ভূমিকম্পের পর

18-02-2023

সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজকে আমি ২০১৯ সালে স্বীকার করেছি। এবং তারপরে, আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অনেক বাক্য পাঠ করেছি। এগুলি এতই উদ্দীপক যে আমি সত্যিই অনুপ্রাণিত হয়েছি। এরকম অনুভূতি আমার আগে হয় নি। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমি শিখেছি যে জীবনকালে, আমাদের বিশ্বাস রাখা ও পাঠ করা উচিত ঈশ্বরের বাক্য এবং সৃষ্ট সত্তার কর্তব্য পালন করা উচিত। যদিও আমার বাবা আমার বিশ্বাসের বিরোধিতা করতেন এবং অসহিষ্ণু হয়ে উঠতেন, আমি সমাবেশে যেতে থাকি, কারণ আমি জানতাম এটিই হল ঈশ্বরের বাক্য উপলব্ধির একমাত্র উপায়। আমি ঈশ্বরের বাক্য পড়তে সক্ষম হওয়ার আগে, আমার জীবন ছিল শূন্য। ঈশ্বরের বাক্যে আমি পূর্ণ হয়েছি এবং পেয়েছি জীবনের দিকনির্দেশ। এটি জরুরি—একত্রিত হয়ে ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করতে পারা।

কিন্তু তারপর শীঘ্রই, আমি প্রলোভনের সম্মুখীন হই। আমার প্রতিবেশী যে দোকানে কাজ করেন সেখানকার সেলস ক্লার্ক হতে বলে্ন, এবং জানান, দৈনিক 500 পেসোর বেশি আমি উপার্জন করতে পারি। তিনি বলেছিলেন যে তিনি নিশ্চিত যে তারা আমাকে নিয়োগ করবে। মনে হয়েছিল, এটি বেশ ভালো আয়। সেই অর্থ দিয়ে, আমি যা চাই নিতে পারি, এবং বাবা-মাকেও সাহায্য করতে পারি। কিন্তু চাকরি নিলে আমার সময় কম থাকত।আমি সাধারণভাবে সমাবেশে যোগ দিতে পারতাম না। তবুও, এই অর্থ আমি চেয়েছিলাম এবং এ সুযোগ হারাতে অনিচ্ছুক ছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমি প্রলোভন এড়াতে পারি নি। কাজটি আমি নিই। একমাসের এক চুক্তি সই করি। যাতে সেই মাসের পর আমি নিয়মিত সমাবেশে যেতে পারি, এবং সেই এক মাসে আমি উপস্থিত থাকার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত যেমন ভেবেছিলাম তেমনটা ঘটে নি। আমার আশা অনুযায়ী সমাবেশে যোগ দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। আমার চাকরির জায়গায় সেল ফোন ব্যবহার করা যেত না এবং ছ’টার আগে আমার ছুটি হতো না। তাছাড়া আমার যাতায়াতের সময় ছিল দীর্ঘ এবং বাড়ি পৌঁছানোর পরে আমি খুব ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। আমার আর কোনো উৎসাহ থাকত না বাড়ি ফিরতে এত দেরি হলে সমাবেশে যোগ দেওয়া সম্ভব হতো না। আমার মনে হতো ঈশ্বরের থেকেই আমি ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছি এবং নামহীন এক ভয় ও অস্বস্তি আমায় ঘিরে থাকত। কারণটা বুঝতাম না কিন্তু বিমর্ষ থাকতাম, প্রায় সব সময়। হাসির ভান করতাম, কিন্তু বাস্তবে, অন্তরে খুব কষ্ট পেতাম। মনে হতো জীবনের সব আলো নিভে গেছে। মাঝে মাঝে এতই হতাশ লাগতো যে কাঁদতে শুরু করতাম। সমাবেশে না যেতে পারার জন্য সত্যিই আফসোস হত। কিন্তু দোকানে যখন কোনো ক্রেতা থাকতো না, তখন আমি চেষ্টা করতাম ঈশ্বরের বাক্য স্মরণ করে লিখে রাখতে, যাতে তা আমি পড়তে এবং চিন্তা করতে পারি। ঈশ্বরের সাহায্য এবং পথপ্রদর্শন আমি অনুভব করতাম। ক্রমাগতই ক্যালেন্ডারের দিকে নজর রাখতাম যে চুক্তির আর কতদিন বাকি আছে। এই কাজ আমি শেষ করতে চাইছিলাম যাতে সমাবেশে আবার যোগ দিতে পারি।

একদিন যখন আমি ফেসবুকে এক ভ্রাতা ঈশ্বর বাক্যের একটি অংশ পাঠালেন। “একের পর এক সমস্ত রকমের বিপর্যয় ঘটবে; সমস্ত জাতি এবং স্থান বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে: মহামারী, দুর্ভিক্ষ, বন্যা, খরা এবং ভূমিকম্প সব জায়গায় হচ্ছে। এসব বিপর্যয় শুধু দু-এক জায়গায় ঘটছে না, দু-একদিনের মধ্যে শেষও হবে না; বরং, পরিবর্তে তারা একটি বৃহত্তর এলাকা জুড়ে প্রসারিত হবে এবং আরো আরো গুরুতর হবে। এই সময়ে, একের পর এক সমস্ত ধরণের কীটপতঙ্গজাত মহামারী দেখা দেবে এবং সর্বত্র স্বজাতিভক্ষণের ঘটনা ঘটবে। এটাই সকল দেশ ও জাতির প্রতি আমার বিচার(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সূচনাকালে খ্রীষ্টের বাক্য, অধ্যায় ৬৫)। “যারা আমাকে ভালবাসে এবং নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে, তাদের ওপর আমার কৃপা বর্ষিত হয়। অপরপক্ষে, দুষ্টদের উপর যে দণ্ড আরোপিত হয়, তা আমার ধার্মিক স্বভাবের অকাট্য প্রমাণ, এবং, তদুপরি, আমার ক্রোধের সাক্ষ্য। বিপর্যয়ের সময়ে আমার বিরোধিতাকারী সকলে দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর শিকার হয়ে কাঁদবে। আর যারা সব ধরনের মন্দ কাজ করলেও, বহু বছর ধরে আমাকে অনুসরণ করেছে, তারাও তাদের পাপের মূল্য পরিশোধ করা থেকে রেহাই পাবে না; তারাও এমন বিপর্যয়ের মধ্যে নিমজ্জিত হবে, যা লক্ষ লক্ষ বছরে কদাচিৎ পরিলক্ষিত হয়েছে, এবং তারা নিয়ত আতঙ্ক এবং ভয়ের বাতাবরণে বসবাস করবে। আর আমার অনুসারীদের মধ্যে যারা আমার প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছে, তারা আনন্দিত হবে এবং আমার ক্ষমতাকে সাধুবাদ করবে। তারা অনির্বচনীয় সন্তুষ্টি বোধ করবে এবং মানবজাতি এমন অভূতপূর্ব আনন্দের মধ্যে বসবাস করবে যা আমি পূর্বে কখনো তাদের উপর বর্ষণ করি নি। আমি মানুষের সৎকর্মকে মূল্যবান মনে করি এবং তাদের মন্দ কর্মকে ঘৃণা করি। যখন থেকে আমি প্রথম মানবজাতিকে পথ দেখাতে শুরু করি, তখন থেকেই আমি অধীর আগ্রহে আশা করেছি যে, একদল আমার সমমনস্ক মানুষকে অর্জন করবো। ইতিমধ্যে, যারা আমার সমমনস্ক মানুষ নয়, আমি তাদের কখনও ভুলি না; আমি সর্বদা অন্তর থেকে তাদের ঘৃণা করি, তাদের এমন প্রতিফল দানের সুযোগের অপেক্ষায় থাকি, যা দেখে আমি পরিতৃপ্ত হবো। এবার অবশেষে আমার দিন সমাগত, এবং আমাকে আর অপেক্ষা করতে হবে না!(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, তোমার নিয়তির জন্য যথাযথ সৎকার্যসমূহ প্রস্তুত করো)। অনুভব করলাম ঈশ্বরের বাক্য কত সত্য এবং আমি ভীত হয়ে পড়লাম। আমি বুঝলাম তিনি যা বলেছেন তার সব কিছুই সম্পূর্ণ হয়েছে। বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে দারুন দুর্যোগ। অগ্নুৎপাত, ঝড়, ভূমিকম্প, মহামারী … সারা বিশ্বজুড়ে যেন একই কান্ড চলছে। কিন্তু নিজেকে আমি ঈশ্বরের থেকে সরিয়ে নিয়েছি কারণ আমি অর্থ রোজগার করতে চেয়েছি। যদি কোনো দুর্যোগ আসে এবং ঈশ্বর যদি রক্ষা না করেন, তাহলে আমি মারাও যেতে পারি। তাই আমি একটি প্রার্থনা করতাম, “হে ঈশ্বর, আমি আপনার ঊর্ধ্বে অর্থকে স্থান দিয়েছি, আমাকে ক্ষমা করুন। আমি জানি আমি আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেছি কিন্তু আমি অনুতাপ করতে চাই।” নিজেকে বোঝাই যে অনুতাপের জন্য হয়তো খুব দেরি হয়নি, এবং সমাবেশে যোগ দেওয়ার সুযোগ হয়তো আমার আছে। আমার চুক্তি শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম।তাহলে আমি আমার কর্তব্য করতে পারি।

কিন্তু সেই বছরেই ১৫ ডিসেম্বর আমি সন্ধিগ্ধ হয়ে উঠলাম। কারণটা আমি জানি না কিন্তু এই অনুভূতির পূর্বাভাস আমি পেয়েছিলাম। মল ছেড়ে আমি বাড়ি ফিরে যেতে চেয়েছিলাম। কাজে্র জায়গায় আমি আর থাকতে চাইছিলাম না ঠিক সেই সময় আমার এক সহকর্মীর সঙ্গে আমি রেস্ট রুমে যাই। তার একটু পরে, যখন আমরা মলের দিকে ফিরে আসছি, হঠাৎ মাটি কেঁপে উঠল। আমি দেখলাম হাজার হাজার মানুষ মল ছেড়ে বেরোনোর জন্য দৌড়াচ্ছে। অনেকে আবার ভয়ে পঙ্গু হয়ে পড়েছে। তাক থেকে জিনিসপত্র পড়ে সর্বত্র ছড়িয়ে যাচ্ছে। কপালের জোরে আমরা বেরোনোর দরজার সামনেই ছিলাম তাই ঐ বাড়ি থেকে দ্রুত বেরিয়ে এসেছিলাম। কম্পন এত ভয়ঙ্কর হচ্ছিল যে আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন দোলনায় রয়েছি এবং কোন নিরাপদ জায়গায় পৌঁছানো ছিল খুব কঠিন। পুরো ঘটনাটি আবার চিন্তা করলে বুঝি, এটি শুরুর ঠিক আগে আমি মল থেকে বেরিয়ে রেষ্ট রুমে আসি এবং বহু মানুষ তখন সেখানে ছিলেন, তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হয়। আর যে মুহূর্তে আমি মলের দিকে ফেরত যাচ্ছিলাম, তখনই শুরু হয় ভূমিকম্প। একেবারে মাপা সময়। সুতরাং এটি ছিল ঈশ্বরের সুরক্ষা যা আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করেছিল। তারপরই আমি খুব বিচলিত হয়ে পড়ি। বেঁচে গেছি বলে শুধু নয়, ঈশ্বর আমার সাথে আছেন।আমি তাঁর ভালোবাসা দেখেছি। ঐ ভূমিকম্প থেকে তিনি আমাকে রক্ষা করেছেন। হৃদয় থেকে আমি তাকে ডেকেছিলাম, “আমাকে রক্ষার জন্য হে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমি কৃতজ্ঞ।” যখন আমি বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন বহু চিন্তা আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো। আমি জানতাম এই চাকরি থেকে আমি অর্থ পাব। কিন্তু তবুও মনে মনে আমি বিষণ্ণ এবং হতাশ ছিলাম। অর্থ সবসময় গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভূমিকম্পের সময় কোন অর্থই তোমার কাজে লাগবে না। ঈশ্বরের সামনে আসা এবং তাঁর পরিত্রাণ পাওয়াই হল মূল কথা। আমি বাড়ি ফিরে যেতে এবং একটি সমাবেশে যোগদানের জন্য আকুল হয়ে উঠেছিলাম। সবাইকে বলতে চেয়েছিলাম কীভাবে ঈশ্বর আমাকে বিপর্যয় এড়াতে পরিচালিত করেছেন। সকলকে বলতে চেয়েছিলাম, ঈশ্বরের ভালোবাসা এবং কাজের প্রমাণ কীভাবে আমি পেয়েছি।

সেই দিন বাড়ি ফেরার পথে আমি ভাবছিলামঃ ঈশ্বরের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার পরেও কেন তিনি আমাকে রক্ষা করলেন? গির্জার অ্যাপ খুলে ঈশ্বরের কয়েকটি বাক্য দেখলাম। “ঈশ্বরের প্রেম ব্যবহারিক: ঈশ্বরের অনুগ্রহে, মানুষ একের পর এক বিপর্যয় এড়িয়ে যায়, এবং ঈশ্বর সর্বক্ষণ বারংবার মানুষের দূর্বলতার প্রতি সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করেন। ঈশ্বরের বিচার এবং শাস্তিদানের ফলে মানুষ ক্রমশ মানবজাতির কলুষ এবং শয়তানোচিত স্বভাব দেখতে পায়। ঈশ্বর যা প্রদান করেন, মানুষের প্রতি তাঁর আলোকপ্রাপ্তি এবং তাঁর পথনির্দেশনা, তার ফলে মানবজাতি সত্যের সারমর্ম সম্বন্ধে অধিকতর অবগত হয়ে ওঠে, এবং ক্রমান্বয়ে জানতে পারে মানুষের কী প্রয়োজন, তার কোন পথ গ্রহণীয়, কীসের জন্য তারা বেঁচে থাকে, তাদের জীবনের মূল্য ও অর্থ, এবং সম্মুখবর্তী পথে কীভাবে চলতে হবে। এই সকল কার্য যা ঈশ্বর করেন তা তাঁর একমাত্র আদি উদ্দেশ্যের সাথে অবিচ্ছেদ্য। কী তবে সেই উদ্দেশ্যে? মানুষের উপর তাঁর কার্য নির্বাহ করতে ঈশ্বর কেন এই পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করেন? কী ফলাফল তিনি অর্জন করতে চান? অন্যভাবে বললে, তিনি মানুষের মধ্যে কী দেখতে চান? মানুষের কাছ থেকে তিনি কি প্রাপ্ত করতে চান? ঈশ্বর যা দেখতে চান তা হল, মানবহৃদয়ের পুনরূজ্জীবন সম্ভবপর। মানুষের উপর কাজ করার জন্য ঈশ্বর যে সকল পদ্ধতি প্রয়োগ করেন তা এক নিরন্তর প্রচেষ্টা মানুষের হৃদয়কে জাগরিত করার, মানুষের আত্মাকে জাগরিত করার, এবং মানুষকে বোঝানোর যে তাদের উৎপত্তিস্থল কোথায়, কে তাদের পথনির্দেশনা, সমর্থন, এবং যোগান দিয়ে চলেছে, এবং কে মানুষকে অদ্যবধি জীবিত থাকার অনুমতি দিয়েছে; এগুলির মাধ্যমে মানুষ উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় যে সৃষ্টিকর্তা কে, তাদের কার উপাসনা করা উচিত, কী ধরনের পথে তাদের চলে উচিত, এবং কোন পথে মানুষের ঈশ্বর-সমীপে উপনীত হওয়া উচিত; এগুলিই হল মনবহৃদয়ের ক্রমশ পুনরূজ্জীবনের উপায়-স্বরূপ, যাতে মানুষ ঈশ্বরের হৃদয়কে জানতে পারে, ঈশ্বরের হৃদয়কে উপলব্ধি করতে পারে, এবং মানুষের উদ্ধারের উদ্দেশ্যে তাঁর কার্যের নেপথ্যে নিহিত পরম যত্ন ও সুবিবেচনার বিষয়ে অবগত হতে পারে। মানব হৃদয়ের পুনরূজ্জীবন ঘটলে, মানুষ আর অধঃপতিত, ভ্রষ্ট স্বভাব নিয়ে বেঁচে থাকতে চায় না, বরং পরিবর্তে সে চায় ঈশ্বরের সন্তুষ্টিবিধানের উদ্দেশ্যে সত্যের অন্বেষণ করতে। মানবহৃদয়ের যখন জাগরণ ঘটে, তখন মানুষ নিজেদের শয়তানের থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন করে তুলতে সক্ষম হয়। পুনরায় কখনও তারা শয়তানের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, আর কখনো সে তাদের নিয়ন্ত্রিত করতে বা মূর্খ প্রতিপন্ন করতে পারবে না। পরিবর্তে, ঈশ্বরের হৃদয়কে পরিতৃপ্ত করার জন্য মানুষ ঈশ্বরের কার্যে এবং তাঁর বাক্যে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করতে পারে, ফলত সে অর্জন করে ঈশ্বরে ভীতি এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ। এ-ই হল ঈশ্বরের কর্মের মূল উদ্দেশ্য(বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৬)। কী মনোমুগ্ধকর কথা শুনলাম। ঈশ্বরের ভালবাসা এবং করুণা প্রত্যক্ষ করলাম। কেবল অর্থের প্রত্যাশায় আমি সমাবেশে যোগ দেওয়া পরিত্যাগ করি, তাই ভেবেছিলাম যে ঈশ্বর আমাকে রক্ষা করবেন না। কিন্তু ভূমিকম্প যখন হল, তিনি আশ্চর্যজনকভাবে আমাকে রক্ষা করলেন এবং আমাকে দূরে সরিয়ে রাখলেন না। ঈশ্বর চেয়েছিলেন, সম্পূর্ণভাবে সচেতন হওয়ার জন্য যেন আমি অর্থ লিপ্সা ত্যাগ করি। তিনি চেয়েছিলেন, আমি যেন তাঁর কাছে আসি, সত্য অনুসরণ করি এবং কর্তব্য পালন করি। নিজেকে অসম্ভব ভাগ্যবান মনে হয়েছিল। ঈশ্বর যে সুযোগ আমাকে দিয়েছেন, তা হারাতে চাইনি, আমার অনুতাপ করা উচিত ছিল, ভোগসুখ ছেড়ে গির্জায় আমার কর্তব্য পালন দরকার ছিল।

ডিসেম্বরে আমার চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে, আমার সবটুকু সময় এবং উৎসাহ দিয়ে আমার কর্তব্য পালন করেছিলাম। সমস্যায় পড়লে নিজেকে দুর্বল ভাবতাম, এবং কখনও কখনও খুব ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। সে সময় আমি মনে করতাম, ভূমিকম্পের সময় ঈশ্বর কী ভাবে আমাকে সুরক্ষা দিয়েছিলেন। সমস্যা কঠিন হলেও এই চিন্তায় আমি বুঝতাম, আমাকে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং ঈশ্বরের ভালোবাসা পরিশোধের জন্য কর্তব্য করে যেতে হবে। আমি ভেবেছিলাম, যদি এইভাবে কাজ করি, তবেই একটি সুন্দর গন্তব্যে পৌঁছাব এবং বিপর্যয় এড়াতে পারব। তারপর এক দিন, আমি দেখলাম, “আশীর্বাদের জন্য আমার উদ্দেশ্য অসুস্থতার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।” ভিডিওটিতে এক বিশ্বাসী ভ্রাতাকে দেখানো হয়েছিল, যিনি বহু ত্যাগের মাধ্যমে কঠোর পরিশ্রমে গির্জার কর্তব্য পালন করেছেন, যতদিন পর্যন্ত তিনি প্রবল অসুস্থ না হয়ে পড়েন। তাঁর অবস্থা ছিল খুবই করুণ এবং তিনি ঈশ্বরকেও অভিশাপ দিতেন। তাঁর মনে হত তিনি এত ত্যাগ করেছেন, সুতরাং তাঁর এত অসুস্থ হওয়া উচিত ছিল না, এবং তিনি বুঝতে পারছিলেন না ঈশ্বর তাঁকে কেন সুরক্ষা দিলেন না। কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য পড়ার পর তিনি উপলব্ধি করেন, সত্যের অনুসরণ এবং ঈশ্বরকে মান্য করার কর্তব্য তিনি করেন নি। তিনি কেবল ঈশ্বরের আশীর্বাদ চেয়েছিলেন এবং ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন। তাঁর অভিজ্ঞতা দেখার পর, আমি উপলব্ধি করি আমার কর্তব্য পালনের উদ্দেশ্যও হয়তো কালিমালিপ্ত। আমার সবসময় মনে হত ঈশ্বর আমাকে বিপদে রক্ষা করবেন। তাই আমার ভয় হয়েছিল যে ঐ ভ্রাতার মতই আমি হয়তো ঈশ্বরের সাথে দেনা-পাওনার হিসাব কষেছি। পরে সেই রাত্রিতে, নিজেকে প্রশ্ন করি, আমার কর্তব্য কি ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা? অথবা ঈশ্বরের আশীর্বাদ পাওয়া? আমার মনে এল ভূমিকম্পের কথা এবং কীভাবে আমি সুরক্ষা পেয়েছিলাম, এবং এই ঘটনায় যে ভয় আমি পেয়েছিলাম সেই চিন্তা। আমি এতই ভীত হয়ে পড়েছিলাম যে আমার মনে হত একদিন নিশ্চিত আমি দুর্যোগের মধ্যে পড়ব। তাই,যখন আমি কর্তব্য পালনের জন্য ফিরে আসি, তখন আমার একমাত্র লক্ষ্য ছিল ঈশ্বর যেন দুর্যোগের সময় আমাকে রক্ষা করেন। ভিডিওর ভ্রাতার মতো আমরও একই উদ্দেশ্য এবং নজর ছিল। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এবং আমি পড়েছিলাম ভূমিকম্পের কবলে। ঈস্বরকে সন্তুষ্ট করা আমার উৎসর্গের উদ্দেশ্য ছিল না। আমি কেবল বিপর্যয়ে তাঁর সুরক্ষা চেয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম সুফল এবং তাঁর রাজ্যে প্রবেশ করতে। সেই রাত জুড়ে আমি বিমর্ষ ছিলাম। আমি মেনে নিতে পারছিলাম না যে আমার কর্তব্য পালনের একমাত্র কারণ ছিল ঈশ্বরের আশীর্বাদ পাওয়া। আমি গভীরভাবে চেয়েছিলাম যাতে আমি সৎ থাকি। কিন্তু সত্য কথাটা হল ব্যক্তিগত লাভই ছিল আমার বিশ্বাসের কারণ। আমাদের স্রষ্টা হিসাবে ঈশ্বরের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ছিল না, আমি ঈশ্বরের প্রার্থনা বা তাঁকে মান্য করি নি।

পরে, এ বিষয়ে আমি সত্য অনুসন্ধান করি এবং ঈশ্বরের এই বাক্যগুলি পাই। “সমুদ্র সৈকতে যে পরিমাণ বালুকণা আছে আমার কীর্তিসমূহ তার থেকেও অধিকতর, এবং আমার প্রজ্ঞা শলোমনের সকল পুত্রের চেয়েও বেশি, তবু মানুষ আমাকে সামান্য চিকিৎসক ও মানুষের এক অজ্ঞাতপরিচয় শিক্ষক মনে করে। এত মানুষ আমার প্রতি শুধু এই বিশ্বাস রাখে যে আমি তাদের সুস্থ করতে পারি। কত মানুষ আমার প্রতি শুধু এই বিশ্বাস রাখে যে আমি তাদের দেহ থেকে কলুষিত আত্মাকে বিতাড়িত করতে পারি এবং কত মানুষ বিশ্বাস করে যে তারা আমার থেকে শুধু শান্তি ও আনন্দ পেতে পারে। কত মানুষ আমার প্রতি বিশ্বাস রাখে শুধুমাত্র অধিকতর বস্তুগত সম্পদের আশায়। কত মানুষ আমার প্রতি বিশ্বাস রাখে শুধুমাত্র এই জীবন শান্তিতে অতিবাহিত করার আশায় এবং ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে সুরক্ষিত থাকার আশায়। কত মানুষ আমার প্রতি শুধু নরকের যন্ত্রণা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এবং স্বর্গের আশীর্বাদ লাভের জন্য বিশ্বাস রাখে। কত মানুষ শুধুমাত্র সাময়িক আরামের জন্য আমাকে বিশ্বাস করে, কিন্তু পরলোকের জন্য কিছুই অর্জন করতে চায় না। যখন আমি মানুষের উপর আমার ক্রোধ বর্ষণ করেছিলাম ও তাদের অধিকৃত সব আনন্দ ও শান্তি কেড়ে নিয়েছিলাম, মানুষ তখন সন্দিহান হয়ে পড়েছিল। আমি যখন তাদের নরকের যন্ত্রণা দিয়েছিলাম এবং স্বর্গের আশীর্বাদ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম তখন মানুষের লজ্জা ক্রোধে পরিণত হয়েছিল। মানুষ যখন আমাকে নিরাময় করতে বলেছিল, আমি তাতে কোনো মনোযোগ দিইনি এবং তার প্রতি আমার ঘৃণার উদ্রেক হয়েছিল; মানুষ আমাকে ত্যাগ করে তার বদলে জাদু ও ক্ষতিকর ওষুধের পথ গ্রহণ করেছিল। যখন মানুষ আমার কাছে যা যা দাবি করেছিল সেই সব আমি কেড়ে নিয়েছিলাম, প্রত্যেকে চিহ্নমাত্র না রেখে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। তাই আমি বলি, মানুষ আমাকে বিশ্বাস করে কারণ আমি আমি খুব বেশি অনুগ্রহ করি এবং আমার থেকে তাদের অনেক কিছু পাওয়ার আছে(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, তুমি বিশ্বাস সম্পর্কে কী জানো?)। ঈশ্বরের বাক্যে আমার মনের অবস্থা প্রকাশ পেল। শুধুমাত্র তাঁর করুণা-প্রাপ্তির প্রতিই আমার বিশ্বাস ছিল, তাঁকে আমি কেবল বিপদের ত্রাণকর্তা হিসেবেই পেতে চেয়েছিলাম। ভূমিকম্পের পরে, অর্থ এবং ভোগবাসনা আমি পরিত্যাগ করি এবং কর্তব্য পালনে ফিরে আসি, যতই কঠিন পরিশ্রম আমি করে থাকি না কেন আমি কিন্তু শুধু চেয়েছিলাম ঈশ্বর যেন দুর্যোগ থেকে আমাকে রক্ষা করেন। ঈশ্বরের থেকে আশীর্বাদ লাভের উপায় হিসেবে আমি আমার কর্তব্যকে ব্যবহার করেছি। ব্যক্তিগত লাভের জন্য আমি আমার কর্তব্য পালন করি। গড়ে তুলতে চাই ঈশ্বরের সাথে লেনদেন। যখন আমি আমার এই স্বার্থপর উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত হই তখন আমি খুবই লজ্জিত এবং অপরাধী বোধ করি। ভুল ছিল আমার দৃষ্টিভঙ্গি। ঈশ্বর কাছে আমি প্রার্থনা করেছি, “হে ঈশ্বর আমি খুবই ভ্রষ্টাচারী। আমার সমস্ত প্রয়াসই লেনদেনের। আমি আপনার সাথে তঞ্চকতা করেছি। হে ঈশ্বর আমার তঞ্চক বৃত্তি প্রকাশের জন্য আমি কৃতজ্ঞ এবং এখন আমাকে নিজেকে জানতে দিন। আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য আমি আর আমার কর্তব্য করতে রাজি নই। আমি শুধু আপনাকে সন্তুষ্ট করতে চাই।”

পরে এক ভগিনী আমাকে কয়েকটি ঈশ্বরের বাক্য পাঠিয়েছিলেন। সেগুলি আমাকে বুঝতে সাহায্য করেছিল যে আমার প্রয়াসের মধ্যে কোথায় কোথায় ভ্রান্তি ছিল। ঈশ্বরের বাক্যে বলা হয়েছে, “ঈশ্বরের প্রতি তোমার বিশ্বাসের ক্ষেত্রে, তুমি এখন কোন পথে চল? তুমি যদি পিতরের মতো জীবনের, আত্মোপলব্ধির এবং ঈশ্বর-জ্ঞানের অন্বেষণ না কর, তাহলে তুমি কিন্তু পিতরের পথে চলছ না। ইদানিং অধিকাংশ মানুষই এই ধরনের পরিস্থিতিতে থাকে: ‘আশীর্বাদ অর্জনের জন্য, আমাকে অবশ্যই নিজেকে ঈশ্বরের জন্য ব্যয় করতে হবে এবং তাঁর জন্য মূল্য দিতে হবে। আশীর্বাদ অর্জন করতে হলে আমাকে ঈশ্বরের জন্য অবশ্যই সমস্ত কিছু পরিত্যাগ করতে হবে; তাঁর অর্পিত দায়িত্বভার অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে, এবং নিজের কর্তব্য ভালোভাবে পালন করতে হবে।’ এখানে আশীর্বাদ লাভের অভিপ্রায়টাই মুখ্য, এ হল ঈশ্বরের কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে পুরস্কার এবং খেতাব লাভের উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের জন্য নিজেকে ব্যয় করার একটি উদাহরণমাত্র। এই ধরনের মানুষের অন্তরে সত্য থাকে না, আর তাদের উপলব্ধিও নিশ্চিতভাবে শুধুমাত্র কিছু মতবাদমূলক কথা দিয়েই পরিপূর্ণ, যেগুলো তারা সর্বত্র জাহির করে বেড়ায়। তাদের পথ হল পৌলের পথ। এই ধরনের লোকদের কাছে, বিশ্বাস হল অবিরামভাবে শ্রমসাধ্য কাজ, এবং মনের গভীরে তাদের এই ধারনা রয়েছে যে, তারা যত বেশি সেই কাজ করবে, ততই ঈশ্বরের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রমাণিত হবে; যেন সেই কাজে তারা যত বেশি পরিশ্রম করবে, তিনি ততই নিশ্চিতরূপে সন্তুষ্ট হবেন; এবং তারা যত বেশি করে সেই কাজ করবে, ততই বেশি করে ঈশ্বরের সামনে খেতাব লাভের যোগ্য হবে, এবং ততই বেশি করে আশীর্বাদ লাভ করবে। তারা ভাবে যে, তারা যদি যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে, প্রচার করতে পারে, এবং খ্রীষ্টের জন্য মৃত্যুবরণ করতে পারে, তারা যদি নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে পারে, এবং ঈশ্বরের অর্পিত সমস্ত দায়িত্ব সম্পন্ন করতে পারে, তাহলে তারাই ঈশ্বরের মহানতম আশীর্বাদ অর্জন করবে এবং নিশ্চিতভাবেই তাদের খেতাব দেওয়া হবে। এ হল অবিকল পৌলের কল্পনা ও চাহিদা; ঠিক এই পথেই সে হেঁটেছিল, এবং এই ধরনের চিন্তাভাবনার দ্বারা নির্দেশিত পথেই সে ঈশ্বরের সেবার কাজ করেছিল। এই প্রকার চিন্তাভাবনা এবং উদ্দেশ্য কি শয়তানোচিত স্বভাব থেকে উদ্ভূত নয়?(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, পিতরের পথে চলার উপায়)। “সমস্ত দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ নিজেদের জন্য বাঁচে। প্রত্যেক মানুষই নিজের জন্য এবং শয়তান সবচেয়ে পিছনের জনকে দখল করে—এটাই হল মানবপ্রকৃতির সারাংশ। মানুষ তাদের নিজেদের স্বার্থে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে; তারা যখন সমস্ত কিছু পরিত্যাগ করে এবং ঈশ্বরের জন্য নিজেদের ব্যয় করে, তখন তা আশীর্বাদ পাওয়ার জন্যই; এবং তারা যখন তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকে, তখন তা পুরস্কৃত হওয়ার জন্য। সংক্ষেপে, এই সমস্ত কিছুই আশীর্বাদ পাওয়া, পুরস্কৃত হওয়া এবং স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করার উদ্দেশ্যেই করা হয়। সমাজে মানুষ তার নিজের সুবিধার জন্যই কাজ করে, এবং ঈশ্বরের গৃহে তারা আশীর্বাদ লাভের জন্য কর্তব্য সম্পাদন করে। আশীর্বাদ অর্জনের স্বার্থে মানুষ সমস্ত কিছু পরিত্যাগ করে এবং প্রচণ্ড যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে: মানুষের শয়তানোচিত স্বভাবের এর থেকে ভালো প্রমাণ আর হয় না(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। ঈশ্বরের বাক্য থেকে আমি অনেক শিখেছি। বহু মানুষ তাঁর জন্য মূল্য দিতে সবকিছু ছেড়ে দিতে পারে, কিন্তু তাদের আন্তরিকতা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য নয়, কেবল আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য। তারা ঠিক পৌলের মত। পৌল অনেক কষ্ট সহ্য করেছিলেন এবং অনেক ভ্রমণ, সুসমাচার প্রচার করেছিলেন, কিন্তু তিনি শুধু ঈশ্বরের আশীর্বাদ পেতে সেই কাজ এবং প্রচেষ্টার বিনিময় করতে চেয়েছিলেন। এবং অনেক কাজ করার পরে, তিনি বলেন, “জীবনের সংগ্রাম আমি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছি, নিরূপিত পথের শেষ পর্যন্ত দৌড়েছি। বিশ্বাস আমার এখনও অটুট রয়েছে। ধর্মনিষ্ঠার পুরস্কার আমার জন্য তোলা রয়েছে” (২ তিমথির ৪:৭-৮)। পৌলের প্রতিটি কাজ ছিল লেনদেনের। এগুলির সবই ছিল মুকুটের জন্য, আশীর্বাদ এবং পুরস্কারের জন্য। তিনি ঈশ্বরের বাক্যর বাস্তবতায় প্রবেশ না করে শুধু কাজের প্রতি যত্নবান ছিলেন। এ কারনেই পৌলের স্বভাব কখনই বদলায় নি। এই কারণেই ঈশ্বর তাঁকে কখনই তাঁর অনুমোদন দেননি, যদিও তিনি সুসমাচার প্রচার করেছিলেন এবং বহু অনুগামী লাভ করেছিলেন। নিজের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম, আমিও পৌলের মতই। যখন আমি চাকরি ছাড়ি, আমার সমস্ত সময় এবং উৎসাহ আমি ব্যয় করেছিলাম কর্তব্য পালনের জন্য। যে সব দিনে আমি ব্যস্ত থাকতাম, খাওয়ার সময় পেতাম মাত্র একবার। কিন্তু সে কাজ সত্য অনুসরণের বা ঈশ্বরের সন্তুষ্টিবিধানের নয়, কেবল মাত্র তাঁর আশীর্বাদ লাভের আশায়। নিজেকে চেনার বা ভ্রষ্টাচার দূর করার চেষ্টায় নয়, আমি শুধু চেয়েছিলাম ঈশ্বর দেখুন আমি কতটা করছি, এবং আমাকে রক্ষা করুন, যাতে আমি সুফল পাই এবং তাঁর রাজ্যে প্রবেশ করি। আমি বুঝেছি শয়তানের দ্বারা কতটা গভীরভাবে আমি কলুষিত, এবং কতটা স্বার্থপর, এবং কী ভাবে আমি সবকিছু করেছি নিজ স্বার্থের জন্য, ঈশ্বরের প্রতি আমার ভক্তি বা প্রকৃত প্রেম ছিল না। শুধুই নিজের জন্য। এটি বুঝে আমার সত্যিই মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, “হে ঈশ্বর, দয়া করে আমাকে পরিবর্তিত হতে সাহায্য করুন। দায়িত্ব পালনে আমার দৃষ্টিভঙ্গি ভুল। আপনার ইছানুযায়ী আমি কর্তব্য পালন করতে চাই এবং নিজের জন্য নয়।”

কিছু পরে, ঈশ্বরের বাক্যের আরেকটি অনুচ্ছেদ আমি পড়ি যা আমাকে খুব নাড়া দিয়ে যায়। ঈশ্বরের বাক্যে বলা হয়েছে, “সর্বান্তকরণে তোমাদের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হওয়া ছাড়া আমার অন্য বিকল্প নেই, তবু তোমরা দুষ্ট অভিপ্রায় পোষণ কর এবং আমার প্রতি তোমরা ঐকান্তিকতাহীন। এটাই তোমাদের কর্তব্যের ব্যাপ্তি, তোমাদের একমাত্র কাজ! তা-ই নয় কি? তোমরা কি জানো না যে সৃজিত সত্তার কর্তব্য সম্পাদনে তোমরা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছ? কীভাবে তোমাদের সৃজিত সত্তা বলে গণ্য করা যায়? তোমরা যা অভিব্যক্ত ও যাপন করছ তা ঠিক কী—সেটা কি তোমাদের কাছে পরিষ্কার নয়? তোমরা তোমাদের দায়িত্ব পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছ, কিন্তু তোমরা ঈশ্বরের সহিষ্ণুতা ও অপার অনুগ্রহ লাভ করতে চাও। এমন অনুগ্রহ তোমাদের মতো অপদার্থ ও নিকৃষ্ট মানুষদের জন্য নয়, বরং যারা কিছুই চায় না এবং সানন্দে ত্যাগ করে তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তোমাদের মতো এই ধরনের মধ্যমানের ব্যক্তিগণ স্বর্গের অনুগ্রহ উপভোগের সম্পূর্ণ অযোগ্য। তোমাদের আয়ুষ্কালকে সঙ্গদান করবে শুধু ক্লেশ ও অনন্ত শাস্তিভোগ! তোমরা যদি আমার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে না পার, তাহলে তোমাদের নিয়তি হবে যন্ত্রণাক্লিষ্ট। তুমি যদি আমার বাক্য ও কার্যের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে না পারো, তাহলে তোমার পরিণতি হবে শাস্তিময়। সকল অনুগ্রহ, আশীর্বচন ও রাজ্যের অপরূপ জীবনের সাথে তোমাদের কোনো সম্বন্ধ থাকবে না। এই পরিসমাপ্তিই তোমাদের উপযুক্ত, তোমাদের স্বেচ্ছাহূত পরিণাম! এই মূর্খ ও উদ্ধত লোকগুলি শুধু যে তাদের যথাসাধ্য প্রচেষ্টা করে না ও কর্তব্য পালন করে না তা-ই নয়, অনুগ্রহ লাভের জন্য হাত বাড়িয়ে থাকে, যেন তাদের যা প্রার্থনীয় তারা তার যোগ্য। আর তাদের যা যাঞ্চা তা পেতে ব্যর্থ হলে, তারা আরো কম আস্থাবান হয়ে যায়। এই ধরনের ব্যক্তিকে কীভাবে বিচক্ষণ বলে গণ্য করা যায়? তোমরা হলে স্বল্প ক্ষমতার যুক্তিজ্ঞানশূন্য মানুষ, পরিচালনামূলক কার্যের সময় তোমাদের করণীয় কর্তব্য নির্বাহ করতে পূর্ণত অক্ষম। তোমাদের মূল্য ইতিমধ্যেই তড়িদ্বেগে পতিত হয়েছে। তোমাদের প্রতি প্রদর্শিত এমন অনুগ্রহ পরিশোধে তোমাদের ব্যর্থতা ইতিমধ্যেই এক চূড়ান্ত বিদ্রোহাত্মক আচরণ, তোমাদের দণ্ডদানের জন্য যথেষ্ট কারণ, এবং এ তোমাদের কাপুরুষতা, অপটুতা, নীচতা ও অযোগ্যতার পরিচায়ক। তোমরা তোমাদের হাত প্রসারিত করে রাখার অধিকার কোথা থেকে পেলে?(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরের অবতারের সেবাব্রত ও মানুষের কর্তব্যের মধ্যে পার্থক্য)। এটি পড়ার সময় আমি উপলব্ধি করি, কতটা লোভী ছিলাম আমি। আমি আমার দায়িত্বে অনেক সময় দিতাম, কিন্তু আমি সব সময় ঈশ্বরের কাছ থেকে আশীর্বাদ চেয়েছিলাম, চুক্তি করছিলাম। আমি আসলে আমার দায়িত্ব পালন করছিলাম না এবং আমি যথার্থ সৃষ্ট সত্তা ছিলাম না। ঈশ্বরের করুণা চাওয়ার অধিকার আমার কী করে হত, দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে বা তাঁর রাজ্যে প্রবেশ করতে? ঈশ্বরের বাক্যর প্রকাশ ছাড়া, আমি কখনই জানতাম না যে আমি কতটা বিদ্রোহী এবং ভ্রষ্টাচারী, বা আশীর্বাদের জন্য আমার ঘৃণ্য উদ্দেশ্যকে ঈশ্বর কতটা ঘৃণা করেন। আমি শুধু নিজের কথা ভেবেছি, ঈশ্বরের ইচ্ছা নয়। আমার মতো কেউ ঈশ্বরের পরিত্রাণের যোগ্য নয়। ঈশ্বর ন্যায়পরায়ণ এবং পবিত্র। তিনি তাঁর অনুগত মানুষদের পছন্দ করেন। যারা শুদ্ধ চিত্তে দায়িত্ব পালন করতে পারে। কিন্তু আমার কি আদৌ বিশুদ্ধ হৃদয় ছিল? না। ছিল না। আমি খুবই লজ্জিত ছিলাম আমার ঘৃণ্য উদ্দেশ্যগুলির জন্য এবং লাগামছাড়া বাসনার জন্য। আমি ঈশ্বরের অনুগ্রহের যোগ্য ছিলাম না। আমি নিজেকে এবং আমার ভুল উদ্দেশ্যগুলি পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম, আমার কর্তব্যের মধ্যে যা কিছু ছিল তা দিয়ে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করাতে চেয়েছিলাম।

পরে যখন আমি এক সমাবেশে ছিলাম, আমি ঈশ্বরের কয়েকটি বাক্য পড়ি যা অনেক সাহায্য করেছে। ঈশ্বরের বাক্যে বলা হয়েছে, “মানুষের কর্তব্য ও সে আশীর্বাদধন্য না অভিশপ্ত—এই দুইয়ের মধ্যে কোনো পারস্পরিক সম্পর্ক নেই। মানুষের যা পালন করা উচিৎ, তা-ই হল কর্তব্য; এ হল তার স্বর্গ-প্রেরিত বৃত্তি, এবং এই বিষয়ে প্রতিদান, শর্তসমূহ, অথবা যুক্তির উপর নির্ভরশীল হওয়া এর উচিত নয়। কেবল তাহলেই বলা যায় যে সে তার কর্তব্য করছে। আশীর্বাদধন্য হওয়ার অর্থ হল বিচারের অভিজ্ঞতার অন্তে নিখুঁত হওয়া ও ঈশ্বরের শুভাশিস উপভোগ করা। অভিশপ্ত হওয়ার অর্থ হল বিচার ও শাস্তির অভিজ্ঞতার পরেও স্বভাবের পরিবর্তন না ঘটা; কেউ যখন নিখুঁত হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা অর্জন না করে কেবলমাত্র শাস্তিই প্রাপ্ত হয়, তখন সে অভিশপ্ত। কিন্তু আশীর্বাদধন্য বা অভিশপ্ত যা-ই হোক না কেন, সৃজিত সত্তার যা করণীয় ও যা তাদের সাধ্যায়ত্ত তা সম্পাদন করে তাদের কর্তব্য পালন করা উচিৎ; একজন মানুষের, একজন ঈশ্বর-সন্ধানী মানুষের, ন্যূনতম এটুকু করাই উচিৎ। নিছক আশীর্বাদধন্য হওয়ার উদ্দেশ্যে কর্তব্য সম্পাদন করা তোমার অনুচিৎ, আবার অভিশপ্ত হওয়ার ভয়ে কাজ করতে অস্বীকার করাও উচিৎ নয়। তোমাদের এই একটা কথা বলা যাক: মানুষের কর্তব্য সম্পাদন হল তার করণীয় কাজ করা, আর যদি সে তার কর্তব্য পালনে অসমর্থ হয়, তবে সেটা তার বিদ্রোহীসুলভ আচরণ। তার কর্তব্য সম্পাদন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই মানুষ ক্রমশ পরিবর্তিত হয়, এবং এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সে তার আনুগত্য প্রদর্শন করে। তাই, তুমি যত বেশি করে তোমার কর্তব্য পালন করবে, তত বেশি সত্য তুমি লাভ করবে, এবং তোমার অভিব্যক্তি তত বাস্তবোচিত হয়ে উঠবে(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরের অবতারের সেবাব্রত ও মানুষের কর্তব্যের মধ্যে পার্থক্য)। এটি পড়ার পর আমি বুঝেছিলাম, যেহেতু আমি এক সৃষ্ট জীব, আমি আমার কর্তব্য পালন করব—তা আমার দায়িত্ব। ঈশ্বরের কাছ থেকে আশীর্বাদ দাবি করা আমার উচিত নয়। চিন্তা করা উচিত নয় যে আমি সুরক্ষিত হব না কি শাস্তি পাব। আমার একমাত্র চিন্তা হওয়া উচিত কীভাবে সুন্দর করে আমার কর্তব্য পালন করব। সাধারণভাবে আমি ভাবতাম যদি দায়িত্ব পালন করি, তাহলে ঈশ্বর আমাকে শাস্তি দেবেন না। আর আমি বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ব না। আমি ভাবতাম যে তিনি কেবল তাদেরই শাস্তি দেবেন যারা তাঁকে অনুসরণ করে না বা দায়িত্ব পালন করে না, তাই আমি ঈশ্বরের সুরক্ষার বিনিময়ে আমার দায়িত্ব ব্যবহার করছিলাম। তারপর বুঝতে পারলাম আমাদের মত সৃষ্ট জীবের জন্য কর্তব্য পালন করাই ন্যূনতম কাজ। এর সাথে আশীর্বাদ প্রাপ্ত হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। এবং পরিশেষে আমি রক্ষা বা শাস্তি যাই পাই, ঈশ্বর দেখেন যে আমি সত্য লাভ করেছি কি না, আমি পরিবর্তিত হয়েছি কি না। এটিই ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণতা। কোনো বিপর্যয়ে যদি আমি আহত বা নিহতও হই, আমি তাও ঈশ্বরের নিয়মের কাছে নতি স্বীকার করব এবং কখনই ঈশ্বর-নিন্দা করব না। বিপর্যয় থেকে একমাত্র বাঁচার জন্য আমি আমার কর্তব্য পালন করব না। কোন সৃষ্ট জীবের কর্তব্য তা নয়। নিজেকে আমার ঈশ্বরের কাছে নিবেদন করা উচিত এবং বিনিময়ে কিছু না চেয়েই কর্তব্য পালন করা উচিত, কারণ, তিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর দায়িত্ব পালনের সময় যতবার পেরেছি নিজেকে স্মরণ করিয়েছি। স্বার্থপরতার সাথে কোন কাজ করব না আমাকে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে হবে এবং তাঁকে আনন্দ দিতে হবে।

ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। আমার ভ্রষ্টাচার, আমার অনুপযুক্ত সাধনা প্রকাশ করতে ঈশ্বর এই পরিস্থিতিগুলি ব্যবহার করেছিলেন, যাতে আশীর্বাদ প্রাপ্তির জন্য আমার ঘৃণ্য উদ্দেশ্য আমি দেখতে পাই, এবং বিশ্বাসের সাধনায় যাতে কিছু পরিবর্তন আনতে পারি। এবং এখন, আরো অনুগ্রহ পেতে আমি কোনো দায়িত্ব পালন করি না অথবা দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে। আমি শুধু সত্যের অনুসরণ এবং দায়িত্ব পালন করতে চাই এবং ঈশ্বরের ভালবাসার প্রতিদান দিতে চাই।

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

ঈশ্বর নির্ভরতাই পরম জ্ঞা

২০১১ সালের শরতকালে, ফাং মিং নামে একজন গ্রামবাসীর সাথে দেখা হল। সে মানবিক আর খুব দয়ালু, ২০বছরেরও বেশি সময় ধরে তার প্রভুতে বিশ্বাস, সে...

একজন “ভালো নেতার” প্রতিফলন

ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা সকলের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ, সহজগম্য এবং সহানুভূতিশীল থাকতে শিখিয়েছে। আশেপাশের মানুষের যদি সমস্যা বা ত্রুটি থাকত,...

বিশ্বাস: শক্তির উৎস

গত গ্রীষ্মে। আমি অনলাইনে অনুসন্ধান করছিলাম এবং অন্যেরা আমার সঙ্গে অনেক সত্যের সহ ভাগীতা করেছিল, এই বিষয়গুলি নিয়ে কীভাবে ঈশ্বর...

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন