আমি প্রভুর প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছি
চার প্রজন্ম ধরে আমার পরিবার ক্যাথলিক, এবং সত্তরের দশকের শেষের দিকে আমার পরিবার একটি সমাবেশ স্থল প্রতিষ্ঠা করে। সেই সময়, আমার বাবা ও কাকা উভয়েই গির্জার ডিন হিসেবে কাজ করত। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র দিনের আগে, আমার পরিবার আমাকে বাইকে বসিয়ে ২০ মাইল দূরে একটি জায়গায় পবিত্র দিন উদযাপন করতে নিয়ে যেত। আমার মনে আছে পুরোহিতমাস পরিচালনার সময় বলত যে অন্তিম সময় ইতিমধ্যেই এসে গেছে। এবং আমাদের সদা সতর্ক থাকতে হবে, আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ রাখতে হবে ও বড়ো কোনো পাপ করা চলবে না, কারণ প্রভু যে কোনো মুহূর্তে মেঘারূঢ় হয়ে এসে আমাদের স্বর্গে নিয়ে যাবেন। সে সময়, সব প্যারিশবাসী, যুবাই হোক বা বৃদ্ধ, উদ্দীপনায় উজ্জ্বল ছিল, স্তব বলত, মাসে উপস্থিত থাকত এবং ভালো কাজ করত, শুধু ঈশ্বরের প্রত্যাবর্তনের আকাঙ্খায়।
আমার বাবা ও কাকা উভয়েই ৯০-এর শুরুর দিকে মারা যায় এবং আমি ডিন হই। আমি প্যারিশবাসীদের শাস্ত্রপাঠে ও সেবাকার্যে পথনির্দেশ দিতাম এবং ধর্মোপদেশ দিতাম। তারপর ১৯৯৯-এর বসন্তে, আমাদের পুরোহিত আমাকে হংকং-এর একটি সুসমাচারের লিফলেট দেন এবং বলে প্রভুর আগমন আসন্ন এই সংবাদ দিয়ে সকলকে সক্রিয় করে তুলতে। আমি প্রত্যেকের জন্য সাধারণ সমাবেশের আয়োজন করতে তৎপর হলাম, এবং তাদের প্রার্থনা করতে ও দিনে তিনবার শাস্ত্রপাঠ করতে বললাম। আমি তাদের বাইবেলের ব্যাখ্যায় উল্লিখিত প্রভুর আগমনের চিহ্নগুলি সম্পর্কেও বললাম। বললাম, “বিশ্বাসী বন্ধুরা, প্রভুর প্রত্যাবর্তন সমাসন্ন। ইতিমধ্যেই তিনি এপারে পদক্ষেপ করেছেন এবং শীঘ্রই আমাদের সামনে উপস্থিত হবেন। প্রভু যীশু বলেছেন, ‘এবং তারপর স্বর্গে মনুষ্য পুত্রের চিহ্ন দেখা যাবে: তখন পৃথিবীর সমস্ত জাতি বিলাপ করবে: এবং তারা আকাশের মেঘমালার মধ্যে অপার শক্তি ও মহিমা সমন্বিত মনুষ্য পুত্রের আগমন প্রত্যক্ষ করবে’ (মথি ২৪:৩০)। আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রভুর আসার সময় আকাশে এক মহান চিহ্ন দেখা যাবে। আমরা নিজেদের চোখে দেখব প্রভু তাঁর গৌরব ও রাজকীয়তা নিয়ে মেঘে অবতীর্ণ হচ্ছেন, আমাদের স্বর্গে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। ২০০০ সাল আসতে আর মাত্র কয়েক মাস দেরী। আমরা অবিশ্বাসী বন্ধু, আত্মীয় ও পরিচিতদের সঙ্গে সুসমাচার ভাগ করে নেওয়ায় আর বিলম্ব করতে পারি না। অধিকতর আত্মাকে রক্ষা করা প্রভুর চোখেআমাদের বড়ো কৃতিত্বের পরিচয় হবে।” এ কথা শুনে সকলে আলোড়িত হল, এবং সবাই উত্তেজিতভাবে আলোচনা করতে লাগল। কেউ কেউ বলল, “হ্যাঁ, আর কয়েক মাসেই ২০০০ সাল এসে পড়বে। প্রভুর প্রত্যাবর্তন আসন্ন! আমাদের আরও শাস্ত্রপাঠ করতে হবে এবং পার্থিব আকাঙ্খা ছাড়তে হবে।” আর কেউ বলল, “আমাকে এখনই বন্ধু ও আত্মীয়দের সঙ্গে সুসমাচার ভাগ করে নিতে হবে যাতে তাদের আত্মা রক্ষা করা যায় এবং তারা স্বর্গে যায়।”
দেখতে দেখতে নভেম্বর এসে গেল, এবং আমি লক্ষ করলাম আমার স্ত্রী স্বভাবতযেমন তার চেয়ে একটু অন্যরকম আচর করছে। সে রোজ রাতে নৈশভোজের পর আমাদের গ্রামে ভগিনী তিয়ান শিয়াও-এর বাড়ি যেত শাস্ত্রপাঠের জন্য, বেশ কিছুদিন সে আমার সাথে সান্ধ্য প্রার্থনা করেনি। আমি একটু বিভ্রান্ত হয়েছিলাম, সে কি অন্য কোনো বিশ্বাসে ধর্মান্তরিত হল? এক বিকেলে, আমার স্ত্রী বাড়ি ফিরে আমাকে একটা প্রশ্ন করল। সে বলল, “আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বাসী। তুমি কি প্রভুর প্রত্যাবর্তনের আশা করছ?” আমি নির্দ্বিধায় বললাম, “এ কি জিজ্ঞাসা করতে হবে? অবশঅযাই করছি!” তখন সে খুবই আন্তরিকভাবে বলল, “তোমার জন্য আমার কাছে ভালো খবর আছে। প্রভু আবার দেহরূপধরণ করেছেন এবং প্রত্যাবর্তন করেছেন, এবং প্রত্যাদেশে উল্লিখিত পুঁথি খুলেছেন।” আমি তড়িতাহত বোধ করলাম। আমি কড়া স্বরে বললাম, “কী যা তা বলছ? প্রত্যাবর্তনের সময় প্রভু অবশ্যই মেঘারূঢ় হয়ে আসবেন। তাঁর দেহরূপে আসার প্রশ্নই ওঠে না!” তারপর আমার স্ত্রী বলল, “তুমি এর অনুসন্ধানই করনি। কী করে তুমি অন্ধভাবে ঠিক করে নিলে তিনি দেহধারণ করবেন না? আমাদের এত বছরের বিশ্বাসে আমরা কি প্রভুর প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানানোর আশা পোষণ করিনি? তোমার ধারণার ভিত্তিতে অন্ধভাবে অনুমান করে তুমি উন্নীত হওয়ার সুযোগ হারাতে চলেছ। আমার মনে হয় তোমার শান্ত হয়ে প্রকৃত অনুসন্ধান করা উচিত।” কিন্তু তার কোনো কথাতেই আমি কান দিলাম না। আমার উদ্বেগ ছিল সে বিপথগামী হয়েছে, তাই আমি তাকে দ্বিতীয় আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কে বললাম, বললাম, “প্রভু যীশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়া ও পুনরুথ্থিত হওয়ার পর, তিনি আত্মারূপে স্বর্গগমন করেন। যখন তিনি ফিরবেন, তিনি মেঘসহকারে গৌরবমণ্ডিত হয়ে আত্মারূপে ফিরবেন। কী করে তিনি দেহরূপে ফিরতে পারেন? বাইবেল বলছে, ‘দেখো, মেঘে আসীন হয়ে তাঁর আগমন হবে, প্রত্যেকটি চোখ তাঁকে দর্শন করবে’ (প্রকাশিত বাক্য ১:৭)। ‘আর সেই দিনগুলির মহাক্লেশের অনতিবিলম্বেই, সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে, চাঁদও আলো দেবে না, আকাশ থেকে নক্ষত্ররাজীর পতন ঘটবে এবং আকাশের শক্তিগুলিও সরে যাবে: এবং তারপর স্বর্গে মনুষ্য পুত্রের চিহ্ন দেখা যাবে: তখন পৃথিবীর সমস্ত জাতি বিলাপ করবে: এবং তারা আকাশের মেঘমালার মধ্যে অপার শক্তি ও মহিমা সমন্বিত মনুষ্য পুত্রের আগমন প্রত্যক্ষ করবে’ (মথি ২৪:২৯-৩০)। এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যখন তিনি আসবেন সূর্য অন্ধকার হবে ও চন্দ্র তার আলো হারাবে। তারাগুলি আকাশ থেকে খসে পড়বে এবং প্রভু মেঘারূঢ় হয়ে আসবেন। কিন্তু এরকম কোনো চিহ্নই আদৌ দেখা যায়নি। কী করে তুমি বলছ তিনি এসে গেছেন?” সে আমার কথা শুনে শান্তভাবে জবাব দিল, “প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণীগুলি রহস্যমণ্ডিত। আমরা যদি তারআক্। রিকব্যআখঅযাকরি, আমাদের ধারণা ও কল্পনারভিত্তিতে, আমাদের তাঁর বাণী ভুল বোঝার সম্ভাবনাই বেশী। ফরিশীদের কথা ভাবো। তারা আক্ষরিক অর্থ ও তাদের ধারণার ভিত্তিতে শাস্ত্রের ব্যাখ্যা করেছিল, এই ভেবে যে মশীহ রাজপ্রাসাদে জন্মাবেন ও ক্ষমতাবানহবেন, কিন্তু প্রভু যীশু প্রাসাদে জন্মাননি। তিনি ছুতোরের সন্তান হয়ে এক গামলায়জন্মেছিলেন, এবং কোনোক্রমেইশাসক ছিলেন না। ফরিশীরা দেখল যীশুর জন্ম ও কাজ তাদের ধারণার সঙ্গে আদৌ সঙ্গত নয়, তাই তারাসম্পূর্ণরূপে তাঁর মশীহরূপে আসার কথা খারিজ করে দিল, এবং তারা তাঁর বিরোধীতা ও নিন্দা করল। আমরা ফরিশীদের মতো একই ভুল করতে পারি না!” তার কথা শুনে আমি এই ভেবে বিরক্ত হলাম যে আমি গির্জার ডিন ছিলাম এবং তার থেকে বেশি শিক্ষিত ছিলাম, কিন্তু সে আমার কথা অগ্রাহ্য করছে, এমনকি বলছে যে আমি প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণীর ভুল ব্যাখ্যা করছি। আমার মুখ কালো হয়ে গেল এবং আমি রেগে গিয়ে তাকে বললাম, “আমি তোমাকে বারবার বলেছি কিন্তু তুমি শুনবে না। তুমি সত্যিই বশীভূত হয়ে আছ! তোমাকে ওই সমাবেশগুলোয় যাওয়া বন্ধ করতে হবে।” কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, সে দৃঢ়ভাবে বলল, “আমি যা অনুসন্ধান করেছি ও প্রভুর প্রত্যাবর্তনে আমার বিশ্বাস স্পষ্ট। তুমি যদি বিশ্বাস না কর, সে তোমার ব্যাপার, কিন্তু আমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িও না।” সে যখন তা বলল আমি প্রচণ্ড রেগে গেলাম। তাকে রক্ষা করার চেষ্টায়, আমি আরও কিছু গির্জার ডিনকে দিয়ে তাকে থামানোর চেষ্টা করলাম। একজন ডিন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাকে বলল, “আমরা দুজনেই বহুদিনের ক্যাথলিকবংশে জন্মেছি এবং জানি যে এটিই একমাত্র ঠিক ধর্ম। খ্রীষ্টধর্ম ক্যআথলিক গির্জার একটি বিভাজন থেকে এসেছে। যখন প্রভু ফিরবেন, অন্য সব বিশ্বাসগুলিক্যাথলিকবাদে ফিরে আসবে। একে খ্রীষ্টান সমাজের ঐক্য বলা হয়। তুমি এটা তো জানো, তাই না?” আমার স্ত্রীকে এ কথা বলতে শুনে অবাক হলাম, “প্রভু যখন ফিরবেন তখন সব বিশ্বাসের ক্যাথলিক গির্জায় ফিরে আসার কোনো ভিত্তি আছে? প্রভু যীশু কি এ কথা বলেছেন? খ্রীষ্টান ও প্রাচ্যের অর্থোডক্স গির্জারা কি ক্যাথলিক গির্জার সঙ্গে মিলতে চায়? বাইবেল বহু আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, ‘আর অন্তিম সময়ে, প্রভুর ভবনের পর্বত প্রস্তুত হবে পর্বতের শীর্ষে, আর সেই পর্বত হবে সমস্ত পাহাড়ের উচ্চ, আর সমস্ত জাতি স্রোতের মতো তার দিকে ধাবিত হবে’ (যিশাইয় ২:২)। এখানে পর্বতমালা বলতে বিভিন্ন বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে। যখন প্রভু ফিরবেন এবং পুনরৈক্যের কাজ করবেন, তা খ্রীষ্টধর্মের ক্যাথলিকবাদে ফেরা বা তার উল্টোটা হবে না, বরং সব বিশ্বাস থেকে প্রকৃত বিশ্বাসীরা ঈশ্বরের সিংহাসনের সামনে আসবে। এভাবে সব বিশ্বাস এক হয়ে প্রভুর ন্যায়পরায়ণতা প্রত্যক্ষ হবে এবং সব মানুষ সম্পূর্ণ নিশ্চিত হবে।” যখন আমি তাকে এ কথা বলতে শুনলাম, এ সবই আমার কাছে নতুন ও প্রদীপ্তিময় মনে হল, এবং এক মুহূর্তের জন্য আমি সত্যিই কী বলব বুঝলাম না। দেখলাম অন্য দুই ডিনও চুপ করে আছে, এবং তাদের একজন শুধু জোর দিয়ে বলল, “তুমি এক প্যারিশবাসী মাত্র—তোমার মনে হয় তুমি পুরোহিতের থেকে বেশি জানো? যা-ই হোক, সময় যখন আসবে সবাই ক্যাথলিকবাদে ফিরবে। যারা ক্যাথলিক ধর্মের প্রতি বিমুখ তারা ঈশ্বরে বিশ্বাসঘাতকতা করছে, এবং তাদের আত্মা স্বর্গে যাবে না। তোমরা বিপথগামী হয়েছ। আমি তোমাদের এই মুহূর্তে স্বীকারোক্তি করতে বলছি। এখনও ফেরার জন্য খুব দেরী হয়নি।” সে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে জবাব দিল, “আমি বিপথগামী হইনি। আমি গির্জার প্রতি পবিত্র আত্মার বাণী শুনেছি এবং মেষশাবকের পদচিহ্ন অনুসরণ করছি। আমি ঈশ্বরের নতুন কাজ স্বীকারকরেছি। আমি এই পথে থাকছি আর কেউ আমাকে থামাতে পারবে না।” আমি সেই দুই ডিনকে তাকে কিছু উপদেশ দেওয়ার জন্য আনিয়েছিলাম, কিন্তু আমিভাবিনিযেশুধু তারা তাকে রাজি করাতে পারবে না না তা-ই নয়, উপরন্তু, তার যুক্তিও তারা খণ্ডন করতে পারবে না। তারপর, আমার স্ত্রীর বিশ্বাস দৃঢ়তর হল। সে বলল যে শুরুতে সে আমার জন্য কিছুটা আড়ষ্ট বোধ করেছিল এবং কিছু চিন্তা ছিল, কিন্তু যখন ডিনরা বাধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল সে স্পষ্টত দেখল তারা সত্য বোঝে না, তারা অত্যন্ত উদ্ধত ছিল, এবং বিনীতভাবে সন্ধান করতে চায় না। তাই সে বন্ধনমুক্তবোধ করল এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অনুসরণে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হল। সে প্রতিদিন সমাবেশে যাওয়া শুরু করল।
আমাকে যা বিভ্রান্ত করছিল তা হল সে খুব শিক্ষিত ছিল না, এবং বাইবেল খুব ভালো জানত না, তাহলে সেই দুই ডিন তার সঙ্গে তর্কে পরাভূত হল কেন? সে কী ধরণের ধর্মোপদেশ শুনছিল যা এত অবিশ্বাস্য ছিল? আমি মন দিয়ে সে যা বলল তা ভাবলাম এবং অনুভব করলাম এতে কিছু একটা আছে। সে যা বিশ্বাস করে তা কি সত্যিই পবিত্র আত্মার থেকে আসছে? আমার মনে হল তা সম্ভব নয়। যদি তা আসে, তাহলে পুরোহিতদের এ বিষয়ে সব জানা উচিত, তারা এর উল্লেখ করেনি কেন? আমি আমার শ্যালকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলাম। সে-ও গির্জার ডিন ছিল। কিন্তু আমি যা বলার ছিলতা শেষ করার আগেই, সে রেগে আমাকে বাধা দিয়ে বলল, “প্রভুর দেহরূপে ফেরা অসম্ভব! পূর্বের বজ্রালোক বলে একটি গির্জা আছে। তারা বলে প্রভু দেহরূপে ফিরেছেন এবং তাঁর নাম সর্বশক্তিমান ঈশ্বর। তাদের শিক্ষণ খুবই উন্নত এবং তারা আমাদের বহু নিবেদিত বিশ্বাসীদেরচুরি করে নিয়েছে। শুধু আমাদের গির্জা থেকেই ডজনখানেকের বেশি বিপথগামী হয়েছে, এমনকী একজন পুরোহিতঅবধি। আমরা যা-ই করি, তারা আর ফিরবে না।” এবং সে আমাকে নির্দিষ্ট করে বলল যা-ই ঘটে যাক তাদের প্রচার যেন না শুনি। তখনই আমি বুঝলাম আমার স্ত্রী পূর্বের বজ্রালোকের ধর্মোপদেশ শুনছে। আমার শ্যালকের বাড়ি থেকে আমি সোজা অন্য এক ডিনের বাড়ি গেলাম এবং তাকে বললাম অন্য প্যারিশবাসীদের পূর্বের বজ্রালোক থেকে দূরে থকার কথা বলতে। বাড়ি ফেরার পথে, আমি শ্যালক যা বলল তা ভাবতে শুরু করলাম। আমার বেশ কৌতুহল হচ্ছিল এবং এ বিষয়ে বেশপ্রতিবাদী বোধ করছিলাম। আমার জানতে ইচ্ছে হল পূর্বের বজ্রালোকের বক্তব্য। কেন এত বিশ্বাসী তাদের সঙ্গে সামিল হল? তাদের ধর্মোপদেশ যতই ভালো হোক, তা কি আমাদের ক্যাথলিক প্রচারের থেকও ভালো হতে পারে? সুযোগ পেলে আমার তারা আসলে কী প্রচার করছে তা জানার ইচ্ছে হল।
