়িতেই ধর্মবিশ্বাস পালন করবে। সুসমাচার প্রচারের জন্য বাইরে যাওয়া বন্ধ করো। তুমি গ্রেপ্তার হলে কী হবে?” আমি ওকে বললাম, “জানি তোমরা আমার ভাল চাও, কিন্তু ধর্মবিশ্বাস রাখা আর সুসমাচার প্রচার করাই সঠিক কাজ, যাতে আরও বেশি লোক ঈশ্বরের মাধ্যমে রক্ষা পায়। এটাই সম্ভাব্য সর্বশ্রেষ্ঠ ভাল কাজ। যদি নিজেকে রক্ষা করার জন্য সুসমাচার প্রচার করা বন্ধ করে দিই, সেটা কি অত্যন্ত স্বার্থপর হবে না?” আশ্চর্যের বিষয়, আমার মুখ থেকে এই কথাগুলো বের হওয়ামাত্র আমার স্বামী আমার সামনেই হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। সে বলল, “দোহাই তোমার। আমাদের সংসারের কথা, আমাদের সন্তানের কথা ভেবে তোমার ধর্ম ছেড়ে দাও। তোমার ধর্মবিশ্বাসে অবিচল থাকলে, আমাদের মেয়ে কখনও কলেজে ভর্তি হতে পারবে না বা কোনও ভালো চাকরি পাবে না। ওর ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে! ও আমাদের একমাত্র সন্তান—ওর কথা ভাবতেই হবে! তোমাকে গ্রেপ্তার করা হলে লোকজন আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলবে। এভাবে বাঁচব কী করে?” আমার স্বামীকে এইরকম করতে দেখে সত্যিই বুঝতে পারছিলাম না কী করব। সবসময় নিজেকে নিয়ে ওর একটা গর্ব ছিল, কিন্তু তখন ও হাঁটু গেড়ে আমার ভাইয়ের সামনে আমাকে মিনতি করছিল। ওকে এভাবে দেখে, আমি ভেবেছিলাম যে আমার ধর্মবিশ্বাস রাখার জেদ করলে সেটা তাকে আরও বেশি আঘাত দেবে। আর আমার ধর্মবিশ্বাসের কারণে যদি পার্টি আমার মেয়ের কলেজে পড়ার অধিকার বাতিল করে, আর ও কোনও ভালো চাকরি পেতে না পারে, তাহলে কী হবে? এমনকি আমার বড় ভাইও আমার ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে ছিল, তাই যদি আমার পরিবার জানতে পারত যে আমার স্বামীর আর আমার মধ্যে ধর্মবিশ্বাসের কারণে মতভেদ রয়েছে, তাহলে তারা সম্ভবত আমার পথ আটকাত। সেক্ষেত্রে আমার পক্ষে ঈশ্বরকে অনুসরণ করা আর কঠিন হত। কিন্তু যদি আমার স্বামীর কাছে নতি স্বীকার করে তাকে বলি যে আমার ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে দেব, তাহলে সেটা ঈশ্বরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা হবে। ভাবতে ভাবতে আরো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লাম, তাই আমি নীরবে একটা প্রার্থনা করলাম, ঈশ্বরকে আমার মতিগতির উপর নজর রাখতে বললাম। ঠিক তখনই, ঈশ্বরের বাণীর একটা অনুচ্ছেদ মনে এল: “ঈশ্বর মানুষের মধ্যে যে কাজ করেন, তার প্রতিটি ধাপে, বাহ্যিকভাবে মনে হয় তা হল মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ যেন তা মানুষের ব্যবস্থাপনা এবং মানুষের হস্তক্ষেপেই সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু অন্তরালে, কাজের প্রতিটি ধাপে, এবং যা কিছু ঘটছে সেই প্রতিটি ঘটনাই ঈশ্বরের প্রতি শয়তানের বাজি এবং এ জন্য প্রয়োজন ঈশ্বরের প্রতি নিজ সাক্ষ্যে মানুষের অটল থাকা” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরকে ভালোবাসাই প্রকৃত ঈশ্বর-বিশ্বাস)। বাইরে থেকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন আমার পরিবার আমারই বিপক্ষে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু আসলে শয়তান আমাকে পরীক্ষা করছিল। ধর্মবিশ্বাস রেখে আর নিজের দায়িত্ব পালন করে, আমি সঠিক পথেই যাচ্ছিলাম। শয়তান আমার পথ আটকাতে আর ঈশ্বরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করানোর জন্য আমার পরিবারকে ব্যবহার করছিল। আমার এই ফাঁদে পড়লে চলবে না, আমাকে নিজে থেকে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়িয়ে এই কৌশল বানচাল করতে হবে। এই ভেবে, আমি তাদের আন্তরিকভাবে বললাম, “ঈশ্বরই সবকিছু চালান। তিনি আমাদের কাজের, আমাদের ভবিষ্যতের ব্যবস্থা করেন, আর কমিউনিস্ট পার্টির কথাই চূড়ান্ত নয়। দেশ আর রাজনৈতিক দলের ভাঙাগড়া ঈশ্বরের হাতে, একজন তো কোন ছাড়। তোমরা জানো যে আমি বিশ্বাসী হওয়ার আগে খুব অসুস্থ ছিলাম, আর ঈশ্বরের করুণা না পেলে আমি অনেক আগেই মারা যেতাম। ঈশ্বর আমাকে এই জীবন দিয়েছেন আর আমি তাঁর থেকে অনেককিছু উপভোগ করেছি। ধর্মবিশ্বাস না রাখা বা দায়িত্ব পালন না করা বিবেকহীনতার পরিচয় হবে। তখনও কি নিজেকে মানুষ বলতে পারব? আর কি আমার জীবনের কোনো মানে থাকবে?” আমার ভাই ভ্রু কুঁচকে অসহায়ভাবে বলল, “এটা ঠিক যে ধর্মবিশ্বাসী হওয়ার পর তুমি ভাল হয়ে গিয়েছিলে, কিন্তু আমরা এখন কমিউনিস্ট পার্টির শাসনে বাস করছি, আর তারা ধর্মবিশ্বাসীদের গ্রেপ্তার করে। সুসমাচার প্রচার করা কি তবে নিজেকে বিপদের পথে ঠেলে দেওয়া নয়?” আমার স্বামী সম্মতি জানিয়ে পাশে চলে গেল। কিন্তু তারা যাই বলুক না কেন, আমি নিজের ধর্মবিশ্বাস বজায় রাখার উপর জোর দিয়েছিলাম। আমি নড়ব না দেখে, তারা আমার পথ আটকাতে আরও অশুভ চেষ্টা করেছিল। প্রায় এক মাস পর, একদিন, যে মুহূর্তে আমি একটা সমাবেশ থেকে বাড়ি ফিরলাম, সেই মুহূর্তেই স্বামী আমার কাছে এসে আমায় দু’বার চড় মারল, আর রেগে গিয়ে বলল, “পার্টি ধর্মবিশ্বাসীদের গ্রেপ্তার করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে, কিন্তু তুমি এখনও তোমার ধর্মবিশ্বাসে ভর করে সমাবেশে যাচ্ছ! আমি এত বছর তোমাকে সম্মান করেছি, কখনো তোমার উপর হাত তুলিনি। তোমার ভাই আর তার স্ত্রী বলে আমি তোমাকে মাথায় তুলেছি, আমার তোমাকে মাটিতে নামিয়ে আনা উচিত, নিশ্চিত করা উচিত যে তোমার ধর্মবিশ্বাস যেন শিকেয় ওঠে।” আমি তার এই রূপ দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম আর অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমার চোখে চোখ রাখার সাহস না করে সে মাথা নিচু করে বলল, “আমি সত্যিই তোমায় মারতে চাই না। আমি চাই না যে তোমার ধর্মবিশ্বাসের জন্য তোমাকে জেলে পাঠানো হোক, এটা তোমার নিজের ভালোর জন্যই।” তার এই ব্যাখ্যা শুনে সত্যিই মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমার স্বামী সবসময় আমার প্রতি সত্যিই ভালো ছিল, কিন্তু সে নির্যাতিত হওয়ার ভয়ে কমিউনিস্ট পার্টির হাতিয়ার হয়ে উঠল। যাতে আমি ঈশ্বরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করি তার জন্য সে সব রকম চেষ্টা করছিল। সেটা আমার নিজের ভালোর জন্য কীভাবে? আমি নিজের ধর্মবিশ্বাস বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দেখার পর সে কাজে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিল। সব জায়গায় আমাকে অনুসরণ করত, আর আমাকে ঈশ্বরের বাক্য পড়তে, সমাবেশে যোগ দিতে বা আমার দায়িত্ব পালন করতে দিত না। তখন গির্জায় অনেক কাজ করার ছিল, কিন্তু সে আমাকে বাড়িতে আটকে রেখেছিলেন বলে আমার দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। ওনাকে বললাম সে যেন আমাকে আমার ধর্মবিশ্বাস থেকে দূরে না রাখে। বললাম, “আগে যখন র ধর্মবিশ্বাসকে সমর্থন করেছিলে, তখন ঈশ্বরের অনেক আশীর্বাদ পেয়েছিলাম, দেখনি? তুমি অল্পের জন্য বেশ কয়েকটা গাড়ি দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গিয়েছিলে, ঈশ্বর তখন তোমাকে থেকে রক্ষা করেছিলেন। ঈশ্বরের আমাদেরকে এত অনুগ্রহ আর আশীর্বাদ দেওয়ার পরেও তাঁর বিরোধিতা করতে পারছ কীভাবে?” উত্তরে সে বলল, “তোমার ধর্মবিশ্বাস আগে কাজে এসেছিল, কিন্তু পরিস্থিতি বদলেছে। যতদিন তুমি ধর্মবিশ্বাসী থাকবে ততদিন পার্টি তোমায় ছাড়বে না আর আমাদের পরিবারকেও ভুগতে হবে। আমাদের কোনও রকমে বাঁচতে হবে।” এসবে জড়াতে না চেয়ে, এরপর সে বলল আমাদের ডিভোর্স নেওয়া উচিত। সময়টা আমার সত্যিই ভালো যাচ্ছিল না, কিন্তু আমি যে কোনো কিছুর চেয়ে অতিকায় লাল ড্রাগনকে ঘৃণা করতাম। সে আমার উপর অত্যাচার করত, আমার উপর হাত তুলত, তারপর সে ডিভোর্স চাইল। সবই কমিউনিস্ট পার্টির অত্যাচারের ফল। আমার ঈশ্বরের বাক্যর এই অনুচ্ছেদ মনে পড়ল: “এখনই সেই সময়: মানুষ দীর্ঘকাল ধরে তার সমস্ত শক্তি সংগ্রহ করেছে, তার সকল প্রচেষ্টা নিবেদন করেছে এবং প্রতিটি মূল্য প্রদান করেছে এরই জন্য, যাতে এই দুষ্টের বীভৎস মুখাবয়ব ছিঁড়ে ফেলতে পারে, এবং যারা এতকাল অন্ধ হয়ে রয়েছে ও সকল প্রকারের কষ্ট ও দুর্দশা সহ্য করেছে, তারা যাতে তাদের যন্ত্রণা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারে এবং এই দুষ্ট আদিম শয়তানের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হয়। ঈশ্বরের কাজে এমন এক দুর্ভেদ্য প্রতিবন্ধকতা প্রস্তুত করা কেন? ঈশ্বরের লোকজনকে প্রতারিত করার জন্য এতরকম কৌশলের নিয়োগ করা কেন? প্রকৃত স্বাধীনতা এবং বৈধ অধিকার ও স্বার্থ কোথায়? ন্যায়পরায়ণতা কোথায়? স্বাচ্ছন্দ্য কোথায়? উষ্ণতা কোথায়? ঈশ্বরের জনগণের সাথে চাতুরী করার জন্য প্রতারণাপূর্ণ চক্রান্তের ব্যবহার করা কেন?” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, কাজ এবং প্রবেশ (৮))। এই পার্টি ঈশ্বরবিরোধী, ঈশ্বরবিদ্বেষী রাক্ষস। তারা ঈশ্বরের কাজকে বাধা দিতে আর মুছে ফেলতে ধর্মবিশ্বাসীদের গ্রেপ্তার করে আর সাজা দেয়। তারা ঈশ্বরের কাজের ব্যাপারে অপবাদ দিতে আর মানুষকে বোকা বানানোর জন্য সব রকমের গুজব তৈরি করে যাতে তারাও ঈশ্বরের বিরোধিতা করে আর শেষ পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে যায়। এমনকি এই পার্টি একাধিক প্রজন্মকে সাজা দেয়, তাই একজন ব্যক্তির ধর্মবিশ্বাসের জন্য একটা পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। আমার পরিবার প্রথমে আমার ধর্মবিশ্বাসকে সমর্থন করত, কিন্তু পার্টির অত্যাচার আর গুজব তাদের বিপথগামী করে দিল, তাই তারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের সহযোগী হয়ে গেল। এই পার্টি এতটাই খারাপ! আমি ঈশ্বরের বাণীর আরেকটা অনুচ্ছেদের কথা ভাবছিলাম: “এমন একজন হিসাবে যে স্বাভাবিক, এবং ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসার অন্বেষী, রাজ্যে প্রবেশ করে ঈশ্বরের লোক হয়ে ওঠাই তোমার প্রকৃত ভবিষ্যৎ, এবং সেই জীবনই পরম মূল্যবান এবং তাৎপর্যপূর্ণ; তোমাদের চেয়ে বেশি আশীর্বাদধন্য আর কেউ নয়। কেন একথা বলছি? কারণ, যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না তারা শুধু দৈহিক ইচ্ছা তৃপ্ত করার জন্যই বেঁচে থাকে এবং তারা শয়তানের জন্য বাঁচে, কিন্তু এখন তোমরা ঈশ্বরের জন্যই বেঁচে রয়েছ এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার উদ্দেশ্যেই জীবনধারণ করছ। সেই কারণেই আমি বলি, তোমাদের জীবন পরম তাৎপর্যপূর্ণ। একমাত্র এই গোষ্ঠীর লোকেরা, যারা ঈশ্বরের দ্বারা নির্বাচিত, তারাই পরম তাৎপর্যপূর্ণপূর্ণ জীবন যাপন করতে সক্ষম: পৃথিবীর অন্য কেউ এত মূল্যবান ও অর্থবহ জীবন যাপনে সক্ষম নয়” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরের নবতম কর্মকে জানো এবং তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করো)। ঈশ্বরের বানী চিন্তা করার পর মাথাটা পরিষ্কার হল। এখন আমি অন্তিম সময়ের ঈশ্বরের কাজ গ্রহণ করেছি। আমি তাঁর বাক্য থেকে এগিয়ে যাওয়ার আর বাঁচার পথ পেয়েছি, যাতে সৃষ্ট সত্তা হিসাবে আমার দায়িত্ব পালন করতে পারি, আরও বেশি লোককে ঈশ্বরের সামনে এনে তাঁর পরিত্রাণ পেতে সাহায্য করতে পারি। এটাই সবচেয়ে ন্যায়পরায়ণ, সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস। আমার ধর্মবিশ্বাস আর আমার পরিবারকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমি ছাড়তে পারিনি। আমাকে শেষ অবধি ঈশ্বরকে অনুসরণ করতে হত, এমনকি সেটা করতে গিয়ে ডিভোর্স হলেও। তাই স্বামীকে বললাম, “আমি এই পথে চলতে বদ্ধপরিকর। যেহেতু তুমি ডিভোর্সের উপর জোর দিচ্ছ, আমি রাজি।”
সেদিনই আমরা ডিভোর্সের কাজে সিভিল অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোতে গেলাম। ঠিক যখন আমি কাগজপত্রে সই করতে যাব, সেই সময় আমার ভাই আর তার স্ত্রী এল, কোনো কথা না বলে আমাকে টেনে তাদের গাড়িতে নিয়ে তুলল, আর তারা যে ব্যবসা চালাত, আমাকে সেখানে নিয়ে গেল। আমার বাবা আগে থেকেই সেখানে ছিল, আর আমাকে দেখেই আমার উপর হাত তুলল। সেখানকার কর্মীরা তাকে থামাতে ছুটে এলেন। সে আমার উপর রেগে চিৎকার করে বলল, “আমি ভেবেছিলাম সরকার তোমার ধর্মবিশ্বাসকে সমর্থন করেছে। জানতাম না তোমাকে গ্রেপ্তার করা আর তোমার পরিবারকেও জড়ানো হতে পারে। তুমি আর এই ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখতে পারবে না, আর রাখলে তোমায় ত্যাজ্যপুত্রী করব।” বাবাকে এতটা রেগে যেতে দেখে আমি বললাম, “বাবা, আমরা ঈশ্বরসৃষ্ট আর তিনিই সবকিছু চালান। মানুষের ঈশ্বরে বিশ্বাস করা আর তাঁর উপাসনা করা উচিত। সি সি পি বিশ্বাস করে না যে ঈশ্বর আছেন। তারা পাগলের মতো তাঁকে প্রতিরোধ করে আর ইতিমধ্যেই তার শাস্তিও পেয়েছে। চিনে দুর্যোগ এত ভয়াবহ হয় কেন? কারণ এই পার্টি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কাজ করে আর ধর্মবিশ্বাসীদের উপর অত্যাচার করে। আমাদের ধর্মবিশ্বাস না থাকলে কিসের আশায় বাঁচব?” আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই ভাই আমাকে চেঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “তোমার ধর্মবিশ্বাসের জন্য যদি তোমার পরিবারকে হারাতে হয়, তাহলেও কি ধর্মবিশ্বাস রাখতে চাও?” আমি দৃঢ়ভাবে বললাম, “আমার ধর্মবিশ্বাসে কোনো ভুল নেই। ও-ই ডিভোর্স চায়—আমি এই পরিবার থেকে দূরে সরে যাচ্ছি না।” আমার ভাই রেগে চিৎকার করে উঠল, “আমার এক বন্ধু সরকারি চাকরি করে, ও বলেছে যে সরকার সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের বাগে আনার জন্য অন্যতম লক্ষ্য হিসাবে চিহ্নিত করে একটা নথি জারি করেছে। ও বলেছে আমরা যেন তোমার উপর নজর রাখি আর তোমাকে তোমার ধর্মবিশ্বাস থেকে দূরে রাখি, যাতে তোমার সঙ্গে আমাদের না জড়ানো হয়।” এই বলে সে একটা বাঁশের ফালা তুলে নিয়ে আমার চোখে মারল, সেইসঙ্গে বলল, “হচ্ছেটা কি সেটা তোমার চোখে পড়ছে না, এর জন্য আমি তোমায় উচিত শিক্ষা দেব!” আমার পরিবারকে আমার সাথে এমন আচরণ করতে দেখাটা সত্যিই কষ্টকর ছিল। তাদের হাত থেকে মুক্তি পেতে নিজের সমস্ত শক্তি ব্যবহার করলাম আর দৌড়ে বেরিয়ে এলাম। হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে শুধু কাঁদতে থাকলাম। নিজেকে খুব অসহায় আর একা লাগছিল সত্যিই জানতাম না কীভাবে এই পথে থাকতে পারব। চোখের জলে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, “হে ঈশ্বর, এখন আমার পুরো পরিবার আমার বিরুদ্ধে, আমার পথ আটকে রয়েছে, বলছে আমি ধর্মবিশ্বাস রাখতে পারব না। আমার জন্য সত্যিই এটা কঠিন। ঈশ্বর, আমাকে পথ দেখান যাতে তোমার ইচ্ছা বুঝতে পারি, আর এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারি।” প্রার্থনা করার পর, ঈশ্বরের বাণীর একটা অনুচ্ছেদের কথা মনে পড়ল। “হয়তো তোমাদের সকলেরই এই বাক্যগুলি স্মরণে রয়েছে ‘এই অকিঞ্চিৎকর ক্ষণিক দুঃখ দুর্দশা আমাদের জন্য গড়ে তুলেছে ক্রমবর্ধমান অতুল গৌরবের সম্পদ’। এই বাক্য তোমরা সকলে পূর্বেই শুনেছ, কিন্তু কেউই এর প্রকৃত অর্থ অনুধাবন করতে পারো নি। আজ তোমরা এর প্রকৃত তাৎপর্য গভীরভাবে অনুভব করতে পারছো। অন্তিম সময়ে ঈশ্বর তাঁর এই বাক্য সার্থক করে তুলবেন। আর তা করবেন সেই সব মানুষের মধ্যে, যারা সেই কুণ্ডলী পাকানো অতিকায় লাল ড্রাগনের দেশে তার দ্বারা বর্বরভাবে অত্যাচারিত। এই অতিকায় লাল ড্রাগন ঈশ্বরকে নিগ্রহ করে এবং সে তাঁর শত্রু, আর সেজন্য এই দেশে ঈশ্বরবিশ্বাসীরা অপমানিত ও নিপীড়িত। ফলে তোমাদের, অর্থাৎ এই নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যেই ঈশ্বরের বাক্য সার্থক হয়ে উঠবে। যেহেতু একটি ঈশ্বরবিরোধী দেশে এ কাজ শুরু হয়েছে, তাই ঈশ্বরের সকল কার্যই প্রবল প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়, তাঁর অনেক বাক্য সম্পাদন করতে সময় লাগে; এইভাবে, ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা মানুষ পরিমার্জিত হয়, যা-ও কষ্টভোগেরই অংশ। এই অতিকায় লাল ড্রাগনের দেশে কাজ চালিয়ে যাওয়া ঈশ্বরের পক্ষে খুবই দুরূহ। তবু, এই দুরূহতার মধ্যেই ঈশ্বর তাঁর কাজের একটি পর্যায় সম্পন্ন করেন, যাতে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রজ্ঞা ও বিস্ময়কর কর্মকাণ্ড, আর এই সুযোগকে ব্যবহার করে এই মানবগোষ্ঠীকে তিনি করে তোলেন সম্পূর্ণ” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরের কার্য কি ততটাই সহজ যতটা মানুষ মনে করে?)। ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে আমি বুঝতে পারলাম যে ঈশ্বর অন্তিম সময়ে অতিকায় লাল ড্রাগনের দেশে কাজ করছেন, যেখানে তিনি সবচেয়ে বেশি প্রতিহত হন, আমরা যারা তাঁকে অনুসরণ করি তারা নির্যাতিত আর প্রত্যাখ্যাত হবই। ঈশ্বর এইভাবে কাজ করেন, যাতে আমরা অতিকায় লাল ড্রাগনের মুখোশ আর তার খারাপ, ঈশ্বরবিরোধী সারমর্ম দেখতে পাই, যাতে আর তার অধীনে না থাকি। এটা আমাদের বিশ্বাসকে নিখুঁত করার জন্যও, যাতে আমরা কষ্টের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করতে শিখতে পারি, তবেই আমরা শয়তানের শক্তির বশে না থেকে ঈশ্বরকে অনুসরণ করতে পারব আর সত্যিকারের ধর্মবিশ্বাস রাখতে পারব। তবে আমার সামান্য কষ্টভোগের পরে মনে হয়েছিল ধর্মবিশ্বাস রাখা খুব কঠিন। আমি নেতিবাচক হয়ে পড়েছিলাম আর পরিস্থিতি থেকে পালাতে চেয়েছিলাম। সত্যিই আমার ধর্মবিশ্বাসে খামতি ছিল। যখন ঐসব সমস্যার মুখোমুখি হলাম, তখন সেগুলো ঈশ্বরপ্রদত্ত হিসেবে গ্রহণ করতে হত, প্রার্থনা, সত্যের সন্ধান আর ঈশ্বরের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে হত। সৃষ্ট সত্ত্বা হিসেবে আমার সেটাই করা দরকার ছিল। যখন ঈশ্বরের ইচ্ছা বুঝতে পারলাম তখন আমার আর ততটা বিষণ্ণ মনে হয়নি। পরে জানতে পারলাম যে আমার স্বামী আসলে বিবাহবিচ্ছেদ চায়নি, সে আমার পরিবারের সাথে এই বিষয়ে কথা বলেছিল আর ভেবেছিল যে তারা আমাকে এভাবে আমার ধর্মবিশ্বাস ছাড়তে বাধ্য করবে।
তার কয়েকদিন পরেই, আমার স্বামী বলল যে আমাকে নিয়ে কেনাকাটা করতে যাবে, কিন্তু হঠাৎ করে সে ফ্রীওয়েতে উঠল, তারপর সোজা একটা মানসিক হাসপাতালে গেল। সে আমাকে ডায়াগনস্টিক রুমে নিয়ে গিয়ে ডাক্তারকে বলল, “ও সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করে আর ধর্মপ্রচার করছে। তোমাকে ওকে আটকে রাখতে হবে আর অন্যান্য ধর্মবিশ্বাসীদের থেকে দূরে রাখতে হবে। এটা ঠিক ডিটক্সের মত। যখন ও ধর্মবিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে, আর ধর্মপ্রচার করবে না, তখন ও ফিরে আসবে।” তার এই কথা শুনেই আমার গা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। আমার ঈশ্বরে বিশ্বাস করা বন্ধ করতে সে আমাকে মানসিক রোগীদের সাথে রাখতে চেয়েছিল। সেখানে আটকে থাকলে কেউ পাগল হয়ে যেতেই পারে! আমি তখনই ডাক্তারকে বললাম, “আমিও ডাক্তার। আগে আমার মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নিশ্চিত করো আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত কিনা।” তারপরে আমি ডাক্তারকে সবিস্তারে জানলাম যে গত অনেক বছর ধরে কীভাবে আমাদের পরিবারের সমস্ত দিক সামলাচ্ছি। আমার কথা শুনে ডাক্তার আমার স্বামীকে বলল, “সে মানসিকভাবে অসুস্থ নয়। ওকে ভর্তি করতে পারব না। তুমি তাও ওকে এখানে রাখতে জোর করলে, আমরা কিন্তু ওর নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারব না।” আমার স্বামী পীড়াপীড়ি করতে লাগল যাতে ডাক্তার আমাকে ভর্তি করে। বলেছিলাম, “তুমি যদি আমাকে তালাবন্দী করার জন্য জোর দাও, তাহলে এখানে আত্মহত্যা করব।” ডাক্তারকেই আমার দায় নিতে হবে, এই ভয়ে সে আমাকে ভর্তি করার সাহস করেনি। আমার স্বামী কিছু করতে না পেরে আমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
তারপর যা ঘটেছিল তা থেকে আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম যে আমার স্বামী আমার জন্য যা কিছু করার দাবি করে, সেগুলো মিথ্যা। সে নিজের স্বার্থরক্ষা করত, বারংবার আমাকে আঘাত আর অপমান করত। আমাকে মেন্টাল হসপিটাল-এ আটক করতে চেয়েছিল। আমাকে আমার ধর্মবিশ্বাস থেকে দূরে রাখতে সে সবকিছু করতে পারত। সে পার্টির সঙ্গেই ঈশ্বরের বিরুদ্ধে চলে যায়, প্রমাণ করে দেয় যে সেও মন্দকে ভালোবাসত, ক্ষমতার পূজারী ছিল আর সত্যকে ঘৃণা করত। ঈশ্বরের বাক্য বলে, “বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসী সঙ্গতিপূর্ণ নয়; বরং তারা একে অপরের বিরোধী” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বর এবং মানুষ একসাথে বিশ্রামে প্রবেশ করবে)। আমরা দুটো আলাদা পথের পথিক ছিলাম। আমার ওর প্রতি পুরোপুরি মোহভঙ্গ হল আর শুধু আমাদের সন্তানের কথা ভেবেই ডিভোর্স দিইনি। মানসিক হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর, সে সবসময় আমার সাথে ঝগড়া করত বা আমায় তিরস্কার করত, আর জোর দিত যাতে আমার ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে দিই। বিশেষ করে যখন অলিম্পিক আসছিল, তখন আমার এক আত্মীয় বলেছিল, সরকার সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের গ্রেপ্তারের উপর জোর দিচ্ছিল, তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হত, আর কেউ তাদের জামিন দিতে পারত না। আমার স্বামী আমার উপর বেশি করে নজর রাখত আর আমাকে সারাক্ষণ অনুসরণ করত। সে আমাকে ১১ দিন গৃহবন্দী করে রেখেছিল। বাড়িতে আমার ধর্মবিশ্বাস পালন করার কোনও উপায় ছিল না—সেটা করতে আর নিজের দায়িত পালন করতে আমার বাইরে যাওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু নিজের মেয়েকে ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারটা সত্যিই সহ্য করতে পারিনি। আমি চলে গেলে, আমার মেয়ের কত কষ্ট হত! আমি যদি ওর পাশে না থাকি আর ওর যত্ন নেওয়ার মত কেউ যদি না থাকে, তাহলে ও যদি ভালোভাবে মানুষ না হয়? কথাটা ভাবতেই চোখের জল আটকাতে পারলাম না। যখন চারদিক থেকে দুঃখকষ্ট ঘিরে ধরল তখন ঈশ্বরের বাক্যের একটা অনুচ্ছেদ মনে পড়ল। “সত্যের জন্য তোমাকে কষ্ট পেতে হবে, তোমাকে সত্যের প্রতি নিজেকে প্রদান করতে হবে, তোমাকে সত্যের জন্য অপমান সহ্য করতে হবে, এবং আরও বেশি করে সত্যকে অর্জন করতে তোমাকে আরও বেশি কষ্ট সহ্য করতে হবে। এটাই তোমার করা উচিত। একটি শান্তিপূর্ণ পারিবারিক জীবনের স্বার্থে তুমি সত্যকে ছুঁড়ে ফেলে দিও না, এবং ক্ষণিকের আনন্দের জন্য নিজের জীবনের মর্যাদা এবং সততা হারিয়ে ফেলো না। যা কিছু সুন্দর এবং যা কিছু ভালো সে সব তোমার অন্বেষণ করা উচিত, এবং তোমার আরো অর্থবহ জীবনের একটি পথ অন্বেষণ করা উচিত। তুমি যদি এমন কুরুচিপূর্ণ জীবন যাপন করো, এবং কোনো উদ্দেশ্যের অনুসরণ না করো, তাহলে কি তুমি তোমার জীবন নষ্ট করছ না? এমন জীবন থেকে তুমি কী লাভ করতে পারো? একটি সত্যের জন্য তোমার যাবতীয় দৈহিক ইচ্ছা ত্যাগ করা উচিত, সামান্য ভোগ-বিলাসের জন্য যাবতীয় সত্যকে ত্যাগ করা উচিত নয়। এই ধরনের মানুষের কোন সততা বা মর্যাদা নেই; তাদের অস্তিত্ব অর্থহীন!” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, পিটারের অভিজ্ঞতাঃ তার শাস্তি ও বিচারের জ্ঞান)। ঈশ্বরের বাক্য পড়ার পর, আমি এত বছর ধরে নিজের ধর্মবিশ্বাসের কথা ভাবছিলাম। শয়তান সবসময় আমার আত্মীয়দের ব্যবহার করে আমাকে অত্যাচার করত আর বাধা দিত, যাতে আমি ঈশ্বরকে ছেড়ে দিই আর ঈশ্বরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করি। নিজের পরিবারের সাথে থাকলেও, আমি খুশি ছিলাম না আর আমার স্বামী আমাকে ঈশ্বরের বাক্য পড়তে বা সুসমাচার প্রচার করতে আর আমার দায়িত্ব পালন করতে দিত না। এভাবে বেঁচে থাকাটা খুব কষ্টকর ছিল। ঈশ্বর আমাকে অন্তিম সময়ে জন্ম নিয়ে তাঁর সুসমাচার গ্রহণ করার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন যাতে আমি সত্য অনুসরণ করতে পারি, ঈশ্বরের পরিত্রাণ লাভ করতে পারি, আর সৃষ্ট সত্তা হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করতে পারি। সেটাই আমার অনুসরণ করা উচিত ছিল। আমি ঈশ্বরের বাক্যের কথা চিন্তা করলাম: “মানুষের নিয়তি ঈশ্বরের হাতেই নিয়ন্ত্রিত হয়। তুমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার অযোগ্য: মানুষ নিজের জন্যেই নিজেকে নিয়ে সর্বদা ব্যস্ত থাকলেও, সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষমই থেকে যায়। তুমি যদি নিজের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা জানতে পারতে, যদি তুমি তোমার নিজের ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতে, তাহলে কি তুমি এখনও সৃষ্ট সত্তা হয়েই থাকতে?” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, মানুষের স্বাভাবিক জীবন পুনরুদ্ধার করা এবং তাকে এক বিস্ময়কর গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া)। সত্যি কথা। এই পৃথিবীতে আসা প্রত্যেক মানুষের জন্য, ঈশ্বর অনেক আগেই ঠিক করে রাখেন আমরা কোন পথে যাব আর কতটা কষ্ট পাব। কেউ অন্য কাউকে সাহায্য করতে পারে না। আমার মেয়েকে জন্ম দিয়েছি, কিন্তু ওর জীবনের ভার ঈশ্বরেরই হাতে। ও কতটা কষ্ট পাবে আর কতটা আশীর্বাদ পাবে তা ঈশ্বর যুগ যুগ আগেই ঠিক করেছিলেন। আমি ওর পাশে থাকলেও ওর কোনও কষ্ট নিজে নিতে পারতাম না। আমার নিজের ভাগ্যের উপরেই নিয়ন্ত্রণ ছিল না, তাহলে ওর ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারি কীভাবে? শুধু আমার মেয়েকে ঈশ্বরের কাছে সঁপে দিয়ে তাঁর ইচ্ছার উপরেই সবকিছু ছেড়ে দিতে হত। তারপর একদিন, আমার স্বামী যখন ঘুমাচ্ছিল, তখন ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম।
শুনে আশ্চর্য হলাম, যে আমি বাড়ি ছাড়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরেই, একজন নেতা আমাকে বলল যে আমার স্বামী প্রতিদিন ভ্রাতা ও ভগিনীদের সাথে ঝামেলা করছে আর বলেছে আমি ফিরে না গেলে সে পুলিশে রিপোর্ট করবে। তারা যাতে সমস্যায় না পড়ে সেই জন্য আমাকে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল। সেই সময়, আমার স্বামী আমার উপর কড়া নজর রাখত। সে আমাকে ভিতরে রেখে, নিজে কয়েক ফুটের মধ্যেই থাকত। বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে চাবিটাও লুকিয়ে রাখত, আমাকে অনুসরণ করত আর আমার উপর নজর রাখত, এমনকি আমার রান্না করা বা বাথরুম যাওয়ার সময়ও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টিভি চালিয়ে রাখত, আর আমাকে প্রতিদিন ওর সাথে খবর আর দেশাত্মবোধক চলচ্চিত্র দেখতে বাধ্য করত, আর বলত সে আমার মগজধোলাই করতে চায়। আমার স্বামী বলেছিল, আমার আত্মীয় তাকে বলেছে আমাকে প্রার্থনা করার বা ঈশ্বরের বাণী পড়ার কোনও সুযোগ যেন না দেওয়া হয়। আমাকে টিভিতে যা হত তাই দেখাত, যাতে ধর্ম নিয়ে ভাবার সুযোগ না পাই, আর এভাবেই নাকি আমার ধর্মবিশ্বাস উপড়ে ফেলা যাবে। সে আমাকে বলেও ছিল যে আমাকে এক মুহূর্তও শান্তিতে থাকতে দেবে না, কারণ যে মুহূর্তে আমি প্রার্থনা করব, তখনই আমার ঈশ্বর আমাকে পথ দেখাবেন, তারপর আমি সমাবেশে যাব, আবার ধর্মপ্রচার করব। রেগে গিয়ে তাকে বললাম, “আমার ধর্মবিশ্বাস রাখার স্বাধীনতা আছে। তুমি পার্টির কথা মানছ কেন, কেন আমার উপর অত্যাচার করছ আর আমার ব্যক্তিস্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছ? তুমি আমার ধর্মবিশ্বাস থেকে ঈশ্বরের অনুগ্রহ প্রচুর উপভোগ করেছ, ঈশ্বরের কীর্তিসমূহও দেখেছ। এখন আমার পথ আটকে আমার উপর অত্যাচার করছ। এটা শুধু আমার উপর অত্যাচার নয়, এটা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যাওয়া!” আমি অবাক হয়ে গেলাম যখন সে চিৎকার করে উঠল, “আমি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যাচ্ছি, তাহলে তিনি আমাকে শাস্তি দিন!” তার কথা শুনে আমি খুব হতভম্ব হয়ে গেলাম। একথা কীভাবে বলতে পারে? বুদ্ধিশুদ্ধি একেবারেই গেছে। আর তাই, মোটামুটি আরও এক সপ্তাহ মত আমাকে আটকে রাখা হয়েছিল, এমনকি আমি বাড়ি থেকে বের হতেও পারিনি। আমি ঈশ্বরের বাক্য পড়তে পারিনি, সমাবেশে যেতে পারিনি বা আমার দায়িত্বও পালন করতে পারিনি। দুঃখকষ্টের মধ্যে ছিলাম—আমার খাওয়া-ঘুম সব চলে গিয়েছিল। সেই সময় আমি সত্যিই কষ্ট পেয়েছিলাম, আর ভাবছিলাম যে অন্য সবাই দায়িত্ব পালন করছিল কিন্তু স্বামী আমায় বাড়িতে আটকে রেখেছে, এমনকি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতেও পারিনি। এভাবে চলতে থাকলে আমি কি ঈশ্বরের কাছ থেকে আরও দূরে সরে যাব না? আমার পরিবারের লোকেরা সবাই আমার স্বামীর পক্ষে ছিল, আমার উপর অত্যাচার করছিল, আমার মনে হচ্ছিল আর আমি সইতে পারব না। কথাটা যত বেশি ভাবতে লাগলাম ততই খারাপ লাগছিল, নিজেকে খুব একা আর অসহায় লাগছিল।
একদিন সন্ধ্যায় যখন আমার স্বামী ঘুমাচ্ছিল, তখন আমি ঈশ্বরের কাছে নীরবে প্রার্থনা করলাম, বললাম, “ঈশ্বর, স্বামী আমায় বাড়িতে আটকে রেখেছে, আপনার বাণী পড়তে পারছি না। নিজেকে সত্যিই দুর্বল লাগছে। হে ঈশ্বর, আমি আত্মিক উচ্চতায় খাটো, দয়া করে আমার ধর্মবিশ্বাস অটুট রাখুন,” প্রার্থনা করার পর তাঁর বাক্যের একটা অনুচ্ছেদের কথা মনে পড়ল। “ঈশ্বর যাদের ‘জয়ী’ বলে অভিহিত করেন, তারা হল সেই মানুষজন যারা শয়তানের প্রভাবে থেকেও এবং শয়তানের দ্বারা অবরুদ্ধ থেকেও, অর্থাৎ তারা যখন নিজেদের অন্ধকারের শক্তির মধ্যে নিমজ্জিত থাকে তখনও ঈশ্বরের হয়ে সাক্ষ্য দিতে পারে এবং তাঁর প্রতিবিশ্বাস এবং নিষ্ঠা প্রদর্শন করতে পারে। তুমি যদি এখনও ঈশ্বরের সামনে সমস্ত কিছু নির্বিশেষে শুদ্ধ হৃদয় রাখতে সক্ষম হও অথবা ঈশ্বরের প্রতি খাঁটি ভালোবাসা বজায় রাখতে পারো, তাহলেই তা ঈশ্বরের হয়ে সাক্ষ্যদান হিসাবে ধরা যেতে পারে এবং ঈশ্বর একেই ‘জয়ী’ হিসাবে অভিহিত করেন” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরের প্রতি তোমার ভক্তি বজায় রাখা উচিত)। ঈশ্বরের বাক্য আমাকে দেখিয়েছে যে অন্তিম সময়ে তিনি জয়ীদের একটা দল তৈরি করতে চান, যারা শয়তানের আক্রমণ আর নিপীড়নের মুখে, অপশক্তির অত্যাচারে মাথা নত করবে না, ঈশ্বরের প্রতি তাদের বিশ্বাস আর ভক্তি অটুট রাখতে পারবে। ঈশ্বরের ইচ্ছা বোঝার পর আর আমার ততটা দুঃখ হয়নি। নিজেকে সঁপে দিতে আর এর থেকে শিক্ষা নিতে তৈরি ছিলাম। আমার স্বামী আমাকে যেভাবেই আটকে রাখুক আর অত্যাচার করুক না কেন, আমি দৃঢ় থাকব আর ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে যাব। পরে, যখন আমার স্বামী ঘুমাত, তখন আমি ঈশ্বরের বাক্য সম্পর্কে চিন্তা করতাম, নীরবে প্রার্থনা করতাম বা নিজে নিজেই গুনগুন করতাম, এর থেকে কিছুটা আনন্দ পেতাম। আমার গৃহবন্দী হওয়ার ঊনিশতম দিনে, আমার স্বামী যখনই আমার সাথে ঝগড়া করত তখনই তার মাথা, পেট, পিঠ ব্যথা করত। যত রেগে যেত ততই ব্যথা বাড়ত, এতটাই যে সে ব্যথায় চিৎকার করত। আর আমার সাথে ঝগড়া করার সাহস করত না। তারপর সে কোনো কূলকিনারা না পেয়ে বলল, “আর পারছি না! তোমাকে এতদিন আটকে রেখেছি, কিন্তু তোমাকে তো আরো চনমনে লাগছে। আমিই পাগল হয়ে যাচ্ছি।” পরের দিন, সে আমাকে ঘরে আটকে তালা দিয়ে কাজে চলে গেল। আমি একটা চাবি খুঁজে পেয়েছিলাম আর ঈশ্বরের কাছে খুব কৃতজ্ঞ ছিলাম যে অবশেষে সমাবেশে যোগ দিতে পেরেছিলাম। সত্যিই ঈশ্বর এভাবে পথ খুলে দিয়েছিলেন।
এরপর থেকে স্বামী আমাকে তেমন কড়া নজরে রাখেনি। যখনই বেশি বাড়াবাড়ি করত, তখনই অসুস্থ হয়ে পড়ত আর তার ঘাড়ে ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা হত। ২০১২ সালের মার্চে, একদিন, সে আমাকে বলল, “এত বছর ধরে আমি চেয়েছিলাম তুমি আমাদের পরিবার আর নিজের ধর্মবিশ্বাসের মধ্যে কোনো একটাকে বেছে নাও। কিন্তু তোমার বিশ্বাস ছাড়োনি। আজই এর সমাধান হয়ে যাক। তোমার সামনে দুটো রাস্তা আছে। এই বাড়িতে থাকতে হলে তোমাকে ঈশ্বরকে ছাড়তে হবে আর ঈশ্বরকে না ছাড়লে তুমি কখনও এই বাড়িতে ফিরে আসতে পারবে না।” আমি খুব দৃঢ়ভাবে তাকে বললাম, “আমি ঈশ্বরকে মানার পথ বেছে নিয়েছি, তাই সেখান থেকে ফিরে যাওয়ার প্রশ্নই নেই।” তারপর নিজের ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলাম। তাই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই!
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।