কীভাবে আমার মিথ্যাচারের প্রতিকার করলাম

04-09-2023

ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ গ্রহণ করার আগে, আমি একটুও চিন্তা না ক’রে লোকের সাথে সাথে মিথ্যা কথা বলতাম আর চাটুকারিতা করতাম, কারণ সত্যি কথা বলে মানুষকে হতাশ বা ক্ষুব্ধ করতে আমি ভয় পেতাম। ২০১৮-র নভেম্বরে আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাসী হয়ে উঠি, এবং তাঁর বাক্যের মাধ্যমে জানতে পারি যে তিনি চাটুকার ও ধূর্ত মানুষদের ঘৃণা করেন। আমি সিদ্ধান্ত নিই যে তাঁর বাক্য অনুশীলন করবো আর সৎ মানুষ হয়ে উঠবো, এবং খানিক চেষ্টার পর, আমি অধিকাংশ সময় সৎভাবে কথা বলতে সক্ষম হয়ে উঠি। উদাহরণস্বরূপ, চিকিৎসার জন্য যখন আমাকে ৫০০০ টাকা দিতে হতো, কিন্তু ফার্মাসিস্ট হিসাবে ভুল ক’রে তার অর্দ্ধেক টাকা নিলো, আমি একটুও চিন্তা না ক’রে তার ভুল ধরিয়ে দিলাম। কিন্তু যখন কোনোকিছু আমার সুনাম বা ব্যক্তিগত স্বার্থের উপর প্রভাব ফেলতো, তখন অকপট হওয়া কঠিন ছিল।

২০২১-এর মার্চে, আমি গির্জার নেতা হিসাবে কাজ করছিলাম, আর সবসময় ব্যস্ত থাকতাম। যথেষ্ট সময় ঘুমাতে না পারার ফলে মাঝেমাঝেই খুব পরিশ্রান্ত থাকতাম। একদিন বিকেলে একটু সময়ের জন্য চোখটা বুজতে যাবো, ঠিক তখনই আমার পার্টনার সিস্টার সুসান বলল আমাদের কাজের বিষয়ে আমার সাথে কথা বলতে চায়। ওর মেসেজ দেখে খুব একটা খুশি হলাম না, কারণ খুবই ক্লান্ত লাগছিল, আর আমি কিছুই আলোচনা করতে চাইছিলাম না। সেই সময় একটু বিশ্রাম নেওয়া ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারছিলাম না, কিন্তু সেকথা সোজাসুজি সুসানকে বলতে চাইনি। ভয় হল, ও আমার সম্পর্কে কী ভাববে, যে আমি অলস বা এরকম কিছু, ভাববে আমি শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে বেশিই উদ্বিগ্ন, হয়ত আমার সম্বন্ধে খারাপ ধারণা করবে। তাই নিজের ভাবমূর্তির স্বার্থে ওকে বলে দিলাম, “দুঃখিত, আমার একটা জরুরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে, ডাক্তার দেখাতে যেতে হবে।” একটুও চিন্তা না করেই মুখ থেকে মিথ্যাটা বেরিয়ে এল। এত অপরাধবোধ হচ্ছিল যে তারপর আর একটুও বিশ্রাম নিতে পারলাম না, সারাক্ষণ খুব খারাপ লাগছিল। ঈশ্বর সৎ মানুষদের পছন্দ করেন। এত সহজে আমি মিথ্যা বললাম কী করে? তাহলে আমাকে কীভাবে বিশ্বাস করা যেতে পারে? জানতাম যে নিজের শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য মিথ্যা বলা ঠিক নয়, ঈশ্বর তা পছন্দ করবেন না, গির্জার কাজকেই আমার অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। আমি তখনই সুসানের কাছে হাজির হলাম। ও জিজ্ঞাসা করল আমি ইতিমধ্যেই ডাক্তারের কাছ থেকে ফিরে এসেছি কি না। ওকে সত্যিটা বললাম না, মিথ্যাই বলতে থাকলাম, যাতে ও আমাকে খারাপ না ভাবে, একজন ধূর্ত ব্যক্তি না মনে করে। বললাম, ডাক্তারের সাথে দেখা হয়নি, ভ্যাকসিন দিতে যেতে হবে বলে শেষ মুহূর্তে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করে দিয়েছে। এরপর আমাদের কথাবার্তা কাজের দিকে ঘুরে গেল, কিন্তু আমার সত্যিই অস্বস্তি লাগছিল। ওকে একবার মিথ্যা বললাম, তারপর সেটা স্বীকার না ক’রে মিথ্যাই বলতে থাকলাম। নিজের এত গুরুতর শয়তানোচিত স্বভাব দেখে নিজের প্রতি লজ্জা হল। ওর চোখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। ওকে প্রতারণা করেছি, অর্থাৎ আমি সত্যিই একজন অসৎ মানুষ। নিজের মধ্যে সত্যিই দ্বন্দ্ববোধ হচ্ছিল। যদি ওকে সত্যি কথা বলে দিই, তাহলে ওর কাছে আমার ভাবমূর্তি ভেঙে যাবে, ও আমাকে অসৎ মনে করবে। কিন্তু যদি যদি মিথ্যাই বলতে থাকি, তাহলে ঈশ্বর আমার প্রতি