আমি আরও বেশি বাইবেল পড়তে লাগলাম যাতে আমি পূর্বের বজ্রালোকের সবার যুক্তি খণ্ডন করতে আরও সক্ষম হই। আমি প্রভুর প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ভবিষ্যদ্বাণীগুলি তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম, এবং এটা পেলাম: “আমার মেষ আমার কন্ঠস্বর শ্রবণ করে: আমি তাদের চিনি আর তারা আমাকে অনুসরণ করবে” (যোহন ১০:২৭)। এটা পড়তে পড়তে আমি ভাবছিলাম তাদের প্রচার শুনে কত নিবেদিতপ্রাণ বিশ্বাসী পূর্বের বজ্রালোক গ্রহণ করেছে, এবং ফিরতে অসম্মত হয়েছে। এটা বেশ অর্থপূর্ণ ছিল! তারা দীর্ঘদিনের ক্যাথলিক ছিল এবং বিশ্বাসের ভিত্তিও বেশ দৃঢ় ছিল। পূর্বের বজ্রালোকের অনুসরণ করার আগে তারা নিশ্চয়ই অনুসন্ধান করেছে। আমার মনে হল তারা যে বই পড়েছে তাতে হয়ত সত্য আছে, হয়ত তা ঈশ্বরের কণ্ঠ। আর যদি আমি তা না দেখি, কী করে জানব তা সত্যিই ঈশ্বরের থেকে এসেছে কিনা? পরে, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ব্যাপারটা খতিয়ে দেখার, আর যদি তাতে সত্য থাকে ও তা বাইবেলসম্মত হয়, আমি অনুসন্ধান চালিয়ে যাব। যদি তা ক্যাথলিক বিশ্বাসের পরিপন্থী হয়, আমি এখনও তা বর্জন করতে পারি।
এক সকালে প্রাতরাশের ঠিক পরেই যখন আমি আশেপাশে কোথাও আমার স্ত্রীকে দেখতে পেলাম না, আমি জানতাম সে আবার তিয়ান শিয়াও বাড়ি গেছে। আমি মনে মনে ভাবলাম প্রতিদিন যখন সে সমাবেশে যাচ্ছে তা নিশ্চয়ই অত্যন্ত আকর্ষণীয়! আমি দেখতে চাইছিলাম তারা আসলে কী বলছে। আমি যখন তিয়ান শিয়াও বাড়ী গেলাম, আমি শুধু অন্যকিছুপ্যারিশবাসীকেদেখলাম তা-ই নয়, ভ্রাতা ওয়্যাং মিংগ্যই কে-ও দেখলাম, যার বয়স তখন ৫০-এর কোঠায়। সে আমায় সমাবেশে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানাল। আমি শুনতে বসলাম এবং নীরবে প্রভুর কাছে প্রার্থনা জানালাম তিনি যেন আমার অন্তরের দেখভাল করেন, যাতে আমি বোধ অর্জন করি ও বিপথগামী না হই। মিংগ্যই আলোচনা করল, “বাইবেলে তিনটি অংশ আছে: পুরাতন নিয়ম, নূতন নিয়ম ও প্রত্যাদেশ। প্রতিটি ভাগ ঈশ্বরের বিভিন্ন যুগের কাজের সাক্ষ্য বহন করে। পুরাতন নিয়ম তাঁর বিধানের যুগের কাজের দলিল, যখন ঈশ্বর মোশির মাধ্যমে ১০টি অনুশাসন এবং তাঁরবিধান ও ডিক্রি জারি করেন যাতে লোকে পাপ কী ও পৃথিবীতে কীভাবে বাঁচতে হয় তা জানতে পারে। নূতন নিয়ম অনুগ্রহের যুগে তাঁর কাজের দলিল, যখন প্রভু যীশু পাপ-উৎসর্গ হিসেবে ক্রুশবিদ্ধ হন, আইনের পীড়ন থেকে মানুষকে বাঁচাতে। প্রত্যাদেশ অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের কাজের ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, রাজ্যের যুগের কাজ, যখন ঈশ্বর দেহরূপ ধারণ করে গোপনে আসেন, মানবজাতির বিচার ও পরিশোধনের জন্য, আমাদের পাপ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করতে। এ হল সব সত্যসন্ধানীদের জন্য এক বিরাট পরিত্রাণ।” তিনি আরও বলেন, “বস্তুত, ঈশ্বর বহু আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে তিনি অন্তিম সময়েদেহরূপে অবতীর্ণ হবেন। বাইবেলে এর বহু ভবিষ্যদ্বাণী আছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রভু বলেছিলেন, ‘দেখো, আমার আগমন হবে তস্করের ন্যায়’ (প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৫)। ‘তোমাদেরও তাহলে প্রস্তুত থাকতে হবে: কারণ মনুষ্যপুত্রের আগমন এমন একটি সময়ে ঘটবে যা তোমরা আশাও করো না’ (লুক ১২:৪০)। এখানে ‘তুমি ভেবো না’ আর ‘চোর রূপে’, হল মনুষ্যপুত্রের গোপন আগমন বিষয়ক, যখন মানুষ তার আশা করছে না। মনুষ্যপুত্রের যে কোনো উল্লেখ ঈশ্বরের অবতার গ্রহণের দ্যোতক। ঠিক যেমন প্রভু যীশু—তিনি মানবজাত, সাধারণ মানুষের একটি পরিবারে জন্মান। তাঁকে সাধারণ মানুষের মতোই দেখতে ছিল, কিন্তু তাঁর সারসত্ত্বা ছিল দৈব। তিনি স্বয়ং ঈশ্বরের অবতার ছিলেন।” মিংগ্যই-এক ক্রমাগত ঈশ্বরের দেহরূপে ফেরার সাক্ষ্য শোনা আমার পক্ষে বিরক্তিকর ছিল, এবং আমি আর শুনতে চাইনি। তাই আমি সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালাম এবং গম্ভীর মুখে বললাম, “আপনি ঈশ্বরের দেহরূপে প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে যা বলছেন তা আমি স্বীকার করতে পারি না। বাইবেল স্পষ্টত ভবিষ্যদ্বাণী করছে, ‘গালীল নিবাসীগণ, তোমরা স্বর্গের দিকে চেয়ে রয়েছ কেন? তোমাদের কাছ থেকে যে যীশুকে স্বর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তোমরা যেভাবে তাঁকে যেতে দেখেছ, সেইভাবেই তিনি ফিরে আসবেন’ (প্রেরিত ১:১১)। প্রভু আত্মারূপে স্বর্গারোহণ করেন, তাহলে তাঁর প্রত্যাবর্তন আত্মা রূপেই হওয়ার কথা, সর্বগৌরবমণ্ডিত হয়ে অবতীর্ণ হওয়ার কথা। প্রভু আক্ষরিক অর্থেই আমাদের জন্য ক্রুশে মৃত্যুবরণ করেন, অপরিসীম কষ্ট সহ্য করেন। তিনি দেহরূপে ফিরবেন না।” উত্তরে মিংগ্যই আমাকে শান্তভাবে বললেন, “আসুন আমরা বসে এ বিষয়ে আরও আলাপ-আলোচনা করি। ঈশ্বরের বাণীর সত্য আমাদের সব সন্দেহ নির্মূল করতে পারে।” আমি ভাবছিলাম যে তার আলোচনা উৎকৃষ্ট, আমি তাকে আমার বাইবেলের জ্ঞান দিয়ে পরাভূত করতে পারব না। আমি যদি বিষয়গুলো স্পষ্ট করে মূল্যায়ন না করি এবং বিপথগামী হই, আমি রক্ষা পাওয়ার ও রাজ্যে প্রবেশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হব। আমি দেখলাম আমি আর শুনতে পারি না, বরং আমার বাড়ী ফিরে বাইবেলে মনোনিবেশ করা উচিত। তাই আমি একটা অজুহাত খুঁজে বেরিয়ে পড়ি।
আমি তার যা বলার ছিল তার সবটা শুনিনি, কিন্তু বাড়ি ফিরে, যখনই আমি প্রভুর দেহরূপে প্রত্যাবর্তনের কথা ভাবলাম আমি সম্পূর্ণ বিচলিত বোধ করলাম। হয়ত আমার স্ত্রী বিপথগামী হয়েছে, কিন্তু অন্য সব নিবেদিতপ্রাণ বিশ্বাসীদের বিপথগামী করা সম্ভব বলে মনে হচ্ছিল না! তাছাড়া, প্রভু যদি সত্যিই প্রত্যাবর্তন করে থাকেন ও আমি তার অনুসন্ধান না করে থাকি, আমি প্রভুকে স্বাগত জানানোর সুযোগ হারিয়ে থাকতে পারি। কিন্তু পূর্বের বজ্রলোক যদি প্রকৃত পথ না হয় এবং আমি ভুল পথে পা বাড়াই, তা হবে প্রভুর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা এবং আমার আত্মাকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। কিছুদিন আমার খুব একটা খিদে ছিল না এবং ভালো করে ঘুমোতে পারতাম না। আমি সত্যিই খুব খারাপ অবস্থায় ছিলাম। তাই আমি পবিত্র হৃদয়ের একটি মূর্তির সামনে হাঁটু মুড়ে বসে প্রার্থনা করি, “প্রভু যীশু, আমি জানি না পূর্বের বজ্রালোক সত্যিই আপনার প্রত্যাবর্ন কিনা। অনুগ্রহ করে আমাকে উপলব্ধি ও মার্গদর্শন দিন। আমাকে পথভ্রষ্ট হয়ে বিপথগামী হতে দেবেন না।”
তারপর, আমি প্রভুর প্রত্যাবর্তন সম্পর্কিত সব পদগুলি পড়তে থাকি এবং পবিত্র আত্মার পথনির্দেশ অনুযায়ী আমি প্রভুর গোপনে আগমন সংক্রান্ত কিছু ভবিষ্যদ্বাণী পেলাম, এবং এক রহস্য আবিষ্কার করিকরলাম। দেখলাম বহু পদেইউল্লেখ আছে যে যারা প্রভুর গোপন আগমনকে স্বাগত জানাবে তারা ভোজে অংশ নেবে, এবং তারা আশীর্বাদধন্য হবে। উদাহরণস্বরূপ, প্রভু বলেছিলেন, “আর মধ্যরাতে সেখানে শোরগোল পড়ে গেল: দেখ বর আসছে, তাকে বরণ করতে এগিয়ে যাও। তখন সমস্ত কুমারীরা উঠে তাদের প্রদীপ সাজিয়ে নিল। … বরের আগমন হল; আর যারা প্রস্তুত ছিল তারা তাঁর সাথে বিবাহস্থলে গেল, আর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হল” (মথি ২৫:৬-৭, ১০)। “দেখো, আমার আগমন হবে তস্করের ন্যায়। সে—ই ধন্য, যে জাগ্রত থাকে, পরিচ্ছদ পরিধান করে থাকে, যাতে তাকে নগ্ন হয়ে হাঁটতে না হয়, মানুষের সামনে যাতে লজ্জিত হতে না হয়” (প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৫)। “আর তোমরা সেইসব মানুষের মত হও যারা তাদের প্রভুর জন্য অপেক্ষা করে যে কখন প্রভু বিবাহ থেকে ফিরবেন; যে তিনি এসে কড়া নাড়লে তারা যাতে সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দিতে পারে। ধন্য সেই পরিসেবকরা, প্রভু আসার পরে যাদের অপেক্ষারত দেখবেন। আমি তোমাদের সত্যিই বলি, তিনি নিজে কোমর বেঁধে তাদের বসিয়ে ভোজন করাবেন, তাদের পরিচর্যা করবেন। আর যদি দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রহরে এসেও তিনি তাদের অপেক্ষারত দেখেন, সেই সকল পরিসেবক ধন্য” (লুক ১২:৩৬-৩৮)। “দেখো, আমি দ্বারে দণ্ডায়মান, করাঘাত করছি। কেউ যদি আমার কন্ঠস্বর শুনে দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়, আমি তার কাছেই আসব, তার সাথে পানাহার করব, সেও আমার সাথে পানাহার করবে” (প্রকাশিত বাক্য ৩:২০)। আমি বারবার এই পদগুলি নিয়ে ভাবলাম ও প্রার্থনা করলাম। আমি এই কথাগুলি দেখলাম, “মধ্যরাত্রে চিৎকার ভেসে এল”, “চোর হিসেবে”, “দ্বিতীয় ঘটিকায় আসা”, “তৃতীয় ঘটিকায় আসা”, সবই মানুষ যখন আশা করে না তখন প্রভুর আগমন বিষয়ক। তারা প্রভুর গোপনে মানবজাতিকে রক্ষা করতে আসার বিষয়ে যা বলছিল তা সঠিক ছিল। এটা বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে সুসঙ্গত ছিল! আমি যদি প্রভুদ্বিতীয় আগমনকে স্বাগত জানাতে পারি, আমিও কি আশীর্বাদধন্যদের একজন হব না? আমি পবিত্র আত্মার সেই প্রদীপ্তিকে ধন্যবাদ জানালাম যা আমাকে এই রহস্য আবিষ্কারের সুযোগ দিয়েছে। আমি বাইবেল খুঁজতে থাকলাম এবং প্রভু যীশুর এই বাণী পেলাম: “আকাশের তলদেশ থেকে আগত বজ্রালোক যেমন তলদেশের সমস্ত অংশ উদ্ভাসিত করে তোলে, তেমনই মনুষ্যপুত্রও তাঁর দিনে উদ্ভাসিত হবেন। তবে প্রথমে তাঁকে অবশ্যই অনেক যন্ত্রণাভোগ করতে হবে এবং তাঁর যুগের লোকজনের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হতে হবে” (লুক ১৭:২৪-২৫)। আগে আমি সবসময় বিশ্বাস করেছি প্রভু আত্মারূপে ফিরবেন, কিন্তু প্রভু স্পষ্টত বলেছেন, “প্রথমে তাঁকে অবশ্যই অনেক যন্ত্রণাভোগ করতে হবে এবং তাঁর যুগের লোকজনের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হতে হবে।” আত্মারূপে তিনি কী করে কষ্ট পেতে পারেন? শুধুমত্র প্রভুর দেহরূপই কষ্ট পেতে পারে। এরকম কি হতে পারে যে পূর্বের বজ্রালোক ঠিক বলেছিল যে প্রভু দেহধারণ করেছেন এবং মনুষ্যপুত্ররূপে ফিরে এসেছেন? কিন্তু তারপর আমার মনে পড়ল প্রত্যাদেশ ১:৭, যাতে বলা আছে, “দেখো, মেঘে আসীন হয়ে তাঁর আগমন হবে, প্রত্যেকটি চোখ তাঁকে দর্শন করবে, তাঁকে যারা বিদ্ধ করেছিল তারাও। আর পৃথিবীর সমস্ত জাতি তাঁর জন্য নিজেদের মধ্যে বিলাপ করবে।” এই পদ অনুযায়ী, প্রভু সগৌরবে মেঘসহকারেআসবেন, এবং যখন তিনি আমাদের উন্নীত করবেন, প্রত্যেকে তাঁকে দেখতে পাবে। যদি প্রভু নিভৃতে দেহরূপে আসেন, কী করে বাইবেলের সেই পদটির ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে? গোপনে আসার ভবিষ্যদ্বাণী ও মেঘারূঢ়হয়ে আসার ভবিষ্যদ্বাণী কি পরস্পরবিরোধী নয়? আমি এর ল্যাজা-মুড়ো কিছুই বুঝলাম না।
২০০০-এর নববর্ষের দিনটি চোখের পলকে কেটে গেল, কিন্তু আমার দীর্ঘদিন লালিত প্রভুর আকাশ থেকে অবতরণের আশা পূর্ণ হল না। জানতাম প্রভুর ফিরে আসার সব চিহ্নই মূলত পুরণ হয়েছে। এ ছিল সেই সময় যখন আমি নতুন সহস্রাব্দে প্রভুর আকাশ থেকে অবতরণের ভাবনাকে প্রশ্ন করতে শুরু করি। আমার অন্তরে, আমি আরও বেশি করে গোপনে আসার ভাবনারপ্রতিই ঝুঁকছিলাম। আমি এই বিষয়ের ভবিষ্যদ্বাণীগুলি খুঁজতে থাকি। আমি প্রভু যীশুর প্রতি প্রার্থনাও করি, “প্রভু, সহস্রাব্দ এসে গেছে, কিন্তু আমি আপনাকে মেঘারূঢ় হয়ে আসতে দেখিনি। আমি হতাশ ও যন্ত্রণাবিদ্ধ। হে প্রভু, এখন শুধুমাত্র পূর্বের বজ্রালোকই আপনার দেহরূপে প্রত্যাবর্তনের সাক্ষ্য বহন করে। আপনি কি সত্যিই ফিরে এসেছেন? আমাকে অনুগ্রহ করে প্রদীপ্ত করুন যাতে আমি আপনার কাজ চিনতে পারি।” আমি সত্যিই মিংগ্যই-এর আলাপ-আলোচনা আরও শুনতে চাইলাম কারণ আমি ভাবছিলাম যে পূর্বের বজ্রালোক যদি সত্যিই প্রভুর প্রত্যাবর্তন হয়, আমি ঈশ্বরের কাজ গ্রহণ না করলে আমি বোধ হয় পরিত্যক্ত হব। আমি যত এটা ভাবলাম তত উদ্বিগ্ন বোধ করতে লাগলাম। জনুয়ারির এক দিন আমি সত্যিই স্থির হয়ে বসতে পারছিলাম না। আমি আমার স্ত্রীকে বললাম আমি মিংগ্যই কী বলে শুনতে চাই। তার সঙ্গে সাক্ষাতের পর, আমি তাকে বললাম, “সাম্প্রতিককালে আমি বাড়িতে বসে শাস্ত্রের কতগুলো অংশ পড়েছি এবং আমার মনে হল আপনি যা বলেছেন তা ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এখন আমি প্রভুর গোপনে মনুষ্যপুত্ররূপে আগমনের চিন্তাকে গ্রহণ করতে পারি, কিন্তু এই ভবিষ্যদ্বাণী বলছে, ‘দেখো, মেঘে আসীন হয়ে তাঁর আগমন হবে, প্রত্যেকটি চোখ তাঁকে দর্শন করবে, তাঁকে যারা বিদ্ধ করেছিল তারাও। আর পৃথিবীর সমস্ত জাতি তাঁর জন্য নিজেদের মধ্যে বিলাপ করবে’ (প্রকাশিত বাক্য ১:৭)। এটা বলে প্রভু মহান গৌরমণ্ডিত হয়ে মেঘারূঢ় হয়ে আসবেন। এটা কি প্রভুর গোপনে আসার সঙ্গেপরস্পরবিরোধী নয়? প্রভু বিশ্বস্ত, এবং সন্দেহাতীতভাবে তাঁর সব বাণীই ফলপ্রসূ হবে। এর মধ্যে নিশ্চয়ই কোনো রহস্য আছে—এর অর্থ কী?”
সে আমাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণীর কিছু অংশ পড়ে শোনাল। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যারাই পরিত্রাতা যীশুর পরিত্রাণের কথা জানে, তারা সকলেই অধীরভাবে প্রতীক্ষা করছে, কখন যীশু অকস্মাৎ আবির্ভূত হবেন এবং পূর্ণ করবেন পৃথিবীতে থাকাকালীন তাঁর বলা বাক্য: ‘আমি যেমন প্রস্থান করেছি, তেমনভাবেই আগমন করব’। মানুষ বিশ্বাস করে, ক্রুশবিদ্ধ হওয়া এবং পুনরাবির্ভূত হওয়ার পর যীশু একটি সাদা মেঘে চড়ে স্বর্গে প্রত্যাবর্তন করেন এবং পরমেশ্বরের ডান পাশে তাঁর স্থান গ্রহণ করেন। একইভাবে, যীশু পুনরায় একটি সাদা মেঘে চড়ে (এখানে বলা হচ্ছে সেই মেঘের কথা, যা চড়ে তিনি স্বর্গে ফিরে গিয়েছিলেন), যারা হাজার হাজার বছর ধরে অধীরভাবে তাঁর প্রতীক্ষা করেছে, তাদের মধ্যে ফিরে আসবেন, এবং তিনি ইহুদীদের বেশভূষা ও রূপ ধারণ করবেন। মানুষের কাছে আবির্ভূত হওয়ার পর, তিনি তাদের খাদ্য দেবেন, তাদের জন্য সজীব জল প্রবাহিত করবেন, এবং মানুষের মাঝেই করুণা ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ, প্রাণবন্ত এবং বাস্তব জীবনযাপন করবেন। এগুলি সবই মানুষের বিশ্বাসজাত ধারণা। কিন্তু পরিত্রাতা যীশু এসবের কিছুই করলেন না; তিনি মানুষের কল্পনার সম্পূর্ণ বিপরীত কার্য করলেন। যারা তাঁর প্রত্যাবর্তনের জন্য অধীরভাবে প্রতীক্ষা করেছিল, তিনি তাদের মাঝে এলেন না, এবং সাদা মেঘে চড়ে সব মানুষের সামনে আবির্ভূতও হলেন না। ইতিমধ্যেই তাঁর আগমন ঘটেছে, কিন্তু মানুষ তা জানে না, এবং অজ্ঞ হয়ে আছে। মানুষ নিতান্ত লক্ষ্যহীনভাবে তাঁর অপেক্ষা করছে, এ কথা না জেনে যে, তিনি ইতিমধ্যেই একটি ‘সাদা মেঘে’ চড়ে অবতীর্ণ হয়েছেন (এই মেঘ তাঁর আত্মা, তাঁর বাক্য, তাঁর স্বভাব এবং তাঁর সম্পূর্ণ সত্তা), এবং বর্তমানে একদল মানুষের সঙ্গে আছেন, যাদের তিনি অন্তিম সময়ে জয়ী করবেন” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, পরিত্রাতা ইতিমধ্যেই একটি “সাদা মেঘে” চড়ে প্রত্যাবর্তন করেছেন)। “অনেকে হয়তো আমি যা বলছি তার পরোয়া না করতে পারে, কিন্তু তাও আমি সকল তথাকথিত সন্ত যারা যীশুকে অনুসরণ করে তাদের বলতে চাই যে, তোমরা যখন তোমাদের নিজেদের চোখে যীশুকে স্বর্গ থেকে সাদা মেঘে চড়ে অবতীর্ণ হতে দেখবে, তা হবে ন্যায়পরায়ণতার সূর্যের জনসমক্ষে আবির্ভাব। হয়তো তোমার জন্য তা দারুণ উত্তেজনার এক মুহূর্ত হবে, তবু তোমার জানা উচিত যে, যে সময়ে তুমি স্বর্গ থেকে যীশুকে অবতীর্ণ হতে দেখবে, সেই একই সময়ে তুমিও শাস্তি ভোগ করার জন্য নরকে নিমজ্জিত হবে। সেই সময়েই ঈশ্বরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনার সমাপ্তি ঘটবে, এবং সেই সময়েই ঈশ্বর শিষ্টকে পুরস্কৃত করবেন এবং দুষ্টকে দণ্ড দেবেন। মানুষের কোনো প্রতীক দেখতে পাওয়ার আগেই ঈশ্বরের বিচার সম্পন্ন হয়ে যাবে, শুধুমাত্র সত্যের অভিব্যক্তিই থেকে যাবে। যারা প্রতীক না খুঁজে সত্যকে স্বীকার করে এবং ফলত যারা পরিশুদ্ধ, তারা ঈশ্বরের সিংহাসনের সম্মুখে ফিরে যাবে এবং সৃষ্টিকর্তার আলিঙ্গনে আবদ্ধ হবে। কেবলমাত্র যারা এই বিশ্বাসে অনড় থাকবে যে ‘যে যীশু সাদা মেঘে চড়ে আসে না, সে ভণ্ড খ্রীষ্ট’, তারা চিরকালীন দণ্ড ভোগ করবে, কারণ তারা কেবলমাত্র সেই যীশুকে বিশ্বাস করে যিনি প্রতীক প্রদর্শন করেন, কিন্তু সেই যীশুকে স্বীকার করে না যিনি কঠোর রায় ঘোষণা করেন এবং প্রকৃত পথ ও জীবনকে প্রকাশিত করেন। আর তাই এটাই হতে পারে যে যীশু যখন সাদা মেঘে চড়ে সবার সামনে প্রত্যাবর্তন করবেন, কেবল তখনই তাদের সঙ্গে বোঝাপড়া করবেন। তারা অত্যন্ত জেদী, নিজেদের ওপর অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী, অত্যন্ত অহংকারী। এরকম অধঃপতিতেরা কীভাবে যীশুর দ্বারা পুরস্কৃত হতে পারে? যারা সত্য স্বীকার করতে সক্ষম, তাদের জন্য যীশুর প্রত্যাবর্তন এক মহান পরিত্রাণ, কিন্তু যারা সত্যকে স্বীকার করতে অক্ষম, তাদের জন্য এটা তিরস্কারের প্রতীক। তোমাদের নিজেদের পথ নিজেদের বেছে নেওয়া উচিত এবং পবিত্র আত্মার ধর্মনিন্দা বা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা উচিত না। তোমাদের অজ্ঞ এবং অহংকারী মানুষ হওয়া উচিত না, এমন একজন মানুষ হওয়া উচিত যে পবিত্র আত্মার নির্দেশিকা মান্য করে এবং সত্যকে খোঁজার কামনা করে; একমাত্র এই উপায়েই তোমরা লাভবান হবে” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, যতক্ষণে তুমি যীশুর আধ্যাত্মিক দেহ প্রত্যক্ষ করবে, ততক্ষণে ঈশ্বর স্বর্গ ও পৃথিবীকে নতুন করে তৈরি করে ফেলবেন)। ঈশ্বরের বাণী পড়ার পর সে আলোচনা করল, “অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের প্রত্যাবর্তনের দুটি পর্যায় আছে। প্রথমত তিনি মনুষ্যপুত্ররূপে অবতার ধারণ করে গোপনে আসেন। এ হল ঈশ্বরের আত্মার দেহধারণ, যিনি সত্য প্রকাশ করেন এবং বিচার ও পরিশোধনের কাজ করেন, অবশেষে একদল বিজয়ী প্রস্তুত করেন। তারপর ঈশ্বরের গোপন দেহরূপের কাজ সম্পন্ন হবে। তিনি মহাবিপর্যয়বৃষ্টি করবেন, ভালোকে পুরস্কৃত ও মন্দকে শাস্তি প্রদান করবেন। যখন মহাবিপর্যয়ের অন্ত হবে, ঈশ্বর মেঘারূঢ় হয়ে আসবেন, সব জাতির সব মানুষের সামনে প্রকট হবেন। এটা প্রভুর এই ভবিষ্যদ্বণীকেপুরণ করে: ‘এবং তারপর স্বর্গে মনুষ্য পুত্রের চিহ্ন দেখা যাবে: তখন পৃথিবীর সমস্ত জাতি বিলাপ করবে: এবং তারা আকাশের মেঘমালার মধ্যে অপার শক্তি ও মহিমা সমন্বিত মনুষ্য পুত্রের আগমন প্রত্যক্ষ করবে’ (মথি ২৪:৩০)। মানুষের মনে, প্রভুর মেঘারূঢ় হয়ে আসা প্রত্যেকের জন্য মহানন্দের সময় হবে, তাহলে কেন সে বলল তারা শোক পালন করবে? কারণ তারা দেখতে পাবে, যেসর্বশক্তিমন ঈশ্বরকে তারা প্রতিরোধ করেছে তিনিই প্রত্যাবর্তিত প্রভু যীশু। কিন্তু ততদিনে ঈশ্বরের মানবজাতিকে রক্ষকরার কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। যেহেতু তারা মেঘরূঢ় হয়ে ঈশ্বরেরগমন ছাড়া কিছুই স্বীকার করতে রাজি হয়নি, তারা ঈশ্বরের পরিত্রাণপ্রাপ্তির সুযোগ হারিয়েছে। সেইজন্যই তারা কাঁদবে ও দাঁতে দাঁত ঘষবে এবং দণ্ডিত হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি ঈশ্বরের অবতারের গোপনে ফিরে কাজ করা শুধু মানুষের পরিত্রাণের জন্য নয়, মানুষের স্বরূপ প্রকাশ করে অপসারণ করার জন্যও। যারাই সেই সময় ঈশ্বরের কণ্ঠ শুনে তাঁকে গ্রহণ করে যখন তিনি দেহরূপে কাজ করেন ও সত্য প্রকাশ করেন তারা ঈশ্বরের সিংহাসনের সম্মুখে এসে খ্রীষ্টের আসনের সামনে বিচারের অভিজ্ঞতা লাভ করবে, যারা নিজেদের কলুষমুক্ত করে ঈশ্বরের বিচারের দ্বারা পরিশুদ্ধ হয়, তারা বিপর্যয়ের সময় ঈশ্বরের সুরক্ষা পাবে ও বেঁচে যাবে। কিন্তু সেই মন্দ মনুষেরা যারা সত্যকে ভলোবাসে না এবং ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করে তারা ঈশ্বরের দেহরূপের কাজের মাধ্যমে অপসৃত হবে এবং অবশেষে মহাবিপর্যয়ে শাস্তি পাবে। অর্থাৎ, ঈশ্বরের গোপন কাজ ছাগল ও মেষকে আলাদা করে, কড়চা থেকে আটা আলাদা করে, আলাদা করে প্রকৃত বিশ্বাসীদের ভণ্ড বিশ্বাসীথেকে, ন্যায়পরায়ণদের অশুভেরথেকে—এ সবইপ্রকাশিত হয়। সবাই নিজের ধরণ অনুযায়ী বিন্যস্ত হবে। এই হল ঈশ্বরের কাজের অভিজ্ঞান।” তার কাছে এই আলোচনা শুনে হঠাৎই আমার চোখ খুলে গেল। আমি বুঝলাম এভাবেই প্রভুর প্রত্যবর্তন সংক্রান্ত বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী পুরণ হবে, এবং আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণীতে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব দেখতে পেলাম। ঈশ্বরের অপরাধরহিত ন্যায়পরায়ণ স্বভাবের সেই ধারণা আমাকে ভয়ে শিহরিত করল। আমি জানতাম যদি আমিমেঘারূঢ় হয়েপ্রভুর প্রত্যাবর্তনের ধারণায় আটকে থেকে প্রভুর অবতারের প্রকাশিত সত্যগুলি গ্রহণ না করি, আমি পরিত্রাণের সুযোগ হারাব! সেই সময় মনে হল সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণীগুলি প্রকৃতই সত্য। সেদিন আমি প্রভুর প্রত্যাবর্তনের রহস্য তাঁর বাণীর কিছু অংশ পড়েই বুঝতে পারলাম। এতজন বিশ্বাসী যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজ গ্রহণ করার পরফিরে আসতে অসম্মতহয়েছেতাতে আশ্চর্যের কিছু নেই।
আমি মিংগ্যইকে আরও কিছু প্রশ্ন করলাম। বললাম, “যীশু পুনরুত্থানের পর ৪০ দিনের জন্য তাঁর শিষ্যদের মধ্যে আবির্ভূত হন, এবং তারপর তিনি আকাশে তাঁর আধ্যাত্মিক দেহে উন্নীত হন। আমরা সবসময় ভেবেছি যেযখন প্রভু পৃথিবীর বিচারের জন্য ফিরবেন তিনি আত্মারূপে আবির্ভূত হবেন, এক বিরাট শ্বেত সিংহাসনে বসে, রাজকীয় এবং শ্রদ্ধার উদ্রেককারী, সকলের বিচার করবেন, যাতে বড়োপাপাচারীরা নরকে যায়, আর যারা ভালো কাজ করেছে তারা স্বর্গে যায়। কিন্তু আপনি সাক্ষ্যবহন করছেন যে প্রভু তাঁর বিচারের কাজ করতে দেহরূপে অবতীর্ণ হন। এর কোনো বাইবেলসম্মত ভিত্তি আছে?” সে বলল, “বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী আছে ঈশ্বরের দেহ ধারণ করে বিচারের কাজ করার বিষয়ে। উদাহরণস্বরূপ, ‘কারণ, বজ্রালোক যেমন পূর্ব দিক থেকে আগত হয়ে পশ্চিমে দেখা যায়: মনুষ্যপুত্রের আগমনও তেমনই হবে’ (মথি ২৪:২৭)। ‘পিতা কোনো মানুষের বিচার করেন না, কিন্তু তিনি সমস্ত বিচারের ভার পুত্রের ওপরেই ন্যস্ত করেছেন’ (যোহন ৫:২২)। ‘এবং তিনি তাঁকে বিচার করার ক্ষমতাও প্রদান করেছেন, কারণ তিনি হলেন মনুষ্যপুত্র’ (যোহন ৫:২৭)। ‘যে আমাকে অবজ্ঞা করে, আমার বাক্য গ্রহণ করে না, তার বিচার হবে অন্য কিছু দিয়ে, আমার মুখ নিঃসৃত বাক্যগুলিই অন্তিম সময়ে তাকে বিচার করবে’ (যোহন ১২:৪৮)। ‘আমার এখনও তোমাদের অনেক কিছু বলার আছে, কিন্তু তোমরা এখন সেসব সহ্য করতে পারবে না। কিন্তু যখন সত্যের আত্মার আবির্ভাব হবে, তিনিই তোমাদের সমস্ত সত্য শেখাবেন’ (যোহন ১৬:১২-১৩)। ‘এখন ঈশ্বরের ভবন থেকেই বিচার শুরু করা উচিত’ (১ পিতর ৪:১৭)। যে উল্লেখগুলি আছে ‘পুত্র’, এবং ‘মনুষ্যপুত্র’ সবই অবতাররূপী ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এতে আমরা দেখতে পাই যে অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের আত্মা তাঁর বিচারের কাজ করতে দেহরূপ ধারণ করে, এবং এ হল ঈশ্বরের গৃহ থেকে শুরু হওয়া বিচার। অর্থাৎ, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্ট তাদের মধ্যে সত্য প্রকাশ ও বিচারের কাজ করেন যারা তাঁর বিচার গ্রহণ করে, যাতে মানুষকে পরিশুদ্ধ ও রক্ষা করা যায়, সব সত্যে প্রবেশের মার্গদর্শন করা যায়। এই হল ঈশ্বরএর গোপন আবির্ভাবের কাজ। অবিশ্বাসীদের ক্ষেত্রে, ঈশ্বর তাদের বিপর্যয়গুলি ব্যবহার করে সরাসরি নিন্দা ও ধ্বংস করবেন। অন্তিম সময়ের খ্রীষ্ট সর্বশক্তিমান ঈশ্বর সেই সব সত্যই প্রকাশ করেন যা মানুষকে পরিশুদ্ধ ও রক্ষা করে, ঈশ্বরের গৃহ থেকে বিচারের কাজ শুরু করে। এটা অন্তিম সময়ে প্রভুর প্রত্যাবর্তনের ভবিষ্যদ্বাণীগুলি সম্পূর্ণরূপে পুরণ করে।” তাই তারপর মিংগ্যই আমার সঙ্গে কথা বলে ঈশ্বর কেন অন্তিম সময়ে আত্মারূপে তাঁর বিচারকার্য না করে ব্যক্তিগতভাবে দেহরূপে করেন সেই বিষয়ে।
সে আমাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণীর কয়েকটা অংশ পড়ে শোনায়। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “ঈশ্বরের দ্বারা মানুষের উদ্ধার সরাসরি আত্মার পদ্ধতি ব্যবহার করে করা হয় না এবং আত্মার পরিচয়কে প্রত্যক্ষভাবে ব্যবহার করে করা হয় না, কারণ মানুষ তাঁর আত্মা দেখতে বা স্পর্শ করতে পারে না, কাছেও যেতে পারে না। তিনি যদি সরাসরি আত্মার পদ্ধতি ব্যবহার করে মানুষকে উদ্ধার করার চেষ্টা করতেন, মানুষ তাঁর পরিত্রাণ লাভ করতে পারতো না। ঈশ্বর যদি বাহ্যিকভাবে এক সৃষ্ট মানবের রূপ ধারণ না করতেন, তাহলে পরিত্রাণ লাভের কোনো উপায় মানুষের কাছে থাকত না। কারণ মানুষের তাঁর কাছে যাওয়ার উপায় নেই, ঠিক যেমন যিহোবার মেঘের কাছে কেউ যেতে পারত না। শুধুমাত্র একজন সৃষ্ট মানুষ হয়ে, অর্থাৎ তিনি যে দেহে আবির্ভূত হতে যাচ্ছেন সেই দেহে তাঁর বাক্য স্থাপন করে তিনি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর অনুগামীদের মধ্যে বাক্য অনুযায়ী কার্য নির্বাহ করতে পারেন। একমাত্র তখনই মানুষ ব্যক্তিগতভাবে তাঁর বাক্য দেখতে এবং শুনতে পারে, এবং অধিকন্তু তাঁর বাক্যের অধিকারে প্রবেশ করতে পারে, এবং এই উপায়ে পুরোপুরি উদ্ধার পেতে পারে। ঈশ্বর যদি দেহ ধারণ না করতেন, তাহলে রক্ত-মাংসের কোনো জীব এত মহৎ পরিত্রাণ লাভ করত না, এবং একজনও উদ্ধার পেত না। ঈশ্বরের আত্মা যদি মানবজাতির মাঝে সরাসরি কার্য নির্বাহ করতেন, তাহলে হয় সমগ্র মানবজাতি ভূপতিত হত, অথবা ঈশ্বরের সংস্পর্শে আসার কোনো উপায় না থাকায়, তারা সম্পূর্ণরূপে শয়তানের বন্দী হয়ে পড়ত। প্রথম অবতার এসেছিলেন মানুষকে পাপ থেকে মুক্তি দিতে, যীশুর নশ্বর দেহের মাধ্যমে তার মুক্তিদানের জন্য, অর্থাৎ তিনি ক্রুশের হাত থেকে মানুষকে উদ্ধার করেছিলেন, কিন্তু মানুষের মধ্যে ভ্রষ্ট শয়তানের স্বভাব তখনও রয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় অবতাররূপ আর পাপ-উৎসর্গ হিসেবে নয়, বরং পাপ থেকে যারা মুক্তি পেয়েছে তাদের সম্পূর্ণরূপে উদ্ধার করার জন্য। এটি করা হল যাতে, যারা ক্ষমা পেয়েছে, তাদের পাপ থেকে মুক্তি দেওয়া ও সম্পূর্ণ নিষ্কলুষ করা যায়, এবং পরিবর্তিত স্বভাব অর্জন করার মাধ্যমে তারা যাতে শয়তানের অন্ধকার প্রভাব ছিন্ন করে ঈশ্বরের সিংহাসনের সামনে প্রত্যাবর্তন করতে পারে। একমাত্র এই উপায়েই মানুষকে পুরোপুরি পবিত্র করা যেতে পারে” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, অবতাররূপের রহস্য (৪))। “ঈশ্বরের আত্মা যদি মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতেন, তাহলে সমগ্র মানবজাতি কোনো প্রকাশিত বাক্য ছাড়াই সেই কণ্ঠস্বরের কাছে আত্মসমর্পণ করত, ঠিক যেমনভাবে দামেস্কের পথের আলোতে পৌল ভূপতিত হয়েছিল। ঈশ্বর যদি এই পন্থায় কার্য নির্বাহ করে যেতেন, তাহলে মানুষ কোনোদিনই বাক্যের বিচার দ্বারা নিজের ভ্রষ্টাচরণের কথা জানতে পারত না, এবং তার দ্বারা পরিত্রাণও লাভ করত না। একমাত্র অবতার রূপ ধারণ করেই ঈশ্বর তাঁর বাক্য প্রত্যেক মানুষের কানে ব্যক্তিগতভাবে পৌঁছতে পারেন, যাতে যাদের কান আছে তারা তাঁর বাক্য শুনতে পায় এবং তাঁর বাক্যের দ্বারা বিচারের কার্য লাভ করতে পারে। মানুষকে ভয় দেখিয়ে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার জন্য আত্মার প্রকট হওয়ার বদলে, একমাত্র এটিই তাঁর বাক্য দ্বারা অর্জিত ফলাফল। একমাত্র এই ব্যবহারিক তথা অসাধারণ কাজের দ্বারাই মানুষের ভিতরে বহু বছর ধরে লুকিয়ে থাকা পুরোনো স্বভাব পুরোপুরি প্রকাশিত হতে পারে, যাতে মানুষ তা চিনতে পারে এবং পরিবর্তন করতে পারে। এগুলি সবই ঈশ্বরের অবতাররূপের ব্যবহারিক কার্য, যেখানে তিনি ব্যবহারিক পদ্ধতিতে কথা বলে এবং বিচারকে কার্যকর করে, মানুষের উপর বাক্যের দ্বারা বিচারের ফলাফল অর্জন করেন। এই হল ঈশ্বরের অবতার রূপের কর্তৃত্ব এবং তাৎপর্য” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, অবতাররূপের রহস্য (৪))।
তারপর সে আমার সঙ্গে আলোচনা করল, “আমরা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী থেকে দেখতে পাচ্ছি যে প্রথম যখন ঈশ্বর দেহ ধারণ করেন, তিনি পাপ-উৎসর্গ হিসেবে মানুষের পাপ ধারণকরার জন্য ক্রুশবিদ্ধ হন, যাতে আমরা প্রভুকে বিশ্বাস করলে আমাদের পাপ ক্ষমা করা হয়। কিন্তু আমাদের পাপের মূল, আমাদের পাপী প্রকৃতি এখনও আমাদের মধ্যে বর্তমান। আমরা ক্রমাগত পাপ করছি ও আমাদের দুর্নীতি প্রকাশ করছি। আমরা উদ্ধত, স্বার্থপর ও ধূর্ত, আমরা মিথ্যে বলি ও প্রতরণা করি, আমরা ঈর্ষাপ্রবণ, আমরা ঘৃণাপ্রবণ। বিপর্যয়ের মুখোমুখি হলে বা আমাদের পরিবারে কঠিন সময় উপস্থিত হলে, আমরা অভিযোগ করি, দোষারোপ করি, এমনকি তাঁর বিরূদ্ধে লড়াই করি। এ এক অনস্বীকার্য সত্য। ঈশ্বর পবিত্র, তাই অপবিত্র কেউ তাঁকে দেখতে পায় না। আমরা এতটাই কলুষিত ও ভ্রষ্ট এবং আমরা পাপ ও ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করি, তাহলে কী করে আমরা ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশের যোগ্য হব? প্রভু যীশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যে যখন তিনি অন্তিম সময়ে ফিরবেন, তিনি সত্য প্রকাশ করবেন ও বিচারের কাজ করবেন মানুষকে পরিশুদ্ধ ও রূপান্তরিত করতে যাতে লোকে ভ্রষ্টাচার ত্যাগ করে পরিশুদ্ধ হতে পারে এবং ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারে। তাঁর অন্তিম সময়ের বিচারের কাজ হল মানুষকে পরিশুদ্ধ ও রক্ষা করা। সেই জন্যই তাঁর দেহরূপে এই কাজ করা প্রয়োজন। যদি ঈশ্বরের আত্মা মানুষের বিচার করত, তারা পরিশুদ্ধ বা সুরক্ষিত হত না। কারণ মানুষ মরণশীল, দেহাবদ্ধ, এবং আমরা সবাই শয়তানের দ্বারা কলুষিত, তাই আমরা শয়তানি স্বভাব, ক্লেদ এবং কলুষে পূর্ণ। আমরা কখনও ঈশ্বরের আত্মার কাছে যেতে পারতাম না। যদি তাঁর আত্মা সরাসরি আমাদের বিচার করত, আমরা আমাদের বিদ্রোহ ও অবাধ্যতার জন্য ধ্বংসপ্রাপ্ত হতাম। আর ঈশ্বরের আত্মার মানুষের সঙ্গে কথা বলা বজ্র ও বিদ্যুতের মতো হবে। আমরা শুধু বুঝব না তা-ই নয়, আমরা ভয় পাব। মানবজাতির ওই ধরণের বিচার অভীষ্ট সিদ্ধ করত না।” তারপর সে আমাকে একটি উদাহরণ দিল: “মনে করো একটি ছোটো পাখী আহত হয়েছে আর আমরা তাকে সাহায্য করতে চাইছি, কিন্তু সে আমাদের ভয় পাচ্ছে এবং কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে না, কারণ সে আমাদের থেকে একেবারে আলাদা, সে আমরা যা বলি তা বোঝে না ও আমাদের উদ্দেশ্য বোঝে না। কিন্তু আমরা যদি ছোটো পাখিতে পরিণত হই, আমরা তার কাছে গিয়ে সাহায্য করতে পারি, আর সেও আমাদের ভয় পাবে না বা প্রতিরোধ করবে না। ঠিক তেমনই, আমাদের, এই গভীরভাবে কলুষিত মানুষকে, শ্রেয়তর সুরক্ষা দিতে, ঈশ্বর দেহ ধারণ করেন ও সাধারণ মানুষের বাহ্যিক রূপ পরিধান করেন। তিনি প্রকাশ করেন সত্য, আমাদের বিদ্রোহী স্বভাব ও ভ্রষ্টাচার, এবং আমাদের ঈশ্বর-বিরোধিতর পাপপূর্ণ প্রকৃতি। তিনি আমাদের তাঁর ন্যায়পরায়ণ স্বভাব প্রদর্শন করেন যাতে আমরা দেখতে পাই ঈশ্বর অত্যন্ত বাস্তব, স্পষ্ট ও সজীবোপম। তাহলে তিনি অত্যন্ত স্পষ্ট করে আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন তাঁর ইচ্ছা ও দাবি, এবং সেসব সত্য যা আমাদের অনুশীলন করা ও যাতে প্রবেশ করা উচিত, যাতেআমরা স্বভাব পরিবর্তনের ও পরিশুদ্ধ হওয়ার পথ দেখতে পাই।” তারপর মিংগ্যই অন্য একটি বিষয়ে আমার সাথে আলাপ-আলোচনা করল। “অন্তিম সময়ে দেহরূপে ঈশ্বরের বিচারের কাজ করা আমাদের ধারণা ও বিদ্রোহী প্রকৃতি আরও ভালো প্রকাশ করতে পারে। প্রথমবার যখন ঈশ্বর দেহ ধারণ করে কাজ করতে আসেন, ফরিশীরা ভালো করেই জানত যে প্রভু যীশু যা প্রচার করছেন তা কর্তৃত্বপূর্ণ ও ক্ষমতাসম্পন্ন, কিন্তু তারা দেখল তাঁকে মহান ব্যক্তির মতো দেখতে নয়, এবং তিনি ছুতোরের পুত্র ছিলেন। যা তিনি বলথেন ও করতেন তা তাদের ধারণা ও কল্পনার সঙ্গে সুসঙ্গত নয়, তাই তারা তার অনুসন্ধান করতেও সম্মত হল না, বরং শুধু তাঁর সঙ্গে লড়াই ও তাঁকে ভৎর্সনা করল, অন্যদের ঈশ্বরের কাজের সন্ধান থেকে বিরত করল। শেষে, তারা প্রভু যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করল। অন্তিম সময়ে তাঁর বিচারের কাজ করতে ঈশ্বর আবার দেহধারণ করেছেন, এবং যেহেতু তাঁর আগমনের ধরণ আমাদের ধারণাসম্মত নয়, আমরা নিজেদের ঔদ্ধত্যের বশে ঈশ্বরকে সীমাবদ্ধ করছি। ধর্মীয় জগতের যাজকরা বিশেষ করে শয়তানের মোসাহেবের মতো কাজ করছে, গুজব ছড়িয়ে বিশ্বাসীদের ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজের অনুসন্ধান থেকে বিরত করছে। শুধু ভাবো, যদি ঈশ্বর এ কাজ করতে অবতার গ্রহম না করতেন, তাঁর আত্মা বিচারের কাজ করতে আসত, কার সাহস হত তাঁর প্রতি এত হাল্কা আচরণ করার? তা কি মানুষের ভ্রষ্টাচার প্রকাশ করতে পারত? এবং এইজন্যই, একমাত্র দেহরূপী ঈশ্বরই আমাদের সব বিদ্রোহপ্রবণতা, ভ্রষ্টাচার ও ঈশ্বর সম্পর্কিত ধারণা প্রকাশ করতে পারেন। যারা সত্যকে ভালোবাসে তারা তাদের দুর্নীতি এবং সেই সারসত্তা যা ঈশ্বরের অবাধ্যতা করে ত চিনতেপারে তাঁর বিচার ও প্রকাশের মাধ্যমে। শেষে তারা বিজিত হয় এবং তাঁর বাণীর মাধ্যমে শুদ্ধ হয়। তারা ঈশ্বরের পরিত্রাণ অর্জন করে এক সুন্দর গন্তব্যে প্রবেশ করে। কিন্তু যারা নিজেদের ধারণা ও কল্পনায় আটকে থাকে, যারা সত্য গ্রহণ করতে অস্বীকার করে, ঈশ্বরের সঙ্গে লড়াই করায় জোর দেয়, কড়তা হিসেবে ঈশ্বর তাদের স্বরূপ উন্মোচন করবেন। তারা শুধু সুরক্ষিত হবেনা তা-ই নয়, বরং ঈশ্বর ফরিশীদের মতোই তাদের নিন্দা করবেন ও অভিশাপ দেবেন। তাই, ঈশ্বরের অবতারেরঅন্তিম সময়ে তার বিচারের কাজ করতে আসা মানুষের প্রতি করুণা ও পরিত্রাণে এবং ঐশীজ্ঞানে পূর্ণ।”
মিংগ্যই-এর আলোচনা আমার পক্ষে সত্যই প্রদীপ্তিময় ছিল। আমি বিধানের যুগের কথা ভাবলাম। যখন ইয়াহওয়েহ অবতীর্ণ হয়ে সিনাই পর্বতে ইসরায়েলিদের সঙ্গে কথা বলেন, তারা সবাই ঈশ্বরের বজ্রের মতো কণ্ঠ শুনেছিল এবং তারা ভয়ে পূর্ণ ছিল। তারা মোশিকে বলল, “তুমি আমাদের সাথে কথা বলো, আমরা শুনব: প্রভুকে আমাদের সাথে কথা বলতে দিও না, নাহলে আমরা মারা পড়ব” (যাত্রাপুস্তক ২০:১৯)। ঈশ্বর পবিত্র, এবং আমরা ভ্রষ্ট মানুষ। আমরা সত্যিই ঈশ্বরের আত্মার সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ করতে পারি না। আমার এ-ও মনে পড়ল, যখন প্রথম আমি দেহরূপে ঈশ্বরের ফেরার কথা শুনি, আমি ধারণা ও প্রতিরোধে পূর্ণ ছিলাম এবং অবিশ্বাস্যরকম উদ্ধত ছিলাম। কোনো অনুসন্ধান না করেই অন্ধভাবে ধরে নিয়েছিলাম প্রভুর দেহরূপে ফেরা অসম্ভব। আমি গির্জা সীল করে দিই, অন্যদের তার অনুসন্ধানে বাধা দিই এবং আমার স্ত্রীকে সমাবেশে যোগ দিতে বাধা দিই। কীঅর্থে আমার কাজ ফরিশীদের থেকোলাদা ছিল যখন তারা যীশুকে প্রতিরোধ করে? আমি কত উদ্ধত ও বিদ্রোহী ছিলাম। যদি ঈশ্বরের আত্মা বিচারের কাজ করতেন, তিনি নিশ্চয়ই আমাকে ধ্বংস করতেন। এই সময় আমি বুঝলাম যে দেহরূপী ঈশ্বরের বিচারের কজ করা প্রকৃত অর্থেই মানুষের জন্য ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ পরিত্রাণ।
মিংগ্যই তারপর আমার সাথে আরও কয়েকবার আলোচনা করে এবং আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বহু বাণী পড়ি। তাঁর বাণী থেকে আমি জানতে পারি ঈশ্বরের দেহরূপের রহস্য, তাঁর নাম ও তিনটি স্তরের কাজের রহস্য, এবং ভণ্ড খ্রীষ্ট থেকে প্রকৃত খ্রীষ্টকে পৃথক করার উপায়, ঈশ্বর কী ধরণের মানুষকেবাঁচান, এবং কী ধরণের মানুষকে তিনি অপসারণ করেন, আরও অনেক কিছু। যত তাঁর বাণী পড়লাম, ঈশ্বরের কাজ ও ইচ্ছা তত ভালো বুঝলাম। এমন অনেক কিছু স্পষ্ট হল যা আমি আগে বুঝতাম না। তা আমার পক্ষে অত্যন্ত পুষ্টিদায়ক ছিল। আমি অন্তরে নিশ্চিত বোধ করলাম যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই পথ, সত্য ও জীবন, একমাত্র সত্য ঈশ্বর। শুধু ঈশ্বরই সত্য প্রকাশ করতে পারেন, এবং তিনিই আমাদের জীবনের প্রয়োজনীয় রসদের শাশ্বত উৎস। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর হলেন প্রত্যাবর্তিত প্রভু!
আমি বাইবেলের আক্ষরিক অর্থই আঁকড় এবং ঈশ্বরকে আমার ধারণা ও ভ্রান্তির ভিত্তিতে সংকীর্ণ করে দেখছিলাম। আমি ঈশ্বরের নতুন কাজের পর্যালোচনা করিনি, উপরন্তু গোঁয়ারের মতো প্রভুর ফেরাকে প্রত্যাখ্যান করেছি। আমি প্রায় মুর্খ কুমারীতে পরিণত হয়েছিলাম, প্রত্যাবর্তিত প্রভুকে স্বাগত জানানোর সুযোগ হারিয়ে। যদি সময়মতো ঈশ্বর আমায় পথনির্দেশ দিয়ে না বাঁচাতেন, আমি নিজের ধারণায় ধ্বংস হতাম। ঈশ্বরের করুণা ও পরিত্রাণের দরুণই আমি তাঁর প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানাতে পারলাম। ঈশ্বরের প্রতি আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ!
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।