চতুর ও প্রতারক হওয়ার ফলে পাওয়া যন্ত্রণাময় শিক্ষা
২০২০ সালে আমি গির্জায় নকশা করতাম, মূলত খসড়ার কাজ। কিছুদিন পরে, দেখলাম খসড়া তৈরি অন্যান্য কাজের তুলনায় ধীর গতির। সুপারভাইজার অন্যদের কাজও দেখত, তাই আমাদের কাজের খবর বেশি রাখত না। কাজে অবহেলা শুরু করলাম। কেউ তাড়া দিত না, তাই রোজকার কাজটুকুই করতাম। দেখলাম বসে না থেকে প্রতিদিন কিছু একটা করলেই কাজ চলে যায়। যাই হোক, কাজটা আরামেরই ছিল। আমার তাড়াহুড়ার বা পরিশ্রমের কোনো দরকারই ছিল না। দলে আমিই প্রধান কর্মী ছিলাম; কাজ ও তার নীতি সম্পর্কে সব থেকে ভালো জানতাম। তাই নিশ্চিত ছিলাম আমাকে দায়িত্বে রাখা হবে, আর শেষ পর্যন্ত বেঁচে যাবো। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে, আমার দৈনিক লক্ষ্য বা পরিকল্পনার কিছু ছিল না। আমি যতটা পারতাম করতাম, আর তাতেই খুশি থাকতাম। অলস বসে না থাকলেও, আমি যথেষ্ট আরামেই ছিলাম। যখন নকশা আঁকতাম, মনোযোগ দিতে বেশ কষ্ট হত। চ্যাটিং সফটওয়্যারে কোনো মেসেজ এলেই সঙ্গে সঙ্গে দেখতাম, আর উত্তরও দিতাম, তা সে গুরুত্বপূর্ণ হোক বা না হোক। এই ছুতোয় অজান্তেই বেশ কিছু সময় নষ্ট করতাম। মাঝে মাঝে সকালে সমাবেশ থাকত, সেদিন সময়ের সদ্ব্যবহার করলে তিনটে নকশা আঁকা সম্ভব হতো, কিন্তু একটা আঁকা শেষ করেই আমার আত্মতুষ্টি এসে যেত, এই ভেবে যে, সকালের সমাবেশেই যেহেতু অর্ধেক দিন গেছে, তাই দুটো নকশা আঁকাই যথেষ্ট। তাই ধীরে-সুস্থে দুটো এঁকেই শেষ করতাম। শুধু তাই নয়, অবসর সময়ে খবরও দেখতাম। আমি জীবনে প্রবেশের অথবা দায়িত্ব পালনের সমস্যার কথা চিন্তাও করিনি। সেই সময়, শুধু দায়িত্ব পালনেই জোর দিয়েছি, ঈশ্বরের বাক্য পড়িনি বা নিজেকে নিয়ে ভাবিনি। নিজের ভ্রষ্টাচার দেখেও সমাধানে সত্যের সন্ধান করিনি। দেখলাম আমার কাজে বিশেষ অসুবিধা হচ্ছে না আর বেশ কিছু সংখ্যক নকশা এঁকে ফেলেছি, সুতরাং ঠিকমতই দায়িত্ব পালন করছি।
কাজের চাপ বাড়তে লাগল, কিন্তু আমাদের আঁকার গতি খুব ধীর ছিল বলে কাজ জমতে লাগল। এর মধ্যে একটা নকশার কাজ এক মাস ধরে আটকে ছিল। সুপারভাইজার এটা জানতে পেরে যখন আমাদের দৈনিক কাজের হিসাব দেখে তখন বুঝতে পারে আমরা কত কম কাজ করি আর আলস্য ও কর্তব্যে গাফিলতির জন্য আমাদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করে। এত কাজ জমা হওয়া সত্ত্বেও আমাদের মধ্যে কোনো তাড়া ছিল না কেউ তা জানায়ওনি। আমরা কাজে অযত্ন করেছি, কোনো দায়িত্ব নিইনি আর দেরিও করেছি, সবটাই সুসমাচার প্রচারের কাজে বাধা দিয়েছে। সুপারভাইজার এই কথা বলায় আমি সত্যিই অবাক হয়েছিলাম। মনে হত আমি বেশ ব্যস্ত থাকতাম আর অনেক কাজ করতাম, তাহলে খতিয়ে দেখার পর এত কম হল কী করে? আমি কি পরজীবীর মত গির্জার থেকে সুবিধা নিচ্ছিলাম না? এইভাবে চললে আমি বরখাস্ত ও বহিষ্কার হতাম। এরপরে সুপারভাইজারের তত্বাবধানে কাজে আমার দক্ষতা কিছুটা বাড়ে। কিন্তু জমা কাজের পরিমাণ দেখে উদ্বিগ্ন হলাম। বিশেষ করে, সুপারভাইজার কাজের উপর কড়া নজর রাখছিল, মাঝে মাঝে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করত, কোথায় অসুবিধা হচ্ছে দেখত। যখন দেখল আমরা আবার গাফিলতি করছি, সে আমাদের সাথে কঠোর ব্যবহার করল। বিরক্ত হলাম। বলা সহজ, কিন্তু করা কঠিন—মনে হল সে বড্ড বেশি চাইছে। মনে করছে এইসব নকশা আঁকা সহজ? আমি যথেষ্ট পরিশ্রম করছিলাম। যদি সবসময় এরকম দাবি করতে থাকে? আমি তো অতিমানব নই। আমার মনোভাব ছিল প্রতিরোধী, তাই আরো কষ্ট করতে বা মূল্য চুকাতে চাইছিলাম না। সুপারভাইজারকে দেখাতে কেবল উপরে উপরে তৎপরতা দেখাচ্ছিলাম। দ্রুত কাজ না করলে আমাকে মোকাবিলা করার ভয়ে। প্রতিদিনই অসম্ভব ক্লান্ত হয়ে পড়তাম, যেন জোর করে কাজ করানো হচ্ছিল। প্রায়ই ভাবতাম, যদি মুহূর্তেই সব নকশা এঁকে ফেলতাম তাহলে কী ভালোই না হতো, অন্যান্য ভগিনীদের ঈর্ষাও করতাম, ভাবতাম তাদের দায়িত্ব কত আরামের, আমার মত প্রতিদিন অসংখ্য নকশা আঁকতে হয় না। কাজটা কঠিন, ক্লান্তিকর, দ্রুত না করলে মোকাবিলা করা হয়। ভাবতাম এগুলো কোনো কাজই নয়। মনের অবস্থা ভালো না থাকায়, আমার কেবলই ঘুম পেত, রাতে আমার যথেষ্ট ঘুম হত, তাও দিনের বেলায় তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকতাম। নকশার কাজ করার জন্য শক্তি সঞ্চয় করতে হত। খেয়াল করলাম আমার সঙ্গে কাজ করা দুই ভগিনীর কিছু সমস্যা হচ্ছে। একজন কাজের নীতিগুলো বুঝছিল না আর ছোটখাট বিষয়ে সমালোচনা করে কাজের গতি কমিয়ে দিচ্ছিল। আর একজন সব সময়েই গাফিলতি করছিল, কিন্তু আমি হালকাভাবে সেগুলি ধরিয়ে দিই এবং পরে আর কাজের অগ্রগতির খবরও নিই নি, আর আমাদের নেতাকেও কিছু বলিনি। আমাদের দলনেতা সমস্যাটা ধরতে পেরে তাতে হস্তক্ষেপ করে, কিন্তু ততদিনে আমাদের কাজ আটকে গেছে।
একদিন নেতা আমাকে আচমকা ডেকে বলে, “তুমি দায়িত্ব পালনে তাচ্ছিল্য, চাতুর্য্য আর প্রতারণা করছ। একমাত্র জোর করলেই তুমি চেষ্টা কর। তুমি ঈশ্বরের জন্য নিজেকে যথার্থভাবে ব্যয় করোনি। তাই তোমাকে বরখাস্ত করা হল। তবে চাইলে তুমি নকশার কাজ খণ্ডকালিন করতে পারো। সত্যিকারের অনুতপ্ত হলে ভবিষ্যতে তোমাকে ফেরানো হতে পারে।” আমার সম্পর্কে নেতার মনোভাব দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। আমি সত্যিই এইভাবেই কাজ করছিলাম, কিন্তু অবস্থাটা এত অকস্মাৎ এল, আমি তখনই বাস্তবতা মেনে নিতে পারিনি। আমি স্বীকার করি কাজ বিলম্বিত করেছি আর তা সত্যিই ক্ষতি করেছে। আমি সত্যিই ঘৃণ্য ছিলাম, অনুতাপ ও আত্মগ্লানিতে ভরা, আর বুঝেছিলাম ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণ স্বভাব মানুষের কোনো অপরাধ সহ্য করে না। ঈশ্বর যখন কাউকে দেখেন, তাদের ব্যবহার কেমন অথবা তারা কতটা ব্যস্ত তা দেখেন না। দেখেন সত্যের প্রতি এবং দায়িত্বের প্রতি তাদের মনোভাব। দায়িত্বের প্রতি আমার মনোভাব সত্যিই শিথিল ছিল, অবহেলায় ধীর গতিতে কাজ করতাম, অন্যদের সব সময়ই আমাকে ঠেলতে হত। মোকাবিলার পরেও আমি নিজেকে বদলাইনি, অনেক আগে থেকেই ঈশ্বরকে বিরক্ত করছি। বরখাস্ত হওয়া ছিল ঈশ্বরের শোধন ও অনুশাসন। আমারই সব দোষ ছিল—আমি কর্মফলই পেয়েছিলাম। আত্মসমর্পণে প্রস্তুত হলাম, আত্মমন্থন করলাম আর আগের অধর্মের জন্য অনুতপ্ত হলাম। কিন্তু একটা কথা আমি বুঝতে পারিনি যে, প্রথমে ভালোভাবে কাজ করতে চাইলেও, পরে আমি কেন এইভাবে কাজ করতে থাকি? এর কারণ কী ছিল? বিভ্রান্তির মধ্যে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, যেন আমাকে সমস্যা বুঝতে আলোকিত করেন।
তারপর আমি ঈশ্বরের বাক্যের একটা পরিচিত অনুচ্ছেদ পড়লাম: “প্রকৃতপক্ষে, যদি তোমরা তোমাদের দায়িত্ব আন্তরিক এবং দায়িত্বশীল ভাবে পালন করতে, তাহলে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা বলার জন্য এবং ঈশ্বরের সামনে সাক্ষ্য বহনের জন্য পাঁচ ছয় বছর সময়ও লাগত না, এবং গির্জার বিভিন্ন রকমের কাজ প্রবল প্রভাব সহ সম্পাদিত হতো—কিন্তু তুমি ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি মনোযোগী হতে ইচ্ছুক নও, আবার সত্যের প্রতিও সচেষ্টও নও। কিছু কিছু কাজ কীভাবে করতে হবে তা তোমরা জানো না, তাই আমি তোমাদের যথাযথ নির্দেশ দিই। তোমাদের চিন্তাভাবনা করতে হবে না, শুধুমাত্র তা শুনে, পালন আরম্ভ করতে হবে। শুধু এইটুকু দায়িত্বই তোমাদের অবশ্যগ্রহণীয়—কিন্তু সেটুকুও তোমাদের আয়ত্তের বাইরে। তোমাদের বিশ্বস্ততা কোথায়? তা কোথাও দেখা যায় না! তোমরা নিছক শ্রুতিমধুর কথাটুকুই বলো। অন্তরে, তোমরা জানো কী করা উচিত, কিন্তু সত্যের পালন করোই না। এ হল ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা, এবং মূলগতভাবে, এ হল সত্যপ্রেমের অভাব। তোমরা নিজেদের হৃদয়ে সম্পূর্ণ ভালোভাবেই জানো যে কীভাবে সত্য অনুসারে কাজ করতে হয়—তোমরা নিছক তা অনুশীলন করো না। এ হল এক গুরুতর সমস্যা; তোমরা সত্য পালন না করে সেটার দিকে তাকিয়ে আছ। তোমরা এমন ব্যক্তি নও যে ঈশ্বরকে বিন্দুমাত্রও মান্য করে। ঈশ্বরের গৃহে কর্তব্য পালনের জন্য, তোমাদেরকে অবশ্যই অন্ততঃপক্ষে সত্যের অনুসন্ধান ও পালন করতে হবে, এবং নীতি অনুসারে কাজ করতে হবে। যদি নিজের কর্তব্য সম্পাদনে তুমি সত্য পালন না করো, তাহলে তা কোথায় পালন করবে? আর যদি বিন্দুমাত্রও সত্যের পালন না করো, তাহলে তুমি হলে অবিশ্বাসী। যদি তুমি সত্য স্বীকার না করো—সত্য পালন করা তো আরোই দূরের কথা—এবং নিছক বিভ্রান্তভাবে ঈশ্বরের গৃহে বিচরণ করো, তাহলে তোমার উদ্দেশ্যটা বস্তুত কী? ঈশ্বরের গৃহকে কি তুমি তোমার অবসরকালীন বাসস্থান বা অন্নসত্র করতে চাও? যদি তাই হয়, তাহলে তুমি ভুল করেছ—ঈশ্বরের গৃহ পরনির্ভরশীল বা অকর্মণ্য মানুষজনের প্রতি যত্নশীল নয়। নগণ্য মানবতাসম্পন্ন যে কোনো ব্যক্তি, যে নিজের দায়িত্ব সানন্দে পালন করে না, যে দায়িত্বপালনে ক্ষেত্রে অনুপযুক্ত, তেমন সকলকে অবশ্যই অপসারণ করতে হবে; সমস্ত অবিশ্বাসী, যারা কোনোমতেই সত্য গ্রহণ করে না, তাদের সকলকে অবশ্যই পরিহার করতে হবে। কেউ কেউ সত্য উপলব্ধি করলেও, দায়িত্বপালনের সময় তা অনুশীলন করে না। যখন তারা কোনো সমস্যা দেখে, তা সমাধান করে না, আবার যখন দেখে কোনো কিছুতে তাদের দায়িত্ব রয়েছে, সেখানে নিজেদের যথাসর্বস্ব দেয় না। তুমি যে দায়িত্ব পালনে সক্ষম, তা যদি সম্পাদন না করো, তাহলে তোমার দায়িত্বের সম্ভাব্য মূল্য বা প্রভাব কী-ই বা আর হতে পারে? এইভাবে ঈশ্বরবিশ্বাস করা কি অর্থপূর্ণ? যে সত্য উপলব্ধি করেও তা পালনে অপারগ, যে তার সহনীয় কষ্ট সহ্য করতে পারে না—তেমন মানুষ দায়িত্বপালনে অনুপযুক্ত। কেউ কেউ দায়িত্বপালন করে নিছকই খাদ্যসংস্থানের উদ্দেশ্যে। তারা হল ভিখারি। তারা ভাবে যে, ঈশ্বরের গৃহে তারা যদি কিছু কাজ করে, তাদের খাদ্য ও বাসস্থান সুনিশ্চিত করা, কর্মসংস্থানের প্রয়োজন ছাড়াই তাদের সেগুলো সরবরাহ করা হবে। এহেন দরকষাকষি কি আদৌ করা যায়? ঈশ্বরের গৃহ নিষ্কর্মাদের জন্য সরবরাহ করে না। যে ব্যক্তি সামান্যতম সত্যেরও অনুশীলন করে না, যে দায়িত্বপালনে ক্রমাগত অমনোযোগী ও দায়সারা, সে যদি বলে যে সে ঈশ্বরে বিশ্বাসী, তাহলে ঈশ্বর কি তাকে স্বীকার করবেন? এই ধরনের সমস্ত মানুষ অবিশ্বাসী, এবং ঈশ্বরের দৃষ্টিতে মন্দ কর্ম সংঘটনকারী” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, উত্তমরূপে দায়িত্ব পালন করতে হলে, ন্যূনতমভাবে যা প্রয়োজন তা হল বিবেক এবং যুক্তিবোধ)। ঈশ্বর যেন তার বাক্য দিয়ে আমার কাছে আমাকেই প্রকাশ করছেন। বলছেন ঠিক কীভাবে আমি কাজ করি। আমি পরপর ঘটনাগুলো মনে করলাম। যখন দেখেছিলাম সুপারভাইজার ঠিকমতো কাজের তদারক করে না, আমি তার সুযোগ নিয়ে ধূর্ত ও চতুর হয়ে গেলাম। অলস বসে না থাকলেও, বেশি কাজ করতাম না। অবসর সময়ে, আমার দায়িত্বের সমস্যা অথবা জীবনে প্রবেশের কথা ভাবতাম না, কৌতূহলের বশে খবর দেখতাম—আমার হৃদয়ে কিছুই যথার্থ ছিল না। কাজের গতিকে কমিয়ে দেয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণ অচেতন ছিলাম। সুপারভাইজার মোকাবিলা ও ছাঁটাইয়ের কথা বলার পরে কাজের দক্ষতা সামান্য বাড়িয়েছিলাম, কিন্তু আমি জোর করে চেষ্টা করেছিলাম যাতে বরখাস্ত না হই। তার তদারকি ও তত্বাবধানে আমি প্রতিরোধী ও বিরক্ত হচ্ছিলাম, এমনকি দায়িত্ব পালনেও বিরক্ত হচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল এটা পুরস্কারহীন কঠিন কাজ। জানতাম আমার সঙ্গে কাজ করা ভগিনীদের একজন গাফিলতি করছিল, কিন্তু আমি দেখেও দেখিনি। বুঝেছিলাম দায়িত্বের প্রতি আমার কোনো আন্তরিকতা ছিল না, সত্যের অনুশীলন বা ঈশ্বরের ইচ্ছার বিবেচনা একেবারেই করছিলাম না। কেবল দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্য ও আরামের কথা ভাবছিলাম। আমি ছিলাম গির্জা থেকে সুবিধা নেয়া এক পরজীবী। আমার কোনো বিবেক বা যুক্তিবোধ ছিল না! আমার ব্যবহার সেইসব অবিশ্বাসীদের থেকে আলাদা ছিল না যারা কেবল খেতে আর আশীর্বাদ পেতেই উৎসাহী। আমি দায়িত্ব পালন করিনি এই কারণে নয় যে আমি কাজটা বুঝতাম না বা সুনির্দিষ্ট দক্ষতা ছিল না। কারণ আমার মানবিকতার অভাব আর সত্যের অণ্বেষণ না করা, আর আমার দৈহিক আরামের জন্য ব্যাকুলতা। আমি গির্জার কোনো দায়িত্ব পালনেরই যোগ্য ছিলাম না।
নিজেকে জানতে আমি ঈশ্বরের বাক্যের কিছু অংশ পড়ি, “ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিসকল এখন তাদের কর্তব্য সম্পাদন করছে, এবং মানুষের কর্তব্য সম্পাদনের ভিত্তিতেই ঈশ্বর মানুষের একটি দলকে নিখুঁত করে তোলেন এবং অপর দলকে পরিহার করেন। অতএব, কর্তব্য পালনই প্রতিটি ধরনের লোককে প্রকাশিত করে এবং কর্তব্য পালনের সময়েই প্রতিটি ধরনের প্রবঞ্চক, অবিশ্বাসী এবং মন্দ লোক প্রকাশিত এবং বহিষ্কৃত হয়। যারা নিজেদের দায়িত্ব বিশ্বস্তভাবে পালন করে, তারা সৎ ব্যক্তি; যারা ক্রমাগত অমনোযোগী এবং উদাসীন থাকে, তারা হল প্রবঞ্চক, চতুর ব্যক্তি এবং তারা অবিশ্বাসী; আর যারা নিজেদের কর্তব্য পালনের সময় বাধা ও বিঘ্ন সৃষ্টি করে, তারা মন্দ লোক, তারা খ্রীষ্টবিরোধী। … দায়িত্বপালনের সময়ে সমস্ত মানুষই প্রকাশিত হয়—শুধু কারোর ওপর একটা দায়িত্ব দাও, তাহলেই তারা সৎ না প্রতারক, এবং তারা সত্যপ্রেমী কি না, তা প্রকাশ পেতে বেশি সময় লাগবে না। সত্যপ্রেমীগণ আন্তরিকভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারে এবং ঈশ্বরের গৃহের কাজকে তুলে ধরে; যারা সত্যপ্রেমী নয়, তারা ন্যূনতম মাত্রাতেও ঈশ্বরের গৃহের কাজ তুলে ধরে না, এবং নিজেদের কর্তব্য সম্পাদনের বিষয়েও তারা দায়িত্বজ্ঞানহীন। যাদের দেখার চোখ আছে, তাদের কাছে তা দৃশ্যমান। যারা খারাপভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে, তাদের কেউই সৎ বা সত্যপ্রেমী নয়; তারা সকলেই উদ্ঘাটিত এবং বহিষ্কৃত হওয়ার লক্ষ্য। নিজেদের দায়িত্বপালনের সময়, মানুষের অবশ্যই দায়িত্বজ্ঞান ও দায়ভারের বোধ থাকতে হবে। এইভাবে, কাজ যে যথাযথভাবে সম্পন্ন হবে, সে সম্পর্কে কোনো প্রশ্নই থাকে না। অনুচিত হলেও যদি, কারো মধ্যে দায়িত্বজ্ঞান ও দায়ভারের বোধ না থাকে, এবং তাকে সমস্ত কিছু করার ক্ষেত্রে নির্দেশ দিতে হয়, এবং সে যদি সর্বদা হঠকারী ও উদাসীন থাকে, এবং সমস্যা দেখা দিলে যদি সে অন্য কারো উপর দোষারোপ করতে চায়, যার ফলস্বরূপ সমস্যাগুলি বিদ্যমান ও অমীমাংসিত থেকে যায়—তখনও কি কাজটা ভালোভাবে করা যেতে পারে? এহেন দায়িত্বপালন কি কোনো প্রভাব ফেলতে পারে? তাদের জন্য আয়োজিত কোনো কাজই তারা করতে চায় না, এবং অন্যান্যদের কাজে সহায়তার প্রয়োজন দেখার পরেও সে বিষয়ে মাথা ঘামায় না। শুধুমাত্র যখন তাদের আদেশ করা হয়, অগত্যা এবং অনন্যোপায় হলে তবেই তারা কিছুটা কাজ করে। তাদের দায়িত্বপালন এমন হওয়া উচিত নয়—এমনটা হল চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকের মতো হওয়া! চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক কোনো নিয়োগকারীর হয়ে কাজ করে, একদিনের কাজের জন্য একদিনের মজুরি পায়, এক ঘণ্টার কাজের জন্য এক ঘণ্টার পারিশ্রমিক পায়। তারা অর্থ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। মনিব দেখতে পয় না, এমন কোনো কাজ করতে তারা ভয় পায়, তারা যাকিছু করে, তার জন্য পুরস্কৃত না হওয়ার ভয়ে তারা ভীত, তারা শুধুমাত্র দেখনদারির জন্য কাজ করে—যার অর্থ তাদের কোনো আনুগত্য নেই” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র সৎ হওয়ার মাধ্যমেই প্রকৃত মানুষ হিসাবে জীবনযাপন করা যায়)। “ঈশ্বরের বিশ্বাস হল জীবনের সঠিক পথে চলা, এবং মানুষকে অবশ্যই সত্য অন্বেষণ করতে হবে। এ হল আত্মা এবং জীবনের এক বিষয়, এবং অবিশ্বাসীদের সম্পদ ও গৌরবের সাধনা, নিজেদের সুপরিচিত বা বিখ্যাত করার থেকে এ হল পৃথক এক বিষয়। এগুলি ভিন্ন পথ। কাজ করাকালীন, অবিশ্বাসীরা ভাবে যে, কীভাবে কম কাজ করে বেশি অর্থ উপার্জন করা যায়, আরো বেশি রোজগারের জন্য কোন ছলনাময় কৌশল ব্যবহার করা যায়। তারা সাড়া দিন ধরে ভাবে কীভাবে বড়লোক হওয়া যায় এবং পরিবারের জন্য সম্পদ অর্জন করা যায়, এমনকি তারা নিজেদের লক্ষ্য পূরণের জন্য নীতিহীন উপায়ও অবলম্বন করতে পারে। এ-ই হল মন্দের পথ, শয়তানের পথ, এবং এ-ই হল সেই পথ, যে পথে অবিশ্বাসীরা হাঁটে। ঈশ্বরে বিশ্বাসীরা যে পথে চলে, তা হল সত্য অনুসরণ এবং জীবন অর্জনের পথ; এ-ই হল ঈশ্বরকে অনুসরণ এবং সত্য অর্জনের পথ” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র সৎ হওয়ার মাধ্যমেই প্রকৃত মানুষ হিসাবে জীবনযাপন করা যায়)।
ঈশ্বরের বাক্য থেকে শিখেছি অবিশ্বাসীদের কাজ লেনদেনের মতো—করে টাকা পেতে আর স্বার্থ সিদ্ধি করতে। এমনকি কোনো কাজ না করেও টাকা রোজগার করতে চায়। যখন কেউ কাজের তদারকি করে, তখন তারা কাজ করার ভান করে, কিন্তু যখন কেউ দেখে না, তখন তারা প্রতারণা করে। কাজ যে পর্যায়েই থাকুক না কেন তা নিয়ে চিন্তা করে না। তারা কেবল টাকা চায়। বুঝতে পারলাম আমি ঠিক এই রকম। যখন কাজে কোনো চাপ থাকে না, কোনো কষ্ট থাকে না, অথবা মূল্য চুকাতে হয় না, তখন দায়িত্ব পালন করতে ভালোই লাগত। ভাবতাম যতক্ষণ অলস বসে না থেকে কিছু কাজ করছি, আমাকে বাদ দেওয়া হবে না, আমি গির্জায় থাকার যোগ্যতা রাখব আর শেষ পর্যন্ত বেঁচে যাব, এক ঢিলে দুই পাখি মারব। আমাকে অলস মনে হত না আর অন্যরাও কোনো সমস্যা দেখত না, কিন্তু আমি কাজে সবটুকু দিচ্ছিলাম না—সামান্য কাজেই সন্তুষ্ট ছিলাম। বাকি সময়ে আমি কিছু গুরুত্বহীন তথ্যে চোখ বোলাতাম, অভিনব কিছু পেতে অদরকারি জিনিসে ব্যস্ত থাকতাম। কেবল আলস্যই করছিলাম। নেতার হয়ে কোনো অবিশ্বাসীর কাজ করার মতো। আমাদের কাজে যখন দেরি হত, ভাব দেখাতাম এটা কোনো ব্যাপার না আর তাড়াহুড়াও করতাম না। যখন ধরিয়ে দিয়ে মোকাবিলা করা হল, আমি মুখ রক্ষার্থে আর ছাঁটাই এড়াতে কিছুটা চেষ্টা করলাম, কিন্তু যখনই কাজের চাপ বাড়ানো হল, আমি প্রতিবাদ ও অভিযোগ করলাম, আরো সহজ ও আরামদায়ক দায়িত্ব চাইলাম। মনে হচ্ছিল যে আমি দায়িত্ব পালন করছি, কিন্তু তা নিছকই শেষ করছি সুপারভাইজারকে দেখাতে। নিজের দায়িত্ব অথবা ঈশ্বরের প্রতি আমার কোনো আন্তরিকতা ছিল না। আমি সামান্য মূল্য দিয়ে স্বর্গরাজ্যের আশীর্বাদ লাভ করতে চেয়েছিলাম। এটা ঈশ্বরের সঙ্গে লেনদেন করার চেষ্টা। আমি কখনো ভাবিনি যে এত বছর দায়িত্ব পালন করার পরে আমি চতুর ও ধূর্ত হিসাবে উন্মোচিত হব। আমি ঈশ্বরের দেওয়া সমস্তকিছু এবং তাঁর বাক্যের পরিপোষণ উপভোগ করলেও, নিজের দায়িত্ব পালনে স্বাচ্ছন্দ্য ও আরাম খুঁজেছি, কষ্ট হবে না এমন কাজই করেছি, বিবেচনা করিনি গির্জার কাজ অথবা ঈশ্বরের জরুরি ইচ্ছা। ঈশ্বরের প্রতি আমার কোনো শ্রদ্ধা ছিল না। এ কেমন দায়িত্ব পালন করা? আমি স্পষ্টতই গির্জার কাজে দেরি করাচ্ছিলাম, আমি ছিলাম সুবিধাবাদী যে গির্জার সুযোগ নিচ্ছিল। নিজেকে নিয়ে চিন্তা করে বুঝলাম আমি এত স্বার্থপর ছিলাম কারণ শয়তানের দর্শনকে ধারণ করছিলাম, যেমন, “প্রত্যেক মানুষই নিজের জন্য এবং শয়তান সবচেয়ে পিছনের জনকে দখল করে,” “ভালো খাওয়া-পরার জন্যই কর্মকর্তা হওয়া” এবং “জীবন সংক্ষিপ্ত; পারলেই উপভোগ করো।” এগুলোই আমার জীবন হয়ে গিয়েছিল। এই সব চিন্তায়, আমি কেবল আমার দৈহিক স্বার্থের কথাই ভাবতাম। ভেবেছিলাম জীবনে আমাদের নিজেদের প্রতি সদয় থাকা উচিত, নিজেদের ক্লান্ত করে অতিরিক্ত পরিশ্রম করা্র কোনো মানে নেই। স্বাধীন ও সহজ থাকাই ভালো, আর দুশ্চিন্তা করা ও পরিশ্রান্ত হওয়া মানে হেরে যাওয়া। দায়িত্বের প্রতি আমার মনোভাব এমনই ছিল, বেপরোয়া আর অলস, যা শেষপর্যন্ত গির্জার কাজে দেরি করাত আর আমার চরিত্র নষ্ট করত। আমি বিশ্বাসী হলেও ঈশ্বরের বাক্য অনুশীলন না করে শয়তানের প্রতারণার নীতি মেনে চলতাম, ফলে অতিরিক্ত স্বার্থপর, ধূর্ত আর ভ্রষ্টাচারী হয়ে উঠি। আমার কোনো চরিত্র বা মর্যাদা ছিল না, আমি বিশ্বাসযোগ্যও ছিলাম না। কোনো অবিশ্বাসীও তার কর্মক্ষেত্রে, এইরকম সুবিধাবাদী মনোভাব নিয়ে কাজ করলে, হয়তো কিছুদিন পার পেয়ে যাবে, কিন্তু কিছুদিন পরে অন্যেরা সবই বুঝতে পারবে। আর আমি গির্জায় দায়িত্ব পালন করছিলাম, ঈশ্বরের সামনে, যিনি মানুষের হৃদয় ও ভাবনা দেখতে পান। আমি খেলছিলাম, চাতুরি করছিলাম, আর যদিও বেশ কিছুদিন ধরা পড়িনি, কিন্তু ঈশ্বর সবই দেখতে পাচ্ছিলেন, স্পষ্ট। দেখেছেন আমি নিজেকে তাঁর জন্য বিন্দুমাত্র ব্যয় করি, কোনোমতে কাজ চালিয়ে গেছি। তখন আমার মনে হয়েছিল—আশ্চর্যের কিছু নেই আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলাম, ঈশ্বরের উপস্থিতি অনুভব করতে পারিনি। কারণ আমি চতুর ও প্রতারক ছিলাম, যা ঈশ্বরের কাছে অসহ্য ও ঘৃণ্য। অনেক আগেই তিনি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। পবিত্র আত্মার কাজ ছাড়া আমি অত্যন্ত অসাড় হয়ে পড়ি, তাই আমি যত ভালো কাজই জানি অথবা যত অভিজ্ঞতাই থাকুক, ভালো কাজ করতে পারতাম না।
পরে আমি ঈশ্বরের আরো বাক্য পড়ি যা আমার কাছে কাজে নির্লিপ্ত থাকার স্বভাবকে স্পষ্ট করেছে, আর আমি দেখতে পেয়েছি যে ঈশ্বরের প্রকৃতি অলঙ্ঘনীয়। ঈশ্বর বলেন, “তুমি ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্বগুলিকে কীভাবে বিবেচনা করো তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি খুবই গুরুতর একটি বিষয়। ঈশ্বর মানুষের উপর যা অর্পণ করেছেন, তা যদি তুমি সম্পূর্ণ করতে না পারো, তাহলে তুমি তাঁর উপস্থিতিতে বসবাসের উপযুক্ত নও এবং তোমার শাস্তি পাওয়া উচিত। এটা স্বর্গের দ্বারা অভিষিক্ত এবং পৃথিবী দ্বারা স্বীকৃত যে, ঈশ্বর মানুষদের উপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন তা তাদের সম্পূর্ণ করা উচিত; এটি তাদের সর্বোচ্চ দায়িত্ব, এবং তাদের জীবনের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। যদি তুমি ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্বকে গুরুত্ব সহকারে না নাও, তাহলে তুমি তাঁর সাথে শোচনীয়তমভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করছো; এতে তুমি যিহূদার চেয়েও বেশি শোচনীয়, এবং তোমার অভিশপ্ত হওয়া উচিত। ঈশ্বর মানুষের উপর যা অর্পিত করেন তা কীভাবে দেখতে হবে, সে সম্পর্কে তাদের অবশ্যই একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ উপলব্ধি অর্জন করতে হবে, এবং অন্ততপক্ষে বুঝতে হবে যে তিনি মানবজাতির উপর যে দায়িত্বগুলি অর্পণ করেন তা ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া উন্নয়ন এবং বিশেষ অনুগ্রহ; এগুলিই সবচেয়ে মহিমান্বিত জিনিস। অন্য সব কিছু পরিত্যাগ করা যেতে পারে; এমনকি কাউকে যদি নিজের জীবনও উৎসর্গ করতে হয়, তবু তাকে অবশ্যই ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, মানব-প্রকৃতি জানার উপায়)। “একবার আমি একজনকে কিছু কাজের দায়িত্ব অর্পণ করেছিলাম। যেমন ভাবে আমি তাকে কাজটা বুঝিয়ে দিলাম, সে যত্ন সহকারে নিজের নোটবইতে সেটা লিখে রেখেছিল। সে যে কত যত্নসহকারে সেটা লিখেছিল, তা আমি দেখেছিলাম—মনে হচ্ছিল যেন সে সেই কাজের দায়ভারের একটা বোধ অনুভব করেছে এবং সে মনোযোগী, দায়িত্ববান মনোভাব দেখিয়েছিল। তাকে এই কাজ অর্পণ করার পর আমি কাজের অগ্রগতি বিষয়ক সংবাদের জন্য অপেক্ষা করতে লেগেছিলাম, দুই সপ্তাহ অতিক্রম হয়ে গেলেও তার তরফ থেকে কোনো উত্তরই আসে নি। তাই, তাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব নিজের ঘাড়েই নিয়েছিলাম, এবং তারপর তাকে যখন আমার দেওয়া কাজের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, সে বলেছিল, ‘ওহ, না—আমি এটার ব্যাপারে ভুলেই গিয়েছি! সেটা যেন কী ছিল, আমাকে আবারও বলুন।’ এই উত্তরটা শুনে তোমাদের কেমন লাগছে? কাজ করার সময় তার মনোভাব এই ধরনেরই ছিল। আমি ভেবেছিলাম, ‘এই ব্যক্তি সত্যিই বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমার সামনে থেকে সত্বর অপসৃত হও! আমি তোমায় আর দেখতে চাই না!’ আমি এমনটাই অনুভব করেছিলাম। সুতরাং আমি তোমাদের একটা বাস্তবিক বিষয়ে বলব: তুমি কখনোই ঈশ্বরের বাক্যকে প্রতারকের মিথ্যার সাথে যুক্ত করবে না—তেমনটা করা ঈশ্বরের কাছে ঘৃণ্য। এমন অনেকে আছে যারা বলে, তারা নিজেদের কথা রাখে, অর্থাৎ তারা সর্বদা প্রতিশ্রুতি পালন করে। যদি তাই হয়, তাহলে তারা যখন ঈশ্বরের বাক্য শোনে, তখন কি তারা তা অনুসারে কাজ করে? তারা নিজেদের ব্যক্তিগত বিষয়গুলো যেমন যত্ন সহকারে পালন করে, ঈশ্বরের বাক্যও কি তেমনভাবেই সম্পাদন করতে পারে? ঈশ্বরের প্রতিটি বাক্যই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ঠাট্টাচ্ছলে কিছু বলেন না। তিনি যা বলেন, মানুষকে অবশ্যই তা পালন এবং কার্যকর করতে হবে। ঈশ্বর যখন বক্তব্য রাখেন, তখন কি তিনি মানুষের সাথে পরামর্শ করেন? অবশ্যই করেন না। তিনি কি তোমাকে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছেন? অবশ্যই না। যদি তুমি উপলব্ধি করতে পারো যে, ঈশ্বরের বাক্য এবং অর্পিত দায়িত্ব হল আদেশ, মানুষকে অবশ্যই যা অনুসারে কাজ করতে হবে এবং যা পালন করতে হবে, তবে সেগুলি সম্পাদন এবং কার্যকর করার বিষয়ে তোমার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদি তুমি মনে করো যে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ নিছকই এক রসিকতা, নিছকই এক নৈমিত্তিক মন্তব্য যা সম্পাদন করলেও চলে—বা না করলেও চলে—যে যেমন করতে চায়, এবং তুমি যদি সেগুলোর প্রতি এহেন আচরণ বজায় রাখো, তাহলে তুমি বেশ অনেকটাই বোধশক্তি বিবর্জিত, এবং তুমি মানুষ হিসাবে অভিহিত হওয়ারও অযোগ্য। ঈশ্বর আর কখনো তোমার প্রতি বক্তব্য রাখবেন না। ঈশ্বরের চাহিদা পূরণকালে, তাঁর আদেশ এবং অর্পিত দায়িত্ব পালনকালে যদি কেউ সর্বদা নিজের সিদ্ধান্ত অনুসারে চলে, এবং ঈশ্বরের আদেশের প্রতি বেপরোয়া আচরণ করে, তাহলে সে-ই হল সেই ধরনের মানুষ, যাদের ঈশ্বর ঘৃণা করেন। আমি তোমার প্রতি সরাসরি যে আদেশ করি এবং যে দায়িত্ব অর্পণ করি, সেই প্রসঙ্গে যদি তুমি চাও যে আমি সর্বদা তোমার তত্ত্বাবধান করি এবং উৎসাহ যোগাই, তোমার কাজের অগ্রগতির খেয়াল রাখি, সর্বদা তুমি আমায় উদ্বিগ্ন করবে এবং প্রশ্ন করবে, চাইবে যে আমি প্রতিটি পদক্ষেপে তোমার খেয়াল করবো, তাহলে তোমায় বহিষ্কার করা উচিত” (বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, পরিশিষ্ট তিন: কীভাবে নোহ এবং অব্রাম ঈশ্বরের বাক্য শ্রবণ করল এবং তাঁকে মান্য করল (দ্বিতীয় অংশ))। ঈশ্বরের বাক্য থেকে শিখলাম তিনি যা বলেন, যা দাবি করেন একজন সৃষ্ট জীবকে তা করতেই হবে, মানতেই হবে। আমরা যদি ঈশ্বরের বাক্যে গুরুত্ব না দিই, অন্যের তদারকি ও মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন হয়, অথবা, কেউ জোর করলে অনিচ্ছায় সামান্য কাজ করি, তা হল ঈশ্বরের সঙ্গে প্রতারণা ও তঞ্চকতা করা, যা তাঁর কাছে অসহ্য। সেই ধরনের মানুষের ঈশ্বরের বাক্য শোনার বা গির্জায় থাকার যোগ্যতা নেই, তাদের বহিষ্কার হওয়াই উচিত। আমার সত্যিই ভয় হল যখন ঈশ্বরের বাক্যের কথা ভাবলাম, বিশেষ করে যেখানে তিনি বলেছেন, “এই ব্যক্তি সত্যিই বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমার সামনে থেকে সত্বর অপসৃত হও! আমি তোমায় আর দেখতে চাই না!” অতীতে দায়িত্ব পালনে করা পাপের জন্য অনুশোচনা হলো, দুচোখ থেকে অবিরাম অশ্রু বর্ষণ হতে লাগল। দায়িত্বের প্রতি আমার মনোভাবের কথা ভাবলাম, ঠিক যেমনটা ঈশ্বর উন্মোচিত করেছেন; অবহেলায় পূর্ণ। এটা রাজ্যের সুসমাচার প্রসারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় আর অন্যান্য ভ্রাতা ও ভগিনীরা প্রাণপাত করে কাজ করছেন। কিন্তু আমি দৈহিক আরামের লোভে, দায়িত্বে আলসেমি আর তাচ্ছিল্য করে, দক্ষ হওয়ার চেষ্টা ছাড়া খালি কাজ করেই সন্তুষ্ট ছিলাম, যা কাজের ফলকে প্রভাবিত করছিল। আমি ছিলাম অলস, দায়িত্বে অবহেলা করে ঘুড়ে বেড়াতাম, কেবল নিজের সন্তুষ্টির কথা ভাবতাম। গির্জা আমাকে এত গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দিয়েছিল, কিন্তু আমি কখনো তার মূল্য দিইনি, গুরুত্বই দিইনি। আমি এই কাজকে গির্জায় থাকার মূলধন, দরদস্তুরের মাধ্যম হিসাবে দেখেছি, কোনো কষ্ট স্বীকার না করে, দাম না দিয়ে, অথবা কাজে উন্নতির কথা না ভেবে। আমি কেবল ন্যূনতম কাজটুকুই করেছি। বিবেচনা করিনি আমার অগ্রগতি কত কম হচ্ছিল বা ঈশ্বরের ইচ্ছা কত জরুরি ছিল। মনোযোগ ছিল শুধু নিজেকে ক্লান্ত না করায়। দায়িত্বে অবহেলা করেছি এবং অমনোযোগী ছিলাম, কোনোক্রমে কাজ উৎরে দেওয়াই ছিল আমার উদ্দেশ্য। আমার হৃদয়ে ঈশ্বরের কোনো স্থান বা তাঁর জন্য আমার কোনো শ্রদ্ধা ছিল না। দায়িত্বের প্রতি এত গা-ছাড়া মনোভাব কি আমাকে কুকুরের থেকেও নিকৃষ্ট করে দেয়নি? কুকুররা তাদের প্রভুদের প্রতি অনুগত। প্রভু তাদের পাশে থাকুক বা না থাকুক, তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে আর প্রভুর বাড়ির উপর নজরদারি করে। যেভাবে কাজ করেছিলাম, আমি সে কাজ চালিয়ে যাওয়ার যোগ্য ছিলাম না। শপথ করলাম সেইদিন থেকে, আমি অনুতাপ করব এবং এত দিনের ক্ষতি পূরণ করব।
তারপর প্রার্থনায়, ঈশ্বরের বাক্যের একটি অনুচ্ছেদ পড়ি যা আমাকে ভবিষ্যতে দায়িত্ব পালনের পথ দেখায়। ঈশ্বরের বাক্যে বলা হয়েছে, “ঈশ্বর যখন নোহকে জাহাজ বানানোর আদেশ দিয়েছিলেন, তখন সে মনে মনে কী ভেবেছিল? সে ভেবেছিল, ‘আজ থেকে শুরু করে, কোনো বিষয়ই আমার কাছে এই জাহাজ বানানোর থেকে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ নয়, এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি কিছুই নয়। আমি সৃষ্টিকর্তার হৃদয় থেকে এই বাক্য শুনেছি, আমি তাঁর জরুরি ইচ্ছা অনুভব করেছি, তাই আমার আর বিলম্ব করা উচিত নয়; যে জাহাজের বিষয়ে ঈশ্বর আমায় বলেছেন এবং যেটা ঈশ্বর চেয়েছেন, সেটা আমাকে অবশ্যই অবিলম্বে তৈরি করতে হবে।’ নোহের মনোভাব কী ছিল? তা ছিল অমনোযোগী হতে সাহস না দেখানো এক মনোভাব। এবং কোন পদ্ধতিতে সে জাহাজটিকে তৈরি করেছিল? সে তা করেছিল অবিলম্বে। ঈশ্বরের কথিত এবং নির্দেশিত প্রত্যেকটা বিশদ-বিবরণী সে সাতিশয় তৎপরতা সহযোগে ফলপ্রসূ করেছিল, সমস্ত শক্তি দিয়ে, একেবারেই অযত্নশীল বা বেপরোয়া না হয়ে বাস্তবায়িত করেছিল। সংক্ষেপে, সৃষ্টিকর্তার আদেশের প্রতি নোহের মনোভাব ছিল আজ্ঞাকারিতা। সে এই বিষয়ে অনুদ্বিগ্ন ছিল না, এবং তার অন্তরে ছিল না কোনো প্রতিরোধ, অথবা নির্লিপ্ততাও। পরিবর্তে, সে প্রতিটি বিশদ বিবরণ লিপিবদ্ধ করার সাথে সাথে অধ্যবসায় সহযোগে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছিল। যখন সে ঈশ্বরের জরুরি ইচ্ছা উপলব্ধি করেছিল, তখন কাজের গতি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যাতে ঈশ্বর তার ওপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন, তা সাতিশয় তৎপরতা সহযোগে পূরণ করা যায়। ‘সাতিশয় তৎপরতা সহযোগে’ বলতে এখানে কী বোঝানো হচ্ছে? এর অর্থ হচ্ছে যত কম সময়ে সম্ভব সম্পূর্ণ করা, যে কাজ করতে আগে এক মাস সময় লাগত সেটাকে নির্ধারিত সময়ের তিন বা পাঁচ দিন আগেই হয়ত সম্পন্ন করা, কোনোরকম ইচ্ছাকৃত বিলম্ব বা তিলমাত্র আলস্যে সময় নষ্ট না করে, নিজের সর্বোত্তম প্রচেষ্টা দিয়ে সম্পূর্ণ প্রকল্পটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। স্বাভাবিকভাবেই, প্রতিটি কাজ সম্পাদন করার সময়, সে সর্বাত্মক চেষ্টা করত যাতে ক্ষতি এবং ত্রুটি হ্রাস করা যায়, এবং যাতে কোনো কাজের পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন না ঘটে; সে প্রতিটি কাজ এবং পদ্ধতি সময়সূচী অনুযায়ী সম্পূর্ণ করত, এবং গুণমানের নিশ্চয়তা সহ সেগুলি ভালোভাবে সম্পন্ন করত। তা ছিল ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব না করার একটা প্রকৃত প্রকাশ। তাহলে, তার ইচ্ছাকৃত বিলম্ব না করার পূর্বশর্ত কী ছিল? (সে ঈশ্বরের আদেশ শুনেছিল।) হ্যাঁ, সেটাই ছিল তার ইচ্ছাকৃত বিলম্ব না করার পূর্বশর্ত এবং প্রসঙ্গ। তাহলে, নোহ ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করতে সক্ষম হয়নি কেন? কেউ কেউ বলে যে, তা নোহ প্রকৃত আনুগত্যের অধিকারী ছিল বলে। অতএব, তার কাছে কী এমন ছিল, যা দিয়ে সে এহেন প্রকৃত আনুগত্য অর্জনে সক্ষম হয়েছিল? (সে ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি মনোযোগী ছিল।) একদম ঠিক! হৃদয় থাকা বলতে এটাকেই বোঝায়। হৃদয়বান ব্যক্তিগণ ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি মনোযোগী হতে পারে; হৃদয়হীনরা হল শূন্য খোলস, ভাঁড়, তারা ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি মনোযোগী হতে জানে না: ‘এটা ঈশ্বরের জন্য কতটা জরুরি, তা আমি পরোয়া করি না, আমি যা চাই সেটাই করবো—আর যা-ই হোক, আমি তো আর বেকার বা অলস থাকছি না।’ এহেন মনোভাব, এমনতর নেতিবাচকতা, সক্রিয়তার সম্পূর্ণ অভাব—তা ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি মনোযোগী কারো থাকতে পারে না, আবার ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি কীভাবে মনোযোগী হতে হবে, তা-ও তারা উপলব্ধি করে না। সেক্ষেত্রে, তারা কি প্রকৃত বিশ্বাসের অধিকারী? অবশ্যই তা নয়। নোহ ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি মনোযোগী ছিল, তার প্রকৃত বিশ্বাস ছিল, এবং সেহেতু, সে ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্ব সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছিল। আর তাই, নিছকই ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্ব গ্রহণ করা এবং কিছুটা প্রচেষ্টা করতে ইচ্ছুক হওয়াটাই যথেষ্ট নয়। এছাড়াও, তোমায় অবশ্যই ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি মনোযোগী হতে হবে, যথাসর্বস্ব উজাড় করতে হবে, এবং নিবেদিত হতে হবে—যার জন্য মানুষের বিবেকবোধ এবং চেতনা থাকা প্রয়োজন; সেটাই মানুষের মধ্যে থাকা উচিত, এবং নোহের মধ্যেও তা-ই দেখা গিয়েছিল” (বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, পরিশিষ্ট তিন: কীভাবে নোহ এবং অব্রাম ঈশ্বরের বাক্য শ্রবণ করল এবং তাঁকে মান্য করল (দ্বিতীয় অংশ))। ঈশ্বরের বাক্যে দেখেছি যে নোহ ঈশ্বরের অনুমোদন পেয়েছিলেন কারণ তিনি ঈশ্বরে প্রকৃত বিশ্বাসী ছিলেন এবং তাঁর ইচ্ছাকে বিবেচনা করেছিলেন। ঈশ্বরের নির্দেশ পেয়ে, তিনি জাহাজ তৈরিকেই অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। শারীরিক কষ্ট অথবা কাজটা কঠিন কি না তা নিয়ে ভাবেননি। প্রাক-শিল্পের সেই যুগে এত বড়ো জাহাজ তৈরি করতে নিশ্চয়ই প্রচুর শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম হয়েছিল, আর অন্যদের বিদ্রুপও সইতে হয়েছিল। সেই পরিস্থিতিতে, ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্ব পালনে নোহ ১২০ বছর অধ্যবসায় করে গেছেন, এবং ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করেছেন। ঈশ্বরের জন্য নিজেকে ব্যয় করে নোহ ঈশ্বরের আস্থা অর্জন করেছিলেন। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে, কেউ জোর আর নজরদারি না করলে, আমি তার সুযোগ নিয়ে দৈহিক আরামের লোভে আলস্য ও চাতুরি করতাম, কাজে গড়িমসি করতাম, তাতে কাজের কত দেরি হল তা নিয়ে ভাবতাম না। আমার সত্যিই মানবিকতা ছিল না, ঈশ্বরের পরিত্রাণেরও যোগ্য ছিলাম না। এখন জেনেছি দায়িত্ব পালন করা হলো নোহের জাহাজ তৈরির মতো, যেখানে সত্যিকারের কাজের প্রয়োজন। আমাকে প্রতিটা মুহূর্ত আরো দক্ষতার সাথে ব্যবহার করে এগিয়ে যেতে হবে। কেউ যদি জোর না করে বা তদারকি না করে, আমাকে দায়িত্বশীল হয়ে যতটা পারি করতে হবে। বিবেক ও মানবিকতা সম্পন্ন মানুষ হওয়ার এটাই একমাত্র পথ।
তারপর থেকে সময়সূচি করা শুরু করলাম। যখন নকশার কাজ করতাম না, তখন অন্যদের কাজে সাহায্য করতাম আর নিজের অবস্থার প্রতি কঠোর নজর রাখতাম। আমার প্রতিদিনই ব্যস্ত সূচি থাকত, কিন্তু মনে শান্তি অনুভব করতাম, আর আগের থেকে বেশি কাজে নিবেদিত থাকতাম। কখনো একটা কাজ প্রায় শেষ হয়ে এলে আবার ঢিলেমি দিতে ইচ্ছা করলে, অথবা সব দিক সমন্বয় করতে পারিনি বলে নকশার কাজে দেরি হলে নিজেকে প্রশ্রয় দিতে চাইতাম, এই ভেবে যে, আমি নিয়মিত সদস্য নই আর কেউ আমাকে জোর করছে না, তাছাড়া আমি অন্য কাজেও সাহায্য করছি, তাই নকশার কাজে একটু ধীরগতি হতেই পারে। এটা ভেবে বুঝতে পারলাম আমি সঠিক অবস্থায় নেই দ্রুত সমাধানের জন্য সত্যের সন্ধান করলাম। ঈশ্বরের বাক্যে এটা পড়লাম: “যখন মানুষজন তাদের দায়িত্ব পালন করে, তারা প্রকৃতপক্ষে তাদের করণীয় কাজই করছে। যদি তুমি তা ঈশ্বরের সামনে করো, যদি তুমি নিজের দায়িত্ব সম্পাদন করো, এবং সততার মনোভাব নিয়ে, সর্বান্তকরণে ঈশ্বরের প্রতি নিজেকে সমর্পণ করো, তাহলে সেই মনোভাবই কি বেশি সঠিক হবে না? সুতরাং, তোমার দৈনন্দিন জীবনে এই মনোভাব কীভাবে প্রয়োগ করা উচিত? তোমাকে অবশ্যই ‘সর্বান্তকরণে এবং সততা সহযোগে ঈশ্বরের উপাসনা’ করাকেই নিজের বাস্তবতা করতে হবে। যখনই তোমার শিথিল হয়ে পড়তে ইচ্ছা হয় এবং নিছক স্রোতে গা ভাসিয়ে ইচ্ছা হয়, যখনই তুমি পিচ্ছিল উপায়ে কর্ম সম্পাদন করতে চাও এবং অলস হতে চাও, এবং যখনই তুমি বিভ্রান্ত হয়ে পড়ো অথবা সেই কর্ম সম্পাদনের পরিবর্তে ব্যক্তিগত সুখভোগ করতে চাও, তখনই এই বিষয়টাকে তোমার এইভাবে চিন্তা করা উচিত: ‘এমন আচরণের ফলে আমি কি অবিশ্বস্ত হয়ে পড়ছি? এটা কি মনপ্রাণ ঢেলে দায়িত্ব পালন করা? এমনটা করার ফলে আমি কি অননুগত হচ্ছি? এটা করছি বলে, ঈশ্বর আমার উপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, তার যোগ্য হয়ে উঠতে ব্যর্থ হচ্ছি কি?’ এইভাবেই তোমার আত্ম-প্রতিফলন করা উচিত। যদি তুমি জানতে পারো যে, তুমি নিজের দায়িত্ব পালনে সর্বদাই অযত্নশীল, উদাসীন ও অবিশ্বস্ত, তুমি ঈশ্বরকে কষ্ট দিয়েছ, তবে তোমার কী করা উচিত? তোমার বলা উচিত, ‘আমি মুহূর্তের মধ্যেই অনুভব করেছিলাম যে এখানে কিছু ত্রুটি হয়েছে, কিন্তু সেটাকে আমি সমস্যা বলে বিবেচনা করিনি; নিতান্তই বেপরোয়াভাবে আমি সেটাকে তুচ্ছজ্ঞান করেছিলাম। আমি এখনও পর্যন্ত উপলব্ধি করতে পারিনি যে, আমি সত্যিই অযত্নশীল ও উদাসীন ছিলাম, আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। আমার মধ্যে সত্যিই বিবেক ও বোধের অভাব রয়েছে!’ তুমি এই সমস্যা খুঁজে পেয়েছ এবং নিজের বিষয়ে কিছুটা হলেও জানতে পেরেছ—তাহলে এখন, তোমাকে অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াতে হবে! দায়িত্বপালনের প্রতি তোমার মনোভাব ভ্রান্ত ছিল। তুমি সেই বিষয়ে অমনোযোগী ছিলে, যেন তা ছিল অতিরিক্ত কোনো কাজ, এবং তুমি তাতে নিজের হৃদয় সঁপে দাও নি। তুমি যদি আবার এইরকমই অযত্নশীল ও উদাসীন হয়ে পড়ো, তাহলে তোমার অবশ্যই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা উচিত, এবং তাঁর দ্বারা অনুশাসিত ও শোধিত হওয়া উচিত। নিজেদের দায়িত্ব সম্পাদনকালে কাউকে অবশ্যই এইরকমই ইচ্ছা রাখতে হবে। শুধুমাত্র তবেই তারা প্রকৃতপক্ষে অনুতপ্ত হতে পারবে। যখন কারো বিবেক স্বচ্ছ হয়, এবং দায়িত্বপালনের প্রতি মনোভাব পরিবর্তিত হয়, তখনই সে ঘুরে দাঁড়াতে পারে” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র ঈশ্বরের বাক্যের বারংবার পাঠ ও সত্যের ধ্যানের মধ্যেই রয়েছে অগ্রগতির পথ)। ঈশ্বরের বাক্য পড়ে অনুশীলনের পথ আরো স্পষ্ট করে বুঝলাম। দায়িত্ব হল আমাদেরকে ঈশ্বরের দেওয়া কর্মভার। কেউ তদারকি করুক বা না করুক, ঈশ্বরের বিবেচনা গ্রহণ করে নিজেদের সবটুকু নিয়োগ করা উচিত। সবসময় কারোর ঠেলার দরকার হওয়ার মানে একনিষ্ঠতার অভাব, অন্যরাও সেটা অসম্মানজনক মনে করে। আমি এমন হয়ে থাকতে চাইনি, কিন্তু আমাকে ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তাঁর পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। অন্যের তদারকি ছাড়াই দায়িত্ব পালনে তৎপর হতে হবে। যখন দুই দায়িত্বেই চরম ব্যস্ততা ছিল, এবং আমাকে মূল্য দিতে হতো, আমি আগে থেকেই সময়সূচি ঠিক করে নিজের সর্বোচ্চটা দিতাম, যাতে কোনো গাফিলতি না হয়। যখন এইভাবে কাজ শুরু করলাম, অল্প সময়ের মধ্যেই ফল পেতে শুরু করলাম। আমাকে আগের থেকে বেশি পরিশ্রম ও শক্তি খরচ করতে হচ্ছিল, কিন্তু আমি মোটেও ক্লান্ত বোধ করিনি—শান্ত ও স্বস্তি বোধ করেছি। যখন দায়িত্ব পালনে সমস্যার সম্মুখীন হতাম, সত্যের সন্ধান করে অপ্রত্যাশিত ফল পেতাম। কারিগরি দক্ষতার সঙ্গে জীবনে প্রবেশেও উন্নতি করলাম।
২০২১-এর জুনের এক দিনে, নেতা আমার সঙ্গে কথা বলতে এল বলল আমাকে নকশার কাজে পুনর্বহাল করা হয়েছে। এত খুশি হয়েছিলাম যে কী বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না, ঈশ্বরকে আন্তরিক ধন্যবাদ দিলাম। আমার দায়িত্বের এই পরিবর্তন দেখালো আমি কত অলস, স্বার্থপর এবং জঘন্য ছিলাম, সত্যিই নিজেকে ঘৃণা করতাম, এবং ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা লাভ করলাম। মাঝেমাঝে এখনো আলসেমি লাগে, তখন ঈশ্বরকে প্রার্থনা করে বলি আমার হৃদয়ের তদারক করতে, আমাকে উন্মোচন, তিরস্কার এবং নিয়মানুবর্তী করতে বলি যখনই আমি বেপরোয়া, ধূর্ত এবং চতুর হয়ে পড়ি। এই অভ্যাস রপ্ত করার পর থেকে, আমার শিথিলতা এবং প্রতারণা অনেক কমে গেছে এবং দায়িত্ব পালনে আরো ভালো ফল পাচ্ছি। এটা আরো ক্লান্তিকর, কিন্তু আমি সত্যিই তৃপ্ত হই। পরে নেতা আমাকে বলে আমি আগের থেকে অনেক ভালো দায়িত্ব পালন করছি, শুনে আমি সত্যিই অভিভূত হই, উদ্বুদ্ধও হই। জানতাম আমি তখনো যথেষ্ট করছি না, আমাকে কঠোর পরিশ্রম করে যেতে হবে। আমাকে শাসন করার জন্য আমি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ, এটা আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে।
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।