আমি প্রত্যক্ষ করেছি ঈশ্বরের আবির্ভাব
আমি একটি কোরিয় প্রেসবিটেরিয়ান চার্চের অংশ ছিলাম। আমার মেয়ে অসুস্থ হওয়ার পর আমার পরিবারের সকলেই ঈশ্বর-বিশ্বাসী হয়ে যান। তারপর, সে প্রতিদিন একটু একটু করে সেরে উঠতে শুরু করে। প্রভু যীশুর করুণার জন্য আমি খুবই কৃতজ্ঞ ছিলাম। আমি শপথ নিয়েছিলাম যে তখন থেকে আমি আস্থার সাথে প্রভুকে অনুসরণ করব, এবং তাঁকে আনন্দ দেওয়ার মত যোগ্য ব্যক্তি হয়ে ওঠার জন্য কঠোর পরিশ্রম করব। আমি কখনই গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করতে ভুলতাম না, যতই কাজে ব্যস্ত থাকি না কেন, আমি সবসময় দানধর্ম করতাম, আর গির্জার কাজ-কর্মে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করতাম। আমি আমার বেশীরভাগ সময়টাই কাটাতাম বাইবেল পড়ে আর গির্জার কাজ-কর্ম করে। আমি খুব কমই ডিনারে যেতাম বা পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীদের সাথে একত্রিত হয়ে আনন্দ করতাম। এটা নিয়ে তাঁরা বেশ হতাশ হয়ে পড়েন। ঈশ্বর-বিশ্বাসী হওয়ার পর যখন আমি ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করলাম, যখন আমি আর পার্টিতে যেতাম না, আমার কয়েকজন বন্ধু আমাকে এরকম কথা বলে বিদ্রুপ করত, “তুমি গির্জায় যেতে এত ভালোবাসো, তাহলে আমাদের বল, প্রতিদিন গির্জায় গিয়ে তোমার কি লাভ হয়? তোমার এই বিশ্বাসের মানে কি?” সত্যি বলতে, এত প্রশ্নের ধাক্কায় জর্জরিত হয়ে, আমি সত্যি জানতাম না কি কি বলা উচিৎ। কিন্তু তাদের এসব প্রশ্নের কারনেই আমি ভাবতে শুরু করি: আমার ধর্ম আসলে কি? এটা কি ঈশ্বরের কাছে আমার মেয়েকে সুস্থ করার, নাকি আমার পরিবারকেও ভাল রাখার প্রার্থনা? ধর্ম মানে কি শুধুই বাইবেল পড়া আর প্রতিদিন গির্জায় যাওয়া? আমি সত্যি জানতাম না। তাই, এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আমি আমার গির্জার পাদ্রীদের কাছে যাই। তাঁদের উত্তরগুলো মোটামুটি একই ছিল: আমাদের ধর্ম হচ্ছে প্রভুর উদ্ধারের অনুগ্রহের জন্য, এবং যখন তিনি ফিরে আসবেন তিনি আমাদের অনন্ত জীবনের জন্য স্বর্গে নিয়ে যাবেন। এই ধরনের উত্তর আমার বিভ্রান্তির সমাধান ঘটিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তা অন্য প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল: তাহলে, আমি স্বর্গে যাব কিভাবে? তাঁরা আমাকে বললেন, “রোমীয় ১০:১০ বলে, ‘কেননা অন্তরে বিশ্বাস করলে ধার্মিক প্রতিপন্ন হয়; এবং মুখের স্বীকারোক্তিতে লাভ করা যায় পরিত্রাণ।’ এর অর্থ হল আমাদের পাপ প্রভু দ্বারা ক্ষমা করা হয়েছে, এবং আমরা বিশ্বাসের দ্বারা রক্ষা পেয়েছি, এবং প্রভু আমাদেরকে সরাসরি রাজত্বে নিয়ে যাবেন যখন তিনি ফিরে আসবেন। সুতরাং, যতক্ষণ আপনার বিশ্বাস আছে ততক্ষণ আপনাকে স্বর্গে যাওয়ার বিষয়ে চিন্তা করতে হবে না।” আমি ভাবছিলাম যে ঈশ্বর পবিত্র, এবং বাইবেল বলে “পবিত্রতা লাভের চেষ্টা কর অন্যথায় কেউ প্রভুর দর্শন পাবে না” (হিব্রু ১২:১৪)। প্রভু চান আমরা পবিত্র হই, কিন্তু আমি পাপের মধ্যে বাস করছিলাম এবং তাঁর কথাগুলোকে কাজে লাগাতে পারিনি। আমি কিভাবে এই রাজ্যের যোগ্য ছিলাম? প্রভু যীশু আমাদের বলেছিলেন: “তুমি কায়মনোবাক্যে তোমার ঈশ্বরকে ভালবাসবে – এটি হল সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বপ্রথম আদেশ। আর দ্বিতীয়টিও এরই তুল্য, তুমি তোমার প্রতিবেশীকে আত্মজ্ঞানে ভালবাসবে” (মথি ২২:৩৭-৩৯)। আমার দৈনন্দিন জীবনে ভালবাসার সেই সহজ প্রয়োজন আমি পালন করতে পারিনি, যদিও চেষ্টা করেছিলাম। আমি আমার পরিবারকে প্রভুর থেকে বেশি ভালবাসতাম, আর অন্যদের আমি সত্যিই আমার মত ভালবাসতে পারিনি। যখন আমার বন্ধুরা এবং পরিবার আমাকে নিয়ে মজা করত, আমি সহনশীল ও ধৈর্যশীল হওয়ার পরিবর্তে তাঁদের উপর বিরক্ত হতাম। আমি হিব্রু ১০:২৬ এর কথাও ভেবেছিলাম, যা বলে “সত্যের পরিচয় লাভ করার পর যদি আমরা স্বেচ্ছায় পাপ করি, তাহলে সেই পাপ স্খালনের জন্য কোন বলিদানের ব্যবস্থা নেই।” আমি জানতাম প্রভুর কি প্রয়োজন কিন্তু আমি তা পালন করতে পারিনি। আমি পাপের মধ্যে বাস করতে থাকি, এবং পাপের মূল্য হল মৃত্যু। যদি এমনই হয়, তাহলে আমার নিয়তিও নাস্তিকদের থেকে আলাদা হবে না বলেই বুঝলাম। এটা আমাকে ভাবিয়ে তুলল যে রাজত্বে প্রবেশ করা অতটাও সহজ নয় যতটা সহজ ধর্মযাজকরা বলেছিলেন। আমি তখনও জানতাম না আমি কিভাবে স্বর্গে প্রবেশ করতে পারব এবং অনন্ত জীবন লাভ করতে পারব। আমার কোনো পথ ছিল না। আমি ধর্মযাজকদের এবং আমার গির্জার বন্ধুদের প্রশ্ন করতে থাকলাম, কিন্তু তাঁদের কারুর কাছেই কোন স্পষ্ট উত্তর ছিল না। তাঁরা শুধু আমাকে জিজ্ঞাসা করেন আমি এই অদ্ভুত প্রশ্নগুলো কেন করছি, এবং বলেন, এভাবেই যুগ যুগ ধরে ধর্মের চর্চা হয়ে আসছে। আমি তখনও বরাবরের মতই বিভ্রান্ত ছিলাম, তাই আমি চারটি সুসমাচার আবার পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এই ভেবে যে ওগুলোর মধ্যে প্রভু যীশুর কথার কোন না কোন উত্তর নিশ্চয়ই থাকবে।
একবার ২০০৮ সালে, আমি এই শ্লোকগুলো পড়েছিলাম: “যীশু বললেন আমিই পুনরুত্থান এবং আমিই জীবন। আমার উপরে যদি কারও বিশ্বাস থাকে তার মৃত্যু হলেও সে জীবন লাভ করবে। আর জীবিত যে কোন জন যদি আমাকে বিশ্বাস করে তার কখনও মৃত্যু হবে না। এ কথা কি তুমি বিশ্বাস কর?” (যোহন ১১:২৫-২৬)। আমি যখন এই শ্লোকগুলো পড়ি, এগুলো আমাকে বিভ্রান্ত করে। প্রভু কেন বলবেন যে আমাদের বেঁচে থাকা উচিত এবং তাঁকে বিশ্বাস করা উচিত? আমরা কি তাহলে যথেষ্টভাবে আস্তিক আর জীবিত নই? প্রভু কি আমাদের মৃত মানুষ হিসেবে দেখেছেন? এটা আমার মধ্যে অনেক প্রশ্ন জাগিয়ে তুলল। কিছুদিনের জন্য, আমি আমার সমস্ত অবসর সময় এই অংশটি কে নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করে কাটালাম, কিন্তু আমি কখনোই এর প্রকৃত অর্থ খুঁজে পাইনি। আমি আমার প্রশ্নগুলো নিয়ে পাদ্রী এবং গির্জার অন্যান্য সদস্যদের কাছে আবার গেলাম। তাঁদের কাছে কোন উত্তর ছিল না, কিন্তু তাঁরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করল। তাও, আমার মনে হচ্ছিল যে প্রভু যা বলেছেন তার মধ্যে গভীর কোনো অর্থ লুকিয়ে আছে।
তারপর একবার আমি মথির সুসমাচারে এটা পড়লাম: “তাঁর শিষ্যদের একজন তাঁকে বলল, প্রভু, অনুমতি করুন, আগে আমার বাবাকে কবর দিয়ে আসি। কিন্তু যীশু তাঁকে বললেন, তুমি আমার অনুগামী হও। মৃতদের কবর দেওয়ার ভার মৃতদের হাতেই ছেড়ে দাও” (মথি ৮:২১-২২)। যখন আমি “মৃতদের কবর দেওয়ার ভার মৃতদের হাতেই ছেড়ে দাও” কথাটি দেখলাম, আমি বিভ্রান্ত হয়ে পড়লাম। প্রভু কেন সেই সব মানুষদের মৃত বলবেন, যারা সেই সময়ে জীবিত ছিলেন? প্রভু কি আমাদের জীবিত হিসাবে দেখেছেন না মৃত? আমি বাইবেলের কথা ভাবলাম যাতে বলা আছে যে পাপের মূল্য মৃত্যু, এবং আমি পাপের মধ্যে বাস করছিলাম। প্রভু কি “মৃত” বলতে সেটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন? যদি তাই হয়, তাহলে আমি কিভাবে জীবন লাভ করতে পারি, এবং কিভাবে আমি রাজত্বে প্রবেশ করতে পারি? এমন বহু প্রশ্ন আমার মনে দেখা দিল, যার মাথা-মুন্ডু, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু মনের গভীরে, একটা জিনিস আমার কাছে পরিষ্কার ছিল: যেহেতু এই কথাগুলো প্রভু বলেছেন, উত্তরটা নিশ্চয়ই বাইবেলের মধ্যেই কোথাও একটা থাকবে। তাই আমি বিশ্বাস না হারিয়ে বরং উত্তর খুঁজে গেলাম।
প্রভুর পথপ্রদর্শনের সাহায্যে, কয়েক মাস পরে, আমি আরেকটি জিনিস পড়লাম তিনি বলেছেন: “সত্যিই আমি তোমাদের বলছি, সেই সময় আসছে, প্রকৃতপক্ষে এসে গেছে, যখন মৃতেরাও ঈশতনয়ের বাণী শুনবে, যারা শুনবে তারা সকলেই জীবনলাভ করবে” (যোহন ৫:২৫)। এটা পড়ার সাথে সাথে আমার কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে মৃতরাআবার জীবিত হয়ে উঠবে যখন তারা ঈশ্বরের কণ্ঠ শুনবে। আমি নিশ্চিত ছিলাম যে এই উত্তরটাই আমি খুঁজছিলাম! কিন্তু আমি তবুও একটু বিভ্রান্ত ছিলাম: আমি তো প্রভুর কন্ঠস্বর বহু আগে শুনেছিলাম, কিন্তু আমি তখনও পাপের বন্ধন থেকে মুক্ত ছিলাম না। তাহলে কি আমি জীবিত ছিলাম? তাহলে “যারা শুনবে তারা সকলেই জীবনলাভ করবে” এই কথারই বা মানে কি? মানুষ তাহলে কিভাবে জীবন লাভ করবে? তাহলে কি প্রভু ফিরে আসার পরে আরও কিছু বলতেন যা আমাদের শুনতে হত? আর তাই হলে আমরা ঈশ্বরের কন্ঠ শুনব কি করে? কোথায় তা শুনতে পাব আমরা? আমি বুঝতে পারলাম না, তাই আমি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করলাম, “হে প্রভু, দয়া করে আমাকে শীঘ্রই আপনার কন্ঠস্বর শুনতে দিন। আমি মরতে চাই না। দয়া করে আমাকে বাঁচতে সাহায্য করুন।”
তার পরে, যখনই আমি গির্জায় গিয়েছি প্রার্থনা করতে, আমি শুনতে শুরু করি যদি ধর্মযাজকরা কিছু বলেন প্রভুর প্রত্যাবর্তন বা প্রভুর কন্ঠ সম্পর্কে। আমার কাছে যেটা দুঃখজনক ছিল যে তাঁরা শুধু আমাদের বলে গেছে দেখে যেতে, অপেক্ষা করতে এবং ধর্মদ্রোহিতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে, কিন্তু প্রভুর প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে কিছু বলেননি। গির্জার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছেও আমি আমার প্রশ্ন নিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু তাঁরা আমাকে বললেন যে আমার অবিরত প্রশ্নগুলি বিশ্বাসের অভাব থেকে আসছে, যে আমি থমাসের মতো করছি। তাঁরা আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেন। তারপর গির্জার অন্যান্য যেসব সদস্যদের সাথে আমার ভালো যোগাযোগ ছিল, তাঁরাও আমাকে বাদ দিতে শুরু করলেন এবং আমার থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিতে লাগলেন। শেষ পর্যন্ত, আমি সেই গির্জা ত্যাগ করলাম যার অংশ ছিলাম আমি ১৮ বছর ধরে। আমি সারাদিন ধরে সিবিএস এবং সিটিএস নেটওয়ার্কের অনুষ্ঠান দেখতাম, এই আশাতে যে বিখ্যাত যাজকদের ধর্মোপদেশ থেকে আমি ঈশ্বরের কণ্ঠ শুনতে পাব। প্রায় ছয় মাস ধরে আমি এটি করেছি। প্রতিদিন প্রায় ১০ ঘন্টা করে আমি এগুলো দেখতাম। আমি সত্যিই অনেক ধর্মোপদেশ শুনেছি, কিন্তু তাও আমি যে উত্তরগুলো চেয়েছিলাম তা পাইনি। আমি শুধু যাজকদের বলতে শুনে গিয়েছি যে প্রভু শীঘ্রই ফিরে আসবেন, এবং আমাদের দেখা উচিত ও অপেক্ষা করা উচিত। কিন্তু আমি ছিলাম প্রশ্নে পরিপূর্ণ। তাঁরা বলেছিলেন যে প্রভু ফিরে আসবেন, কিন্তু কখন আসবেন, সেটা তাঁরা কখনই বলেননি। আমরা কেন তাঁকে এখনও স্বাগত জানাইনি? আমি সেই দিনগুলিতে প্রভুর কাছে ক্রমাগত প্রার্থনা করে যাচ্ছিলাম, বলছিলাম, “প্রভু, আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছি, আমার জীবদ্দশায় আপনাকে স্বাগত জানাতে, আপনার কণ্ঠ শোনার জন্য অনেক আশা করে আছি। হে প্রভু, আপনি কখন আসছেন? দয়া করে আমাকে আপনার কন্ঠ শুনতে দিন।”
২০১৩ সালের মার্চে একদিন, আমাদের ভবনের প্রবেশদ্বারে, একজন বয়স্ক ব্যক্তি, যাকে দেখে প্রায় ৭০ বছর বয়স মনে হল, আমার দিকে হেঁটে এলেন, এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন আমি সংবাদপত্রের মাসিক ক্রেতা হব কি না। আমি ভাবছিলাম যে এখন যখন প্রত্যেকের কাছে সেলফোন আর কম্পিউটার আছে, তখন সংবাদপত্র কে পড়ে? তাই আমি দ্রুত তাঁকে প্রত্যাখ্যান করলাম। কিন্তু তারপর, কয়েক দিন ধরেই যতবার তিনি আমাকে দেখেছেন, ততবার তিনি আমাকে সংবাদপত্রের মাসিক ক্রেতা হতে বলেছেন। আমি তাঁকে প্রত্যাখ্যান করতেই থাকি। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, এক মাস পরে লিফটের কাছে সেই লোকটির সাথে আমার আবার দেখা হয়ে গেল। মনে হল তিনি যেন আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। তিনি যখন আমাকে দেখলেন, তিনি হেসে হ্যালো বললেন, তারপর আমাকে সংবাদপত্রের মাসিক ক্রেতা হতে বললেন। আমি ভাবছিলাম যে এতদিন ধরে এই লোকটি কেন আমাকে একটি সংবাদপত্র বিক্রি করার চেষ্টা করছে? ভদ্রতার খাতিরে শেষ পর্যন্ত আমি সেই সংবাদপত্রের মাসিক ক্রেতা হলাম, কিন্তু বিভিন্ন কারণে, কিছুদিন আমি ওটা পড়ার সময় পাইনি। তারপর মে মাসে একদিন সকালে, কাগজটি আসার পর, বরাবরের মতই আমি ওটাকে হাতে তুলে নিয়ে দ্রুত শিরোনামগুলোর ওপর দিয়ে চোখ বোলাচ্ছিলাম। এবং একটা শিরোনাম আমার চোখে পড়ে গেল। তাতে লেখা ছিল “প্রভু যীশু ফিরে এসেছেন – সর্বশক্তিমান ঈশ্বর রাজ্যের যুগে বাণী প্রকাশ করছেন।” আমি পুরোপুরি হতবাক – কি? প্রভু ফিরে এসেছেন? সর্বশক্তিমান ঈশ্বর? রাজ্যের যুগ? এটা কি সত্যি হতে পারে? আমি তখন বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়ি এবং আমার মধ্যে নানারকম আবেগ কাজ করতে থাকে। কিন্তু তারপর আমি ভাবলাম যদি এটা ভুয়ো খবর হয়। আমি পাতার নিচের দিকে দেখলাম এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার একটি নম্বর এবং একটি ঠিকানা দেখলাম, এবং গির্জার কিছু বইয়ের নাম দেখলাম। আমার মনে হল যে এটি যত্ন সহকারে দেখা দরকার, কারণ প্রভুর প্রত্যাবর্তন একটা বড় ব্যাপার। তাই কাগজে পাওয়া নম্বরে আমি সঙ্গে সঙ্গে একটা ফোন করলাম। আমি একজন ভগিনীর কণ্ঠ শুনতে পেলাম যিনি আমার ফোন ধরলেন এবং আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, “আমি কি জিজ্ঞাসা করতে পারি, এই কাগজে যা ছাপা হয়েছে তা কি সত্যি? প্রভু কি ফিরে এসেছেন? এই কথাগুলো কি সত্যিই ঈশ্বরের বাণী?” তিনি আমাকে বললেন, “হ্যাঁ।” সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জা থেকে ভগিনী কিম এবং পিয়াও আমার সাথে দেখা করার জন্য একটি সময় নির্ধারণ করলেন এবং আমরা ঈশ্বরের কাজের তিনটি পর্যায় নিয়ে আলোচনা করলাম। ভগিনী কিম বললেন, “যেদিন থেকে আদম ও ইভ শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট হয়েছে, মানুষ শয়তানের বাহিনীর অধীনে পাপের মধ্যে বাস করছে, এবং তার দ্বারা প্রতারিত ও আহত হচ্ছে। শয়তানের শাসন থেকে মানবজাতিকে উদ্ধার করার জন্য ঈশ্বর তিনটি পর্যায়ে কাজ করেছেন, পর্যায়গুলি হল আইনের যুগ, অনুগ্রহের যুগ এবং রাজ্যের যুগ। এই হল তিনটি ভিন্ন ধাপের কাজ, কিন্তু এগুলো সব একই ঈশ্বরের দ্বারা সম্পন্ন হচ্ছে। ভ্রষ্ট মানবতাকে বাঁচানোর জন্য যা যা প্রয়োজন তার উপর ভিত্তি করে প্রতিটি পর্যায়, এবং প্রতিটি পর্যায় পূর্ববর্তী পর্যায়ের ভিত্তির উপর নির্মিত হয়েছে, কাজটিকে আরও উন্নত করার জন্য।” তারপর তিনি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণীর একটি অনুচ্ছেদ পড়লেন। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “ছ’হাজার বছরব্যাপী পরিচালনামূলক পরিকল্পনা তিন পর্যায়ের কার্যে বিভক্ত। কোনো একটি পর্যায় তিনটি পর্যায়ের কার্যের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না, কেবল সমগ্রের অংশবিশেষের প্রতিনিধিত্ব করে। যিহোবা নামটি ঈশ্বরের সম্পূর্ণ স্বভাবের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। তিনি অনুশাসনের যুগে তাঁর কার্য নির্বাহ করেছিলেন, এতে প্রমাণিত হয় না যে ঈশ্বর কেবলমাত্র আইনের অনুশাসনেই ঈশ্বর হবেন। যিহোবা মানুষের জন্য আইন প্রণয়ন করেছিলেন এবং তাদের হাতে আদেশসমূহ দিয়েছিলেন, এবং উপাসনালয় ও পূজাবেদী নির্মাণ করতে বলেছিলেন; তিনি যে কার্য সম্পন্ন করেছিলেন তা কেবল অনুশাসনের যুগের প্রতিনিধিত্ব করে। তাঁর এই কার্য প্রমাণ করে না যে, ঈশ্বর কেবল মানুষকে আইন মানতে বলে, অথবা তিনি কেবল উপাসনালয় বা পূজাবেদীর সম্মুখেই ঈশ্বর। এ কথা বললে অসত্য-ভাষণ হবে। আইনের অনুশাসনে সম্পাদিত কার্য কেবলমাত্র একটি যুগের প্রতিনিধিত্ব করে। অতএব, ঈশ্বর যদি কেবলমাত্র অনুশাসনের যুগে কার্য নির্বাহ করতেন, তাহলে মানুষ ঈশ্বরকে এইরূপ সংজ্ঞায় আবদ্ধ করে ফেলত, ‘ঈশ্বর কেবলমাত্র উপাসনালয়ে আসীন, এবং তাঁর সেবা করতে হলে আমাদের অবশ্যই যাজকের বেশ পরিধান করে উপাসনালয়ে প্রবেশ করতে হবে।’ যদি অনুগ্রহের যুগের কার্য কখনোই সম্পাদিত না হত এবং অনুশাসনের যুগই বর্তমানে চলত, তাহলে মানুষ জানতে পারত না যে ঈশ্বর ক্ষমাশীল এবং প্রেমময়ও বটে। যদি অনুশাসনের যুগের কার্য সম্পাদিত না হয়ে শুধুমাত্র অনুগ্রহের যুগের কার্যই সম্পাদিত হত, তাহলে মানুষ কেবল এটুকুই জানত যে, ঈশ্বর কেবলমাত্র মানুষকে পরিত্রাণ করেন এবং তার পাপ ক্ষমা করেন। মানুষ কেবল জানত যে তিনি পবিত্র ও নিষ্পাপ, এবং মানুষের স্বার্থে তিনি নিজেকে উৎসর্গ করে ক্রুশবিদ্ধ পর্যন্ত হতে পারেন। মানুষ কেবল এগুলিই জানত, কিন্তু অন্য কোনো বিষয়ে তার কোনো ধারণা থাকত না। অতএব প্রত্যেকটি যুগ ঈশ্বরের স্বভাবের একেকটি অংশকে প্রকাশ করে। আর ঈশ্বরের স্বভাবের কোন অংশটি অনুশাসনের যুগে, অনুগ্রহের যুগে, এবং বর্তমানে প্রকাশিত হয়েছে, সে প্রসঙ্গে বলা যায়: একমাত্র যখন তিনটি পর্যায় একত্রে সমন্বিত হবে, তখনই ঈশ্বরের স্বভাব সম্পূর্ণ রূপে প্রকাশিত হবে। মানুষ যখন তিনটি পর্যায়ের বিষয়েই জেনে যাবে, তখনই সে সম্পূর্ণ রূপে তা বুঝতে পারবে। এই পর্যায়গুলির কোনোটিই উপেক্ষা করা যাবে না। এই তিন পর্যায়ের কার্য সম্বন্ধে জানার পরই তুমি ঈশ্বরের স্বভাব সামগ্রিকভাবে দেখতে পাবে। অনুশাসনের যুগে ঈশ্বর তাঁর কার্য সম্পন্ন করেছিলেন বলে এ কথা প্রমাণিত হয় না যে তিনি কেবলমাত্র আইনের অনুশাসনেই ঈশ্বর, এবং তিনি মুক্তিদানের কার্য সম্পন্ন করেছিলেন, এর অর্থ এই নয় যে তিনি চিরকাল মানবজাতিকে মুক্তি দিয়ে যাবেন। এগুলি সবই মানুষের কল্পিত সিদ্ধান্ত। অনুগ্রহের যুগের অবসান ঘটেছে, ফলে তুমি এ কথা বলতে পারো না যে, ঈশ্বর কেবলমাত্র ক্রুশে বিরাজমান এবং ক্রুশই ঈশ্বরের পরিত্রাণের প্রতীক। এর অর্থ হবে ঈশ্বরকে সংজ্ঞায় আবদ্ধ করা। বর্তমান পর্যায়ে ঈশ্বর মূলত বাক্যের কার্য নির্বাহ করছেন, কিন্তু তুমি এটা বলতে পারো না যে, ঈশ্বর কখনোই ক্ষমাশীল ছিলেন না, এবং তিনি কেবল বিচার এবং শাস্তিই দিয়েছেন। অন্তিম সময়ের কার্য যিহোবা ও যীশুর কার্য এবং মানুষের অবোধ্যসকল রহস্যকে প্রকাশ করে, যাতে মানবজাতির গন্তব্য এবং পরিসমাপ্তি প্রকাশিত হয় এবং মানবজাতির মধ্যে পরিত্রাণের সকল কার্যসমাপ্ত করা যায়। অন্তিম সময়ের কার্যের এই পর্যায়টি সবকিছুর সমাপ্তি ঘটায়। মানুষের অবোধ্য সকল রহস্য উন্মোচিত হওয়া প্রয়োজন, যাতে মানুষ সেগুলির গভীরে যেতে পারে এবং তার হৃদয়ে এক সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়। একমাত্র তখনই মানবজাতিকে প্রকারভেদে শ্রেণীবদ্ধ করা যাবে। একমাত্র ছ’হাজার বছরব্যাপী পরিচালনামূলক পরিকল্পনা সম্পন্ন হওয়ার পরই মানুষ ঈশ্বরের স্বভাব সামগ্রিকভাবে বুঝতে পারবে, কারণ তাঁর ব্যবস্থাপনা ততদিনে শেষ হয়ে যাবে” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, অবতাররূপের রহস্য (৪))। তারপর ভগিনী কিম আমার সাথে আরও আলোচনা করলেন, এবং আমি জানতে পারলাম যে ঈশ্বরের ৬,০০০ বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনা তিনটি যুগে, তিনটি পর্যায়ে ঘটে – আইনের যুগ, অনুগ্রহের যুগ এবং রাজ্যের যুগ। আইনের যুগে, যিহোবা আইন জারি করেন যাতে লোকেরা জানতে পারে পাপ কী। অনুগ্রহের যুগে, প্রভু যীশু মুক্তির কাজ সম্পন্ন করেন। মানবজাতির জন্য তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়, এবং তিনি আমাদের পাপ ক্ষমা করেন, আইনের অধীনে দন্ড ও মৃত্যু থেকে আমাদের মুক্ত হতে সাহায্য করেন। রাজ্যের যুগে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বিচারের কাজ করছেন মানুষের পাপের মূলের নিস্পত্তি করার জন্য, যাতে তিনি সম্পূর্ণভাবে আমাদের শুদ্ধ করে, উদ্ধার করে ঈশ্বরের রাজ্যে নিয়ে যেতে পারেন। কাজের ধাপগুলি বিভিন্ন যুগে ঘটে এবং বিভিন্ন জিনিস এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, কিন্তু এই সবকিছুই এক ঈশ্বরের দ্বারা সম্পন্ন। একজন ঈশ্বরই বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন কাজ করছেন। এই ব্যাপারটা বোঝার পর আমার নিজেকে আলোকপ্রাপ্ত মনে হয়েছিল।
তারপর ভগিনী পিয়াও আমার সাথে আলোচনা করলেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর কিভাবে তাঁর বিচার কাজের মাধ্যমে মানুষকে শুদ্ধ করেন। তিনি ঈশ্বরের বাণীর একটি অনুচ্ছেদ আমার সাথে ভাগ করেছিলেন যা আমি পড়ব। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “অন্তিম সময়ে খ্রীষ্ট মানুষকে শেখানোর জন্য, মানুষের সারবস্তু প্রকাশের জন্য এবং মানুষের কথা ও কাজের বিশ্লেষণ করার জন্য বিভিন্ন সত্য ব্যবহার করেন। এই বাক্যে বিভিন্ন সত্য অন্তর্ভুক্ত থাকে, যেমন মানুষের কর্তব্য কী, কীভাবে মানুষের ঈশ্বর অনুগত থাকা উচিত, কীভাবে মানুষের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা উচিত, কীভাবে মানুষের স্বাভাবিক মানবতাসম্পন্ন জীবনযাপন করা উচিত, সেইসাথে থাকে ঈশ্বরের প্রজ্ঞা এবং স্বভাব ইত্যাদি বিষয়সমূহ। এই সমস্ত বাক্য মানুষের সারবস্তু এবং তার ভ্রষ্ট স্বভাবের দিকেই ইঙ্গিত করে। বিশেষ করে, সেই সমস্ত বাক্য, যা প্রকাশ করে মানুষ কীভাবে ঈশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তা আসলে এ সম্পর্কে কথা বলে যে কীভাবে মানুষ শয়তানের মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছে এবং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে শত্রু শক্তিতে পরিণত হয়েছে। তাঁর বিচারকার্যের সময়, ঈশ্বর কেবলমাত্র কয়েকটি বাক্যের মাধ্যমে মানুষের প্রকৃতি স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন না; তিনি দীর্ঘমেয়াদে তা প্রকাশ করেন, মোকাবিলা করেন এবং তাদের অপসারণ করেন। প্রকাশ, মোকাবিলা এবং অপসারণের এই সমস্ত ভিন্ন পদ্ধতি সাধারণ বাক্য দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা যায় না, সেই সত্যের দ্বারাই প্রকাশ করা যায় যার সম্পর্কে মানুষ একেবারেই অসচেতন। শুধুমাত্র এই ধরনের পদ্ধতিকেই প্রকৃত বিচার বলা যেতে পারে; শুধুমাত্র এই ধরনের বিচারের মাধ্যমেই মানুষ ঈশ্বরের প্রতি অনুগত হতে পারে, তাঁর সম্বন্ধে দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত হতে পারে, এবং ঈশ্বর সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান লাভ করতে পারে। এই বিচারের কাজই প্রতিফলিত করে ঈশ্বরের আসল চেহারা সম্পর্কে মানুষের উপলব্ধি, এবং তার নিজের বিদ্রোহের সত্য। বিচারের কাজ মানুষকে ঈশ্বরের ইচ্ছা, তাঁর কাজের উদ্দেশ্য এবং তাঁর দুর্বোধ্য রহস্য সম্পর্কে অনেক বেশি করে বোঝার সুযোগ দেয়। এটি মানুষকে নিজের ভ্রষ্ট সারসত্য এবং সেই ভ্রষ্টাচরণের মূল চিনতে ও জানতে শেখায়, এবং সেইসাথে মানুষের কদর্যতা আবিষ্কার করতে শেখায়। এই সমস্ত প্রভাব বিচারের কাজের মাধ্যমে প্রতিভাত হয়, কারণ এই কাজের সারসত্য হল সত্য, পথ এবং ঈশ্বরের জীবনকে তাঁর অনুগামীদের কাছে উন্মুক্ত করার কাজ। এই কাজ ঈশ্বরের বিচারের কাজ” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, খ্রীষ্ট সত্যের দ্বারাই বিচারের কাজ করেন)। তারপর ভগিনী পিয়াও বলেন, “সর্বশক্তিমান ঈশ্বর সত্য ব্যবহার করেন আমাদের বিচার এবং পরিশুদ্ধ করার জন্য। তিনি লক্ষ লক্ষ বাণী প্রকাশ করেছেন যা বাইবেলের রহস্য প্রকাশ করে এবং ঈশ্বরের কাজের সাক্ষ্য দেয়। সেগুলি পাপের মূল এবং আমাদের ভ্রষ্টাচারের সত্য উন্মোচন করে। কিছু স্বভাবগত পরিবর্তন এবং জীবনে প্রবেশ সম্পর্কে, এবং কিছু মানুষের অন্তিম সময় নির্ধারণ, ও আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে। এ সবকিছুই সত্য সম্পর্কে এবং সবই ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে। এটি আমাদের কাছে ঈশ্বরের ধার্মিক ও পবিত্র স্বভাব এবং তাঁর জ্ঞান তুলে ধরে। যে কেউ তাঁর বাণীগুলি পড়ে তাদের মহান ক্ষমতা এবং শক্তি অনুভব করতে পারবেন। ঈশ্বর সব দেখেন, একমাত্র ঈশ্বরই ভ্রষ্ট মানবজাতিকে রন্ধ্রে রন্ধ্রে চেনেন। ঈশ্বর আমাদের প্রতিটি চিন্তা, এবং দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভ্রষ্ট ধারণা প্রকাশ করে দেন স্পষ্টভাবে, এবং বেশ কার্যকর ভাবে। তিনি এই ভ্রষ্টাচারের সারমর্ম প্রকাশ করেন এবং বিচ্ছিন্ন করেন, এবং মানবজাতির পাপ ও বিরোধিতার মূলের সম্পূর্ণরূপে নিস্পত্তি করেন।” তিনি আরও বলেন, “ঈশ্বরের বাণীর বিচার, উদ্ঘাটন এবং পরিমার্জনার মাধ্যমে, শয়তানের দ্বারা আমাদের ভ্রষ্ট হওয়ার সত্যতা আমরা বুঝতে পারি। তারপর আমরা দেখি কতটা অহংকারী, ঘৃণ্য এবং স্বার্থপর আমরা, যে আমরা যা বলি এবং করি সবই ভ্রষ্টাচারের উপর ভিত্তি করে এবং আমরা মোটেও মানবিক ভাবে বাস করি না। নাম ও প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করা, চক্রান্ত করা, মিথ্যা বলা এবং প্রতারণা করা, ঈর্ষান্বিত এবং ঘৃণাপূর্ণ হওয়া, ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ না করে বিশ্বাস রাখা, অসংযত আকাঙ্ক্ষায় পরিপূর্ণ হওয়া, পরীক্ষার মুখোমুখি হয়ে ঈশ্বরকে দোষারোপ করা এবং তাঁকে প্রতিরোধ করা, এসবই হল উদাহরণ। ঈশ্বরের বিচার এবং শাস্তির মাধ্যমেই, আমরা কিছু সত্য বুঝতে পারি এবং ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা অর্জন করি। ঈশ্বরের ধার্মিক স্বভাব সম্পর্কে আমরা আরও জানি যা কোনো অপরাধ সহ্য করে না, এবং ধীরে ধীরে আমরা ঈশ্বরকে সম্মান করি ও তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করি। আমরা অনুতাপ করতে, তাঁর বিচার ও শাস্তি গ্রহণ করতে এবং তাঁর বাণীগুলি পালন করতে সক্ষম।” তিনি আরো বলেন, “ঈশ্বরের উদ্ঘাটিত বাণী ছাড়া, শুধুমাত্র প্রার্থনা এবং স্বীকারোক্তি দিয়ে, আমরা কখনই চিন্তাশীল ধারনাশক্তি অর্জন করতে পারব না বা আমাদের পাপের মূলের নিস্পত্তি করতে পারব না। অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমরা এটাও দেখতে পাই যে, ঈশ্বরের বিচার হল তাঁর সত্যিকারের ভালবাসা এবং মানুষের শ্রেষ্ঠ পরিত্রাণ, এবং সেই কার্যকরী কাজ ছাড়া, আমাদের ভ্রষ্ট স্বভাব কখনই পরিশুদ্ধ হতে পারে না। এই জন্যই ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের বিচার কাজকে মেনে নেওয়াই হল রাজ্যে প্রবেশ করার একমাত্র পথ।” তারপর ঈশ্বরের বাণীর বিচার সম্পর্কে তিনি আমাকে তাঁদের ব্যক্তিগত সাক্ষ্য সম্পর্কে বলেন। সে সবকিছুই খুব কার্যকরী ছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজেরই প্রয়োজন ছিল আমার আত্মার, যে ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ সত্যিই মানুষকে বদলাতে পারে এবং শুদ্ধ করতে পারে, এবং রাজ্যে প্রবেশের একমাত্র উপায় হল ঈশ্বরের বিচার মেনে নেওয়া।
তার পরের কয়েক দিন ধরে ভগিনীরা আমাকে বললেন কেন ধর্মীয় জগত জনশূন্য, কেন যাজকদের ধর্মোপদেশ নিরস হয়ে যাচ্ছে। আমি বাইবেলের পিছনের আসল কাহিনী এবং ঈশ্বরের অবতারের রহস্য ও অর্থ সম্পর্কেও জেনেছি। আমার মনে হয়েছে যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণীগুলির মধ্যে অনেক কিছু আছে এবং অনেক রহস্যের প্রতি আমার চোখ খুলে দিল। আমি আনন্দের সাথে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের পরিত্রাণ গ্রহণ করলাম।
ভগিনীরা আমাকে ঈশ্বরের বাণীর কয়েকটি বই দিলেন। আমি যখন বাড়িতে এলাম, তখন সেগুলোর মধ্যে আমি একটা খুললাম, “মেষশাবকের উন্মোচিত গ্রন্থ”। প্রথম যেটা দেখলাম সেটা হল ঈশ্বরের বাণীর একটি ভূমিকা: “যদিও অনেক মানুষ ঈশ্বরে বিশ্বাস করে কিন্তু খুব কম মানুষই জানে ঈশ্বরে বিশ্বাসের অর্থ কী এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা পূরণের জন্য তাদের কোন কাজটি অবশ্যই করতে হবে। এর কারণ হল, যদিও মানুষ ‘ঈশ্বর’-এর মতো শব্দ এবং ‘ঈশ্বরের কাজ’ এর মতো বাক্যাংশের সাথে পরিচিত, তবুও তারা ঈশ্বরকে জানে না এবং তাই তাঁর কাজ সম্পর্কে আরও কম জানে। তাহলে, যারা ঈশ্বরকে জানে না তারা যে তাঁর ওপর তাদের বিশ্বাসে গোলমাল বাধিয়ে বসবে, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। মানুষ ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাসকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে না এবং এর প্রধান কারণ হল, তাদের কাছে ঈশ্বর বিশ্বাস খুবই অপরিচিত শব্দ, তাদের কাছে খুবই অদ্ভুত। এইভাবে তারা ঈশ্বরের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। অন্যভাবে বলতে গেলে, মানুষ যদি ঈশ্বরকে না জানে এবং তাঁর কাজকে না জানে তাহলে তারা ঈশ্বরের ব্যবহারের জন্য যথোপযুক্ত নয় এবং তাই তারা তাঁর ইচ্ছা পূরণের ক্ষেত্রে আরও কম সক্ষম। ‘ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস’-এর অর্থ একজন ঈশ্বর রয়েছেন তা বিশ্বাস করা; ঈশ্বরে বিশ্বাস করা সম্পর্কে এটিই সবথেকে সহজ ধারণা। উপরন্তু, একজন ঈশ্বর আছেন বলে বিশ্বাস করা আর ঈশ্বরে বিশ্বাস করা এক নয়; বরং, এটা এক ধরনের সরল বিশ্বাস যার দৃঢ় ধর্মীয় নিহিতার্থ রয়েছে। ঈশ্বরের ওপর প্রকৃত বিশ্বাসের অর্থ নিম্নরূপ: সব কিছুর উপর ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব রয়েছে, এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে, একজন তাঁর বাণী এবং তাঁর কাজকে অনুভব করে, কলুষিত স্বভাবকে শুদ্ধ করে, ঈশ্বরের ইচ্ছা পূরণ করে এবং ঈশ্বরকে জানতে পারে। শুধুমাত্র এই ধরনের একটি সফরকেই ‘ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস’ বলা যেতে পারে” (“বাক্য দেহে আবির্ভূত হল”)। ঈশ্বরের বাণীগুলি বিস্তারিত এবং কার্যকরী, এবং ঈশ্বরে বিশ্বাসের প্রকৃত অর্থ দেখায়। আমার একটি উপলব্ধি হল যে, বিশ্বাসের জন্য ঈশ্বরের বাণী এবং কাজের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন যাতে আমরা ভ্রষ্টাচার পরিহার করতে পারি, সত্য লাভ করতে পারি এবং ঈশ্বরকে জানতে পারি। এটাই একমাত্র প্রকৃত বিশ্বাস। আমি ভাবতাম বিশ্বাস মানে প্রতিদিন প্রার্থনা করা এবং বহুবার গির্জায় যাওয়া। দুঃখের বিষয়, আমি কখনই বুঝতে পারিনি আমি বিশ্বাসের সঠিক পথে ছিলাম কি না, তাই আমি ততক্ষণ পর্যন্ত শুধু হোঁচট খেয়েছি। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণীগুলি পড়ে, আমি বুঝতে পারি যে যে বিশ্বাসের পথ আমি আগে নিয়েছিলাম তা সম্পূর্ণ ভুল ছিল। তারপর আমি সুচিপত্রর মধ্যে দেখলাম শিরোনামটা “তুমি কি সেই মানুষ যার মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে?” সেটি আমাকে আকৃষ্ট করে আর আমি তখনই ওই পাতায় চলে যাই। ঈশ্বরের এই বাণীগুলির সাথে: “ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেছেন কিন্তু মানুষ শয়তানের দ্বারা কলুষিত হয়েছে, তাই মানুষকে ‘মৃত মানুষ’ আখ্যা দেওয়া যায়। সুতরাং, পরিবর্তিত হওয়ার পরে, তুমি আর এই ‘মৃত মানুষদের’ মতো থাকবে না। ঈশ্বরের বানীই মানুষের আত্মাকে আলোকিত করে এবং তাদের পুনর্জন্ম ঘটায় এবং যখন মানুষের আত্মা পুনর্জন্ম লাভ করে, তখনই তারা জীবিত হয়ে ওঠে। ‘মৃত মানুষ’ বলতে, আমি শবদেহদের কথা বলতে চেয়েছি যাদের কোনো আত্মা থাকে না এবং আমি সেইসব মানুষদের কথা বলতে চেয়েছি যাদের আত্মা তাদের ভিতরেই মারা গিয়েছে। যখন আত্মার মধ্যে জীবনের আলো জ্বলে ওঠে, তখনই মানুষের মধ্যে প্রাণসঞ্চার ঘটে। যে সাধুসন্তদের কথা আগে বলা হয়েছে তারা হল সেই সব মানুষ যাদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে, যারা আগে শয়তানের কবলে ছিল কিন্তু শয়তানকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছে। …
“… ‘মৃত’ হল তারা যারা ঈশ্বরের বিরোধিতা করে এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে; তাদের আত্মা অসাড় এবং তারা ঈশ্বরের বাক্য বোঝে না; তারা সত্যকে বাস্তবে প্রয়োগ করে না এবং ঈশ্বরের প্রতি তাদের সামান্যতম আনুগত্যও থাকে না এবং এরাই শয়তানের অধীনে থাকে এবং শয়তানের দ্বারা শোষিত হয়। মৃতরা সত্যের বিরোধিতা করে, ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং নীচ, তুচ্ছ, বিদ্বেষপূর্ণ, পাশবিক, প্রতারণাপূর্ণ এবং ছলনাময় আচরণ করে নিজেদের প্রকাশ করে। এই ধরনের মানুষরা ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পান করলেও, ঈশ্বরের বাক্য নিজেদের জীবনে পালন করে চলতে অক্ষম হয়; তারা বেঁচে থাকলেও, যেন তারা শুধুই চলমান, এ যেন মৃতদেহরা শ্বাস নিচ্ছে। মৃতরা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে সম্পূর্ণরূপে অক্ষম, তারা তাঁর প্রতি সম্পূর্ণরূপে বাধ্য হওয়ারও যোগ্য নয়। তারা কেবল তাঁর সাথে প্রতারণা করতে পারে, তাঁর নিন্দা করতে পারে এবং তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে এবং তাদের জীবনযাপনের সম্পূর্ণ ধরন শয়তানের প্রকৃতি প্রকাশ করে। মানুষ যদি জীবিত হতে চায় এবং ঈশ্বরের কাছে সাক্ষ্য দিতে চায় এবং ঈশ্বরের দ্বারা অনুমোদিত হতে চায়, তাহলে তাদের অবশ্যই ঈশ্বরের সামনে পাপমোচন করতে হবে; তাদের অবশ্যই সানন্দে তাঁর বিচার এবং শাস্তির কাছে মাথা নত করতে হবে এবং ঈশ্বরের কাজ থেকে বাদ পড়া এবং তাঁর সাথে মোকাবিলা করাও সানন্দে গ্রহণ করতে হবে। শুধুমাত্র তবেই তারা ঈশ্বর নির্দেশিত সমস্ত সত্যকে বাস্তবে প্রয়োগ করতে সক্ষম হবে, তবেই তারা ঈশ্বরের মোক্ষ লাভ করে সত্যিকারের জীবিত প্রাণীতে পরিণত হবে। ঈশ্বর জীবিতদের রক্ষা করেন; ঈশ্বর তাদের বিচার করেন এবং শাস্তি দেন, তারা নিজেদেরকে উৎসর্গ করতে ইচ্ছুক এবং ঈশ্বরের জন্য তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়েই খুশি এবং তারা আনন্দের সাথে তাদের সমগ্র জীবন ঈশ্বরকে উৎসর্গ করতে চায়। যখন জীবিতরা ঈশ্বরের সাক্ষ্য বহন করে, শুধুমাত্র তখনই শয়তান লজ্জিত হয়; শুধুমাত্র জীবিতরাই সুসমাচার সবার মধ্যে বিতরণ করতে পারে, শুধুমাত্র জীবিতরাই ঈশ্বরের হৃদয়ের অনুসরণ করে এবং শুধুমাত্র জীবিতরাই প্রকৃত মানুষ” (“বাক্য দেহে আবির্ভূত হল”)। এই অনুচ্ছেদটি পড়ার পর, আমি আমার হৃদয়ে জানতাম যে এত বছর ধরে আমি এই উত্তরটিই খুঁজছিলাম। আমি অবশেষে জানতে পারলাম যে “মৃত হওয়া” বা “বেঁচে থাকার” অর্থ কি। যখন ঈশ্বর আদম ও ইভ কে সৃষ্টি করেছিলেন, তখন তারা ঈশ্বরের বাণী শুনতে পেত, প্রকাশ করতে পারত এবং তাঁর মহিমা প্রকাশ করতে পারত। তারা জীবিত মানুষ ছিল। তারপর শয়তান তাদেরকে প্রলুব্ধ করে ঈশ্বরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে, তারা শয়তানের শক্তির অধীনে পাপের মধ্যে বাস করতে শুরু করে, এবং এভাবেই মানবজাতি আরও বেশি ভ্রষ্ট হয়ে উঠেছে, শয়তানের সব ধরনের বিষ আমাদের মধ্যে প্রবেশ করে চলেছে। আমরা পাপের গভীরে ডুবে গিয়েছি, ঈশ্বরকে অস্বীকার করে, প্রত্যাখ্যান করে, তাঁকে প্রতিহত করে, শয়তানি আকাঙ্ক্ষায় ভরা জীবনযাপন করছি। ঈশ্বর প্রথমে আমাদের যে ভাবে তৈরি করেছিলেন আমরা এতটুকুও তার মতো নই। শয়তানের ক্ষমতার অধীনে এবং পাপের মধ্যে যারা বাস করে তাঁদের প্রত্যেককে ঈশ্বর মৃত হিসাবে দেখেন, এবং মৃতরা শয়তানের, তারা ঈশ্বরের বিরোধিতা করে। তারা তাঁর রাজ্যের যোগ্য নয়। জীবিতরা হল তারা যারা ঈশ্বরের দ্বারা উদ্ধার হয়েছে। তাদের ভ্রষ্টাচার ঈশ্বরের বিচার এবং শাস্তির মাধ্যমে শুদ্ধ করা হয়েছে। তারা পাপ, এবং শয়তানের বাহিনীকে পরিহার করেছে এবং ঈশ্বরের বিরোধিতা বন্ধ করেছে। ঈশ্বর যেভাবেই কথা বলুন এবং কাজ করুন না কেন, তারা তাঁকে শুনতে পায় এবং মান্য করে। জীবিতরা ঈশ্বরের মহিমা প্রকাশ করতে পারে এবং সাক্ষ্য দিতে পারে যে, কেবলমাত্র তারাই ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করতে পারে এবং তাঁর রাজ্যে প্রবেশ করতে পারে। জীবিত হতে গেলে, আমাদের অবশ্যই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সত্য গ্রহণ করতে হবে এবং তাঁর বিচার অনুভব করতে হবে, পরিশেষে শুদ্ধ হয়ে আমাদের বিবেক এবং যুক্তি ফিরে পেতে হবে, ঈশ্বরের বাণীকে কাজে লাগাতে হবে, সৃষ্টিকর্তা কে মান্য করতে হবে, এবং ঈশ্বরকে শ্রদ্ধা করতে হবে এবং সাক্ষ্য দিতে হবে। ইনি এমন একজন যিনি সত্যিই জীবনে ফিরে এসেছেন, যিনি রাজ্যে প্রবেশ করতে পারেন এবং অনন্ত জীবন লাভ করতে পারেন। সেই সময়ে আমি সত্যিই বুঝতে পেরেছিলাম যে প্রভু কী বোঝাতে চেয়েছেন “আমিই পুনরুত্থান এবং আমিই জীবন। আমার উপরে যদি কারও বিশ্বাস থাকে তার মৃত্যু হলেও সে জীবন লাভ করবে। আর জীবিত যে কোন জন যদি আমাকে বিশ্বাস করে তার কখনও মৃত্যু হবে না” (যোহন ১১:২৫-২৬)। এটাই এর মানে। আমার মনে হয় আমি এটা বোঝার পর আমার হৃদয় উজ্জ্বল হয়ে গেছে।
আমি তখন আরেকটি লেখা পড়লাম, সেটার শিরোনাম হল “শুধুমাত্র অন্তিম সময়ের খ্রীষ্ট মানুষকে অনন্ত জীবনের পথ দেখাতে পারেন”। আমি এর একটা অনুচ্ছেদের ভিডিও চালাতে চাই। এটা আমার উপর একটা বেশ গভীর ছাপ ফেলেছিল। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “অন্তিম সময়ের খ্রীষ্ট নিয়ে আসেন জীবন, এবং নিয়ে আসেন সত্যের চিরস্থায়ী ও শাশ্বত পথ। এই সত্যের পথেই মানুষ জীবন লাভ করে এবং এটিই একমাত্র পথ যার দ্বারা মানুষ ঈশ্বরকে জানতে পারে এবং ঈশ্বরের দ্বারা অনুমোদিত হয়। অন্তিম সময়ের খ্রীষ্ট যে জীবন যাপনের পথের সন্ধান দিয়েছেন তুমি যদি তার অনুসন্ধান না করো, তবে তুমি কখনই যীশুর অনুমোদন লাভ করতে পারবে না এবং স্বর্গরাজ্যে প্রবেশের যোগ্য কখনই হয়ে উঠতে পারবে না, কারণ তুমি কেবল ইতিহাসের হাতের পুতুল এবং তার বন্দী। যারা নিয়ম-কানুন, লিখিত শব্দ এবং ইতিহাসের শৃঙ্খলে আবদ্ধ, তারা কখনই জীবনকে অর্জন করতে পারে না বা জীবন যাপনের চিরস্থায়ী পথের সন্ধান পেতে পারে না। কারণ তাদের জীবন সিংহাসন থেকে প্রবাহিত প্রাণসঞ্চারী জলের পরিবর্তে হাজার হাজার বছর ধরে আবদ্ধ অস্বচ্ছ জলের মতো। যাদের জীবনে এই প্রাণসঞ্চারী জলের সরবরাহ থাকে না তারা চিরকালই মৃতদেহের অনুরূপ, শয়তানের খেলার সামগ্রী এবং নরকের সন্তান হয়েই থেকে যাবে। তাহলে তারা কীভাবে ঈশ্বরকে দেখতে পাবে? যদি তুমি শুধুমাত্র অতীতকে আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করো, সমস্তকিছুকে নিশ্চল করে রাখার চেষ্টা করো, স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের বিষয়ে নিশ্চেষ্ট থাকো এবং ইতিহাসকে অগ্রাহ্য করো, তাহলে তুমি কি সর্বদা ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচারী নও? ঈশ্বরের কর্মকাণ্ডের পর্যায়গুলি বিশাল এবং শক্তিশালী, ঠিক উথালপাথাল ঢেউ এবং গর্জনকারী বজ্রের মতো – তবুও তুমি নিষ্ক্রিয়ভাবে ধ্বংসের অপেক্ষায় বসে আছো, নিজের অজ্ঞতা আঁকড়ে ধরে আছো এবং নিশ্চেষ্ট রয়েছ। এইভাবে, তুমি মেষশাবকের পদাঙ্ক অনুসরণকারীর মতো কীভাবে বিবেচিত হতে পারো? তুমি কীভাবে সেই ঈশ্বরকে প্রমাণ করবে যাকে তুমি ঈশ্বর বলে আঁকড়ে ধরে থাকো, যিনি সর্বদা নতুন এবং কখনও পুরানো হন না? হলুদ হয়ে যাওয়া জীর্ণ বইয়ের বাক্য কীভাবে তোমাকে নতুন যুগে নিয়ে যেতে পারে? সেগুলি কীভাবে তোমাকে ঈশ্বরের কাজের পদক্ষেপগুলির সন্ধানে পরিচালিত করতে পারে? সেগুলি কীভাবে তোমার স্বর্গের পথ প্রশস্ত করতে পারে? তোমার হাতে ধরা বইগুলি শুধুই অক্ষরের সমাহার, যা কেবল অস্থায়ী শান্তি প্রদান করতে পারে, জীবনদায়ী সত্যের সন্ধান দিতে সক্ষম নয়। তোমার পড়া শাস্ত্রগুলি শুধুমাত্র তোমার জিহ্বাকে সমৃদ্ধ করতে পারে, মানব জীবনের প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনে সাহায্যকারী জীবন দর্শনের সন্ধান দিতে তারা অক্ষম, নিখুঁত হওয়ার অভিমুখে চলার পথ হবার যোগ্যতা তো এগুলির আরোই কম। এই অমিলগুলি কি তোমাকে ভাবনার রসদ জোগাতে পারে না? এটা কি তোমাকে অন্তর্নিহিত রহস্য বুঝতে সাহায্য করে না? তুমি কি স্বর্গে যাওয়ার যোগ্য এবং নিজের সামর্থ্যেই ঈশ্বরের সাথে দেখা করতে সক্ষম? ঈশ্বরের আগমন ব্যতীত তুমি কি ঈশ্বরের সাথে পারিবারিক সুখ উপভোগ করতে স্বর্গে নিজেকে নিয়ে যেতে পারবে? তুমি কি এখনও দিবাস্বপ্ন দেখছো? আমি পরামর্শ দিচ্ছি যে, তাহলে তুমি দিবাস্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দেখো যে এখন কে কাজ করছেন – দেখো কে এখন অন্তিম সময়ে মানুষকে উদ্ধারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এগুলো না পারলে তুমি কখনই সত্য উপলব্ধি করতে পারবে না এবং কখনও জীবন লাভ করতে পারবে না” (“বাক্য দেহে আবির্ভূত হল”)। এই বাণীগুলি আমার উপর সত্যিই বড় প্রভাব ফেলেছে। আমার এই বাণীগুলিকে এত ক্ষমতাবান এবং শক্তিশালী মনে হয়েছে, যে সেগুলি শুধুমাত্র ঈশ্বরের কাছ থেকেই আসতে পারে। মনে পড়ে প্রভু যিশু বলেছিলেন “আমিই পথ। আমিই সত্য এবং আমিই জীবন। আমার মাধ্যমে না গেলে কেউ পিতার কাছে যেতে পারে না” (যোহন ১৪:৬)। এটাই। ঈশ্বর ছাড়া, আর কে রাজ্যের দ্বারের ওপর রাজত্ব করতে পারেন? আমরা যদি অনন্ত জীবন চাই, আমাদের অবশ্যই অন্তিম দিনের খ্রীষ্টের দ্বারা আনা অনন্ত জীবনের পথ গ্রহণ করতে হবে, প্রত্যাবর্তিত প্রভুর দ্বারা প্রকাশিত সত্যগুলিকে মানতে হবে। রাজ্যে প্রবেশের আমাদের আশাগুলিকে বাস্তবায়িত করার এটাই একমাত্র উপায়। আমার নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়েছে যে আমি রাজ্যে প্রবেশের পথ খুঁজে পেয়েছি। আমি খুব উত্তেজিত ছিলাম। আমি ঈশ্বরের বাণীগুলি এমনভাবে পড়েছিলাম যেন সেগুলি একটি অনাহারী মানুষের জন্য খাদ্য ছিল এবং সেগুলি আমার উপর বেশ গভীর প্রভাব ফেলেছে। আমি যত পড়েছি, ততই বুঝেছি যে সেগুলি সব সত্য, যে সেগুলি কোন যাজক বা ধর্মতত্ত্ববিদ থেকে আসতে পারে না। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণীগুলি আমার বিচরণকারী, ক্ষুধার্ত আত্মাকে গভীরভাবে পরিপুষ্ট করেছে, এবং আমি আবার সেই বৃদ্ধের কথা ভাবলাম যিনি আমাকে সংবাদপত্র বিক্রি করার চেষ্টা করছিলেন। তিনি আমাকে বারবার সেই পত্রিকার মাসিক ক্রেতা হতে বলছিলেন আর, সেই কারণেই আমি অবশেষে ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি তাঁকে আর খুঁজে পাইনি। তখন আমি বুঝতে পারলাম এটা ঈশ্বরের বিস্ময়কর কাজ যা এটা ঘটিয়েছে। সেই লোকটি আমাকে পত্রিকার মাসিক ক্রেতা হতে বলছিলেন, যার জন্য আমি ঈশ্বরের কণ্ঠ শুনতে পাই এবং প্রভুর প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানাতে পারি। এটি ছিল ঈশ্বরের পথপ্রদর্শন এবং আমার প্রতি তাঁর ভালবাসা। আমি সত্যিই ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি শুধু নিজেকে ভীষণভাবে ধন্য মনে করি ঈশ্বরের কণ্ঠ শুনতে পেয়ে এবং আমার জীবদ্দশায় তাঁর আবির্ভাবের সাক্ষী হতে পেরে। এটা ঈশ্বরের করুণা এবং অনুগ্রহ, এবং তার চেয়েও বেশি, আমার জন্য তাঁর পরিত্রাণ। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।