কর্তন ও মোকাবিলা সামলানোর উপায়

04-09-2023

—এক নিষ্ঠামূলক দিনলিপি

বুধবার, সতেরোই আগস্ট, দু’হাজার বাইশ, পরিষ্কার আকাশ

আমি আজ একটা নতুন কাজ শুরু করেছি। লেখালিখি সংক্রান্ত কাজ। কাজটা অপ্রত্যাশিত ছিল ঠিকই, কিন্তু তা করতে পেরে আমি বেশ খুশি। আমি জানি এটা ঈশ্বরের অনুগ্রহ, আর তিনি আমাকে অনুশীলনের একটা সুযোগ দিচ্ছেন। আমি ভালো করে কাজ করতে চাই। কিন্তু যখনই মনে হচ্ছে যে আমি এই কাজের সাথে কতটা অপরিচিত, এবং এই ধরণের কাজে স্বেচ্ছাচারী আর নীতিহীন হওয়ার জন্য অন্যদের কীভাবে কর্তন আর মোকাবিলার সম্মুখীন হতে হয়েছে, তখনই এই ভেবে আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছে: “এই কাজে কি আমাকেও কর্তন আর মোকাবিলার মুখোমুখি হতে হবে? আবার তা হলেও, কর্তিত হওয়ার ফলে আমি যদি কোনো শিক্ষা নিতে পারি তাহলে কি সেটা ভালোই হবে না? সত্য অর্জনের জন্য এ এক দারুণ সুযোগ!” তাই শেষ পর্যন্ত আমি দায়িত্বটা গ্রহণ করলাম।

রবিবার, চৌঠা সেপ্টেম্বর, দুহাজার বাইশ, মেঘলা

সময় কীভাবে বয়ে যায়। চোখের পলকে, দুসপ্তাহের বেশি হয়ে গেল আমি লেখালিখির কাজ করছি। নীতি সম্পর্কে আমাদের নেতার আলোচনা ও কাজের বিষয়ে তার পথনির্দেশ থেকে আমি এই কাজের সাথে আরেকটু পরিচিত হয়েছি, কিছু নিয়মনীতি শিখেছি। আজ আমি কিছু ব্রাদার সিস্টারকে দেখলাম নীতি মেনে দায়িত্ব পালন না করার জন্য আর স্বেচ্ছাচারী হওয়ার জন্য মোকাবিলার সম্মুখীন হতে। বেশ নার্ভাস হয়ে পড়লাম, আমার সাথেও মোকাবিলা করা হবে ভেবে ভয় পেলাম। যদিও আমি জানি যে নেতার দ্বারা কর্তিত হওয়ার অর্থ ঈশ্বরের বাক্যের সাথে সঙ্গতি রেখে ভ্রষ্ট স্বভাব আর সমস্যাগুলোর সারমর্ম চিনতে পারা, এবং তা আমাদের নিজেদের চিনতে আর সত্যের নীতিতে প্রবেশ করতে সাহায্য করে, কিন্তু তবুও আমি কর্তন বা মোকাবিলার সম্মুখীন হতে চাইনা। নীতিসঙ্গতভাবে কর্তব্য পালন না করার জন্য আজ ব্রাদার সলকে মোকাবিলার সম্মুখীন হতে হল। নেতা বারবার তার সাথে আলোচনা করছিল আর তাকে সংশোধন করে দিচ্ছিল, তবু সে একই ভুল করে চলেছিল। নেতা বলল, সে আধ্যাত্মিক বিষয়ে বিচক্ষণ নয় আর নীতিগুলোও বুঝতে পারেনি। যদিও এই কথাগুলো আমার উদ্দেশ্যে ছিল না, কিন্তু যখন আমার কানে এল “আধ্যাত্মিক বিষয়ে বিচক্ষণ নয়”, মনে হল যেন তা আমার এক সংবেদনশীল স্থান স্পর্শ করল। নিজেকে সাবধান করলাম, “আমায় নীতি অনুযায়ী কাজ করতে হবে, এবং কোনো ভুল করলে চলবে না, নাহলে মোকাবিলার সামনে পড়তে হবে। আমি আধ্যাত্মিক বিষয়ে বিচক্ষণ নই দেখা গেলে আমায় সমস্যায় পড়তে হবে। এরকম একজন কীভাবে উদ্ধার পেতে পারে? সে কি প্রস্তুত করে তোলারও যোগ্য?” এই চিন্তাগুলো আমাকে আরও উদ্বিগ্ন করে তুললো। আজ সন্ধ্যায় দায়িত্ব পালন করার সময়ে, পুরোটা সময় উৎকণ্ঠিত হয়ে ছিলাম। ভীষণ সতর্কতার সাথে কাজ করছিলাম, ভুল হওয়ার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে ছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারছি না অন্যদের মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়াটা আমার উপর এত প্রভাব ফেলছে কেন।

শুক্রবার, নয়ই সেপ্টেম্বর, দুহাজার বাইশ, পরিষ্কার আকাশ

সম্প্রতি, আমি নিজের কাজ নিয়ে ভীষণ উৎকণ্ঠিত থাকছি আর সারাক্ষণ সতর্কভাবে লক্ষ্য রাখছি। ভুল করার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে রয়েছি। মাঝেমাঝে অন্যেরা আমার দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চায়, কিন্তু যেসব ব্যাপারে আমি নিশ্চিত, সেই পরামর্শগুলো দিতে গেলেও ভুল কিছু বলে ফেলার ভয় হচ্ছে। নিজের দৃষ্টিভঙ্গি বলার আগে অন্য অনেকের কাছে গিয়ে তাদের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। সত্যি বলতে, এইভাবে দায়িত্বপালন খুবই ক্লান্তিকর, মনে হচ্ছে আমি ঈশ্বরের থেকে দূরে সরে এসেছি। আজ আমি ঈশ্বরের বাক্যের একটা অনুচ্ছেদ পড়লাম যা আমায় সত্যিই স্পর্শ করেছে। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “ঈশ্বরের গৃহে কর্মরত কিছু খ্রীষ্টবিরোধী নীরবে সংকল্প নেয় সতর্কভাবে কাজ করতে, ভুল করা এড়িয়ে চলতে, অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন হওয়া এবং মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়া থেকে বাঁচতে, উর্দ্ধতনকে ক্ষুব্ধ করা বা খারাপ কিছু করতে গিয়ে তাদের নেতার কাছে ধরা পরে যাওয়া থেকে অব্যাহতি পেতে; এবং তারা কোনো সৎকর্ম করলে সেটার যাতে কোনো দর্শক থাকে তা নিশ্চিত করে। তবুও, যতই সতর্ক থাকুক, যেহেতু তারা ভুল জায়গা থেকে শুরু করে এবং ভুল পথ গ্রহণ করে, শুধু সুনাম ও মর্যাদা লাভের জন্যেই কাজ করে এবং কখনো সত্যের সন্ধান করে না, তাই তারা প্রায়ই নীতি লঙ্ঘন করে, গির্জার কাজকে ব্যাহত ও বিশৃঙ্খল করে, শয়তানের সহচরের মতো কাজ করে এবং প্রায়ই অধর্মও করে। এই ধরনের মানুষদের পক্ষে প্রায়ই নীতি লঙ্ঘন করা ও অধর্ম করা খুবই সাধারণ বিষয়। সুতরাং, নিশ্চিতভাবেই তাদের পক্ষে অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন এবং মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়াকে এড়িয়ে যাওয়া কঠিন ব্যাপার। খ্রীষ্টবিরোধীরা যখন অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন এবং মোকাবিলার সম্মুখীন হচ্ছে না, তখনও কেন তারা এত সতর্কতার সঙ্গে কাজ করে? নিশ্চিতভাবেই একটা কারণ হল যে তারা মনে করে, ‘আমাকে সাবধান থাকতে হবে—যাই হোক না কেন, “সাবধানের মার নেই” আর “ভালোদের জীবন শান্তিপূর্ণ হয়।” আমাকে এই নীতিগুলো মেনে চলতে হবে এবং ভুল কাজ করা বা সমস্যায় পড়াকে এড়িয়ে চলার কথা প্রতি মুহূর্তে নিজেকে মনে করিয়ে যেতে হবে, আর আমার ভ্রষ্টতা ও অভিপ্রায় লুকিয়ে রাখতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি ভুল কাজ করছি না এবং একেবারে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারছি, ততক্ষণ আমি আশীর্বাদ লাভ করবো, দুর্যোগ এড়িয়ে যেতে পারবো, আর আমার ঈশ্বর-বিশ্বাসে সফল হবো।’ তারা প্রায়ই এই উপায়ে নিজেদের প্ররোচিত, অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করে। তারা বিশ্বাস করে যে তারা যদি ভুল কাজ করে, তাহলে তাদের আশীর্বাদ লাভ করার সুযোগ তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমে যাবে। এই হিসাব আর বিশ্বাসই কি তাদের হৃদয়ের গভীর পর্যন্ত দখল করে রাখেনি? খ্রীষ্টবিরোধীদের এই হিসাব ও বিশ্বাস ঠিক না ভুল সে কথা দূরে সরিয়ে রেখে, এই বিশ্বাসের উপরেই ভিত্তি করে, মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়ার সময় ও তাদের অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তনের সময় কোন বিষয়ে তারা সবচেয়ে উদ্বিগ্ন হবে? (নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও ভাগ্যের বিষয়ে।) তারা মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়া ও অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন হওয়াকে তাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও ভাগ্যের সাথে যুক্ত করে—এর সাথে তাদের মন্দ প্রকৃতির সম্পর্ক আছে(বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, নবম পরিচ্ছেদ: কেবলমাত্র নিজেদেরকে বিশিষ্ট ভাবে তুলে ধরতে এবং নিজেদের স্বার্থ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে পরিতুষ্ট করতেই তারা তাদের কর্তব্য করে; তারা কখনোই ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে না, এবং ব্যক্তিগত গৌরবের বিনিময়ে এমনকি সেই স্বার্থ বিক্রয় অবধি করে দেয় (অষ্টম অংশ))। এই অনুচ্ছেদে ঠিক আমার অবস্থাই বর্ণনা করা আছে। আমি যখন অন্যদের মোকাবিলার সম্মুখীন হতে দেখি, সেটাকে ঈশ্বরের কাছ থেকে আগত বলে গ্রহণ করি না, বা সন্ধান করি না যে কেন তাদের সাথে মোকাবিলা করা হচ্ছে, কীভাবে তারা বিচ্যুত হয়েছে, তাদের ব্যর্থতা থেকে আমি কীভাবে শিখতে পারি, কীভাবে ভবিষ্যতে নীতিসঙ্গতভাবে কাজ করে একইভাবে বিচ্যুত হওয়া এড়াতে পারি। তার পরিবর্তে, মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়ার সাথে নিজের নিয়তিকে অদৃশ্য অথচ ওতপ্রোতভাবে যুক্ত করি। আমার মনে হয়, যত গুরুতর মোকাবিলার সম্মুখীন হতে হবে, আশীর্বাদ লাভের আশা ততই কম। আমি আরও রক্ষণশীল ও সাবধান হয়ে পড়েছি, ভাবছি যে যতক্ষণ আমি কোনো ভুল করছি না বা আমার মোকাবিলা করা হচ্ছে না, আমার আশীর্বাদ লাভের আশা আছে। মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়ার বিষয়ে আমার ভুল ধারণার জন্য, আর যেহেতু আমি আশীর্বাদকে খুবই মূল্যবান মনে করি, তাই আমার নিয়তির সাথে জড়িত সব বিষয়েই আমি ভীষণ সংবেদনশীল, যা করি তাতে-ই আমি অতিমাত্রায় সতর্ক। আমার ভয় হয় যে যদি সতর্ক না হই, তাহলে আমার মোকাবিলা করা হবে, আর আমি আমার ভালো পরিণাম হারাবো। আমি দেখতে পাচ্ছি যে আমি কত মন্দ আর শঠ। নেতা আমাদের সাথে অনেকবার নীতির আলোচনা করে, হাতে ধরে বুঝিয়ে দেয়, কিন্তু আমরা তার কথায় গুরুত্ব দিই না। ইচ্ছামতো ও অন্ধভাবে কাজ করতে থাকি, কাজে বিঘ্ন ঘটাই। আমাদের সাথে মোকাবিলা করা কি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক নয়? কোনো যুক্তিপূর্ণ মানুষ এই আলোয় নিজের বিশ্লেষণ করে দেখতো, যে কোথায় সে পিছিয়ে পড়ছে, বা কোথায় আধ্যাত্মিক বিচক্ষণতার অভাব আছে, আর সত্যের সন্ধান করে দ্রুত নিজের বিচ্যুতি সংশোধন করে নিতো। এমন একজন মানুষের ইতিবাচক প্রবেশ আছে এবং সে সত্যের সন্ধান করে। সত্যে প্রবেশ করতে আর ভালোভাবে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে আমাদের সাহায্য করার জন্যই আমাদের সাথে মোকাবিলা করা হয়। কিন্তু আমি যে শুধু সত্যের সন্ধান করি না বা গভীরভাবে চিন্তা করি না তা-ই নয়, সেইসাথে আমি রক্ষণশীল এবং ভুল ধারণার বশবর্তী। আমি ভালো-মন্দের তফাৎ ধরতে পারি না! ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা উদ্ঘাটিত হওয়ার সুবাদে এখন নিজের অবস্থা সম্পর্কে আমার কিছু ধারণা হয়েছে।

সোমবার, বারোই সেপ্টেম্বর, দু’হাজার বাইশ, প্রচণ্ড বৃষ্টি

আজকের সমাবেশের সময় নেতা জানতে পারল যে মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়ার পর সল নেতিবাচক হয়ে পড়েছে, আর নিজেকে সীমাবদ্ধ ও অবদমিত মনে করছে। নেতা আমাদের কাছে জানতে চাইল আমরাও সীমাবদ্ধ বোধ করছি কি না। আমি নিজের সাম্প্রতিক অবস্থার কথা মনে করে বললাম যে আমি কিছুটা সীমাবদ্ধ অনুভব করেছি। তখন নেতা এমন কিছু আলোচনা করল যেগুলো আমাকে সত্যিই ছুঁয়ে গেল। সে বলল: “এমন কেন হয় যে কারো কারো সাথে বারবার মোকাবিলা করা সত্ত্বেও তারা সত্য অর্জন করে না, আর বলে যে তারা সীমাবদ্ধ, নিপীড়িত, ব্যথিত? কারণ তারা সত্যকে উপলব্ধি করার বা লাভ করার দিকে মনোযোগ দেয় না, অর্থাৎ তারা কিছুই অর্জন করে না। মোকাবিলার সম্মুখীন হলে তাদের মধ্যে প্রতিরোধ আর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা অন্যদের বিরুদ্ধে চলে যায়। এমন মানুষ কি সত্যকে স্বীকার করে? বস্তুত, তাদের মোকাবিলা করা হয় কারণ তারা সত্যের নীতি লঙ্ঘন করেছে, কিন্তু তারা চিন্তাভাবনা করতে অস্বীকার করে, এমনকি কাজে ঢিলেও দেয়। এ থেকেই দেখা যায় যে তারা সত্যকে স্বীকার করে না, এবং সত্যের বিরুদ্ধাচরণ করে আর সত্যের বিপরীতে অবস্থান করে। সত্যের বিপরীতে অবস্থান করার সারমর্মগত অর্থ হল ঈশ্বরের বিপরীতে অবস্থান করা। এর প্রকৃতি বড়ই গুরুতর।” নেতার এই আলোচনা থেকে অবশেষে আমি উপলব্ধি করলাম যে সত্যকে বা মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করার প্রকৃতি কত গুরুতর, আর এই অবস্থা কতটা বিপজ্জনক। যখন বাড়ি ফিরলাম, অনেকক্ষণ ধরে আমার বেশ অস্থির লাগছিল, আর বিছানায় শুয়ে থেকেও দীর্ঘ সময় ঘুমোতে পারিনি। আমার মনে হল এই পরিস্থিতি আকস্মিক নয়, ঈশ্বরের ইচ্ছাই এর নেপথ্যে রয়েছে। আমি ভাবতে শুরু করলাম, সত্যকে স্বীকার না করার বহিঃপ্রকাশ ঠিক কীভাবে হয়? এই পরিস্থিতিতে আমি কীভাবে শিক্ষাগ্রহণ আর আত্মচিন্তন করতে পারি?

বুধবার, চোদ্দই সেপ্টেম্বর, দু’হাজার বাইশ, পরিষ্কার আকাশ

আজ সলকে বরখাস্ত করা হল। আরও কয়েকজনকেও বরখাস্ত করা হয়েছে কারণ তারাও সত্যকে স্বীকার করেনি, আর কাজও এগোচ্ছিল না। একজন সিস্টারের কাছ থেকে জানতে পারলাম, সল প্রায়ই তার কাজ নিজের ইচ্ছামতো করতো আর নীতি লঙ্ঘন করতো, আর প্রতিবারেই নেতা ধৈর্যের সাথে তার সঙ্গে সত্যের আলোচনা করতো। মাঝেমাঝে নেতা তার অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন করেছে আর তার সমস্যার সারমর্ম তাকে দেখিয়েছে, কিন্তু সল সত্যের সন্ধান করেনি বা আত্মানুসন্ধানও করেনি। কর্তিত হওয়ার উত্তরে সে আরও শিথিল হয়ে যেতো আর কাজ সংক্রান্ত আলোচনায় তার দৃষ্টিভঙ্গি জানাতেও অস্বীকার করতো। এমনকি একবার একটা সমাবেশে সে এ-ও বলেছে: “যখন একটা ভালো কাজ করি তখন নেতার চোখে পড়ে না, কিন্তু না করলে তখন আমার মোকাবিলা করা হয়।” বিশ্বাস করা কঠিন হল যে সে একথা বলেছে আর এটা যে সে বলতে পেরেছে, তা থেকেই দেখা যায় যে সে সত্যকে একেবারে স্বীকার করে নি! আমি ঈশ্বরের বাক্যের কয়েকটা অনুচ্ছেদ পড়লাম। “যখন একজন খ্রীষ্টবিরোধীর অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন করা হয় এবং তার সাথে মোকাবিলা করা হয়, সে প্রথম যা করে তা হল হৃদয়ের গভীর থেকে সেটাকে প্রতিরোধ ও প্রত্যাখ্যান করা। সে এটার সাথে লড়াই করে। কিন্তু কেন? কারণ খ্রীষ্টবিরোধীরা তাদের প্রকৃতি ও সারমর্মগতভাবে সত্যের বিষয়ে বীতশ্রদ্ধ ও সত্যকে ঘৃণা করে, এবং সত্যকে একেবারেই গ্রহণ করে না। স্বাভাবিকভাবেই, একজন খ্রীষ্টবিরোধীর সারমর্ম ও স্বভাব তাকে নিজের ভুল বা ভ্রষ্ট স্বভাবকে স্বীকার করতে বাধা দেয়। এই দুটো বিষয়ের উপর ভিত্তি করে, অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন ও মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়ার প্রতি একজন খ্রীষ্টবিরোধীর মনোভাব হল সম্পূর্ণ ও চূড়ান্তভাবে তা প্রত্যাখ্যান করা ও তার বিরোধিতা করা। সে এটাকে তার হৃদয়ের গভীর থেকে ঘৃণা ও প্রতিরোধ করে, এবং স্বীকার বা সমর্পণ করার ন্যূনতম চিহ্নও তার নেই, প্রকৃত আত্মানুসন্ধান বা অনুতাপ তো একেবারেই নেই। যখন একজন খ্রীষ্টবিরোধীর অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন ও তার সাথে মোকাবিলা করা হয়, তা যে-ই করুক, তা যে বিষয় সংক্রান্তই হোক, সেজন্য তারা যে পরিমাণই দায়ী হোক, সেই ভুল যত নির্লজ্জই হোক, যত মন্দ কাজই সে করে থাকুক, বা তার মন্দত্ব গির্জার জন্য যে পরিণামই বয়ে আনুক—সেই খ্রীষ্টবিরোধী সেসবের কিছুই বিবেচনা করে না। একজন খ্রীষ্টবিরোধীর কাছে, যে তার অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন ও তার সাথে মোকাবিলা করছে, সে বস্তুত তাকে বহিষ্কার করছে, অথবা তাকে দণ্ড দেওয়ার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে তার দোষ খুঁজে বার করছে। সেই খ্রীষ্টবিরোধী এমনও মনে করতে পারে যে তার সাথে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে বা তাকে অপমান করা হচ্ছে, তার সাথে মানবিক ব্যবহার করা হচ্ছে না, এবং তাকে হীন প্রতিপন্ন করা হচ্ছে ও অবজ্ঞা করা হচ্ছে। একজন খ্রীষ্টবিরোধীর অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন ও তার সাথে মোকাবিলা হওয়ার পর, সে কখনও চিন্তা করে না যে সে আসলে ঠিক কী ভুল করেছিল, কী ধরনের ভ্রষ্ট স্বভাব প্রকাশ করেছিল, সে সেই বিষয়ে নীতির সন্ধান করেছিল কি না, অথবা সে সত্যের নীতির সাথে সঙ্গতভাবে কাজ করেছিল বা নিজের দায়িত্ব পালন করেছিল কি না। সে কখনো নিজেকে পরীক্ষা করে দেখে না বা এসব বিষয়ের কোনোটা নিয়েই গভীরভাবে চিন্তা করে না। তার পরিবর্তে, সে মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়া বা অপ্রয়োজনীয় অংশ কর্তিত হওয়ার প্রতি তার নিজের ইচ্ছামতো এবং ক্রুদ্ধমস্তিষ্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। যখনই একজন খ্রীষ্টবিরোধীর অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন করা হয় বা তার সাথে মোকাবিলা করা হয়, সে ক্রোধ, অসন্তোষ, ও ক্ষোভে পূর্ণ হয়ে ওঠে, এবং কারো উপদেশেই কর্ণপাত করে না। অপ্রয়োজনীয় অংশ কর্তিত হওয়া ও মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়াকে গ্রহণ করতে সে অস্বীকার করে, এবং নিজের সম্পর্কে জানতে ও আত্মানুসন্ধান করতে, তাদের যে কাজ নীতি লঙ্ঘন করে, যেমন তার দায়িত্বপালনে দায়সারা ও অযত্নশীল হওয়া বা অনিয়ন্ত্রিত আচরণ করা, সেগুলো সমাধানের উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের সম্মুখে ফিরে আসতে অসমর্থ হয়, অথবা নিজের ভ্রষ্ট স্বভাবের সমাধান করতেও এই সুযোগের ব্যবহার করে না। তার পরিবর্তে, সে অজুহাত খোঁজে নিজেকে রক্ষা করার, নিজেকে নির্দোষ প্রতিপন্ন করার, এমনকি সে অন্যদের প্ররোচিত ও উত্তেজিত করার মতো কথাও বলে(বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, দ্বাদশ পরিচ্ছেদ: আশীর্বাদ অর্জন করার আশা এবং সুযোগ না থাকলে তারা পশ্চাদপসরণ করতে চায়)। “যেসব পরিস্থিতি সহসা উদ্ভূত হয়—বিশেষত প্রতিকূলতার সামনে, এবং ঈশ্বর যখন মানুষকে প্রকাশিত ও অনাবৃত করেন—তা নির্বিশেষে কারো ঈশ্বরের বাক্য ও কর্ম ঠিক না ভুল তার পরীক্ষা, অধ্যয়ন, ও বিচার করার পরিবর্তে সবার আগে যা করা উচিত তা হল তার নিজের কথা ও কাজ নিয়ে এবং ভ্রষ্ট স্বভাব নিয়ে গভীর চিন্তা আর সেগুলোকে পরীক্ষা করতে ঈশ্বরের সম্মুখে আসা। যদি তুমি সঠিক অবস্থানে থাকো, তাহলে তুমি জানবে তোমার ঠিক কী করা উচিত। মানুষের ভ্রষ্ট স্বভাব রয়েছে এবং তারা সত্যকে উপলব্ধি করে না। এটা তেমন কোনো বড় সমস্যা নয়। কিন্তু যখন মানুষ তার ভ্রষ্ট স্বভাব থাকা এবং সত্যকে উপলব্ধি না করে সত্ত্বেও সত্যের সন্ধান করে না—তাহলে তাদের বাস্তব সমস্যা রয়েছে। তোমার ভ্রষ্ট স্বভাব রয়েছে এবং তুমি সত্য উপলব্ধি করো না, সুতরাং তুমি এখনও ঈশ্বরকে যথেচ্ছভাবে বিচার করতে পারো, এবং নিজের মর্জি, পছন্দ, ও আবেগের নির্দেশ অনুযায়ী ঈশ্বরের প্রতি অগ্রসর হতে ও তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে পারো। তবে, তুমি যদি সত্যের সন্ধান ও অনুশীলন না করো, তাহলে বিষয়গুলো এত সহজ হবে না। তুমি যে শুধু ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ করতে পারবে না তা-ই নয়, তুমি হয়ত তাঁকে ভুল বুঝতে ও তাঁর বিষয়ে অভিযোগ করতে পারো, তাঁকে দোষারোপ করতে পারো, তাঁর বিরোধিতা করতে পারো, এমনকি নিজের হৃদয়ে তাঁকে তিরস্কার এবং প্রত্যাখ্যানও করতে পারো, বলতে পারো যে তিনি ন্যায়পরায়ণ নন, তিনি যা করেন তার সবই যে ঠিক, এমনটা না-ও হতে পারে। তোমার মধ্যে যে এখনও এসব বিষয় উদ্ভূত হতেই পারে, তা কি বিপজ্জনক নয়? (অবশ্যই।) তা খুবই বিপজ্জনক। সত্যের সন্ধান না করার মূল্য কাউকে তার জীবন দিয়ে পরিশোধ করতে হতে পারে! এবং তা যে কোনো সময় ও যে কোনো স্থানেই ঘটতে পারে(বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, দশম পরিচ্ছেদ: তারা সত্যকে ঘৃণা করে, প্রকাশ্যে নীতির লঙ্ঘন করে, এবং ইশ্বরের গৃহের আয়োজনকে উপেক্ষা করে (তৃতীয় অংশ))। “যারা প্রায়শই নিষ্ক্রিয় থাকে তাদের সকলের ক্ষেত্রেই এর কারণ হল সত্যকে গ্রহণ করার অক্ষমতা। যদি তুমি সত্যকে গ্রহণ না করো, তাহলে নিষ্ক্রিয়তা তোমাকে এক দানবের মতো হানা দিয়ে তাড়া করে বেড়াবে, যার ফলে তুমি এক চিরস্থায়ী নিষ্ক্রিয় অবস্থায় জীবনযাপনের করবে, এবং তোমার মধ্যে বৃদ্ধি পাবে ঈশ্বরের প্রতি নিন্দা, আনুগত্যহীনতা ও অসন্তোষের মনোভাব। তা যখন এই পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছবে যে তুমি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, বিদ্রোহ, ও চিৎকার করতে আরম্ভ করবে, তখন তুমি চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছে গেছ। মানুষ যখন তোমার ব্যবচ্ছেদ করতে ও তোমাকে শ্রেণীভুক্ত করতে শুরু করবে, তখন অনেক দেরি করে তুমি পরিস্থিতির গুরুতর বাস্তবতাকে উপলব্ধি করবে এবং ভূলুণ্ঠিত হয়ে বুক চাপড়াতে থাকবে। তখন তুমি শুধুমাত্র যা করতে পারবে তা হল ঈশ্বরের দণ্ডপ্রদানের প্রতীক্ষা!(বাক্য, খণ্ড ৫, নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের দায়িত্বসমূহ)। ঈশ্বরের বাক্য থেকে অবশেষে বুঝতে পারলাম, কোনো মানুষ সত্যকে স্বীকার করে কি না তার সবচেয়ে স্পষ্ট সূচক হল কীভাবে সে মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়াকে সামাল দেয়। মোকাবিলায় সম্মুখীন হওয়ার সময়, যারা সত্যের অন্বেষণ করে ও সত্যকে স্বীকার করে, তারা আত্মানুসন্ধান করতে পারে, আর যত কঠোরভাবেই তাদের মোকাবিলা করা হোক, তারা সর্বদা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে পারে, বিবেচনা করতে পারে যে ঠিক কোথায় তাদের ভুল হয়েছিল, কী কারণে তা হল, এবং কী ভ্রষ্ট স্বভাব তারা প্রকাশ করেছে, তারপর সত্যের সন্ধান আর তা থেকে শিক্ষালাভ করে। যদিও কিছু নেতিবাচকতা ও দুর্বলতা থাকতে পারে, কারণ তারা তাদের ভ্রষ্ট আচরণের গভীরতা ও তাদের অধর্মের প্রাবল্য দেখতে পায়, অপরাধবোধ ও অনুশোচনা অনুভব করতে আরম্ভ করে, ফলে অন্তর থেকে নিজেদের ঘৃণা করে। কিন্তু এই নেতিবাচকতা দূর হয়ে যাবে। এই ব্যর্থতাগুলো থেকে তারা সত্যের সন্ধান করতে পারে এবং আত্মানুসন্ধান চালিয়ে যেতে পারে, আর যখন তারা সত্যিই নিজেদের সমস্যাগুলো জানে এবং নিজেদের কৃতকর্মের প্রকৃতি স্পষ্টভাবে দেখতে পায়, তখন তারা মোকাবিলার মধ্যে নিহিত ঈশ্বরের ভালোবাসা ও সুরক্ষাকে দেখতে পায়, আর ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেয়। সেই মুহূর্তে একজন ব্যক্তির অবস্থা সঠিক ও ইতিবাচক। কিন্তু যে সত্যকে স্বীকার করে না সে মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়াকে অন্যভাবে গ্রহণ করে। যদিও কেউ কেউ হয়তো খোলাখুলি অভিযোগ করে না, কিন্তু তারা কখনো ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে আত্মানুসন্ধান বা আত্মজ্ঞান অর্জন করে না। তাদের অন্তরে তারা তর্ক করে, প্রতিরোধ করে, আর অজুহাত তৈরী করে, অর্থাৎ যত তারা এই সম্পর্কে ভাবে, ততই ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত বোধ করে, এমনকি এ-ও মনে করে যে তাদের সাথে অন্যায় করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই, তা থেকে নেতিবাচক আবেগ তৈরী হয়। এই নেতিবাচক আবেগের মধ্যে রয়েছে বাস্তবতার প্রতি ও অন্যদের প্রতি তাদের অসন্তোষ। যারা সত্যকে স্বীকার করে, তারা দেখতে পায় যে মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়ার মাধ্যমে তারা নিজেদের ভ্রষ্ট স্বভাবকে যথার্থভাবে জানতে পারে, অনুতপ্ত হতে আর পরিবর্তিত হতে পারে, এবং এটা তাদের বিশ্বাসে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ মোড়। কিন্তু যারা সত্যকে স্বীকার করে না, তারা অনাবৃত ও বহিষ্কৃত হবে। যারা প্রায়শই নেতিবাচক হয়ে পড়ে তারা সকলেই সত্যকে স্বীকার করে না, তারা প্রকৃতিগতভাবেই সত্যের বিষয়ে বীতশ্রদ্ধ, এবং নিজেদের ঈশ্বর-বিশ্বাসের সময়কাল নির্বিশেষে তারা উন্নতি করতে পারে না। মোকাবিলার সম্মুখীন হয়ে সল আত্মানুসন্ধান করেনি, বা ইচ্ছামতো কাজ করার প্রকৃতি ও পরিণাম বুঝতে পারেনি, অনুশীলনের নীতির সন্ধান করা তো অনেক দূরের কথা। তার পরিবর্তে, সে হয়ে পড়েছিল সীমাবদ্ধ, নেতিবাচক, ও নিরুৎসাহ। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়ার পর বিষন্ন হয়ে পড়াটা স্বাভাবিক, এবং দু-একদিনের আত্মানুসন্ধানের পর সে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু অন্য কিছু ব্রাদার-সিস্টাররা বলল, সে আগেও এরকমই ছিল—বাইরে থেকে উদ্যমী, তৎপর, কিন্তু যেই কাজে অসুবিধা দেখা দেয় আর তার সাথে মোকাবিলা করা হয়, সে নেতিবাচক ও নিরুৎসাহ হয়ে পড়ে, এবং সমস্যার আলোচনায় অংশগ্রহণ করা বন্ধ করে দেয়। সে বলত যে সে যত বেশি কাজের বিষয়ে পরামর্শ দেবে ততই সমস্যা অনাবৃত হবে, আর তাই সে সামান্যই পরামর্শ ও মতামত দিত, যাতে অল্প সমস্যা অনাবৃত হয়। তার এই শেষবার কর্তিত হওয়ার ফলে সে কাজে সীমাবদ্ধ ও অবদমিত বোধ করছিল, এবং হতাশ ও ব্যথিতও হয়েছিল। তার এই নেতিবাচক মনোভাব প্রকৃতপক্ষে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা এবং ঈশ্বরের প্রতিরোধ করা। সে এক খ্রীষ্টবিরোধী স্বভাব প্রকাশ করছিল। আমি শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারলাম যে এই নেতিবাচকতার পিছনে লুকিয়ে আছে এক শয়তানোচিত স্বভাব যা ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করে। সলের ভুল পথ গ্রহণ করা কি আমার জন্য একটা সতর্কবার্তা নয়? সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “সত্যের সন্ধান না করার মূল্য কাউকে তার জীবন দিয়ে পরিশোধ করতে হতে পারে! এবং তা যে কোনো সময় ও যে কোনো স্থানেই ঘটতে পারে।” এই বিষয়ে আগে আমার খুব একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ছিল না, কিন্তু সম্প্রতি আমি যে অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেলাম, তাতে এই বাক্যগুলো আমার হৃদয়ে সম্মতির ধ্বনি বাজিয়ে তুলল। মোকাবিলার সম্মুখীন হয়ে সত্যের সন্ধান না করা বা সত্যকে স্বীকার না করা খুবই বিপজ্জনক। যে ব্রাদার-সিস্টারদের সম্প্রতি বরখাস্ত করা হল তারা আসলে প্রতিভাবান ছিল, কিন্তু তাদের মর্মান্তিক দুর্বলতা ছিল সত্যের বিষয়ে বীতশ্রদ্ধ হওয়া এবং সত্যের সন্ধান না করা, সেহেতু তারা নিজেদের কাজে কখনোই ফলাফল পাচ্ছিল না, আর পরিণামে তাদের বরখাস্ত হতে হল। যত এই বিষয়ে ভাবি, ততই সত্যের সন্ধান করার গুরুত্ব দেখতে পাই।

বৃহস্পতিবার, পনেরোই সেপ্টেম্বর, দু’হাজার বাইশ, হাল্কা বৃষ্টি

নেতার সেদিনের আলোচনা গত কয়েকদিন ধরে আমার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, আর আমার চিন্তাভাবনা ঘুরেফিরে ঈশ্বরের এই বাক্যগুলোর দিকেই চলে আসছে: “যদি তুমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করো, তবুও সত্য বা ঈশ্বরের ইচ্ছার সন্ধান না করো বা ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার পথ বেছে না নাও, তবে তুমি আসলে বিচার এড়ানোরই চেষ্টা করছ এবং তুমি একটা হাতের পুতুল ছাড়া কিছুই না, তুমি সেই বিশ্বাসঘাতক যে বিরাট শ্বেত সিংহাসনের থেকে পালিয়েছে(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, খ্রীষ্ট সত্যের দ্বারাই বিচারের কাজ করেন)। আগে যখন আমি ঈশ্বরের এই বাক্যগুলো পড়েছিলাম: “তুমি আসলে বিচার এড়ানোরই চেষ্টা করছ”, এবং “তুমি একটা হাতের পুতুল ছাড়া কিছুই না, তুমি সেই বিশ্বাসঘাতক যে বিরাট শ্বেত সিংহাসনের থেকে পালিয়েছে”, তখন সাথে সাথে মাথায় এসেছিল ধর্মীয় জগতের সেই মানুষদের কথা যারা ধর্মীয় পূর্বধারণা আঁকড়ে ধরে থাকে। তারা শুধু অনুগ্রহের মাধ্যমে উদ্ধার লাভ করতে চায়। তারা ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের বিচারকার্যকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। তারা সেই পুতুল ও বিশ্বাসঘাতক যারা বিরাট শ্বেত সিংহাসনের থেকে পালিয়েছে। কিন্তু আমার আশ্চর্য লাগে, ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ স্বীকার করার অর্থ কি তাঁর বিচারকেও স্বীকার করা? ঈশ্বরের দৃষ্টিতে কি বিষয়টা এরকম? ঈশ্বরের বিচার ও তাঁর শাস্তিকে গ্রহণ করার প্রকৃত অর্থ কী? ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার পর আমি উপলব্ধি করলাম, ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ গ্রহণ করার প্রকৃত অর্থ তাঁর অন্তিম সময়ের বিচারকে গ্রহণ করা নয়। ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের বিচারকে গ্রহণ করতে সক্ষম হতে গেলে তোমাকে অবশ্যই অন্ততপক্ষে মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়াকে স্বীকার করতে হবে। তুমি যদি মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়া স্বীকার করতে না পারো, তাহলে ঈশ্বরের বিচার ও শাস্তিকে গ্রহণ করার কোনো রাস্তা তোমার নেই। মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়াকে সঠিকভাবে গ্রহণ করার উপায় নিয়ে আমি ঈশ্বরের আরও কিছু বাক্য পাঠ করলাম। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “তাদের অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন হওয়া এবং মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়ার ব্যাপারে মানুষের অন্ততপক্ষে কী জানা উচিত? যথেষ্টভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে হলে, অপ্রয়োজনীয় অংশ কর্তিত হওয়ার ও মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়ার অভিজ্ঞতা লাভ করতেই হবে—তা অপরিহার্য। মানুষকে অবশ্যই প্রতিদিন এগুলোর মুখোমুখি হতে হবে এবং তাদের ঈশ্বর বিশ্বাস ও পরিত্রাণ অর্জনে প্রায়শই এর অভিজ্ঞতা লাভ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় অংশ কর্তিত হওয়া ও মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়ার থেকে কেউই দূরে থাকতে পারে না। কারো অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন বা তাকে মোকাবিলার সম্মুখীন করার সাথে কি তার ভবিষ্যৎ ও ভাগ্যের কোনো যোগাযোগ আছে? (না।) তাহলে কারোর অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন ও মোকাবিলা করা হয় কীসের জন্য? তা কি মানুষকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য? (না, মানুষকে সত্য উপলব্ধিতে এবং নীতির সাথে সঙ্গতভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে সাহায্য করার জন্য।) ঠিক তাই। এ বিষয়ে এটাই সবচেয়ে সঠিক উপলব্ধি। কারো অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন এবং তাকে মোকাবিলার সম্মুখীন করা এক ধরনের অনুশাসন, এক প্রকার শোধন, কিন্তু এটা মানুষকে সাহায্য করারও একটা উপায়। কর্তিত হওয়া ও মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়া তোমাকে যথাসময়ে নিজের অসমীচীন অন্বেষণের পরিবর্তন করতে দেয়। তা তোমাকে তোমার বর্তমান সমস্যাগুলোকে তৎক্ষণাৎ উপলব্ধি করতে দেয়, এবং তুমি যে ভ্রষ্ট স্বভাব প্রকাশ করো সেটাকে যথাসময়ে সনাক্ত করতে দেয়। যা-ই হোক না কেন, অপ্রয়োজনীয় অংশ কর্তিত হওয়া ও মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়া তোমাকে নীতি অনুযায়ী তোমার কর্তব্য পালন করতে সাহায্য করে, তা তোমাকে ভুল করা থেকে ও বিপথগামী হওয়া থেকে সঠিক সময়ে উদ্ধার করে, আর তোমাকে বিপর্যয় ঘটানো থেকে বিরত করে। এ কি মানুষের সবচেয়ে বড় সহায়তা ও বৃহত্তম প্রতিকার নয়? যাদের বিবেক ও বোধ আছে, মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়া ও অপ্রয়োজনীয় অংশ কর্তিত হওয়াকে তাদের সঠিকভাবে গ্রহণ করতে সক্ষম হওয়া উচিত(বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, নবম পরিচ্ছেদ: কেবলমাত্র নিজেদেরকে বিশিষ্ট ভাবে তুলে ধরতে এবং নিজেদের স্বার্থ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে পরিতুষ্ট করতেই তারা তাদের কর্তব্য করে; তারা কখনোই ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে না, এবং ব্যক্তিগত গৌরবের বিনিময়ে এমনকি সেই স্বার্থ বিক্রয় অবধি করে দেয় (অষ্টম অংশ))। মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়ার সময় আমাদের যে সঠিক মনোভাব ও অনুশীলনের যে পথ গ্রহণ করা উচিত সে সম্পর্কে ঈশ্বরের বাক্য খুবই পরিষ্কার। বস্তুত, মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়া এবং নিয়তি একেবারেই সম্পর্কবিমুক্ত। ব্যবহৃত ভাষা যদি কঠোর হয়, হতাশাজনক হয়, এমনকি দোষারোপমূলকও হয়, তাহলেও তা সবই আমাদের ভ্রষ্টতাকে, স্বেচ্ছাচারিতাকে, কাজকর্মে নীতির অভাবকে চিনতে, এবং কাজে আমাদের বিচ্যুতিকে দেখতে সাহায্য করার জন্য। সত্যের সন্ধান এবং নীতিসঙ্গত দায়িত্বপালনে আমাদের সাহায্য করার জন্য। কেউ বারংবার, অথবা খুব কঠোরভাবে মোকাবিলার সম্মুখীন হলে তার অর্থ এই নয় যে তার নিয়তি শুভ নয়, আবার মোকাবিলার সম্মুখীন না হওয়ার অর্থও এই নয় যে তার নিয়তি শুভ হবে। যদিও কেউ কেউ হয়তো প্রায়ই কর্তন বা মোকাবিলার সম্মুখীন হতে পারে, এবং কখনও কখনও তা কঠোর, তীক্ষ্ণ হতে পারে, অথবা সেটাকে অনাবৃত করা বা তিরস্কার মনে হতে পারে, কিন্তু সেই ব্যক্তিরা পরবর্তীকালে সত্যের সন্ধান করতে, আত্মানুসন্ধান করতে, এবং নিজেদের ভ্রষ্ট স্বভাব, ঘাটতি, ও বিচ্যুতি সম্পর্কে কিছু উপলব্ধি লাভ করতে সক্ষম হয়। তারা পরিবর্তিত হতে ও জীবনে উন্নতিলাভ করতে সক্ষম হয়, এবং পরিশেষে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বহনও করতে পারে। ঈশ্বরে বিশ্বাসী হয়ে ওঠার সময় থেকে মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়ার প্রতি আমার মনোভাব কেমন ছিল, সেদিকে ফিরে দেখা শুরু করলাম। ন’বছর ধরে আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করছি, আর এই পুরোটা সময়ে, আমাকে মোকাবিলার সম্মুখীন প্রায় হতেই হয়নি, অথবা কোনো বড় বাধা বা ব্যর্থতাও আমার ছিল না। মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়ার প্রতি সবসময়েই আমার একটা অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। আমার মনে হতো মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়া একটা বাজে ব্যাপার, ভাবতাম এটা অনাবৃত হওয়া বা তিরস্কৃত হওয়ার মতোই। অন্যদের মোকাবিলা হতে দেখলে আমি ভয়ে সঙ্কুচিত হয়ে পড়তাম, আশঙ্কা হতো যে যদি সতর্ক না হই তাহলে আমার সাথেও এটাই ঘটবে। আমি মোকাবিলা হওয়াকে নিন্দিত বা অনাবৃত হওয়ার সাথে ভুল করেছিলাম, সেটাকে প্রত্যাখ্যান ও প্রতিরোধ করছিলাম, নিজের বিশ্বাসে নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের ঘেরাটোপে থাকতে চাইছিলাম। যারা ধর্মের মধ্যে শুধু তাদের রুজিরুটির সন্ধান করে তাদের চেয়ে আমার অন্বেষণের পার্থক্য কোথায়? আমি এতো পরিমাণ ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করেছি, এবং স্পষ্টভাবে জানি যে তাঁর অন্তিম সময়ের কাজের লক্ষ্য হল বিচার, পরিমার্জন, অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন, ও মোকাবিলার মাধ্যমে মানুষকে পরিশুদ্ধ করা ও নিখুঁত করে তোলা। কিন্তু আমার কোনো প্রকৃত জ্ঞান নেই, এবং আমি মোকাবিলা স্বীকার করতে বা পরিমার্জিত হতে অনিচ্ছুক, তাই যত বছর ধরেই ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না কেন, আমি কোনো উন্নতি করতে পারবো না। সত্যলাভ বা জীবন চরিত্রের পরিবর্তনসাধন করতে পারবো না, এবং ফলস্বরূপ আমায় দণ্ড ভোগ করতে হবে। যত এই বিষয়ে ভাবি, ততই বুঝতে পারি আমার অবস্থা কত বিপজ্জনক। আমার মতো যারা স্বাচ্ছন্দ্যের লোভ করে আর অনুগ্রহের অন্বেষণ করে, আমাদের যদি মোকাবিলা না করাও হয়, তার অর্থ এই নয় যে আমাদের পরিণাম ভালো হবে। আমি যদি কখনো সত্যের সন্ধান না করি বা নিজের ভ্রষ্ট স্বভাব না বদলাই, তাহলে পরিশেষে উদ্ধার পাবো না। মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়া কোনো ব্যক্তির পরিণাম প্রকাশ করে না, কিন্তু সত্যের প্রতি তার মনোভাব তার প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করে। আমি সবসময় ভেবেছি মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়াটা খারাপ ব্যাপার, এবং তা হয়তো ঈশ্বরের অসন্তোষ বা তিরস্কার। কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি আমি কত ভুল ছিলাম! চোখে জল নিয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, “ঈশ্বর, আমি অবশেষে নিজের অজ্ঞতা ও মূর্খতা দেখতে পেয়েছি। আমার বিশ্বাসের সময়কাল জুড়ে, কখনোই সত্যের সন্ধান করিনি আর প্রকৃতিগত ভাবেও সত্যের প্রতি বীতশ্রদ্ধ ছিলাম। অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন আর মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়া থেকে সবসময় পালিয়ে এসেছি। ঈশ্বর, আমি অনুতাপ করতে চাই। মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়ার মাধ্যমে আমি শিক্ষা লাভ করতে ইচ্ছুক।” প্রার্থনা করার পর আমি অনেকটা সহজ বোধ করলাম, সেইসাথে বোধ করলাম আকুলতা ও আকাঙ্ক্ষা। আশা করি আমি যেন ভবিষ্যতে কর্তিত হওয়া ও মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি, যাতে জীবনে এগিয়ে চলতে পারি।

বুধবার, পাঁচ অক্টোবর, দু’হাজার বাইশ, মেঘলা

আজ অবিস্মরণীয় একটা ঘটনা ঘটলো। একটা প্রজেক্টের কাজ করার সময়, আমি যেহেতু নিজের ইচ্ছামতো কাজ করছিলাম, নীতির সন্ধান করিনি, তাই কাজটা আবার করতে হতো, ফলে কাজের অগ্রগতি বিলম্বিত হয়েছিল। নেতা সমস্যাটার প্রকৃতি তুলে ধরল, আর উদ্ধত ও অযোগ্য হওয়ার জন্য আমার মোকাবিলা করল। সে বলল যে এ থেকে আমার আধ্যাত্মিক বিচক্ষণতার অভাব দেখা যাচ্ছে। তার কথাগুলো আমার মাথায় ঘুরতে থাকল। খুব বিপর্যস্ত বোধ করলাম, এই ভেবে নিজেকে সঙ্কুচিত করতে আরম্ভ করলাম: “নেতা আমার ভিতর পর্যন্ত স্পষ্ট দেখতে পেয়েছে। সে মনে করছে আমি এই দায়িত্বের উপযুক্ত নই। যেকোনোদিন আমাকে বরখাস্ত করা হবে।” ক্রমশ আরও বেশি করে বিষণ্ণ হয়ে পড়লাম। নিজের অবস্থা সঠিক নেই বুঝে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম: “হে ঈশ্বর, আজ আমি মোকাবিলার সম্মুখীন হয়েছি। আমি জানি না এ থেকে আমার কী শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত বা কীভাবে আত্মচিন্তন করা উচিত। দয়া করে আমাকে আলোকিত করো আর পথনির্দেশ দাও যাতে আমি নিজেকে জানতে পারি আর এইসব নেতিবাচক আবেগ পরিত্যাগ করতে পারি।” প্রার্থনার পর আমার মনে পড়ল যে মোকাবিলার সম্মুখীন হলে সত্যের সন্ধানই হচ্ছে প্রধান বিষয়। নেতিবাচক হয়ে থাকার মাধ্যমে কীসেরই বা সমাধান হবে? আমার চিন্তা করা উচিত আমার সমস্যাগুলো ঠিক কী আর আমার মধ্যে কোথায় আধ্যাত্মিক বিচক্ষণতার অভাব রয়েছে। শান্তভাবে কিছুক্ষণ চিন্তা করলাম, এইবার আমার মোকাবিলা করা হয়েছে মূলত এইজন্য যে আমি নিজের ইচ্ছামতো দায়িত্বপালন করছিলাম, নীতি নিয়ে ভাবিনি বা নীতির সন্ধান করিনি। এবিষয়ে প্রাসঙ্গিক নীতির বিষয়ে নেতা আলোচনা করেছিল, কিন্তু আমি শুধু নিয়মেই আটকে ছিলাম। এমনকি আমি এ-ও মনে করেছিলাম যে এই নীতিগুলো এতবার শুনে আমি এগুলোকে আয়ত্ত করে ফেলেছি, এবং আমার আর এগুলোর উপর কাজ করার দরকার নেই। আমি অন্ধভাবে নিজের উপর বিশ্বাস করেছিলাম, নীতিকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম, নিজের মতামতকেই সঠিক মনে করতাম, অন্যদের মতামত চাইতাম না। অত্যন্ত স্বেচ্ছাচারী ছিলাম, নীতি অনুযায়ী কাজ করিনি, আর অন্ধভাবে নিয়ম মেনে চলেছিলাম। এই আচরণ কি আধ্যাত্মিক বিচক্ষণতার অভাব নয়? যদি এভাবে আমার মোকাবিলা না করা হতো, আমি অচেতনই থেকে যেতাম, ভাবতাম নিজের কাজ ভালোভাবেই করেছি, সত্যি করে জানতে পারতাম না কী মন্দ কাজ আমি করতে পারি। মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়া আমার জন্য একটা সতর্কতা এবং একটা সুরক্ষাও। এখন যেহেতু আমি তা দেখতে পাচ্ছি, আমার আর নেতিবাচক লাগছে না। এখন আমি নীতির সাথে সন্ধান করার দিকে মনোযোগ দিতে পারি, এবং নিজেকে মনে করাতে পারি যেন এরকম ভুল আর না হয়।

শনিবার, আট অক্টোবর, দু’হাজার বাইশ, পরিষ্কার আকাশ

আমরা আজকে নেতার সঙ্গে একটা সমাবেশে ছিলাম। দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে সে আমাদের সঙ্গে ধৈর্যের সাথে আলোচনা করল, আর তারপর জিজ্ঞাসা করল আমরা সম্প্রতি কিছু অর্জন করেছি কি না। সে আমাদের উৎসাহিত করল সত্যের অন্বেষণ করতে, এবং পরিস্থিতি যা-ই হোক, শিক্ষা গ্রহণ করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সে আমাদের ঈশ্বরের বাক্যের একটা অনুচ্ছেদ পড়েও শোনালো। “ঈশ্বরের কাজের অভিজ্ঞতালাভের সময়কালে, তুমি যতবারই ব্যর্থ হয়ে থাকো, ভূপতিত হয়ে থাকো, তোমার অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন হয়ে থাকুক, তুমি মোকাবিলার সম্মুখীন হয়ে থাকো, বা অনাবৃত হয়ে থাকো না কেন, এগুলো খারাপ কিছু নয়। যেভাবেই তোমার অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন বা তোমার মোকাবিলা করা হয়ে থাক, বা সে কাজ কোনো নেতা, কর্মী, অথবা তোমার ব্রাদার বা সিস্টারের দ্বারাই হয়ে থাক, তা নির্বিশেষে এগুলো সবই ভালো ব্যাপার। তোমাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে: তুমি যতই কষ্টভোগ করো, আসলে তুমি উপকৃত হচ্ছো। অভিজ্ঞতা আছে এমন যে কেউ এই বক্তব্যের সমর্থন করবে। যা-ই হোক না কেন, অপ্রয়োজনীয় অংশ কর্তিত হওয়া, মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়া, বা অনাবৃত হওয়া সবসময়েই ভালো ব্যাপার। এটা দোষী সাব্যস্ত করা নয়। এটা ঈশ্বরের পরিত্রাণ, এবং নিজেকে জানার জন্য তোমার সবচেয়ে ভালো সুযোগ। এটা তোমার জীবনের অভিজ্ঞতার গতি পরিবর্তন করতে পারে। এটা ছাড়া, তুমি তোমার নিজের কলুষতার বিষয়ে সত্যের উপলব্ধিতে পৌঁছনোর সুযোগ, পরিস্থিতি, অথবা প্রেক্ষাপটও লাভ করতে পারবে না। যদি তুমি প্রকৃতই সত্যকে বোঝো, তোমার হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা কলুষিত বিষয়গুলোকে খুঁড়ে বার করতে পারো, যদি স্পষ্টভাবে সেগুলোর প্রভেদ করতে পারো, তাহলে সেটা ভালো ব্যাপার, তা তোমার জীবনে প্রবেশ সংক্রান্ত একটা বড় সমস্যার সমাধান করে ফেলেছে, এবং তোমার স্বভাব পরিবর্তনের পক্ষে বিরাট উপকারী। নিজের পথের সংশোধন করা ও একজন নতুন মানুষ হয়ে ওঠার জন্য তোমার সবচেয়ে বড় সুযোগ হল নিজেকে প্রকৃতরূপে জানতে সক্ষম হওয়া। একবার যখন তুমি প্রকৃতরূপে নিজেকে জানতে পারবে, তুমি দেখতে সক্ষম হবে যে সত্য যখন কারো জীবন হয়ে ওঠে, তা সত্যিই এক মূল্যবান বিষয়, এবং তুমি সত্যের জন্য তৃষিত হবে, সত্যের অনুশীলন করবে, এবং সত্যের বাস্তবিকতায় প্রবেশ করবে। এ এক অসাধারণ বিষয়! যদি তুমি এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারো, আর যখনই ব্যর্থ বা ভূপতিত হবে তখনই যদি আন্তরিকভাবে আত্মানুসন্ধান করে নিজের সম্পর্কে এক প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করতে পারো, তাহলে নেতিবাচকতা ও দুর্বলতার মাঝেও তুমি আবার উঠে দাঁড়াতে পারবে। এই চৌকাঠ যদি তুমি অতিক্রম করে ফেলো, তাহলে তুমি সামনের দিকে এক বিরাট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে এবং সত্যের বাস্তবিকতায় প্রবেশ করবে(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, সত্য অর্জন করতে হলে, নিকটবর্তী মানুষ, ঘটনাবলি এবং বস্তুসমূহ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে)। ঈশ্বরের বাক্য আমাকে সত্যিই নাড়া দিল, এবং আমি চোখের জল ধরে রাখতে পারলাম না। যদিও মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়া বেশ বিব্রতকর ও যন্ত্রণাদায়ক ছিল, আর কখনো কখনো মনে হচ্ছিল নেতিবাচকতা আমাকে অজ্ঞান করে ফেলবে, কিন্তু এই অভিজ্ঞতা আমাকে সত্যিই ঈশ্বরের ভালোবাসাকে প্রত্যক্ষ করালো। এই ধরনের পরিস্থিতিই আমাকে বাধ্য করেছিল নিজের ভ্রষ্ট স্বভাব নিয়ে আত্মপ্রতিফলন করার আর তা জানার জন্য, আর আমার সমস্যা কোথায় নিহিত রয়েছে তা ভেবে দেখার জন্য ঈশ্বরের সম্মুখে আসতে। আমি যখন নিজের সম্পর্কে কিছুটা উপলব্ধি অর্জন করি, তখন অন্তরের শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করি। যদি আমার মোকাবিলা না করা হতো, জানি না আমার কাজে আমি কী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতাম, অথবা কী কী সমস্যা বা ভ্রান্তির উদ্ভব হতো। এইভাবে মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়াই আমাকে নিজের কর্তব্যে নীতির সন্ধানের প্রতি আরও মনোযোগী করে তোলে। আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখতে পেলাম যে মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়া কর্তব্যপালনের থেকে অবিচ্ছেদ্য। এই অভিজ্ঞতা অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন ও মোকাবিলার সম্মুখীন হওয়ার প্রতি আমার মনোভাব পরিবর্তন করেছে।

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

ভূমিকম্পের পর

সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজকে আমি ২০১৯ সালে স্বীকার করেছি। এবং তারপরে, আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অনেক বাক্য পাঠ করেছি। এগুলি এতই...

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন