আমি আমার বিশ্বাসে দৃঢ় ছিলাম না

18-02-2023

আমার পরিবার সবসময়ই ছিল খুব গরিব, এবং আমি সমাজে নির্দিষ্ট মর্যাদা পাওয়ার জন্য একজন ব্যাঙ্ক এক্সিকিউটিভ হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম, যাতে টাকার অভাবেআমাদের আর কোনও সমস্যায় পড়তে না হয়। আমি আমার পড়াশুনা শেষ করে যখন চাকরি খুঁজতে লাগলাম, আমি অনেক জায়গায় দরখাস্তআমার রিজিউম পাঠালাম, কিন্তু সেটি সত্যিই আমার জন্য একটি কঠিন সময় ছিল এবং আমি যে ধরনের চাকরি খুঁজছিলাম তা কখনও পাইনি। আমি একটি মোটামুটি ধরনের, কম বেতনের চাকরি পেয়েছিলাম।

২০১৯ সালে আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজগুলিকে গ্রহণ করেছিলাম এবং কিছু সময় পরে গির্জায় নবাগতদের সিঞ্চনের কাজ শুরু করি। আমি ভেবেছিলাম আমি যদি ঈশ্বরের জন্য আমার সেরাটা দিই, তাহলে তিনি অবশ্যই আমাকে আশীর্বাদ করবেন এবং আমাকে একটি ভাল কাজ খুঁজে পেতে সাহায্য করবেন। তাই, দায়িত্ব পালনের সময়ও আমি আমার রিজিউম পাঠাতে থাকি। তারপর, ২০২১ সালের জুন মাসে আমি একটি কোম্পানির প্রতিনিধির কাছ থেকে, ইন্টারভিউয়ের জন্য কল পাই। আমি অনলাইনে সংস্থাটি সম্পর্কে খুঁজছিলাম এবং আমি দেখতে পাই যে এটি ছিল একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, এবং এই কোম্পানির সিইও সারা বিশ্বে বিনিয়োগ করছিলেন। তিনি একটি বিশাল ব্যাংকের মালিক ছিলেন আমার যে ব্যাংকে কাজ করার খুব ইচ্ছে ছিল, কিন্তু আমি কোনওভাবেই সেখানে ইন্টারভিউ দেওয়ার সুযোগ পাইনি। আমি কখনই ভাবিনি, সেই কোম্পানিটিই আমাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকবে। এটি একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে ঈশ্বর আমাকে একটি সুযোগ দিচ্ছেন, এবং আমি যদি সেই মাল্টিন্যাশনালে কাজ করতে পারি, তাহলে এটা হবে আমার জন্য ঈশ্বরেরআশীর্বাদ। আমি নিজেকে বলেছিলাম যে আমি এবার অবশ্যই সফল হব এবং একজন ম্যানেজারের চাকরি পাব কারণ ঈশ্বর আমাকে সাহায্য করবেন। আমি রোমাঞ্চিত ছিলাম, যে চাকরির স্বপ্ন আমি দেখেছিলাম অবশেষে সেখানে আমি সুযোগ পাচ্ছি এবং এর ফলে আমি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করতে পারব যার জন্য আমি এতটা কঠোর পরিশ্রম করেছি। ভবিষ্যতে আমার জীবন কিভাবে বদলে যাবে তা আমি কল্পনা করতে লাগলাম, যে আমার অনেক টাকা থাকবে, আমার নিজের বাড়ি থাকবে এবং আমি যা চাই, তাই কিনতে পারব। আমি ভাবতে লাগলাম যে, আমি বিশ্ব ভ্রমণ করতে পারব এবং আমার পরিবারের, বিশেষ করে আমার পিতামাতার যত্ন নিতে পারব। আমি ভাবলাম যে, সেখানে কাজ করা শুরু করার পর সবকিছু আরও ভালো হয়ে যাবে। ইন্টারভিউয়ের সময় আমি দেখলাম, সেখানে তিনজন প্রার্থী ছিল, এবং আমি ভয় পেতে লাগলাম, আমি হয়তো নির্বাচিত হবো না, কিন্তু আমি নিজেই নিজেকে বুঝালাম, “না, চাকরিটা আমারই হবে। আমি ঈশ্বরের সন্তান এবং তিনি অবশ্যই আমাকে আশীর্বাদ করবেন। যাই হোক না কেন, ঈশ্বর এই জায়গাটা আমার জন্যই রাখবেন।” আমি আমার নিজের যোগ্যতার উপরও কিছুটা আস্থা অনুভব করলাম। ইন্টারভিউয়ের সময় আমি সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিলাম এবং ইন্টারভিউয়ার আমাকে বললেন যে, আমি উত্তীৰ্ণ হলে তারা পাঁচ দিনের মধ্যে আমাকে ডাকবেন। আমার বিশ্বাস ছিল যে, আমিই নির্বাচিত হব। পাঁচ দিন পর, আমি একটি কলের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম, কিন্তু সারা দিনে একটি কলও এলো না। এক সপ্তাহ কেটে গেল এবং আমি তখনও তাদের কাছ থেকে কোনও কল পাইনি। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমি ইন্টারভিউয়ে ফেল করেছি। আমি হতাশাগ্রস্থ হয়ে নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলাম আমার সমস্যা কোথায় ছিল এবং আমি কেন ব্যর্থ হলাম। আমি ঈশ্বরের সামনে ঝুঁকে তাঁর কাছে প্রার্থনা করলাম, তাহলে কেন আমি সফল হলাম না? আমি আসলেই নেতিবাচক এবং অসহায় বোধ করছিলাম। এবং ঈশ্বরকে দোষারোপ করতে শুরু করলাম। আমি দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ধর্মমতে বিশ্বাসী ছিলাম এবং পুরোটা সময় আমি আমার দায়িত্ব পালন করছিলাম। আমি কখনই ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে যাইনি বা আমার দায়িত্বে অবহেলা করিনি। তিনি কেন আমার উপর কৃপা করবেন না ও আশীর্বাদ দেবেন না? আমি আরও হতাশাগ্রস্থ এবং দুঃখী হলাম, আমি এক সপ্তাহ ধরে কোনও সমাবেশে যোগ দিইনি বা ঈশ্বরের কোনও বাণী পড়িনি। ভাই-বোনেরা যখন আমার সাথে যোগাযোগ করেছিল, তখন আমি সত্যিই বিরক্ত হয়েছিলাম এবং তাদের জবাব দিতে বা তাদের সাথে কথা বলতেও চাইতাম না। আমি কোনও কিছু করতে চাইতাম না, এমনকি বাড়ি ছেড়েও যেতে চাইতাম না। আমার সুসমাচার প্রচার করা এবং ভাই-বোনদের সাথে ঈশ্বরের বাক্য শেয়ার করায় কোনো আগ্রহ ছিল না। কোনও অনুপ্রেরণা বা লক্ষ্য, এমনকি ক্ষুধা ছাড়াই আমি সারাদিন শুধু আমার ঘরেই থাকতাম। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই আমার ওজন কমে গিয়েছিল।

একদিন আমি ঈশ্বরের বাণীর একটি বন্দনা শুনলাম: “পরীক্ষার সময় ঈশ্বর চান মানুষের প্রকৃত হৃদয়”। “ঈশ্বর যখন মানুষকে পরীক্ষা করেন, তিনি কী ধরনের বাস্তবিকতা তৈরি করতে চান? তিনি ক্রমাগত চাইছেন যে মানুষ তাদের হৃদয় তাঁকে প্রদান করুক। ঈশ্বর যখন তোমার পরীক্ষা নেন, তিনি দেখেন তোমার হৃদয় তাঁর সঙ্গে রয়েছে, নশ্বর দেহের সঙ্গে রয়েছে, নাকি শয়তানের সঙ্গে রয়েছে। ঈশ্বর যখন তোমার পরীক্ষা নেন, তিনি দেখেন তুমি তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান করছ, নাকি তোমার অবস্থান তাঁর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, এবং তিনি এও দেখেন তোমার হৃদয় তাঁর পক্ষে আছে কি না। যখন তুমি অপরিণত এবং পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছ, তখন তোমার আত্মবিশ্বাস থাকে খুব সামান্য, এবং ঈশ্বরের অভিপ্রায় পূরণ করতে ঠিক কী করতে হবে তা তুমি জানো না, কারণ সত্যের সম্পর্কে তোমার ধারণা সীমিত। তবে, যদি তবুও তুমি ঈশ্বরের কাছে অকৃত্রিম ও আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করে যেতে পারো, এবং তুমি যদি তাঁকে তোমার হৃদয় অর্পণ করতে ইচ্ছুক হতে পারো, তাঁকে তোমার সার্বভৌম কর্তৃত্ব অর্পণ করতে পারো, এবং তোমার কাছে যা কিছু সবচেয়ে মূল্যবান তা ঈশ্বরকে নিবেদন করতে ইচ্ছুক হতে পারো, তাহলে তুমি ইতিমধ্যেই তোমার হৃদয় ঈশ্বরকে দিয়ে ফেলেছ। আরো বেশি ধর্মোপদেশ শুনলে এবং সত্য সম্পর্কে আরো বেশি উপলব্ধি লাভ করলে, তোমার আত্মিক উচ্চতাও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে। এই সময়ে, ঈশ্বরের চাহিদার মান তোমার অপরিণত অবস্থার মতো আর থাকবে না; তিনি তোমার কাছে একটি উচ্চতর মান দাবি করবেন। যখন মানুষ ধীরে ধীরে তার হৃদয় ঈশ্বরকে অর্পণ করে, তখন তাদের হৃদয় ধীরে ধীরে তাঁর নিকটবর্তী হয়ে ওঠে; মানুষ যত প্রকৃতই ঈশ্বরের সমীপবর্তী হয়ে উঠতে পারে, তখন তাদের হৃদয় ঈশ্বরকে আরো বেশি সম্মান করবে। ঈশ্বর যা চান তা হচ্ছে শুধু এরকম এক হৃদয়(মেষশাবককে অনুসরণ করুন ও নতুন গীত গান)। তখন আমি বুঝতে পারলাম যে ঈশ্বর যখন মানুষকে পরীক্ষা করেন, তখন তিনি তাদের অন্তর পরীক্ষা করেন—তারা কী নিয়ে ভাবে, ঈশ্বর যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন সেই পরিস্থিতিতেই তারা ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ করছে কিনা। তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণ করার পরিবর্তে, কীভাবে আমি নিজের ইচ্ছা পূরণ করতে তাঁকে ব্যবহার করব তা নিয়ে ভাবছিলাম। আমি যে চাকরি, সম্পদ এবং বস্তুগত আরাম চাইতাম তা যখন পাইনি, তখন আমি হতাশাগ্রস্থ হয়ে গেলাম, সমাবেশে যোগ দিতে বা আমার দায়িত্ব পালন করতে চাইতাম না। এটা ছিল ঈশ্বরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা, এবং আমি সেই পরিস্থিতিতে ঈশ্বরের প্রতি আমার বিশ্বাস হারাচ্ছিলাম। তাই আমি প্রার্থনা করলাম, “সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, আপনি প্রকাশ করেছেন যে আমি আপনার প্রতি অনুগত বা বিশ্বস্ত নই। আমি আপনার পক্ষে সাক্ষ্য দিইনি বা আপনার কাছে আত্মসমর্পণকরিনি। ঈশ্বর, আমার উপর দয়া করুন। আমি প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই।”

প্রার্থনার পর আমি অনেক বেশি শান্তি পেলাম এবং আমি অন্যদের মেসেজের জবাব দিলাম। একজন বোন আমাকে আমার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন এবং আমি যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম সে সম্পর্কে তাকে সব বললাম। তিনি আমাকে ঈশ্বরের বাণীর একটি অনুচ্ছেদ পাঠালেন: “কেউই কষ্ট ভোগ না করে সারাটা জীবন কাটায় না। কারোর ক্ষেত্রে এই কষ্ট পারিবারিক, আবার কারোর ক্ষেত্রে তা কাজকর্মের সাথে সম্পর্কিত, কারোর ক্ষেত্রে তা বৈবাহিক কারণে ঘটে, আবার কারোর ক্ষেত্রে, শারীরিক অসুস্থতা থেকে। সকলেই কষ্টভোগ করে। কেউ কেউ বলে, ‘মানুষকে আবশ্যিকভাবে কষ্ট ভোগ করতে হবে কেন? সারাজীবন সুখে শান্তিতে বাস করলে তা কতই না ভালো হতো! আমরা কষ্ট ভোগ করা থেকে কি বিরত থাকতে পারি না?’ না—সকলকে অবশ্যই কষ্টভোগ করতে হবে। এই কষ্টভোগের মাধ্যমেই মানুষ ভৌত জীবনের বিবিধ অনুভূতি লাভ করতে পারে, তা ইতিবাচক, নেতিবাচক, সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয়, যেমনই হোক না কেন। এই কষ্টই তোমাকে বিভিন্ন অনুভূতি ও উপলব্ধির রসাস্বাদন করায়, যেগুলো তোমার সারা জীবনের অভিজ্ঞতা স্বরূপ। এটা একটা দিক, আর এটা মানুষদের আরও অভিজ্ঞতা দানের জন্যই সম্পাদিত হয়। তুমি যদি সত্য অন্বেষণ করতে পারো এবং তা থেকে ঈশ্বরের ইচ্ছা উপলব্ধি করতে পারো, তাহলে ঈশ্বরের চাহিদা অনুসারে আদর্শ মানসম্পন্ন হয়ে ওঠার আরও কাছাকাছি যেতে পারবে তুমি। ঈশ্বর মানুষকে যে দায়িত্ব দেন, সেটা হল অপর একটি দিক। কী দায়িত্ব? সেটা হল তোমার দ্বারা অবশ্য সহনীয় কষ্টভোগ। তুমি যদি এই কষ্ট গ্রহণ ও সহন করতে পারো, তাহলে সেটাই হবে সাক্ষ্য, আর তা কোনওমতেই লজ্জাজনক নয়(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র পূর্বধারণার সমাধানের মাধ্যমেই ঈশ্বর-বিশ্বাসের সঠিক পথে প্রবৃত্ত হওয়া যায় (১))। আমি ঈশ্বরের বাণী থেকে শিখেছিলাম যে, প্রত্যেকের জীবনেই সংগ্রাম আছে, তা সে ধর্মমতে বিশ্বাসী হোক বা না হোক, এবং দুঃখ-দুর্দশা জীবনেরই একটি অংশ। পরোক্ষভাবে কষ্ট মূল্যহীন নয়। এটি আমার অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে এবং আমাকে ঈশ্বরের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে। আমি ঈশ্বরের সত্য ও তাঁর ইচ্ছার সন্ধান করতে তাঁর সামনে দাঁড়াতে পারি। আমরা শয়তানের দ্বারা এত গভীরভাবে কলুষিত হয়েছি যে, আমরা সবাই লোভী, আমরা গৌরব আশা করি, মর্যাদা এবং একটি ভাল ভবিষ্যতের পেছনে ছুটে বেড়াই এবং সত্যকে এড়িয়ে চলি। আমরা যদি সহজ সরল আরামদায়ক জীবনযাপন করি, আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে আরো দূরে সরে যাবো, আরো অধঃপতিত হব। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, ঈশ্বর আমার সাথে যা ঘটতেদিয়েছেন তার কারণ হল প্রার্থনার মাধ্যমে আমাকে ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত করা, আমাকে সত্যের সন্ধান দেওয়া, যাতে আমি ঈশ্বরের প্রতি সত্যিকারের বিশ্বাস অর্জন করি এবং তাঁর নিকটবর্তী হই। ঈশ্বরের আন্তরিক উদ্দেশ্য বোঝার পর, আমি আর সেই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে যেতে চাইনি, তবে পরবর্তীতে যাই হোক না কেন, আমি ঈশ্বরের প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করতে চেয়েছি এবং তাঁর প্রতি অনুগত থাকতে চেয়েছি।

এর পরে আমি আরেকটি অনুচ্ছেদ পড়ি। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “মানুষের জীবনের অভিজ্ঞতায়, তারা নিজেদের মনে প্রায়ই ভাবে: ‘আমি আমার পরিবার ও কর্মজীবন ঈশ্বরের জন্য ত্যাগ করেছি, আর তিনি আমায় কী দিয়েছেন? আমাকে অবশ্যই এটা হিসাব করে দেখতে হবে আর নিশ্চিত হতে হবে—আমি কি সম্প্রতি কোন আশীর্বাদ লাভ করেছি? এই সময়ের মধ্যে আমি অনেক কিছু দিয়েছি, অনেক দৌড়ে বেড়িয়েছি, এবং অনেক কষ্ট পেয়েছি—ঈশ্বর কি প্রতিদানে আমায় কোনও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন? তিনি কি আমার ভালো কাজগুলো মনে রেখেছেন? আমার পরিণতি কেমন হবে? আমি কি ঈশ্বরের আশীর্বাদ পেতে সক্ষম হবো? …’ প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেদের হৃদয়ের অভ্যন্তরে প্রতিনিয়ত এই ধরণের গণনা করে চলে, এবং ঈশ্বরের কাছে নিজেদের চাহিদা জানায় যাতে রয়েছে তাদের উদ্দেশ্য, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং এক লেনদেনের মানসিকতা। অর্থাৎ বলা যায় যে মানুষ নিজের হৃদয়ে প্রতিনিয়ত ঈশ্বরকে পরীক্ষা করছে, প্রতিনিয়ত ঈশ্বরের বিষয়ে পরিকল্পনা করছে, প্রতিনিয়ত তার ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যের জন্য ঈশ্বরের সঙ্গে তর্ক করছে, এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে একটা বিবৃতি বার করে নেওয়ার চেষ্টা করছে, দেখতে চাইছে সে যা চায় ঈশ্বর তাকে তা দিতে পারেন কি না। একই সময়ে যখন সে ঈশ্বরের সাধনা করছে, তখনও মানুষ ঈশ্বরের সাথে ঈশ্বরসুলভ আচরণ করে না। মানুষ সবসময় ঈশ্বরের সঙ্গে বোঝাপড়াতে আসতে চেয়েছে, অবিরাম তাঁর কাছে চাহিদা প্রকাশ করে, এবং এমনকি তাঁকে প্রতি পদক্ষেপে চাপ দেয়, এক ইঞ্চি তাকে দেওয়া হলে এক মাইল নেওয়ার চেষ্টা করে। ঈশ্বরের সঙ্গে লেনদেনের চেষ্টা করার সময়, মানুষ তাঁর সঙ্গে বিতর্কেও জড়ায়, এমনকি এমনও কিছু মানুষ আছে যারা পরীক্ষার মধ্যে পড়লে, বা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে, প্রায়শই দুর্বল, নিষ্ক্রিয়, এবং কাজে শ্লথ হয়ে পড়ে, এবং ঈশ্বরের বিষয়ে অভিযোগে পূর্ণ হয়ে ওঠে। যে সময় থেকে মানুষ প্রথম ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, তখন থেকেই সে ঈশ্বরকে একজন প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ ভাণ্ডার মনে করেছে, সমস্ত পরিস্থিতিতে প্রভূত উপযোগিতাসম্পন্ন বলে বিবেচনা করেছে, এবং নিজেকে ঈশ্বরের সবচেয়ে বড় পাওনাদার বলে ভেবে নিয়েছে, যেন ঈশ্বরের কাছ থেকে আশীর্বাদ এবং প্রতিশ্রুতি পাওয়ার চেষ্টাটা তার জন্মগত অধিকার এবং বাধ্যতা, এদিকে ঈশ্বরের দায়িত্ব হল মানুষকে রক্ষা করা, তার পরিচর্যা করা, এবং তাকে সংস্থান যোগান দেওয়া। যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে তাদের সকলের কাছে ‘ঈশ্বরে বিশ্বাস’ করার মৌলিক জ্ঞান এরকমই, এবং এরকমই তাদের ঈশ্বর বিশ্বাসের ধারণার গভীরতম উপলব্ধি। মানুষের প্রকৃতি ও সারসত্য থেকে শুরু করে তার বিষয়গত সাধনা পর্যন্ত, কোথাও ঈশ্বর ভীতির সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। মানুষের ঈশ্বর বিশ্বাসের লক্ষ্যের সাথে সম্ভবত ঈশ্বরের উপাসনা করার কোনো সম্পর্কই নেই। অর্থাৎ বলা যায় যে মানুষ কখনোই বিবেচনা করেনি বা উপলব্ধি করেনি যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে হলে ঈশ্বরে ভীতি ও তাঁর উপাসনার প্রয়োজন। এইধরনের অবস্থার আলোকে মানুষের সারসত্য অত্যন্ত সুস্পষ্ট। কী সেই সারসত্য? তা হল, মানুষের হৃদয় বিদ্বেষপরায়ণ, তা বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণা পোষণ করে, ন্যায় ও ধার্মিকতা এবং ইতিবাচক কোনোকিছুই ভালোবাসে না, এবং তা অবজ্ঞাজনক ও লোভী। মানুষের হৃদয় ঈশ্বরের জন্য এর চেয়ে বেশি অবরুদ্ধ আর হতে পারে না; সে কখনোই তার হৃদয় ঈশ্বরকে দেয়নি। ঈশ্বর কখনোই মানুষের প্রকৃত হৃদয় দেখেননি, বা তিনি কখনোই মানুষের দ্বারা পূজিত হননি। ঈশ্বর কত বড় মূল্য পরিশোধ করেন, বা তিনি কত কাজ করেন, বা মানুষকে কত সংস্থান যোগান দেন, সেসব নির্বিশেষে মানুষ এই সবকিছুর প্রতি অন্ধ ও চূড়ান্ত উদাসীন থাকে। মানুষ কখনোই ঈশ্বরকে তার হৃদয় অর্পণ করেনি, সে তার হৃদয়ের বিষয়ে শুধু নিজেই বিবেচনা করতে চায়, নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে চায়—এর অন্তর্নিহিত অর্থ হল মানুষ ঈশ্বরে ভীতি ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগের পথ অনুসরণ করতে চায় না, অথবা ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব ও তাঁর আয়োজন মান্য করতে চায় না, বা ঈশ্বরকে ঈশ্বর হিসাবে উপাসনা করতেও চায় না। এটাই মানুষের বর্তমান অবস্থা(বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, ঈশ্বরের কর্ম, ঈশ্বরের স্বভাব এবং স্বয়ং ঈশ্বর ২)। ঈশ্বরের বাণী আমার প্রকৃত অবস্থা প্রকাশ করেছে এবং আমাকে অত্যধিক লজ্জিত করেছে। শুধুমাত্র আশীর্বাদের জন্য আমার বিশ্বাস ছিল, এবং যদিও আমি নিজেকে ঈশ্বরের জন্য উৎসর্গ করছিলাম, পরিশেষে এটা সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বর পুরস্কৃত করেছিলেন। আমি অনেক বেশি সময় এবং কর্মচাঞ্চল্য সহযোগে আমার দায়িত্ব পালন করেছি, এই আশায় যে ঈশ্বর আমাকে আশীর্বাদ করবেন এবং তাঁর অনুগ্রহ দান করবেন, যাতে আমি যে বিষয়ে পড়ালেখা করেছি সেই ক্ষেত্রেই একটি উচ্চ-বেতনের চাকরি পেতে পারি। তাহলে আমি একটি সুখী জীবন পাব এবং আমার আর কোনও চাহিদা থাকবে না, এবং আমার পরিবার এবং আমাকে আর কষ্ট পেতে হবে না। এটাই ছিল আমার চিন্তাভাবনা ও লক্ষ্য। কিন্তু দুই বছরেরও বেশি সময় বিশ্বাস রাখার পর, আমি যে আশীর্বাদের পেছনে ছুটছিলাম তা আমি পাই নি। আমি যে কাজটি পাব বলে আশা করেছিলাম তা যখন না পাই, আমার ঈশ্বরের অনুসরণ এবং নিজ দায়িত্বপালনের প্রণোদনা অপসৃত হয়েছিল। বাস্তব ঘটনাগুলো আমাকে দেখিয়েছিল যে, আমি সব সময়ই ঈশ্বরের সাথে প্রতারণা করছিলাম, আমি তাঁর সাথে চুক্তি করার চেষ্টা করছিলাম। এর থেকে মনে হচ্ছিল যে, আমি ঈশ্বরের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছিলাম, সমাবেশে যাচ্ছিলাম এবং আমার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছিলাম, কিন্তু বাস্তবে, আমার গোপন উদ্দেশ্য ছিল—এটা ছিল ঈশ্বরের কাছ থেকে আরও অনুগ্রহ এবং আশীর্বাদ লাভ করা। ঈশ্বরের বাণীর অন্তর্বর্তী জ্ঞান আমাকে আমার নিজের স্বার্থপরতা দেখিয়েছে, যে আমি শুধু নিজের এবং আমার পরিবারের কথা ভাবছিলাম, ঈশ্বরের কাছে অযৌক্তিক দাবি করার মাধ্যমে আমার দাবি চাপিয়ে দিয়েছি। আমি তাঁর সাথে ঈশ্বরের মত আচরণ করিনি এবং তাঁকে ভক্তি ভরে উপাসনা করিনি। আমি ঈশ্বরের কাছে এমন ভাবে দাবি করছিলাম যেন তিনি আমার কাছে ঋণী, যাঁকে আমি আমার প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ দেখাতে এবং আমার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ব্যবহার করতে পারি। ঈশ্বর ইতিমধ্যে আমাদের জীবন দান করেছেন এবং তিনি নিঃশর্তভাবে আমাদের অনেক কিছু দিয়েছেন। ঈশ্বর দেহে পরিণত হয়েছেন এবং শয়তান দ্বারা ভ্রষ্ট মানুষকে বাঁচানোর জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আমরা সত্যের সন্ধান পেতে পারি, দুর্নীতি থেকে মুক্তি পেতে পারি এবং ঈশ্বরের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে রক্ষা পেতে পারি। আমাদের জন্য ঈশ্বরের ভালবাসা অতুলনীয় এবং তিনি আমাদের প্রতি অনেক অনুগ্রহ করেছেন। কিন্তু আমি ঈশ্বরের প্রেমে অন্ধ ছিলাম এবং তাঁর ইচ্ছা নিয়ে কখনই ভাবিনি। আমি শুধু জানতাম কিভাবে চাইতে হয়। আমার কোনো বিবেকবুদ্ধি বা যুক্তিবোধ ছিল না!

এরপরে আমি আরেকটি অনুচ্ছেদ পড়লাম। “তাদের যেভাবেই বিচার করা হোক না কেন, যাদের অন্তরে ঈশ্বর রয়েছে তাদের আনুগত্য অপরিবর্তিত থাকে; কিন্তু যাদের অন্তরে ঈশ্বর নেই তাদের কাছে, একবার ঈশ্বরের কাজ তাদের দৈহিকভাবে সুবিধা-প্রদানকারী না হলে, তারা ঈশ্বরের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে, এমনকি ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরেও সরে যায়। তারাই শেষ অবধি অবিচল থাকবে না, যারা কেবল ঈশ্বরের আশীর্বাদের অন্বেষণ করে, এবং যাদের ঈশ্বরের জন্য নিজেদের ব্যয় করার এবং তাঁর প্রতি নিজেদের নিবেদন করার ইচ্ছামাত্র নেই। ঈশ্বরের কার্য সম্পন্ন হলে, এই প্রকার হীন ব্যক্তিদের বহিষ্কার করা হবে, এবং তারা কোনোপ্রকার সহানুভূতির অযোগ্য। যারা মনুষ্যত্ববিহীন, তারা প্রকৃত ঈশ্বরপ্রেমে অক্ষম। যখন পরিবেশ নিরাপদ এবং সুরক্ষিত থাকে, বা সেখানে লাভজনক কিছু থাকে, তখন তারা ঈশ্বরের প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত হয়, কিন্তু যখন তাদের বাসনা চরিতার্থ হয় না, বা যদি শেষ পর্যন্ত তা অস্বীকার করা হয়, তাহলে তারা অবিলম্বে বিদ্রোহ করে। এমনকি একটিমাত্র রাত্রির ব্যবধানেই, তারা হাস্যোজ্জ্বল, ‘হৃদয়বান’ ব্যক্তি থেকে এক কুৎসিত চেহারা-বিশিষ্ট এবং হিংস্র ঘাতকে পরিণত হতে পারে, হঠাৎ করেই তাদের গতকালের হিতৈষীকে আজকের পরম শত্রু হিসাবে গণ্য করে বসতে পারে, কোনোপ্রকার যুক্তিসঙ্গত বিবেচনা ছাড়াই। এই দানবদের যদি নির্মূল করা না হয়, তাহলে, চোখের পলকমাত্র না ফেলে প্রাণনাশে সমর্থ এই দানবরা কি প্রচ্ছন্ন বিপদে পরিণত হবে না?(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরের কার্য এবং মানুষের অনুশীলন)। ঈশ্বরের বাক্য বলে যাদের হৃদয়ে ঈশ্বরের জন্য স্থান রয়েছে শুধু তারাই তাঁর বিচারের সময় সাক্ষ্য দিতে পারবে, কিন্তু যাদের হৃদয়ে ঈশ্বরের স্থান নেই তারা শুধু নিজেদের স্বার্থের কথা ভাবে। যখন তারা তাদের সামনে কোনো পার্থিব লাভ দেখতে পায় তখন তারা তাকে মানতে বাধ্য হয়, কিন্তু তারা যা চায় তা না পেলেই, তারা ঈশ্বরকে শত্রু মনে করে, তাঁকে দোষারোপ করে এবং তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। এই ধরনের ব্যক্তিদের ঈশ্বর ঘৃণা করেন এবং তাদের ধ্বংস করবেন—এরা হল শয়তানের মতো। ঈশ্বরের বাণী নিয়ে চিন্তা করে আমার মনে হয়েছিল, আমিও কি ঠিক তেমনই একজন ছিলাম না? তাঁর আশীর্বাদের উপর আমার বিশ্বাস ছিল। আমার পরিবারের সদস্যরা যতক্ষণ সুস্থ ছিল এবং আমার একটি ভাল চাকরি ছিল, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি ঈশ্বরের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু সেগুলো যখন আমার ইচ্ছা মতো হলো না, তখন আমি ঈশ্বরের কাছে এগুলো নিয়ে অভিযোগ তুলে তাঁর বিরোধিতা করলাম। ঈশ্বরের প্রতি আমার কোনও ভক্তি বা সমর্পণ ছিল না। আমি বুঝলাম যে ঈশ্বরের প্রতি আমার বিশ্বাস দৃঢ় ছিল না, আমি ঈশ্বরের সাথে প্রতারণা করছিলাম এবং তাঁর সাথে চুক্তি করছিলাম, এবং এই ধরনের ভক্তি তিনি কখনই গ্রহণ করেন না। ঈশ্বর অন্তিম সময়ে জয়ীদের একটি দলকে সম্পূর্ণ করছেন। তারা নিজ-নিজ হৃদয়কে পূর্ণত ঈশ্বরের অভিমুখী করবে, এবং তাদের জীবনে বেঁচে থাকার লক্ষ্যই হবে তাঁর সন্তুষ্টিবিধান। তারা ঈশ্বরের জন্য কষ্ট করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, এবং তারা চাকরির জন্য যতটা কষ্ট করতে পারবে ঠিক তেমনই যে কোনও সমস্যার সম্মুখীন হতে পারবে। তারাই হল সেই ব্যক্তি যাদের ঈশ্বর শেষ পর্যন্ত পূর্ণতা দান করবেন। এবং শুধুমাত্র তারাই ঈশ্বরের সম্মতি এবং আশীর্বাদ পাবে। চাকরি পেতে তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়, কিন্তু সে তার কষ্টের জন্য কখনই ঈশ্বরকে দোষারোপ করেনি। সত্যি বলতে, ঈশ্বরের প্রতি তার বিশ্বাস কখনই নড়বড়ে হয়নি, এবং যখন সে তার ছেলেমেয়ে ও সম্পদ হারিয়ে ছিল, তখনও সে ঈশ্বরনামের স্তুতি করত ও ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের প্রতি সমর্পিত ছিল। ঈশ্বরের প্রতি তার বিশ্বাস ছিল দৃঢ়। কিন্তু নিজের দিকে তাকিয়ে মনে হল, ঈশ্বর যা চান তা থেকে আমি সত্যিই অনেক দূরে ছিলাম।

একদিন আমি ঈশ্বরের বাণীর এই শেষ অনুচ্ছেদটি পড়লাম, এটি ছিল “তুমি কার প্রতি অনুগত?” এর শেষ অনুচ্ছেদ “আমি যদি এখনই তোমাদের সামনে কিছু অর্থ রাখতাম এবং তোমাদের স্বাধীন ভাবে বেছে নিতে বলতাম—এবং যদি আমি সেই নির্বাচনের জন্য তোমাদের নিন্দা না করতাম—তাহলে তোমাদের মধ্যে বেশিরভাগই অর্থ বেছে নেবে আর সত্যকে পরিত্যাগ করবে। তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তিরা অর্থ পরিত্যাগ করে অনিচ্ছা সহকারে সত্যকে নির্বাচন করবে, আবার এর মাঝামাঝি ব্যক্তিরা এক দিকে অর্থকে এবং অন্য দিকে সত্যকে বেছে নেবে। তোমাদের আসল রূপ কি এইভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠবে না? সত্য এবং তোমরা যার প্রতি অনুগত এমন কিছুর মধ্যে নির্বাচনের ক্ষেত্রে তোমরা সকলেই এটাই বেছে নেবে, আর তোমাদের মনোভাব একই থাকবে। তাই নয় কি? তোমাদের মধ্যে কি এমন অনেকেই নেই যারা ন্যায় ও অন্যায়ের দোলাচলে ভুগেছে? ইতিবাচক এবং নেতিবাচক, কালো এবং সাদার দ্বন্দ্বে, তোমরা পরিবার এবং ঈশ্বর, সন্তান এবং ঈশ্বর, শান্তি এবং বিচ্ছিন্নতা, ধনসম্পদ এবং দারিদ্র্য, মর্যাদা এবং সাধারণত্ব, সমর্থন পাওয়া এবং অবহেলিত হওয়ার মধ্যে করা নির্বাচনের বিষয়ে তোমরা অবশ্যই সচেতন। একটি শান্তিপূর্ণ পরিবার এবং ভাঙা পরিবারের মধ্যে, তোমরা নির্দ্বিধায় প্রথমটিকেই বেছে নেবে এবং তোমরা সেটা করবে একেবারে নির্দ্বিধায়; ধন এবং কর্তব্যের মধ্যেও তোমরা আবার প্রথমটিকেই বেছে নেবে, এমনকি তীরে ফিরে যাওয়ার প্রতিও অনিচ্ছা প্রকাশ করবে, আভিজাত্য এবং দারিদ্র্যের মধ্যেও সেই প্রথমটিই বেছে নেবে, এমনকি; পুত্র, কন্যা, স্বামী-স্ত্রী এবং আমার মধ্যে থেকে বেছে নেওয়ার সময়েও, আগেরটিই বেছে নেবে; এবং ধারণা ও সত্যের মধ্যেও, তোমরা পুনরায় সেই আগেরটিকেই বেছে নেবে। তোমাদের সমস্ত অপকর্ম দেখে, আমি তোমাদের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি। তোমাদের হৃদয় নমনীয় হওয়ার প্রতি এত অনিচ্ছা দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। বহু বছরের আত্মোৎসর্গ এবং প্রচেষ্টার পরিবর্তে তোমাদের প্রত্যক্ষ অবজ্ঞা এবং হতাশা ছাড়া আমি আর কিছুই পাইনি, তবে তোমাদের প্রতি আমার আশা প্রতিদিন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ আমার সেই দিবস সকলের সম্মুখে সম্পূর্ণরূপে প্রতীয়মান। তবুও তোমরা অন্ধকার এবং মন্দ জিনিসের সন্ধানে অবিরত নিয়োজিত রয়েছ এবং সেগুলি পরিত্যাগ করতে অস্বীকার করছ। তাহলে, তোমাদের পরিণাম কী হবে? তোমরা কখনও কি এই বিষয়ে বিচক্ষণতার সঙ্গে ভাবনা-চিন্তা করেছ? যদি তোমাদের আবার নির্বাচন করতে বলা হয়, তাহলে তোমাদের অবস্থান কী হবে? সেটা কি এখনও আগের মতই হবে? তোমরা কি এখনও আমাকে হতাশা এবং শোচনীয় দুঃখই দেবে? তোমাদের হৃদয় কি এখনও যৎকিঞ্চিত উষ্ণতাই ধারণ করবে? আমার হৃদয়ে সান্ত্বনার প্রলেপ দেওয়ার জন্য কী করতে হবে তা কি এখনও তোমরা জান না? এই মুহূর্তে, তোমরা কী বেছে নেবে? তোমরা কি আমার বাক্যগুলির কাছে নতিস্বীকার করবে নাকি সেগুলির জন্য ক্লান্ত বোধ করবে? আমার দিন তোমাদের চোখের সামনেই রয়েছে, এবং তোমরা একটি নতুন জীবন এবং একটি নতুন সূচনার প্রারম্ভে দাঁড়িয়ে আছ। তবে, আমি অবশ্যই বলব যে এই সূচনাটি অতীতের কোনও নতুন কাজের সূচনা নয়, প্রকৃতপক্ষে এটি পুরাতন জীবনের উপসংহারমাত্র। অর্থাৎ এটাই অন্তিম কাজ। আমি মনে করি তোমরা সকলেই এই সূচনার অস্বাভাবিকতা কী সে সম্পর্কে অবহিত। শীঘ্রই কোনও একদিন, তোমরা এই সূচনার প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারবে, তাই এসো আমরা একসাথে এটিকে অতিক্রম করে আগত সমাপ্তিকে স্বাগত জানাই!(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য)। ঈশ্বরের বাণী আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিত এবং আমি দেখেছি, মানুষের মধ্যে সত্যিই ঈশ্বরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার মতো স্বভাব আছে। আমরা শুধুমাত্র বস্তুগত সম্পদ এবং অর্থ, মর্যাদা এবং খ্যাতি ভালবাসি, সত্যকে নয়। আমাদের এই স্বভাব ঈশ্বরের কাছে ঘৃণ্য হলেও, তিনি আমাদের বিদ্রোহ ও দুর্নীতিকে গুরুত্ব দেন না, কারণ তিনি এটি দেখেন যে বর্তমানে আমরা সত্যকে অনুসরণ করছি কিনা বা অনুতপ্ত কিনা এবং নিজেকে পরিবর্তন করেছি কিনা। ঈশ্বর আমাদেরকে শয়তানের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণরূপে রক্ষা করতে চান এবং তাঁর আশ্রয়তলে রাখতে চান। কিন্তু আমি ঈশ্বরের আশীর্বাদকে মূল্যবান মনে করিনি বা সত্যের খোঁজ করিনি। বরং আমি একটি উচ্চ বেতনের চাকরি খোঁজার দিকে মনোনিবেশ করেছিলাম, সম্পদ এবং শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্যেরপ্রতি আকৃষ্ট ছিলাম। আমি এত বোকা ছিলাম! একমাত্র সত্যই মানুষকে বাঁচাতে পারে, দূর করতে পারে দুর্নীতি, আমাদেরকে ভাল এবং খারাপের মধ্যে পার্থক্য করতে দিতে পারে এবং শয়তানের প্রতারণা এবং ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে। সত্যই আমাদেরকে সাহায্য করতে পারে ঈশ্বরকে জানতে, কীভাবে বেঁচে থাকতে হয় এবং কীভাবে একজন ব্যক্তি হিসাবে অর্থ খুঁজে পেতে হয়, তা বুঝতে। অর্থ এবং বস্তুগত আনন্দের পিছনে ছুটলে তা আমাকে কেবল ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে নিয়ে যাবে, যা আমাকে আরও দুর্নীতিগ্রস্ত, লোভী এবং অসংযত করে তুলবে, ফলে আমি আমার মুক্তির সুযোগ হারাবো। ঠিক যেমন প্রভু যীশু বলেছেন, “আবার তোমাদের বলছি, স্বর্গরাজ্যে ধনীর প্রবেশ করার চেয়ে সূচের ছিদ্রপথে উটের প্রবেশ করা সহজতর(মথি ১৯:২৪)। খুব ধন-সম্পদশালী হওয়া, খুব আরামদায়কভাবে থাকা আসলেখুব একটা ভালো কিছু নয়। প্রবাদে বলা হয়েছে, “এবং মূর্খদের নিশ্চিন্ততাই ডেকে আনবে তাদের ধ্বংস” (হিতোপদেশ ১:৩২)। প্রভু যীশু আমাদের সতর্ক করেছিলেন, “কাজেই ‘আমরা কি খাব’? ‘কি পান করব’? বা ‘কি আমরা পরব’?-এসব কথা ভেবে উতলা হয়ো না। (যারা ইহুদী নয় তারাই এ সবের সন্ধানে ব্যস্ত থাকে:) এসব জিনিস যে তোমাদের প্রয়োজন তা তোমাদের স্বর্গস্থ পিতা জানেন। সর্বাগ্রে তাঁর রাজ্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য তৎপর হও। তাহলে এ সবই তিনি তোমাদের জুগিয়ে দেবেন(মথি ৬:৩১-৩৩)। দুর্যোগ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিজেদেরকে সত্যের জন্য প্রস্তুত করা এবং আমাদের কর্তব্যগুলি সঠিকভাবে পালন করা। আমাদের কর্তব্য হল, দুর্নীতি পরিহার করে ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে, যাতে আমরা ঈশ্বরের কাছে সৃষ্ট জীবহিসাবে যোগ্য হয়ে উঠতে পারি। অন্য কোনো কিছুর আর কোনো মূল্য বা অর্থ নেই। আমি আরও জেনেছি যে একটি ভাল চাকরি পাওয়া বা না পাওয়া সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল। আমি নিজেকে সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের হাতে তুলে দিতে প্রস্তুত ছিলাম।

এর পরে আমি ঈশ্বরের আরেকটি অনুচ্ছেদ পড়লাম: “মানুষের কর্তব্য ও সে আশীর্বাদধন্য না অভিশপ্ত—এই দুইয়ের মধ্যে কোনো পারস্পরিক সম্পর্ক নেই। মানুষের যা পালন করা উচিত, তা-ই হল কর্তব্য; এ হল তার স্বর্গ-প্রেরিত বৃত্তি, এবং এই বিষয়ে প্রতিদান, শর্তসমূহ, অথবা যুক্তির উপর নির্ভরশীল হওয়া এর উচিত নয়। কেবল তাহলেই বলা যায় যে সে তার কর্তব্য করছে। আশীর্বাদধন্য হওয়ার অর্থ হল বিচারের অভিজ্ঞতার অন্তে নিখুঁত হওয়া ও ঈশ্বরের শুভাশিস উপভোগ করা। অভিশপ্ত হওয়ার অর্থ হল বিচার ও শাস্তির অভিজ্ঞতার পরেও স্বভাবের পরিবর্তন না ঘটা; তা হল যখন কেউ নিখুঁত হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা অর্জন না করে কেবলমাত্র শাস্তিপ্রাপ্তই হয়। কিন্তু আশীর্বাদধন্য বা অভিশপ্ত যা-ই হোক না কেন, সৃজিত সত্তার যা করণীয় ও যা তাদের সাধ্যায়ত্ত তা সম্পাদন করে তাদের কর্তব্য পালন করা উচিৎ; একজন মানুষের, একজন ঈশ্বর-সন্ধানী মানুষের, ন্যূনতম এটুকু করাই উচিৎ। নিছক আশীর্বাদধন্য হওয়ার উদ্দেশ্যে কর্তব্য সম্পাদন করা তোমার অনুচিৎ, আবার অভিশপ্ত হওয়ার ভয়ে কাজ করতে অস্বীকার করাও উচিৎ নয়। তোমাদের এই একটা কথা বলা যাক: মানুষের কর্তব্য সম্পাদন হল তার করণীয় কাজ করা, আর যদি সে তার কর্তব্য পালনে অসমর্থ হয়, তবে সেটা তার বিদ্রোহীসুলভ আচরণ(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরের অবতারের সেবাব্রত ও মানুষের কর্তব্যের মধ্যে পার্থক্য)। আমি এই অনুচ্ছেদ থেকে শিখেছি যে ঈশ্বর আমাদের সৌভাগ্য বা দুর্যোগ যা-ই দান করুন না কেন, আমাদের সুষ্ঠুভাবে নিজ-নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। এটা হল আমাদের নিঃশর্ত দায়িত্ব। পূর্বের কথা চিন্তা করে, একটি স্থায়ী, সম্মানজনক চাকরির পিছনে ছুটে ব্যর্থ হওয়ার পর, আমি সত্যিই হতাশ এবং নেতিবাচক হয়ে গিয়েছিলাম এবং আমি আর আমার দায়িত্ব পালন করতে চাইনি। আমার দায়িত্বের প্রতি এটি আমার কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না। ঈশ্বর বলেন যে সৃষ্ট জীব হিসাবে, আমাদের সকলেরই দায়িত্ব রয়েছে নিজ-নিজ দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করার। ঈশ্বর আমাদেরকে যে পরিস্থিতিতেই উপনীত করুন না কেন, আমরা দুর্বলতাই অনুভব করি বা ঈশ্বরের ইচ্ছা বুঝতে না পারি, যা-ই হোক না কেন, আমাদেরকে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। সৃষ্ট জীব হিসেবে আমাদেরকে নিঃশর্তভাবে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করতে হবে। তাঁর কাছে কিছু দাবি করার বা তাঁর সাথে চুক্তি করার কোনো অধিকারই আমাদের নেই। সৃষ্ট জীব হিসাবে, আমাদের দায়িত্ব পালন করা হল আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। এবং কোন আদান-প্রদান তা নষ্ট করতে পারবে না! এটা সঠিক এবং উপযুক্ত, স্বাভাবিক নিয়ম, ঠিক যেমন শিশুরা পিতামাতার প্রতি অনুগত হয়।

এরপর থেকে, আমি আমার দায়িত্ব সম্পর্কে আরও সচেতন হলাম এবং ঈশ্বরের বাণী প্রচারে নিজেকে আরও উৎসর্গ করলাম। এবং এতে আমি খুব শান্তি অনুভব করেছি। একদিন, একটি স্কুল আমাকে একটি সাক্ষাৎকারের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। এটা সত্যিই সম্মানজনক ছিল, তাই আমার মনে হয়েছিল যে এই চাকুরী পেলে ভালো বেতন পাবো। কিন্তু সাক্ষাৎকারের সময় আমি মনে মনে ঈশ্বরকে বলেছিলাম, “ঈশ্বর, সবকিছু আপনার হাতে। আমি এই সাক্ষাৎকারে ভাল করি বা না করি, আপনার কাছে এই আমি চাকরীটি দাবি করছি না। আমি শুধু আপনার বিচারের উপর ছেড়ে দিতে চাই। এমনকি যদি আমি এই চাকরী নাও পাই, আমি তারপরও আপনার প্রশংসা করব এবং আমার দায়িত্ব পালন করতে থাকব।” লিখিত অংশের ফলাফল প্রকাশিত হয় এবং আমি শীর্ষ পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে ছিলাম। আমি খুবই আনন্দিত ছিলাম। দুইদিন পরে, মৌখিক সাক্ষাৎকারের পরে, আমি জানতে পারি যে আমি নির্বাচিত হইনি। আমার একজন বন্ধু আমাকে বলেছিল যে সে নির্বাচিত হয়েছে, এবং যদিও আমি তার ফলাফলে খুশি হয়েছিলাম, তবে আমি কিছুটা হতাশ হয়েছিলাম। আমি ঈশ্বরকে আমাকে মানসিক শান্তি দিতে এবং আমার মানসিক অবস্থার খেয়াল রাখতে বলেছিলাম যাতে তাঁর সার্বভৌমত্বে নিজেকে সমর্পণ করতে পারি। প্রার্থনার পরে আমি মানসিকভাবে খুব শান্তি অনুভব করলাম এবং আমি সেই বিকেলে যথারীতি আমার দায়িত্ব পালন করতে গেলাম। আমি জানতাম যদি ঈশ্বর চাইতেন যে আমি সেই স্কুলে কাজ করি, তাহলে আমি চাকরীটি পেতাম, অন্যথায় যত পরিশ্রমই করি না কেন, চাকরিটা আমি পাবো না। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল যে সবই ঈশ্বরের হাতে এবং ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউই কিছু করতে পারে না। আমি যখন এভাবে চিন্তা করলাম, তখন আমি এই ভেতর থেকে অনুপ্রেরণা অনুভব করলাম, এবং যাই হোক না কেন সত্যিই আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছি।

এই অভিজ্ঞতা আমায় দেখালো যে আমার বিশ্বাস কত ত্রুটিযুক্ত ছিল, যে আমি ঈশ্বরকে ঠকাতে পারতাম। ঈশ্বর-বাক্যের নির্দেশনা নিজেকে বুঝতে ও ভ্রান্ত অন্বেষণগুলি শুধরে নিতে সুযোগ করে দিয়েছে। আমি আরামের মধ্যে থেকে এই সবকিছু অর্জন করতে পারতাম না। আমি ঈশ্বরের ভালবাসার জন্য অত্যন্ত কৃতজ্ঞ!

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

Leave a Reply

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন