ভালো মানুষ হওয়া বলতে যা বোঝায় তার উপলব্ধি

18-02-2023

ছোটবেলা থেকেই আমার মা-বাবা আমাকে শিখিয়েছেন অন্যের প্রতি ন্যায়সঙ্গত, যুক্তিসঙ্গত ও দয়ালু হতে, অন্যের সমস্যাগুলো বুঝতে এবং তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তর্ক না করতে। তারা বলেছিলেন এভাবেই ভালো মানুষ হওয়া যায় এবং মানুষের কাছ থেকে শ্রদ্ধা ও ভক্তি আদায় করে নেওয়া যায়। আমিও এমন হয়ে ওঠাকে একটি ভালো পন্থা হিসেবে ভেবে নিয়েছিলাম, এবং আমি প্রায়ই নিজেকে সহানুভূতিশীল ও দয়ালু হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিতাম। আমার পরিবার ও অন্য গ্রামবাসীদের সাথে আমি কখনও সংঘাতে লিপ্ত হইনি, এবং অন্যরা আমাকে কিভাবে দেখছে সে ব্যাপারে আমি সত্যিই সচেতন ছিলাম। আমার সাথী গ্রামবাসীরা প্রায়ই আমার প্রসংশা করত, এই বলে যে আমার মধ্যে মানবতা ও উপলব্ধির ক্ষমতা আছে, এবং তারা আমার প্রতি অন্যায় করলেও আমি কারো সাথে ঝগড়া করিনি। এ ধরনের প্রসংশা আমাকে সত্যিই সুখী করত। আমি ভাবতাম একজন ব্যক্তি হিসেবে আমার এমন বিনয়ী হওয়াই উচিত, এমনকি যখন কেউ ভুলের মধ্যে থাকে তখনও আমার উচিৎ বোঝার চেষ্টা করা। আমি নিশ্চিত ছিলাম যে এগুলোই ভালো মানুষ হওয়ার মানদণ্ড। বিশ্বাসী হওয়ার পরও আমি এভাবে চলতে লাগলাম।

তারপর ২০২১ সালের নভেম্বরে আমি গির্জার একজন যাজক হিসেবে নির্বাচিত হলাম এবং অল্প ক’জন ভ্রাতা ও ভগিনীর সাথে সুসমাচার প্রচার করতে শুরু করলাম। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন ভ্রাতা কেভিন, যিনি এসেছিলেন আমাদেরই গ্রাম থেকে। তাঁর ক্ষমতা ভালো ছিল এবং সুসমাচার প্রচার করার সময় বিচার-বিবেচনা বোধ থাকত সত্যিই পরিষ্কার। যাঁরা উপলব্ধির প্রকৃত পথ খুঁজতেন তাঁদেরকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে তিনি উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে পারতেন। কিন্তু আমি আবিষ্কার করলাম যে তাঁর মধ্যে কিছুটা দাম্ভিকতা আছে এবং তিনি অন্যদের পরামর্শ গ্রহণ করতে পছন্দ করতেন না। অনেক সময়ই তিনি তাঁর কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি অনুসরণ করতেন না এবং তিনি তাঁর সুসমাচারে ঈশ্বরকে তুলে ধরতেন না এবং তাঁর অস্তিত্বের পক্ষে সাক্ষ্য দিতেন না, বরং তিনি কত জনকে ধর্মান্তরিত করেছেন সে বিষয়ে প্রচুর কথা বলতেন। সহকর্মী ভ্রাতা ও ভগিনীরা তাঁর ভাষণ শুনতে পছন্দ করতেন এবং তাঁর প্রশংসা করতেন। সঠিক পথ খুঁজছেন এমন একজন একদিন তাঁর প্রশংসা করলেন তাঁর ক্ষমতা ও ভাল বক্তৃতার জন্য। আমি খেয়াল করলাম, তিনি নিজেকে কিছুটা মহিমান্বিত করলেন ও দম্ভ দেখালেন, তাঁর সুমাচার প্রচারের মধ্যে তিনি মনযোগী ছিলেন না ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজের সাক্ষ্যর ব্যাপারে কিংবা মানুষের ধর্মীয় ধারণাগুলোর সমাধান দেওয়ার ব্যাপারেও। আমি বিষয়টি কেভিন-কে বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু একটু ভেবে দেখার পর আমি একটু অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি কেভিন-কে বোঝাতে চেয়েছিলাম যে আমি একজন দয়ালু ও বিচার-বিবেচনা বোধসম্পন্ন ব্যক্তি যে কিনা চোখের সামনে পড়া প্রতিটি ক্ষুদ্র সমস্যায় মনোযোগ দেয় না। আমি ভেবেছিলাম আমার উচিৎ তাঁকে আরও বেশি উৎসাহ দেওয়া ও সাহায্য করা। পরবর্তীতে, নেত্রী আমাদের দলের মধ্যে সুমাচার প্রচারের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নিয়ম-নীতি প্রায়ই পাঠাতেন এবং আমি প্রায়ই কেভিন-এর আচরণের সাথে সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে পরোক্ষভাবে আলোচনা করতাম। আমি আশা করছিলাম যে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর সমস্যাগুলো দেখতে পাবেন। আমি আবারও তাঁর সমস্যাগুলোকে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম কিন্তু তারপর আমি ভাবলাম, যেহেতু তিনি কিছুটা দাম্ভিক ধরনের মানুষ, হয়ত আমার পরামর্শ গ্রহণ করবেন না। আমি ভয় পেয়েছিলাম কারণ তিনি আমাকে অবিবেচক ও নির্দয় ভাবতে পারেন, এবং আমার সম্পর্কে এক ধরনের বাজে ধারণা তাঁর মধ্যে তৈরি হতে পারে। আমাদের সম্পর্কটি যদি অচলাবস্থায় গিয়ে ঠেকত এবং আমরা যদি একসাথে কাজ করতে না পারতাম তাহলে একজন ভালো মানুষ হিসেবে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট হত। এই চিন্তা থেকেই আমি আমার কথাগুলো চেপে গেলাম। সেই সময়টাতে আমার এক রকম খারাপ লাগতে থাকে, অতএব প্রার্থনায় আমি ঈশ্বরের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর কাছে সত্য অনুশীলনের শক্তি চাইলাম। তারপর, কেভিন-সহ আরও ক’জন ভ্রাতা ও ভগিনীর সাথে আমি একটি গ্রামে গিয়েছিলাম সুসমাচার প্রচারের জন্য। আমি খেয়াল করলাম, কেভিন তখনও তাঁর আলোচনায় দাম্ভিকতা প্রকাশ করছেন, কীভাবে তিনি অর্থ-কড়ি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে ঈশ্বরের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন সেই কথা বলছিলেন, কিন্তু সত্য আলোচনায় তাঁর মন ছিল না। বাড়ি ফেরার সময় আমি সাহস সঞ্চয় করে তাঁকে বললাম, “আপনি আপনার বক্তব্য ও সাক্ষ্যে নীতির মধ্যে ঢুকছেন না। সম্ভাবনাময় সুসমাচার শ্রোতাদের সাথে সত্য আলোচনার দিকে, তাদেরকে ঈশ্বরের সামনে দাঁড় করানোর দিকে আপনার মনযোগ দেওয়া উচিৎ—” আমি কথা শেষ করার আগেই তিনি বলে উঠলেন, “আমার আলোচনায় কোন ভুল নেই। আপনি বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত ভাবছেন।” আমি আরও কিছু বললে তা তাঁর আত্মাভিমানে লাগতে পারে এবং আমাদের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ভেবে আমি ভয় পেলাম। তিনি আমাকে খারাপভাবে দেখতে পারেন এবং এতে আমার ইতিবাচক ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভেবে আমি উদ্বিগ্ন হলাম। তাই আমি কিছু বললাম না। আমার মনে হচ্ছিল সেটাই যথেষ্ট ছিল এবং তিনি নিজেই ধীরে ধীরে তা দেখতে পাবেন। পরবর্তীতে আমি বুঝতে পারি যে আমরা সবসময় ব্যস্ত থাকলেও সুসমাচার প্রচারের কাজে ভালো ফল পাচ্ছিলাম না। সেই গ্রামের কিছু লোক আগ্রহী হয়েছিল। কেভিন-এর আলোচনা কয়েকবার শোনার পরও তারা কিছু বিষয় বুঝতে পারছিল না। এছাড়াও তারা বিভিন্ন গুজব ও কল্পিত ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল, এবং বিষয়টি আর বেশি খতিয়ে দেখতে চাইছিল না। কিছু মানুষ সত্যিই কেভিন-কে খুঁজত এবং কেবল তাঁর আলোচনাই শুনতে চাইত, কিন্তু অন্য কারো আলোচনা শুনতে চাইত না। এসব দেখে আমার সত্যিই অস্বস্তি হত, এবং আমি অপরাধ বোধে ভুগতাম। কেভিন এই বিষয়ের সাথে গভীরভাবে জড়িত ছিলেন। আমি যদি আরো আগেই বিষয়গুলো উত্থাপন করতাম তাহলে তিনি হয়তো বুঝতে পারতেন এবং নিজেকে বদলে ফেলতেন, অতঃপর সুসমাচার সম্পর্কিত আমাদের কাজগুলোর ব্যাপারে আপোস করতে হত না। কিন্তু তারপর যখন আমি সত্যিই বিষয়টি উত্থাপন করতে চেয়েছিলাম, তখন এতে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হবে ভেবে আবারও আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছিল এবং সত্যিই আমি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছিলাম। আমি ভেবে দেখলাম নেত্রীর সাথে এ নিয়ে কথা বলা যেতে পারে এবং ওনার সাথে কেভিন-এর আলোচনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে, তাহলে আমাদের কর্তব্যের মধ্যে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতায় প্রভাব পড়ত না এবং আমরা একসাথে কাজ চালিয়ে নিতে পারতাম। অতএব, কেভিন-এর বিষয়ে আমি দলপতিকে বললাম। তিনি ঈশ্বরের কিছু প্রাসঙ্গিক বাণী খুঁজলেন এবং আমাদের সেগুলো নিয়ে একত্রে আলোচনা করতে বললেন, এবং মনে হল যেন কেভিন-এর মধ্যে সামান্য পরিবর্তন এসেছে। তাই, আমি বিষয়টি নিয়ে আর মাথা ঘামালাম না।

একদিন আমি বিষয়টি আরেকজন ভগিনীকে বললাম, যিনি আমাকে বললেন যে আমি সবসময় অন্যদের সাথে আমার সম্পর্ক রক্ষা করে চলতে চাই, এবং এটি মানুষকে খুশি করে চলার প্রবণতারই ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু প্রথমে আমি বিষয়টিকে সেভাবে দেখিনি। আমি ভেবেছিলাম এটা হতেই পারে না যে আমি মানুষকে খুশি করে চলি, কারণ তারা চালাক এবং আমি কখনও চালাকি করিনি, তাই আমি কি করে তাদের মত হব? সে সময় আমি তাঁর সমালোচনা গ্রহণ করতে চাইনি, কিন্তু আমি এও জানতাম যে তিনি যা বলেছিলেন তার মধ্যে আমার জন্য শিক্ষণীয় বিষয় ছিল। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাকে দিকনির্দেশনা দিয়ে নিজেকে চিনতে সাহায্য করেন। পরে আমি ঈশ্বরের বানীতে এই বিষয় সম্পর্কে পড়ি: “মানুষের আচরণ এবং অন্যান্যদের প্রতি ব্যবহার অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্যের ভিত্তিতে সম্পাদন করতে হবে; এটাই মানুষের আচরণের সবচেয়ে সাধারণ নীতি। মনুষ্যোচিত আচরণের নীতি না বুঝলে মানুষ কীভাবে সত্য অনুশীলনে সক্ষম হতে পারে? সত্যের অনুশীলনের অর্থ ফাঁকা বুলি আওড়ানো বা নির্ধারিত বাক্যাংশের আবৃত্তি করা নয়। কেউ জীবনে যা কিছুরই সম্মুখীন হোক না কেন, তার মধ্যে যদি মনুষ্যোচিত আচরণের নীতি জড়িত থাকে, ঘটনায় অথবা নিজ দায়িত্ব পালনের বিষয়ে দৃষ্টিকোণ অন্তর্ভুক্ত থাকে, তাহলে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে তাদের সত্যের অন্বেষণ করা উচিত, ঈশ্বরের বাক্যের ভিত্তি ও নীতি অনুসন্ধান করা উচিত এবং তারপরে অনুশীলনের পথের সন্ধান করা উচিত; যারা এইভাবে অনুশীলনে সক্ষম, তারাই সত্য অন্বেষণ করতে পারে। কেউ যতই বড় সমস্যার সম্মুখীন হোক না কেন, এই উপায়ে সত্য অন্বেষণে সক্ষম হওয়ার অর্থ হল পিতরের পথে হাঁটা এবং সত্য অন্বেষণের পথে চলা। উদাহরণস্বরূপ, অন্যান্যদের সাথে বার্তালাপের সময় কোন নীতি অনুসরণ করা উচিত? তোমার আসল দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, তোমার কাউকে ক্ষুব্ধ করা উচিত নয় বরং শান্তি বজায় রাখা উচিত, কারোর সুনাম নষ্ট করা থেকে বিরত থাকা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে সকলে মিলেমিশে থাকতে পারে। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে আবদ্ধ থাকলে, তুমি যখন কাউকে খারাপ কিছু করতে দেখো, ভুল করতে দেখো বা নীতিবিরুদ্ধ কোনো কাজ করতে দেখো, তখন তা অন্যের সামনে তুলে ধরার বদলে তা সহ্য করতেই বেশি পছন্দ করো। নিজের দৃষ্টিভঙ্গিতে আবদ্ধ থাকার পরিণতি কাউকে ক্ষুব্ধ করার থেকেও খারাপ। তুমি যার সাথেই সহযোগী থাকো না কেন, বহু বছরের মেলামেশার ফলে মৌখিক ভাবনাচিন্তা, আবেগ বা অনুভূতির দ্বারা যতই বাধাগ্রস্ত হও না কেন, তুমি সেই ব্যক্তিকে খুশী করার জন্য সর্বদা ভালো কথাই বলবে। আবার অসন্তোষজনক বিষয়গুলির ক্ষেত্রেও তুমি সহনশীলতা দেখাও; তুমি শুধুমাত্র আড়ালে কিছুটা ক্ষোভ উদ্গীরণ করো, কিছু কুৎসা রটাও, কিন্তু তার সামনে ঝঞ্ঝাট এড়িয়ে যাও, তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখো। এই ধরনের আচরণের বিষয়ে তোমার ভাবনা চিন্তা কী? এটা কি ভালো-মানুষ সেজে থাকা নয়? এই পথ কি পিচ্ছিল নয়? এতে আচরণের নীতি লঙ্ঘিত হয়। সুতরাং, এহেন আচরণ কি নিম্নরুচির নয়? এহেন আচরণকারীগণ সৎ-ব্যক্তি নয়, উন্নত চরিত্রেরও নয়। তুমি যতই যন্ত্রণা ভোগ করো না কেন, যতই মূল্য পরিশোধ করো না কেন, তোমার নিজস্ব আচরণ যদি নীতিবর্জিত হয়, তাহলে তুমি হলে একজন ব্যর্থ লোক এবং তুমি ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করতে পারবে না, তাঁর স্মরণেও থাকবে না, আবার তাঁকে সন্তুষ্টও করতে পারবে না(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, উত্তমরূপে দায়িত্ব পালন করতে হলে, ন্যূনতমভাবে যা প্রয়োজন তা হল বিবেক এবং যুক্তিবোধ)। ঈশ্বরের বাণীর ভিত্তিতে আমি নিজেকে নিয়ে ভেবেছি। আমার মনে হয়েছিল আমি মানুষকে খুশি করে চলি না, আমি ঠিক কেমন আচরণ করি? সে সময় আমি দেখেছি যে কেভিন তাঁর সুসমাচারে খুব বেশি করে দাম্ভিকতা প্রকাশ করেছেন এবং আমার উচিৎ ছিল বিষয়টি দেখিয়ে দেওয়া, তাঁকে সাহায্য করা যাতে তিনি নিজেকে চিনতে পারেন এবং নীতি অনুসারে তাঁর কর্তব্য পালন করতে পারেন, কিন্তু সরাসরি কিছু বললে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হবে ভেবে আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম। তাই আমি সবসময় তাঁর অনুভূতির প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলাম এবং সরাসরি কিছু বলতে সাহস করিনি। এমনকি আমি তাঁকে আরও সাহস যুগিয়েছি যাতে তিনি মনে করেন যে আমি একজন ভালো মানুষ এবং আমার সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমি জানতাম যে ভ্রাতা ও ভগিনীদের সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে কর্তব্য পালনের সময়, কোনও সমস্যা দেখা দিলে সেগুলো ধরিয়ে দেওয়া উচিৎ, অন্যদের দুর্বলতাগুলো শুধরে নেওয়া উচিৎ এবং গির্জার কাজকে সকলে মিলে চালিয়ে নেওয়া দরকার। কিন্তু আমি জেনেশুনে ভুল কাজ করছিলাম এবং সত্যের অনুশীলন করছিলাম না। ফলে কেভিন নিজের ভুলগুলো বুঝতে পারেননি এবং সুসমাচার প্রচার করার সময় সত্য আলোচনার চাইতে বরং দাম্ভিকতা প্রকাশ করতে লাগলেন। তার অর্থ হল সত্যের পথ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে মানুষের ধর্মীয় ধারণাগুলোর সমাধান হয়নি এবং কিছু মানুষ বিরক্ত বোধ করতে লাগল এবং সমাবেশে আসা বন্ধ করে দিল। আমি আমাদের কর্মের ফল দেখতে পাচ্ছিলাম এবং এক ধরনের অপরাধ বোধে ভুগছিলাম, কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছিলাম যদি আমি সরাসরি কিছু বলি তাতে তিনি আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন এবং আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। তাই আমি কৌশলে গির্জার একজন নেত্রীকে তাঁর সাথে আলাপ-আলোচনায় বসালাম যাতে আমাকে তাঁর বিরোধীতা করতে না হয়। আমি দেখতে পেয়েছিলাম যে সবসময় আমি অন্যের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে চলার এবং দায়িত্ব পালনের সময় তাদেরকে প্রশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা করেছি, এবং গির্জার স্বার্থ আমি মোটেও দেখছিলাম না এবং কোনও ন্যায়পরায়ণতার বোধই আমার মধ্যে ছিল না, এবং আমি একটুও নিয়মাবদ্ধ ছিলাম না। আমি এমন কেউ ছিলাম না যে কিনা সামান্যতম সত্যের অনুশীলন করে। মানুষকে খুশি করে চলা কারুর আচরণ ঠিক এমনটাই হয়, তাই না? তারপর আমি ঈশ্বরের বাণী থেকে একটি অংশ পড়লাম যাতে খ্রীষ্টবিরোধীদের স্বরূপ উন্মোচন করা হয়েছে। “বাহ্যিকভাবে, খ্রীষ্টবিরোধীদের কথাগুলিকে সবিশেষরূপে দয়াময়, সংস্কৃতিময় এবং বিশিষ্ট বলে মনে হয়। নীতি লঙ্ঘনকারী, গির্জার কাজে হস্তক্ষেপকারী এবং অনুপ্রবেশকারী কোনো ব্যক্তি, যাকে অনাবৃত অথবা সমালোচিত করা হয় নি, তা সে যে-ই হোক না কেন, খ্রীষ্টবিরোধীরা তাদের বিষয়ে ভ্রুক্ষেপমাত্র করে না, এর মাধ্যমে তারা মানুষের কাছে নিজেদের সকল বিষয়ে উদার হিসাবে জাহির করে। মানুষের প্রতিটি দুর্নীতি ও মন্দ কর্মকে তারা কল্যাণ ও সহিষ্ণুতা সহকারে দেখে। তারা রাগান্বিত হয় না, বা ক্রোধে অন্ধ হয় না, লোকেরা কিছু ভুল করলে ও ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করলে তারা রুষ্ট হয় না, বা তাদের দোষারোপও করে না। যে-ই মন্দ কাজ করুক এবং গির্জার কাজে ব্যাঘাত ঘটাক না কেন, তারা সেই বিষয়ে ভ্রুক্ষেপমাত্র করে না, যেন এর সাথে তাদের কোনো সম্পর্কই নেই, এবং এই সকল কারণবশতঃ, তারা কখনোই মানুষের বিরক্তির উদ্রেক ঘটায় না। খ্রীষ্টবিরোধীরা কী নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত? তাদের চিন্তার বিষয় হল—কতজন লোক তাদের সম্মানের চোখে দেখছে, যন্ত্রণাভোগকালে কতজন তাদের দেখছে, এবং তা করার জন্য তাদের তারিফ করছে। খ্রীষ্টবিরোধীদের মতে, নিষ্ফল যন্ত্রণাভোগ কখনোই উচিত নয়; তারা যতই কষ্টকর সময় অতিবাহিত করুক, যতই মূল্য চোকাক, যতই ভালো কাজ করুক না কেন, অন্যদের প্রতি যতই যত্নশীল, সহানুভূতিশীল এবং প্রেমপূর্ণ হোক না কেন, সেগুলি সবই অন্যদের সামনেই করতে হবে, এগুলি যত বেশি সম্ভব মানুষের চোখে পড়া উচিত। এবং এহেন আচরণের পিছনে তাদের উদ্দেশ্য কী? মানুষের হৃদয় জিতে নেওয়া, তাদের কার্যকলাপ, আচরণ এবং চরিত্রের বিষয়ে আরও বেশি সংখ্যায় লোকজনকে মুগ্ধ করে তোলা, ও তাদের থেকে স্বীকৃতি আদায় করা(বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, নবম পরিচ্ছেদ: কেবলমাত্র নিজেদেরকে বিশিষ্ট ভাবে তুলে ধরতে এবং নিজেদের স্বার্থ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে পরিতুষ্ট করতেই তারা তাদের কর্তব্য করে; তারা কখনোই ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে না, এবং ব্যক্তিগত গৌরবের বিনিময়ে এমনকি সেই স্বার্থ বিক্রয় অবধি করে দেয় (দশম অংশ))। ইশ্বরের সেই বাণী পড়ার পর আমি এতটাই অপরাধ বোধে ভুগতে লাগলাম, যেন ঈশ্বর স্বয়ং আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার শয়তানোচিত স্বভাব উন্মোচন করছেন। আমি ভাবলাম আমি সবসময় একজন সহানুভূতিশীল দয়ালু ব্যক্তি হতে চেয়েছি কারণ আমার মনে হয়েছে যে এমনটা করলেই অপরের কাছ থেকে সম্মান ও প্রশংসা পাওয়া যাবে, এবং মানুষ আমাকে পছন্দ করবে। অন্যান্য ভ্রাতা ও ভগিনীদের সাথে দায়িত্ব পালনের সময়ও আমি এমনটা করতাম। কেভিন-এর বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি খোলাখুলি কিছু আমি বলতাম না, আমার কারণে তাঁর সুনাম ক্ষুন্ন হতে পারে এবং তারপর আমাদের সম্পর্ক খারাপ হতে পারে ভেবে আমি ভয় পেতাম। প্রকৃতপক্ষে আমি যা যা করেছিলাম তার সবই নিজের সুনাম ও মর্যাদা রক্ষার জন্য। নিজের আসল রূপ লুকিয়ে রেখে নিজেকে ভাল হিসেবে দেখানোর জন্য, আনুকূল্য লাভের জন্য আমি অগভীর দয়াশীলতাকে ব্যবহার করছিলাম যাতে মানুষ ভাবে আমি স্নেহশীল, ধৈর্যশীল ও সহনশীল, আমি একজন ভাল, দয়াশীল ব্যক্তি। কিন্তু আমি গুরুত্ব দিয়ে ভেবেই দেখিনি গির্জার কাজের ক্ষতি হবে কিনা কিংবা ভ্রাতা ও ভগিনীগণের জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা। তারপরেই কেবল আমি দেখতে পেলাম কতটা ছলনাময়ী ও ধূর্ত ছিলাম আমি। আমাকে দেখে মনে হত যেন আমি কখনও কারুর ক্ষতি করিনি, যেন আমি একজন ভাল মানুষ, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, আমার সমস্ত কর্মের পেছনে ছিল হীন উদ্দেশ্য। আমি লোকজনকে ঠকাচ্ছিলাম এবং ঈশ্বরের সাথে প্রতারণা করছিলাম। আমি দেখতে পেলাম একজন খ্রীষ্টবিরোধীর স্বভাব যেমন হয় আমার স্বভাবও তেমন, গির্জার কাজের ক্ষতি করে আমি আমার নিজের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা রক্ষা করছিলাম, এবং সেই পথে থেকে যাওয়াটা অবিশ্বাস্য রকমের বিপজ্জনক হত। আমি ইশ্বরের কাছ থেকে ধীরে ধীরে আরও দূরে সরে যেতে পারতাম এবং শেষ পর্যন্ত তিনি আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারতেন। বিষয়টি উপলব্ধি করার পর আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হতে লাগল, এবং আমি বেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়লাম। আমি প্রার্থনা করলাম, “ইশ্বর, আমি সবসময় নিজের আসল রূপ লুকিয়ে রেখে নিজেকে ভাল হিসেবে দেখিয়েছি, নিজের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করার দিকে মন দিয়েছি। আমি এই পথে থাকতে চাই না। অনুগ্রহ করে আমাকে পথ দেখান যাতে আমি আমার অসৎ স্বভাবকে ত্যাগ করতে পারি।”

এরপর আমি ঈশ্বরের আরও বাণী পড়লাম। “মানুষ অপর মানুষকে বিচার করে তাদের আচরণের মানদণ্ডে; যাদের আচরণ ভালো তারা ধার্মিক, আর যাদের আচরণ নিকৃষ্ট তারা দুষ্ট। ঈশ্বর যে মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে মানুষকে বিচার করেন তা হল, মনুষ্যগণ তাদের সারমর্ম তাঁর কাছে সমর্পণ করেছে কি না; যে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করে সে ধার্মিক ব্যক্তি, এবং যে তা করে না সে একজন শত্রু এবং দুষ্ট ব্যক্তি, তা সেই ব্যক্তির আচরণ ভালোই হোক বা খারাপ, এবং তাদের কথাবার্তা ঠিক বা ভুল যাই হোক না কেন(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বর এবং মানুষ একসাথে বিশ্রামে প্রবেশ করবে)। “ঈশ্বর বিশ্বাসের এই সমস্ত বছরে হয়ত তুমি কখনোই কাউকে অভিশাপ দাও নি বা কোনো খারাপ কাজ করো নি, তা সত্ত্বেও খ্রীষ্টের সাথে যুক্ত হওয়ার সময় তুমি সত্য বলতে পারো না, সততা সহকারে কাজ করতে পারো না অথবা খ্রীষ্টের বাক্য মান্য করতে পারো না। এই ক্ষেত্রে আমি বলবো, তুমি হলে এই বিশ্বের সবচেয়ে অশুভ ও বিদ্বেষপরায়ণ মানুষ। তুমি হয়ত তোমার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, স্ত্রী (বা স্বামী), পুত্র কন্যা এবং পিতামাতার প্রতি খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ ও অনুগত, কখনোই কারোর থেকে সুবিধা নাও নি, কিন্তু যদি তুমি খ্রীষ্টের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হতে পারো, যদি তাঁর সাথে সমন্বিত হয়ে মেলামেশা না করতে পারো, তাহলে তুমি তোমার সমস্ত কিছু প্রতিবেশীর ত্রাণে ব্যয় করে দিলেও, অথবা তোমার পিতা, মাতা ও বাড়ির সদস্যদের নির্ভুল খেয়াল রাখলেও, আমি বলব যে তুমি এখনও দুর্নীতিপরায়ণ, তদুপরি কূট কৌশলে পূর্ণ(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, যারা খ্রীষ্টের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ তারা অবশ্যই ঈশ্বরের বিরোধীপক্ষ)। ঈশ্বরের বাণী থেকে আমি বুঝতে পারছিলাম যে অপরকে বিচার করার জন্য মানুষের মানদণ্ডের ভিত্তি হল তারা কতটা ভাল ব্যবহার করে। যারা ভাল ব্যবহার করে তারাই ভাল মানুষ, আর যারা খারাপ ব্যবহার করে তারা খারাপ মানুষ। কিন্তু এক্ষেত্রে ঈশ্বরের মানদণ্ডের ভিত্তি হল ব্যক্তি ঈশ্বরের পথ অনুসরণ করছে কিনা, এবং ব্যক্তির সারসত্তা ও ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণের ক্ষেত্রে তার মনোভাব। তাঁদের বাহ্যিক আচরণ কতটা চমৎকার তার ওপর ভিত্তি করে বিচার করা ঠিক নয়। ঈশ্বরের বাণীর উন্মোচন সরাসরি আমার হৃদয়ে প্রবেশ করল। ছোট থেকেই, আমার পরিবারের মানুষজন এবং অন্যান্যদের সঙ্গে, আমি কখনও কোনও তর্ক করিনি বা দ্বন্দ্বে লিপ্ত হইনি। এমনকি কেউ আমার সাথে তর্ক শুরু করলেও আমি তাদেরকে শান্ত করার মাধ্যমে তার সমাধান করতাম। গ্রাসবাসীরা সবসময় তাদের প্রতি ভাল আচরণ করার জন্য আমার প্রশংসা করত এবং আমিও ভাবতাম যে এভাবেই একজন ভাল মানুষের পর্যায়ে পৌঁছাতে পারব। এখন বিষয়টি আমার কাছে পরিষ্কার যে আমি কোনও অনিষ্ট করতে যাচ্ছিলাম না কিন্তু আমি কথা ও কাজে সৎও ছিলাম না। আমি দেখেছিলাম কেভিন নীতিহীন পন্থায় তাঁর দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং সবসময় দাম্ভিকতা প্রকাশ করছিলেন, যা আমাদের কাজের কার্যকারিতার ওপর প্রভাব ফেলছিল। ভাল মানুষ হিসেবে আমার ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য আমি তাঁকে দেখিয়ে দিইনি বা সাহায্য করিনি, এবং আমি গির্জার স্বার্থ রক্ষা করিনি। তা অন্যরা আমাকে ভাল মানুষ হিসেবে জানলেও, ঈশ্বরের সামনে তখনও আমি তাঁর ও সত্যের বিরোধীতা করে চলেছি, এবং আমি যা করছিলাম তা পাপ ছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে কেউ ভাল কি মন্দ তা বিচার করার জন্য তাঁর বাহ্যিক আচরণ সঠিক মানদণ্ড নয়। অনেক মানুষকে দেখে মনে হয় যেন তাঁরা অনেক ভাল কাজ করছেন, অথচ তাঁরা জোরালো ভাবে ঈশ্বরের কর্ম ও বাণীর বিরোধিতা ও নিন্দা করেন। তাঁরা পাপী। একজন ভগিনীর কথা মনে আছে যার সাথে আমি কাজ করেছিলাম। যতটুকু বলতে পারি, তিনি তাঁর কথায় ভদ্রতা বা দয়াশীলতা দেখানোর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতেন না, কিন্তু তিনি সত্যকে গ্রহণ করতে পারতেন এবং সত্যের নীতি অনুসারে দায়িত্ব পালনের উপায় খুঁজতেন। যখন তিনি দেখতেন যে অন্যরা সত্য অনুসারে চলছেন না তখন যা বলা দরকার তাই তিনি বলতেন। তিনি অন্যের সমস্যা ধরিয়ে দিতে পারতেন এবং তাঁর মধ্যে ন্যায়পরায়ণতার বোধ ছিল। এই ভাবনা থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, নিজেকে ভাল মানুষ হিসেবে দেখানোর চেষ্টার মত ভুল দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করা বন্ধ করে, বরং আমাকে ঈশ্বরের বাণীর সত্য অনুসারে জীবন যাপন করতে হবে এবং একজন প্রকৃত ভাল মানুষ হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

আমি ঈশ্বরের বাণী থেকে একটি অংশ পড়লাম যা আমাকে অনুশীলনের পথ দেখাল। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “ঈশ্বরের বাক্যকে নিজেদের ভিত্তি, এবং সত্যকে নিজেদের মানদণ্ড হিসাবে অর্জন করার জন্যই মানুষের সবচেয়ে বেশি সচেষ্ট হওয়া উচিত; কেবলমাত্র তখনই তারা আলোতে স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবনযাপনে সক্ষম হতে পারে। আলোতে বাস করতে চাইলে, তোমার সত্য অনুসারে কাজ করা উচিত; সৎ হতে চাইলে, তোমার সৎ বাক্য বলা এবং সৎ কর্ম করা উচিত। শুধুমাত্র সত্যের নীতি সহকারেই তোমার আচরণের কোনো ভিত্তি থাকতে পারে; যখন মানুষ সত্যের নীতিগুলি হারিয়ে ফেলে শুধুমাত্র সদাচরণের প্রতি মনোনিবেশ করে, তখন অনিবার্যভাবেই জালিয়াতি এবং ভানের উৎপত্তি হয়। মানুষের আচরণে যদি কোনো নীতি না থাকে, তাহলে তাদের আচরণ যতই ভালো হোক না কেন, তারা ভণ্ড; কিছুকাল তারা অন্যদের প্রতারণা করতে পারলেও, কখনোই তারা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারবে না। কেবলমাত্র যখন মানুষ ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে কাজ করে, আচরণ করে, তখনই তাদের প্রকৃত ভিত্তি থাকে। যদি তারা ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে আচরণ না করে, কেবলমাত্র সদাচরণের ছলনা করার প্রতি মনোনিবেশ করে, তাহলে ফলাফল হিসাবে তারা কি ভালো মানুষ হয়ে উঠতে পারে? একেবারেই পারে না। সদাচরণ মানুষের সারমর্মকে বদলাতে পারে না। কেবলমাত্র সত্য এবং ঈশ্বরের বাক্যই মানুষের স্বভাব, চিন্তাভাবনা, মতামত পরিবর্তনে সক্ষম এবং তাদের জীবন হয়ে উঠতে সক্ষম। … মাঝে মাঝে অন্যদের ঘাটতি, দোষ, ত্রুটি সরাসরি তুলে ধরা এবং সেগুলোর সমালোচনা করার প্রয়োজন হয়। এটা মানুষের পক্ষে খুবই উপকারী। এটা তাদের পক্ষে প্রকৃত সহায়ক এবং গঠনমূলক হয়, তাই নয় কি? এই যেমন ধরো, তুমি সবিশেষভাবে স্বেচ্ছাচারী ও উদ্ধত। তুমি হয়ত এই বিষয়ে কখনোই সচেতন নও, কিন্তু তোমায় ভালোভাবে জানে এমন কেউ এসে তোমার সমস্যাগুলি তোমার সামনে তুলে ধরে। তুমি নিজের মনে ভাবলে, ‘আমি কি স্বেচ্ছাচারী? আমি কি উদ্ধত? আমাকে কেউ একথা বলার সাহস করে নি, কিন্তু তারা আমায় উপলব্ধি করে। তারা যখন এসব বলছে, তার মানে এটা সত্যিই ঠিক। আমাকে এই বিষয়গুলি নিয়ে সময় ধরে ভাবনাচিন্তা করতে হবে’। তারপরে তুমি সেই ব্যক্তিকে বললে, ‘অন্যান্য লোকেরা আমাকে খালি ভালো ভালো কথাই বলে, তারা আমার গুণগান গায়, কেউ কখনো আমার সাথে স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত হৃদয়ে আলাপচারিতা করে না, আমার মধ্যেকার এই দোষ-ত্রুটিগুলোকে কেউ কখনো তুলে ধরে নি। শুধু তুমিই তা বলতে পারলে, আমার সাথে আন্তরিক হতে পারলে। এটা কতই না ভালো হল, আমার কত বড় উপকারই না হল’। এটাই হল স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত হৃদয়ে আলাপচারিতা, তাই নয় কি? একটু একটু করে, সেই অন্য ব্যক্তিটি তোমার কাছে প্রকাশ করে তার মনে যা রয়েছিল তা, তোমার বিষয়ে তার মনোভাব, এবং এই বিষয়ে নিজের ধারণা, কল্পনা, নেতিবাচকতা এবং দুর্বলতাগুলির অভিজ্ঞতা সে কীভাবে লাভ করেছে, এবং সত্য অন্বেষণের মাধ্যমে কীভাবে সেগুলি এড়াতে সে সক্ষম হয়েছে, সেইসব নিয়ে সে আলাপচারিতা করে। এ-ই হল স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত হৃদয়ে আলাপচারিতা, এ-ই হল আন্তরিকভাবে যোগাযোগ স্থাপন। এবং সংক্ষেপে, এই সব আলোচনার নিহিত নীতিটি কী? তা হল: তোমার মনের মধ্যে কী আছে তা বলো, নিজের প্রকৃত অভিজ্ঞতা এবং চিন্তাভাবনার আলাপন করো। এই বাক্যগুলি মানুষের পক্ষে সর্বাপেক্ষা উপকারী, এগুলি মানুষের জন্য রসদের যোগান দেয়, মানুষকে সহায়তা করে, এগুলি ইতিবাচক। যে সকল তঞ্চকতাময় কথা মানুষের কোনো উপকারে লাগে না বা তাকে উন্নীত করে না, সেগুলো বলতে অস্বীকার করো; এতে তাদের ক্ষতি হবে না, তাদের কোনো ভুল করা থেকে আটকাবে, যার ফলে তারা নেতিবাচকতায় নিমজ্জিত থাকা এবং মন্দ প্রভাব থেকে দূরে থাকবে। তোমাকে অবশ্যই ইতিবাচক কথাবার্তা বলতে হবে, লোকেদের সাহায্য করার বিষয়ে অবশ্যই সর্বোত্তমভাবে সচেষ্ট হতে হবে, যাতে তাদের উপকার হয়, তাদের রসদ যোগান দেওয়া যায়, যাতে তাদের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতি প্রকৃত বিশ্বাস জন্মায়; এবং তোমাকে অবশ্যই দেখতে হবে যাতে মানুষের সহায়তা করা সম্ভব হয়, এবং যাতে তারা তোমার ঈশ্বরের বাক্যের অভিজ্ঞতা ও সমস্যা সমাধানের উপায় থেকে প্রভূত বিষয়বস্তু অর্জন করতে পারে, এবং যাতে তারা ঈশ্বরের কাজের, তথা সত্যের বাস্তবিকতায় প্রবেশের পথ উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়, তোমাকে অবশ্যই দেখতে হবে যাতে তারা তাদের জীবনে প্রবেশ করার অনুমোদন পেয়ে নিজ-নিজ জীবনের বৃদ্ধি সাধন করতে পারে—যেগুলি সকলই আদতে তোমার বাক্যে নীতি এবং মানুষের উন্নতিসাধনের ক্ষমতা থাকার প্রভাব(বাক্য, খণ্ড ৬, সত্যের অন্বেষণের বিষয়ে, সত্যের অন্বেষণ কী? (৩))। ঈশ্বরের বাণী অনুসারে নিজেকে চালিত করার জন্য আমি কিছু নীতি খুঁজে পেলাম। আমাদেরকে ঈশ্বরের বাণী অনুসারে সৎ হতে হবে। যখন আমরা অপরের সমস্যা দেখতে পাব তখনই তা ধরিয়ে দেব এবং তাদেরকে সাহায্য করব, যা তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। আমাদের উচিত গির্জার কাজে সহায়তা করা এবং অপরের আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করা। এই পথটিকে বোঝার সাথে সাথে আমি শীঘ্রই এই সত্যকে চর্চায় রূপ দিতে চাইলাম, কেভিন-এর সাথে আন্তরিক আলাপ-আলোচনা করতে এবং তাঁর সমস্যাটি তুলে ধরতে চাইলাম। আমি জানতাম এটি করতে হবে যাতে তিনি তাঁর দায়িত্বের প্রতি তাঁর মনোভাব সংশোধন করতে পারেন, এবং তাঁর অসৎ স্বভাব ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে তিনি জানতে পারেন। তাঁকে সাহায্য করার জন্যই এটি করা হবে। তাই আমি তাঁকে খুঁজে বের করলাম, তাঁর সমস্যা নিয়ে কথা বলার প্রস্তুতি নিলাম। আর তারপরেই আবার আমি উদ্বেগ বোধ করতে লাগলাম, তিনি আমার সম্পর্কে কী ভাববেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে লাগলাম। কিন্তু আমি আবার ভাবতে লাগলাম সম্প্রতি কীভাবে আমি সত্যের অনুশীলন থেকে বিরত ছিলাম, যা কিনা আমাদের কাজের ক্ষতি করছিল, এবং সত্যিই অপরাধবোধে ভুগতে লাগলাম। আমি জানতাম, ঈশ্বর আমার চিন্তা ও কর্ম পরীক্ষা করছেন, এবং আমাকে সৎ হতে হবে। সত্যকে উপেক্ষা করে আমার ভাবমূর্তিকে আমি আর রক্ষা করতে পারছিলাম না। এই ভাবনা আমাকে সাহস যুগিয়েছে আমার অসৎ স্বভাব ঝেড়ে ফেলতে এবং কেভিন-এর সাথে তাঁর সমস্যা নিয়ে সততার সাথে কথা বলতে। আমাকে অবাক করে দিয়ে তিনি আমার কথা শুনলেন এবং তা গ্রহণ করতে পারলেন। এবং তিনি বললেন, “আমি কিছু নিয়ম-নীতি সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারিনি। ভবিষ্যতে আমার কোন সমস্যা আপনার চোখে পড়লে অনুগ্রহ করে তা আমাকে বলবেন। আমরা একে অপরকে সাহায্য করতে পারি এবং একসাথে ভালোভাবে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারি।” তাঁকে এমন কথা বলতে শুনে আমি রোমাঞ্চিত হলাম, এবং ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ বোধ করলাম। আরও আগেই সত্যের অনুশীলন শুরু করিনি বলে আমি বিব্রত বোধ করলাম এবং অনুতপ্ত হলাম। আমি যদি বিষয়টি আগেই উত্থাপন করতাম তাহলে, আমরা আমাদের কাজের ক্ষেত্রে আরও ভাল ফল পেতাম, এবং এই অসৎ স্বভাব সম্পর্কে আমরা আগেই জানতে পারতাম। তখন আমি প্রকৃত স্বাদ পেলাম যে সত্য অনুশীলনের ফলে অন্যদের, আপনার নিজের এবং আপনার কাজের মঙ্গল সাধিত হবে। এখন আমি ভ্রাতা ও ভগিনীদের কোনও সমস্যা দেখলে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তা ধরিয়ে দিই কারণ আমি জানি এটিই সত্যের অনুশীলন এবং এটি তাদের সাহায্য করছে। আমি অভিজ্ঞতা থেকে আরও বুঝলাম যে সত্যের নীতি অনুশীলনের মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রয়োজন অনুসারে জীবন যাপন করা এবং কাজ-কর্ম করাই হল সত্য অনুশীলন করার এবং ভাল মানুষ হওয়ার একমাত্র পন্থা।

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

দায়িত্ববোধই হল ভালোভাবে সুসমাচার প্রচারের চাবিকাঠি

আমি নিজের দায়িত্ব গুরুত্ব সহকারে নিতাম না এবং খুবই অবহেলা করতাম। প্রায়ই আলস্যের সঙ্গে কাজ করতাম। সম্ভাব্য সুসমাচার প্রাপকদের ধর্মোপদেশ...

একটা কঠিন পরিবেশের পরীক্ষা

ছোট থেকেই আমি সবসময় সমাজের দ্বারা প্রভাবিত হতাম। আমি আমার সব কিছু অন্যান্য মানুষদের মতই করতে পছন্দ করতাম। আমার চারপাশের লোকেরা খ্রীষ্টান...

ঈশ্বর নির্ভরতাই পরম জ্ঞা

২০১১ সালের শরতকালে, ফাং মিং নামে একজন গ্রামবাসীর সাথে দেখা হল। সে মানবিক আর খুব দয়ালু, ২০বছরেরও বেশি সময় ধরে তার প্রভুতে বিশ্বাস, সে...

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন