বোঝার ভান করে আমার করুণ দশা হয়েছিল

02-08-2023

আমি গির্জার জন্য ডিজাইনের কাজ করতাম। সময়ের সাথে সাথে, সবরকম ডিজাইন আর ছবি বানানোয় দক্ষ হয়ে উঠি, দলনেতা হিসাবে নির্বাচিত হই। ভেবেছিলাম: “আমাকে দলনেতা করার কারণ কাজে আমার কিছু দক্ষতা আর প্রতিভা আছে, আমি অন্য ব্রাদার-সিস্টারদের চেয়ে ভালো এবং এই কাজের দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্য। এই কর্তব্যকে লালন করতে হবে, করতে হবে কঠোর পরিশ্রম আর সত্যের নীতির সন্ধান, দিতে হবে নিজের সেরাটা। ভুল করে গির্জার কাজকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। সবাইকে দেখাতে হবে আমি দলনেতা হওয়ার যোগ্য।”

একদিন গির্জার নেতা এসে বললেন: “একটি স্তোত্রের ভিডিওর জন্য গির্জার একটা ব্যাকগ্রাউন্ড ছবি লাগবে। আগের ছবিগুলোর তুলনায় এটা বানানো কঠিন হবে। যেহেতু অন্যরা সবাই এখন অন্যান্য ডিজাইন বানানোয় ব্যস্ত, আর এটার জন্য অন্য কাউকে আনতে গেলে কাজে দেরি হবে, আমরা তোমায় কাজটা দিতে চাই। তুমি কি করতে পারবে?” নেতার কথা শুনে ভাবলাম: “এত জটিল ব্যাকগ্রাউন্ডের কাজ আগে কখনও করিনি, নিশ্চিত নই সুফল পাব কি না।” কিন্তু তারপর ভাবি, “নেতা আর ব্রাদার-সিস্টাররা এই প্রকল্পের দিকে নজর রাখবেন—দুই বছর হল এই দায়িত্ব পালন করছি, বেশ কিছু কঠিন সমস্যা আর কাজ সামলেছি, ভালোই দক্ষতা অর্জন করেছি। হতে পারে এই প্রথম এত কঠিন ব্যাকগ্রাউন্ডের কাজ করব, করতে গিয়ে নির্ঘাত কিছু সমস্যা দেখা দেবে, কিন্তু এমন কাজও করতে না পারলে অন্যরা আমায় নিয়ে কী ভাববে? যদি করতে না পারি, তারা কি ভাববে আমার কোনো প্রতিভা নেই, কোনো উন্নতি করিনি? অন্য ব্রাদার-সিস্টাররা যে-যার কাজে ব্যস্ত, এখন যদি অন্য কাউকে আমার সাথে কাজ করার জন্য পাঠাতে হয়, সবাই ভাববেই যে আমি বড় দায়িত্ব সামলাতে পারি না। আমায় ভরসা করা যায় না, আমি নেতা হওয়ার যোগ্য নই। তা হতে দিতে পারি না! যা-ই হোক না কেন, এই প্রকল্প আমায় নিতেই হবে। কাজটা ঠিকঠাক করার জন্য যা জানি না তা শিখে নেব, সবাইকে দেখিয়ে দেব আমিও কঠিন কাজ করতে পারি।” মনস্থির করে, প্রত্যয়ের সাথে বলি: “করতে পারব, সমস্যা নেই। এটা অন্য ব্যাকগ্রাউন্ডের তুলনায় অল্প একটুই কঠিন আর শ্রমসাধ্য। একটু বেশি চেষ্টা করলেই কাজের মান ভালো হবে।” আমার আত্মবিশ্বাস দেখে, নেতা মাথা নাড়েন: “এই কাজের জন্য সময় খুব কম ডিজাইনে স্তোত্রের অর্থ আর ভাবটাও ফুটিয়ে তুলতে হবে। ডিজাইনটা করতে গিয়ে কোনো সমস্যা হলেই তক্ষুনি আমায় জানিও।” তত্ত্বাবধায়ক আরো বলেন: “ঠিকঠাক হচ্ছে না মনে হলে আমাদের জানিও, তোমায় সাহায্যের জন্য কাউকে পাঠিয়ে দেব।” সায় দিয়ে মাথা নাড়লাম, উত্তেজনা ও ভয় দুটোই হচ্ছিল: উত্তেজনা হচ্ছিল কারণ এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ডিজাইনের কাজ করব, ঠিকমতো করতে পারলে অনেক সম্মান পাবো, কিন্তু এত কঠিন কাজ ঠিকমতো করতে পারব কি না, তা ভেবে দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। নিশ্চিত ছিলাম না কাজটা তাদের চাহিদামাফিক গুণমানে পৌঁছাবে কি না! কিন্তু যা-ই হোক, সবাইকে নিরাশ করতে পারি না। তখনই গবেষণা শুরু করতে হতো, নতুন নতুন জিনিস চেষ্টা করতে হতো, যাতে সেই বিরল সুযোগটার সদ্ব্যবহার করা যায়। ভেবেছিলাম, যত কঠিনই হোক, কাজটা করবই।

ডিজাইনটা করতে গিয়ে, মনে হল সময় উড়ে যাচ্ছে, নানান সমস্যাও হচ্ছে সমানে। টের পাচ্ছিলাম, চাপ বাড়ছে। নেতা ও তত্ত্বাবধায়ক প্রায়ই কাজের অগ্রগতি আর কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না তা জানতে চাইতেন। এত ত্রস্ত ছিলাম যে তাদের কেবল বলছিলাম সবকিছু “ভালোভাবে চলছে”, আসলে খুবই দুশ্চিন্তা হচ্ছিল: তখনো ডিজাইনে কিছু জরুরি বিষয় ফুটিয়ে তোলা আর ঘষামাজা করা বাকি ছিল। শেষে তা কী রূপ নেবে, বস্তুত তার ধারণামাত্র ছিল না। ভালো না হলে, সবাই আমার দক্ষতার বাস্তব মান দেখতে পাবে, বলবে, আমার সামর্থ্য নেই, শুধুই নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করি। ভাবলাম, যেহেতু কথা দিয়েছি যে এটা আমি করব, তাই সেই কথা ফিরিয়ে নেওয়ার অর্থ হবে নিজের পায়ে কুড়ুল মারা। তাই দাঁতে দাঁত চেপে এটার একটা সমাধান বের করতে হতো। তখনো একটা কাঠামোও দাঁড় করাতে পারিনি, মাথা ঘামাতেই অনেকটা সময় গেল। একবার নেতা আমার কাজ দেখতে স্টুডিওতে আসেন, তাই আমি ইচ্ছা করে দ্রুত একটি সহজ অংশ এঁকে ফেলি, যাতে সে মনে করে সবকিছু আমার নিয়ন্ত্রণে আছে। বাস্তবে, এতই নার্ভাস ছিলাম যে হাতের তালু ঘামছিল। নেতা চলে যেতেই, আমি ফের কঠিন অংশটা নিয়ে মাথা খাটানো শুরু করি। নেতা আমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন, সেই ভয়ে সমস্যা স্বীকার করতে চাইনি। ভাবলাম এত বড়াই করে পিছিয়ে আসাটা লজ্জার লজ্জার হবে। সেই কঠিন পরিস্থিতিতেও দাঁতে দাঁত চেপে কাজটা করতেই হত, কিন্তু কাজের গতি ধীর হওয়ায় মানসিকভাবে ক্লান্ত করে পড়ি। জমা দেওয়ার আগের রাতটা জেগে ডিজাইনটা শেষ করি। নেতা ও তত্ত্বাবধায়ক দেখে বললেন, ভালো হয়েছে, তবে একটু রদবদল দরকার। তখনও, দায়িত্ব পালন করার আনন্দটা পেলাম না—হারিয়ে গেছি মনে হচ্ছিল, আনন্দ হচ্ছিল না।

পরে, নিষ্ঠাপালনকালে, এক ছত্র ঈশ্বরের বাক্য পড়ি: “যদি জীবনে তুমি প্রায়ই অভিযোগ প্রকাশের বোধ অনুভব করো, যদি তোমার হৃদয় বিশ্রাম খুঁজে না পায়, যদি তোমার শান্তি বা আনন্দ না থাকে, এবং সমস্তরকম বিষয়ে প্রায়ই তোমাকে ঘিরে থাকে দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ, তবে তা থেকে কী প্রকাশিত হয়? শুধু এই, যে তুমি সত্যের অনুশীলন করো না, ঈশ্বরের সাক্ষ্যপ্রদানে তুমি অবিচল নও। তুমি যখন শয়তানের স্বভাবের মাঝে জীবনযাপন করো, তখন প্রায়শই সত্যের অনুশীলনে ব্যর্থ হতে তুমি বাধ্য, সত্যের প্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শনে বাধ্য, স্বার্থপর ও নীচ হতে বাধ্য; তুমি বজায় রাখো শুধু তোমার ভাবমূর্তিকে, তোমার সুনাম ও মর্যাদাকে, আর তোমার স্বার্থকে। সর্বদা নিজের জন্য বেঁচে থাকা তোমার জন্য বয়ে আনে প্রভূত যন্ত্রণা। এত বেশি স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষা, বন্ধন, শৃঙ্খল, সন্দেহ, ও বিরক্তি তোমার রয়েছে, যে ন্যূনতম শান্তি বা আনন্দও তোমার নেই। কলুষিত দেহের ইচ্ছার স্বার্থে জীবনযাপন করার অর্থ হল অত্যধিক কষ্টভোগ(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, দায়িত্ব সম্পাদনের মাধ্যমেই জীবনে প্রবেশ আরম্ভ হয়)। ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে ভেবে বুঝি, ডিজাইনটা বানানোর পর আমার ক্লান্তি আর মনখারাপের কারণ মর্যাদার প্রতি আমার উচ্চাকাঙ্ক্ষা। নিজের কাজের ত্রুটিগুলি ঢাকতে, ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলাম, ভান করতাম। পরে, আরেক ছত্র ঈশ্বরের বাক্য পড়ি যা আমায় নিজের ভ্রষ্ট স্বভাব আরও ভালো করে বুঝতে সাহায্য করে। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “মানুষ নিজেই সৃষ্ট বস্তু। সৃষ্ট বস্তু কি সর্বশক্তিমত্তা অর্জন করতে পারে? তারা কি নিখুঁত ও ত্রুটিমুক্ত হয়ে উঠতে পারে? তারা কি পারে সকল বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করতে, সবকিছু উপলব্ধি করতে, সমস্তকিছুর স্বরূপ দেখতে, আর সমস্ত বিষয়ে সক্ষম হতে? পারে না। বরং, মানুষের মধ্যে রয়েছে কলুষিত স্বভাব, আর রয়েছে এক প্রাণঘাতী দুর্বলতা: যে মুহূর্তে তারা কোনো একটা দক্ষতা বা পেশাদারি যোগ্যতা অর্জন করে ফেলে, মানুষ মনে করে যে তারা সক্ষম, তারা মর্যাদা ও যোগ্যতাসম্পন্ন, এবং তারা পেশাদার। তারা যতই তুচ্ছাতিতুচ্ছ হোক, তারা শুধুই চায় নিজেদের কোনো প্রখ্যাত বা সুউচ্চ ব্যক্তিত্ব রূপে উপস্থাপিত করতে, নিজেদের ছোটখাটো কোনও খ্যাতিমান মানুষে পরিণত করতে, আর মানুষকে এরকম বিশ্বাস করাতে যে তারা নিখুঁত ও ত্রুটিহীন, যে তাদের মধ্যে কোনোরকম কোনও দোষই নেই; অন্যের চোখে তারা হয়ে উঠতে চায় বিখ্যাত, ক্ষমতাশালী, কোনো মহান ব্যক্তিত্ব, এবং হতে চায় শক্তিমান, যেকোনো কিছুতে সমর্থ, যাদের পক্ষে কিছুই অসাধ্য নয়। তারা মনে করে যে যদি তারা অন্যের সাহায্য চায়, তাহলে তারা অক্ষম, দুর্বল ও নিকৃষ্ট প্রতিপন্ন হবে, আর মানুষ তাদের নিচু নজরে দেখবে। এই কারণে, তারা সবসময়ই নিজেদের সামনে একটা মুখোশের আড়াল রেখে চলে। কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের, যখন কিছু করতে বলা হয়, তারা বলে যে তারা জানে কীভাবে তা করতে হবে, কিন্তু আসলে তা জানে না। পরে, গোপনে তারা সেই বিষয়টায় খোঁজখবর নিয়ে সেটা করার উপায় শেখার চেষ্টা করে, কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে তা নিয়ে অধ্যয়ন করার পরেও তারা বুঝতে পারে না কীভাবে তা করণীয়। যখন তাদের জিজ্ঞাসা করা হয় সেই কাজ তারা কবে করে উঠতে পারবে, তারা বলে, ‘শিগগির, শিগগির!’ কিন্তু নিজেদের অন্তরে তারা চিন্তা করে, ‘আমি এখনও কাজটা করে উঠতে পারিনি, সে বিষয়ে কোনো ধারণাই নেই, কী করবো জানি না। ধরে পড়ে গেলে চলবে না, মুখোশটা পড়েই চলতে হবে, মানুষকে কিছুতেই আমার দোষত্রুটি আর অবহেলা দেখতে দেওয়া চলবে না, তাদের আমায় হেয় করতে দেওয়া চলবে না!’ এ কেমন সমস্যা? এ হল যেকোনো মূল্যে নিজের মুখরক্ষা করার চেষ্টায় নরকে জীবনযাপনের সামিল। এ কী রকম স্বভাব? এরকম মানুষদের ঔদ্ধত্য সীমাহীন, তারা যাবতীয় বোধ হারিয়েছে! তারা অন্য কারোর মতো হতে চায় না, সাধারণ, স্বাভাবিক মানুষ হতে চায় না, বরং হয়ে উঠতে চায় অতিমানব, কোনও আকাশছোঁয়া ব্যক্তিত্ব, কোনও অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। এ এক বিরাট সমস্যা! তারা তাদের স্বাভাবিক মানবতাসুলভ দুর্বলতা, দোষত্রুটি, অজ্ঞতা, মূর্খামি, বোধের অভাব, এগুলোকে মোড়কে মুড়ে রাখে, অন্যকে দেখতে দেয় না, আর তারপর ছদ্মবেশ ধারণ করে চলে। … তোমরা কী বলো? এরা কি কল্পনার আকাশে বিচরণশীল হয়েই জীবনযাপন করছে না? এরা কি শুধুই স্বপ্ন দেখছে না? এরা নিজেরাই নিজেদেরকে চেনে না, এ-ও জানে না যে কীভাবে স্বাভাবিক মানবতাকে জীবনে যাপন করতে হয়। কখনোই তারা বাস্তববাদী মানুষের মতো আচরণ করেনি। তুমি যদি আকাশকুসুম কল্পনায়, উদাসীনভাবে, দিন কাটাও, বাস্তবের জমিতে পা রেখে কিছুই না করো, শুধুই নিজের কল্পনার জগতে থাকো, তাহলে তা সমস্যার বিষয়। জীবনে যে পথ তুমি বেছে নিয়েছ তা সঠিক নয়(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, ঈশ্বরবিশ্বাসের সঠিক পথে চলতে হলে যে পাঁচটি শর্তকে পূরণ করতেই হবে)। ঈশ্বরের বাক্য আমার অবস্থা অনাবৃত করে। আমি ভাবতাম, যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে ডিজাইনের কাজ করছি, কিছু দক্ষতা অর্জন করেছি দলনেতা নির্বাচিত হয়েছি, আমি সদক্ষ, বিরল প্রতিভাধর। নিজেকে নিয়ে এভাবে ভাবতাম বলে অন্যরা কী ভাবছে তাতে বিশেষ মনোযোগ দিতাম, ভয় পেতাম, তারা আমার সীমাবদ্ধতা ধরে ফেলবে, বলবে আমি এই কাজে অনুপযুক্ত। বিশেষ করে এই ব্যাকগ্রাউন্ড ছবিটার ব্যাপারে, আমি আগে এত কঠিন কিছু করিনি, নিশ্চিত ছিলাম না সফল হব কিনা, তবু নামযশ রক্ষার্থে, নিজের তত্ত্বাবধায়ক ও নেতার আস্থা অর্জন করতে, ভান করেছিলাম যে সব নিয়ন্ত্রণে আছে। যখন সমস্যা দেখা দিয়েছিল, কাজ এগোচ্ছিল না, কারো সাহায্য না চেয়ে নিজে নিজে সমাধানে করতে যুঝেছি। নেতা কাজের অগ্রগতি আর কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে, যদিও হাবুডুবু খাচ্ছিলাম, তবু তাকে সমস্যার কথা বলিনি, বরং তাকে মিথ্যা বলে প্রতারণা করেছি, এমনকি এমন ভান করেছি যেন আমি খুবই দক্ষ যাতে তিনি মনে করেন আমি কাজটা পারব। নিজের খামতি লুকাতে ছলচাতুরি করেছি। সবসময় এমন ভান করতাম যেন আমি এক প্রতিভাবান কর্মী যাতে অন্যরা মনে করে আমি সব করতে পারি, সবই জানি। বুঝলাম, আমার খুব গর্ব আর অহংকার। ঈশ্বরের বাক্যে আছে, “মানুষ নিজেই সৃষ্ট বস্তু। সৃষ্ট বস্তু কি সর্বশক্তিমত্তা অর্জন করতে পারে? তারা কি নিখুঁত ও ত্রুটিমুক্ত হয়ে উঠতে পারে? তারা কি পারে সকল বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করতে, সবকিছু উপলব্ধি করতে, সমস্তকিছুর স্বরূপ দেখতে, আর সমস্ত বিষয়ে সক্ষম হতে? পারে না।” আসলে, কোনও ভ্রষ্ট ব্যক্তি কীভাবে নিখুঁত ও সব বিষয়ে দক্ষ হতে পারে? কাজের কিছু কিছু বুঝতে না পারা বা কিছু জিনিস করতে না পারাটা স্বাভাবিক, কিন্তু নিজের খামতিগুলোর প্রতি আমার সেই মনোভাব ছিল না। বরং, নিজেকে এক প্রতিভাধর কর্মী হিসেবে তুলে ধরতে চাইতাম। নিছক কোনো সাধারণ সৃষ্ট সত্তা হিসেবে গণ্য হতে চাইনি। হতে চেয়েছিলাম নিখুঁত ও ত্রুটিহীন। এত উদ্ধত ছিলাম যে হেতুবোধ হারিয়ে ফেলি। কারণ কাজের ক্ষেত্রে সবসময় ভান করতাম, পাছে অন্যরা আমার স্বরূপ দেখে ফেলে, কিছু বুঝতে না পারলে সাহায্য চাইতাম না, তাই ডিজাইনের কাজটা দ্রুত শেষ করার দরকার সত্ত্বেও তা দেরিতে এগোয়, আমি মানসিকভাবে ভাবে ভেঙে পড়ি। বুঝতে পেরেছিলাম ত্রুটিহীন হওয়ার চেষ্টা করাটা বোকামি। নিজের খামতিগুলোর মুখোমুখি না হয়ে সবসময় সেগুলো লুকাতাম। ফলস্বরূপ, কেবল নিজের কাজেই ক্লান্ত ও উদাসীন ছিলাম না, গির্জার কাজেও বিলম্ব ঘটিয়েছিলাম। তা বুঝে, ঈশ্বরকে প্রার্থনা করি: “হে ঈশ্বর! আমায় পথ দেখানোর জন্য ধন্যবাদ, যার কারণে বুঝতে পেরেছি আমার সবসময় ভান করা কতটা শোচনীয়। ভবিষ্যতে নিজের ভুল দৃষ্টিভঙ্গি শোধরাতে আমি প্রস্তুত, নিজের খামতিগুলোর প্রতি সঠিক মনোভাব অবলম্বন করব, না বুঝলে প্রশ্ন করব, ভান করা থেকে বিরত থাকব, ব্যবহারিক ও সৎভাবে দায়িত্ব পালন করব।”

পরে, ঈশ্বরের আরও বাক্য পড়ি: “যেকোনো সমস্যাই আসুক না কেন, তোমাকে তা সমাধানের জন্য সত্যের অন্বেষণ করতে হবে, সে সমস্যা যেমনই হোক, অপরের কাছে ছদ্মবেশ ধারণ করবে না বা নিজের আসল রূপ গোপন করবে না। তোমার বিচ্যুতি, ঘাটতি, ত্রুটি, ভ্রষ্ট স্বভাব—সেই সবকিছুর বিষয়ে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত হও, এবং সেই সমস্ত বিষয়েই আলোচনা করো। সেগুলো ভিতরে রেখে দিও না। জীবনে প্রবেশ করার প্রথম পদক্ষেপ হল কীভাবে নিজেকে উন্মুক্ত করা যায় সেটা শেখা, এবং এটাই প্রথম বাধা যেটাকে অতিক্রম করা সবচেয়ে কঠিন। একবার তুমি এটাকে অতিক্রম করে নিলে, সত্যে প্রবেশ করা সহজ। এই পদক্ষেপ গ্রহণের তাৎপর্য কী? এর অর্থ হল, তুমি নিজের হৃদয় উন্মুক্ত করে তোমার যা আছে সেই সমস্ত কিছু দেখাচ্ছ, ভালো বা মন্দ, ইতিবাচক বা নেতিবাচক; অন্যদের এবং ঈশ্বরের দেখার জন্য নিজেকে অনাবৃত করে দিচ্ছ; ঈশ্বরের কাছ থেকে কিছুই গোপন করছ না, কিছুই আড়াল রাখছ না, কোনো ছদ্মরূপ গ্রহণ করছ না, প্রতারণা ও ছলনা মুক্ত রয়েছ, এবং অন্যদের সাথেও একইভাবে উন্মুক্ত ও সৎ রয়েছ। এইভাবেই, তুমি আলোতে বাস করবে, এবং শুধুমাত্র ঈশ্বরই যে তোমায় পরীক্ষা করবেন তা নয়, বরং অন্যরাও দেখতে পাবে যে তুমি নীতি ও স্বচ্ছতার সাথে কাজ করো। তোমার সুনাম, ভাবমূর্তি এবং মর্যাদা রক্ষার জন্য তোমার কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই, আবার তেমনই তোমার ভুল ঢাকা দেওয়ার বা তা গোপন করারও কোনো প্রয়োজন নেই। তোমার এই সমস্ত অর্থহীন প্রচেষ্টায় যুক্ত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তুমি যদি এইসব বিষয় ছেড়ে দিতে পারো, তাহলে তুমি খুবই স্বস্তি পাবে, কোনো শৃঙ্খল বা যন্ত্রণা ছাড়াই বাঁচতে পারবে, এবং তুমি সম্পূর্ণভাবে আলোতেই জীবনযাপন করতে পারবে(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। বুঝতে পারলাম ভালোভাবে কাজ করে ঈশ্বরের প্রশংসা পাওয়ার মূল হল সত্যের অন্বেষণ। কর্তব্যে যে ভ্রষ্ট স্বভাবই প্রদর্শন করি বা যে সমস্যাই থাকুক না কেন, ঈশ্বরের কছে প্রার্থনায় আমায় মন খুলে নির্দেশনা চাইতে হবে, নামযশের বাসনা ত্যাগ করে, ব্রাদার-সিস্টারদের সাথে আলোচনা করে, ভান করা ও ছদ্মবেশ ধারণ থেকে বিরত থেকে, সবার কাছে নিজের স্বরূপ দেখাতে হবে, কিছু না পারলে তা স্বীকার করে অন্যদের সাথে সত্যের সন্ধান করতে হবে। এইভাবে দায়িত্ব পালন করলে ক্লান্তি ও বাধা কম আসবে—হবে আনন্দময়। এটা বুঝতে পেরে, ব্রাদার-সিস্টারদের সাথে ডিজাইনের পুরো প্রক্রিয়াটা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করলাম, সম্মুখীন হওয়া সমস্যাগুলো আলোচনার জন্য তুললাম। ব্রাদার-সিস্টাররা আমাকে কিছু নতুন কৌশল শেখাল এবং কিছু নতুন ধারণা দিলো। এরপর, ব্যাকগ্রাউন্ড ডিজাইনের বাকি কাজটা মসৃণভাবেই এগোলো। পরে, কিছু ব্রাদার-সিস্টার বলল, “আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড ছবি আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখাচ্ছে। আপনি কি আপনার অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা আমাদের সঙ্গে ভাগ করবেন?” এটা শুনে আমি এত খুশি হলাম মনে হলো ব্যবহারিকভাবে দায়িত্ব পালন পুরো হয়েছে। ব্যাকগ্রাউন্ড ডিজাইনের অভিজ্ঞতার কথা ভাবতে গিয়ে, বুঝতে পারি ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকায় কোনো দোষ নেই, তা অন্যেরা জানলেও কোনো সমস্যা নেই। এগুলো নিয়ে খোলাখুলি কথা বলা, সত্যের সন্ধান করা, আর বেঠিক উদ্দেশ্য ও আকাঙ্ক্ষাকে দূরে রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে কাজ করলে আপনি শান্তি ও স্বস্তি পাবেন।

ক্রমে, কঠিন প্রজেক্টেও ভালো ডিজাইন বানাতে শুরু করি আর অন্য ব্রাদার-সিস্টারদের থেকেও বেশি কাজ করতে শুরু করি। তারা সবসময় আমার থেকে ডিজাইনের ধারণা ও বিভিন্ন প্রযুক্তিগত বিষয়ে পরামর্শ চাইত। শুরুতে, যা জানতাম শুধু তা-ই বলতাম, কিন্তু আরও লোকজন প্রশ্ন করতে থাকলে, অজ্ঞাতসারে ভাবতে শুরু করি, “মনে হচ্ছে সবাই এখন আমার প্রতিভাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। নইলে তারা আমার মতামত চাইবে কেন?” অজান্তেই, এই তৃপ্তির অনুভূতি উপভোগ করতে শুরু করি, আত্মতুষ্ট হয়ে পড়ি। কিন্তু তারপরে একেবারে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে। স্তোত্রের জন্য আঁকা আমার একটা ব্যাকগ্রাউন্ড ছবিতে, নেতা একটা নীতি-লঙ্ঘনকারী সমস্যা দেখেন আর আমাকে আলাপের জন্য ডাকেন। বলেন, সেদিনই ছবিটি ঠিক করতে হবে, নইলে কাজের দেরি হয়ে যাবে জিজ্ঞেস করেন, কাজটা নিজেই করতে পারব নাকি কারো সাহায্য লাগবে। মনে মনে ভাবি: “ছবিটা আমি ডিজাইন করেছি, তা অন্যের হাতে তুলে দিলে, মনে হবে না আমার দক্ষতার অভাব আছে? মানুষ ভাববে না আমি মুখে বড় বড় কথা বলি, কিন্তু করার বেলায় সেসব পারি না? তা হতে পারে না! এখন হাল ছাড়া যাবে না। যদি আমি নিজেই ঠিক করতে পারি, সবাই জানবে আমি নিজের কাজ করতে পারি, নির্ভরযোগ্য, প্রস্তুত হয়ে ওঠার যোগ্য।” এটা ভেবে, নেতাকে বলি আমি নিজেই নীতি অনুসারে ছবিটা ঠিক করব। সম্পাদনার সময়, ছবির একটি অংশের জন্য ভালো কোনো ভাবনাই মাথায় আসছিল না। যেহেতু সময় ফুরিয়ে আসছিল আর আমি সেই বিষয়টা নিয়েই আটকে ছিলাম, খুবই চাপে পরে গেছিলাম, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করতে চাইছিলাম, কিন্তু ডিজাইনে যতই রদবদল করছিলাম, কোনো সুরাহা হচ্ছিল না। ভোর ৫টা অবধি সেই বিষয়টা নিয়ে লেগে ছিলাম, কিন্তু কিছুই মাথায় আসেনি। তখনই গিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করলাম, কেন আমার এই সমস্যা হচ্ছে? হঠাৎই বুঝতে পারি, আমার ডিজাইন নীতিলঙ্ঘন করছে কারণ নীতির কিছু দিক আছে যেগুলো আমি বুঝি না। ছবি ঠিক করতে গিয়ে ইতিমধ্যেই কাজে দেরি হয়ে গিয়েছিল। সম্পাদনার ফলে সমস্যাটা মিটেছে কি না, তা-ও জানতাম না ছবিটা অবিলম্বে দরকার ছিল, তাই জানতাম আমার সাহায্য চাওয়া উচিত। কিন্তু নিজের নামযশ বজায় রাখতে, খামতিগুলো আড়াল করতে, একা-একাই সুরাহা করার জন্য যুঝছিলাম। আমি কি গির্জার কাজে বিলম্ব ঘটাচ্ছিলাম না? এটা বুঝে ভীষণ অপরাধবোধ হল, তক্ষুনি অনুতাপ করতে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, “হে ঈশ্বর! নিজের ভ্রষ্ট স্বভাবে আবদ্ধ আমি। কোনো সমস্যায় পড়লেই, নিজের সম্মান বজায় রাখতে ভান করি সব ঠিক আছে। নিজের খামতিগুলোর ঠিকঠাক মুখোমুখি হতে পারি না। দায়িত্বপালনের কত ক্লান্তিকর উপায় এটা! হে ঈশ্বর, আমাকে নিজের দুর্নীতি চেনার ও অহংকার ত্যাগ করার পথ দেখান, যাতে আপনার বাক্যে অনুসারে অনুশীলন করতে পারি।” প্রার্থনার পর, ঈশ্বরের এই বাক্যের কথা ভাবি, “তুমি সর্বদাই মহত্ত্ব, আভিজাত্য এবং মর্যাদার অনুসন্ধান করছ; সর্বদাই উচ্চকিত প্রশংসালাভের অনুসন্ধান করো। ঈশ্বর যখন এইসব প্রত্যক্ষ করেন, তখন তিনি কেমন বোধ করেন? ঈশ্বর তা ঘৃণা করেন, এবং তিনি তোমার থেকে দূরে সরে যাবেন। তুমি মহত্ত্ব, আভিজাত্য এবং অন্যদের থেকে উচ্চতর, বিশিষ্ট, অসামান্য ও উল্লেখযোগ্য হওয়ার মতো বিষয়গুলি যত বেশি অনুসরণ করবে, ঈশ্বরের চোখে তুমি তত বেশি ঘৃণ্য হবে। যদি তুমি নিজের বিষয়ে প্রতিফলন না করো, অনুতপ্ত না হও, তাহলে ঈশ্বর তোমাকে অবজ্ঞা ও পরিত্যাগ করবেন। ঈশ্বরের চোখে ঘৃণার্হ, এমন একজন যাতে না হয়ে ওঠো, তা নিশ্চিত করো; বরং ঈশ্বর যাকে ভালোবাসেন, এমন একজন ব্যক্তি হয়ে ওঠো। তাহলে, কেউ ঈশ্বরের ভালোবাসা কীভাবে অর্জন করতে পারে? আনুগত্য সহকারে সত্যকে গ্রহণের মাধ্যমে, সৃষ্ট সত্তার অবস্থানে দণ্ডায়মান হয়ে, মাটিতে পা রেখে ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে কাজ করার মাধ্যমে, নিজের কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে, একজন সৎ ব্যক্তি হওয়ার চেষ্টা করে, এবং মানবসদৃশ জীবনযাপনের মাধ্যমে। এটাই যথেষ্ট, ঈশ্বর সন্তুষ্ট হবেন। উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ না করা, বা অমূলক স্বপ্ন না দেখা, খ্যাতি, লাভ ও মর্যাদার অনুসন্ধান না করা, বা ভিড়ের থেকে আলাদা হওয়ার চেষ্টা না করার বিষয়ে মানুষজনকে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে। এছাড়াও, তারা অবশ্যই যেন তেমন কোনো মহান বা অতিমানবীয় ব্যক্তি হওয়ার চেষ্টা না করে, যে কিনা মনুষ্যশ্রেষ্ঠ, এবং যে অন্যদেরকে তার উপাসনা করতে বাধ্য করে। এটাই হল কলুষিত মানবতার আকাঙ্ক্ষা এবং এ-ই হল শয়তানের পথ; ঈশ্বর এই ধরনের ব্যক্তিগণকে উদ্ধার করেন না। যদি মানুষ অবিরাম খ্যাতি, লাভ এবং মর্যাদার অন্বেষণ করে, অনুতাপ করতে অস্বীকার করে, তবে তাদের কোনো প্রতিকার নেই, এবং তাদের শুধু একটাই পরিণতি হবে: বহিষ্কৃত হওয়া(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজন সমন্বয়পূর্ণ সহযোগিতার)। ঈশ্বরের বাক্যে আমার অবস্থার কথাই আছে: আমি সর্বদা খ্যাতি, মর্যাদা আর প্রশংসার পেছনে ছুটতাম। যখন অন্যদের তুলনায় আরো নিখুঁত ডিজাইন আঁকা শুরু করি আর উচ্চ চাহিদার কাজও সফলভাবে সম্পন্ন করতে থাকি, তখন অজান্তেই অহংকারী হয়ে উঠি। শুধু তা-ই নয়, অন্যরা যখন আমার কাছে প্রশ্ন নিয়ে আসতে থাকে, গভীরভাবে তৃপ্ত বোধ করি, নিজের প্রশংসা উপভোগ করতে থাকি। যখন আমার একটা ছবিতে সমস্যা হওয়ায় সেটা ফেরত পাঠানো হল, আর নেতা সময় বাঁচাতে অপরের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দিলেন, আমি গির্জার কাজের কথা ভাবিনি, কেবল ভেবেছি কারো সাহায্য নিলে নিজের অক্ষমতা অনাবৃত হবে। নিজের নামযশ রক্ষার্থে, অন্যরা যাতে হেয় না করে সেজন্য, নিজেই ছবিটার সম্পাদনা করি। যখন আমি সমস্যার সম্মুখীন হই, সাহায্য না চেয়ে নিজে-নিজেই তা সমাধানের জন্য মাথা ঘামাতে থাকি, অন্য সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে। বাইরে থেকে, মনে হয় দায়িত্বপালনে অনেক সময় দিচ্ছি, কিন্তু বাস্তবে, আমি নিছক নিজের প্রতিভা প্রমাণ করার চেষ্টাই করছিলাম, যাতে লোকে ভাবে আমি ভরসাযোগ্য। নিজের খ্যাতি ও মর্যাদার তীব্র আকাক্ষা টের পাই। ঈশ্বর আমাদের চিন্তাভাবনাগুলোকে পরীক্ষা করেন—আমি অন্যদের ঠকাতে পারলেও, ঈশ্বরকে ঠকাতে পারব না, যতই নিজের সীমাবদ্ধতা আড়াল করি, নিজের ভ্রষ্ট স্বভাব না বদলালে আর সত্য অর্জন না করলে, ঈশ্বর আমায় ঘৃণা ও বহিষ্কারই করবেন। আমি নিজের খ্যাতি ও মর্যাদার জন্য গির্জার কাজে দেরি করিয়েছি, যদি ঈশ্বরের কাছে অনুতাপ না করি, আত্মচিন্তন না করি, কেবলই নিজেকে ও অন্যদের প্রতারণা আর নিজেরই ক্ষতি করব। এটা বুঝতে পেরে, ডিজাইনে ভালো এমন এক সিস্টারের থেকে দ্রুত সাহায্য চাইলাম। তার সঙ্গে আলোচনা করে ছবিটি সম্পাদনার ব্যাপারে আমার ধারণা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যায়। অচিরেই সম্পাদনা শেষ করি।

পরবর্তীতে, নিজের খামতি লুকানোর চেষ্টার কারণটা নিয়ে আত্মচিন্তন অব্যাহত রাখি। ঘটনাক্রমে এক ছত্র ঈশ্বরের বাক্য পড়ি, যা আমার উপর গভীর প্রভাব ফেলে। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “কিছু কিছু কাজ করতে না পারার মধ্যে কি লজ্জার কিছু আছে? কোনো মানুষই কি সবকিছু করতে পারে? এতে লজ্জার কিছু নেই—ভুলে যেও না, তুমি একজন সাধারণ মানুষ। মানুষ তো শুধু মানুষই; যদি কিছু করতে না পারো, সেকথা স্বীকার করো। ভান করবে কেন? তুমি যদি সবসময় ভান করতে থাকো, অন্যদের চোখে তা বিতৃষ্ণাজনক, এবং আজ না হোক কাল, একদিন তুমি অনাবৃত হবেই, এবং তোমার মর্যাদা অথবা সম্মান আর অবশিষ্ট থাকবে না। খ্রীষ্টবিরোধীদের স্বভাব এরকমই। তারা সবসময় নিজেদের এমনভাবে উপস্থাপিত করে যেন তারা সবকিছুই করতে পারে, যেন তারা সব কাজেই দক্ষ আর সব বিষয়েই জ্ঞানী। এটা তো একটা সমস্যার ব্যাপার, তাই না? তাদের যদি সৎ মনোভাব থাকতো, তাহলে তারা কী করতো? তারা বলতো, ‘আমি এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই, আমার শুধু এ ব্যাপারে সামান্য অভিজ্ঞতা আছে, কিন্তু এখন আমাদের যে দক্ষতার প্রয়োজন তা আগের চেয়ে অনেক জটিল। আমি কী কী করতে পারি তার সবই ইতিমধ্যে তোমাকে বলেছি, কিন্তু আমরা যে নতুন সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়েছি, সেগুলো আমি বুঝতে পারছি না। আমাদের যদি নিজেদের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে হয়, আমাদের আরও কিছুটা প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সে বিষয়টা খানিকটা দখলে এসে গেলে আমরা কার্যকরভাবে আমাদের দায়িত্বপালন করতে পারবো। ঈশ্বর এই কর্তব্য আমাদের উপর অর্পণ করেছেন, আর এটা ভালোভাবে নির্বাহ করার দায়িত্ব আমাদের। নিজেদের কর্তব্যের কথা মাথায় রেখে আমাদের আরও কিছুটা প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করা উচিত।’ এটাই হল সত্যের অনুশীলন। কারো যদি খ্রীষ্টবিরোধীদের মতো স্বভাব থাকতো, সে এটা করতো না। তার যদি সামান্যতম বোধও থাকতো, সে এরকম কিছু বলতো, ‘কীভাবে এটা করতে হবে সে ব্যাপারে আমি এটুকুই জানি। আমার সম্বন্ধে বিরাট উঁচু কোনো ধারণা কোরো না, আর আমিও নিজেকে বিশাল কিছু মনে করবো না—এভাবেই বিষয়গুলো সহজ থাকবে, তাই তো? সবসময় হাবভাব আর ভান করে থাকা, খুবই যন্ত্রণার বিষয়। কোনো একটা কাজ কীভাবে করতে হবে তা যদি আমরা না জানি, তাহলে আমরা শিখে নেবো কীভাবে সেটা একসাথে মিলে করা যায়। সঠিকভাবে নিজেদের দায়িত্বপালন করতে হলে আমাদের পরস্পরকে সহযোগিতা করতে হবে। আমাদের সবারই একটা দায়িত্বপূর্ণ মনোভাব থাকতে হবে।’ মানুষ যখন এটা দেখবে, তারা মনে করবে, ‘এই মানুষটা আমাদের বাকি সবার চেয়ে ভালো। যখন কোনো একটা বিষয় উপস্থিত হয়, এ নিজের দক্ষতা নিয়ে আকাশকুসুম দাবি করে না, এবং বিষয়গুলো অন্যের উপর চাপিয়ে দেয় না বা দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে না। বরং নিজেই দায়িত্ব গ্রহণ করে, এবং গুরুত্ব দিয়ে আর দায়িত্বপূর্ণভাবে সেগুলো নির্বাহ করে। এ একজন ভালো মানুষ, কাজে ও দায়িত্বে এর বেশ কর্তব্যপরায়ণ, গুরুত্বপ্রদায়ী মনোভাব আছে। এ বিশ্বাসযোগ্য। এর হাতে এই গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনার দায়িত্ব দিয়ে ঈশ্বরের গৃহ সঠিক কাজই করেছে। ঈশ্বর সত্যিই মানুষের অন্তরতম সত্তাকে খুঁটিয়ে দেখেন!’ এইভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে এরা নিজেদের দক্ষতার পরিমার্জন করতে পারে, এবং সকলের অনুমোদন জয় করতে পারে। এই অনুমোদন কোথা থেকে আসে? প্রথমত, তা আসে নিজের দায়িত্বের প্রতি সেই ব্যক্তির গুরুত্বপ্রদায়ী ও কর্তব্যপরায়ণ মনোভাব থেকে। দ্বিতীয়ত, বাস্তববাদী মনোভাব পোষণ করে ও শেখার আগ্রহ রয়েছে এমন একজন সৎ মানুষ হয়ে ওঠার সামর্থ্য থেকে। আর তৃতীয়ত, এই সম্ভাবনাও কেউ উড়িয়ে দিতে পারে না যে এই ধরনের মানুষেরা পবিত্র আত্মার পথনির্দেশিত ও আলোকপ্রাপ্ত। এই ধরনের মানুষরা ঈশ্বরের আশীর্বাদধন্য, আর বিবেক ও চেতনাসম্পন্ন মানুষেরাই তা অর্জন করতে পারে। এরা হয়তো কলুষিত ও ত্রুটিযুক্ত হতে পারে, এমনও অনেক কিছু থাকতে পারে যা এরা করতে পারে না, কিন্তু এদের অনুশীলনের পথই হল সঠিক পথ। এরা ছদ্মবেশ ধারণ করে না বা প্রতারণা করে না, নিজেদের দায়িত্বের প্রতি এদের মনোভাব গুরুত্বপ্রদায়ী ও কর্তব্যপরায়ণ, এবং সত্যের প্রতি এরা ধর্মনিষ্ঠ ও আকুল মনোভাবাপন্ন। খ্রীষ্টবিরোধীরা কখনোই এসব কাজে সমর্থ হবে না, কারণ তারা যেভাবে চিন্তা করে তা কখনোই সেই মানুষদের সাথে মিলবে না যারা সত্যকে ভালোবাসে ও সত্যের অন্বেষণ করে। তা কেন? কারণ তাদের প্রকৃতি হল শয়তানের। ক্ষমতা দখল করার লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য তারা এক শয়তানোচিত স্বভাবের জীবন যাপন করে। তারা সর্বক্ষণ বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করে চলেছে নানান দুরভিসন্ধি ও ষড়যন্ত্র করার, যাতে যেকোনো উপায়েই মানুষকে বিভ্রান্ত করে তাদের দিয়ে নিজেদের উপাসনা ও অনুসরণ করানো যায়। তাই মানুষের চোখে ধুলো দিতে, তারা ছদ্মবেশ ধারণের সমস্তরকম উপায় চিন্তা করে প্রতারণা করার জন্য, মিথ্যাচরণ করার জন্য, মানুষের সাথে চাতুরী করার জন্য—যাতে মানুষকে বিশ্বাস করানো যায় যে তারা সবসময়েই সঠিক, তারা সবকিছুই জানে আর সবকিছুই করতে পারে; তারা অন্যদের চেয়ে বুদ্ধিমান, জ্ঞানী, আর বেশি বোঝে; অন্যদের চেয়ে তারা সবকিছুতেই উত্তম, সব বিষয়েই অন্যদের অতিক্রম করে যায়, এমনকি যেকোনো দলের মধ্যেও তারাই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। এমনটাই তাদের চাহিদা; এমনটাই হল কোনো খ্রীষ্টবিরোধীর স্বভাব। তাই তারা ভান করতে শেখে, যেখান থেকে সমস্তরকম অভ্যাস ও আচরণের উদ্ভব হয়(বাক্য, খণ্ড ৪, খ্রীষ্টবিরোধীদের উন্মোচন, অষ্টম পরিচ্ছেদ: তারা অপরের থেকে কেবল নিজেদের প্রতিই আনুগত্য আদায় করে, সত্য অথবা ঈশ্বরের প্রতি নয় (তৃতীয় অংশ))। খ্রীষ্টবিরোধীরা প্রকৃতিগতভাবে শঠ ও মন্দ। নিজেদের খ্যাতি ও মর্যাদা বজায় রাখতে, তারা পারে না হেন কাজ নেই; সবার সামনে ভান করে, মিথ্যা বলে, অন্যদের ঠকায়। আমি এক খ্রীষ্টবিরোধীর কথা ভাবি, যাকে গির্জা বহিষ্কার করেছিল: নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে ও প্রশংসা পেতে, সমস্যায় পড়লেও সে অন্যদের সাহায্য চাইত না, যা জানত তার চেয়েও বেশি জানার ভান করত, নিজের খ্যাতি ও মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে গির্জার কাজে দেরি করাতেও দ্বিধা করত না। সে শুধু নিজের সাফল্যের কথাই বলত, ব্যর্থতার নয়। অনেকবার গির্জার কাজ ব্যাহত করলেও, কখনোই অনুতাপ করেনি। সেজন্য, শেষ পর্যন্ত গির্জা তাকে বহিষ্কার করে। আমি তার সঙ্গে আমার আচরণের তুলনা করি: আমি নিজের কাজে সত্য ও নীতির সন্ধানে মন দিইনি, ঈশ্বরের সুবিবেচনা গ্রহণ করিনি, বিনীতভাবে কাজ করিনি, অন্যের প্রশংসা পেতে সবসময় ভান করে গেছি। আমার ডিজাইনে স্পষ্টতই একটা সমস্যা ছিল, কিন্তু কীভাবে তা ঠিক করব সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকলেও, আমি ব্রাদার-সিস্টারদের সাথে এ নিয়ে কোনো আলোচনা করিনি, বরং নিজে নিজেই ঠিক করার চেষ্টা করি। আমি গির্জার কাজের কথা ভাবিনি, আর যতক্ষণ সমাধানের ক্ষীণ সম্ভাবনাও ছিল, নিজের ঘাটতি মেলে ধরিনি, যেন গির্জার কাজে দেরি হওয়া কোনো ব্যাপারই না, যেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল নিজের ভাবমূর্তি ধরে রাখা। যা নিজের ভাবমূর্তি ও মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে, তা লুকিয়ে রাখি, সেটা করা খুবই ক্লান্তিকর এবং কঠিন হলেও। মনে হয়েছিল নিজের “সুনাম” হারানো মানে যেন নিজের জীবনটাই হারানো। আমার কাজগুলো খ্রীষ্টবিরোধী স্বভাব দর্শিয়েছিল। বুঝতে পেরে, আমি ভয় পেয়ে যাই। আমি হয়তো একজন খ্রীষ্টবিরোধীর সব মন্দ কাজগুলো করিনি, কিন্তু সবসময় খ্যাতি, মর্যাদা ও অন্যদের প্রশংসা পেতে চাইতাম, এমনকি অন্যদের সাথে চাতুরি ও প্রতারণা করতে হলেও। এই স্বভাব বদলাতে না পারলে, ঈশ্বরের দ্বারা অনাবৃত ও বহিষ্কৃত হতাম। তাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে অনুতাপ করি, নিজের গর্ব ও মর্যাদা সরিয়ে রেখে তাঁর বাক্যের অনুশীলন করতে চাই।

পরবর্তীতে, আমার ডিজাইনে নিজে ঠিক করতে পারব না এমন কোনো সমস্যা দেখলে, দ্রুত কারো সাথে যোগাযোগ করে আলোচনা করতাম, তাদের থেকে পরামর্শ চাইতাম, শুনতাম। মাঝেমধ্যে, তাদের সাথে একসাথে ডিজাইন করতাম। একবার, একটা ডিজাইনে অন্য এক সমস্যা হয় অনেক চিন্তা করেও কিছুই এগোতে পারিনি। নেতা অগ্রগতির কথা জানতে চাইলে মিথ্যে বলতে চেয়েছিলাম। তবে দ্রুতই বুঝতে পারলাম আমি আবারও খ্যাতি ও মর্যাদা রক্ষার চেষ্টা করছি। তখন, ঈশ্বরের বাক্য মনে পড়ল: “যদি তুমি কিছুই ধরে না রাখো, যদি একটা মিথ্যা চেহারা, ভান, ও কৃত্রিমতার আশ্রয় না নাও, যদি তুমি নিজেকে ভাই ও বোনেদের সামনে উন্মুক্ত করো, নিজের অন্তঃস্থলের ধারণা ও ভাবনা লুকিয়ে না রেখে অন্যদের তোমার সৎ মনোভাব প্রত্যক্ষ করতে দাও, তাহলে ধীরে ধীরে সত্য তোমার মধ্যে মূল স্থাপিত করবে, পরিস্ফুট ও ফলপ্রসূ হবে, একটু একটু করে তা থেকে ফলাফল অর্জিত হবে। যদি তোমার হৃদয় ক্রমে সৎ হয়ে ওঠে, এবং ঈশ্বরের প্রতি নিবদ্ধ হয়, এবং দায়িত্ব পালনের সময় যদি তুমি ঈশ্বরের গৃহের স্বার্থ রক্ষা করতে জানো, এবং সেই স্বার্থ রক্ষা করতে না পারলে যদি তোমার বিবেকে বাধে, তবে তা প্রমাণ করে যে সত্য তোমার মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছে এবং তোমার জীবন হয়ে উঠেছে(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, তৃতীয় অংশ)। ঈশ্বরের বাক্য ভীষণ অনুপ্রেরণা দেয়। জানতাম আমাকে ভান করা বন্ধ করতে হবে; সততার সাথে নিজের খামতিগুলোর মুখোমুখি হতে হবে। অন্যরা আমায় নিয়ে যা-ই ভাবুক না কেন, আমাকে সত্য বলতে হবে, অন্যদের সাথে সমাধান খুঁজতে হবে। সেদিন একটা কর্ম-সমাবেশ হয়েছিল, আলোচনায় নিজের সমস্যা ও দুর্নীতির কথা খুলে বলি। বলার পর, স্বস্তি পাই। যখন অন্যদের সাথে সবকিছু নিয়ে আলোচনা করি, তারা আমায় ডিজাইন ঠিক করার উপায় বের করতে সাহায্য করে, এবং শীঘ্রই, আমি সম্পাদনা শেষ করি। খুব খুশি হয়েছিলাম! বুঝেছিলাম উন্মুক্ত ও সৎ হওয়া কত চমৎকার ব্যাপার! ঈশ্বরের পরিত্রাণের মাধ্যমেই আমি তা বুঝতে আর নিজেকে বদলাতে পেরেছিলাম। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

সত্য পথ গ্রহণে এত বাধা কেন?

২০০৮ সাল থেকে, আমি আর আমার মা প্রভুর উপর বিশ্বাস রাখতে শুরু করি, তারপর, স্থানীয় একটা গির্জায় সমাবেশে যোগ দিতে লাগলাম। পরে, গির্জার ডীকনও...

ঈর্ষার বন্ধন থেকে মুক্তি

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে, আমি তখন সবেমাত্র সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ গ্রহণ করেছি। অচিরেই আমি একটা দায়িত্ব নিয়ে স্তবগানের মিউজিক...

আমার বন্দিদশার দিনগুলি

২০০৬ সালের জুলাই মাসে, আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ গ্রহণ করেছিলাম। আমার স্বামীর সমর্থন ছিল, আর যেসব ভ্রাতা ও ভগিনী আমাদের...

Leave a Reply

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন