সততা ছাড়া দায়িত্ব পালন করা অসম্ভব
আমি গির্জায় নবাগতদের সিঞ্চন করার দায়িত্বে আছি। কয়েকজন নবাগত বিশ্বাসী কয়েকদিন আগেই যোগদান করেছিল, এবং আমি দেখেছিলাম যে তাদের মধ্যে কয়েকজন সমাবেশে খুব বেশি কথা বলত না এবং নিয়মিত আসত না। তারা তখনই আসত যখন তাদের মনে হত। আমি যখন ব্যক্তিগত আলাপআলোচনার জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করলাম, তারা কীভাবে অর্থ উপার্জন করতে হয়, কীভাবে পারিবারিক সম্পত্তি গড়ে তুলতে হয় সে সম্পর্কে কথা বলতে চাইত, কিন্তু যখনই বিশ্বাসের কথা উঠে এল, তারা চুপ করে গেল এবং ফোন রাখার জন্য অজুহাত দিতে লাগল। আমার মনে হল যে তারা সত্যে আগ্রহী নয় এবং তাদের প্রকৃত বিশ্বাসী বলে মনে হল না। কিন্তু আমি পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলাম না কারণ তারা বিশ্বাসে নবাগত ছিল, তাই আমি তাদের সমর্থন করতে থাকলাম। কিছু সময় পেরিয়ে গেলেও তারা একইরকম রয়ে গেল এবং ধীরে ধীরে সমাবেশে যোগ দেওয়া বন্ধ করে দিল। তখনই আমি নেত্রীকে তাদের অবস্থার কথা জানালাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কীভাবে তাঁদের সিঞ্চন করছেন? আগে অন্যদের সিঞ্চনের সময়, তারা স্বাভাবিকভাবে সমাবেশে যোগদান করছিল। আপনার হাতে আসার পর এরকম কেন হল? আপনি কি সত্যিই আপনার দায়িত্ব পালন করেছেন এবং স্পষ্টভাবে আলাপআলোচনা করেছেন? আমরা যদি আমাদের কাজে শিথিল হয়ে আমাদের দায়িত্ব পালন না করি, অর্থাৎ নবাগতদের জমায়েত সঠিকভাবে না হয়, সেটা সম্পূর্ণরূপে আমাদের কাঁধে বর্তায়।” আমি জানতাম যে তিনি কাজের দায়িত্ব থেকে এসব বলছেন, কিন্তু আমি নিজে ভাবতে থাকলাম যে সবাই পরিবর্তিত হতে পারে, এবং আগে সঠিকভাবে জমায়েত করার অর্থ এই নয় যে তারা এটা করতে থাকবে। তাছাড়া, আমার যখন তাদের সাথে প্রথম দেখা হয় তারা নিয়মিত জমায়েত করছিল না, তাই এটা কোনো আকস্মিক পরিবর্তন ছিল না। আমি শুধু কিছু সময়ের জন্য তাদের একটু সিঞ্চন করে দেখতে চেয়েছিলাম, যে কারণে আমি তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে কিছু বলিনি। তিনি যদি এর জন্য আমাকে দায়ী করে থাকেন, আমি এর পরিণতি সহ্য করব। আমাকে হয়ত ছাঁটাই এবং মোকাবেলা করা হবে, বা হয়ত বরখাস্তও করা হতে পারে। আমি যদি এটা আগে জানতাম, তাহলে আমি তাঁর সাথে এটা নিয়ে আগে কথা বলতাম যাতে শেষ পর্যন্ত এর জন্য আমাকে পুরোপুরিভাবে দায়ী না করা হয়। এরপর থেকে নবাগতদের সাথে আমার আলাপচারিতায়, আমাকে সবসময় সতর্ক থাকতে হত। আমি যদি দেখতাম কারুর সমস্যা হয়েছে বা সমাবেশে আসছে না, আমি নেত্রীকে বলতে ছুটে যেতাম। মাঝে মাঝে নেত্রী আমাকে জিজ্ঞাসা করতেন আমি কী বলতে চাইছি, আমি তাদের সিঞ্চন করা বন্ধ করতে চাই কিনা। আমি বলতাম, “না। আপনি নেত্রী, তাই আমি চেয়েছিলাম আপনি জানুন তাদের সাথে কী হচ্ছে।” এটা বলার পর তিনি আর কিছু বলতেন না। মাঝে মাঝে আমি তাঁকে এটা বলার পর, তিনি আমাকে বলতেন তাদের আরও একটু সিঞ্চন করে যেতে, এবং যদি তারা সত্যিই জড়ো হতে না চায়, তাহলে তাদের বাধ্য করা যায় না, এবং হাল ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। আমি সম্পূর্ণ একমত হতাম, এবং ভাবতাম, নেত্রী নবাগত বিশ্বাসীদের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতেন, তাই আমার শুধু তাঁকে সমর্থন দেওয়া দরকার ছিল। সমর্থনের মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনাই শ্রেয়, এবং যদি আমি তা করতে না পারি, যদি কোন নবাগত আর সমাবেশে যোগদান করতে না চায়, নেত্রী এটাকে খুব আকস্মিক মনে করবেন না এবং বলবেন না যে আমি আমার কাজে দায়িত্বজ্ঞানহীন ছিলাম। সে কথা মাথায় রেখে আমি আমার কাজে বেশি মনোযোগী হওয়া বন্ধ করে দিলাম। প্রতিদিন, আমি শুধু পাঠ করে নবাগতদের সিঞ্চন করতাম। আমি যখন তাদের ফোন করতাম, যদি তারা উত্তর দিত আমি একটু আলাপআলোচনা করতাম, কিন্তু যদি তারা উত্তর না দিত আমি ছেড়ে দিতাম। আমি ভেবেছিলাম তারা উত্তর না দিলে আমার কিছু করার নেই, এবং কীভাবে তাদের সমস্যার সমাধান কারা যায়, আমি তা নিয়েও ভাবছিলাম না। পরে একটা সমাবেশে, ওই নেত্রী বলেন যে এরপর থেকে সিঞ্চনের কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি কেবল নবাগতদের পরিস্থিতি সম্পর্কে সিঞ্চনকারীদের কথা শুনবেন না, বরং সত্যের কোন দিক নিয়ে সিঞ্চনকারীরা তাদের সঙ্গে আলাপআলোচনা করে, সেটাও তিনি জানবেন এবং বিশেষ করে কীভাবে তারা তাদের সমর্থন করে, তারপর সেটার ওপর বিবেচনা করা হবে যে সিঞ্চনকারী প্রকৃত কাজ করছে কি না। যদি তারা আন্তরিকভাবে নবাগত বিশ্বাসীদের সাথে আলাপআলোচনা না করে, এবং নবাগত বিশ্বাসীদের নিয়মিত সমাবেশে না যোগদান করা বা ছেড়ে দেওয়া থেকে বিরত না করতে পারে, তাহলে সেটা একজন সিঞ্চনকারীর দায়িত্ব। যখন তিনি এটা বললেন, আমি বুঝতে পারলাম যে আমি যখন নবাগতদের সাথে আলাপআলোচনা করেছিলাম, তখন আমি ঈশ্বরের কোন বাণী পড়েছিলাম বা কোন সত্যের উপর আমি আলাপআলোচনা করেছিলাম তা লিখে রাখিনি। যদি একজন নবাগত বিশ্বাসী সমাবেশে যোগদান বন্ধ করে দেয়, আমার কাছে কোনো প্রমাণ থাকবে না। আমি ভাবলাম নেত্রী যদি ভাবেন আমি ব্যবহারিক কাজ করিনি, যে আমি সিঞ্চন করার ক্ষেত্রে দায়িত্বজ্ঞানহীন ছিলাম, তাহলে তিনি আমাকে ছেঁটে ফেলবেন এবং আমার সাথে মোকাবিলা করবেন। তাই নবাগত বিশ্বাসীদের কাছে আমার পাঠানো ঈশ্বরের বার্তা ও বাণীর প্রতি মনোযোগ দিতে শুরু করলাম এবং কী বিষয়ে আমাদের আলাপআলোচনা হত, তার একটা বিবরণী রাখতাম। কখনো কখনো আমি একটা বার্তা পাঠাতাম যাতে তারা সাড়া দিত না, কিন্তু আমি এটা নিয়ে বেশি কিছু ভাবতাম না। আমি ভেবেছিলাম যে আমি তাদের কাছে ঈশ্বরের সেই সমস্ত বাণী পাঠিয়েছি যা আমার পাঠানো উচিত এবং যা প্রয়োজন তা নিয়ে আমি আলাপআলোচনা করেছি। যদি একজন নবাগত বিশ্বাসী সমাবেশে যাওয়া বন্ধ করে দেন, আমি যা করেছি নেত্রী তার বিবরণী দেখতে পাবেন এবং সম্ভবত আমাকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলবেন না।
কিছু সময় পর, নেত্রী লক্ষ্য করলেন যে আমার কিছু নবাগত বিশ্বাসী তখনও সমাবেশ করতে চায় না, এবং জিজ্ঞাসা করলেন আমি কীভাবে তাদের সিঞ্চন করেছি। তাকে দেখানোর জন্য আমি সহজেই আমার সমস্ত বিবরণী বের করে দিলাম, এবং ভাবলাম, ভাগ্যিস আমি সময়ের আগে প্রস্তুত হয়েছিলাম এবং এই বিবরণীগুলো রেখেছিলাম। অন্যথায় আমার কাছে সুনির্দিষ্ট কিছু থাকত না, এবং কে জানে তিনি আমাকে কীভাবে তিরস্কার করতেন। ঠিক যখন আমি একটু তৃপ্ত বোধ করছিলাম, নেত্রী বললেন, “আমি এই বিবরণীগুলি থেকে কোনো সমস্যা দেখতে পাচ্ছি না, কিন্তু পরপর বেশ কয়েকজন উপস্থিত হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, তাই আপনার কাজে অবশ্যই কোনো সমস্যা আছে। এই মুহূর্তে আমি দেখতে পাচ্ছি না সেটা কী হতে পারে, কিন্তু ইদানীং আমাদের আলাপচারিতায় আপনি ক্রমাগত নবাগত বিশ্বাসীদের সমস্যার কথা বলছেন। সেটা ঠিক স্বাভাবিক নয়। সমস্যাটা কোথায় রয়েছে সে সম্পর্কে আপনাকে একটু ভাবতে হবে। আপনি যদি অসাবধান হয়ে থাকেন এবং তাদের ভালোভাবে সিঞ্চন না করে থাকেন, যাতে করে এই নবাগত বিশ্বাসীরা বিশ্বাস ত্যাগ করছে, সেটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হওয়া, নিজের কাজ সঠিকভাবে না করা।” তাঁর কথাগুলো আমার কাছে একটা সত্যিকারের ধাক্কা বলে মনে হল এবং আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আমি ভেবেছিলাম তিনি আমাকে তিরস্কার করবেন না, কিন্তু তিনি বললেন যে আমার কাজে কোনো সমস্যা আছে এবং আমাকে আত্ম-প্রতিফলন করতে হবে। আমি হতবাক হয়ে গেলাম। আমি ভাবলাম, “এটা কি সত্যিই আমার সমস্যা?” এটা আমার জন্য একটা বিরক্তিকর চিন্তা ছিল, এবং আমি ভীত ছিলাম যে যদি আমার সমস্যাগুলি নবাগতদের বাদ পড়ার কারণ হয়, তবে সেটা মন্দ কাজ করার সমান। তাই আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, “হে ঈশ্বর, নেত্রীর অপ্রত্যাশিতভাবে আজ আমাকে এই কথাগুলো বলার মধ্যে তোমার অনুমতি ছিল, তাই আমার শেখার জন্য একটা শিক্ষা নিশ্চয়ই রয়েছে। আমি আমার সমস্যার কারণে এই নবাগত বিশ্বাসীদের ক্ষতি করতে চাই না, কিন্তু আমি খুব অসাড় বোধ করছি, এবং আমি জানি না আমার সমস্যা কোথায়। দয়া করে আমাকে নিজেকে জানতে এবং পরিবর্তন করতে আলোকপ্রাপ্ত করুন।”
আগামী কয়েকদিন ধরে, আমি এই বিষয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম। তারপর একদিন, আমি একটা প্রশংসামূলক রচনা পড়লাম ঈশ্বরের বাণী সহ যা আমাকে নাড়িয়ে দিল। “তুমি একজন সঠিক ব্যক্তি কিনা তা জানতে তোমার নিজেকে ভালো ভাবে পরীক্ষা করা উচিত। তোমার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কি আমাকে মনে রেখে তৈরি করা হয়েছে? তোমার সমস্ত কথা এবং কাজ কি আমার উপস্থিতিতে বলা এবং করা হয়েছে? আমি তোমার সমস্ত চিন্তাভাবনা এবং ধারণাগুলি পরীক্ষা করি। তুমি কি নিজেকে দোষী মনে করো না? অন্যদের দেখানোর জন্য তুমি একটি মিথ্যা ধারণা সামনে রাখো এবং শান্তভাবে স্ব-ধার্মিকতার আঁচ অনুমান করো; তুমি নিজেকে রক্ষা করার জন্য এটি করো। তোমার অন্যায় লুকানোর জন্য এটি করো, এবং এমনকি অন্য কারো উপর সেই অন্যায়ের দায় চাপিয়ে দেওয়ার উপায়গুলিও ভেবে নাও। একি বিশ্বাসঘাতকতা তোমার হৃদয়ে বাস করে!” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সূচনাকালে খ্রীষ্টের বাক্য, অধ্যায় ১৩)। ঈশ্বরের বাণী দেখায় যে তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য এবং তাদের অন্যায়কে ঢাকতে, লোকেরা নানান কাজ করে যেমন মিথ্যা বলে এবং অভিনয় করে অন্যদের কাঁধের উপর দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়ার জন্য যাতে তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারে। এটা ধূর্ততার একটা বহিঃপ্রকাশ। আমার মনে হল যে এটা আমার অবস্থাকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছে, এবং আমার আত্মমন্থন শুরু করতে হত। কেন আমি সবসময় নেত্রীকে নবাগত বিশ্বাসীদের সমস্যার কথা বলতাম? যখনই দেখতাম কারুর সমস্যা আছে বা সমাবেশে আসছে না, নেত্রীকে জানাতে ছুটে যেতাম। দেখে মনে হত আমি শুধু তথ্য ভাগ করে নিচ্ছি, কিন্তু আসলে আমার নিজের ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য ছিল। আমি ভীত ছিলাম যে কেউ যদি উপস্থিত হওয়া বন্ধ করে দেয়, নেত্রী আমাকে দায়ী করবেন বা এমনকি আমাকে বরখাস্তও করবেন, তাই আমি দ্রুত আত্মরক্ষামূলকভাবে কাজ করার চেষ্টা করতাম, প্রথমে তাদের সমস্যা জানিয়ে নেত্রীকে মিথ্যা ধারণা দিতাম যে নবাগত বিশ্বাসী ভালো ছিল না, এবং আমি দায়ী ছিলাম না। যদি আমি তাদের যথাযথভাবে সমর্থন করতে না পারি এবং তারা উপস্থিত হওয়া বন্ধ করে দেয়, এটা তাদের সমস্যা ছিল। এইভাবে আমার হাত সম্পূর্ণ পরিষ্কার থাকবে। পরে যদি তারা আবার সমাবেশে যেতে চায়, লোকেরা মনে করবে আমি সেই কৃতিত্বের যোগ্য। আমার আত্মচিন্তনের মাধ্যমে এটা দেখে আমার একটা ধাক্কা লেগেছিল। আমি কখনোই ভাবিনি যে আমার কথার পিছনে এমন জঘন্য, ঘৃণ্য উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে। আমি এত ধূর্ত ছিলাম!
আমি ভাবলাম কিছু না বুঝেই আমি কি করে এত অসৎ এবং প্রতারণাপূর্ণ একটা কাজ করলাম। এটা নিয়ে ভাবার সময়, আমি ঈশ্বরের বাণী পড়লাম যা মানুষের ভ্রষ্ট স্বভাব প্রকাশ করে এবং অবশেষে নিজেকে একটু বুঝতে পারলাম। ঈশ্বরের বাক্যে বলা হয়েছে, “খ্রীষ্টবিরোধীদের মন্দত্বের মধ্যে একটি উল্লেখনীয় বৈশিষ্ট্য থাকে—সেটা কীভাবে সনাক্ত করবে সেই গোপন বিষয়টা আমি তোমাদের জানাবো। গোপন বিষয়টা হল—প্রথমত, তাদের কথায় বা তাদের কাজে, তারা তোমার কাছে অতল; তুমি তাদের পড়তে পারবে না। তারা যখন তোমার সাথে কথা বলে, তাদের চোখ সর্বদা স্বাধীনভাবে ইতস্তত ঘুরতে থাকে, এবং তারা কী ধরনের দুরভিসন্ধির পরিকল্পনা করছে তা তুমি বলতে পারবে না। কখনো কখনো তারা তোমাকে অনুভব করায় যে তারা কত ‘বিশ্বস্ত’ বা বিশেষত ‘আন্তরিক’, কিন্তু ব্যাপারটা মোটেই তা নয়, তুমি কখনোই তাদের স্পষ্ট করে বুঝতে পারবে না। তোমার অন্তরে একটা বিশেষ অনুভূতি আসবে, মনে হবে যে তাদের চিন্তাভাবনায় একটা গভীর সূক্ষ্মতা আছে, একটা অতল গভীরতা আছে। তাদের অদ্ভুত এবং রহস্যময় মনে হবে” (বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, সপ্তম পরিচ্ছেদ: তারা মন্দ, প্রতারণাপূর্ণ, এবং শঠ (দ্বিতীয় অংশ))। “খ্রীষ্টবিরোধীরা তাদের আচরণে ছলনাপূর্ণ। কেমন করে? তারা সবসময় এমনভাবে আচরণ করে যা কৌশলের উপর নির্ভরশীল, তাদের কথাবার্তা থেকে কিছুই প্রতিভাত হয় না, তাই মানুষের পক্ষে এদের অভিপ্রায় ও লক্ষ্যের তল পাওয়া কঠিন। এটাই ছলনাময়তা। তারা যা-ই করে, কোনোটাতেই সহজে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছয় না; তারা বিষয়টা এমনভাবে উপস্থাপিত করে যাতে তাদের অধস্তনরা বা তাদের শ্রোতারা তাদের উদ্দেশ্য বুঝতে পারে, এবং সেই মানুষেরা, খ্রীষ্টবিরোধীদের বুঝতে পেরে, তাদেরই পরিকল্পনা ও প্ররোচনা অনুযায়ী কাজ করে ও তাদের আদেশ সম্পাদন করে। কোনো কাজ সম্পূর্ণ হলে খ্রীষ্টবিরোধীরা খুশী হয়। আর তা যদি না হয়, কেউ তাদের বিরুদ্ধে বলার মতো কিছুই খুঁজে বার করতে পারবে না, বা তারা যা করে তার পিছনে প্ররোচনা, অভিপ্রায়, বা লক্ষ্যের অতলতা উপলব্ধি করতে পারে না। তারা যা করে তার ছলনাময়তা নিহিত থাকে গোপন ষড়যন্ত্র ও প্রচ্ছন্ন লক্ষ্যের মধ্যে, এই সবেরই উদ্দেশ্য হচ্ছে অন্যান্যদের প্রত্যেককে প্রতারণা করা, তাদের নিয়ে খেলা করা, এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ করা। ছলনাময় আচরণের সারসত্য এটাই। ছলনা মানে নিছক মিথ্যা কথা বলা নয়, বরং তা এমন কিছু যা সাধারণ মানুষের বোধের পক্ষে অতল। এটা সাধারণ মিথ্যাচার বা দুষ্ট কার্যকলাপের সমান বিষয় নয়। তুমি যদি এমন কিছু করে থাকো যা তুমি চাও কেউ যেন জানতে না পারে, বা মিথ্যাচার করো, সেটা কি ছলনা বলে পরিগণিত হবে? (না।) এটা কেবলই প্রতারণা, এটা ছলনার স্তরে পরিগণিত হয় না। প্রতারণার চেয়ে ছলনা কী কারণে আরও গভীর? (কারণ মানুষ এটা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে না।) মানুষের পক্ষে এটা স্পষ্টভাবে বোঝা কঠিন। এটা গেল এর একটা অংশ। আর কী আছে? (লোকের কাছে ছলনাময় ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ থাকে না।) একেবারে ঠিক। বিষয় হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসাবে কিছুই খুঁজে পাওয়া মানুষের পক্ষে কঠিন। এমনকি যদি কিছু লোক জানেও যে ওই ব্যক্তি কোনো দুষ্কর্ম করেছে, তবুও তারা স্থির করে উঠতে পারে না যে লোকটা ভালো লোক না খারাপ, অথবা একজন খ্রীষ্টবিরোধী। মানুষ তাদের স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে না, কিন্তু ভাবে তারা ভালো লোক, আর তাদের ছলনার শিকার হয়। এটাই ছলনা। মানুষ সাধারণত মিথ্যাচার এবং ছোটখাটো দুরভিসন্ধি প্রবণ হয়। এটা নিছক প্রতারণা মাত্র। কিন্তু খ্রীষ্টবিরোধীরা সাধারণ প্রতারকদের বেশি অনিষ্টকর। তারা শয়তানদের রাজার মতো; তারা কী করে তা কেউই বুঝতে পারে না, আর তারা ন্যায়ের নামে অনেক মন্দ কর্ম করতে পারে, আর লোকে তাদের গুণগান করে, যেখানে আসলে তারাই মানুষকে ফাঁদে ফেলে তাদের ক্ষতি করে। এটাকেই ছলনাময় প্রকৃতি বলা হয়” (বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ: তারা কুটিল আচরণ করে, তারা স্বেচ্ছাচারী ও স্বৈরাচারী, তারা কখনোই অপরের সাথে সহকারিতা করে না, এবং তারা বলপূর্বক অপরের আনুগত্য আদায় করে)। আমি ঈশ্বরের বাণী থেকে দেখলাম যে খ্রীষ্টবিরোধীদের মন্দ স্বভাব থাকে এবং তারা প্রতারণাপূর্ণ উপায়ে কাজ করে। এটা ধূর্ততার ভ্রষ্টাচার প্রদর্শন থেকে ভিন্ন। ধূর্ত হওয়া মানে স্পষ্টভাবে মিথ্যা বলা এবং প্রতারণা করা, এবং এটা দেখা সহজ। প্রতারণাপূর্ণভাবে কাজ করার অর্থ হল একজন ব্যক্তি তার উদ্দেশ্য, লক্ষ্য এবং পরিকল্পনাগুলো গভীরভাবে লুকিয়ে রাখে এবং অন্যদের জন্য একটা মিথ্যা ধারণা তৈরি করে যাতে তিনি যা বলেন এবং যা করেন তাতে তারা কোন সমস্যা দেখতে না পায়। এমনকি যদি তারা মনে করে যে কোনো সমস্যা আছে, তারা তার বিরুদ্ধে কিছু খুঁজে পাবে না বা বুঝতে পারবে না। এভাবেই সে অন্যদের বিভ্রান্ত করে এবং তার হীন উদ্দেশ্য সাধন করে। ঈশ্বরের বাণী যা বলে তার সাথে আমি নিজেকে তুলনা করলাম। মনে হল যে আমি দ্রুত এবং সক্রিয়ভাবে নেত্রীর সাথে নবাগত বিশ্বাসীদের সম্পর্কে কথা বলেছি, তাঁকে মিথ্যা ধারণা দিয়েছি যে আমি আমার দায়িত্বের বোঝা নিয়েছি এবং তাঁর তত্ত্বাবধান গ্রহণ করতে পেরে খুশি হয়েছি। কিন্তু আসলে, আমি সেটাকে নেত্রীর সাথে আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসাবে ব্যবহার করছিলাম যাতে তিনি, যাঁরা নিয়মিত উপস্থিত হচ্ছিলেন না, সেইসব নবাগত বিশ্বাসীদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। এতে যদি কোনো দিন তারা আসা বন্ধ করে দেয়, তিনি আমাকে দায়ী করবেন না। এছাড়াও, নেত্রী যখন আমার কাজের খুঁটিনাটি জানতে চাইলেন, আপাত দৃষ্টিতে মনে হল আমার করা আলাপআলোচনা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই, যে আমি সক্রিয়ভাবে আলাপআলোচনার জন্য সময় নির্ধারণ করছিলাম এবং তাদের ঈশ্বরের বাণী পাঠাচ্ছিলাম যাতে নেত্রী মনে করেন আমি তাদের প্রতি পরিশ্রমী এবং স্নেহময় ছিলাম। আসলে সত্য এটাই ছিল যে নবাগত বিশ্বাসীদের সঙ্গে আমি আমার আলাপআলোচনা নিয়ে একদমই আন্তরিক ছিলাম না। যেহেতু নেত্রী কাজের বিবরণী পর্যালোচনা করতেন এবং আমি ভীত ছিলাম যে যদি তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে আমি কীভাবে তাদের সমর্থন করেছি আমি তা ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হব না, তাই আমার গতানুগতিক নিয়মের মধ্যে দিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না যাতে আমি তাঁকে একটা বিবরণী দিতে পারি। এখন এসব নিয়ে চিন্তা করলে দেখি, নেত্রীর কাছে আমার ভাবমূর্তি রক্ষা করার জন্য, দায়বদ্ধ না হওয়ার জন্য, আমার মর্যাদা এবং ভবিষ্যৎ বজায় রাখার জন্য, আমি আসলে সব ধরনের কৌশল করেছিলাম। আমি যখন কথা বলতাম তখন আমি আমার উদ্দেশ্য গোপন করেছিলাম এবং ঠিক তাই করতে মনোযোগী ছিলাম। স্পষ্টতই, আমার কাজে মন ছিল না, যার ফলে কয়েকজন নবাগত নিয়মিত জমায়েত করা বন্ধ করে দিয়েছিল। নেত্রীও মনে করেছিলেন যে আমার কাজে সমস্যা রয়েছে, কিন্তু জানতেন না সেগুলো কী এবং তিনি আমাকে দায়ী করার কোনো প্রমাণ খুঁজে পাননি। আমি খুব বিভ্রান্তিকর ছিলাম। আমি এর আগে কখনই সংযোগ তৈরি করিনি আমার আচরণে এবং প্রতারণাপূর্ণ উপায়ে জিনিসগুলি করার মধ্যে। আমার সর্বদা মনে হয়েছে যেসব মানুষ কুট, বিচক্ষণ এবং প্রতারণাপূর্ণ তারা বেশিরভাগই অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বয়স্ক মানুষ। কিন্তু আমি কোনো অভিজ্ঞতা বা জটিল চিন্তারহিত অল্পবয়স্ক। আমার আচরণকে প্রতারণাপূর্ণ বলে ধরে নেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু তথ্যগুলো আমার কাছে প্রকাশ করেছে যে আমার একটা মন্দ খ্রীষ্টবিরোধী স্বভাব ছিল, এবং প্রতারণাপূর্ণ হওয়ার সঙ্গে বয়সের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা সম্পূর্ণরূপে একটা শয়তানোচিত প্রকৃতি থেকে আসে। তারপর হঠাৎ অন্য কিছু মাথায় এল। একজন নবাগত বিশ্বাসী ছিল যে অনেক প্রশ্ন করত এবং খুব খোলামেলা কথা বলত। যদি সে আমার আলাপআলোচনা না বুঝত, সে সমাবেশে সরাসরি আমাকে প্রতিহত করত, যা আমার জন্য বিব্রতকর ছিল। আমি তার সাথে আর জমায়েত করতে চাইলাম না যাতে আমি আমার সুনাম রক্ষা করতে পারি, কিন্তু এই কথা আমি সরাসরি বলার সাহস পেলাম না, এই ভয়ে যে নেত্রী আমাকে মোকাবেলা করবেন। আমি তাকে অন্য একজন সিঞ্চনকারীর হাতে হস্তান্তর করার উপায় খুঁজতে চেয়েছিলাম। একবার, সেই নবাগত বিশ্বাসী হাল্কা চালে বলল যে তার বর্তমান দল তার আগের দলের তুলনায় অনেক ছোটো। নেত্রীকে বলার জন্য আমি সেটাকে একটা অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করলাম যে আমাদের ছোটো জমায়েত তার পছন্দ নয়, যে সে বড়ো দল পছন্দ করে এবং নেত্রীকে বললাম তাকে অন্য একটা দলে পাঠাতে। নেত্রী তখনই তাকে একটা ভিন্ন দলে যোগদানের ব্যবস্থা করে দিলেন। এভাবেই আমি সফলভাবে আমার লজ্জাজনক, ঘৃণ্য উদ্দেশ্যকে আড়াল করলাম এবং এই নবাগত বিশ্বাসীকে আমার দল থেকে বের করে দিলাম। নেত্রী এমনকি ভুল করে এটাও ভাবলেন যে ওই নবাগত আমার কাজে আমার বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি এত মন্দ এবং প্রতারক ছিলাম!
পরে আমি আমার অবস্থা সম্পর্কে ঈশ্বরের আরও বাণী ভোজন এবং পান করলাম। “আমি তোমাদের বলছি: ঈশ্বর যা সবচেয়ে ঘৃণা করেন এবং পরিত্যাগ করতে চান তা হচ্ছে এই ধরণের অনমনীয় মানুষ, যে নিজের ভ্রান্তি সম্পর্কে সচেতন কিন্তু তা নিয়ে অনুতপ্ত নয়। তারা কখনোই নিজেদের ভুল স্বীকার করে না এবং সর্বদা নিজেদের পক্ষে অজুহাত ও যুক্তি খুঁজতে থাকে নিজেদের মুক্ত করার জন্য এবং আত্মপক্ষ সমর্থন করার জন্য, এবং আরও চাতুর্যপূর্ণ ও প্রতারক হয়ে ওঠার জন্য অন্যান্য উপায় ব্যবহার করতে চায়। তারা ভুলের পর ভুল করতে চায় এবং অনুতাপ বা ভুল স্বীকার করার কথা চিন্তা করে না। এই ধরনের ব্যক্তি বেশ সমস্যাজনক, এবং তাদের পক্ষে উদ্ধার পাওয়া কঠিন, ঈশ্বর যা পরিত্যাগ করতে চান এরা ঠিক সেটাই” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, ঈশ্বরবিশ্বাসে যা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তা হল তাঁর বাক্যের অনুশীলন ও অভিজ্ঞতা)। এসব ভাবতে ভাবতে আমি বুঝলাম যে যাই ঘটুক না কেন, সত্যকে মেনে নেওয়াই হল মূল বিষয়। কেউ যদি তার কাজে এমন কোনো ভুল করে যা তারা স্বীকার করেনা, এবং তারা ছাঁটাই হওয়া এবং মোকাবেলা করা মেনে নেবে না, বরং তারা অজুহাত তৈরি করে এবং নিজেদের সপক্ষে কথা বলার কারণ খোঁজে এমনকি তাদের ভুল ঢাকতে কৌশল করে, তার মানে হল বিন্দুমাত্র সত্যকে গ্রহণ করে না। তারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে এবং যদি তারা অনুতাপ না করে, তবে তাদের পরিত্যাগ এবং বহিষ্কার করা হবে। আমি নবাগত বিশ্বাসীদের সিঞ্চন করার মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে সক্ষম হয়েছিলাম এবং আমার উচিত প্রীতিপূর্ণ এবং ধৈর্যশীল ভাবে তাদের সমর্থন এবং সহায়তা করা, দর্শনসমূহের সত্য সম্বন্ধে সুস্পষ্টভাবে আলাপ-আলোচনা করা এবং দ্রুত সত্য পথে একটা ভিত্তি স্থাপন করতে তাদের সাহায্য করি। আমি ভালো করেই জানতাম যে কয়েকজন নবাগত বিশ্বাসী নিয়মিতভাবে সমাবেশে যোগ দিচ্ছিল না এবং আমার একটা দায়িত্ব ছিল যা আমি অস্বীকার করতে পারিনি। কিন্তু নেত্রী যখন আমাকে প্রশ্ন করলেন এবং আমার সাথে মোকাবিলা করলেন, আমি শুধু ঈশ্বরের কাছ থেকে বুঝতে পারিনি বা নেত্রীর সমালোচনাকে মেনে নিতে পারিনি, এবং অবিলম্বে নবাগত বিশ্বাসীদের সমর্থন করার একটা উপায় চিন্তা করিনি তাই নয়, বরং আমি কৌশল করতে শুরু করি, আরও পিচ্ছিল ও প্রতারণাপূর্ণ উপায় অবলম্বন করে এটা লুকানোর জন্য যে আমি আমার কাজ সঠিকভাবে করছিলাম না। আমি নেত্রীকে অন্ধকারে রেখেছিলাম যাতে তিনি আমার বিরুদ্ধে কিছু খুঁজে না পান। গোপনে আমার চতুরতায় আনন্দিত হচ্ছিলাম। আমি বুঝতে পারিনি যে ঈশ্বর স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছিলেন আমার ঘৃণ্য উপায় এবং তুচ্ছ কৌশল—আমি সেগুলি লুকাতে পারিনি। আমার কাজের সমস্যাগুলো সামনে আসতে বাধ্য ছিল। নেত্রী যদি আমাকে সতর্ক না করতেন, অনুতাপ করা দূরের কথা, আমি আত্মমন্থন করতেও জানতাম না। আমি সত্যিই অসাড় ছিলাম। আমি সত্যকে গ্রহণ করিনি বা আমার কাজের ভুলগুলোকে চিহ্নিত এবং পরিবর্তন করিনি। তার বদলে শুধু ভেবে গিয়েছি নেত্রীকে কীভাবে প্রতারিত করতে হয়, আমার মুখ, মর্যাদা এবং ভবিষ্যৎ রক্ষা করার জন্য। আমি পিচ্ছিল এবং প্রতারণাপূর্ণ উপায়ে আমি যে আমার কাজ সঠিকভাবে করতে পারছি না তা আড়াল করার চেষ্টা করছিলাম। আমি আন্তরিকভাবে নবাগত বিশ্বাসীদের সিঞ্চন করিনি এবং তাদের সমস্যায় সাহায্য করিনি। এইভাবে, কয়েকজন নবাগতদের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে সমাধান করা হয়নি। এমনকি এখনও, তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিয়মিত সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন না। যেটা আমাকে সত্যি ভীত করল সেটা হল যে নবাগতকে আমি একটা ভিন্ন দলে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম সিঞ্চনকারীর হঠাৎ পরিবর্তনের ফলে সে আর জমায়েত করতে চাইল না। অন্যরা ধৈর্য সহকারে তার সাথে দীর্ঘকাল আলাপআলোচনা করল তারপর সে সমাবেশে ফিরে আসতে রাজি হল। আমি যা করেছি তা ভাবতে আমার সত্যিই খারাপ লাগছিল। অন্যরা মানুষকে ধর্মান্তরিত করার জন্য তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছিল, কিন্তু আমি আমার পদ্ধতি নিয়ে খুব শিথিল ছিলাম। আমি মন্দ কাজ করছিলাম। ঈশ্বরের বাক্যের উদ্ঘাটন যদি আমার অসাড় হৃদয়কে জাগ্রত না করত, আমি বুঝতে পারতাম না যে আমি বিপদের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। আমি আমার মন্দ খ্রীষ্টবিরোধী স্বভাব অনুযায়ী জীবনযাপন করতে চাইনি, বরং আমি সেই মন্দ পথ ত্যাগ করে ঈশ্বরের কাছে অনুতপ্ত হতে চেয়েছিলাম।
যখন আমি কিছুটা সচেতনতা অর্জন করেছি, নেত্রী আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন সম্প্রতি আমি কেমন আছি। আমি তাঁকে আমার আত্মমন্থন এবং উপলব্ধি সম্পর্কে বললাম। তিনি আমাকে ঈশ্বরের কিছু বাণী পাঠালেন। ঈশ্বরের বাক্যে বলা হয়েছে, “সততার অনুশীলনে অনেকগুলো দিক অন্তর্ভুক্ত। অন্য কথায়, সৎ থাকার নির্দিষ্ট মান শুধুমাত্র একটা দিকের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব নয়; সৎ হতে গেলে তার আগে তোমাকে অনেক দিক থেকে তার নির্দিষ্ট মান পূর্ণ করতে হবে। কেউ কেউ সর্বদা ভাবে যে সৎ হওয়ার জন্য তাদের শুধুমাত্র মিথ্যাচার এড়িয়ে চলতে পারলেই হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গি কি সঠিক? সৎ হওয়া কি শুধু মিথ্যাচার না করার সাথেই যুক্ত? না—এর সাথে অন্যান্য অনেক দিকও সম্পর্কিত। প্রথমত, তুমি যা কিছুরই সম্মুখীন হও না কেন, এমনকিছু যা তুমি নিজের চোখে দেখেছ বা এমনকিছু যা অন্য কেউ তোমাকে বলেছে, তা মানুষের সাথে আলাপচারিতা হোক বা কোনো সমস্যার সমাধান করা হোক, তা তোমার নিজের পালনীয় দায়িত্ব হোক বা তোমার উপর ঈশ্বরের অর্পিত কর্তব্যই হোক—তোমাকে সর্বদা অবশ্যই সৎ হৃদয়ে সেটার প্রতি অগ্রসর হতে হবে। সৎ হৃদয়ে কোনোকিছুর প্রতি অগ্রসর হওয়া কীভাবে অনুশীলন করা উচিত? তুমি যা ভাবো সেটাই বলো, আর সৎ ভাবে বলো; অন্তঃসারশূন্য কথাবার্তা বোলো না, জটিল আনুষ্ঠানিক পরিভাষা বা মনভোলানো কথা বোলো না, চাটুকারিতাপূর্ণ বা কপট মিথ্যাকথা বোলো না, বরং নিজের হৃদয়ে যা আছে সেই কথা বলো। এটাই সৎ হয়ে ওঠা। নিজের হৃদয়ে থাকা প্রকৃত চিন্তাভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ—এটাই সৎ ব্যক্তিদের করা উচিত। তুমি যদি কখনোই নিজের মনের কথা না বলো এবং তোমার হৃদয়ে সেই কথাগুলো উদ্বেলিত হয়, এবং তুমি যা বলো তা যদি সবসময়েই তোমার চিন্তার বিপরীত কথা হয়, একজন সৎ ব্যক্তি কখনোই এরকম কাজ করে না। উদাহরণস্বরূপ, তুমি তোমার দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করো না, এবং লোকেরা যখন জিজ্ঞাসা করে কী চলছে, তখন জবাবে তুমি বলো, ‘আমি আমার দায়িত্ব ভালোভাবেই পালন করতে চাই, কিন্তু বিভিন্ন কারণে, আমি তা করে উঠতে পারিনি,’ যেখানে প্রকৃতপক্ষে, তুমি যে পরিশ্রমী ছিলে না সেটা অন্তর থেকে জেনেও তুমি সত্যি বলোনি। আসল ঘটনা ঢেকে রাখার জন্য এবং দায়িত্ব এড়ানোর জন্য তুমি সমস্ত ধরনের কারণ, যুক্তি, এবং অজুহাত খোঁজো। একজন সৎ ব্যক্তি কি এটা করে? (না।) এইসব কথা বলে তুমি মানুষকে বোকা বানাও ও বিভ্রান্ত করো। কিন্তু তোমার অভ্যন্তরে যা আছে তার নির্যাস, তোমার অন্তরের যা অভিপ্রায় তার নির্যাস, হচ্ছে এক ভ্রষ্ট প্রকৃতি। তুমি যদি তা সর্বসমক্ষে এনে তার ব্যবচ্ছেদ করতে না পারো, তাহলে তাকে পরিশোধন করা যাবে না—আর এটা কোনও ছোট বিষয় নয়! তোমাকে অবশ্যই সত্যনিষ্ঠভাবে বলতে হবে, ‘আমি আমার দায়িত্ব পালনে কিছুটা দীর্ঘসূত্রতা করে এসেছি। আমি অযত্নশীল, উদাসীন, ও অমনোযোগী ছিলাম। মেজাজ ভালো থাকলে আমি সামান্য সচেষ্ট হতে পারি। মেজাজ খারাপ থাকলে আমি ফাঁকি দিই, চেষ্টা করতে চাই না, আর দৈহিক আরামের লোভ করি। সুতরাং দায়িত্ব পালনে আমার চেষ্টা পর্যাপ্ত নয়। গত কয়েকদিন ধরে পরিস্থিতি কিছুটা বদলাচ্ছে আর আমি চেষ্টা করছি আমার সম্পূর্ণটা দেওয়ার, আমার দক্ষতার উন্নতিসাধন করার, এবং ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করার’। এটাই হল অন্তর থেকে কথা বলা। অন্যভাবে কথা বলাটা অন্তরের থেকে ছিল না। তোমার মোকাবিলার প্রতি ভীতি, লোকজন তোমার সমস্যার বিষয়ে জানতে পারবে সেই ভয়, আর তারা তোমাকে দায়ী করবে এমনটা ভাবার কারণে, সত্য আড়াল করার অভিপ্রায়ে তুমি সমস্ত রকমের যুক্তি, আত্মপক্ষসমর্থন এবং অজুহাত খুঁজে বার করো, প্রথমে লোকজনকে সেই পরিস্থিতির বিষয়ে আলোচনা করা থেকে বিরত করো, তারপর মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়া এড়াতে দায়িত্ব পাল্টে নাও। এটাই তোমার মিথ্যার উৎস। মিথ্যাবাদীরা যত কথাই বলুক না কেন, সেগুলোর কিছু কিছু নিশ্চিতভাবেই সত্য ও ঘটনানির্ভর হয়। কিন্তু তারা যে মূল কথাগুলো বলে তার মধ্যে কিছুটা মিথ্যা এবং তাদের অসদুদ্দেশ্য নিহিত থাকবে। সুতরাং, কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা তা নির্ণয় করা এবং তাদের পার্থক্য নিরূপণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এটা সহজ কাজ নয়। তারা যা বলে তার কিছু কথা অশুদ্ধতামিশ্রিত এবং আড়ম্বরপূর্ণ হবে, কিছু কথা সত্যঘটনার সাথে সঙ্গত হবে, এবং কিছু কথা সত্যঘটনার পরিপন্থী হবে; সত্য এবং কল্পনা এইভাবে মিশে থাকার জন্য সত্যি থেকে মিথ্যার পার্থক্য নিরূপণ করা বেশ কঠিন। এই ধরণের মানুষেরা সবচেয়ে চাতুর্যপূর্ণ, এবং এদের সনাক্ত করা সবচেয়ে কঠিন। তারা সত্যকে গ্রহণ করতে না পারলে বা সততা অনুশীলন করতে না পারলে অবশ্যই তাদের পরিহার করা হবে। তাহলে, মানুষের কোন পথ বেছে নেওয়া উচিত? সততা অনুশীলনের উপায় তাহলে কোনটা? তোমাদের সত্যি কথা বলা শিখতে হবে এবং তোমার প্রকৃত অবস্থা ও সমস্যা সম্পর্কে খোলাখুলিভাবে আলোচনা করতে সক্ষম হতে হবে। সৎ লোকেরা এভাবেই অনুশীলন করে এবং এই ধরনের অনুশীলনই সঠিক” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র সৎ হওয়ার মাধ্যমেই প্রকৃত মানুষ হিসাবে জীবনযাপন করা যায়)। এই অংশটা পড়া আমার কাছে খুব মর্মস্পর্শী ছিল। ঈশ্বর আমাদের কত ভালো জানেন। তিনি জানেন আমাদের কাজে আমাদের সকলের সমস্যা হবে এবং আমরা ভুল করব। এটা অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু মূল বিষয় হল সমস্যা দেখা দিলে কেউ কী ধরনের মনোভাব পোষণ করে, তারা বিনম্র কি না এবং সততার সাথে তাদের ভুল স্বীকার করে তারপর তা সংশোধন করে, নাকি তারা নিজেদের পক্ষে কথা বলে, সমস্যা ধামাচাপা দেয়, এবং প্রতারণা করে। আগে, আমি আমার শয়তানোচিত স্বভাব অনুযায়ী বাস করতাম, আমি ধূর্ত এবং প্রতারক ছিলাম। আমি ভুল পথে ছিলাম আর আমি সেই পথে চলতে পারিনি। আমি একজন সৎ ব্যক্তি হতে চেয়েছিলাম এবং ঈশ্বরের সুবিবেচনা গ্রহণ করতে চেয়েছিলাম। আমার কাজে যতই ভুল বা সমস্যা আসুক না কেন, বা নেত্রী যদি আমার কাজের খোঁজ নিতে আসেন, আমাকে সততার সাথে, সৎ হৃদয়ের সাথে তা বিবেচনা করতে হত, তথ্য থেকে সত্য সন্ধান করতে হত, এবং আমার মনে যা ছিল তাই বলতে হত। আমার সব কথা স্পষ্টভাবে বলা উচিত, এবং আমি কিছু না করলে তা স্বীকার করা উচিত, কোনো মিথ্যা না বলে বা নিজেকে রক্ষা না করে। এছাড়াও, সততার সাথে কথা বলার সঙ্গে, আমি আমার কথা এবং কাজের পিছনে উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা অনুশীলন করতে চেয়েছিলাম এবং যদি তারা সঠিক না হয় তবে তখনি তাদের পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম, নিজের স্বার্থ রক্ষা না করে এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য কোনো কৌশল প্রয়োগ না করে। আমি নিঃশব্দে সিদ্ধান্ত নিলাম যে তারপর থেকে আমি সেই পথই গ্রহণ করব।
একদিন, আমি লক্ষ্ করলাম যে একজন নবাগত বিশ্বাসী পরপর বেশ কয়েকটা সমাবেশে যোগ দিতে পারেনি। আমি তাকে কয়েকবার ফোন করেছিলাম এবং সে ফোন তোলেনি, এবং সে বার্তাগুলোর জবাব দিচ্ছিল না। আমি জানতাম না কী হচ্ছে। আমার দুশ্চিন্তা হল যে সে সমাবেশে আসা বন্ধ করে দেবে এবং ভাবলাম নেত্রীর কাছে আমার এটা উল্লেখ করা উচিত কিনা যাতে সে যদি কোন দিন উপস্থিত হওয়া বন্ধ করে দেয়, নেত্রী আমাকে দায়ী করবেন না। আমার যখন এই ভাবনাটা এল, আমি বুঝতে পারলাম যে আমার কৌশল করার পুরনো সমস্যা আবার দেখা দিচ্ছে। তখন আমার ঈশ্বরের কিছু বাণী মনে পড়ল: “তোমার সুনাম, ভাবমূর্তি এবং মর্যাদা রক্ষার জন্য তোমার কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই, আবার তেমনই তোমার ভুল ঢাকা দেওয়ার বা তা গোপন করারও কোনো প্রয়োজন নেই। তোমার এই সমস্ত অর্থহীন প্রচেষ্টায় যুক্ত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তুমি যদি এইসব বিষয় ছেড়ে দিতে পারো, তাহলে তুমি খুবই স্বস্তি পাবে, কোনো শৃঙ্খল বা যন্ত্রণা ছাড়াই বাঁচতে পারবে, এবং তুমি সম্পূর্ণভাবে আলোতেই জীবনযাপন করতে পারবে” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। এটা সত্যি। ঈশ্বর আমাদের অন্তর দেখেন। আমি আমার প্রতারণাপূর্ণ কৌশলের দ্বারা মানুষকে হয়ত বোকা বানাতে পারব, কিন্তু ঈশ্বর সবকিছু দিনের আলোর মত পরিষ্কার দেখেন এবং শেষ পর্যন্ত তিনি সবকিছুর স্বরূপ উন্মোচন করেন। আমি ঈশ্বরের সামনে আমার কাজ করছিলাম, কোনো ব্যক্তির জন্য কাজ করছিলাম না। আমার কোনো কৌশল করে নিজেকে ঢাকার দরকার ছিল না। যেমন আগে, যখন আমি কয়েকজন নবাগতদের সমর্থন করার জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তা সত্ত্বেও, তারা সমাবেশে যোগ দেয়নি এবং বিশ্বাস ও সত্যের প্রতি আগ্রহী ছিল না। নেত্রী যখন প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারলেন, তিনি নির্ধারণ করেছিলেন যে তারা প্রকৃত বিশ্বাসী নয় তাই তিনি আমাকে দায়ী করেননি। আমি দেখতে পাচ্ছিলাম যে মানুষের সাথে আচরণের জন্য গির্জার নির্দিষ্ট নীতি রয়েছে এবং তা প্রত্যেকের প্রতি ন্যায্য। আমাকে আমার দায়িত্ব পরিবর্তন করার জন্য বা তা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য কোনো কৌশল বা পরিকল্পনা করতে হয়নি। আগে আমি আমার শয়তানোচিত স্বভাব অনুযায়ী জীবন যাপন করতাম এবং সঠিকভাবে আমার কাজ করতাম না। এবার আর শিথিল হতে পারলাম না। আমাকে ন্যায়পরায়ণ হতে হত এবং আমার দায়িত্ব পালন করতে হত। আমি নীরবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, প্রস্তুত হলাম পরিবর্তনের জন্য এবং নবাগতদের সাহায্য ও সমর্থন করার জন্য যা করা উচিত তা করার জন্য। আমি যদি তাদের সাহায্য এবং সমর্থন করার জন্য আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করি এবং সেই সমস্ত সত্যের উপর আলাপআলোচনা করি যাদের নিয়ে আমার কথা বলা উচিত, অথচ তারপরেও যদি কোন নবাগত জমায়েত করতে না চায়, আমি সরাসরি সেটার সম্মুখীন হতে পারি এবং নেত্রীকে সততার সাথে বলতে পারি। একবার আমি আমার মনোভাব পরিবর্তন করে আবার সেই নবাগত বিশ্বাসীর সাথে যোগাযোগ করলাম, আশ্চর্যজনকভাবে, সে দ্রুত উত্তর দিল, বলল যে সে ইদানীং কাজে ব্যস্ত ছিল এবং খুবই ক্লান্ত ছিল, সেই কারণেই সে আসছিল না। আলাপআলোচনা করার জন্য আমি ঈশ্বরের বাণী ব্যবহার করলাম এবং তার থেকে সে ঈশ্বরের ইচ্ছা বুঝতে পারল, অনুশীলনের একটা পথ খুঁজে পেল, এবং আবার নিয়মিত অংশগ্রহণ শুরু করল। তারপর থেকে, যে নবাগত বিশ্বাসীরা সর্বদা সমাবেশে আসত না, আমি তাদের এবং ঈশ্বরের বাণীর উপর আলাপআলোচনা করার আমি আন্তরিকতার সাথে তাদের সমর্থন করতাম। আমি এটা করার পরে অনেক নবাগত বিশ্বাসী আবার সমাবেশে যেতে শুরু করে। এই কাজ করে, আমি খুব শান্তি এবং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতাম। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।