যখন আমার পরিবার আমাকে ঈশ্বরে বিশ্বাস করা থেকে বিরত করতে চেষ্টা করেছিল
২০১৮-এর মার্চ মাসে, আমার আত্মীয়েরা আমাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের সুসমাচার শোনায় এবং আমায় অনলাইন সমাবেশে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী পাঠের মাধ্যমে আমি শিখি সর্বশক্তিমান ঈশ্বর প্রভু যীশুর পরিত্রাণের কাজের ভিত্তিতে বিচারের কাজ করেন, এবং মানুষকে সম্পূর্ণ পরিশুদ্ধ ও উদ্ধার করতে, পাপমুক্ত করে ঈশ্বরের রাজ্যে নিয়ে যেতে এসেছেন। যদিও আমি অতীতে ঈশ্বরে বিশ্বাস করতাম এবং গির্জার কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতাম, আমি পাপ ও স্বীকারোক্তির চক্রে দিনযাপন করতাম, আমি ঈশ্বরের বাণী অনুশীলন করতে পারিনি, এবং যন্ত্রণায় বাস করতাম। এখন, আমি অবশেষে কলুষমুক্ত হওয়ার একটা পথ পেয়ে খুবই খুশী হলাম, এবং আমি নিশ্চিতছিলাম যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর প্রভু যীশুর দ্বিতীয় আবির্ভাব। আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার ভ্রাতা ও ভগিনীদের সঙ্গে অনলাইন সমাবেশে যোগ দেওয়া শুরু করলাম, এবং আমি আমার মাকে সমাবেশগুলোয় যে আলো পেয়েছি তার কথা বললাম। সে বলল আমি তাকে যা বলেছি তা লাভদায়ক, এবং আমি অনলাইনে যা ধর্মোপদেশ শুনেছি সে তাতে আগ্রহী, তাই আমি তাকে আমার সঙ্গে অনলাইন সমাবেশগুলোয় যোগ দিতে ডাকি। অপ্রত্যাশিতভাবে, সে অর্দ্ধেক শুনেই শোনা বন্ধ করে দেয়, এবং আমাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করা থেকে বিরত করতে চেষ্টা করে।
একদিন, আমার মা হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞাসা করে, “সেদিনের সমাবেশের আলোচনা কি পূর্বের বজ্রালোকের ধর্মোপদেশ ছিল?” মায়ের অতর্কিত প্রশ্ন শুনে শুরুতে আমি বুঝিনি কীভাবে জবাব দেব। আমি ভাবলাম, “মা সবসময় যাজকের কথা শোনে। সে যখন আমাকে এ প্রশ্ন করছে, সে কি যাজকের পূর্বের বজ্রালোকের নিন্দে করে রটানো গুজবে কান দিয়েছে?” ঠিক যেমন ভেবেছিলাম, যে মুহূর্তে আমি বলা শেষ করলাম, সে দোষারোপের ভঙ্গীতে বলল, “বাইবেলে কী বলা আছে ভাবো, ‘কেউ যদি তখন তোমাদের বলে যে খ্রীষ্ট এখানে রয়েছেন কিম্বা ওখানে আছেন সে কথা বিশ্বাস করো না। কারণ অনেক নকল খ্রিষ্ট ও ভুয়ো নবীর আবির্ভাব ঘটবে। তারা এমন সব চমকপ্রদ নিদর্শন ও অলৌকিক কাণ্ড দেখাবে যার ফলে মনোনীতরাও প্রতারিত হতে পারে’ (মথি ২৪:২৩-২৪)। যাজক এই স্তবকগুলো বহুবার উল্লেখ করেছে। অন্তিম সময়ে মানুষকে ঠকাতে বহু ভণ্ড খ্রীষ্টের উদয় হবে। বিশেষত পূর্বের বজ্রালোকের ক্ষেত্রে, তারা সাক্ষ্য দেয় যে প্রভু যীশু দেহরূপে ফিরে এসেছেন। এ তো অবশ্যই মিথ্যা। যাজক আমাদের বলেছে এ কথা কখনো বিশ্বাস না করতে, এবং তাদের ধর্মোপদেশ কখনো না শুনতে! তোমারও যাজক যা বলে তা-ই করা উচিত। ওই ধর্মোপদেশগুলো শোনা বন্ধ করো!” মাকে এ কথা বলতে শুনে আমি রেগে গেলাম। যাজক সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী শোনেনি বা অন্তিম সময়ে তাঁর কাজ খতিয়ে দেখেনি, কী করে সে প্রভুর প্রত্যাবর্তনের নিন্দা করতে পারে? আমার মা-ও সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী পড়েনি। কী করে সে এত বিবেচনাহীন হয়ে যাজকের দাবি মেনে একে মিথ্যা ভাবতে পারে? প্রভুর অনেক নিষ্ঠাবান বিশ্বাসী সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী পড়েছে এবং একে ঈশ্বরের কণ্ঠ বলে চিনতে পেরেছে। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী পড়ার পর, আমিও তাদের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা অনুভব করেছি। প্রভু যীশুর বাণীর ও তাদের উৎস একই, এবং এ হল স্বয়ং ঈশ্বরের কণ্ঠ। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর হলেন প্রত্যাবর্তিত প্রভু যীশু। কী করে তারা বলতে পারে যে তিনি ভণ্ড খ্রীষ্ট যিনি মানুষকে প্রতারণা করেছেন?
সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার চার্লি সত্যের এই দিকটি নিয়ে আলোচনা করেছিল, এবং সে আমাকে কিছু ঈশ্বরের বাণী পড়ে শোনায়, “যিনি ঈশ্বরের অবতার তিনি ঈশ্বরের সারসত্যের অধিকারী হবেন, এবং যিনি ঈশ্বরের অবতার তিনি ঈশ্বরের অভিব্যক্তির অধিকারী হবেন। যেহেতু ঈশ্বর দেহরূপ ধারণ করেছেন, সেহেতু তিনি সেই কাজ নিয়ে আসবেন যা তিনি করতে চান, এবং যেহেতু তিনি দেহরূপে এসেছেন, তিনি যা তা তিনি স্বরূপ প্রকাশ করবেন এবং সেই সত্যটি মানুষের সামনে নিয়ে আসতে সমর্থ হবেন, তাকে জীবন দান করবেন এবং তার জন্য পথ চিহ্নিত করবেন। যে দেহরূপে ঈশ্বরের সারসত্য নেই তাকে ঈশ্বরের অবতার বলে গণ্য করা হয় না; এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কেউ ঈশ্বরের দেহরূপী অবতার কিনা তা যদি মানুষ অনুসন্ধান করতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই যে স্বভাব তিনি প্রকাশ করেন এবং যে সকল বাক্য তিনি বলেন, তার থেকেই তা জানতে হবে। অর্থাৎ, কেউ ঈশ্বরের দেহরূপী অবতার কিনা, এবং এটিই প্রকৃত পথ কিনা, তা সুনিশ্চিত করতে অবশ্যই তাঁর সারসত্যের ভিত্তিতে বিচার করতে হবে। এবং তাই, কেউ ঈশ্বরের দেহরূপী অবতার কি না, তা নির্ণয় করার মূল বিষয়টি তাঁর বাহ্যিক চেহারার পরিবর্তে তাঁর সারসত্য (তাঁর কাজ, তাঁর কথন, তাঁর স্বভাব এবং অন্যান্য অনেক বিষয়ের), উপর নির্ভরশীল। মানুষ যদি শুধু তাঁর বাইরের চেহারাটাই খুঁটিয়ে দেখে, এবং এর ফলে তাঁর সারসত্যকে উপেক্ষা করে, তাহলে এটাই প্রমাণিত হয় যে সেই মানুষটি অজ্ঞানতিমিরে আচ্ছন্ন এবং অজ্ঞ” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ভূমিকা)। “যদি বর্তমানকালে এমন কেউ আবির্ভূত হয় যে সংকেত ও আশ্চর্যজনক বিষয় প্রদর্শন করতে পারে, অপদেবতা বিতাড়নে ও পীড়িতদেরদের নিরাময়ে সক্ষম হয় এবং বিবিধ অলৌকিক ঘটনা ঘটাতে পারে, আর যদি সেই ব্যক্তি দাবি করে যে সে-ই হল আবির্ভূত যীশু, তাহলে সে হল মন্দ আত্মাদের সৃষ্ট যীশুর অনুকরণকারী এক নকল সত্তা। একথা মনে রেখো! ঈশ্বর একই কাজের পুনরাবৃত্তি করেন না। যীশুর কাজের পর্যায় ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ হয়ে গেছে, এবং ঈশ্বর কখনোই সেই কাজের পর্যায়ের আর দায়িত্ব নেবেন না। ঈশ্বরের কাজ মানুষের ধারণার সাথে মেলে না; উদাহরণস্বরূপ, পুরাতন নিয়মে একজন মশীহের আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল এবং এই ভবিষ্যদ্বাণীর ফলাফল ছিল যীশুর আগমন। এটি ইতিমধ্যেই ঘটে গিয়েছে, অন্য মশীহের পুনরায় আগমন ঘটলে তা ভুল হবে। যীশু ইতিমধ্যেই একবার এসেছেন, আবারও যদি যীশু আসেন, তবে তা ভুল হবে। প্রতিটি যুগেরই এক-একটি নাম রয়েছে এবং প্রতিটি নামের মধ্যে সেই যুগের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মানুষের ধারণায়, ঈশ্বর অবশ্যই সর্বদা সংকেত এবং বিস্ময়কর ঘটনা প্রদর্শন করবেন, সর্বদা পীড়িতদের নিরাময় করবেন, অপদেবতা বিতাড়ন করবেন এবং সর্বদাই হুবহু যীশুর মতো হবেন। তবুও এইবার ঈশ্বর একদমই সেরকম নন। অন্তিম সময়ে এসেও, ঈশ্বর যদি এখনও সংকেত ও আশ্চর্যজনক ঘটনা প্রদর্শন করেন, অপদেবতা বিতাড়ন করেন এবং পীড়িতদের নিরাময় করেন—যদি তিনি যীশুর মতো ঠিক একই কাজ করেন—তাহলে ঈশ্বর একই কাজের পুনরাবৃত্তি করবেন এবং তাহলে যীশুর কাজের কোনো তাৎপর্য বা মূল্যই থাকবে না। এইভাবে, ঈশ্বর প্রতিটি যুগে কাজের এক-একটি পর্যায় নির্বাহ করেন। একবার তাঁর কাজের একটি পর্যায় শেষ হয়ে গেলে, শীঘ্রই মন্দ আত্মারা তা অনুকরণ করে, এবং শয়তান ঈশ্বরের পথে হাঁটা শুরু করলে ঈশ্বর তাঁর পদ্ধতি পরিবর্তন করেন। ঈশ্বরের কাজের একটি পর্যায় সম্পূর্ণ হয়ে গেলে, মন্দ আত্মারা তা অনুকরণ করতে শুরু করে। তোমাদের অবশ্যই এই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরের বর্তমানের কার্যকে জানা)। চার্লি ঈশ্বরের বাণী সম্পর্কেও আমার সাথে আলোচনা করে, বলে, “প্রকৃত ও ভণ্ড খ্রীষ্টের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হলে প্রথমেই দেখতে হবে তারা সত্য প্রকাশ করতে পারে কিনা, ঈশ্বরের স্বভাব এবং তিনি যা ও তাঁর যা আছে তা প্রকাশ করতে পারে কিনা, এবং মানবজাতিকে রক্ষা করার কাজ করতে পারে কিনা। এ-ই হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক নীতি। শুধুমাত্র খ্রীষ্টই সত্য প্রকাশ করতে পারেন, এবং যে সত্য প্রকাশ করতে পারে না সে অবশ্যই খ্রীষ্ট নয়। ভণ্ড খ্রীষ্টরা ঈশ্বরের সারসত্তার অধিকারী নয় এবং সত্য প্রকাশ করতে পারে না। তারা শুধুমাত্র প্রভু যীশুকে নকল করতে ও সধারণ চিহ্ন ও অলৌকিকতা প্রদর্শন করতে পারে যাতে বিভ্রান্ত ও বোধহীন মানুষকে ঠকানো যায়। তাই, যদি কেউ নিজেকে আবির্ভূত খ্রীষ্ট বলে দাবি করে, কিন্তু সামান্যতমও সত্য প্রকাশ না করতে পারে, এবং শুধুই চিহ্ন ও অলৌকিকতা প্রদর্শন করে, তাহলে তারা অশুভ শক্তিসম্পন্ন নকল ও ভণ্ড খ্রীষ্ট যারা মানুষকে ঠকাতে এসেছে। শুধু খ্রীষ্টই হলেন সত্য, পন্থা ও জীবন, এবং একমাত্র তিনিই সত্য প্রকাশ করতে এবং মানবজাতিকে রক্ষা করার কাজ করতে পারেন। যখন প্রভু যীশু খ্রীষ্ট আবির্ভূত হয়ে কাজ করেন, তিনি বহু সত্য প্রকাশ করেন, তিনি মানুষকে অনুশোচনার উপায় দেন এবং সমগ্র মানবজাতিকে উদ্ধার করেন, এবং তিনি আইনের যুগের অন্ত ঘটিয়ে অনুগ্রহের যুগের সূচনা করেন। এই কারণেই আমরা সকলে প্রভু যীশুকে ঈশ্বরের অবতার হিসেবে, খ্রীষ্ট হিসেবে চিনতে পারি। অন্তিম সময়ে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আসেন কলুষিত মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় সব সত্য প্রকাশ করতে। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণীতে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা আছে, এবং তারা ঈশ্বরের স্বভাব, তিনি যা ও তাঁর যা আছে তা প্রকাশ করে। তিনি পুঁথি খোলেন, সাতটি সীলমোহর খোলেন, বাইবেলের রহস্যগুলি উন্মোচন করেন, অনুগ্রহের যুগের অন্ত ঘটিয়ে রাজ্যের যুগের সূচনা করেন, এবং মানবজাতিকে সম্পূর্ণরূপে রক্ষা করতে বিচারের কাজ করেন। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী ও কাজ সম্পূর্ণরূপে প্রমাণ করে যে তিনি দেহরূপী ঈশ্বর, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের রূপ।” এ কথা ভেবে, আমি উৎফুল্ল হলাম। মাকে বললাম, “কেন তুমি যাজকের কথা এত শোন? আমরা প্রভুকে বিশ্বাস করি, আমাদের তাঁর কথা শোনা উচিত। যেমন প্রভু যীশু বলেছেন, ‘আমার নিজের মেষপাল আমার ডাক শোনে’ (যোহন ১০:২৭)। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী স্পষ্টভাবে প্রকৃত খ্রীষ্ট ও ভণ্ড খ্রীষ্টের সত্য সম্পর্কে আলোচনা করে। খ্রীষ্ট মনুষ্যপুত্ররূপে ঈশ্বরের দেহরূপ। কারণ খ্রীষ্ট স্বয়ং ঈশ্বর, তিনি সত্য প্রকাশ করতে এবং মানুষকে রক্ষা করতে কাজ করতে পারেন। ভণ্ড খ্রীষ্টেরা কলুষিত মানুষ, নকল, যারা সত্য প্রকাশ করতে বা মানবজাতিকে রক্ষা করতে পারে না, এবং শুধুমাত্র লোক ঠকানোর জন্য চিহ্ন ও অলৌকিক কাণ্ড দেখাতে পারে। অন্তিম সময়ে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বিচারের কাজ করতে আসেন, অর্থাৎ মানুষকে সম্পূর্ণ পরিশুদ্ধ ও রক্ষা করতে সত্য প্রকাশ করেন। আমরা যদি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী আরো পড়ি, প্রকৃত ও ভণ্ড খ্রীষ্টের মধ্যে আমরা তফাত করতে পারব, এবং আমরা ঈশ্বরের কণ্ঠ শুনতে পাব ও প্রভুর প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানাতে পারব। …” আমি শেষ করতে পারার আগেই, আমার মা শোনা বন্ধ করে দিল। আমি মাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী পড়ে শোনাতে চাইলাম কিন্তু সে রেগে চলে গেল। আমার ভ্রাতা ও ভগিনীরা যখন এ কথা শুনল, তারা আমায় বলল আমার মা যাজকের দ্বারা প্রতারিত হয়েছিল এবং প্রকৃত ও ভণ্ড খ্রীষ্টের তফাত করার সত্য বোঝেনি, সেই কারণেই সে ঈশ্বরের কাজ বুঝতে ভুল করে। তারা আমাকে সত্য নিয়েও তার সাথে আরো আলাপ-আলোচনা করতে বলে এবং স্নেহশীল হয়ে তার ধারণা ও বিভ্রান্তি দূর করতে বলে। তারপর, আমি প্রকৃত ও ভণ্ড খ্রীষ্টের পার্থক্য কীভাবে করতে হয় সে বিষয়ে তার সাথে আলাপ-আলোচনা করার একটা সুযোগ পাই। আমার কথা শোনার পর তার মনে হয় এটা যুক্তিপূর্ণ এবং বাইবেলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, সে আমার অনলাইন সমাবেশের আর এতটা বিরোধিতা করত না, এবং সে বলল সে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী পড়তে চায়। এতে আমি খুবই খুশী হই, তাই আমি মার জন্য সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার অ্যাপটি ডাউনলোড করি ও তাকে একটি সমাবেশে ডাকি। কিন্তু সমাবেশের আগে, সে অনলাইনে যাজকের পোস্ট করা গুজব দেখে আবার আমায় বাধা দেওয়া শুরু করল।
একদিন যখন আমি কাজে ছিলাম, আমার মা আমায় পাঠাল ধর্মীয় যাজকদের গির্জার অবমাননা ও নিন্দা করার একটি ভিডিওর স্ক্রিনশট, আর আমাকে সেটা দেখতে বলল। স্ক্রিনশটটির দিকে তাকিয়ে, আমি খুব রেগে গেলাম। কেন এই ধর্মীয় যাজকদের সামান্যতম ঈশ্বর-ভীতি নেই? তারা ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজের নিন্দা করে মিথ্যা ও গুজব রটায় এবং বিশ্বাসীদের সত্যানুসন্ধানে বাধা দেয়। এরা কি দুষ্ট! আমি বুঝলাম না। ধর্মীয় নেতা হিসেবে যাজকদের গির্জায় ঈশ্বরের সেবা করার কথা। কেন, যখন প্রভু যীশু ফিরলেন, তারা প্রভুকে স্বাগত না জানিয়ে তাঁকে এভাবে প্রতিরোধ করে? আমি অন্বেষণের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম। প্রার্থনার পর, আমি এই বচন স্মরণ করলাম, “প্রাচীন কাল থেকেই প্রকৃত পথ নিপীড়িত হয়েছে।” আমি তৎক্ষণাৎ বুঝলাম, অনুগ্রহের যুগে যখন প্রভু যীশু কাজ করতে আসেন তিনিও নিপীড়ন ও নিন্দার শিকার হয়েছেন প্রধান পুরোহিত, লেখক, এবং ইহুদি ধর্মের ফরিশীদের। তারাই শাস্ত্রের ব্যাখ্যা করত ও সিনাগগে ঈশ্বরের সেবা করত। আমি যখন এ কথা ভাবলাম, আমি ঈশ্বরের বাণীর একটি অংশ পড়লাম। “ফরিশীরা কেন যীশুর বিরোধিতা করেছিল, তার উৎস কি তোমরা জানতে চাও? তোমরা কি ফরিশীদের সারসত্য জানতে চাও? তারা মশীহের বিষয়ে কল্পনায় পরিপূর্ণ ছিল। উপরন্তু, তারা বিশ্বাস করত যে মশীহ আসবেন, তবুও তারা জীবনের সত্যের অনুসরণ করত না। আর তাই, আজও তারা মশীহের অপেক্ষা করে, কারণ জীবনের প্রকৃত পথের কোনো জ্ঞান তাদের নেই এবং তারা জানে না সত্যের পথ কী। তোমরাই বলো, এমন মূর্খ, জেদী আর অজ্ঞ লোকেরা কীভাবে ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করবে? কীভাবে তারা মশীহকে প্রত্যক্ষ করবে? তারা যীশুর বিরোধিতা করেছিল, কারণ তারা পবিত্র আত্মার কাজের অভিমুখ জানত না, যীশুর কথিত সত্যের পথের বিষয়ে জানত না, এবং তদুপরি, তারা মশীহকে বোঝে নি। এবং যেহেতু তারা কখনো মশীহকে দেখে নি বা তাঁর সঙ্গলাভ করে নি, তাই তারা যেকোনো উপায়ে মশীহের সারসত্যের বিরোধিতা করে কেবলমাত্র তাঁর নামকেই আঁকড়ে ধরে থাকার ভুল করেছিল। এই ফরিশীরা সারমর্মে ছিল জেদী, উদ্ধত, এবং সত্য অমান্যকারী। তাদের ঈশ্বর বিশ্বাসের নীতিই ছিল: আপনার ধর্মোপদেশ যতই গভীর হোক না কেন, আপনার কর্তৃত্ব যতই উচ্চ হোক না কেন, আপনাকে যতক্ষণ না মশীহ নামে সম্বোধন করা হচ্ছে, ততক্ষণ আপনি খ্রীষ্ট নন। এই বিশ্বাস কি অযৌক্তিক এবং হাস্যকর নয়?” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, যতক্ষণে তুমি যীশুর আধ্যাত্মিক দেহ প্রত্যক্ষ করবে, ততক্ষণে ঈশ্বর স্বর্গ ও পৃথিবীকে নতুন করে তৈরি করে ফেলবেন)। ঈশ্বরের বাণী থেকে আমি বুঝলাম ফরিশীদের প্রভু যীশুকে প্রতিরোধ ও নিন্দা করার মূল কারণ ছিল তাদের প্রকৃতি ও সত্যকে ঘৃণা করার সারসত্তা এবং ঈশ্বরের বিরোধিতা। তারা ঈশ্বরকে ভয় পায়নি বা আদৌ সত্য সন্ধান করেনি। তারা স্পষ্টত দেখতে পেয়েছিল যে প্রভু যীশুর বাণী ও কাজে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা আছে, কিন্তু তা তাদের ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, তারা প্রভু যীশুকে অস্বীকার করে, বর্জন করে এবং তাঁর নিন্দা করে ও শেষমেশ ক্রুশবিদ্ধ করে। ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজের ক্ষেত্রে আজকের ধর্মীয় দুনিয়ার যাজক ও প্রবীণরাও অটল হয়ে ধর্মীয় ধারণা আঁকড়ে থাকে। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যতই সত্য প্রকাশ করুন বা তাঁর বাণী যতই কর্তৃত্বপূর্ণ হোক, তা যদি তাদের ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হয়, তারা উন্মত্ত হয়ে তার প্রতিরোধ ও নিন্দা করে, এবং তারা আমাদের নিরীক্ষণ বন্ধ করার জন্য গুজব ছড়ায়, আশা করে আমাদের সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করার এবং ঈশ্বরের কণ্ঠ শোনা ও প্রভুকে স্বাগত জানানোয় বাধা দেওয়ার। তারা কী দুষ্ট! এ-ও কি সেই ফরিশীদের প্রভু যীশুর প্রতিরোধ ও নিন্দা করার সারই নয়? তারা ফরিশীদের থেকেও গুরুতরভাবে ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করে! আমি এই সত্যও বুঝলাম যে ধর্মীয় দুনিয়ায় খ্রীষ্টবিরোধীর সার যেহেতু সত্যের প্রতি ঘৃণা, ঈশ্বর যে যুগে বা যেখানেই আবির্ভূত হয়ে কাজ করুন না কেন, তারা সবসময় তাঁকে বর্জন ও প্রতিরোধ করবে। এটি প্রভু যীশুর ভবিষ্যদ্বাণীকে সার্থক করে, “বিদ্যুৎ ঝলকে যেমন আকাশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে, ঠিক তেমনি মানবপুত্রও তাঁর সেই দিনে উদ্ভাসিত হবেন। কিন্তু প্রথমে তাঁকে দুঃখ যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে এবং এ যুগের লোক তাঁকে প্রত্যাখ্যান করবে” (লুক ১৭:২৪-২৫)। এই বিষয়টি আমি বুঝলাম, আমি আর বিভ্রান্ত ছিলাম না, এবং আমি বাড়ি ফিরে আমার মার সাথে যথার্থ আলাপ-আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
যখন আমি ফিরলাম, আমি তার পাঠানো ভিডিওটি দেখিনি শুনে আমার মা খুব রেগে গেল। এবং আমি ব্যাখ্যা করার আগেই, সে বারবার জিজ্ঞাসা করতে লাগল আমি কেন দেখিনি। আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম, “সর্বশক্তিমান ঈশ্বর এত স্পষ্ট করে কথা বলেন, কিন্তু তুমি অন্বেষণ বা অনুসন্ধান কর না। কেন তুমি এই ধর্মবিরোধী ভিডিওগুলো দেখ?” সেই মুহূর্তে সে আরো রেগে গিয়ে আমাকে ভ্রান্ত বিশ্বাস রাখার দোষ দিল। তাকে এতটা রেগে যেতে দেখে আমার খুব দুঃখ হল। মা আমাকে এত জোর দিয়ে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে বাধা দিচ্ছিল কারণ সে যাজকের গুজবে প্রতারিত হয়েছিল। এতে যাজকের প্রতি আমার ঘৃণা আরো বেড়ে গেল। প্রভু যীশু ফরিশীদের অভিশাপ দেওয়ার সময় যা বলেছিলেন তারা ঠিক সেরকম, “ভণ্ড শাস্ত্রী ও ফরিশীর দল, ধিক তোমাদের। তোমরা লোকের সামনে স্বর্গরাজ্যের দরজা বন্ধ করে দাও। নিজেরা তো প্রবেশ করই না, যারা চায় তাদেরও ঢুকতে দাও না” (মথি ২৩:১৩)। তারপর আমি মাকে মানুষের বদলে ঈশ্বরের বাণী শুনতে উৎসাহ দিই, নাহলে সে সহজেই ঈশ্বরের পরিত্রাণ থেকে বঞ্চিত হবে, এবং বলি যে আমি কখনওই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস থেকে বিরত হব না। আমার হাল ছাড়ার ইচ্ছে নেই দেখে মার স্বরে উদ্বেগ ফুটে উঠল, এবং সে আমাকে সমাবেশে যোগ দেওয়া ও সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করা বন্ধ করতে বলল। আমি মার সাথে আলাপ-আলোচনার সবরকম চেষ্টা করলাম, কিন্তু সে আমার কোনো কথাই শুনল না, এবং সে বলল ঈশ্বর যে প্রত্যাবর্তন করেছেন এই সত্য সে স্বীকার করতে পারছিল না। কিছু পরে, সে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগল। তাকে কাঁদতে দেখে আমার খুব কষ্ট হল। বড়ো হওয়ার পর তাকে দুঃখ দেওয়া ও কাঁদতে দেখার চেয়ে ভয়ের আমার কাছে আর কিছুই ছিল না। আমার মায়ের চোখে আমি সবসময়ই বাধ্য সন্তান ছিলাম, কিন্তু এখন আমাকে নিয়ে সে উদ্বিগ্ন ও বিষণ্ণ। আমি ভাবলাম সবচেয়ে ভালো হয় যদি আমি তার কথা শুনে আপাতত সমাবেশে যোগ দেওয়া বন্ধ করি। আবার ভাবলাম, আমি যখন আগে প্রভুকে বিশ্বাস করতাম, আমি সবসময় গির্জার কাজকে নিজের কাজের থেকে বেশী গুরুত্ব দিতাম। এখন আমি ঈশ্বরের নতুন কাজ গ্রহণ করেছি, এখন ঈশ্বরকে গুরুত্ব দেওয়া সবচেয়ে জরুরি। আমি খুব একটা সত্য বুঝতাম না তাই সমাবেশে যোগ দেওয়া বিশেষভাবে জরুরি ছিল। সমাবেশ ছাড়া আমি আমার ভ্রাতা ও ভগিনীদের সাহায্য ও সমর্থন পেতাম না। আমি যদি প্রলুব্ধ বা বিভ্রান্ত হয়ে দাঁড়াতে না পারি আমি কী করব? কিন্তু আমি সমাবেশে যোগ দেওয়া বন্ধ না করলে, মাকে রোজ এত বিষণ্ণ থাকতে দেখাও আমার কাছে অসহনীয় ছিল! আমি ফাঁদে পড়েছিলাম, তাই আমি ঈশ্বরের কাছে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথনির্দেশ চেয়ে প্রার্থনা করি।
সেই সন্ধ্যায় আমার সমাবেশের সময়, আমি এক ভগিনীকে আমার অবস্থার কথা বলি, এবং সে আমাকে ঈশ্বরের বাণীর একটি অংশ পাঠায়। “ঈশ্বর যখন তাঁর কর্ম সম্পাদন করেন, কোনো ব্যক্তির প্রতি যত্নবান হন, এবং সেই ব্যক্তিকে পরীক্ষা করেন, এবং যখন সেই ব্যক্তির প্রতি সমর্থন এবং অনুমোদন প্রদান করেন, শয়তান নিকটে থেকেই অনুসরণ করে, সেই ব্যক্তিকে ঠকানোর এবং তার ক্ষতিসাধনের জন্য সচেষ্ট থাকে। ঈশ্বর যদি সেই ব্যক্তিকে অর্জন করতে চান, তাহলে শয়তানও তখন তার সমস্ত শক্তি দিয়ে ঈশ্বরের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, নানাবিধ কূটচক্রান্তের মাধ্যমে সে ঈশ্বরের কর্মকে প্রলোভন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত তথা ব্যহত ও বিঘ্নিত করে, তার গোপন অভিপ্রায় সার্থক করার উদ্দেশ্যে। কী এই অভিপ্রায়? সে চায় না যে ঈশ্বর কাউকে অর্জন করুন; ঈশ্বর যাদের অর্জন করতে আকাঙ্ক্ষা করেন, সে তাদের ছিনিয়ে নিজের অধিকারে আনতে চায়, সে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাদের নেতৃত্ব দিতে চায় যাতে তারা তারই উপাসনা করে, যাতে মন্দ কর্ম সংঘটনে এবং ঈশ্বরের বিরোধিতায় তারা তার সাথে যুক্ত হয়। এ কি শয়তানের অশুভ অভিপ্রায় নয়?” (বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৪)। সে আলোচনায় বলে, “তোমার সাথে যা হচ্ছে তা বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে তোমার পরিবার তোমায় সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করায় বাধা দিচ্ছে, কিন্তু এর পেছনে আছে শয়তানের ষড়যন্ত্র। এ এক আধ্যাত্মিক যুদ্ধ। অন্তিম সময়ে মানুষকে রক্ষা করতে ঈশ্বর দেহ ধারণ করেন, কিন্তু শয়তান চায় না মানুষ ঈশ্বরের পরিত্রাণ অর্জন করুক, তাই সে চারপাশের লোকজনকে ব্যবহার করে আমাদের বিভ্রান্ত ও প্রতিহত করতে চায়, আমাদের দিয়ে ঈশ্বরকে অস্বীকার ও তাঁর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করায়, এবং অবশেষে আমাদের দখল করে, নিয়ন্ত্রণ করে এবং নরকে টেনে নিয়ে যায়। যেমন এবার তুমি সদ্য ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ গ্রহণ করেছ, এবং শয়তান তোমর মায়ের মাধ্যমে তোমাকে আক্রমণ আর বিরক্ত করছে, যাতে তুমি মায়ের কথা শুনে ঈশ্বরে বিশ্বাস ত্যাগ কর আর ঈশ্বরের পরিত্রাণ হারাও। এ হল শয়তানের অশুভ অভিপ্রায়। আমাদের শয়তানের কৌশল বুঝে দৃঢ় হয়ে দাঁড়াতে ঈশ্বরকে বিশ্বাস করতে হবে। ইয়োবের কথা ভাবো। যখন শয়তান তার স্ত্রীকে ব্যবহার করে তাকে ঈশ্বরকে ত্যাগ করাতে চাইল, ইয়োবে তার ঈশ্বর বিশ্বাস ও আনুগত্যে অটল ছিল, ঈশ্বরের সাক্ষ্যে অটল থেকে শয়তানকে লাঞ্ছিত করেছিল। অবশেষে, ইয়োবের বিশ্বাস ঈশ্বরের অনুমোদন অর্জন করে। আমাদেরও অটল থাকতে হলে বিশ্বাস রাখতে হবে ও শয়তানের কৌশলের ফাঁদে পড়লে চলবে না!” ঈশ্বরের বাণী বিষয়ে আমার ভগিনীর আলাপ-আলোচনা খুবই নাড়া দিয়েছিল। ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ স্বীকার করার পর, আমি প্রতি পদে বহু বাধার সম্মুখীন হই, এবং দেখা গেল এর পেছনে এক আধ্যাত্মিক যুদ্ধ আছে। শয়তান জানত আমি মায়ের প্রতি দুর্বল ও তার কথা শুনি, তাই সে তা ব্যবহার করে আমাকে বারবার বিভ্রান্ত করতে, আমার মধ্যে ধারণা আর হেত্বাভাস ভরে দিতে, গুজব ছড়িয়ে আমাকে বিভ্রান্ত করতে, এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে অনুসরণ করা বন্ধ করায় বাধ্য করতে। শয়তানের অভিসন্ধি সত্যিই ছলনাময় ও অশুভ। আমি নিজেকে শয়তানের দ্বারা প্রতারিত হতে দিতে পারি না। আমি ঠিক করি মা যতই বাধা দিক আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করে যাব, এবং আরও সত্য বুঝতে ভ্রাতা ও ভগিনীদের সঙ্গে সমাবেশে যোগ দেব।
পরবর্তী কিছু দিন আমার মা বিষণ্ণ হয়ে থাকে ও প্রতিদিন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে এবং আমাকে যখন সে অনলাইন সমাবেশে দেখে, রূঢ় আচরণ করে। মাকে এরকম দেখে, আমি একটু শৃঙ্খলিত বোধ করি, কিন্তু আমি জানতাম আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আপোস করতে পারি না। আমি ঈশ্বরের বাণী স্মরণ করলাম, “নিজের ভেতরে তোমাকে আমার সাহসের অধিকারী হতে হবে, এবং যে আত্মীয়পরিজনেরা বিশ্বাসী নয় তাদের মুখোমুখি হওয়ার সময় তোমাকে নীতিসমূহ মেনে চলতে হবে। তবে যাইহোক, আমার জন্যই, অন্ধকারের কোনো শক্তির কাছে তোমার নতিস্বীকার করলে একেবারেই চলবে না। নিখুঁত পথে চলার জন্য আমার প্রজ্ঞার উপর নির্ভর করো; শয়তানের কোনো চক্রান্তকে নিয়ন্ত্রণ নিতে দিয়ো না” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সূচনাকালে খ্রীষ্টের বাক্য, অধ্যায় ১০)। ঈশ্বরের বাণী আমার মন অনেকটাই পরিষ্কার করে দিল। আমি বুঝলাম শয়তানের ষড়যন্ত্র আবার শুরু হয়েছে। শয়তান দেখেছে যে আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস ছাড়িনি, তাই সে এখনও মাকে ব্যবহার করে আমায় আক্রমণ ও বিভ্রান্ত করছে, যাতে সমাবেশে যথার্থভাবে মন দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব হয়। শয়তানের প্রলোভন অতিক্রম করতে আমায় ঈশ্বরে বিশ্বাস রেখে শয়তানকে সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত করতে হত। তারপর, আমি প্রতিদিন অতিসক্রিয় হয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলি, তাকে স্বাভাবিক চিন্তা ও যত্নের সঙ্গে দেখি, কিন্তু সমাবেশ ও ঈশ্বরের বাণী পাঠের সময় তাকে এড়িয়ে যাই। ধীরে ধীরে, আমার মা আমার ঈশ্বর বিশ্বাসে নাক গলানো বন্ধ করে দেয়, এবং আমাকে অনলাইন সমাবেশে দেখলেও কিছু বলত না। আমি শয়তানের প্রলোভন কাটিয়ে ওঠায় ঈশ্বরের পথপ্রদর্শনের জন্য তাঁর কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।
কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে, কিছু সময় পরে, আমর বাবা ও ভাই জানতে পারল আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, এবং তারা আমাকে প্রতিহত করে ধর্মে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। একদিন, আমার বাবা খুব রাগ করে অভিযোগ করে, “কেন তুমি এত গোঁয়ার? তোমার ঈশ্বর-বিশ্বাস নিয়ে মা চিন্তিত এবং দুঃখিত। কী করে তুমি নিজেকে সহ্য করছ? আমাদের গোটা পরিবার তোমার সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস নিয়ে ভিন্নমত। তুমি মা-বাবাকে খুশি করার জন্য কি তা ছেড়ে দিতে পার না?” আমার পরিবারের ভুল বোঝা ও দোষারোপের সম্মুখীন হয়ে, নিজেকে অবিচারের শিকার বলে মনে হল, এবং আমি অশ্রুসংবরণ করতে পারলাম না। আমি সত্যিই তাদের সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস থেকে আমার প্রাপ্তি সম্পর্কে বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা প্রতি কথায় আমায় দোষারোপ ও তিরস্কার করত। আমি একটু দুর্বল বোধ করলাম। আমি নিঃশব্দে ঈশ্বরের কাছে কাঁদতে কাঁদতে অটল থাকার জন্য বিশ্বাস প্রার্থনা করলাম। প্রার্থনার পর আমার প্রভু যীশু কী বলেছিলেন মনে পড়ল, “যে তার পিতা বা মাতাকে আমার চেয়ে বেশী ভালোবাসে সে আমার শিষ্য হওয়ার যোগ্য নয়” (মথি ১০:৩৭)। “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য যারা ঘর-বাড়ি, স্ত্রী-পুত্র, মা-বাবা, ভাইকে ত্যাগ করেছে, তারা সকলেই ইহজীবনে তার বহুগুণ এবং আগামী যুগে অনন্ত জীবন লাভ করবে” (লুক ১৮:২৯-৩০)। এখন আমার পরিবার আমায় ঈশ্বর-বিশ্বাস থেকে বিরত করতে চাইছিল। যদি আমি ঈশ্বরকে অনুসরণ করতে চাইতাম আমায় নির্বাচন করতে হত। আমি আমার পরিবারের বাধা ও বুঝতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে ঈশ্বরকে অনুসরণ করা বন্ধ করতে পারতাম না। আমি পিতরের কথা ভাবলাম। সে যখন প্রভু যীশুকে অনুসরণ করে, তাকেও পিতা-মাতার নিপীড়ন ও বাধা সইতে হয়, তবু সে নির্দ্বিধায় ঈশ্বরের অনুগমন করতে মনস্থির করে। সে সব কিছুর থেকে ঈশ্বরকে বেশি ভালোবেসেছিল আর আমি জানতাম তাকেই অনুসরণ করা উচিত। এ কথা ভেবে আমি একটু শান্ত হলাম। আমি তাদের সঙ্গে ভালো করে কথা বলতে চাইলাম যাতে তারা জানতে পারে আমি যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করি তিনি প্রত্যাবর্তিত প্রভু যীশু, কিন্তু আমার বাবা ও ভাই তা করতে দিল না, জোর দিতে লাগল যাতে আমি গির্জায় ফিরে প্রভুকে বিশ্বাস করি। আমার অসহায় লাগল। কীভাবে আমার পরিবার বারবার ঈশ্বর-বিশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করছে তা ভেবে, আমার মনে পড়ল আশৈশব আমি আমার বাবা-মা ও ভাইয়ের আদর-যত্ন পেয়েছি। এখন তারা আমাকে বকছে ও আটকে রাখছে, এটা অসহনীয় ছিল। কেন আমার বিশ্বাসের অনুশীলন এত কঠিন ছিল? আমি সত্যিই জানতাম না আমাকে আটকাতে তারা এরপর কী করবে। আমার কী করা উচিত? হঠাৎ আমার ঈশ্বরের বাণীর একটি অংশ মনে পড়ল। “কাজের এই পর্যায়ে আমাদের থেকে পরম বিশ্বাস এবং ভালোবাসাই কাম্য। সামান্য অসাবধানতাবশত আমরা হোঁচট খেতে পারি, কারণ কাজের এই পর্যায়টি আগের অন্যান্য পর্যায়ের থেকে আলাদা: ঈশ্বর যা নিখুঁত করে তুলছেন তা হল মানবজাতির বিশ্বাস, যা একইসাথে অদৃশ্য ও অধরা। ঈশ্বর বাক্যকে বিশ্বাস, ভালোবাসা এবং জীবনে রূপান্তরিত করেন। লোকেদের অবশ্যই এমন এক পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে যেখানে শত শত পরিমার্জনা সহ্য করা সত্ত্বেও তারা ইয়োবের চেয়েও বড় বিশ্বাসের অধিকারী হয়। ঈশ্বরকে কখনো ত্যাগ না করেই তাদের অবিশ্বাস্য যন্ত্রণা এবং সর্বপ্রকারের অত্যাচার সহ্য করতে হবে। যখন তারা আমৃত্যু অনুগত থাকবে, এবং ঈশ্বরের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রাখবে, তখনই ঈশ্বরের কাজের এই পর্যায়টি সম্পূর্ণ হবে” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, পথ … (৮))। ঈশ্বরের বাণী আমাকে বুঝতে সাহায্য করল। আমি পরিবারের দ্বারা প্রতিহত হচ্ছিলাম, কিন্তু ঈশ্বর আমাকে এই অবস্থায় ফেলেছিলেন যাতে আমি সত্য ও বোধ অর্জন করি, ও আমার বিশ্বাস ত্রুটিমুক্ত হয়। বারবার আমার পরিবার ঈশ্বরে বিশ্বাসে বাধা দেয়, এবং বিষণ্ণ ও দুর্বল বোধ করা সত্ত্বেও, ঈশ্বর আমাকে ত্যাগ করেননি, এবং তাঁর বাণীর দ্বারা আমায় নেতৃত্ব ও পথনির্দেশ দিচ্ছিলেন, যা আমাকে পরিবারের বিরুদ্ধাচরণ ও বাধা সত্ত্বেও অটল থাকতে দিচ্ছিল। এর মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর, আমি কিছু সত্য বুঝলাম, আমি ধর্মীয় যাজকের ঈশ্বরকে প্রতিরোধ ও শয়তানের অশুভ অভিপ্রায়ের সার বুঝলাম, আর আমার ঈশ্বরে বিশ্বাস বাড়ল। ঈশ্বরের কাজ কত বিচক্ষণ ও বাস্তবসম্মত। ভবিষ্যতে আমি যে দুর্দশারই মুখোমুখি হই না কেন, আমার চিন্তিত বা ভীত হওয়ার প্রয়োজন থাকবে না। আমি বিশ্বাস করলাম যে ঈশ্বরে প্রকৃত বিশ্বাস থাকলে ঈশ্বর আমাকে নেতৃত্ব ও মার্গদর্শন দেবেন। এ কথা ভেবে আমার ঈশ্বরকে অনুসরণ করার ইচ্ছা আরো বেড়ে গেল।
একদিন আমার বাবা জোরে দরজায় ধাক্কা দিল, এবং আমি দরজা খুলতেই, মা কেঁদে বলল, “সোনা, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করা ছাড়ো। তুমি যাজকের কথা শোনো, গির্জায় প্রভুকে বিশ্বাস করা কি একই ব্যাপার নয়?” তাকে এভাবে দেখে আমার একই সঙ্গে রাগ ও দুঃখ হল। আমার মা, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রকাশিত সব সত্যের সম্মুখীন হয়ে, অনুসন্ধান বা স্বীকার করার কোনো মনোভাব দেখায়নি। সে পুরোপুরি যাজকের কথা শুনেছে, এবং যাজকের কথাই সত্য বলে স্বীকার করেছে। সে অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের পরিত্রাণ প্রত্যাখ্যান করেছিল, এবং আমাকে বিচলিত ও ঈশ্বর-বিশ্বাস থেকে প্রতিহত করতে যথাসম্ভব চেষ্টা করেছে। আমি দেখলাম মা সত্যিই ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না, মানুষকে অনুসরণ করে। অন্তিম সময়ে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের দ্বারা ব্যক্ত সত্য সবরকম মানুষের স্বরূপ উন্মোচন করে। গম ও ভূষি আলাদা করা হয়, ঠিক প্রকৃত ও ভণ্ড বিশ্বাসীদের মতো। আমরা একই পরিবারের হলেও, সত্যের প্রতি আমাদের ভিন্ন মনোভাবের কারণে, আমরা ভিন্ন পথ নিয়েছি। যদি আমার মা এখনও অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের কাজ স্বীকার করতে অরাজি হয়, তাহলে আমরা পৃথক পথের পথিক। এবার আমাকে আবেগ বর্জন করে দৃঢ় হতেই হত, এবং আমার সাক্ষ্যে অটল থাকতে ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করতে হত। তাই, আমি নিজেকে শান্ত করে মাকে বলি, “বিশ্বাসী হিসেবে আমরা কি প্রভুর ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকি না? এখন প্রভু ফিরেছেন, এবং ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের বিচারের কাজ শুরু হয়েছে, আশা করি তোমরা সবসময় যাজকের কথা না শুনে মন দিয়ে অনুসন্ধান করবে। আমরা যদি অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের পরিত্রাণ হারাই, আমরা পরিত্রাণের সুয়োগ সম্পূর্ণরূপে হারাব।” আমার মা এক মুহূর্ত চুপ করে ছিল, কিন্তু বাবা রেগে গিয়ে বলল, “আমার তোমার কাছে একটাই প্রশ্ন আছে। তুমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করা কি বন্ধ করবে?” তার দিকে তাকিয়ে আমি দৃঢ়ভাবে উত্তর দিলাম, “না।” এটা বলে আমি গভীর শান্তি ও নিরাপত্তা অনুভব করলাম। আমি অবশেষে একটা দৃঢ় অবস্থান জানালাম। বাবা আরও রেগে গিয়ে গম্ভীরভাবে বলল, “তোমার যা বয়স তাতে আমার আর তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। তুমি তোমার পথ বেছে নিতে পার। নিশ্চিত হয়ে নাও যাতে পরে আফশোস না হয়।” বাবার কথায় আমি বুঝলাম আমি বড়ো হয়োছি, এবং এখন আমার নিজের জীবনের দায়িত্ব নেওয়া উচিত। এখন, আমি অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের কাজ স্বীকার করেছি এবং তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেছি তাই আমার নির্দ্বিধায় আমার পথে চলা উচিত।
তারপর, আমার বাবা-মা আমার ঈশ্বর-বিশ্বাসে নাক গলানো বন্ধ করে। আমি পরিবারের বাধা থেকে কিছু বোধ অর্জন করি, এবং কিছু সত্য বুঝতে পারি। আমি সত্যিই বোধ করি ঈশ্বর সর্বশক্তিমান ও জ্ঞানী। আমি দেখলাম শয়তান ঘৃণ্য ও অশুভ, এবং প্রকৃত অর্থেই মনে করি ঈশ্বরই আমার স্তম্ভ। এবার আমি প্রকৃত অর্থে সত্যসন্ধান করে শেষ অবধি ঈশ্বরকে অনুসরণ করতে চাই!
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।