বিতৃষ্ণা বোধ করবেন। তাই আত্মসমীক্ষার জন্য ঈশ্বরের সম্মুখে এলাম, আর আত্মচিন্তায় বুঝতে পারলাম, জীবনে অনেকবার আমি অবিশ্বস্ত আর চতুর আচরণ করেছি। একবার এক নেতা আমায় জিজ্ঞাসা করেছিল, আমি সিস্টার জোয়িকে সেদিন সন্ধ্যার সমাবেশের ব্যাপারে জানিয়েছি কি না। জানতাম যে আমি জানাইনি, কিন্তু নেতার কাছে নিজের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে তাকে সত্যি কথা বলিনি। মিথ্যা ক’রে বললাম, এই একটু আগেই জানিয়েছি ওকে। তারপর তাড়াতাড়ি জোয়িকে একটা মেসেজ ক’রে সমাবেশের ব্যাপারে জানিয়ে দিলাম। এছাড়াও, সাধারণত প্রতি শুক্রবার সকালে আমি মুদিখানার জিনিসপত্র কিনতে বেরোতাম, তাই সেই সময় হঠাৎ কোনো সমাবেশের আয়োজন হলে তাতে যোগ দিতে পারতাম না। আমি নেতাকে সোজাসুজি সত্যি কথা বলতাম না যে আমায় খাবার কিনতে যেতে হবে আগামী কয়েকদিনের জন্য, আর এটাই আমার জিনিসপত্র কেনাকাটার একমাত্র সময়। বলতাম, আমার অন্য একটা সমাবেশ আছে, বা একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে, সেইজন্য যেতে পারবো না। বিষয়গুলো ঘুরিয়ে দিতাম, চাতুরি আর প্রতারণা করতাম শুধু নিজের ভাবমূর্তি রক্ষা করার জন্য, আর নেতাকে এরকম মনে করাতাম যে আমি সবসময় নিজের দায়িত্বে ব্যস্ত। দেখলাম ঈশ্বরের যে সততার প্রয়োজন আমি তার ধারেকাছে কোথাও নেই। তাই প্রার্থনা করলাম, “সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, আমি নিজের মিথ্যা আর প্রতারণার জন্য প্রকৃতই অনুতপ্ত। নিজের দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য মিথ্যা বলাকে আমি কিছুতেই বন্ধ করতে পারছি না। আমি একেবারেই সৎ মানুষ নই। ঈশ্বর, দয়া ক’রে আমায় সত্য উপলব্ধি করতে পথনির্দেশ দাও আর সাহায্য করো, যাতে এই ভ্রষ্টতা থেকে মুক্ত হতে পারি।”

পরে ঈশ্বরের বাক্যের এই অংশটা আমি পাঠ করি। “তাদের প্রাত্যহিক জীবনে, মানুষ অনেক কিছু বলে যা অর্থহীন, অসত্য, অজ্ঞতাপ্রসূত, নির্বোধসুলভ, এবং অজুহাত হিসাবে কথিত। মূলগতভাবে, এগুলি তারা বলে তাদের আত্মাহঙ্কারের খাতিরে, তাদের আত্মশ্লাঘার সন্তুষ্টিবিধানের উদ্দেশ্যে। তাদের এই অনৃতভাষণগুলি তাদের ভ্রষ্ট স্বভাবের অবাধ বহিঃপ্রকাশ। এই ভ্রষ্ট আচরণের সমাধা করলে তোমার হৃদয়ের পরিশোধন ঘটবে, এবং এইভাবে, তোমায় পূর্বাপেক্ষা অধিকতর শুদ্ধ এবং অধিকতর সততাপরায়ণ করে তুলবে। বস্তুত, তারা কেন মিথ্যা কথা বলে তা সকল মানুষই জানে: তারা তা বলে তাদের স্বার্থ, মুখরক্ষা, আত্মশ্লাঘা, ও মর্যাদার খাতিরে। এবং অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করতে গিয়ে, তারা তাদের প্রকৃত ক্ষমতার থেকে অনেক বেশি অতিরঞ্জিত করে নিজেদের উপস্থাপন করে। যার ফলে, তাদের মিথ্যাগুলি অনাবৃত হয়ে যায় ও অন্যেরা তা ধরে ফেলে, ফলস্বরূপ উল্টে তাদের বেইজ্জত হতে হয়, এবং তাদের চরিত্রহানি ও মর্যাদাহানি ঘটে। অত্যধিক মিথ্যার এটাই পরিণতি। যখন তুমি প্রচুর মিথ্যা কথা বলো, তখন তোমার দ্বারা উচ্চারিত প্রতিটি কথা কলুষিত। তার সবটাই অসত্য, এবং তার কিছুই সত্য বা বস্তুনিষ্ঠ হতে পারে না। যদিও মিথ্যাভাষণকালে হয়তো তোমার মাথা হেঁট না-ও হতে পারে, কিন্তু তোমার মনের মধ্যে ইতিমধ্যেই তুমি অসম্মানিত বোধ করো। তোমার বিবেকের দ্বারা নিজেকে তুমি অভিযুক্ত বলে অনুভব করবে, এবং নিজেকে তুমি ঘৃণা করবে ও অবজ্ঞার চোখে দেখবে। ‘কেন আমি এত অনুকম্পনীয়ভাবে জীবনযাপন করি? একটা সৎ কথা বলা কি সত্যিই এত কঠিন কাজ? নিছক মুখরক্ষার জন্য এই মিথ্যাগুলি কি আমার না বললেই নয়? এই ভাবে জীবনধারণ করা এত ক্লান্তিকর কেন?’ ক্লান্তিকর নয়, এমন এক উপায়ে তুমি জীবনধারণ করতে পারো। তুমি যদি একজন সৎ মানুষ হওয়ার অনুশীলন করো, তাহলে তুমি উদ্বেগশূন্যভাবে ও স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে পারো, কিন্তু তোমার সম্মান ও অহমিকাকে সুরক্ষিত রাখার উদ্দেশ্যে যখন তুমি অনৃতভাষণের পথ বেছে নাও, তখন তোমার জীবন ক্লান্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক, এর অর্থ এ হল এক স্ব-আরোপিত যাতনা। মিথ্যা বলার মাধ্যমে কোন সম্মান তুমি লাভ করো? তা হল এক এমনকিছু যা শূন্যগর্ভ, সম্পূর্ণ মূল্যহীন। যখন তুমি মিথ্যা কথা বলো, তখন তুমি তোমার নিজের নৈতিক চরিত্র ও মর্যাদার প্রতি প্রবঞ্চনা করছো। এই মিথ্যাগুলির কারণে মানুষ তাদের মর্যাদা হারিয়ে ফেলে, তাদের চরিত্র খোয়াতে বাধ্য হয়, এবং ঈশ্বর তাদের অপ্রীতিকর ও ঘৃণাময় বলে মনে করেন। এই মিথ্যাগুলি কি এতই মূল্যবান? না, তা নয়। এই পথ কি সঠিক? না, তা-ও নয়। যারা প্রায়সই মিথ্যা বলে, তারা তাদের শয়তানোচিত স্বভাবের ফাঁদে আবদ্ধ এবং শয়তানের আধিপত্যের অধীন হয়ে জীবনযাপন করে, আলোর মাঝে বা ঈশ্বরের সম্মুখে নয়। অনেকসময়, কীভাবে কোনো মিথ্যা কথা বলবে তা নিয়ে তোমায় চিন্তাভাবনা করতে হয়, এবং মিথ্যাটি বলার পর, তোমাকে চিন্তা করতে হয় কীভাবে তুমি তা ধামাচাপা দেবে, এবং তুমি যদি তা যথেষ্ট সুচারুভাবে গোপন না করো, তাহলে মিথ্যা প্রকাশ্যে এসে যাবে, তাই মিথ্যা গোপন করার জন্য তোমার রীতিমতো মাথা খাটানোর প্রয়োজন হয়। এইভাবে বেঁচে থাকা কি ক্লান্তিকর নয়? তা অতীব ক্লান্তিকর। এমন ক্লান্তির কি কোনো অর্থ আছে? আদৌ কোনো অর্থ নেই। শুধুমাত্র আত্মশ্লাঘা ও মর্যাদার খাতিরে মিথ্যা বলা ও তা গোপন করার জন্য মাথা ঘামিয়ে লাভ কী? পরিশেষে, এই ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করে তুমি নিজের মনেই বলবে, ‘কেন নিজেকে আমি এমনতর জটিলতার ভিতর ঠেলে দিচ্ছি? মিথ্যা বলা ও তা ধামাচাপা দেওয়ার বিষয়টা খুবই ক্লান্তিকর। একজন সৎ মানুষ হওয়া এর থেকে বরং সহজতর।’ তুমি একজন সৎ লোক হতে চাও, কিন্তু তোমার মর্যাদা, দাম্ভিকতা ও স্বার্থকে তুমি ত্যাগ করতে পারো না। তুমি কেবল মিথ্যা কথা বলতে এবং মিথ্যার সাহায্য নিয়ে এই বিষয়গুলোকে রক্ষা করতে পারো। … তুমি হয়তো ভেবে থাকতে পারো যে মিথ্যার প্রয়োগ তোমার কাঙ্ক্ষিত সুখ্যাতি, মর্যাদা, এবং অহমিকাকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম, কিন্তু এটি বড়োমাপের এক ভুল ধারণা। মিথ্যা কেবল যে তোমার অহমিকা ও ব্যক্তিগত সম্ভ্রমবোধকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যর্থ হয় তা-ই নয়, যা আরো মারাত্মক তা হল, মিথ্যা তোমার কাছ থেকে সত্যানুশীলন ও একজন সৎ মানুষ হওয়ার সুযোগ কেড়ে নেয়। এমনকি সেই মুহূর্তে যদি তুমি তোমার সুনাম ও অহংবোধকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষমও হও, কিন্তু তুমি সত্যকে হারিয়ে ফেলো, এবং তুমি ঈশ্বরের বিশ্বাসভঙ্গ করো, যার অর্থ তুমি ঈশ্বরের দ্বারা উদ্ধার লাভের ও নিখুঁত হওয়ার সুযোগ সম্পূর্ণরূপে খুইয়ে বসো। এটিই হল সবচেয়ে বড়ো ক্ষতি এবং এক চিরকালীন আক্ষেপের বিষয়(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র সৎ হওয়ার মাধ্যমেই প্রকৃত মানুষ হিসাবে জীবনযাপন করা যায়)। এটা আমাকে নিখুঁতভাবে বর্ণনা করেছে। দেখলাম যে আমি চতুর এবং শঠ। যখন আমি শুধু বিশ্রাম নিতে চাইছিলাম, তখন এত ছোট ব্যাপারেও সত্যি কথা বলতে পারিনি। পার্টনারকে সরাসরি বলিনি যে আমার সামান্য বিশ্রাম নেওয়া দরকার, ওর সাথে একটু সময় পরে দেখা করতে চাই, তার পরিবর্তে মিথ্যা বলেছি। আমার উদ্দেশ্য ছিল নিজের সম্মান আর মর্যাদা রক্ষা করা, অন্যের