সত্যানুসন্ধান আমাকে বদলে দিয়েছে
2018 সালের মে মাসে, আমি সৈনবাহিনীতে যোগ দিতে বাড়ি ছেড়েছিলাম। সৈনবাহিনীতে যখন কোনো নেতা আদেশ দিত, তখন নিম্নপদস্থরা আনুগত্যের সঙ্গে সেটা পালন করতেন। আমাদের কাজ তদারকি করার সময় নেতারা আমাদের বিভিন্ন আদেশ দিত, খুব খবরদারি করতেন। আমি সত্যিই তাদের মানতাম। মহিলা সৈন্যদের মধ্যে সর্বোচ্চ নেতার হাতে টাকা আর ক্ষমতা থাকত। যখন সে নিজের মেয়েকে আমাদের সৈনবাহিনীতে নিয়ে আসে, তখন সবাই তাকে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানায়। উচ্চ নেতৃত্ব প্রায়ই আমাদের বলত যে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে, তবেই আমরা তার মত হতে পারব। সেই সময়ে আমি নিজের কাছে শপথ করলাম যে আমি নেতা হওয়ার চেষ্টা করব। ভেবেছিলাম পদমর্যাদা আর প্রশংসা পাওয়া বিরাট মর্যাদার বিষয় হবে। তারপর থেকে আমি নিজেকে ভালো দেখানোর জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করতাম, আর নেতারা যা বলত তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতাম। নেতাদের সামনে খুব ভালো কর্মদক্ষতা দেখাতাম, আর তারাও আমায় খুব পছন্দ করতেন। অল্প সময়েই তারা আমাকে ইসেটের প্রধান হিসেবে পদোন্নতি দিল। আমি উচ্ছ্বসিত ছিলাম। আমার পদোন্নতির পর নেতাদের প্রতি আরও বেশি বাধ্য হয়ে গেলাম। আমাদের দৈনন্দিন কাজে নেতৃত্ব দিতাম আর ঢিল দেওয়ার সাহস করতাম না। যখন দেখতাম নিম্নপদস্থ সৈন্যরা ঢিল দিচ্ছে, তখন কড়া মুখ করে তাদের এর ফল ভোগের হুমকি দিতাম। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এটা পছন্দ করত না; আমার পিছনে আমাকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলত। তখন ভাবতাম নিজেকে তুলে ধরতে আর উচ্চতর পদ পেতে আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে যাতে নীচের সৈন্যরা আমার কথা শোনে। আমার কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে, স্কোয়াড লিডার হিসাবে আবার আমার পদোন্নতি হল। তখন মনে হয়েছিল সেটা সত্যিই সম্মানজনক। তাছাড়া আমি স্কোয়াড লিডার হওয়ার পর প্রাইভেটরা আমার কথা শুনতে শুরু করে। তবে স্কোয়াড লিডারদেরও কায়িক পরিশ্রম করতে হত, আর সেটা ক্লান্তিকর, তাই আমি ভাবলাম যে আমাকে র্যাঙ্কে আরো উপরে উঠতে হবে। আরো উচ্চপদে গেলে, আমার আরো ক্ষমতা থাকবে, আর আমাকে খাটতে হবে না। সেটা দারুণ হবে! আরো উচ্চপদ পেতে, আমি একমনে প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করতে লাগলাম আর প্রাইভেটদেরও একই ভাবে কাজ করার অনুরোধ করলাম। আমরা সবসময় নেতাদের দেওয়া কাজগুলো নির্ধারিত সময়ের আগেই করে ফেলতাম। নেতারা আমার কাজে বেশ খুশিই ছিল, আর অল্প সময়েই আমি প্লাটুন লিডার পদে উঠে গেলাম।
প্লাটুন লিডার হিসাবে আমার পদ রক্ষা করার জন্য প্রাইভেটদের দিয়ে আমার কথামত কাজ করানোর নানা পন্থা খুঁজে বার করতাম, যাতে আমাদের প্লাটুন অন্যদের থেকে পিছিয়ে না পড়ে। যখন প্রাইভেটরা আমার কথা শোনেনি, তখন তার শাস্তি হিসেবে তাদের দাঁড় করিয়ে রাখতাম বা পুশআপ করাতাম। তারপর থেকে তারা আমার কথা বেশি করে শুনত। তারা আমার সামনে যেমন ঢিল দেওয়ার সাহস করেনি, তেমনই আমাকে খুব শ্রদ্ধাও করত। আমি খুব খুশি ছিলাম। তবে নিজেও অনেক চাপের মধ্যে ছিলাম, আর ভালো করে কাজ না করলে ঊর্ধ্বতন নেতা আমাকেই কথা শোনাবে। সমালোচনা এড়াতে আর একটু প্রশংসা পেতে, কাজ করার সময় আমি সবসময় সৈন্যদের কড়া সুরে বকাবকি করতাম। কিছু সময় পর, তারা আর আমার মেজাজ পছন্দ করত না, এবং আমাকে তীব্রভাবে অপছন্দ করত। আমার সামনে তারা ভালো ভালো কথা বললেও, আমার পিছনে আমায় নিয়ে অনেক খারাপ কথা বলত। একথা জানতে পেরে আমার খুব অস্বস্তি লেগেছিল। এছাড়াও, কখনো কখনো যখন আমরা আমাদের কাজগুলো সম্পূর্ণ করতাম না, তখন আমি নেতাদের সমালোচনার সম্মুখীন হতাম। তখন ভাবলাম যে হয়তো আরেক র্যাঙ্ক উপরে উঠলে আমাকে আর বকাবকি করা হত না, আর আমি এত চাপের মধ্যে থাকতাম না। তাহলে আরো মানুষ আমাকে সম্মান করত। আমি নীরবে সেই লক্ষ্যে কাজ করতে লাগলাম।
তারপর, অবশেষে একদিন, ক্যাপ্টেন খুশি হয়ে আমাকে বলল যে সমস্ত প্লাটুন লিডারদের মধ্যে, একমাত্র আমার প্রতি তার সবচেয়ে বেশি ভরসা ছিল, আর যদি কখনো সে ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বন্ধ করে দেয়, তবে আমিই তার জায়গা নেব। এটা শুনে দারুণ উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম। কখনো বুঝতে পারিনি যে সেসে আমাকে কতটা বিশ্বাস করত। অল্প সময়ের মধ্যেই আমি ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পেলাম। আরো বেশি করে প্রাইভেটরা আমার দিকে তাকিয়ে থাকত আর যেখানেই যেতাম সেখানেই আমাকে সম্মান করা হত। আমাকে আর পরিশ্রম করতে হত না; আমার কাছে আরও বেশি সময় থাকত। ক্যাপ্টেনের পদে থেকে ঊর্ধ্বতন হওয়ার অনুভূতি খুব উপভোগ করতাম। কিন্তু কিছু সময় পর, আমার সাথে যারা প্লাটুন লিডার হিসাবে পদোন্নতি পেয়েছিল তাদের কেউ কেউ আমাকে ঈর্ষা করতে লাগল, আর আমার আদেশ মানত না। তখন সত্যিই রাগ হত আর মনে হত যেন আমার সম্মানহানি হচ্ছে, তাই তাদের আমার কথা পালন করাতে নানারকম উপায় ভেবে বার করতাম। কিন্তু তখনও তারা কথা শুনত না। তখন মনে হল, আমি তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না, কিন্তু আমার পদমর্যাদার কথা ভেবে, সেই কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে বাধ্য করলাম। তখন মনে হল যে উচ্চপদে থেকে প্রচুর ক্ষমতাভোগের বিষয়টা যতটা ভেবেছিলাম তেমন আরামের ছিল না। সবসময় আমার অধীনস্থরা আমার কথামতো কাজ না করলেই শাসন করতাম, আর দিনকে দিন বেশি মেজাজ দেখাচ্ছিলাম। তাছাড়াও, আমার চিন্তা হত যে উপরের নেতারা বলবে, আমি প্রাইভেটদের সামলাতে পারি না, তারা হয়তো ভাববে আমার যোগ্যতা ছিল না। হয়তো আমি ক্যাপ্টেন হিসেবে আমার পদও হারাতে পারি। এটা খুব চাপের আর খুব ক্লান্তিকর ছিল। সত্যিই ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছিলাম, কিন্তু তারপর ভাবলাম ক্যাপ্টেন হতে কে না চায়, আর আমার এখানে আসার পথ সহজ ছিল না, তাই পদত্যাগ করাটা কি নিজের পায়ে কুড়ুল মারা হবে না? নিজেকে অসহায় লাগছিল, তাই শুধু চাপ সহ্য করে, চলছে-চলবে করে প্রতিদিনের কাজ করতাম।
2020 সালের আগস্টে, আমার সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ গ্রহণ করার সৌভাগ্য হয়েছিল। আমি প্রতিদিন ঈশ্বরের বাণী পড়তে শুরু করলাম আর ভ্রাতা-ভগিণীদের সাথে সমাবেশেও যোগ দিতাম। সত্যিই খুশি ভাল লাগছিল আর অনেক উপভোগও করছিলাম। একদিন, ঈশ্বরের বাণীর একটা অংশ পড়লাম। “শয়তান একটি অতীব সূক্ষ্ম পদ্ধতির প্রয়োগ করে, তা এমন এক পদ্ধতি যা মানুষের পূর্বধারণাগুলির সাথে মিলে যায়, যা বিন্দুমাত্র উগ্র নয়, যার মাধ্যমে মানুষকে দিয়ে তাদের অজ্ঞাতসারেই শয়তান নিজের জীবনযাপনের পদ্ধতি ও নিয়মগুলি গ্রহণ করায়, এবং তাদের জীবনের লক্ষ্য ও জীবনের পথনির্দেশ স্থাপন করে, এবং তা করতে গিয়ে তাদের অজান্তেই মানুষের জীবনে চলে আসে উচ্চাকাঙ্ক্ষা। জীবনের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলি যতই মহৎ বলে মনে হোক না কেন, তারা ‘খ্যাতি’ এবং ‘লাভ’ এর সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যে কোনও মহান অথবা যশস্বী ব্যক্তিত্ব—বস্তুত, সকল মানুষই—জীবনে যা অনুসরণ করে, তা শুধুমাত্র এই দুটি শব্দের সাথে সম্পর্কিত: ‘খ্যাতি’ এবং ‘লাভ’। মানুষ মনে করে যে একবার খ্যাতি ও লাভ অর্জন করলে তারপর তারা উচ্চ মর্যাদা ও বিপুল সম্পদ উপভোগ করার জন্য এবং জীবনকে উপভোগ করার জন্য সেগুলিকে মূলধন হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে। তারা মনে করে যে খ্যাতি এবং লাভ হল এক প্রকার মূলধন যা ভোগসুখের অন্বেষণ এবং উদ্দাম দৈহিক ভোগবিলাসময় জীবন অর্জন করার জন্য তারা ব্যবহার করতে পারবে। এই যে খ্যাতি এবং লাভ, যার জন্য মানবজাতি এত লুব্ধ, তা অর্জন করার উদ্দেশ্যে মানুষ স্বেচ্ছায়, যদিও অজ্ঞাতসারেই, তাদের দেহ, মন, তাদের যা কিছু আছে সব, তাদের ভবিষ্যত, এবং তাদের নিয়তি, শয়তানের হাতে তুলে দেয়। তারা এক মুহুর্তের দ্বিধা ছাড়াই তা করে, তারা যা যা হস্তান্তর করেছে সেসকল পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে তারা চির অজ্ঞ। এইভাবে একবার শয়তানের শরণ নিয়ে তার অনুগত হয়ে যাওয়ার পর, মানুষ কি নিজের ওপর আর কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে? একেবারেই না। তারা আদ্যোপান্তভাবে এবং সম্পূর্ণরূপে শয়তানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তারা সম্পূর্ণ এবং সম্পূর্ণভাবে একটা চোরাবালিতে ডুবে গেছে, এবং তারা নিজেদের মুক্ত করতে অক্ষম” (বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৬)। ঈশ্বরের বাণী আমাকে দেখিয়েছে যে মানুষের জীবন কত কষ্টকর আর চাপের, সেটা তারা যেভাবে জীবনযাপন করে আর ভুল পথে চলার যে সব সিদ্ধান্ত নেয় সেই কারণেই। শয়তানের মাধ্যমে ভ্রষ্ট হওয়ার পর, সবাই অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা করে। তারা ভাবে যে পদমর্যাদার সাথে ক্ষমতা এলে, তারা সম্মান আর প্রশংসা পাবে, লোকে তাদের কথা শুনবে আর তারা গৌরবের সাথে বাঁচবে। তাই সবাই নামডাক আর পদমর্যাদা ভালবাসে, পদমর্যাদার পিছনে ছোটে। আমিও এমনই ছিলাম। সেনায় যোগ দেওয়ার পর, আমি মহিলা সৈনিকদের মধ্যে এক নম্বর হতে আর অন্যদের প্রশংসা পেতে চেয়েছিলাম। সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে, আমি ধাপে ধাপে উপরে উঠেছিলাম, প্লাটুন লিডার, তারপর ক্যাপ্টেন হয়েছিলাম। সময়ের সাথে যখন আমার পদমর্যাদা বাড়ছিল আর আমি আরো বেশি লোকের তদারকি করছিলাম, তখন আমার কথাবার্তা আর আচরণ ছিল দাম্ভিকের মত, আর লোকেদের উপর কর্তৃত্ব জাহির করতে, তাদের বকাবকি করতে পছন্দ করতাম। আমি ঠিক বা ভুল যাই হই, প্রাইভেটদের আমার কথা শুনতেই হত। আমার অবস্থান দৃঢ় করতে, যখন সেইসব প্লাটুন লিডার আমার কথা শুনত না, তখন আমি নিজের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের দমিয়ে দিতাম, আর প্রাইভেটদের নানা ভাবে শাস্তি দিতাম। আমি সব সময় কর্তৃত্ব ফলাতাম আর অন্যদের প্রতি আমার কোনও সহানুভূতি ছিল না। প্রাইভেটরা ধীরে ধীরে আমার থেকে আরও দূরে সরে যায়, আর আমার সাথে যোগাযোগ করতে চাইত না। দেখলাম যে একটা পদমর্যাদা অর্জন করার পরে আমি কেমন ভয়ঙ্কর মানুষ হয়ে উঠেছিলাম। মাঝে মাঝে কারো সাথে মন খুলে কথা বলতে চাইতাম, কিন্তু তেমন কাউকে খুঁজে পেতাম না। এমন কেউ যার কাছে মনের কথা বলে, নিজের অপমান সহ্য করতে পারব আর নেতারাও আমাকে তিরস্কার করবে না। আমার জীবনের প্রত্যেকটা দিন চাপের আর কষ্টকর ছিল, সত্যিই পদত্যাগ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু যে মুহূর্তে মনে হত যে আমার এই পদমর্যাদা আমাকে কীভাবে উপকৃত করেছে, সেই মুহূর্তে আর ছাড়তে চাইনি। সেই নাম-যশের চক্রে ফেঁসে গিয়েছিলাম, যে জন্য ক্লান্তি আর কষ্ট বোধ করতাম। তখন বুঝলাম এটাও শয়তানের মানুষকে কলুষিত আর আঘাত করার একটা পদ্ধতি। মর্যাদার পিছনে ছুটলে মানুষের বন্য আকাঙ্ক্ষা তাকে আরও বেশি করে গ্রাস করে, তাই তারা আরো বেশি অহংকারী হয়ে যায় আর অন্যদের প্রতি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, তাই তারা স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে পারে না। আমার ধর্মবিশ্বাস পাওয়ার আগে, আমি সব সময় মনে করতাম যে পদমর্যাদার পিছনে ছোটা আর বাকিদের ছাড়িয়ে উপরে ওঠাই উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর পরিতৃপ্তি। এখন আমি বুঝি যে নামযশের পিছনে যাওয়া সঠিক পথ নয়। যখন আমি এসব বুঝতে পারলাম, তখন প্রার্থনা করে বললাম, ঈশ্বর যেন আমাকে নামযশের পিছুটান থেকে মুক্তির পথ দেখান।
তারপর একদিন, আমি স্তোত্র ডাউনলোড করার জন্য সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার ওয়েবসাইটে গেলাম, একটা নতুন জিনিস দেখলাম যার নাম “আমি ক্ষুদ্র সৃষ্ট সত্তা মাত্র”:
১ হে ঈশ্বর! আমার মর্যাদা থাকুক বা না থাকুক, আমি এখন নিজেকে বুঝি। আমার মর্যাদা যদি উচ্চ হয় তা তোমার উন্নতিসাধনের ফলেই হয়েছে, আর তা নিম্ন হলে, তা-ও তোমার আয়োজনেই হয়েছে। সবই তোমার হাতে। আমার না আছে কোনো পছন্দ, না কোনো অভিযোগ। তুমিই আয়োজন করেছিলে যে আমি এই দেশে, এই মানুষের মাঝে জন্ম নেব, আর আমাকে শুধুই তোমার আধিপত্যে সম্পূর্ণভাবে অনুগত হতে হবে, কারণ সমস্তকিছু তোমারই আয়োজনের অন্তর্ভুক্ত।
২ আমি মর্যাদার কথা চিন্তা করি না; সর্বোপরি, আমি একটা সৃষ্ট জীব ছাড়া তো কিছু নই। তুমি যদি আমাকে অতল গহ্বরে স্থান দাও, জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদে রাখো, তবুও আমি একজন সৃষ্ট জীব ছাড়া কিছুই নই। তুমি যদি আমাকে ব্যবহার করো, তবু আমি একজন সৃষ্ট জীব। তুমি যদি আমাকে নিখুঁত করে তোলো, আমি তবুও এক সৃষ্ট জীব। যদি তুমি আমাকে নিখুঁত করে না তোলো, তাহলেও আমি তোমাকে ভালোবাসব কারণ আমি একটি সৃষ্ট জীব ছাড়া আর কিছু নই।
৩ আমি সৃষ্টির প্রভুর দ্বারা সৃষ্ট একটি ক্ষুদ্র জীব ছাড়া আর কিছুই নই, সমস্ত সৃষ্ট মানুষের মধ্যে নিছকই একজন। যে আমাকে সৃষ্টি করেছিল সে-ও তুমি, এবং এখন তুমিই আমাকে আরও একবার নিজের হাতে স্থান দিয়েছ যাতে তোমার ইচ্ছায় আমাকে ব্যবহার করতে পারো। আমি তোমার সরঞ্জাম এবং তোমার ফয়েল হতে ইচ্ছুক, কারণ সবকিছু তুমিই নির্ধারিত করেছ। কেউই তা পরিবর্তন করতে পারে না। সমস্ত বস্তু এবং সমস্ত ঘটনাই তোমার হাতে।
—মেষশাবককে অনুসরণ করুন ও নতুন গীত গান
এই স্তোত্র শুনে আমার মনে হল স্তোত্রগুলো সত্যিই অভিনব। বুঝলাম যে পদমর্যাদা থাকবে কি থাকবে না, সে সবই ঈশ্বর ঠিক করেন, সবই তাঁর হাতে, আমার এসবের পিছনে ছোটা উচিত নয়। আমি ক্যাপ্টেন ছিলাম, কিন্তু ঈশ্বরের কাছে নগণ্য সৃষ্ট সত্ত্বা যার কোনো মর্যাদা নেই। আমার অন্যদেরকে চেপে রাখা উচিত নয়। আমি কীভাবে প্রাইভেটদের দমিয়ে রাখতাম সে কথা ভেবে সত্যিই অপরাধী আর বিচলিত বোধ করলাম। নিজের মর্যাদাবোধ ছেড়ে তাদের সাথে ভালোভাবে চলতে চেয়েছিলাম। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে তাঁকে সাহায্য করতে বললাম। ধীরে ধীরে, আমি অহংবোধ ছেড়ে তাদের সাথে সংযোগ স্থাপনে সক্ষম হলাম, আর তাদের উপর কর্তৃত্ব ফলিয়ে বকাবকি করা বন্ধ করলাম। যখন আমার বাস্তবজীবনে ঈশ্বরের বাণী প্রয়োগ করলাম, তখন খুব শান্তি পেয়েছিলাম।
তারপর একদিন সকালে আমাদের একটা মিটিং হল। আমার দায়িত্বে থাকা একজন প্লাটুন লিডার দেখতে পায়নি যে তার প্লাটুনের সবাই সেখানে আছে কিনা আর মাথাও গোনেনি। আমাদের ইসেটের লোকেদের আসতে আরেকটু হলেই দেরি হতে যাচ্ছিল আর সমস্ত ইসেটের মধ্যে তারাই সবচেয়ে ধীর ছিল। আমি এই ভেবে চিন্তিত ছিলাম যে ঊর্ধ্বতন নেতা হয়ত ভাববে যে আমার ব্যবস্থাপনা তেমন দক্ষ নয়, আর প্রাইভেটরা কী ভাববে সেই নিয়েও ভাবছিলাম। সেই মিটিঙের পর, তাকে বেশ রেগেই জিজ্ঞাসা করলাম, “তুমি এইমাত্র কোথায় ছিলে? বলে ছুটি নাওনি কেন? তোমার প্লাটুনে কেউ মাথা গোনেনি। তুমি আমাদের পুরো ইসেটের পথে বাধা হচ্ছ।” কিন্তু সে এসবের পরোয়া না করে আমার কথার উপর কথা বলতে শুরু করল। আমরা তর্ক শুরু করে দিলাম। তারপর ড্রিলমাস্টার এসে জিজ্ঞাসা করল আমরা তর্ক করছিলাম কেন। আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের পক্ষে ব্যাখ্যা দিলাম, আর ড্রিলমাস্টার বলল সে কী করবে বা কে ভুল করেছে তা বুঝতে পারছেন না। আমি এই কথা শুনে রেগে গিয়ে ভাবলাম সে শুধু আমার কথাই শুনছে না তাই নয়, উপরন্তু আমার কথার উপর কথা বলছে, তাহলে তার মানে কি এটাই না যে সেই ভুল করছিল? এছাড়াও, আমি তার ঊর্ধ্বতন ছিলাম বলে তার আমার কথা শোনা উচিত ছিল। এটা কি হাস্যকর ছিল না যে ড্রিলমাস্টার কে ঠিক আর কে ভুল সেটাই জানত না? আমি এতটাই ক্ষিপ্ত ছিলাম যে হনহন করে সেখান থেকে চলে এসে সজোরে দরজা বন্ধ করে দিলাম। ব্যারাকে ফিরে এলাম; মনে হচ্ছিল আমার প্রতি অন্যায় হয়েছে, চোখের জল আটকাতে পারিনি। কমান্ডার আমাদের তর্কের কথা জানতে পেরে প্লাটুন লিডারকে বলল, “সেসে তোমার ক্যাপ্টেন, তাই সেসে যা বলে তা-ই ঠিক আর তোমার ওর কথা শোনা উচিত।” যখন প্লাটুন লিডার নিজের হয়ে তর্ক করতে লাগল, তখন কমান্ডার রেগে তাকে ধমক দিল, “আমাদের কম্পানিতে, কোনটা কী, ক্যাপ্টেনের আপনাকে সেটা বলার অধিকার আছে আর তুমি যদি না শোনো তবে তুমি ভুল করছ।” কমান্ডারের কথা শুনে মনে হল যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমি সত্যিই খুশি হলাম আর মনে হল যে আমার কিছুটা মুখরক্ষা হয়েছে।
তবে একদিন আমার নিত্য প্রার্থনাপর্বে, ঈশ্বরের কয়েকটা বাণী পড়ে সেটা বুঝতে পারলাম। ঈশ্বরের বাণী বলে, “কোনো মানুষ যখন পদমর্যাদা লাভ করে, তখন মেজাজের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখাটা প্রায়শই তার পক্ষে দুরূহ হয়ে উঠবে, আর তাই সে নিজের অসন্তোষ ও আবেগ নির্গমনের সুযোগ পেলে তা লুফে নেওয়াকে উপভোগ করে; আপাতদৃষ্টিতে কোনো কারণ ছাড়াই প্রায়ই সে রেগে আগুন হয়ে উঠবে, এইভাবে সে তার সামর্থ্যকে দৃষ্টগোচর করে তুলবে এবং অন্যদের অবগত করবে যে পদমর্যাদা ও পরিচিতিতে সে সাধারণ মানুষদের থেকে স্বতন্ত্র। অবশ্য কোনো পদমর্যাদাহীন ভ্রষ্ট লোকেরাও মাঝেমাঝেই মেজাজ হারিয়ে ফেলে। প্রায়শই তাদের রাগের কারণ হয় তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের হানি। তাদের আপন মর্যাদা ও সম্ভ্রম রক্ষা করতে তারা তাদের আবেগের দ্বার উন্মুক্ত করে দেবে ও তাদের উদ্ধত প্রকৃতিকে প্রকাশ করবে। পাপের অস্তিত্বকে রক্ষা করতে বা তাকে সমর্থন করতে মানুষ রাগে জ্বলে উঠবে ও তার আবেগ অবারিত করে দেবে, এবং এই ক্রিয়াকলাপগুলি মানুষের অসন্তুষ্টি প্রকাশের পদ্ধতি; তারা অশুচিতায় পরিপূর্ণ, অভিসন্ধি ও চক্রান্তে কানায় কানায় পরিপূর্ণ, মানুষের কলুষ ও পাপে ভরভরন্ত, এবং সর্বোপরি, মানুষের বন্য উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বাসনা তাদের মধ্যে উপচে পড়ছে। … মানুষের রাগের উদ্গিরণ হল দুষ্ট শক্তিগুলির নির্গমন পথ, লৌকিক মানুষের অবাধ ও অরোধ্য পাপাচারের এক অভিব্যক্তি” (বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ২)। “শয়তানের স্বভাবের মধ্যে অনেক ধরনেরই ভ্রষ্ট স্বভাব অন্তর্ভুক্ত থাকে, কিন্তু তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুস্পষ্ট এবং লক্ষণীয় হল এক উদ্ধত স্বভাব। ঔদ্ধত্যই মানুষের ভ্রষ্ট স্বভাবের মূল। মানুষ যত উদ্ধত হয়, তত যুক্তিহীন হয়, আর সে যত যুক্তিহীন হয়, ততই সে হয়ে ঈশ্বরের প্রতি প্রতিরোধপ্রবণ। এই সমস্যা কতটা গুরুতর? উদ্ধত স্বভাবের মানুষ যে কেবল বাকি সবাইকে হেয় ভাবে তাই নয়, বরং আরও খারাপ বিষয় হল, তারা ঈশ্বরের প্রতি দাম্ভিক মনোভাব পোষণ করে এবং তাদের অন্তরে ঈশ্বর সম্পর্কে কোনো ভীতি থাকে না। মানুষ ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে, তাঁকে অনুসরণ করে বলে মনে হলেও, তারা তাঁর সাথে একেবারেই ঈশ্বরের উপযুক্ত আচরণ করে না। তারা সর্বদা মনে করে যে তারাই সত্যের অধিকারী এবং নিজেদের সম্পর্কে উঁচু ধারণা পোষণ করে। এই হল তাদের উদ্ধত স্বভাবের সারসত্য এবং মূল, আর এটা শয়তানের থেকেই আসে। অতএব, এই ঔদ্ধত্যের সমস্যার অবশ্যই সমাধান করতে হবে। একজন অপরজনের থেকে ভালো-এটা ভাবা একটা সাধারণ বিষয়। গুরুতর সমস্যা হল এই যে, কারোর উদ্ধত স্বভাব তাকে ঈশ্বরের কাছে, তাঁর সার্বভৌমত্ব এবং আয়োজনের কাছে সমর্পণের ক্ষেত্রে বাধা দেয়; এই ধরনের ব্যক্তি সর্বদা অপরের উপর ক্ষমতা বিস্তারের জন্য ঈশ্বরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মনোভাব পোষণ করে। এই ধরণের মানুষ ঈশ্বরকে সামান্যতম সম্মানও করে না, ঈশ্বরকে ভালোবাসা বা তাঁর কাছে সমর্পণ করা তো দূরের কথা। যারা উদ্ধত এবং দাম্ভিক, বিশেষ করে যারা অহংকারে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে, তারা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসের ক্ষেত্রে নিজেকে সমর্পণ করতে পারে না, এমনকি নিজেদের উন্নত করা বা সাক্ষ্যদানটুকুও করতে পারে না। এই ধরনের লোকেরা ঈশ্বরকে সবচেয়ে বেশি প্রতিরোধ করে এবং তাদের মধ্যে কোনোরকম ঈশ্বরভীতি থাকে না” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। ঈশ্বরের বাণী একেবারে স্পষ্ট। মানুষ পদমর্যাদা নিয়ে অহংকারী হয়ে ওঠে আর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তারা প্রায়ই তাদের মুখ আর পদমর্যাদা রক্ষা করতে, আর তাদের কর্তৃত্ব প্রদর্শনের জন্য মেজাজ দেখায় আর লোকেদের বকাবকি করে। অহংকারী স্বভাবের বশে থাকলে এমনই হয়। যখন আমি সৈনবাহিনীতে যোগদান করি, তখন একজন অফিসার হওয়া আর অন্যদের সম্মান অর্জন করাই আমার লক্ষ্য ছিল। পদমর্যাদা আর ক্ষমতা পাওয়ার পর, মনে হত যে আমার কথার মধ্যে কর্তৃত্ব আছে, আমি অগ্রাধিকার পেতাম। আমি ক্যাপ্টেন ছিলাম, তাই আমার প্লাটুন লিডার আর প্রাইভেটদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ছিল। তাদের আমার কথা শোনা উচিত, আর তারা না শুনলেই আমি তাদের কর্তৃত্ব দেখিয়ে বকাবকি করে বুঝিয়ে দিতাম তাদের জায়গা কোথায়। খুব অহংকারী ছিলাম। যখন প্লাটুন লিডার সময়মতো মাথা না গুনে আমাদের ইসেটের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তখন তাকে বেশ করে কথা শুনিয়ে ছিলাম, আর সে আমার কথা তো শোনেইনি, উপরন্তু আমাকে বাধা দিয়েছিল। আমার মনে হয়েছিল সে আমাকে তেমন কিছু মনেই করে না, আমাকে নিচু নজরে দেখে আর সবার সামনে আমার সম্মানহানি করে। আমি এটাকে অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করে বাড়াবাড়ি করি, যাতে তার উপর দোষ পড়ে আর আমার অসন্তোষের একটা সুরাহা হয়। এটা প্রাইভেটদের সতর্ক করার জন্যও ছিল যে তাদের বাধ্য থাকা দরকার। আমার দৃষ্টিভঙ্গীতে, আমি ক্যাপ্টেন ছিলাম আর সে একজন প্লাটুন লীডার, তাই ওর আমার কথা শোনা উচিত। না শুনলে, এমনকি আমার বিরোধিতা করলে, আমাকে তো তাকে বকতেই হবে আর তাকে কোনটা কী সেটা দেখাতেই হবে। এতটাই অহংকারী আর নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিলাম। পদমর্যাদা পাওয়ার পর, কেউ আমার কথা না শুনলেই তাদের উপর চটে যেতাম, আমার পদকে কাজে লাগিয়ে তাদের দমিয়ে রাখতাম আর আমি যা চাই তাই করতে বাধ্য করতাম। ফলে কেউ আমার ব্যাপারে জড়িত থাকতে চাইত না। আমি ধর্মবিশ্বাসী ছিলাম, কিন্তু নিজেকে বদলাইনি। যুক্তির তোয়াক্কা করতাম না, অহংকারী ছিলাম আর মানুষের মতোই ছিলাম না, তাই লোকেরা আমাকে খুব ঘৃণা করত আর এড়িয়ে চলত, ঈশ্বরও আমার উপর বিরক্ত ছিলেন আর আমায় ঘৃণা করতেন।
আমি এক ভগিনীকে আমার অভিজ্ঞতার কথা বললাম, আর সে আমাকে ঈশ্বরের বাণীর একটা অংশ পাঠাল যেটা আমাকে কর্তব্যের পথ দেখাল। “জীবকুলের এক সদস্য হিসাবে, মানুষকে অবশ্যই তার নিজ অবস্থান ধরে রাখতে হবে, আর সচেতনভাবে আচরণ করতে হবে। ঈশ্বর তোমার উপর যা যা অর্পণ করেছেন, তা কর্তব্যের সাথে রক্ষা কর। কোনো অনুপযুক্ত কাজ কোরো না, কিংবা এমন কিছু কোরো না যা তোমার ক্ষমতার আয়ত্তের বাইরে অথবা যা ঈশ্বরের কাছে ঘৃণ্য। মহান হওয়ার, কিংবা অতিমানব হয়ে ওঠার, অথবা অন্যদের ঊর্ধ্বে ওঠার চেষ্টা কোরো না, ঈশ্বর হয়ে উঠতেও চেয়ো না। মানুষের এরকম কামনা করা উচিত নয়। মহান কিংবা অতিমানব হয়ে উঠতে চাওয়াটা অযৌক্তিক। ঈশ্বর হয়ে উঠতে চাওয়াটা তো আরোই লজ্জাজনক; এটি ন্যক্কারজনক, আর জঘন্য। যেটা প্রশংসনীয়, আর জীবকুলের অন্য কোনো কিছুর তুলনায় যা বেশি করে ধরে রাখা উচিত, তা হল, প্রকৃত জীব হয়ে ওঠা; এ-ই হল একমাত্র লক্ষ্য যা সকল মানুষের অনুসরণ করা উচিত” (বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ১)। ঈশ্বরের বাণী পড়ে বুঝতে পারলাম যে মানুষের প্রশংসা আর সম্মান পেতে উচ্চকোটির হওয়ার চেষ্টা করা লজ্জার বিষয়। আমাদের নিজেদের জায়গায় থেকেই বিবেকবান আচরণ করা উচিত। আমাদের থেকে এটাই তো ঈশ্বর চান। আমি ক্ষমতাসম্পন্ন অফিসার হওয়ার তাড়নায় এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম, অন্যদের উপর প্রভুত্ব করতে, প্রশংসিত হতে, আর অন্যদের আমার কথা মানাতে চেয়েছিলাম। ঈশ্বরের এটা মোটেও পছন্দ নয়। যদি আমি অনুতপ্ত না হয়ে নাম-যশের পিছনে ছুটেই যেতাম, তাহলে ঠিক অবিশ্বাসীদের মতই হতাম। অবিশ্বাসীরা টাকা, সুনাম আর পদমর্যাদার পিছনে ছোটে। এসব নিয়ে তারা একে অপরের সাথে খুনোখুনি-মারামারি করে। ধর্মবিশ্বাসী হিসাবে, আমার অবিশ্বাসীর পথে থাকা উচিত নয়। সৃষ্ট সত্তা হিসাবে আমার সত্য খোঁজা আর নিজের স্থান গ্রহণ করা উচিত। এটা বুঝতে পেরে আমি ঠিক করলাম যে আমি সত্য খুঁজতে আর আমার দৈনন্দিন জীবনে ঈশ্বরের বাণী অনুযায়ী কাজ করতে প্রস্তুত। আমার অন্যদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলা উচিত আর ক্যাপ্টেন হিসাবে অন্যদের আদেশ দেওয়া বন্ধ করা উচিত। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, “হে ঈশ্বর, আমি নামযশের পিছনে ছোটা বন্ধ করতে চাই আর আমার অহংকারী স্বভাবও রাখতে চাই না। দয়া করে আমাকে সত্য পালনের পথ দেখান।”
এরপর, আমি প্রতিদিন তাদের খোঁজখবর নিতে আর তাদের ভালমন্দ নিয়ে চিন্তা দেখাতে শুরু করলাম। যখন তারা ভুল করত আর নেতা চাইত যে আমি তাদের শাসন করি, তখন আর আগের মত কিছু করিনি, তাদের বকাবকি করা আর আমার মর্যাদা বজায় রাখার জন্য আমার কর্তৃত্ব জাহির করা, এসব না করে তাদের সঙ্গে কথা বলতাম, তাদের কোথায় ভুল ছিল সেটা তাদের বলে পরের বার আরও ভালো করার সুযোগ দিতাম। এভাবে কিছু সময় চালানোর পর, স্কোয়াড লিডার, প্লাটুন লিডার আর প্রাইভেটদের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠল। কিছু প্রাইভেট আমাকে বলল যে আমি উদ্ভট মেজাজের ছিলাম, আর তারা আমাকে ভয় পেত, সবসময় ভাবত, এই আমি তাদের ভুলের জন্য বকাবকি করব। কিন্তু এখন আমি অনেক ভালো হয়ে গেছি আর তাদের যত্ন নিতে শুরু করেছি। আমার সাথে কথা বলে তাদের ভাল লাগত। একথা শুনে আমি ঈশ্বর ধন্যবাদ দিলাম আর তাদের বললাম, “তোমরা কি জানো কেন এই পরিবর্তন আনলাম? কারণ আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ গ্রহণ করেছি। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী আমাকে বদলে দিয়েছে, শুধু এই কারণেই আমার মধ্যে এই পরিবর্তন এসেছে। ঈশ্বরের কাছে আসার আগে, আমি মর্যাদা আর অন্যদের প্রশংসা পাওয়ার পিছনে ছুটেছি। সবসময় আমার পদ বজায় রাখার জন্য তোমাদের বকেছি। আমার ধর্মবিশ্বাস পাওয়ার পর, আর সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী পড়ার মাধ্যমে, আমি শিখেছি যে উদ্ধতভাবে লোকেদের বকাবকি করা ঠিক নয়, এটা ভ্রষ্ট স্বভাব থেকে আসে, আর আমার তা করা উচিত নয়। আমার মধ্যে এই যে পরিবর্তন এসেছে তা আমি নিজে থেকে করতে পারতাম না। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রতি আমার বিশ্বাসের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে-তাঁর বাণীই আমাকে বদলে দিয়েছে।” তাদের বিশ্বাসই হচ্ছিল না। আমি তাদের কাছে সুসমাচার প্রচার করতে থাকলাম, আর কিছু প্রাইভেটদের মুখে হাসি ফুটে উঠল। তারা অন্তিম সময়ের ঈশ্বরের কাজ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হল। তারপর, কয়েকজন প্লাটুন লিডার, স্কোয়াড লীডার আর প্রাইভেটরা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ গ্রহণ করেছিল। আমরা একসাথে সমবেত হতাম, ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পান করতাম, একসঙ্গে খুব ভালো সময় কাটাচ্ছিলাম, সুসমাচার প্রচার করছিলাম আর সাক্ষ্য দিচ্ছিলাম। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।