ঈশ্বরের রাজ্যের পথ সর্বদা মসৃণ নয় (২)

31-03-2023

সেই সময়, যাজক যখন এই কথা বলল, আমি তখন খুব চাপ অনুভব করেছিলাম, গির্জার সুপ্রিম কাউন্সিল যদি আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করত, আর যদি একদল লোকের আক্রমণের মুখে পড়তে হয়, আমি কি তা সহ্য করতে পারব? আমি যদি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে যেতে চাই, তারা কি তবে আমাকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেবে? তারা কি অন্য সকল বিশ্বাসীদের বলবে আমায় প্রত্যাখ্যান করতে? এসব ভেবে আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম, তাই আমি ঈশ্বরের কাছে নীরবে প্রার্থনা করেছিলাম এবং তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম আমায় পথ দেখাতে, আর বলেছিলাম যে আমি সাক্ষ্যে অবিচল থাকতে ইচ্ছুক।

প্রার্থনার পর আমি ঈশ্বরের বাক্যের আরো দুটো অনুচ্ছেদ পড়েছিলাম। “তোমাদের সর্বদা জাগ্রত থাকতে হবে এবং অপেক্ষা করতে হবে, এবং আমার কাছে আরও প্রার্থনা করতে হবে। শয়তানের বিভিন্ন ফন্দি এবং ধূর্ত ষড়যন্ত্র চিনতে হবে, আত্মাকে চিনতে হবে, মানুষকে জানতে হবে এবং সকল প্রকার মানুষ, বিষয়বস্তু ও ঘটনাবলীর বুঝতে সক্ষম হতে হবে(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সূচনাকালে খ্রীষ্টের বাক্য, অধ্যায় ১৭)। “তার অন্তিম মৃত্যুযন্ত্রণায় দন্তঘর্ষণ করতে করতে, নখর বেঁকিয়ে মানুষের হৃদয়ে আমার সম্পর্কিত জ্ঞানকে গোগ্রাসে গেলার জন্য শয়তান সর্বক্ষণই উপস্থিত। এই রকম সময়ে তোমরা কি তার ধূর্ত দুরভিসন্ধির শিকার হতে চাও? আমার কার্য অবশেষে যখন সম্পূর্ণ এমন একটা সময়ে তোমরা কি তোমাদের জীবনের সর্বনাশ ঘটাতে চাও?(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতি ঈশ্বরের বাক্য, অধ্যায় ৬)। ঈশ্বরের বাক্য থেকে আমি বুঝেছিলাম যে শয়তানের চাতুরীর কারণে আমার সঙ্গে এসব ঘটছিল। আমার ঈশ্বরকে অনুসরণ করায় বিঘ্ন সৃষ্টি করতে ও তা আটকাতে চাইছিল শয়তান। যদিও আমার আত্মিক উচ্চতা ছিল খাটো এবং অল্প পরিমাণ সত্যই জানতাম, দৃঢ় হয়ে শয়তানকে অবনত করার জন্য আমি ঈশ্বরের উপর নির্ভর করতে ইচ্ছুক ছিলাম। তাই আমি তাদের বলেছিলাম, “সমাবেশগুলোয় যোগদান করা বন্ধ করব না আমি। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে অনুসরণ করে চলব।” যাজকের কথা না শোনায় আমার মা-বাবা খুব রেগে গেল। বাবা আমার দিকে সরোষে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল, “না বলার সাহস হয় কী করে? যাজক ফিরে যাবার আগে তোমায় শপথ করে বলতে হবে যে তুমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে বিশ্বাস করা বন্ধ করবে!” যাজক আবার আমাকে হুমকি দিল, এই বলে যে, এক সপ্তাহের মধ্যে যদি সমাবেশগুলোয় যোগদান বন্ধ না করি, তাহলে সে আমাকে সুপ্রিম কাউন্সিলের কাছে নিয়ে যাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। তবে, আমি কোনো অনুতাপ বোধ করি নি। কারণ আমি ভালো করেই জানতাম যে আমার পছন্দ ঠিক ছিল। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজকে গ্রহণ করার আগে, আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতাম, কিন্তু স্বর্গরাজ্যে প্রবেশের শর্তাবলী বুঝতাম না। অনেক সময় আমার মন পূর্ণ থাকত নানা অলীক কল্পনায়, এবং অনেক সময়, যেহেতু আমি মাঝেমধ্যেই পাপ করতাম এবং রাজ্যে প্রবেশ করতে পারব কি না তা বুঝতাম না, তাই খুব বিভ্রান্ত হয়ে থাকতাম। এখন, আমি সবটা বুঝি। শুধুমাত্র সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বিচারকার্যই আমাদের পাপী প্রকৃতিকে সংশোধন করতে পারে, এবং তখনই আমরা পাপ থেকে উদ্ধার পেতে পারি, পরিত্রাণ পেতে পারি, এবং ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারি। শুধু সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্যই এই মন্দ জগৎকে স্পষ্টভাবে চেনাল আমাকে, এবং বোঝাল কীভাবে শয়তান মানবজাতিকে ভ্রষ্ট করে। যদি আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য না পড়তাম, সারা জীবন ধরে আমি তাহলে শয়তানের জাগতিক দর্শন অনুসরণ করে চলতাম। আমি আদৌ জানতাম না কী করে শয়তানের দুর্নীতি থেকে মুক্তি পেতে হবে। সুতরাং তারা আমাকে যেভাবেই বাধা দিক না কেনো, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে অনুসরণ করা আমি বন্ধ করব না। পরে যাজক দেখল যে আমি হাল ছাড়ার পাত্র নই, তাই সে ক্ষুব্ধ হয়ে চলে গেলেন। যাজককে প্রত্যাখ্যান করায় আমার মা-বাবাও আমার উপর খুব রেগে গেল, এবং তারা আমাকে ক্ষুব্ধভাবে বলল, “তুমি যাজককে অমান্য করার স্পর্ধা দেখিয়েছ এবং এমন কাজ করেছ যা গির্জা অনুমোদন করে না। রীতি অনুযায়ী, তোমাকে এই গ্রাম থেকে বিতাড়িত হতে হবে। গ্রামবাসীরা তোমাকে যদি প্রত্যাখ্যান করেন, ভবিষ্যতে তোমার যখন কোনো শংসাপত্র দরকার হবে, গ্রামপ্রধান তখন তোমাকে তা সই করে দেবেন না। তুমি কোনো চাকরিও পাবে না। তুমি কি এসব পরিণতি ভেবে দেখেছ? তুমি কোথায় যাবে তখন? তুমি একজন ছাত্র মাত্র। তোমার কোনো থাকার জায়গা নেই, কোথাও কাজ করতে পারবে না। টিঁকবে কী করে তুমি?” আমার বাবা এমনও বলেছিল যে, আমার মতো একটি ছেলে থাকার জন্য তিনি লজ্জিত। সে বলেছিল যে আমি তাদের খুব লজ্জার মুখে ফেলেছি, এবং ভবিষ্যতে আর আমি তার ছেলে থাকব না। এতদিনকার জীবনে এই প্রথম বাবার কাছ এভাবে তিরস্কৃত হলাম। সে আরো বলে যে আমি আর তার ছেলে নই। আমি ভাবতে পারিনি আমার বাবা-মা একথা বলতে পারে। আমি এত বিষণ্ণ হয়ে পড়লাম যে আর কোনো কথা বললাম না। আমার বাবা বলে চলল, “আমি তোমাকে আবারও বলছি, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে যদি বিশ্বাস করে চলো, তাহলে তোমাকে বড়ো করার জন্য যা টাকা ব্যয় করেছি, তা সব ফিরিয়ে দাও।” সেই সময় আমি খুব অপমানিত ও দুঃখিত বোধ করছিলাম। অতীতে আমার বাবা-মা আমার সাথে ভালো ব্যবহার করেছিল। দশ সন্তানের মধ্যে আমার বাবা-মা আমাকে সবথেকে বেশি ভালোবাসত এবং আমার কাছে তাদের প্রত্যাশা ছিল সবচেয়ে বেশি। তারা অমন নিষ্ঠুর কথা কখনো বলেনি, কিন্তু এখন তাদের মনোভাব পুরো বদলে গেল। বাবা-মার আমার প্রতি যে সহৃদয়তা ছিল, তার অভাব বোধ করতে লাগলাম আমি, তাদের সঙ্গে কোনো ঝামেলায় জড়াতে চাইতাম না। আমি ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়লাম, কী করা যায় জানতাম না, আমি তাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম, এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে আমাকে পথ দেখানোর জন্য। পরবর্তীকালে, আমার ভেবেছিলাম সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্যের একটা অনুচ্ছেদের কথা। “সত্যের জন্য তোমাকে কষ্ট পেতে হবে, তোমাকে সত্যের প্রতি নিজেকে প্রদান করতে হবে, তোমাকে সত্যের জন্য অপমান সহ্য করতে হবে, এবং আরও বেশি করে সত্যকে অর্জন করতে তোমাকে আরও বেশি কষ্ট সহ্য করতে হবে। এটাই তোমার করা উচিত। একটি শান্তিপূর্ণ পারিবারিক জীবনের স্বার্থে তুমি সত্যকে ছুঁড়ে ফেলে দিও না, এবং ক্ষণিকের আনন্দের জন্য নিজের জীবনের মর্যাদা এবং সততা হারিয়ে ফেলো না। যা কিছু সুন্দর এবং যা কিছু ভালো, সে সব তোমার অন্বেষণ করা উচিত, এবং তোমার জীবনে আরো অর্থবহ পথ অনুসরণ করা উচিত। তুমি যদি এমন অমার্জিত জীবন যাপন করো, এবং কোনো উদ্দেশ্যের অনুসরণ না করো, তাহলে কি তুমি তোমার জীবন নষ্ট করছ না? এমন জীবন থেকে তুমি কী লাভ করতে পারো? একটি সত্যের জন্য তোমার যাবতীয় দৈহিক ইচ্ছা ত্যাগ করা উচিত, সামান্য ভোগ-বিলাসের জন্য যাবতীয় সত্যকে ত্যাগ করা উচিত নয়। এই ধরনের মানুষের কোন সততা বা মর্যাদা নেই; তাদের অস্তিত্ব অর্থহীন!(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, পিটারের অভিজ্ঞতাঃ তার শাস্তি ও বিচারের জ্ঞান)। ঈশ্বরের বাক্য অনুপ্রেরণা দিয়েছিল আমাকে। আমি বুঝেছিলাম যে সত্যের জন্য কষ্ট সহ্য করা উচিত। যদিও আমার পরিবার আমার বিরুদ্ধে গিয়েছিল, যাজক আমাকে আটকাতে চেয়েছিলেন, গ্রামবাসীরা আমার সালিশ করেছিল, এবং আমি পীড়িত ও অল্প দুর্বলতা অনুভব করেছিলাম, তারা যাই বলে থাকুন না কেন, আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে অনুসরণ করা বন্ধ করব না। ঈশ্বরের বাক্য পড়ে এবং সমাবেশগুলোয় যোগদান করে আমি বহু সত্য উপলব্ধি করেছিলাম, এবং মনে মনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছিলাম যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর হলেন প্রত্যাবর্তিত প্রভু যীশু, তিনি অন্তিম সময়ের খ্রীষ্ট। আমি তাই সমাবেশগুলোয় যোগদান বন্ধ করতে পারিনি। আমি জানতাম যদি সমাবেশগুলোয় যোগদান করা বন্ধ করি, তাহলে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যাবে। আমার পরিবার আর আমার বিরুদ্ধে যাবে না এবং অতীতে আমার সঙ্গে যেমন ব্যবহার করত, তেমন ব্যবহার করবে, এবং কেউ আর আমায় নিয়ে হাসাহাসি করবে না, কিন্তু সত্য অর্জন ও ঈশ্বর দ্বারা মুক্ত হবার সৌভাগ্য হারাব। নিজেকে বললাম যে সত্যকে ছাড়তে পারব না, এবং পরিবারের অসম্মতির কারণে ঈশ্বরের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারব না। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্যই হল সত্য। কেবল সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই আমাদের বলতে পারেন শয়তান কীভাবে মানবজাতিকে ভ্রষ্ট করে, এবং একমাত্র তিনিই আমাদের পাপ থেকে নিস্তার পাওয়া এবং ঈশ্বর দ্বারা উদ্ধার হওয়ার পথনির্দেশ করেন। আজ যে আমি সত্যের জন্য কষ্টভোগ করছি, তা সার্থক। আমি তাই পরিবারের প্রতিকূলতার কারণে কষ্ট পাওয়া নিয়ে আর ভাবব না ঠিক করলাম। এমনকি যদি তারা আমার পড়াশুনার খরচ না-ও দেয়, এমনকি যদি আমি গ্রাম থেকে বিতাড়িত হই এবং আমার জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ, আমি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করা ও সত্য অনুসরণ করা বন্ধ করব না।

যদিও, পরের সপ্তাহের জন্য, যাজক দুজন সহকর্মীকে প্রতিদিন রাতে আমাদের বাড়িতে আসার ব্যবস্থা করে দিল। তারা প্রতিদিন একই কথা বার বার বলে যেত যাতে আমি সমাবেশগুলোয় যোগদান করা বন্ধ করি। তবুও, তারা যা-ই বলুক না কেনো, আমি সমাবেশগুলোয় যোগদান করে যেতে লাগলাম। সেই দিনগুলোয় আমি মাঝেমধ্যে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতাম, আমার মনকে শান্ত করা এবং এইসব ঝামেলা থেকে আমাকে দূরে রাখার জন্য অনুরোধ করতাম। পরে, এই ব্যাপার সবাই জেনে গেলে আমাদের পরিবার লোকের কাছে কেমন হাসির পাত্র হয়ে দাঁড়াবে ভেবে আমার চাচা চিন্তিত হয়ে পড়ল, তাই সে এক নতুন কৌশল নিয়ে আলোচনা করতে যাজকের কাছে যায়। তারা আমাকে এক ধর্মতত্ত্ববিদের কাছে নিয়ে গেল যে ধর্মতত্ত্বের একজন গবেষক এবং বাইবেলের ব্যাপারে জানে। আমাদের সাক্ষাৎ হওয়ার পরে সেই ধর্মতত্ত্ববিদ আমাকে প্রশ্ন করেছিল। সে বলেছিল, “কেন তুমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে বিশ্বাস কর? তুমি কি ভেবে দেখেছ যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর একজন সাধারণ মানুষ? তেমন একজন মানুষকে কেন বিশ্বাস করবে তুমি?” আমি তাকে বলেছিলাম, “সর্বশক্তিমান ঈশ্বর হলেন ঈশ্বরের অবতার। তাঁকে সাধারণ মানুষ হিসেবে মনে হয় ঠিকই, কিন্তু তাঁর মধ্যে রয়েছে ঈশ্বরের আত্মা, এবং তিনি হলেন ঈশ্বরের আত্মার অবতাররূপ, তাঁর যে শুধু স্বাভাবিক মানবতা রয়েছে তা-ই নয়, রয়েছে পরিপূর্ণ দেবত্বও। ঠিক প্রভু যীশুর মতো; চেহারায় তিনি সাধারণ মানুষ, কিন্তু আসলে তিনি হলেন অবতাররূপী মনুষ্যপুত্র, তিনি-ই স্বয়ং ঈশ্বর। তিনি সত্য প্রকাশ করতে পারেন এবং মানবজাতিকে মুক্ত ও উদ্ধার করার কাজ করতে পারেন। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর অন্তিম সময়ে আবির্ভুত হয়েছেন এবং বহু সত্য প্রকাশ করেছেন, যেমন ঈশ্বরের ছয় হাজার বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনা, অবতারের রহস্য। এবং অন্তিম সময়ে কীভাবে ঈশ্বর মানবজাতিকে শুদ্ধ করা ও উদ্ধার করার জন্য বিচারকার্য করেন। তিনি সত্যের নানা রহস্য উদ্ঘাটন করেছেন। এবং মানুষ কেনো পাপ করে তার মূল কারণ-ও তুলে ধরেছেন। আপনি কি মনে করেন যে কোনো সাধারণ মানুষ এত পরিমাণ সত্য প্রকাশ করতে পারেন? পৃথিবীর কোনো বিখ্যাত বা মহান মানুষ এইসব সত্য প্রকাশ করতে পারে না। কেবল স্বয়ং ঈশ্বর এইসব সত্য প্রকাশ করতে পারেন। ঈশ্বর ছাড়া আর কেউই এটা পারে না। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর প্রকাশিত সব সত্য প্রমাণ করে যে তিনি ঈশ্বরের অবতার, স্বয়ং ঈশ্বর।” এই কথাগুলো বলার পর, ধর্মতত্ত্ববিদ আমাকে বাধা দিয়ে বলল, “তোমার এটা বলা ভুল। ঈশ্বরের সমস্ত বাক্য বাইবেলে আছে, এবং বাইবেলের বাইরে কোন নতুন বাক্য থাকতে পারে না। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের এই বাক্যগুলি কোনোভাবেই ঈশ্বরের নতুন বাক্য হতে পারে না।” আমি তাকে খণ্ডন করে বললাম, “আপনার কি এই ব্যাপারে বাইবেলের কোন ভিত্তি আছে? প্রভু যীশুর বাক্যে কোনো প্রমাণ আছে কি? প্রভু যীশু বলেছেন, ‘তোমাদের আরও অনেক কথা আমার বলার আছে কিন্তু এখন তোমাদের পক্ষে তা হৃদয়ঙ্গম করা কঠিন। সেই সত্যের আত্মা যখন আসবেন তিনিই তখন তোমাদের পূর্ণ সত্যের উপলব্ধি দান করবেন(যোহন ১৬:১২-১৩)। বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করে যে অন্তিম সময়ে মেষশাবক পুঁথিটি খুলবে। এই সব দেখায় যে, ঈশ্বর যখন অন্তিম সময়ে প্রত্যাবর্তন করবেন, তখন তিনি কথন করবেন। যদি, আপনি যেমন বলেন, ঈশ্বর বাইবেলের বাইরে কোনো নতুন কথা বলেন না, তা কি তবে প্রভুর প্রত্যাবর্তনের সমস্ত কথা ও কাজকে অস্বীকার করা নয়?” সেই সময় সে আদৌ কিছুই শোনেনি সে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নিন্দামূলক কিছু কথা বলে এবং বারবার আমাকে পূর্বের বজ্রালোক শোনা বন্ধ করতে বলে। তারপর সে দেখাতে শুরু করে যে তার ধর্মতত্ত্বের ডিগ্রিটা কত উচ্চ মানের ছিল, সে প্রভুর হয়ে প্রচার করতে কত-ই না কষ্ট সহ্য করেছে, এইসব। সে আরো বলেছিল যে বাইবেল বোঝার পক্ষে আমার বয়সটা যেহেতু বড়োই কম, সেহেতু আমার উচিত তার কথা শোনা, এবং সে আমাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার লোকদের সাথে দেখা করা বন্ধ করতে বলেছিল। আমার চাচা তাল ঠুকে বলেছিল: “ধর্মীয় মহল যা নিন্দা করে তা আমাদের বিশ্বাস করা উচিত নয়। এই ধর্মতত্ত্ববিদ তাঁর বাইবেলের জ্ঞানের জন্য পরিচিত, এবং তুমি ভাগ্যবান যে তাঁর সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়েছ। আমি আশা করি যে তুমি তাঁর কথা শুনবে এবং সমাবেশগুলোতে যাওয়া বন্ধ করবে।” আমি তাদের বললাম, “আমি পাপের মধ্যে বসবাস সম্পর্কে বিভ্রান্ত ছিলাম। মানুষ কেন পাপ থেকে নিষ্কৃতি পায় না তার কারণ খুঁজে পাইনি। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য না পড়া অবধি আমি বুঝতে পারিনি যে এর সবটাই আমাদের ভিতরের পাপী প্রকৃতির কারণে। যদি আমাদের পাপী প্রকৃতি নির্মূল না হয়, আমরা কখনই পাপের বন্ধন থেকে মুক্ত হব না।” তাদের আমি অবতারের সত্যতা সম্পর্কেও সাক্ষ্য দিয়েছিলাম। আমি তা বলার পর, ধর্মতত্ত্ববিদ বলেছিল যে আমি যা বলেছি তার দ্বারা সে অনুপ্রাণিত হয়েছে। সে বলেছিল যে এটি খুব ভালো, এবং সে ভবিষ্যতে আমার সাথে এটি নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পাওয়ার আশা রেখেছিল, কিন্তু সে জোর দিয়ে বলেছিল যে আমার সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে গ্রহণ করা উচিত নয়। আমি দেখেছিলাম যে যদিও এই ধর্মতত্ত্ববিদ বাইবেলের সাথে পরিচিত ছিল, অনেক ধর্মতাত্ত্বিক জ্ঞান এবং সুখ্যাতির অধিকারী ছিল, বাস্তবে সে ছিল আধ্যাত্মিকভাবে দরিদ্র, এবং কোনো সত্য উপলব্ধি করে নি। সে খুবই অহঙ্কারী ছিল, সত্যকে মেনে নেয়নি, এবং তার অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের কাজ অনুসন্ধান করার কোনো আগ্রহ ছিল না। ঠিক যেমন ফরিশীরা যারা প্রভু যীশুকে প্রতিরোধ করেছিল, তেমন করেই সে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজের নিন্দা করতে থাকে। সেই কথোপকথন সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে অনুসরণ করার বিষয়ে আমার সংকল্প টলাতে পারেনি। উলটে, তা আমাকে ধর্মীয় জগতের এই যাজক এবং ধর্মতত্ত্ববিদদের বিচার-বুদ্ধিকে চিনিয়ে দিয়েছে। আমি তাদের মুখাপেক্ষী হওয়া এবং প্রশংসা করা বন্ধ করে দিয়েছি। এবং এই সময়ের মধ্যে সমাবেশগুলোয় যোগদান এবং ঈশ্বরের বাক্য পড়ার মাধ্যমে, আমি ধর্মীয় জগতে প্রচলিত এইসব ভুলের ব্যাপারে কিছু বোধও অর্জন করেছি। এটি আমাকে আরো নিশ্চিত করেছে যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্যই সত্য এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই হলেন একমাত্র সত্য ঈশ্বরের প্রকাশ। পরবর্তীকালে, এক সমাবেশে, আমি আমার তখনকার সেই পরিস্থিতি সম্পর্কে ভ্রাতা-ভগিনীদের সঙ্গে কথা বলি, এবং তারা আমার সাথে ঈশ্বরের কিছু বাক্য ভাগ করে যা আমায় কিছুটা বিচক্ষণতা দিয়েছিল ধর্মীয় জগতের এই ভণ্ড মেষপালক এবং খ্রীষ্টবিরোধীদের সম্পর্কে। প্রভু যীশু বলেছেন, “ভণ্ড শাস্ত্রী ও ফরিশীর দল, ধিক তোমাদের। তোমরা লোকের সামনে স্বর্গরাজ্যের দরজা বন্ধ করে দাও। নিজেরা তো প্রবেশ করই না, যারা চায় তাদেরও ঢুকতে দাও না(মথি ২৩:১৩)। “ভণ্ড শাস্ত্রবিদ ও ফরিশীর দল। ধিক তোমাদের! একটি লোককে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টায় তোমরা জলে স্থলে ঘুরে বেড়াও, আর কাউকে যদি তা করতে পার তাহলে তোমরা তাকে নিজেদের চেয়েও বড় পাষণ্ড করে তোল(মথি ২৩:১৫)। ঈশ্বরের বাক্য পড়ার পরে এবং তাদের কথা শোনার পর, আমার হৃদয় খুব উজ্জ্বল হয়ে উঠল। আমি দেখেছি যে ধর্মীয় জগতে এই যাজক ও নেতারা ঠিক সেই ফরিশীদের মতোই, যাদের প্রভু যীশু নিন্দা করেছিলেন। তারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজকে প্রতিহত করে এবং নিন্দা করে এবং মানুষকে ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শুনতে ও প্রভুকে স্বাগত জানানো থেকে বিরত করার জন্য সবকিছুই করতে পারে। তারা মানুষের ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশের প্রতিবন্ধক। তারা এতটাই দুষ্ট যে নিজেরা যেমন প্রবেশ তেমনি অন্যদেরও তা করতে দেয় না। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “অনেকেই আছে যারা বিরাট গির্জাগুলিতে বাইবেল পড়ে এবং সারাদিন ধরে সেটি আবৃত্তি করে, তবুও তাদের কেউই ঈশ্বরের কাজের উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে পারে না। তাদের মধ্যে কেউই ঈশ্বরকে জানতে সক্ষম নয়, আর তাদের মধ্যে কারোর ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা তো আরোই কম। তারা সকলে অপদার্থ, জঘন্য মানুষ, প্রত্যেকেই ঈশ্বরকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য উচ্চে দণ্ডায়মান। ঈশ্বরের ধ্বজা বহন করাকালীনও তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঈশ্বরের বিরোধিতা করে। ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস দাবি করেও তারা মানুষের মাংস ভক্ষণ ও রক্ত পান করে। এই ধরনের মানুষেরা হল মানুষের আত্মা-গ্রাসকারী প্রধান অপদেবতা, সঠিক পথে পা-রাখতে চাওয়া মানুষদের ইচ্ছাকৃত ভাবে বাধাদানকারী প্রধান অপদেবতা, এবং তারা হল ঈশ্বর-অন্বেষণকারীদের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বাধাস্বরূপ। তাদের দেখে ‘ভালো অবস্থার’ মনে হতে পারে, কিন্তু তাদের অনুগামীরা কীভাবে জানবে যে তারা মানুষদের ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচারী করে তোলা খ্রীষ্টবিরোধী ছাড়া আর কেউ নয়? তাদের অনুগামীরা কীভাবে জানবে যে তারা জীবন্ত শয়তান যারা মানুষের আত্মা গ্রাস করার জন্যই নিবেদিত?(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, যারা ঈশ্বরকে জানে না তারা সকলেই ঈশ্বরবিরোধী)। “প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নেতাদের দিকে তাকাও—তারা সকলেই অহংকারী ও নিজ নৈতিকতার বিষয়ে উদ্ধত, এবং তাদের বাইবেলের ব্যাখ্যায় প্রেক্ষাপটের অভাব রয়েছে এবং তা তাদের নিজস্ব পূর্বধারণা ও কল্পনা দ্বারা পরিচালিত। তারা সবাই তাদের কাজ করার জন্য প্রতিভা ও পাণ্ডিত্যের ওপর নির্ভর করে। তারা যদি একেবারেই প্রচারে অক্ষম হতো, তাহলে মানুষ কি তাদের অনুসরণ করত? তাদের যাই হোক, কিছুটা হলেও জ্ঞান রয়েছে, এবং তারা কিছু কিছু মতবাদের বিষয়ে ধর্মোপদেশ দিতে পারে, অথবা তারা জানে কী করে সফলভাবে অন্যকে জয় করা যায় এবং কিছু কিছু চাতুর্যের ব্যবহার করতে হয়। তারা এগুলির মাধ্যমে মানুষের সাথে প্রতারণা করে এবং তাদের নিজেদের কাছে নিয়ে আসে। এরা শুধু নামেই ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, কিন্তু বাস্তবে, নিজেদের নেতাদের অনুগামী। যখন তারা কাউকে প্রকৃত পথের প্রচার করতে দেখে, তখন তাদের কেউ কেউ বলে, ‘আমাদের নেতাদের সাথে আমাদের বিশ্বাসের বিষয়ে আলোচনা করতে হবে’। তাহলে দেখো, ঈশ্বরে বিশ্বাস এবং প্রকৃত পথ স্বীকার করার পরেও মানুষের এখনো কেমন অন্যদের সম্মতি ও অনুমোদনের প্রয়োজন হয়—এটা কি সমস্যা নয়? সেই নেতারা তাহলে কিসে পরিণত হয়েছে? তারা কি ফরিশী, নকল মেষপালক, খ্রীষ্টবিরোধী, এবং মানুষের প্রকৃত পথ গ্রহণের সামনে প্রতিবন্ধকতায় পরিণত হয়নি? এমন মানুষজন পৌলেরই সদৃশ(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। ধর্মীয় নেতাদের সত্যকে ঘৃণা করা এবং ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করার সারমর্ম ঈশ্বর স্পষ্টভাবে অনাবৃত করেছেন! সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আবির্ভূত হয়েছেন এবং বহু সত্য প্রকাশ করেছেন, কিন্তু তারা তা বিন্দুমাত্র অন্বেষণ করে না। ঈশ্বরের কণ্ঠ শোনার পরিবর্তে তারা নাস্তিক দল সিসিপির কথা শোনে। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজের নিন্দা করে, এবং বিশ্বাসীদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য মিথ্যা প্রচার করে এবং আমাদেরকে ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শোনা এবং তাঁকে স্বাগত জানানো থেকে বিরত রাখে। এটা আমাদের উদ্ধারলাভের এবং স্বর্গরাজ্যে প্রবেশের সুযোগ নষ্ট করছে। যদিও এইসব যাজক ও নেতারা প্রায়ই গির্জার লোকেদের কাছে বাইবেল ব্যাখ্যা করে, ঈশ্বর এবং তাঁর কাজ সম্পর্কে তাদের সামান্যতম জ্ঞানও নেই। ঈশ্বরকে ভয়ও পায় না তারা। তাদের সারমর্ম ফরিশীদের মতই। তারা সকলেই খ্রীষ্টবিরোধী, যারা সত্যকে ঘৃণা করে এবং ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করে। তারপর আমার মনে পড়ল কীভাবে ইহুদিধর্মের বিশ্বাসীরা অন্ধভাবে ধর্মীয় নেতাদের পুজো করত, এবং ফলস্বরূপ, তারা প্রভু যীশুকে প্রতিরোধ করার জন্য ফরিশীদের অনুসরণ করেছিল এবং ঈশ্বরের পরিত্রাণ হারিয়েছিল। আমার বাবা-মাও যাজক ও গুরুজনদের পুজো করত। যদিও তারা বহু বছর ধরে প্রভুকে বিশ্বাস করেছিল, কিন্তু তাদের হৃদয়ে ঈশ্বরের কোনো স্থান ছিল না। তারা সত্য বুঝতে পারেনি এবং তাদের বিচক্ষণতার অভাব ছিল। তারা ভাবত যে, যারা যাজক ও গুরুজনদের অনুগত হয়, তারাই প্রভুকে মান্য ও অনুসরণ করে। যাজক এবং গুরুজনেরা যা-ই বলুক, আমার বাবা-মা শুনত। প্রভুকে স্বাগত জানানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, তারা বিচক্ষণতা হারিয়েছিল, এবং অন্ধভাবে যাজকের কথা শুনেছিল, তবুও, যখন আমি তাদের কাছে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়েছিলাম, তারা একেবারেই শোনেনি, এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে নিন্দা করার জন্য যাজক এবং ধর্মতত্ত্ববিদের কথাগুলি আউড়ে গিয়েছিল। তারা এ-ও বলেছিল, “যদিও বা এটি সত্যের পথ হয়, তবুও যাজক তা গ্রহণ না করলে আমরা গ্রহণ করব না।” আমি দেখলাম আমার বাবা-মা খুবই অনুকম্পার যোগ্য। কীভাবে তারা প্রভুকে বিশ্বাস করছিল? তারা কি শুধুই যাজক ও গুরুজনদের বিশ্বাস করে যাচ্ছিল না? আমি আমার বাবা-মাকে বললাম, “তোমরা যদি জন্মগ্রহণ করতে অনুগ্রহের যুগে, যখন প্রভু যীশু কাজ করতে আবির্ভূত হয়েছিলেন, অতীতে ইহুদি ধর্মবিশ্বাসীদের মতোই হতে তোমরা এবং ফরিশীদের অনুসরণ করে প্রভু যীশুকে প্রতিরোধ ও নিন্দা করতে, কারণ তোমরা শুধুমাত্র যাজকের কথা শোনো। যাজক এবং গুরুজনেরা যদি কোনো কিছুকে মিথ্যা বলে নিন্দা করে, তোমরাও একই কথা বলো, কিন্তু তোমরা নিজেরা সত্যের পথ অনুসন্ধান করো না, শুনতেও চাও না ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর। এটা কি তাদের মতো নয়, যারা ফরিশীদের অনুসরণ করেছিল এবং প্রভু যীশুকে প্রতিরোধ করেছিল? তোমরা কি এভাবে ভালো ফল পাবে?” বাবা-মায়ের ব্যাপারে অল্পস্বল্প বিচক্ষণতা আমার ছিল, এবং আমি আমার আবেগের কাছে আর বাঁধা পড়ে থাকিনি, তাই আমি ঈশ্বরের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছিলাম।

সেই সময়ে, আমি যা-ই করি না কেনো, আমার বাবা-মা আমাকে নজরে রাখছিল। বাড়িতে থেকে শান্তিতে সমাবেশগুলোয় যোগদান করতে পারছিলাম না। সেই সময় সমাবেশগুলোর জন্য আমাদের গ্রামের কাছে ছোট্টো একটা জঙ্গলে রাতের বেলায় ঢুকতে হতো আমাকে। সেখানে অসংখ্য মশা ও পোকামাকড় ছিল। খুবই বাজেভাবে মশার কামড় খেতাম আমি, এবং আরাম করে বসার কোনো জায়গা খুঁজে পেতাম না। মাঝে মাঝে গভীর রাতে অবধিও জঙ্গলে থাকতাম। আমি যে সমাবেশে ছিলাম, সেটা বাবা-মা যাতে না জানতে পারে, তাই আমাকে আবার ঘুমোনোর জন্য লুকিয়ে ঘরে ফিরে যেতে হত, এবং সকালে তাদের আগে আমাকে ঘুম থেকে উঠতে হত যাতে তারা ভাবে যে, রাতে আমি ভালো করে ঘুমিয়েছি। দিনের বেলায়, সাধারণত বাবা-মাকে সাহায্য করার জন্য আমায় মাঠে যেতে হত। কিছুক্ষণ বাদে আমি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। তা খুবই ক্লান্তিকর ছিল। আমি একটু দুর্বল বোধ করতে লাগলাম, এবং আমি জানতাম না এই দিনগুলি কবে শেষ হবে। কখনো আমি এ-ও ভেবেছিলাম যে যদি বাবা-মায়ের কথা শুনতাম এবং সমাবেশগুলোয় যাওয়া বন্ধ করতাম, তাহলে এতটা কষ্ট পেতাম না, প্রতিবেশীরা আমায় নিয়ে হাসাহাসি করত না। এবং আমার চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়ত না। এসব ভাবতে ভাবতে আমি কিছুটা বিচলিত হয়েছিলাম। কিন্তু তারপর ভাবলাম যে, প্রতিটি সমাবেশে আমি কিছু সত্য বুঝতে পারি, এবং এই সত্য আগে কখনো শুনিনি। আমি তা ছাড়তে চাইনি। সেই সময়ে, ঈশ্বরের বাক্যের একটি স্তোত্র আমায় খুব উৎসাহ দিয়েছিল, সেটা বারবার শুনতাম। “অন্তিম সময়ের কাজে আমাদের থেকে সর্বাধিক বিশ্বাস এবং ভালোবাসাই কাম্য। সামান্য অসাবধানতাবশত আমরা হোঁচট খেতে পারি, কারণ কাজের এই পর্যায়টি আগের অন্যান্য পর্যায়ের থেকে আলাদা: ঈশ্বর যা নিখুঁত করে তুলছেন তা হল মানবজাতির বিশ্বাস, যা একইসাথে অদৃশ্য ও অধরা। ঈশ্বর বাক্যকে বিশ্বাস, ভালোবাসা এবং জীবনে রূপান্তরিত করেন। লোকেদের অবশ্যই এমন এক পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে যেখানে শত শত পরিমার্জনা সহ্য করা সত্ত্বেও তারা ইয়োবের চেয়েও বড় বিশ্বাসের অধিকারী হয়। ঈশ্বরকে কখনো ত্যাগ না করেই তাদের অবিশ্বাস্য যন্ত্রণা এবং সর্বপ্রকারের অত্যাচার সহ্য করতে হবে। যখন তারা আমৃত্যু অনুগত থাকবে, এবং ঈশ্বরের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রাখবে, তখনই ঈশ্বরের কাজের এই পর্যায়টি সম্পূর্ণ হবে(মেষশাবককে অনুসরণ করুন ও নতুন গীত গান, ঈশ্বর যা নিখুঁত করেন, তা হল বিশ্বাস)। গানটা থেকে আমি বুঝেছিলাম সমস্যার সময় আমি দুর্বল ও দুর্দশাগ্রস্ত হতে পারি, কিন্তু সেইসব সময়ে, আমাকে দৈহিক ইচ্ছা ত্যাগ করতে শিখতে হবে। আমি যদি দৈহিক চাহিদার অনুসরণ করি, তাহলে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে পারব না, আমি ভালো করেই জানতাম প্রত্যেকটা সমাবেশ আমার সত্য উপলব্ধির পক্ষে লাভজনক এবং যে সত্য আমি অর্জন করি তা অমূল্য সম্পদ। যদিও গভীর রাতে জঙ্গলে প্রতিটি সমাবেশ শারীরিকভাবে ক্লান্তিকর এবং কঠিন ছিল, তা ছিল আমার জন্য পরীক্ষা, আমি সত্যের জন্য কষ্ট সহ্য করতে পারি কিনা এবং প্রকৃত বিশ্বাসের অধিকারী কিনা তা দেখতে। আমার বাবা-মা চেয়েছিল যে আমি পৃথিবীতে খ্যাতি এবং সৌভাগ্য অর্জনের লক্ষ্যে ছুটি এবং একটি ভালো চাকরি পাই, যাতে আমার পরিবার একটি সুন্দর জীবন পায় এবং গর্বিত হয়। এমনটাই তারা চেয়েছিল এবং প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু আমি যদি আমার বাবা-মায়ের কথা শুনতাম এবং সমাবেশগুলোয় যাওয়া বন্ধ করে দিতাম, যদিও আমাকে এই বিষয়গুলি ভোগ করতে হত না, কিন্তু আমি সত্য অর্জন করতে পারতাম না। আমি যেমন ছিলাম তেমনই থেকে যেতাম, মেতে থাকতাম শুধুমাত্র আত্মবিনোদন এবং দৈহিক ইচ্ছার সন্তুষ্টিবিধান নিয়ে, যেগুলি অর্থহীন। আমি যে ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ গ্রহণ করতে এবং এত সত্যের সরবরাহ উপভোগ করতে পেরেছিলাম, তা ছিল আমার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ। আমি যে সামান্য কষ্ট সহ্য করেছি তা সত্য উপলব্ধি করার তুলনায় কিছুই নয়, এবং এর সবটাই অর্থপূর্ণ ছিল। এইসব ভেবে, আমি দৈহিক ভোগসুখ ত্যাগ করতে ইচ্ছুক ছিলাম এবং আমার পরিবার আমার সম্পর্কে কী বলেছে তার তোয়াক্কা করি নি। আমি শুধু আশা করেছিলাম যে আমি এই সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠতে আমি যেন ঈশ্বরের উপর নির্ভর করতে পারি।

পরে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করে, আমার অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি হয়। ধীরে ধীরে, আমি বুঝি শুধুমাত্র এমন কঠিন পরিস্থিতিতেই আমি ঈশ্বরের ইচ্ছার আরো অন্বেষণ করতে পারব, এবং আমার বিশ্বাস দৃঢ়তর হবে, সেজন্য, আমি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ ছিলাম! এর পরে, আমি জঙ্গলে সমাবেশগুলোয় যেতে থাকলাম। কিন্তু একবার, যখন আমি একটি সভায় ছিলাম, কেউ একজন, আমি জানি না কে, তা জানতে পারে ও আমার বাবা-মাকে বলে দেয়। পরের দিন সকালে প্রাতরাশের সময়, মা আমাকে বলে, “আমি ভেবেছিলাম তুমি ধর্মতত্ত্ববিদের সাথে দেখা করার পরে সমাবেশগুলোয় যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলে। আমি জানতাম না যে তুমি রাতে জঙ্গলে সমাবেশে যোগদান করতে যাচ্ছ। তোমার ভয় করে না?” বলতে বলতে মা কেঁদে ফেলে। সেই প্রথম মাকে আমার সামনে কাঁদতে দেখলাম আমি। আমি কী বলব জানতাম না। আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল। আমি জানতাম আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে অনুসরণ করা ছেড়ে দিতে পারব না, কিন্তু আমি বাবা-মাকে দুঃখ দিতে চাইলাম না। এটি একটি বিশেষ যুদ্ধের মতো মনে হয়েছিল। পরে, আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্যের একটি অনুচ্ছেদের কথা ভেবেছিলাম। “ঈশ্বর যখন তাঁর কর্ম সম্পাদন করেন, কোনো ব্যক্তির প্রতি যত্নবান হন, এবং সেই ব্যক্তিকে পরীক্ষা করেন, এবং যখন সেই ব্যক্তির প্রতি সমর্থন এবং অনুমোদন প্রদান করেন, শয়তান নিকটে থেকেই অনুসরণ করে, সেই ব্যক্তিকে ঠকানোর এবং তার ক্ষতিসাধনের জন্য সচেষ্ট থাকে। ঈশ্বর যদি সেই ব্যক্তিকে অর্জন করতে চান, তাহলে শয়তানও তখন তার সমস্ত শক্তি দিয়ে ঈশ্বরের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, নানাবিধ কূটচক্রান্তের মাধ্যমে সে ঈশ্বরের কর্মকে প্রলোভন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত তথা ব্যহত ও বিঘ্নিত করে, তার গোপন অভিপ্রায় সার্থক করার উদ্দেশ্যে। কী এই অভিপ্রায়? সে চায় না যে ঈশ্বর কাউকে অর্জন করুন; ঈশ্বর যাদের অর্জন করতে আকাঙ্ক্ষা করেন, সে তাদের ছিনিয়ে নিজের অধিকারে আনতে চায়, সে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাদের নেতৃত্ব দিতে চায় যাতে তারা তারই উপাসনা করে, যাতে মন্দ কর্ম সংঘটনে এবং ঈশ্বরের বিরোধিতায় তারা তার সাথে যুক্ত হয়। এ কি শয়তানের অশুভ অভিপ্রায় নয়? … ঈশ্বরের সাথে যুদ্ধ এবং তাঁর অনুগমনের মাধ্যমে, শয়তানের উদ্দেশ্য হল সেই সকল কার্যের ধ্বংসসাধন যা ঈশ্বর করতে চান, ঈশ্বর যাঁদের অর্জন করতে চান তাদের অধিগ্রহণ এবং নিয়ন্ত্রণ, এবং ঈশ্বর যাদের অর্জন করতে চান তাদের প্রত্যেকের নির্বাপণ। তারা নির্বাপিত না হলে, তখন শয়তান তাদের দখল করে নেয়, যাতে সে তাদের ব্যবহার করতে পারে—এই হল তার উদ্দেশ্য(বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৪)। ঈশ্বরের বাক্যগুলি নিয়ে চিন্তা করার পর, আমি বুঝতে পারি, ঈশ্বর মানুষকে উদ্ধার করার জন্য কাজ করেন, অপরপক্ষে শয়তান ঈশ্বরকে বাধা দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করে এবং চেষ্টা করে যাতে মানুষ ঈশ্বরকে অনুসরণ করা এবং ঈশ্বরের পরিত্রাণ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। আমার মনে পড়ে কীভাবে ইয়োবের স্ত্রী ইয়োবকে প্রলুব্ধ করেছিল ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করছে। এ হল শয়তানের কৌশল। এই সময়ে, আমার বন্ধুরা আমাকে জ্বালাতন করত, আমার যাজক এবং পরিবারও আমাকে বাধা দেয় এবং আমাকে ঈশ্বরে বিশ্বাস করা বন্ধ করার জন্য হুমকি দেয়। এগুলো সবই ছিল শয়তানের প্রলোভন। আমার পরিবার বলে যে তারা ভয় পেয়েছিল যে আমাকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং আমার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে না আমার মা এমনও বলেছিল যে সে আমাকে নিয়ে চিন্তিত। এই কথাগুলোয় মনে হয়েছিল সে চিন্তিত ছিল, কিন্তু তা ছিল আসলে শয়তানের আমার পরিবারকে ব্যবহার করে আমায় ঈশ্বরকে অনুসরণ করা থেকে আমাকে বিরত করা। শয়তান চেয়েছিল আমায় জোর করে বাধ্য করতে যাতে আমি হাল ছেড়ে দিই, যাজককে অনুসরণ করে চলি, ধর্মে থাকি, এবং ঈশ্বরের পরিত্রাণ হারাই। শয়তানের কৌশলে ধরা পড়িনি আমি। এর পরে, আমি সমাবেশগুলিতে যোগ দিতে এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য পড়তে থাকি। আমি জানি যে আগামী দিনে, শয়তানের আরো অনেক প্রলোভনের সম্মুখীন হতে পারি, এবং অনেক বিপত্তির সম্মুখীন হতে পারি, কিন্তু আমি অন্তর থেকে জানি যে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্যই সত্য। এই যে আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য পড়তে পারি, ঈশ্বরের কাজ অনুভব করতে পারি এবং সত্য অর্জন করতে পারি তা আমার পক্ষে গভীরভাবে অর্থপূর্ণ। যতই কষ্ট পাই না কেন, তা মূল্যবান!

পূর্ববর্তী: পারিবারিক বন্দী

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

যাজকের দুর্বৃত্তি দেখতে পাওয়া

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে আমার অনলাইনে এক সিস্টারের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। সে আমাকে বলে প্রভু যীশু সর্বশক্তিমান ঈশ্বররূপে প্রত্যাবর্তন করেছেন, এবং...

শয়তানের পরীক্ষায় বিজয়

আমার নাম ডেভিড এবং আমি এক খ্রীষ্টান পরিবারে জন্মেছিলাম। আমি ছোটো থেকেই বাবা-মার মতোই প্রভুর প্রতি বিশ্বাস রেখেছি। বড়ো হওয়ার পর, আমি যুব...

Leave a Reply

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন