একটি সংসার ভাঙার নেপথ্যে

31-03-2023

আমি এবং আমার স্বামী ২০১২ সালের মে মাসের শেষের দিনগুলিতে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজকে গ্রহণ করেছি। আমরা সবসময়ই একসঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করতাম, ঈশ্বরের বন্দনাগীতি গাইতাম, এবং আমার নিজেকে খুব সুখী ও পরিপূর্ণ মনে হত। কিছুদিন আগে আমি গির্জায় একটি দায়িত্ব নিয়েছিলাম এবং আমি প্রায়শই বিভিন্ন সভায় যেতাম এবং সুসমাচার ভাগ করে নিতাম। আমার স্বামী সত্যিই আমায় সমর্থন জানাতেন। কিন্তু পরবর্তী কালে কমিউনিস্ট পার্টির নিগ্রহের কারণে আমার পরিবার আমার ধর্মাচরণে বাধা দিতে থাকে এবং সেই সময় থেকে আমাদের এক কালের সুখী, শান্তিপূর্ণ জীবন একেবারে ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

একদিন আমার বড় দাদা আমাকে বলল যে, সে নাকি খবরে দেখেছে সরকার সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের ওপর কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং তাদের গ্রেপ্তার করে কারাদণ্ড দিচ্ছে। সে বলল, “কোনো ব্যক্তি যদি বিশ্বাসী হয় তবে তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মগুলির উপরেও প্রভাব পড়বে। তাদের ছেলেমেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না, ফলে তাদের কাজের সম্ভাবনা বা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনাও নষ্ট হয়ে যাবে। তুমি কিছুতেই এই ধর্মাচরণ চালিয়ে যেতে পারো না”। আমার স্বামী একটি বিদ্যালয়ে কাজ করতেন। আমার দাদার কথা যখন তার কানে গেল তখন তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে আমাকে বললেন, “বিশ্বাস খুব ভালো জিনিস, কিন্তু কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি বিশ্বাসীদের উন্মাদের মতো গ্রেপ্তার করছে। এতে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের ওপর প্রভাব পড়বে। আমি আর এই ধর্মাচরণ করতে চাই না, এবং তোমারও এবার সভাসমিতিতে যাওয়া বন্ধ করা উচিত। তুমি যদি ঈশ্বরকে অনুসরণ করতে করতে চাও, তবে সেটা বাড়ির মধ্যে গোপনে করো”। আমি বললাম, “আমি যদি কোনো সভায় নাই যাই তবে কি আমাকে আদৌ বিশ্বাসী বলা হবে? আমি কি সেইভাবে সত্যকে জানতে পারব? আমাদের বিশ্বাসে আমরা সত্যকে অনুসরণ করি—সেটাই জীবনের সঠিক পথ। সভায় না গিয়ে আমি থাকতে পারব না”। আমাকে অমন অনড় দেখে উনি একটা টুল আর ফ্ল্যাশলাইট তুলে নিয়ে রাগের চোটে সেগুলো ভেঙেই ফেললেন। পরের দিন তিনি বিদ্যালয় থেকে ফিরে আমাকে বললেন, “আজ বিদ্যালয়ে আমাদের এক বৈঠক ছিল। সেখানে কেন্দ্রীয় কমিটি এক সরকারি নথি প্রকাশ করে জানিয়েছে যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের রাজনৈতিক অপরাধী হিসাবে গণ্য করা হবে এবং তাদের তাদের ওপর দেশজুড়ে একটা বড়ো রকমের দমনপীড়ন চালানো হবে। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও তাদের পরিবারবর্গের কোনো ধর্ম মেনে চলার অনুমতি নেই, এবং ধর্মবিশ্বাসী কোনো ব্যক্তিকে পাওয়া গেলে তাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং চাকরির ক্ষেত্রে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। তাদের পুত্রকন্যাদের কোনো কলেজে পড়ার অনুমতি দেওয়া হবে না—কোনো বিদ্যালয়ে তাদের ভর্তি নেওয়া হবে না। তুমি তোমার ধর্ম অনুশীলন করে যেতে পারবে না। কেউ যদি যেটা জানতে পেরে কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয় তাহলে আমার চাকরি চলে যাবে, আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে। এতে আমাদের পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে”। স্বামীকে এই কথা বলতে শুনে আমি ভাবছিলাম যে সংসারের খরচ চালানোর জন্য স্বামীর মাইনের টাকা আমাদের দরকার। আমার বিশ্বাসের কারণে তাঁর চাকরি যদি চলে যায় তবে আমাদের চলবে কীভাবে? আমার সন্তানরা যদি বিশ্ববদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারে বা চাকরি না পায় তবে কি ওরা আমাকে ঘৃণা করবে না? এই চিন্তাগুলো আমার কাছে খুবই বেদনাদায়ক ছিল, তাই মনে মনে আমি ঈশ্বরকে ডাকলাম, তাঁর ইচ্ছা যাতে বুঝতে পারি সেজন্য তাঁকেই আমি পথ দেখাতে বললাম। প্রার্থনার পর ঈশ্বরের বাক্যের কিছু অংশ মনে মনে ভাবলাম: “মানুষের নিয়তি ঈশ্বরের হাতেই নিয়ন্ত্রিত হয়। তুমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার অযোগ্য: মানুষ নিজের জন্যেই নিজেকে নিয়ে সর্বদা ব্যস্ত থাকলেও, সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষমই থেকে যায়। তুমি যদি নিজের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা জানতে পারতে, যদি তুমি তোমার নিজের ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতে, তাহলে কি তুমি এখনও সৃষ্ট সত্তা হয়েই থাকতে?(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, মানুষের স্বাভাবিক জীবন পুনরুদ্ধার করা এবং তাকে এক বিস্ময়কর গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া)। মনে মনে এটা ভাবার পর দেখলাম, মানুষের নিয়তি পুরোপুরি ঈশ্বরের হাতেই রয়েছে। আমার স্বামীর যে চাকরিই হোক না কেন, আমার ছেলেদের যে ধরনের ভবিষ্যৎই হোক না কেন সবই ঈশ্বরের নিয়ম ও পরিকল্পনার অধীন—এগুলো কোনো মানুষের হাতে নেই। তাদের চাকরি বা ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে আমি আমার বিশ্বাস ত্যাগ করতে পারি না। আমি ঈশ্বরের হাতে আমাদের ভবিষ্যতের ভার তুলে দেওয়া এবং তাঁর সমন্বয়সাধনের সামনে মাথানত করার জন্য মনে মনে প্রস্তুত হলাম। এভাবে যখন ভাবছিলাম তখন আমি মোটেই চিন্তিত বোধ করিনি, এবং আমি যথারীতি বিভিন্ন সভায়, জমায়েতে যোগ দিতে থাকলাম।

এরপর ২০১৩ সালের জুলাই মাসের একদিন আমরা যখন একটি সভায় ছিলাম তখন অন্য কয়েকজন ভগিনীর সাথে আমাকে গ্রেপ্তার করা হল। সেদিন সন্ধেতে থানাতে ক্যাপ্টেন ঝাও আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন, আমার কাছ থেকে জানতে চাইলেন, “কে আপনাকে ধর্মান্তরিত করেছে? কে আপনার গির্জার নেতা?” আমি কোনো জবাব দিইনি। তিনি বলেই চললেন, “আপনার স্বামী আমার শিক্ষক। এই গির্জা সম্বন্ধে আমাকে সবকিছু বলুন এবং আমি শিক্ষকের জন্য আপনাকে বাড়ি ফিরে যেতে দিতে পারি”। আমি বুঝতে পারলাম, আমি যাতে আমার ভ্রাতা ও ভগিনীদের বিক্রি করে দিই এবং ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করি সেজন্য এটা শয়তানের কারসাজি—আমি কিছুতেই এই ফাঁদে পা দিতে পারি না। আমি নীরবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে গেলাম, তাঁকে অনুরোধ করলাম তিনি যেন প্রহরায় থাকেন এবং সাক্ষ্যে দৃঢ় হয়ে থাকতে আমাকে সাহায্য করেন। এরপর, ক্যাপ্টেন ঝাও যাই প্রশ্ন করুক না কেন আমি তাকে অগ্রাহ্য করে গেলাম। শেষ পর্যন্ত সে আমাকে একটা হোল্ডিং কক্ষে নিয়ে গেল। পরের দিন সকালে, পৌর জননিরাপত্তা ব্যুরোর এক আধিকারিক আমাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এলেন। তাকে দেখে আমি অবাক হয়ে যাই, কারণ সে ছিল আমার এক তুতো ভাই। আমাকে দেখে তার চোখ ক্রোধে বিস্ফারিত হয়ে গেল, আমার দিকে তাকিয়ে সে বলল, “কী সাংঘাতিক ব্যাপার! তুমি ধর্মবিশ্বাসী? কবে থেকে তুমি বিশ্বাসী হলে? কে তোমাকে ধর্মান্তরিত করেছে?” আমি ওকে উপেক্ষা করে গেলাম। সে ঈশ্বরকে অবমাননা ক’রে আরও বেশ কিছু কথা বলল, আর তারপর বলেই চলল “জাতীয় সরকার বহু আগেই এক সরকারি নথি প্রকাশ করেছিল যেখানে বলা হয়েছিল যে যদি দেখা যায় কোনো ব্যক্তি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাসী তাহলে তাদের বংশধরদের তিন প্রজন্মকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হবে। তোমার বড় ছেলে সবে কলেজ থেকে স্নাতক হয়ে বেরিয়েছে ও চাকরির খোঁজ করছে এবং তোমার ছোট ছেলে এবার কলেজে ঢুকতে চলেছে। তোমাকে তো তোমার সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে হবে। কমিউনিস্ট পার্টি কিন্তু ভীষণ শক্তিশালী—সেই পার্টিকে অগ্রাহ্য করে বিশ্বাসী হওয়ার অর্থ হল ডিম ছুঁড়ে পাথর ভাঙার চেষ্টা করা। তোমাকে এই সবকিছু ছাড়তে হবে!” এইসব কথা শুনে আমি ভাবলাম নিজের বিশ্বাসের অনুশীলন করে গেলে আমার ছেলেদের ভবিষ্যতের ওপর প্রভাব পড়বেই। তাদের শিক্ষার জন্য আমি অনেক মূল্য দিয়েছি—তারা যদি শেষ পর্যন্ত চাকরিবাকরি না পায় তাহলে আমার রক্ত, ঘাম আর চোখের জল এক করা এতগুলো বছর কি ব্যর্থ হয়ে যাবে না? আমার পক্ষে সেই চিন্তাটা ছিল ভীষণই বেদনাদায়ক। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, তাঁর কাছে অনুরোধ জানালাম তিনি যেন আমার হৃদয়কে প্রহরায় রাখেন এবং তাঁর ইচ্ছা অনুধাবন করতে আমাকে সাহায্য করেন যাতে আমি বুঝতে পারি আমার কী করা উচিত। তারপর ঈশ্বরের বাক্যসমূহ থেকে এই উদ্ধৃতিটি আমার মনে পড়ে গেল: “ক্রন্দনরত অবস্থায় এই জগতে ভূমিষ্ঠ হবার সময় থেকেই তুমি তোমার কর্তব্য পালন করা শুরু করো। ঈশ্বরের পরিকল্পনা ও তাঁর নির্ধারিত নিয়তি অনুসারে তুমি তোমার ভূমিকা পালন করে চলো আর জীবনের পথে রওনা হও। তোমার পটভূমি যেমনই হোক, এবং তোমার সামনে যেমনই যাত্রাপথ থাকুক, কেউই স্বর্গলোকের সমন্বয়সাধন আর ব্যবস্থাপনা এড়িয়ে যেতে পারে না, আর কেউই তার নিজের নিয়তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, কারণ যিনি সমস্ত কিছুর নিয়ন্তা কেবল তিনিই এটা করতে সক্ষম। … মানুষের হৃদয় ও আত্মা ঈশ্বরের হাতেই ধৃত, তার জীবনের সবকিছুই ঈশ্বরের দৃষ্টির অন্তর্গত। তুমি বিশ্বাস করো বা না করো, ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারেই জীবিত বা মৃত যে কোনো জিনিস ও সমস্ত কিছু স্থানান্তরিত হবে, পরিবর্তিত হবে, পুনর্নবীকৃত হবে, আর বিলীন হয়ে যাবে। ঈশ্বর এভাবেই সমস্ত বস্তুর উপরে আধিপত্য করেন(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বর হলেন মানুষের জীবনের উৎস)। ঈশ্বরের বাক্য থেকে আমি স্পষ্ট দেখলাম যে সমস্ত কিছু তাঁরই হাতে, এর মধ্যে কি আমার ছেলেদের ভবিষ্যৎ ও নিয়তিও পড়ে না? একজন মানুষ জীবনে কতটা যন্ত্রণা ভোগ করবে এবং সে কী ধরনের কাজ করবে তা ঈশ্বর কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত। এ নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন হতে পারি না। এই পৃথিবীতে একজন মানুষের যত বেশি শিক্ষাই থাক না কেন, যত বড়ই তার কাজ হোক না কেন তার অর্থ এই নয় যে তাদের একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ ও নিয়তি থাকবে। বিশ্বাস ছাড়া, ঈশ্বরের পরিত্রাণ ছাড়া কোনো বিপর্যয় এলেই মানুষের মৃত্যু হবে, বলার মতো আর কোনো ভবিষ্যৎ থাকবে না তাদের। ঈশ্বরের সামনে নিজেকে নিবেদন করা, সত্যকে গ্রহণ করা এবং ঈশ্বরের দ্বারা পরিত্রাণ পাওয়াই হলো একটি ভবিষ্যৎ ও গন্তব্য পাওয়ার প্রকৃত পথ। তাই আমি সেই তুতো ভাইকে বললাম, “আমার ছেলেদের ভবিষ্যৎ যাই হোক না কেন সেটা তাদের নিয়তি—এটা কোনো মানুষের ওপর নির্ভর করে না। আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি এবং সত্যের অনুসরণ করি। এটাই সঠিক পথ এবং আমি সম্পূর্ণ ভাবে এই পথেই রয়েছি। আমাকে কোনো উপদেশ দিয়ো না”। নিজের বিশ্বাসে অটল থাকার ব্যাপারে আমি যে কতটা দৃঢ়সংকল্প সেটা দেখার পর সে আর কোনো কথা বাড়ালো না। ওরা ওখানে আমাকে এক দিন ও এক রাত রাখল আর তারপর বাড়ি পাঠিয়ে দিল।

আমি বাড়ি ফেরা মাত্রই আমার স্বামী একটা একটা টুল তুলে নিয়ে আমাকে সেটা দিয়ে মারতে গেলেন, কিন্তু আমার বড় ছেলে এসে তাঁকে আটকালো। আমাকে গালিগালাজ করে আমার স্বামী বললেন, “তোমার বিশ্বাসের জন্য আজ আমার এত হেনস্থা, তোমার জন্যই আজ নাহয় কাল আমাদের ছেলেদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে। তুমি যদি এই বিশ্বাস ধরে রাখো, তাহলে তোমাকে আমি মেরেই ফেলব”। স্বামীকে ঐ অবস্থায় দেখে নিজের মনে আমি ভাবলাম যে দম্পতি হিসাবে আমাদের বন্ধন যে কোনো বাস্তব দুর্দশার সম্মুখীন হওয়ার পক্ষে খুবই দুর্বল ছিল। আমার বিশ্বাসের জন্য আমাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল আর তাতে তাঁর স্বার্থ ও সম্মানে আঘাত লেগেছিল, তাই উনি আমাকে মারধরের হুমকি দিচ্ছিলেন। এটাই কি স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা? আমার বোন তখন আমাদের বাড়িতেই ছিল, সেও তখন তাল ঠুকে বলল, “তুমি কি তোমার বিশ্বাস ত্যাগ করতে পারো না? এভাবেই যদি চলো তাহলে কিন্তু ছেলেদের ভবিষ্যৎ তুমি নষ্ট করে দেবে!” আমি তাদের বললাম, “আমি তো শুধু বিভিন্ন সভায় যাচ্ছি আর ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করছি। জীবনে চলার এটাই সঠিক পথ—আমি কোনো অন্যায় করিনি। সেটার মানে কি আমার সন্তানদের ভবিষ্যতের সঙ্গে আপস করা? কমিউনিস্ট পার্টিই বিশ্বাসীদের ওপর নির্যাতন করছে এবং তাদের পরিবারের বিভিন্ন প্রজন্মকে এর মধ্যে টেনে আনছে। আমার সন্তানরা যদি ভবিষ্যতে চাকরি না পায় তবে তবে তার জন্য দায়ী কমিউনিস্ট পার্টি। কোনটা সঠিক, কোনটাই বা ভুল সেটা তোমরা কেন বলতে পারবে না?” তারপর আমার ছোটভাই আমার স্বামীকে ডেকে বলল, “আমার বোন যদি ঐ ধর্ম পালন করে চলে তবে তার পা ভেঙে দাও। তখন দেখব কীভাবে ও ঐসব সভায় যেতে পারে”। আর ওর স্ত্রী বিষাক্ত গলায় বলল, “ও যদি ঐসব কাণ্ড চালিয়ে যায় তাহলে ওকে পিটিয়ে মেরে ফেলো। আমাদের পরিবার তোমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনবে না”। আমার বুকের ভেতরটা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। আমি ভেবেছিলাম আমার পরিবার অন্তত আমাকে বুঝবে। আমি কোনোদিন কল্পনাও করিনি যে ওরা কমিউনিস্ট পার্টির কথা শুনবে এবং নিজেদের স্বার্থরক্ষার জন্য এমন হৃদয়হীন হয়ে যাবে, এবং আমাকে নিজের বিশ্বাস থেকে ওরা দূরে সরিয়ে রাখবেই, তাতে আমি মরি কি বাঁচি ওদের কিচ্ছু যায় আসে না। ওদের মনুষ্যত্ব কোথায় গেল? পরের দিন আমার বড় ভাই এসে স্বামীকে বলল, “আমার বোন যদি তার ধর্মে অটল থাকে তাহলে আমরা ওর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করব। তুমি যদি বিবাহবিচ্ছেদ চাও তাহলে তোমাকেও আমরা সমর্থন করব। ওর হাতে কিচ্ছু দিয়ো না, শুধু ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দাও। তারপর দেখো ওর কী করে চলে”। দুপুরের দিকে আমার তুতো ভাই পুলিশের গাড়িতে করে এল এবং আমার স্বামীকে বলল যে আমার ওপর নজর রাখতে, আর আমাকে আমার বিশ্বাসের অনুশীলন করা থেকে বিরত রাখতে, নাহলে পুরো পরিবারকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হবে। আমার স্বামী আমাকে বললেন, “আমাদের সন্তানদের ও এই পরিবারের স্বার্থে আজ তোমাকে তুতো ভাইয়ের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে হবে এবং এই বিবৃতি দিতে হবে যে তুমি তোমার বিশ্বাস ত্যাগ করছ”। আমি তাঁকে বললাম, “ঈশ্বরকে অনুসরণ করা সঠিক এবং যথার্থ। আমি আমার বিশ্বাস ত্যাগ করব না”। আমার স্বামী যখন দেখলেন যে আমাকে টলানো যাচ্ছে না তখন তিনি ক্রুদ্ধস্বরে বললেন যে, “তুমি যদি আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা না ভেবে ঈশ্বরের বিশ্বাসে অটল থাকো তাহলে আমি বিবাহ বিচ্ছেদের পথে যাব”। তিনি বিবাহবিচ্ছেদের সব চুক্তি তৈরি করে আমাকে সই করতে বললেন। চুক্তিতে লেখা ছিল, সঙ্গে কিচ্ছু না নিয়ে আমি চলে যাব। এই বাড়িটা তৈরি করতে আমরা দুজনেই সমান পরিশ্রম করেছি, আমি কীভাবে এখন একেবারে খালি হাতে চলে যেতে পারি? তারপর ভাবলাম একজন মানুষকে জীবনে কতটা যন্ত্রণাভোগ করতে হবে তা তো ঈশ্বর ইতিমধ্যেই নির্ধারণ করে রেখেছেন এবং যাই ঘটুক না কেন আমি ঈশ্বর বিশ্বাসে বিরত থাকতে পারি না, বরং, আমাকে এই বিশ্বাস বজায় রাখতেই হবে এবং সত্যের অনুসরণ করে যেতেই হবে। আমি যখন সই করতে যাচ্ছিলাম তখন আমার স্বামী বুঝে গেলেন যে মাথা নত করার কোনো অভিপ্রায় আমার নেই, তাই তিনি বললেন, “আচ্ছা আমাদের বিবাহবিচ্ছেদের দরকার নেই। তুমি যদি বিশ্বাসী হয়ে থাকতে চাও তবে তাই থাকো, আমি তোমাকে বাধা দিতে পারি না। তুমি তোমার বিশ্বাস নিয়েই এগিয়ে যাও”। এই কথাই তিনি বলেছিলেন, কিন্তু বাস্তবে তিনি আমার উপরে বেশি করে নিয়ন্ত্রণ খাটাতে শুরু করলেন। বাড়িতে উনি আমাকে “ঈশ্বর” শব্দটা উচ্চারণও করতে দিতেন না, এবং তাঁর পছন্দ নয় এমন কথা যখন বলতাম তখনই আমাকে মারধর করতেন। ছুটির দিনগুলোতেও তিনি বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন, আমার ওপর নজর রাখার জন্য বাড়িতেই বসে থাকতেন। যখন তিনি দেখলেন যে আমি ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করছি তখন তিনি আমার হাত থেকে বইটা কেড়ে নিয়ে বললেন, “এটাকে যদি আর একবার দেখি, তাহলে ঈশ্বরের বাক্যের এই বই কিন্তু আমি পুড়িয়ে ফেলব”। কিছুদিনের জন্য সভায় গিয়ে ভ্রাতা-ভগিনীদের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ হয়ে গেল, বাড়িতে ঈশ্বরবাক্য পাঠও বন্ধ হয়ে গেল। কোনো স্বাধীনতাই আমার ছিল না।

এক সন্ধ্যায় ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করার জন্য আমি চুপিচুপি আমাদের শোওয়ার ঘরে ঢুকেছিলাম তখন হঠাৎ করেই আমার স্বামী ঘরে ঢুকে রাগে ফেটে পড়লেন, “তুমি এখনও ওটা পড়ার সাহস দেখাচ্ছ! তুমি যদি আবার গ্রেপ্তার হও তাহলে আমার চাকরি আর আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ কিন্তু শেষ! কমিউনিস্ট পার্টি যা ইচ্ছে তাই করতে পারে”। আমি তাঁকে বললাম, “আমি তো শুধু ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করছি। তাতে তোমার বা আমার ছেলেদের ভবিষ্যতের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে?” আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার স্বামী আমার গলায় দুহাত পেঁচিয়ে জোরে টিপে ধরলেন আর বললেন, “তোমাকে আজ গলা টিপে মেরেই ফেলেব”। ওঁর হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর মতো গায়ের জোর আমার ছিল না এবং একটা শব্দও উচ্চারণ করে উঠতে পারলাম না। আমার নিঃশ্বাস এবং নড়াচড়া বন্ধ না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত উনি আমাকে ছাড়লেন না। আমি একটু বাতাসের জন্য ছটফট করছিলাম, কী প্রচণ্ড মানসিক আঘাতের মধ্যে আমি ছিলাম। আমি ভাবছিলাম চিনে একজন বিশ্বাসী হওয়া ও সঠিক পথ অনুসরণ করাটা ভীষণ কঠিন। কমিউনিস্ট পার্টি আমাকে গ্রেপ্তার করেছে, আমার পরিবার আমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, আমি আর একটা কর্তব্যও পালন করতে পারছিলাম না, আর এখন ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করার অধিকারটুকুও আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হল। আমার জীবনের আর কী অর্থ রইল? আমি ভাবছিলাম এর চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়। আমার স্বামীর ক্ষুরটা নিয়ে নিয়ে এলাম, হাতের কবজিটা চিরে দিয়ে আত্মহত্যার কথা ভাবলাম। তখনই হঠাৎ করে ঈশ্বরের বাক্যের এই অনুচ্ছেদটি আমার মনে পড়ে গেল: “আজ, অধিকাংশ লোকেরই সেই জ্ঞান নেই। তারা বিশ্বাস করে যে দুঃখকষ্টের কোনো মূল্য নেই, তারা পৃথিবী দ্বারা পরিত্যক্ত, তাদের গৃহ জীবন বিপর্যস্ত, তারা ঈশ্বরের প্রিয় নয়, এবং তাদের সম্ভাবনাও অন্ধকারাচ্ছন্ন। কিছু লোকের দুঃখকষ্ট চরমে পৌঁছায় এবং তাদের চিন্তাভাবনা মৃত্যুর দিকে মোড় নেয়। এটা ঈশ্বরের জন্য প্রকৃত ভালোবাসা নয়; এই ধরনের লোকেরা কাপুরুষ, তাদের কোনো অধ্যবসায় নেই, তারা দুর্বল এবং শক্তিহীন! ঈশ্বর মানুষের তাঁর প্রতি ভালোবাসার জন্য আকুল, কিন্তু মানুষ যত বেশি তাঁকে ভালোবাসে, তার দুঃখকষ্ট তত বেশি হয়, এবং মানুষ যত বেশি তাঁকে ভালোবাসে, তাঁর পরীক্ষাও তত বেশি হয়। … এইভাবে, অন্তিম সময়ে তোমাকে অবশ্যই ঈশ্বরের নিকট সাক্ষ্য দিতে হবে। তোমার দুঃখকষ্ট যতই বিশাল হোক না কেন, তোমাকে একদম শেষ পর্যন্ত যেতে হবে, এবং এমনকি তোমার শেষ নিঃশ্বাসেও তোমায় অবশ্যই ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হবে এবং ঈশ্বরের সমন্বয়সাধনে সমর্পণ করতে হবে; শুধুমাত্র এটিই প্রকৃতপক্ষে প্রেমময় ঈশ্বর, এবং কেবল এটিই দৃঢ় ও শক্তিশালী সাক্ষ্য(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, শুধুমাত্র বেদনাদায়ক পরীক্ষার অভিজ্ঞতার দ্বারাই তুমি ঈশ্বরের মাধুর্য জানতে পারবে)। ভাগ্যিস ঈশ্বরের বাক্য আমাকে সঠিক সময়ে জাগিয়ে তুলেছিল, তাই আমি সেই বোকার মতো কাণ্ডটা করে বসিনি। আমি নিজেকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম কারণ আমি খুব দুর্দশা আর যন্ত্রণার মধ্যে ছিলাম, এই অসম্মান আর সহ্য করতে পারছিলাম না। কিন্তু আমি কী ভীরুই না ছিলাম। আমার মধ্যে বিশ্বাসের এতটা অভাব ছিল, আর আমার মধ্যে কোনো সাক্ষ্যই ছিল না। ঈশ্বর আশা করেন যে, মানুষ যখন ভীষণ যন্ত্রণা ও প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যাবে তখনও যেন তারা বিশ্বাস না হারায়, তারা যেন তাঁর জন্য সাক্ষ্য দিতে পারে। আমি যদি মরেই যাই তবে কীভাবে আমি এই সাক্ষ্য দেব? তাহলে কি আমি শয়তানের কাছে হাস্যাষ্পদ হয়ে যাব না? একথা উপলব্ধি করে আমি মনস্থির করে নিলাম যে আমার স্বামী এবং আত্মীয়-স্বজনেরা যতই অত্যাচার করুক না কেন, ভবিষ্যতে তারা আমার বিশ্বাস থেকে আমাকে যতই বিরত রাখার চেষ্টা করুক না কেন, আমাকে যতই যন্ত্রণা ভোগ করতে হোক না কেন, আমার শেষ নিঃশ্বাসটুকু পর্যন্ত আমি বাঁচব এবং শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরকে অনুসরণ করব। কিন্তু আমার ওপর যেহেতু পুলিশি নজর ছিল এবং গ্রেপ্তারির পর থেকে পরিবারের কাছ থেকে যেহেতু প্রতি পদে পদে বাধা আসছিল সেহেতু আমার পক্ষে পুরো তিন বছর গীর্জার প্রকৃত জীবন যাপন করা সম্ভব হয়নি। আমাকে লুকিয়ে চুরিয়ে বাবার বাড়ি গিয়ে সেখানে গোপনে ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করতে হত। তারপর ২০১৬ সালের গ্রীষ্মে আমি অবশেষে ভ্রাতা-ভগিনীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। আবার আমি গীর্জার জীবন শুরু করতে পারলাম এবং দায়িত্ব গ্রহণ করতে সক্ষম হলাম।

আমার স্বামী বেশ কয়েক বছর ধরে আমার ওপর অত্যাচার চালিয়ে গেলেন। সেদিনের কথা মনে পড়ছে যেদিন সভা থেকে ফেরার পর তিনি আমাকে আমার বড় ভাইয়ের বাড়িতে নিয়ে গেলেন, সেখানে গিয়ে দেখলাম আমার আরো দুই ভাই ও তাদের স্ত্রীরা উপস্থিত রয়েছে—তারা সবাই আমার দিকে কটমট করে চেয়ে আছে। আমি জানতাম ওরা আবার আমাকে বিশ্বাস ত্যাগ করার জন্য জোরাজুরি করবে, তাই আমি নীরবে প্রার্থনা করলাম এবং ঈশ্বরের কাছে আমাকে সঠিক পথ দেখানোর অনুরোধ জানালাম যাতে ওরা যে আচরণই আমার সঙ্গে করুক না কেন আমি আমার পথ থেকে যেন সরে না যাই। আমার বড় ভাই আমার দিলে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে বললেন, “কমিউনিস্ট পার্টি নাস্তিক। এতগুলো বছর ধরে এই পার্টি ধর্মীয় বিশ্বাসকে দমন করে আসছে এবং এটা কেউই বদলাতে পারবে না। পার্টির শাসনের অধীনে ঈশ্বরবিশ্বাসী হওয়া মানে তুমি তো গ্রেপ্তার হবেই, তোমার পুরো পরিবার দোষী সাব্যস্ত হবে। তুমি কি নিজেই এই সমস্যা ডেকে আনছ না?” তারপরেই আমার ভগ্নিপতি বলল, “আমার ছেলে কলেজের প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়েছে। এবার তাকে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কাগজপত্র পেশ করতে হয়েছে, সেখানে ওরা জিজ্ঞাসা করেছে পরিবারে কোনো ধর্মবিশ্বাসী সদস্য রয়েছে কিনা। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাসী হিসাবে পুলিশ তোমার নথি খুঁজে পেয়েছে এবং ওরা ওরা কিছুতেই পাশ করাচ্ছিল না। আমাকে তখন নিজের প্রভাব খাটিয়ে লোকজনকে অনেক উপঢৌকন দিতে হয়েছে—মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তবে ওকে কোনো রকমে পাশ করাতে পেরেছি। চিনে কেউ যদি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাসী হয় তবে তার পুরো পরিবারকে এর মধ্যে জড়িয়ে ফেলা হয়। তোমাকে তোমার বিশ্বাস ত্যাগ করতেই হবে”। তারপর আমার ছোটভাই আমাকে জিজ্ঞাসা করল, “আমাদের পরিবার, নিজের ছেলেদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে তুমি কি একটুও চিন্তা করতে পারো না? ঈশ্বর বিশ্বাস থেকে বিরত থাকো! তাতে কি তুমি মরে যাবে নাকি?” তাই আমি তাদের বললাম, “তোমরা কি জানো ভবিষ্যৎ আর নিয়তি কাকে বলে? তোমরা ভাবো যে ভালো ভবিষ্যতের অর্থই হল ভালো চাকরি, ভালো ভালো খাবার-দাবার আবার পোশাক-আশাক। বিপর্যয় সবসময় ঘনাচ্ছে এবং যারা বিশ্বাসী নয় তারা সেই বিপর্যয়ে ডুবে যাবে। যারা বিশ্বাস করে তারাই শুধুমাত্র তাঁর দ্বারা রক্ষা পরিত্রাণ পায় এবং রক্ষিত হবে, একমাত্র তাদের ভবিষ্যৎ ও ভাগ্যই ভালো হবে”। আমার স্বামী বললেন, “আমি জানি না পরে কী হতে চলেছে—এখন আমার সামনে যা রয়েছে আমি শুধু সেটাই দেখতে পাচ্ছি। সেটা হল কমিউনিস্ট পার্টির বর্তমান নীতি—তুমি যদি বিশ্বাসী হও তাহলে তোমাকে ওরা গ্রেপ্তার করবে, আমার চাকরি কেড়ে নেবে এবং পরিবারকেও দোষী সাব্যস্ত করবে। এই এতগুলো বছরে কেউ ওদের এই নীতি পরিবর্তন করতে পারেনি, এবং তারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী! তুমি শুধু তোমার বিশ্বাস ত্যাগ করো! এখানে তুমি আমাদের সবার সামনে বলো যে তুমি সেটা করবে”। তাঁর কথা শেষ হওয়া মাত্রই সবাই আমাকে ঈশ্বরে আর বিশ্বাস না করার জন্য এটা সেটা বলতে ষুরু করে। আমরা একটা বড়, সুখী পরিবার ছিলাম কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টির অত্যাচার সবকিছু কেমন ওলট-পালট করে দিল। আমার স্বামী সবসময় আমাকে মারধর করেন, চিৎকার-চেঁচামেচি করেন, একটা দিনের জন্য আমরা শান্তি পাইনি। কবে এর শেষ? আমি দিন দিন আরো মুষড়ে পড়ছিলাম। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম এবং তাঁর বাক্যের এই অনুচ্ছেদটির কথা ভাবলাম: “সত্যের জন্য তোমাকে কষ্ট পেতে হবে, তোমাকে সত্যের প্রতি নিজেকে প্রদান করতে হবে, তোমাকে সত্যের জন্য অপমান সহ্য করতে হবে, এবং আরও বেশি করে সত্যকে অর্জন করতে তোমাকে আরও বেশি কষ্ট সহ্য করতে হবে। এটাই তোমার করা উচিত। একটি শান্তিপূর্ণ পারিবারিক জীবনের স্বার্থে তুমি সত্যকে ছুঁড়ে ফেলে দিও না, এবং ক্ষণিকের আনন্দের জন্য নিজের জীবনের মর্যাদা এবং সততা হারিয়ে ফেলো না। যা কিছু সুন্দর এবং যা কিছু ভালো, সে সব তোমার অন্বেষণ করা উচিত, এবং তোমার জীবনে আরো অর্থবহ পথ অনুসরণ করা উচিত। তুমি যদি এমন অমার্জিত জীবন যাপন করো, এবং কোনো উদ্দেশ্যের অনুসরণ না করো, তাহলে কি তুমি তোমার জীবন নষ্ট করছ না? এমন জীবন থেকে তুমি কী লাভ করতে পারো? একটি সত্যের জন্য তোমার যাবতীয় দৈহিক ইচ্ছা ত্যাগ করা উচিত, সামান্য ভোগ-বিলাসের জন্য যাবতীয় সত্যকে ত্যাগ করা উচিত নয়। এই ধরনের মানুষের কোন সততা বা মর্যাদা নেই; তাদের অস্তিত্ব অর্থহীন!(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, পিটারের অভিজ্ঞতাঃ তার শাস্তি ও বিচারের জ্ঞান)। ঈশ্বরের এই বাক্য আমাকে তাঁর ইচ্ছা উপলব্ধি করতে সাহায্য করল। আমি একনিষ্ঠ ভাবে ঈশ্বরকে অনুসরণ করছিলাম এবং নিজের দায়িত্ব পালন করছিলাম—আমি সত্যান্বেষণের পথেই অবিচলিত ছিলাম। আমার পরিবারের সদস্যরা অর্থ ও যশের পেছনে ছুটছিল। আমাদের পথ ছিল আলাদা, তার ফলে আমার পরিবার যে ভেঙে যাবে সেটা এক প্রকার অনিবার্যই ছিল। সত্যকে লাভের জন্য আমাকে সেই যন্ত্রণা মেনে নিতেই হত। এর একটা অর্থ ছিল। নিজের পরিবারের জন্যও আমি নিজের বিশ্বাস ত্যাগ করতে পারিনি। তাই আমি তাদের বললাম, “আমি নিশ্চিত যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই সত্য ঈশ্বর, ত্রাণকর্তা যিনি মানবজাতিকে রক্ষা করতে এসেছেন। কোনোমতেই আমি আমার বিশ্বাস ত্যাগ করব না”। আমার মনের পরিবর্তন অসম্ভব দেখে তারা সবাই চলে গেল।

এক সন্ধ্যায় এক সভা থেকে বাড়ি ফিরে দেখি আমার স্বামী টেবিলের মাথা রেখে কাত হয়ে শুয়ে রয়েছেন, মদ্যপ অবস্থায় কেঁদে চলেছেন। তিনি বললেন, “তুমি প্রতিদিন সভায় যাও। আবার যদি কোনোদিন গ্রেপ্তার হয়ে যাও তাহলে শুধু তোমার জন্য আমার পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে”। তারপর তিনি রাগের চোটে টেবিলটাকে উলটে ফেলে দিলেন, এক হাতে আমার জামা টেনে ধরলেন এবং অন্য হাত দিয়ে আমাকে থাপ্পড় মারলেন। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি এক ধাক্কায় আমাকে বাথরুমের মেঝেতে ফেলে দিলেন এবং মাথায় প্রচণ্ড আঘাত করে ক্রুদ্ধস্বরে বললেন, “নিজের বিশ্বাস ত্যাগ করো! আজ রাতে আমি সব ঝুঁকি নিতে রাজি আছি—আমি তোমাকে আজ মেরেই ফেলব। আর তোমার বাঁচা-মরায় তোমার নিজের পরিবারেরও কিচ্ছু যায় আসে না”। আমার মাথা ঝিমঝিম করছিল এবং মাথায় আঘাত লাগার ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছিল। তিনি আমাকে টানতে টানতে সিঁড়ির মুখে এনে ওপর থেকে ঠেলে ফেলে দিলেন আর বললেন, “যদি তুমি পড়ে মরে যাও তাহলে তোমরা লাশটা পুড়িয়ে চিতাভস্ম নদীতে ভাসিয়ে দেব”। তাঁর মুখে এই কথা শুনে আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম—বার বার আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাচ্ছিলাম। ঈশ্বরের সুরক্ষার কল্যাণে একেবারে শেষ মুহূর্তে আমি রেলিং-এর ওপর একটা দড়ি ধরে ফেললাম, ফলে কোনমতে সিঁড়ি থেকে পড়ার হাত থেকে বেঁচে গেলাম। তারপর আমাদের ছোট ছেলে এসে আমার স্বামীকে বলল, “মদ খেয়ে মাথাটা খারাপ হয়ে নাকি তোমার? মা নিজের বিশ্বাস নিয়ে অন্যায় তো কিছু করেনি। তবে তুমি মাকে মারছ কেন?” তখন আমার স্বামীর উত্তর ছিল, “আমি ওকে মারতে চাই না, কিন্তু আরেকবার যদি গ্রেপ্তার হয়ে যায় তোমার আর তোমার ভাইয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। আমার আর কিছু করার নেই”। ছেলে আমার পাশে এসে দাঁড়ানোয় উনি আমাকে আর মারার সাহস করলেন না, কিন্তু একটা কাচের একটা টেবিল তুলে নিয়ে দেওয়ালে ছুঁড়ে মারলেন, সারা ঘরে তখন কাচের টুকরো। পরে আমি ঈশ্বরের বাক্যে এই কথাটি পড়লাম: “বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসী সঙ্গতিপূর্ণ নয়; বরং তারা একে অপরের বিরোধী(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বর এবং মানুষ একসাথে বিশ্রামে প্রবেশ করবে)। সেটা আমি নিয়ে চিন্তাভাবনা করলাম, এবং মনে মনে আমি এটা জানতাম যে প্রথমে আমার স্বামী যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন তা শুধুমাত্র এই কারণে যে তিনি আশীর্বাদ পেতে চাইতেন। তিনি প্রকৃত বিশ্বাসী ছিলেন না। যখন তিনি শুনলেন যে এই বিশ্বাস থাকলে তাঁর নিজের এবং আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ওপর প্রভাব পড়তে পারে তখন তিনি একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেলেন। তিনি যে শুধু নিজের বিশ্বাস ত্যাগ করলেন তাই নয়, বরং আমাকেও আমার বিশ্বাস থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করলেন। যখন আর তিনি আমাকে বাধা দিতে পারলেন না তখনই তিনি আমাকে শত্রু মনে করে আমার ওপর জুলুম শুরু করলেন কারণ আমার বিশ্বাস তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থকে ক্ষুন্ন করছিল। আমি দেখলাম যে মূলতঃ, আমার স্বামী সত্যকে ঘৃণা করেন এবং ঈশ্বরকে ঘৃণা করেন। নিজের জীবন রক্ষার জন্য তিনি কমিউনিস্ট পার্টির আদেশ মান্য করছিলেন, এবং তিনি জাগতিক ভবিষ্যৎ ও স্বার্থের পেছনে ছুটছিলেন। আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস রেখেছিলাম এবং সত্যকে অনুসরণ করছিলাম, জীবনে সঠিক পথটাই বেছে নিয়েছিলাম—আমাদের দুজনের পথ ছিল ভিন্ন। আমার বিশ্বাসের কারণে আমার স্বামী এবং বাকি পরিবার যেভাবে আমার ওপর নির্যাতন করছিল তাতে আমি স্পষ্টই দেখতে পেলাম যে তারা এমনই দুষ্ট প্রকৃতির এবং মন্দ সত্তাবিশিষ্ট যে তারা সবাই ঈশ্বর বিরোধী। আমার স্বামী একসময় সভায় গেছেন এবং তিনি জানেন যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই প্রকৃত ঈশ্বর। আমি আমার আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে সুসমাচার ভাগ করে নিয়েছি এবং ঈশ্বরের অনেক বাক্য পাঠ করেছি। তাদের কেউই বিশ্বাসী হয়ে ওঠেনি, এবং যে মুহূর্তে আমার বিশ্বাস তাদের স্বার্থে আঘাত করল সেই মুহূর্তে তারা কমিউনিস্ট পার্টির কথা মেনে আমার ওপর নির্যাতন চালালো, আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেওয়ার কথা বলল। এরা কী ধরনের প্রিয়জন? এরা পুরোপুরি শয়তানের চাটুকার, কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ নিচ্ছে, ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কাজ করছে। ঈশ্বর এখন দেহধারণ করেছেন এবং সত্যের প্রকাশ ঘটাচ্ছেন, সমস্ত ধরনের মানুষের প্রকৃতি ও সারসত্যকে উন্মোচিত করছেন, তা থেকেই আমি বুঝেছি যে আমি আমার পরিবারের থেকে ভিন্ন পথ নিয়েছি—বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী, এরা সম্পূর্ণ দুই গোত্রের মানুষ। এই সমস্ত কথা যখন উপলব্ধি করলাম তখন কিন্তু আমার কিন্তু নিজেকে আবদ্ধ লাগেনি, বরং একটা মুক্তির স্বাদ অনুভব করেছিলাম।

পরে আমি ঈশ্বরের বাক্য থেকে এই অনুচ্ছেদটি পাঠ করলাম: “হাজার হাজার বছর ধরে এটি কলুষিত স্থান হয়ে রয়েছে। এই স্থান অসহনীয়ভাবে দূষিত, প্রভূত দুর্দশাগ্রস্ত, প্রেতাত্মারা উন্মত্তের মতো সর্বত্র বিচরণ করে, ছলচাতুরী ও শঠতা করে, ভিত্তিহীন অভিযোগ করে, নির্মম ও দুশ্চরিত্র আচরণ করে, এই প্রেতাত্মার শহরকে পদদলিত করে আর মৃতদেহ দিয়ে তাকে ভরিয়ে দেয়; পচনের দুর্গন্ধ এই ভূমিকে ঢেকে রাখে আর বাতাসকে অধিগ্রহণ করে, আর এই ভূমি ভীষণভাবে সুরক্ষিত। আকাশের ওপারের জগৎকে কে দেখতে পায়? শয়তান মানুষের সমস্ত শরীরকে দৃঢ় বন্ধনে বেঁধে ফেলে, তার দুচোখ আবৃত করে রাখে, এবং তার দু-ঠোঁট বলিষ্ঠভাবে বন্ধ করে রাখে। শয়তানদের রাজা বহুবছর ধরে উন্মত্ত আচরণ করেছে, আজ পর্যন্ত তা-ই করে চলেছে, এখনও সে প্রেতাত্মাদের শহরে প্রতিনিয়ত নজর রাখে, যেন এটি শয়তানদের এক দুর্ভেদ্য প্রাসাদ; এদিকে, এই প্রহরীর দল জ্বলন্ত দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে, এই গভীর আতঙ্কে যে ঈশ্বর অজান্তেই তাদের ধরে ফেলবেন আর সবাইকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবেন, তাদের কোনো সুখের বা শান্তির জায়গা রাখবেন না। এমন এক প্রেতাত্মাদের শহরের লোকেরা কী করে ঈশ্বরকে কখনো দেখে থাকতে পারে? তারা কি কখনো ঈশ্বরের বন্ধুত্বপূর্ণতা ও মাধুর্য উপভোগ করেছে? মনুষ্যজগতের বিষয়ে তাদের উপলব্ধি কতটুকু? তাদের মধ্যে কে ঈশ্বরের সাগ্রহ ইচ্ছা উপলব্ধি করতে সক্ষম? তাহলে আশ্চর্যের কিছু নেই যে ঈশ্বরের অবতার সম্পূর্ণ প্রচ্ছন্ন থাকেন: এইরকম একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজে, যেখানে শয়তানেরা নির্দয় ও অমানবিক, সেখানে শয়তানদের রাজা, যে মানুষকে নির্দ্বিধায় হত্যা করে, সে কীভাবে এমন একজন ঈশ্বরের অস্তিত্ব সহ্য করবে যিনি প্রেমময়, দয়ালু, এবং সেইসাথে পবিত্র? সে কী করে ঈশ্বরের আগমনকে সাধুবাদ জানাবে ও উল্লসিত হবে? এইসব পদলেহনকারী দাস! তারা দয়ার প্রতিদান দেয় ঘৃণার মধ্যে দিয়ে, তারা বহু আগেই ঈশ্বরের সাথে শত্রুর মতো আচরণ করতে আরম্ভ করেছে, তারা ঈশ্বরের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, তারা চূড়ান্ত অসভ্য, ঈশ্বরের প্রতি তাদের ন্যূনতম সম্মান নেই, তারা হরণ ও লুণ্ঠন চালায়, তারা সমস্ত বিবেকবোধ হারিয়েছে, সমস্ত বিবেকবোধের বিপরীতে চলে, এবং সরলদের বোধশক্তিহীন হতে প্রলুব্ধ করে। প্রাচীন পূর্বপুরুষেরা? প্রিয় নেতৃবৃন্দ? তারা সকলে ঈশ্বরের বিরোধিতা করে! তাদের হস্তক্ষেপ স্বর্গের নিচের সমস্তকিছুকে এক অন্ধকার ও বিশৃঙ্খলাময় অবস্থায় নিয়ে এসেছে! ধর্মীয় স্বাধীনতা? নাগরিকদের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ? এগুলো সবই পাপকে ঢাকা দেওয়ার কৌশল!(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, কাজ এবং প্রবেশ (৮))। ঈশ্বরের কথাগুলি খুবই বাস্তববাদী। ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি হল শয়তান, ক্ষমতা এখন শয়তানের দখলে। এই পার্টি ঈশ্বরকে ঘৃণা করে এবং যে সমস্ত মানুষের বিশ্বাস রয়েছে এবং যারা ঈশ্বরকে অনুসরণ করে তাদের এই পার্টি সহ্য করতে পারে না। এই পার্টি চায় একমাত্র তাকেই মানুষ অনুসরণ এবং পূজা করুক। কমিউনিস্ট পার্টি ধর্মীয় স্বাধীনতার ধ্বজা ওড়ানোর ভান করে কিন্তু বিশ্বাসীদের ওপর গোপনে অত্যন্ত হিংস্র ভাবে দমনপীড়ন চালায় এবং তাদের গ্রেপ্তার করে, এবং বিশ্বাসীদের পরিবারের বহু প্রজন্মকে অপরাধী সাব্যস্ত করে। এই পার্টি এমনকী, মিথ্যা খবর ও গুজব ছড়িয়ে সেইসমস্ত মানুষকে বিভ্রান্ত করে যারা সত্যটা জানে না এবং বিশ্বাসীদের বিরোধিতা করার জন্য চিনের মানুষকে খেপিয়ে তোলে। কমিউনিস্ট পার্টি এভাবে কত মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে ও তাদের শোষণ করেছে, এবং তারা ঈশ্বরকে অস্বীকার ক’রে ও ঈশ্বরের বিরোধিতা ক’রে এবং বিশ্বাসীদের ওপর অত্যাচার ক’রে পার্টির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেছে। কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সঙ্গে তারা সবাই বিলুপ্তির সম্মুখীন হবে—তারা সকলে ঈশ্বরের দ্বারা দণ্ডিত এবং নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আমরা একটা সুখী পরিবার ছিলাম, কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টির নিপীড়ন ও প্রেপ্তারিরকারণে তারা বিপদে পড়ার ভ্য পেল এবং শয়তানের হাতিয়ার হয়ে আমার উপর অত্যাচার শুরু করল। সত্যকে ঘৃণা করা ও ঈশ্বরকে ঘৃণা করার যে দুষ্ট প্রকৃতি কমিউনিস্ট পার্টির রয়েছে আমি তা পরিষ্কার দেখেছিলাম, এবং আমি এও দেখেছিলাম যে একমাত্র ঈশ্বরের মনেই মানুষের জন্য প্রকৃত ভালোবাসা রয়েছে। ঈশ্বরের বাক্যই আমাকে নিরন্তর পথ প্রদর্শন করেছে, আমাকে বিশ্বাস যুগিয়েছে এবং সত্যকে উপলব্ধি করতে তথা শয়তানের কারসাজিগুলোকে চিনতে সাহায্য করেছে। আমার স্বামী এখনও আমার বিশ্বাসের পথরোধ করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু আমি আর তাঁর বাধা মানি না। আমি এখনও বিভিন্ন সভায় যাই এবং আমার কর্তব্য পালন করি, এবং ঈশ্বরকে অনুসরণ করার ব্যাপারে এখন আমি আগের থেকে অনেক বেশি দৃঢ়সংকল্প। ঈশ্বরকে আমি হৃদয় থেকে ধন্যবাদ জানাই!

পূর্ববর্তী: আ বাউন্ডেন ডিউটি

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

একটা কঠিন পরিবেশের পরীক্ষা

ছোট থেকেই আমি সবসময় সমাজের দ্বারা প্রভাবিত হতাম। আমি আমার সব কিছু অন্যান্য মানুষদের মতই করতে পছন্দ করতাম। আমার চারপাশের লোকেরা খ্রীষ্টান...

মায়ানমারবাসী এক খ্রীষ্টানের মৃত্যুর পর নরকের অভিজ্ঞতা

ছোটবেলাতেই খ্রীষ্টধর্ম সম্পর্কে আমার আগ্রহ জন্মায়, কিন্তু আমার পরিবার যেহেতু বৌদ্ধ ছিল, তাই আমি খ্রীষ্টান হয়ে যাইনি। তখন নরকের কথা আমি...

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন