একজন “ভালো নেতার” প্রতিফলন

31-03-2023

ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা সকলের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ, সহজগম্য এবং সহানুভূতিশীল থাকতে শিখিয়েছে। আশেপাশের মানুষের যদি সমস্যা বা ত্রুটি থাকত, তাদেরকে অনাবৃত করতে পারতাম না, তাদের সম্মানের কথা ভাবতে হতো। এই শিক্ষার জন্যই আমার কখনো কারো সঙ্গে ঝগড়া হয়নি, চারপাশের মানুষ আমাকে ভালো মনে করত এবং আমার সঙ্গী হতে চাইত। আমিও ভাবতাম এমনটা করাই ভালো। ঈশ্বরে বিশ্বাস করার পরেও, এইভাবেই ভ্রাতা ও ভগিনীদের সঙ্গে মিশতাম। বিশেষ করে গির্জার নেত্রী হওয়ার পরে। ভেবেছিলাম আমার উচিত বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়া, ভুলের জন্য দোষারোপ করা নয়। তাহলে আমাদের ভালো সম্পর্ক নষ্ট হবে না, তারাও আমার সঙ্গে তাল মিলিয়েছে, আন্তরিক ও ভালো নেত্রী হিসেবে প্রশংসা করেছে।

পরে, দেখি এক গোষ্ঠীর নেত্রী, ভগিনী জোয়ান, ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছে না। তাকে অনেকবার মনে করিয়ে দিই, “গোষ্ঠীর নেত্রী হিসেবে, তোমার ভ্রাতা ও ভগিনীদের অবস্থা বোঝা উচিত আর গোষ্ঠীর কাজ অনুসরণ করা উচিত।” তবুও সে কিছুই করে না, তখন জানতে চাই কেন সে এমন করছে জানায়, সে কেবল এক ঘণ্টা সময় পায়, যেটা সে ফেসবুকে এবং সিনেমা দেখে কাটায়, তাই সে কিছুই করতে পারে না। শুনে আমি খুব রেগে যাই, আর ভাবি, “তুমি খুব অলস, একদম চাপ নাও না। ভ্রাতা ও ভগিনীরা সমাবেশে না এলে, তাদের সহায়তার কথা ভাবো না!” দায়িত্বে অবহেলা আর অসচেতনতার জন্য তার মোকবিলা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা করলে, ভাবলাম সে হয়ত আমার সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করবে বলবে আমি ভালো নেত্রী নই। আমি আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইনি, তাই মোকাবিলা করার বদলে, তাকে উৎসাহিত করি। বলি, “তুমি তোমার এই ফাঁকা সময়ে ভ্রাতা ও ভগিনীদের অবস্থা জানার চেষ্টা করলেই, ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে।” কয়েকদিন ভালোই কাজ করে, কিন্তু একই সমস্যা বারবার হচ্ছিল। তার দায়িত্বে অবহেলার কারণে নবাগতরা সমাবেশে অনিয়মিত হতে থাকে, অনেক নবাগত তো আসতই না। খুব রেগে যাই। কী দায়িত্বজ্ঞানহীন! সত্যিই তার মোকাবিলা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু যখন ভাবলাম সে আমার থেকে দূরত্ব সৃষ্টি করবে, আর কিছু বলিনি, বাধ্য হয়ে নিজেই নবাগতদের সিঞ্চন আর সহায়তা করি। নবাগতদের সঙ্গে কথা বলে আমি বুঝলাম, তারা সমাবেশে আসেনি কারণ তাদের অনেক সমস্যার সমাধান করা হয়নি, কিন্তু জোয়ান বলেছিল তারা মেসেজের উত্তর দেয় না। দায়িত্বের প্রতি তার এই মনোভাব দেখে, সত্যিই তার মোকাবিলা করতে চেয়েছিলাম। দেখাতে চেয়েছিলাম তার দায়িত্বজ্ঞানহীনতার মারাত্মক ফলাফল। কিন্তু আমি একজন ভালো নেত্রীও হতে চেয়েছিলাম যে বন্ধুত্বপূর্ণ আর সহজগম্য, তাই আমি মত বদলে, তাকে অনুপ্রাণিত করার মত কথা বলি। কাজেই, সে আর বদলায়নি। এক সমাবেশে, জোয়ান অভিযোগ করে, “অনেকদিন ধরে আমি গোষ্ঠীতে আছি। আমার পদোন্নতি হয়নি কেন?” জোয়ানের কথা শুনে আমি ভাবলাম, “তুমি খুব অলস, দায়িত্ব পালনে অবহেলা কর, আর অসচেতন। তোমার পদোন্নতি কীভাবে সম্ভব?” যদিও তার উপর রেগে ছিলাম, তবুও সান্ত্বনা দিয়ে বলি, “আমরা যে দায়িত্বই পালন করি, তা ঈশ্বরের সার্বভৌম ব্যবস্থাপনার কারণেই করি। দায়িত্ব আলাদা হলেও আমরা সবাই, নবাগতদের সিঞ্চন ও ঈশ্বরের কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করছি।” ভেবেছিলাম এতে সে মনে করবে আমি তার ব্যাপারে যত্নশীল, যেন আমি একজন ভালো নেত্রী। আর তাই, আমি কখনোই অন্যের সমস্যা নিয়ে কথা বলতাম না, মোকবিলা করতাম না। বদলে, তাদের স্বাচ্ছন্দ্য ও অনুপ্রেরণা দিতে ভালো কথা বলতাম। ভাবতাম এর ফলে সবার মনে সহজগম্য হিসেবে আমার ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন থাকবে।

আর একবার, যাজক এডনা আর নেত্রী অ্যান-এর মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। এডনা একদিন রেগে বলে, “অ্যান খুব অলস। তার গোষ্ঠীর সদস্যদের অবস্থা জিজ্ঞাসা করলে অনেক দেরিতে উত্তর দেয়। সকলের খবর দিতে পারছে না মানে সে ঠিকমত কাজ করছে না।” আমি জানতাম, এডনা উদ্ধত স্বভাবের, আর প্রায়ই আদেশের স্বরে কথা বলত, যা অন্যদের পক্ষে গ্রহণ করা মুশকিল, অ্যানও আত্মসচেতন ছিল। এটা হতেই পারে যে এডনার বলার ভঙ্গি অ্যানের ভালো লাগেনি, তাই উত্তর দিতে চায়নি। আমি এডনাকে এই কথা বলতে চাইছিলাম, কিন্তু তাকে আহত করতে বা ভুল বোঝাবুঝি হোক চাইনি, তাই তাকে বন্ধুত্বপূর্ণ সুরে বলি, “হয়ত অ্যান ব্যস্ত ছিল আর তোমার মেসেজ দেখেনি।” তারপর, আমি অ্যানের কাছে যাই, সে দুঃখ নিয়ে বলে, “এডনা খুব উদ্ধত, ঠিক করে দিতে চায় আমি কীভাবে কাজ করব, তাই তার মেসেজের জবাব দিতে চাই না।” দেখলাম অ্যান কারো উপদেশ নেয় না, ব্যাপারটা তাকে ধরিয়ে দিতে চাইলাম, কিন্তু ভয় হলো সে যদি তা না মানে, তাহলে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হবে, তাই বললাম, “হয়ত তুমি এডনাকে ভুল বুঝছ। সে কেবল চায় তুমি ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করো।” আমি তাদের কেবল স্বস্তিদায়ক ও পরামর্শ-সুলভ কথা বলতাম, সমস্যা ধরিয়ে দিতাম না। দুজনের কেউই নিজেদের বোঝেনি। এডনা অ্যানের কাজ অনুসরণ করতে পারত না, অ্যান ভাবত তার সাথে অন্যায় হচ্ছে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। জানতাম নেত্রী হিসেবে আমি আমার কর্তব্য পালন করছিলাম না, মানে তারা নিজেদের সমস্যা উপলব্ধি করতে পারছিল না। তার জন্য আমিই দায়ী। প্রার্থনা করি, ঈশ্বর যেন আমাকে আলোকিত করে নিজেকে বুঝতে দেন।

ঈশ্বরের বাক্যে পড়ি, “সত্যের অনুশীলনের অর্থ ফাঁকা বুলি আওড়ানো বা নির্ধারিত বাক্যাংশের আবৃত্তি করা নয়। কেউ জীবনে যা কিছুরই সম্মুখীন হোক না কেন, তার মধ্যে যতক্ষণ মনুষ্যোচিত আচরণের নীতি জড়িত থাকে, ঘটনায় অথবা নিজ দায়িত্ব পালনের বিষয়ে দৃষ্টিকোণ অন্তর্ভুক্ত থাকে, তাহলে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে তাদের সত্যের অন্বেষণ করা উচিত, ঈশ্বরের বাক্যের ভিত্তি ও নীতি অনুসন্ধান করা উচিত এবং তারপরে অনুশীলনের পথের সন্ধান করা উচিত; যারা এইভাবে অনুশীলনে সক্ষম, তারাই সত্য অন্বেষণ করতে পারে। কেউ যতই বড় সমস্যার সম্মুখীন হোক না কেন, এই উপায়ে সত্য অন্বেষণে সক্ষম হওয়ার অর্থ হল পিতরের পথে হাঁটা এবং সত্য অন্বেষণের পথে চলা। উদাহরণস্বরূপ, অন্যান্যদের সাথে বার্তালাপের সময় কোন নীতি অনুসরণ করা উচিত? তোমার আসল দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, তোমার কাউকে ক্ষুব্ধ করা উচিত নয় বরং শান্তি বজায় রাখা উচিত, কারোর সুনাম নষ্ট করা থেকে বিরত থাকা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে সকলে মিলেমিশে থাকতে পারে। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে আবদ্ধ থাকলে, তুমি যখন কাউকে খারাপ কিছু করতে দেখো, ভুল করতে দেখো বা নীতিবিরুদ্ধ কোনো কাজ করতে দেখো, তখন তা অন্যের সামনে তুলে ধরার বদলে তা সহ্য করতেই বেশি পছন্দ করো। নিজের দৃষ্টিভঙ্গিতে আবদ্ধ থেকেছো, তুমি কাউকে ক্ষুব্ধ করতে চাওনি। তুমি যার সাথেই সহযোগী থাকো না কেন, বহু বছরের মেলামেশার ফলে মৌখিক ভাবনাচিন্তা, আবেগ বা অনুভূতির দ্বারা যতই বাধাগ্রস্ত হও না কেন, তুমি সেই ব্যক্তিকে খুশী করার জন্য সর্বদা ভালো কথাই বলবে। আবার অসন্তোষজনক বিষয়গুলির ক্ষেত্রেও তুমি সহনশীলতা দেখাও; তুমি শুধুমাত্র আড়ালে কিছুটা ক্ষোভ উদ্গীরণ করো, কিছু কুৎসা রটাও, কিন্তু তার সামনে ঝঞ্ঝাট এড়িয়ে যাও, তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখো। এই ধরনের আচরণের বিষয়ে তোমার ভাবনা চিন্তা কী? এটা কি ভালো-মানুষ সেজে থাকা নয়? এই পথ কি পিচ্ছিল নয়? এতে আচরণের নীতি লঙ্ঘিত হয়। সুতরাং, এহেন আচরণ কি নিম্নরুচির নয়? এহেন আচরণকারীগণ সৎ-ব্যক্তি নয়, উন্নত চরিত্রেরও নয়। তুমি যতই যন্ত্রণা ভোগ করো না কেন, যতই মূল্য পরিশোধ করো না কেন, তোমার নিজস্ব আচরণ যদি নীতিবর্জিত হয়, তাহলে তুমি হলে একজন ব্যর্থ লোক এবং তুমি ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করতে পারবে না, তাঁর স্মরণেও থাকবে না, আবার তাঁকে সন্তুষ্টও করতে পারবে না(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, উত্তমরূপে দায়িত্ব পালন করতে হলে, ন্যূনতমভাবে যা প্রয়োজন তা হল বিবেক এবং যুক্তিবোধ)। ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে চিন্তা করে বুঝলাম, যত যাই হোক সত্যের নীতি অনুসারে কাজ করাই সত্যের অনুশীলন, মানুষ অসন্তুষ্ট হলেও। কিন্তু যখন ভ্রাতা ও ভগিনীদের সঙ্গে মিশতাম, সবসময় চাইতাম সবাই আমার সম্পর্কে উঁচু ধারণা পোষণ করুক, ভালো সম্পর্ক থাকুক, চাইতাম সহজগম্য এবং সহানুভূতিশীল মানুষ হতে যাতে ভ্রাতা ও ভগিনীদের প্রশংসা পাই, কিন্তু সত্যের অনুশীলনে অবহেলা করেছিলাম। যখন দেখেছিলাম জোয়ান আলসেমি করে দায়িত্ব পালন করছে, আমি তার মোকাবিলা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে তাকে বোঝাতে আমি একজন ভালো এবং সহজগম্য নেতা, তার সমস্যার কথা বলিনি। ফলে, তার দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য, কিছু নবাগত তাদের সমস্যার সমাধান পায়নি, তাই তারা সমাবেশে আসত না। আর এডনা ও অ্যানকে, দেখেছিলাম তারা পরস্পরকে জানত না, একসাথে কাজ করতে পারত না, কিন্তু তাদের সমস্যা ধরিয়ে না দিয়ে, নিজেদের জানতে সাহায্য না করে, অনির্দিষ্টভাবে, স্বস্তিদায়ক কথা বলে ও উপদেশ দিয়ে তাদের বিরোধ মেটাতে চেষ্টা করি। এর ফলে, পরেও এডনা অনুসরণ করতে পারত না, অ্যানও ঠিকমত দায়িত্ব পালন করতে পারত না, চাইত অন্য কেউ তার জায়গায় আসুক। দেখলাম বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহজগম্য ভালো নেতার ভাবমূর্তি রাখতে গিয়ে আমি, গির্জার কাজ একেবারেই পালন করতে পারিনি। মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে গিয়ে কাজের ক্ষতি করেছি। কী স্বার্থপর ও ঘৃণ্য ছিলাম। আমি মন জোগানো এক প্রতারক ছিলাম। আমি কাজ করছিলাম পুরোপুরি আমার ভ্রষ্ট স্বভাবের ভিত্তিতে। সত্যের অনুশীলন করতাম না। মানুষ আমার প্রশংসা করলেও ঈশ্বর কখনোই করতেন না। এছাড়াও, ভ্রাতা ও ভগিনীদের সমস্যা ধরিয়ে দিতাম না, সমাধানের জন্য সত্যের আলোচনা করতাম না, ফলে তারা নিজেদের ভ্রষ্ট স্বভাব চিনতে পারত না, ভালভাবে দায়িত্ব পালন করত না, যা সুসমাচারের কাজ ব্যাহত করত। এই কথা বোঝার পর আমি উপলব্ধি করলাম আমি মোটেও ভালো মানুষ নই, কারণ আমি অন্যদের জীবনে প্রবেশে কোনো সাহায্য করছিলাম না। বদলে, চেষ্টা করেছিলাম যাতে সকলে, আমাকে সমর্থন করে, প্রশংসা করে আর সম্মান করে, যা ঈশ্বরের কাছে বিতৃষ্ণার। এ কথা উপলব্ধি করে আমার খুব দুঃখ হল, তাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, আমার ভ্রষ্ট স্বভাব সংশোধনে পথ দেখাতে।

পরে, আমার অবস্থার কথা জেনে, এক ভগিনী আমাকে ঈশ্বরের বাক্যের একটি অনুচ্ছেদ পাঠায়। “বন্ধুত্বপূর্ণ এবং অমায়িক হওয়ার মতো ‘উত্তম’ আচরণের অন্তরালে যে নির্যাস থাকে, সেটাকে একটা শব্দ দিয়েই বর্ণনা করা যায়: ভান। এই ধরনের ‘উত্তম’ আচরণ ঈশ্বরের বাক্যের থেকে উদ্ভূত হয় না, আবার সত্য অনুশীলন বা নীতি অনুসারে কাজ করার ফলেও উৎপন্ন হয় না। তাহলে কী থেকে তা উৎপন্ন হয়? তা লোকেদের উদ্দেশ্য ও কূটকৌশল থেকে উৎপন্ন হয়, হয় তাদের ভান ও ছদ্ম-অভিনয় করা এবং প্রতারক হয়ে ওঠা থেকে। লোকেদের এই ‘উত্তম’ আচরণ আঁকড়ে রাখার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হল নিজেদের আকাঙ্ক্ষিত বস্তু লাভ করা; তা না হলে, তারা কখনোই নিজেদের এইভাবে বেদনার্ত করতো না, এবং নিজস্ব আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে জীবনযাপন করত না। নিজস্ব আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে জীবনযাপন করা বলতে কী বোঝায়? তা বোঝায় যে, মানুষ যতটা কল্পনা করে, তাদের আসল প্রকৃতি ততটাও সদাচারী, নির্দোষ, নম্র, দয়ালু এবং গুণী নয়। তারা বিবেক ও চেতনার দ্বারা জীবনযাপন করে না; পরিবর্তে, তারা নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা চাহিদা অর্জনের জন্যই জীবনযাপন করে। মানুষের আসল প্রকৃতি কী? তা হল ছন্নমতি ও অজ্ঞ। ঈশ্বর প্রদত্ত বিধান ও আদেশ না থাকলে, মানুষ পাপ কী, সেই সম্পর্কে কোনো ধারণাই লাভ করতে পারত না। মানবজাতি কি এইরকমই ছিল না? শুধুমাত্র যখন ঈশ্বর বিধান ও আদেশ জারী করেছিলেন, তখনই মানুষ পাপ সংক্রান্ত কিছু ধারণা লাভ করেছিল। কিন্তু তখনও ঠিক এবং ভুল, অথবা ইতিবাচক এবং নেতিবাচক বস্তুর বিষয়ে, মানুষের কোনো ধারণা ছিল না। পরিস্থিতি যখন তেমনটাই ছিল, তখন কীভাবে-ই বা আর তারা কথা বলা ও কাজ করার সঠিক নীতির বিষয়ে সচেতন হতে পারত? কাজ করার কোন উপায়, কোন উত্তম আচরণ স্বাভাবিক মানবতার মধ্যে থাকতেই হবে, তা কি তারা জানতে পারত? তারা কি জানতে পারত, যে, কী থেকে থেকে প্রকৃতপক্ষেই উত্তম আচরণ সৃষ্টি হয়, মানবসদৃশ জীবনযাপনের জন্য তাদের কোন ধরনের পথ অনুসরণ করা উচিত? তারা তা জানতে পারত না। মানুষের শয়তানোচিত প্রকৃতি, সহজাত প্রবৃত্তির কারণে, তারা ভালোভাবে মর্যাদাপূর্ণভাবে জীবনযাপনের জন্য শুধুমাত্র ভান এবং ছদ্ম-অভিনয়ই করতে পারে—যা জন্ম দেয় বিভিন্ন প্রতারণার, যেমন, পরিমার্জিত এবং বিচক্ষণ ভাব, মৃদু-স্বভাবী হওয়া, শিষ্ট আচরণ, প্রবীণদের শ্রদ্ধাকারী ও নবীনদের যত্নকারী হওয়া, এবং অমায়িক ও বন্ধুভাবাপন্ন হওয়া; এইভাবে প্রতারণার বিভিন্ন কূটকৌশলের উদ্ভব ঘটে। সেগুলির উদ্ভব ঘটার পর, লোকজন এইসব প্রতারণার মধ্যে থেকে বেছে বেছে দুয়েকটাকেই আঁকড়ে ধরে। কেউ কেউ বন্ধুভাবাপন্ন ও অমায়িক হওয়াকে বেছে নেয়, কেউ আবার পরিমার্জিত, বোধসম্পন্ন ও মৃদু স্বভাবী হওয়াকে বেছে নেয়, কেউ শিষ্ট হওয়া, প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও নবীনদের প্রতি যত্নশীল হওয়াকে বেছে নেয়, কেউ আবার এগুলোর সবকিছু হওয়াকেই বেছে নেয়। এবং তা সত্ত্বেও আমি এই ধরনের ‘উত্তম’ আচরণসম্পন্ন ব্যক্তিদের একটা শব্দের মাধ্যমেই সংজ্ঞায়িত করি। সেই শব্দটা কী? ‘মসৃণ প্রস্তর।’ এই মসৃণ প্রস্তর কী? তা হল সেই সমস্ত নদীর ধারে পড়ে থাকা প্রস্তরখণ্ড, যেগুলো বছরের পর বছর ধরে জলের স্রোতের মাধ্যমে ঘষেমেজে ধারালো প্রান্তভাগবিহীন অবস্থায় পরিণত হয়েছে। যদিও সেগুলোর ওপরে উঠলে কোনো আঘাত লাগে না, কিন্তু অসাবধান থাকলে লোকেরা সেগুলোয় পিছলে পড়ে যেতে পারে। আকৃতি ও বাহ্যিক চেহারায় এই প্রস্তরগুলো খুবই সুন্দর হলেও, বাড়ি নিয়ে গেলে সেগুলো কোনো কাজেই লাগে না। সেগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিতেও তোমার মন চায় না, আবার সেগুলো রেখে দেওয়াও নিরর্থক—এ-ই হল ‘মসৃণ প্রস্তরখণ্ড’। এই সমস্ত আপাত উত্তম আচরণসম্পন্ন লোকজনকে আমার নিরুৎসাহী বলে মনে হয়। বাইরে থেকে তারা ভালো হওয়ার ভান করে, কিন্তু সত্যকে বিন্দুমাত্র স্বীকার করে না, তারা শ্রুতি-মধুর কথা বললেও, বাস্তবিক কোনো কিছু করে না। তারা মসৃণ প্রস্তরখণ্ড ছাড়া আর কিছুই না(বাক্য, খণ্ড ৬, সত্যের অন্বেষণের বিষয়ে, সত্যের অন্বেষণ কী? (৩))। আগে, সবসময় ভাবতাম, যারা সহজগম্য আর বন্ধুত্বপূর্ণ তারা ভালো মানুষ। কখনো ভাবিনি এসবের পিছে আছে শয়তানি ভ্রষ্ট স্বভাব আর ব্যক্তিগত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। ছোটবেলা থেকেই আমি সহজগম্য আর বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়ার চেষ্টা করছি, আর আমার বন্ধু ও পরিবারের সবাই তার জন্য আমার প্রশংসা করত, কিন্তু মনের গভীরে, আমি শুধু চাইতাম সকলের প্রশংসা পেতে। আমি সহজগম্য আর বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়ার ভান করতাম, ভ্রাতা-ভগিনীদের চোখে ধুলো দিতে। দেখলাম ঈশ্বর এই ধরনের ভালো ব্যবহারের মানুষদের বলেছেন “মসৃণ পাথর”। এই পাথরগুলো দেখতে সুন্দর, ওপরে দাঁড়ালে পায়ে ব্যথা লাগে না, কিন্তু সহজেই পা পিছলে যায়। এরা দেখতে ভালো, কিন্তু ব্যবহারিক কোনো উপযোগিতা নেই। বুঝতে পারলাম, আমি আসলে কে, যাকে দেখে সহজগম্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ মনে হয়, কিন্তু ভ্রাতা ও ভগিনীদের কোনো সাহায্যে আসে না। আমার হৃদয় প্রতারণা ও চালাকিতে ভরা। সবার প্রতি সদয় ছিলাম, কাউকে অসন্তুষ্ট করিনি। স্রেফ একটা “মসৃণ পাথর” ছিলাম, সবার মন যুগিয়ে দুই কুল রেখে চলা, এক চালাক প্রবঞ্চক। ঠিক যেমন ঈশ্বরের বাক্যে আছে, “যে সকল ব্যক্তিগণ মধ্যবর্তী অবস্থানে দৃঢ় থাকে, তারাই সবচেয়ে বেশি খল। তারা চেষ্টা করে যাতে কেউই ক্ষুব্ধ না হয়, তারা হল মানুষের মন জুগিয়ে চলা ব্যক্তি, তারা বিষয়-সকলের সাথে মানিয়ে নেয়, আর কেউই তাদের পরিষ্কারভাবে দেখতে পায় না। এহেন ব্যক্তি হল এক জীবন্ত শয়তান!(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র সত্যের অনুশীলনের মাধ্যমেই ভ্রষ্ট স্বভাবের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়া যেতে পারে)। আমি ভাবতাম ঈশ্বর এবং মানুষ সহজগম্য মানুষদের পছন্দ করেন, কিন্তু এখন জেনেছি আমার কাজকর্ম ঈশ্বরের বাক্য এবং সত্যের নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। আমি আমার প্রতারক স্বভাবই দেখাচ্ছিলাম। এমন মানুষেরা মর্যাদাহীন এবং, ঈশ্বর তাদের ঘৃণা করেন। জানতাম, নিজে অনুতপ্ত বা পরিবর্তিত না হলে, একদিন ঈশ্বর আমায় উদ্ঘাটন ও বহিষ্কার করবেন। আমি এইরকম মানুষ হতে চাইনি। তাই, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা ও অনুতাপ করলাম সাহায্য চাইলাম স্বভাব পরিবর্তনের জন্য, সত্যের অনুশীলনের শক্তি দেওয়ার জন্য, আর ঈশ্বর এবং আমার ভ্রাতা ও ভগিনীদের প্রতি আন্তরিক হৃদয় পাওয়ার জন্য।

একদিন, এক ভগিনী ঈশ্বরের বাক্যের দুটি অনুচ্ছেদ পাঠায়: “কারো কাজ ভালো না মন্দ কিনা, তা কোন মানদণ্ডের দ্বারা বিচার করা হয়? তা নির্ভর করে তাদের চিন্তাভাবনা, অভিব্যক্তি এবং কাজ সত্য পালনের এবং সত্যের বাস্তবিকতা যাপনের সাক্ষ্য বহন করে কিনা, তার উপর। যদি তোমার এই বাস্তবিকতা না থাকে বা তা যাপন না করো, তাহলে নিঃসন্দেহেই তুমি একজন মন্দ কর্ম সংঘটনকারী(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র ভ্রষ্ট স্বভাব পরিহার করলে তবেই স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জন করা যেতে পারে)। “নেতা ও কর্মীদের দায়িত্বসমূহ: ১. ঈশ্বরের বাক্য ভোজন, পান ও পানে এবং সেগুলি উপলব্ধিতে, এবং ঈশ্বরের বাক্যের বাস্তবিকতায় প্রবেশের প্রতি লোকেদের নেতৃত্ব দেওয়া। ২. প্রত্যেক ধরনের মানুষের অবস্থার সাথে পরিচিত হওয়া, এবং তারা তাদের জীবনের মধ্যে, জীবনে প্রবেশ সম্পর্কে যে বিভিন্ন ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হয়, সেগুলো সমাধান করা। ৩. প্রত্যেকটা দায়িত্ব যথাযথভাবে সম্পাদনের জন্য যে সত্য উপলব্ধি করা প্রয়োজন, সেই সত্যের নীতির বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করা। ৪. বিভিন্ন কাজের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য দায়ী কর্মীদের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত থাকা, এবং প্রয়োজন অনুসারে তাদের অবিলম্বে পুনরায় নিয়োগ করা বা প্রতিস্থাপন করা, যাতে অনুপযুক্ত লোক নিয়োগের ফলে সৃষ্ট ক্ষতি প্রতিরোধ বা হ্রাস করা যায়, এবং কাজের দক্ষতা এবং মসৃণ অগ্রগতি নিশ্চিত করা যায়। ৫. কাজের প্রতিটা প্রকল্পের সাম্প্রতিক অগ্রগতি এবং অবস্থার ধারণা ও উপলব্ধি বজায় রাখা এবং তৎপর হয়ে সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হওয়া, বিচ্যুতি ঠিক করা, এবং কাজের মসৃণ অগ্রগতি সুনিশ্চিত করার জন্য কাজে অনবধানজনিত ত্রুটির প্রতিকার করা(বাক্য, খণ্ড ৫, নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের দায়িত্বসমূহ)। ঈশ্বরের বাক্য পড়ার পর, আমি বুঝলাম, আমাদের মানবিকতা মূল্যায়নে ঈশ্বরের মানদণ্ড বাইরে আমরা কত ভালো কাজ করি অথবা কতজন আমাদের ভালো ভাবে, তা নয়। বরং, ঈশ্বরের প্রতি আমাদের আনুগত্য এবং চিন্তায় ও কাজে সত্যের অনুশীলনের সাক্ষ্য। কেবল তাদের মধ্যেই উচ্চ মানবিকতা আছে। আমি জোয়ানকে দায়িত্বে অবহেলা করতে দেখেছিলাম, এডনা ও অ্যানকে দেখেছিলাম ভ্রষ্ট স্বভাব নিয়ে পরস্পরকে উপেক্ষা করতে। এসবই গির্জার কাজকে বিঘ্নিত করছিল। গির্জার নেতা হিসেবে, আমার উচিত ছিল আলোচনার মাধ্যমে তাদের স্বভাব ধরিয়ে দেয়া, বদলে আমি ভালো ভালো কথা বলে শান্তিস্থাপক হতে চেয়েছিলাম। এমনকি গির্জার কাজের ক্ষতি করেও নিজের ভাবমূর্তি ঠিক রেখেছিলাম। আমার মধ্যে সত্যের অনুশীলনের সাক্ষ্য তো ছিলই না, গির্জার নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালনেও ব্যর্থ ছিলাম ভ্রাতা ও ভগিনীদের জীবনে প্রবেশে ন্যূনতম সাহায্যও করিনি। ভাবতাম ভ্রাতা ও ভগিনীদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারলে তাদের কাছে সহজগম্য আর বন্ধুত্বপূর্ণ হতে পারলে, আমি ভালো নেতা হবো। এখন বুঝতে পারি, এই ভাবনাটা ভুল। সত্যিকারের ভালো নেতা সমস্যা সমাধানে সত্য আলোচনা করতে পারে, নীতি অনুসারে কাজ করে, অন্যের অসন্তুষ্টির ভয় পায় না, ভ্রাতা ও ভগিনীদের জীবনের দায়িত্ব নেয়। ভ্রাতা ও ভগিনীদের সমস্যা দেখে, সেগুলো ধরিয়ে দিয়ে তাদের সত্যের বাস্তবতায় প্রবেশে সাহায্য করার বদলে, আমি নিজের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে চালাকি করেছি, তাদের স্বস্তি আর অনুপ্রেরণা দিয়েছি, কিন্তু প্রকৃত সমস্যার সমাধান করিনি। আমি কি ভ্রাতা ও ভগিনীদের সঙ্গে প্রতারণা করিনি? আমি বুঝতে পারি যে ভালো নেতা সম্পর্কে আমার পুরনো ধারণা ভুল ছিল, আর তা ঈশ্বরের প্রয়োজন অনুযায়ী একেবারেই ছিল না। আমার সব কথা এবং কাজই ঈশ্বরের বাক্যের নীতি ভিত্তিক হওয়া উচিত। সত্যের অনুশীলন করছি না মানে ঈশ্বর বিরুদ্ধতার রাস্তায় চলছি। ঈশ্বর সেসব মানুষদের চান, যারা তাঁর বাক্য ও প্রয়োজন অনুসারে কথা বলে ও কাজ করে, তাদের নয় যারা সাবেকি গুণাবলি ধরে রেখে, প্রশংসা চায়, কাজে অসততা করে, সত্যের অনুশীলন করে না। এই কথা ভেবে, বুঝলাম আমি যেভাবে সকলের সঙ্গে মিশি, তা বদলাতে হবে। গির্জার নেতা হিসেবে, আমি নিজের ইচ্ছামত দায়িত্ব পালন করতে পারি না। আমাকে ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে হবে ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে ভ্রাতা ও ভগিনীদের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে হবে, যাতে তারা সত্য ও নীতি অনুসারে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে। এটাই আমার দায়িত্ব ছিল। ঈশ্বরের বাক্যে, অনুশীলনের পথ পেলাম। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, কলুষমুক্ত হতে সত্যের অনুশীলনে আমাকে সাহায্য করার জন্য।

পরে, ঈশ্বরের বাক্যে পড়েছি। “ঈশ্বরের বাক্যকে নিজেদের ভিত্তি, এবং সত্যকে নিজেদের মানদণ্ড হিসাবে অর্জন করার জন্যই মানুষের সবচেয়ে বেশি সচেষ্ট হওয়া উচিত; কেবলমাত্র তখনই তারা আলোতে স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবনযাপনে সক্ষম হতে পারে। আলোতে বাস করতে চাইলে, তোমার সত্য অনুসারে কাজ করা উচিত; সৎ হতে চাইলে, তোমার সৎ বাক্য বলা এবং সৎ কর্ম করা উচিত। শুধুমাত্র সত্যের নীতি সহকারেই তোমার আচরণের কোনো ভিত্তি থাকতে পারে; যখন মানুষ সত্যের নীতিগুলি হারিয়ে ফেলে শুধুমাত্র সদাচরণের প্রতি মনোনিবেশ করে, তখন অনিবার্যভাবেই জালিয়াতি এবং ভানের উৎপত্তি হয়। মানুষের আচরণে যদি কোনো নীতি না থাকে, তাহলে তাদের আচরণ যতই ভালো হোক না কেন, তারা ভণ্ড; কিছুকাল তারা অন্যদের প্রতারণা করতে পারলেও, কখনোই তারা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারবে না। কেবলমাত্র যখন মানুষ ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে কাজ করে, আচরণ করে, তখনই তাদের প্রকৃত ভিত্তি থাকে। যদি তারা ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে আচরণ না করে, কেবলমাত্র সদাচরণের ছলনা করার প্রতি মনোনিবেশ করে, তাহলে ফলাফল হিসাবে তারা কি ভালো মানুষ হয়ে উঠতে পারে? একেবারেই পারে না। সদাচরণ মানুষের সারমর্মকে বদলাতে পারে না। কেবলমাত্র সত্য এবং ঈশ্বরের বাক্যই মানুষের স্বভাব, চিন্তাভাবনা, মতামত পরিবর্তনে সক্ষম এবং তাদের জীবন হয়ে উঠতে সক্ষম। … মাঝে মাঝে অন্যদের ঘাটতি, দোষ, ত্রুটি সরাসরি তুলে ধরা এবং সেগুলোর সমালোচনা করার প্রয়োজন হয়। এটা মানুষের পক্ষে খুবই উপকারী। এটা তাদের পক্ষে প্রকৃত সহায়ক এবং গঠনমূলক হয়, তাই নয় কি?(বাক্য, খণ্ড ৬, সত্যের অন্বেষণের বিষয়ে, সত্যের অন্বেষণ কী? (৩))। ঈশ্বরের বাক্য আমাকে স্বভাবগত পরিবর্তনের পথ দেখালো, সেটা হলো, ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে কাজ করা, সত্যকে মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করা, বাহ্যিক ভালো কাজের মোড়কে নিজেকে না লুকানো, সত্যের অনুশীলন করা, সৎ মানুষ হওয়া। যখন দেখব সত্যের নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু ঘটছে, অথবা ভ্রাতা ও ভগিনীরা তাদের ভ্রষ্ট স্বভাব থেকে দায়িত্ব পালন করছে, তাদের স্পঙ্গে সৎ হতে হবে, নীতি অনুসারে ব্যবহার করতে হবে, আলোচনা করে ভুল ধরিয়ে দিতে হবে, বা মোকাবিলা করতে হবে। একমাত্র এইভাবেই ভ্রাতা ও ভগিনীরা তাদের দায়িত্ব পালনে বিচ্যুতির কথা বুঝতে পারবে আর সময়ের সঙ্গে ঠিক হবে। এটা সত্যিই ভ্রাতা ও ভগিনীদের সাহায্য করছে, আর ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করছে। এটাই মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক হওয়া উচিত। কীভাবে সত্যের অনুশীলন করা উচিত বোঝার পরে, নিজেকে বলি, “অন্যের ভুল নিয়ে বলতে ভয় পেয়ো না, সবসময় ভালো কথা বোলো না। ঈশ্বর ভান ও প্রতারণাকারীদের ঘৃণা করেন। আমার কথা এবং কাজ ঈশ্বরের বাক্য এবং সত্যের নীতি অনুসারে হতে হবে।” পরে, যখন জোয়ান আবার অলস হয়ে পড়ল, তাকে তা ধরিয়ে দিতে চাইলাম, কিন্তু সেটা কাজে পরিণত করাটা, খুবই কঠিন মনে হলো। তখনো চিন্তা হচ্ছিল তার কাছে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। আমি ঈশ্বরের বাক্যের কথা ভাবলাম বুঝলাম আমি তখনো সহজগম্য আর বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা ভাবছিলাম আর সেভাবেই কাজ করছিলাম। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম সত্য অনুশীলনের পথ দেখাতে। তারপর, জোয়ানের কাছে গিয়ে বললাম, “ভগিনী, তুমি বুঝতে পারছ কিনা জানি না কিন্তু তুমি দায়িত্বে অবহেলা করছ বলে, অনেক নবাগত সমাবেশে আসে না। এভাবে দায়িত্ব পালন নবাগতদের সিঞ্চনে অনেক দেরি করিয়ে দিচ্ছে।…” তার সমস্যা দেখিয়ে দিয়ে, আমার অভিজ্ঞতার কথাও তাকে বললাম। ভেবেছিলাম সে রেগে আমাকে উপেক্ষা করবে, কিন্তু যা ঘটল তা আমাকে বিস্মিত করল। সে রাগ তো করেইনি, সঙ্গে নিজের সম্পর্কে চিন্তা করে বলল, “এটাই আমার সমস্যা, আমাকে এটা বদলাতে হবে।” এরপর ভগিনী জোয়ান আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে লাগল, আর যে নবাগতদের সে সিঞ্চন করত তারা নিয়মিত সমাবেশে আসতে লাগল। আমার দিকনির্দেশ ও সাহায্যের জন্য আমাদের সম্পর্ক ভাঙল না, আরো ভালো হলো। পরে, যখন আবার তার ত্রুটি দেখি, সরাসরি তাকে দেখিয়ে দিই, সে তা স্বীকার করে, নিজেকে জানতে পারে। এখন, নিজের দায়িত্বের প্রতি তার আচরণ অনেক পাল্টে গেছে, পরে পদোন্নতি পেয়ে গির্জার নেত্রী হয়েছে। আমি এডনা এবং অ্যানের সমস্যাও দেখিয়ে দিই। এডনা তার ঔদ্ধত্য বুঝতে পারে আর বলে সে যেভাবে সকলের সঙ্গে কথা বলে, তা বদলাতে হবে। অ্যানও তার ভ্রষ্ট স্বভাব বুঝতে পারে, আর বলে সে নিজেকে বদলাতে ইচ্ছুক। এতে খুব খুশি হই। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ! কেবল ঈশ্বরের বাক্যই মানুষকে বদলাতে পারে!

এইসব অভিজ্ঞতায় আমি দেখলাম প্রকৃত ভালো মানুষ সে নয় যার বাইরের ব্যবহার দেখে সবাই ভালো ভাবে। এর মানে ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে কাজ করা, সত্যের অনুশীলন এবং সৎ মানুষ হওয়া। এইরকম মানুষকেই ঈশ্বর ভালোবাসেন। আরো দেখলাম অন্যের কোনো সমস্যা দেখলে, দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সাহায্য করতে হবে, সমস্যা ধরিয়ে দিয়ে প্রয়োজনে তাদের মোকাবিলা করতে হবে। একমাত্র এইভাবেই তারা নিজেদের ভ্রষ্টাচার ও ত্রুটি বুঝতে পারবে এবং সত্যের সন্ধান ও নীতি অনুসারে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবে। এটাই তাদের সাহায্য করার শ্রেষ্ঠ উপায়। এখন, আমি আর আমার ভ্রাতা ও ভগিনীদের সমস্যা ধরিয়ে দিতে ভয় পাই না। তারা আমার সম্পর্কে যাই ভাবুক না কেন, আমি সৎ মানুষ হওয়ার অনুশীলন করতে চাই, নীতি অনুসরণ এবং গির্জার কাজকে সুরক্ষিত করতে চাই। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

ঈশ্বর নির্ভরতাই পরম জ্ঞা

২০১১ সালের শরতকালে, ফাং মিং নামে একজন গ্রামবাসীর সাথে দেখা হল। সে মানবিক আর খুব দয়ালু, ২০বছরেরও বেশি সময় ধরে তার প্রভুতে বিশ্বাস, সে...

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন