আমি এত উন্নাসিক কেন?

04-09-2023

আমি গির্জার ভিডিওর কাজ দেখার দায়িত্বে ছিলাম। তখন কিছুদিন অনুশীলনের পরে কয়েকটা নীতি আয়ত্ত করে, আমার দক্ষতা বাড়াচ্ছিলাম। সাধারণত আমাদের কাজে কোনো না কোনো সমস্যা খুঁজে বার করতাম, আর কাজের আলোচনায়, অন্যেরা প্রায়ই আমার পরামর্শ নিত। কিছুদিন পরে, আত্মতুষ্ট হয়ে পড়ি। নিজের উপর বিশ্বাস বাড়তেই থাকে, নিজেকে বেশ যোগ্যতাসম্পন্ন ভাবতে থাকি, কারণ নীতিগুলো নিয়ে আমার মোটামুটি ভালোই ধারণা ছিল আর নানা সমস্যা নিয়েও আমার যথেষ্ট ভালো ধারণা ছিল। যদিও গির্জার নেতা ছিলাম না আর কোনো বড় কাজের দায়িত্বেও ছিলাম না, তবুও মনে করতাম আমাদের দলের প্রকল্পগুলো পরিচালনা করা খারাপ নয়! লক্ষ্য করলাম যে আমার সঙ্গী ব্রাদার জাস্টিন কিছু দিন ধরে তার দায়িত্ব পালনে কিছুটা নিষ্ক্রিয় ছিল। সব সময় কাজের আলোচনার পাশাপাশি দলগত শিক্ষার ক্ষেত্রে আমিই নেতৃত্ব দিতাম, আর দায়ভার না বওয়ার জন্য তাকে তাচ্ছিল্য করতাম। এরপর থেকে আমাদের আলোচনায়, জাস্টিনের পরামর্শ উপেক্ষা করতাম আর তার মতামত প্রায়ই প্রত্যাখ্যান করতাম। ভাবতাম যে আমাদের অংশীদারিত্বে, বেশিরভাগ সময়ই আমার ধারণা নিয়েই চলি, তাই এসব আমি একাই করতে পারি। কিছু সময় পর, জাস্টিনের কিছু কাজও হাতে নিলাম। আমাদের কাজের আলোচনার সময়, অন্যরা আমার পরামর্শ না মানলে, বারবার জোর দিতাম যে আমার দৃষ্টিভঙ্গিই সঠিক, কখনও বা তাদের আমার বক্তব্যের প্রমাণ হিসাবে নিয়ম আর মতবাদ দেখাতাম, যাতে তারা আমায় মানে। তারপরে অবশ্য একটু অস্বস্তি হত, মনে হত, সব সময় অন্যদের আমার কথা শুনতে বাধ্য করছি। এটা কি অহংকার ছিল না? মাঝে মাঝে অন্যের পরামর্শ মানার চেষ্টা করতাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার চিন্তাই সঠিক প্রমাণিত হত বলে আরো আত্মতুষ্ট হয়ে উঠলাম। মাঝে মাঝে বুঝতে পারতাম অহংকারী স্বভাব দেখাচ্ছি, কিন্তু মন থেকে মানতে পারিনি। ভাবতাম একটু অহংকারী হলেও আমিই ঠিক। আমার উদ্দেশ্যই হল আমাদের কাজের সুষ্ঠু পালন, যাতে তা থেকে বড় কোনো সমস্যা না হয়। সেই সময়ে, অন্যরা যা করেছে তা নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করিনি। মনে হয়েছিল তারা যথেষ্ট দক্ষ নয়, বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভাবে না। তাদের দেওয়া পরামর্শ আমার ধারণার সাথে না মিললে, দু’বার না ভেবেই খারিজ করতাম, তাদের নিঃশব্দে হেয় করতাম। একবার, এক সিস্টারের বানানো একটা ভিডিও বেশ কয়েকবার সম্পাদনা করতে হয়, তবুও তেমন ভাল হয়নি। তার কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না জিজ্ঞাসা না করে তাকে বকাঝকা করি, “এদিকে কি মন দিয়েছ? অন্যদের কাজ দেখে শিখতে পারো না?” মাঝে মাঝে ব্রাদার-সিস্টাররা ভিডিও বানানোর কোনো ধারণা জানালে, বোঝার আগেই খারিজ করতাম। ফলে ব্রাদার-সিস্টাররা সবাই আমার সঙ্গে কাজ করতে ভয় পেত আর আমার দেখার জন্য তাদের ভিডিও পাঠানোরও সাহস পেত না। আরেকবার, এক সিস্টার কিছু দলগত অধ্যয়ন আয়োজনের জন্য কিছু শিক্ষাসামগ্রী খুঁজে পেল। সেসব এক নজর দেখে, কারও সাথে আলোচনা না করেই, উপকরণগুলো নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বললাম, রেফারেন্স হিসাবে সেগুলোর কোনো মূল্যই নেই। আসলে, তার যোগাড় করা শিক্ষাসামগ্রী নিখুঁত না হলেও অধ্যয়নের কাজে সাহায্য করত। পরে এক সিস্টার ধরিয়ে দেয় যে অন্যদের সাথে আলোচনা ছাড়াই কাজ করা আমার অহংকারের পরিচায়ক। এতদিন নিজেকে চিনতে পারিনি, ভাবতাম শুধু অন্যের মতামত চাইনি, তবে ভবিষ্যতে খেয়াল রাখলেই চলবে। এমনকি ভাবতাম যেহেতু আমিই আমাদের কাজের বেশিরভাগ সমস্যা সামলাতাম, সমাধান করতাম, ছোটো-বড় সব বিষয়েই শেষ কথা বলতাম, সেহেতু আমার তত্ত্বাবধান ছাড়া, আমাদের দলের কাজ ছন্নছাড়া হয়ে যাবে। অন্য কারও সাথে কাজ করলেও ভাবতাম, আসলে আমিই দলের সুপারভাইজার, নামেও আর কাজেও, হয়তো ঈশ্বর আমাকে দলের কাজ দেখাভাল করার ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই ভাবনা থেকেই আমার নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা মনে হত, যেন আমিই সবার উপরে। আরো অহংকারী হয়ে উঠলাম। একবার, দু’জন সিস্টার আর আমি অন্য একটা দলের সাথে কাজ নিয়ে কথা বলার সময় ঠিক করলেও শেষ মুহূর্তে একটা কাজ এসে যাওয়ায় আমি যেতে পারিনি, তাদেরকে পাঠিয়ে দিই। আমি যেতে পারব না শুনেই তারা ভয় পেল, বলল যে তারা সেই দায়িত্ব নিতে পারবে না, তাই তারা আমার সময় না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।

পরে এক সিস্টার আমায় বলল, “দলের হয়ে এখন ছোটো-বড় সবকিছুতে তোমার মতই চূড়ান্ত। কেউ সমস্যায় পড়লেই সত্যের সন্ধান না করে তোমার উপর নির্ভর করে। ভাবে তোমাকে ছাড়া তাদের চলবে না। তুমি কী মনে করো না যে তোমার আত্মচিন্তন করা উচিত? এটা সত্যিই বিপজ্জনক!” তার কথা শোনার পরে বেশ কিছু সময় ধরে মনটা স্থির রাখতে পারিনি। ব্রাদার-সিস্টাররা ভাবত আমায় ছাড়া তাদের চলবে না, সবকিছুর আমিই ঠিক করবো। এ কী দলকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার সমান নয়? এটা খ্রীষ্টবিরোধী আচরণ। তবে সবকিছুর পিছনেই আমার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল যাতে কাজ ভালো হয়। এমন হলাম কীভাবে? জানতাম না এটা কীভাবে বুঝব। বেশ বিভ্রান্ত আর মর্মাহত লাগছিল, ঈশ্বরকে আমার অবস্থার কথা বলে তাঁর দিকনির্দেশ চাইলাম। কেউ একজন আমাকে খ্রীষ্টবিরোধীদের স্বভাব অনাবৃতকারী এক ছত্র ঈশ্বরের বাক্য পাঠিয়েছিল, যা আমার অবস্থার সাথে মেলে। ঈশ্বর বলেন, “খ্রীষ্টবিরোধীরা যে মানুষদের নিয়ন্ত্রণ করছে, তার একটা অন্যতম সাধারণ লক্ষণ হল—তাদের নিয়ন্ত্রণের এক্তিয়ারের মধ্যে তাদের কথাই হল শেষ কথা। যদি খ্রীষ্টবিরোধী উপস্থিত না থাকে, অন্য কেই তাদের হয়ে নির্ধারণ বা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। খ্রীষ্টবিরোধীর অনুপস্থিতিতে বাকি সকলেই জননীবিহীন সন্তানেরই মতো। কীভাবে প্রার্থনা করতে হবে বা সন্ধান করতে হবে, সেইসব বিষয়ে যেমন তাদের কোনো ধারণা থাকে না, তেমনই, একসাথে কীভাবে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে হয়, তা-ও তাদের অজানা। তারা ঠিক নাচের পুতুল বা মৃত মানুষের মতো। … খ্রীষ্টবিরোধীরা যখন কাজ করে, তাদের পদ্ধতি সর্বদাই হয় অচিরাচরিত এবং আড়ম্বরপূর্ণ। অপরের পরামর্শ যতই সঠিক হোক না কেন, তারা সর্বদাই তা প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি অপরের পরামর্শ খ্রীষ্টবিরোধীদের ধারণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও, যদি খ্রীষ্টবিরোধী সেটা প্রথমে প্রস্তাব না করে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই সে তা গ্রহণ বা প্রয়োগ করতে অস্বীকার করবে। পরিবর্তে, খ্রীষ্টবিরোধী পরামর্শটিকে ততক্ষণ পর্যন্ত ছোট করার, অস্বীকার করার এবং নিন্দা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, যতক্ষণ না প্রস্তাবকারী ব্যক্তির কাছে নিজের ধারণা ভুল বলে মনে হয়, এবং সেটাই সে স্বীকার করে নেয়। শুধুমাত্র তখনই খ্রীষ্টবিরোধীরা থামে। খ্রীষ্টবিরোধীরা নিজেদের সুউচ্চে স্থাপন করতে চায় ও অন্যান্যদের ছোট করতে চায়, যাতে অন্যান্যরা তাকে পূজা করে এবং সকল বিষয়ের মধ্যমণি করে রাখে। খ্রীষ্টবিরোধীরা শুধুমাত্র নিজেদেরই বিকাশ সাধন করে, এবং অন্যদেরকে সদাই শুধুমাত্র এমন পটভূমি হিসাবে কাজ করতে দেয়, যা সেই খ্রীষ্টবিরোধীকে বাকিদের থেকে আলাদা হিসাবে প্রতিপন্ন করে। খ্রীষ্টবিরোধীদের বিশ্বাস তাদের বলা ও করা সমস্ত কিছুই সঠিক, অপরদিকে অন্যান্যরা যা কিছু বলে ও করে, সবই ভুল। তারা প্রায়শই অন্য লোকেদের মতামত এবং অনুশীলনকে অস্বীকার করার জন্য অভিনব দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে, তারা অন্য লোকের মতামতের ছিদ্রান্বেষণ করে, এবং অন্য লোকেদের পরিকল্পনাকে ব্যাহত বা প্রত্যাখ্যান করে, যাতে প্রত্যেকে তাদের কথা শুনতে বাধ্য হয়, এবং তাদের পদ্ধতি অনুসারেই কাজ করে। তারা তোমাকে ক্রমাগত অস্বীকার করার জন্য, আক্রমণ করার জন্য, এবং তুমি যে যথেষ্ট ভালো নও, তা অনুভব করানোর জন্য, এই পদ্ধতি এবং উপায়সকল ব্যবহার করে, যাতে তুমি ক্রমে তাদের প্রতি অনুগত হয়ে পড়ো, তাদের মাথায় তুলে রাখো এবং তাদের প্রশংসা করো, যতক্ষণ না অবশেষে তুমি সম্পূর্ণরূপে তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাও। এ হল এমন এক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে খ্রীষ্টবিরোধীরা মানুষকে বশীভূত ও নিয়ন্ত্রণ করে(বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, পঞ্চম পরিচ্ছেদ: তারা মানুষকে ঠকায়, প্রলুব্ধ করে, ভয় দেখায়, আর নিয়ন্ত্রণ করে)। এটা পড়ার পর ঈশ্বরের বাক্য মানলাম। এতদিন দলের কাজের জন্য আমিই দায়ী ছিলাম, কিন্তু অন্যরা নীতিসঙ্গত ভাবে দায়িত্বপালন করতে পারেনি সবকিছুই আমাকে জিজ্ঞাসা করেই করত। সাহস পেত না আমাকে ছাড়া চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার, বা অন্যান্য দলের সাথে যোগাযোগ করারও। আমার জন্য সবাই কুণ্ঠিত হয়ে পড়েছিল। আমি তাদের ক্ষতি করছিলাম। ভাবলাম, এমন কী করেছি বা বলেছি যার জন্য এই পরিণতি হল। আলোচনা কাজ অথবা ধারণা যা নিয়েই হোক, কারও দৃষ্টিভঙ্গি আমার থেকে আলাদা হলে, তাদের তাচ্ছিল্য করার নানা কারণ খুঁজে বের করতাম, সত্যের নীতি নিয়ে আলোচনাকে গুরুত্বই দিইনি। ঈশ্বরের প্রশংসা বা বা সাক্ষ্যদান করিনি, তবু চাইতাম প্রত্যেকে আমার কথা শুনুক। যখনই ভাবতাম কোনো কিছু ঠিক, তখনই আক্রমণাত্মকভাবে সেটা চাপিয়ে দিতাম। ব্রাদার-সিস্টারদের দক্ষতায় ফাঁক দেখলেই অবজ্ঞা করতাম, প্রকাশ্যে আর আড়ালে তাচ্ছিল্য করতাম। সবাইকে আমার কথা শোনায় বাধ্য করতে চেয়েছিলাম, না করলে, জোর দিতাম যে আমি দক্ষ, নীতি বুঝি। কিছু সময় পর, সব সময় অন্যকে হেয় আর ছোটোখাটো করে নিজেকে বড় দেখাতাম, সব ব্রাদার-সিস্টারেরাই ভাবছিল তারা অকর্মণ্য, আমার মতো পরিপূর্ণ প্রেক্ষিত নেই তাদের, তাই আমাকেই সব ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করত। ভালো করে ভাবার পর, মনে হল অনেক সময় তাদের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাগুলো ঠিকই ছিল, হয়তো নিখুঁত ছিল না, কিন্তু সেগুলোর উন্নতিতে সাহায্য করতে পারতাম। তা না করে, উল্টে জোর দিয়ে নিজেকে সঠিক বলে অন্যদের ধারণা খারিজ করতাম, ভাবতাম এসব আমাদের কাজের জন্যই করেছি। ছিল এতটাই ঔদ্ধত্য আর আত্মসচেতনতার অভাব! ঈশ্বরের বাক্যেও পড়লাম: “মানুষের মধ্যে একবার উদ্ধত প্রকৃতি ও নির্যাস সৃষ্টি হলে, তারা প্রায়ই ঈশ্বরকে অমান্য ও প্রতিরোধ করতে পারে, তাঁর বাক্যে কর্ণপাত না করতে পারে, তাঁর সম্পর্কে ধারণা উৎপন্ন করতে পারে, তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে, এবং এমন সব কাজ করতে পারে, যা তাদের নিজেদেরকে উচ্চে স্থাপন এবং নিজেদেরই প্রতি সাক্ষ্য বহন করে। তুমি বলো যে তুমি উদ্ধত নও, কিন্তু ধরো, তোমাকে একটা গির্জা দেওয়া হয়েছে, এবং সেটির নেতৃত্বদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে; ধরে নাও আমি তোমার মোকাবিলা করলাম না, এবং ঈশ্বরের পরিবারের কেউই তোমার সমালোচনা বা সাহায্য করল না: কিছুকাল নেতৃত্ব দেওয়ার পরে, তুমি লোকজনকে নিজের পদতলে নিয়ে আসবে এবং তাদের তোমার সামনে সমর্পণ করতে বাধ্য করাবে, এমনকি তাদের দিয়ে তোমার প্রশংসা এবং তোমার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করানো অবধিও এগিয়ে যাবে। এবং কেন তুমি এমনটা করবে? এটা তোমার প্রকৃতির দ্বারা নির্ধারিত হয়; এ এক স্বাভাবিক উদ্ঘাটন ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা তোমাকে অন্য কারোর কাছ থেকে শিখতে হয় না, আবার লোকেদের এটা তোমাকে শেখানোরও দরকার পড়ে না। এটা করার জন্য অন্যদেরকে তোমাকে নির্দেশ দেওয়ার বা এই বিষয়ে বাধ্য করার জন্য প্রয়োজন নেই; এই ধরনের পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই আসে। তুমি যা কিছু করো, তার উদ্দেশ্য হল যাতে লোকজন তোমার সুখ্যাতি, প্রশংসা ও উপাসনা করে, তোমার প্রতি সমর্পিত হয়, এবং সমস্ত কিছুতে তোমার কথা শুনে চলে। তোমাকে একজন নেতা হওয়ার অনুমতি দেওয়ার সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবেই এই পরিস্থিতি উদ্ভূত হয় এবং তা পরিবর্তন করা যায় না। এবং এই পরিস্থিতি কীভাবে আসে? এটা মানুষের উদ্ধত প্রকৃতির দ্বারা নির্ধারিত হয়। ঔদ্ধত্যের বহিঃপ্রকাশ হল ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও প্রতিরোধ। যখন মানুষ অহংকারী হয়, নিজেদেরকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়, এবং হয় নিজের নৈতিকতার বিষয়ে উদ্ধত, তখন তারা তাদের নিজস্ব স্বতন্ত্র রাজ্য স্থাপন করতে চায় এবং নিজেদের ইচ্ছেমতো উপায়ে কাজ করতে চায়। এছাড়াও তারা অন্যান্যদেরও নিজেদের কুক্ষিগত এবং আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে। মানুষ যেহেতু এই ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ কাজ করতে সক্ষম, সেহেতু এটা নিছকই প্রমাণ করে তাদের উদ্ধত প্রকৃতির নির্যাস হল শয়তানের; তা হল প্রধান দেবদূতের। যখন তাদের ঔদ্ধত্য এবং আত্মম্ভরিতা একটা নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছায়, তখন তাদের হৃদয়ে ঈশ্বরের জন্য আর স্থান থাকে না, এবং ঈশ্বরকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়। তারা তখন ঈশ্বর হতে চায়, মানুষকে তাদের প্রতি সমর্পণ করতে বাধ্য করে, এবং তারা হয়ে ওঠে প্রধান দেবদূত। যদি তুমি এমন শয়তানোচিত অহংকারী প্রকৃতির অধিকারী হও, তবে তোমার হৃদয়ে ঈশ্বরের কোনো স্থান থাকবে না। এমনকি যদি তুমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করো, তাহলেও ঈশ্বর তোমাকে আর স্বীকার করবেন না না, তিনি তোমাকে একজন মন্দ কর্ম সংঘটনকারী হিসাবেই গণ্য করবেন, এবং বহিষ্কৃত করবেন(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, উদ্ধত স্বভাবই মানুষের ঈশ্বরপ্রতিরোধের মূল)

ঈশ্বরের বাক্যে শিখলাম উদ্ধত প্রকৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে ব্রাদার-সিস্টারদের সাথে সমন্বয় করতে পারিনি। আমার প্রকৃতি অহংকারী, আত্মম্ভরি হওয়ায় বিশেষ কিছু করার দরকার পড়েনি, পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই এমন তৈরি হয়েছিল যে সবাই আমার কথা শুনত। ভেবে দেখলাম, সেই দায়িত্ব পালনের সময় অন্য ব্রাদার-সিস্টারদের সাথে কাজ করতে গিয়ে, ভিডিওর জন্য পরামর্শ দেওয়া হোক বা কাজ সংগঠিত করা, সব সময় ভাবতাম আমার কাছেই সেরা ধারণা থাকে। যখন লক্ষ্য করলাম যে জাস্টিন কিছু দিন ধরে তার দায়িত্ব পালনে কিছুটা নিষ্ক্রিয় ছিল, তখন তাকে আলোচনার মাধ্যমে সাহায্য না করে, তার দুর্বল ক্ষমতা আর গুরুভার বওয়ার অক্ষমতার জন্য মনে মনে হেয় করতাম, এই ভেবে পুরো দায়িত্ব নিয়ে সবকিছু নিজেই করতাম, যেন আমি ছাড়া আর কেউ কিছুই করতে পারে না। অন্যদের দক্ষতার অভাব দেখলেই, ক্ষমতা আর বোধগম্যতার অভাব দেখামাত্র, তাদের তিরস্কার করতাম, যেন আমিই সবচেয়ে নির্ভুল, আমিই নীতি নিয়ে সব থেকে ভালো জানি। সব সময় অন্যদের ছোটো করে নিজেকে বড় দেখাতাম, আমার চিন্তাভাবনা আর মতামত তাদের এমনভাবে বলতাম যেন সেগুলোই সত্য। কিছু সময় পর, অন্যদের মনে হয়েছিল তারা নিজেরা কিছুই করতে পারে না, আমাকেই সব করতে হবে, সবেতেই তারা আমায় জিজ্ঞাসা করত, আমার উপর নির্ভর করত। আমি না থাকলে তারা কাজে এগোনোর সাহসই পেত না। ঈশ্বরের বাক্যে পড়লাম, “যখন তাদের ঔদ্ধত্য এবং আত্মম্ভরিতা একটা নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছায়, তখন তাদের হৃদয়ে ঈশ্বরের জন্য আর স্থান থাকে না, এবং ঈশ্বরকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়। তারা তখন ঈশ্বর হতে চায়, মানুষকে তাদের প্রতি সমর্পণ করতে বাধ্য করে, এবং তারা হয়ে ওঠে প্রধান দেবদূত।” ঈশ্বরের বাক্যে অনাবৃত হয়ে আমার লজ্জা আর অপরাধবোধ হল। বুঝলাম আমার সমস্যা খুব গুরুতর। নিজেকে উচ্চাসনে স্থিত করেছিলাম, সব সময় ভাবতাম আমার প্রতিভা আর ক্ষমতা আছে, আমি কোনো সাধারণ লোক নই, স্বাভাবিকভাবেই কর্তৃত্বে থাকার, জাহাজের ক্যাপ্টেন হওয়ার যোগ্যতা আছে, অন্যদের ক্ষমতা নেই, তাই ঈশ্বর নির্দেশ দিয়েছেন যে আমিই তাদের নেতৃত্ব দেব। আমার এইসব চিন্তা আর ধারণা সম্পর্কে ভেবে ভয় হল, ঘৃণাও হল। আমি সত্যিই নির্লজ্জ ছিলাম! নিজেদের দায়িত্ব পালনের জন্য সবাই মিলে একসাথে ঈশ্বরের নেতৃত্ব ও সত্যের নীতি মেনে কাজ করার কথা, কিন্তু আসলে সবাইকে আমার নেতৃত্ব মেনে নিতে বাধ্য করছিলাম। ভুল করছিলাম। এত অহংকারী ছিলাম যে যৌক্তিকতার পরোয়া করিনি। ঈশ্বর “রাজ্যের যুগে ঈশ্বরের নির্বাচিত ব্যক্তিদের অবশ্য পালনীয় দশটি পরিচালনামূলক আজ্ঞা” তে বলেছেন: “মানুষের নিজেকে বড় ভাবা অথবা নিজেকে মহিমান্বিত করা উচিত নয়। তার উচিত ঈশ্বরের উপাসনা করা এবং তাঁকে মহিমান্বিত করে তোলা(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য)। নিজেকে সবসময় দলের বাকিদের চেয়ে উচ্চমানের ভাবতাম, নিজেকে অন্য ব্রাদার-সিস্টারদের উপরে রাখতাম। ভুল অবস্থানে ছিলাম—নিজেকে উচ্চাসনে রাখছিলাম। এটা ভেবেই বেশ উদ্বেগ আর ভয় হল। সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থনা বললাম: “ঈশ্বর, আমি খুব অহংকারী আর আত্মতুষ্ট। জানতাম না আপনাকে অসন্তুষ্ট করছি। চাই অনুতাপ করতে, করণীয় কাজ করতে, দায়িত্বের সুষ্ঠু পালন করতে।” সুপারভাইজার পরে আমার সাথে আলোচনা করল। সে বলল যে কয়েকজন ব্রাদার-সিস্টার জানিয়েছে যে তারা আমার সাথে কাজ করতে গিয়ে বেশ কুণ্ঠিত বোধ করে। তারা বলেছে যে আমি অন্যদের হেয় করি, সব সময় অন্যের ধারণা খারিজ করি, তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বলেছে, “আগেও অহংকারী মানুষ দেখেছি, কিন্তু এত অহংকারী কখনো দেখিনি।” কথাগুলো হৃদয়ে বিঁধল। কখনও কল্পনাও করিনি যে ব্রাদার-সিস্টাররা আমাকে এমন চোখে দেখবে, যে তাদের কুণ্ঠিত করি আর এত আঘাত করি। কিছুদিন মনে হচ্ছিল যেন হৃদয়ে ছুরি বিঁধে রয়েছে। বিশেষত নিয়ে আলোচনাকালে, অন্য কেউ কথা বলার সাহস পেত না, পরিবেশটা খুব শীতল থাকত, তাই আরো মর্মাহত হলাম। জানতাম যে এর সম্পূর্ণ কারণ হল আমি তাদের কুণ্ঠিত করে ফেলেছি। দুঃখ-কষ্ট নিয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, যাতে তিনি আমায় যথার্থ আত্মচিন্তন ও প্রবেশের পথ দেখান।

নিষ্ঠাপালনকালে এক ছত্র ঈশ্বরের বাক্য পড়ে নিজেকে আরো ভালোভাবে বুঝতে পারলাম। ঈশ্বরের বাক্যে বলা হয়েছে, “কিছু কিছু নেতা কখনই নীতি অনুযায়ী কাজ করে না, অথচ তাদের নিজেরাই হতে চায় দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, এবং তারা হয় স্বেচ্ছাচারী ও হঠকারী। ভ্রাতা ও ভগিনীরা এই বিষয়টির প্রতি নির্দেশ করে বলে, ‘পদক্ষেপ নেওয়ার আগে তুমি অন্যদের সাথে কোনোরকম পরামর্শ প্রায় করই না। তুমি বিচার করে ফেলার ও সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়ার আগে পর্যন্ত সেগুলি সম্পর্কে আমরা কিছু জানতে পারি না। কেন তুমি অন্যদের সাথে পরামর্শ করো না? কেন তুমি কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় আগে থেকে আমাদের জানাও না? তুমি যা করছ তা সঠিক হলেও, এবং তোমার ক্ষমতা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি হলেও, তোমার উচিত প্রথমে আমাদেরকে জানানো। অন্ততঃপক্ষে, কী ঘটছে তা জানার অধিকার আমাদের আছে। সর্বদা দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হিসাবে কাজ করে—তুমি একজন খ্রীষ্টবিরোধীর পথে হাঁটছো!’ আর এই কথার উত্তরে সেই নেতাকে তুমি কী বলতে শুনবে? ‘বাড়িতে আমিই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। যেকোনো ঘটনা, তা সে বড়ই হোক বা ছোট, সিদ্ধান্ত আমাকেই নিতে হয়। আমি এতে অভ্যস্ত। যখন আমার বড় পরিবারের কারো কোনো সমস্যা হয়, তারা আমার কাছে আসে এবং কী করতে হবে তা আমাকে নিরূপণ করতে বলে। তারা সকলেই জানে যে আমার কাছে সমস্যার নানাবিধ সমাধান রয়েছে। ঠিক এই কারণেই, আমিই সবসময় আমার বাড়ির বিষয়গুলিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি এবং সেগুলিতে নেতৃত্ব দিই। আমি যখন গির্জায় এসেছিলাম, আমি ভেবেছিলাম যে, আমাকে আর চিন্তা করতে হবে না, অথচ দেখা গেল, আমাকেই নেতা হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছে। আমার কিছু করার নেই—এমনটাই আমার অদৃষ্ট। ঈশ্বর আমাকে এই দক্ষতা প্রদান করেছেন। আমাকেই সবসময় সমস্যার সমাধান করতে এবং মানুষের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ এর নিহিতার্থ হল যে তারা যেন কর্মকর্তা হওয়ার অদৃষ্ট নিয়েই জন্মেছে, এবং তারা বাদে বাকি সবাই এক একজন নগণ্য সহকারী, সাধারণ মানুষ—তাদের জন্ম যেন দাস হওয়ার জন্যই। এমনকি যখন ব্রাদার-সিস্টারেরা সেই নেতার সমস্যা দেখতে পেয়ে তা তার কাছে তুলে ধরে, তখনও, সে তা স্বীকার করে না, তারা সেগুলির বিষয়ে হস্তক্ষেপ বা সেই অপ্রয়োজনীয় অংশগুলির কর্তনও মেনে নেয় না, বরং ভ্রাতা ও ভগিনীরা তাদের অপসারণের জন্য তুমুল বিক্ষোভ না জানানো পর্যন্ত, তারা সর্বক্ষণ ভাবতে থাকে, ‘আমার মত এমন ক্ষমতা নিয়ে, আমি যেখানেই যাই না কেন, দায়িত্বে থাকাই আমার নিয়তি নির্ধারিত। তোমার মত তেমন ক্ষমতার মানুষগুলি, তোমরা যেখানেই যাও না কেন, তোমাদের দাস ও সেবা প্রদানকারিনী হয়েই থাকতে হবে। হুকুম তামিল করে চলাই তোমাদের অদৃষ্ট।’ সর্বক্ষণ এহেন কথা বলে তারা কোন ধরনের স্বভাব প্রকাশ করছে? স্পষ্টতই, তা হল কলুষিত স্বভাব, তবুও তারা নির্লজ্জভাবে এই স্বভাবকে নিজেদের শক্তি এবং যোগ্যতা হিসাবে অন্যদের সাথে ভাগ করে নেয়, তা নিয়ে বড়াই করে। কেউ যখন কলুষিত স্বভাব প্রকাশ করে, তখন তার আত্ম-প্রতিফলন করা উচিত। তাদের তা জানতে হবে, সেই বিষয়ে অনুতপ্ত হতে হবে, এবং তা পরিত্যাগ করতে হবে; নীতি অনুযায়ী কাজ না করা পর্যন্ত তাদের সত্যের অনুসরণ করা উচিত। তবে, এই নেতা সেইভাবে অনুশীলন করে না, বরং সে রয়ে যায় সংশোধনের অতীত, নিজের দৃষ্টিভঙ্গিতে অবিচল। এই আচরণগুলি থেকে দেখা যায় যে সে সত্যকে বিন্দুমাত্র স্বীকার করে না এবং সে বিন্দুমাত্রও সত্যের অন্বেষণকারী নয়। যারা তাকে অনাবৃত করে এবং তার সাথে মোকাবিলা করে তাদের কথা সে শোনে না, বরং আত্মপক্ষ সমর্থনে বলে: ‘হুঁহঃ—আমি এমনই! একে বলে কর্মক্ষমতা; একে বলে যোগ্যতা—তোমাদের কারো কি এগুলি রয়েছে? দায়িত্বে থাকার অদৃষ্ট নিয়েই আমার জন্ম, এবং আমি যেখানেই যাই না কেন, আমি একজন নেতা। আমি যা বলি তা করতে, কিছু সামলাবার জন্য কী করতে হবে তা নিজেই বের করতে, অভ্যস্ত। আমি অন্যদের সাথে পরামর্শ করি না। এ-ই হল আমার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, আমার ব্যক্তিগত অনন্যসাধারণ প্রতিভা।’ এটা কি অবাধ নির্লজ্জতা নয়? তাদের যে একটি কলুষিত স্বভাব রয়েছে, তা অস্বীকার করা থেকে, এমনটা স্পষ্ট যে, তারা ঈশ্বরের বাক্যসমূহ—যা মানুষের বিচার এবং অনাবৃত করে—তা স্বীকার করে না। বরং, তারা তাদের ধর্মবিরোধিতা এবং ভ্রান্তিগুলিকেই সত্য হিসাবে গ্রহণ করে, এবং বাকি সকলকে দিয়েও সেগুলি গ্রহণ এবং প্রশংসা করায়। তারা নিজেদের অন্তরে এই ধারণা পোষণ করে, যে, ঈশ্বরের গৃহে, রাজত্ব হওয়া উচিত সত্যের নয়—তাদের। তারা যা বলে তা-ই হতে হবে। এমনটা কি উদ্ধত নির্লজ্জতা নয়?(বাক্য, খণ্ড ৬, সত্যের অন্বেষণের বিষয়ে, সত্যের অন্বেষণ কী? (১))। ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা অনাবৃত হয়ে বিব্রত বোধ করলাম। আমি তো এমনই করছিলাম। ভাবতাম বুঝি নিজের কিছু দক্ষতা, বুদ্ধি আর ক্ষমতা আছে বলেই, আমার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হওয়া উচিত। আমার চোখে অন্য ব্রাদার-সিস্টাররা কিছুই ভালোভাবে করতে পারত না, এদিকে কেউ আমার সমস্যা ধরিয়ে দিলেও সেটাকে গুরুত্ব দিতাম না। ভাবতাম আমার যোগ্যতা ছিল আর পরামর্শও সঠিক হত বলে অহংকারী হতে দোষ নেই। নিজেকে মোটেও চিনতাম না। অনেক সময় সমস্যাটা সঠিকভাবে জানা আর বৃহত্তর ছবি বোঝার চেষ্টা করতাম না, যেমন, যখন সিস্টারের শিক্ষাসামগ্রী অকেজো বলে খারিজ করেছিলাম, তখন অন্যরা সেগুলো রেফারেন্স হিসাবে কাজের মনে করেছিল, আর কিছু ভালো পরামর্শ পেয়েছিল। যদিও কিছু বিষয়ে আমার ধারণাই সঠিক ছিল, তবুও ঔদ্ধত্যের সাথে অন্যদের তা দেখিয়ে মানতে বাধ্য করানো উচিত হয় নি। আমার উচিত ছিল নীতির পাশাপাশি নিজের ব্যক্তিগত উপলব্ধি ও দৃষ্টিভঙ্গির উপর আলোচনা করা উচিত ছিল, আর যদি সবাই মনে করত যে আমার কথাই ঠিক, তাহলে তারা স্বাভাবিকভাবেই তা মানত। কিন্তু তা না করে, অহংকারী আর আত্মতুষ্ট হয়ে ছিলাম, অন্যদের ক্ষমতাগুলো দেখিনি, নিজেকে নিয়ে চিন্তাভাবনাও করিনি। কোন বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আর কাজের কোন সমস্যা আবিষ্কার ও সমাধান করেছি, তা নিয়ে প্রায়ই ছক কষতাম। যত বেশি এই “কৃতিত্ব” নিয়ে ভাবতাম, ততই মনে হত যে অন্যদের থেকে আমিই ভালো। ঔদ্ধত্য তীব্র হয়ে উঠল, আরো বেশি করে অন্যদের নিচু নজরে দেখতাম। এমনকি ভাবতাম জন্মেছিই সুপারভাইজার হওয়ার জন্য, অর্থাৎ আমি উন্নাসিক ছিলাম, চাইতাম সবকিছুতেই শেষ কথা বলতে। খুব অহংকারী আর অযৌক্তিক ছিলাম, নিজের শয়তানোচিত স্বভাব একটুও পরিবর্তন করিনি; অন্যদের সাথে মিশতেও পারিনি। অহংকার করার মতো আমার কী ছিল? এত আত্মতুষ্টি কত ঘৃণ্য! সব দিকে ভেবে বুঝলাম, কত আক্রমণাত্মক আর কর্তৃত্বপ্রয়াসী ছিলাম, মন অনুশোচনায় ভরে গেল।

পরে আরেকটা অনুচ্ছেদ পড়লাম: “তোমরা কি বলবে যে, কারো কর্তব্য যথাযথভাবে পূরণ করা কঠিন? প্রকৃতপক্ষে, তা নয়; লোকেদের অবশ্যই শুধু বিনয়ীভাব পরিগ্রহণে সক্ষম হতে হবে, কিছুটা চেতনার অধিকারী হতে হবে, এবং একটা উপযুক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। তুমি কতটা শিক্ষিত, কটা পুরস্কার লাভ করেছ, বা কতখানি কৃতিত্ব অর্জন করেছ, এবং তোমার মর্যাদা ও পদ কত সুউচ্চ তা নির্বিশেষে, তোমাকে অবশ্যই এই সমস্ত বিষয় পরিত্যাগ করতে হবে, তোমাকে তোমার উন্নাসিক অবস্থান থেকে অবতরণ করতে হবে—এই সকলই নিরর্থক। ঈশ্বরের গৃহে এসকল গরিমা যতই মহান হোক না কেন, সেগুলি সত্যের থেকে উচ্চতর হতে পারে না, কারণ এই বাহ্যিক বিষয়সকল সত্য নয়, এবং এগুলি সত্যের স্থান নিতে পারে না। এই বিষয়ে তোমাকে অবশ্যই স্পষ্ট হতে হবে। যদি তুমি বলো, ‘আমি খুব প্রতিভাধর, আমার বুদ্ধি খুব তীক্ষ্ণ, আমি প্রতিক্রিয়ায় ক্ষিপ্র, আমি দ্রুত শিখে নিতে পারি, এবং আমার স্মৃতিশক্তি অতীব প্রখর, তাই আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার যোগ্য,’ যদি তুমি সর্বদা এই বিষয়গুলিকে মূলধন হিসাবে ব্যবহার করো এবং সেগুলিকেই মূল্যবান ও ইতিবাচক হিসাবে দেখো, তাহলে তা সমস্যাদায়ক। যদি তোমার অন্তর এই সমস্ত বিষয়বস্তুতেই পরিপূর্ণ হয়ে থাকে, যদি এগুলো তোমার অন্তঃকরণে মূলীভূত হয়, তাহলে তোমার পক্ষে সত্য গ্রহণ করা কঠিন—আর তার পরিণতি কল্পনাতীত। এইভাবে, তোমাকে অবশ্যই সেই বিষয়সকল অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করতে হবে, যেগুলি তুমি ভালোবাসো, যেগুলিকে তোমার ভালো বলে, মূল্যবান বলে, মনে হয়। সেই বিষয়সকল সত্য নয়; বরং সেগুলি তোমার সত্যে প্রবেশে বাধা দিতে পারে। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তোমাকে কর্তব্য সম্পাদনের সময় অবশ্যই সত্য অন্বেষণ করতে হবে, এবং সত্য অনুসারে অনুশীলন করতে হবে, এমনভাবে করতে হবে, যাতে তোমার কর্তব্য সম্পাদন পর্যাপ্ত হয়ে উঠতে পারে, কারণ কর্তব্যের পর্যাপ্ত সম্পাদন হল জীবনে প্রবেশের পথের প্রথম পদক্ষেপমাত্র। এখানে ‘প্রথম পদক্ষেপ’ বলতে কী বোঝানো হয়? তা বোঝায় এক যাত্রার সূচনা। সমস্ত বিষয়ের মধ্যেই এমনকিছু থাকে, যা দিয়ে যাত্রা শুরু করতে হয়; এমনকিছু যা সাধারণতম, মৌলিকতম বিষয়, এবং কর্তব্যের যথাযথ সম্পাদন অর্জন করাই হল জীবনে প্রবেশের একটা পথ। যদি তোমার কর্তব্য নিছকই তা সম্পাদনের উপায়সিদ্ধ বলে কৃত হয়, কিন্তু তা সত্যের নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হয়, তাহলে তুমি তোমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছ না। তাহলে, এই বিষয়ে কীভাবে কাজ করতে হবে? কাউকে অবশ্যই সত্যের নীতির ভিত্তিতে কাজ করতে হবে এবং তা অনুসন্ধান করতে হবে; সত্যের নীতির দ্বারা প্রস্তুত থাকাই হল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। যদি তুমি শুধুমাত্র নিজের আচরণ ও মেজাজ উন্নত করো, কিন্তু সত্যের নীতির দ্বারা প্রস্তুত না থাকো, তবে তা কোনো কাজের কথা নয়। তোমার কোনো বিশেষ গুণ বা প্রতিভা থাকতেই পারে। তা এক উত্তম বিষয়—কিন্তু একমাত্র তোমার কর্তব্য সম্পাদনে তা প্রয়োগ করলে, তবেই তা যথাযথ হবে। তোমার দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করার জন্য তোমার মানবতা বা ব্যক্তিত্বে কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় না; আবার তোমার প্রতিভা বা গুণকে পাশে সরিয়ে রাখারও দরকার হয় না। যা প্রয়োজন, এটা তা নয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সত্য উপলব্ধি করা এবং ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করতে শেখা। তোমার কর্তব্য সম্পাদনের সময় ভ্রষ্ট স্বভাব প্রকাশিত হয়ে পড়বে, এটা প্রায় অনিবার্য। এহেন সময়কালে তোমার কী করা উচিত? তোমাকে অবশ্যই সমস্যা সমাধানের জন্য সত্য অনুসন্ধান করতে হবে এবং সত্যের নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ভাবে কাজ করতে হবে। এমনটা করলে, নিজের কর্তব্য ভালোভাবে পালন করায় আর কোনো সমস্যা উপস্থিত হবে না। তোমার বিশেষত্ব বা প্রতিভা যে বিষয়েই থাকুক, বা যে বিষয়েই তোমার কর্মসম্পাদন-বিষয়ক জ্ঞান থাকুক না কেন, সেটাকে তুমি তোমার পালনীয় কর্তব্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারো। কোনো কর্তব্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে প্রতিভা, বিশেষত্ব বা কর্মসম্পাদন-বিষয়ক জ্ঞানই সবচেয়ে উপযুক্ত, কিন্তু তোমাকে এর পাশাপাশি অবশ্যই সত্যের দ্বারা প্রস্তুত থাকতে হবে, এবং নীতিনিষ্ঠ ভাবে কাজ করতে হবে। শুধুমাত্র তবেই তুমি তোমার কর্তব্য ভালোভাবে সম্পাদন করতে পারবে। আগে যে দ্বিমুখী পদ্ধতির কথা বলা হয়েছিল, এটাই হল সেটা: একটি দিক হল বিবেক ও যুক্তিবোধের অধিকারী হওয়া, এবং অপর দিকটি হল যে, তুমি তোমার ভ্রষ্ট স্বভাবের সমাধান করার জন্য অবশ্যই সত্যের অন্বেষণ করবে। এইভাবে নিজের কর্তব্য সম্পাদন করেই কেউ জীবনে প্রবেশ করে, এবং নিজের কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করতে সক্ষম হয়(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, পর্যাপ্তভাবে দায়িত্ব পালন করা বলতে কী বোঝায়?)। ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে ভেবে বুঝলাম কেউ তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে কিনা তা ঈশ্বর দেখেন তারা উপরে উপরে কতটা কাজ করেছে আর তা সঠিকভাবে করা হয়েছে কিনা, তার ভিত্তিতে নয়, বরং সে তার দায়িত্ব পালনের জন্য কোন পথে চলেছে, সে সত্য অনুসন্ধান আর অনুশীলন করেছে কিনা তার ভিত্তিতে। সেই সঙ্গে বুঝলাম যে উদ্ধত স্বভাব থেকে বেরিয়ে দায়িত্বের সুষ্ঠু পালন করতে, প্রথমে নিজের প্রতিভা আর শক্তির দর্প ছাড়তে হবে, সত্যের সন্ধানে ঈশ্বরের সামনে আসতে হবে। সত্য সন্ধান না করে বা নীতি না মেনে শুধু নিজের যোগ্যতা আর প্রতিভার উপর নির্ভর করে কাজ করতে থাকলে, যতই করি না কেন, ঈশ্বর তা অনুমোদন করবেন না। আগে, দক্ষতা আর ক্ষমতার অভাব থাকলে অন্যদের হেয় করতাম। তাদের সামান্য ভুল হলে বা কোনো কিছুতে ঘাটতি থাকলে, প্রকাশ্যে আর ভিতরে ভিতরে তাদের তিরস্কার আর অবজ্ঞা করতাম। কিন্তু যখন আমার তৈরি ভিডিওগুলো একাধিকবার সংশোধনের জন্য ফিরে এল আর অন্যরা আমাকে পরামর্শ দিল, তখন কিন্তু কেউ আমাকে হেয় করেনি, বরং ধৈর্য ধরে বলেছিল কোথায় উন্নতি করতে হবে। তাছাড়া, সহকর্মীদের পরামর্শ মানতাম না, যদিও কিছু ব্রাদার-সিস্টারের বিরাট কোনো প্রতিভা বা ক্ষমতা ছিল না, তবে তারা নীতি মেনেই দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করত, বিনয়ের সাথে অন্যদের পরামর্শ শুনত, একসাথে মিলেমিশে কাজ করত। তাদের সাথে নিজেকে তুলনা করা আমার কাছে বিব্রতকর ছিল। বুঝলাম আমার সত্যে প্রবেশে কত অনীহা। এরপর থেকে, দায়িত্বে অন্যদের সাথে মতানৈক্য দেখা দিলে, নিজেকে প্রাধান্য না দিয়ে সত্য ও নীতি খোঁজার অভ্যাস করি, এটাকে সত্য পালনের সুযোগ হিসেবে দেখে।

একবার দুই সিস্টারের সাথে একটা ভিডিও তৈরি নিয়ে আলোচনা করছিলাম, মত মিলছিল না। মনে হল আমার ধারণাই সেরা আর ভাবলাম কী বলে নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে পারি, কীভাবে তাদের তা বোঝাতে পারি। হঠাৎ বুঝতে পারলাম, আবার উদ্ধত হচ্ছি, অন্যের ধারণা খারিজ করতে নিজের মতামত ব্যবহার করতে চাইছি। তাড়াতাড়ি প্রার্থনা করলাম, ঈশ্বরের কাছে অনুরোধ করলাম যেন নিজেকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্যদের পরামর্শ শুনতে পারি। ঈশ্বরের একটা বাক্য মনে পড়ল: “গির্জার যে সমস্ত লোকেরা সত্য উপলব্ধি করতে পারে বা তা অনুধাবনের ক্ষমতা যাদের রয়েছে, পবিত্র আত্মার আলোকপ্রদান ও নির্দেশনা তাদের যে কারোর ওপরেই বর্ষিত হতে পারে। মানুষের উচিত পবিত্র আত্মার আলোকপ্রদান ও প্রদীপ্তি আঁকড়ে ধরা, একেবারে কাছাকাছি থেকে সেটাকে অনুসরণ করা, এবং এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করা। এটা করার ফলে, তোমার চলার পথ সঠিক হবে; এটাই সেই পথ যেখানে পবিত্র আত্মা পথনির্দেশ দেন। পবিত্র আত্মা যাদের ওপর কাজ করেন, তাদের ওপর কীভাবে কাজ করেন ও পথনির্দেশ প্রদান করেন, সেই বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দাও। তোমার উচিত প্রায়ই অন্যদের সাথে আলাপ-আলোচনা করা, পরামর্শ দেওয়া এবং নিজের মতামত ব্যক্ত করা—এটা তোমার কর্তব্য ও মুক্তি। কিন্তু পরিশেষে, যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তখন যদি তুমি একাই সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নাও, যদি অন্যান্যদের তোমার কথা অনুযায়ীই কাজ করতে হয় এবং তোমার ইচ্ছা অনুযায়ীই চলতে হয়, তাহলে তুমি নীতি লঙ্ঘন করছ। সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছা অনুযায়ীই তোমার সঠিক নির্বাচন করা উচিত, এবং তারপরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। যদি সংখ্যাগরিষ্ঠের পরামর্শ সত্যের নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তাহলে তোমার সত্যেই অটল থাকা উচিত। এটাই সত্যের নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। ঈশ্বরের বাক্যে দেখলাম আইডিয়া দেওয়া আর ভিডিও তৈরি করাই আমার কর্তব্য ছিল, কিন্তু কোন পরিকল্পনা সর্বোত্তম তা নির্ধারণ করা একজনের উপর নির্ভর করে না, ব্রাদার-সিস্টাররা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সেই সিদ্ধান্ত নেবে, তারপর সেরা পরামর্শটা মানবে। এভাবে চলার পর মনে শান্তি পেলাম। সেই ভিডিওটা তৈরি হওয়ার পরে, ব্রাদার-সিস্টাররা আমার মতই মানল, কিন্তু তাই বলে ঐ দুই সিস্টারকে হেয় করিনি। অনুভূতি হল, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, শেষ পর্যন্ত নিজের উদ্ধত স্বভাব ছেড়ে সত্যের পালন করছি। তখন আমার এই অভিজ্ঞতাও হয় যে যে ঈশ্বর কে ঠিক বা ভুল তা দেখার জন্য পরিস্থিতি নির্ধারণ করেন না, তাঁর উদ্দেশ্যে মানুষের স্বভাব দেখা। সঠিক হয়েও যদি কেউ ঔদ্ধত্য দেখায়, ঈশ্বর তাকে বিতৃষ্ণা ও ঘৃণা করেন। এরপর, অন্যদের আইডিয়া গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার চেষ্টা করে বুঝলাম যে ব্রাদার-সিস্টারদের পরামর্শের অনেকগুলোর এমন দিক রয়েছে যা কাজে লাগতে পারে, আর তাদের দৃষ্টিকোণ আমার থেকে আলাদা। আগে সব সময় ভাবতাম অন্যরা বৃহত্তর স্বার্থ দেখছে না, তার কারণ শুধু নিজের দৃষ্টিকোণ থেকেই সবকিছু দেখতাম আর অন্যের ধারণায় কান দিতাম না। তখন বুঝলাম যে প্রত্যেকেরই নিজস্ব শক্তি রয়েছে আর এমন কিছু জানে যা আমি তাদের কাছ থেকে শিখতে পারি। উদ্ধতভাবে আত্মবিশ্বাসী হতে আর চাই নি, চেয়েছি অন্যদের সাথে ভালো কাজ করতে, সত্যের সন্ধান করতে, অন্যের পরামর্শ আরো শুনে কর্তব্যে সহযোগিতা করতে।

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

আমি আমার বিশ্বাসে দৃঢ় ছিলাম না

আমার পরিবার সবসময়ই ছিল খুব গরিব, এবং আমি সমাজে নির্দিষ্ট মর্যাদা পাওয়ার জন্য একজন ব্যাঙ্ক এক্সিকিউটিভ হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম, যাতে টাকার...

Leave a Reply

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন