ঈর্ষার বন্ধন থেকে মুক্তি
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে, আমি তখন সবেমাত্র সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ গ্রহণ করেছি। অচিরেই আমি একটা দায়িত্ব নিয়ে স্তবগানের মিউজিক ভিডিওতে প্রধান গায়ক হয়ে গেলাম। শুরুতে, অনেক ব্রাদার-সিস্টাররা আমাকে লক্ষ্য করলেন এবং বললেন যে আমি ভাল গেয়েছি, এবং আমি যেখানেই যেতাম, তাঁরা আমাকে চিনতে পারতেন। তা দেখে আমি সত্যিই অন্তর থেকে খুশি হতাম। কয়েক মাস পরে, আমি গির্জার নেতা নির্বাচিত হলাম। সেখানে অনেক নবাগতরা ছিল সিঞ্চন করার জন্য, আর সুসমাচারের অনেক কাজও দেখাশোনা করার ছিল। নতুনদের সমস্যা আরও ভালোভাবে পরিচালনা করার জন্য, আমি প্রায়ই সুসমাচারের চলচ্চিত্র দেখতাম যাতে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারি এবং ঈশ্বরের কাজের সত্য উপলব্ধি করতে পারি, আর যখনই নবাগতরা কোনো নির্দিষ্ট পূর্বধারণা বা সমস্যার কথা বুঝতে পারত না, আমি তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে সেগুলোর সমাধান করতে সক্ষম হতাম। তাছাড়াও আমি সবসময় বড় বড় সমাবেশের আয়োজন করতাম, এবং আমার ব্রাদার-সিস্টাররা প্রায়ই আমার দক্ষতা ও বোঝাপড়ার জন্য আমার প্রশংসা করতেন। ব্রাদার-সিস্টারদের স্বীকৃতি পেয়ে আমি খুব খুশি হতাম। তবে, সুসমাচারের কাজের দেখাশোনা করার ক্ষেত্রে আমি খুব একটা কার্যকর ছিলাম না। যতবার নেতারা প্রতিটা গির্জায় সুসমাচারের কাজের কার্যকারিতার তদন্ত করেছেন, আমার গির্জার ফল সবসময় সবেচেয়ে খারাপ হয়েছে। পরে, সিস্টার ক্যাথিকে সুসমাচার প্রচার করার জন্য আমাদের গির্জায় স্থানান্তরিত করা হয়। আমি দেখলাম যে সিস্টার ক্যাথি দ্রুত তাঁর কাজের সাথে মানিয়ে নিয়েছেন, অন্যরা তাদের দায়িত্ব পালনে যেসব সমস্যায় পড়ত, তিনি আলোচনা করে সেগুলোর সমাধান করতে পারতেন, এবং সমাবেশ আয়োজন করার সময়েও তিনি সক্রিয়ভাবে আলাপচারিতা করতেন। আমার খুশি হওয়া উচিত ছিল যে সিস্টার ক্যাথি তাঁর কর্তব্য পালনে এত দায়িত্বশীল ছিলেন, কিন্তু কি কারণে জানি না, আমি তাঁকে পছন্দ করতাম না। যতবারই সিস্টার ক্যাথি অন্য ব্রাদার-সিস্টারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতেন, আমি তাঁকে দেখতেও চাইতাম না। বিশেষ করে যখন আমি ওঁদের বলতে শুনলাম যে ওঁরা মনে করেন সিস্টার ক্যাথি এতই ভালো যে ওঁরা ক্যাথিকে সুসমাচারের ডিকন হিসেবে বেছে নিতে চান, আমি আরও বেশি অস্বস্তি বোধ করলাম। আমি ভাবলাম, “আপনি আসার আগে, ব্রাদার-সিস্টাররা সবাই আমার দক্ষতা, বোঝাপড়া ও সিঞ্চন করার প্রশংসা করতেন, এবং সবাই আমাকে সম্মান করতেন, কিন্তু এখন ওঁরা সবাই আপনাকেই সেরা মনে করেন এবং আপনাকেই সম্মান করেন। এখন কে আমাকে সম্মান করবে?” সেই সময় থেকে আমি সিস্টার ক্যাথিকে ঈর্ষা করতে শুরু করি, এবং আমি চিন্তিত ছিলাম যে তিনি ব্রাদার-সিস্টারদের হৃদয়ে আমার জায়গা কেড়ে নেবেন।
তার পরে, আমি দেখলাম যে সিস্টার ক্যাথি প্রায়ই ফোন করে নবাগতদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন, এবং অনেক নবাগতরাও তাঁর কাছে সমস্যার সমাধান চাইত। একবার, একজন সিস্টার যাকে আমি সিঞ্চন করেছিলাম, তার সুসমাচারের কাজে সমস্যা হয় এবং সে আমার মতামত জিজ্ঞাসা করে। আমি তার সাথে আলাপ-আলোচনা করার পরে, সে সিস্টার ক্যাথির কাছে যায়। যখন আমি জানলাম যে সে সিস্টার ক্যাথির কাছে গেছে, আমি দুঃখ পেলাম। আমি ভাবলাম সে হয়তো আমার পরামর্শগুলোকে গুরুত্ব দেবে না, সিস্টার ক্যাথিকে আমার চেয়ে ভাল মনে করবে, এবং আমাকে আর সম্মান করবে না। দুঃখিত হয়ে আমি ভাবলাম, “যেহেতু আমি সুসমাচারের কাজে এত খারাপ, আমাকে আমার ত্রুটিগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। তাহলে আমি আর সিস্টার ক্যাথির চেয়ে খারাপ থাকব না, এবং ভবিষ্যতে, যদি ব্রাদার-সিস্টারদের সমস্যা হয়, তাঁরা সিস্টার ক্যাথির পরিবর্তে আমার কাছে আসবেন।” এর পরের দিনগুলোতে, আমি দেখলাম যে সিস্টার ক্যাথি প্রতিদিন দেরি করে রাতের খাবার খান এবং তাঁর দায়িত্ব নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, এবং মাঝে মাঝে তিনি সারারাত ধরে কাজ করেন। তাই আমিও আমার কাজের জন্য অনেক রাত অবধি জেগে থাকার চেষ্টা করতে থাকলাম। এমন ভাবে, যাতে ব্রাদার-সিস্টাররা দেখতে পান যে আমিও দায়িত্বশীল এবং সিস্টার ক্যাথির চেয়ে কোনো অংশে খারাপ নই। পরে, গির্জায় একজন সুসমাচার ডিকনের জন্য একটা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আসলে, সব দিক থেকেই সিস্টার ক্যাথি এই দায়িত্বের জন্য সেরা ছিলেন, কিন্তু আমি তাঁকে বেছে নিতে চাইছিলাম না। আমি ভাবলাম যে গির্জায় যদি সিস্টার ক্যাথির একটা পদমর্যাদা থাকে, তাহলে সবার মনোযোগ ধীরে ধীরে তাঁর দিকে চলে যাবে এবং সবাই তাঁকে আমার চেয়ে বেশি যোগ্য মনে করবে, কিন্তু যেহেতু গির্জার নেতারা একা সব কাজ করতে পারেন না এবং তাঁদের সাহায্য করার জন্য ডিকনদের প্রয়োজন, আমি ভাবলাম যে আমি সিস্টার ক্যাথিকে বেছে নেব কি না। আমি যদি তাঁকে বেছে নিই, তাহলে ব্রাদার-সিস্টাররা সবাই নিশ্চয়ই আমাকে একা রেখে তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়বেন। কিন্তু আমাকে স্বীকার করতেই হত যে সিস্টার ক্যাথি খুবই দক্ষ ছিলেন, এবং তিনি একজন সুসমাচার ডিকনের কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারতেন। আমি দীর্ঘ সময় ধরে সবকিছু বিবেচনা করে অবশেষে অনিচ্ছা সত্বেও তাঁকেই বেছে নিলাম।
একবার, গির্জা ভাল ফিলিপিনো এবং ইংরেজি জানা একজন ব্রাদার বা সিস্টার খুঁজছিল এমভি গ্রুপে রেকর্ড করার জন্য। সিস্টার ক্যাথির ফিলিপিনো এবং ইংরেজি দুটোই ভালো ছিল, এবং শেষ পর্যন্ত, ব্রাদার-সিস্টাররা তাঁকেই নির্বাচিত করলেন। আমি খুব হতাশ হয়ে পড়লাম, ভাবলাম, “আমারও ফিলিপিনো আর ইংরাজি ভাল, তাহলে কেন ওঁরা আমার বদলে সিস্টার ক্যাথিকে বেছে নিলেন?” আমি ওঁকে খুব ঈর্ষা করতাম, এবং ভিতরে ভিতরে একটু ঘৃণাও অনুভব করতাম। সেই সময়ে, যেহেতু সিস্টার ক্যাথির একটু অহংকারী স্বভাব ছিল, আমাদের নেতারা অনুসন্ধান করছিলেন তিনি কেমনভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন, এবং তাঁরা আমাকে ক্যাথির একটা মূল্যায়ন লিখতে বলেন। আমি খুব খুশি হলাম, এবং আমি ওঁর ত্রুটিগুলো আরো বেশি করে তুলে ধরতে চাইলাম, যাতে আমাদের নেতারা ওঁকে অন্য দায়িত্ব দেন এবং আমাকে আর ওঁর আশেপাশে থাকতে না হয়। কিন্তু আমি এটাও জানতাম যে এইভাবে ভাবাটা ভুল এবং ওঁর সাথে আমার সঠিক আচরণ করা উচিত। আমাদের নেতাও আমাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করলেন যে সিস্টার ক্যাথির কলুষিত স্বভাব আছে, কিন্তু তবুও নীতি অনুসারে তাঁর সাথে আমাদের নিরপেক্ষ আচরণ করতে হবে। কিন্তু মনে মনে আমি চেয়েছিলাম সিস্টার ক্যাথি চলে যান, যাতে ব্রাদার-সিস্টারদের তাঁকে সম্মান করা নিয়ে আমাকে ভাবতে না হয়। আমি ভাবলাম, “আপনি আসার আগে, ব্রাদার-সিস্টাররা সবাই আমার কাছে আসতেন উত্তর খুঁজতে। কিন্তু এখন যেহেতু আপনি এখানে আছেন, তাই তাঁরা সবসময় আমার পরিবর্তে আপনাকে খোঁজেন।” এই ভেবে আমি ক্ষুদ্ধ ও দুঃখিত বোধ করতাম। এমনকি একসঙ্গে দায়িত্ব পালনের সময়ও আমি ওঁকে দেখতে চাইতাম না। সেই সময়ে ঈর্ষা সত্যিই আমার হৃদয় দখল করে নিয়েছিল।
তারপরে, গির্জার কাজ তত্ত্বাবধান করার জন্য আমার ওপর অনেক চাপ ছিল, এবং আমার কিছু সমস্যাও ছিল, কিন্তু আমি ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুভব করতে পারিনি, এবং আমি জানতাম না কীভাবে এগুলোর সমাধান করব। ব্যাপারটা খুবই ক্লান্তিকর ছিল। আমি পবিত্র আত্মার কাজ ও পথনির্দেশ অনুভব করতে পারছিলাম না এবং নিজের দায়িত্ব পালনেও ব্যর্থ হচ্ছিলাম। ততক্ষণ আমি একদমই বুঝতে পারিনি যে আমার নেতিবাচক অবস্থা ইতিমধ্যেই আমার দায়িত্ব পালনকে প্রভাবিত করছিল, যতক্ষণ না একটা সমাবেশে আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের এই বাক্যগুলো দেখলাম, “একজন গির্জার নেতা হওয়া মানে নিতান্তই সমস্যার সমাধানের জন্য সত্যকে ব্যবহার করতে শেখা নয়, বরং প্রতিভাবান ব্যক্তিদের আবিষ্কার এবং তৈরি করাও, যাদেরকে তুমি একেবারেই হিংসা বা দমন করবে না। এইভাবে অনুশীলন করা গির্জার কাজের জন্য উপকারী। তুমি যদি তোমার সমস্ত কাজে তোমার সাথে ভালভাবে সহযোগিতা করার জন্য, সত্যের কিছু অন্বেষণকারীকে গড়ে তুলতে পার, এবং শেষ পর্যন্ত তোমাদের সকলেরই যদি অভিজ্ঞতামূলক সাক্ষ্য থাকে, তাহলেই তুমি একজন যোগ্য নেতা হবে। তুমি যদি সমস্ত কিছুতেই নীতি অনুসারে কাজ করতে সক্ষম হও, তাহলে তুমি তোমার আনুগত্য অনুযায়ী যোগ্যরূপে জীবনযাপন করতে পারবে। কেউ কেউ আছে যারা সবসময় ভয় পায় যে অন্যরা তাদের চেয়ে ভাল এবং তাদের চেয়ে উচ্চতর, যে অন্যরা সম্মানিত হবে আর তারা অবহেলিত অবস্থায় থাকবে। এটি তাদের অন্যদের আক্রমণ এবং বর্জন করার দিকে চালনা করে। এটা কি নিজেদের চেয়ে বেশি সক্ষম মানুষের প্রতি ঈর্ষান্বিত হওয়ার ঘটনা নয়? এ ধরনের আচরণ কি স্বার্থপর ও ঘৃণ্য নয়? এটা কেমনতর স্বভাব? এ তো বিদ্বেষপূর্ণ! শুধুমাত্র নিজের স্বার্থের কথাই চিন্তা করা, শুধুমাত্র নিজের ইচ্ছাকেই সন্তুষ্ট করা, অন্যের জন্য বা ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থের প্রতি কোনো বিবেচনা না করা—এই ধরনের লোকেদের স্বভাব খারাপ হয়, এবং তাদের প্রতি ঈশ্বরের কোন স্নেহ নেই। তুমি যদি সত্যিই ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি বিবেচক হতে সক্ষম হও, তবে তুমি অন্য লোকেদের সাথে ন্যায্য আচরণ করতে সক্ষম হবে। তুমি যদি একজন ভালো ব্যক্তির সুপারিশ করো এবং তাদের প্রশিক্ষণ নিতে এবং একটি কর্তব্য সম্পাদন করতে দাও, যার ফলে একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি ঈশ্বরের গৃহে যুক্ত হয়, তাহলে কি তোমার কাজ করা আরও সহজ হবে না? তাহলে কি তুমি এই কর্তব্যে তোমার আনুগত্য অনুযায়ী যোগ্যরূপে জীবনযাপন করবে না? এ হল ঈশ্বরের সামনে একটি সৎকর্ম; এ হল ন্যূনতম বিবেক এবং বোধ, যা একজন নেতার মধ্যে থাকা উচিত” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র ভ্রষ্ট স্বভাব পরিহার করলে তবেই স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জন করা যেতে পারে)। ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করার পর আমি বুঝতে পারলাম যে আমি সুনাম ও মর্যাদার জন্য আমার দায়িত্ব পালন করছিলাম, যাতে লোকেরা আমাকে সম্মান করে এবং আমার প্রশংসা করে। যখন সিস্টার ক্যাথি গির্জায় এলেন, আমি দেখলাম যে তিনি সত্যের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করতে এবং সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম, এবং যখন অন্যরা আমার পরিবর্তে ওঁর কাছে যাচ্ছিল আলাপ-আলোচনার জন্য, আমি ভয় পেয়েছিলাম যে সিস্টার ক্যাথি আমার জায়গা নিয়ে নেবেন, তাই আমি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েছিলাম এবং প্রতিটা মোড়ে তাঁর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলাম। আমি দেখাতে চেয়েছিলাম যে আমি সত্য উপলব্ধি করেছি এবং আলাপ-আলোচনা করে মানুষের সমস্যার সমাধান করতে পারি, যাতে ব্রাদার-সিস্টাররা আমাকে সম্মান করেন। যখন গির্জা একজন সুসমাচার ডিকন নির্বাচিত করল, আমি জানতাম যে সিস্টার ক্যাথির এই কাজের যোগ্যতা আছে, কিন্তু আমি ভয় পেয়েছিলাম যে তিনি আমার গৌরব কেড়ে নেবেন, তাই আমি তাঁকে বেছে নিতে চাইনি, এবং অন্তরে আমি তাঁকে ঘৃণা ও অবজ্ঞা করতাম। এমনকি আমার খারাপ উদ্দেশ্যও ছিল এবং আমি তাঁর ভুলত্রুটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিলাম। আমি খুশি হয়েছিলাম যখন আমি তাঁকে তাঁর ভ্রষ্ট আচরণ প্রকাশ করতে দেখলাম, এবং আমি তাঁকে বিদায় করার জন্য তাঁর মূল্যায়নে কিছু খারাপ কথাও লিখতে চেয়েছিলাম, যাতে ব্রাদার-সিস্টাররা আমার শক্তি দেখতে পান। শুধুমাত্র ঈশ্বরের বাক্যের প্রকাশের মাধ্যমেই আমি বুঝতে পারলাম যে আমি সিস্টার ক্যাথির যোগ্যতার প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিলাম এবং তাঁর আমার চেয়ে ভালো হওয়া আমি সহ্য করতে পারছিলাম না, এবং আমি যা প্রকাশ করেছিলাম তা আসলে একটা বিদ্বেষপূর্ণ স্বভাব। বাহ্যিকভাবে, আমি সক্রিয়ভাবে আমার দায়িত্ব পালন করছিলাম ঠিকই, কিন্তু অন্তরে ঈশ্বরের গৃহের কাজকে আমি বিবেচনা করিনি। সিস্টার ক্যাথি ঈশ্বরের গৃহের কাজে সাহায্য করেছিলেন এবং সুসমাচারের কাজকে আরও কার্যকর করে তুলেছিলেন। কিন্তু, আমি শুধু ভেবেছিলাম কীভাবে ওঁর থেকে ভালো হওয়া যায়। ঈশ্বর আমাদের হৃদয় পরীক্ষা করেন এবং দায়িত্বের প্রতি আমাদের মনোভাব স্পষ্টভাবে খতিয়ে দেখেন। ঈশ্বরের ভয় ছাড়াই আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি, এবং আমি শুধু সুনাম, লাভ, আর মর্যাদা অর্জনের বিষয়েই চিন্তা করেছি। এইরকম আচরণ ঈশ্বরকে ক্ষুব্ধ করে।
পরে, আমি ঈশ্বরের বাক্যের আরেকটা অনুচ্ছেদ পড়লাম। “যে ধারণা, কল্পনা, জ্ঞান, ব্যক্তিগত অভিপ্রায় এবং আকাঙ্ক্ষাসমূহে তোমার মগজ পরিপূর্ণ, সেগুলোর আদিরূপ অপরিবর্তিতই থেকে যায়। সুতরাং, যে সমস্তকিছুতে সুনাম, মর্যাদা জড়িত থাকে, বা যা তাদের সকলের সামনে তুলে ধরতে পারে—সেগুলির ক্ষেত্রে, উদাহরণস্বরূপ, যখন লোকেদের কানে আসে যে ঈশ্বরের গৃহ বিভিন্ন রকমের প্রতিভা প্রতিপালনের পরিকল্পনা করছে—তখন প্রত্যেকের চিত্ত উত্তেজনায় চঞ্চল হয়ে ওঠে, এবং তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই সর্বদা প্রসিদ্ধ ও বিখ্যাত হয়ে উঠতে চাও। প্রত্যেকেই খ্যাতি ও মর্যাদার জন্য সমরে অবতীর্ণ করতে চায়; যদিও তারা এই বিষয়ে লজ্জিত বোধ করে, তবু, এমনটা না করলে, তাদের খারাপ লাগে। কাউকে আলাদা হয়ে উঠতে দেখলে, তারা ঈর্ষা ও ঘৃণা অনুভব করে, বিদ্বেষপরায়ণ হয়ে পড়ে, এবং মনে করে যে, তা অন্যায়, তারা ভাবে যে, ‘আমি কেন সকলের চেয়ে আলাদা হয়ে দাঁড়াতে পারি না? কেন অন্য লোকেরা সবসময় প্রসিদ্ধি পায়? কেন আমার পালা কখনো আসে না?’ এবং বিদ্বেষপরায়ণ অনুভব করার পর, তারা তা দমন করার চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না। তারা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে এবং কিছুক্ষণের জন্য ভালো বোধ করলেও, আবার এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে, তখনও তারা তা অতিক্রম করতে পারে না। তা কি অপরিণত আত্মিক উচ্চতা দর্শায় না? যখন মানুষজন এহেন পরিস্থিতিতে নিমজ্জিত থাকে, তখন কি তারা শয়তানের ফাঁদে পড়ে যায় নি? এসব হল শয়তানের ভ্রষ্ট প্রকৃতির শৃঙ্খল, যা মানুষকে আবদ্ধ করে রাখে” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র ভ্রষ্ট স্বভাব পরিহার করলে তবেই স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জন করা যেতে পারে)। ঈশ্বরের বাক্য আমার অবস্থা প্রকাশ করে দিল। আমি সিস্টারের প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিলাম কারণ আমার সুনাম ও মর্যাদা পাওয়ার একটা তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল, এবং আমি সকলের চেয়ে আলাদা হয়ে উঠতে চেয়েছিলাম আর মানুষের হৃদয়ে স্থান পেতে চেয়েছিলাম। আমার মনে আছে, কলেজে, অন্যদের কাছ থেকে প্রশংসা ও সম্মান পাওয়ার জন্য আমি আমার সহপাঠীদের সাথে প্রতিযোগিতা করতাম, আর যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা লক্ষ্যণীয়ভাবে আলাদা হয়ে উঠতে না পারতাম, ততক্ষন পর্যন্ত একে অপরকে আঘাত করলেও কিছু যেত আসত না। ঈশ্বরে বিশ্বাস করার পর, আমি গির্জাতেও একই পথ অনুসরণ করেছিলাম। যখন আমি দেখলাম সিস্টার ক্যাথি আমার চেয়ে ভালো, তখন আমি তাঁকে অতিক্রম করে যেতে চেয়েছিলাম, এমনকি তাঁকে ঘৃণাও করতাম, কারণ আমি আরও লোকের স্বীকৃতি পেতে চেয়েছিলাম এবং একজন উচ্চাকাঙ্খীর মতো আশা করেছিলাম যে লোকে আমার প্রশংসা আর উপাসনা করবে, এতেই বোঝা গেছিল আমি কতটা উদ্ধত ছিলাম। আমি এ-ও দেখতে পেলাম যে আমি সুনাম ও মর্যাদার অনুসরণ করছিলাম, আর সে কারণেই আমি আমার দায়িত্ব ভালভাবে পালন করতে পারিনি, পবিত্র আত্মার কাজ লাভ করতে পারিনি, এবং আমি অনুভব করছিলাম যে আমার মন সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ঠিক যেমন ঈশ্বরের বাক্য প্রকাশ করে, “এসব হল শয়তানের ভ্রষ্ট প্রকৃতির শৃঙ্খল, যা মানুষকে আবদ্ধ করে রাখে।” আমার মনে আছে বাইবেল কী বলে, “ঈর্ষাপরায়ণতা দুষ্টক্ষতের মত” (হিতোপদেশ ১৪:৩০)। সেটা সত্যি। ঈর্ষা হল শয়তানোচিত স্বভাবের একটা অভিব্যক্তি; এটা মানুষকে ঘৃণা করাতে পারে, এমনকি অযৌক্তিক কাজকর্মও করাতে পারে।
পরে, আমি ঈশ্বরের বাক্যের আরেকটা অনুচ্ছেদ দেখলাম যেটা আমাকে বুঝতে সাহায্য করল যে সুনাম ও মর্যাদাকে অনুসরণ করার সারমর্ম এবং পরিণতি কী। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “কিছু লোক ঈশ্বরে বিশ্বাস করে কিন্তু সত্য অন্বেষণ করে না। তারা সর্বদা দেহসর্বস্ব জীবন কাটায়, দৈহিক আনন্দই সর্বদা আঁকড়ে থাকে, তাদের নিজস্ব স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষাই সর্বদা বিবৃত করে। এই ধরনের লোকেরা যত বছরই ঈশ্বরে বিশ্বাস করুক না কেন, তারা কখনোই সত্যের বাস্তবিকতায় প্রবেশ করতে পারবে না। এটাই ঈশ্বরের প্রতি অসম্মানজ্ঞাপনের লক্ষণ। তুমি বলো, ‘আমি ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করার মতো কিছু করিনি, তাহলে ঈশ্বরের প্রতি অসম্মানজ্ঞাপন করলাম কীভাবে?’ তোমার সমস্ত চিন্তাভাবনা ও ধারণা মন্দ। তোমার কাজের নিহিত অভিপ্রায়, লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য, এবং তুমি যা করো, তার পরিণাম—প্রতিটি উপায়েই তুমি শয়তানকে সন্তুষ্ট করছ, তার উপহাসের পাত্র হয়ে উঠছ, এবং তাকে তোমার বিষয়ে কিছু না কিছু কলঙ্কের নজির নিয়ে নিতে দিচ্ছ। একজন খ্রীষ্টানের যে সাক্ষ্য দেওয়া উচিত, তুমি তার কিছুই দাও নি। তুমি এমন একজন লোক, যে শয়তানের অধিকৃত। তুমি সমস্ত বিষয়েই ঈশ্বরের নামকে অসম্মানিত করো এবং তুমি প্রকৃত সাক্ষ্যের অধিকারী নও। তুমি যা কিছু করেছ, সেগুলো কি ঈশ্বর স্মরণে রাখবেন? পরিশেষে, তুমি যা কাজ করেছ এবং যে দায়িত্ব সম্পাদন করেছ, সেগুলোর উপর ভিত্তি করে ঈশ্বর কী সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন? সেখান থেকে কি কোনোকিছুতে, কোনো ধরনের বিবৃতিতে, উপনীত হওয়া যাবে না? বাইবেলে প্রভু যীশু বলেছেন, ‘সেই দিনটি যখন আসবে তখন অনেকেই আমাকে বলবে “প্রভু, প্রভু, তোমার নাম নিয়ে আমরা তো অনেক ভাবোক্তি করেছি, তোমার নাম নিয়ে আমরা অপদেবতা তাড়িয়েছি এবং কত অলৌকিক কাজ সম্পন্ন করেছি।” আমি তখন তাদের স্পষ্টই বলব, “কোন কালেই আমি তোমাদের চিনতাম না। অধর্মচারীর দল। আমার কাছ থেকে দূর হও”’ (মথি ৭:২২-২৩)। প্রভু যীশু কেন এমনটা বলেছিলেন? যারা প্রভুর নামে প্রচার করেছিল, অপদেবতা বিতাড়ন করেছিল এবং বিস্ময়কর অনেক কিছু করেছিল, তারা মন্দ কর্মকারী গণ্য হয়েছিল কেন? এর কারণ, তারা প্রভু যীশুর দ্বারা প্রকাশিত সত্য স্বীকার করেনি, প্রভু যীশুর আদেশ পালন করেনি, এবং হৃদয়ে তাদের কোনো সত্যপ্রেম ছিল না। তারা শুধুমাত্র স্বর্গরাজ্যের আশীর্বাদ লাভ করার পরিবর্তে প্রভুর প্রতি করা তাদের কাজ, যন্ত্রণাভোগ এবং ত্যাগস্বীকারকে বিনিময় করতে চেয়েছিল। এ হল ঈশ্বরের সাথে লেনদেন, এবং এ হল ঈশ্বরকে ব্যবহার করা ও তাঁর সাথে প্রতারণা করা, তাই প্রভু যীশু তাদের প্রতি বিতৃষ্ণ ছিলেন, তাদেরকে ঘৃণা করছিলেন এবং তাদের মন্দ কর্ম সংঘটনকারী হিসাবে দণ্ডবিধান করেছিলেন। বর্তমানে, মানুষজন ঈশ্বরের বাক্যের বিচার ও শাস্তি স্বীকার করলেও, এখনও কেউ কেউ মর্যাদা ও খ্যাতির অন্বেষণ করে, সর্বদা সবার থেকে আলাদা হয়ে দাঁড়াতে চায়, সর্বদা নেতা ও কর্মী হয়ে মর্যাদা ও খ্যাতি অর্জন করতে চায়। যদিও তাদের সকলেরই বক্তব্য হল যে, তারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী এবং তাঁর অনুসরণকারী, এবং যে তারা তাঁর জন্য নিজেদের পরিত্যাগ এবং ব্যয় করে, কিন্তু তারা খ্যাতি, স্বার্থ এবং মর্যাদা লাভ করার জন্য নিজেদের দায়িত্ব পালন করে, এবং সর্বদাই তাদের ব্যক্তিগত ফন্দি থাকে। তারা ঈশ্বরের প্রতি অনুগত বা বিশ্বস্ত নয়, তারা আত্ম-প্রতিফলন না করে যদৃচ্ছ কাজ করে, এবং তাই তারা মন্দ কর্ম সংঘটনকারী হয়ে উঠেছে। ঈশ্বর এই ধরনের মন্দ কর্ম সংঘটনকারীদের ঘৃণা করেন, এবং তাদের উদ্ধার করেন না” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র ভ্রষ্ট স্বভাব পরিহার করলে তবেই স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জন করা যেতে পারে)। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্যের এই অনুচ্ছেদটা পড়ার পর, আমি দুঃখিত ও লজ্জিত বোধ করলাম। আমি দেখলাম যে আমার নিজস্ব ধারণা, চিন্তাভাবনা, উদ্দেশ্য, এবং প্রেরণা মোটেও ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য ছিল না, সেগুলো সবই ছিল অন্যদের কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়ার জন্য। আমি যখন দেখেছিলাম যে ব্রাদার-সিস্টাররা আমার চেয়ে সিস্টার ক্যাথির দিকে বেশি মনোযোগ দেন, আমার ভিতরে ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতা এসেছিল, আমি ওঁকে অতিক্রম করতে চেয়েছিলাম, এমনকি এটাও আশা করেছিলাম যে ওঁকে যেন অন্য গির্জায় বদলি করে দেওয়া হয়। আমি দেখলাম, একজন গির্জার নেতা হিসাবে, গির্জার কাজ করার জন্য মানুষকে প্রস্তুত করার দিকে আমার মনোযোগ ছিল না, আমি আমার দায়িত্বকে অবহেলা করছিলাম, ভুল পথে চলছিলাম, প্রতিভার প্রতি ঈর্ষান্বিত হচ্ছিলাম, এবং সুনাম ও মর্যাদাকে অনুসরণ করার একটা অবস্থার মধ্যে জীবনযাপন করছিলাম। প্রভু যীশু যাদের নিন্দা করেছিলেন আমিও সেই অন্যায়কারীদেরই মতো। ঈশ্বরের প্রতি যাদের কোনো আনুগত্য ছিল না, এবং শুধুমাত্র নিজেদের সুনাম ও মর্যাদা বজায় রাখা আর অন্যদের কাছ থেকে সম্মান পাওয়ার জন্যই তারা কষ্ট স্বীকার করত ও কাজ করত। আমিও একইরকম ছিলাম। আমি কষ্ট সহ্য করেছিলাম আর নিজেকে ব্যয় করেছিলাম ব্রাদার-সিস্টারদের কাছ থেকে প্রশংসা অর্জনের জন্য এবং আমার সুনাম ও মর্যাদা বজায় রাখার জন্য। আমি যখন নিজেকে জাহির করতে ব্যস্ত ছিলাম, তখন আমার দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্য আর সঠিক ছিল না, যার ফলে পবিত্র আত্মার কাজ অর্জন করা আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। আমার আলাপ-আলোচনাতে কোন আলো ছিল না, এবং আমি নবাগতদের সমস্যার সমাধান করতে পারিনি। ঈর্ষান্বিত হওয়া সত্যিই একটা মন্দ ব্যাপার, এবং তা এমন একটা বিষয় যা ঈশ্বর ঘৃণা করেন। প্রভু যীশু বলেছেন, “সেই দিনটি যখন আসবে তখন অনেকেই আমাকে বলবে ‘প্রভু, প্রভু, তোমার নাম নিয়ে আমরা তো অনেক ভাবোক্তি করেছি, তোমার নাম নিয়ে আমরা অপদেবতা তাড়িয়েছি এবং কত অলৌকিক কাজ সম্পন্ন করেছি।’ আমি তখন তাদের স্পষ্টই বলব, ‘কোন কালেই আমি তোমাদের চিনতাম না। অধর্মচারীর দল। আমার কাছ থেকে দূর হও’” (মথি ৭:২২-২৩)। ঈশ্বর সত্যিই তাদের ঘৃণা করেন, বাহ্যিকভাবে যারা ঈশ্বরের জন্য ভ্রমণ এবং কষ্ট ভোগ করে বলে মনে হয়, কিন্তু আসলে শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব ইচ্ছা এবং উদ্দেশ্য সিদ্ধি করার জন্যই কাজ করে। তারা যা করে নিজেদের স্বার্থেই করে। ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার বা ঈশ্বরের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য নয়। এই কারণেই তারা এত কাজ করা সত্ত্বেও ঈশ্বর সেসবের স্বীকৃতি দেন না। আমি দেখলাম যে আমি নিজেও তাই করছিলাম। আমি বাহ্যিকভাবে আমার দায়িত্ব পালন করছিলাম, কিন্তু আমি সত্যের সাধনা করিনি বা নিজের অন্তরে অনুসন্ধান করার ও নিজেকে জানার চেষ্টাও করিনি, এবং আমি আমার সঙ্গীর শক্তিমত্তা থেকেও কিছু শেখার চেষ্টা করিনি। পরিবর্তে, আমি সুনাম ও মর্যাদার অনুসরণ করার ভুল পথ নিয়েছিলাম, তাই আমি সেই অন্যায়কারীদের থেকে আলাদা ছিলাম না। সত্যের সাধনার পরিবর্তে সুনাম ও মর্যাদার সন্ধানে ঈশ্বরকে বিশ্বাস করা আসলে ঈশ্বরকে প্রতিরোধের পথ। আমরা যতই বাহ্যিকভাবে নিজেদের পরিত্যাগ করি এবং ব্যয় করি না কেন, ঈশ্বর কখনই তা অনুমোদন করবেন না। আমার মনে পড়ল পৌল কীভাবে প্রচুর ব্যয় করেছিলেন শুধুমাত্র মুকুট লাভ করার জন্য এবং অন্যদের কাছ থেকে সম্মান ও উপাসনা পাওয়ার জন্য। তিনি কখনই তাঁর কলুষিত স্বভাব পরিবর্তন করতে চাননি, এবং পৌল যা করেছিলেন তা ঈশ্বরের নয়, পৌলের নিজের সাক্ষ্য দিচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত, ঈশ্বর তাঁকে এর জন্য দণ্ডিত করেছিলেন। আমি যদি আমার স্বার্থপর বাসনা নিয়েই আমার দায়িত্ব পালন করে যেতাম, তাহলে আমি ঈশ্বরের গৃহের কাজকে ক্ষতিগ্রস্ত ও বাধাপ্রাপ্ত করতাম, নিজের অজান্তেই পৌলের মত একজন অন্যায়কারী হয়ে উঠতাম, এবং ঈশ্বরের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত ও নির্মূল হতাম। যখন এটা বুঝতে পারলাম, আমি ঈশ্বরের সামনে গিয়ে প্রার্থনা করলাম। বললাম, “সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, আমি সুনাম ও মর্যাদার অনুসরণ করার একটা অবস্থায় জীবনযাপন করছি। আমি আমার সিস্টারকে ঈর্ষা করি, এবং আমি তাঁর সাথে নিজেকে তুলনা করি ও তাঁর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। ঈশ্বর, আমি আমার দায়িত্বের পথে আমার কলুষিত স্বভাবকে বাধা হতে দিতে চাই না, আমি আমার কলুষিত স্বভাব মোচন করতে চাই এবং আমার দায়িত্ব পালনে সিস্টারের সাথে কাজ করতে চাই। ঈশ্বর, দয়া করে আমাকে পথপ্রদর্শন করুন যাতে আমি এই সমস্যার সমাধান করতে পারি।”
পরে, আমি ঈশ্বরের বাক্যের আরেকটা অনুচ্ছেদ পড়ি। “সবসময় নিজের স্বার্থের জন্য কিছু কোরো না এবং ক্রমাগত নিজের স্বার্থ বিবেচনা কোরো না; মানুষের স্বার্থ বিবেচনা কোরো না, এবং তোমার নিজের গর্ব, খ্যাতি, বা মর্যাদা সম্পর্কে কোনো চিন্তা কোরো না। তোমাকে প্রথমে অবশ্যই ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থের কথা চিন্তা করতে হবে এবং সেগুলিকেই তোমায় অগ্রাধিকার দিতে হবে। তোমার ঈশ্বরের ইচ্ছার বিবেচনা করা উচিত, এবং তুমি তোমার দায়িত্ব পালনে অশুদ্ধ হয়েছ কিনা, তুমি অনুগত ছিলে কিনা, তোমার দায়িত্ব পালন করেছ এবং তোমার সমস্ত কিছু দিয়েছ কিনা, সেইসাথে তুমি আন্তরিকভাবে তোমার কর্তব্য এবং গির্জার কাজ সম্পর্কে ভেবেছ দিয়েছ কিনা, তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা শুরু করা উচিত। তোমাকে অবশ্যই এই বিষয়গুলি বিবেচনা করতে হবে। তাদের সম্পর্কে ঘন ঘন চিন্তা করো এবং সেগুলির মর্মোদ্ধার করো, আর তাহলেই তোমার কর্তব্য ভালোভাবে সম্পাদন করা তোমার পক্ষে সহজতর হবে। তুমি যদি দুর্বল ক্ষমতাসম্পন্ন হও, তোমার অভিজ্ঞতা যদি অগভীর হয়, অথবা তুমি যদি তোমার পেশাগত কাজে দক্ষ না হও, তাহলে তোমার কাজে কিছু ভুল বা ঘাটতি থাকতে পারে, এবং এর ফলাফল খুব একটা ভালো না-ও হতে পারে—কিন্তু তুমি তোমার শ্রেষ্ঠ প্রচেষ্টা করে থাকবে। তুমি যা কিছু করো, তাতে তুমি তোমার নিজের স্বার্থপর কামনা বা পছন্দগুলি পূরণ কোরো না। পরিবর্তে, তুমি গির্জার কাজ এবং ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থের প্রতি অবিরাম বিবেচনা কোরো। তুমি যদি তোমার দায়িত্ব ভালভাবে পালন করতে না-ও পারো, তাহলেও তোমার হৃদয় সংশোধিত হয়েছে; উপরন্তু, তুমি যদি তোমার কর্তব্যের সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য সত্যের অনুসন্ধান করতে পার, তবে তোমার কর্তব্য মানসম্মত হবে এবং তুমি সত্যের বাস্তবতায় প্রবেশ করতে সক্ষম হবে। এটাই হল সাক্ষ্য দেওয়া” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র ভ্রষ্ট স্বভাব পরিহার করলে তবেই স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জন করা যেতে পারে)। ঈশ্বরের বাক্য আমাকে অনুশীলনের একটা পথ দিয়েছে। অন্যরা যাতে আমাদের প্রশংসা ও সম্মান করে সেই উদ্দেশ্য নিয়ে অন্যদের সামনে আমাদের দায়িত্ব পালন করা উচিত নয়। আমাদের উচিত সুনামকে একপাশে সরিয়ে রাখা, ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থ বিবেচনা করা, এবং আমাদের দায়িত্বগুলোকে প্রথমে রাখা। এটাই ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গত। সিস্টার ক্যাথি সুসমাচারের কাজ ভালভাবেই করতেন এবং তিনি তাঁর কর্তব্যে দায়িত্বশীলও ছিলেন। তাঁর প্রতি আমার ঈর্ষান্বিত হওয়া উচিত হয়নি। আমার ত্রুটিগুলো পূরণ করার জন্য তাঁর দক্ষতা থেকে আমার শেখা উচিত ছিল, তাঁর সাথে মিলেমিশে থাকা উচিত ছিল এবং তাঁর সাথে মিলে আমার দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল।
একবার, আমি আমার জ্ঞাতিভাইয়ের কাছে সুসমাচার প্রচার করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে গভীর ধর্মীয় ধারণায় আচ্ছন্ন ছিল, এবং আমি জানতাম না কীভাবে তার কাছে ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজের সাক্ষ্য দেবো, আর আমি বেশ চিন্তিতও ছিলাম যে আমি খুব পরিষ্কারভাবে আলোচনাও করতে পারব না, তাই আমি আমার সাথে মিলে কাজ করার জন্য একজন সিস্টারকে চেয়েছিলাম, এবং সিস্টার ক্যাথির কথা আমার মনে এলো, কিন্তু আমি দ্বিধা বোধ করলাম। আমি ভাবলাম, “আমি যদি ওঁকে আমার সঙ্গী হিসাবে নিই, তাহলে কি প্রমাণ হয় না যে আমি আরও খারাপ? যে আমি ঈশ্বরের কাজের সাক্ষ্য দিতে পারি না বা ধর্মীয় পূর্বধারণাগুলোর সমাধান করতে পারি না? ব্রাদার-সিস্টাররা যদি জানতে পারেন, তাঁরা কি আমাকে অবজ্ঞা করবেন? যদি সিস্টার ক্যাথি আমার জ্ঞাতিভাইয়ের ধর্মীয় ধারণাগুলোর সমাধান করে দেন, ব্রাদার-সিস্টাররা নিশ্চয়ই ওঁকে সম্মান করবেন।” আমার যখন এই ভাবনা এল, তখন আমি বুঝতে পারলাম যে আমি আবার সিস্টার ক্যাথির সাথে সুনাম আর লাভের জন্য প্রতিযোগিতা করছি, তাই আমি নীরবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম। পরে, ঈশ্বরের বাক্যের একটা অংশ আমার মনে পড়ল, “তোমাকে অবশ্যই শিখতে হবে এই বিষয়সকল পরিত্যাগ করতে, একপাশে সরিয়ে রাখতে, শিখতে হবে অন্যদেরকে সুপারিশ করা, এবং তাদেরকে আলাদা হয়ে উঠতে দেওয়ার বিষয়ে। তুমি আলাদা হয়ে ওঠার বা গৌরব অর্জন করার সুযোগ পেলেই তৎক্ষণাৎ সেই সুবিধাটি নেওয়ার জন্য সংগ্রামরত বা ব্যতিব্যস্ত হয়ো না। তোমাকে অবশ্যই সেই বিষয়সকল একপাশে সরিয়ে রাখতে সক্ষম হতে হবে, কিন্তু অবশ্যই দায়িত্ব পালনে বিলম্ব করলেও চলবে না। এমন একজন ব্যক্তি হও, যে প্রশান্ত ও প্রচ্ছন্নভাবে কাজ করে, এবং যে বিশ্বস্তভাবে নিজের দায়িত্ব পালনের সময় অন্যদের কাছে সেটা জাহির করে না। তুমি যত বেশি তোমার সম্মান ও মর্যাদাকে ত্যাগ করবে এবং নিজের স্বার্থকে যত বেশি পরিহার করবে, তুমি ততই বেশি শান্তিপূর্ণ হয়ে উঠবে, তোমার হৃদয়ে ততই বেশি আলো থাকবে, এবং তোমার অবস্থাও ততই বেশি উন্নত হবে। তুমি যত বেশি সংগ্রাম এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, তোমার অবস্থাও তত অন্ধকার হবে। বিশ্বাস না হলে নিজেই চেষ্টা করে দেখো!” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র ভ্রষ্ট স্বভাব পরিহার করলে তবেই স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জন করা যেতে পারে)। ঈশ্বরের বাক্য আমাকে আলোকিত করল। আমাকে আমার অহংকার দমন করে সিস্টার ক্যাথির সাথে সহযোগিতা করতে হত। এইভাবে অনুশীলন করাই আমাকে আমার দায়িত্ব পালনে সাহায্য করতে পারত। আমি যদি ওঁর প্রতি ঈর্ষান্বিত থাকতাম এবং সুনাম ও লাভের জন্য ওঁর সাথে প্রতিযোগিতা করতাম, তাহলে আমার অবস্থা আরও নেতিবাচক ও অন্ধকার হয়ে উঠত, কারণ সুনাম ও মর্যাদাকে অনুসরণ করা হল শয়তানের পথ। ঈশ্বরের কাছে আমি প্রার্থনা করলাম, “সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, আমি জানি আমার স্বভাব এখনও কলুষিত। আমি সিস্টার ক্যাথির প্রতি ঈর্ষান্বিত, এবং সুনাম ও লাভের জন্য তাঁর সাথে প্রতিযোগিতা করার কথা ভাবছি, অথচ আমার উচিত সুনাম ও মর্যাদাকে একপাশে সরিয়ে রাখা। দয়া করে আমাকে পথপ্রদর্শন করুন যাতে আপনাকে সন্তুষ্ট করার জন্য দৈহিক ইচ্ছা ত্যাগ করতে পারি ও সত্যকে অনুশীলন করতে পারি।” প্রার্থনা করার পর, আমি অনেকটা স্বস্তি বোধ করলাম, এবং এই পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করবো বলে সিস্টার ক্যাথির কাছে গেলাম। তিনি অবিলম্বে সম্মত হলেন এবং আমার সাথে আলোচনা করলেন কীভাবে বিষয়টা পরিচালনা করা যায়। তা দেখে আমি খুবই আপ্লুত হলাম। আমি ভাবলাম কীভাবে আমি সবসময় আমার নিজের সুনামের জন্য জীবনযাপন করে এসেছি আর সিস্টার ক্যাথির সাথে মিলেমিশে থাকার ভান করেছি, কিন্তু তিনি কখনোই আমার আসল ভাবনা জানতে পারেননি। তাই, আমি সিস্টার ক্যাথির কাছে সবটা খুলে বলার সিদ্ধান্ত নিলাম।
রাতের খাবারের পর, আমি সিস্টার ক্যাথির সাথে কথা বললাম, এবং আমার সমস্ত অনাচার সম্পর্কে তাঁর সাথে আলাপ-আলোচনা করলাম। সব শোনার পর তিনি বললেন, “ঠিক আছে। আসলে এ ব্যাপারে আমি আপনার চেয়েও বেশি কলুষিত। এই ধরনের আলাপ-আলোচনা করা খুবই ভালো।” সবকিছু বলার পরে আমিও বেশ স্বস্তি অনুভব করলাম, এবং সিস্টার ক্যাথির প্রতি আমার ঈর্ষা ত্যাগ করতে পারলাম। এখন আমি সিস্টার ক্যাথির সাথে মিলে আমার দায়িত্ব পালন করতে পারি, এবং নিরাপত্তা ও মুক্তির এক গভীর অনুভূতি অনুভব করি। এই সবই ছিল ঈশ্বরের বাক্য থেকে অর্জিত প্রভাব। সত্যের অনুশীলনই আমাদের শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যের অনুভূতি এনে দেয়। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।