কাছে নিজের ভাবমূর্তি রক্ষা করা। কিন্তু ঈশ্বর এরকম আচরণকে ঘৃণা করেন, আর আমি নিজেও তা নিয়ে অপরাধবোধ অনুভব করছিলাম। ঠিক যেমন ঈশ্বরের বাক্যে বলা আছে, “যদিও মিথ্যাভাষণকালে হয়তো তোমার মাথা হেঁট না-ও হতে পারে, কিন্তু তোমার মনের মধ্যে ইতিমধ্যেই তুমি অসম্মানিত বোধ করো। তোমার বিবেকের দ্বারা নিজেকে তুমি অভিযুক্ত বলে অনুভব করবে, এবং নিজেকে তুমি ঘৃণা করবে ও অবজ্ঞার চোখে দেখবে। ‘কেন আমি এত অনুকম্পনীয়ভাবে জীবনযাপন করি? একটা সৎ কথা বলা কি সত্যিই এত কঠিন কাজ? নিছক মুখরক্ষার জন্য এই মিথ্যাগুলি কি আমার না বললেই নয়? এই ভাবে জীবনধারণ করা এত ক্লান্তিকর কেন?’” ঈশ্বরের এই বাক্যগুলোতে আমি সত্যি নিজেকে খুঁজে পেলাম। সত্যিই অনুভব করলাম যে নিজের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে মিথ্যা বলা বেঁচে থাকার এক ক্লান্তিকর উপায়, প্রথম মিথ্যাকে ঢাকতে আমায় মিথ্যা বলেই যেতে হতো, এবং পরিশেষে আরো বেশি করে ভণ্ড ও কুটিল হয়ে উঠতাম। আমি জানতাম যে ঈশ্বর এটা ঘৃণা করেন, কারণ তিনি পবিত্র এবং ধার্মিক। আমার সমস্ত অসততার কথা মনে ক’রে, আমার সকল মিথ্যার জন্য বিবেক দংশন অনুভব করলাম, তার জন্য অনুশোচনা ক’রে ঈশ্বরের সামনে কেঁদে ফেললাম, আর নিজের মিথ্যাচরণের জন্য লজ্জাবোধ করলাম। কিন্তু এই ঘটনার পরেও আমি আরও মিথ্যা না বলে থাকতে পারলাম না। আমি এতই ভ্রষ্ট আর লজ্জাজনক ছিলাম! মিথ্যাচার আমার প্রকৃতি হয়ে উঠেছিল। প্রভু যীশুর কিছু বাক্য আমার মনে পড়ল: “তোমাদের বক্তব্য সম্মতিসূচক হলে বল, ‘হ্যাঁ’, আর অসম্মতিসূচক হলে বল, ‘না’। এর অতিরিক্ত সব কথাই শয়তানের প্ররোচনা(মথি ৫:৩৭)। “শয়তানই তোমাদের জন্মদাতার অভিসন্ধি পূরণ করাই তোমাদের অভিপ্রায়। প্রথম থেকেই সে হত্যাকারী। সে সত্যে প্রতিষ্ঠিত নয়। সত্যের লেশ মাত্র নেই তাই অন্তরে। মিথ্যা বলাই তার স্বভাব। সে মিথ্যাবাদী, মিথ্যার জন্মদাতা(যোহন ৮:৪৪)। এ কথা সত্যি। আমার নিরন্তর মিথ্যাচার দেখিয়েছিল যে আমি শয়তানের অধিকৃত, আর শুধু নিজের ভাবমূর্তি ও সুনাম রক্ষা করার জন্য আমি তা করছিলাম। কিন্তু তা আমার সমস্ত চরিত্র আর মর্যাদা নষ্ট করেছিল। কী মূর্খই না ছিলাম আমি! ঈশ্বর আশা করেছিলেন যে আমি সত্যের অনুশীলন করবো, একজন সৎ মানুষ হবো, সাক্ষ্য দেবো আর শয়তানকে অপমানিত করবো। কিন্তু আমি শয়তানের কৌশলের ফাঁদে পড়ে যাচ্ছিলাম, তার উপহাসের পাত্র হয়ে উঠেছিলাম। এসব শুধু নিজের সুনামের জন্য, আর নিজের ভ্রষ্টতা ঢাকা দিতে। আমি একজন সৎ মানুষ ছিলাম না, বরং প্রতারক প্রকৃতির ছিলাম।

এরপর ঈশ্বরের বাক্যে এটাও পড়েছিলাম: “তোমাদের জানা উচিৎ যে যারা সৎ তাদের ঈশ্বর পছন্দ করেন। সারসত্য হলো, ঈশ্বর নিষ্ঠাবান, এবং তাই তাঁর বাক্যে সবসময় আস্থা রাখা যায়। উপরন্তু, তাঁর কার্য ত্রুটিহীন এবং প্রশ্নাতীত। সেই কারণে, ঈশ্বর তাদের পছন্দ করেন যারা তাঁর সাথে সম্পূর্ণভাবে সৎ থাকে। সততার অর্থ ঈশ্বরকে তোমার হৃদয় দেওয়া, সকল বিষয়ে ঈশ্বরের প্রতি আন্তরিক থাকা, সকল বিষয়ে তাঁর প্রতি উন্মুক্ত থাকা, কখনো তথ্য গোপন না করা, তোমার থেকে উপরে অথবা নীচে যারা রয়েছে তাদের ঠকানোর চেষ্টা না করা, এবং, শুধুমাত্র ঈশ্বরের পক্ষপাতিত্ব লাভের উদ্দেশ্য নিয়ে কোন কাজ না করা। সংক্ষেপে বললে, সৎ থাকা মানে তোমার কাজে এবং কথায় বিশুদ্ধ থাকা, এবং, ঈশ্বরের ও মানুষের সাথে প্রবঞ্চনা না করা(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, তিনটি সাবধানবাণী)। দেখলাম যে সৎ হওয়ার অর্থ হৃদয়ে কোনো প্রতারণা না থাকা, মুখে কোনো মিথ্যা না থাকা, আর কোনোকিছুতেই ঈশ্বর বা মানুষকে না ঠকানো। উপলব্ধি করলাম যে আগে সুসানের সাথে সত্যিই আমি চাতুরি করেছি, নিজের ভাবমূর্তি আর স্বার্থ রক্ষার জন্য সবসময় মিথ্যা বলেছি। আমি ক্লান্ত ছিলাম, সামান্য বিশ্রাম নিতে চাইছিলাম, তাই ঠিক সেই মুহূর্তে তার সাথে গির্জার কাজের আলোচনা করতে চাইছিলাম না, কিন্তু আমার মনে যা ছিল তা বলতে চাইনি, বরং মিথ্যা বলেছিলাম যে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে, কারণ আমি চাইনি যে ও আমাকে নিচু ভাবুক। আমি ভীষণ ক্লান্ত, একটু বিশ্রাম দরকার, এটা বলার চেয়ে ওর সাথে দেখা না করার জন্য মিথ্যা বলাকে বেছে নিয়েছিলাম। আর যখন আমাদের দেখা হল, তখনও নিজের ভুল স্বীকার করলাম না, বরং মিথ্যা বলতে থাকলাম, প্রথম মিথ্যাটা ঢাকতে আর একটা ভণ্ডামির আশ্রয় নিলাম। নেতা যখন কাজের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলো, যে কাজ আমি আসলে করিনি, মিথ্যা বললাম যে তা করেছি। এবং যখন আমার সাপ্তাহিক কেনাকাটায় যাওয়ার প্রয়োজন ছিল, আর সেটা একটা সমাবেশের সময়ের সাথে মিলে গেল, আমি মিথ্যা বললাম যে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। সবকিছুতে আমি শুধু নিজের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখতে চেয়েছি। দেখতে পেলাম যে আমার সত্যিই এক শঠ, প্রতারক প্রকৃতি ছিল। একেবারে সামান্য বিষয়েও আমি সত্যি কথা বলতে পারতাম না। শয়তানের দ্বারা এত গভীরভাবে ভ্রষ্ট ছিলাম, এতটুকুও সৎ ছিলাম না।

ঈশ্বরের বাক্যের আর একটা অনুচ্ছেদ আমি পড়লাম। “তাদের সত্যিই মানব সদৃশ কিছু থাকুক বা না থাকুক, এবং স্পষ্টভাবে তারা নিজেদের পরিমাপ করতে পারুক বা না পারুক, অথবা তাদের ঘাটতিগুলো দেখতে পাক বা না পাক, মানুষ যদি শুধুমাত্র সৎ হওয়ার সন্ধান করে, তাহলেই তারা জানতে পারে যে তারা কত গভীরভাবে ভ্রষ্ট। শুধু যখন তারা সততার অনুশীলন করে, তখন অবগত হতে পারে যে কত মিথ্যা তারা বলে, আর তাদের প্রতারণা ও অসততা কত গভীরভাবে প্রচ্ছন্ন রয়েছে। শুধুমাত্র সৎ হওয়ার অনুশীলনের অভিজ্ঞতা লাভ করার সময়ই মানুষ ধীরে ধীরে তাদের ভ্রষ্টতার সত্যকে জানতে পারে এবং নিজেদের প্রকৃতি ও সারমর্মকে চিনতে পারে, এবং একমাত্র তাহলেই তাদের ভ্রষ্ট স্বভাব ক্রমাগত পরিশুদ্ধ হতে পারে। শুধুমাত্র তাদের ভ্রষ্ট স্বভাবের ক্রমাগত পরিশুদ্ধ হয়ে ওঠার কার্যসূচীর মধ্যেই মানুষ সত্যকে অর্জন করতে সক্ষম হয়ে উঠবে। তোমাদের যতটা প্রয়োজন ততটা সময় নিয়ে এই বাক্যগুলো অনুভব করো। যারা শঠ লোক, ঈশ্বর তাদের নিখুঁত করে তোলেন না। যদি তোমার হৃদয় সৎ না হয়—যদি তুমি সৎ ব্যক্তি না হও—তাহলে তুমি ঈশ্বরের দ্বারা অর্জিত হবে না। একইভাবে, তুমি সত্য অর্জন করতে পারবে না, এবং ঈশ্বরকে লাভ করতেও অপারগ হবে। ঈশ্বরকে লাভ করতে অপারগ হওয়ার অর্থ কী? যদি তুমি ঈশ্বরকে লাভ না করো এবং সত্যকে না উপলব্ধি করে থাকো, তাহলে তুমি ঈশ্বরকে জানতে পারবে না, এবং তাই ঈশ্বরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার জন্য তোমার কোনো উপায় থাকবে না, সেক্ষেত্রে তুমি ঈশ্বরের শত্রু। যদি তুমি ঈশ্বরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হও, তাহলে ঈশ্বর তোমার ঈশ্বর নন; এবং ঈশ্বর যদি তোমার ঈশ্বর না হন, তাহলে তুমি উদ্ধারলাভ করতে পারবে না। তুমি যদি পরিত্রাণ অর্জনের সন্ধান না করো, তাহলে তুমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করো কেন? যদি পরিত্রাণ অর্জন করতে না পারো, তাহলে তুমি ঈশ্বরের একজন চিরশত্রু হয়ে থাকবে, এবং তোমার পরিণাম নির্ধারণ করা হবে। সুতরাং, মানুষ যদি উদ্ধার পেতে চায়, তাহলে তাদের সৎ হওয়া দিয়েই আরম্ভ করতে হবে। যারা শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের দ্বারা অর্জিত হবে তাদের চিহ্নিত করার একটা লক্ষণ আছে। তোমরা কি জানো সেটা কী? তা বাইবেলের প্রকাশিত বাক্যে লেখা আছে: ‘এবং এদের মুখের কথায় কোনো চাতুর্য পাওয়া যায়নি: কারণ ঈশ্বরের সিংহাসনের সম্মুখে এরা নির্দোষ’ (প্রকাশিত বাক্য ১৪:৫)। ‘এরা’ কারা? এরা তারা, যারা উদ্ধারলাভ করেছে, নিখুঁত হয়ে উঠেছে এবং ঈশ্বরের দ্বারা অর্জিত হয়েছে। এই মানুষদের ঈশ্বর কীভাবে বর্ণনা করেন? তাদের বৈশিষ্ট্য এবং তাদের কাজকর্মের অভিব্যক্তি কী কী? তারা কলঙ্কবিহীন। তারা কোনো মিথ্যা বলে না। তোমরা সকলেই সম্ভবত বোঝো এবং উপলব্ধি করো যে কোনো মিথ্যা না বলার অর্থ কী: এর অর্থ সৎ হওয়া। ‘কলঙ্কবিহীন’: এটা কী নির্দেশ করে? এর অর্থ কোনো মন্দ কর্ম না করা। কোনো মন্দ কর্ম না করা কীসের ভিত্তির উপরে নির্মিত? নিঃসন্দেহে, তা নির্মিত ঈশ্বরে ভীত হওয়ার ভিত্তির উপর। সুতরাং, কলঙ্কবিহীন হওয়ার অর্থ ঈশ্বরে ভীতি ও মন্দের পরিত্যাগ। কলঙ্কবিহীন কোনো একজনকে ঈশ্বর কীভাবে সংজ্ঞায়িত করেন? ঈশ্বরের দৃষ্টিতে, শুধুমাত্র যারা ঈশ্বরে ভীত এবং মন্দের পরিত্যাগ করে তারাই নিখুঁত; সুতরাং, কলঙ্কবিহীন মানুষ হল তারাই যারা ঈশ্বরে ভীত এবং মন্দের পরিত্যাগ করে, এবং শুধু যারা নিখুঁত তারাই কলঙ্কবিহীন। এটা সম্পূর্ণভাবে সঠিক(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, জীবনের উন্নতির ছয়টি সূচক)। এই বিষয়ে চিন্তা করে আমি সত্যি আতঙ্কিত বোধ করলাম। ঈশ্বর বলেন, “যদি তুমি সৎ ব্যক্তি না হও—তাহলে তুমি ঈশ্বরের দ্বারা অর্জিত হবে না। একইভাবে, তুমি সত্য অর্জন করতে পারবে না, এবং ঈশ্বরকে লাভ করতেও অপারগ হবে।” “যদি পরিত্রাণ অর্জন করতে না পারো, তাহলে তুমি ঈশ্বরের একজন চিরশত্রু হয়ে থাকবে, এবং তোমার পরিণাম নির্ধারণ করা হবে।” এ কথা সত্যি যে ঈশ্বর প্রতারণাপূর্ণ মানুষদের উদ্ধার করেন না। জানতাম যে যদি আমি অনুতপ্ত না হই, তাহলে পরিশেষে ঈশ্বর আমাকে অপসারিত করবেন। ঈশ্বরের বাক্যের সুবাদে, আমি শেষ পর্যন্ত নিজের সম্পর্কে প্রকৃত উপলব্ধি লাভ করলাম, আর জানতে পারলাম যে মিথ্যা শয়তানের কাছ থেকে আসে, এবং আমার বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া আর সমাজের প্রভাবেই আমি মিথ্যাচরণ করি। আমার মা সবসময় বলতো, কারো মাথার চুল বা জামাকাপড় যতই বিতৃষ্ণা উদ্রেক করুক, আমায় তবুও ভালো কথা বলতে হবে যাতে তার অনুভূতি আহত না হয়। নাহলে আমার যখন সাহায্যের প্রয়োজন হবে তখন কেউই আমার পাশে থাকবে না। এই ধরনের শিক্ষার ফলে, আমার সৎ হওয়ার মতো সাহস ছিল না। ভালো ভাবমূর্তি বজায় রাখার জন্য কাজ করে গেছি, যাতে মানুষ আমায় পছন্দ করে আর সহানুভূতিশীল মনে করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, পরিশেষে হয়ে উঠেছি এক ভণ্ড, প্রতারণাপূর্ণ মানুষ। আমার মনে পড়ল বাইবেলের ইয়োব ১:৭ ছত্রের কথা: “যিহোবা শয়তানকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোথা থেকে আসছ? শয়তান বলল, আমি পৃথিবীর চতুর্দিক পরিভ্রমণ করে এলাম।” শয়তানের কথাগুলো ছিল ধূর্ত আর তির্যক, কী বলছে সে সম্পর্কে পরিষ্কার ছিল না। মিথ্যাচরণের মাধ্যমে আমিও কি শয়তানের মতোই ধূর্ততা করছিলাম না? সত্যিই লজ্জাবোধ করলাম, দেখলাম আমারও শয়তানের মতো একই ধরনের প্রকৃতি ছিল। আমি শয়তানের শক্তির অধীনে বাস করছিলাম, এবং নিজের শয়তানোচিত স্বভাব থেকে একেবারেই মুক্ত ছিলাম না। এভাবে কী করে খ্রীষ্টের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে পারবো অথবা ঈশ্বরের অনুমোদন পেতে পারবো? আমি অনুশোচনার জন্য ঈশ্বরের সম্মুখে এলাম, তাঁকে বললাম আমায় ক্ষমা করতে। আমার সত্যিই নিজের আর শয়তানের প্রতি ঘৃণা হচ্ছিল, আর খুবই অপরাধবোধ হচ্ছিল। ঈশ্বরের স্বভাব ধার্মিক, এবং জানতাম যে আমি মিথ্যাচার ও তাঁকে ক্ষুব্ধ করা অব্যাহত রাখতে পারি না। যে আরেকটা অনুচ্ছেদের মাধ্যমে আমি আত্মসমীক্ষা করলাম সেটা হল এইটা: “যারা শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের দ্বারা অর্জিত হবে তাদের চিহ্নিত করার একটা লক্ষণ আছে। তোমরা কি জানো সেটা কী? তা বাইবেলের প্রকাশিত বাক্যে লেখা আছে: ‘এবং এদের মুখের কথায় কোনো চাতুর্য পাওয়া যায়নি: কারণ ঈশ্বরের সিংহাসনের সম্মুখে এরা নির্দোষ’ (প্রকাশিত বাক্য ১৪:৫)। ‘এরা’ কারা? এরা তারা, যারা উদ্ধারলাভ করেছে, নিখুঁত হয়ে উঠেছে এবং ঈশ্বরের দ্বারা অর্জিত হয়েছে(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, জীবনের উন্নতির ছয়টি সূচক)। ঈশ্বর তাদের মূল্যবান মনে করেন যারা সৎ, এবং অসৎ ব্যক্তিরা কখনোই তাঁর রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না। আমি সত্যিই চেয়েছিলাম মিথ্যাচার বন্ধ করতে, কলঙ্কমুক্ত হয়ে উঠতে, কিন্তু নিজে থেকে তা করতে পারছিলাম না। শয়তানের ফাঁদে পড়া থেকে নিজেকে সুরক্ষিত করতে ঈশ্বরের সহায়তার সন্ধান করার প্রয়োজন ছিল। সত্যিকথা বলা মাঝেমাঝে হয়ত অস্বস্তিকর হতে পারে, তবু আমি মিথ্যা বলা বন্ধ করতে চাইছিলাম। তারপর “সৎ মানুষ হওয়ার নীতিসমূহ” আবার করে পড়লাম। “(১) নিজেকে একজন সৎ মানুষ হয়ে ওঠার প্রশিক্ষণ দিতে গেলে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করা জরুরি। তোমার হৃদয় তাঁকে অর্পণ করো, এবং তাঁর নিরীক্ষা স্বীকার করো। একমাত্র এভাবেই সময়ে সাথে সাথে কেউ তার মিথ্যাচার ও প্রতারণা পরিহার করতে পারবে; (২) সত্যকে গ্রহণ করা এবং নিজের প্রতিটা কথা ও কাজের আত্মসমীক্ষা করা আবশ্যক। যে ভ্রষ্টতা তুমি প্রকাশ করছো তার উৎস ও সারমর্মের ব্যবচ্ছেদ করো, এবং নিজেকে জানতে সক্ষম হও; (৩) এটা তদন্ত করা জরুরি যে কী কী বিষয়ে কেউ মিথ্যা বলে এবং প্রতারণাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করে। তোমার প্রকৃত সত্তার ব্যবচ্ছেদ করার ও তা প্রকাশিত করার সাহস করো, ক্ষমাপ্রার্থনা করো এবং সংশোধন করো। …” (১৭০ সত্য অনুশীলনের নীতি)। বুঝতে পারলাম যে আমাকে সুসানের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এতই প্রতারণাপূর্ণ ছিলাম যে ওকে দু’বার মিথ্যা বলেছি। ঠিক করলাম, নিজের ভ্রষ্টতা ও উদ্দেশ্যের বিষয়ে ওর কাছে নিজেকে উন্মুক্ত করতে হবে। আমি এগুলো লুকাতে পারি না। যা-ই হয়ে যাক, আমাকে সত্যি বলতে হবে এবং একজন সৎ মানুষ হয়ে উঠতে হবে। আরও বেশ কয়েকবার প্রার্থনা করার পরে, আমি নিজেকে সুসানের সামনে উন্মুক্ত করার সাহস সঞ্চয় করলাম। বিশদে বললাম কীভাবে ওকে প্রতারণা করেছি, এবং ঈশ্বরের সামনে অনুতাপ করেছি। নিজের মিথ্যাচরণ আড়াল করা বন্ধ করেছিলাম, কারণ জানতাম যে ঈশ্বর আমায় লক্ষ্য করছেন, এবং সবকিছু আমায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে স্বীকার করতে হবে। সব বলার পরে, মনে হল একটা বিরাট বোঝা আমার উপর থেকে নেমে গেল, অনেক স্বস্তি বোধ করলাম।

এরপর আমি সর্বক্ষণ প্রার্থনার জন্য ঈশ্বরের সম্মুখে আসতে শুরু করলাম, তাঁকে বললাম আমার হৃদয় নিরীক্ষা করতে। যখন আমার কোনো প্রকারের ধূর্ত অভিপ্রায় দেখা দিত, অথবা যদি অসৎ বা প্রতারণাপূর্ণ হতাম, তাহলে ঈশ্বরকে বলতাম আমায় অনুশাসন ও নিবৃত্ত করতে। আমি জানতাম যে মিথ্যাচরণের সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করা যায় না, এবং জীবনে সত্যিই কখনো আমি একজন সৎ মানুষ হইনি। আমি একজন সৎ মানুষ হয়ে ওঠার সন্ধান অব্যাহত রাখতে চাইলাম। যারা সৎ তাদের ঈশ্বর পছন্দ করেন এবং আশীর্বাদ প্রদান করেন, এবং শুধু সৎ মানুষরাই উদ্ধার লাভ করতে পারে। সেই সময় থেকে, যখনই অনুভব করতাম যে আমার কোনো ধূর্ত চিন্তা রয়েছে, তখনই ঈশ্বরের সম্মুখে এসে প্রার্থনা করতাম, “ঈশ্বর, আমি একটা সমস্যায় পড়েছি, আর আমার মনে হচ্ছে মিথ্যা না বলে তা থেকে বেরোতে পারবো না। দয়া করে সত্য উপলব্ধি করতে আমায় আলোকিত করো যাতে আমি দৈহিক ইচ্ছা ত্যাগ করতে পারি। হে ঈশ্বর, আমি সত্যের অনুশীলন ক’রে একজন সৎ মানুষ হয়ে উঠতে চাই। দয়া করে আমায় সাহায্য করো। আমি তোমার প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ!”

একবার একটা সমাবেশের পর, একজন নেতা আমায় জিজ্ঞাসা করলো সমাবেশটা আমার কেমন লাগলো। আমি আসলে লক্ষ্য করেছিলাম, সমাবেশে সে উদ্ধত আচরণ করছিল, এবং তার আলোচনাতেও অন্যান্য সমস্যা ছিল। কিন্তু সত্যি কথা বলে তার দম্ভে আঘাত করতে আমি ভয় পেলাম, তাহলে হয়তো সে আমাকে পছন্দ করবে না। তাই বললাম, “দারুণ!” এ কথা বলামাত্রই আমি বিতৃষ্ণা বোধ করলাম। অনুভব করলাম যে মিথ্যা বলেছি, তাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে তাঁকে বললাম আমাকে সৎ হওয়ার আর সত্যি বলার পথনির্দেশ দিতে। তারপর সেই নেতার কাছে গিয়ে সমাবেশের সমস্যাগুলোর বিষয়ে কথা বললাম এবং অনেক শান্তি অনুভব করলাম। সে এর পর যে সমাবেশ করেছিল সেটা এর চেয়ে অনেক ভালো হয়েছিল। লক্ষ্য করেছিলাম যে কিছু সময় পর, আমি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছিলাম। আগে সবসময় নিজের সম্মান আর মর্যাদা রক্ষার জন্য মিথ্যা বলতাম। কিন্তু যখন নিজের হৃদয় ঈশ্বরকে অর্পণ করলাম, তাঁকে বললাম আমার হৃদয়ে লক্ষ্য রাখতে, আমায় নিবৃত্ত করতে, তখন নিজের অবস্থা আরও স্পষ্টভাবে দেখতে পেলাম। আমি ঈশ্বরের সামনে প্রার্থনা করতে এলাম এবং সৎ হওয়ার অনুশীলন করলাম। তা হয়ত কখনো কখনো মানুষকে ক্ষুব্ধ করতে পারে, কিন্তু ঈশ্বরের সামনে একজন সৎ ব্যক্তি হওয়া আমার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

আগে আমার অভ্যাস ছিল মানুষকে খুশি করার জন্য এবং নিজের সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার জন্য মিথ্যা বলা, কিন্তু এখন আমি চেষ্টা করছি ঈশ্বর আমার জন্য যে পরিবেশ আয়োজন করেন তার সমস্তটাতেই একজন সৎ মানুষ হয়ে ওঠার। এইসব অভিজ্ঞতা আর এই উপলব্ধির জন্য আমি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁর বাক্যের বিচার আমাকে নিজের ভ্রষ্টতা ও কদর্যতা দেখতে এবং কিছু পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। আমি জানি যে মিথ্যাচারিতার অভ্যাস পরিবর্তন করা একটা প্রক্রিয়া, এবং ঈশ্বর আমার অভিজ্ঞতালাভের জন্য একের পর এক পরিস্থিতির আয়োজন করছেন। আমায় সতর্ক থাকতে হবে যাতে আমি একটাও মিথ্যা না বলি যা ঈশ্বরকে ক্ষুব্ধ করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ঈশ্বরের বাক্যের বিচারকে স্বীকার করা, এবং মিথ্যাচরণের প্রবণতা থেকে প্রকৃত মুক্তিলাভের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা ও তাঁর উপর নির্ভর করা। সকল মহিমা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের হোক!

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

সত্য পথ গ্রহণে এত বাধা কেন?

২০০৮ সাল থেকে, আমি আর আমার মা প্রভুর উপর বিশ্বাস রাখতে শুরু করি, তারপর, স্থানীয় একটা গির্জায় সমাবেশে যোগ দিতে লাগলাম। পরে, গির্জার ডীকনও...

Leave a Reply

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন