আমার নির্বাচন

31-03-2023

২০১২ সালের মার্চ মাসে, আমার মা আমাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের সুসমাচার শোনালেন। আমি প্রতিদিন ঈশ্বরের বাণী পড়তে শুরু করলাম এবং আমি প্রায়ই অন্যদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে ঈশ্বরের বাক্যের উপর আলাপ-আলোচনা করতাম। আমার মনে আছে আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য একটা অংশ একদিন নিষ্ঠা পালন করার সময়ে পড়েছিলাম। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “মানব প্রজাতির সদস্য এবং ধর্মপ্রাণ খ্রীষ্টান হিসাবে আমাদের সকলের দায়িত্ব এবং কর্তব্য হলো নিজেদের দেহ ও মনকে ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্বে নিযুক্ত করা। কারণ, আমাদের সমগ্র সত্তা ঈশ্বরের থেকেই আগত এবং তাঁর সার্বভৌমত্বের জন্যই সেটা বিদ্যমান রয়েছে। ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্বে এবং মানবগোষ্ঠীর ন্যায্য প্রয়োজনে যদি আমাদের দেহ ও মন কাজে না লাগে, তা হলে ঈশ্বরের দায়িত্ব পালনের জন্য যারা শহীদ হয়েছে আমরা তাদের অযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হব এবং যে ঈশ্বর আমাদের সব কিছু দিয়েছেন তাঁর কাছে আরও অকিঞ্চিৎকর হয়ে পড়ব(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, পরিশিষ্ট ২: ঈশ্বর সমগ্র মানবজাতির ভাগ্য নির্ধারক)। আমি ঈশ্বরের বাণী থেকে দেখলাম যে ঈশ্বর মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমার সবকিছু তাঁর থেকেই এসেছে। আমার উচিৎ তাঁর ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়া এবং সৃষ্ট সত্তার দায়িত্ব পালন করা। তাই, আমি আমার পরিচিত মানুষদের মধ্যে সুসমাচার প্রচার শুরু করলাম।

২০১২ সালের ডিসেম্বরে একদিন, সুসমাচার প্রচারের জন্য পুলিশ আমাকে বেআইনিভাবে আটক করল এবং “সামাজিক শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার” জন্য ১৪ দিনের জন্য বন্দি করে রাখল। আমার বাবা-মা এবং স্বামী এলেন বন্দি কেন্দ্রে আমার সপ্তম দিনে আমার সঙ্গে দেখা করতে। আমি যখন সাক্ষাৎ কক্ষে গেলাম, আমি দেখলাম আমার মা আর বাবা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে এবং আমার স্বামী আমাদের ১ বছরের ছেলেকে ধরে রেখেছেন। জল এসে গেল আমার চোখে তাদের সবাইকে সেখানে দেখে। আমি আমার বাবা-মাকে শান্তভাবে অভিবাদন জানিয়ে, আমার স্বামীর কাছে ছুটে গিয়ে তার কাছ থেকে শিশুটিকে নিয়ে নিলাম। সেই মুহূর্তে আমার খুব খারাপ লাগছিল। আমরা সবাই পরিবার হিসেবে একসঙ্গে ছিলাম, তারপর হঠাৎ করে চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি) দ্বারা আমি বেআইনিভাবে আটক হলাম শুধু বিশ্বাস রাখার এবং সুসমাচার প্রচার করার জন্য। এখন আমি আমার পরিবারের সঙ্গে বন্দি কেন্দ্রে দেখা করছি। আমার স্বামী বলল, “তোমার গ্রেপ্তারের খবর পাওয়ার পরে আমি আমার সৈন্যদলের নেতাকে বলেছি কী হয়েছে এবং তারা বলেছে তোমার বিশ্বাস তোমার পরিত্যাগ করা উচিৎ। তুমি একজন কলেজ স্নাতক, তোমার শিক্ষা আছে। ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখলে তোমার ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে! তারা আরও বলেছে যে তুমি যদি সেটা ত্যাগ না করো, তাহলে আমাকে পার্টি এবং সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হবে। এমনকি আমি পরের বছর আমার চাকরি পরিবর্তনের অধিবৃত্তিও হারাব! আমি সে সব উপেক্ষা করতে পারি, কিন্তু তোমাকে তোমার ছেলে এবং পরিবারের কথা ভাবতে হবে। তুমি আবার গ্রেফতার হলে সেটা আর এরকম হবে না। তোমার জেল হবে, আর তারপর আমাদের ছেলের কী হবে? সে কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে না, সরকারি কর্মচারী হবে না, বা সামরিক বাহিনীতে যোগ দেবে না। সে কীভাবে সমাজে নিজের জায়গা করবে? তাকে কি লজ্জা নিয়ে বেঁচে থাকবে হবে?” ওর কথা শুনে আমার মন আরো খারাপ হয়ে গেল। আমার ছেলেকে কোলে নিয়ে আমার মনে কষ্ট হল এবং আমি ভাবলাম, “আমি যদি সত্যিই একদিন জেলে চলে যাই, আমার ছেলে কি এত অল্প বয়সে তার মাকে ছাড়া সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারে? তাকে কি উপহাস করা হবে এবং বৈষম্যের শিকার হতে হবে? যদি আমার স্বামীকে পার্টি এবং সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হয়, তবে তার ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে।” আমি আর ভাবতে পারলাম না। আমি আমার কান্না চেপে রেখেছিলাম এবং একটাও কথা বলিনি। আমি কিছু বলছি না দেখে আমার স্বামী রেগে বলল, “আমাদের নেতা বলেছেন যে তুমি যদি তোমার বিশ্বাস পরিত্যাগ করার প্রতিশ্রুতি না দাও তবে আমার বিবাহবিচ্ছেদ করা উচিৎ। তোমাকে বেছে নিতে হবে!” তখনও যখন আমি কোনো কথা বললাম না, সে আমাদের ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। আমার মনে হচ্ছিল আমার হৃদয়ে যেন একটা ছুরি বসিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং আমি আর আমার চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। কারাগারে ফেরার পথে, আমি বিভ্রান্ত বোধ করলাম। কেন আমার স্বামী তার নেতাকে বলেছে তখনই আমার গ্রেফতারের বিষয়ে? ও তো জানত যে তিনি কোনভাবেই আমাকে বা তাকে সাহায্য করবেন না। কেন ও এত খোলাখুলিভাবে সবকিছু বলল? এটা নিয়ে একটু ভাবার পর আমার মনে হল সে অবশ্যই তার নিজের দোষগুলো ঢাকছে। যখন এটা আমার মনে হল, আমি সত্যিই এটা মানতে চাইনি। আমি সত্যিই কষ্ট পাচ্ছিলাম। আমি এটা না ভেবে পারলাম না যে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস সঠিক এবং স্বাভাবিক, এতে অপরাধের কিছু নেই। যখন বিশ্বাসীরা একত্রিত হয়, আমরা শুধু ঈশ্বরের বাণী পড়ি, আমাদের কর্তব্য করি, সুসমাচার প্রচার করি এবং সত্যের অনুসরণ করি। তাছাড়া জাতীয় সংবিধান কী স্পষ্টভাবে বিশ্বাসের স্বাধীনতা দেয় না? তাহলে কমিউনিস্ট পার্টি কেন আমাদের উপর এত নিপীড়ন করবে এবং আমার স্বামীকে বিবাহবিচ্ছেদ করতে বলবে? আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।

যখন আমি আমার বন্দিকক্ষে ফিরে এলাম, আমি গির্জার এক ভগিনীকে আমার বিভ্রান্তির কথা জানালাম। তিনি শান্তভাবে আমার জন্য সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণীর কয়েকটি অংশ আবৃত্তি করলেন। “সে এমনই শয়তানের রাজা! তার অস্তিত্ব কী করে সহ্য করা যায়? যতক্ষণ না সে ঈশ্বরের কাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং সমস্ত কিছুকে সম্পূর্ণ অস্থিতিশীল করে ফেলে ততক্ষণ সে বিশ্রাম নেবে না যেন যতক্ষণ না হয় মাছ মারা যায় বা জাল ছিঁড়ে যায় সেই তিক্ত শেষ সীমা পর্যন্ত সে ঈশ্বরের বিরোধিতা করতে চায়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিজেকে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে স্থাপন করে এবং আরও কাছে চেপে আসে। এর জঘন্য রূপ অনেক আগে থেকেই সম্পূর্ণরূপে উন্মুক্ত ছিল, আর তা আরও ক্ষতবিক্ষত ও ভয়াল এবং দুঃখজনক অবস্থায় রয়েছে, তবুও সে ঈশ্বরের প্রতি ঘৃণা ত্যাগ করবে না, যেন ঈশ্বরকে তার মুখের এক গ্রাসে গলাধঃকরণ করতে পারলে তবেই তার অন্তরস্থিত ঘৃণা দূর হবে(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, কাজ এবং প্রবেশ (৭))। “ধর্মীয় স্বাধীনতা? নাগরিকদের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ? এগুলো সবই পাপকে ঢাকা দেওয়ার কৌশল! … ঈশ্বরের কাজে এমন এক দুর্ভেদ্য প্রতিবন্ধকতা প্রস্তুত করা কেন? ঈশ্বরের লোকজনকে প্রতারিত করার জন্য এতরকম কৌশলের নিয়োগ করা কেন? প্রকৃত স্বাধীনতা এবং বৈধ অধিকার ও স্বার্থ কোথায়? ন্যায়পরায়ণতা কোথায়? স্বাচ্ছন্দ্য কোথায়? উষ্ণতা কোথায়? ঈশ্বরের জনগণের সাথে চাতুরী করার জন্য প্রতারণাপূর্ণ চক্রান্তের ব্যবহার করা কেন? ঈশ্বরের আগমনকে দমন করার জন্য শক্তিপ্রয়োগ কেন? কেন তাঁরই সৃষ্ট পৃথিবীতে স্বাধীনভাবে বিচরণের অনুমতি নেই? বিশ্রামের শেষ জায়গাটুকুও না থাকা পর্যন্ত কেন তাঁকে তাড়া করে চলা?(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, কাজ এবং প্রবেশ (৮))। তারপরে তিনি এই আলাপ-আলোচনা করলেন: “অন্তিম সময়ে, ঈশ্বর দেহধারণ করে পৃথিবীতে এসেছেন কথা বলতে ও কাজ করতে। তিনি সত্য প্রকাশ করেন যা মানবজাতিকে পরিশুদ্ধ এবং উদ্ধার করে, এবং যাদের হৃদয় ও আত্মা আছে তারা ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শুনে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে ফিরে যায়। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি একটা নাস্তিক দল। সেটা তীব্রভাবে ঈশ্বর এবং সত্যকে ঘৃণা করে, এবং সেটা ভীত যে সবাই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী থেকে সত্য শিখবে, তারপর তারা খ্রীষ্টকে অনুসরণ করবে এবং তাঁর সাক্ষ্য দেবে, এবং কমিউনিস্ট পার্টিকে পরিত্যাগ ও প্রত্যাখ্যান করবে। তখন কেউ আর এটাকে সমর্থন করবে না এবং চীনা জনগণকে চিরতরে খাঁচায় বন্দী ও নিয়ন্ত্রিত করার তার বন্য উচ্চাকাঙ্ক্ষা ধ্বংস হয়ে যাবে। এই কারণেই এ নানান ধরণের গুজব এবং মিথ্যা তৈরি করে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নামে অপবাদ দেওয়া এবং নিন্দা করার জন্য এবং এটা সমগ্র জাতির শক্তিকে খ্রীষ্টের শিকারে এবং খ্রীষ্টানদের নিপীড়নের কাজে লাগাবে। এটা পৃথিবীতে ঈশ্বরের কাজকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করতে চায় নিজের নাস্তিক একনায়কত্বকে রক্ষা করার জন্য। সে আরো বলল যে চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি দাবি করে বিশ্বাসের স্বাধীনতার অনুমতি দেওয়ার নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসের দুষ্ট নিপীড়ন ঢাকার জন্য বিশ্বের মানুষকে বোকা বানানোর কৌশল হিসেবে। কোনো প্রকৃত বিশ্বাসের স্বাধীনতা নেই এবং চীনে কোনো মানবাধিকার নেই। চীনে বিশ্বাস রাখার অর্থ হল কমিউনিস্ট পার্টির শয়তানি শাসনের নিপীড়নের সম্মুখীন হওয়া। এটা একটা সত্য।” তাঁর আলাপ-আলোচনার পর, আমি আরো স্পষ্টভাবে দেখতে পেলাম কমিউনিস্ট পার্টির ঈশ্বর এবং সত্যকে ঘৃণা করার মন্দ প্রকৃতি এবং বুঝতে পারলাম সত্যিই সেটা কতটা মন্দ। ছোটো থেকেই এর নাস্তিক শিক্ষার দ্বারা আমি গভীরভাবে বিষাক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আমি সর্বদা পার্টিকে জনগণের “মহান ত্রাণকর্তা” হিসাবে দেখেছি এবং আমি সত্যিই এটাকে পছন্দ করতাম। আমি বিশ্বাস করতাম এবং বিনা সন্দেহে এটার আজ্ঞা পালন করতাম। এখন আমি দেখতে পেলাম সেটা কত বোকামি ছিল! আমার এটাও মনে পড়ল যখন আমি আমার স্বামীকে সুসমাচার শুনিয়েছিলাম তখন সে একটা কথা বলেছিল। “কেন্দ্রীয় কমিটি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জাকে নিশ্চিহ্ন করার নির্দেশ দিয়েছে এবং আমাদের সৈন্যদের যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি তৃতীয় মাত্রায় উন্নীত করা হয়েছে। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাসকারী সবাইকেই শত্রু হিসাবে দেখা হয়। এবং আমাদের পার্টি ক্লাসে আমাদের সাপ্তাহিক রাজনৈতিক পাঠ এখন সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জা সম্পর্কেই। যদিও আমি জানি তোমার বিশ্বাস একটা ভালো ব্যাপার, কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় আছে, এবং দুর্বলরা শক্তিশালীকে পরাজিত করতে পারে না। সেটা মেনে চলা ছাড়া আর কীই বা করতে পার তুমি?” তার বলা এই সব কথা ভেবে আমার খুব রাগ হল! কমিউনিস্ট পার্টি স্বর্গের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। এটা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তার সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করতে চায়, বিশ্বাসীদের শুধু নিন্দা ও নিপীড়ন করে, তাদের সঙ্গে শুধু জাতীয় অপরাধীদের মত আচরণ করেই নয়, তাদের ভয় দেখিয়ে জনসাধারণকে নিজের পক্ষে আনার জন্যে প্ররোচিত করেও। এমনকি আমার স্বামীকেও ভয় দেখিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। সে ঠিক-ভুলের পার্থক্য জানত না এবং আমার বিশ্বাসকে নিপীড়ন করত। কমিউনিস্ট পার্টি চায় না কেউ ঈশ্বরকে অনুসরণ করুক এবং সঠিক পথ অবলম্বন করুক, সেটা শুধু চায় সেটাকে বিশ্বাস এবং অনুসরণ করা হোক। এটা মন্দ, ঘৃণ্য এবং নির্লজ্জ! আমি অন্তর থেকে ঐ কমিউনিস্ট রাক্ষসদের ঘৃণা করতাম ও অভিশাপ দিতাম! তারা আমার ছেলে এবং আমার স্বামীর ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাকে হুমকি দিচ্ছিল যাতে আমি ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করি। আমি জানতাম আমি তাদের ফাঁদে পা দিতে পারব না। আমার স্বামী আমাকে যতই চাপ দিক না কেন, এমনকি আমাকে যদি জেলেও যেতে হয়, আমি ঈশ্বরকে অনুসরণ করেই যাব!

রাতে বিছানায় শুয়ে আমি আমার ছেলের সঙ্গে কাটানো সমস্ত সুখী সময়ের কথা ভাবছিলাম। সে তখনও ছোট ছিল এবং তার সামনে দীর্ঘ পথ ছিল। আমি ভাবছিলাম যে আমার বিশ্বাস তার ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করবে কিনা। এই ভেবে আমি দুর্বল হতে শুরু করলাম, তাই আমি নীরবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে, তাঁকে আমার হৃদয়ের ওপর নজর রাখতে বললাম। আমি আমার প্রার্থনার পরে ঈশ্বরের বাণীর একটা অংশের কথা ভাবলাম। “বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু ঘটে তার মধ্যে এমন কিছুই নেই যেখানে আমার রায়ই চূড়ান্ত নয়। এমন কিছুই কি রয়েছে যা আমার হাতে নেই? আমি যা বলি তাই হয়, এবং মানুষের মধ্যে কে আমার মন পরিবর্তন করতে পারে?(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতি ঈশ্বরের বাক্য, অধ্যায় ১)। আমি ভাবলাম, “এটা ঠিক। ঈশ্বর সকলের উপর শাসন করেন, এবং আমার ছেলের ভাগ্যও তাঁর হাতে আছে। তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, কোনও মানুষ নয়। চিন্তা করে কী লাভ হবে?” তাই আমি আমার সন্তানকে ঈশ্বরের কাছে অর্পণ করে একটা প্রার্থনা বললাম। এর পরে আমি অনেক ভালো অনুভব করলাম এবং তেমন চিন্তিত হলাম না। এভাবেই আমি আমার ১৪ দিনের বন্দিদশা কাটিয়েছিলাম ঈশ্বরের আমাকে দেওয়া বিশ্বাস এবং শক্তির সাহায্যে। যখন আমি মুক্তি পেলাম, তখন আমার বাবা আমাকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং আমার স্বামী পিছনে বসেছিলেন। আমার স্বামী আমাকে বলল, কান্নায় তার চোখ লাল, “নেতা এই পুরো সময় ধরে আমার আদর্শের উপর কাজ করেছেন। আমাকে তোমার বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে হবে। তারা বলেছে যে, তুমি যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখ তবে আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ না হলে আমি বরখাস্ত হব। এই চিন্তা আমাকে উন্মাদ করে দিচ্ছে! আমি তোমাকে অনুরোধ করছি—এটা ছেড়ে দাও। ধরা পড়লে তুমি জেলে যাবে, আর আমাদের পরিবার ভেঙ্গে যাবে!” আমি দেখলাম সে কথা বলতে বলতে কাঁদছে এবং আমি আমার মনে একটা প্রচণ্ড কষ্ট অনুভব করলাম। আমি দ্রুত মনে মনে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, এবং তাঁকে আমাকে শক্ত রাখতে অনুরোধ করলাম। তারপর ঈশ্বরের বাণীর একটা অংশ আমার মনে এলো। “ঈশ্বর মানুষের মধ্যে যে কাজ করেন, তার প্রতিটি ধাপে, বাহ্যিকভাবে মনে হয় তা হল মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ যেন তা মানুষের আয়োজন এবং মানুষের হস্তক্ষেপেই হচ্ছে। কিন্তু অন্তরালে, কাজের প্রতিটি ধাপে, এবং যা কিছু ঘটছে সেই প্রতিটি ঘটনাই ঈশ্বরের প্রতি শয়তানের বাজি এবং এ জন্য প্রয়োজন ঈশ্বরের প্রতি নিজ সাক্ষ্যে মানুষের অটল থাকা(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরকে ভালোবাসাই প্রকৃত ঈশ্বর-বিশ্বাস)। আমি বুঝলাম এটা শয়তানের একটা কৌশল। শয়তান আমাকে ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করানোর জন্য আমার স্বামীর বিবাহবিচ্ছেদের হুমকি ব্যবহার করতে চেয়েছিল। আমি এই ফাঁদে পা দিতে পারতাম না! তাই আমি আমার স্বামীকে বললাম: “আমি এই পরিবারটিকে ভাঙ্গতে চাই না। তুমি লক্ষ্য করেছ যে আমি বিশ্বাসী হওয়ার পর থেকে পরিবর্তিত হয়েছি। আমরা আর ঝগড়া করি না এবং আমাদের পারিবারিক সম্পর্কগুলোও আরও ভালো হয়েছে। তুমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী এবং ভ্রাতা ও ভগিনীদের সাক্ষ্য শুনেছ। তুমি জান বিশ্বাস রাখা ভালো। কিন্তু এখন চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি চায় আমার নিন্দা ও আমাকে গ্রেফতার করতে, তোমাকে বরখাস্ত করতে, সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কার করতে এবং আমার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করাতে। আসলে কে এই পরিবারকে ভাঙ্গার চেষ্টা করছে? চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টিকে ঘৃণা করার পরিবর্তে, তুমি সেটার সঙ্গে যোগ দিচ্ছ আমার বিশ্বাসের নিপীড়নে। তুমি ঠিক আর ভুল গুলিয়ে ফেলছ না? তুমি জানো কমিউনিস্ট পার্টি কী ধরনের পার্টি। এটা ঈশ্বর এবং সত্যকে ঘৃণা করে এবং এটা ঈশ্বরের ঘোষিত শত্রু। এটা অনেক খ্রীষ্টানকে গ্রেপ্তার এবং নির্যাতিত করেছে, এটা কত মন্দ কাজ করেছে। এটা কি সত্যিই ঈশ্বরের দণ্ড থেকে বাঁচতে পারবে? ঈশ্বর অনেক আগেই বলেছিলেন, ‘অবতার যেখানেই আবির্ভূত হন সেই স্থানে শত্রু সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। সবার আগে নিশ্চিহ্ন হবে চিনদেশ; ঈশ্বরের হাতে তা সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। সেখানে ঈশ্বর কোনোরকম ক্ষমা প্রদর্শন করবেন না(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, “সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতি ঈশ্বরের বাক্যে”-র রহস্যগুলির ব্যাখ্যা, অধ্যায় ১০)। বিপর্যয় প্রতিনিয়ত বাড়ছে। যখন মহা বিপর্যয় আসবে, কমিউনিস্ট পার্টি সর্বপ্রথম ঈশ্বরের দ্বারা ধ্বংস হবে, এবং যখন এটা ঘটবে, যারা এটা অনুসরণ করেছিল এবং ঈশ্বরের বিরোধিতা করেছিল তারাও ধ্বংস হবে। তারা একদিনও শান্তি পাবে না। আমাকে আবার আমার বিশ্বাস পরিত্যাগ করতে বলবে না। আমি কখনোই ঈশ্বরে বিশ্বাস করা বন্ধ করব না!” সে যখন দেখল আমি হার মানছি না, রাগে সে আমার মুখে একটা চড় মারল। আমি বুঝতে পারলাম যে কমিউনিস্ট পার্টিই তাকে আমার সঙ্গে এমন আচরণ করতে প্ররোচিত করেছিল। এটা আমার জন্য সত্যিই বেদনাদায়ক ছিল, এবং আমি আমার অন্তর থেকে পার্টিকে ঘৃণা করি। আমি ভাবলাম, “তুমি আমার উপর যত বেশি অত্যাচার করবে, আমার বিশ্বাস তত দৃঢ় হবে!”

এদিকে বাড়িতে, আমার স্বামী কিছুতেই হাল ছাড়ল না। “তোমাকে যদি তোমার বিশ্বাস অনুশীলন করতেই হয়, তুমি বাড়িতে করো। আমি তোমার সম্পর্কে নেতা কে কিছু জানাব না, ঠিক আছে?” আমি ভাবলাম, “আমি ঈশ্বরের অনুগ্রহ এবং আশীর্বাদ এবং সত্যের লালনপালন অনেক উপভোগ করেছি। সুসমাচার প্রচার না করা বা আমার দায়িত্ব পালন না করা, সেটা কি আদৌ বিশ্বাস? তা ছাড়া, ঈশ্বরের বাণী নিয়ে একত্রিত না হয়ে বা আলাপ-আলোচনা না করে শুধু ঘরে বসে থাকলে, আমি জীবনে খুব ধীরে উন্নতি করব।” আমি জানতাম আমি আমার স্বামীর কথা শুনতে পারব না। তারপর সে আমাকে মিষ্টি কথায় বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগল: “আমি ভালো করে তোমার যত্ন নিইনি। তোমার প্রতি অন্যায় করেছি। আমি কিছুদিন কাজে যাব না। আমি তোমার এবং আমাদের ছেলের সঙ্গে বাড়িতে থাকব। তোমার যেখানে ইচ্ছে আমি তোমার সঙ্গে যাব এবং তুমি যা চাইবে তাই কিনে দেব। আমি শুধু তোমাকে সুখী দেখতে চাই!” ওর এত মিষ্টি কথা শুনে আমি একটু নড়ে গেলাম, কিন্তু আমি দ্রুত বুঝতে পারলাম যে এটা শয়তানের আরেকটা কৌশল। আমি নীরবে প্রার্থনা বললাম যে আমি আমার বিশ্বাস বজায় রাখব এবং আমার দায়িত্ব পালন করব, যাই হোক না কেন। কিন্তু এরপর থেকে, আমি যেখানেই যেতাম আমার স্বামী আমাকে অনুসরণ করতে থাকল। আমি ভীত ছিলাম যে সে আমার সম্পর্কে রিপোর্ট করলে অন্যরা বিপদে পড়বে, তাই আমি ভ্রাতা ও ভগিনীদের সঙ্গে দেখা করার সাহস পেলাম না। আমি আমার গ্রেপ্তারের আগের জীবনের জন্য আকাঙ্ক্ষা করতাম। আমি ভাবতাম তখন কেমন, আমি একত্রিত হয়ে ভ্রাতা ও ভগিনীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে এবং আমার দায়িত্ব পালন করতে পারতাম। কিন্তু এখন, আমি সমাবেশে যোগ দিতে পারছিলাম না এবং প্রতিটি মোড়ে সীমাবদ্ধ ছিলাম। আমি আমার বিশ্বাস অনুশীলন করতে পারছিলাম না বা স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারছিলাম না। এবং আমার স্বামী, সরকারের দ্বারা ভীত হয়ে, আমাকে আমার বিশ্বাস পরিত্যাগ করাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল, বা আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ হবে। আমি যে নির্বাচনের সম্মুখীন হয়েছিলাম তার চিন্তায় আমি পীড়িত ছিলাম। সত্যি বলতে, আমি আশা করেছিলাম যে আমার স্বামী আমার সঙ্গে আমার বিশ্বাসে যোগ দেবেন এবং আমাদের বিচ্ছেদ হবে না। সেই সময়ে, প্রতিটি দিন একটা বছরের মত মনে হত। চোখের জলে, আমি ঈশ্বরের সামনে প্রার্থনা করলাম: “হে ঈশ্বর, আমাকে নির্বাচন করতে হবে ভেবে আমি খুব দুর্বল ও আহত বোধ করছি। আমি জানি না আমাকে কী করতে হবে। দয়া করে আমাকে পথ দেখান!” তারপর, আমি ঈশ্বরের বাণীতে এটা পড়লাম: “বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসী সঙ্গতিপূর্ণ নয়; বরং তারা একে অপরের বিরোধী(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বর এবং মানুষ একসাথে বিশ্রামে প্রবেশ করবে)। “যে-ই ঈশ্বরের অবতারে বিশ্বাস রাখে না, সে-ই দানবপ্রকৃতির, এবং, উপরন্তু, সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। … যে ঈশ্বরকে চিনতে পারে না সেই হল শত্রু; অর্থাৎ, যে ঈশ্বরের অবতারকে চিনতে পারে না—তা সে এই স্রোতের ভিতরেই থাকুক অথবা বাইরে—সে খ্রীষ্টবিরোধী! ঈশ্বরে অবিশ্বাস করা সেই ঈশ্বর-প্রতিরোধকারীগণ ব্যতীত আর কে-ই বা শয়তান, আর কারা-ই বা দানব, আর কারা-ই বা ঈশ্বরের শত্রু?(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বর এবং মানুষ একসাথে বিশ্রামে প্রবেশ করবে)। এটা পড়ার পর, আমার গ্রেপ্তারের পর থেকে আমার স্বামী কীভাবে আচরণ করেছিল তা আমি আবার ভাবলাম। আমার বিশ্বাস পরিত্যাগ করার জন্য সে আমাকে বারবার বলেছিল, সে স্নেহ ব্যবহার করেছিল আমাকে প্রলুব্ধ করতে, বিবাহবিচ্ছেদ দিয়ে সে আমাকে চাপ দিয়েছিল, এবং এমনকি সে আমাকে আঘাতও করেছিল। এসব কিছু কি আমাকে ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করানোর জন্য ছিল না? ঈশ্বর যা বর্ণনা করেছেন, সে কি “ঈশ্বরে অবিশ্বাস করা সেই ঈশ্বর-প্রতিরোধকারীগণ”? আমার গ্রেপ্তারের কথা জানার পর সে প্রথম যে কাজটি করেছিল তা হল তার সৈন্যদলের নেতাকে বলা। সে তো নিজেকে রক্ষা করার জন্য, আমার কথা না ভেবেই এটা করেছিল, তাই না? তার ভবিষ্যৎ তার হৃদয়ে আমার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছিল। আমাকে বলা তার সব ভালো কথাই ছিল একটা অভিনয়! সে চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টিকে বেছে নিয়েছে, আর আমি ঈশ্বরকে বেছে নিয়েছি। আমরা দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে ছিলাম। আমরা একসঙ্গে কোন প্রকৃত সুখের জীবন যাপন করতে পারতাম না। এটা নিয়ে ভাবার পর আমি বুঝলাম যে আমাকে নিশ্চিতভাবে আমার বিশ্বাস এবং আমার পরিবারের মধ্যে নির্বাচনের সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু যখন আমি আমার স্বামীর সঙ্গে আমার এত বছরের কথা ভাবলাম, আমি খুব বিচলিত এবং দুঃখিত হলাম। আমি আবার ঈশ্বরের সামনে এসে প্রার্থনা করে তাঁর সুরক্ষা চেয়েছিলাম। আমি এর পরে ঈশ্বরের বাণীতে এটা পড়লাম: “সত্যের জন্য তোমাকে কষ্ট পেতে হবে, তোমাকে সত্যের প্রতি নিজেকে প্রদান করতে হবে, তোমাকে সত্যের জন্য অপমান সহ্য করতে হবে, এবং আরও বেশি করে সত্যকে অর্জন করতে তোমাকে আরও বেশি কষ্ট সহ্য করতে হবে। এটাই তোমার করা উচিত। একটি শান্তিপূর্ণ পারিবারিক জীবনের স্বার্থে তুমি সত্যকে ছুঁড়ে ফেলে দিও না, এবং ক্ষণিকের আনন্দের জন্য নিজের জীবনের মর্যাদা এবং সততা হারিয়ে ফেলো না। যা কিছু সুন্দর এবং যা কিছু ভালো, সে সব তোমার অন্বেষণ করা উচিত, এবং তোমার জীবনে আরো অর্থবহ পথ অনুসরণ করা উচিত। তুমি যদি এমন অমার্জিত জীবন যাপন করো, এবং কোনো উদ্দেশ্যের অনুসরণ না করো, তাহলে কি তুমি তোমার জীবন নষ্ট করছ না? এমন জীবন থেকে তুমি কী লাভ করতে পারো? একটি সত্যের জন্য তোমার যাবতীয় দৈহিক ইচ্ছা ত্যাগ করা উচিত, সামান্য ভোগ-বিলাসের জন্য যাবতীয় সত্যকে ত্যাগ করা উচিত নয়। এই ধরনের মানুষের কোন সততা বা মর্যাদা নেই; তাদের অস্তিত্ব অর্থহীন!(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, পিটারের অভিজ্ঞতাঃ তার শাস্তি ও বিচারের জ্ঞান)। ঈশ্বরের বাণী আমাকে অনুশীলনের পথ দিয়েছে এবং আমার বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করেছে। আমি প্রার্থনা করতে ঈশ্বরের সামনে হাজির হলাম। “হে ঈশ্বর! যদি বিবাহবিচ্ছেদও হয়, তবুও আমি আপনাকে অনুসরণ করব! দয়া করে আমাকে শক্ত করুন এবং আমাকে আপনার পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য বিশ্বাস দিন।”

একদিন আমি আমার স্বামীর থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছিলাম, তাই আমি কয়েকজন ভ্রাতা ও ভগিনীর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। বাড়িতে এসে দেখি আমার স্বামী পরিবারের কয়েকজন সদস্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ লাল ছিল এবং তাকে সত্যিই বিচলিত দেখাচ্ছিল। আমাদের কিছু আত্মীয়কে দুঃখী এবং বিষণ্ণ দেখাচ্ছিল, অন্যদের দেখে বেশ ক্ষিপ্ত মনে হচ্ছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে শয়তান আবার আমাকে অবরোধ করছে, এবার আমার পরিবারকে ব্যবহার করে। আমি দ্রুত ঈশ্বরের কাছে নীরবে প্রার্থনা করলাম। তাঁর বাণী থেকে আমি এটা স্মরণ করলাম: “ঈশ্বর যাদের ‘জয়ী’ বলে অভিহিত করেন, তারা হল সেই মানুষজন যারা শয়তানের প্রভাবে থেকেও এবং শয়তানের দ্বারা অবরুদ্ধ থেকেও, অর্থাৎ তারা যখন নিজেদের অন্ধকারের শক্তির মধ্যে নিমজ্জিত থাকে তখনও ঈশ্বরের হয়ে সাক্ষ্য দিতে পারে এবং তাঁর প্রতিবিশ্বাস এবং নিষ্ঠা প্রদর্শন করতে পারে। তুমি যদি এখনও ঈশ্বরের সামনে সমস্ত কিছু নির্বিশেষে শুদ্ধ হৃদয় রাখতে সক্ষম হও অথবা ঈশ্বরের প্রতি খাঁটি ভালোবাসা বজায় রাখতে পারো, তাহলেই তা ঈশ্বরের হয়ে সাক্ষ্যদান হিসাবে ধরা যেতে পারে এবং ঈশ্বর একেই ‘জয়ী’ হিসাবে অভিহিত করেন(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরের প্রতি তোমার ভক্তি বজায় রাখা উচিত)। ঈশ্বরের বাণী আমাকে বিশ্বাস ও শক্তি দিয়েছিল এবং আমি মনে মনে স্থির করেছিলাম যে আমার পরিবার যা-ই করুক না কেন, আমি কখনোই ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করব না। আমি তাঁর সাক্ষী হয়ে দাঁড়াব!

একটা ক্রুদ্ধ অভিব্যক্তি নিয়ে, আমার মাসি আমাকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কোনও সমাবেশে গিয়েছিলে, তাই না? তুমি কি আদৌ এই পরিবারকে চাও?” তারপর আমার মামা আমাকে চিৎকার করে বলল, “ঈশ্বর? কোনও ঈশ্বর নেই! চীন একটা নাস্তিক দেশ এবং কমিউনিস্ট পার্টি তার দায়িত্বে রয়েছে। তুমি যদি বিশ্বাস করতে চাও তবে পার্টিতে বিশ্বাস কর!” তারপর সে তার ফোনে কমিউনিস্ট পার্টির কিছু মিথ্যা কথা তুলে ধরে বলল, “দেখো, যেহেতু তুমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন, তুমি প্রধান জাতীয় লক্ষ্যে পরিণত হবে। বিশ্বাসীরা তাদের পুরো পরিবারকে নিয়ে শেষ হয়ে যায়! নিজের জন্য না হোক, অন্তত তোমার সন্তানের কথা ভাবো!” তারপর আরেক মাসি বলে উঠল, “তোমাদের দুজনের খুব বেশি দিন বিয়ে হয়নি আর দাম্পত্যও তোমাদের জন্য সহজ হয়নি। তুমি তোমার পরিবারকে এইভাবে আলাদা হয়ে যেতে দিতে পারো না! তুমি যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস না করতে, তাহলে কি তোমার পরিবার এখন এই বিশৃঙ্খলায় থাকত?” সবাই তার কথার সঙ্গে সহমত হয়ে কথা বলতে লাগলেন। ওদের সবার কথা শুনে আমার খুব রাগ হল। আমি তখন ন্যায্যভাবে এবং কঠোরভাবে তাদের বললাম, “কে এই পরিবারকে ভাঙ্গতে চায়? সঠিক পথ অবলম্বন করা কি ভুল? কমিউনিস্ট পার্টি বিশ্বাসীদের নিন্দা ও গ্রেফতার করে এবং আমাকে জেলে বন্দি করতে চায়। এটা তোমাদের সবাইকে হুমকি দিয়েছে এবং আমার স্বামীকে আমার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করার জন্য চাপ দিয়েছে। এই সবকিছু কমিউনিস্ট পার্টি করেছে! তোমরা চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টিকে ঘৃণা কর না, বরং, পরিবর্তে, তোমরা সেটার পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে বাধ্য কর ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য। এটাই কি আমার এবং পরিবারের জন্য সবচেয়ে ভালো?” আমি এটা বলার পর আরেক মামা বললেন, “এটা সত্যি, পার্টিকে বিশ্বাস করা যায় না, কিন্তু সেটাই এখন ক্ষমতায় আছে। তুমি যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস কর তবে সেটা তোমাকে কোনও করুণা দেখাবে না। তুমি জেলে যাবে। আমরা কেবলমাত্র সাধারণ মানুষ। আমরা কীভাবে পার্টির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি? শুধু আমার পরামর্শ গ্রহণ কর। তোমার বিশ্বাস পরিত্যাগ কর। তোমার পরিবারকে একসঙ্গে রাখা হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ!” আমি তখন তাঁদের বললাম, “বিপর্যয় এখন আরো বড়ো হচ্ছে। যখন মহাবিপর্যয় আসবে, তখন যারা ঈশ্বরের বিরোধিতা করে তাদের দণ্ডিত করা হবে। শুধুমাত্র বিশ্বাসী মানুষ যারা ঈশ্বরের কাছে অনুতপ্ত হয়েছে তারাই তাঁর সুরক্ষা লাভ করবে। শুধুমাত্র সত্যিকারের বিশ্বাসীদের একটা ভালো ভবিষ্যৎ এবং ভাগ্য আছে। বিশ্বাস ছাড়া আর কী ধরনের ভবিষ্যৎ হতে পারে? তোমরা সবাই আমার প্রিয়জন। আমি সত্যিই আশা করি তোমার ঈশ্বরের দ্বারা উদ্ধার হও এবং বিপর্যয়ে তোমাদের মৃত্যু না ঘটে, যে কারণে আমি বারবার তোমাদের সুসমাচার শুনিয়েছি। কিন্তু গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে, এটাই প্রকৃত পথ জানা সত্ত্বেও তোমরা তা বিশ্বাস করার সাহস কর না। এখন তোমরা আমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছ, আমাকে ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে বাধ্য করার চেষ্টা করছ। তোমরা ভয় পাচ্ছ না যে বিপর্যয় এলে, কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে তোমরাও দণ্ডিত হবে?” আমি এটা বলার পর, প্রথম মামার মুখ রাগে লাল হয়ে গেল এবং তিনি আমাকে ভয়ানক হুমকি দিল: “তুমি বিশ্বাস রাখলে আমি তোমাকে দণ্ডিত করব! আমি তোমার নামে পুলিশে নালিশ করব, তুমি জেলে যাবে!” এটা বলেই সে তার ফোন বের করে ডায়াল করতে লাগলেন। আমার মাসি ছুটে গিয়ে তার থেকে ফোন কেড়ে নিল। আমার মামাকে এই কাজটা করতে দেখে আমি খুবই হতাশ হয়ে পড়লাম। এরা কোন ধরনের পরিবার? এটা একটা রাক্ষসের কাজ! আমি তাদের বললাম, “তোমরা আমার প্রবীণ এবং আমি তোমাদের সম্মান করি, কিন্তু আমার বিশ্বাসের পথ বেছে নেওয়ার জন্য, আমি কখনোই কাউকে বলতে দেব না আমাকে কী করতে হবে! আমি কোনোভাবেই আমার বিশ্বাস পরিত্যাগ করব না, ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা এবং চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টিকে অনুসরণ করব না যেমন তোমরা চাও!” তারপর আমার স্বামী আমাকে এত জোরে আঘাত করেছিল যে আমি মেঝেতে পড়ে গিয়েছিলাম। আমার চশমা উড়ে গিয়ে ঘরের আরেক দিকে পড়ল। সে আমার দিকে ইশারা করে চিৎকার করে বলল, “তুমি কি চাও, ঈশ্বর, নাকি এই পরিবার? তুমি বিশ্বাস করে গেলে আমি এখনই তোমার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করব!” আমি দেখলাম আমার স্বামী তার নিজের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য আমার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করতে ইচ্ছুক। আমি সত্যিই আহত হয়েছিলাম এবং কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি ঘৃণাতে ভরে গিয়েছিলাম। আমি নীরবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, “আমি তবুও ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করব যদি আমাকে আমার ভালবাসাকে হারাতে হয়!” মাস দুয়েক পর আমাদের বিবাহবিচ্ছেদের দিন এল। আমার স্বামী আমাকে ডেকে বলল, “সৈন্যদলের নেতা আগামীকাল আমাদের সঙ্গে নাগরিক বিষয়ক দফতরে যাচ্ছেন বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে।” তার এই কথা শুনে আমি ভাবতে বাধ্য হয়েছিলাম যে আমাদের সম্পূর্ণ সুন্দর পরিবারটা কীভাবে চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি দ্বারা ভেঙ্গে গিয়েছিল। চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি এত মন্দ, এত জঘন্য! পরের দিন, সৈন্যদলের নেতার সতর্ক নজরদারিতে আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ চূড়ান্ত হয়েছিল। আমার স্বামী এবং আমি আমাদের পৃথক পথে চলে গেলাম। আমি ঈশ্বরকে অনুসরণ করে গিয়েছিলাম এবং সুসমাচার প্রচার করে গিয়েছিলাম, আমার দায়িত্ব পালন করছিলাম। এটা আমার নির্বাচন, এবং আমি কখনোই অনুশোচনা করব না! ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

অসুস্থতার মাধ্যমে লব্ধ ফল

২০০৭ সালটা ছিল আমার জীবনের এক বিরাট সন্ধিক্ষণ। গাড়ি দুর্ঘটনায় আমার স্বামী শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। দুই সন্তানই তখনো ছোট পরিবারের জন্য সেটা ছিল...

আশীর্বাদের জন্য সাধনা কি ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ?

২০১৮-তে, আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজকে মেনে নেওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছি। আমি প্রভুর প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানানোর সুযোগ পেয়েছি...

Leave a Reply

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন