মানবজাতিকে রক্ষা এবং ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন করতে কে পারে?

30-05-2022

ভাগ্যের উল্লেখমাত্র বেশীরভাগ মানুষ মনে করে যাদের প্রচুর অর্থ, প্রতিষ্ঠা আছে, যারা জীবনে সফল, তারাই সৌভাগ্যবান, এবং মনে করে যারা দরিদ্র, অখ্যাত, যারা বিপর্যয় ও দুর্দশা সহ্য করে এবং যাদের হীন দৃষ্টিতে দেখা হয় তাদের ভাগ্য খারাপ। তাই ভাগ্য পরিবর্তন করতে তারা সোৎসাহে জ্ঞান অন্বেষণ করে, এই আশায় যে এর মাধ্যমে তারা সম্পদ ও সম্মান অর্জন করে ভাগ্যে পরিবর্তন আনবে। জীবনে অর্থ, সম্মান ও সাফল্য থাকাই কি সৌভাগ্যের অধিকারী হওয়া? বিপর্যয় ও দুর্দশায় থাকার মানেই কি তার ভাগ্য খারাপ? বেশিরভাগ মানুষই বিষয়টিকে ভালোভাবে বোঝেন না, এবং এখনও একাগ্র ভাবে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জ্ঞান অন্বেষণ করে চলেছেন। কিন্তু জ্ঞান কি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে? কে প্রকৃত অর্থে মানবজাতিকে বাঁচাতে পারে ও আমাদের ভাগ্যে আমূল বদল আনতে পারে? এই প্রশ্নটি নিয়েই আজ আলোচনা করা যাক।

প্রতিদিনের জীবনে আমরা দেখতে পাই যে বহু মানুষ যারা জ্ঞান অর্জন করেছে তারা অর্থ ও প্রতিপত্তিও পেয়েছে। তারা জীবনে সম্পন্ন, এমন কি বিখ্যাত ও প্রশংসিতও হতে পারে সফল ও সুপরিচিত মানুষ দেখলে মনে হয় তারা সৌভাগ্যবান। কিন্তু সত্যিই কি তাই? তারা কি আসলে সুখী? তাদের ক্ষমতা ও প্রভাব থাকতে পারে এবং উদাহরণযোগ্য বলে মনে হতে পারে তবু তাদের শূন্যতা ও দৈন্যের বোধ থাকে এবং জীবনের স্ফূলিঙ্গ হারিয়ে যায়। এমন কি কেউ কেউ ড্রাগ নেয় ও নিজেদের হত্যা করে। এবং কেউ কেউ নিজেদের ক্ষমতা ও প্রভাব কাজে লাগিয়ে যা ইচ্ছা তাই করে, দুর্নীতির আশ্রয় নেয় ও অপরাধ করে, এবং সমস্ত সম্মান হারিয়ে তাদের স্থান হয় কারাগারে। এদের বেশিরভাগই কি বুদ্ধিজীবী নয়? সেই মানুষগুলি যাদের বিচক্ষণ বলে মনে হয় এবং যারা আইন বোঝে কেন তারা এসব ভয়ঙ্কর কাজ করে? এরকম হাস্যকর কাজ কেন তারা করে? কেন সবকিছু এরকম হয়? আজকাল সকলেই শিক্ষা চায়, সকলেই জ্ঞান অন্বেষণ করে, এবং সমস্ত দেশের, সমস্ত জাতিরই শাসককুল হল বুদ্ধিজীবীরাই। তারাই ক্ষমতাবান, তারাই সারা বিশ্বের মেধাজীবী। এ কথা বলার যুক্তি আছে যে বুদ্ধিজীবীদের শাসনে পৃথিবীর আরো সভ্য ও ভালোবাসাময় হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু এই আসলে পৃথিবীর সাথে কি ঘটছে? এখানে হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা ছেয়ে যাচ্ছে, মানুষ ঠকাচ্ছে, লড়াই করছে, এমন কি পরস্পরের প্রাণহানী করছে। তারা সকলে ঈশ্বরকে প্রতিহত ও অস্বীকার করছে, তারা সত্যকে ঘৃণা করে ও দূরাচারকে মর্যাদা দেয় পরিতাপের কোনো ইচ্ছে ছাড়াই, এতে ঈশ্বরের ক্রোধ ও মানুষের ক্ষোভ ডেকে আনে। একের পর এক বিপর্যয় আসতে থাকে ও বিশ্ব সর্বদাই কোনো বড়ো যুদ্ধের প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকে। এ কথা স্পষ্ট যে বুদ্ধিজীবীদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া, বা মেধাতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা, শান্তিপূর্ণ ও সুখী সমাজ নিয়ে আসতে পারছে না, বরং তা ডেকে আনছে আরও দুর্যোগ এবং দুর্ভোগ। অতিমারী বৃদ্ধি পাচ্ছে, ক্রমাগত যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ছে, এবং তাকে অনুসরণ করছে ভূমিকম্প ও দুর্ভিক্ষ। মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত, যেন পৃথিবীর অন্তিম সময় এসে গেছে। এর প্রকৃত কারণ কী? জ্ঞান, ক্ষমতা ও মর্যাদা অর্জ্নের পরেও কেন মানুষ এসব ভয়ঙ্কর কাজ করে? কেন বুদ্ধিজীবী এবং মেধাতন্ত্র থাকলে তা দেশের ও জনগণের উপর এতো বিপর্যয় বয়ে আনে? এ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা জরুরি! জ্ঞান অর্জন করে কি কেউ শ্রেয়তর ও পাপমুক্ত হতে পারে? জ্ঞানার্জন কি মানুষকে দয়ালু ও খারাপ কাজ থেকে বিরত করতে পারে? জ্ঞান কি মানুষকে পাপ থেকে ও শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারে? আমি ক্রমশই জ্ঞানের দ্বারা মানুষের ভাগ্য বদলানোর বিষয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ছি। কেন জ্ঞান ও মর্যাদা অর্জন করার পরও অধিকাংশ মানুষই আরো উদ্ধত এবং অহংকারী হয়ে ওঠে? কেন এমন হয়, যে তারা যতই জ্ঞান অর্জন করে ততই অধিক অহংকারী হয়ে ওঠে? একবার ক্ষমতায় এলেই তারা বিকৃত ও স্বেচ্ছাচারী হয়ে পড়ে, সব তছনছ করে ও বিপর্যয় ডেকে আনে। উন্নততর শিক্ষা ও বিজ্ঞানের মাধ্যমে একটি দেশের শাসন পদ্ধতি উন্নততর হওয়া উচিত এবং মানুষের আরো সুখী, সভ্য ও স্বাস্থ্যবান হওয়া উচিত। কিন্তু তেমন দেশের কি সত্যিই অস্তিত্ব আছে? কখনোই নেই। এই সত্য মানুষকে প্রকৃত অর্থেই মাথা ঘামাতে বাধ্য করে। এটি আমি ঈশ্বরের বাক্যে পড়েছি। “মানবজাতি দ্বারা সমাজবিজ্ঞানের নব নব কৃত্রিম কৌশল ব্যবহারের কারণে মানুষের মন বিজ্ঞান এবং অন্যান্য জ্ঞানের চিন্তাতেই আবৃত। জ্ঞান এবং বিজ্ঞানই হয়ে উঠেছে মানবজাতির নিয়ন্তা এবং ঈশ্বর-প্রার্থনার জন্য সেখানে খুব বেশি পরিসর বা অনুকূল পরিবেশ আর নেই। মানুষের অন্তরে ঈশ্বরের স্থান সবচাইতে নিচে নেমে গেছে। হৃদয়ে যদি ঈশ্বরের স্থান না থাকে তাহলে তা অন্ধকার, আশাহীন ও অর্থহীন হয়ে ওঠে। এই সুযোগে কিছু সমাজবিজ্ঞানী, ঐতিহাসিক এবং রাজনীতিবিদ মানুষের হৃদয় ও মস্তিষ্কে অনুপ্রবেশ করার জন্য তাদের সমাজবিজ্ঞানের তত্ত্ব, বিবর্তনের নীতি এবং আরও নানা তত্ত্বের অবতারণা করল। ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই যে মানুষের উদ্ভব, সেই পরম সত্যের সরাসরি বিরোধী এইসব তত্ত্ব। এইভাবে যেসব মানুষ বিশ্বাস করত যে ঈশ্বর সবকিছুর স্রষ্টা তাদের সংখ্যা ভীষণরকম কমে গেল এবং বিবর্তনের তত্ত্বে বিশ্বাসীদের সংখ্যা হয়ে উঠল সর্বাধিক। ধীরে ধীরে সেইসব মানুষের সংখ্যা বাড়তে লাগলো যারা পুরাতন নিয়মের যুগে ঈশ্বরের কার্য এবং তাঁর বাক্যকে শুধুই পৌরাণিক কাহিনী কিংবা কিংবদন্তি বলে মনে করতে শুরু করল। মনে মনে তারা ঈশ্বরের মহিমা এবং বিশালতা সম্পর্কে উদাসীন হয়ে উঠল। নিস্পৃহ হয়ে পড়ল ঈশ্বরের অস্তিত্ব এবং সর্বব্যাপীতায়। মানবজাতির অস্তিত্ব, দেশ ও জাতির ভাগ্য, এসব কোনো কিছুই তাদের কাছে আর গুরুত্বপূর্ণ রইল না। অর্থহীন এক পৃথিবীতে তারা শুধুমাত্র বেঁচে রইল আহার, পান এবং সুখের অন্বেষণে। … হাতে গোনা মাত্র কয়েকজনই চেষ্টা করে যেতে লাগল ঈশ্বর কোথায় কীভাবে তাঁর বিস্তৃত কার্য পরিচালনা করেন, নির্দিষ্ট করেন মানুষের ভাগ্য, সে সব জানতে। এই ভাবেই আমাদের অজান্তে মানব-সভ্যতার কাছে ধীরে ধীরে অস্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগল মানুষের অভীষ্ট। এমন অনেক মানুষ এই বিশ্বে আছে যারা মনে করে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার চাইতে মৃত্যু অনেক বেশি শ্রেয়। এমনকি সভ্যতায় অগ্রগণ্য বলে চিহ্নিত অনেক দেশের মানুষই মনে মনে এই একই ক্ষোভ পোষণ করে। মানব-সভ্যতা রক্ষা করার জন্য শাসক এবং সমাজতাত্ত্বিকরা যতই চেষ্টা করুন না কেন, ঈশ্বরের নির্দেশিকা ছাড়া তা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। মানুষের হৃদয়ের শূন্যতা কেউই পূরণ করতে পারে না, কারণ অন্য কেউ বা কোনও কিছুই মানুষের জীবনের সমতুল্য হতে পারে না এবং কোনও সামাজিক তত্ত্বই মনের শূন্যতা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে পারে না। বিজ্ঞান, জ্ঞান, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, অবসর এবং আরাম এসবই মানুষের কাছে ক্ষণিক সান্ত্বনা মাত্র। এমন কি, এসব কিছু থাকলেও মানুষ নিশ্চিতভাবে পাপে মগ্ন হয় এবং সমাজের অবিচারের বিরুদ্ধে বিলাপ করে। এসব কিছুই তাকে নিবৃত্ত করতে পারে না লোভ এবং ঔৎসুক্য থেকে। … মানুষ শেষ পর্যন্ত শুধুই মানুষ, ঈশ্বরের স্থান ও জীবন কোনো মানুষই প্রতিস্থাপিত করতে পারে না। ন্যায়সঙ্গত একটি সমাজ, যাতে সকলে পর্যাপ্ত খাদ্য পায়, প্রত্যেকে সমান এবং স্বাধীন, সেই সমাজই মানবজাতির একমাত্র প্রয়োজন নয়। মানবজাতির যা সত্যিকারের প্রয়োজন তা হল ঈশ্বরের পরিত্রাণ এবং তাদের জন্য জীবনের বিধান। যখন মানুষ ঈশ্বর প্রদত্ত জীবনের বিধান এবং তাঁর পরিত্রাণ লাভ করে, কেবলমাত্র তখনই তার সমস্ত প্রয়োজন, অন্বেষণের আকাঙ্ক্ষা এবং আধ্যাত্মিক শূন্যতার সমাধান হতে পারে। যদি কোনও রাষ্ট্রের বা জাতির মানুষরা ঈশ্বরের পরিত্রাণ এবং আশীর্বাদ না পায় তাহলে সেই রাষ্ট্র বা জাতি ক্রমাগতই অবনতি এবং অন্ধকারের পথে এগিয়ে যাবে এবং ঈশ্বর তাদের নিশ্চিহ্ন করবেন(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, পরিশিষ্ট ২: ঈশ্বর সমগ্র মানবজাতির ভাগ্য নির্ধারক)

ঈশ্বরের বাক্য সম্পূর্ণ ঠিক এবং তারা বাস্তব সত্যকেই প্রকাশ করে। প্রকৃতপক্ষে কীভাবে জ্ঞান উৎপন্ন হয়? কোনো সন্দেহ নেই, এগুলি এসেছে সেই সব বিখ্যাত ও ধনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে যারা সমগ্র ইতিহাস জুড়ে সমাদরের পাত্র। কনফুশিয়বাদ আছে, ডারউইনের বিবর্তনের তত্ত্ব আছে, মার্ক্সের কম্যুনিস্ট ম্যানিফেস্টো এবং কম্যুনিজম আছে। নাস্তিক্যবাদ, বস্তুবাদ এবং বিবর্তনের তত্ত্ব এগুলো সবই এইসব বিখ্যাত ব্যক্তিদের চিন্তা ও তত্ত্ব থেকে এসেছে যা তাঁরা বইয়ে লিখে গেছেন। এবং যা আমাদের আধুনিক সমাজে বিজ্ঞান ও তত্ত্বের ভিত্তি। সেই সমস্ত মতবাদ ও তত্ত্বাবলী যুগ যুগ ধরে শাসক শ্রেণী প্রচার করে এসেছে। সেই সব বইও শ্রেণীকক্ষে স্থান পেয়েছে, এবং মানবতার নীতিবচন হয়ে উঠেছে। তারা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে শিক্ষিত করেছে, ক্ষয় করেছে এবং অসাড় করেছে, এবং মানুষকে বিপথে চালনা করার জন্য শাসক শ্রেণীর হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। সমগ্র মানবজাতি এই জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের প্রভাবে ক্রমবর্ধমান হারে দূষিত হয়েছে, এবং সেই কারণে সমাজ এতোটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন ও বিশৃঙ্খল হয়ে উঠেছে, যে ঈশ্বর ও মানুষ উভয়েই ক্রুদ্ধ। এখন দুর্যোগ আরো ঘন ঘন ঘটছে এবং বিপর্যয়ের আঘাত কখনো থামছে না। যে কোনো সময় বড়ো যুদ্ধ বাঁ ধতে পারে। মানুষ আতঙ্কে বাঁচছে যেন তারা পৃথিবীর অন্তের মুখোমুখি। এর ফলে আমাদের সত্যিই চিন্তা করতে হয় বিজ্ঞান ও জ্ঞান সত্য কিনা। মানুষ এদের আরো বেশি চর্চা ও গ্রহণ করছে, কিন্তু তারা পাপ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না বা সুখের সন্ধান পাচ্ছে না, তার বদলে আরো ভ্রষ্ট ও অসাধু হয়ে উঠছে, সেই পাপ ও যন্ত্রণায় ডুবে যাচ্ছে যা থেকে পালানোর পথ নেই। আমরা নজর দিই সেই সর্বজনপূজিত বিখ্যাত, মহান ব্যক্তিদের প্রকৃত সত্তার দিকে। তাঁরা সকলেই ছিলেন নাস্তিক ও বিবর্তনবাদী যাঁরা ঈশ্বরকে অস্বীকার ও বর্জন করেছেন। তাঁরা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বা তিনিই যে সবকিছু শাসন করেন তা বিশ্বাস করেন না। বিশেষকরে তাঁরা ঈশ্বরের দ্বারা প্রকাশিত সত্যগুলি স্বীকার করেন না। তাঁদের সমস্ত আলোচনায়, একটি শব্দও সমাজের অন্ধকারকে প্রকাশ করে না; একটিও শব্দ শয়তানের দ্বারা মানুষের বিকৃতির সারমর্ম ও বাস্তবতাকে প্রকাশ করে না; একটি শব্দও নেই যা শাসক শ্রেণীর প্রকৃতি ও অশুভ সারসত্যকে অনাবৃত করে, বা ঈশ্বরের অস্তিত্ব এবং ঈশ্বরের কাজের সাক্ষ্য বহন করে, বা ঈশ্বরের কীর্তি ও ঈশ্বরের ভালোবাসার সাক্ষ্য বহন করে, বা ঈশ্বরের বাক্যের সত্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তাদের সব কথাই ধর্মবিরোধী ও বিভ্রান্তিকর যা ঈশ্বরকে অস্বীকার করে ও তাঁর বিরোধিতা করে। মোটের ওপর, তাদের প্রতর্কের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণরূপে শাসক শ্রেণীর স্বার্থকে তুলে ধরা, বিপথে চালিত করা, দূষিত করা এবং মানবজাতির ক্ষতি করা, এবং ফলত তারা মানুষকে অন্ধকার ও অসাধু পথে চালিত করেছে, এবং মানবজাতি সেই শয়তানের গোষ্ঠীভুক্ত মানুষে পরিণত হয়েছে যারা ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করে এবং তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। কী ধরণের মানুষ শাসক শ্রেণীতে থাকে? তারা কি সদ্গুণসম্পন্ন এবং জ্ঞানী? একেবারেই না। এখনো অবধি একজনও সদ্গুণসম্পন্ন ও জ্ঞানী নেই। তাদের তথাকথিত সৎগুণ ও জ্ঞানের স্বরূপ উদ্ঘাটিত হয়েছে, এবং তাদের পর্দার আড়ালে সংঘটিত অপরাধগুলি প্রকাশিত হয়েছে সর্বসমক্ষে। এটা স্পষ্ট যে শয়তানের দ্বারা মানুষের দূষণের সমস্ত ইতিহাস জুড়ে কোনো সদ্গুণসম্পন্ন বা জ্ঞানী শাসক ছিল না, এবং ক্ষমতাসীন সকলেই শয়তানের অবতার ও দানব ছিল। তাদের কোন ভাবনা ও তত্ত্ব মানুষকে সবচেয়ে গভীরভাবে দূষিত করেছে? নাস্তিক্যবাদ, বস্তুবাদ, বিবর্তনবাদ, এবং কম্যুনিজম। তারা অসংখ্য বিধর্মীতা এবং হেত্বাভাস প্রচার করেছে, যেমন “কোনো ঈশ্বর আদৌ নেই”, “কখনো কোনো পরিত্রাতা ছিলেন না”, “কারোর নিয়তি তার নিজের হাতে” এবং “জ্ঞান তোমার ভাগ্য বদলে দিতে পারে”। এসব ধারণা অল্প বয়সে মানুষের হৃদয়ে প্রোথিত হয় ও ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। এর ফল কী? মানুষ ঈশ্বরকে এবং তাঁর থেকে যা কিছু আসে সবই অস্বীকার করতে শুরু করে, এমন কি এও যে ঈশ্বর আকাশ, পৃথিবী এবং সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই সবকিছু শাসন করেন। মানুষ ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্ট, কিন্তু তারা সেই সত্য অস্বীকার করে, এবং তারা সত্যকে বিকৃত করে, এই কথা বলে যে মানুষ বাঁদর থেকে বিবর্তিত হয়েছে, যেন মানুষ জন্তুর বর্গভুক্ত। এই প্রতারণাপূর্ণ, অদ্ভুত বৌদ্ধিক তত্ত্বগুলি মানুষের মন অধিকার করে, তাদের হৃদয় অধিকার করে এবং তাদের স্বভাবের অংশ হয়ে ওঠে, তাই তারা ঈশ্বরকে অস্বীকার করে এবং নিজেদের তাঁর থেকে দূরে সরিয়ে রাখে এবং এদের পক্ষে সত্যকে স্বীকার করা ক্রমশঃ কঠিন হয়ে পড়ে। তারা সর্বক্ষণ আরো উদ্ধত, দুষ্ট, এবং দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে ওঠে। তারা সমস্ত বিবেক ও যুক্তি হারায়, মনুষ্যত্বের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায়, এবং পরিত্রানের ঊর্ধ্বে চলে যায়। এইভাবেই মানবজাতি শয়তানের দ্বারা এতদূর দূষিত হয়েছে যে তারা দানবে পরিণত হয়েছে। এই হল মানুষের জ্ঞানের চর্চা ও তার মাধ্যমে ভাগ্যবদলের ভয়ানক পরিণতি। বাস্তবতা বলে যে বিজ্ঞান এবং জ্ঞান সত্য নয় এবং আমাদের জীবন হয়ে উঠতে পারে না, বরং তারা সত্যের বিরোধী এবং তাদের সঙ্গে সত্যের সাযুজ্য নেই। তারা কেবল মানবজাতিকে দূষিত, আহত ও ধ্বংস করতে পারে।

কেন বলছি যে এরা সত্য নয়? কারণ জ্ঞান ঈশ্বরের থেকে আসে না, বরং তা শয়তানের দ্বারা মানুষের দূষণ থেকে আসে। এটা আসে সেইসব মহান ও বিখ্যাত মানুষদের থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত মানবজাতি যাদের সমাদর করে। তাহলে আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি জ্ঞান সত্য নয়। প্রথমত, জ্ঞান মানুষকে তাদের কলুষিত সারসত্যকে জানতে সাহায্য করতে পারে না বা তাদের আত্মজ্ঞান দান করতে পারে না। দ্বিতীয়ত, জ্ঞান মানুষের কলুষিত স্বভাবকে শুদ্ধ করতে পারে না, বরং তাদের ক্রমাগত আরো বেশী উদ্ধত করে তোলে। তৃতীয়ত, জ্ঞান মানুষকে পাপ থেকে রক্ষা করতে পারে না ও তাদের পরিশুদ্ধ করতে পারে না। চতুর্থত, জ্ঞান মানুষকে সত্য জানতে, এবং ঈশ্বরকে জানতে ও তাঁর কাছে সমর্পণ করতে সাহায্য করে না। পঞ্চমত, জ্ঞান মানুষকে প্রকৃত সুখ লাভ করতে বা তাদের প্রদীপ্ত করতে সাহায্য করতে পারে না, এবং বিশেষত তাদের এক সুন্দর গন্তব্য দিতে পারে না। এবং সেইজন্য, জ্ঞান সত্য নয়, এবং তা মানবজাতিকে পাপ বা শয়তানের শক্তি থেকে বাঁচাতে পারে না। সুতরাং আমরা আত্মবিশ্বাসী যে জ্ঞান কোনো ব্যক্তির ভাগ্য বদলাতে পারে না। শুধুমাত্র যা ঈশ্বরের থেকে আসে তাই সত্য; ঈশ্বরের বাক্যই একমাত্র সত্য। শুধুমাত্র সত্যই মানুষের জীবন হতে পারে এবং তাদের দূর্নীতি পরিশুদ্ধ করতে পারে, তাদের পাপ মুক্ত করে এবং পবিত্র করে। শুধুমাত্র সত্যই মানুষকে তার বিবেক ও যুক্তি পুনরুদ্ধার করার এবং প্রকৃত মানুষের মতো জীবনে বাঁচার সুযোগ দেয়। শুধুমাত্র সত্যই মানুষকে জীবনে প্রকৃত দিশা ও লক্ষ্য দিতে পারে, এবং শুধুমাত্র সত্যই ঈশ্বরকে জানতে, তাঁর আশীর্বাদ পেতে ও এক সুন্দর গন্তব্য পেতে মানুষকে সাহায্য করতে পারে। সেই কারণেই দেহে প্রকাশিত ঈশ্বরের দ্বারা ব্যক্ত সত্যই মানুষকে শয়তানের শক্তি থেকে মুক্তি দিতে পারে যাতে তারা সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের অভিমুখে যেতে পারে। কেবলমাত্র রক্ষাকর্তাই মানবজাতিকে বাঁচাতে পারেন এবং মানবজাতির ভাগ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারেন, যাতে আমরা এক অত্যাশ্চর্য গন্তব্য পাই। তাহলে জ্ঞান মানুষকে কেন বাঁচাতে পারে না? এর কারণ মানুষ শয়তানের দ্বারা গভীরভাবে দূষিত, শয়তানের প্রকৃতিবিশিষ্ট এবং শয়তানের স্বভাবের মধ্যে জীবন যাপন করে ক্রমাগত পাপ ও দুষ্কর্ম করে চলে। তারা সঠিক পরিস্থিতিতে যে কোনো দুষ্কর্ম করতে সক্ষম, এবং যে মুহূর্তে ক্ষমতা হাতে আসে তারা নিজেদের প্রকৃত রূপ প্রদর্শন করে ও যা ইচ্ছে তাই করে। এবং জ্ঞান আসে দূষিত মানুষের থেকে, শয়তানের থেকে, তাই জ্ঞান সত্য নয়। দূষিত মানুষ যতই শিখুক না কেন, তারা নিজেদের দূষণের সার এবং সত্য জানতে পারে না, এবং তারা প্রকৃত অর্থে অনুতাপ করতে ও ঈশ্বরের অভিমুখে যেতে পারে না। কোনো পরিমাণ জ্ঞানই কোনো ব্যক্তির পাপপূর্ণ প্রকৃতির শুদ্ধিকরণ করতে পারে না, তাদের দূষিত স্বভাব বদলানো তো দূরের কথা। দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ যতই জানুক, তারা পাপ বা শয়তানের শক্তি থেকে মুক্তি এবং পবিত্রতা অর্জন করতে পারে না। সত্যকে স্বীকার না করে তারা ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ অর্জন করতে পারবে না, এবং কখনোই তাদের পাপপূর্ণ প্রকৃতির সংশোধন করতে পারবে না। দূষিত মানবজাতির জ্ঞান যতই উন্নত হবে, সত্যকে স্বীকার করা ততই কঠিন হবে এবং ঈশ্বরকে অস্বীকার ও প্রতিরোধ করার সম্ভাবনা আরো বেশি হবে। মানুষ যখন অধিকতর জ্ঞানচর্চা করে তারা আরো উদ্ধত, আত্মগরিমাপূর্ণ এবং উচ্চাকাঙ্খী হয়ে ওঠে। তারা পাপের পথে পা বাড়ানো থেকে বিরত থাকতে পারে না। সেই কারণেই জ্ঞান শুধুমাত্র মানুষের দূষণ, ক্ষতি ও ধ্বংস করতে পারে। বহু মানুষ জ্ঞানের প্রকৃত স্বরূপ দেখতে পায় না কিংবা তা কী কাজে লাগে দেখতে পায় না। তারা জ্ঞানের উৎস দেখতে পায় না, বরং সত্যের চর্চা করার বদলে অন্ধভাবে এর উপাসনা ও চর্চা করতে থাকে। কেন এইসব বিখ্যাত মানুষ ক্ষমতা লাভ করলে এত দুষ্কর্ম করেন যাতে মানুষের কষ্ট হয় এবং দেশের ক্ষতি হয়, বিভিন্ন রকমের দুর্যোগ নেমে আসে, পরিত্রাণের অযোগ্য নানা অন্যায় করেন? এ হল জ্ঞানের চর্চা ও সাধনার ফল। এর থেকে বোঝা যায় যে জ্ঞান কোনো ব্যক্তির ভাগ্য বদলাতে পারে না, এবং কারোর জ্ঞান যতই উন্নত হোক না কেন, তারা ঈশ্বরের দ্বারা মুক্তি পেতে পারবে না যদি তাদের আস্থা না থাকে এবং তারা সত্যকে গ্রহণ না করে। তাদের জ্ঞান যতই উন্নত হোক তারা ঈশ্বরের আশীর্বাদ এবং সৌভগ্য লাভ করবে না, বরং মৃত্যুর পর নরকে যাবে। ঈশ্বর ন্যায়পরায়ণ এবং তিনিই মানুষের ভাগ্য শাসন করেন, তাই যে তাঁর স্বীকৃতি ও আশীর্বাদ লাভ করেনি সে উত্তম গন্তব্য পেতে পারে না, বরং ধ্বংস, অনন্ত শাস্তি এবং নরক ভোগ করে।

এখন বিচক্ষণ মানুষ জ্ঞানের পূজা বন্ধ করেছে বরং তারা আকাঙ্খা করছে পবিত্রতমের আগমনের জন্য, পরিত্রাতার অবতরণ ও মানবজাতিকে উদ্ধারের জন্য। কেউ আশা করছে না যে কোনো মহান বিখ্যাত মানুষ মানবজাতিকে বাঁচাবে। তারা নিজেদেরই বাঁচাতে পারে না, সুতরাং সমগ্র মানবজাতিকে কী করে বাঁচাবে? ঘটনাপ্রবাহ থেকে আমরা দেখতে পাই যে জ্ঞান সৌভাগ্য নিশ্চিত করতে পারে না, এবং বিজ্ঞান ও শিক্ষার দ্বারা উন্নতির ধারণা অর্থহীন। একমাত্র রক্ষাকর্তাই মানুষকে পাপ এবং শয়তানের শক্তিগুলির হাত থেকে উদ্ধার করতে পারেন, কেবলমাত্র সত্যকে ব্যক্ত করে পরিত্রাতাই আমাদের আলোর পথে নিয়ে যেতে পারেন; শুধুমাত্র পরিত্রাতার দ্বারা ব্যক্ত সব সত্যকে স্বীকার করাই আমাদের শয়তানের দূষণ থেকে মুক্ত করতে পারে যাতে আমরা ঈশ্বরের দ্বারা সম্পূর্ণ রক্ষা পাই, এবং তাঁর স্বীকৃতি ও আশীর্বাদ লাভ করি। এই হল আমাদের ভাগ্যকে সম্পূর্ণরূপে পাল্টে দেওয়ার একমাত্র উপায়। এ কথা স্পষ্ট যে কোনো একজন ব্যক্তির ভাগ্যের বদল ঘটে পরিত্রাতার আবির্ভাব ও কাজের স্বীকৃতির মাধ্যমে, অন্তিম সময়ে পরিত্রাতার দ্বারা ব্যক্ত সব সত্যের স্বীকৃতির মাধ্যমে, এবং অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের বিচার স্বীকার করে পরিশুদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে। সহজ কথায়, কারোর ভাগ্য আমূল বদলানোর একমাত্র উপায় সত্যকে স্বীকার করা। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “ঈশ্বর এই বিশ্বের স্রষ্টা। এই মানবজাতি তিনি সৃষ্টি করেছেন, আবার প্রাচীন গ্রীসের সংস্কৃতি এবং মানব সভ্যতার স্থপতিও তিনি। একমাত্র ঈশ্বর মানুষের শোকে দুঃখে সান্ত্বনা প্রদান করেন, একমাত্র তিনিই মানুষের কল্যাণে দিবারাত্র রত রয়েছেন। মানবজাতির উন্নয়ন তথা অগ্রগতি এবং ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব একে অপরের থেকে অবিচ্ছেদ্য। তেমনই মানবজাতির ইতিহাস এবং ভবিষ্যতও ঈশ্বরের পরিকল্পনাকে লঙ্ঘন করতে পারে না। নিষ্ঠাবান খ্রীষ্টান হলে তুমি নিশ্চিতভাবেই বিশ্বাস করবে, যে কোনও সাম্রাজ্য বা জাতির উত্থান ও পতন ঈশ্বরের পরিকল্পনাতেই ঘটে। ঈশ্বরই একমাত্র জানেন কোনও জাতি বা সাম্রাজ্যের ভাগ্যে কি হতে চলেছে, এবং একমাত্র তিনিই সেই মানবজাতির ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। মানুষ যদি এক উজ্জ্বল আগামীর আশা করে, কোনও রাষ্ট্র যদি আলোকিত এক ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষায় থাকে, তাহলে মানুষকে ঈশ্বরের প্রার্থনায় নতজানু হতে হবে। স্বীকার করতে হবে নিজের সমস্ত পাপ-কর্ম এবং সে জন্য অনুতপ্ত হতে হবে, এর অন্যথায় মানুষের অদৃষ্ট এবং গন্তব্য অনিবার্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, পরিশিষ্ট ২: ঈশ্বর সমগ্র মানবজাতির ভাগ্য নির্ধারক)

এখন আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে বুদ্ধিজীবীরা নিজেদেরই বাঁচাতে পারে না, তাহলে কী করে তারা মানবজাতিকে বাঁচাবে? একমাত্র পরিত্রাতাই মানুষকে পাপ থেকে রক্ষা করতে পারে, এবং মানুষকে আলো, সুখ এবং একটি সুন্দর গন্তব্য এনে দিতে পারে। তাহলে পরিত্রাতা কে? কোনো সন্দেহ নেই যে তিনি মানবদেহে ঈশ্বরের অবতার, যিনি পরিত্রাণের কাজ করতে মানুষের মধ্যে এসেছেন। তিনিই আমাদের পরিত্রাতা। আমরা বলতে পারি যে পরিত্রাতা হলেন ঈশ্বরের দেহরূপ, যে তিনি মানবদেহ পরিহিত ঈশ্বর। প্রকৃতপক্ষে একেই বলে অবতার। সুতরাং ঈশ্বরের অবতার হলেন আমাদের মাঝে অবতীর্ণ পরিত্রাতা। ঈশ্বর মানবজাতি সৃষ্টির পর দুবার মানুষকে রক্ষা করতে অবতীর্ণ হয়েছেন। ২,০০০ বছর আগে, তিনি প্রভু যীশু রূপে দেহে আবির্ভূত হন এবং এক উপদেশে বলেন, “অনুতাপ কর: কারণ স্বর্গরাজ্য সমাগত(মথি ৪:১৭)। তিনি বহু সত্য ব্যক্ত করেন এবং শেষ পর্যন্ত মানুষের পাপ উ ৎসর্গ রূপে ক্রুশবিদ্ধ হন। এটি ছিল মানুষের প্রতি ঈশ্বরের ভালোবাসার স্পষ্ট নিদর্শন। সারা বিশ্বের মানুষ প্রভু যীশুকে তাদের পরিত্রাতা রূপে স্বীকার করেছে, ঈশ্বরের কাছে অপরাধ স্বীকার ও অনুতাপ করেছে, এবং তাদের পাপ ক্ষমা করা হয়েছে। তারা ঈশ্বর প্রদত্ত শান্তি এবং আনন্দ, সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মহান করুণা উপভোগ করেছে। যখন প্রভু যীশু পরিত্রাণের কাজ শেষ করলেন, তিনি বহুবার ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, “আমি শীঘ্রই আসছি” এবং “মানবপুত্রের আগমন হবে।” “কারণ মনুষ্যপুত্র এমন সময়ে আসবেন, যে সময়ে তাঁর আগমন প্রত্যাশা করবে না(মথি ২৪:৪৪)। সেইজন্যই যারা প্রভু যীশুকে নিজেদের পরিত্রাতা বলে স্বীকার করেছে তারা অন্তিম দিনে তার আবির্ভাবের অপেক্ষায় আছে, যাতে পরিত্রাতা তাদের রক্ষা করতে আসেন ও স্বর্গরাজ্যে নিয়ে যান। প্রভু যীশু ভবিষ্যদ্বাণী করলেন, “আমার এখনও অনেককিছুই তোমাদের বলার আছে, কিন্তু এখন তোমরা সেগুলো বহন করতে পারবে না। সেই সত্যের আত্মা যখন আসবেন তিনি তোমাদের সকল সত্যের পথে পরিচালিত করবেন(যোহন ১৬:১২-১৩)। “তোমার বাক্যই সত্যস্বরূপ, সেই সত্যের দ্বারা তুমি তাদের শুচিশুদ্ধ কর(যোহন ১৭:১৭)। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীর ওপর ভিত্তি করে, অন্তিম দিনে ঈশ্বর মনুষ্যপুত্ররূপে দেহে আবির্ভূত হবেন এবং মানবজাতিকে সম্পূর্ণ শুদ্ধ ও রক্ষা করতে সত্য প্রকাশ করবেন, যাতে মানবজাতিকে একটি সুন্দর গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া যায়। সুতরাং, অন্তিম দিনে অবতীর্ণ ঈশ্বর হলেন মানুষের মাঝে আবির্ভূত পরিত্রাতা। তাহলে কীভাবে আমরা পরিত্রাতাকে স্বাগত জানাব? প্রভু যীশু বলেছেন, “আমার নিজের মেষপাল আমার ডাক শোনে(যোহন ১০:২৭)। “শোনার মত কান যার আছে সে শুনুক, পবিত্র আত্মা সকল মণ্ডলীকে কী বলছেন(প্রকাশিত বাক্য ২:৭)। প্রভু যীশু আমাদের বারবার মনে করিয়েছেন যে প্রভুকে স্বাগত জানানোর মূল সূত্র হলো তাঁর কণ্ঠ শোনা এবং যখন অন্তিম দিনে তিনি ফিরবেন তখন ঈশ্বর প্রকাশিত সত্যগুলি স্বীকার করা। বিপর্যয়গুলি এখন আমাদের ঠিক চোখের সামনে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে সারা পৃথিবীতে একমাত্র সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই সেই সব সত্য প্রকাশ করেছেন যা মানবজাতিকে রক্ষা করবে, এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বর ব্যতীত কেউ সত্য বলেনি। এতে প্রমাণ হয় যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই প্রত্যাবর্তিত যীশু, তিনিই সেই ত্রাতা যিনি অন্তিম দিনে মানুষকে রক্ষা করতে আসবেন। এ হল এক দারুণ সুখবর। নিজেদের ভাগ্য বদলানোর একমাত্র পথ পরিত্রাতার পরিত্রাণ স্বীকার করা, এবং ঈশ্বরের দ্বারা ব্যক্ত সত্যগুলিকে স্বীকার করা।

সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “অন্তিম সময়ের খ্রীষ্ট মানুষকে শেখানোর জন্য, মানুষের উপাদান প্রকাশ করার জন্য এবং মানুষের কথা ও কাজের বিশ্লেষণ করার জন্য বিভিন্ন সত্য ব্যবহার করেন। এই বাক্যে বিভিন্ন সত্য অন্তর্ভুক্ত থাকে, যেমন মানুষের কর্তব্য, কীভাবে মানুষের ঈশ্বরকে মান্য করা উচিত, কীভাবে মানুষের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা উচিত, কীভাবে মানুষের স্বাভাবিক মানবতাসম্পন্ন জীবনযাপন করা উচিত, সেইসাথে থাকে ঈশ্বরের প্রজ্ঞা এবং স্বভাব ইত্যাদি বিষয়সমূহ। এই সমস্ত বাক্য মানুষের উপাদান এবং তার ভ্রষ্ট স্বভাবের দিকেই ইঙ্গিত করে। বিশেষ করে, সেই সমস্ত বাক্য, যা অনাবৃত করে মানুষ কীভাবে ঈশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তা আসলে এ সম্পর্কে কথা বলে যে কীভাবে মানুষ শয়তানের মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছে এবং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে শত্রু শক্তিতে পরিণত হয়েছে। তাঁর বিচারকার্যের সময়, ঈশ্বর কেবলমাত্র কয়েকটি বাক্যের মাধ্যমে মানুষের প্রকৃতি স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন না; তিনি দীর্ঘমেয়াদে তা অনাবৃত করেন, মোকাবিলা করেন এবং তাদের অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন করেন। অনাবৃতকরণ, মোকাবিলা এবং অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তনের এই সমস্ত ভিন্ন পদ্ধতি সাধারণ শব্দ দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা যায় না, সেই সত্যের দ্বারাই প্রতিস্থাপিত করা যায় যার সম্পর্কে মানুষ একেবারেই অসচেতন। শুধুমাত্র এই ধরনের পদ্ধতিকেই বিচার বলা যেতে পারে; শুধুমাত্র এই ধরনের বিচারের মাধ্যমেই মানুষ ঈশ্বরের প্রতি অনুগত হতে পারে, তাঁর সম্বন্ধে দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত হতে পারে, এবং ঈশ্বর সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান লাভ করতে পারে। এই বিচারের কাজই প্রতিফলিত করে ঈশ্বরের আসল চেহারা সম্পর্কে মানুষের উপলব্ধি, এবং তার নিজের বিদ্রোহের সত্য। বিচারের কাজ মানুষকে ঈশ্বরের ইচ্ছা, তাঁর কাজের উদ্দেশ্য এবং দুর্বোধ্য রহস্য সম্পর্কে অনেক বেশি করে বোঝার সুযোগ দেয়। এটি মানুষকে নিজের ভ্রষ্ট সারসত্য এবং সেই ভ্রষ্টাচরণের মূল চিনতে ও জানতে শেখায়, এবং সেইসাথে মানুষের কদর্যতা আবিষ্কার করতে শেখায়। এই সমস্ত প্রভাব বিচারের কাজের মাধ্যমে প্রতিভাত হয়, কারণ এই কাজের সারমর্ম হল ঈশ্বরের সত্য, পথ এবং জীবনকে তাঁর অনুগামীদের কাছে উন্মুক্ত করার কাজ। এই কাজ ঈশ্বরের বিচারের কাজ(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, খ্রীষ্ট সত্যের দ্বারাই বিচারের কাজ করেন)

সর্বশক্তিমান ঈশ্বর কত সত্য প্রকাশ করেছেন, যা “বাক্য দেহে আবির্ভূত হল”-এর মতো ঈশ্বর বাক্যের গ্রন্থে সংকলিত আছে, সব মিলিয়ে লক্ষাধিক বাক্য। এ সবই অন্তিম দিনে ঈশ্বরের বিচারের কাজের জন্য প্রকাশিত সত্য, এবং আইনের যুগে ঈশ্বর যে সত্যগুলি প্রকাশ করেছিলেন তার চেয়ে অনেক বেশি এমনকী করুণার যুগের থেকেও। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর মানুষকে রক্ষা করার জন্য তাঁর ব্যবস্থাপনার সমস্ত রহস্য প্রকাশ করেছেন, তিনি বাইবেলের সেই সব রহস্য প্রকাশ করেছেন যা মানুষ কখনো বোঝেনি, এবং তিনি শয়তানের দ্বারা মানবজাতির ভ্রষ্টাচার এবং আমাদের শয়তানসুলভ, ঈশ্বর বিরোধী প্রকৃতির সত্যকে উন্মোচন করেছেন। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের পাপী প্রকৃতির মূল এবং ভ্রষ্টাচারের সত্যকে জানতে পারি। ঘটনাপ্রবাহের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মানুষ সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে যায় এবং নিজেদের ঘৃণা করতে শুরু করে, আফসোস করে এবং প্রকৃত অনুতাপ করে। ঈশ্বর সেই সব সত্যও প্রকাশ করেন যাতে প্রবেশ করলে এবং যার অনুশীলন করলে মানুষ তাঁর বাক্য অনুযায়ী বাঁচতে পারে এবং প্রকৃত মানুষের মতো ও সত্যের মতো বাঁচতে পারে। এই হল ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি ও আশীর্বাদ অর্জনের একমাত্র উপায়। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যত সত্য প্রকাশ করেছেন তার সবই মানুষের কলুষমুক্তি ও আমাদের শয়তানের শক্তি থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে যাতে আমরা ঈশ্বর অভিমুখী হই ও তাঁকে জানতে পারি। এই সত্যগুলিই হল জীবন ধারণের জন্য একমাত্র সত্য নীতি এবং এরাই মুক্তি অর্জনের শিক্ষা, এবং এরা ব্যক্তির ভাগ্যের আমূল পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট, যাতে তারা এক সুন্দর গন্তব্যের হদিশ পায়—ঈশ্বরের রাজ্য। মহাবিপর্যয়গুলি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। তাদের শুভ আশাগুলিকে সত্যি করতে হলে পরিত্রাতার আবির্ভাব ও কাজকে স্বীকার করতে হবে। ঈশ্বরের স্বীকৃতি পাওয়ার একমাত্র উপায় সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের দ্বারা ব্যক্ত সমস্ত সত্যকে স্বীকার করা, যাতে মহাবিপর্যয়ের মধ্যে ঈশ্বরের সুরক্ষা ও আশীর্বাদ পাওয়া যায়, এর থেকে বাঁচা যায় এবং ঈশ্বরের দ্বারা তাঁর রাজ্যে আনীত হওয়া যায়। যদি মানুষ পরিত্রাতার প্রকাশিত সব সত্য স্বীকার না করে, তাদের কল্পনার মিথ্যা ঈশ্বরের জন্য বা কোনো অশুভ শক্তি এসে তাদের বাঁচানোর অপেক্ষা করে, সে নিতান্তই মায়া। তাদের হাত শূন্যই থাকবে, পরিশ্রম করে কিছু লাভ হবে না। মিথ্যা ঈশ্বর এবং অশুভ আত্মারা মানুষকে বাঁচাতে পারে না। শুধুমাত্র দেহরূপী ঈশ্বরই মানুষের পরিত্রাতা, এবং এই হল সৌভাগ্য ও গন্তব্য অর্জনের একমাত্র উপায়। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “অন্তিম সময়ের খ্রীষ্ট নিয়ে আসেন জীবন, এবং নিয়ে আসেন সত্যের চিরস্থায়ী ও শাশ্বত পথ। এই সত্যের পথেই মানুষ জীবন লাভ করে এবং এটিই একমাত্র পথ যার দ্বারা মানুষ ঈশ্বরকে জানতে পারে এবং ঈশ্বরের দ্বারা অনুমোদিত হয়। অন্তিম সময়ের খ্রীষ্ট যে জীবন যাপনের পথের সন্ধান দিয়েছেন তুমি যদি তার অনুসন্ধান না করো, তবে তুমি কখনই যীশুর অনুমোদন লাভ করতে পারবে না এবং স্বর্গরাজ্যে প্রবেশের যোগ্য কখনই হয়ে উঠতে পারবে না(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, শুধুমাত্র অন্তিম সময়ের খ্রীষ্ট মানুষকে অনন্ত জীবনের পথ দেখাতে পারেন)। “যারা খ্রীষ্টের বাণীর সত্যের উপর নির্ভর না করে জীবন লাভ করতে চায় তারা পৃথিবীর সবচেয়ে হাস্যকর মানুষ এবং যারা খ্রীষ্ট প্রদত্ত জীবন যাপনের পথের সন্ধান পেতে চায় না তারা অলীক কল্পনার জগতে বিভোর হয়ে আছে। তাই বলছি যে যারা অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টকে গ্রহণ করে না তারা চিরকাল ঈশ্বরের দ্বারা ঘৃণার পাত্র হয়েই থাকে। অন্তিম সময়ে খ্রীষ্টই মানুষের কাছে রাজ্যের প্রবেশপথ, এবং কেউ তাঁকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারে না। খ্রীষ্টের মধ্যস্থতা ছাড়া কেউ ঈশ্বরের দ্বারা নিখুঁত হয়ে উঠতে পারে না। তুমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করলে, অবশ্যই তাঁর বাক্য মেনে নেবে এবং তাঁর প্রদর্শিত পথের অনুবর্তী হবে। তুমি সত্য প্রাপ্তি না করে এবং জীবনের বিধান গ্রহণে অক্ষম হয়ে কেবল আশীর্বাদ লাভের কথা ভেবে যেতে পারো না। খ্রীষ্ট অন্তিম সময়ে আসেন, যাতে তাঁর প্রকৃত অনুরাগীদের জীবন প্রদান করতে পারেন। পুরাতন যুগের পরিসমাপ্তি ঘটানো এবং নতুন যুগে প্রবেশের উদ্দেশ্যেই তাঁর কাজ, আর যারা নতুন যুগে প্রবেশ করবে, তাঁর কাজের এই পথ তাদের গ্রহণ করতেই হবে। যদি তুমি তাঁকে মেনে নিতে অস্বীকার করো এবং তার পরিবর্তে তাঁর নিন্দা করো, তাঁর প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করো অথবা নির্যাতন করো, তাহলে তুমি অনন্তকাল জ্বলতে থাকবে এবং কখনই ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ খ্রীষ্ট স্বয়ং পবিত্র আত্মার প্রতিরূপ, ঈশ্বরের মূর্ত প্রকাশ, এমন একজন যাকে ঈশ্বর পৃথিবীতে তাঁর হয়ে কাজ করার দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। তাই আমি বলছি যে অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের কর্মকাণ্ড মেনে নিতে না পারার অর্থ পবিত্র আত্মার নিন্দা করা। যারা পবিত্র আত্মার নিন্দা করে তাদেরকে প্রদত্ত শাস্তির স্বরূপ সকলের কাছে স্বতঃসিদ্ধ(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, শুধুমাত্র অন্তিম সময়ের খ্রীষ্ট মানুষকে অনন্ত জীবনের পথ দেখাতে পারেন)

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের বিচার কার্য মানবজাতিকে কীভাবে শুদ্ধ করে এবং রক্ষা করে?

মানুষ বুঝতে পেরেছে যে পৃথিবীর ওপরে মহা বিপর্যয় নেমে এসেছে আর যারা আশা করছে প্রভু মেঘে চড়ে আসবেন তারা উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছে। তবে বহু বছর...

এ কথা কি সত্যি যে ঈশ্বরের সব কাজ ও বাক্য বাইবেলে আছে?

পরিত্রাতা সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আবির্ভূত হয়েছেন এবং অন্তিম সময়ে কাজ করছেন এবং তিনি লক্ষ লক্ষ সত্য প্রকাশ করেছেন। তিনি মানবজাতিকে সম্পূর্ণ রূপে...

সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে আস্থা রাখা কি প্রভু যীশুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা?

অন্তিম সময়ের খ্রীষ্ট, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের আবির্ভাবের পর ত্রিশ বছর কেটে গেছে এবং ১৯৯১ সালে কাজ ও সত্যের প্রকাশ শুরু করেছিলেন। তিনি প্রকাশ...

Leave a Reply

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন