যাজকের দুর্বৃত্তি দেখতে পাওয়া

01-04-2023

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে আমার অনলাইনে এক সিস্টারের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। সে আমাকে বলে প্রভু যীশু সর্বশক্তিমান ঈশ্বররূপে প্রত্যাবর্তন করেছেন, এবং তিনি বিচারের কাজ করার জন্য সত্য প্রকাশ করছেন। আমি প্রভুর প্রত্যাবর্তনের কথা শুনে শিহরিত হই এবং অনলাইন সমাবেশে অংশগ্রহণ করা ও সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করি। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য পড়ে, আমি জানতে পারি শয়তানের দ্বারা মানুষের কলুষিত হওয়ার মূল সত্য, মানুষকে রক্ষা করতে ঈশ্বরের তিনটি পর্যায়ের কাজ, অবতারত্বের রহস্য, ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের বিচারের কাজ, এবং আমি আগে শুনিনি এমন বহু সত্য। কিছু সময় ধরে সন্ধান ও অন্বেষণ করার পর, আমি নিশ্চিত হলাম যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই প্রত্যাবর্তিত প্রভু যীশু এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জায় যুক্ত হলাম। প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য পড়ার পুষ্টিসাধন আমার ভালো লাগত এবং আমি আধ্যাত্মিকভাবে পুষ্ট হতাম যা আগে কখনো ঘটেনি। তুলনায়, আমার যাজকের ধর্মোপদেশ ছিল পুরনো, নীরস এবং এক ঘেয়ে, আলোবিহীন। তা আদৌ মানসিক উন্নতির সহায়ক ছিল না, তাই আমি গির্জার কাজে অংশগ্রহণ করা বন্ধ করে দিই।

তারপর ২০২১-এর ফেব্রুয়ারি মাসে, মায়ানমারে একটি সামরিক অভ্যুথ্থান হয়, এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। আমি আর অনলাইল সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে পারতাম না। কিছু সময়ের মধ্যেই, কিছু ব্রাদার আমার গ্রামে আসেন এবং বলেন যে তারা স্থানীয় সমাবেশ করতে চান। সেই সমাবেশে তখন কুড়ি জন ব্যক্তি অংশ নিতেন। বিস্ময়করভাবে, মাত্র কয়েকটি সমাবেশের পরেই, কেউ স্থানীয় যাজকের কাছে আমাদের নামে নালিশ করে। সে গির্জার লোকজনকে বলতে শুরু করে যে আমরা গির্জার বদলে অনলাইন সমাবেশে যাচ্ছিলাম এবং আমরা যাজকদের কথা শুনি না। সে মিথ্যে কথা বলে যে আমরা নিজেদের এক চক্র তৈরি করছি। সে সকলকে বলে দেয় যাতে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখে। আমাদের গ্রামে প্রায় প্রত্যেকেই খ্রিস্টান ছিল, এবং তারা সকলে যাজকের সমাদর করত ও তার কথা শুনত। তার আক্রমণ ও বিচারের কারণে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে আমাদের বিশ্বাসের খবর সারা শহরে ছড়িয়ে পড়ল, এবং প্রত্যেকে, এমনকী আমাদের আত্মীয়, বন্ধু এবং প্রতিবেশীরা, আমাদের বকতে শুরু করে গির্জায় না যাওয়া বা যাজকের কথা আর না শোনার জন্য, বলে যে এ অত্যন্ত খারাপ। আমি যেখানেই যেতাম, লোকে আমার দিকে আঙুল তুলতো এবং পরিবারও আমার বিশ্বাসের বিরোধিতা করত। আমি সত্যিই ভেঙে পড়েছিলাম। সবসময়েই আমার বন্ধু ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল, আমরা একে অপরকে সাহায্য করতাম, কিন্তু এখন তারা আমার সঙ্গে গলগ্রহের মতো আচরণ করে, যেন আমি কোনো শত্রু। বিশ্বাস এক ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। আমরা বেআইনি কিছু করিনি, শুধুমাত্র নিজেদের বিশ্বাসের অনুশীলন করছিলাম। কেন যাজক আমাদের বিচার ও নিন্দা করবে এবং গ্রামের লোকেদের দিয়ে আমাদের বর্জন করাবে? আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ি এবং ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি: “ঈশ্বর যাজক আমাদের তীব্র আক্রমণ করছে এবং আমার সব নিকটজনেরা আমায় বর্জন করছে। আমি খুবই করুণ অবস্থায় আছি। ঈশ্বর, আমি বুঝতে পারছি না কেন তারা আমার সঙ্গে এই আচরণ করছে। অনুগ্রহ করে আমাকে প্রদীপ্ত করুন যাতে আমি এসব ভালো করে বুঝতে পারি এবং অবসাদমুক্ত হই।” তারপর আমি ঈশ্বরের বাক্যের একটি অংশ পড়ি। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “ঈশ্বর যখন তাঁর কর্ম সম্পাদন করেন, কোনো ব্যক্তির প্রতি যত্নবান হন, এবং সেই ব্যক্তিকে পরীক্ষা করেন, এবং যখন সেই ব্যক্তির প্রতি সমর্থন এবং অনুমোদন প্রদান করেন, শয়তান নিকটে থেকেই অনুসরণ করে, সেই ব্যক্তিকে ঠকানোর এবং তার ক্ষতিসাধনের জন্য সচেষ্ট থাকে। ঈশ্বর যদি সেই ব্যক্তিকে অর্জন করতে চান, তাহলে শয়তানও তখন তার সমস্ত শক্তি দিয়ে ঈশ্বরের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, নানাবিধ কূটচক্রান্তের মাধ্যমে সে ঈশ্বরের কর্মকে প্রলোভন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত তথা ব্যহত ও বিঘ্নিত করে, তার গোপন অভিপ্রায় সার্থক করার উদ্দেশ্যে। কী এই অভিপ্রায়? সে চায় না যে ঈশ্বর কাউকে অর্জন করুন; ঈশ্বর যাদের অর্জন করতে আকাঙ্ক্ষা করেন, সে তাদের ছিনিয়ে নিজের অধিকারে আনতে চায়, সে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাদের নেতৃত্ব দিতে চায় যাতে তারা তারই উপাসনা করে, যাতে মন্দ কর্ম সংঘটনে এবং ঈশ্বরের বিরোধিতায় তারা তার সাথে যুক্ত হয়। এ কি শয়তানের অশুভ অভিপ্রায় নয়? … ঈশ্বরের সাথে যুদ্ধ এবং তাঁর অনুগমনের মাধ্যমে, শয়তানের উদ্দেশ্য হল সেই সকল কার্যের ধ্বংসসাধন যা ঈশ্বর করতে চান, ঈশ্বর যাঁদের অর্জন করতে চান তাদের অধিগ্রহণ এবং নিয়ন্ত্রণ, এবং ঈশ্বর যাদের অর্জন করতে চান তাদের প্রত্যেকের নির্বাপণ। তারা নির্বাপিত না হলে, তখন শয়তান তাদের দখল করে নেয়, যাতে সে তাদের ব্যবহার করতে পারে—এই হল তার উদ্দেশ্য(বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৪)। এ আমাকে দেখতে সাহায্য করে আমাদের সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের থেকে দূরে রাখার যাজকের এই প্রয়াস আসলে এক আধ্যাত্মিক যুদ্ধ ছিল। ঈশ্বর অন্তিম সময়ে মানুষের বিচার ও পরিশোধনের জন্য সত্য প্রকাশ করেন। তার উদ্দেশ্য প্রকৃত বিশ্বাসীদের একটি গোষ্ঠীকে রক্ষা ও অর্জন করা। কিন্তু শয়তান ঈশ্বরের শত্রু, এবং সে ঈশ্বরের কাজে বাধা দিতে ও ক্ষতি করতে সবরকম কৌশল অবলম্বন করে যাতে মানুষ ঈশ্বরকে ত্যাগ করে, বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং তার ক্ষমতাধীন থাকে। তখন সে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং অবশেষে তারা তার সঙ্গেই নরকে দণ্ডিত হবে। আমি দেখলাম যে গির্জার যাজকরা আসলে শয়তানের মোসাহেব। তারা শুনেছে ঈশ্বরের প্রত্যাবর্তন হয়েছে, কিন্তু তার অনুসন্ধান না করে তারা অন্যদের সে কাজ থেকে বিরত করছিল। তাদের ধর্মোপদেশ আধ্যাত্মিকভাবে পুষ্টিকর নয়, কিন্তু তারা মানুষকে প্রকৃত পথের সন্ধান করতে দেবে না। আমরা গির্জায় যাওয়া ও তাদের অনুসরণ করা বন্ধ করে দিয়েছি দেখে, তারা আমাদের নিন্দা ও কুৎসা করল, যাতে আমরা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বিরোধিতা করে তাদের গির্জায় ফিরে যাই, তাদের নিয়ন্ত্রণে ফিরে যাই। তাহলে আমরা অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের পরিত্রাণ থেকে বঞ্চিত হব। এটা বুঝে আমি নিজেকে বললাম যে আমি শয়তানের ফাঁদে পা দিতে পারি না। আমি তাদের অনুসরণ করতে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে ত্যাগ করতে পারি না, বরং আমাকে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে।

তার পর, কিছু নতুন বিশ্বাসী এবং যারা ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ পর্যালোচনা করছে তারা দুর্বল হয়ে পড়ে ও নিজেদের সরিয়ে নেয়। যদিও আমাদের চারপাশে প্রত্যেকেই প্রতিবাদ করছিল, আমরা, বাকীরা, সমাবেশ করা বন্ধ করিনি। এ কথা জানতে পেরে যাজক ক্ষিপ্ত হয় এবং গির্জার কিছু সহকর্মীকে ক্রমাগত আমার বাড়িতে পাঠাতে থাকে, জোর করতে যাতে আমি যাজকের বাড়ি যাই। আমি এতে রেগে যাই, ভাবি যে আমি শুধু ঈশ্বরের উপাসনা এবং সহভাগীতা করছিলাম, এবং এটা আমার স্বাধীনতা। কেন যাজক আমার পথ রোধ করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে? আমি প্রায় তার বাড়ি যেতে চাইছিলামই, তার ধারণায় আমি কী ভুল করেছিলাম জানতে। সেই সন্ধ্যায় আমি যাজকের বাড়ি গেলাম আরো কিছু ব্রাদার ও সিস্টারের সঙ্গে। কিছু অন্য যাজকও সেখানে ছিলেন। সেই যাজক বললেন, “আমি তোমাদের অনলাইন সমাবেশের বিষয়ে শুনেছি। তোমাদের যাজক হিসেবে আমার দায়িত্ব তোমাদের চেতাবনি দেওয়া অন্য পথে যাওয়ার বিরূদ্ধে।” আমি জবাব দিলাম, “আমরা ওদের ধর্মোপদেশ শুনেছি, কিন্তু আমরা প্রভুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছি না। প্রভু যীশু প্রত্যাবর্তন করেছেন এবং কাজের এক নতুন ধাপ সম্পন্ন করছেন—” আমি শেষ করার আগেই, সে আমাকে রাগতভাবে বাধা দেয়, “যথেষ্ট হয়েছে! আমরা আর এ বিষয়ে তোমার একটি শব্দও শুনব না। তোমাকে আজ বেছে নিতে হবে। তুমি কি অন্য ঈশ্বরে বিশ্বাস করবে না আমাদের গির্জায় ফিরে আসবে?” কথা বলতে বলতে সে একটি নোটবুক বের করে যাতে আমাদের সকলের নাম লেখা ছিল। সে আদেশের সুরে বলে, “তুমি যদি ওদের ধর্মোপদেশ শোনা জারি রাখো, তোমার নামের পাশে টিক দাও, নচেৎ কেটে দাও। আমার কথা না শুনলে তুমি এক যন্ত্রণাময় পৃথিবীতে থাকবে! আমরা তোমার পরিবারে বিবাহ, মৃত্যু বা জন্মের জন্য আদৌ কোনো কিছু করব না, এগুলি কোনোটাই করব না। আমরা কোনো ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করব না।” কেউ কিছু বলল না। আমি এই ভেবে একটু দ্বিধাগ্রস্ত হলাম যে যদি আমি কিছু না লিখতাম, তাহলেও যাজক আমার বিশ্বাসের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর উপায় খুঁজে নিত। আমি যদি আমার নামে টিক দিতাম তাহলে যাজক আমার পরিবারকে কোনো ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করত না। এসবই পুরনো গ্রামীণ আচার, এবং এগুলি প্রত্যেকের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এবং এদের অবহেলা করা সম্ভব না, এবং গ্রামের প্রত্যেকে যাজকের কথা শুনত। তারা হাজির না হলে, অন্য কেউও হাজির হবে না, এবং কেউ সাহায্য করবে না। সকলেই কি আমাকে বর্জন করতে চলেছিল? কিন্তু আমি জানতাম প্রভু প্রত্যাবর্তন করেছেন, তাই আমি যদি আমার নাম কেটে দিয়ে গির্জায় যুক্ত হতাম, সে কি ঈশ্বরকে পরিত্যাগ ও তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা হত না? এই মুহূর্তে, আমি জানতাম না কী করা উচিত, তাই আমি ঈশ্বরের দিকনির্দেশের জন্য প্রার্থনা করি। তারপর আমি প্রভু যীশুর কথা স্মরণ করি: “লাঙ্গলে হাত রেখে যে পিছন ফিরে চায়, সে ঈশ্বরের রাজ্যের যোগ্য নয়(লুক ৯:৬২)। তা সত্যি। আমি একজন ঈশ্বরবিশ্বাসী। বিশ্বাসে আমাদের ঈশ্বরকে শ্রদ্ধা করতে হবে, তাঁর কাজে সমর্পিত হতে হবে ও তাঁর সঙ্গে তাল মেলাতে হবে। কী করে আমি নিজেকে বিশ্বাসী বলতাম যদি আমি যাজককে ঈশ্বরের থেকে বেশি মূল্য দিতাম? কীভাবে আমি রাজ্যের যোগ্য হতাম? আমি এই মর্মে প্রার্থনা করলাম, “হে ঈশ্বর, আমি আজ তোমার জন্য সাক্ষী হিসেবে দাঁড়াতে চাই। যা-ই হোক, আমি তোমা য় অনুসরণ করতে চাই।” আমি তারপর অনেকটা শান্ত বোধ করি এবং দৃঢ়চিত্তে নিজের নামে টিকচিহ্ন দিই। অন্যদের মধ্যেও কেউ কেউ নিজেদের নামে টিক চিহ্ন দেয়, এবং মাত্র একজন সিস্টার তার নাম কেটে দেয়। রাগে সেই যাজক বললেন, “এটা তোমাদের পছন্দ, এবং এখন থেকে আমরা ভিন্ন পথে। তোমাদের ব্যাপারে আমাদের আর মাথা ব্যথা নেই।”

বাড়ি ফেরার পর আমার দুশ্চিন্তাগুলো আবার জেগে উঠল। সাধারণত, আমাদের গ্রামের পরিবারগুলিতে যা কিছু হত, আমরা যাজককে প্রার্থনা করতে ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পৌরহিত্য করতে বলতাম। আমরা এগুলো কোনোটাই করতে পারতাম না যদি যাজক আমাদের উপেক্ষা করত, এবং প্রত্যেকেই আমাদের পদদলিত করবে এবং আক্রমণ করবে। আমি জানতাম না আমাদের বিশ্বাসের অনুশীলন থেকে বিরত করতে তারা আর কী কী কৌশল অবলম্বন করবে, বা এসব কবে শেষ হবে। এসব নিয়ে ভাবা আমার পক্ষে খুবই যন্ত্রণাদায়ক ছিল এবং আমি জানতাম না কীভাবে একে অতিক্রম করব। আমি তখনই একটি প্রার্থনা করলাম, “ঈশ্বর, আমি বুঝতে পারছি আমার মর্যাদা কত ক্ষুদ্র। আমি সর্বদাই অন্যের কুৎসা ও প্রত্যাখ্যান নিয়ে চিন্তিত। আমি এর মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছি এবং দুর্বল বোধ করছি। ঈশ্বর আমাকে এর মধ্যে দিয়ে যাওয়ার জন্য দিকনির্দেশ দাও।” এর পর, আমি জলসিঞ্চনের জন্য অনলাইনে এক সিস্টারকে খুঁজে বার করি এবং তাকে আমি কী অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি তা বলি। সে আমাকে ঈশ্বরের বাক্যের একটি অংশ পাঠায়। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “ইয়োবের পরীক্ষার শেষে তার থেকে সাক্ষ্য লাভ করার পরে, ঈশ্বর সংকল্প করেছিলেন যে তিনি ইয়োবের মতো এক দল বা একাধিক দল মানুষকে অর্জন করবেন, তিনি এও সংকল্প করেছিলেন, শয়তান ঈশ্বরের সঙ্গে বাজি রেখে যে সব উপায়ে ইয়োবকে প্রলুব্ধ করেছিল, আক্রমণ করেছিল, ও তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিল, সেইসব উপায়ে শয়তানের দ্বারা আর কাউকে আক্রমণ বা দুর্ব্যবহার পেতে দেবেন না; ঈশ্বর শয়তানকে দুর্বল, বোকা এবং অজ্ঞ মানুষের সঙ্গে এমন করার অনুমতি আর কখনোই দেননি—শয়তান যে ইয়োবকে প্রলুব্ধ করেছিল, সেটাই যথেষ্ট ছিল! শয়তানকে ইচ্ছেমত মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে না দেওয়াটা ঈশ্বরেরই করুণা। ইয়োব যে শয়তানের প্রলোভন ও দুর্ব্যবহার সহ্য করেছিল, ঈশ্বরের কাছে সেটাই যথেষ্ট ছিল। ঈশ্বর আর কখনো শয়তানকে এমন কিছু করতে দেননি, কারণ ঈশ্বরের অনুসরণকারী মানুষের জীবন ও সমস্তকিছু ঈশ্বরের দ্বারা শাসিত ও সমন্বিত, এবং শয়তান ঈশ্বরের নির্বাচিত মানুষদের ইচ্ছামতো চালিত করার অধিকারী নয়—তোমাদের এই কথাটা খুব ভালো করে বুঝতে হবে! ঈশ্বর মানুষের দুর্বলতার প্রতি যত্নবান, এবং তার মূর্খতা ও অজ্ঞতা বুঝতে পারেন। যদিও যাতে মানুষকে সম্পূর্ণরূপে উদ্ধার করতে পারা যায়, সেজন্য ঈশ্বরকে তাদের শয়তানের হাতে তুলে দিতে হয়, কিন্তু মানুষকে যে বোকার মতো চালিত করা হচ্ছে এবং তারা শয়তানের দুর্ব্যবহারের শিকার হচ্ছে, তা তিনি দেখতে চান না, এবং মানুষ সবসময় যন্ত্রণা সহ্য করছে এমনও তিনি দেখতে চান না। মানুষ ঈশ্বরের দ্বারাই সৃষ্ট, এবং ঈশ্বর যে মানুষকে শাসন করেন ও সমস্তকিছুর আয়োজন করেন তা স্বর্গের দ্বারা নিরূপিত অভিষিক্ত এবং পৃথিবীর দ্বারা স্বীকৃত; এটা ঈশ্বরেরই দায়িত্ব, এবং ঈশ্বর এই কর্তৃত্বের দ্বারাই সমস্ত কিছুর ওপর শাসন করেন! ঈশ্বর শয়তানকে মানুষের সঙ্গে ইচ্ছামত দুর্ব্যবহার করার বা অসদাচরণ করার অনুমতি দেন না, তিনি মানুষকে বিপথগামী করার জন্য শয়তানকে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতেও দেন না, এবং তাছাড়াও, তিনি মানুষের প্রতি ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বে শয়তানকে হস্তক্ষেপ করতে দেন না, বা যে সব বিধানের মাধ্যমে ঈশ্বর সমস্তকিছুর উপর শাসন করেন শয়তানকে সেগুলো পদদলিত করতে বা ধ্বংস করতেও দেন না, মানবজাতির পরিচালনা ও পরিত্রাণের মতো ঈশ্বরের মহান কাজকে তো নয়ই! ঈশ্বর যাদের উদ্ধার করতে চান, এবং যারা ঈশ্বরের সাক্ষ্য বহন করতে সক্ষম, তারাই হল ঈশ্বরের ছয় হাজার বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনার মূল ও নির্যাস, ও সেইসাথে তাঁর ছয় হাজার বছরের কাজের জন্য তাঁর প্রচেষ্টার মূল্যও বটে। কীভাবে ঈশ্বর নির্দ্বিধায় এই মানুষগুলোকে শয়তানের হাতে তুলে দিতে পারেন?(বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, ঈশ্বরের কর্ম, ঈশ্বরের স্বভাব এবং স্বয়ং ঈশ্বর ২)। ঈশ্বরের বাক্য থেকে আমি দেখলাম যে আমরা যে পরিস্থিতিরই মুখোমুখি হই, ঈশ্বরই তা সম্ভব করেন এবং সবই তাঁর হাতে। তাঁর অনুমতি ছাড়া, শয়তান যতই হিংস্র হোক বা আমাদের যতই আঘাত করতে চাক, সে কিছুই করতে পারবে না। ঈশ্বরই সেই সব সংহতিনাশক ঘটনা ঘটান। তিনিই আমাকে পরীক্ষা করছিলেন, আবার রক্ষাও করছিলেন। তিনি আশা করেছিলেন আমি ইয়োবের মতো হব এবং সমস্ত পরিস্থিতির সাক্ষী হব। সেটা এই জন্যও যাতে আমি সেই পরিবেশে ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করি, এবং তাঁর কাজ ও বাক্যের অভিজ্ঞতা অর্জন করি যাতে আমি ঈশ্বরের প্রতি প্রকৃত বিশ্বাস অর্জন করি। কিন্তু আমি শয়তানের জালে আটকা পড়েছিলাম। আমি আমার আন্তর্ব্যক্তিক সম্পর্ককে সুরক্ষিত করতে ও প্রত্যাখ্যান ও কুৎসার শিকার না হতে চাইছিলাম। আমি সবসময় কিছু খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করতাম। আমি ঈশ্বরের ইচ্ছা বুঝিনি। আমি শান্ত হয়ে প্রার্থনা করি, “হে ঈশ্বর, এখন আমি বুঝতে পারছি যে এই সবই তোমার অনুমোদনে ঘটছে। এই সবই আমাকে উদ্ধার ও পরিশোধনের জন্য, আমার বিশ্বাসকে ত্রুটিমুক্ত করার জন্য। আমি তোমার জন্য সাক্ষ্য বহন করতে প্রস্তুত। কিন্তু আমার উচ্চতা এত কম, অনুগ্রহ করে একে অতিক্রম করার জন্য আমাকে শক্তি দাও।”

আমি বুঝলাম যে যেহেতু আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে অনুসরণ করার পথ বেছে নিয়েছি, যাজক আমাকে নিজের মতো চলতে দেবে এবং আমি স্বাভাবিকভাবে সমাবেশ করতে পারব। কিন্তু তার বদলে, যাজকের উগ্রতা ও বিচারের কারণে, অন্য গ্রামবাসীরা সংহতিনাশক কাজ করতে লাগল। তারা আমাদের নিয়ে মজা করত, কুৎসা করত এবং আমাদের পরিবারের সামনেই আমাদের ওপর চিৎকার করত, এই বলে যে আমরা আমাদের ধর্মীয় আচার পালন না করে গ্রামের নিয়ম ভাঙছিলাম। তারা বলল যদি আমরা আমাদের বিশ্বাসে স্থির থাকি, তারা আমাদের নামে সরকারের কাছে নালিশ করে আমাদের গ্রেপ্তার করাবে। আমার পরিবার এই চাপ সহ্য করতে পারল না। তারা ক্রমাগত তর্ক করা শুরু করছিল যাতে আমি আমার বিশ্বাস ছেড়ে দিই। অন্যরাও তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে চাপ অনুভব করছিল। কেউ কেউ বিতাড়িত হল, এবং কোনোদিন নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারেনি। যাজক মিথ্যা ছড়াচ্ছিল, এই বলে যে আমরা বাড়িতে এত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিলাম শুধুমাত্র আমরা সযাজকদের কথা শুনিনি ও গির্জায় যাই না বলে। সে সেই দুজন ব্রাদারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল যারা আমাদের জলসিঞ্চন করতে এসেছিল। আমি ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে গিয়েছিলাম। যাজকেরা সত্যের সম্পূর্ণ অপলাপ করছিল। যদি তারা আক্রমণ না করত, আমাদের কখনোই এসব সমস্যা হত না। একজন সিস্টার পরে সেই জলসিঞ্চনকারী ব্রাদার দুজনকে আসা বন্ধ করতে বলে যাতে বিপদ এড়ানো যায়। সেই সময় জুড়ে প্রত্যেকেই নঞর্থক ও দুর্বল বোধ করছিল এবং সমাবেশ করার বা আমাদের কর্তব্য করার কোনো আগ্রহ ছিল না। আমিও এসব ঘটতে দেখে খানিকটা দুর্বল বোধ করছিলাম। আমি জানতাম না কীভাবে ব্রাদার ও সিস্টারদের সাহায্য ও সমর্থন দিতে পারি, এবং আমি হঠাৎ বোধ করলাম যে সেই বিশ্বাসের পথ বড়ো বেশি কঠিন। আমি তা বুঝতে পারিনি। আমরা শুধুই কিছু বিশ্বাসী যারা সমাবিষ্ট হয়ে ঈশ্বরের বাক্য পড়ছিলাম। কেন তারা আমাদের নিজেদের মতো থাকতে দেবে না, দৃঢ়নিশ্চয় হয়ে এক অন্ধগলিতে ঠেলে দেবে? আমার যন্ত্রণায়, আমি ঈশ্বরকে ডাকলাম, “ঈশ্বর, আমি এত দুর্বল বোধ করছি এবং আমি আমার অনুভূতিকে শান্ত করতে পারছি না। কী করে আমি এই বিশ্বাসের পথে থাকব? অনুগ্রহ করে আমায় প্রদীপ্ত করুন ও দিকনির্দেশ দিন।” তারপর প্রভু যীশুর একটি কথা আমার মনে পড়ল: “জগতসংসার যদি তোমাদের ঘৃণা করে, জেনো, তোমাদের আগে জগত আমাকেই ঘৃণা করেছে। তোমরা যদি সংসারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হতে তাহলে সংসার তার আপনজন রূপে তোমাদের ভালবাসত: কিন্তু যেহেতু তোমরা জগতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নও, যেহেতু এ জগতের মধ্যে আমি তোমাদের মনোনীত করেছি, সেইজন্যই জগত সংসার তোমাদের ঘৃণা করে(যোহন ১৫:১৮-১৯)। হঠাৎ আমার মনে হল যে তারা আমাদের ঘৃণা করেছে ও অত্যাচার করেছে কারণ তারা প্রকৃত অর্থেই ঈশ্বরের আবির্ভাবকে ঘৃণা করেছে, এবং ঈশ্বরের সঙ্গে সংঘর্ষ করছিল। ঈশ্বর অন্তিম সময়ে অবতারত্ব গ্রহণ করেছেন, তাঁর বিচারের কাজের সত্য প্রকাশের মাধ্যমে মানবজাতিকে পরিশুদ্ধ ও রক্ষা করতে। তাঁর আবির্ভাব এবং কাজ পার্থিব মানুষের স্বরূপ উন্মোচন করছে। তারা সত্যকে ভালোবাসে না, বরং তাকে ঘৃণা করে, এবং ঈশ্বরকে ঘৃণা করে। তারা আকাশের এক অস্পষ্ট ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে, সেই কারণেই তারা বিচার ও নিন্দা করছে দেহরূপী ঈশ্বরের কাজ ও বাক্যের। ঠিক যেমন যখন প্রভু যীশু কাজ করতে আসেন, ইহুদি নেতারা তাঁর প্রকাশিত সত্যগুলিকে স্বীকার করতে অসম্মত হয়েছিল, তাঁর নিন্দা ও বিরূদ্ধতা করতে নিজেদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছিল। ইহুদি বিশ্বাসীরাও তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়েছিল, প্রভুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, এবং তারা তাঁকে শেষমেশ ক্রুশবিদ্ধ করেছিল। এ পৃথিবী সত্যই দুর্বৃত্তিময়! কিন্তু ধর্মীয় শক্তির দ্বারা যতই পার্থিব বর্জন ও নিন্দা হয়েছে, ততই স্পষ্ট হয়েছে যে এই হল প্রকৃত পথ, এবং ঈশ্বরের কাজ। তা আমার এই পথে থাকার ইচ্ছা দ্বিগুণ করে দিয়েছে!

যখন ব্রাদার ও সিস্টাররা কী ঘটছিল তা জানতে পারল, তারা আমাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্যের একটি অংশ পাঠায়। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “নিরুৎসাহিত হয়ো না, দুর্বল হয়ো না, আমি তোমার কাছে সবকিছু স্পষ্ট করে তুলব। রাজ্যের পথ অতটাও মসৃণ নয়, কোন কিছুই এত সহজ নয়! তোমরা চাও খুব সহজেই তোমাদের কাছে আশীর্বাদ আসুক, তাই নয় কি? আজ, সবাইকে তিক্ত পরীক্ষাসমূহের সম্মুখীন হতে হবে। এই পরীক্ষাসমূহ ব্যতীত, আমার জন্য তোমাদের প্রেমময় হৃদয় আরো শক্তিশালী হয়ে বিকশিত হবে না এবং আমার জন্য তোমাদের প্রকৃত ভালোবাসা থাকবে না। এমনকি, যদিও এই পরীক্ষাগুলি খুব সাধারণ ঘটনা সংক্রান্তও হয়ে থাকে তাহলেও, এগুলির মধ্যে দিয়েই সকলকে উত্তীর্ণ হতে হবে; তবে পরীক্ষাগুলি কতটা কঠিন হবে তা ব্যক্তিবিশেষের উপর নির্ভর করছে। পরীক্ষাগুলি আমাকৃত আশীর্বাদ, এবং তোমাদের মধ্যে কতজন আমার সম্মুক্ষে এসে নতজানু হয়ে আমার আশীর্বাদ ভিক্ষা করেছ? বোকা সন্তানের দল! তোমরা সবসময় মনে করো কয়েকটি শুভ বাক্যই আমার আশীর্বাদ। কিন্তু এটা স্বীকার করো না যে তিক্ততাও আমারই এক আশীর্বাদ। যারা আমার তিক্ততার ভাগীদার হবে, তারা অবশ্যই আমার মাধুর্যও লাভ করবে। তোমাদের কাছে এটাই আমার অঙ্গীকার এবং আশীর্বাদ। আমার বাক্য ভোজন, পান ও উপভোগে দ্বিধা কোরো না। অন্ধকার দূরীভূত হলে, আলোকের আগমন ঘটে। ভোরের আগেই অন্ধকার প্রগাঢ়তম হয়, তারপর আকাশ ধীরে ধীরে উজ্জ্বল হতে থাকে, এবং, অতঃপর সূর্যোদয় হয়। ভয় পেয়োনা বা সংকুচিত হয়ে থেকো না(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সূচনাকালে খ্রীষ্টের বাক্য, অধ্যায় ৪১)। আমি যখন এটা পড়লাম, আমি এত মুগ্ধ হয়েছিলাম। আমরা ঈশ্বরের নতুন কাজের অনুসরণ করছিলাম, যাজকদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিলাম ও অন্য গ্রামবাসীদের দ্বারা অন্যায় আচরণের শিকার হচ্ছিলাম। এ তো অবশ্যম্ভাবী ছিল। কারণ মানুষ শয়তানের দ্বারা গভীরভাবে ভ্রষ্ট এবং পৃথিবী এতই অন্ধকার ও মন্দ। তাদের কেউই ঈশ্বরের আবির্ভাবকে স্বাগত জানায় না। ঈশ্বরকে অনুসরণ করা সহজ নয়। ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করে তাঁর অনুমোদন অর্জন করতে হলে, আমাদের সেরকম অবদমন ও কৃচ্ছসাধনের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। ঈশ্বর আমাদের সংরক্ষিত শক্তি ও সর্বদাই আমাদের সঙ্গে আছেন। আমার আর ভয় পাওয়ার কিছু ছিল না। আমার শুধুই প্রার্থনা ও ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করতে হয, এবং তিনি আমাকে নিশ্চিতভাবেই যাজকের সংহতিনাশক কাজ অতিক্রম করতে দিকনির্দেশ দেবেন। আমি সিনেমা ও ভিডিওতে দেখা চিনা ভ্রাতা ও ভগিনীদের অভিজ্ঞতার কথা ভাবলাম। তারা অত্যাচারিত, প্রতাড়িত ও চিনা সরকারের দ্বারা নজরবন্দী, এবং যে কোনো মুহূর্তে গ্রেপ্তার হয়ে যায়। তাদের পরিবারও এর নিশানায় আসে, এবং তাদের সম্পত্তি ও চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়। তাদের অনেককেই কারারূদ্ধ করে পাশবিক অত্যাচার করা হয়। তারা প্রভূত কষ্ট পায়, কিন্তু তারা ঈশ্বরের ওপর ভরসা করতে পারে এবং শয়তানকে পরাজিত করার সাক্ষ্য দিতে পারে। এবং তারপর আমি ভাবলাম কীভাবে ঈশ্বর তাঁর দুই অবতারে কষ্ট স্বীকার করেছেন। যখন প্রভু যীশু অবতার গ্রহণ করলেন এবং মানবজাতিকে উদ্ধার করতে পৃথিবীতে এলেন, তিনি ইহুদিদের দ্বারা নিন্দিত হন ও বিরূদ্ধতার সম্মুখীন হন এবং অবশেষে ক্রুশবিদ্ধ হন। অন্তিম সময়ে ঈশ্বর আবার অবতার গ্রহণ করেছেন, এবং তিনি মানবজাতিকে রক্ষা করার জন্য সত্য প্রকাশ করছেন। তাঁকে প্রতিরোধ, নিন্দা এবং প্রত্যাখ্যান করে শয়তানের শাসন এবং ধর্মীয় বিশ্ব। মানবজাতিকে রক্ষা করার জন্য ঈশ্বর এত কষ্ট ভোগ করেন এবং আমার সামান্য কষ্ট উল্লেখের যোগ্যই নয়। ঈশ্বর পবিত্র এবং তাঁর সব যন্ত্রণাই আমাদের উদ্ধার করার জন্য। আমার যন্ত্রণার উদ্দেশ্য ছিল সত্য অর্জন করা ও রক্ষা পাওয়া, তাই এ আমার সহ্য করা উচিত। যদিও সেই অভিজ্ঞতা আমার পক্ষে যন্ত্রণাদায়ক ছিল, যাজকদের বিষয়ে আমার কিছু উপলব্ধি হয় এবং আমার ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস বাড়ে। ঈশ্বর সত্যিই আমাদের সত্য প্রদান করার জন্য, আমাদের বিশ্বাস ত্রুটিমুক্ত করতে কষ্টসাধ্য পরিবেশ ব্যবহার করেন। এ হল ঈশ্বরের আশীর্বাদ! ঈশ্বরের ইচ্ছা জানার পর আমি অনেক শান্ত বোধ করলাম, এবং আমার অবসাদের মেঘ থেকে বেরিয়ে এলাম। তারপর আমি আমার সেই ব্রাদার ও সিস্টারদের জন্য একটি সমাবেশ সংগঠিত করার উদ্যোগ নিলাম যারা তখনও আটকে ছিল এক নঞর্থক অবস্থায়। প্রত্যেকেই আমাদের সহভাগীতার মাধ্যমে ঈশ্বরের ইচ্ছা বুঝতে পারল, ঈশ্বরকে অনুসরণ করা জারি রাখার বিশ্বাস অর্জন করল। আমরা এক স্বাভাবিক গির্জার জীবন বাঁচতে শুরু করি, সুসমাচার ভাগ করে নিতে থাকি এবং সাক্ষ্য বহন করতে থাকি এবং প্রত্যেকে উৎসাহিত বোধ করে।

কিন্তু যাজকরা আমাদের বাধা দেওয়ার সবরকম চেষ্টা করতে লাগল। একবার, যখন এক সিস্টারের স্বামী অসুস্থ হয়ে মারা যান, তার সম্পূর্ণ পরিবার তাকে যাজকের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল যাতে সে প্রার্থনা ও সৎকার অনুষ্ঠানে সাহায্য করে। যাজকরা সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তাকে চাপ দেয় সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে তার বিশ্বাস ত্যাগ করে গির্জায় ফেরার জন্য। আমি প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলাম। সে তার স্বামীর জন্য পীড়িত ছিলই, তা-ও যাজকরা তাকে অন্যায় স্বীকার করার জন্য চাপ দিয়ে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিচ্ছিল, শুধুমাত্র তাকে গির্জায় ফেরত নেওয়া ও তাদের অনুসরণ করতে বাধ্য করার জন্য। জঘন্য ব্যাপার! এক উচ্চতর পদমর্যাদার যাজক আমাদের সঙ্গে কথা বলতে আসে, এবং সে অনেক কথা বলে ঈশ্বরের নিন্দা ও ধর্মবিরোধিতা করে। সে আমাদের বারংবার আমাদের বিশ্বাস বিসর্জন দিতে উৎসাহ দেয়। কিন্তু শআমাদের ইতিমধ্যেই বোধোদয় হয়েছিল, তাই আমরা প্রভাবিত হইনি। যখন যাজককুল ও গ্রামের নেতারা দেখল যে আমরা দৃঢ় সংকল্প, তারা অন্য গ্রামবাসীদের দিয়ে আমাদের জনবিচ্ছিন্ন ও বাতিল করে দিল, এই বলে “এই লোকগুলো আমাদের কথা অগ্রাহ্য করে, তাই ওদের নিজেদের বিশ্বাস রাখতে দাও। তোমাদের বাচ্চাদের নজরে রাখো, এই ব্যক্তিদের থেকে অনেক দূরে রাখো। যারই এদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে বা এদের বিশ্বাস সম্পর্কে যে জানতে চায়, তাদের পুরো পরিবারই দণ্ডিত হবে, এবং আমরা তাদের কোনো কিছুতেই সাহায্য করব না।” তারা একটি বিশেষ যুবগোষ্ঠীও তৈরি করে যাতে গির্জার যুবসদস্যরা সামিল ছিল। তার প্রাথমিক কাজ ছিল আমাদের ওপর নজর রাখা। যারই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাকেই যাজকের বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হত। এতে আমি তাদের প্রকৃত ঈশ্বর-বিরোধী রূপ আরো স্পষ্টভাবে দেখতে পাই। তারা বিশ্বাসীদের তাদের মুঠোয় ভরে নিয়ন্ত্রিত রেখেছিল, যাতে তারা ঈশ্বরের সম্মুখীন হয়ে তাঁর কণ্ঠ শুনতে না পারে। আমি ফরিশীদের কথা ভাবলাম। যখন প্রভু যীশু এসেছিলেন, তাঁর কাজ ও বাক্য ছিল সম্পূর্ণ কর্তৃত্বপূর্ণ, কিন্তু তারা সন্ধান বা পর্যালোচনা করবে না। প্রভু যীশুর অনুসারী বিশ্বাসীদের ও নিজেদের মর্যাদা ও জীবিকা হারানোর ভয়ে, তারা তাঁর নিন্দা করতে সর্বশক্তি ব্যয় করে এবং, এমনকী, তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করে। বিশ্বাসীদের তারা তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল, ঈশ্বরের মেষপালকে ঈশ্বরের কাছে ফিরতে না দিয়ে মানুষকে শুধুমাত্র তাদেরই উপাসনা করতে দিত। তারা ছিল দুষ্কৃতি ভৃত্য, আর আজকের যাজক ও নেতৃবৃন্দ তাদের থেকে আলাদা নয়। আমি তাদের নিন্দায় প্রভু যীশুর বাক্য স্মরণ করলাম: “ভণ্ড শাস্ত্রী ও ফরিশীর দল, ধিক তোমাদের। তোমরা লোকের সামনে স্বর্গরাজ্যের দরজা বন্ধ করে দাও। নিজেরা তো প্রবেশ করই না, যারা চায় তাদেরও ঢুকতে দাও না(মথি ২৩:১৩)। “ভণ্ড শাস্ত্রবিদ ও ফরিশীর দল। ধিক তোমাদের! একটি লোককে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টায় তোমরা জলে স্থলে ঘুরে বেড়াও, আর কাউকে যদি তা করতে পার তাহলে তোমরা তাকে নিজেদের চেয়েও বড় পাষণ্ড করে তোল(মথি ২৩:১৫)। আজকের যাজককুল আগেকার ফরিশীদের মতোই। তারা দুষ্কৃতি ভৃত্য যারা রাজ্যের পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক যেমন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন। “অনেকেই আছে যারা বিরাট গির্জাগুলিতে বাইবেল পড়ে এবং সারাদিন ধরে সেটি আবৃত্তি করে, তবুও তাদের কেউই ঈশ্বরের কাজের উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে পারে না। তাদের মধ্যে কেউই ঈশ্বরকে জানতে সক্ষম নয়, আর তাদের মধ্যে কারোর ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা তো আরোই কম। তারা সকলে অপদার্থ, জঘন্য মানুষ, প্রত্যেকেই ঈশ্বরকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য উচ্চে দণ্ডায়মান। ঈশ্বরের ধ্বজা বহন করাকালীনও তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঈশ্বরের বিরোধিতা করে। ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস দাবি করেও তারা মানুষের মাংস ভক্ষণ ও রক্ত পান করে। এই ধরনের মানুষেরা হল মানুষের আত্মা-গ্রাসকারী শয়তান, সঠিক পথে পা-রাখতে চাওয়া মানুষদের ইচ্ছাকৃত ভাবে বাধাদানকারী প্রধান অপদেবতা, এবং তারা হল ঈশ্বর-অন্বেষণকারীদের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বাধাস্বরূপ। তাদের দেখে ‘ভালো অবস্থার’ মনে হতে পারে, কিন্তু তাদের অনুগামীরা কীভাবে জানবে যে তারা মানুষদের ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচারী করে তোলা খ্রীষ্টবিরোধী ছাড়া আর কেউ নয়? তাদের অনুগামীরা কীভাবে জানবে যে তারা জীবন্ত শয়তান যারা মানুষের আত্মা গ্রাস করার জন্যই নিবেদিত?(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, যারা ঈশ্বরকে জানে না তারা সকলেই ঈশ্বরবিরোধী)। যাজককুল শুধু ঈশ্বরের নতুন কাজের পর্যালোচনা করবে না তা-ই নয়, কিন্তু যেই তারা জানতে পারে কেউ এর অনুসন্ধান করছে, তারা তা বন্ধ করার চেষ্টা করে, এই ভয়ে যে বিশ্বাসীরা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অনুসরণ করবে এবং তাদের উপাসনা ও অনুসরণ করা বা তাদের নৈবেদ্য দেওয়া বন্ধ করে দেবে। তারা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পুরনো গ্রামীণ প্রথা ও পারম্পরিক লোকাচারকে ব্যবহার করছিল, তাদের জোর করে গির্জায় ফেরাচ্ছিল। তারা দাবি করছিল বিশ্বাসী হওয়ার, কিন্তু তাদের ঈশ্বরের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা ছিল না। প্রকৃতিগতভাবে, তারা সেই দানব যারা ঈশ্বর ও সত্যকে ঘৃণা করে। তারা আমাদের রাজ্যের পথে বাধা। আমি জানতাম ঈশ্বর এই সব অত্যাচার ঘটতে দিয়েছেন আমাদের বোধের বিকাশের জন্য, যাতে আমরা প্রকৃত অর্থেই ধর্মীয় যাজকদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হতে পারি। যাজককুলের আক্রমণ আমাকে নঞর্থক অবস্থায় রাখতে পারেনি, বরং তারা আমার বিশ্বাসকে আরো শক্তিশালী করেছিল। আমিও তাদের নিগড়মুক্ত হয়ে সুসমাচার ভাগ করে নিতে ও সাক্ষ্য বহন করতে সমর্থ হয়েছিলাম। সময়ের সঙ্গে আমার কিছু বন্ধু ও আত্মীয়ও যাজককুলের আচরণ সম্পর্কে বুঝতে শুরু কর লেন, এবং তাদের কেউ কেউ সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ স্বীকার কর লেন। এর থেকে আমি দেখলাম যে ঈশ্বরের জ্ঞানের প্রয়োগ শয়তানের কৌশলের ওপর নির্ভর করে। যাজকের অত্যাচার ও প্রতিরোধ ছাগ ও মেষকে পৃথক করতে সাহায্য করেছিল। কেউ কেউ যাজককুলকে সঙ্গ দিল আমাদের বিরোধিতা করায়, কিন্তু কেউ কেউ তাদের প্রকৃত সত্ত্বা বুঝতে পেরেছিল। তারা ঈশ্বরের কণ্ঠ শুনেছিল ও ঈশ্বরাভিমুখী হয়েছিল। ঈশ্বরের কাজ বিস্ময়কর! এই অভিজ্ঞতা আমাকে শেখায় যে যে কোনো পরিস্থিতিতেই ঈশ্বরের শুভ ইচ্ছা আছে। এ-ই আমাদের একমাত্র প্রয়োজন, এবং এ সবই আমাদের রক্ষা ও ত্রুটিমুক্ত করার জন্য। আমি সংকল্প নিই যে ভবিষ্যতে আমি যে ঘটনারই সম্মুখীন হই না কেন, আমি ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনায় সমর্পিত থাকব ও তাঁর ওপর নির্ভর করব। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

যখন আমার পরিবার আমাকে ঈশ্বরে বিশ্বাস করা থেকে বিরত করতে চেষ্টা করেছিল

২০১৮-এর মার্চ মাসে, আমার আত্মীয়েরা আমাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের সুসমাচার শোনায় এবং আমায় অনলাইন সমাবেশে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ...

প্রভুকে স্বাগত জানানোর সুযোগ আমি প্রায় হারাতে যাচ্ছিলাম

আমি আর আমার স্ত্রী 1995 সালে খ্রিস্টান হয়েছিলাম, তারপর থেকে আমরা সত্যিই আমাদের সাধনায় আগ্রহী ছিলাম, কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা সোলা ফাইড...

Leave a Reply

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন