নতুন বিশ্বাসীদের সিঞ্চনের মাধ্যমে শিক্ষালাভ
এই বছরের জানুয়ারিতে, আমি গির্জায় নবাগতদের সিঞ্চন করছিলাম। ভগিনী রাং জি আর তার স্বামী ছিল দুজন নবাগত, তাদের সিঞ্চনেরদায়িত্ব ছিল আমারই উপর। সুপারভাইজার আমাকে বলল রাং জি’র স্বামী ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজের অনুসন্ধান সবে শুরু করেছে, কয়েকটা সমাবেশে গেছে, তার আরো সহায়তা ও সিঞ্চনের প্রয়োজন।
রাং জি’র বাড়িতে দু’বার গিয়েছিলাম, প্রতিবারই তার আর তার স্বামীর মধ্যে কথা কাটাকাটিশুরু হয়েছিল। ঘটনাগুলো ভেবে বুঝতে পারলাম যে, স্বামীর জাগতিক চাহিদা এবং বিশ্বাসে নিষ্ঠার অভাবের কারণে রাং জি তাকে অবজ্ঞার চোখে দেখে। আমার মনে হল তার চাহিদা অবাস্তব আর তার তাগাদা স্বামীর অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে, কারণ সে সবে সত্য পথের অনুসন্ধান শুরু করেছে। একবার, তার সাথে আলোচনার সময় বোঝালাম মানুষকে বোঝাতে হলে কীভাবে আমাদের সহনশীলতা ও ধৈর্যের সাহায্য নিতে হবে। আশ্চর্যের বিষয়, ভগিনী বিরক্ত হয়ে বলল যে সে এমনিতেই খুব ধৈর্যশীল। আর বলল, “সে বিশ্বাস করতে না চাইলে না কোনো সমস্যা নেই। অন্তত সেক্ষেত্রে সে আমার পথে বাধা না দিলেই হল।” আমি খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম এই ভেবে যে তার স্বামী তার একথা শুনে গির্জা ছেড়ে যেতে পারে। মনে মনে ভাবলাম, “এই ভগিনী খুব অহংকারী। শুধু নিজের ক্ষোভ উগরে দিতে চায়, অন্যরা কী ভাববে তা নিয়ে চিন্তা করে না। তার সাথে গুরুতর আলোচনা করতে হবে আর তাকে জানাতে হবে যে পরিস্থিতিটা কতটা উদ্বেগজনক।” কিন্তু আমার একথা শুনে রাং জি পাল্টা তর্ক করল: “আমি রাগ করতে চাই না। কিন্তু সে সারাদিন আড্ডা দিয়ে অথবা মাহজং খেলে কাটায় আর ঈশ্বরের বাক্য পড়ে না। তাকে যতই বলি না কেন, কিছুতেই কথা শোনে না।” আমি কথাটা শুনে একটু রেগে গেলাম। ভাবলাম: “স্পষ্টতই তুমি অনাচারের লক্ষণ দেখাচ্ছ, কিন্তু শুধু স্বামীরই সমালোচনা করছ। নিজেকে চিনতে পারোনি!” তাই আমি তাকে মানুষের অহংকারী স্বভাব সম্পর্কে ঈশ্বরের বাক্যের একটা অংশ পড়ে শোনালাম আর তার রাগকে মর্যাদার জন্য খুব বেশি বাসনার ফল হিসাবে ব্যাখ্যা করলাম। তার কথা অনুযায়ী, স্বামী তার কথা না মানলেই সে রাগ করে আর মেজাজ হারায় যেটা ভ্রষ্ট স্বভাবের পরিচয়, এটা সংশোধন করা দরকার। সেই সময়, অনিচ্ছাসত্বেও ভগিনী স্বীকার করে যে সে খুব অহংকারী ছিল, কিন্তু পরেও সে একই রকম থেকে যায়, নিজেকে একটুও বদলায়নি। পরে, আমি আরো কয়েকবার তার সাথে আলোচনা করে তাকে তার স্বামীর সাথে ভালো ব্যবহার করার অনুরোধ করেছিলাম, সে যেন সব সময় স্বামীর খুঁত না ধরে নিজের বিচার করে। কিন্তু ভগিনী তখনও নানা অজুহাত দিতে থাকে। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। আসলে আমি চাইছিলাম যে তার স্বামী আরো বেশি সমাবেশে যোগ দিক, তাতে প্রকৃত পথে সে আরো মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু সেই সব সমাবেশ অপ্রত্যাশিতভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
সেই সময় শুধু রাং জি’র বিচার করে অভিযোগ করছিলাম: “সে খুব অহংকারী আর তার স্বামীর প্রতি কঠোর। তার মধ্যে কি মানবিকতা বলে কিছু আছে? তার সাথে অনেকবার আলোচনা করেছি, কিন্তু সে সত্যের অনুশীলন করে না আর সমাবেশের প্রচারেও সাহায্য করে না। তাকে আর সিঞ্চন করতে চাই না।” একবার, যে ভগিনী আমার সাথে কাজ করছিল তার সাথে এই সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলাম, আমার সমস্ত অভিযোগ উগরে দিলাম। ভগিনী আমাকে একটা অভিজ্ঞতার সাক্ষ্যের ভিডিও দেখতে বলে। সেই ভিডিওতে ঈশ্বরের বাক্যের একটা অনুচ্ছেদ আমার মনকে নাড়া দিল। ঈশ্বরের বাক্যে বলা হয়েছে, “যে সকল মানুষ প্রকৃত পথের অনুসন্ধান করছে, তাদের প্রতি আচরণে অবশ্যই যত্নশীল ও বিচক্ষণ হতে হবে এবং ভালোবাসার উপর নির্ভর করতে হবে। কারণ যারা প্রকৃত পথের অনুসন্ধান করছে তারা সকলেই অবিশ্বাসী—এমনকি তাদের মধ্যে যারা ধর্মবিশ্বাসী, তারাও কমবেশি অবিশ্বাসী—এবং তারা সকলেই দুর্বল: তাদের পূর্বধারণার সাথে কোনোকিছু সঙ্গতিপূর্ণ না হলেই তারা বিরোধিতা করবে, এবং তাদের ইচ্ছার সাথে কোনো একটা কথা অসঙ্গত হলেই তারা বিতর্কে জড়িয়ে পড়বে। সুতরাং, তাদের কাছে সুসমাচার প্রচারের জন্য আমাদের সহিষ্ণুতার প্রয়োজন। আমাদের দিক থেকে প্রভূত ভালোবাসা থাকতে হবে, এবং কিছু পদ্ধতি ও উপায়ও অবলম্বন করতে হবে। তবে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তাদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করা, মানুষকে উদ্ধার করার জন্য ঈশ্বর যেসমস্ত সত্য প্রকাশ করেছেন সেগুলো তাদের জানানো, এবং তাদের ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর ও সৃষ্টিকর্তার বাক্য শুনতে দেওয়া। এইভাবেই তারা উপকৃত হতে পারবে” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, সুসমাচারের প্রচার এমন এক কর্তব্য যার প্রতি সকল বিশ্বাসী মর্যাদাবদ্ধ)। ঈশ্বর চান যে আমরা প্রত্যেক সম্ভাব্য সুসমাচার প্রাপকের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করি, অত্যন্ত ধৈর্য ধরে, স্নেহের সাথে তাদের সাহায্য আর তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করি, সত্য নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করি আর তাদেরকে ঈশ্বরের শরণে নিয়ে আসি। এগুলো প্রত্যেক সুসমাচার প্রচারকের দায়িত্ব আর কর্তব্য। ঈশ্বরের প্রতিটি বাক্যে আমি মানব জীবনের প্রতি তাঁর গভীর প্রেম অনুভব করি। এই কারণেই তিনি আমাদের থেকে এগুলো চান। ঈশ্বরের ভালবাসা আর মানবজাতিকে যতটুকু বুঝি, সে বিষয়ে চিন্তা করে লজ্জিত বোধ করলাম, ভাবছিলাম রাং জি’র সাথে কেমন আচরণ করেছিলাম। স্বামীকে তিরস্কার করা নিয়ে তার সাথে কয়েকবার আলোচনা করলেও সে শোধরায়নি, তখন রেগে গিয়ে, নিজের ইচ্ছামত তার সমালোচনা করার জন্য ঈশ্বরের বাক্যের অনুচ্ছেদ পেয়ে গিয়েছিলাম, তার সমস্যা বিশ্লেষণ করে তার কাছে আমার ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলাম, তার অনুভূতি বা আত্মিক উচ্চতা সম্পর্কে একটুও চিন্তা করিনি। এমনকি আমার সঙ্গীর সামনেই বলি যে, সে মানবিক নয়। কোথায় ছিল আমার মমত্ববোধ? রাং জি সবে ছয় মাস হল ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ গ্রহণ করেছে, এখনও সে অনেক সত্য বুঝতে পারে না—তাই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে সে তার ভ্রষ্ট স্বভাব প্রকাশ করবে এটাই কি স্বাভাবিক নয়? সত্যের অনুশীলনে তাকে সাহায্য করার জন্য স্নেহের সাথে না বুঝিয়ে, তাকে আসলে অবজ্ঞা করেছিলাম। আমার মধ্যে সত্যিই মানবিকতার অভাব ছিল এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে বুঝলাম কেন রাং জি’র সাথে কয়েকবার আলোচনা করেও কোনো ফল হয়নি কারণ স্নেহের সাথে তাকে বোঝাইনি আর সত্যের সাহায্যে তার সমস্যা সমাধান করিনি। উল্টে অহংকারবশত তাকে অবজ্ঞা করে সীমাবদ্ধ করে রাখতাম আর রাগ হলে বকতাম। আশা কী করে করব? এই রকম আচরণ নিয়ে আমি কীভাবে তাকে সত্যের উপলব্ধি ও নিজের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারি? ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে বললাম, আমার অভিপ্রায় সংশোধন করব, আর নিজের ভ্রষ্ট স্বভাব অনুযায়ী রাং জি’র সাথে আচরণ করব না।
একদিন ঈশ্বরের বাক্যের একটা অনুচ্ছেদ দেখলাম। “পবিত্র আত্মা যখন মানুষের উপর কাজ করে, তখন মানুষ যে বিভিন্ন ধরনের অবস্থার সম্মুখীন হয় সেই বিষয়ে তোমার একটি ধারণা থাকা আবশ্যক। বিশেষত, এই অবস্থা সম্পর্কে ঈশ্বরের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের আরও উত্তম রূপে অবহিত হওয়া প্রয়োজন। তুমি যদি শুধুই প্রভূত অভিজ্ঞতা বা সঠিক পথে প্রবেশের উপায় সম্বন্ধে কথা বলো, তা হলে এতে প্রমাণ হয় যে তোমার অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ একপেশে। তোমার নিজের প্রকৃত অবস্থা সম্বন্ধে না জেনে এবং সত্যের মূল নীতি সম্যক ভাবে উপলব্ধি না করে কখনই স্বভাবপ্রকৃতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। পবিত্র আত্মার মৌলিক নীতি এবং এর ফলাফল সম্বন্ধে না জেনে তোমার পক্ষে দুষ্ট আত্মার কার্যকলাপ উপলব্ধি করা দুরূহ। তোমাকে অবশ্যই দুষ্ট আত্মার কার্যকলাপ প্রকাশের পাশাপাশি মানুষের চিন্তার গতিপ্রকৃতির স্বরূপ উদ্ঘাটন করে সরাসরি সমস্যার গভীরে প্রবেশ করতে হবে; তোমাকে এছাড়াও মানুষের আচার ব্যবহারের বহুবিধ বিচ্যুতি এবং তাদের ঈশ্বর বিশ্বাসের সমস্যাগুলিও উল্লেখ করতে হবে, যাতে তারা সেগুলি চিনে নিতে পারে। অন্ততপক্ষে, তোমার তাদের নেতিবাচক বা নিশ্চেষ্ট অনুভব করানো উচিত হবে না। তবে, তোমাকে অবশ্যই সেইসব সমস্যা অনুধাবন করতে হবে যেগুলি অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই সমানভাবে পাওয়া যায়, তুমি অবুঝ হলে অথবা ‘উলুবনে মুক্তা ছড়ালে’ চলবে না; সেটি হবে নির্বোধের মত আচরণ। মানুষ যেসব অসংখ্য সমস্যার সম্মুখীন হয় সেগুলির নিষ্পত্তি করার জন্য তোমাকে অবশ্যই সর্বাগ্রে পবিত্র আত্মার কাজের গতিশীলতা অনুধাবন করতে হবে; তোমাকে বুঝতে হবে যে পবিত্র আত্মা কীভাবে বিভিন্ন মানুষের উপর কাজ করে, মানুষের বিভিন্ন সমস্যা এবং ভুলত্রুটিগুলি সম্পর্কে তোমার স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে, তোমাকে কোনও প্রকারের বিচ্যুতি বা ভ্রান্তি ব্যতিরেকেই যেকোনো ঘটনার বিচার করে তার মূল সমস্যায় পৌঁছাতে হবে। কেবল মাত্র এই ধরনের ব্যক্তিই ঈশ্বরের সেবায় নিয়োজিত হওয়ার উপযুক্ত” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, একজন উপযুক্ত পথপ্রদর্শকের কী কী গুণাবলি থাকা আবশ্যক)। ঈশ্বরের বাক্য থেকে বুঝলাম যে সুসমাচার প্রচার হোক বা নবাগতদের সিঞ্চন, আমাদের সব সময় মানুষের প্রকৃত সমস্যা আর অবস্থা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে, তাদের সমস্যার সত্যিকারের সমাধানের জন্য প্রাসঙ্গিক সত্য নিয়ে আলোচনা করতে হবে। তাদের অসুবিধা না বুঝে শুধু নিজের বিশ্বাসের ভিত্তিতে আলোচনা করলে, তাদের সমস্যার সমাধান তো হবেই না, উল্টে তাদের আঘাত বা অপমানও করে ফেলতে পারো। কখনও কখনও যখন নতুনরা ভ্রষ্ট আর নেতিবাচক স্বভাব দেখায়, আর বারবার আলোচনা করলেও শোধরায় না, তখন আমাদের প্রথমে চিন্তা করা উচিত যে আমরা তাদের সমস্যা নিয়ে স্পষ্টভাবে সত্য ব্যাখ্যা করেছি কিনা। স্পষ্টভাবে সত্য ব্যাখ্যা না করার ফলে যদি তাদের সমস্যার সমাধান না হয়ে থাকে, তাহলেআমরা নিজেদের দায়িত্ব আর কর্তব্য পালন করিনি। ভেবে দেখলাম রাং জি’র সাথে কেমন আচরণ করেছি। যতবার তাকে তার স্বামীর উপর চেঁচাতে দেখেছি, ততবার ধরেই নিয়েছিলাম যে সে অহংকারী বলে স্বামীর উপর কর্তৃত্ব ফলাচ্ছে, তাই ক্রমাগত তার সমালোচনা করেছি আর তার কলুষিত স্বভাব চিনতে তার উপর জোর খাটিয়েছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার সমস্যার সমাধান হয়নি। আমার অস্থির মন শান্ত করে, এই বিষয়ে ভাল করে ভাবার পর বুঝেছি কেন রাং জি তার মেজাজ হারায়, কারণ সে আশা করেছিল যে তার স্বামী অবিলম্বে সত্যের পথ ধরে নিয়মিত সমাবেশে যোগ দিতে শুরু করবে, আর কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলেই ঈশ্বরের সুরক্ষা পাবে। তাই যখন সে দেখত তার স্বামী ঈশ্বরের বাণী না পড়ে আড্ডায় বা মাহজং খেলায় ব্যস্ত, তখনি তার মেজাজ হারাত। এই বিষয়ে তার সাথে আলোচনা করিনি, তাই আলোচনা থেকে প্রত্যাশিত ফলও পাইনি। আসলে মূল সমস্যা আমারই ছিল। নবাগতর সমস্যা না বুঝেই তার সাথে আলোচনা করছিলাম, এমনকি ভেবেছিলাম, তার মানবিকতা নেই আর সে সত্য গ্রহণ করে না, তাকে শেখাতেও চাইনি। সত্যিই নিজেকে জানতাম না আর অন্যদের প্রতি একটুও স্নেহ ছিল না। এটা বুঝতে পেরে বেশ লজ্জিত আর অপরাধ বোধ হল। রাং জি’র প্রতি আমার মনোভাব সংশোধন করতে হত, তার বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে সত্যের সাহায্যে তার সমস্যার সমাধান করতে হত।
একদিন পর আবার আমাদের সমাবেশ ছিল। যখন পৌঁছলাম, রাং জি অভিযোগ করতে শুরু করল, বলল, তার স্বামী স্পষ্ট বলেছিল যে সে সমাবেশে আসবে, কিন্তু এখনও বাড়িই ফেরেনি। সে তাকে অসন্ধানী হিসাবে সীমাবদ্ধ করছিল আর তাকে নিয়ে হাল ছেড়ে দিতে চেয়েছিল। তাই তার পরিস্থিতি নিয়ে তার সাথে আলোচনা করলাম। বললাম: “তোমার স্বামীকে জমায়েতে আসতে আর ঈশ্বরের বাণী পড়তে বলার পিছনে ভাল উদ্দেশ্যই ছিল, কিন্তু তার প্রতি আমাদের খুব বেশি প্রত্যাশা রাখলে চলবে না। সে তোমার কথা না শুনলে তুমি যদি মেজাজ হারাও, তাহলে তার তা মানার সম্ভাবনা আরো কমে যাবে। মানুষ শয়তানের মাধ্যমে এত গভীরভাবে কলুষিত হয়েছে যে তারা সত্যকে ভালবাসে না, তাই তাদের সত্য সন্ধান আর জীবনে প্রবেশ খুব ধীর গতিতে হয়। অনেক আলোচনা, অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, বাধাবিপত্তি পেরিয়ে অন্তর্দৃষ্টি বা বোধগম্যতা আসে। তাই ভালবেসে মানুষকে সাহায্য করে, তাদের বদলানোর সময় দিতে হবে। আমরা দেখেছি যে, ঈশ্বর চান মানুষ তাদের স্বভাব পরিবর্তন করুক, কিন্তু তিনি কখনই মানুষকে জোর করেন না বা অবাস্তব প্রত্যাশা রাখেন না। আমরা ভ্রষ্ট স্বভাব নিয়ে জীবনযাপন করি আর ঈশ্বরের বাণী মানি না তা দেখে, তিনি তাঁর ক্রোধ প্রকাশ করেন না বা আমাদের পরিত্যাগও করেন না, বরং তাঁর বাণীর মাধ্যমে আমাদের আলোকিত করে পথ দেখান, যাতে আমরা একটু একটু করে বুঝতে পারি আর ধীরে ধীরে সত্যকে অনুধাবনকরে নিজেদের বদলাতে পারি। আমাদের কাছে তাঁর এই পদক্ষেপ খুবই কোমল। সুতরাং, আমরা যদি চাই যে আমাদের পরিবার সমাবেশে যোগ দিক আর ঈশ্বরের আরো বাণী পড়ুক যাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা ভিত তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে উদ্দেশ্য সঠিক হলেও, তাদের অসুবিধার প্রতি আমাদের সহানুভূতিশীল হতে হবে আর ধৈর্যের সাথে তাদের পথ দেখিয়ে সহায়তা করতে হবে। তবেই তাদের মেনে চলার সম্ভাবনা বাড়বে।” যা বললাম তা শুনে রাং জি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল: “সব সময় চেষ্টা করি যাতে স্বামী ঈশ্বরের বাণী আরো সংগ্রহ করে পড়তে পারে, মনে হয়েছিল সেটাই তার জন্য সবচেয়ে ভাল, তাই তাকে আমার কথা মানানোর চেষ্টা করতাম। কথামত কাজ না করলেই চেঁচাতাম। এমন আচরণ তাকে আঘাত দেবে সেটাই স্বাভাবিক। ভুল করেছিলাম। ভবিষ্যতে ঈশ্বরের বাক্যঅনুযায়ী চলব আর আমার ভ্রষ্ট স্বভাব বদলাব।” রাং জি কিছুটা বুঝতে পেরেছে আর তার মুখে হাসি ফুটেছে দেখে আমারও খুব ভাল লাগল। এরপর, আমরা একসাথে ঈশ্বরের বাক্যের একটা অনুচ্ছেদ পড়লাম। “অন্যদের সাথে তোমার আচরণ কেমন হওয়া উচিত, ঈশ্বরের বাক্যে তা পরিষ্কারভাবে দেখানো আছে অথবা তার ইঙ্গিত রয়েছে। মানবজাতির প্রতি আচরণে ঈশ্বরের যে মনোভাব, মানুষেরও একে অপরের প্রতি সেই একই আচরণ গ্রহণ করা উচিত। ঈশ্বর প্রতিটি মানুষের সাথে কেমন আচরণ করেন? কারো কারো আত্মিক উচ্চতা অপরিণত, বা তারা তরুণ, অথবা অল্পই কিছু সময় ধরে তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করছে, অথবা তারা প্রকৃতি ও সারমর্মের দিক থেকে খারাপ নয়, বিদ্বেষপরায়ণ নয়, কিন্তু সামান্য অজ্ঞ বা যোগ্যতার অভাব রয়েছে। অথবা তারা বহু সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ, এবং এখনো সত্য উপলব্ধি করেনি, এখনো তাদের জীবনে প্রবেশ বাকি, তাই তাদের পক্ষে মূর্খতাপূর্ণ বা অজ্ঞতাপূর্ণ কাজকর্ম করা থেকে বিরত থাকা কঠিন। কিন্তু ঈশ্বর মানুষের প্রকাশিত মূর্খতাপূর্ণ কাজকর্মের উপরে দৃষ্টিনিবদ্ধ থাকেন না; তিনি শুধু তাদের হৃদয়কে দেখেন। যদি তারা সত্য অন্বেষণের জন্য সংকল্পবদ্ধ হয়, তাহলে তারা সঠিক, এবং এটাই যখন তাদের উদ্দেশ্য, তখন ঈশ্বর তাদের পর্যবেক্ষণ করছেন, তাদের জন্য অপেক্ষা করছেন, এবং তাদের সময় ও সুযোগ দিচ্ছেন, যাতে তারা প্রবেশ করতে পারে। বিষয়টা এমন নয় যে ঈশ্বর তাদের একটামাত্র সীমালঙ্ঘনের জন্য তাদের প্রাণঘাতী আঘাত করবেন। এমন কাজ মানুষই প্রায়শ করে থাকে; ঈশ্বর মানুষের সাথে এমন আচরণ করেন না। যদি ঈশ্বর মানুষের সাথে এমন আচরণ না করেন, তাহলে মানুষ অন্যদের সাথে এমন আচরণ করে কেন? এতে কি তাদের ভ্রষ্ট স্বভাবই প্রদর্শিত হয় না? সুনির্দিষ্টভাবে এটাই তাদের ভ্রষ্ট স্বভাব। তোমাকে দেখতে হবে অজ্ঞ ও নির্বোধ মানুষের সাথে ঈশ্বর কেমন আচরণ করেন, যাদের আত্মিক উচ্চতা অপরিণত তাদের সাথে কেমন আচরণ করেন, মানবজাতির ভ্রষ্ট স্বভাবের স্বাভাবিক প্রকাশের প্রতি তাঁর আচরণ কেমন, এবং যারা বিদ্বেষপরায়ণ তাদের সাথেই বা কেমন আচরণ করেন। ঈশ্বর ভিন্ন ভিন্ন মানুষের সাথে ভিন্ন আচরণ করেন, এবং বিভিন্ন মানুষের অসংখ্যরকম অবস্থা পরিচালনার জন্য তাঁর বিভিন্ন উপায়ও রয়েছে। তোমাকে অবশ্যই এই সত্যগুলো উপলব্ধি করতে হবে। এইসমস্ত সত্য যখন তুমি উপলব্ধি করবে, তুমি জানতে পারবে কীভাবে কোনো বিষয়ের অভিজ্ঞতা লাভ করতে হয় এবং নীতি অনুসারে মানুষের সাথে কেমন আচরণ করতে হয়” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, সত্য অর্জন করতে হলে, নিকটবর্তী মানুষ, ঘটনাবলি এবং বস্তুসমূহ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে)। পড়া শেষ হলে, রাং জি বলল, এটি খুব ভাল অনুচ্ছেদ আর আমাকে তার সাথে আরো বেশি করে আলোচনা করতে বলল। তার সাথে আলোচনা করতে লাগলাম, বললাম: “যখন আমরা কারও সাথে আলোচনার সময় লক্ষ করি যে তাদের ঘাটতি বা সমস্যা আছে, তখন তাদের থেকে খুব বেশি আশা না করে, ভালবেসে, ঠান্ডা মাথায়তাদের বোঝাতে পারি। আমাদের উচিত তাদের সত্য গ্রহণ করার জন্য কিছু সময় দেওয়া আর তারা যাতে ধীরে ধীরে উন্নতি করতে পারে তার জন্য অপেক্ষা করা। ঈশ্বর জানেন যে আমরা শয়তানের মাধ্যমে গভীরভাবে কলুষিত, সত্য গ্রহণ করা আর তা অনুশীলনের পথে অনেক বাধাবিপত্তি রয়েছে। কখনও কখনও আমরা সত্য বুঝতে পারলেও পালন করতে পারি না। ঈশ্বর ক্রমাগত আমাদের বোঝান। মাঝে মাঝে তাঁর চিন্তা হয় যে আমরা বুঝতে পারব না, তাই তিনি ধৈর্য ধরে আমাদের উদাহরণ দেখান আর আমাদের বুঝিয়ে পথ দেখাতে সব রকম পদ্ধতি ব্যবহার করেন। কখনও কখনও তিনি তাঁর বাক্যের মাধ্যমে আমাদের পথ দেখান, কখনও বা আমাদের ভ্রাতা-ভগিনীদের নির্দেশকের মাধ্যমে। বাকি সময়ে আমরা এতই বুদ্ধিভ্রষ্ট আর বিদ্রোহী হয়ে পড়ি যে হাজার বোঝানোতেও কাজ হয় না, তাই ঈশ্বর আমাদের শাস্তি দিয়ে, শাসন, আর তিরস্কার করে বাস্তবিক অবস্থা দেখান, আমাদের হৃদয়ে সাড়া জাগাতে। ঈশ্বর খুব নম্রভাবে, ভালবেসে কাজ করেন, তিনি যা করেন তার মধ্যে কোনো কিছুই আরোপিত থাকে না। এমনকি যখন মাঝে মাঝে তিনি আমাদের কঠোরভাবে তিরস্কার করেন, শাসন করেন, বিচার করে আমাদের স্বভাব প্রকাশ করেন, আমরা তখনও তাঁর ভালবাসা আর করুণা অনুভব করতে পারি। আমাদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, আমরা দেখতে পাই কীভাবে ঈশ্বর মানুষের সাথে খুব নৈতিক আচরণ করেন, আর আমরা সত্য শুনেও উন্নতি করতে ব্যর্থ হলে কখনো তাড়াহুড়ো করে আমাদের পরিত্যাগ করেন না। মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের অসীম ভালবাসা আর ধৈর্য, আর মানবজাতিকে বাঁচানোর জন্য তাঁর গভীর আন্তরিক ইচ্ছা রয়েছে।”
রাং জি’র সাথে আলোচনার পর, হঠাৎ মনে হল: “ঈশ্বর যা চেয়েছেন তার কতটুকু নিজে করতে পেরেছি? শুধু সে তার স্বামীর সাথে কীভাবে সঠিক আচরণ করতে পারে সে সম্পর্কেই বলেছিলাম, কিন্তু তার সাথে সঠিক আচরণ করিনি! যখন দেখলাম সে তার স্বামীর উপর রেগে যাচ্ছে আর কয়েকবার তার সাথে আলোচনা করার পরেও সে শোধরায়নি, তখন নিজের বিচারে ভেবেছি সে অহংকারী, মনুষ্যত্বহীন, যত গর্জায় তত বর্ষায় না, এইসব।” আমার আচরণের কথা ভেবে বেশ লজ্জিত বোধ করলাম। রাং জি ছিল নবাগতা আর তার খুব বেশি অভিজ্ঞতাও ছিল না, কিন্তু তাকে তার অহংকারী স্বভাব চিনতেবাধ্য করে তাকে শোধরাতে বলেছিলাম। যখন সে শোধরায়নি, তখন সে সত্য খোঁজে না বা গ্রহণ করে না ধরে নিয়ে তাকে সীমাবদ্ধ করেছি, এমনকি ভাবতাম তার মানবিকতা খুবই নিম্নমানের। স্পষ্টতই তার অবস্থা বুঝতে পারিনি আর সেই নিয়ে তার সাথে আলোচনাও করিনি, তখনও তাকে তার দোষ স্বীকার করে বদলাতে বাধ্য করেছি। সত্যিই অহংকারী আর অযৌক্তিক ছিলাম। তখন বুঝতে পারলাম যে আমার দুর্নীতিগ্রস্ত স্বভাব প্রকাশ করেছি—রাং জি’র অবস্থা ছিল ঠিক আয়নার মত, যা আমাকে নিজের ভ্রষ্টতা দেখিয়ে দিত। সে তখন সবে ছয় মাস ঈশ্বরে বিশ্বাসী হয়েছিল, তাই আত্মচিন্তন করতে আর নিজেকে বুঝতে না পারাই স্বাভাবিক। বছরের পর বছর ধরে আমি বিশ্বাসী হিসাবে সমস্যার সমাধানের জন্য প্রায়ই অন্যদের সাথে সত্যের উপর আলোচনা করতাম, কিন্তু নিজে আদৌ কতটা সত্যের অনুশীলন করেছি? ফরিশীদের মত শুধু মতবাদের কথা বলে আর তা অনুশীলন না করে শুধ বড় বড় কথা বলেছি, তাই না? সেই সময়, ঈশ্বরের বাক্যের একটা অনুচ্ছেদ মনে পড়ল। “কিছু মানুষ আছে যারা সত্যের দ্বারা নিজেকে সজ্জিত করে শুধু কাজ করার জন্য ও প্রচার করার জন্য এবং অন্যদের প্রদান করার জন্য, নিজেদের সমস্যা সমাধানের জন্য নয়, এবং সত্যকে বাস্তবে অনুশীলনের কথা তারা কখনো চিন্তাই করে না। তাদের আলাপ-আলোচনা হয়তো বিশুদ্ধ উপলব্ধির হতে পারে এবং তা সত্যের সাথে সঙ্গত হতে পারে, কিন্তু নিজেদের তারা সেগুলোর ভিত্তিতে পরিমাপ করে না, অথবা নিজেরা সেগুলো অভ্যাস বা অনুভবও করে না। এখানে সমস্যাটা কোথায়? তারা কি প্রকৃতপক্ষে সত্যকে নিজেদের জীবন হিসাবে বলে গ্রহণ করেছে? না, করেনি। কেউ যে মতবাদ প্রচার করে তা যত বিশুদ্ধই হোক, তার অর্থ এই নয় যে সে সত্যের বাস্তবতার অধিকারী। সত্যের দ্বারা সজ্জিত হতে গেলে প্রথমে নিজেকে তাতে প্রবেশ করতে হবে, এবং তা উপলব্ধি করার পর সেটা বাস্তবে অনুশীলন করতে হবে। কেউ যদি নিজের প্রবেশের উপর মনোযোগ না দেয়, বরং অন্যদের কাছে সত্য প্রচার করে নিজেকে জাহির করাই তাদের লক্ষ্য হয়, তাহলে তাদের অভিপ্রায় ঠিক নয়। অনেক ভণ্ড নেতা আছে যারা এইভাবে কাজ করে, সত্য সম্পর্কে নিজেদের উপলব্ধি অবিরাম অন্যদের সাথে আলোচনা করে, নতুন বিশ্বাসীদের প্রদান করে, মানুষকে শিক্ষা দেয় সত্য অনুশীলন করতে, ভালোভাবে তাদের কর্তব্য পালন করতে, নেতিবাচক না হতে। এই সব কথাগুলোই ভালো ও সুন্দর, এমনকি ভালবাসবার মতো, কিন্তু এই কথাগুলো যারা বলে তারা সত্য অনুশীলন করে না কেন? জীবনে তাদের প্রবেশ নেই কেন? এখানে ঠিক কী হচ্ছে? এরকম একজন মানুষ কি প্রকৃতই সত্যকে ভালোবাসে? সেটা বলা শক্ত। ইসরায়েলের ফরিশীরা এইভাবেই অন্যদের কাছে বাইবেলের ব্যাখ্যা করেছিল, অথচ নিজেরা ঈশ্বরের আদেশ পালন করতে পারেনি। যখন প্রভু যীশু আবির্ভূত হয়েছিলেন, কাজ করেছিলেন, তখন তারা ঈশ্বরের কণ্ঠ শুনতে পেলেও প্রভুর প্রতিরোধ করেছিল। তারা প্রভু যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে এবং ঈশ্বরের কাছে অভিশপ্ত হয়। অতএব, যারা সত্যকে গ্রহণ করে না বা সত্যের অনুশীলন করে না, তারা সকলেই ঈশ্বরের দ্বারা নিন্দিত হবে। তারা কতই না ঘৃণ্য! যে অক্ষরসর্বস্ব মতবাদ তারা প্রচার করে তা যদি অন্যকে সাহায্য করতে পারে, তবে তা তাদের সাহায্য করতে পারবে না কেন? এমন ব্যক্তিকে ভণ্ড বলাই ভালো যার কোনো বাস্তবতা নেই। তারা অন্যদের আক্ষরিক সত্য প্রদান করে, অন্যদের দিয়ে তা অনুশীলন করায়, কিন্তু তারা নিজেরা তার সামান্যতম অনুশীলনও করে না। এই ধরনের লোকেরা কি নির্লজ্জ নয়? তাদের সত্যের বাস্তবতা নেই, কিন্তু অন্যদের কাছে আক্ষরিক মতবাদ প্রচারের সময় তারা এর ভান করে। এটা কি ইচ্ছাকৃত প্রতারণা ও ক্ষতিসাধন নয়? যদি এই ধরনের লোকেদের অনাবৃত ও পরিহার করা হয়, তার জন্য তাদের শুধু নিজেদেরই দোষ দিতে হবে। তারা হবে করুণারও অযোগ্য” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। ঈশ্বরের বাক্য আমার নিজের অবস্থাই বর্ণনা করে। রাং জিকে সিঞ্চনের সময় নিয়ে ভাবলাম, কলুষিত স্বভাব নিয়ে জীবনযাপন করতাম আর তার সাথে ন্যায্য আচরণও করিনি। শুধু দেখেছি কীভাবে সে তার অহংকারী স্বভাব প্রকাশ করেছে আর সত্য গ্রহণ করছে না, কিন্তু নিজে কত ভ্রষ্ট তা মোটেও ভাবিনি। নিজের কুৎসিত চেহারাটা চিনতে পারিনি, আর নির্লজ্জভাবে ঈশ্বরের বাণী দিয়ে তার সমালোচনা করে তাকে উন্নতি করতে বলেছি, যেন অন্যদের নিজেদের ভ্রষ্ট স্বভাব নিয়ে, আত্মচিন্তনের দরকার থাকলেও আমার ছিল না, কারণ আমি কোনোভাবেই ভ্রষ্ট নই। সত্যিই নিজেকে চিনতাম না আর খুব নির্লজ্জ ছিলাম! অন্যদের সাথে আলোচনা করতে আর তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করতাম, কিন্তু আত্মচিন্তন বা একটুও প্রবেশ করিনি। এটা ভণ্ড ধার্মিক ফরিশীদের থেকে কতই বা আলাদা? এভাবে দায়িত্ব পালন করে মানুষের সাহায্য করব বলে কীভাবে আশা করেছিলাম?
পরে, যখন রাং জি’র স্বামী ফিরে আসে, সে তাকে বলে: “আমার ভগিনী এইমাত্র আমাকে ঈশ্বরের বাক্যেরকিছু অংশ পড়ে শুনিয়েছিল আর বুঝতে পারলাম যে ভুল করেছি। আমার অহংকারী স্বভাবের জন্য তোমাকে দমিয়ে রেখেছি। ভবিষ্যতে, ঈশ্বরের বাণী অনুযায়ী চলব আর তোমার সাথে খারাপ আচরণ করব না।” রাং জি যেভাবে ঈশ্বরের বাণী পালন করছিল তা দেখে আরো বেশি লজ্জিত হলাম। আগে, সে সত্য স্বীকার করে না ভেবে তাকে সীমাবদ্ধ করতাম, কিন্তু এখন পরিস্থিতির বাস্তবতা দেখে মনে হল যেন আমার গালে থাপ্পড় পড়েছে। বাড়ি ফেরার পথে ভাবছিলাম কীভাবে রাং জিকে সীমাবদ্ধ করে তার বিচার করতাম, ভেবে বেশ অপরাধ বোধ হল। ঈশ্বরের এই বাক্যের কথা মনে পড়ল যেখানে বলা হয়েছে: “যদি নিজের অন্তরে তুমি প্রকৃতই সত্য উপলব্ধি করে থাকো, তবে কীভাবে সত্য অনুশীলন করতে হয় এবং ঈশ্বরকে মান্য করতে হয়, তা তুমি জানবে এবং স্বাভাবিকভাবেই সত্য অন্বেষণের পথে পদার্পণ করবে। তুমি যে পথে চলো সেটা যদি সঠিক হয়, ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়, তাহলে পবিত্র আত্মার কাজ তোমাকে ত্যাগ করবে না—সেক্ষেত্রে ঈশ্বরের প্রতি তোমার বিশ্বাসঘাতকতা করার সম্ভাবনা খুবই কমে যাবে। সত্যের অনুপস্থিতিতে মন্দ কর্ম করা সহজ এবং তোমার ইচ্ছা না থাকলেও তা করে ফেলবে। যেমন ধরো, তোমার স্বভাব যদি উদ্ধত ও দাম্ভিক হয়, তাহলে ঈশ্বরের বিরোধিতা করতে তোমাকে নিষেধ করলেও কোনো লাভই হবে না, তা থেকে তুমি নিজেকে আটকাতে পারবে না, এটা তোমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তুমি স্বেচ্ছায় তা করবে না; বরং তোমার উদ্ধত ও দাম্ভিক প্রকৃতিই তোমাকে দিয়ে তা করাবে। তোমার ঔদ্ধত্য ও দাম্ভিকতার ফলে তুমি ঈশ্বরকে হীন চোখে দেখবে এবং তাঁকে তোমার মূল্যহীন মনে হবে; এই স্বভাবের জন্য তুমি নিজেই নিজেকে উচ্চে স্থাপন করবে, ক্রমাগত নিজের প্রদর্শন করবে; এগুলো তোমাকে দিয়ে অন্যদের অবজ্ঞা করাবে, তোমার হৃদয়ে তোমাকে ছাড়া আর কাউকে থাকতে দেবে না; এগুলো তোমার হৃদয় থেকে ঈশ্বরের স্থান কেড়ে নেবে এবং শেষ পর্যন্ত তোমাকে দিয়েই ঈশ্বরের স্থানে বসিয়ে দাবি করাবে যাতে মানুষ তোমার প্রতি সমর্পণ করে, এবং তোমাকে তোমার নিজস্ব চিন্তা, আদর্শ ও পূর্বধারণাগুলোকেই সত্য মনে করিয়ে সেগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলবে। ঔদ্ধত্য ও দাম্ভিক প্রকৃতির আধিপত্যে মানুষ এতটাই মন্দ কাজ করে! মন্দ কর্ম সংঘটনজনিত সমস্যার সমাধান করতে হলে, তাদের সবার আগে নিজেদের প্রকৃতির পরিবর্তন করতে হবে। স্বভাবের পরিবর্তন না হলে, এই সমস্যাটাকে মৌলিক সমাধান করা সম্ভব নয়” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র সত্যের অন্বেষণের মাধ্যমেই স্বভাবের পরিবর্তন অর্জন করা যায়)। ঈশ্বরের এই বাক্য নিয়ে চিন্তা করে, আমার নিজের কলুষিত স্বভাব আরো স্পষ্টভাবেদেখতে পেলাম। রাং জিকে শিক্ষাদানের সময়কার কথা মনে হল, বেশ কয়েকবার আলোচনা করার পরেও যখন সে শোধরায়নি, তখন নিজেকে নিয়ে ভাবিনি, এমনকি ভেবেছিলাম যে সমস্যাটা ঠিকমত ধরেছি আর এই নিয়ে আলোচনা করে সমাধান করতে পারি। সে তা না মানলে ভেবেছি যে সে সত্য গ্রহণ করেনি। আমার রাং জি’র সাথে শুধুমাত্র কয়েকবার দেখা হয়েছিল আর তাকে ভাল করে চিনতাম না, তাও দায়সারাভাবে তার বিচার করে তাকে সীমাবদ্ধ করেছি, যেন সত্যের উপর আমার প্রবল দক্ষতা আছে আর মাত্র কয়েকবার দেখার করার পরেই কারও চরিত্র বুঝতে পারি। বারংবার আমার স্বভাব সামনে আসার পর, বুঝতে পারছিলাম যে মানুষের সমস্যার মূল আর সারমর্ম কোনোটাই বুঝিনি, তাদের সামগ্রিক আচরণ, প্রকৃতি আর চরিত্রের ভিত্তিতে তাদের সাথে আচরণ করিনি। যদিও সত্য বুঝতে পারিনি, তবুও নিজেকে গভীরভাবে বিশ্বাস করে সেই বিশ্বাস আঁকড়ে থেকেছি। নিজের সম্পর্কে সামান্যতম জ্ঞানও ছিল না। বুঝতে পারছিলাম যে যদি আমার অহংকারী স্বভাব অনুযায়ী নবাগতদের সাথে আচরণ করতে থাকি, তাহলে তাদের প্রতি অন্তত পক্ষপাতিত্ব করব, তাদের বাধা দেব, তাদের ক্ষতি আর জীবনে প্রবেশে বিলম্বের জন্য দায়ী থাকব। সবচেয়ে খারাপ সম্ভাবনা হল তাদেরকে বিচার করে সীমাবদ্ধ করতে পারি এমনকি দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে তাদের পরিত্যাগও করতে পারি। তাহলে তাদের ঘৃণার পাত্র হব। এটা বুঝতে পেরে কিছুটা আতঙ্কিত হয়েছিলাম, তবে স্বস্তিও পেয়েছিলাম। যখন অহংকারের লক্ষণ দেখিয়েছিলাম, তখন আমার সঙ্গী সেকথা বলেছিল, তাই সেই সমস্যা বুঝে সময়মত নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনতে পেরেছিলাম। এটাই ছিল ঈশ্বরের সুরক্ষা! পরে, কাজের জন্য আমাকে সাময়িকভাবে গির্জা ছেড়ে যেতে হয়েছিল। এক মাস পরে, যখন আবার রাং জিকে দেখলাম, তখন সে আমাকে বলেছিল যে সুসমাচার প্রচার করার সময় সে কীভাবে ঈশ্বরের বাক্যের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল আর তার সাক্ষ্য দিয়েছিল। আবেগঘন গলায় সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “কিন্তু সম্প্রতি, সুসমাচার প্রচারের মাধ্যমে, দেখেছি কীভাবে ঈশ্বর সম্পর্কে প্রত্যেকের আলাদা ধারণা রয়েছে। মানুষের পক্ষে ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ গ্রহণ করে তাঁর শরণে আসা সহজ নয়। আগে, সবসময় ভাবতাম যে আমার স্বামী সন্ধান করছে না, তাই তাকে অনেক কিছু করার থেকে আটকাতাম। তার থেকে খুব বেশি আশা করেছিলাম—এটা ঠিক করিনি। ঈশ্বরের বাক্য সত্যিই মহান আর এখনও আমার এ ব্যাপারে আরো অভিজ্ঞতা দরকার।” এই কথা শুনে, তার জন্য খুব খুশি আর আবেগাপ্লুত হয়েছিলাম, তবে বেশ লজ্জিতও হয়েছিলাম। সত্য গ্রহণ করতে মানুষের সময় আর অভিজ্ঞতা লাগে। এরপর থেকে নবাগতরা সিঞ্চনের সময় ভ্রষ্টতার লক্ষণ দেখালে, তাদের সমস্যার মূল কারণ খোঁজার চেষ্টা করতাম, সেগুলো কীভাবে সামলাব সেই নীতি সন্ধান করতাম। সেই সময়ও দেখেছি যে ঈশ্বরের শরণে আসতে আর ভিত গড়ে উঠতে সময় লাগে। তাদের সিঞ্চন আর সমর্থন করার প্রক্রিয়ায়, আত্মচিন্তন করে নিজের ভুল সংশোধন করতাম, তাদের ভালবেসে বোঝাতাম, যাতে তাদের একটা ভিত গড়ে ওঠে আর তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঈশ্বরের শরণে আসে। এইভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করে বেশ শান্তি আর স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।