আমি কেন দায়িত্ব নিতে চাই না?
দু’হাজার একুশের অক্টোবর মাসে, আমি ভিডিওর কাজ পরিচালনার প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলাম। আমাকে ব্রাদার লিও আর সিস্টার ক্লেয়ারের পার্টনার করা হয়েছিল। ওরা আরো অনেক বেশি দিন ধরে এই কাজ করছিল, ওদের অভিজ্ঞতাও আমার চেয়ে অনেক বেশি ছিল, তাই ওরাই কাজের তদারক করা আর বেশিরভাগটা সামলানোয় নেতৃত্ব দিলো। আমি ছিলাম নতুন, আর তখনও খুব একটা বুঝতাম না, তাই স্বাভাবিকভাবেই আমার ভূমিকা ছিল সামান্য। আমি ভাবলাম যতক্ষণ আমার কাজ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই, সব ভালোই থাকবে আর অন্যরাই বাকি সব সামলে নেবে। এর ফলে আমাকে বেশি দুশ্চিন্তা করতে হবে না, কিছুর জন্য আমাকে দায়ী করাও হবে না। ধীরে ধীরে আমি নিজের কাঁধে দায়িত্ব নেওয়া কমিয়ে দিলাম, আর বাকি দুজনের কাজ খুব একটা বুঝতামও না, তাতে অংশগ্রহণও করতাম না। কাজ সম্পর্কিত কোনো আলোচনায় নিজের কোনো মতামত দিতাম না, আর অবসর সময় আরামে কাটাতাম আর ধর্মবিমুক্ত ভিডিও দেখতাম। এর মধ্যে কোনো ভুল আছে বলে আমার মনে হয়নি।
একদিন বিকেলে একজন নেত্রী আমার কাছে এল। বলল যে লিও আর ক্লেয়ার ওদের কাজের জন্য অন্য এক জায়গায় যাচ্ছে, তাই আমাকে আরো দায়িত্ব নিতে হবে, আরও চেষ্টা করতে হবে, আর ভিডিওর কাজটা নিজের হাতে নিতে হবে। এই আকস্মিক পরিবর্তনে আমি মুহূর্তের জন্য হতবাক হয়ে গেলাম। আমার এখনও এই কাজে বেশিদিন হয়নি, আর এত বেশি কাজ, এটা খুবই চাপের হয়ে গেল না? ওরা যে কাজ সামলাতো তা বেশ জটিল, প্রচুর মনোযোগ দিতে হয়। যাদের দক্ষতার অভাব রয়েছে তাদের নির্দেশ দেওয়ার জন্য আমাকে প্রয়োজনীয় উপাদান খুঁজতে হবে, আর যদি তারা না পারে তাহলে আমাকেই দায়িত্ব নিতে হবে। লিও আর ক্লেয়ার খুবই দক্ষ ছিল, আর সাধারণত খুব ব্যস্ত থাকতো। নতুন ছিলাম বলে আমার দরকার ছিল আরও বেশি সময় দেওয়া। আর কি কখনও অবসর সময় পাবো? যদি এই কাজ করতে না পারি আর দেরি করি, তা কি অপরাধ হবে? আমার মনে হল, আরও উপযুক্ত কাউকে খুঁজে নেওয়াই নেত্রীর পক্ষে ভালো হবে। চুপ করে আছি দেখে নেত্রী আমার মতামত জানতে চাইল। ভেতরে-ভেতরে প্রতিরোধ অনুভব করলাম, কিছু বলতে চাইলাম না। আলোচনা শেষ হলে বেরিয়ে গেলাম। যখন ভাবলাম যে এবার কত সমস্যা আর কষ্ট আমার উপর আসবে, চাপে আমার দমবন্ধ লাগছিল, মনে হচ্ছিল সামনের দিনগুলো অসহনীয় হতে চলেছে। অনেক চিন্তা করেও আমার মনে হল এ কাজ আমি করতে পারবো না। পরে নেত্রীর কাছ থেকে আমার অবস্থা জানতে চেয়ে একটা মেসেজ পেয়েই তাড়াতাড়ি উত্তর দিলাম: “আমার মনে হচ্ছে যে এই কাজটা আমি করতেই পারবো না। আপনি হয়ত আরো যোগ্য কাউকে পেয়ে যাবেন।” নেত্রী তখন জিজ্ঞাসা করল: “কীসের ভিত্তিতে তোমার নিজেকে অযোগ্য মনে হচ্ছে?” আমি সত্যিই জানতাম না এর উত্তরে কী বলবো। আমি তখনও চেষ্টাই করিনি, জানতামই না আমি ওই কাজের যোগ্য কি না। কিন্তু কাজের চাপ আর তার শারীরিক পরিশ্রমের কথা চিন্তা করে আমি প্রত্যাখ্যান করতে চেয়েছিলাম। এটা কি দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া নয়? তারপর ভাবলাম প্রতিদিন আমি যাকিছুর সম্মুখীন হই তা সবই ঈশ্বরের অনুমোদিত, আর আমার উচিত সমর্পণ করা। তাই আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম: “প্রিয় ঈশ্বর, আমার দুজন পার্টনার অন্য জায়গায় যাচ্ছে, আর সম্পূর্ণ কাজটা আমার কাছেই আসছে। আমার ভিতরে প্রতিরোধ আর সমর্পণে অনীহা দেখা দিচ্ছে। জানি এই অবস্থা অসমীচীন, কিন্তু আমি তোমার ইচ্ছা উপলব্ধি করতে পারছি না। দয়া করে আমাকে আলোকিত করো আর পথনির্দেশ দাও যাতে আমি সমর্পণ করতে পারি।”
প্রার্থনার পর একজন সিস্টার আমাকে ঈশ্বরের বাক্যের একটা অনুচ্ছেদ পাঠাল, যেখানে আমার অবস্থার কথাই বলা ছিল। ঈশ্বর বলেন, “একজন সৎ ব্যক্তির বহিঃপ্রকাশগুলি কী কী? প্রথমত, ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি কোনো সন্দেহ না থাকা, এটা একজন সৎ ব্যক্তির প্রকাশ। এছাড়া, সমস্ত বিষয়েই সত্যের অন্বেষণ ও অনুশীলন করা—এটা কোনও সৎ ব্যক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশ, এবং সবচেয়ে গুরুতরও। তুমি বল যে তুমি সৎ, কিন্তু সর্বদা ঈশ্বরের বাক্যকে মনের পিছনে ঠেলে দিয়ে নিছকই নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করো। এটা কি কোনো সৎ ব্যক্তির লক্ষণ? তুমি বল, ‘আমার যোগ্যতা ক্ষীণ হলেও আমার হৃদয় সৎ।’ এবং তা সত্ত্বেও যখন তোমার ওপর কোনো দায়িত্ব এসে পড়ে, তুমি কষ্টভোগের ভয়ে এবং ভালোভাবে সে কাজ সম্পন্ন করতে না পারার দায়ভার নেওয়ার ভয়ে, সেই দায়িত্ব এড়িয়ে চলার জন্য অজুহাত দাও, অথবা পরামর্শ দাও যে অন্য কেউ সেটা করুক। এটা কি একজন সৎ ব্যক্তির বহিঃপ্রকাশ? স্পষ্টতই তা নয়। তাহলে, একজন সৎ ব্যক্তির কেমন আচরণ করা উচিত? তাদের উচিত ঈশ্বরের আয়োজনের কাছে সমর্পণ করা, যে দায়িত্ব তাদের পালন করার কথা তাতে নিবেদিত হওয়া, এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা পূর্ণ করার জন্য সচেষ্ট হওয়া। এটা বিভিন্ন উপায়ে প্রকাশিত হয়। এগুলোর একটা হল, সৎ হৃদয়ে নিজের দায়িত্ব গ্রহণ করা, নিজের দৈহিক স্বার্থ বিবেচনা না করা, এই দায়িত্বের বিষয়ে দ্বিমনা না হওয়া, অথবা তোমার নিজের স্বার্থের পরিকল্পনা না করা। এটা সততার প্রকাশ। অপর একটা বিষয় হলো, সমগ্র হৃদয় ও নিজের সমস্ত ক্ষমতা দিয়ে ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করা, সমস্ত কাজ যথাযথভাবে করা, এবং ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য তোমার কর্তব্য সম্পাদনে হৃদয় ও ভালোবাসা অর্পণ করা। দায়িত্ব সম্পাদনকালে এগুলোই সৎ ব্যক্তির প্রকাশ হওয়া উচিত। তুমি যা জানো ও বোঝো তা যদি সম্পাদন না করো, যদি তুমি শুধু ৫০ বা ৬০ শতাংশ প্রচেষ্টা প্রয়োগ করো, তাহলে তুমি নিজের সমগ্র হৃদয় ও ক্ষমতা প্রয়োগ করছ না, তুমি বিশ্বাসযোগ্য নও এবং কাজে ফাঁকি দেওয়ার উপায় খুঁজছ। যারা এইভাবে দায়িত্ব সম্পাদন করে তারা কি সৎ? একেবারেই না। এই ধরনের অনির্ভরযোগ্য ও প্রবঞ্চক লোকেরা ঈশ্বরের ব্যবহারের যোগ্য নয়; তাদের অবশ্যই বহিষ্কার করা উচিত। দায়িত্ব পালনের জন্য ঈশ্বর শুধুমাত্র সৎ ব্যক্তিদের ব্যবহার করেন। এর অর্থ হল, এমনকি অনুগত সেবা-প্রদানকারীদেরও অবশ্যই সৎ হতে হবে। যে সব মানুষ যারা চিরকালই অযত্নবান ও অগভীর, যারা সর্বদা নীতিবর্জিত এবং ফাঁকি দেওয়ার উপায় খুঁজছে, তারা সকলেই প্রতারক, তারা সকলেই দানব, তাদের কেউই ঈশ্বরে প্রকৃত বিশ্বাস করে না, এবং তাদের সবাইকে বহিষ্কৃত করা হবে। কিছু লোক মনে করে, ‘একজন সৎ মানুষ হওয়া বলতে শুধু সত্যি কথা বলা এবং মিথ্যা না বলাকেই বোঝায়। একজন সৎ মানুষ হওয়া সত্যিই সহজ।’ এই মানসিকতার বিষয়ে তুমি কী মনে করো? একজন সৎ মানুষ হওয়ার পরিধি কি এতই সীমিত? একেবারেই না। তোমাকে তোমার হৃদয় প্রকাশ করতে হবে এবং তা ঈশ্বরকে সমর্পণ করতে হবে; একজন সৎ ব্যক্তির এইরকম মনোভাবই থাকতে হবে। এই কারণেই সৎ হৃদয় খুবই মূল্যবান। এর নিহিতার্থ কী? সেটা হলো, এই হৃদয় তোমার আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং তোমার অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে। এটা তোমাকে সঠিক নির্বাচন করার প্রতি, এবং ঈশ্বরে সমর্পিত হওয়ার প্রতি ও তাঁর স্বীকৃতি অর্জনের প্রতি চালিত করতে পারে। এই হৃদয় সত্যিই মূল্যবান। যদি তোমার এরকম সৎ হৃদয় থাকে, তাহলে তোমার উচিত এই অবস্থায় জীবনযাপন করা, এইরকম আচরণ করা এবং এইভাবেই নিজেকে নিয়োজিত করা” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। ঈশ্বরের বাক্য আমাকে খুবই লজ্জায় ফেলে দিলো। যখন সৎ ব্যক্তিরা নিজেদের দায়িত্বের সম্মুখীন হয়, তখন তারা সেই কাজে কোনো ঝুঁকি থাকতে পারে কি না সেই বিষয়টা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে না। কষ্টভোগের দুশ্চিন্তাবশত তারা নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যায় না। বরং দায়িত্ব গ্রহণ করে তাতে যথাসাধ্য অর্পণ করার মাধ্যমেই তারা আরম্ভ করে। এটাই সৎ মনোভাব। তখন আমি দায়িত্বের প্রতি আমার মনোভাবের কথা চিন্তা করলাম। পার্টনাররা অন্য জায়গায় যাচ্ছে শোনামাত্র কাজ, দুশ্চিন্তা আর চাপ বেড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। কাজ ভালোভাবে না হলে আমিই দায়ী হবো, তাই এর থেকে বেরোনোর জন্য বলেছিলাম যে আমি উপযুক্ত নই। আমি সত্যিই শঠতা করছিলাম। চিন্তা করলাম প্রার্থনার সময় কীভাবে আমি ঈশ্বরের কার্যভারের প্রতি মনোযোগী হওয়ার অঙ্গীকার করেছি, কিন্তু সেটার সম্মুখীন হয়ে তার পরিবর্তে নিজের দেহের প্রতি মনোযোগী হয়েছি, কোনো সত্যেরই অনুশীলন করিনি, নিছকই শূন্যগর্ভ কথা বলে ঈশ্বরকে প্রতারণা করেছি। যদি সত্যিই ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি মনোযোগী হতাম, জানতাম যে আমি ওই কাজের যোগ্য নই, আর উপযুক্ত অন্য কাউকে খুঁজে পাওয়া না যেত, তাহলে আমার উচিত ছিল নিজের দক্ষতাকে শানিত করা এবং অন্যদের সাথে সহযোগিতা করা যাতে ভিডিওর কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে আটকানো যায়। বিবেক ও মানবিকতাসম্পন্ন কোনো মানুষের এটাই করণীয়। যদি সত্যিই কাজের উপযুক্ত না হতাম আর আমাকে অপসারিত করা হতো, তাহলে আমার উচিত হতো শুধু ঈশ্বরের আয়োজনের কাছে সমর্পণ করা। এটাই অনুশীলনের যুক্তিপূর্ণ পদ্ধতি। এই চিন্তা করে আমি একটু শান্ত বোধ করলাম।
তারপর ঈশ্বরের বাক্যের একটা অনুচ্ছেদ পড়ে নিজের মনোভাব নিয়ে আমার কিছুটা উপলব্ধি হল। ঈশ্বর বলেন, “যারা সত্যের অন্বেষণ করে না তারা সকলেই কর্তব্যবোধের অভাবসম্পন্ন মানসিকতা নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করে। ‘কেউ নেতৃত্ব দিলে আমি অনুসরণ করবো; তারা যেখানেই নিয়ে যাবে, আমি যাবো। তারা আমাকে দিয়ে যা করাবে আমি তা-ই করবো। দায়িত্ব ও উদ্বেগ গ্রহণ করা, বা কিছু একটা করার জন্য আরও অসুবিধা স্বীকার করা, সমস্ত হৃদয় ও শক্তি দিয়ে কিছু করা—ওসব আমার দ্বারা হবে না।’ এই মানুষেরা মূল্য প্রদান করতে আগ্রহী নয়। এরা শুধু নিজেদের প্রয়োগ করতে ইচ্ছুক, দায়িত্ব নিতে নয়। এই মনোভাব নিয়ে কেউ প্রকৃতপক্ষে কর্তব্য সম্পাদন করতে পারে না। নিজের দায়িত্বপালনে হৃদয় অর্পণ করতে শেখা উচিত, আর বিবেকসম্পন্ন একজন মানুষই দায়িত্বপালনে নিজের হৃদয় অর্পণ করতে পারে। কেউ যদি কখনো তার কর্তব্যে হৃদয় অর্পণ না করে, এর অর্থ হল তাদের বিবেক নেই, আর যাদের বিবেক নেই, তারা সত্যকে অর্জন করতে পারে না। কেন আমি বলছি যে তারা সত্যকে অর্জন করতে পারে না? তারা জানে না কীভাবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে হয় এবং পবিত্র আত্মার আলোকপ্রাপ্তির সন্ধান করতে হয়, অথবা কীভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি বিবেচনা প্রদান করতে হয়, অথবা কীভাবে ঈশ্বরের বাক্যের চিন্তায় হৃদয় অর্পণ করতে হয়, অথবা তারা এ-ও জানে না যে কীভাবে সত্যের সন্ধান করতে হয়, কীভাবে ঈশ্বরের প্রয়োজন ও তাঁর ইচ্ছাকে উপলব্ধি করার অন্বেষণ করতে হয়। সত্যের সন্ধানে অসমর্থ হওয়া একেই বলে। তোমরা কি এমন অবস্থায় রয়েছ, যে অবস্থায় থাকলে যা-ই ঘটুক, যে ধরনের দায়িত্বই তুমি পালন করো, তুমি প্রায়শই ঈশ্বরের সম্মুখে শান্ত থাকতে সক্ষম হও, এবং তোমার হৃদয় অর্পণ করতে সক্ষম হও তাঁর বাক্যের চিন্তায়, সত্যের সন্ধানে, এবং এই বিবেচনায় যে ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে কীভাবে তোমাকে দায়িত্বপালন করতে হবে, আর সেই দায়িত্ব সন্তোষজনকভাবে পালন করতে গেলে কোন কোন সত্যের অধিকারী তোমায় হতে হবে? খুব বেশিবার কি এমন হয়েছে যে তোমরা এই উপায়ে সত্যের সন্ধান করেছ? (না।) কর্তব্যের প্রতি হৃদয় অর্পণ করা এবং দায়িত্ব গ্রহণ করতে সক্ষম হওয়ার জন্য তোমাকে কষ্টভোগ করতে হবে ও মূল্য প্রদান করতে হবে—শুধু এ সম্পর্কে কথা বলাই যথেষ্ট নয়। তুমি যদি তোমার কর্তব্যে নিজের হৃদয় অর্পণ না করো, পরিবর্তে সবসময় শারীরিক প্রচেষ্টা প্রয়োগ করতে চাও, তাহলে তোমার দায়িত্ব অবশ্যই ভালোভাবে সম্পন্ন হবে না। তুমি শুধু গতানুগতিকভাবেই চলতে থাকবে, এবং জানতে পারবে না তোমার দায়িত্ব তুমি কতটা ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছ। যদি তাতে তোমার হৃদয় অর্পণ করো, তুমি ক্রমশ সত্যের উপলব্ধিতে এসে পৌঁছবে, যদি তা না করো, তাহলে পারবে না। যখন তুমি তোমার দায়িত্বে এবং সত্যের অন্বেষণে নিজের হৃদয় অর্পণ করো, তুমি তখন ধীরে ধীরে সক্ষম হয়ে ওঠো ঈশ্বরের ইচ্ছাকে উপলব্ধি করতে, নিজের ভ্রষ্টতা ও ঘাটতিগুলোকে আবিষ্কার করতে, এবং তোমার সকল বিভিন্ন অবস্থাকে আয়ত্ত করতে। তোমার সমস্ত মনোযোগ যদি শুধু পরিশ্রম প্রয়োগ করার দিকেই থাকে, আর হৃদয়কে আত্মপ্রতিফলনে অর্পণ না করো, তাহলে তোমার হৃদয়ের প্রকৃত অবস্থা এবং বিভিন্ন পরিবেশে তোমার অসংখ্য প্রতিক্রিয়া ও ভ্রষ্টতার বহিঃপ্রকাশ তুমি আবিষ্কার করতে সমর্থ হবে না। যদি তুমি কোনো সমস্যার সমাধান না করো এবং তা না করার পরিণামও না জানো, তাহলে তুমি বেশ বড় সমস্যার মধ্যে রয়েছ। এই কারণেই ঈশ্বরে বিভ্রান্তভাবে বিশ্বাস করা একেবারেই চলে না। তোমাকে সর্বক্ষণ, সমস্ত স্থানে, ঈশ্বরের সম্মুখেই জীবনযাপন করতে হবে; তোমার উপর যা-ই নেমে আসুক, তোমাকে সবসময় সত্যের সন্ধান করতে হবে, এবং তা করার সময় তোমাকে আত্মপ্রতিফলন করতে হবে আর জানতে হবে যে তোমার অবস্থায় কী কী সমস্যা রয়েছে, তৎক্ষণাৎ তা সমাধান করার জন্য সত্যের সন্ধান করতে হবে। একমাত্র এইভাবেই তুমি নিজের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে পারো এবং কাজে বিলম্ব হওয়াকে প্রতিহত করতে পারো। সবচেয়ে যা গুরুত্বপূর্ণ তা কেবল নিজের দায়িত্বের সুষ্ঠু পালনই নয়, বরং তোমার জীবনে প্রবেশের অধিকারী হওয়া এবং নিজের ভ্রষ্ট স্বভাবের সমাধান করতে সক্ষম হওয়াও। একমাত্র এইভাবেই তুমি সত্যের বাস্তবিকতায় প্রবেশ করতে পারো। তোমার হৃদয়ে প্রায়শই তুমি যা চিন্তা করো তা যদি তোমার দায়িত্বপালন সম্পর্কিত না হয়, তা যদি সত্যের সাথে সম্পর্কিত বিষয় না হয়, পরিবর্তে তুমি বাহ্যিক বিষয়ে, নিজের দেহগত চিন্তাভাবনার বিষয়ে, আবদ্ধ থাকো, তাহলে কি তুমি সত্যকে উপলব্ধি করতে সক্ষম? তাহলে কি তুমি ভালোভাবে তোমার দায়িত্ব পালন করতে এবং ঈশ্বরের সম্মুখে জীবনযাপন করতে সক্ষম? অবশ্যই না। এরকম একজন মানুষের উদ্ধার লাভ করার কোনো উপায় নেই” (বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র সৎ হওয়ার মাধ্যমেই প্রকৃত মানুষ হিসাবে জীবনযাপন করা যায়)। এই ধরনের মনোভাবকে অনাবৃত করার সময় ঈশ্বর ঠিক আমার ছবিই আঁকছিলেন। এই কাজ আরম্ভ করার সময় আমার কোনো দায়িত্বই ছিল না। দেখেছিলাম আমার পার্টনাররা আমার চেয়ে অভিজ্ঞ, তাই আমি ওদেরকেই নেতৃত্ব নিতে দিয়েছিলাম, আর ভেবেছিলাম কিছু গোলমাল না হলে সব ঠিকই থাকবে। যদি এরকম করি, তাহলে আমার সম্মানও বজায় থাকবে, আর আমাকে বেশি পরিশ্রমও করতে হবে না, তাই আমি শুধু ব্যক্তিগত কাজে মনোযোগ দিয়েছিলাম, আর ওরা যে কাজের দায়িত্বে ছিল সেখানে কখনোই মাথা ঘামাইনি, সেখানে যে সমস্যা বা অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছিল সেগুলোকেও গুরুত্ব দিইনি। যখন নেত্রী জিজ্ঞাসা করেছিল আমাদের কাজ এত দুর্বল কেন, আমার কাছে কোনো উত্তর ছিল না। এমনকি কাজে যে সমস্যা বা বিচ্যুতিগুলো আসছিল সেগুলো নিয়েও ওয়াকিবহাল ছিলাম না। অবশেষে উপলব্ধি করলাম, আমি খুব খারাপভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করছিলাম। অত্যন্ত শূন্যগর্ভ, অন্ধ, ও সমস্যার প্রতি অমনোযোগীভাবে নিজের দিনগুলো কাটাচ্ছিলাম। এমনকি যদি কিছু সমস্যার বিষয়ে জানতেও পারতাম, আমার অবস্থানের উপর সেগুলো কোনো প্রভাব ফেলবে না দেখলেই সেগুলো যেমন আছে তেমন ছেড়ে দিতাম, যার ফলে কাজের অগ্রগতি ব্যাহত হতো। এই ধরনের মনোভাব অবিশ্বাসীদেরই সমান। নিজের কর্তব্যে ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি আদৌ কীভাবে মনোযোগ দিচ্ছিলাম? কাজে সমস্যা হলে আমি সত্যের সন্ধান করতাম না বা বিচ্যুতিগুলোর সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করতাম না, কীভাবে দক্ষতা বাড়ানো যায় সেদিকেও বিবেচনা করতাম না। সবসময় ভাবতাম পার্টনাররা সব বিষয়ের দেখাশোনা করছে, তাই আমি আরাম করতে পারি। যখনই সময় পেতাম, দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্যকে প্রশ্রয় দিতাম অথবা ধর্মবিমুক্ত ভিডিও দেখতাম। আমি আরও উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠলাম এবং ঈশ্বরের থেকে আরও দূরে সরে গেলাম। লক্ষ্য করলাম যে দায়িত্বের প্রতি আমার কোনো অধ্যাবসায় নেই। এটাকে নেহাতই একটা চাকরির মতো করে চলেছি। এভাবে চললে কী করে তা ভালোভাবে পালন করতে পারতাম? এই পর্যায়ে এসে আমি অবশেষে বুঝলাম, ঈশ্বরের আয়োজন আমার “বিকল্পদের” চলে যেতে দিয়েছে আমাকে অনুশীলনের একটা সুযোগ দেওয়ার জন্য, বিবেচক হতে শেখানোর জন্য, দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার জন্য, অসুবিধার সময় ঈশ্বরের উপর নির্ভর করার জন্য, এবং সত্যের নীতির সন্ধান করার জন্য। আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে, তা আমাকে বুঝতে দিয়েছে, কর্তব্যের প্রতি আমার দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ ঈশ্বরের বিরক্তি উৎপাদন করছিল। কাজের চাপ এবার আমাকে বাধ্য করবে দায়িত্বপালনে অধ্যাবসায়ী হতে, আর আমাকে সুযোগ দেবে অনুতপ্ত হতে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে দায়িত্ব পালন করার জন্য কাজ করতে। ঈশ্বরের অভিপ্রায় উপলব্ধি করে আমি এই পরিস্থিতির কাছে সমর্পণ করতে ইচ্ছুক হয়ে উঠলাম। পরের কয়েকদিন ধরে সচেতনভাবে আমার কাজে প্রচুর পরিশ্রম করলাম, ভিডিওর কাজে আরও সমস্যা খুঁজে পাওয়ার, আর পাওয়ামাত্র মেটানোর চেষ্টা করলাম। পড়াশোনার একটা রুটিন বানিয়ে কাজের ভার যত শীঘ্র সম্ভব গ্রহণ করতে খুব চেষ্টা করলাম। আমার অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার পর কাজের জন্য আরও সময় পাচ্ছিলাম, আর দিনগুলো আরও শান্তিতে কাটছিল।
পরে আমাকে আর একজন সিস্টারের পার্টনার করা হয়। শুরুর দিকে, আমি তখনও আরও দায়িত্ববান থাকার প্রতি মনোযোগী ছিলাম, কিন্তু কিছু সময় পর, আমি দেখলাম যে সে কাজে খুবই দক্ষ এবং আমার চাইতে তার পেশাদারি দক্ষতাও বেশি, তাই কিছু কাজ তার হাতে ছেড়ে দিয়ে সেগুলোর মধ্যে আর নিজেকে জড়ালাম না। কখনো কখনো আলোচনায় অংশ নিলেও পরামর্শ দেওয়া থেকে বিরত থাকতাম, ভাবতাম: “যেহেতু তুমি বিষয়গুলো সামলাতে পারছ, তাহলে আমার আর চিন্তা করার কিছু নেই, আমি এবার কিছু সময় স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে কাটাতে পারি।” নেত্রী আমাকে সাবধান করল কাজের প্রতি আরও মনোযোগী হতে, আমি কিছুদিনের জন্য মনোযোগ দিলেও অচিরেই পুরোনো পথে ফিরে এলাম। মাঝেমাঝে কিছু জটিল সমস্যা সৃষ্টি হতো যেগুলো তখনই সামলানোর দরকার, কিন্তু যেই দেখতাম যে সেগুলো সিস্টারের কাজ, আমি আর মাথা ঘামাতাম না। ইচ্ছা করে মেসেজগুলো অপঠিত হিসাবে চিহ্নিত করে রাখতাম আর ভান করতাম যেন সেগুলো দেখিনি, ভাবতাম সিস্টার পরে সেগুলো সামলে নিতে পারবে। এটাকে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ বলে মনে হচ্ছিল ঠিকই, কিন্তু যেহেতু কাজ স্বাভাবিকভাবেই এগোচ্ছিল, তাই এ নিয়ে বেশি চিন্তা করিনি। কয়েক মাস পর, আমাদের ভিডিওর আলাদা আলাদা অংশে কাজ করতে বলা হল। এইবার আমাকে সাহায্য করার কেউ ছিল না। নিশ্চিত ছিলাম যে আমাকে এবার প্রচুর সমস্যা আর অসুবিধার সামনে পড়তে হবে। কিন্তু যখন নিজের কাজে দায়িত্ববোধের অভাবের কথা ভাবলাম, আর বিবেচনা করলাম যে কীভাবে এটা আমার জন্য উপকারী হতে পারে, তখন নিজেকে বললাম যে এটার প্রতি সমর্পিত হয়েই আমার আরম্ভ করা উচিত। কিন্তু বাস্তবে কাজটা শুরু করার পর দেখলাম হঠাতই আমাকে অনেক বেশি বিষয়ে দেখাশোনা করতে হচ্ছে, মনে হচ্ছিল তা যেন সীমাহীন। তার উপর, আমার ভালো পেশাদারি দক্ষতা ছিল না, এদিকে আরও বেশি করে সমস্যা এসেই চলেছিল। আমাদের তৈরী প্রতিটা ভিডিওর জন্য নানান পরামর্শ আসছিল, আর তার প্রত্যেকটার উত্তরের জন্য আমাকে চিন্তা করতে হচ্ছিল। ধীরে ধীরে, যেটুকু উৎসাহ আমার ছিল, তা সবই শেষ হয়ে গেল, আর আমি প্রায়ই ভাবতাম, “আমার এত চেষ্টা সত্ত্বেও এত সমস্যা রয়ে যাচ্ছে, হয়তো নেত্রী যদি আমার চেয়ে ভালো কাউকে খুঁজে পায় তাহলেই ভালো হয়।” অল্প সময় পরেই, পরপর আমাদের অনেকগুলো ভিডিও আবার তৈরী করতে হবে বলে ফিরিয়ে দেওয়া হল। এতে আমি আরও বিষণ্ণ হয়ে পড়লাম। আমার আর জটিল সমস্যাগুলো ঠিক করতে ইচ্ছা করতো না, সেই দিনগুলোর অভাববোধ করতাম যখন আমাকে নিজের দায়িত্বপালনের জন্য অন্যদের সাথে পার্টনার করা হয়েছিল, যখন স্বচ্ছন্দে তাদের পিছনে লুকিয়ে পড়তে পারতাম, আর এত চাপ নিতে হতো না। কাজ করার কোনো উদ্যমই আমার ছিল না, পা-গুলোও ভারী লাগতো। তখনই উপলব্ধি করলাম যে এটা দায়িত্ব পালনের সঠিক উপায় নয়। তাই আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম। সন্ধান করতে গিয়ে হঠাৎ নোহের কথা মনে পড়ল। জাহাজ তৈরী করতে গিয়ে সে প্রচুর অসুবিধা আর ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়েছিল, কিন্তু কখনোই হাল ছেড়ে দেয়নি, একশো কুড়ি বছর ধরে কাজ চালিয়ে গিয়েছিল, অবশেষে জাহাজ তৈরী শেষ করে আর ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্ব সম্পূর্ণ করে। কিন্তু আমি সামান্য কিছু সমস্যার সামনে পড়েই সহজ পথটা নিয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছি। আমি কি নিতান্তই কাপুরুষের মতো আচরণ করছিলাম না? এ কথা মনে হওয়ায় আমি নিজেকে কিছুটা ফিরে পেলাম, আর সঠিকভাবে কাজের সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হতে পারলাম।
নিষ্ঠাপালনকালে আমি ঈশ্বরের বাক্যে পড়লাম: “এই অলস ভণ্ড নেতারা কখনোই বাস্তববাদী কাজকর্ম করে না এবং এমন আচরণ করে যেন তাদের নেতৃত্ব কোনো এক কর্মকর্তার পদ, তারা তাদের পদমর্যাদালব্ধ সমস্ত সুযোগসুবিধা পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করে। নেতা হিসাবে যে কর্তব্য তাদের পালন করার কথা, যে কাজ তাদের করার কথা, তারা সেগুলোকে একটা দায়ভার, একটা বিরক্তিকর বিষয় হিসাবে বিবেচনা করে। গির্জার কাজের প্রতি তাদের অন্তরে তারা অবাধ্যতায় পরিপূর্ণ: তাদের যদি কোনো কাজের প্রতি নজর রাখতে বলা হয় বা সেই কাজের সাথে জড়িত সমস্যা খুঁজে বার করতে ও সেগুলোর তদারক করে সমাধান করতে বলা হয়, তারা অনিচ্ছায় ভরে ওঠে। অথচ নেতা ও কর্মীদের এই কাজই করার কথা, এটাই তাদের কর্তব্য। তুমি যদি তা না করো—যদি তা করতে অনিচ্ছুক হও—তাহলে কেন তুমি তা সত্ত্বেও নেতা বা কর্মী হতে চাও? তুমি কি ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি মনোযোগী হওয়ার জন্য নিজের দায়িত্ব পালন করো, না কি কর্মকর্তার পদের সুযোগসুবিধাগুলো উপভোগ করার জন্য? তুমি যদি কোনো কর্মকর্তার পদেই অধিষ্ঠিত হয়ে থাকতে চাও তাহলে একজন নেতা হওয়া কি লজ্জাজনক নয়? এদের থেকে নীচ চরিত্রের আর কেউ হতে পারে না—এদের কোনো আত্মসম্মান নেই, এরা একেবারেই নির্লজ্জ। যদি তুমি দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্যই উপভোগ করতে চাও, তাহলে তাড়াতাড়ি জগতের কাছে ফিরে যাও আর তার জন্য চেষ্টা করো, দখল করো, ছিনিয়ে নাও, যেমন তোমার ক্ষমতা। কেউ হস্তক্ষেপ করবে না। ঈশ্বরের গৃহ হচ্ছে ঈশ্বরের মনোনীত মানুষদের দায়িত্ব পালনের এবং ঈশ্বরের উপাসনা করার স্থান; এটা মানুষের জন্য সত্যের সন্ধান করার ও উদ্ধার লাভের জায়গা। এটা কারোর দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্য আস্বাদন করার জায়গা নয়, মানুষকে প্রশ্রয় দেওয়ার জায়গা তো একেবারেই নয়। … কিছু মানুষ যে কাজই করুক বা যে কর্তব্যই পালন করুক, তারা তাতে সাফল্যলাভে অক্ষম, তা তাদের জন্য অত্যধিক, মানুষের যে দায়বদ্ধতা পূর্ণ করা উচিত বা যে দায়িত্ব পালন করা উচিত, এরা সেসবে অসমর্থ। এরা কি আবর্জনাস্বরূপ নয়? তবু কি এরা মানুষ হিসাবে অভিহিত হওয়ার যোগ্য? জ্ঞানবোধহীন, মানসিক বৈকল্যের শিকার, ও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধক মানুষরা ছাড়া এমন কি জীবিত কেউ আছে যাদের নিজের নিজের কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করা অবশ্যকরণীয় নয়? কিন্তু এই ধরনের মানুষেরা সবসময় গোপনে দুষ্কর্মকে প্রশ্রয় দেয় আর অনৈতিক কাজ করে, এবং নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে চায় না; যার নিহিতার্থ হল যে তারা কোনো প্রকৃত মানুষের মতো আচরণ করতে চায় না। ঈশ্বর তাদের যোগ্যতা ও প্রতিভা দিয়েছেন, তিনি তাদের একজন মানুষ হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন, তবুও তারা তাদের দায়িত্বপালনে সেগুলোকে ব্যবহার করতে পারে না। তারা কিছুই করে না, অথচ সমস্তকিছু উপভোগ করতে চায়। এমন কোনো ব্যক্তি কি মানুষ নামে অভিহিত হওয়ার যোগ্য? তাদের যে কাজের দায়িত্বই দেওয়া হোক—তা গুরুত্বপূর্ণ হোক বা সাধারণ, কঠিন হোক বা সহজ—তারা সর্বদা অযত্নবান ও অগভীর, সবসময় অলস ও অনির্ভরযোগ্য। যখন সমস্যার উদ্ভব হয়, তারা সেগুলোর দায় অন্যের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করে; তারা কোনো দায়িত্বই নেয় না, নিজেদের পরজীবী জীবনই যাপন করে যেতে চায়। তারা কি অকর্মণ্য আবর্জনাস্বরূপ নয়? সমাজে কাকেই বা বেঁচে থাকার জন্য নিজের উপর নির্ভর করতে হয় না? মানুষ পূর্ণবয়স্ক হলে তাকে নিজেকেই নিজের সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হয়। তার বাবা-মা তাদের দায়িত্ব সম্পূর্ণ করেছে। এমনকি যদি তাদের বাবা-মায়েরা তাদের সাহায্য করতে আগ্রহীও হয়, তারা নিজেরাই তাতে অস্বস্তি বোধ করবে, উপলব্ধি করবে, ‘সন্তানকে বড় করে তোলার কাজ আমার বাবা-মা সম্পূর্ণ করেছেন। আমি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ, শারীরিকভাবে সক্ষম—আমার উচিত স্বাধীনভাবে বাঁচতে সমর্থ হওয়া।’ অন্ততঃপক্ষে এইটুকু চেতনা কি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের থাকা উচিত নয়? কারোর যদি সত্যিই চেতনা থাকে, তাহলে তারা নিজেদের বাবা-মায়ের বদান্যতার উপরে ভরসা করে যাওয়া অব্যাহত রাখতে পারবে না; তারা অন্যের হাসির খোরাক হওয়ার ভয়ে, লজ্জিত হওয়ার ভয়ে, ভীত হবে। তাহলে, একজন নিষ্কর্মা অলস ব্যক্তির কি চেতনা আছে? (না।) তারা সবসময় বিনা প্রচেষ্টায় কিছু পেতে চায়, কখনোই দায়িত্ব নিতে চায় না, সর্বদা বিনামূল্যে সুবিধাভোগের সন্ধানে থাকে, তাদের দৈনিক উদরপূর্ণ খাদ্য চাই—তাদের জন্য অপেক্ষা করে থাকার মতো কাউকে চাই, সেই খাবার সুস্বাদুও হওয়া চাই—আর এই সবকিছুই কোনো কাজ না করেই। এ কি পরজীবীসুলভ মনোবৃত্তি নয়? আর যারা পরজীবীস্বরূপ মানুষ তাদের কি বিবেক ও চেতনা আছে? তাদের কি মর্যাদা ও সততা আছে? একেবারেই না; এরা সবাই বিনামূল্যের আতিথ্য নেওয়া নিষ্কর্মা, সকলেই বিবেক ও বোধহীন বর্বর। এদের কেউই ঈশ্বরের গৃহে থেকে যাওয়ার যোগ্য নয়” (বাক্য, খণ্ড ৫, নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের দায়িত্বসমূহ)। ঈশ্বরের বাক্য আমাকে গভীর চিন্তায় বাধ্য করল: সমস্যার দিকে নজর রাখা এবং বোঝা, সত্যের সাহায্যে সেগুলো সমাধান করা, এগুলোই নেতা আর কর্মীদের কাজ, কিন্তু ভণ্ড নেতারা এটাকে বোঝা মনে করে। এ থেকেই বোঝা যায় যে তারা এখানে তাদের দায়িত্ব পালন করতে আসেনি, বরং পদমর্যাদা উপভোগ করতে এসেছে। আমি দেখলাম যে আমার আচরণও এরকমই ছিল। আমার উচিত ছিল দায়িত্ব নেওয়া আর উপস্থিত সমস্যাগুলো মেটানো, উচিত ছিল এটাকে সত্যের সন্ধান ও নিজের ঘাটতি মেটানোর সুযোগ হিসাবে নেওয়া, যা আমার দ্রুত উন্নতির সহায়ক হতো। কিন্তু আমি অসুবিধাগুলোর জন্য আমার কর্তব্য পালন করতে অস্বীকার করতে চেয়েছি। সুপারভাইজার হিসাবে আমি প্রকৃত কোনো কাজ করিনি বা কোনো সত্যিকারের সমস্যার সমাধান করিনি। এ কি শুধু পদমর্যাদাগত সুবিধার প্রতি আমার লোভই ছিল না? নিজের আচরণের দিকে পিছন ফিরে তাকালে, যদিও মনে হতে পারে যে যখন আমার পার্টনার ছিল তখন আমি কাজ করছিলাম, কিন্তু আসলে কাজটা ভাগ করে দেওয়া হতো, আর আমার উপর খুব বেশি দায়িত্ব থাকতো না। আমার কাজ ছিল সহজ, তাই আসলে আমি বেশ ভালোই সময় কাটাচ্ছিলাম। যখন আমার দুজন পার্টনারকে বদলি করে দেওয়া হল, তখন কাজের চাপ বাড়লো, দায়িত্ব পালনে আমায় কষ্টভোগ করতে হতো, তার ফলে আমার মধ্যে এতদূর প্রতিরোধ দেখা দিলো যে আমি কর্তব্য অস্বীকার করে ঈশ্বরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাইলাম। পরে, যদিও ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পান করে নিজের অবস্থা পরিবর্তন করেছিলাম, কিন্তু আমার চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ একজন সিস্টারকে পার্টনার হিসাবে পেয়ে আমি আবার দায়িত্ব নেওয়া কমিয়ে দিয়েছিলাম, নিজের কাজ অলসভাবে করতাম, নিজেকে উদ্বিগ্ন করতে চাইতাম না। এবার যখন আমাকে একাকেই দায়িত্ব নিতে হল আর সমস্যা জমা হতে থাকল, আমি আবার পালিয়ে যেতে চাইলাম। দেখলাম যে কর্তব্যের প্রতি আমার আচরণ ছিল শঠ, আর কষ্ট বা দায়িত্বের চিহ্ন দেখামাত্রই আমি পালতে চেয়েছিলাম। আমি সবসময়েই এর বদলে কোনো সহজ, চাপমুক্ত কাজে যুক্ত হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সত্যিটা হল, সব কাজেই কিছু সমস্যা থাকে, আর যদি আমি আমার ভ্রষ্টতার সমাধান না করি, তাহলে কোনো কাজই ভালোভাবে করতে পারবো না। দেখলাম যে প্রকৃতিগতভাবেই আমি সত্যের প্রতি বীতশ্রদ্ধ এবং ইতিবাচক কিছু আমার পছন্দ নয়। আমি ওখানে দায়িত্ব পালন করতে যাইনি, বরং আশীর্বাদ উপভোগ করতে গিয়েছিলাম। এই ধরনের বিশ্বাস থেকে পরিশেষে কিছু লাভ হয় না। ঈশ্বরের বাক্যে পড়লাম: “তারা সবসময় বিনা প্রচেষ্টায় কিছু পেতে চায়, কখনোই দায়িত্ব নিতে চায় না, সর্বদা বিনামূল্যে সুবিধাভোগের সন্ধানে থাকে, তাদের দৈনিক উদরপূর্ণ খাদ্য চাই—তাদের জন্য অপেক্ষা করে থাকার মতো কাউকে চাই, সেই খাবার সুস্বাদুও হওয়া চাই—আর এই সবকিছুই কোনো কাজ না করেই। এ কি পরজীবীসুলভ মনোবৃত্তি নয়?” ঈশ্বর যে পরজীবীদের বিষয়ে বলেছেন আমি হুবহু সেরকমই, ফসল তুলতে চেয়েছি কিন্তু কখনো বীজ বপন করতে চাইনি, অন্যের পরিশ্রমের ফল ভোগ করতে চেয়েছি। আমি কি শুধুই আবর্জনা ছিলাম না? আমি নিজের উপর আরও বেশি করে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়লাম। আগে, আমি সেইসব পরজীবীদের খুবই ঘৃণা করতাম যারা এখনও বাবা-মায়ের বদান্যতায় বেঁচে থাকে, প্রাপ্তবয়স্ক হলেও যারা বাড়ি ছেড়ে যায় না, মা-বাবার সুযোগ নেয়, আর কোনো দায়িত্ব নেয় না। এরা একেবারেই অকর্মন্য। কিন্তু আমার সাম্প্রতিক আচরণ এদের থেকে আলাদা কোথায় ছিল? নিজেকে ভর্ৎসনা করে আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম: “হে ঈশ্বর, আমি অবশেষে বুঝতে পেরেছি যে আমি ঘৃণ্য, এবং আমার দায়িত্বের একেবারেই আন্তরিকতাহীন। আমি সবসময়ে শুধু দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্যের কথাই ভেবেছি, একজন পরজীবী হয়ে থাকতে চেয়েছি। এই কলুষিত চিন্তার কারণে আমি খুবই আতঙ্কিত। গির্জায় এত কাজ রয়েছে যেগুলোর জরুরি সহযোগিতা প্রয়োজন, কিন্তু আমি উন্নতি করতে বা কোনো দায়ভার নিতে চেষ্টা করছি না। আমি একেবারেই আবর্জনার সমান। হে ঈশ্বর, আমি জানি যে আমার এই অবস্থা অসমীচীন, কিন্তু আমি কিছুতেই আমার দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্যের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে পারছি না, দয়া করে আমায় আলোকিত করো যাতে আমি আমার সমস্যাগুলো বুঝতে পারি। আমি অনুতপ্ত ও পরিবর্তিত হতে চাই।” আমি খানিক চিন্তা করলাম। কাজের চাপ আর সমস্যা জমা হলেই সবসময় আমি কেন দায়িত্ব থেকে পালতে আর দায়িত্ব অস্বীকার করতে চাইতাম? আমার সমস্যার মূল কারণটা ঠিক কী ছিল? তা সন্ধান করার জন্য আমি ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করলাম। “আজ, আমি যে বাক্যগুলি বলি তা তোমরা বিশ্বাস করো না, এবং তোমরা সেগুলির প্রতি মনোযোগ দাও না। যখন এই কাজটি ছড়িয়ে পড়ার দিন আসবে এবং তুমি এর সম্পূর্ণতা চাক্ষুষ করবে, তখন তুমি অনুতাপ করবে এবং সেই সময় তুমি হতবাক হয়ে যাবে। আশীর্বাদ আছে, তবুও তুমি সেগুলি উপভোগ করতে জানো না, এবং সত্য আছে, তবুও তুমি তার অন্বেষণ করো না। তুমি কি নিজের প্রতি অবজ্ঞা বয়ে আনছ না? আজ, যদিও ঈশ্বরের কাজের পরবর্তী পর্যায়ের এখনও সূচনা হয়নি, কিন্তু তোমার কাছে যে দাবিগুলি করা হয়েছে এবং তোমাকে যা নিয়ে জীবন যাপন করতে বলা হয়েছে, তা মোটেই অতিরিক্ত কিছু নয়। অনেক কাজ, এবং অনেক সত্য রয়েছে; সেগুলি কি তোমার দ্বারা পরিচিত হওয়ার যোগ্য নয়? ঈশ্বরের শাস্তি এবং বিচার কি তোমার আত্মাকে জাগ্রত করতে অক্ষম? ঈশ্বরের শাস্তি এবং বিচার কি তোমাকে নিজেকে ঘৃণা করাতে অক্ষম? তুমি কি শান্তি ও আনন্দ এবং যৎসামান্য দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্য সহকারে শয়তানের প্রভাবের অধীনে বসবাস করে সন্তুষ্ট? তুমি কি সব মানুষের চেয়ে নীচ নও? যারা পরিত্রাণ চাক্ষুষ করেছে অথচ তা অর্জন করার জন্য সাধনা করে না তাদের চেয়ে অধিক মূর্খ আর কেউ নেই; এরা এমন মানুষ যারা দেহসর্বস্বতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং শয়তানকে উপভোগ করে। তুমি আশা করো যে ঈশ্বরের প্রতি তোমার বিশ্বাস কোনো বাধা-বিপত্তি বা যন্ত্রণা বা সামান্যতম কষ্টেরও সম্মুখীন হবে না। তুমি সর্বদাই সেই জিনিসগুলির অন্বেষণ করো যা মূল্যহীন, এবং তুমি জীবনের সাথে কোনো মূল্য সংযোজন করো না, বরং সত্যের সামনে তোমার নিজের অসংযত চিন্তাভাবনাগুলি রেখে দাও। তুমি এতটাই মূল্যহীন! তুমি শূকরের মত বাস করো—তোমার আর শূকর আর কুকুরের মধ্যে পার্থক্য কী? যারা সত্যের সাধনা করে না, এবং তার পরিবর্তে দেহসর্বস্বতাকে ভালবাসে, তারা কি সবাই পশু নয়? আত্মা বিহীন ঐ মৃত ব্যক্তিরা কি সব চলমান শবদেহ নয়? তোমাদের মধ্যে কত বাক্য বলা হয়েছে? তোমাদের মাঝে কি খুব সামান্য কাজ করা হয়েছে? কতকিছুই না আমি তোমাদের মধ্যে প্রদান করেছি? তাহলে তুমি কেন তা অর্জন করনি? তোমার অভিযোগ করার মত কী আছে? এমনটা নয় কি যে দৈহিক সুখকে এতোটাই ভালোবেসেছ বলে তুমি কিছুই অর্জন করোনি? এবং এর কারণ কি এই নয় যে তোমার চিন্তাভাবনা অত্যন্ত অসংযত? এর কারণ কি এই নয় যে তুমি অতীব নির্বোধ? তুমি যদি এইসকল আশীর্বাদ অর্জন করতে অক্ষম হও, তাহলে কি তুমি তোমাকে উদ্ধার না করার জন্য ঈশ্বরকে দোষ দিতে পারো? তুমি যা অন্বেষণ করো সেগুলি হল ঈশ্বরে বিশ্বাস করার পরে শান্তি লাভ করতে সক্ষম হওয়া, অসুস্থতা থেকে তোমার সন্তানাদির মুক্ত থাকা, তোমার স্বামীর একটি ভাল চাকরি হওয়া, তোমার পুত্রের জন্য একটি ভাল স্ত্রী খুঁজে পাওয়া, তোমার কন্যার জন্য একটি উপযুক্ত স্বামী খুঁজে পাওয়া, তোমার বলদ ও ঘোড়াগুলির ভালোভাবে জমি কর্ষণ করতে পারা, তোমার ফসলের জন্য বর্ষব্যাপী ভাল আবহাওয়া। তুমি যা অন্বেষণ করো তা হচ্ছে এইসব। তোমার সাধনা কেবল স্বাচ্ছন্দ্যে বেঁচে থাকার জন্য, যাতে তোমার পরিবারের কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে, বাতাস তোমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়, তোমার মুখে যাতে এক কণা বালুও স্পর্শ না করে, তোমার পরিবারের ফসল যাতে প্লাবিত না হয়, যাতে তুমি কোনও বিপর্যয় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হও, যেন ঈশ্বরের আলিঙ্গনে জীবন যাপন করতে পারো, একটি আরামদায়ক আশ্রয়ে বসবাস করতে পারো। তোমার মতো কাপুরুষ, যে সর্বদা দেহসর্বস্বতার পিছনে ছুটছে—তোমার কি হৃদয় আছে, তোমার কি আত্মা আছে? তুমি কি একটি পশু নও? বিনিময়ে কিছু না চেয়ে আমি তোমাকে প্রকৃত পথ দিই, তবুও তুমি তা অন্বেষোণ করো না। তুমি কি আদৌ ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের একজন? আমি তোমাকে প্রকৃত মানব জীবন দান করি, তবুও তুমি অন্বেষণ করো না। তুমি কি শূকর বা কুকুরের চেয়ে কোনোভাবেই পৃথক নও? শূকররা মানুষের জীবনকে অনুসন্ধান করে না, তারা পরিশুদ্ধ হওয়ার সাধনা করে না, এবং তারা জীবন কী তা বোঝে না। প্রতিদিন, পেট ভরে খাদ্য গ্রহণ করার পরে, তারা কেবলই নিদ্রা যায়। আমি তোমাকে প্রকৃত পথ দিয়েছি, তবুও তুমি তা অর্জন করনি: তুমি শূন্যহস্ত। তুমি কি এই জীবনযাপন চালিয়ে যেতে চাও, একটি শূকরের জীবন? এমন মানুষের বেঁচে থাকার তাৎপর্য কী? তোমার জীবন নিন্দনীয় এবং তুচ্ছ, তোমার জীবনযাপন আবর্জনা ও লাম্পট্যের মাঝে, এবং তুমি কোন লক্ষ্যের অনুসরণ করো না; তোমার জীবন কি সকলের চেয়ে তুচ্ছ নয়? তোমার কি ঈশ্বরের দিকে মুখ তুলে তাকাবার দুঃসাহস আছে? তুমি যদি এইভাবেই অনুভব করতে থাকো, তাহলে কি তুমি কিছু অর্জন করতে পারবে? প্রকৃত পথ তোমাকে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তুমি শেষ পর্যন্ত তা অর্জন করতে পারবে কিনা তা নির্ভর করে তোমার নিজের ব্যক্তিগত অন্বেষণের উপর” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, পিটারের অভিজ্ঞতাঃ তার শাস্তি ও বিচারের জ্ঞান)। ঈশ্বরের এই কঠোর বাক্য থেকে আমি অনুভব করলাম, যারা স্বাচ্ছন্দ্যের লোভ করে তাদের প্রতি ঈশ্বর অত্যন্ত বিরক্তি ও বিদ্বেষ পোষণ করেন, তাঁর কাছে, এরা নিছকই পশুর মতো। এরা অলস নিষ্কর্মা, কাজ করতে চায় না, শুধু ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে। এবং পরিশেষে, এরা কোনো কাজই ঠিকভাবে করে না আর কোনো সত্যই অর্জন করে না। এরা নিছক আবর্জনা। আমি এরকমই ছিলাম। আমি চাইতাম আমার কাজ মসৃণভাবে চলুক, আর যতক্ষণ আমার কাজ বজায় আছে, আমাকে বরখাস্ত করা হচ্ছে না, ততক্ষণ সব ঠিক আছে। কিন্তু আমাকে কষ্ট বা মূল্য ব্যয় করতে হবে এমন কোনো সমস্যা আসামাত্র পালিয়ে যেতাম। শুধু সেই কাজগুলোই নিতে চাইতাম যেগুলো সহজ-সরল, এবং আমি সেই শয়তানোচিত জীবনের নীতিকে ধরে রেখেছিলাম, “যতক্ষণ বেঁচে আছো জীবনকে উপভোগ করো”, আর “নিজেকে আনন্দ দাও”। এইসব দৃষ্টিভঙ্গির জন্য, আমি সবসময়েই স্বাচ্ছন্দ্যের লোভ করতাম, আর কাজ জড়ো হয়ে গেলেই বিরক্ত হতাম, দুশ্চিন্তা হতো যে আমার অবসর সময় কমে যাবে। যখন আরও কিছু দক্ষতা অর্জন করার প্রয়োজন ছিল, আমি তার জন্যেও মূল্য দিইনি, ফলে কিছু সময় পর, আমার দক্ষতার অগ্রগতি বিলম্বিত হয়েছে এবং আমি কাজগুলো সামলাতে পারিনি। এমনকি মাঝেমাঝে নিজের দায়িত্বে অবহেলা করেছি, আর নতুন কিছু কারিগরি দক্ষতা শেখার ভান করে ধর্মবিহীন ভিডিও দেখেছি, আত্মিকভাবে আরও অসাড় ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে উঠেছি। যখন কাজে কোনো সমস্যা এসেছে, সুপারভাইজার হিসাবে আমার উচিত ছিল সক্রিয়ভাবে তদারক করে সেগুলোর সমাধান করা, কিন্তু জটিল সমস্যা দেখলেই সেগুলো এড়িয়ে যাওয়ার জন্য কৌশল অবলম্বন করেছি, ফলে কাজের অগ্রগতি বিলম্বিত হয়েছে। আরো গুরুতর যা, তা হল ক্রমাগত এটা চাওয়া যে অন্য কেউ আমার জায়গা নিক আর আমার চাপ হালকা করুক। জানতাম ভিডিও তৈরী সুসমাচার প্রচারের পক্ষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবুও দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্য চরিতার্থ করে প্রতিটা গুরুতর সময়ে পালিয়ে গেছি, কোনো দায়িত্ব নিইনি। আমার মনে পড়ল সেইসব বাচ্চাদের কথা যাদের বাবা-মা তাদের বড় করেছে, কিন্তু যখন পরিবারের জন্য ত্যাগস্বীকার করার সময় আসে, তারা কষ্টভোগ আর দায়িত্বপালনকে ভয় পায়। এরকম মানুষের কোনো বিবেক নেই, সে একজন অকৃতজ্ঞ নিকৃষ্ট মানুষ। আমি চিন্তা করলাম আমার আচরণও ঠিক এরকমই ছিল। ঈশ্বর আমাকে এতদূর পর্যন্ত পথনির্দেশ দিয়েছেন আর এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে দিয়েছেন, তবুও আমি সবসময় কষ্টকে ভয় পেয়েছি আর দেহের প্রতি মনোযোগী হয়েছি। আমার একেবারেই কোনো বিবেকবোধ ছিল না! দায়িত্ব পালনের জন্য কষ্টভোগ করার অর্থ আমি দেখতে পাইনি, সর্বদা শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্যের লোভ করেছি, আর কোনো দায়িত্বই সঠিকভাবে পালন করতে পারিনি। তারপর আমি উপলব্ধি করলাম, এইসব শয়তানোচিত দর্শন, “যতক্ষণ বেঁচে আছো জীবনকে উপভোগ করো”, “নিজেকে আনন্দ দাও”, এগুলো আমাদের উত্তরোত্তর ভ্রষ্ট ও শঠ হওয়ার দিকে নিয়ে যায়। যদি আমি স্বাচ্ছন্দ্যের লোভই করতে থাকতাম, তাহলে কি নিজের ধ্বংসই ডেকে আনতাম না? সবসময় নিজের দায়িত্বপালনে কত কষ্ট করতে হয় তা নিয়ে অভিযোগ করেছি আর স্বাচ্ছন্দ্যের থেকে দূরে সরে যাওয়াকে ঘৃণা করেছি। আমি সত্যকে লাভ করার সুযোগ হারাচ্ছিলাম, এবং নিজের কাজেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছিলাম, পিছনে রেখে যাচ্ছিলাম শুধু অধর্ম। পরিশেষে আমার জন্য ঈশ্বরের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত ও বহিষ্কৃত হওয়া নিশ্চিত ছিল।
আমি অনুশীলনের একটা পথের সন্ধান শুরু করলাম। ঈশ্বরের বাক্যে পড়লাম: “মনে করো গির্জা তোমাকে একটা কাজ করতে দিলো, আর তুমি বললে, ‘এই কাজ আমাকে অন্যদের থেকে লক্ষ্যণীয় করে তুলুক বা না তুলুক—আমাকে যেহেতু এই কাজ দেওয়া হয়েছে, আমি এটা ভালোভাবে পালন করবো। আমি এই দায়িত্ব গ্রহণ করবো। আমাকে যদি রিসেপসনের কাজে নিয়োগ করা হয়, আমি সেই কাজ ভালোভাবে করার জন্য সবকিছু করবো; আমি ব্রাদার-সিস্টারদের ভালোভাবে দেখাশোনা করবো, এবং সকলের সুরক্ষা বজায় রাখার জন্য যথাসাধ্য করবো। আমাকে যদি সুসমাচার প্রচারের কাজে নিযুক্ত করা হয়, আমি সত্যের দ্বারা নিজেকে প্রস্তুত করে তুলবো, এবং ভালোবেসে সুসমাচার প্রচার করে আমার দায়িত্ব ভালোভাবে নির্বাহ করবো। আমাকে যদি কোনো বিদেশী ভাষা শিখতে বলা হয়, আমি অধ্যাবসায়ের সাথে সেটার অধ্যয়ন করবো আর প্রচুর পরিশ্রম করবো, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, এক থেকে দু’বছরের মধ্যে, সেটা ভালো করে শিখে ফেলবো, যাতে আমি বিদেশিদের কাছে ঈশ্বরের সাক্ষ্যপ্রদান করতে পারি। যদি আমাকে বলা হয় সাক্ষ্যের প্রবন্ধ লিখতে, আমি সেই কাজের জন্য বিচক্ষণতার সাথে নিজেকে প্রশিক্ষণ দেবো, আর সত্যের নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে সমস্তকিছুকে দেখবো; আমি ভাষার বিষয়ে শিখবো, আর যদি খুব সুন্দর গদ্যে প্রবন্ধ লিখতে না-ও পারি, অন্তত আমার অভিজ্ঞতা আর সাক্ষ্যের কথা পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করতে পারবো, সত্য সম্পর্কে সামগ্রিকভাবে আলোচনা করতে পারবো, এবং ঈশ্বরের প্রকৃত সাক্ষ্যপ্রদান করতে পারবো, যাতে মানুষ আমার লেখা প্রবন্ধ পড়লে উন্নতিলাভ করে ও উপকৃত হয়। গির্জা আমাকে যে কাজেই নিযুক্ত করুক, আমি আমার সমস্ত হৃদয় ও শক্তি দিয়ে তা গ্রহণ করবো। যদি কিছু বুঝতে না পারি বা কোনো সমস্যার উদ্ভব হয়, আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করবো, সত্যের সন্ধান করবো, সত্যের নীতিগুলো উপলব্ধি করবো, আর সেই কাজ ভালোভাবে করবো। আমার কর্তব্য যা-ই হোক, তা ভালোভাবে সম্পাদন করার জন্য এবং ঈশ্বরকে পরিতুষ্ট করার জন্য আমার যা আছে তার সমস্তটা অর্পণ করবো। আমি যতটুকুই অর্জন করতে পারি, যে দায়িত্ব আমার বহন করা উচিত সেই সব দায়িত্বই আমি গ্রহণ করবো, অন্ততপক্ষে আমি আমার বিবেক ও চেতনার বিরুদ্ধে যাবো না, অযত্নবান ও অগভীর হবো না, ছলনা বা কর্তব্যে শিথিলতার আশ্রয় নেবো না, অথবা অন্যের পরিশ্রমের ফল ভোগ করবো না। আমি এমন কিছুই করবো না যা বিবেকবোধের মান উত্তীর্ণ করতে না পারে।’ এটাই মানুষের আচরণের ন্যূনতম মান, এবং যারা এইভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে, তারা বিবেকবান ও বোধসম্পন্ন মানুষ হওয়ার যোগ্যতা লাভ করতে পারে। তোমাকে অন্ততপক্ষে নিজের দায়িত্বপালনে বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকতে হবে, এবং অন্ততপক্ষে তোমাকে অনুভব করতে হবে যে তোমার সারাদিনের আহার তুমি উপার্জন করছো, ভিক্ষা করে জোগাড় করছো না। দায়িত্ববোধ একেই বলে। তোমার যোগ্যতা বেশি হোক বা কম, আর তুমি সত্যকে উপলব্ধি করো বা না করো, তোমার অবশ্যই এরকম মনোভাব থাকা উচিত: ‘যেহেতু আমাকে এই কাজ করতে দেওয়া হয়েছে, আমাকে অবশ্যই এটাকে গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে; এটাতে সর্বান্তকরণে এবং নিজের সমস্ত হৃদয় ও শক্তি দিয়ে ভালোভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এই কাজ নিখুঁতভাবে করতে পারবো এমন প্রতিশ্রুতি হয়তো আমি দিতে পারবো না, কিন্তু আমার মনোভাব হচ্ছে যে এই কাজ যাতে ভালোভাবে সম্পন্ন হয় তা নিশ্চিত করার জন্য আমি যথাসাধ্য করবো, এবং এটার ব্যাপারে আমি কিছুতেই অযত্নবান ও অগভীর হবো না। যদি কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়, তাহলে আমি সেটার দায়িত্ব নেবো, এবং সেখান থেকে আমার শিক্ষাগ্রহণ নিশ্চিত করবো, আর নিজের কর্তব্য ভালোভাবে নির্বাহ করবো।’ এটাই হল সঠিক মনোভাব। তোমাদের কি এরকম মনোভাব আছে?” (বাক্য, খণ্ড ৫, নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের দায়িত্বসমূহ)। ঈশ্বরের বাক্য আমাকে সত্যিই অনুপ্রাণিত করলো। যেহেতু গির্জা আমাকেই এই কাজের প্রধান দায়িত্ব দিয়েছিল, তাই আমাকেও একজন প্রাপ্তবয়স্কের মতো সেই দায়িত্ব গ্রহণ করতে হতো। আমার ক্ষমতা যত বেশিই হোক, আমি যত যোগ্যই হই, বা দায়িত্বপালনে যত বেশি অসুবিধার সামনেই পড়ে থাকি, সঙ্কুচিত হয়ে পিছিয়ে যাওয়া চলবে না। কাজটা গ্রহণ করার জন্য নিজেকে বাধ্য করতে হবে এবং নিজের সমস্তটা অর্পণ করতে হবে। এর পর, একটা ভিডিও শেষ হলে আর অন্যদের মতামত পেলে, যদি কোনো সমস্যার ব্যাপারে অবগত না থাকি বা সেটাকে সামলানোর উপায় না-ও জানি, তবু সর্বক্ষণ সক্রিয়ভাবে সেটা মেটানোর উপায় খুঁজতাম, বা তা নিয়ে আলোচনা করার মতো কিছু লোকজনকে খুঁজে বার করার চেষ্টা করতাম। ধীরে ধীরে, আমি এইসব দক্ষতার সাথে পরিচিত হয়ে উঠলাম আর নীতিগুলোও আরও স্পষ্ট হল। আগে, কোনো জটিল সমস্যার উদ্ভব হলেই অভ্যাসক্রমে কোনো একজন পার্টনারের উপর সেটা সামলানোর ভার ঠেলে দিতাম, গ্রুপ চ্যাটে তাড়াতাড়ি উত্তর দিতাম না, ইচ্ছা করে দেরি করতাম। কিন্তু এখন, আমি দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারি, আরো বেশি দায়ভার বহন করতে পারি। আমাদের সহযোগিতায় কিছু অসুবিধা থাকলেও, যখন মনোযোগের সাথে ঈশ্বরের উপর আর সবার সাথে বিশদ আলোচনার উপর নির্ভর করি, তখন একেবারে পরিষ্কার হয়ে যায় যে কোন পথ আমাদের গ্রহণ করা উচিত। শুধুমাত্র এই অভিজ্ঞতার পরেই উপলব্ধি করলাম যে আমি কত স্বার্থপর ও চতুর ছিলাম, কর্তব্যের বিষয়ে কত শঠ ও অলস ছিলাম, দায়িত্ব নিতে চাইতাম না। যখন কাজের প্রতি মনোভাবকে সংশোধন করলাম, ঈশ্বরের দায়ভারের প্রতি মনোযোগী হতে আগ্রহী হলাম, আর সহযোগিতা করার জন্য নিজের সমস্তটা অর্পণ করলাম, তখন ঈশ্বরের নেতৃত্ব ও পথনির্দেশ দেখতে পেলাম, নিজের অন্তরে বিশ্বাস অর্জন করলাম, এবং এমন একজন যুক্তিপূর্ণ ও বিবেকবান মানুষ হয়ে ওঠার অনুশীলন করতে আগ্রহী হয়ে উঠলাম যে তার দায়িত্বে মনোযোগী।
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।