উদাসীন হওয়ার ফলে যে ক্ষতি হয়
২০২১ সালের অক্টোবরে, আমি নবাগতদের সিঞ্চনের অনুশীলন শুরু করি। এক সপ্তাহের মধ্যেই আমি বুঝতে পারলাম যে আমাকে অনেক কিছু শিখতে হবে। আমাকে দর্শনের সত্যের সঙ্গে পরিচিত হতে হত, এবং তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করার জন্য আমাকে সত্যের বিষয়ে আলোচনার অভ্যাস করতে হতো, কিন্তু সত্য সম্পর্কে আমার জ্ঞান ছিল অগভীর, এবং কথা বলায় আমি খুব একটা দক্ষ ছিলাম না। আমার কাছে এটা বেশ একটা কঠিন দায়িত্ব ছিল। যখন টিম লীডার চাইল আমি নবাগতদের সমস্যা খুব তাড়াতাড়ি সমাধান করি, বিশেষ করে সেটা আমার কাছে আরো কঠিন মনে হল। সমস্ত নবাগতদের বেশ কিছু সমস্যা ছিল, তাই তাদের সমাধান করতে আমাকে প্রচুর পরিমানে সেই রকম বিশেষ বিশেষ সত্যের সন্ধান করতে হতো, আর ভাবতে হতো কীভাবে স্পষ্টভাবে আলোচনা করা যায়। এর জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হতো। তাই আমি টিম লীডারকে বললাম আমার দক্ষতার অভাব আছে এবং কাজটা ভালভাবে করতে পারিনি। টিম লীডার আমাকে বোঝাল আর বলল আমাকে দায়িত্বের ভার নিতে হবে এবং কষ্টকে ভয় করলে চলবে না। আমি তার আলোচনা শুনে অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজি হলাম, কিন্তু মনে মনে, আমি মূল্য দিতে চাইনি। সমাবেশে, আমি আগে যেমনভাবে করতাম তেমনভাবেই নবাগতদের সঙ্গে আলোচনা করতে থাকি, এবং যেহেতু আমি তাদের সমস্যা বুঝতাম না, তাই আমি শুধু আমার আলোচনা চালিয়ে যেতাম আর কোনো ফলাফল পেতাম না, যার ফলে নিয়মিত সমাবেশে যোগদানকারী নবাগতদের সংখ্যা কমতে শুরু করে। টিম লীডার সমস্যাগুলো জানতে পেরে আমাকে তাড়াতাড়ি তাদের সাহায্য করতে বলল, কিন্তু আমি ভাবলাম, “সুসমাচার কর্মীরা ইতিমধ্যেই দর্শনের সত্য সম্পর্কে তাদের সাথে প্রচুর আলোচনা করেছে, তাই যদি তারা তা সত্ত্বেও সমাবেশে না আসে, আমার গিয়ে কী কোনো লাভ হবে? তা ছাড়া, সেই সব নবাগতরা সম্প্রতি সমাবেশে আসছিল না, তাই তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে অবশ্যই অনেক সময় লাগবে, যা বেশ ক্লান্তিকর হবে।” এই ভেবে, আমি তাদের মেসেজ পাঠালাম সংক্ষিপ্তভাবে হ্যালো বলে, এবং যারা সাড়া দিল না, তাদের মন থেকে সরিয়ে দিলাম। যাদের বেশি সমস্যা ছিল, আলাপ-আলোচনার জন্য আমার তালিকায় আমি তাদের শেষে রাখলাম, বা শুধু চালাকি করে তাদের সহায়তালাভের জন্য সুসমাচার কর্মীদের কাছে পাঠিয়ে দিলাম। শীঘ্রই, কয়েকজন নবাগত সমাবেশে আসা বন্ধ করে দিল কারণ তাদের সমস্যাগুলোর বহু দিন ধরেই কোনো সমাধান হচ্ছিল না। যখনই আমি লক্ষ করতাম যে নবাগতরা সমাবেশে আসছে না তখনই আমার অপরাধবোধ হতো এবং আমি বিচলিত বোধ করতাম, যে তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য আমাকে আরও মূল্য দিতে হবে। কিন্তু যখনই মনে হতো যে এটা কত ঝামেলার হবে, আমি এটাকে পাশ কাটিয়ে দিতাম।
আমার একজন নবাগতকে মনে আছে, একজন প্রাক্তন ক্যাথলিক, ঈশ্বরের অবতাররূপ ধারণ এবং অন্তিম সময়ের কাজ সম্পর্কে তার কিছু কল্পিত ধারণা তৈরী হয়েছিল, এবং সে সমাবেশে আসা বন্ধ করে দেয়। আমি যেমনভাবেই তাকে মেসেজ পাঠাই বা ফোন করি না কেন, সে আমাকে উপেক্ষা করেছে। দু-দিন পরে সে আমাকে মেসেজ পাঠাল: “আমি একটা ক্যাথলিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। আমি বরাবর একজন ক্যাথলিকই আছি, আর এখন তো ৬৪ বছর হয়ে গিয়েছে। আমি কেবল প্রভু যীশুতে বিশ্বাস করতে পারি—সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে আমি আর বিশ্বাস করতে পারবো না।” আমার উত্তর ছিল: “সর্বশক্তিমান ঈশ্বর হলেন প্রত্যাবর্তিত প্রভু যীশু। ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশের একমাত্র উপায় হল অন্তিম সময়ে প্রভুর আবির্ভাব এবং কাজকে স্বীকার করা।” কিন্তু, সে কিছু বলল না। আমি তার সঙ্গে আরো কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করলাম, কিন্তু সে আমাকে এড়িয়ে গেল। তাই আমি এই সমস্যাটা টিম লীডারের দিকে ঠেলে দিলাম, এবং আমি অবাক হলাম যখন সে আমাকে ঈশ্বরের বাক্যের কিছু প্রাসঙ্গিক অনুচ্ছেদ পাঠালো, আর বলল এই সমস্যার সমাধান করার জন্য সত্যের অনুসন্ধান করতে। দেখলাম যে আমাকে প্রচুর পরিমাণ সত্যের পাঠ নিতে হবে, আর কীভাবে আলোচনা করলে ফলাফল অর্জন করা যাবে তা নিয়ে অনেক ভাবতে হবে, পুরো বিষয়টা খুবই ক্লান্তিকর মনে হলো। সেই নবাগত মানুষটার কাছ থেকে আমি কোনো সাড়া পাচ্ছিলাম না, এমনকি আমি যদি নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য যথেষ্ট সময়ও দিই, সে তবুও হয়তো আমার আলোচনা শুনবেই না, তাই আমি তার বিষয়টা একপাশে সরিয়ে দিয়ে উপেক্ষা করলাম। একজন নবাগত ছিল যে সত্যিই প্রতিদিন কাজে ব্যস্ত থাকত, এবং আমি তাকে সমাবেশে আমন্ত্রণ করলে তার কখনোই সেখানে আসার সময় হতো না। প্রথমে, আমি তাকে প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য এবং স্তোত্র পাঠাতে থাকি, কিন্তু প্রতিবার সে শুধু “আমেন” বলে উত্তর দিত, এবং তারপর আর সমাবেশে আসত না। অবশেষে, আমি তাকে ঈশ্বরের বাক্য পাঠানো বন্ধ করে দিলাম। আমার মনে হত সে কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত, আর এটাই ছিল তার বাস্তব, এবং আমি বহু সময় খরচ করেও এই সমস্যার সমাধান করতে পারলাম না। আমি জানতাম যে আমার উচিত ওর সমস্যাগুলো বিবেচনা করে সেই অনুযায়ী সমাবেশের সময় ঠিক করা, এবং ওর পূর্বধারণা নিয়ে আলোচনা করার জন্য প্রাসঙ্গিক ঈশ্বরের বাক্যের অংশগুলো খুঁজে নেওয়া, যাতে সঠিক ফলাফল লাভ করা যায়। আমার মনে হয়েছিল এটা বেশ জটিল আর বিরক্তিকর, তাই আমি এই মূল্য দিতে চাইনি। কিন্তু আমি যদি সেই আলোচনা না করতাম, আর টিম লীডার যদি তা জানতে পারতো, আসল কাজ না করার জন্য সে আমার সাথে মোকাবিলা করতো। তাই আমি সেই নবাগতের সঙ্গে কয়েকবার আলোচনা করতে বাধ্য হলাম, এবং যখন আমি দেখলাম যে সে তবুও সমাবেশে যোগ দিচ্ছে না, আমার মনে হল সে সত্যের জন্য তৃষ্ণার্ত নয়, এবং এটা আমার তরফ থেকে প্রচেষ্টার অভাব ছিল না। তাই শেষ পর্যন্ত আমি তাকে উপেক্ষা করলাম। আমি সব সময় আমার দায়িত্ব পালনে উদাসীন ছিলাম, এবং সব কষ্ট এড়িয়ে যেতাম। যখন আমি নবাগতদের ধারণা বা বাস্তবিক কষ্টের সম্মুখীন হতাম, কীভাবে তাদের সমস্যার সমাধান করা যায় আমি তা ভাবতে চাইতাম না, শুধু টিম লীডারের কাছে তাদের হস্তান্তর করে দিতাম। কয়েক মাস পর, খুব কম নবাগতই স্বাভাবিকভাবে সমাবেশে আসছিল। এই সমস্যার কথা জানতে পেরে গির্জার নেত্রী আমার সঙ্গে কথা বলল। সে বলল, আমি আমার দায়িত্বে উদাসীন ছিলাম এবং আমাকে খুব তাড়াতাড়ি নিজেকে বদলাতে হবে। তাই আমি শপথ নিলাম যে আমি আমার দৈহিক ইচ্ছা ত্যাগ করব এবং নবাগতদের ভালভাবে সিঞ্চন করব। কিন্তু যখন বহু সমস্যা জর্জরিত নবাগতদের সম্মুখীন হতাম, আমি তখনও তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য মূল্য দিতে রাজি ছিলাম না। পরিবর্তে, আমি শুধু বলতাম যে আমার দক্ষতার অভাব আছে এবং আমি এই দায়িত্বের উপযুক্ত নই। আমি উদাসীনই থেকে গেলাম, নিজেকে সংশোধন করলাম না, এবং আমার কাজ থেকে কোনো সুফল আসছিল না, তাই নেত্রী আমার সাথে কঠোরভাবে মোকাবিলা করল: “তুমি তোমার দায়িত্বে খুবই উদাসীন। তুমি কখনই নবাগতদের কষ্টের কথা জানতে চাও না, এমনকি যখন সামান্য কিছুটা জানতেও পারো, সেগুলোর সমাধান করার চেষ্টা করো না। এটা কীরকম কর্তব্যপালন? তুমি শুধু নবাগতদের ক্ষতি করছ। নিজেকে যদি না বদলাও, তোমাকে বরখাস্ত করা হবে!” এইভাবে মোকাবিলার সম্মুখীন হয়ে এবং সাবধানবাণী শুনে, আমার অপরাধবোধবোধ হলো এবং আমি ভয় পেলাম। আমি আত্মানুসন্ধান শুরু করলাম: কেন আমি এই দায়িত্বটি ভালভাবে পালন করতে পারছিলাম না, আর সবসময় এটাকে খুব কঠিন মনে হত?
একদিন আমার উপাসনায় আমি ঈশ্বরের বাক্যের এই অনুচ্ছেদটা পড়লাম: “কিছু কিছু লোকের নিজেদের দায়িত্ব পালনের সময় কোনো নীতিই থাকে না, তারা সর্বদাই নিজেদের পছন্দ অনুসরণ করে এবং নির্বিচারে কাজ করে। এটা অগভীর এবং তাচ্ছিল্যের মনোভাব, তাই নয় কি? এরা ঈশ্বরকে ঠকাচ্ছে, তাই নয় কি? তোমরা কখনো এর পরিণতি বিবেচনা করেছ? যদি নিজেদের দায়িত্ব পালনের সময় তোমরা ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি মনোযোগ না দাও, যদি তোমাদের বিবেকবোধ না থাকে, যদি তোমাদের সমস্ত কাজেই তোমরা অকার্যকর হও, নিজেদের সমস্ত হৃদয় এবং সমস্ত ক্ষমতা দিয়ে কাজ করতে যদি একেবারেই অপারগ হও, তাহলে তোমরা কি ঈশ্বরের স্বীকৃতি অর্জন করতে পারবে? অনেকেই নিজেদের দায়িত্ব অনিচ্ছা সহকারে পালন করে, এবং এই দায়িত্ব পালন চালিয়ে যেতেও পারে না। তারা কষ্ট সহ্য করতে পারে না, এতটুকুও না, এবং সবসময় মনে করে করে যে কষ্টভোগ করা হচ্ছে তাদের পক্ষে বিরাট বড় ক্ষতি, এবং তারা কোনো সমস্যার সমাধানের জন্য সত্যের অন্বেষণও করে না। এইভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করে কি তুমি ঈশ্বরকে শেষ পর্যন্ত অনুসরণ করতে পারবে? তুমি যা করো তার সবকিছুতেই অমনোযোগী ও অগভীর হওয়া কি ঠিক? এটা কি তোমার বিবেকের দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণীয়? এমনকি মানুষের মানদণ্ডের বিচারে পরিমাপ করলেও এটা বেশ অসন্তোষজনক—তাহলে এটাকে কি সন্তোষজনক কর্তব্য পালন বলে গণ্য করা যায়? তুমি যদি এইভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করো, তাহলে কখনোই সত্যকে অর্জন করতে পারবে না। এমনকি তুমি সন্তোষজনকভাবে সেবাতেও ব্রতী হতে পারবে না। তাহলে কীভাবে তুমি ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করতে পারবে? নিজেদের দায়িত্ব পালনের সময় অনেকেই কষ্টভোগকে ভয় পায়, তারা অত্যন্ত অলস, তারা দেহজ সুখ কামনা করে এবং বিশেষ দক্ষতা শেখার জন্য কখনোই কোনো চেষ্টা করে না, আবার ঈশ্বরের বাক্যের সত্যকে অনুশীলন করে না বা তা নিয়ে চিন্তাও করে না; তারা মনে করে যে সমস্যা এড়ানোর জন্য এইরকমভাবে উদাসীন হয়ে থাকলেই চলবে: তাদের কিছু অনুসন্ধানের বা কাউকে প্রশ্ন করার প্রয়োজন নেই, তাদের মস্তিষ্ক ব্যবহার করার বা চিন্তা করার দরকার নেই—এতে সত্যিই অনেক প্রচেষ্টা বেঁচে যায় এবং কোনো শারীরিক কষ্টভোগও করতে হয় না, এবং তা সত্ত্বেও তারা তাদের কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলতে পারে। এবং তুমি যদি তাদের সাথে মোকাবিলা করো, তারা প্রতিবাদ করে এবং অজুহাত দেখায়: ‘আমি অলস নয় বা ফাঁকি দিচ্ছিলাম না, কাজটা তো করা হয়ে গিয়েছিল—তুমি এত খুঁতখুঁত করছ কেন? এটা কি নিছক খুঁত বার করা নয়? আমি এইভাবে আমার দায়িত্ব পালন করে ভালোই করছি, তুমি সন্তুষ্ট হতে পারছ না কেন?’ তোমরা কি মনে করো যে এই ধরনের লোকেরা আর একটুও উন্নতি করতে পারবে? নিজেদের দায়িত্ব পালনের সময় তারা ক্রমাগত অযত্নবান থাকে, এবং তারপরও একগুচ্ছ অজুহাত দেখায়, এবং যখন সমস্যা দেখা দেয় তখন তারা কাউকেই সে কথা বলতে দেয় না। এটা কী ধরনের স্বভাব? এটা শয়তানের স্বভাব, তাই নয় কি? এই ধরনের স্বভাব অনুসরণ করে চললে মানুষ কি তাদের দায়িত্ব সন্তোষজনকভাবে পালন করতে পারে? তারা কি ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে পারে?” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, যে কায়মনোবাক্যে তার দায়িত্ব পালন করে, কেবলমাত্র সেই ঈশ্বরকে ভালোবাসে)। ঈশ্বর বহু মানুষকে অনাবৃত করেন তাদের কর্তব্যে অলস হওয়ার জন্য, সর্বদা দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্যের কামনা, পরিশ্রমের অভাব, এবং নিজেকে ব্যস্ত দেখিয়ে সন্তুষ্ট থাকার জন্য। এইভাবে তুমি কখনোই তোমার দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে পারবে না। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি আমার কাজে ফল পাচ্ছিলাম না আমার দক্ষতার অভাবের জন্য নয়, বরং, আমি কেবল অলস ছিলাম, এবং আমার কর্তব্যের জন্য কষ্ট পেতে ভয় পেতাম। আমি ভেবেছিলাম নবাগতদের সিঞ্চন করা মানে আমাকে অনেক সত্য জানতে হবে, আমাকে তাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে জানতে হবে, এবং সেটা আমার কাজটাকে বেশ ক্লান্তিকর করে তুলেছিল, তাই আমি শুধু দায়সারাভাবে কাজ করে গেছি। টিম লীডার চেয়েছিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি নবাগতদের সমস্যাগুলোর সমাধান করি, এবং কঠোর পরিশ্রম করলে আমি তা করতে পারতাম। কিন্তু যখন দেখলাম এর জন্য আমার আরো সময় ও প্রচেষ্টার প্রয়োজন, আমি চালাকি করে তাদের টিম লীডার এবং সুসমাচার কর্মীদের কাছে তাদের পাঠিয়ে দিলাম। আমি দেখতাম নবাগতরা সমাবেশে যোগ দিচ্ছে না কারণ তাদের কিছু পূর্বধারণা আছে বা তারা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, তবুও আমি উদাসীন থাকতাম। অন্যরা আমাকে সমাধানের পথ বলে দিলেও আমি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখতাম না। কখনও কখনও আমি নবাগতদের ঈশ্বরের বাক্য বা স্তোত্র পাঠাতাম, কিন্তু কিছু দিন পরে আমি আর তা বজায় রাখতে পারতাম না, এবং তাদের উপেক্ষা করতাম। আমি দেখলাম যে আমি সত্যিই অলস, দৈহিক সুখের জন্য লোভী ছিলাম, এবং নিজের দায়িত্বে একেবারেই আন্তরিক ছিলাম না। আমি কেবল প্রতারণা করছিলাম, গির্জার মধ্যে অলস সময় কাটাচ্ছিলাম। আমি ঈশ্বরের কাছে অত্যন্ত ঘৃণ্য এবং বিতৃষ্ণাজনক ছিলাম!
তারপরে আমি ঈশ্বরের বাক্যে এটা পড়লাম। “বর্তমানে কোনো দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য খুব বেশি সুযোগ নেই, তাই যখনই পারবে তোমাকে অবশ্যই সেগুলো ব্যবহার করতে হবে। সুনির্দিষ্টভাবে, যখনই কোনো দায়িত্বের সম্মুখীন হবে, তোমাকে অবশ্যই নিজেকে তাতে নিয়োজিত করতে হবে; সেটাই সেই সময় যখন তোমার নিজেকে সমর্পণ করতে হবে, ঈশ্বরের জন্য নিজেকে ব্যয় করতে হবে, এবং যখন তোমাকে মূল্য পরিশোধ করতে হবে। কোনো কিছু আঁকড়ে ধরে রেখো না, কোনো দুরভিসন্ধি পোষণ কোরো না, বিচ্যুতির অবকাশ রেখো না, বা নিজের জন্য পালাবার পথ রেখো না। যদি তুমি কোনো বিচ্যুতির অবকাশ রাখো, হিসাব করতে থাকো, বা কৌশলী এবং বিশ্বাসঘাতক হও, তাহলে তোমার কাজ নিকৃষ্ট হতে বাধ্য। ধরো তুমি বললে, ‘আমার চালাকি কেউ বুঝতেই পারেনি। কী দারুণ!’ এটা কী ধরনের ভাবনা? তুমি কি মনে করো তুমি লোকেদের বোকা বানাতে পেরেছ, আর সেইসাথে ঈশ্বরকেও? প্রকৃতপক্ষে, তুমি কী করেছ বা করোনি, তা কি ঈশ্বর জানেন? তিনি জানেন। সত্যি বলতে, তোমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বললেই যে কেউ তোমার দুর্নীতি ও নীচতা সম্পর্কে জানতে পেরে যাবে, আর তারা তোমার মুখের উপর যদি সেকথা না-ও বলে, নিজেদের হৃদয়ে তারা তোমার বিষয়ে মূল্যায়ন করে ফেলবে। অনেক লোককেই অনাবৃত ও বহিষ্কৃত করা হয়েছে, কারণ অন্যান্য অনেকেই তাদের প্রকৃতি বুঝে গিয়েছিল। একবার যখন সকলে এদের সারসত্য স্পষ্ট করে দেখতে পেয়েছে, তারা এদের আসল প্রকৃতি প্রকাশ করে দিয়েছে এবং এদের বিতাড়িত করা হয়েছে। অতএব, সত্য অন্বেষণ করুক বা না করুক, মানুষের উচিত তাদের নিজেদের দায়িত্ব নিজেদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা অনুযায়ী ভালোভাবে পালন করা; ব্যবহারিক কাজ করার ক্ষেত্রে তাদের নিজেদের বিবেক ব্যবহার করা উচিত। তোমার মধ্যে ত্রুটি থাকতেই পারে, কিন্তু যদি তুমি নিজের দায়িত্ব পালনে কার্যকর হও, তাহলে সেই বিষয়টা তোমার বহিষ্কৃত হওয়া পর্যন্ত পৌঁছবে না। যদি তুমি সর্বদাই ভাবো যে তুমি নিরাপদে আছো, নিশ্চিতভাবেই তুমি বহিষ্কৃত হবে না, এবং এখনও তুমি আত্ম-অনুসন্ধানের বা নিজেকে জানার চেষ্টা না করো, নিজের আসল কাজ উপেক্ষা করো, সর্বদা বেপরোয়া ও উদাসীন থাকো, তাহলে ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিরা যখন তোমার প্রতি সত্যিই সহিষ্ণুতা হারিয়ে ফেলবে, তখন তারা তোমার আসল চেহারা অনাবৃত করবে, এবং তুমি যে বহিষ্কৃত হবে, তার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ প্রত্যেকেই তোমাকে পরিষ্কারভাবে দেখতে পেয়ে গেছে এবং তুমি নিজের মর্যাদা ও সততা হারিয়ে ফেলেছ। যদি কেউই তোমাকে বিশ্বাস না করে, তবে ঈশ্বর কি বিশ্বাস করতে পারেন? ঈশ্বর মানুষের অন্তরের একেবারে অন্তঃস্থল পর্যন্ত দেখতে পান: এরকম একজন মানুষকে তিনি একেবারেই বিশ্বাস করতে পারেন না। … বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি তারাই, যাদের মানবতা আছে, এবং যাদের মানবতা আছে তারাই বিবেক ও বোধের অধিকারী, এবং নিজেদের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করা তাদের পক্ষে খুবই সহজ হওয়া উচিত, কারণ তারা নিজেদের কর্তব্যকে বাধ্যতা বলে মনে করে। বিবেক বা বোধবিহীন লোকেরা খারাপভাবেই দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য, এবং তাদের কাজ যা-ই হোক না কেন, সেই কাজের প্রতি তাদের কোনো দায়িত্ববোধ থাকে না। অন্যদের সবসময় তাদের জন্য উদ্বিগ্ন থাকতে হবে, তাদের তত্ত্বাবধান করতে হবে, এবং তাদের অগ্রগতির বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে; তা না হলে, দায়িত্ব পালনের সময় তারা গণ্ডগোল করতে পারে, কোনো কাজ করার সময় ভুল হয়ে যেতে পারে, যার ফলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সংক্ষেপে, নিজেদের দায়িত্ব পালনের সময় লোকেদের সর্বদাই আত্ম-অনুসন্ধান করা উচিত: ‘আমি কি যথাযথভাবে এই দায়িত্ব পূরণ করেছি? আমি নিজের হৃদয় এতে ঢেলে দিতে পেরেছি? নাকি আমি কোনোমতে আমার কাজ করে চলেছি?’ যদি তুমি সর্বদাই অযত্নবান ও উদাসীন থাকো, তাহলে তুমি বিপদের মধ্যে রয়েছ। অন্ততপক্ষে, এর অর্থ হচ্ছে যে তোমার কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই, এবং মানুষ তোমায় বিশ্বাস করতে পারে না। আরো গুরুতর বিষয় হলো, দায়িত্ব পালনের সময় যদি তুমি সর্বদাই স্রোতে গা ভাসিয়ে দাও, এবং যদি সর্বদাই ঈশ্বরকে প্রতারণা করো, তাহলে তুমি বিশাল বিপদে রয়েছ! সজ্ঞান প্রতারণার পরিণতি কী? প্রত্যেকেই দেখতে পাবে যে তুমি সজ্ঞানে নীতিলঙ্ঘন করছ, তুমি শুধুমাত্র নিজের ভ্রষ্ট স্বভাব অনুসারেই জীবনযাপন করছ, তুমি অযত্নবান ও উদাসীন ছাড়া আর কিছুই নয়, তুমি সত্যের অনুশীলন করো না—যা তোমাকে মানবিকতাবিহীন করে তোলে! যদি তোমার মধ্যে এটা সবসময়েই প্রকাশিত হয়, যদি বড় ভুলগুলো এড়িয়ে যেতে পারলেও তুমি অবিরাম ছোটখাটো ভুল করতে থাকো, এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনুতপ্ত না হও, তাহলে তুমি একজন দুষ্ট, অবিশ্বাসী, এবং তোমাকে অপসারণ করা উচিত। এই ধরনের পরিণতি খুবই খারাপ—তোমাকে সম্পূর্ণরূপে অনাবৃত করা হয় এবং একজন অবিশ্বাসী এবং দুষ্ট ব্যক্তি হিসাবে বহিষ্কৃতও করা হয়” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, দায়িত্ব সম্পাদনের মাধ্যমেই জীবনে প্রবেশ আরম্ভ হয়)। “তুমি ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্বগুলিকে কীভাবে বিবেচনা করো তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি খুবই গুরুতর একটি বিষয়। ঈশ্বর মানুষের উপর যা অর্পণ করেছেন, তা যদি তুমি সম্পূর্ণ করতে না পারো, তাহলে তুমি তাঁর উপস্থিতিতে বসবাসের উপযুক্ত নও এবং তোমার শাস্তি পাওয়া উচিত। এটা স্বর্গের দ্বারা অভিষিক্ত এবং পৃথিবী দ্বারা স্বীকৃত যে, ঈশ্বর মানুষদের উপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন তা তাদের সম্পূর্ণ করা উচিত; এটি তাদের সর্বোচ্চ দায়িত্ব, এবং তাদের জীবনের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। যদি তুমি ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্বকে গুরুত্ব সহকারে না নাও, তাহলে তুমি তাঁর সাথে শোচনীয়তমভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করছো; এতে তুমি যিহূদার চেয়েও বেশি শোচনীয়, এবং তোমার অভিশপ্ত হওয়া উচিত” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, মানব-প্রকৃতি জানার উপায়)। ঈশ্বরের বাক্যের এই প্রকাশের সম্মুখীন হয়ে, দায়িত্বে উদাসীন থাকা মানুষদের প্রতি আমি তাঁর ঘৃণা ও ক্রোধ অনুভব করতে পারলাম। তাদের বিবেক, চেতনা, চরিত্র এবং মর্যাদা নেই, এবং পূরোপুরি অনির্ভরযোগ্য। যদি তারা কখনোই অনুতপ্ত না হয়, তারা অন্যায়কারী, অবিশ্বাসী, এবং তাদের বহিষ্কার করা উচিত। নবাগতদের সিঞ্চন করা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তারা সবেমাত্র ঈশ্বরের নতুন কাজ গ্রহণ করেছে, তাই প্রকৃত পথে স্থায়ী হতে তাদের আরো সিঞ্চনের প্রয়োজন যাতে শয়তান তাদের কেড়ে নিতে না পারে। এবং, যে ঈশ্বরের কাজ গ্রহণ করে সে তা খুব সহজে বা মসৃণভাবে করে না, এবং তাদের সিঞ্চন ও সাহায্য করার জন্য অনেক মানুষকে মূল্য দিতে হয়। তবেই তাদের ঈশ্বরের সম্মুখে নিয়ে আসা যায়। একজন সিঞ্চনকারী হিসাবে, নবাগতদের সিঞ্চন করা আমার দায়িত্ব ছিল। বিশেষ করে যখন আমি সমস্যার মুখোমুখি হওয়া নবাগতদের দেখেছিলাম, সেই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমার গুরুত্ববোধ থাকা উচিত ছিল এবং আমার সত্যের সন্ধান করা উচিত ছিল। কিন্তু তার বদলে, আমি কঠিন কাজগুলো উপেক্ষা করেছিলাম এবং আমার কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা ছিল না। আমি যখন দেখতাম নবাগতদের সমস্যা হচ্ছে, আমি সবসময় এমন সমস্যা বেছে নিতাম যেগুলো সমাধান করা সহজ, এবং কঠিন সমস্যাগুলোকে একপাশে সরিয়ে রেখে সেগুলো উপেক্ষা করতাম। আরো খারাপ ব্যাপার হলো, আমি স্পষ্টতই আমার কর্তব্যে বিশ্বাসঘাতক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন ছিলাম, যার ফলে কয়েকজন নবাগত সমাবেশে যোগ দিত না, এমনকি একেবারেই ছেড়ে চলে যেত, কিন্তু আমি এই বলে দায়িত্ব এড়িয়ে যেতাম যেতাদের সত্যের তৃষ্ণা নেই, অথবা অন্যদের ঠকানোর জন্য এবং উদাসীনভাবে কাজ করার অভিযোগ থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য আমি বলতাম, আমার দক্ষতার অভাব আছে, আর আমি ওদের সমস্যার সমস্যার সমাধান করতে পারছি না। একজন অবিশ্বাসী তার বসের জন্য যেইভাবে কাজ করে, আমিও কি ঠিক সেইভাবে আমার দায়িত্ব পালন করছিলাম না? আমি চাতুরী করছিলাম, কোনোমতে সময় পার করছিলাম, বিবেক বা সচেতনতার কোনো চিহ্ন ছিল না আমার। আমার এত বছরের বিশ্বাসের পর, আমি তখনও চোখের একটা পলকও না ফেলে ঈশ্বরকে ঠকানোর চেষ্টা করেছিলাম। আমি খুবই ধূর্ত এবং শঠ ছিলাম! আমার কোনো মানবিকতাই ছিল না। যখন আমি প্রথম ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের সুসমাচার গ্রহণ করেছিলাম, আমি প্রতিদিন কাজে ব্যস্ত থাকতাম আর আমার বাবা-মা আমার বিশ্বাসে বাধা দিচ্ছিল। আমি বেশ চাপে ছিলাম, এমনকি সমাবেশে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়ার কথাও ভেবেছিলাম। কিন্তু ব্রাদার-সিস্টাররা ধৈর্যের সঙ্গে আমার সাথে সত্যের আলাপ-আলোচনা করেছে এবং আমার সময়সূচী অনুযায়ীই সমাবেশের ব্যবস্থা করেছে। অনেক সময় কাজে ব্যস্ত থাকায় আমি যেতে পারতাম না, তাই ব্রাদার-সিস্টাররা তাদের বাইকে করে দীর্ঘ দূরত্ব পেরিয়ে আসত আমার সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে, আমাকে সাহায্য ও সমর্থন করতে। শুধুমাত্র তবেই আমি ঈশ্বরের কাজ সম্পর্কে জেনেছিলাম, এবং দেখেছিলাম যে উদ্ধার লাভ করার একমাত্র উপায় হল সত্যের অনুসরণ করা। আমি তখন সমাবেশে যোগ দিতে এবং দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক হয়ে উঠি। গির্জা সবসময় জোর দেয় যে নবাগতদের সিঞ্চনের জন্য ধৈর্য এবং তাদের সমস্যার বিষয়ে প্রভূত বিবেচনার প্রয়োজন, তাদের সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে হবে যাতে তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রকৃত পথে স্থায়ী হতে পারে। আমি দেখেছিলাম যে ঈশ্বর আমাদের জন্য স্নেহ এবং করুণায় পূর্ণ, এবং তিনি যতদূর পর্যন্ত সম্ভব আমাদের উদ্ধার করেন। প্রকৃত উপায়ের অন্বেষণ করা প্রতিটা মানুষের প্রতি তিনি অবিশ্বাস্যরকম বিবেকবান। সামান্য আশা থাকলেও তিনি হাল ছাড়বেন না। কিন্তু আমার বিষয়টা ছিল, আমি নিস্পৃহ ছিলাম এবং নবাগতদের প্রতি আমার কোনো দায়িত্ববোধ ছিল না। আমি তাদের জীবন সম্পর্কে মোটেই ভাবিনি, যার ফলে তাদের সমস্যার দ্রুত সমাধান হচ্ছিল না, এবং কেউ কেউ আর সমাবেশে যোগ দিতে চাইছিল না। আমার আচরণের উপর ভিত্তি করে, এটাকে কি আদৌ কর্তব্যপালন বলা যায়? আমি শুধু মন্দ কাজই করছিলাম, ঈশ্বরকে ঠকানোর চেষ্টা করছিলাম! এটা উপলব্ধি করে আমার নিজেকে অত্যন্ত অপরাধী মনে হল এবং মানবিকতার এত অভাব থাকার কারণে নিজের প্রতি আমার ঘৃণা জন্মাল।
আমি পরে ঈশ্বরের বাক্যর এই অনুচ্ছেদটা পড়লাম: “তুমি কি শান্তি ও আনন্দ এবং যৎসামান্য দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্য সহকারে শয়তানের প্রভাবের অধীনে বসবাস করে সন্তুষ্ট? তুমি কি সব মানুষের চেয়ে নীচ নও? যারা পরিত্রাণ চাক্ষুষ করেছে অথচ তা অর্জন করার জন্য সাধনা করে না তাদের চেয়ে অধিক মূর্খ আর কেউ নেই; এরা এমন মানুষ যারা দেহসর্বস্বতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং শয়তানকে উপভোগ করে। তুমি আশা করো যে ঈশ্বরের প্রতি তোমার বিশ্বাস কোনো বাধা-বিপত্তি বা যন্ত্রণা বা সামান্যতম কষ্টেরও সম্মুখীন হবে না। তুমি সর্বদাই সেই জিনিসগুলির অন্বেষণ করো যা মূল্যহীন, এবং তুমি জীবনের সাথে কোনো মূল্য সংযোজন করো না, বরং সত্যের সামনে তোমার নিজের অসংযত চিন্তাভাবনাগুলি রেখে দাও। তুমি এতটাই মূল্যহীন! তুমি শূকরের মত বাস করো—তোমার আর শূকর আর কুকুরের মধ্যে পার্থক্য কী? যারা সত্যের সাধনা করে না, এবং তার পরিবর্তে দেহসর্বস্বতাকে ভালবাসে, তারা কি সবাই পশু নয়? আত্মা বিহীন ঐ মৃত ব্যক্তিরা কি সব চলমান শবদেহ নয়? তোমাদের মধ্যে কত বাক্য বলা হয়েছে? তোমাদের মাঝে কি খুব সামান্য কাজ করা হয়েছে? কতকিছুই না আমি তোমাদের মধ্যে প্রদান করেছি? তাহলে তুমি কেন তা অর্জন করনি? তোমার অভিযোগ করার মত কী আছে? এমনটা নয় কি যে দৈহিক সুখকে এতোটাই ভালোবেসেছ বলে তুমি কিছুই অর্জন করোনি? এবং এর কারণ কি এই নয় যে তোমার চিন্তাভাবনা অত্যন্ত অসংযত? এর কারণ কি এই নয় যে তুমি অতীব নির্বোধ? তুমি যদি এইসকল আশীর্বাদ অর্জন করতে অক্ষম হও, তাহলে কি তুমি তোমাকে উদ্ধার না করার জন্য ঈশ্বরকে দোষ দিতে পারো? … বিনিময়ে কিছু না চেয়ে আমি তোমাকে প্রকৃত পথ দিই, তবুও তুমি তা অন্বেষোণ করো না। তুমি কি আদৌ ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের একজন? আমি তোমাকে প্রকৃত মানব জীবন দান করি, তবুও তুমি অন্বেষণ করো না। তুমি কি শূকর বা কুকুরের চেয়ে কোনোভাবেই পৃথক নও? শূকররা মানুষের জীবনকে অনুসন্ধান করে না, তারা পরিশুদ্ধ হওয়ার সাধনা করে না, এবং তারা জীবন কী তা বোঝে না। প্রতিদিন, পেট ভরে খাদ্য গ্রহণ করার পরে, তারা কেবলই নিদ্রা যায়। আমি তোমাকে প্রকৃত পথ দিয়েছি, তবুও তুমি তা অর্জন করনি: তুমি শূন্যহস্ত। তুমি কি এই জীবনযাপন চালিয়ে যেতে চাও, একটি শূকরের জীবন? এমন মানুষের বেঁচে থাকার তাৎপর্য কী? তোমার জীবন নিন্দনীয় এবং তুচ্ছ, তোমার জীবনযাপন আবর্জনা ও লাম্পট্যের মাঝে, এবং তুমি কোন লক্ষ্যের অনুসরণ করো না; তোমার জীবন কি সকলের চেয়ে তুচ্ছ নয়? তোমার কি ঈশ্বরের দিকে মুখ তুলে তাকাবার দুঃসাহস আছে? তুমি যদি এইভাবেই অনুভব করতে থাকো, তাহলে কি তুমি কিছু অর্জন করতে পারবে? প্রকৃত পথ তোমাকে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তুমি শেষ পর্যন্ত তা অর্জন করতে পারবে কিনা তা নির্ভর করে তোমার নিজের ব্যক্তিগত অন্বেষণের উপর” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, পিটারের অভিজ্ঞতাঃ তার শাস্তি ও বিচারের জ্ঞান)। ঈশ্বরের যে সমস্ত বাক্য আমাদের কাছে জবাবদিহি দাবি করে, সেগুলো পাঠ করে আমি খুব অপরাধবোধ এবং আত্মগ্লানি অনুভব করলাম। আমাদের কলুষিত স্বভাবকে শুদ্ধ ও রূপান্তরিত করতে, আমাদের পরিত্রাণের সুযোগ দিতে, ঈশ্বর আন্তরিকভাবে আমাদের অনেক সত্য দিয়ে লালনপালন করেছেন, এবং তিনি সত্যের প্রতিটি দিক সম্পর্কে অত্যন্ত বিশদভাবে আলাপ-আলোচনা করেছেন, আমার আশংকা যে আমরা তা বুঝতে পারবো না। ঈশ্বর আমাদের জন্য এত বড় মূল্য দিয়েছেন। মানবিকতা আছে এমন যে কারোর উচিত সত্যের সাধনার প্রতি সচেষ্ট হওয়া, এবং তাদের কর্তব্যে নিবেদিত থাকা। কিন্তু আমার মধ্যে বিবেক বলে কিছু ছিল না। আমি মোটেও সত্যের অনুসরণ করছিলাম না, আমি কেবল শারীরিক আরামের কথাই চিন্তা করতাম, এবং তখনও শুধু শয়তানোচিত দর্শন অনুযায়ীই জীবনযাপন করছিলাম, যেমন “নিশ্চিন্তে ও বিনা পরিশ্রমে জীবনযাপন করুন” “প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করুন, কারণ জীবন সংক্ষিপ্ত।” আমার মনে হয়েছিল, পৃথিবীতে যে কয়েকটা দশক আমাদের সময় আছে, ভালোভাবে নিজেদের মনোরঞ্জন করে নিতে হবে, আর নিজেদের খুব বেশি চাপ দেওয়া যাবে না। নিজেদের জীবনকে আমাদের চিন্তামুক্ত ও সুখী করে তোলা উচিত। আমি এই শর্তে দায়িত্ব পালন করছিলাম যে আমি শারীরিক অস্বস্তি বা ক্লান্তি ভোগ করব না। যে কাজগুলো সবচেয়ে সহজ আমি শুধু সেগুলোই করতাম। কোনো সময় কোনো বিষয়ে আমাকে মাথা খাটাতে হলেই, আমি সেটার প্রতিরোধ করতাম আর পালিয়ে যেতাম, হয় সমস্যাটাকে অন্য কারো কাছে ঠেলে দিতাম বা সেটাকে উপেক্ষা করে সরিয়ে রাখতাম। আমি আমার দায়িত্বকে মোটেও গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছিলাম না, তাই কয়েকজন নবাগতর সমস্যার সমাধান হয়নি এবং তারা সমাবেশে যোগদান বন্ধ করে দিয়েছিল। শুধু তখনই আমি দেখতে পেলাম যে সেই শয়তানোচিত দর্শন আমাকে আরও বেশি করে কলুষিত করে তুলেছিল। আমি ছিলাম একটা শুকরের মতো, স্বাচ্ছন্দ্যের কামনা করতাম এবং একেবারেই সত্যের অনুসরণ করতাম না, কর্তব্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতাম এবং সে বিষয়ে একেবারেই মনোযোগীও ছিলাম না। আমি আমার কর্তব্য অবহেলা করছিলাম, আমার যেসকল সত্য অর্জন করা উচিত ছিল তা করছিলাম না, এবং আমার দায়িত্বও পালন করছিলাম না। আমি কি সম্পূর্ণ অপদার্থ ছিলাম না? আমি সত্যিই অনুভব করলাম যে দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্যের কামনা আমার ক্ষতি করছিল এবং আমার পরিত্রাণ লাভের সুযোগ নষ্ট করছিল। একটা দায়িত্বে সমস্যার সম্মুখীন হওয়া আসলে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করার ও সত্যের সন্ধান করার একটা ভালো সুযোগ। সমস্যার কারণে আমাকে সত্য সন্ধান এবং আমার কর্তব্যের নীতি অনুসরণ করতে জানার বাধ্যতা আমার জন্য সত্যের সাধনা করার ও জীবনে প্রবেশের একটা ভালো পথ ছিল। কিন্তু আমি এই বিষয়গুলোকে মনে করছিলাম একটা উপদ্রবের মতো, একটা ঝেড়ে ফেলার মতো বোঝা। একথা উপলব্ধি করার পর আমার সত্যিই অনুশোচনা হয়েছিল যে আমি কীভাবেই না নিজের দৈহিক আনন্দকে অত্যধিক প্রশ্রয় দিয়েছি, এবং সত্যের শিক্ষা লাভ করার কত ভালো সুযোগ হারিয়েছি। আমি আর দায়সারাভাবে কাজ করে যেতে চাইছিলাম না। আমাকে দৈহিক ইচ্ছা ত্যাগ করে আমার হৃদয়কে আমার কর্তব্যে নিযুক্ত করতে হত।
একদিন আমি ঈশ্বরের বাক্যের একটা অংশ পড়লাম, যা আমাকে আমার দায়িত্বে উদাসীন হওয়ার পরিণতি আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করল। ঈশ্বরের বাক্যে বলা হয়েছে, “ধরা যাক এমন একটি কাজ আছে যা একজন ব্যক্তি এক মাসে সম্পাদন করতে পারবে। কাজটি করতে যদি ছয়মাস সময় লেগে যায়, তাহলে কি ঐ বাকি পাঁচটি মাস ক্ষতিরই প্রতিরূপ নয়? সুসমাচার প্রচারের ক্ষেত্রে, কেউ কেউ প্রকৃত পথ গ্রহণের কথা বিবেচনা করে এবং ধর্মান্তরিত হতে তাদের মাত্র একমাস সময়ই প্রয়োজন হয়, তারপর তারা গির্জায় যোগ দেয় ও অবিরত তাদের সিঞ্চন ও সংস্থান অব্যহত থাকে। ভিত্তি স্থাপনের জন্য তাদের সময় লাগে মাত্র ছয় মাস। তবে, সুসমাচার প্রচারকারী ব্যক্তির মনোভাব যদি হয় নিস্পৃহ ও নিরুৎসাহ, এবং নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের যদি কোনো দায়িত্ববোধ না থাকে, এবং তাদের যদি সেই ব্যক্তিকে ধর্মান্তরিত করতে অর্ধবর্ষ লেগে যায়, তাহলে এই ছয় মাস কি তাদের জীবনের একপ্রকার ক্ষতিই নয়? তারা যদি বিরাট বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় ও তাদের ভিত্তির অভাব থাকে, তাহলে তারা বিপদে পড়বে, আর তখন তাদের প্রতি তোমার কি কোনো ঋণ থাকবে না? আর্থিকভাবে কিংবা টাকা ব্যবহার করে এইরকম ক্ষতির পরিমাপ করা যায় না। তুমি তাদের সত্য উপলব্ধিতে অর্ধবর্ষ অপেক্ষা করিয়েছ, তুমি তাদের ভিত্তি প্রস্তুত করতে ও তাদের কর্তব্য সম্পাদন আরম্ভ করতে অর্ধবর্ষের বিলম্ব করিয়েছ। কে এর দায়িত্ব গ্রহণ করবে? নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা কি এর দায়িত্ব গ্রহণে সক্ষম? কারো জীবনের দায়িত্ব যে কোনো মানুষের সহন করার ক্ষমতার ঊর্ধে” (বাক্য, খণ্ড ৫, নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের দায়িত্বসমূহ)। ঈশ্বরের বাক্য যা প্রকাশিত হল তা সত্যিই উদ্বেগজনক এবং কঠিন ছিল। আমি ছিলাম ঠিক একজন ভণ্ড নেত্রীর মতো যে প্রকৃত কাজ করে না, দায়িত্বে অমনোযোগী এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন ছিলাম, যার ফলে নবাগতরা জড়ো হত না, এমনকি কয়েকজন বিশ্বাসই ত্যাগ করলো তাদের সমস্যার সমাধান না হওয়ায়। নবাগতদের এরকমভাবে সিঞ্চন করা কি তাদের ক্ষতি করছিল না? যদিও কয়েকজন বিশ্বাস ত্যাগ করেনি, কিন্তু তাদের জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কারণ তারা তাদের পূর্বধারণাতেই আটকে ছিল এবং দীর্ঘ সময় ধরে জড়ো হয়নি। এটা এমন ক্ষতি যা পূরণ করার আমার কোনো উপায় ছিল না। আমি যদি আমার দেহ সম্পর্কে এত যত্নবান না হতাম, মূল্য দিতে পারতাম, এবং প্রত্যেক নবাগতের সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতাম, তাহলে হয়তো তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রকৃত পথে স্থায়ী হতে পারত এবং সত্য সম্পর্কে আগেই জানতে পারত, গির্জার জীবনযাপন করত, দায়িত্ব পালন করত, শীঘ্রই সুকর্ম সঞ্চয় করতে পারত, এবং বিষয়গুলোর পরিণতি এরকম হত না। কিন্তু সেই সময়ে, কথা বলার জন্য অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। যারা সমাবেশে যোগ দেয়নি তাদের কথা ভেবে আমি সত্যিই বিচলিত এবং অপরাধী, এবং ঈশ্বরের কাছে প্রচণ্ডরকম ঋণী বোধ করলাম। এটা ছিল একটা অপরাধ, একটা দাগ যা আমি আমার কর্তব্যের উপর লাগিয়ে দিয়েছিলাম! আমি অনুশোচনা আর ভয়ে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল আমি বিশাল সমস্যার সৃষ্টি করেছি। আমি চোখের জলে প্রার্থনা করলাম, “ঈশ্বর, আমি সর্বদা স্বাচ্ছন্দ্য কামনা করি এবং আমার দায়িত্বে উদাসীন থাকি, যা তোমাকে বিরক্ত করে। আমি তোমার কাছে অনুতপ্ত হতে চাই এবং বাস্তব কাজের মাধ্যমে আমার অপরাধগুলো পূরণ করতে চাই। দয়া করে আমার হৃদয় পরীক্ষা করো, এবং আমার উদাসীনতা অব্যাহত থাকলে, দয়া করে আমাকে শোধন এবং শাসন করুন।”
আমি তখন এমন নবাগতদের সন্ধান করলাম যারা নেতিবাচক, দুর্বল, এবং সমাবেশে যোগ দিচ্ছিল না, এবং তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য ঈশ্বরের বাক্য খুঁজতে লাগলাম। আমি সেই ভগিনীদেরও নীতি ও পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম যারা সিঞ্চনে পারদর্শী। তারপর আমি সেই নবাগতর সন্ধান করলাম যার ধর্মীয় পূর্বধারণা রয়েছে, যে সমাবেশে আসছিল না। আমি তাকে অনেকগুলো মেসেজ পাঠালাম, যার একটারও সে উত্তর দিলো না। আমি মুহ্যমান হয়ে পড়লাম এবং এ সম্পর্কে ভুলে যেতে চাইলাম। অন্ততঃ এইটুকু তো সত্যি যে সে-ই যোগাযোগ করা বন্ধ করেছিল। যে কাজে ব্যস্ত থাকতো, আমি সেই নবাগতকেও আরেকটা মেসেজ পাঠালাম, আর যখন দেখলাম সে-ও সমাবেশে আসার আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিলো, আমি তাকে সহায়তা করার জন্য আর কোনো চেষ্টা করতে চাইলাম না। আমি তখন ভাবলাম ঈশ্বরের কাছে আমার প্রার্থনার কথা, এবং তাঁর এই বাক্যগুলো: “যখন মানুষজন তাদের দায়িত্ব পালন করে, তারা প্রকৃতপক্ষে তাদের করণীয় কাজই করছে। যদি তুমি তা ঈশ্বরের সামনে করো, যদি তুমি নিজের দায়িত্ব সম্পাদন করো, এবং সততার মনোভাব নিয়ে, সর্বান্তকরণে ঈশ্বরের প্রতি নিজেকে সমর্পণ করো, তাহলে সেই মনোভাবই কি বেশি সঠিক হবে না? সুতরাং, তোমার দৈনন্দিন জীবনে এই মনোভাব কীভাবে প্রয়োগ করা উচিত? তোমাকে অবশ্যই ‘সর্বান্তকরণে এবং সততা সহযোগে ঈশ্বরের উপাসনা’ করাকেই নিজের বাস্তবতা করতে হবে। যখনই তোমার শিথিল হয়ে পড়তে ইচ্ছা হয় এবং নিছক স্রোতে গা ভাসিয়ে ইচ্ছা হয়, যখনই তুমি পিচ্ছিল উপায়ে কর্ম সম্পাদন করতে চাও এবং অলস হতে চাও, এবং যখনই তুমি বিভ্রান্ত হয়ে পড়ো অথবা সেই কর্ম সম্পাদনের পরিবর্তে ব্যক্তিগত সুখভোগ করতে চাও, তখনই এই বিষয়টাকে তোমার এইভাবে চিন্তা করা উচিত: ‘এমন আচরণের ফলে আমি কি অবিশ্বস্ত হয়ে পড়ছি? এটা কি মনপ্রাণ ঢেলে দায়িত্ব পালন করা? এমনটা করার ফলে আমি কি অননুগত হচ্ছি? এটা করছি বলে, ঈশ্বর আমার উপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, তার যোগ্য হয়ে উঠতে ব্যর্থ হচ্ছি কি?’ এইভাবেই তোমার আত্ম-প্রতিফলন করা উচিত। যদি তুমি জানতে পারো যে, তুমি নিজের দায়িত্ব পালনে সর্বদাই অযত্নশীল, উদাসীন ও অবিশ্বস্ত, তুমি ঈশ্বরকে কষ্ট দিয়েছ, তবে তোমার কী করা উচিত? তোমার বলা উচিত, ‘আমি মুহূর্তের মধ্যেই অনুভব করেছিলাম যে এখানে কিছু ত্রুটি হয়েছে, কিন্তু সেটাকে আমি সমস্যা বলে বিবেচনা করিনি; নিতান্তই বেপরোয়াভাবে আমি সেটাকে তুচ্ছজ্ঞান করেছিলাম। আমি এখনও পর্যন্ত উপলব্ধি করতে পারিনি যে, আমি সত্যিই অযত্নশীল ও উদাসীন ছিলাম, আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। আমার মধ্যে সত্যিই বিবেক ও বোধের অভাব রয়েছে!’ তুমি এই সমস্যা খুঁজে পেয়েছ এবং নিজের বিষয়ে কিছুটা হলেও জানতে পেরেছ—তাহলে এখন, তোমাকে অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াতে হবে! দায়িত্বপালনের প্রতি তোমার মনোভাব ভ্রান্ত ছিল। তুমি সেই বিষয়ে অমনোযোগী ছিলে, যেন তা ছিল অতিরিক্ত কোনো কাজ, এবং তুমি তাতে নিজের হৃদয় সঁপে দাও নি। তুমি যদি আবার এইরকমই অযত্নশীল ও উদাসীন হয়ে পড়ো, তাহলে তোমার অবশ্যই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা উচিত, এবং তাঁর দ্বারা অনুশাসিত ও শোধিত হওয়া উচিত। নিজেদের দায়িত্ব সম্পাদনকালে কাউকে অবশ্যই এইরকমই ইচ্ছা রাখতে হবে। শুধুমাত্র তবেই তারা প্রকৃতপক্ষে অনুতপ্ত হতে পারবে। যখন কারো বিবেক স্বচ্ছ হয়, এবং দায়িত্বপালনের প্রতি মনোভাব পরিবর্তিত হয়, তখনই সে ঘুরে দাঁড়াতে পারে” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র ঈশ্বরের বাক্যের বারংবার পাঠ ও সত্যের ধ্যানের মধ্যেই রয়েছে অগ্রগতির পথ)। ঈশ্বরের বাক্য আমাকে দেখতে সাহায্য করলো যে ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করা কঠিন নয়, আমাদের অবশ্যই অকৃত্রিম হতে হবে, ঈশ্বরের গভীর অনুসন্ধান গ্রহণ করতে হবে, এবং আমরা যা জানি, যা পারি, তা নির্বাহ করার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে, ছলনা করা বা উদাসীন হওয়া চলবে না, এবং নিজেদের কর্তব্য ভালভাবে পালন করার জন্য আমাদের এই ধরনের মনোভাবই প্রয়োজন। তাই আমি সংকল্প করলাম যে এইবার আমি আর ঈশ্বরকে নিরাশ করব না। ঈশ্বরের কাছে আমার প্রদর্শন করতে হতো যে আমি অনুতপ্ত, আমি সত্যিই পরিশ্রমী এবং আন্তরিক, এবং যদি সেই নবাগতরা আমার সাহায্য ও সহায়তার পরেও সমাবেশে যোগ না দেয়, তাহলেও আমি আমার দায়িত্ব পূর্ণ করেছি, এবং আমার কোনো অপরাধবোধ নেই।
আমি অনুশীলনের পথের সন্ধানে আরেক ভগিনীর সঙ্গে কথা বলতে গেলাম এবং ধর্মীয় পূর্বধারণাসহ সেই নবাগতরও সন্ধান করলাম আলাপ-আলোচনার জন্য। আমি আমার নিজের বিশ্বাসের পথ সম্পর্কে তার কাছে খুলে বললাম। আশ্চর্যেজনক ভাবে, সে আমার মেসেজের উত্তর দিল। সে সত্যিই সমাবেশগুলো উপভোগ করত, কিন্তু তার কিছু অমীমাংসিত ধারণা ও বিভ্রান্তি ছিল। এই নবাগতের মর্মস্পর্শী কথায় আমি আপ্লুত হলাম, এবং তার পূর্বধারণাগুলোকে কেন্দ্র করেই তার সাথে আলাপ-আলোচনা করলাম। শেষ পর্যন্ত, সে সমাবেশে যোগ দিতে রাজি হল, এবং শীঘ্রই একটা দায়িত্ব গ্রহণ করল। আমার একটা অবর্ণনীয় অনুভূতি হল যখন দেখলাম যে বিষয়গুলোর পরিণতি এরকম হচ্ছে। আমি আনন্দ এবং অনুশোচনা দুটোই অনুভব করলাম। ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা আলোকপ্রাপ্ত হয়ে নিজেকে জানতে না পারলে এবং কর্তব্যের প্রতি আমার মনোভাব সংশোধন করতে না পারলে, আমি আরও একটা অপরাধ করতাম। তারপর আমি আবার সেই নবাগতর সন্ধান করলাম যে কাজে ব্যস্ত থাকতো। আগে, আমি ওর সমস্যাগুলো বিবেচনা না করে সবসময় ওকে সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দিতাম। এইবার, ওর বাস্তব পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে ওকে সাহায্য করতে আমি ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে আলোচনা করলাম, এবং যথাযথভাবে জমায়েতের সময়গুলোকে সাজালাম। যখন ওর জমায়েতে আসার সময় হতো না, আমি ওর অবসর সময়ে ওর সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করতাম এবং ধৈর্য সহকারে আলাপ-আলোচনা করতাম। তারপর ও আমার কাছে মন খুলে ঈশ্বরের সেইসব বাক্য সম্পর্কে কথা বলতে ইচ্ছুক হয়ে উঠলো যেগুলো ও পড়েছে। ও খুশি হয়ে আমাকে এটাও বলল যে যাই হোক না কেন, ও জমায়েতে উপস্থিত হওয়া, বা ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পান করা ছাড়বে না। এর পরে, সে আর একটাও সমাবেশে অনুপস্থিত থাকেনি, এবং তার কাজে শত ব্যস্ততা থাকলেও, সে ঈশ্বরের বাক্য সম্পর্কে চিন্তার জন্য সময় দিত। পরে, আমি আরও নবাগতদের ফিরিয়ে এনেছি। আমি যেই আমার মনোভাব সংশোধন করলাম, ঈশ্বরের উপর নির্ভর করলাম, এবং প্রকৃত প্রচেষ্টা করলাম, আমার কাজে ভালো ফল পেলাম।
আগে আমি আমার দায়িত্বে সবসময় প্রতারণাপূর্ণ এবং উদাসীন ছিলাম। আমি শারীরিকভাবে কষ্ট না পেলেও সবসময় কষ্টের মধ্যে থাকতাম। আমি ঈশ্বরের পথনির্দেশ অনুভব করতে পারতাম না, আমি আমার কাজের খুব কমই সুসম্পন্ন করছিলাম, আমার সম্পূর্ণরূপে আলোকপ্রাপ্তির অভাব ছিল, এবং আমি সবসময় উদ্বিগ্ন থাকতাম ঈশ্বর আমাকে পরিত্যাগ করে বহিষ্কার করবেন। আমি খুব বিষণ্ণ ছিলাম এবং বেদনার মধ্যে ছিলাম। একবার যখন আমার হৃদয়কে আমার কর্তব্যে নিযুক্ত করলাম, আমি ঈশ্বরের উপস্থিতি ও পথনির্দেশ অনুভব করতে পারলাম। আমি আমার দায়িত্বে উন্নতিও করলাম এবং শান্তির অনুভূতি লাভ করেছিলাম। আমি সত্যিই এই অভিজ্ঞতা লাভ করলাম যে তোমার কর্তব্যের প্রতি তোমার মনোভাব কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সমস্যার সম্মুখীন হলে, শুধুমাত্র প্রকৃত মূল্য পরিশোধ করলে এবং ঈশ্বরের ইচ্ছায় মনোযোগ দিলে তবেই আমরা পবিত্র আত্মার র কাছ থেকে আলোকপ্রাপ্ত হতে পারি এবং আমাদের কর্তব্যে উপকৃত হতে পারি।
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।